أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(বই#১০৫৫)
[ *আল্লাহর জিকিরের তাৎপর্য ও গুরুত্ব :-]
www.motaher21.net
সূরা:- ৩৩:আহযাব
পারা:২২
৪১-৪৪ নং আয়াত:-
৩৩: ৪১
یٰۤاَیُّہَاالَّذِیۡنَ اٰمَنُوا اذۡکُرُوا اللّٰہَ ذِکۡرًا کَثِیۡرًا﴿ۙ۴۱﴾
হে ঈমানদারগণ! আল্লাহকে বেশী করে স্মরণ করো।
৩৩:৪২
وَّ سَبِّحُوۡہُ بُکۡرَۃً وَّ اَصِیۡلًا ﴿۴۲﴾
এবং সকাল-সন্ধ্যায় আল্লাহর পবিত্ৰতা ও মহিমা ঘোষণা করতে থাকো।
৩৩:৪৩
ہُوَ الَّذِیۡ یُصَلِّیۡ عَلَیۡکُمۡ وَ مَلٰٓئِکَتُہٗ لِیُخۡرِجَکُمۡ مِّنَ الظُّلُمٰتِ اِلَی النُّوۡرِ ؕ وَ کَانَ بِالۡمُؤۡمِنِیۡنَ رَحِیۡمًا ﴿۴۳﴾
তিনিই, যিনি তোমাদের প্রশংসা করেন এবং দো’আ ও ক্ষমা চান তোমাদের জন্য তাঁর ফিরিশতাগণ; যেন তিনি তোমাদেরকে অন্ধকার থেকে বের করে আনেন আলোর দিকে। আর তিনি মুমিনদের প্রতি পরম দয়ালু।
৩৩:৪৪
تَحِیَّتُہُمۡ یَوۡمَ یَلۡقَوۡنَہٗ سَلٰمٌ ۖۚ وَ اَعَدَّ لَہُمۡ اَجۡرًا کَرِیۡمًا ﴿۴۴﴾
যেদিন তারা তাঁর সাথে সাক্ষাত করবে, তাদের অভ্যর্থনা হবে সালামের মাধ্যমে, এবং তাদের জন্য আল্লাহ বড়ই সম্মানজনক প্রতিদানের ব্যবস্থা করে রেখেছেন।
ফী জিলালিল কুরআন বলেছেন:-
*আল্লাহর জিকিরের তাৎপর্য ও গুরুত্ব : ‘হে মানুষ, তােমরা যারা ঈমান এনেছে আল্লাহকে অতি বেশী বেশী করে স্মরণ করাে… তিনি তাদের জন্যে আরও সম্মানজনক প্রতিদান তৈরী করে রেখেছেন।'(আয়াত ৪১-৪৪) আয়াতে হৃদয়ের গভীর আকুতি দিয়ে বেশী বেশী পরিমাণে আল্লাহর যিকির, গভীর মনােনিবেশ সহকারে মােহব্বত ও বিনয়ের সাথে আল্লাহকে স্মরণ করার হেদায়াত প্রদান করা হয়েছে। শুধু তােতা পাখীর মতাে ‘আল্লাহ’ ‘আল্লাহ’ শব্দের উচ্চারণ ও আবৃত্তির কথা বলা হয়নি। কণ্ঠ ও ঠোট নাড়া চাড়ার কথাই বলা হয়নি; বরং অন্তরের গভীর অনুরাগ ও নিষ্ঠার সাথে আল্লাহর যিকিরের উপদেশ দেয়া হয়েছে। শুধু নামায কায়েমের মধ্যেই এই যিকির সীমাবদ্ধ নয়। নামায পড়া ও কোরআনুল করীম তেলাওয়াতের পর হাদীসে বর্ণীত দিবস ও রজনীতে সকাল ও সন্ধ্যায় নামাযের পর বেশী বেশী করে আল্লাহর যিকিরের হেদায়াত দেয়া হয়েছে। তিলাওয়াতে কোরআন অবশ্যই উত্তম যিকির। আবু দাউদ, নাসায়ী ও ইবন মাজাহ হাদীস গ্রন্থসমূহে আবু সাঈদ খুদরী, ও আবু হােরায়রা সুত্রে নবী করীম সাল্লাল্লাহু থেকে বর্ণনা করেছেন, আল্লাহর রসূল বলেন, স্বামী ও স্ত্রী রাতে ঘুম থেকে জেগে উঠে এবং তারা যদি দু’রাকাত নামায আদায় করে তবে সে রাতে তারা অধিক পরিমাণে আল্লাহর যিকিরকারী পুরুষ ও নারীদের অন্তর্ভুক্ত হবে। নামায আল্লাহর যিকিরের অন্তর্ভুক্ত। বান্দার যে কোনাে প্রক্রিয়া বা পন্থায়ই আল্লাহকে বেশী পরিমাণে স্মরণ করাটাই আল্লাহর যিকিরের মধ্যে শামিল হবে। বান্দা যদি হৃদয়ের আকুতি, নিষ্ঠা, একাগ্রচিত্ততা নিয়ে আল্লাহকে স্মরণ করে তবে মুখে প্রকাশ্য উচ্চারণ করুক আর নাই করুক তা আল্লাহর যিকির পরিগণিত হবে। মূলত যে কোনাে অবস্থায় হৃদয়ের গভীর অনুভূতি, আল্লাহর সাথে একনিষ্ঠ সম্পর্ক হচ্ছে যিকিরের চূড়ান্ত লক্ষ্য। প্রকৃতপক্ষে