(বই#১০৩৫)   [   *বার্ধক্যে এসে শিশুর মতো হয়ে যাওয়া :-] www.motaher21.net সূরা:- ৩০:আর্-রূম পারা:২১ ৪৬- ৬০ নং আয়াত:-

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(বই#১০৩৫)
[   *বার্ধক্যে এসে শিশুর মতো হয়ে যাওয়া :-]
www.motaher21.net
সূরা:- ৩০:আর্-রূম
পারা:২১
৪৬- ৬০ নং আয়াত:-
৩০:৪৬
وَ مِنۡ اٰیٰتِہٖۤ اَنۡ یُّرۡسِلَ الرِّیَاحَ مُبَشِّرٰتٍ وَّ لِیُذِیۡقَکُمۡ مِّنۡ رَّحۡمَتِہٖ وَ لِتَجۡرِیَ الۡفُلۡکُ بِاَمۡرِہٖ وَ لِتَبۡتَغُوۡا مِنۡ فَضۡلِہٖ وَ لَعَلَّکُمۡ تَشۡکُرُوۡنَ ﴿۴۶﴾
তাঁর নিদর্শনাবলীর একটি হচ্ছে এই যে, তিনি বাতাস পাঠান সুসংবাদ দান করার জন্য এবং তোমাদেরকে তাঁর অনুগ্রহ আপ্লুত করার জন্য। আর এ উদ্দেশ্যে যে যাতে নৌযানগুলো তাঁর হুকুমে চলে এবং তোমরা তাঁর অনুগ্রহ সন্ধান করো আর তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ হও।
৩০:৪৭
وَ لَقَدۡ اَرۡسَلۡنَا مِنۡ قَبۡلِکَ رُسُلًا اِلٰی قَوۡمِہِمۡ فَجَآءُوۡہُمۡ بِالۡبَیِّنٰتِ فَانۡتَقَمۡنَا مِنَ الَّذِیۡنَ اَجۡرَمُوۡا ؕ وَ کَانَ حَقًّا عَلَیۡنَا نَصۡرُ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ ﴿۴۷﴾
আমি তোমার পূর্বে রসূলদেরকে তাদের সম্প্রদায়ের কাছে পাঠাই এবং তারা তাদের কাছে আসে উজ্জ্বল নিদর্শনাবলী নিয়ে। তারপর যারা অপরাধ করে তাদের থেকে আমি প্রতিশোধ নিই আর মুমিনদেরকে সাহায্য করা ছিল আমার দায়িত্বের অন্তর্ভুক্ত।
৩০:৪৮
اَللّٰہُ الَّذِیۡ یُرۡسِلُ الرِّیٰحَ فَتُثِیۡرُ سَحَابًا فَیَبۡسُطُہٗ فِی السَّمَآءِ کَیۡفَ یَشَآءُ وَ یَجۡعَلُہٗ کِسَفًا فَتَرَی الۡوَدۡقَ یَخۡرُجُ مِنۡ خِلٰلِہٖ ۚ فَاِذَاۤ اَصَابَ بِہٖ مَنۡ یَّشَآءُ مِنۡ عِبَادِہٖۤ اِذَا ہُمۡ یَسۡتَبۡشِرُوۡنَ ﴿ۚ۴۸﴾
আল্লাহই বাতাস পাঠান ফলে তা মেঘ উঠায়, তারপর তিনি এ মেঘমালাকে আকাশে ছড়িয়ে দেন যেভাবেই চান সেভাবে এবং তাদেরকে খণ্ড- বিখণ্ড করেন, তারপর তুমি দেখো বারিবিন্দু মেঘমালা থেকে নির্গত হয়েই চলছে। এ বারিধারা যখন তিনি নিজের বান্দাদের মধ্যে থেকে যার ওপর চান বর্ষণ করেন তখন তারা আনন্দোৎফুল্ল হয়।
৩০:৪৯
وَ اِنۡ کَانُوۡا مِنۡ قَبۡلِ اَنۡ یُّنَزَّلَ عَلَیۡہِمۡ مِّنۡ قَبۡلِہٖ لَمُبۡلِسِیۡنَ ﴿۴۹﴾
অথচ তার অবতরণের পূর্বে তারা হতাশ হয়ে যাচ্ছিল।
৩০:৫০
فَانۡظُرۡ اِلٰۤی اٰثٰرِ رَحۡمَتِ اللّٰہِ کَیۡفَ یُحۡیِ الۡاَرۡضَ بَعۡدَ مَوۡتِہَا ؕ اِنَّ ذٰلِکَ لَمُحۡیِ الۡمَوۡتٰی ۚ وَ ہُوَ عَلٰی کُلِّ شَیۡءٍ قَدِیۡرٌ ﴿۵۰﴾
সুতরাং তুমি আল্লাহর করুণার চিহ্ন লক্ষ্য কর, কিভাবে তিনি ভূমির মৃত্যুর পর একে পুনর্জীবিত করেন। নিঃসন্দেহে তিনি মৃতকে জীবিত করবেন এবং তিনি সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান।
৩০:৫১
وَ لَئِنۡ اَرۡسَلۡنَا رِیۡحًا فَرَاَوۡہُ مُصۡفَرًّا لَّظَلُّوۡا مِنۡۢ بَعۡدِہٖ یَکۡفُرُوۡنَ ﴿۵۱﴾
আর যদি আমরা এমন বায়ু পাঠাই যার ফলে তারা দেখে যে শস্য পীতবর্ণ ধারণ করেছে, তখন তো তারা কুফরী করতে শুরু করে।
৩০:৫২
فَاِنَّکَ لَا تُسۡمِعُ الۡمَوۡتٰی وَ لَا تُسۡمِعُ الصُّمَّ الدُّعَآءَ اِذَا وَلَّوۡا مُدۡبِرِیۡنَ ﴿۵۲﴾
নিশ্চয় তুমি মৃতকে তোমার কথা শোনাতে পারবে না এবং বধিরকেও তোমার আহবান শোনাতে পারবে না;যখন ওরা মুখ ফিরিয়ে নেয়।
৩০:৫৩
وَ مَاۤ اَنۡتَ بِہٰدِ الۡعُمۡیِ عَنۡ ضَلٰلَتِہِمۡ ؕ اِنۡ تُسۡمِعُ اِلَّا مَنۡ یُّؤۡمِنُ بِاٰیٰتِنَا فَہُمۡ مُّسۡلِمُوۡنَ ﴿٪۵۳﴾
এবং অন্ধদেরকেও তাদের ভ্রষ্টতা থেকে বের করে সঠিক পথ দেখাতে পারো না। তুমি তো একমাত্র তাদেরকেই শুনাতে পারো যারা আমার আয়াতের প্রতি ঈমান আনে এবং আনুগত্যের শির নত করে।
৩০:৫৪
اَللّٰہُ الَّذِیۡ خَلَقَکُمۡ مِّنۡ ضُؔعۡفٍ ثُمَّ جَعَلَ مِنۡۢ بَعۡدِ ضُؔعۡفٍ قُوَّۃً ثُمَّ جَعَلَ مِنۡۢ بَعۡدِ قُوَّۃٍ ضُؔعۡفًا وَّ شَیۡبَۃً ؕ یَخۡلُقُ مَا یَشَآءُ ۚ وَ ہُوَ الۡعَلِیۡمُ الۡقَدِیۡرُ ﴿۵۴﴾
আল্লাহই দুর্বল অবস্থা থেকে তোমাদের সৃষ্টি করেন তারপর এ দুর্বলতার পরে তোমাদের শক্তি দান করেন, এ শক্তির পরে তোমাদেরকে আবার দুর্বল ও বৃদ্ধ করে দেন, তিনি যা চান সৃষ্টি করেন। আর তিনি সবকিছু জানেন, সব জিনিসের ওপর তিনি শক্তিশালী।
৩০:৫৫
وَ یَوۡمَ تَقُوۡمُ السَّاعَۃُ یُقۡسِمُ الۡمُجۡرِمُوۡنَ ۬ۙ مَا لَبِثُوۡا غَیۡرَ سَاعَۃٍ ؕ کَذٰلِکَ کَانُوۡا یُؤۡفَکُوۡنَ ﴿۵۵﴾
যেদিন কিয়ামত হবে, সেদিন অপরাধীরা শপথ করে বলবে যে, তারা (পৃথিবীতে) মুহূর্তকালের বেশী অবস্থান করেনি। এভাবেই তারা সত্য বিমুখ হত।
৩০:৫৬
وَ قَالَ الَّذِیۡنَ اُوۡتُوا الۡعِلۡمَ وَ الۡاِیۡمَانَ لَقَدۡ لَبِثۡتُمۡ فِیۡ کِتٰبِ اللّٰہِ اِلٰی یَوۡمِ الۡبَعۡثِ ۫ فَہٰذَا یَوۡمُ الۡبَعۡثِ وَ لٰکِنَّکُمۡ کُنۡتُمۡ لَا تَعۡلَمُوۡنَ ﴿۵۶﴾
কিন্তু যাদেরকে ঈমান ও জ্ঞানের সম্পদ দান করা হয়েছিল তারা বলবে, তোমরা তো আল্লাহর লিখিত বিধানে হাশরের দিন পর্যন্ত অবস্থান করেছো, কাজেই এটিই সেই হাশরের দিন কিন্তু তোমরা জানতে না।
৩০:৫৭
فَیَوۡمَئِذٍ لَّا یَنۡفَعُ الَّذِیۡنَ ظَلَمُوۡا مَعۡذِرَتُہُمۡ وَ لَا ہُمۡ یُسۡتَعۡتَبُوۡنَ ﴿۵۷﴾
সেদিন সীমালংঘনকারীদের ওজর-আপত্তি ওদের কাজে আসবে না এবং ওদেরকে আল্লাহর সন্তুষ্টিলাভের সুযোগও দেওয়া হবে না।
৩০:৫৮
وَ لَقَدۡ ضَرَبۡنَا لِلنَّاسِ فِیۡ ہٰذَا الۡقُرۡاٰنِ مِنۡ کُلِّ مَثَلٍ ؕ وَ لَئِنۡ جِئۡتَہُمۡ بِاٰیَۃٍ لَّیَقُوۡلَنَّ الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡۤا اِنۡ اَنۡتُمۡ اِلَّا مُبۡطِلُوۡنَ ﴿۵۸﴾
আর অবশ্যই আমরা মানুষের জন্য এ কুরআনে সব ধরনের দৃষ্টান্ত দিয়েছি। আর আপনি যদি তাদের কাছে কোন নিদর্শন উপস্থিত করেন, তবে যারা কুফরী করেছে তারা অবশ্যই বলবে, ‘তোমরা তো বাতিলপন্থী ।
৩০:৫৯
کَذٰلِکَ یَطۡبَعُ اللّٰہُ عَلٰی قُلُوۡبِ الَّذِیۡنَ لَا یَعۡلَمُوۡنَ ﴿۵۹﴾
আল্লাহ এভাবে যাদের জ্ঞান নেই, তাদের হৃদয়ে মোহর করে দেন।
৩০:৬০
فَاصۡبِرۡ اِنَّ وَعۡدَ اللّٰہِ حَقٌّ وَّ لَا یَسۡتَخِفَّنَّکَ الَّذِیۡنَ لَا یُوۡقِنُوۡنَ ﴿٪۶۰﴾
অতএব আপনি ধৈর্য ধারণ করুন, নিশ্চয় আল্লাহর প্রতিশ্রুতি সত্য
আর যারা দৃঢ় বিশ্বাসী নয় তারা যেন আপনাকে বিচলিত করতে না পারে।

