أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(বই#১০৪২)
[ইসলাম মানুষকে ‘মানুষ’ হিসেবেই পেশ করেছে৷ ]
www.motaher21.net
সুরা: আল-বাক্বারাহ
আয়াত নং :-২৮৬
لَا یُكَلِّفُ اللّٰهُ نَفْسًا اِلَّا وُسْعَهَا١ؕ لَهَا مَا كَسَبَتْ وَ عَلَیْهَا مَا اكْتَسَبَتْ١ؕ رَبَّنَا لَا تُؤَاخِذْنَاۤ اِنْ نَّسِیْنَاۤ اَوْ اَخْطَاْنَا١ۚ رَبَّنَا وَ لَا تَحْمِلْ عَلَیْنَاۤ اِصْرًا كَمَا حَمَلْتَهٗ عَلَى الَّذِیْنَ مِنْ قَبْلِنَا١ۚ رَبَّنَا وَ لَا تُحَمِّلْنَا مَا لَا طَاقَةَ لَنَا بِهٖ١ۚ وَ اعْفُ عَنَّا١ٙ وَ اغْفِرْ لَنَا١ٙ وَ ارْحَمْنَا١ٙ اَنْتَ مَوْلٰىنَا فَانْصُرْنَا عَلَى الْقَوْمِ الْكٰفِرِیْنَ۠
আল্লাহ কারোর ওপর তার সামর্থের অতিরিক্ত দায়িত্বের বোঝা চাপান না। প্রত্যেক ব্যক্তি যে নেকী উপার্জন করেছে তার ফল তার নিজেরই জন্য এবং যে গোনাহ সে অর্জন করেছে, তার প্রতিফলও তারই উপর বর্তাবে। (হে ঈমানদারগণ, তোমরা এভাবে দোয়া চাওঃ) হে আমাদের রব! ভুল-ভ্রান্তিতে আমরা যেসব গোনাহ করে বসি, তুমি সেগুলো পাকড়াও করো না। হে প্রভু! আমাদের ওপর এমন বোঝা চাপিয়ে দিয়ো না, যা তুমি আমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর চাপিয়ে দিয়েছিলে। হে আমাদের প্রতিপালক! যে বোঝা বহন করার সামর্থ্য আমাদের নেই, তা আমাদের ওপর চাপিয়ে দিয়ো না। আমাদের প্রতি কোমল হও, আমাদের অপরাধ ক্ষমা করো এবং আমাদের প্রতি করুণা করো। তুমি আমাদের অভিভাবক। কাফেরদের মোকাবিলায় তুমি আমাদের সাহায্য করো।
তাফসীর :
তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
# আল্লাহর কাছে মানুষের সামর্থ্য অনুযায়ী তার দায়িত্ব বিবেচিত হয়। মানুষ কোন কাজ করার ক্ষমতা রাখে না অথচ আল্লাহ তাকে সে কাজটি না করার জন্য জিজ্ঞাসাবাদ করবেন, এমনটি কখনো হবে না। অথবা প্রকৃতপক্ষে কোন কাজ বা জিনিস থেকে দূরে থাকার সামর্থ্যই মানুষের ছিল না, সেক্ষেত্রে তাতে জড়িত হয়ে পড়ার জন্য আল্লাহর কাছে তাকে জবাবদিহি করতে হবে না। কিন্তু এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, নিজের শক্তি-সামর্থ্য আছে কিনা, এ সম্পর্কে মানুষ নিজে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে না। প্রকৃতপক্ষে মানুষের কিসের শক্তি-সামর্থ্য ছিল আর কিসের ছিল না-এ সিদ্ধান্ত একমাত্র আল্লাহ গ্রহণ করতে পারেন।
# এটি আল্লাহ প্রদত্ত মানবিক ইখতিয়ার বিধির দ্বিতীয় মূলনীতি। প্রত্যেক ব্যক্তি নিজে যে কাজ করেছে তার পুরস্কার পাবে। একজনের কাজের পুরস্কার অন্যজন পাবে, এটা কখনো সম্ভব নয়। অনুরূপভাবে প্রত্যেক ব্যক্তি নিজে যে দোষ করেছে সেজন্য পাকড়াও হবে। একজন দোষ করবে আর অন্যজন পাকাড়ও হবে, এটা কখনো সম্ভব নয়। তবে এটা সম্ভব, এক ব্যক্তি কোন সৎকাজের ভিত্তি রাখলো এবং দুনিয়ায় হাজার বছর পর্যন্ত তার প্রভাব প্রতিষ্ঠিত থাকলো, এক্ষেত্রে এগুলো সব তার আমলনামায় লেখা হবে। আবার অন্য এক ব্যক্তি কোন খারাপ কাজের ভিত্তি রাখলো এবং শত শত বছর পর্যন্ত দুনিয়ায় তার প্রভাব প্রতিষ্ঠিত থাকলো। এ অবস্থায় এ গুলোর গোনাহ ঐ প্রথম জালেমের আমলনামায় লেখা হবে। তবে এক্ষেত্রে ভালো বা মন্দ যা কিছু ফল হবে সবই হবে মানুষের প্রচেষ্টা ও সাধনার ফলশ্রুতি। মোটকথা যে ভালো বা মন্দ কাজে মানুষের নিজের ইচ্ছা, সংকল্প, প্রচেষ্টা ও সাধনার কোন অংশই নেই, তার শাস্তি বা পুরস্কার সে পাবে, এটা কোনক্রমেই সম্ভব নয়। কর্মফল হস্তান্তর হওয়ার মতো জিনিস নয়।
# আমাদের পূর্ববর্তীরা তোমার পথে চলতে গিয়ে যেসব পরীক্ষা, ভয়াবহ বিপদ, দুঃখ-দুর্দশা ও সংকটের সম্মুখীন হয়, তার হাত থেকে আমাদের রক্ষা করো। যদিও আল্লাহর রীতি হচ্ছে, যে ব্যক্তি সত্য ও ন্যায়ের অনুসরণ করার সংকল্প করেছে, তাকেই তিনি কঠিন পরীক্ষা ও সংকটের সাগরে নিক্ষেপ করেছেন এবং পরীক্ষার সম্মুখীন হলে মু’মিনের কাজই হচ্ছে, পূর্ণ ধৈর্য ও দৃঢ়তার সাথে তার মোকাবিলা করা, তবুও মু’মিনকে আল্লাহর কাছে এই দোয়াই করতে হবে যে, তিনি যেন তার জন্য সত্য ও ন্যায়ের পথে চলা সহজ করে দেন।
# সমস্যা ও সংকটের এমন বোঝা আমাদের ওপর চাপাও, যা বহন করার ক্ষমতা আমাদের আছে। যে পরীক্ষায় পুরোপুরি উত্তীর্ণ হবার ক্ষমতা আমাদের আয়ত্বাধীন তেমনি পরীক্ষায় আমাদের নিক্ষেপ করো। আমাদের সহ্য ক্ষমতার বেশী দুঃখ-কষ্ট-বিপদ আমাদের ওপর চাপিয়ে দিয়ো না। তাহলে আমরা সত্য পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে যাবো।
# এই দোয়াটির পূর্ণ প্রাণসত্তা অনুধাবন করার জন্য এর নিম্নোক্ত প্রেক্ষাপটটি সামনে রাখতে হবে। হিজরতের প্রায় এক বছর আগে মি’রাজের সময় এ আয়াতটি নাযিল হয়েছিল। তখন মক্কায় ইসলাম ও কুফরের লড়াই চরম পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিল। মুসলমানদের মাথায় বিপদ ও সংকটের পাহাড় ভেঙ্গে পড়েছিল। কেবল মক্কাতেই নয়, আরব ভূ-খণ্ডের কোথাও এমন কোন জায়গা ছিল না যেখানে কোন ব্যক্তি দ্বীন ইসলাম গ্রহণ করেছিল এবং তার জন্য আল্লাহর যমীনে বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে পড়েনি। এ অবস্থায় মুসলমানদের আল্লাহর কাছে এভাবে দোয়া করার নির্দেশ দেয়া হলো। দানকারী নিজেই যখন চাওয়ার পদ্ধতি বাতলে দেন তখন তা পাওয়ার ব্যাপারে পূর্ণ নিশ্চিত হওয়া যায়। তাই এই দোয়া সেদিন মুসলমানদের জন্য অসাধারণ মানসিক নিশ্চিন্ততার কারণ হয়। এছাড়াও এই দোয়ায় পরোক্ষভাবে মুসলমানদের নির্দেশ দেয়া হয়, নিজেদের আবেগ অনুভূতিকে কখনো অসঙ্গত ও অনুপযোগী ধারায় প্রবাহিত করো না বরং সেগুলোকে এই দোয়ার ছাঁচে ঢালাই করো। একদিকে নিছক সত্যানুসারিতা ও সত্যের প্রতি সমর্থন দানের কারণে লোকদের ওপর যেসব হৃদয় বিদারক জুলুম নির্যাতন চালানো হচ্ছিল সেগুলো দেখুন এবং অন্যদিকে এই দোয়াগুলো দেখুন, যাতে শক্রদের বিরুদ্ধে সামান্য তিক্ততার নামগন্ধও নেই। একদিকে এই সত্যানুসারীরা যেসব শারীরিক দুর্ভোগ ও আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছিল সেগুলো দেখুন এবং অন্যদিকে এই দোয়াগুলো দেখুন, যাতে পার্থিব স্বার্থের সামান্য প্রত্যাশাও নেই, একদিকে সত্যানুসারীদের চরম দুরবস্থা দেখুন এবং অন্যদিকে এই দোয়ায় উৎসারিত উন্নত ও পবিত্র আবেগ–উদ্দীপনা দেখুন। এই তুলনামূলক বিশ্লেষণের মাধ্যমেই সে সময় ঈমানদারদের কোন্ ধরনের নৈতিক ও আধ্যাত্মিক অনুশীলন দেয়া হচ্ছিল, তা সঠিক ও নির্ভুলভাবে অনুধাবন করা সম্ভব হবে।
ফী জিলালিল কুরআন বলেছেন:-