মানব হৃদয় নীরবে নির্জনে ব্যাকুল চিত্তে পরম প্রিয় আল্লাহর সান্নিধ্যে তাঁরই ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহণ করে। আল্লাহর সাথে তার গভীর একটা সম্পর্ক গড়ে তােলে। আল্লাহর প্রেমে তার যিকিরে লিপ্ত হয়। এর মাধ্যমে আল্লাহর মােহাব্বত ও মারেফাতের সকল পদ্ধতির পরিচয় সে লাভ করে। এখানে সে আত্মপরিচিতিরও সন্ধান পায়। কোথা থেকে তার জীবনের সূত্রপাত, কোথা থেকে তার আগমন এবং কোথায় তার প্রত্যাবর্তন, জীবনের চূড়ান্ত পরিণতি কোথায় তার সঠিক উপলব্ধিও সে এর মাধ্যমে লাভ করে। আল্লাহর যিকির, তার গভীর সান্নিধ্য ও তার সাথে নিবিড় সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে কুরআনুল কারীম ও সুন্নাতে রাসূল অসংখ্যবার মানব হৃদয়কে উদ্বুদ্ধ ও অনুপ্রাণিত করেছে। কোরআন ও সুন্নাহ আল্লাহর জিকির ও মারেফাতের সাথে সম্পৃক্ততা সৃষ্টির প্রেরণা যােগায়, মানব জীবনের গতিধারায় যিকিরের সুনির্দিষ্ট সময়কাল নির্ধারিত করে। জীবনের কর্ম প্রবাহ ও সময়ের আবর্তে আল্লাহর বান্দা কখন কোন জিকির ও দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহর সান্নিধ্য ও সন্তুষ্টি লাভ করবে, কখন কোন যিকির ও দোয়ার ভিত্তিত্বে নিবিড় ও গভীর সম্পর্ক পয়দা করবে আয়াতটি তারও শিক্ষা প্রদান করে। দিন ও রাতের সকল সময়ে কর্ম জীবনের সকল ক্ষেত্রে কোরআন ও সুন্নাহ নির্ধারিত এ সকল যিকির ও দোয়া আল্লাহর ব্যাপারে গাফিল হওয়া থেকে মানুষের সামষ্টিক জীবন ধারাকে রক্ষা করে। এ পর্যায়ে কোরআনে হাকীমে এরশাদ হচ্ছে, ‘(হে মােমেনরা!) তােমরা সকাল ও সন্ধ্যায় তার পবিত্রতা বর্ণনা কর, তার তাসবীহ ও পবিত্র বর্ণনায় লিপ্ত থাকো।’ সকাল ও সন্ধ্যায় বেশী বেশী করে আল্লাহর জিকির ও তাসবীহতে লিপ্ত থাকার নির্দেশে এ তাৎপর্য নিহিত রয়েছে যে, সময়ের বিবর্তনকালে মানুষের মন আল্লাহর চিরন্তন পরিবর্তনহীনতার প্রতি গভীরভাবে নিবদ্ধ ও আকৃষ্ট হয়। আল্লাহর সাথে মানুষের সম্পর্ক এ সময় সুদৃঢ় ও নিবিড় হয়। মানব হৃদয়ে এ অনুভূতি ও চেতনার উদ্রেক হয় যে, আল্লাহর সৃষ্টিতে সময় ও পরিবেশ সবসময়ই পরিবর্তন হয়, কালের পরিবর্তন ঘটে। দিবস ও রজনীর আগমন ও প্রত্যাবর্তনে চন্দ্র ও সূর্য উদিত অস্তমিত হয়। কিন্তু আল্লাহ তায়ালা, চিরন্তন, চিরস্থায়ী, অপরিবর্তনীয়, তিনি অনাদি, তিনি অনন্ত, তিনি এমন মনিব যার সহায় আশ্রয় ও ছায়ার কোনাে পরিবর্তন সূচিত হয় না। তিনি আবর্তিত হন না, অস্তমিতও হয় না। একমাত্র আল্লাহর সত্ত্বা ব্যতীত অপর সকল কিছুরই পরিবর্তন, আবর্তন, উদয়, অস্তগমন, ধ্বংস ও বিলুপ্তি ঘটে থাকে। আল্লাহর যিকির ও তাসবীহ-এর মধ্যে মানুষের জিহ্বা ও হৃদয় সকাল-সন্ধ্যা তথা সর্বদা আর্দ্র ও লিপ্ত থাকার কারণেই আল্লাহর অফুরন্ত রহমত, অনুদান ও অনুগ্রহের চেতনা মানুষের মনে জাগ্রত থাকে। আল্লাহ তায়ালা যে সব সময়ই তার সৃষ্টির জন্যে, করুণা ও রহমত বিতরণ করেন, সৃষ্টির সার্বিক কল্যাণে নিজেকে নিয়ােজিত রাখেন, সকল সময় মানুষের কল্যাণই আল্লাহর একমাত্র