ফী জিলালিল কুরআন বলেছেন:-

*সৃষ্টিজগতের চারিদিকে আল্লাহর নিদর্শন : এরপর শুরু হয়েছে আরেকটা অধ্যায়। এতে আল্লাহর কতিপয় নিদর্শন, তার অনুগ্রহ অনুদান, বিশেষত তার দেয়া জীবিকা ও ওহীর মাধ্যমে নাযিল করা ইসলামী বিধান সম্পর্কে আলােচনা করা হয়েছে। ‘এসব নেয়ামতের কিছু অংশ মানুষ জানে এবং কিছু অংশ জানে না। ফলে তারা শোকর করে না ও হেদায়াত লাভ করে না'(আয়াত ৪৬-৫০)। এ আয়াতগুলােতে মহান আল্লাহ কয়েকটি বিষয়ের সমাবেশ ঘটিয়েছেন। বিষয়গুলাে হলাে, বাতাসকে সুসংবাদবাহক করে পাঠানাে, রসূলদের সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলী সহকারে প্রেরণ করা, মােমেনদের রসূলদের দ্বারা সাহায্য করা, মৃত মাটিকে জীবনদানকারী বৃষ্টি বর্ষণ করা এবং মৃতদের পুনরুজ্জীবিত করা। এ জিনিসগুলাের সমাবেশ খুবই তাৎপর্যবহ। এ দ্বারা বুঝানাে হয়েছে যে, এ সব কটা জিনিসই আল্লাহর অনুগ্রহের ফল এবং আল্লাহর নির্ধারিত প্রাকৃতিক বিধানের আওতাভুক্ত। যে প্রাকৃতিক বিধান অনুসারে মহাবিশ্ব চলে, যে জীবন বিধান নিয়ে রসূলরা আগমন করেন এবং মােমেনদের সাহায্য করার যে আশ্বাস দেয়া হয়েছে, এ সব কটার পরস্পরের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে, এ সব কটা আল্লাহর নিদর্শনাবলী ও নেয়ামতের মধ্যে গণ্য হয়ে থাকে। এগুলাের ওপর মানুষের বাঁচা মরা নির্ভরশীল এবং সর্বোপরি মূল প্রাকৃতিক বিধানের সাথে এগুলাের যােগসূত্র বিদ্যমান। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আল্লাহর অন্যতম নিদর্শন এই যে, তিনি বাতাসকে সুসংবাদবাহী করে পাঠান।’ অর্থাৎ বৃষ্টির সুসংবাদবাহী। উল্লেখ্য যে, আরবরা নিজেদের অভিজ্ঞতার আলােকে কোন মেঘ বৃষ্টি দেবে তা জানতাে এবং সে ধরনের মেঘ দেখেই বৃষ্টির ব্যাপারে আশ্বস্ত হতাে। ‘যাতে তােমাদের নিজের রহমতের স্বাদ উপভােগ করান।’ অর্থাৎ উৎপাদন ও ভূমির উর্বরতার আকারে বৃষ্টির সুফল ভােগ করান। ‘আর যাতে তার আদেশে নৌকা চলাচল করতে পারে।’ এটা দু’ভাবে হতে পারে। নৌকায় বাদাম লাগিয়ে তাতে বাতাসের শক্তি প্রয়ােগ করা, অথবা বৃষ্টির পানিতে নদী নালা সৃষ্টি হয়ে তাতে নৌকা চলাচল করা। এ সব সত্তেও নৌকার চলাচল অনুসারে হয়ে থাকে, যার ভিত্তিতে আল্লাহ তায়ালা বিশ্বজগত সৃষ্টি করেছেন এবং যার ফলে তিনি বিভিন্ন বস্তুকে বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য দান করেছেন। যেমন নৌকাকে এরূপ বৈশিষ্ট্য দান করেছেন যে, তা হালকা হওয়ায় পানির ওপর ভাসে ও চলে এবং বাতাস তাকে ধাক্কা দিয়ে স্রোাতের সাথে ও বিপরীতে চালাতে পারে। ‘তিনি সকল জিনিসকেই এভাবে নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখেন। যাতে তােমরা তাঁর অনুগ্রহ অন্বেষণ করতে পারে…’ অর্থাৎ বাণিজ্যিক সফর, কৃষি কাজ ও লেনদেনের মাধ্যমে জীবিকা উপার্জন করতে পার। এই সমস্ত উপার্জনই আল্লাহর অনুগ্রহ। ‘তিনিই এগুলাে সৃষ্টি করেছেন এবং এগুলাের পরিমাণ নির্ধারণ করেছেন, যাতে তােমরা শোকর করাে।’ অর্থাৎ এই সমস্ত রকমারি উপার্জনের মধ্য দিয়ে আল্লাহর যে নেয়ামত ও অনুগ্রহ লাভ করছো, তার শােকর করাে। এ কথার মধ্য দিয়ে মহান দাতা আল্লাহর অফুরন্ত নেয়ামতের বিনিময়ে বান্দাদের কী করা উচিত, সে ব্যাপারে তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। পরবর্তী আয়াতে আভাস দেয়া হয়েছে যে, বৃষ্টির সুসংবাদ সহকারে মেঘমালা প্রেরণ করার মতােই আল্লাহ তায়ালা সুস্পষ্ট নিদর্শনাবলী সহকারে নবীদের প্রেরণ করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘আমি তােমার পূর্বে বহু রসূলকে পাঠিয়েছি তাদের নিজ নিজ জাতির কাছে।'(আয়াত ৪৭) কিন্তু দুঃখের বিষয়, মানুষ বৃষ্টিবাহী মেঘমালাকে যেভাবে স্বাগত জানায় এবং যেভাবে বৃষ্টি ও পানি দ্বারা উপকৃত হয়, তার চেয়ে অধিকতর মর্যাদাপূর্ণ ও অধিকতর উপকারী রসূলদের সেভাবে স্বাগত জানায়নি এবং সেভাবে তা দ্বারা উপকৃত হয়নি। তারা রসূলদের সাথে আচরণে দুই দলে বিভক্ত হয়ে যায়। একটা দল তাদের প্রতি ঈমান তাে আনেইনি, উপরন্তু তাদের ওপর নির্যাতন নিপীড়ন চালিয়েছে এবং অন্যদের তাদের ওপর ঈমান আনা থেকে বিরত রেখেছে। আরেক দল তাদের ওপর ঈমান এনেছে, তারা আল্লাহর নিদর্শনাবলী উপলব্ধি করেছে, তার রহমত ও নেয়ামতের শােকর আদায় করেছে, তার ওয়াদায় আস্থা স্থাপন করেছে এবং অবিশ্বাসীদের হাতে নির্যাতন সহ্য করেছে। তারপর আল্লাহর ন্যায়বিচার ও তার অলংঘনীয় ওয়াদা মােতাবেক ফলাফল লাভ করেছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘অতপর আমি অপরাধীদের কাছ থেকে প্রতিশােধ নিলাম। ঈমানদারদের সাহায্য করা আমার কর্তব্য ছিলাে।’ মহান আল্লাহ মােমেনদের সাহায্য করা নিজের কর্তব্য হিসেবে গণ্য করেছেন এবং সাহায্য করাকে মােমেনদের অধিকার ও নিজের অনুগ্রহ বলে আখ্যায়িত করেছেন, এর চেয়ে বিস্ময়কর ব্যাপার আর কী থাকতে পারে? তিনি দ্ব্যর্থহীন ভাষায়, সন্দেহাতীতভাবে এ সাহায্যের আশ্বাস ও নিশ্চয়তা দিয়েছেন। এ আশ্বাস স্বয়ং সেই আল্লাহ তায়ালাই দিয়েছেন, যিনি সর্বশক্তিমান, মহা ক্ষমতাধর, মহাপরাক্রমশালী, যিনি তাঁর বান্দাদের ওপর সর্বময় কর্তৃত্বের অধিকারী এবং মহাজ্ঞানী ও বিজ্ঞানময়। তাঁর এ আশ্বাস তার নিজের সেই সিদ্ধান্তেরই প্রতীক যা কখনাে রদ হয় না, তার সেই শাশ্বত নীতিরই পরিচায়ক যা কখনাে লংঘিত হয় না এবং তার সেই প্রাকৃতিক নিয়মেরই প্রতিফলক, যা সমগ্র বিশ্বজগতকে নিয়ন্ত্রণ করে। মানুষের বিবেচনায় এই সাহায্য ও বিজয় কখনাে কখনাে বিলম্বিত মনে হয়। কেননা তাদের হিসাব নিকাশ আল্লাহর হিসাব নিকাশ থেকে আলাদা এবং তাদের বিচার বিবেচনা আল্লাহর বিচার বিবেচনা থেকে ভিন্ন। তিনি হচ্ছেন মহাজ্ঞানী ও বিজ্ঞানময়, আল্লাহ তায়ালা তার প্রতিশ্রুতি যে সময়ে বাস্তবায়িত করা তার ইচ্ছা ও নিয়ম নীতি অনুযায়ী ভালাে বলে মনে করেন, ঠিক সে সময়ই তা বাস্তবায়িত করেন। তার বিচার-বিবেচনা ও সময় নির্ণয়ের নিগূঢ় রহস্য মানুষ কখনাে উপলব্ধি করতে পারে আবার কখনাে পারে না, কিন্তু এ ব্যাপারে তার সিদ্ধান্তই কল্যাণকর এবং তার নির্ধারিত সময়ই সঠিক। তার কৃত প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন সুনিশ্চিত এবং ধৈর্যশীলরা নিশ্চিত বিশ্বাসে তার অপেক্ষায় থাকে। পরবর্তী আয়াতে বলা হচ্ছে যে, ‘আল্লাহ তায়ালাই বাতাসকে চালিত করেন, বৃষ্টি বর্ষণ করেন, নির্জীব মাটিকে পুনরুজ্জীবিত করেন এবং সেভাবেই মৃতদের আখেরাতে পুনরুজ্জীবিত করবেন।’ সকল ক্ষেত্রে একই নিয়ম এবং একই পদ্ধতি চালু রয়েছে। প্রকৃতির নিয়মে একই ধারাবাহিকতা চলছে। ‘মহান আল্লাহ বাতাসকে চালিত করেন।’ এটাই বিশ্বজগত ও সৃষ্টির পরিচালনায় তার নীতির দাবী। ‘অতঃপর সেই বাতাস মেঘমালাকে চালিত করে।’ এই মেঘমালা পৃথিবীর জলভাগ থেকে বাষ্পীভবনের মাধ্যমে উত্থিত পানিকে ধারণ করে। ‘অতপর আকাশে সেই মেঘমালা যেভাবে ইচ্ছা করেন ছড়িয়ে দেন।’ অর্থাৎ মেঘমালাকে সর্বত্র বিক্ষিপ্ত করেন। ‘এবং তাকে টুকরাে টুকরো করেন।’ কিছু মেঘকে ঘনীভূত ও একত্রিত করে একটার ওপর আরেকটা স্তুপ করে রাখেন, অথবা কিছু মেঘের সাথে অপর কিছু মেঘের সংঘর্ষ ঘটান, অথবা কোনাে কোনাে মেঘের ভেতর থেকে বিদ্যুত বিচ্ছুরিত করেন। ‘অতপর তুমি দেখতে পাও তার ভেতর থেকে পানি বেরিয়ে আসছে।’ এখানে ‘ওয়াক’ শব্দের অর্থ হলাে, মেঘমালার ভেতর থেকে নেমে আসা বৃষ্টি। ‘অতপর যখন তিনি তাঁর বান্দাদের মধ্য থেকে যাদের ওপর বৃষ্টি বর্ষাতে চান বর্ষাণ, তখন তারা আনন্দিত হয়।’ যেসব অঞ্চলের মানুষ জীবন ধারণের জন্যে বৃষ্টির পানির ওপর নির্ভরশীল তারা এই আনন্দের সাথে যতােটা পরিচিত, অন্যান্য অঞ্চলের মানুষ ততােটা নয়। আরবরা এই আনন্দের সাথে সর্বাধিক পরিচিত। কেননা তাদের জীবন সম্পূর্ণরূপে আকাশের পানির ওপর নির্ভরশীল। তাদের কবিতা ও ইতিহাসে এর যথেষ্ট উল্লেখ পাওয়া যায়। বৃষ্টির পানি আসার আগে তারা থাকে হতাশাগ্রস্ত। এই হচ্ছে বৃষ্টি নামার আগে তাদের অবস্থার অর্থাৎ তাদের হতাশার বিবরণ। এরপর তারা বৃষ্টি এলে আনন্দিত হয়। ‘অতএব আল্লাহর রহমতের সুফল দেখান।…’ অর্থাৎ হতাশাগ্রস্ত মানুষের মনে কিরূপ আনন্দের সঞ্চার করে দেখাে । কিভাবে তা নির্জীব মনে ও নির্জীব মাটিতে জীবনের সঞ্চার করি। বস্তুত এটা একটা চাক্ষুষ সত্য। এর জন্যে যুক্তি প্রমাণ পেশ করার প্রয়ােজন হয় না। কেবল চোখ মেলে দেখা ও চিন্তা করাই যথেষ্ট, এ জন্যে এটাকে আখেরাতের পুনরুজ্জীবনের ব্যাপারে একটা যুক্তি ও প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করা হয়, যা কোরআনের যুক্তিতর্কে একটা বিশেষ পদ্ধতি। প্রকৃতির চাক্ষুস দৃশ্যাবলী ও জীবনের বাস্তব অংগন থেকে এর উপাদান সংগৃহীত হয়ে থাকে। বস্তুত সেই আল্লাহ তায়ালাই মৃতকে জীবন দানকারী এবং তিনি সর্ববিষয়ে ক্ষমতাবান। এই হলাে পৃথিবীতে আল্লাহর রহমতের সুফল। এটা আখেরাতে মানুষকে পুনরুজ্জীবিত করা সংক্রান্ত প্রতিশ্রুতির সত্যতার প্রমাণ বহন করে।

*ঈমানদাররাই শুধু আল্লাহর নিদর্শন দেখতে পায় : এই সত্যটা তুলে ধরার পর পানি আনয়নকারী বাতাস দেখে যারা আনন্দিত হয় এবং আকাশ থেকে পানি বর্ষিত হওয়ার সময় যারা আল্লাহর রহমতের সুফল লাভ করে আশ্বস্ত হয়, তাদের চরিত্রের বর্ণনা দেয়া হচ্ছে। তারা যে বাতাস দেখেছে, তা যদি পানির পরিবর্তে বালি ও মাটি বহনকারী হতাে, যা প্রাণী-উদ্ভিদ ও ক্ষেতের ফসল ধ্বংস করে দেয়, তাহলে তারা কী করতাে, সে কথা বলা হচ্ছে। ‘আর আমি যদি বাতাস পাঠাতাম এবং তা যদি তারা হলুদ দেখতাে, তাহলে তারা কুফরীই চালিয়ে যেতো!’ অর্থাৎ ক্রোধ ও হতাশায় তারা কুফরী করতাে। আল্লাহর ফয়সালার কাছে আত্মসমর্পণও করতাে না, বিপদ দূর করার জন্যে তার কাছে কেঁদে কেঁদে দোয়াও করতাে না। আল্লাহর নির্ধারিত অদৃষ্টে যারা বিশ্বাস করে না, তাদের অবস্থাই এরকম হয়ে থাকে । আল্লাহর প্রত্যেকটা কাজের পেছনে যে মহৎ উদ্দেশ্য নিহিত থাকে। প্রত্যেকটা ঘটনার পেছনে যে বিশ্বজগতের সমন্বয় বিধানকারী আল্লাহর হাত রয়েছে এবং সে হাতই যে সর্বাত্মক বিশ্ব সমন্বয়ের আওতায় প্রতিটা ঘটনার গতি নিয়ন্ত্রণ করে, সেটা বুঝতে চেষ্টা করে না। মানুষ প্রকৃতির খেয়ালখুশী মােতাবেক নিজেকে পরিবর্তিত করে, চারপাশের প্রকৃতির রাজ্যে বিরাজমান আল্লাহর নিদর্শনাবলী দেখেও তা দ্বারা কোনাে শিক্ষা গ্রহণ না করে। দেখা ঘটনাবলী ও দৃশ্যাবলীর পশ্চাতে আল্লাহর কী মহৎ উদ্দেশ্য রয়েছে তা উপলব্ধি না করে অধােপতনের কত নিম্নস্তরে পৌছতে পারে, এ পর্যন্ত তার বিবরণ দেয়ার পর এবার স্বয়ং রসূল(স.)-কে সম্বােধন করে সান্ত্বনা দেয়া হচ্ছে যে, ‘উক্ত অধপতিত মানব সমাজের অনেকের ক্ষেত্রেই তার হেদায়াতের চেষ্টা ব্যর্থ হবে'(আয়াত ৫২-৫৩) এ দুটো আয়াতে তাদের চিত্রিত করা হয়েছে মৃত হিসাবে, যার জীবন নেই, চিত্রিত করা হয়েছে বধির হিসাবে যার শ্রবণশক্তি নেই, তাকে চিত্রিত করা হয়েছে অন্ধ হিসাবে, যার দৃষ্টিশক্তি নেই এবং যে পথের সন্ধান পায় না। বিশ্ব প্রকৃতি থেকে যার চেতনা ও অনুভূতির যােগসূত্র ছিন্ন হয়ে গেছে এবং ছিন্ন হওয়ার কারণে বিশ্ব প্রকৃতির নিয়মবিধি বােঝে না, সে যথার্থই মৃত। তার কোনাে জীবনীশক্তি নেই। তার জীবন নিছক একটা পাশবিক জীবন- বরং তার চেয়ে ও ভ্রষ্ট এবং হীন। একটা পশুও তার জন্মগত স্বভাব প্রকৃতি দ্বারা চালিত হয় এবং সে ক্ষেত্রে তার স্বভাব কখনাে তাকে বিপথগামী করে না বা তার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে না। যে ব্যক্তি আল্লাহর নিদর্শনাবলীর আওয়ায শুনতে পায় না, তার কান থাকলেও সে বধির। আর যে ব্যক্তি প্রকৃতির রাজ্যে ছড়ানাে আল্লাহর অসংখ্য নিদর্শন দেখতে পায় না, তার পর মতাে দুটো চোখ থাকলেও আসলে সে অন্ধ। ‘তুমি তাে শুধু তাকেই শােনাতে পারবে, যে আমার আয়াতগুলােতে বিশ্বাসী।’ বস্তুত এ জাতীয় লােকেরাই দাওয়াত শােনে। কেননা তাদের হৃদয় জীবন্ত, তাদের চোখ খােলা। তাদের বােধশক্তি নিখুত। তাই তারা শােনে ও ইসলাম গ্রহণ করে। দাওয়াত তাে মানুষের স্বভাব প্রকৃতিকে সচকিত ও সচেতন করে মাত্র । তাই সে দাওয়াত গ্রহণ করে।