ইসলাম মানুষকে ‘মানুষ’ হিসেবেই পেশ করেছে৷ ইসলাম মানুষের মর্যাদাকে জন্তু জানোয়ারের স্তরে নামিয়ে তাকে নিকৃষ্ট করে দেয় না আবার তাকে অতিপ্রাকৃতিক স্তরেও উঠিয়ে দেয় না যে, সে ফেরেশতার স্তরে উন্নীত হয়ে যাবে৷ ইসলামের দৃষ্টিতে মানুষ মানুষই, সে শয়তান নয় আবার ফেরেশতাও নয়, তার মধ্যে যেমন বেশ কিছু শক্তি সামর্থ নিহিত রয়েছে আবার তাতে কিছু দুর্বলতাও লুকায়িত আছে। তার যেমন রয়েছে জৈবিক প্রবণতায় ভরা একটি দেহ তেমনি রয়েছে অনুধাবনের জন্যে জ্ঞান বুদ্ধি ও উৎসাহ উদ্দীপনায় ভরা একটি নিবেদিত আত্মা। এই কারণেই ইসলাম মানুষের ওপর ততোটুকু বোঝাই রাখে যতোটুকুর ভার সইবার ক্ষমতা তার আছে । ইসলাম মানুষের যোগ্যতা ও দায়িত্বের মাঝে এক সুন্দর ভারসাম্য সৃষ্টি করে, ইসলাম মানুষের জৈবিক প্রয়োজন জ্ঞানের দাবী পূরণ এবং আত্মার পরিতৃপ্তির মাঝে এক অপূর্ব সামঞ্জস্য সৃষ্টি করে তাকে এতোটুকু স্বাধীনতা দিয়ে দেয় যে, সে যদি চায় তাহলে নিজেকে সত্যের পথে পরিচালিত করতে পারে আবার চাইলে নিজেকে বিভ্রান্তি ও গোমরাহীর চক্রবালেও হারিয়ে দিতে পারে। আল্লাহ তায়ালা কোনো ব্যক্তিকেই তার সামর্থের বাইরে কষ্ট দেন না, অতপর এই পরীক্ষায় যে ভালো কাজ করবে সে তার ভালো ফল পাবে আর যে অন্যায় করবে তার লোকসান তার সাড়েই পড়বে। আল্লাহ তাবারাক ওয়াতায়ালা মোমেনদের ওপর যে দায়িত্ব ও কর্তব্য আরোপ করেছেন এবং দুনিয়ায় খেলাফত চালাবার জন্যে তার ওপর যেসব কাজ চাপিয়েছেন সে ব্যাপারে মোমেনদের ধারণা হচ্ছে এর সবই হচ্ছে আল্লাহর পক্ষ থেকে আরোপিত মোমেনদের জন্যে রহমতমাত্র, এর মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা মোমেনদের ওপর তার অনুগ্রহই প্রদান করেছেন এবং আল্লাহ তায়ালা অত্যস্ত ইনসাফের সাথেই মানুষের ওপর এ দায়িত্ব দিয়েছেন, এ কারণে মোমেনরা হামেশাই আল্লাহর রহমতের ওপর আস্থাশীল ও সন্তুষ্ট থাকে, এ সব দায়িত্ব পালনে কখনো তারা মনোক্ষুণ্ন হয় না। নিজেদের ওপর অর্পিত পবিত্র দায়িত্বকে তারা কখনো বোঝা মনে করে না। এর ফলে তাদের মনে কোনো সংকীর্ণতাও সৃষ্টি হয় না, বরং সে পূর্ণাংগ বিশ্বাস রাখে যে, যে সব দায়িত্ব ও কর্তব্য তার ওপর দেয়া হয়েছে তা পালনের যথাযথ যোগ্যতা ও ক্ষমতা তার রয়েছে। কেননা তা সম্পূর্ণ তার যোগ্যতা ও সামর্থ অনুযায়ীই তাকে দেয়া হয়েছে, এই বিশ্বাস ও ধারণা মোমেনের হৃদয়ে এক অভূতপূর্ব সাহস ও মনোবলের জন্ম দেয় ৷ যখনি কোনো সময়ে চলার পথ তার কাছে দীর্ঘ ও বন্ধুর মনে হয় তখন এই বিশ্বাস তার মধ্যে শক্তি যোগায়, তাকে মনোবল দেয়। এই হচ্ছে মোমেন হৃদয়ের প্রশিক্ষণ, তার সাহস শক্তি ও মনোবলের উৎস । এরপর এই ধারণারই দ্বিতীয় দিক- ভালো কাজ করলে সে এর ভালো ফল ভোগ করবে৷ আবার মন্দ কাজ করলে তার ফলাফলও সেই পাবে। এ হচ্ছে প্রতিটি মানুষের ব্যক্তিগত দায়িত্ব ও ব্যক্তিগতভাবে সে দায়িত্ব পালনের জবাবদিহী করার ভয় থাকার কারণে সে যে সৎকর্মটুকু করবে তা তার জন্যে কল্যাণ বয়ে আনবে আর উদাসীনতা দেখানোর ফলে যে পরিণতির সে মুখোমুখি সে হবে তা তার ব্যক্তিগত কর্মকান্ডের ভুলের মাশুল । প্রতিটি মানুষ নিজের মালিকের সামনে নিজের একান্ত নিজের আমলনামা নিয়েই হাযির হবে। যেখানে কেউ কারো সাহায্যকারী হবে না। প্রতিটি মানুষ আল্লাহর সামনে হবে একা, এই ধারণা ও বিশ্বাসের ফলে প্রতিটি মানুষকে এক একটি স্বতন্ত্র সত্ত্বায় পরিণত হতে হয়। কোনো অবস্থায় কোনো ব্যক্তির পক্ষে আল্লাহর অধিকার আদায়ে যেন কোনো ত্রুটি না দেখা দেয়। গোমরাহী পথভ্রষ্টতা বিদ্রোহ ও বিশৃংখলা সৃষ্টির মোকাবেলায় আল্লাহর অধিকারকে যেন সে সংরক্ষণ করে। কেননা প্রতিটি ব্যক্তিকেই আল্লাহর অধিকার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে যে, সে আল্লাহর অধিকার কতোটুকু পালন করেছে। তার আরোপিত নিষেধাজ্ঞাসমূহ থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রেখেছে কি না, তার এবাদাতে সদা মশগুল থেকেছে কি না, সর্বোপরি নিজের চিন্তা ও কর্মে হামেশা আল্লাহর অনুগত থেকেছে কি না। যদি কোনো মানুষ অন্য কোনো মানুষের ধোকা ও লোভে পড়ে আল্লাহর ‘হক’ পালনের ত্রুটি করে তাহলে সে মানুষ কেয়ামতের দিন তাকে বাচাতে পারবে না৷ কেউই তার গুনাহর বোঝা সেদিন বইবে না, কেউই তার সাহায্য ও সহযোগিতার কাজে এগিয়ে আসবে না, এজন্যেই প্রতিটি মানুষের উচিৎ তার নিজের প্রতিরক্ষায় এগিয়ে আসা এবং আল্লাহর যে সমস্ত ‘হক’ তার ওপর রয়েছে তারও যথাযথ সংরক্ষণ করে, কেননা আল্লাহর আদালতে তার যাবতীয় কর্মকান্ডের জবাবদিহী তাকে একাই করতে হবে । অপরদিকে এই ব্যক্তিগত দায়িত্বের অনুভূতির মানে এ নয় যে, ব্যক্তির ওপর সমষ্টির কোনোরকম কোনো দায় দায়িত্ব নাই। ব্যক্তিকে সমষ্টির পক্ষ থেকে আরোপিত দায়িত্বসমূহও আঞ্জাম দিতে হয়। কেননা স্বয়ং আল্লাহ্ তায়ালাই তাকে আদেশ দিয়েছেন যেন সে তার মাল সম্পদ রুজী রোজগার চেষ্টা সাধনা ও যাবতীয় ভালো কাজের মাধ্যমে সমষ্টির কল্যাণে এগিয়ে আসে । সামষ্টিকভাবে সত্যের পক্ষে কাজ করা ও অসত্যকে নির্মূল করার কাজে নিয়োজিত থাকাও তার জন্যে জরুরী । যাবতীয় ভালো কাজকে প্রসারিত ও উৎসাহিত করবে এবং যাবতীয় মন্দ কাজকে নির্মল ও নিরুৎসাহিত করবে, তার এ পর্যায়ের কাজগুলোও মহা বিচারের দিন তার আমলনামায় লিপিবদ্ধ করা হবে এবং