কাম্য, মানব অন্তরে একথাটা স্থায়ীভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়। মানুষের চেতনা ও বিশ্বাসে এ মনােভাব জেগে উঠে যে, একমাত্র আল্লাহর সত্তাই কারও মুখােপেক্ষী নন, অন্য সকল সৃষ্টিই তাঁরই করুণার মুখাপেক্ষী, তার দরবারে সকলেই ভিক্ষুক, করুণা ও আশ্রয়প্রার্থী। সকলেই তার সাহায্য ও অনুগ্রহ প্রত্যাশী। এরশাদ হচ্ছে, ‘আল্লাহ তায়ালাই একমাত্র মহান সত্ত্বা। তিনি তােমাদের প্রতি তার করুণা বর্ষণ করেন, তার ফেরেশতাকূলও তােমাদের জন্যে তাঁর রহমতের দোয়া করে, যাতে করে তিনি তােমাদেরকে অন্ধকারের কুহেলিকা থেকে টেনে আলােকজ্জ্বল পথে বের করে নিয়ে আসেন। তিনি মােমেনদের প্রতি অত্যধিক মেহেরবান।'(আয়াত ৪৩) আল্লাহ তায়ালাই একমাত্র সেই মহান সত্ত্বা, তারই অনন্ত অনুগ্রহসমূহ সর্বত্র ব্যাপৃত ও উদ্ভাসিত। তাঁর মহান অনুগ্রহ ও বখশীশ সকল স্থানে ও সকল সময়ই প্রতিভাত। তার অনুদান সর্বদা বহুগুণে বর্ধিত হয়। তিনিই দুর্বল অসহায় সর্বহারা, নশ্বর, ধ্বংসশীল, মােহতাজ বান্দাদেরকে রহমতের দৃষ্টি দিয়ে স্মরণ করেন, তাদের আশ্রয় ও ছায়া দান করেন। তিনি ব্যতীত কোনাে আশ্রয়দাতা নেই। তিনি ছাড়া কোনাে চূড়ান্ত ক্ষমতা ও নিরংকুশ শক্তির উৎস কেউ নেই। তিনি ব্যতীত কোনাে শক্তিই মানুষের প্রয়ােজন ও সাহায্য করার ক্ষেত্রে চিরন্তন ও চিরস্থায়ী নয়। বান্দার প্রতি তার দৃষ্টি সদা নিবদ্ধ। তিনি তাঁর বান্দাদেরকে সর্বদা স্মরণ রাখেন। একমাত্র তিনিই তাদের প্রয়ােজন পূরণ, অভাব দূরীকরণ ও সাহায্য প্রদানের কাজে নিয়ােজিত রয়েছেন। তিনি তাঁর বান্দাদের প্রতি রহমত নাযিল করেন। তার ফেরেশতারাও বান্দাদের প্রতি রহমতের দোয়া করেন। বান্দা ও সৃষ্টিকাল তাঁর জিকির ও তাসবীহ হাত সদাসর্বদা লিপ্ত থাকলে আল্লাহ সােবহানাহু ওয়া তায়ালা তাদের যিকির ও দোয়াকে কবুল করেন। নবী করীম(স.) হাদীসে কুদসীতে বলেছেন, যে একাকী আমার যিকির করে আমি আল্লাহ তায়ালা একাকী তাকে স্মরণ করি, আর যারা সমাবেশ করে সম্মিলিতভাবে আমার যিকির করে, আমি ফেরেশতাদের নিয়ে এর চেয়ে অনেক বড় সমাবেশ করে তাদেরকে স্মরণ করি (বােখারী)।
*জান্নাতে মােমেনদের সন্বর্ধনা : জেনে রাখা আবশ্যক যে, সে সমাবেশ হবে বিশাল ও মহান। মানুষের কল্পনা ও অনুভূতি দ্বারা তার যথার্থ উপলব্ধি করা খুবই কঠিন, বরং বলা যেতে পারে তা সম্পূর্ণ অসম্ভব। আল্লাহর এটি জানা আছে যে, এ সমগ্র বিশ্ব প্রকৃতি, সকল প্রাণী আর এতে অবস্থিত সকল বস্তু সামগ্রী আল্লাহর অসীম সৃষ্টির পরিমাপে সীমাহীন মহাশূন্যের তুলনায় একটি ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র পরমাণুসমও নয়। মহাশূন্যের অগণিত গ্রহ নক্ষত্র ও আকাশের বিভিন্ন স্তরসমূহ তাতে অবস্থিত সকল দ্রব্য পদার্থ ও এতে বসবাসকারী প্রাণীকূল আল্লাহর অগণিত রাজত্বের একটি অংশ মাত্র। তিনি যখন বলেছেন, কুন’ হয়ে যাও তখন তা হয়ে যায়। আল্লাহর নির্দেশেই তা অস্তিত্ব লাভ করে। আয়াতে করীমায় বলা হচ্ছে, ‘আল্লাহ তায়ালা সে মহান সত্তা, যিনি তােমাদের প্রতি রহমত নাযিল করেন, তােমাদেরকে অন্ধকার থেকে আলোর পথে বের করে নিয়ে আসার ফেরেশতারা তোমাদের জন্যে রহমতের দোয়া করে।’ আল্লাহর জ্যোতি একক ও অবিচ্ছেদ্যভাবে প্রতিষ্ঠিত। এর বিপরীত যা তা হচ্ছে বহুধাবিভক্ত, ভিন্ন ভিন্ন ও বিচ্ছিন্ন অন্ধকারের সমষ্টি। মানুষ আল্লাহর এই একক জ্যোতি থেকে বের হতে অন্ধকারের মধ্য হতে যে কোনাে একটি অন্ধকারের মধ্যেই অতপর সে জীবন অতিবাহিত করে। আর এ অন্ধকার থেকে ততক্ষণ পর্যন্ত তারা মুক্তি পায় না, যতােক্ষণ পর্যন্ত তার হৃদয়ে আল্লাহর জ্যোতি পুনরায় উদিত ও উদ্ভাসিত না হয়। আল্লাহর নূর তার হৃদয়রাজ্যে প্রবেশের ফলেই অন্ধকারের আবরণমুক্ত হয়ে তার আত্মা বিকশিত ও প্রদীপ্ত হয়। এ সমগ্র বিশ্ব প্রকৃতি, সকল প্রাণীকূল আর এতে অবস্থিত সকল সামগ্রী ও বস্তু আল্লাহর অসীম সৃষ্টির পরিমাপে সীমাহীন মহাশূন্যের তুলনায় একটি ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র পরমাণুসম। মহাকাশের অগণিত গ্রহ নক্ষত্র, তার বিভিন্ন স্তরসমূহ ও তাতে অবস্থিত সকল দ্রব্য, পদার্থ ও বসবাসকারী প্রাণীকুল আল্লাহর অগণিত রাজত্বের। একটি অংশ বিশেষ মাত্র। তারা সবাই স্বভাবজাত হেদায়াতের পথের সন্ধান লাভ করে। ফেতরাত বা প্রকৃতির তাৎপর্য হচ্ছে আল্লাহর অস্তিত্ব ও বিশ্ব প্রকৃতিতে তারই প্রদত্ত চিরন্তন জ্যোতির্ময় দ্বীন যে ইসলাম সে কথার প্রমাণ পেশ কর। আল্লাহ তায়ালা তাদের অন্তরে হেদায়াতের জ্যোতিকে বিকশিত করে তাদের প্রতি রহমত বর্ষণ করেন। ফেরেশতারা হেদায়াতের পথে মানুষের সুদৃঢ় অবস্থান কল্পে, অন্ধকার থেকে তাদের আলোর পথে প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে আল্লাহর রহমতের জন্যে দোয়া লিপ্ত থাকেন। এমনিভাবে আল্লাহর রহমত বর্ষণ ও ফেরেশতাদের দোয়ার ফলে তাদের অন্তর কুফরীর অন্ধকার থেকে বেরিয়ে ঈমান গ্রহণের জন্যে আবার উন্মুক্ত ও বিকশিত হয়। বলা হচ্ছে, তিনি মােমেনদের প্রতি পরম দয়াবান। আল্লাহ সােবহানাহু ওয়া তায়ালার পরম মেহেরবাণীর বদৌলতে কর্মের জগতে তারা সত্য ও স্বভাবজাত দ্বীনের ওপর সুপ্রতিষ্ঠিত থেকে সৎকর্মশীল জীবন যাপন করে। ফলাফলের জগত আখেরাতে তারা আল্লাহর পুরস্কার ও প্রতিদান রূপ রহমত লাভ করে। আল্লাহর রহমত থেকে দুনিয়া ও আখেরাত কোনাে জগতেই তারা বঞ্চিত থাকে না। অনন্ত আখেরাতে তারা মহান রাব্বুল আলামীন প্রদত্ত সম্মান, মর্যাদা ও মহান অনুগ্রহ লাভ করে । আয়াতে এরশাদ হচ্ছে, ‘আল্লাহর দিদার লাভের দিবসে, তাদেরকে সালামের মাধ্যমে খােশ আমদেদ জানিয়ে সম্মান প্রদর্শন করা হবে। তাদের জন্যে সেখানে সম্মানজনক পুরস্কারের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।’ (আয়াত ৪৪) তারা তখন সকল ভীতি ও আশংকা থেকে সুনিশ্চিতভাবে নিরাপত্তা লাভ করবে। সকল অবসাদ ক্লান্তি ও কষ্ট থেকে তারা মুক্তি পাবে। আল্লাহর দিদার লাভের মহান মর্যাদা লাভ করার সময় তাদের প্রতি সালাম জানিয়ে শুভেচ্ছা ও সম্মান জানানাে হবে। ফেরেশতারা দলে দলে জান্নাতের বিভিন্ন তােরণ দিয়ে আগমন করে তাদেরকে সর্বোচ্চ মর্যাদা প্রদর্শন ও সম্বর্ধনা জানাবে। তাদেরকে আল্লাহ প্রদত্ত মহান পুরস্কার সুসংবাদ সম্পর্কে অবগত করানো হবে। মােমেনরা সেখানে অভাবিত অকল্পনীয় সম্মান ও মর্যাদার অধিকারী হবে। তারা শীর্ষস্থানীয় সম্মানপ্রাপ্ত হবে। মহান প্রভু আল্লাহ তায়ালা তাদের জন্যে এ সম্মানের ব্যবস্থা করেছেন। তাদের জন্যে এ মর্যাদাকে তিনি পছন্দ ও নির্বাচিত করেছেন। আল্লাহর এ পছন্দকে অস্বীকার ও অপছন্দ করার মতাে কেউ কি আছে? আল্লাহ সােবহানাহু ওয়া তায়ালা মানুষের জন্যে যে ব্যবস্থা নির্ধারিত করেছেন, নবী করীম (স.) তারই দাওয়াত তাবলীগের মহান দায়িত্ব সম্পাদন করেছেন। আল্লাহ তায়ালা তার বান্দাদের জন্যে যে বিধানের প্রবর্তন করেছেন রসূল তাই প্রতিষ্ঠিত করেছেন। এ ক্ষেত্রে আল্লাহ তায়ালা বান্দার জন্যে অহরহ যে কর্মসূচী নির্ধারিত করেছেন তার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। দৈনন্দিন জীবনের কর্মধারা বাস্তবায়ন এবং সে সকল কার্য পালনের ফযীলত আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে। এরশাদ হচ্ছে, ‘হে নবী! আমি তোমাকে সাক্ষী, সুসংবাদদাতা, ভীতি প্রদর্শনকারী হিসাবে প্রেরণ করেছি… তাদের জন্যে আল্লাহ তায়ালাই যথেষ্ট।’ এ আয়াত থেকে এটি স্বতসিদ্ধভাবে প্রমাণিত হচ্ছে যে, আল্লাহর তরফ থেকে নবী করীম(স.)-এর অর্পিত দায়িত্ব হচ্ছে, তিনি সর্বপ্রথম আল্লাহ প্রদত্ত দায়িত্বের সাক্ষী হিসেবে উত্তমভাবে সাক্ষ্য প্রদান করবেন, সে দায়িত্বকে তিনি মিথ্যা প্রমাণিত করবেন না, তার মধ্যে বিন্দুমাত্র পরিবর্তন ও সংকোচন করবেন না। যারা মনে-প্রাণে এ মহান দাওয়াত ও পয়গামকে কবুল করবেন বাস্তব জীবনে এ সত্যের অনুসরণকারী সৎকর্মশীল মােমেনদেরকে তিনি আল্লাহর রহমত মাগফেরাত, নেয়ামত, অনুগ্রহ ও সম্মান ও মর্যাদাপ্রাপ্তির সুসংবাদ প্রদান করবেন। অচেতন গাফেল, এ দাওয়াতের অস্বীকারকারী, দুষ্কৃতকারী কাফের মােরতাদেরকে আল্লাহর কঠিন শাস্তির ভীতি প্রদর্শন করবেন। আয়াতে সুস্পষ্টভাবে ইংগিত প্রদান করা হয়েছে যে, তাদের অজ্ঞাত অসতর্ক রেখে শাস্তি প্রদান করা হবে না; বরং তাদেরকে আগেই সাবধান ও ভীতি প্রদর্শন করার পরই আযাব দেয়া হবে। নবী করীম(স)-এর মূল দায়িত্ব হচ্ছে যে, তিনি দায়ী ইলাল্লাহর কর্তব্য আঞ্জাম দেবেন। বলা হচ্ছে, তুমি হচ্ছো দায়ী ইলাল্লাহ। আল্লাহর পথে আহ্বানকারী অর্থাৎ নবী মানব মন্ডলীকে তিনি আল্লাহর দিকে আহ্বান জানাবেন। নশ্বর দুনিয়ার দিকে ডাকবেন না। পার্থিব স্বার্থের প্রতি কোনােরকম আহ্বান জানাবে না। কায়েমী স্বার্থ, আত্মপ্রতিষ্ঠা ও স্বীয় প্রভাব প্রতিপত্তির আহ্বানও করবেন না। সংকীর্ণ জাতীয়তাবাদী স্বার্থ সংরক্ষণের পথে, ধন সম্পদের লােভ ও লালসার পথে, রাজত্ব, ক্ষমতা ও স্বীয় কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার পথে নবীর দাওয়াত পরিচালিত হবে না। আয়াতে দ্ব্যর্থহীনভাবে বলা হয়েছে যে তােমাকে একমাত্র আল্লাহর পথের দায়ী তথা আহব্বানকারীরূপে প্রেরণ করা হয়েছে। আল্লাহর সাথে মানুষের সংযােগ সম্পর্ক সৃষ্টির প্রতিই