*বার্ধক্যে এসে শিশুর মতো হয়ে যাওয়া : পরবর্তী অধ্যায়ে একটা নতুন বিষয় আলােচিত হয়েছে, এটা চারপাশের প্রাকৃতির দৃশ্যাবলী সংক্রান্ত নয়, বরং মানুষের আভ্যন্তরীণ সত্ত্বার সাথে এবং তার পার্থিব জীবনের ক্রমবিকাশের সাথে সংশ্লিষ্ট। অতপর ইহকালীন জীবন থেকে আলােচনা পরকালীন জীবন পর্যন্ত গড়িয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আল্লাহ তায়ালা তােমাদেরকে এক দুর্বল অবস্থা থেকে সৃষ্টি করেছেন…'(আয়াত ৫৪-৫৭) এ এক সুদীর্ঘ সফর। এর প্রথমাংশ দেখা যায় জীবনের ইহকালীন অংশ। আর শেষাংশ এমনভাবে চিত্রিত দেখা যায়, মনে হয় যেন তা চোখের সামনেই রয়েছে। যার জীবন্ত মন, জাগ্রত শ্রবণশক্তি ও দৃষ্টিশক্তি আছে, তার জন্যে এ সফর শিক্ষাপ্রদ। ‘আল্লাহ তায়ালা তোমাদের দুর্বল অবস্থা থেকে সৃষ্টি করেছেন’ এখানে এ কথা বলা হয়নি যে, আল্লাহ তায়ালা তােমাদের দুর্বল করে বা দুর্বল অবস্থায় সৃষ্টি করেছেন। এ দ্বারা বুঝানাে হয়েছে, দুর্বলতা হলো তাদের সত্ত্বার একেবারে প্রথম অবস্থা। আর আয়াতে যে দুর্বলতার কথা বলা হয়েছে, তা মানবসত্ত্বার নির্মাণে বহু বৈশিষ্ট্য ও তাৎপর্যের আভাস দেয়। প্রথমত এটা তার দৈহিক কাঠামাের দুর্বলতার আভাস দেয়। এই দুর্বলতা সেই ক্ষুদ্র ও সুক্ষ। জীবকোষের মধ্যে নিহিত, যা থেকে ভ্রুণের জন্ম হয়। এরপর ভ্রুণে ও ভ্রণের ক্রমবিকাশের বিভিন্ন স্তরে এই দুর্বলতা প্রকাশ পায়। মানুষ এসব স্তরে দুর্বল থাকে। এরপর আসে তার শৈশব ও কৈশাের । শৈশব ও কৈশোর থেকে উত্তরণ ঘটে যৌবনে। এছাড়া মাটিও মানুষ সৃষ্টির একটা দুর্বল উপাদান। আল্লাহ তায়ালা যদি এই মাটির ভেতরে প্রাণ ফুঁকে না দিতেন তাহলে তার জড় বা জৈব রূপই বহাল থাকতাে, যা মানবীয় কাঠামাের দৃষ্টিতে খুবই দুর্বল। বিভিন্ন রকমের ভাবাবেগ, ঝোঁক ও হুজুগের সামনে মানুষের মনস্তাত্ত্বিক দুর্বলতাও তার দুর্বলতার অন্যতম উপাদান। আল্লাহর পক্ষ থেকে যদি আধ্যাত্মিক উপাদান ফুঁকে দেয়া না হতাে এবং মানব সত্ত্বার ভেতরে বিভিন্ন যােগ্যতা ও প্রতিভার সৃষ্টি করা না হতাে, তাহলে মানুষ যে কোনাে প্রাণীর চেয়ে দুর্বল ও অক্ষম হতাে। উল্লেখ্য, পৃথিবীতে বিরাজমান যে কোনাে প্রাণী মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে আগত ‘ইলহাম’ বা প্রজ্ঞার অনুসারী। ‘আল্লাহ তায়ালা তােমাদের দুর্বল অবস্থা থেকে সৃষ্টি করেছেন, তারপর দুর্বলতা থেকে সবলতার সৃষ্টি করেছেন…’ ইতিপূর্বে দুর্বলতা সংক্রান্ত আলােচনায় যে যে দিক দিয়ে দুর্বলতার উল্লেখ করেছি, এখানে সেসব দিক দিয়েই সবলতা ও সক্ষমতা বুঝানাে হয়েছে। অর্থাৎ দৈহিক কাঠামাের সবলতা, মানবিক সত্ত্বার সবলতা এবং মনস্তাত্ত্বিক ও বুদ্ধিবৃত্তির সবলতা। ‘সবলতার পর আবারাে দুর্বলতা ও বার্ধক্যের সৃষ্টি করেছেন।’ এখানে দুর্বলতা দ্বারা মানব সত্ত্বার সার্বিক দুর্বলতা বুঝানাে হয়েছে। বার্ধক্য জীবনের এমন একটা স্তর, যা শৈশবের দিকে প্রত্যাবর্তনের শামিল এবং বার্ধক্যের শুরু থেকেই মানুষের ভেতরে শৈশবের বৈশিষ্ট্যগুলাে দেখা দিতে আরম্ভ করে। কখনাে কখনাে এর সাথে যুক্ত হয় মানসিক অধােপতন, যা ইচ্ছার দুর্বলতা থেকে জন্ম নেয়। ফলে একজন বৃদ্ধও কখনাে কখনাে শিশুর মতাে চপল, অস্থিরমতি ও আবেগােদ্দীপ্ত হয়ে থাকে এবং নিজের আবেগ সংযত করতে পারে না। এখানে ‘শাইবা’ শব্দ দ্বারা বার্ধক্যের জরাজীর্ণ অবস্থার দৃশ্য ও আকৃতি তুলে ধরা হয়েছে। যারা দীর্ঘ জীবন লাভ করে, তাদের কারাে জীবনের এই স্তরগুলাে অতিক্রম না করে উপায় থাকে না এবং এ স্তরগুলাে নির্দিষ্ট সময় অতিক্রম করেও আসে না। মানব জীবনে এই স্তরগুলাের অনিবার্যতা থেকে প্রমাণিত হয় যে, সে এক মহা পরাক্রান্ত ও প্রাজ্ঞ সত্ত্বার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, যিনি যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন, যা ইচ্ছা পরিকল্পনা করেন এবং নিজের নির্ভুল জ্ঞান ও নিখুঁত পরিকল্পনা অনুসারে প্রত্যেক সৃষ্টির জন্যে আয়ুষ্কাল, জীবন মান ও জীবন স্তরসমূহ নির্ধারণ করেন। ‘যা ইচ্ছা করেন সৃষ্টি করেন এবং তিনি মহাজ্ঞানী ও মহাশক্তিশালী।’ আর এই সুপরিকল্পিত ও সুনিয়ন্ত্রিত সৃষ্টির একই রকম সুপরিকল্পিত বিলুপ্তি ঘটাও অবধারিত। এ বিলুপ্তিকে কোরআনের নিজস্ব রীতিতে কেয়ামতের একটা দৃশ্যের মাধ্যমে চিত্রিত করা হয়েছে। যেদিন কেয়ামত সংঘটিত হবে, অপরাধীরা শপথ করে বলবে, ‘তারা এক ঘন্টার বেশী অবস্থান করেনি…’ অর্থাৎ এই দিনটার আগের সব কিছুই তাদের অনুভূতিতে তুচ্ছ ও নগণ্য মনে হবে। তাই তারা কসম খেয়ে বলবে যে, তারা এক ঘন্টার বেশী সময় অবস্থান করেনি। এই কসম খাওয়া তাদের কবরে অবস্থানের মেয়াদকে কেন্দ্র করে হয়ে থাকতে পারে, অথবা জীবিত ও মৃত অবস্থায় পৃথিবীর সার্বিক অবস্থানকাল সম্পর্কেও হয়ে থাকতে পারে। ‘এভাবেই তারা প্রতারিত হতাে।’ অর্থাৎ সত্য ও বিশুদ্ধ সময় নির্ণয় করতে ব্যর্থ হতাে। অবশেষে নির্ভুল জ্ঞানের অধিকারী লােকেরা তাদের প্রকৃত তথ্যের দিকে ফেরাবে, ‘আর যাদের জ্ঞান ও ঈমান প্রদান করা হয়েছে, তারা বলবে, তােমরা তাে আল্লাহর বিধান অনুসারে কেয়ামতের দিন পর্যন্ত অবস্থান করেছো…'(আয়াত ৫৬) জ্ঞান ও ঈমানের অধিকারী এই লােকেরাও দৃশ্যমান পার্থিব জীবনের অপর পারের আখেরাতের জীবনের প্রতি বিশ্বাস রাখতাে। তারাই বিশুদ্ধ ও নির্ভুল জ্ঞানের অধিকারী এবং প্রজ্ঞাময় ঈমানের অধিকারী। তারা এ বিষয়টাকে আল্লাহর জ্ঞানের কাছে প্রত্যর্পণ করছে। তারা বলছে যে, এটা আল্লাহর বিধান দ্বারা নির্ধারিত মেয়াদ, তা দীর্ঘ হােক বা স্বল্প হােক, তাতে কিছু যায় আসে না। ওটাই ছিলাে নির্ধারিত মেয়াদ এবং তা কার্যকর হয়েছে। এ হচ্ছে কেয়ামতের দিন, কিন্তু তােমরা জানতে না। এরপর আখেরাতকে যারা অস্বীকার করতাে, তাদের পরিণতির কথা জানিয়ে সংক্ষেপে এ দৃশ্যের যবনিকা টানা হয়েছে, ‘সেদিন অত্যাচারীদের কোনাে ওযর আপত্তি তাদের উপকারে আসবে না…'(আয়াত ৫৭) অর্থাৎ তাদের কোনাে ওযর আপত্তি, দুঃখ প্রকাশ বা ক্ষমা প্রার্থনা গৃহীত হবে না এবং কাউকে ভৎর্সনা করে ক্ষান্ত থাকা হবে না। কেননা সেদিনটা হবে শুধু শাস্তিদানের- ভৎর্সনার নয়।

*দ্বীনের দাওয়াত অস্বীকারকারীদের গােয়ার্তুমি : এই হতাশাব্যঞ্জক ও শােচনীয় দৃশ্য থেকে এবার কাফেরদের বর্তমান গােয়ার্তুমি ও প্রত্যাখ্যানের দৃশ্যে ফিরে আসা হচ্ছে। পূর্ববর্তী দৃশ্যটা ছিল গােয়ার্তুমি ও প্রত্যাখ্যানের শাস্তির দৃশ্য। ‘আমি এই কোরআনে মানব জাতির জন্যে সব রকমের উদাহরণ দিয়েছি…'(আয়াত ৫৮-৫৯) উভয় দৃশ্যের মধ্যে স্থান ও কালের বিরাট ব্যবধান। তবে তা কোরআনে পাশাপাশিই বর্ণিত হচ্ছে, যেন উভয়ে উভয়ের খুব কাছে অবস্থিত। স্থান ও কালের ব্যবধান এখানে গুটিয়ে আনা হয়েছে। মানুষ এখন পুনরায় কোরআনের সামনেই অবস্থিত। এতে সব ধরনের উদাহরণ ও সব ধরনের সম্বােধন বিদ্যমান। মন মগজকে জাগ্রত করার সব উপকরণ এতে বর্তমান। এতে হরেক রকমের প্রভাব সৃষ্টিকারী পরশ বুলানো রয়েছে, সকল মন ও বিবেক সব পরিবেশে সম্বােধন করা হয়েছে। সম্বােধন করা হয়েছে মানব মনকে সব রকমের পরিস্থিতিতে এবং সকল পদ্ধতিতে, কিন্তু এসব কিছুর পরেও কাফেররা সব নিদর্শন ও যুক্তি প্রমাণ অস্বীকার করে। শুধু অস্বীকার করেই ক্ষান্ত হয় না, বরং বিশুদ্ধ জ্ঞানের অধিকারীদের ওপর ঔদ্ধত্য প্রকাশ করে এবং বলে, ‘তারা বাতিলপন্থী। তাদের কাছে তুমি যে কোনাে নিদর্শন নিয়ে আসাে না কেন, তারা বলবে যে, তােমরাই বাতিলপন্থী'(আয়াত ৬০) ৬১ নং আয়াতে এই ঔদ্ধত্য সম্বন্ধে মন্তব্য করা হয়েছে। বলা হয়েছে, এভাবেই এবং এ কারণেই এসব অজ্ঞ লােকের হৃদয়ে সিল মেরে দেয়া হয়েছে। আল্লাহর নিদর্শনাবলী উপলব্ধি করার জন্যে তাদের মন উন্মুক্ত হয় না। তারা সঠিক জ্ঞানের অধিকারীদের ওপর ঔদ্ধত্য প্রদর্শন করে। তাই আল্লাহ তায়ালা তাদের বােধশক্তিকে নিষ্ক্রিয় করে দিয়েছেন এবং সিল মেরে দিয়েছেন। তারা এর উপযুক্ত। কেননা আল্লাহ তায়ালা তাদের মন ও বিবেকের খবর জানেন। এবার আসছে সূরার সর্বশেষ বক্তব্য। ইতিপূর্বে মােশরেকদের প্রকৃতি, ইতিহাস, তাদের সত্ত্বার অভ্যন্তরের তথ্যসমূহ এবং তাদের সামষ্টিক জীবনের তথ্যসমূহ জানিয়ে উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করা হয়েছে, কিন্তু এসব সত্তেও তারা কুফরী করেছে ও ঔদ্ধত্য প্রকাশ করেছে। তাই সূরার সর্বশেষ আয়াতে রসূল(স.) ও তাঁর সাথী মােমেনদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে, ‘অতপর ধৈর্যধারণ করাে, নিশ্চয়ই আল্লাহর প্রতিশ্রুতি সত্য…'(আয়াত ৬০) কষ্টকর দীর্ঘ পথ পাড়ি দেয়ার সময় কখনাে কখনাে মনে হয় এ পথের বুঝি শেষ নেই। এক্ষেত্রে মােমেনদের পথ চলার একমাত্র অবলম্বন হয়ে থাকে ধৈর্য, আল্লাহর অকাট্য প্রতিশ্রুতিতে অটুট আস্থা এবং সন্দেহ-সংশয়, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ও অস্থিরতা ঝেড়ে ফেলে স্থিতিশীল হওয়া। অনন্যরা যতােই অস্থির হােক, সত্যকে যতােই মিথ্যা প্রতিপন্ন করুক, আল্লাহর প্রতিশ্রুতিতে যতােই সংশয় পােষণ করুক, মুমিনের ধৈর্য, প্রত্যয় ও স্থিরতা অবলম্বন করতে হবে। কারণ মানুষ প্রকৃত জ্ঞান থেকে বঞ্চিত। প্রত্যয়ের উপকরণ তাদের হস্তগত নয়। যারা মােমেন এবং যারা আল্লাহর রজ্জু ধারণ করে রেখেছে, তাদের পথ ধৈর্য, বিশ্বাস ও প্রত্যয়ের পথ। এ পথ যতাে দীর্ঘ হােক এবং এর গন্তব্যস্থল যতােই দৃষ্টির আড়ালে থাকুক, তাতে কিছুই আসে যায় না। এভাবেই শেষ হচ্ছে সূরা আর রােম, যার শুরুই হয়েছিলাে কয়েক বছর পর রােমকদের বিজয় ও মােমেনদের সাহায্যের প্রতিশ্রুতির মধ্য দিয়ে। সূরাটা শেষ হচ্ছে আল্লাহর সাহায্য না আসা পর্যন্ত ধৈর্য ধারণের শিক্ষার মধ্য দিয়ে। অবিশ্বাসীদের সমস্ত উপহাস ও বিভ্রান্তিকর অপচেষ্টার ওপর ধৈর্য ধারণের নির্দেশের মধ্য দিয়ে। কাজেই দেখা যাচ্ছে, এ সূরার সূচনা ও সমাপ্তি সুসমন্বিত। আল্লাহর সত্য প্রতিশ্রুতি- যা কখনাে মিথ্যা প্রতিপন্ন করা যায় না, তা ঈমানদারদের অন্তরে বদ্ধমূল করা ও তাদের দৃঢ় প্রত্যয়কে দৃঢ়তর করার মধ্য দিয়ে সূরা আর রােম সমাপ্ত হলাে।

তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
# অনুগ্রহের বারিধারা বর্ষণের সুসংবাদ দেবার জন্য।
# এটি জাহাজ চলাচলে সহায়তা দানকারী অন্য এক ধরনের বাতাসের আলোচনা। প্রাচীনকালে বাতাসের সহায়তায় চলাচলকারী নৌযান ও জাহাজসমূহের সফর তো বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অনুকূল বাতাসের ওপরই নির্ভরশীল ছিল। প্রতিকূল বাতাস তাদের জন্য ছিল ধ্বংসের সূচনা। তাই বৃষ্টি বহনকারী বাতাসের পর ঐ বাতাসের উল্লেখ করা হয়েছে একটি বিশেষ অনুগ্রহ হিসেবে।
# ব্যবসায়ের উদ্দেশ্যে সফর করো।
# এক ধরনের নির্দেশাবলী তো বিশ্ব-প্রকৃতির সর্বত্র ছড়িয়ে রয়েছে। মানুষের জীবনের দৈনন্দিন কাজে কর্মে প্রায় সর্বত্রই সেগুলোর সাথে মানুষের সংযোগ ঘটে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে বায়ু চলাচল ব্যবস্থা। ওপরের আয়াতে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। অন্য এক ধরনের নিদর্শনাবলী আল্লাহর নবীগণ মু’জিযা, আল্লাহর বাণী, নিজেদের অসাধারণ পবিত্র চরিত্র এবং মানব সমাজে নিজেদের জীবনদায়ী প্রভাবের আকারে নিয়ে এসেছেন। এ দু’ধরনের নিদর্শন আসলে একটি সত্যের প্রতিই ইঙ্গিত করে। তা হচ্ছে, নবীগণ যে তাওহীদের যে শিক্ষা দিচ্ছেন তাই সঠিক। তাঁর মধ্যে প্রত্যেকটি নিদর্শনই অন্যটির সমর্থক। বিশ্ব-জাহানের নিদর্শনাবলী নবীগণের বর্ণনার সত্যতা প্রমাণ করে এবং নবীগণ যেসব নিদর্শন এনেছেন সেগুলো বিশ্ব-জাহানের নিদর্শনাবলী যে সত্যের প্রতি ইঙ্গিত করছে সেগুলোকে উন্মুক্ত করে দেয়।
# এ দু’টি নিদর্শন থেকে চোখ বন্ধ করে তাওহীদ অস্বীকার করার ওপর অবিচল থাকে এবং আল্লাহর বিরুদ্ধে বিদ্রোহই করে যেতে থাকে।
# এখানে যেভাবে একের পর এক নবুওয়াত ও বৃষ্টির আলোচনা করা হয়েছে তা থেকে এ সত্যটির প্রতি একটি সূক্ষ্ম ইঙ্গিতও পাওয়া যায় যে, নবীর আগমনও মানুষের নৈতিক জীবনের জন্য ঠিক তেমনি অনুগ্রহস্বরূপ যেমন বৃষ্টির আগমন তাঁর বৈষয়িক জীবনের জন্য অনুগ্রহ হয়ে দেখা দেয়। আকাশ থেকে বারিধারা নেমে আসার ফলে যেমন মৃত পতিত জমি অকস্মাৎ জীবিত হয়ে ওঠে এবং তাঁর চতুর্দিকে শস্য শ্যামলিমায় ভরে যায়, ঠিক তেমনি আসমানী ওহী অবতীর্ণ হওয়ার ফলে নৈতিকতা ও আধ্যাত্মিকতার বিরাণ দুনিয়া সজীব হয়ে ওঠে এবং সেখানে শ্রেষ্ঠ গুণাবলী ও প্রশংসিত আচার আচরণের উদ্যানগুলো পত্র-পুষ্পে সুশোভিত হতে থাকে। এটা কাফেরদের দুর্ভাগ্যের ব্যাপার যে, আল্লাহর পক্ষ থেকে এ নিয়ামত যখনই তাদের কাছে আসে, তারা তা অস্বীকার করে এবং তাকে নিজেদের জন্য রহমতের সুসংবাদ মনে করার পরিবর্তে মৃত্যুর বারতা মনে করতে থাকে।
# রহমতের বারিধারার পরে যখন শস্যক্ষেত সবুজ শ্যামল হয়ে ওঠে তখন যদি এমন কোন কঠিন শৈত্য বা উষ্ণ বায়ুপ্রবাহ চলে, যার ফলে পাকা শস্য একেবারে জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
# তখন তারা আল্লাহর কুৎসা গাইতে এবং তাকে দোষারোপ করতে থাকে এই বলে যে, আমাদের ওপর এ কেমন বিপদ চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। অথচ যখন আল্লাহ‌ তাদের ওপর তাঁর অনুগ্রহধারা বর্ষণ করে চলছিলেন তখন তারা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার পরিবর্তে তাঁর অমর্যাদা করেছিল। এখানে আবার এ বিষয়বস্তুর প্রতি একটি সূক্ষ্ম ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে যে, যখন আল্লাহর রসূল তাঁর পক্ষ থেকে রহমতের পয়গাম নিয়ে আসেন তখন লোকেরা তাঁর কথা মেনে নেয় না এবং সেই নিয়ামত প্রত্যাখ্যান করে। তারপর যখন তাদের কুফরীর কারণে জালেম ও স্বৈরাচারী একনায়কদেরকে তাদের ওপর চাপিয়ে দেন এবং তারা জুলুম-নিপীড়নের যাঁতাকলে তাদেরকে পিষ্ট করতে এবং মানবতার নিকুচি করতে থাকে তখন তারাই আল্লাহকে গালি দিতে থাকে এবং তিনি এ কেমন জুলুমে পরিপূর্ণ দুনিয়া তৈরি করেছেন বলে দোষারোপও করতে থাকে।
# এখানে এমনসব লোককে মৃত বলা হয়েছে। যাদের বিবেক মরে গেছে, যাদের মধ্যে নৈতিক জীবনের ছিটেফোটাও নেই এবং যাদের আপন প্রবৃত্তির দাসত্ব, জিদ ও একগুয়েমি সেই মানবীয় গুণপনার অবসান ঘটিয়েছে যা মানুষকে হক কথা বুঝার ও গ্রহণ করার যোগ্য করে তোলে।
# বধির হচ্ছে এমনসব লোক যারা নিজেদের মনের দুয়ার এমনভাবে অর্গলবদ্ধ করেছে যে, সবকিছু শুনেও তারা কিছুই শুনে না। তারপর এ ধরনের লোকেরা যখন এমন প্রচেষ্টাও চালায় যাতে সত্যের আহ্বানের ধ্বনি তাদের কানে পৌঁছতেই না পারে এবং আহ্বায়কদের চেহারা দেখতেই দূরে সরে যেতে থাকে তখন আর কে তাদেরকে শুনাবে এবং কী-ই বা শুনাবে?
# অন্ধদের হাত ধরে তাদেরকে সারা জীবন সঠিকপথে চালানো তো নবীর কাজ নয়। তিনি তো কেবল সঠিক পথ দেখিয়ে দিতে পারেন। কিন্তু যাদের দেখার চোখ অন্ধ হয়ে গেছে এবং নবী তাদেরকে যে পথ দেখাতে চাচ্ছেন তা যারা দেখতেই পায় না তাদেরকে পথ দেখানোর ক্ষমতা নবীর নেই।
# শৈশব, যৌবন ও বার্ধক্য। এসব অবস্থা তাঁরই সৃষ্ট। তিনি যাকে চান দুর্বল করে সৃষ্টি করেন, যাকে চান তাকে শক্তিশালী করেন, যাকে চান তাকে শৈশব থেকে যৌবনে পদার্পণ করতে দেন না, যাকে চান তাকে যৌবনে মৃত্যু দান করেন, যাকে চান তাকে দীর্ঘ বয়স দান করার পরও সুস্থ সবল রাখেন, যাকে চান তাকে গৌরবান্বিত যৌবনকালের পরে বার্ধক্যে এমন কষ্টকর পরিণতির দান করেন যার ফলে দুনিয়াবাসী শিক্ষালাভ করে, এসবই তাঁর ইচ্ছা। মানুষ নিজের জায়গায় বসে যতই অহংকারে মত্ত হয়ে উঠুক না কেন আল্লাহর শক্তির শৃঙ্খলে সে এমনভাবে আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধা যে, আল্লাহ‌ তাকে যে অবস্থায়ই রাখুন না কেন তার মধ্যে কোনো পরিবর্তন আনা তাঁর পক্ষে কোনোক্রমেই সম্ভবপর নয়।
# কিয়ামত যার আসার খবর দেয়া হচ্ছে।
# মৃত্যুকাল থেকে কিয়ামতের এই সময় পর্যন্ত। এ দু’টি সময়ের মধ্যে দশ বিশ হাজার বছর অতিক্রান্ত হয়ে গেলেও তারা মনে করবে তারা যেন এই মাত্র কয়েক মুহূর্ত আগে ঘুমিয়েছিল এবং এখন অকস্মাৎ একটি দুর্ঘটনা তাদেরকে জাগিয়ে দিয়েছে।
# দুনিয়াতেও তারা এমনিই ভুল আন্দাজ-অনুমান করতো। সেখানেও সত্য অনুধাবন করতে পারতো না। এ জন্যই বলে বেড়াতো কোনো কিয়ামত টিয়ামত হবে না, মরার পরে আর কোনো জীবন নেই এবং কোনো আল্লাহর সামনে হাজির হয়ে আমাদেরকে জবাবদিহি করতে হবে না।
# এর অন্য অনুবাদ এও হতে পারে যে, তাদের কাছে চাওয়া হবে না যে, “তোমাদের রবকে সন্তুষ্ট করো” কারণ তাওবা, ঈমান ও সৎকাজের দিকে ফিরে আসার সকল সুযোগই তারা হারিয়ে বসবে এবং পরীক্ষার সময় পার হয়ে গিয়ে এখনি ফল প্রকাশের সময় সমাগত হবে।
# ওপরের ৪৭ নং আয়াতে যে প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে সেদিকেই ইঙ্গিত করা হয়েছে। সেখানে মহান আল্লাহ‌ নিজের এ নিয়ম বর্ণনা করেছেন যে, যারাই আল্লাহর রসূলদের নিয়ে আসা এসব সুস্পষ্ট নিদর্শনের মোকাবিলা করেছে মিথ্যাচার, হাসি-তামাসা ও হঠকারিতার মাধ্যমে আল্লাহ‌ অবশ্যই এ ধরনের অপরাধীদের থেকে প্রতিশোধ নিয়েছেন।فَانْتَقَمْنَا مِنَ الَّذِينَ أَجْرَمُوا আর আল্লাহ‌ মু’মিনদের সাহায্য করবেন এটা তাঁর ওপর মু’মিনদের অধিকার وَكَانَ حَقًّا عَلَيْنَا نَصْرُ الْمُؤْمِنِينَ ।
# শত্রুরা যেন তোমাদের এতই দুর্বল না পায় যে, তাদের হৈ চৈ ও শোরগোলে তোমরা দমিত হবে অথবা তাদের মিথ্যাচার ও দোষারোপ করার অভিযান দেখে তোমরা ভীত হয়ে যাও কিংবা হাসি-তামাসা ও ঠাট্টা-বিদ্রূপবাণে বিদ্ধ হয়ে তোমরা হিম্মত হারিয়ে ফেলো অথবা তাদের হুমকি-ধমকি ও শক্তির প্রকাশে এবং জুলুম নির্যাতনে তোমরা ভীত হয়ে যাও কিংবা তাদের ফেলা লালসার টোপে তোমরা আটকা পড়ে যাও অথবা জাতীয় স্বার্থের নামে তারা তোমাদের কাছে যে আবেদন জানাচ্ছে তাঁর ভিত্তিতে তোমরা তাদের সাথে সমঝোতা করে নিতে উদ্যত হও। এর পরিবর্তে তারা তোমাকে নিজেদের উদ্দেশ্য সচেতনতায় এত বেশি সতর্ক এবং নিজেদের বিশ্বাস ও ঈমানে এত বেশি পাকাপোক্ত এবং এ সংকল্পে এত বেশি দৃঢ়চেতা এবং নিজেদের চরিত্রে এত বেশি মজবুত পাবে যে, কোনো ভয়ে তোমাদের ভীত করা যাবে না, কোনো মূল্যে তোমাদের কেনা যাবে না, কোনো প্রতারণার জালে তোমাদের আবদ্ধ করা যাবে না, কোনো ক্ষতি, কষ্ট বা বিপদে ফেলে তোমাদেরকে পথ থেকে সরানো যাবে না এবং দ্বীনের ব্যাপারে কোনো প্রকার আপোষ বা লেনদেনের কারবারও তোমাদের সাথে করা যেতে পারে না। “অবিশ্বাসীরা যেন তোমাকে গুরুত্বহীন মনে না করে”-আল্লাহর এ ছোট্ট একটি বাণীর আলঙ্কারিক বাক্য-বিন্যাসের মধ্যেই এ সমস্ত বিষয়বস্তু লুকিয়ে রাখা হয়েছে। আল্লাহ‌ তাঁর শেষ নবীকে যেমন শক্তিশালী ও গুরুত্ববহ দেখতে চাচ্ছিলেন তিনি ঠিক তেমনটি হতে পেরেছিলেন কিনা এখন ইতিহাসই তা প্রমাণ করবে। তাঁর সাথে যে ব্যক্তিই যে ময়দানে শক্তি পরীক্ষা করেছে সেই ময়দানেই সে হেরে গেছে। শেষ পর্যন্ত এ মহান ব্যক্তিত্ব এমন বিপ্লব সৃষ্টি করেন যার পথরোধ করার জন্য আরবের কাফের ও মুশরিক সমাজ তাদের সর্বশক্তি নিয়োগ ও সমস্ত কলা-কৌশল প্রয়োগ করেও পুরোপুরি ব্যর্থ হয়ে গেছে।

তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ বলেছেন:-
৪৬-৪৭ নং আয়াতের তাফসীর:

এখানে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর ক্ষমতা ও কয়েকটি নিদর্শনের বর্ণনা দিচ্ছেন। বৃষ্টির পূর্বে এর সুসংবাদ দিয়ে বাতাস প্রেরণ করেন। অতঃপর তাঁর রহমত তথা বৃষ্টি নাযিল করে মৃত জমিনকে জীবিত করেন এবং মানুষের মনে স্বস্তি নিয়ে আসেন। বৃষ্টি বর্ষণের পূর্বে মানুষ কত অস্বস্তি বোধ করছিল, সবুজ-শ্যামল ধানক্ষেত পানির জন্য হাহাকার করছিল। আল্লাহ তা‘আলা এ রহমত দিয়ে মানুষ, গাছ-পালা সব কিছুকে তাজা করে দিলেন।