তার কোনো কাজ সমষ্টির পক্ষে ক্ষতিকর ছিলো কিনা এই প্রশ্নও সেদিন তাকে করা হবে । একাই সেদিন তাকে এর জবাব দিতে হবে । মুমিন হৃদয়ের আকুতি : মুসলমানরা যখন এই সত্য সম্পর্কিত বিষয়টি শুনে নিলো এবং ভালো করে তা অনুধাবন করে নিলো এবার একান্ত বিনয় ও নিষ্ঠার সাথে আল্লাহর কাছে তারা দোয়া চাইছে। কোরআন এ দোয়ার কথাগুলোকে তার নিজস্ব ষ্টাইলে এমনভাবে পেশ করছে যেন কোথায়ও বুঝি এখনি তা ঘটছে। ঘটনার বিবরণ দৃষ্টে মনে হয়, একদল নিষ্ঠাবান মোমেন ব্যক্তি করজোড়ে বিশাল সাম্রাজ্যের সম্রাটের সামনে হাত বেঁধে দাড়িয়ে আছে। তাদের সবার মুখে রয়েছে এই আকুতি, “হে আমাদের মালিক যদি আমাদের থেকে কোনো ভুল ত্রুটি হয়ে যায় অথবা কোনো দায়িত্ব পালনের কথা যদি আমরা ভুলে যাই তাহলে আমাদের তুমি পাকড়াও করো না, হে মালিক আমাদের ওপর এমন কোনো বোঝা চাপিয়ো না যেমনি তুমি চাপিয়েছিলে আমাদের আগের লোকদের ওপর, হে মালিক যতোটুকু বোঝা বইবার ক্ষমতা আমাদের নাই সে পরিমাণ বোঝা আমাদের কাধে রোখো না, তুমি আমাদের গুনাহখাতা মাফ করে দিয়ে আমাদের ক্ষমা করে দিয়ো তুমি, আমাদের ওপর দয়া করো, তুমিই আমাদের একমাত্র অভিভাবক, তুমি কাফেরদের ওপর আমাদের বিজয় দাও ৷” এই দোয়া মোমেনদের মানসিক অবস্থার সঠিক বর্ণনা পেশ করে, দুর্বলতা ও বিনয়ের প্রকাশ করে, আল্লাহর অসীম অনুগ্রহের প্রয়োজনীয়তার কথা বলে তার সাহায্য-সহযোগিতার দরকারের বর্ণনা পেশ করে সর্বোপরি এতে বর্ণিত হয়েছে আল্লাহর সাথে মোমেনের অবিচ্ছেদ্য বন্ধনের কথা এতে বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহর শত্রুদের মোকাবেলায় তাদের ওপর বিজয় লাভের জন্যে জেহাদের শক্তি এবং সাহায্য-সহযোগিতার করুণ আরযী। ৷ সমগ্র দোয়ার কথাগুলোকে এমন এক হৃদয়গ্রাহী করে পেশ করা© হয়েছে শুনে মনে হয় এক একটি শব্দ যেন আত্মার গভীরতম প্রদেশ থেকে উৎসারিত হচ্ছে, “হে আমাদের পরওয়ারদেগার তোমার কথা পালনে যদি আমরা কোনো ভুল করে বসি কিংবা আমরা যদি কোনো কিছু আদৌ ভুলে যাই তুমি আমাদের তার জন্যে পাকড়াও করো না ।” যদি কখনো কোনো মানবীয় দুর্বলতার কারণে মোমেনের কোনো ভূল কিংবা পদস্খলন হয়ে যায়, তাহলে তার ওপর দাড়িয়ে না থেকে টালবাহানা ও নানা অজুহাত খাড়া না করে সে সঠিক কথাটি মেনে নেয় ও সাথে সাথে আনুগত্যের পথে ফিরে আসে । বিনয়ের পথ থেকে সরে এসে গোড়ামীর রাস্তা অবলম্বন করার বদলে মোমেন এ ক্ষেত্রে আল্লাহর কাছে একান্ত বিনীতভাবে নিজের ভুল ত্রুটির জন্যে ক্ষমার আরযী নিয়ে হাত উঠায় । আল্লাহ তায়ালা মোমেনদের সাথে তাদের ভুল ত্রুটি মাফ করে দেয়ার ওয়াদা করেছেন, রসূলে কারীম (স.) বলেছেন, আমার উম্মতের ভুল ত্রুটি এবং যে সব গর্হিত কাজে তাদের বাধ্য করা হবে তা সব আল্লাহ তায়ালা মাফ করে দিয়েছেন । (তিবরানী) ”হে আমাদের মালিক, আমাদের ওপর এমন কোনো বোঝা তুমি চাপিয়ো না যেমনি বোঝা তুমি চাপিয়েছো আমাদের পূর্ববর্তী মানুষদের ওপর ৷” মুসলিম উম্মাতের পক্ষ থেকে উচ্চারিত এই দোয়া এই সত্যের দিকেই ইংগীত প্রদান করে যে, তারা সব কয়টি রেসালাত ও সব কয়জন নবীরই উত্তরাধিকার । তাকে আল্লাহ তায়ালা কোরআনের মাধ্যমে পূর্ববর্তী জাতিসমূহের কর্মকান্ড ও তাদের প্রতি নিপতিত আল্লাহর সিদ্ধান্তের ওপর তাদের গুনাহ ও বিদ্রোহের কি শাস্তি এসেছে তাও মুসলিম জাতি তাদের কাছে প্রেরিত কেতাবে দেখেছে। মেমন আল্লাহ তায়ালা ইহুদীদের ওপর কতিপয় পবিত্র জিনিসও হারাম করে দিয়েছেন । সূরায়ে ‘আনয়ামে’ এ প্রসংগে এসেছে, “যারা ইহুদী ছিলো তাদের জন্যে নখ বিশিষ্ট সব পশু আমি হারাম করে দিয়েছিলাম তেমনিভাবে আমি তাদের ওপর গরু ও ছাগলের চর্বিও হারাম করে দিয়েছিলাম ।’ (আনয়াম ১৪৬) অতপর যখন তারা বাছুরকে মাবুদ বানিয়ে আল্লাহদ্রোহীতার মতো জঘন্য অপরাধ করেছে তখন আল্লাহ তায়ালা তাদের হুকুম দিয়েছেন নিজেদের হত্যা কর ফেলতে-এই সূরার প্রথম দিকে এর বিস্তারিত বিবরণ এসেছে। একই ভাবে তাদের ওপর শনিবারের দিনকে হারাম করা হয়েছে, বলা হয়েছে এ দিন যেন তারা কোনো ব্যবসা কিংবা শিকার না করে। এ কারণেই মোমেন আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করছে৷ হে আমাদের মালিক আমাদের ওপর এমন কোনো বোঝা চাপিয়ে দিয়ো না যেমনি করে তুমি চাপিয়ে দিয়েছিলো আগের লোকদের ওপর। অথচ মুসলিম জাতির তো ব্যাপারই আলাদা, আল্লাহ তায়ালা স্বয়ং রসূল পাঠিয়েছেন যেন তিনি মানুষের কাধ থেকে বোঝা নামিয়ে দেন এবং মানবতার পায়ে এর আগে যেসব বেড়ি পরিয়ে রাখা হয়েছিলো তা যেন ফেলে দেন। এদিক থেকে ইসলামী জীবন ব্যবস্থা অত্যস্ত সহজ হালকা ও মানবীয় প্রকৃতির সাথে সামঞ্জস্যশীল স্বয়ং আল্লাহর রসূলকে বলা হয়েছে “আমি তোমাকে সহজ পদ্ধতির সুযোগ দেবো ।” (আনয়াম ৮) সবচাইতে ভারী যে বোঝা আল্লাহ তায়ালা মুসলিম জাতির ওপর থেকে সরিয়ে নিয়েছেন তা হচ্ছে মানুষের ওপর মানুষের গোলামীর শেকল । এই গোলামী বিভিন্নকালে বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে, কোথাও এই গোলামীর ধরন হচ্ছে, একজন কিংবা একদল মানুষ আরেক দল মানুষের জন্যে আইন তৈরী করে। এর আরেক ধরন হচ্ছে, মানুষকে কখনো দল, গোত্র বংশ কিংবা জাতির গোলাম বানিয়ে দেয়া হয়। আল্লাহ তায়ালা মুসলমান জাতিকে এই ধরনের সব গোলামীর জিঞ্জির খুলে ফেলে শুধু আল্লাহর এবাদাত আনুগত্য করতে আদেশ দিয়েছেন তাকে আদেশ দেয়া হয়েছে সে শুধু আল্লাহর আইনেরই আনুগত্য করবে। এভাবেই আল্লাহ তায়ালা তার নবীর মাধ্যমে মুসলিম জাতির জ্ঞান, তার রুহ ও তার গোটা জীবনকে অন্যসব গোলামী থেকে পবিত্র করে দিয়েছেন ৷ (বর্তমান শতকের মুসলিম দার্শনিক ইকবাল কতো সুন্দর করেই না কথাটা বলেছেন। একটি মাত্র সেজদা তুমি আল্লাহর সামনে দাও, দেখবে এই একটি সেজদা তোমাকে অন্য হাজার সেজদা থেকে মুক্ত করে) একমাত্র আল্লাহর গোলামীই মানুষকে পৃথিবীর অন্য সব কয়টি গোলামী থেকে মুক্তির নিশ্চয়তা দিতে পারবে মানুষ আল্লাহর গোলামীর বন্ধনে এসে অত্যাচারী বাদশাহ ও সৈরাচারী শাসকের গোলামী থেকে মুক্তি লাভ করে একই অবস্থায় সমাজ নেতা ও পথভ্রষ্ট গণকদের গোলামী থেকেও মুক্তি লাভ করে। ভ্রান্ত চিন্তাধারা, কুসংস্কার ও সমাজের পচা ও অচল রসম রেওয়াযের কাছ থেকে আল্লাহর গোলামী তাকে মুক্ত করে দেয়, একবার আল্লাহর গোলামী স্বীকার করলে মানুষের প্রকৃতি ও তার চিন্তাধারায় প্রবৃত্তির গোলামীর কোনো সুযোগ থাকে না। ‘আমাদের ওপর চাপিয়ে দিয়ো না’ কথাটার মাঝে এই চূড়ান্ত আযাদীর দিকেই ইংগীত করা হয়েছে, মোমেনদের পক্ষ থেকে আরযী পেশ করা হচ্ছে, “হে মালিক আমাদের ওপর তুমি ছাড়া অন্য কারো গোলামীর বোঝা চাপিয়ে দিয়ো না যেমনি করে আমাদের পূর্ববর্তী জাতিসমূহ এই গোলামীতে নিমজ্জিত ছিলো ।’ ‘হে আল্লাহ, যে বোঝা বইবার শক্তি সামর্থ আমাদের নাই সেই বোঝা আমাদের ওপর রেখো না।’ মোমেন ব্যক্তি আল্লাহর দরবারে দোয়া করে, হে আমাদের মালিক, আমাদের দুর্বলতার ব্যাপারে তুমি আমাদের ওপর দয়া করো। সে সব কাজের দায়িত্ব আমাদের দিয়ো না, যেগুলো করার সামর্থ আমাদের নাই, আমাদের শক্তি সীমার ভেতরে যা আছে এবং যতোটুকু সে সীমার ভেতরে থাকবে তা আমরা পালন করবো । আমরা তোমার কতিপয় দুর্বল ও অক্ষম বান্দা, তোমার ক্ষমার প্রার্থী, তোমার কাছে আমাদের বিনীত নিবেদন, তুমি আমাদের সাথে দয়া ও সহজ আচরণ করো । অতপর মোমেন আবার নিজের দুর্বলতার কথা প্রকাশ করে এবং প্রতি মুহূর্তে দুর্বলতা হেতু কোনো ভুল ভ্রান্তি হয়ে যাওয়ার আশংকার কথা ব্যক্ত করে। সাথে সাথে এটাও আশা করে যে, পরম দয়ালু আল্লাহ তায়ালা তাদের গুনাহ খাতার প্রভাবসমূহকে স্বীয় দয়া ও মেহেরবানী দিয়ে মুছে দেবেন । ‘হে আমাদের মালিক, আমাদের গুনাহ খাতা মাফ করে দাও আমাদের তুমি ক্ষমা করো এবং তুমি আমাদের ওপর দয়া করো ।’ এ পর্যায়ে একথা মনে রাখতে হবে যে, আল্লাহর দয়া ক্ষমা ও অনুগ্রহই হচ্ছে এই পরীক্ষায় টিকে থাকার নিশ্চয়তা বিধানকারী বিষয় । কোনো মানুষই আল্লাহর আনুগত্যের পূর্ণাংগ হক আদায় করতে পারবে না, তাই আল্লাহর দয়া ও অনুগ্রহের দাবীই হচ্ছে তিনি তার করুণা দিয়ে যেটুকু সে করতে পারলো না তা ক্ষমা করে দেবেন । হযরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, রসূল (স.) বলেছেন, তোমাদের মধ্যে কেউই নিজের আমল দিয়ে বেহেশতে যেতে পারবে না, সাহাবীরা জিজ্ঞেস করলেন, হে রসূলুল্লাহ আপনিও নন? তিনি বললেন, না আমিও নই । হা যদি আল্লাহ তায়ালা আমাকে তাঁর দয়া দিয়ে ঢেকে দেন। (বোখারী) মোট কথা, একজন খাটি মুমিন বান্দার কর্তব্য হবে, সে নিজের শক্তি সামর্থ অনুযায়ী আল্লাহর হুকুম আহকাম পালনের চেষ্টা করতে থাকবে, তবে সাথে সাথে নিজের দুর্বলতা ও অক্ষমতার ব্যাপারেও সজাগ থাকবে এবং আল্লাহর কাছ থেকে এই আশা পোষণ করবে যে, তিনি তার অসীম দয়া দ্বারা তার দুর্বলতাসমূহকে ঢেকে দেবেন এবং তার গুনাহ খাতা মাফ করে দেবেন। পরিশেষে নেক বান্দা আল্লাহর পথে জেহাদ, ইসলামী জীবন বিধানের প্রতিষ্ঠা ও তার দ্বীনকে দুনিয়ার বুকে বিজয়ী করার সংগ্রামে আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রত্যাশা করে মোমেন তামাম জাহেলী স্লোগান, জাহেলিয়াতের সব ধরনের রসম রেওয়ায ও জাহেলী সংস্কৃতিকে উপেক্ষা করে শুধু আল্লাহর দ্বীনের ঝান্ডাই বুলন্দ করার কাজে এগিয়ে আসে এবং তাঁর দ্বীনকে সমাজের বুকে প্রতিষ্ঠা করার সংগ্রামে বেরিয়ে পড়ে এবং সংগ্রামের চূড়ান্ত পর্যায়ে এসে সে আবার মালিকের দুয়ারে দয়া ভিক্ষা করে। এরশাদ হচ্ছে, “তুমিই আমাদের অভিভাবক, তুমিই আমাদের মালিক, তোমার দীনকে যারা অস্বীকার করে সে সব কাফেরদের সাথে সংগ্রামে তুমি তাদের ওপর আমাদের বিজয়ী করো ।” সূরায়ে বাকারার এই পরিশিষ্টটুকু হচ্ছে গোটা সূরায় বর্ণিত বক্তব্যের সারাংশ, যাবতীর আকিদা বিশ্বাসের এই হচ্ছে সার সংক্ষেপ । অনেকটা মোমেন চরিত্রের আয়না স্বরূপ। সর্বোপরি এটা হচ্ছে মালিকের সামনে সদা বিনয়ের সাথে দোয়া করতে থাকার এক অমুল্য অনুশীলন ।
তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ বলেছেন:-
২৮৬ নং আয়াতের তাফসীর:
এ আয়াত দু’টি হচ্ছে সম্পূর্ণ সূরার এমনি এক পরিশিষ্ট ও সংক্ষিপ্তসার যাতে সূরার মূল আলোচিত বিষয়গুলোর বর্ণনা দেয়া হয়েছে। এতে ঈমানের ধরন ও সত্যিকার মু’মিনের দায়িত্ব ও কর্তব্যের কথা বলা হয়েছে এবং বিনয়ের সাথে আল্লাহ তা‘আলার কাছে দু‘আ করার আদব শিক্ষা দেয়া হয়েছে।
ফযীলত: ইবনু মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:
مَنْ قَرَأَ بِالْآيَتَيْنِ مِنْ سُورَةِ الْبَقَرَةِ فِي لَيْلَةٍ كَفَتَاهُ
যে ব্যক্তি সূরা বাকারার এ আয়াত দু’টি রাতে তেলাওয়াত করবে তার জন্য এ দু’টিই (রাতের ইবাদত হিসেবে ও সকল অনিষ্ট থেকে বেঁচে থাকার জন্য) যথেষ্ট। (সহীহ বুখারী হা: ৪০০৮)
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: আমাকে সূরা ফাতিহা ও সূরা বাকারার শেষ দু’টি আয়াত আরশের নীচের ধনভাণ্ডার থেকে দেয়া হয়েছে। আমার পূর্বে কোন নাবীকে তা দেয়া হয়নি। (হাকিম: ১/৫৫৯, সিলসিলা সহীহাহ হা:১৪৮২)
নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: আল্লাহ তা‘আলা আকাশ-জমিন সৃষ্টি করার দু’হাজার বছর আগে একটি কিতাব লিখেছেন তা থেকে সূরা বাকারার শেষ দু’টি আয়াত অবতীর্ণ করেছেন। যে বাড়িতে তিন রাত এ আয়াতদ্বয় তেলাওয়াত করা হবে সে বাড়িতে শয়তান থাকবে না। (তিরমিযী হা: ২৮৮২, সনদ সহীহ)
এ ছাড়াও সূরা বাকারার শেষ দু’টি আয়াতের আরো অনেক ফযীলত রয়েছে।