তােমার দাওয়াত নিবদ্ধ হবে। আল্লাহর সাথে সম্পৃক্ততা আল্লাহর সান্নিধ্য আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যেই তােমার দাওয়াত পরিচালিত হবে। তা হবে একটিমাত্র পথের প্রতি দাওয়াত, যে পথে সৃষ্টির সাথে স্রষ্টার সম্পর্ক স্থাপিত হয়। অতপর আয়াতে বলা হয়েছে, আল্লাহর নির্দেশে আল্লাহর হুকুমে ও তার অনুমােদনক্রমেই নবী(স.) এ দাওয়াত উপস্থাপন করেন। আয়াতে সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দেয়া হলাে, শেষ নবী মােহাম্মদ(স.)-এর পেশ করা দাওয়াত কোনাে অভিনব দাওয়াত নয়, এ দাওয়াত ধর্মের নামে কোনাে ভন্ডামীর দাওয়াত নয়, এ দাওয়াত তার নিজস্ব চিন্তা-প্রসূত কোনাে মনগড়া দাওয়াত নয়, এটি খালেসভাবে সমগ্র সৃষ্টির স্রষ্টা, নিরংকুশ ও একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী, অসীম জ্ঞানময় আল্লাহর নির্দেশিত ও অনুমােদিত দাওয়াত। আল্লাহর হুকুমেই এ দাওয়াত নিয়ে তার আগমন ঘটেছে, এ দাওয়াতের দায়িত্ব সম্পাদনের মাধ্যমে নবী নির্দেশই পালন করেছেন, কেননা তার নির্দেশ কখনাে অমান্য করা যায় না, লংঘন করা যায় না। অতপর আয়াতে বলা হয়েছে এ নবী হচ্ছেন উজ্জ্বল চেরাগ, আলােকিত প্রদীপ। এর মর্ম হচ্ছে, নবী করীম(স.) হচ্ছেন আল্লাহর পথে আহবানকারী উজ্জ্বল প্রদীপের সমতুল্য, পথ চলার সময় যে প্রদীপ অন্ধকারকে দূরীভূত করে। পথের সমস্ত দ্বিধা দ্বন্দ্ব ও সন্দেহ থেকে পথচারীকে মুক্ত রাখে। চলার পথকে আলােকিত করে তােলে। এমন উজ্জ্বল আলাের প্রদীপ-যা পথচারীকে অন্ধকার থেকে আলোর দিশা প্রদান করে নির্বিঘ্নে পথ চলতে সাহায্য করে। রসূল(স.) ছিলেন জ্যোতির্ময় প্রদীপ। তিনি আলােকবর্তিকা নিয়েই আগমন করেছিলেন। এ সৃষ্টিজগত ও বিশ্ব প্রকৃতির জন্যে তিনি উজ্জ্বল জ্যোতির ধারণা প্রদান করেছেন, তার মাধ্যমেই জীবন পথের আলাে বিকশিত হয়েছে। সৃষ্টি ও স্রষ্টার সাথে সংযােগ স্থাপনের জ্যোতির্ময় পথের দিশা তিনিই প্রদান করেছেন। সৃষ্টির অবস্থান থেকে স্রষ্টার মনযিল পর্যন্ত পৌছার প্রদীপ একমাত্র তিনি। বিশ্বপ্রকৃতির ও মানব সত্ত্বার অস্তিত্ব এ জ্যোতির ওপরই প্রতিষ্ঠিত। এ জ্যোতিই মানবকূলকে তাদের মনযিলে পৌছে দেয়। এটিই হচ্ছে চুড়ান্ত সিদ্ধান্তকারী কথা, যার মধ্যে কোনাে সন্দেহ, অস্পষ্টতা ও রহস্য নেই। এভাবেই এই আয়াতে বিশ্ব প্রকৃতির সামনে রসূলকে প্রদীপ, সাক্ষী ও সুসংবাদদাতারূপে উপস্থাপন করা হয়েছে। এরশাদ হচ্ছে, ‘আর তুমি মােমেনদেরকে এ সুসংবাদ দাও যে, অবশ্যই তাদের জন্যে আল্লাহর তরফ থেকে সুবিশাল অনুগ্রহ ও বখশীশ রয়েছে।’
তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ বলেছেন:-
৪১-৪৪ নং আয়াতের তাফসীর:
(اذْكُرُوا اللّٰهَ ذِكْرًا كَثِيْرًا)
এখানে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর মু’মিন বান্দাদেরকে বেশি বেশি আল্লাহ তা‘আলার যিকির করার নির্দেশ প্রদান করেছেন ।
আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন:
(فَإِذَا قَضَيْتُمُ الصَّلٰوةَ فَاذْكُرُوا اللّٰهَ قِيٰمًا وَّقُعُوْدًا وَّعَلٰي جُنُوْبِكُمْ)