আল্লাহ তা‘আলার অন্যতম আরেকটি নিদর্শন হলন হাজার-হাজার টনের ওজনের জাহাজ পানির ওপর ভাসমান রেখে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে ভ্রমণ করান। অথচ সে পানির ওপর সামান্য একটু লোহা রাখা যায় না। এটা আল্লাহ তা‘আলার কুদরত, তাঁর নির্দেশেই চলে, আল্লাহ তা‘আলা ইচ্ছা করলে তা ডুবিয়ে দিতে পারেন। আল্লাহ তা‘আলা এ অনুগ্রহ দান করেছেন যাতে তোমরা জীবনোপকরণ অন্বেষণ করতে পার এবং আল্লাহ তা‘আলার এ নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় কর। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সম্বোধন করে বলছেন তোমার পূর্বে অনেক নাবী-রাসূল প্রেরণ করেছিলাম, যারা তাদের প্রতি ঈমান আনেনি, আমি সে সকল অপরাধীদের থেকে প্রতিশোধ নিয়েছিলাম। কিন্তু যারা মু’মিন ছিল তাদেরকে সহযোগিতা করেছিলাম। আর মু’মিনদেরকে সহযোগিতা করাই আমার দায়িত্ব।

আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

১. বৃষ্টি আল্লাহ তা‘আলার একটি বিশেষ নেয়ামত, যার দ্বারা মানুষসহ সব কিছুর নব জীবন সঞ্চার হয়।
২. যারা অন্যায় কাজ করে আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে শাস্তি প্রদান করেন এবং মু’মিনদেরকে সদা-সর্বদা সাহায্য করেন।
৪৮-৫১ নং আয়াতের তাফসীর:

এ আয়াতগুলোতে বাতাস প্রেরণ করার হেকমত বর্ণনা করা হচ্ছে। মূলত আল্লাহ তা‘আলা বাতাস প্রেরণ করে মেঘমালাকে সঞ্চালন করেন। ঐ মেঘমালা থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করে মৃত জমিনকে জীবিত করেন। অতঃপর সেই জীবিত জমিন থেকে শস্য উৎপন্ন করেন। আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন:

(وَهُوَ الَّذِيْ يُرْسِلُ الرِّيٰحَ بُشْرًاۭ بَيْنَ يَدَيْ رَحْمَتِه۪ ط حَتّٰيٓ إِذَآ أَقَلَّتْ سَحَابًا ثِقَالًا سُقْنٰهُ لِبَلَدٍ مَّيِّتٍ فَأَنْزَلْنَا بِهِ الْمَا۬ءَ فَأَخْرَجْنَا بِه۪ مِنْ كُلِّ الثَّمَرٰتِ ط كَذٰلِكَ نُخْرِجُ الْمَوْتٰي لَعَلَّكُمْ تَذَكَّرُوْنَ)‏

“তিনিই স্বীয় অনুগ্রহের প্রাক্কালে বায়ুকে সুসংবাদবাহীরূপে প্রেরণ করেন। এমনকি যখন তা ঘন মেঘ বহন করে তখন আমি তা নির্জীব ভূখণ্ডের দিকে চালনা করি, পরে তা হতে বৃষ্টি বর্ষণ করি, তৎপর তার দ্বারা সর্বপ্রকার ফল উৎপাদন করি। এভাবেই আমি মৃতকে জীবিত করি যাতে তোমরা শিক্ষা লাভ কর।” (সূরা আ‘রাফ ৭:৫৭)

এরপর আল্লাহ তা‘আলা বলেন, যদি আমি এমন বায়ু প্রেরণ করি যার ফলে তারা দেখতে পায় যে, তাদের শস্য পীতবর্ণ ধারণ করেছে তখন তারা অকৃতজ্ঞ হয়ে পড়ে।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(اَفَرَءَیْتُمْ مَّا تَحْرُثُوْنَﮎ ءَاَنْتُمْ تَزْرَعُوْنَھ۫ٓ اَمْ نَحْنُ الزّٰرِعُوْنَﮏ لَوْ نَشَا۬ئُ لَجَعَلْنٰھُ حُطَامًا فَظَلْتُمْ تَفَکَّھُوْنَﮐ اِنَّا لَمُغْرَمُوْنَﮑﺫ)

“তোমরা যে বীজ বপন কর সে বিষয়ে চিন্তা করেছ কি? তোমরা কি ওকে অঙ্কুরিত কর, না আমি অঙ্কুরিত করি? আমি ইচ্ছা করলে একে খড়কুটোয় পরিণত করতে পারি, তখন তোমরা হতবুদ্ধি হয়ে পড়বে, (বলবে:) আমাদের তো বরবাদ হয়েছে!” (সূরা ওয়াকিয়াহ ৫৬:৬৩-৬৭)

মূলত এমনটি করা উচিত নয় বরং আল্লাহ তা‘আলার কৃতজ্ঞতা স্বীকার করা উচিত। হয়তবা এটি হতে পারে তার জন্য একটি পরীক্ষা, এমতাবস্থায় সে যদি আল্লাহ তা‘আলার কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে এর দ্বারা আল্লাহ তা‘আলা তাকে আরো সম্পদ বৃদ্ধি করে দিতে পারেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(لَئِنْ شَكَرْتُمْ لَأَزِيْدَنَّكُمْ وَلَئِنْ كَفَرْتُمْ إِنَّ عَذَابِيْ لَشَدِيْدٌ)‏

‘যদি তোমরা কৃতজ্ঞ হও তোমাদেরকে অবশ্যই (আমার নেয়ামত) বৃদ্ধি করে দেব আর যদি অকৃতজ্ঞ হও তাহলে অবশ্যই আমার শাস্তি‎ কঠোর।’ (সূরা ইবরাহীম ১৪:৭)

অতএব বিপদে নিরাশ না হয়ে ধৈর্যধারণ করতে হবে এবং আল্লাহ তা‘আলার প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বীকার করতে হবে।

আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

১. আল্লাহ তা‘আলা বৃষ্টি দ্বারা যেমন মৃত জমিনকে জীবিত করেন তেমনি মানুষকে মৃত্যুর পর দুনিয়ার কর্মের হিসাব দেয়ার জন্য জীবিত করা হবে।
২. বিপদে নিরাশ না হয়ে ধৈর্যধারণ করতে হবে এবং সর্বাবস্থায় আল্লাহ তা‘আলার শুকরিয়া আদায় করতে হবে।
৫৪ নং আয়াতের তাফসীর:

এখানে আল্লাহ তা‘আলা সামগ্রীক মানব জীবনের তিনটি অবস্থা তুলে ধরছেন। প্রথমত মানুষকে সৃষ্টি করেছেন দুর্বল বস্তু তথা বীর্য থেকে। দ্বিতীয়ত এ দুর্বল বীর্য থেকে সৃষ্টি করার পর শিশুত্বের দুর্বলতা থেকে উত্তরণ করে সুঠাম দেহ ও গঠন দ্বারা যৌবন বয়সে শক্তিশালী করেছেন। তৃতীয়ত আবার বৃদ্ধ বয়সে দুর্বল অবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে এসেছেন। যে মানুষকে এত দুর্বল করে সৃষ্টি করা হয়েছে তার অঙ্ককার দেখানোর কোন সুযোগ নেই।

আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

১. মানুষকে দুর্বল জিনিস থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে যার ফলে অবশেষে সে দুর্বলই হয়ে পড়ে।
৫৫-৫৭ নং আয়াতের তাফসীর:

এ আয়াতগুলোতে আলোচনা করা হয়েছে যে, কাফির-মুশরিকরা কিয়ামতের মাঠের ভয়াবহতা ও তাদের দূরবস্থা দেখে আল্লাহ তা‘আলার নামে শপথ করে বলবে: আমরা দুনিয়াতে অল্প কিছুক্ষণ অবস্থান করেছি। এ ওজর পেশ করবে এজন্য যে, যাতে শাস্তি থেকে বেঁচে যায়। সুতরাং এ অল্প সময়ের জন্য আমরা এতো বড় শাস্তির হকদার হতে পারি না। তখন তাদের বিরুদ্ধে মু’মিনগণ সাক্ষ্য দিয়ে বলবে যে, বরং তোমরা পুনরুত্থান পর্যন্ত দুনিয়াতে অবস্থান করেছ। অতএব তখন তাদের কোন ওজর কবূল করা হবে না এবং তাদেরকে কোন সুযোগও প্রদান করা হবে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(وَيَوْمَ نَبْعَثُ مِنْ كُلِّ أُمَّةٍ شَهِيْدًا ثُمَّ لَا يُؤْذَنُ لِلَّذِيْنَ كَفَرُوْا وَلَا هُمْ يُسْتَعْتَبُوْنَ)‏

“যেদিন আমি প্রত্যেক সম্প্রদায় হতে এক একজন সাক্ষী উত্থিত করব সেদিন কাফিরদেরকে অনুমতি দেয়া হবে না এবং তাদের ক্ষমা প্রার্থনা করারও সুযোগ দেয়া হবে না।” (সূরা নাহল ১৬:৮৪)

সুতরাং যারা কুফরী ও শির্ক করে নিজেদের ওপর জুলুম করেছে কিয়ামতের দিন তাদের ওজর কোন কাজে আসবে না। তাই প্রত্যেক জালিমদের সতর্ক হওয়া উচিত, যেদিন ওজর পেশ করার কোন সুযোগ থাকবে না সেদিন আসার পূর্বেই নিজেকে সংশোধন করে নেয়া।

আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

১. মৃত্যুর পর মানুষের ওজর-আপত্তি কোনই কাজে আসবে না।
২. কিয়ামত অবশ্যই বাস্তবায়িত হবে।
৩. যারা ঈমান ও সঠিক জ্ঞানের ওপর প্রতিষ্ঠিত তারা কিয়ামতের দিন সঠিক সাক্ষ্য দেবে।
৫৮-৬০ নং আয়াতের তাফসীর:

আল্লাহ তা‘আলা এ কুরআনে প্রত্যেক প্রকারের দৃষ্টান্ত বর্ণনা করেছেন যা আল্লাহ তা‘আলার একত্বের প্রমাণ বহন করে। তথাপি যারা কাফির, যারা আল্লাহ তা‘আলার প্রতি ঈমান আনে না তাদের সম্মুখে যত প্রকার দৃষ্টান্তই উপস্থাপন করা হোক না কেন তারা এগুলোকে জাদু ও মিথ্যা জিনিস বলে আখ্যায়িত করবে। মূলত যারা কাফির তাদের অবস্থাই এরূপ। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(وَلَوْ نَزَّلْنَا عَلَيْكَ كِتٰبًا فِيْ قِرْطَاسٍ فَلَمَسُوْهُ بِأَيْدِيْهِمْ لَقَالَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْآ إِنْ هٰذَآ إِلَّا سِحْرٌ مُّبِيْنٌ)‏

“আমি যদি তোমার প্রতি কাগজে লিখিত কিতাবও নাযিল করতাম আর তারা যদি তা হাত দিয়ে স্পর্শ করত তবুও কাফিরগণ বলত, ‘এটা স্পষ্ট জাদু ব্যতীত কিছুই নয়।” (সূরা আন‘আম ৬:৭)

আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:

(إِنَّ الَّذِيْنَ حَقَّتْ عَلَيْهِمْ كَلِمَتُ رَبِّكَ لَا يُؤْمِنُوْنَ وَلَوْ جَا۬ءَتْهُمْ كُلُّ اٰيَةٍ حَتّٰي يَرَوُا الْعَذَابَ الْأَلِيْمَ)

“নিশ্চয়ই যাদের বিরুদ্ধে তোমার প্রতিপালকের বাক্য সাব্যস্ত হয়ে গিয়েছে, তারা ঈমান আনবে না, যদিও তাদের নিকট প্রত্যেকটি নিদর্শন আসে (তবুও তারা ঈমান আনবে না) যতক্ষণ না তারা যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি প্রত্যক্ষ করবে।” (সূরা ইউনুস ১০:৯৭)

(يَطْبَعُ اللّٰهُ) অর্থাৎ তাদের অন্তরে এমন পর্দা দিয়ে দেন ফলে কল্যাণ তাদের অন্তরে প্রবেশ করে না, কোন জিনিসের প্রকৃত অবস্থা জানেনা, বরং সত্যকে মিথ্যা মনে করে আর মিথ্যাকে সত্য মনে করে।

এরপর আল্লাহ তা‘আলা সূরার সর্বশেষে তাঁর নির্দেশ পালনে এবং কাফিরদের কষ্টে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে ধৈর্য ধারণ করার নির্দেশ দিচ্ছেন। তাদের এ সকল কথাবার্তার ওপর ধৈর্যধারণ করতে এবং বিচলিত না হওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। মু’মিনদেরকে উত্তম প্রতিদান ও কাফিরদেরকে উপযুক্ত শাস্তির যে প্রতিশ্র“তি আল্লাহ তা‘আলা দিয়েছেন তা নির্ধারিত সময়ে অবশ্যই বাস্তবায়িত হবে। সুতরাং যারা পরকালে বিশ্বাসী নয়, তাদের কথায় মনঃক্ষুণœ হয়ে দীনের পথ থেকে সরে পড়ো না। বরং ধৈর্য ধর আল্লাহ তা‘আলা ধৈর্যশীলদের সাথে রয়েছেন।

আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

১. দীনের পথে চলতে গিয়ে সকল বিপদ-আপদে ধৈর্য ধারণ করতে হবে।
সূরা রূম-এর তাফসীর সমাপ্ত

তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-

৪৬-৪৭ নং আয়াতের তাফসীর

আল্লাহ তাআলা বর্ণনা করছেন যে, বৃষ্টি শুরু হবার পূর্বে ঠাণ্ডা বাতাস প্রবাহিত করে জনগণকে বৃষ্টির আশায় আশান্বিত করা তাঁরই কাজ। তারপর বৃষ্টি প্রদান করে থাকেন তিনিই, যাতে লোকবসতি আবাদ হয়, জীবজন্তু জীবিত থাকে এবং সাগরে জাহাজ চলতে পারে। জাহাজ চলাও আবার বায়ুর উপর নির্ভরশীল। তখন মানুষ ব্যবসা-বাণিজ্য ও রুজী-রোজগারের জন্যে. এখানে চলাফেরা করতে পারে। অতএব মানুষের উচিত আল্লাহর অসংখ্যা নিয়ামতের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা।

এরপর মহান আল্লাহ প্রিয় নবী (সঃ)-কে সান্ত্বনা দিচ্ছেনঃ যদি তারা তোমাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে তবে জানবে যে, এটা কোন নতুন ঘটনা নয়। তোমার পূর্ববর্তী নবীদেরকেও তাদের উম্মতরা বাঁকা বাঁকা কথা বলেছিল। তাদের কাছে তারাও উজ্জ্বল দলীল প্রমাণ আনয়ন করেছিল এবং মু’জিযা দেখিয়েছিল। অবশেষে মিথ্যা প্রতিপন্নকারীদের আল্লাহর আযাব দ্বারা ধ্বংস করে দেয়া হয়েছিল। মুমিনরা ঐ আযাব থেকে মুক্তি পেয়েছিল। আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা’আলা নিজ ফযল ও করমে স্বীয় সৎ বান্দাদেরকে সাহায্য করা নিজের উপর অবশ্যকর্তব্য করে নিয়েছেন।