সূরার শুরুতে আল্লাহ তা‘আলা মানব জাতিকে ঈমানের প্রত্যেক রুকনের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। অত্র আয়াতে তিনি জানিয়ে দিচ্ছেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও তাঁর সাথে মু’মিনগণ ঈমানের প্রত্যেক রুকনের প্রতি ঈমান এনেছেন। পূর্ববর্তী দীনের অনুসারীরা কিতাবের কিছু বিশ্বাস করেছিল আর কিছু কুফরী করেছিল, উম্মাতে মুহাম্মাদীর মু’মিনরা এমন করেনি। বরং মু’মিনরা সকল রুকনের প্রতি যেভাবে বিশ্বাস করা উচিত সেভাবে বিশ্বাস করে এবং আল্লাহ তা‘আলা প্রেরিত নাবী-রাসূলদের মাঝে কোনরূপ পার্থক্য করে না। কোন রাসূলকে আল্লাহ তা‘আলা কিম্বা আল্লাহ তা‘আলার ছেলে বলে আখ্যায়িত করে বাড়াবাড়ি করে না, আবার অসম্মানিতও করে না। আয়াতে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে মু’মিনদের কথা উল্লেখ করায় তাদের মর্যাদা ও সম্মান বৃদ্ধি পেয়েছে।
(وَقَالُوْا سَمِعْنَا وَاَطَعْنَا)
“তারা বলে, আমরা শুনলাম এবং মেনে নিলাম।”এটা হল মু’মিনদের ঈমানের বহিঃপ্রকাশ। কুরআন ও সহীহ সুন্নায় যত বিধান নিয়ে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আগমন করেছেন সকল বিধানের ক্ষেত্রে মু’মিনদের এরূপ কথা হবে। তারা আল্লাহ তা‘আলা ও রাসূলের বিধানের কাছে নিজেরা আত্মসমর্পন করবে এবং মেনে নেয়ার উদ্দেশ্যে শ্রবণ করবে, এ ক্ষেত্রে দল-মত ও তরীকার চিন্তা করার সুযোগ নেই।
(رَبَّنَا لَا تُؤَاخِذْنَآ)
“হে আমাদের রব! আমরা ভুলে গেলে অথবা ভুল করলে পাকড়াও করবেন না”এ দু‘আ কবূল করতঃ অন্য আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَلَيْسَ عَلَيْكُمْ جُنَاحٌ فِيمَا أَخْطَأْتُمْ بِهِ)
“এ ব্যাপারে তোমরা যে ভুল-ত্র“টি করে ফেলেছ তাতে তোমাদের কোন গুনাহ হবে না।”(সূরা আহযাব ৩৩:৫) আর ভুল করে কিছু করলে আল্লাহ তা‘আলা ক্ষমা করবেন (সূরা আন‘আম ৬:৬৮)।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা আমার উম্মাতের ভুল-ত্র“টি ক্ষমা করে দিয়েছেন এবং জোরপূর্বক যা কিছু করা হয় তাও ক্ষমা করে দেয়া হয়েছে। (সুনানে ইবনে মাজাহ হা:২০৪৫, সহীহ)
(رَبَّنَا وَلَا تَحْمِلْ عَلَيْنَا إِصْرًا)
“হে আমাদের রব! আমাদের ওপর এমন বোঝা চাপিয়ে দেবেন না”আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: আল্লাহ তা‘আলা এ আয়াতের উত্তরে বলেছেন: হ্যাঁ। আমি তোমাদের ওপর এমন ভার দেব না যা পূর্ববর্তীগণ বহন করেছে। (মুসলিম, ১খণ্ড, ১৯৯, পৃঃ ১১৫ ও ১১৬)
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) হতে বণিত, তিনি বলেন: এক সময় নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের কাছে এসে দেখতে পেলেন যে, দু‘টি খুটির মাঝে রশি টাঙানো আছে। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন: এ রশিটা কিসের জন্য? লোকেরা বলল: এ রশি যায়নাবের (লটকানো), রাতের বেলা তিনি ইবাদত করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়লে এর ওপর গা ঝুলিয়ে দেন। এসব শুনে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: না, ওটা খুলে দাও। মনে ফূর্তি ও সতেজ ভাব থাকা পর্যন্তই তোমাদের ইবাদত বন্দেগী (ফরয ব্যতীত) করা উচিত। যখন সে ক্লান্ত হয়ে পড়বে তখন ইবাদত করবে না। (অন্য বর্ণনায় রয়েছে) আবূ মা‘মার আয়িশাহ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন: বানী আসাদ গোত্রের একজন মহিলা আমার কাছে উপস্থিত ছিলেন। এমতাবস্থায় নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার কাছে আগমন করলেন এবং (মহিলাটিকে দেখে) জিজ্ঞাসা করলেন: মহিলাটি কে? আমি বললাম: অমুক মহিলা আর তার সালাতের কথা উল্লেখ করে বললাম যে, সে রাতে ঘুমায় না। এসব শুনে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিরক্তির স্বরে বললেন: থামো! সাধ্য অনুসারেই তোমাদের আমল করা উচিত। কেননা, তোমরা ক্লান্ত না হওয়া পর্যন্ত আল্লাহ তা‘আলা ক্লান্ত হননা। (অর্থাৎ তোমরা ক্লান্ত ও বিরক্ত হয়ে যখন কাজ বন্ধ করে দাও, আল্লাহ তা‘আলা তখনই সওয়াব বা পুরস্কার প্রদান বন্ধ করে দেন। (সহীহ বুখারী হা: ১১৫০, সহীহ মুসলিম হা: ৭৮৪)
সুতরাং আমাদের উচিত আল্লাহ তা‘আলা যা দায়িত্ব দেননি নিজেরা বিভিন্ন তরীকার অসাধ্য সবক আবিস্কার করে এমন কিছু চাপিয়ে না নেয়া, বরং সাধ্যমত আমল করতঃ আল্লাহ তা‘আলার অনুগ্রহের আশা করব।
পরিশেষে একজন দাস তার মুনীবের কাছে যেভাবে অনুনয়-বিনয়ের সাথে নিজের অক্ষমতা, অপারগতা ও অপরাধ স্বীকার করে ক্ষমা প্রার্থনা করে আল্লাহ তা‘আলা সেভাবে আমাদেরকে ক্ষমা প্রার্থনা করার শিক্ষা দিচ্ছেন। হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমাশীল, আপনি ক্ষমাকে ভালবাসেন, আপনি দয়ালু, অতএব আপনি আমাদের ক্ষমা করে দিন ও দয়া করুন। আপনি আমাদের মাওলা, আপনি ছাড়া আমাদের কোন অভিভাবক নেই, অতএব আপনি কাফিরদের বিরুদ্ধে আমাদেরকে সাহায্য করুন। এ সূরা শেষে আমীন বলার হাদীসটি দুর্বল। (ইবনু জারীর আত-তাবারী হা: ৬৫৪১, যঈফ)
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. সকল রাসূলের প্রতি কোন পার্থক্য ছাড়াই ঈমান আনা আবশ্যক। কাউকে আল্লাহ তা‘আলা বা আল্লাহ তা‘আলার ছেলে মর্যাদায় উন্নীত করব না আবার কারো প্রাপ্য মর্যাদা ক্ষুণ্ণও করব না।
২. অজান্তে ভুল-ত্র“টি হয়ে গেলে এ উম্মাতের জন্য তা ক্ষমা করে দেয়া হয়েছে।
৩. অন্তরে যে খারাপ চিন্তা আসে তা কর্মে বা কথায় প্রকাশ না পেলে পাকড়াও করা হবে না।
৪. সূরা বাকারার শেষ আয়াত ফযীলত জানতে পারলাম।
৫. প্রত্যেক মু’মিনের উচিত আল্লাহ তা‘আলা যেভাবে ঈমান এনে দুনিয়ায় জীবন-যাপন করার নির্দেশ দিয়েছেন সেভাবে ঈমান আনা এবং সকল মতবাদ, চিন্তা-চেতনা ও জাহিলি কর্মকাণ্ড বর্জন করা।
তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-
২৮৬ নং আয়াতের তাফসীর