“যখন তোমরা সালাত সমাপ্ত করবে তখন দাঁড়িয়ে, বসে এবং শুয়ে আল্লাহকে স্মরণ করবে।” (সূরা নিসা ৪:১০৩)
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:
(وَالذّٰكِرِيْنَ اللّٰهَ كَثِيْرًا وَّالذّٰكِرٰتِ أَعَدَّ اللّٰهُ لَهُمْ مَّغْفِرَةً وَّأَجْرًا عَظِيْمًا)
“এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণকারী পুরুষ ও অধিক স্মরণকারিণী নারীন এদের জন্য আল্লাহ প্রস্তুত রেখেছেন ক্ষমা ও বিরাট প্রতিদান।” (সূরা আহযাব ৩৩:৩৫)
হাদীসে এসেছে, আবূ দারদা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: আমি কি তোমাদেরকে উত্তম কাজ, পবিত্র আমল, সবচেয়ে উচ্চ পর্যায়ের পুণ্য, স্বর্ণ-রৌপ্য আল্লাহ তা‘আলার পথে ব্যয় করা অপেক্ষা অধিক উত্তম এবং জিহাদ হতে অধিক মর্যাদাসম্পন্ন কাজের কথা বলব না? সাহাবীগণ বললেন: হে আল্লাহ তা‘আলার রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! সেটা কী? উত্তরে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: আল্লাহ তা‘আলার যিকির বা স্মরণ। (আহমাদ ৫/১৯৫, তিরমিযী হা: ৩৩৭৭, ইবনু মাযাহ হা: ৩৭৯০ সনদ সহীহ)
সাওবান (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত তিনি বলেন: যখন স্বর্ণ-রৌপ্যের ব্যাপারে যা নাযিল হওয়ার নাযিল হল তখন সাহাবীগণ বললেন: হে আল্লাহ তা‘আলার রাসূল আমরা কোন সম্পদ গ্রহণ করব? রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: মানুষ যেন কৃতজ্ঞ আত্মা, যিকিরকারী রসনা এবং এমন স্ত্রী গ্রহণ করে, যে পরকালীন বিষয়ে সহযোগিতা করবে। (সিলসিলা সহীহাহ হা: ১৫০৫ )
আব্দুল্লাহ বিন বুসর (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন দুজন গ্রাম্য লোক নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে এসে একজন বলল: হে আল্লাহ তা‘আলার রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কোন্ শ্রেণির মানুষ উত্তম? রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: যে ব্যক্তি দীর্ঘ আয়ু পেয়েছে এবং তার আমল সুন্দর হয়েছে। অপরজন বললন হে আল্লাহ তা‘আলার রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের কাছে ইসলামের বিধিবিধান অনেক হয়ে গেছে, তাই কোন্ আমলের সাথে সংশ্লিষ্ট থাকব? রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: সর্বদা তোমার জিহবাকে আল্লাহ তা‘আলার যিকির দ্বারা সিক্ত রাখবে। (তিরমিযী হা: ৩৩৭৫, ইবনু মাযাহ হা: ৩৭৯৩, সহীহ)
যিকির সম্পর্কে আরো অসংখ্য সহীহ হাদীস বিদ্যমান। তবে এ যিকির করার কিছু পদ্ধতি রয়েছে, তন্মধ্যে একটি হল চুপে চুপে এবং ভয়ের সাথে যিকির করা।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَاذْكُرْ رَّبَّكَ فِيْ نَفْسِكَ تَضَرُّعًا وَّخِيْفَةً وَّدُوْنَ الْجَهْرِ مِنَ الْقَوْلِ بِالْغُدُوِّ وَالْاٰصَالِ وَلَا تَكُنْ مِّنَ الْغٰفِلِيْنَ)