হযরত আবু দারদা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি রাসূলুল্লাহ্ (সঃ)-কে বলতে শুনেছেনঃ “যদি কোন মুসলমান অপর কোন মুসলমানের ইজ্জত রক্ষা করে তবে আল্লাহর উপর এটা হক যে, তিনি তাকে জাহান্নামের আগুন হতে রক্ষা করবেন।” অতঃপর তিনি (আরবি)-এ আয়াতাংশটি পাঠ
করেন। (এ হাদীসটি ইবনে আবি হাতিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
৪৮-৫১ নং আয়াতের তাফসীর

আল্লাহ তাআলা এখানে বলছেন যে, তিনি বায়ু পাঠিয়ে দেন, আর তা মেঘমালাকে বয়ে নিয়ে বেড়ায়। হয়তো সাগর থেকে অথবা অন্য যেখান থেকে ইচ্ছা সেখান থেকে হুকুম করে মেঘমালা আনয়ন করেন। অতঃপর রাব্দুল আলামীন মেঘকে আকাশে ছড়িয়ে দেন, বিস্তার করেন এবং অল্প থেকে বেশী করেন। এটা ঘটে থাকে যে, এক হাত বা দু’হাত মেঘ দেখা গেল, তারপর তা আকাশের চতুর্দিককে আচ্ছন্ন করে ফেললো। এও দেখা যায় যে, সাগর হতে মেঘ উথিত হচ্ছে। এ বিষয়টিকেই এ আয়াতে (আরবি)

এভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। অতঃপর ঐ মেঘকে খণ্ড খণ্ড করে স্তরে স্তরে সাজানো হয়। এবং পানিতে তা কালো হয়ে যায়। তারপর তা মাটির নিকটবর্তী হয়ে যায়। অতঃপর ঐ মেঘ হতে পানি বর্ষিত হয়। যেখানে বৃষ্টি বর্ষিত হয় সেখানকার লোকের ফসল ফলে যায়। তাই তো আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ এরাই বৃষ্টি হতে। নিরাশ হয়ে পড়েছিল। পূর্ণ নৈরাশ্যের সময়, বরং নৈরাশ্যের পর তাদের উপর বৃষ্টি বর্ষিত হয় এবং স্থলভাগ জলময় হয়ে ওঠে। এখানে তাকীদ বা গুরুত্ব বুঝাবার জন্যেই শব্দটিকে দুইবার আনা হয়েছে সর্বনামটি -এর দিকে প্রত্যাবর্তিত হয়েছে। এও হতে পারে যে, বাক্যের প্রতিষ্ঠার দৃঢ়তার উদ্দেশ্যে আনয়ন করা হয়েছে। অর্থাৎ বৃষ্টি বর্ষণের পূর্বে তারা বৃষ্টির চরম মুখাপেক্ষী ছিল। এবার তাদের আশা পূর্ণ হয়ে গেল।

পূর্বে তারা সময়মত বৃষ্টি বর্ষিত না হওয়ার কারণে নিরাশ হয়ে পড়েছিল। এই নৈরাশ্যের মধ্যে হঠাৎ মেঘ উঠলো ও বৃষ্টি বর্ষিত হলো। বৃষ্টির পানি চারদিকে জমে গেল এবং তাদের শুষ্ক ভূমি সিক্ত হয়ে উঠলো। দুর্ভিক্ষ প্রাচুর্যে পরিবর্তিত হলো। অথবা মাঠ শুষ্ক ছিল, ফসলবিহীন ছিল, এখন বৃষ্টি বর্ষণের ফলে চতুর্দিকে সবুজ ফসল দেখা যেতে লাগলো।

তাই তো আল্লাহ বলেনঃ আল্লাহর অনুগ্রহের ফল সম্বন্ধে চিন্তা কর, কিভাবে তিনি ভূমির মৃত্যুর পর ওকে পুনর্জীবিত করেন। এভাবেই তিনি মৃতকে জীবিত করবেন। কারণ তিনি সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান।

এরপর তিনি বলেনঃ যদি আমি এমন বায় প্রেরণ করি যার ফলে তারা দেখতে পায় যে, তাদের শস্য পীত বর্ণ ধারণ করেছে তখন তো তারা অকৃতজ্ঞ হয়ে পড়ে। যেমন আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ (আরবি)

অর্থাৎ “তোমরা যে বীজ বপন কর সে সম্পর্কে চিন্তা করেছো কি? তোমরা কি ওকে অঙ্কুরিত কর, না আমি অঙ্কুরিত করি? আমি ইচ্ছা করলে ওকে খড়কুটায় পরিণত করতে পারি, তখন হতবুদ্ধি হয়ে পড়বে তোমরা। বলবেঃ আমাদের তো সর্বনাশ হয়েছে! আমরা হৃতসর্বস্ব হয়ে পড়েছি।” (৫৬:৬৩-৬৭)

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) বলেন যে, বাতাস আট প্রকারের হয়ে থাকে। চারটি রহমতের ও চারটি যহমতের। রহমতের চারটি বাতাসের নাম হলো: নাশেরাত, মুবাশশারাত, মুরসালাত ও যারইয়াত। আর যহমত বা শাস্তির চারটি বাতাসের নাম হলো: আকীম, সারসার, আসেফ ও কাসেফ। এগুলোর মধ্যে প্রথম দুটি বাতাস শুষ্ক অঞ্চল হতে প্রবাহিত হয়, দ্বিতীয় দুটি প্রবাহিত হয় সামুদ্রিক অঞ্চল হতে।

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “বাতাস অন্যের মুখাপেক্ষী। অর্থাৎ তা উখিত হয় অন্য যমীন হতে। যখন আল্লাহ তা’আলা আদ জাতিকে ধ্বংস করার ইচ্ছা করলেন তখন তিনি বাতাসের দায়িত্বে নিয়োজিত দারোগাকে এই আদেশ করলেন। দারোগা বললো: “হে আমার প্রতিপালক! আমি কি বায়ুমণ্ডলের ভাণ্ডারের এতোটা ছিদ্র করে দিবো যে পরিমাণ ছিদ্র বলদের নাকের হয়?” উত্তরে আল্লাহ তা’আলা বললেনঃ “না, না তাহলে তো সমগ্র পৃথিবী ওলট পালট হয়ে যাবে। তাতো নয়, বরং অল্প একটু ছেড়ে দাও, আংটি পরিমাণ হবে।” ঐটুকু পরিমাণ বাতাস যখন ছাড়া হলো ও বায়ু প্রবাহিত হতে শুরু করলো তখন যেখানে ওর ধাক্কা লাগলো সেখানকার সবকিছু ভূমি বরাবর হয়ে গেল। যে অঞ্চলের উপর দিয়ে ঐ বায়ু প্রবাহিত হলো ওর নাম নিশানা মিটিয়ে দিলো। (এ হাদীসটি ইবনে আবি হাতিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন। হাদীসটি গারীব। এর মারফু হওয়া অস্বীকৃত। সম্ববতঃ এটা হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ)-এর নিজস্ব কথা হবে)
৫২-৫৩ নং আয়াতের তাফসীর

আল্লাহ তাআলা বলেনঃ হে নবী (সঃ)! কবরের মৃত ব্যক্তিদেরকে কিছু শুনানো তোমার সাধ্যের অতীত। মৃত ব্যক্তি, যারা কবরে আছে, তাদেরকে তোমার কথা শুনানো যেমন অসম্ভব, তেমনিই কানে যারা বধির, যারা শুনেও শুনে না, যারা তোমা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে, তাদেরকেও তুমি তোমার কথা শুনাতে পারবে না। অনুরূপভাবে যে ব্যক্তি হক হতে অন্ধ হয়ে গেছে তাকে তুমি পথ দেখাতে ও হিদায়াত করতে পারবে না। হ্যা, আল্লাহ সবকিছু করতে সক্ষম। যদি তিনি চান তবে মৃতকে জীবিতদের কথা শুনাতে পারেন। সুপথ দেখানো ও পথভ্রষ্ট করা তাঁরই কাজ। তুমি তো শুধু তাকেই শুনাতে পার যে ঈমানের নিকটবর্তী, আল্লাহর কাছে নতশির হতে প্রস্তুত ও তাঁর ফরমাবরদার বা বাধ্য। এরা হক কথা শুনে এবং মানে। এগুলো তো হলো মুসলমানদের অবস্থা। আর পূর্বে যেগুলোর বর্ণনা দেয়া হলো সেগুলো কাফিরদের অবস্থা। যেমন আল্লাহ তা’আলা অন্য আয়াতে বলেনঃ (আরবি)

অর্থাৎ “তারাই আহ্বানে সাড়া দেবে যারা কান লাগিয়ে (আল্লাহর কালাম) শুনে এবং মৃতদেরকে আল্লাহ পুনরুজ্জীবিত করবেন, অতঃপর তারই নিকট তারা প্রত্যাবর্তিত হবে।” (৬:৩৬)

একটি রিওয়াইয়াতে আছে যে, বদরের যুদ্ধে যেসব মুশরিক মুসলমানদের হাতে নিহত হয়েছিল এবং যাদেরকে বদরের উপত্যকায় নিক্ষেপ করা হয়েছিল, তাদের মৃত্যুর তিন দিন পরে রাসূলুল্লাহ (সঃ) যখন তাদেরকে সম্বোধন করে ধমকের সুরে লজ্জিত করছিলেন তখন হযরত উমার (রাঃ) তাঁর নিকট আর করেছিলেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! যারা মরে গেছে তাদেরকে আপনার এভাবে সম্বোধন করার কারণ কি (তারা কি শুনতে পাচ্ছে)?” উত্তরে রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছিলেনঃ “যার হাতে আমার প্রাণ রয়েছে তাঁর কসম! আমি তাদেরকে যা বলছি তা তোমরা ততোটা শুনতে পাও না যতোটা তারা শুনতে পাচ্ছে। কিন্তু তারা উত্তর দিতে পারছে না।হযরত আয়েশা (রাঃ) হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমার (রাঃ)-এর মুখে এ ঘটনা শুনে বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) এরূপ বলেছিলেনঃ “তারা এখন খুব ভালরূপেই জানছে যে, আমি তাদেরকে যা কিছু বলতাম সবই সত্য ছিল।” অতঃপর হযরত আয়েশা (রাঃ) মৃত ব্যক্তিদের শুনতে পাওয়ার দলীল -(আরবি)-এই আয়াত দ্বারা গ্রহণ করেছেন। হযরত কাতাদা (রঃ) বলেন যে, আল্লাহ তা’আলা তাদেরকে জীবিত করে দিয়েছিলেন। ফলে তারা রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর কথা শুনতে পেয়েছিল, যেন তারা যথেষ্ট লজ্জিত ও অনুতপ্ত হয়।

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমার (রাঃ)-এর এ হাদীসকে সবাই সহীহ বলেছেন। কারণ এ হাদীসের বহু সাক্ষী রয়েছেন। ইবনে আবদিল বার (রঃ) হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে মারফু’রূপে একটি সহীহ রিওয়াইয়াত উল্লেখ করেছেন যে, যখন কোন লোক তার ভাই-এর কবরের পার্শ্ব দিয়ে গমন করে যাকে সে দুনিয়ায় চিনতো ও সালাম করতো, তখন আল্লাহ তা’অলা তার রূহকে ফিরিয়ে দেন, যেন সে তার সালামের উত্তর দিতে পারে।
* আল্লাহ তা’আলা মানুষকে উপদেশ দিচ্ছেন যে, তারা যেন মানুষের উন্নতি অবনতির প্রতি লক্ষ্য করে। মানুষের উৎস তো মাটি। এর থেকেই শুক্রের উৎপত্তি। এরপর জমাট রক্ত। তারপর গোশত, এরপর অস্থি, অস্থির উপর গোশত এবং অবশেষে তাতে রূহ ঠুকে দেয়া হয়। তারপর মায়ের পেট হতে পাতলা ও দুর্বল হয়ে বের হয়ে আসে। আবার ধীরে ধীরে বড় হয়, শক্তি সঞ্চয় করে ও মযবূত হয়। তারপর বাল্যকালের বসন্তকাল দেখে। এরপর যৌবনে পদার্পণ করে। অতঃপর তাকে বার্ধক্য পেয়ে বসে এবং সে শক্তিহীন হয়ে পড়ে। শক্তিশালী হওয়ার পর মানুষের এই দুর্বলতা তার একটি শিক্ষা গ্রহণের ব্যাপার। তার চলাফেরা, উঠা-বসা, নাচন-কুদন, মোটকথা তার সমস্ত শক্তি লোপ পায়। শরীরের চামড়া কুঁচকিয়ে যায়, দাঁত পড়ে যায়, গাল বসে যায় এবং চুল সাদা হয়ে যায়। আল্লাহ যা চান তাই করেন। সৃষ্টি ও ধ্বংস তার সীমাহীন শক্তির সামান্যতম বহিঃপ্রকাশ মাত্র। এ সবই তাঁর দান। তিনি সবকিছুরই মালিক। সবকিছুই তার জ্ঞানের মধ্যে রয়েছে। না তাঁর মত কারো জ্ঞান আছে, না তাঁর মত কারো শক্তি আছে।

হযরত আতিয়্যাহ আওফী (রঃ) বলেন, আমি হযরত ইবনে উমার (রাঃ)-এর সামনে এই আয়াতটি (আরবি) পর্যন্ত পাঠ করলে তিনিও তা তিলাওয়াত করেন এবং বলেনঃ “আমিও এটা রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর সামনে পাঠ করেছিলাম যেমন তুমি আমার সামনে পাঠ করলে। তখন তিনিও এটা পাঠ করেন যেমন আমি তোমার পাঠের পর এটা পাঠ করলাম।” (এটা ইমাম আহমাদ (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
৫৫-৫৭ নং আয়াতের তাফসীর

আল্লাহ তা’আলা খবর দিচ্ছেন যে, কাফিররা দুনিয়া ও আখিরাতের বিষয়ে একেবারেই মূখ। তাদের মূর্খতা এভাবেই প্রকাশ পায় যে, তারা আল্লাহর সাথে শরীক স্থাপন করে। পরকালেও তারা অজ্ঞতা প্রকাশ করে বলবেঃ আমরা দুনিয়ায় মাত্র এক ঘন্টাকাল অবস্থান করেছি।’ একথা বলে তারা প্রমাণ করতে চাইবে যে, এতো কম সময়ের কারণে তাদের উপর কোন দাবী প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না। সুতরাং তাদেরকে ক্ষমার্হ মনে করা হালে। এজন্যেই আল্লাহ পাক বলেন যে, এভাবেই দুনিয়ায় তারা সত্যভ্রষ্ট হতো।

এরপর আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ কিন্তু যাদেরকে জ্ঞান ও ঈমান দেয়া হয়েছে। তারা (এই অজ্ঞ কাফিরদেরকে) বলবেঃ তোমরা তো আল্লাহর বিধানে পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত অবস্থান করেছে। আর এটাই তো পুনরুত্থান দিবস, কিন্তু তোমরা জানতে না। তাই তোমরা অজ্ঞই থেকে গেলে।।

সুতরাং কিয়ামতের দিন এই সীমালংঘনকারীদের কৃতকর্মের ব্যাপারে তাদের ওযর আপত্তি তাদের কোনই উপকারে আসবে না। তাদেরকে আর দুনিয়ায় ফেরত পাঠানো হবে না। যেমন মহান আল্লাহ বলেনঃ (আরবি)

অর্থাৎ “যদি তারা দুনিয়ায় ফিরে আসতে চায় তবে তারা ফিরে আসতে পারবে না।” (৪১:২৪)
৫৮-৬০ নং আয়াতের তাফসীর

আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ সত্যকে আমি এই পাক কালামে পরিপূর্ণভাবে বর্ণনা করে দিয়েছি ও দৃষ্টান্ত দিয়ে বুঝিয়েছি যাতে সত্য তাদের কাছে প্রকাশিত হয়ে পড়ে। আর যেন তারা তাঁর আনুগত্যে আত্মনিয়োগ করে। তাদের কাছে যে কোন মুজিযাই আসুক না কেন, সত্যের নিদর্শন তারা যতই দেখুক না কেন, কোন চিন্তা-ভাবনা না করেই তারা অবশ্যই বলবেঃ তোমরা তো মিথ্যাশ্রয়ী। এটা যাদু, বাতিল ও মিথ্যা ছাড়া কিছুই নয়। যেমন আল্লাহ পাক বলেনঃ (আরবি)

অর্থাৎ “যাদের উপর তোমার প্রতিপালকের কথা বাস্তবায়িত হয়েছে তারা সমস্ত নিদর্শন দেখলেও ঈমান আনয়ন করবে না যে পর্যন্ত না তারা বেদনাদায়ক শাস্তি প্রত্যক্ষ করে।” (১০:৯৬-৯৭)

তাই এখানে মহাপ্রতাপান্বিত আল্লাহ বলেনঃ যাদের জ্ঞান নেই আল্লাহ এইভাবে তাদের অন্তরে মোহর করে দেন। হে নবী (সঃ)! তুমি তাদের বিরুদ্ধাচরণ ও শত্রুতার উপর ধৈর্যধারণ কর। আল্লাহর প্রতিশ্রুতি সত্য। অবশ্যই তিনি একদিন তোমাকে তাদের উপর জয়যুক্ত করবেন এবং তোমাকে সাহায্য করবেন। দুনিয়া ও আখিরাতে তিনি তোমাকে ও তোমার অনুসারীদেরকে বিরুদ্ধাচরণকারীদের উপর বিজয় দান করবেন। তুমি তোমার কাজ চালিয়ে যাও, কাজের উপর দৃঢ় থাকো। তোমার কাজ হতে এক ইঞ্চি পরিমাণও এদিক-ওদিক হয়ো না। এরই মধ্যে সমস্ত হিদায়াত লুক্কায়িত আছে, বাকীগুলো সবই বাতিলের। হযরত কাতাদা (রঃ) বলেন যে, একদা হযরত আলী (রাঃ) ফজরের নামায পড়ছিলেন এমন সময় একজন খারেজী তার নাম ধরে নিম্নের আয়াতটি পাঠ করেঃ (আরবি)

অর্থাৎ “তোমার কাছে এবং তোমার পূর্ববর্তীদের কাছে অহী করা হয়েছে যে, যদি তুমি শিরক কর তবে অবশ্যই তোমার আমল বিনষ্ট হয়ে যাবে এবং তুমি ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে।” (৩৯:৬৫)

এটা শুনে হযরত আলী (রাঃ) নীরব হলেন এবং সে যা বললো তা বুঝলেন অতঃপর নামাযের মধ্যেই তিনি জবাবে (আরবি)-এই আয়াতটিই তিলাওয়াত করলেন। অর্থাৎ “তুমি ধৈর্যধারণ কর, নিশ্চয়ই আল্লাহর প্রতিশ্রুতি সত্য। যারা দৃঢ় বিশ্বাসী নয় তারা যেন তোমাকে বিচলিত করতে না পারে।” (এটা ইমাম ইবনে জারীর (রঃ) ও ইমাম ইবনে আবি হাতিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন। এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ) স্বীয় মুসনাদ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন। এর ইসনাদও সুন্দর এবং মতনও উত্তম)

এই পবিত্র সূরাটির ফযীলত এবং ফজরের নামাযে এটা পড়া মুস্তাহাব হওয়া সম্পর্কে যে হাদীস বর্ণিত হয়েছে তা নিম্নে দেয়া হল :

নবী (সঃ)-এর সহাবীদের এক ব্যক্তি হতে বর্ণিত আছে যে, একদা রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাদেরকে নিয়ে ফজরের নামায পড়ছিলেন। এই নামাযে তিনি এই সূরায়ে রূম তিলাওয়াত করেন। ইত্যবসরে কিরআতে তাঁর মনে সংশয় সৃষ্টি হয়। নামায শেষে তিনি সাহাবীদেরকে সম্বোধন করে বলেনঃ “তোমাদের মধ্যে এমনও কতকগুলো লোক আমাদের সাথে নামাযে শামিল হয়ে যায় যারা ভালভাবেও নিয়মিত অযু করে না। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা নামাযে দাঁড়াবে তারা যেন উত্তমরূপে অযু করে নেয়।

এই হাদীসটি দ্বারা একটি বিস্ময়কর রহস্য উদঘাটিত হলো এবং একটি বড় খবর এই পাওয়া গেল যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর মুক্তাদীদের অযু সম্পূর্ণরূপে ঠিক হওয়ার ক্রিয়া বা প্রভাব তার উপরও পড়েছিল। সুতরাং এটা প্রমাণিত হলো যে, ইমামের নামাযের সাথে মুক্তাদীদের নামাযও মুআল্লাক বা দোদুল্যমান।

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book#1035)
[The Different Stages of Man :-]
www.motaher21.net
Sura:30
Para:21
Sura: Ar-Roum
Ayat: – 46-60

30:46

وَ مِنۡ اٰیٰتِہٖۤ اَنۡ یُّرۡسِلَ الرِّیَاحَ مُبَشِّرٰتٍ وَّ لِیُذِیۡقَکُمۡ مِّنۡ رَّحۡمَتِہٖ وَ لِتَجۡرِیَ الۡفُلۡکُ بِاَمۡرِہٖ وَ لِتَبۡتَغُوۡا مِنۡ فَضۡلِہٖ وَ لَعَلَّکُمۡ تَشۡکُرُوۡنَ ﴿۴۶﴾

And of His signs is that He sends the winds as bringers of good tidings and to let you taste His mercy and so the ships may sail at His command and so you may seek of His bounty, and perhaps you will be grateful.

 

Among the Signs of Allah are the Winds

Allah says:

وَمِنْ ايَاتِهِ أَن يُرْسِلَ الرِّيَاحَ مُبَشِّرَاتٍ

And among His signs is this that He sends the winds as glad tidings,

Here Allah mentions the favor He does for His creatures by sending winds to them, as harbingers of His mercy, meaning that they will be followed by rain.

Allah says:

وَلِيُذِيقَكُم مِّن رَّحْمَتِهِ

giving you a taste of His mercy,

that is, the rain which will come down and revive people and the land.

وَلِتَجْرِيَ الْفُلْكُ بِأَمْرِهِ

and that the ships may sail at His command,

means, on the sea, for they are driven by the wind.

وَلِتَبْتَغُوا مِن فَضْلِهِ

and that you may seek of His bounty,

means, by trading, earning a living and traveling from one country to another, one region to another.

وَلَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ

in order that you may be thankful.

means, that you may give thanks to Allah for the innumerable favors He has done for you, both visible and hidden.

Then Allah says

30:47

وَ لَقَدۡ اَرۡسَلۡنَا مِنۡ قَبۡلِکَ رُسُلًا اِلٰی قَوۡمِہِمۡ فَجَآءُوۡہُمۡ بِالۡبَیِّنٰتِ فَانۡتَقَمۡنَا مِنَ الَّذِیۡنَ اَجۡرَمُوۡا ؕ وَ کَانَ حَقًّا عَلَیۡنَا نَصۡرُ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ ﴿۴۷﴾

And We have already sent messengers before you to their peoples, and they came to them with clear evidences; then We took retribution from those who committed crimes, and incumbent upon Us was support of the believers.

 

وَلَقَدْ أَرْسَلْنَا مِن قَبْلِكَ رُسُلً إِلَى قَوْمِهِمْ فَجَاوُوهُم بِالْبَيِّنَاتِ فَانتَقَمْنَا مِنَ الَّذِينَ أَجْرَمُوا

And indeed We did send Messengers before you to their own peoples. They came to them with clear proofs, then, We took vengeance on those who committed crimes;

These are words of consolation from Allah to His servant and Messenger Muhammad. They tell him that if many of his people and of mankind disbelieve in him, the previous Messengers were also rejected, despite the clear signs that they brought, but Allah punished those who rejected and opposed them, and saved those who believed in them.

وَكَانَ حَقًّا عَلَيْنَا نَصْرُ الْمُوْمِنِينَ

and it was incumbent upon Us to help the believers.

This is a duty which Allah took upon Himself as a blessing and a favor to them.

This is like the Ayah,

كَتَبَ رَبُّكُمْ عَلَى نَفْسِهِ الرَّحْمَةَ

your Lord has prescribed mercy for Himself. (6:54)

Ibn Abi Hatim recorded that Abu Ad-Darda’, may Allah be pleased with him, said:

“I heard Allah’s Messenger saying:

مَا مِنِ امْرِىءٍ مُسْلِمٍ يَرُدُّ عَنْ عِرْضِ أَخِيهِ إِلاَّ كَانَ حَقًّا عَلَى اللهِ أَنْ يَرُدَّ عَنْهُ نَارَ جَهَنَّمَ يَوْمَ الْقِيَامَة

No Muslim man defends the honor of his brother except that there would be a right upon Allah to defend him from the fire of Hell on the Day of Resurrection.

Then he recited this Ayah:

وَكَانَ حَقًّا عَلَيْنَا نَصْرُ الْمُوْمِنِينَ

and it was incumbent upon Us to help the believers.

30:48

اَللّٰہُ الَّذِیۡ یُرۡسِلُ الرِّیٰحَ فَتُثِیۡرُ سَحَابًا فَیَبۡسُطُہٗ فِی السَّمَآءِ کَیۡفَ یَشَآءُ وَ یَجۡعَلُہٗ کِسَفًا فَتَرَی الۡوَدۡقَ یَخۡرُجُ مِنۡ خِلٰلِہٖ ۚ فَاِذَاۤ اَصَابَ بِہٖ مَنۡ یَّشَآءُ مِنۡ عِبَادِہٖۤ اِذَا ہُمۡ یَسۡتَبۡشِرُوۡنَ ﴿ۚ۴۸﴾

It is Allah who sends the winds, and they stir the clouds and spread them in the sky however He wills, and He makes them fragments so you see the rain emerge from within them. And when He causes it to fall upon whom He wills of His servants, immediately they rejoice

 

The Revival of the Earth is a Sign of the Resurrection

Here Allah explains how He creates the clouds that rain the water.

اللَّهُ الَّذِي يُرْسِلُ الرِّيَاحَ فَتُثِيرُ سَحَابًا

Allah is He Who sends the winds, so that they raise clouds,

either from the sea, as was mentioned by more than one (of the scholars), or from whatever Allah wills.

فَيَبْسُطُهُ فِي السَّمَاء كَيْفَ يَشَاء

and spread them along the sky as He wills,

means, He spreads them and causes them to increase and grow. From a little He makes a lot, and creates the clouds that look like shields. Then He spreads them out until they fill the horizon. Sometimes the clouds come from the sea, heavy and full, as Allah says:

وَهُوَ الَّذِى يُرْسِلُ الرِّيَاحَ بُشْرىً بَيْنَ يَدَىْ رَحْمَتِهِ حَتَّى إِذَا أَقَلَّتْ سَحَابًا ثِقَالاً سُقْنَـهُ لِبَلَدٍ مَّيِّتٍ

And it is He Who sends the winds as heralds of glad tidings, going before His mercy. Till when they have carried a heavy-laden cloud, We drive it to a land that is dead until:

كَذَلِكَ نُخْرِجُ الْموْتَى لَعَلَّكُمْ تَذَكَّرُونَ

Similarly, We shall raise up the dead, so that you may remember or take heed. (7:57)

Allah says here:

اللَّهُ الَّذِي يُرْسِلُ الرِّيَاحَ فَتُثِيرُ سَحَابًا فَيَبْسُطُهُ فِي السَّمَاء كَيْفَ يَشَاء

وَيَجْعَلُهُ كِسَفًا

Allah is He Who sends the winds, so that they raise clouds and spread them along the sky as He wills, and then break them into fragments,

Mujahid, Abu Amr bin Al-Ala’, Matar Al-Warraq and Qatadah said,

“This means pieces.”

Others said that it means `piled up,’ as Ad-Dahhak said.

Others said that it means black, because they contained so much water, and sometimes they are heavy and close to the earth.

His saying:

فَتَرَى الْوَدْقَ يَخْرُجُ مِنْ خِلَلِهِ

until you see rain drops come forth from their midst!

means, `so you see the drops, i.e., the rain, which come from the midst of those clouds.’

فَإِذَا أَصَابَ بِهِ مَن يَشَاء مِنْ عِبَادِهِ إِذَا هُمْ يَسْتَبْشِرُونَ

Then when He has made them fall on whom of His servants as He wills, lo, they rejoice!

They rejoice at the rain when it comes to them because of their need for it.

وَإِن كَانُوا مِن قَبْلِ أَن يُنَزَّلَ عَلَيْهِم مِّن قَبْلِهِ لَمُبْلِسِينَ

30:49

وَ اِنۡ کَانُوۡا مِنۡ قَبۡلِ اَنۡ یُّنَزَّلَ عَلَیۡہِمۡ مِّنۡ قَبۡلِہٖ لَمُبۡلِسِیۡنَ ﴿۴۹﴾

Although they were, before it was sent down upon them – before that, in despair.

 

And verily, before that — just before it was sent down upon them — they were in despair!

The people to whom this rain came were in despair, thinking that it rain would never fall, just before it came to them. When it came to them, it came at the time of greatest need, so it was a tremendous event for them.

What this means is that they were in need of it before it fell, and there had been no rainfall for a long time, so they were waiting for it at the time when it was due, but it did not come to them at that time. The rain was late, and a long time passed. Then the rain came to them suddenly, after they began to despair, and after their land became dry and barren, it was stirred to life, and it swelled and produced every lovely kind of growth.

Allah says

30:50

فَانۡظُرۡ اِلٰۤی اٰثٰرِ رَحۡمَتِ اللّٰہِ کَیۡفَ یُحۡیِ الۡاَرۡضَ بَعۡدَ مَوۡتِہَا ؕ اِنَّ ذٰلِکَ لَمُحۡیِ الۡمَوۡتٰی ۚ وَ ہُوَ عَلٰی کُلِّ شَیۡءٍ قَدِیۡرٌ ﴿۵۰﴾

So observe the effects of the mercy of Allah – how He gives life to the earth after its lifelessness. Indeed, that [same one] will give life to the dead, and He is over all things competent.

 

فَانظُرْ إِلَى اثَارِ رَحْمَتِ اللَّهِ

Look then at the effects of Allah’s mercy,

meaning, the rain.

كَيْفَ يُحْيِي الاَْرْضَ بَعْدَ مَوْتِهَا

how He revives the earth after its death.

Thus Allah draws attention to the revival of people’s bodies after they have died and disintegrated into nothing.

إِنَّ ذَلِكَ لَمُحْيِي الْمَوْتَى

Verily, that (Allah) shall indeed raise the dead.

means, the One Who does that is able to raise the dead.

وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ

and He is able to do all things.