এই আয়াত ফযীলতের বহু হাদীস রয়েছে। সহীহ বুখারী শরীফের মধ্যে রয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি আয়াত দু’টি রাত্রে পাঠ করবে তার জন্যে এ দু’টোই যথেষ্ট। মুসনাদ-ই-আহমাদের মধ্যে রয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “সূরা-ই-বাকারার শেষের আয়াত দু’টি আমাকে আরশের নীচের ভাণ্ডার হতে দেয়া হয়েছে। আমার পূর্বে কোন নবীকে এ দু’টো দেয়া হয়নি।’ সহীহ মুসলিম শরীফে রয়েছে যে, যখন রাসুলুল্লাহ (সঃ)-কে। মিরাজে নিয়ে যাওয়া হয় এবং তিনি সপ্তম আকাশে অবস্থিত সিদরাতুল মুনতাহায় পৌছেন,যে জিনিস আকাশের দিকে উঠে যায় তা এই স্থান পর্যন্ত পৌছে থাকে ও এখান হতেই নিয়ে নেয়া হয় এবং যে জিনিস উপর থেকে নেমে আসে ওটাও এখন পর্যন্তই পৌছে থাকে। অতঃপর এখান হতেই নিয়ে নেয়া হয়। ঐ স্থানটিকে সোনার ফড়িং ঢেকে রেখেছিল। তথায় রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে তিনটি জিনিস দেয়া হয়-(১) পাঁচ ওয়াক্ত নামায। (২) সুরা-ই-বাকারার শেষ আয়াতগুলো এবং (৩) একত্ববাদীদের সমস্ত পাপের ক্ষমা। মুসনাদ -ই-আহমাদের মধ্যে রয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) হযরত উকবা বিন আমির (রাঃ)-কে বলেনঃ সূরা-ই-বাকারার এই আয়াত দু’টি পাঠ করতে থাকবে। আমাকে এ দুটো আরশের নীচের ধনভাণ্ডার হতে দেয়া হয়েছে। তাফসীর-ই-ইবনে মিরদুওয়াই গ্রন্থেই রয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ ‘আমাদেরকে লোকদের উপর তিনটি ফযীলত দেয়া হয়েছে। সূরা-ই-বাকারার শেষের আয়াতগুলো আরশের নীচের ভাণ্ডার হতে দেয়া হয়েছে। এ দুটো আমার পূর্বে আর কাউকেও দেয়া হয়নি। এবং আমার পরেও আর কাউকেও দেয়া হবে।’ ইবনে মিরদুওয়াই (রঃ)-এর গ্রন্থে রয়েছে যে, হযরত আলী (রাঃ) বলেনঃ ‘আমার জানা নেই যে, ইসলাম সম্বন্ধে জ্ঞান রয়েছে এরূপ লোকেদের মধ্যে কেউ আয়াতুল কুরসী এবং সুরা-ই-বাকারার শেষ আয়াত দু’টি না পড়েই শুয়ে যায়। এটা এমন একটি ধনভাণ্ডার যা তোমাদের নবী (সঃ)-কে আরশের নীচের ধনভাণ্ডার হতে দেয়া হয়েছে।’ জামে তিরমিযী শরীফে একটি হাদীস রয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আল্লাহ তা’আলা আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি করার দু’হাজার বছর পূর্বে একটি কিতাব লিখেছিলেন। যার মধ্যে দু’টি আয়াত অবতীর্ণ করে সূরা-ই-বাকারা শেষ করেন। যেই বাড়ীতে তিন রাত্রি পর্যন্ত এই আয়াত দু’টি পাঠ করা হবে শয়তান সেই বাড়ীর নিকটেও যেতে পারবে না। ইমাম তিরমিযী (রঃ) এই হাদীসটিকে গরীব বলেছেন। কিন্তু হাকীম স্বীয় গ্রন্থ মুসতাদরাকের মধ্যে হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। ইবনে মিরদুওয়াই (রঃ)-এর গ্রন্থে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) যখন সূরা-ই-বাকারার শেষ আয়াতগুলো এবং আয়াতুল কুরসী পাঠ করতেন তখন তিনি হেসে উঠে বলতেনঃ ‘এই দু’টো রহমানের (আল্লাহর) আরশের নীচের ধন ভাণ্ডার। যখন তিনি (আরবি) অর্থাৎ যে ব্যক্তি খারাপ কাজ করবে তাকে তার প্রতিদান দেয়া হবে।(আরবি) অর্থাৎ মানুষ যা চেষ্টা করেছে তাই তার জন্যে রয়েছে অর্থাৎ নিশ্চয় তার চেষ্টার ফল তাকে সত্বরই দেখানো হবে অর্থাৎ অতঃপর তাকে পূর্ণ প্রতিদান দেয়া হবে। (৫৩:৩৯-৪১) এই আয়াতগুলো পাঠ করতেন তখন তাঁর মুখ দিয়ে (আরবি) অর্থাৎ নিশ্চয় আমরা আল্লাহর জন্যে এবং নিশ্চয় আমরা তাঁর নিকট প্রত্যাবর্তনকারী’ আয়াতটি বেরিয়ে যেতো এবং তিনি বিষন্ন হয়ে পড়তেন। ইবনে মিরদুওয়াই (রঃ)-এর গ্রন্থে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ আমাকে সূরা-ই-ফাতিহা এবং সূরা-ই-বাকারার শেষ আয়াত দু’টি আরশের নিম্নদেশ হতে দেয়া হয়েছে এবং মুফাসসাল সূরাগুলো অতিরিক্ত। হযরত ইবনে আব্বাস। (রাঃ) বলেনঃ “আমরা রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর পার্শ্বে বসেছিলাম এবং হযরত জিবরাঈলও (আঃ) তাঁর নিকট ছিলেন। এমন সময় আকাশ হতে এক ভয়াবহ শব্দ আসে। হ্যরত জিবরাঈল (আঃ) উপরের দিকে চক্ষু উত্তোলন করেন এবং বলেনঃ আকাশের ঐ দরজাটি খুলে গেল যা আজ পর্যন্ত কোন দিন খুলেনি। তথা হতে এক ফেরেশতা অবতরণ করেন এবং নবী (সঃ)কে বলেনঃ আপনি সন্তোষ প্রকাশ করুন! আপনাকে ঐ দু’টি নূর দেয়া হচ্ছে যা আপনার পূর্বে কোন নবীকে দেয়া হয়নি। তা হচ্ছে সূরা-ই-ফাতিহা ও সূরা-ই-বাকারার শেষ আয়াত দু’টি। এগুলোর প্রত্যেকটি অক্ষরের উপর আপনাকে নূর দেয়া হবে। (সহীহ মুসলিম) সুতরাং এই দশটি হাদীসে এই বরকতপূর্ণ আয়াতগুলোর ফযীলত সম্বন্ধে বর্ণিত হলো। আয়াতের ভাবার্থ এই যে, রাসূল অর্থাৎ হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা (সঃ)-এর উপর তার প্রভুর পক্ষ হতে যা অবতীর্ণ করা হয়েছে তার উপর তিনি ঈমান এনেছেন। এটা শুনে রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “তিনি ঈমান আনয়নের পূর্ণ হকদার। অন্যান্য মুমিনগণও ঈমান এনেছে। তারা মেনে নিয়েছে যে, আল্লাহ এক। তিনি অদ্বিতীয়। তিনি কারও মুখাপেক্ষী নন। তিনি ছাড়া কেউ উপাসনার যোগ্য নেই এবং তিনি ছাড়া কেউ পালনকর্তাও নেই। এই মুমিনরা সমস্ত নবীকেই (আঃ) স্বীকার করে। তারা সমস্ত রাসূলের উপর বিশ্বাস স্থাপন করে, ঐ আসমানী কিতাবসমূহকে সত্য বলে বিশ্বাস করে যেগুলো নবীগণের উপর অবতীর্ণ হয়েছিল। তারা নবীদের (আঃ) মধ্যে কোন পার্থক্য আনয়ন করে না। অর্থাৎ কাউকে মানবে এবং কাউকে মানবে না তা নয়। বরং সকলকেই সত্য বলে স্বীকার করে এবং বিশ্বাস রাখে যে, তাঁরা সবাই সত্য ও ন্যায়ের উপর প্রতিষ্ঠিত ছিলেন এবং মানুষকে ন্যায়ের দিকে আহবান করতেন। তবে কোন কোন আহকাম প্রত্যেক নবীর যুগে পরিবর্তিত হতো বটে, এমনকি শেষ পর্যন্ত শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ)-এর শরীয়ত সকল শরীয়তকে রহিতকারী হয়ে যায়। নবী (সঃ) ছিলেন সর্বশেষ নবী ও সর্বশেষ রাসূল। কিয়ামত পর্যন্ত তাঁর শরীয়ত বাকী থাকবে এবং একটি দল তাঁর অনুসরণও করতে থাকবে। তারা স্বীকারও করে আমরা আল্লাহর কালাম শুনলাম এবং তাঁর নির্দেশাবলী আমরা অবনত মস্তকে স্বীকার করে নিলাম। তারা বললো-“হে আমাদের প্রভু! আপনারই নিকট আমরা ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং আপনারই নিকট আমাদের প্রত্যাবর্তন। অর্থাৎ কিয়ামতের দিন আপনারই নিকট আমাদেরকে ফিরে যেতে হবে।’ হযরত জিবরাঈল (আঃ) বলেন-হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! এখানে আপনার ও আপনার অনুসারী উম্মতের প্রশংসা করা হচ্ছে। এই সুযোগে আপনি আল্লাহ তা’আলার নিকট প্রার্থনা করুন তা গৃহীত হবে এবং তার নিকট যাঞা করুন যে,তিনি যেন সাধ্যের অতিরিক্ত কষ্ট না দেন।
অতঃপর আল্লাহ তা’আলা বলেন, কোন ব্যক্তিকেই আল্লাহ তার সামর্থের অতিরিক্ত কর্তব্য পালনে বাধ্য করেন না। এটা বান্দার প্রতি মহান আল্লাহর করুণা ও অনুগ্রহ।
সাহাবীগণের (রাঃ) মনে যে খটকা এসেছিল এবং আল্লাহ তা’আলা মনের ধারণার জন্যেও যে হিসাব নিবেন তা তাঁদের কাছে যে খুব কঠিন ঠেকেছিল, আল্লাহ তা’আলা এই আয়াত দ্বারা তা নিরসন করেন। ভাবার্থ এই যে, আল্লাহ তা’আলা হিসাব গ্রহণ করবেন বটে, কিন্তু সাধ্যের অতিরিক্ত কার্যের জন্যে তিনি শাস্তি প্রদান করবেন না। কেননা, মনে হঠাৎ কোন ধারণা এসে যাওয়া এটা রোধ করা কারও পক্ষে সম্ভবপর নয়। বরং হাদীসে তো এটাও এসেছে যে, এরূপ। ধারণাকে খারাপ মনে করাও ঈমানের পরিচায়ক।
নিজ নিজ কর্মের ফল সকলকেই ভোগ করতে হবে। ভাল কাজ করলে ভাল ফল পাওয়া যাবে। এবং মন্দ কাজের ফল মন্দ হবে। অতঃপর আল্লাহ পাক তার বান্দাদেরকে প্রার্থনা শিখিয়ে দিচ্ছেন এবং তা কবুল করারও তিনি অঙ্গীকার করছেন। বান্দা প্রার্থনা করছেঃ হে আমাদের প্রভু! যদি আমাদের ভ্রম অথবা ক্রটি হয় তজ্জন্য আমাদেরকে ধরবেন না। অর্থাৎ যদি ভুল বশতঃ কোন নির্দেশ পালনে আমরা ব্যর্থ হয়ে থাকি বা কোন মন্দ কাজ করে থাকি অথবা শরীয়ত বিরোধী কোন কাজ আমাদের দ্বারা সম্পন্ন হয়ে থাকে তবে আমাদেরকে তজ্জন্যে। পাকড়াও না করে দয়া করে ক্ষমা করুন। ‘ইতিপূর্বে সহীহ মুসলিমের উদ্ধৃতি দিয়ে হাদীস বর্ণিত হয়েছে যে, এই প্রার্থনার উত্তরে আল্লাহ তা’আলা বলেনআমি এটা কবুল করেছি এবং আমি এটাই করেছি।’ অন্য হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আমার উম্মতের ভুল-ত্রুটি ক্ষমা করা হয়েছে এবং জোরপূর্বক যে কাজ করিয়ে নেয়া হয় তজ্জন্যেও ক্ষমা রয়েছে। (ইবনে মাজাহ)।’
‘হে আল্লাহ! আমাদের পূর্ববর্তীগণের উপর যেরূপ গুরুভার অর্পণ করেছিলেন আমাদের উপর অজ্রপ গুরুভার অর্পণ করবেন না। আল্লাহ তা’আলা তাদের এই প্রার্থনাও কবুল করেন। হাদীস শরীফে রয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আমি শান্তিপূর্ণ ও সহজ ধর্ম নিয়ে প্রেরিত হয়েছি।’ ‘হে আমাদের প্রভু! যা আমাদের শক্তির অতীত এরূপ কার্যভার বহনে আমাদেরকে বাধ্য করবেন না।’ হযরত মাকহুল (রঃ) বলেন যে, এর ভাবার্থ হচ্ছে মনের সংকল্প এবং প্রবৃত্তির উপর বিজয় লাভ। এই প্রার্থনার উত্তরেও আল্লাহ তা’আলার পক্ষ হতে মঞ্জুরী ঘোষিত হয়। আমাদেরকে ক্ষমা করুন, আমাদেরকে মার্জনা করুন এবং আমাদের প্রতি দয়া করুন।’ অর্থাৎ আমাদের ত্রুটি-বিচ্যুতি ক্ষমা করুন, আমাদের পাপসমূহ মার্জনা করুন, আমাদের অসকার্যাবলী গোপন রাখুন এবং আমাদের উপর সদয় হউন যেন পুনরায় আমাদের দ্বারা আপনার অসন্তুষ্টির কোন কাজ সাধিত না হয়। এ জন্যে মনীষীদের উক্তি রয়েছে যে, পাপীদের জন্যে তিনটি জিনিসের প্রয়োজন। (১) আল্লাহর ক্ষমা যেন সে শাস্তি হতে মুক্তি পেতে পারে। (২) গোপনীয়তা রক্ষা, যেন সে অপমান ও লাঞ্ছনা হতে রক্ষা পায়। (৩) পবিত্রতা লাভ, যেন সে দ্বিতীয় বার পাপ কার্যে লিপ্ত না হয়। এর উপরও আল্লাহ তাআলার মঞ্জুরী ঘোষিত হয়। আপনিই আমাদের সাহায্যকারী, আপনার উপরেই আমাদের ভরসা, আপনার নিকটই আমরা সাহায্য প্রার্থনা করি, আপনিই আমাদের আশ্রয়স্থল। আপনার সাহায্য ছাড়া না আমরা অন্য কারও সাহায্য পেতে পারি, না কোন মন্দ কাজ হতে বিরত থাকতে পারি। আপনি আমাদেরকে ঐ লোকদের উপর সাহায্য করুন যারা আপনার মনোনীত ধর্মের বিরোধী, যারা আপনার একত্বে বিশ্বাসী নয়, যারা আপনার রাসূলের (সঃ) রিসালাতকে অস্বীকার করে, যারা আপনার ইবাদতে অন্যদেরকে অংশীদার করে; হে আল্লাহ! আপনি আমাদেরকে তাদের উপর শাসনকর্তা নিযুক্ত করুন। আল্লাহ তা’আলা এর উত্তরেও বলেনঃ হাঁ, আমি এটাও করলাম।’ হযরত মু’আজ (রাঃ) এই আয়াতটি শেষ করে আমীন বলতেন। (ইবনে জারীর) ”
أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book#1042)
[Islam Has described as human :-]
www.motaher21.net
2:286
لَا یُکَلِّفُ اللّٰہُ نَفۡسًا اِلَّا وُسۡعَہَا ؕ لَہَا مَا کَسَبَتۡ وَ عَلَیۡہَا مَا اکۡتَسَبَتۡ ؕ رَبَّنَا لَا تُؤَاخِذۡنَاۤ اِنۡ نَّسِیۡنَاۤ اَوۡ اَخۡطَاۡنَا ۚ رَبَّنَا وَ لَا تَحۡمِلۡ عَلَیۡنَاۤ اِصۡرًا کَمَا حَمَلۡتَہٗ عَلَی الَّذِیۡنَ مِنۡ قَبۡلِنَا ۚ رَبَّنَا وَ لَا تُحَمِّلۡنَا مَا لَا طَاقَۃَ لَنَا بِہٖ ۚ وَ اعۡفُ عَنَّا ٝ وَ اغۡفِرۡ لَنَا ٝ وَ ارۡحَمۡنَا ٝ اَنۡتَ مَوۡلٰىنَا فَانۡصُرۡنَا عَلَی الۡقَوۡمِ الۡکٰفِرِیۡنَ ﴿۲۸۶﴾٪
Allah does not charge a soul except [with that within] its capacity. It will have [the consequence of] what [good] it has gained, and it will bear [the consequence of] what [evil] it has earned. “Our Lord, do not impose blame upon us if we have forgotten or erred. Our Lord, and lay not upon us a burden like that which You laid upon those before us. Our Lord, and burden us not with that which we have no ability to bear. And pardon us; and forgive us; and have mercy upon us. You are our protector, so give us victory over the disbelieving people.”
لَا يُكَلِّفُ اللّهُ نَفْسًا إِلااَّ وُسْعَهَا
Allah burdens not a person beyond his scope,
means, Allah does not ask a soul what is beyond its ability.
This only demonstrates Allah’s kindness, compassion and generosity towards His creation.