وَلَيِنْ أَرْسَلْنَا رِيحًا فَرَأَوْهُ مُصْفَرًّا لَّظَلُّوا مِن بَعْدِهِ يَكْفُرُونَ
30:51

وَ لَئِنۡ اَرۡسَلۡنَا رِیۡحًا فَرَاَوۡہُ مُصۡفَرًّا لَّظَلُّوۡا مِنۡۢ بَعۡدِہٖ یَکۡفُرُوۡنَ ﴿۵۱﴾

But if We should send a [bad] wind and they saw [their crops] turned yellow, they would remain thereafter disbelievers.

 

And if We send a wind, and they see it turn yellow — behold, they then would become unthankful (disbelievers).

وَلَيِنْ أَرْسَلْنَا رِيحًا

And if We send a wind,

means, a wind which dries up the crops which they have tended and cultivated and which have matured, and they see them turn yellow, and start to rot, if this were to happen, they would become ungrateful, i.e., they would deny the previous blessings that they were given.

This is like the Ayah,

أَفَرَءَيْتُم مَّا تَحْرُثُونَ

Then tell Me about the seed that you sow in the ground. until:

بَلْ نَحْنُ مَحْرُومُونَ

Nay, but we are deprived! (56:63-67)

30:52

فَاِنَّکَ لَا تُسۡمِعُ الۡمَوۡتٰی وَ لَا تُسۡمِعُ الصُّمَّ الدُّعَآءَ اِذَا وَلَّوۡا مُدۡبِرِیۡنَ ﴿۵۲﴾

So indeed, you will not make the dead hear, nor will you make the deaf hear the call when they turn their backs, retreating.

 

The Disbelievers are like the Dead, Deaf and Blind

Allah says:

فَإِنَّكَ لَاإ تُسْمِعُ الْمَوْتَى وَلَاإ تُسْمِعُ الصُّمَّ الدُّعَاء إِذَا وَلَّوْا مُدْبِرِينَ

30:53

وَ مَاۤ اَنۡتَ بِہٰدِ الۡعُمۡیِ عَنۡ ضَلٰلَتِہِمۡ ؕ اِنۡ تُسۡمِعُ اِلَّا مَنۡ یُّؤۡمِنُ بِاٰیٰتِنَا فَہُمۡ مُّسۡلِمُوۡنَ ﴿٪۵۳﴾

And you cannot guide the blind away from their error. You will only make hear those who believe in Our verses so they are Muslims [in submission to Allah ].

 

وَمَا أَنتَ بِهَادِي الْعُمْيِ عَن ضَلَلَتِهِمْ

So verily, you cannot make the dead to hear, nor can you make the deaf to hear the call, when they show their backs and turn away.

And you cannot guide the blind from their straying;

Allah says, `just as you are not able to make the dead hear in their graves, or to make your words reach the deaf who cannot hear and who still turn away from you, so too you cannot guide the blind to the truth and bring them back from their misguidance.’

That is a matter which rests with Allah, for by His power He can make the dead hear the voices of the living if He wills. He guides whom He wills and sends astray whom He wills, and no one but He has the power to do this.

Allah says:

إِن تُسْمِعُ إِلاَّ مَن يُوْمِنُ بِأيَاتِنَا فَهُم مُّسْلِمُونَ

you can make to hear only those who believe in Our Ayat, and have submitted (to Allah in Islam).

means, those who are humble and who respond and obey. These are the ones who will listen to the truth and follow it; this is the state of the believers; the former (being deaf and blind) is the state of the disbelievers, as Allah says:

إِنَّمَا يَسْتَجِيبُ الَّذِينَ يَسْمَعُونَ وَالْمَوْتَى يَبْعَثُهُمُ اللَّهُ ثُمَّ إِلَيْهِ يُرْجَعُونَ

It is only those who listen will respond, but as for the dead, Allah will raise them up, then to Him they will be returned. (6:36)

A’ishah, the Mother of the faithful, may Allah be pleased with her, used this Ayah —
إِنَّكَ لَا تُسْمِعُ الْمَوْتَى
(So verily, you cannot make the dead to hear), as evidence against Abdullah bin Umar when he reported that the Prophet had addressed the slain disbelievers who had been thrown into a dry well three days after the battle of Badr, rebuking and reprimanding them, until Umar said, “O Messenger of Allah, are you addressing people who are dead bodies?”

He said:

وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ مَا أَنْتُمْ بِأَسْمَعَ لِمَا أَقُولُ مِنْهُمْ وَلَكِنْ لَاا يُجِيبُون

By the One in Whose Hand is my soul, you do not hear what I say any better than they do, but they cannot respond.

A’ishah interpreted this event to mean that the Prophet was making the point that now they would know that what he had been telling them was true.

Qatadah said:

“Allah brought them back to life for him so that they could hear what he said by way of rebuke and vengeance.
30:54

اَللّٰہُ الَّذِیۡ خَلَقَکُمۡ مِّنۡ ضُؔعۡفٍ ثُمَّ جَعَلَ مِنۡۢ بَعۡدِ ضُؔعۡفٍ قُوَّۃً ثُمَّ جَعَلَ مِنۡۢ بَعۡدِ قُوَّۃٍ ضُؔعۡفًا وَّ شَیۡبَۃً ؕ یَخۡلُقُ مَا یَشَآءُ ۚ وَ ہُوَ الۡعَلِیۡمُ الۡقَدِیۡرُ ﴿۵۴﴾

Allah is the one who created you from weakness, then made after weakness strength, then made after strength weakness and white hair. He creates what He wills, and He is the Knowing, the Competent.

 

The Different Stages of Man

Allah says:

اللَّهُ الَّذِي خَلَقَكُم مِّن ضَعْفٍ ثُمَّ جَعَلَ مِن بَعْدِ ضَعْفٍ قُوَّةً

Allah is He Who created you in weakness, then gave you strength after weakness,

Here Allah points out how man passes through different stages of creation, one phase after another.

He is originally created from dust, then from a Nutfah, then from a clot, then from a lump of flesh. Then he becomes bones, then the bones are clothed with flesh, then the soul is breathed into him. Then he emerges from his mother’s womb, weak and thin and powerless.

Then he grows up little by little, until he becomes a child, then he reaches the stage of puberty, then he becomes a young man, which is strength after weakness. Then he starts to get older, reaching middle age, then old age and senility, weakness after strength, so he loses his resolve, power of movement and ability to fight, his hair turns grey and his characteristics, both inward and outward, begin to change.

Allah says:

ثُمَّ جَعَلَ مِن بَعْدِ قُوَّةٍ ضَعْفًا وَشَيْبَةً يَخْلُقُ مَا يَشَاء

then after strength gave (you) weakness and grey hair. He creates what He wills.

He does whatsoever He wills and controls His servants in whatever way He wants.

وَهُوَ الْعَلِيمُ الْقَدِيرُ

And He is the All-Knowing, the All-Powerful.

30:55

وَ یَوۡمَ تَقُوۡمُ السَّاعَۃُ یُقۡسِمُ الۡمُجۡرِمُوۡنَ ۬ۙ مَا لَبِثُوۡا غَیۡرَ سَاعَۃٍ ؕ کَذٰلِکَ کَانُوۡا یُؤۡفَکُوۡنَ ﴿۵۵﴾

And the Day the Hour appears the criminals will swear they had remained but an hour. Thus they were deluded.

 

The Ignorance of the Disbelievers in this World and in the Hereafter

Allah says:

وَيَوْمَ تَقُومُ السَّاعَةُ يُقْسِمُ الْمُجْرِمُونَ مَا لَبِثُوا غَيْرَ سَاعَةٍ

And on the Day that the Hour will be established, the criminals will swear that they stayed not but an hour —

Here Allah tells us of the ignorance of the disbelievers in this world and in the Hereafter. In this world they worship idols, and in the Hereafter they will also display great ignorance. They will swear by Allah that they did not even stay for one hour in this world. They will mean that there was not enough time given to establish proof against them which would leave them with no excuse.

Allah says:

كَذَلِكَ كَانُوا يُوْفَكُونَ
30:56

وَ قَالَ الَّذِیۡنَ اُوۡتُوا الۡعِلۡمَ وَ الۡاِیۡمَانَ لَقَدۡ لَبِثۡتُمۡ فِیۡ کِتٰبِ اللّٰہِ اِلٰی یَوۡمِ الۡبَعۡثِ ۫ فَہٰذَا یَوۡمُ الۡبَعۡثِ وَ لٰکِنَّکُمۡ کُنۡتُمۡ لَا تَعۡلَمُوۡنَ ﴿۵۶﴾

But those who were given knowledge and faith will say, “You remained the extent of Allah ‘s decree until the Day of Resurrection, and this is the Day of Resurrection, but you did not used to know.”

 

وَقَالَ الَّذِينَ أُوتُوا الْعِلْمَ وَالاِْيمَانَ لَقَدْ لَبِثْتُمْ فِي كِتَابِ اللَّهِ إِلَى يَوْمِ الْبَعْثِ

thus were they ever deluded. And those who have been bestowed with knowledge and Faith will say:”Indeed you have stayed according to the decree of Allah, until the Day of Resurrection…”

The believers who have knowledge of the Hereafter will respond to them, just as they established the proof of Allah against them in this world. When they swear that they did not stay even one hour in this world, they will say to them:

لَقَدْ لَبِثْتُمْ فِي كِتَابِ اللَّهِ

Indeed you have stayed according to the decree of Allah,

meaning, the Book of deeds,

إِلَى يَوْمِ الْبَعْثِ

until the Day of Resurrection;

means, `from the day when you were created until the day you were resurrected. ‘

فَهَذَا يَوْمُ الْبَعْثِ

so this is the Day of Resurrection,

وَلَكِنَّكُمْ كُنتُمْ لَا تَعْلَمُونَ

but you knew not.

Allah says

30:57

فَیَوۡمَئِذٍ لَّا یَنۡفَعُ الَّذِیۡنَ ظَلَمُوۡا مَعۡذِرَتُہُمۡ وَ لَا ہُمۡ یُسۡتَعۡتَبُوۡنَ ﴿۵۷﴾

So that Day, their excuse will not benefit those who wronged, nor will they be asked to appease [ Allah ].

 

فَيَوْمَيِذٍ

So, on that Day,

meaning, the Day of Resurrection,

لاَّا يَنفَعُ الَّذِينَ ظَلَمُوا مَعْذِرَتُهُمْ

no excuse of theirs will avail those who did wrong,

means, their excuses for what they did.

وَلَا هُمْ يُسْتَعْتَبُونَ

nor will they be allowed (then) to return to seek (Allah’s) pleasure.

means, they will not be allowed to return to this world.

This is like the Ayah,

وَإِن يَسْتَعْتِبُواْ فَمَا هُم مِّنَ الْمُعْتَبِينَ

and if they seek to please (Allah), yet they are not of those who will ever be allowed to please (Allah). (41:24)

30:58

وَ لَقَدۡ ضَرَبۡنَا لِلنَّاسِ فِیۡ ہٰذَا الۡقُرۡاٰنِ مِنۡ کُلِّ مَثَلٍ ؕ وَ لَئِنۡ جِئۡتَہُمۡ بِاٰیَۃٍ لَّیَقُوۡلَنَّ الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡۤا اِنۡ اَنۡتُمۡ اِلَّا مُبۡطِلُوۡنَ ﴿۵۸﴾

And We have certainly presented to the people in this Qur’an from every [kind of] example. But, [O Muhammad], if you should bring them a sign, the disbelievers will surely say, “You [believers] are but falsifiers.”

 

Parables in the Qur’an and how the Disbelievers do not learn from them

Allah says:

وَلَقَدْ ضَرَبْنَا لِلنَّاسِ فِي هَذَا الْقُرْانِ مِن كُلِّ مَثَلٍ

And indeed We have set forth for mankind, in this Qur’an every kind of parable.

means, `We have explained the truth to them and have made it clear to them, and have set forth for them parables so that they may understand the truth and follow it.’

وَلَيِن جِيْتَهُم بِأيَةٍ لَيَقُولَنَّ الَّذِينَ كَفَرُوا إِنْ أَنتُمْ إِلاَّ مُبْطِلُونَ

But if you bring to them any sign or proof, the disbelievers are sure to say (to the believers):”You follow nothing but falsehood and magic.”

If they were to see any kind of sign, whether it was at their own direction or otherwise, they would not believe in it and they would think that it was magic and falsehood, as they said when the moon was cleft asunder, etc., as Allah says:

إِنَّ الَّذِينَ حَقَّتْ عَلَيْهِمْ كَلِمَةُ رَبِّكَ لَا يُوْمِنُونَ

وَلَوْ جَأءَتْهُمْ كُلُّ ءايَةٍ حَتَّى يَرَوُاْ الْعَذَابَ الاٌّلِيمَ

Truly, those, against whom the Word of your Lord has been justified, will not believe. Even if every sign should come to them, until they see the painful torment. (10:96-97)

Allah says here:

كَذَلِكَ يَطْبَعُ اللَّهُ عَلَى قُلُوبِ الَّذِينَ لَا يَعْلَمُونَ

30:59

کَذٰلِکَ یَطۡبَعُ اللّٰہُ عَلٰی قُلُوۡبِ الَّذِیۡنَ لَا یَعۡلَمُوۡنَ ﴿۵۹﴾

Thus does Allah seal the hearts of those who do not know.

30:60

فَاصۡبِرۡ اِنَّ وَعۡدَ اللّٰہِ حَقٌّ وَّ لَا یَسۡتَخِفَّنَّکَ الَّذِیۡنَ لَا یُوۡقِنُوۡنَ ﴿٪۶۰﴾

So be patient. Indeed, the promise of Allah is truth. And let them not disquiet you who are not certain [in faith].

 

فَاصْبِرْ إِنَّ وَعْدَ اللَّهِ حَقٌّ

Thus does Allah seal up the hearts of those who know not. So be patient. Verily, the promise of Allah is true;

meaning, `bear their stubborn opposition with patience, for Allah will fulfill His promise to grant you victory over them and cause you and those who follow you to prevail in this world and in the Hereafter.’

وَلَا يَسْتَخِفَّنَّكَ الَّذِينَ لَا يُوقِنُونَ

and let not those who have no certainty of faith discourage you (from conveying Allah’s Message).

`Remain steadfast in the mission with which Allah has sent you, for it is truth in which there is no doubt. Do not turn away from it, for nowhere else is there truth which is to be followed; the truth rests exclusively in the Message with which you have been sent.’
Reports concerning the Virtues of this Surah and that it is recommended to recite it during Fajr

Imam Ahmad recorded from a man among the Companions of the Prophet that the Messenger of Allah led them in Fajr prayer and recited Ar-Rum in the prayer, but he became confused in his recitation.

He said:

إِنَّهُ يَلْبِسُ عَلَيْنَا الْقُرْانَ فَإِنَّ أَقْوَامًا مِنْكُمْ يُصَلُّونَ مَعَنَا لَا يُحْسِنُونَ الْوُضُوءَ فَمَنْ شَهِدَ مِنْكُمُ الصَّلَةَ مَعَنَا فَلْيُحْسِنِ الْوُضُوء

We have become confused in our recitation of Qur’an, because some people among you are praying with us but they have not performed Wudu’ properly. Whoever attends the prayer with us, let him perform Wudu’ properly.

This has a Hasan chain of narration, the text itself is Hasan.

It contains amazing information, that the Prophet was affected by the faulty Wudu’ of some of those whom he was leading in prayer. This indicates that the prayer of the person who is praying in the congregation is connected to the prayer of the Imam.

This is the end of the Tafsir of Surah Al-Rum. Allah’s is the praise and thanks

For getting Quran app: play.google.com/store/apps/details?id=com.ihadis.quran

Leave a Reply