This Ayah is the Ayah that abrogated the Ayah that worried the Companions, that is, Allah’s statement,
وَإِن تُبْدُواْ مَا فِي أَنفُسِكُمْ أَوْ تُخْفُوهُ يُحَاسِبْكُم بِهِ اللّهُ
(And whether you disclose what is in yourselves or conceal it, Allah will call you to account for it), (2:284).
This indicates that although Allah will question His servants and judge them, He will only punish for what one is able to protect himself from.
As for what one cannot protect himself from, such as what one says to himself – or passing thoughts – they will not be punished for that.
We should state here that to dislike the evil thoughts that cross one’s mind is a part of faith.
Allah said next,
لَهَا مَا كَسَبَتْ
He gets reward for that which he has earned,
of good.
وَعَلَيْهَا مَا اكْتَسَبَتْ
And he is punished for that which he has earned,
of evil, that is, concerning the acts that one is responsible for.
Allah then said, (mentioning what the believers said) while directing His servants to supplicate to Him, all the while promising them that He will answer their supplication:
رَبَّنَا لَا تُوَاخِذْنَا إِن نَّسِينَا أَوْ أَخْطَأْنَا
“Our Lord! Push us not if we forget or fall into error,”
meaning, “If we forgot an obligation or fell into a prohibition, or made an error while ignorant of its ruling.”
We mentioned the Hadith by Abu Hurayrah, that Muslim collected, wherein Allah said, “I shall (accept your supplication).”
There is also the Hadith by Ibn Abbas that Allah said,
“I did (accept your supplication).”
رَبَّنَا وَلَا تَحْمِلْ عَلَيْنَا إِصْرًا كَمَا حَمَلْتَهُ عَلَى الَّذِينَ مِن قَبْلِنَا
Our Lord! Lay not on us a burden like that which You did lay on those before us (Jews and Christians),
means, “Even if we were able to perform them, do not require us to perform the difficult deeds as You required the previous nations before us, such as the burdens that were placed on them. You sent Your Prophet Muhammad, the Prophet of mercy, to abrogate these burdens through the Law that You revealed to him, the Hanifi (Islamic Monotheism), easy religion.”
Muslim recorded that Abu Hurayrah said that;
the Messenger of Allah said that Allah said, “I shall (accept your supplication).”
Ibn Abbas narrated that the Messenger of Allah said that Allah said,
“I did (accept your supplication).”
There is the Hadith recorded through various chains of narration that;
the Messenger of Allah said,
بُعِثْتُ بِالْحَنِيفِيَّةِ السَّمْحَة
I was sent with the easy Hanifiyyah way.
رَبَّنَا وَلَا تُحَمِّلْنَا مَا لَا طَاقَةَ لَنَا بِهِ
Our Lord! Put not on us a burden greater than we have strength to bear,
of obligations, hardships and afflictions, do not make us bear what we cannot bear of this.
رَبَّنَا وَلَا تُحَمِّلْنَا مَا لَا طَاقَةَ لَنَا بِهِ
(Our Lord! Put not on us a burden greater than we have strength to bear),We mentioned that Allah said,
“I shall (accept your supplication)” in one narration,
and,
“I did (accept your supplication),” in another narration.
وَاعْفُ عَنَّا
Pardon us,
meaning, between us and You regarding what You know of our shortcomings and errors.
وَاغْفِرْ لَنَا
And grant us forgiveness,
concerning what is between us and Your servants. So do not expose our errors and evil deeds to them.
وَارْحَمْنَأ
Have mercy on us,
in what will come thereafter. Therefore, do not allow us to fall into another error.
They say that those who commit error need three things:
Allah’s forgiveness for what is between Him and them,
that He conceals these errors from His other servants, and thus does not expose them before the servants, and
that He grants them immunity from further error.”
We mentioned before that Allah answered these pleas, “I shall,” in one narration and, “I did,” in another narration.
أَنتَ مَوْلَانَا
You are our Mawla,
meaning, You are our supporter and helper, our trust is in You, You are sought for each and every type of help and our total reliance is on You. There is no power or strength except from You.
فَانصُرْنَا عَلَى الْقَوْمِ الْكَافِرِينَ
And give us victory over the disbelieving people.
those who rejected Your religion, denied Your Oneness, refused the Message of Your Prophet, worshipped other than You and associated others in Your worship. Give us victory and make us prevail above them in this and the Hereafter.
Allah said, “I shall,” in one narration, and, “I did,” in the Hadith that Muslim collected from Ibn Abbas.
Further, Ibn Jarir recorded that Abu Ishaq said that;
whenever Mu`adh would finish reciting this Surah,
فَانصُرْنَا عَلَى الْقَوْمِ الْكَافِرِينَ
(And give us victory over the disbelieving people), he would say “Amin.”
This is the end of the Tafsir of Surah At-Baqarah, and all praise and thanks are due to Allah.
Top
For getting Quran app: play.google.com/store/apps/details?id=com.ihadis.quran