“তোমার প্রতিপালককে মনে মনে বিনয়ের সঙ্গে ভয়-ভীতি সহকারে অনুচ্চস্বরে সকাল-সন্ধ্যায় স্মরণ কর আর উদাসীনদের মত হয়ো না।” (সূরা আ‘রাফ ৭:১০৫)
তবে যিকির করার অর্থ এই নয় যে, কয়েকজন একত্রে বসে উচ্চৈঃস্বরে হৈ-হুল্লা করে আওয়াজ করা। তুমি এমনভাবে যিকির কর যেন মানুষ তোমাকে পাগল বলেন ইত্যাদি এ ব্যাপারে যে-সকল কথা বর্ণনা করা হয় তা আদৌ সঠিক নয়। (তাফসীর ইবনু কাসীর, অত্র আয়াতের তাফসীর) বরং নম্রভাবে বিশুদ্ধ চিত্তে একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার যিকির করতে হবে এবং সকাল-সন্ধ্যায় মহান আল্লাহ তা‘আলার যিকির করতে হবে।
আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
(فَسُبْحَانَ اللّٰهِ حِيْنَ تُمْسُوْنَ وَحِيْنَ تُصْبِحُوْنَ وَلَهُ الْحَمْدُ فِي السَّمٰوٰتِ وَالْأَرْضِ وَعَشِيًّا وَّحِيْنَ تُظْهِرُوْنَ)
“অতঃপর তোমরা আল্লাহর পবিত্রতা ও গুণগান প্রকাশ কর সন্ধ্যায় ও প্রত্যুষে। এবং অপরাহ্নে ও যোহরের সময়; আর আসমানে ও জমিনে সকল প্রশংসা তো তাঁরই।” (সূরা রূম ৩০:১৭-১৮)
সুতরাং প্রচলিত ভ্রান্ত যিকির বাদ দিয়ে কুরআন ও সহীহ সুন্নাহ মোতাবেক যে সকল যিকির রয়েছে সেগুলো সকাল-সন্ধ্যায় পাঠ করতে হবে। এ যিকিরের ফযীলত সম্পর্কে অন্য একটি হাদীসে বলা হয়েছে, আবূ হুরাইরাহ (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: যে ব্যক্তি দিনে একশত বার:
لَا إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيْكَ لَهُ ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَي كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ )
-এ দু‘আ পাঠ করবে তার দশটি গোলাম মুক্ত বা আযাদ করার সমান সওয়াব হবে। তার জন্য একশত নেকী লেখা হবে এবং একশত গুনাহ মোচন করে দেয়া হবে এবং তাকে শয়তানের অনিষ্ট থেকে রক্ষা করা হবে সন্ধ্যা পর্যন্ত। তার থেকে উত্তম আর কেউ হবে না। তবে যে এর চেয়েও বেশি পাঠ করবে সে ব্যতীত। এবং তিনি আরো বলেন: যে ব্যক্তি দিনে একশত বার
“سُبْحَانَ اللّٰهِ وَبِحْمَدِهِ”
এ দু‘আ পাঠ করবে তার সমস্ত গুনাহ মোচন করে দেয়া হবে। যদিও তা সমুদ্রের ফেনা পরিমাণ হয়। (সহীহ বুখারী হা: ৬৪০৩, সহীহ মুসলিম হা: ২৬৯১)
এরপর এর ফযীলত ও এর প্রতি উৎসাহ প্রদান করার জন্য আল্লাহ তা‘আলা বলেন: আল্লাহ তা‘আলা স্বয়ং তোমাদের প্রতি অনুগ্রহ করেন। এতদসত্ত্বেও কি তোমরা আল্লাহ তা‘আলার স্মরণ থেকে উদাসীন থাকবে।
আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
(كَمَآ أَرْسَلْنَا فِيْكُمْ رَسُوْلًا مِّنْكُمْ يَتْلُوْا عَلَيْكُمْ اٰيٰتِنَا وَيُزَكِّيْكُمْ وَيُعَلِّمُكُمُ الْكِتٰبَ وَالْحِكْمَةَ وَيُعَلِّمُكُمْ مَّا لَمْ تَكُوْنُوْا تَعْلَمُوْنَ - فَاذْكُرُوْنِيْٓ أَذْكُرْكُمْ وَاشْكُرُوْا لِيْ وَلَا تَكْفُرُوْنِ)
“আমি তোমাদের মধ্য হতে এমন এক রাসূল প্রেরণ করেছি যিনি তোমাদের নিকট আমার আয়াতসমূহ পাঠ করেন ও তোমাদেরকে পবিত্র করেন এবং তোমাদেরকে কিতাব ও বিজ্ঞান শিক্ষা দেন আর তোমরা যা জানতে না তাও শিক্ষা দেন। সুতরাং তোমরা আমাকে স্মরণ কর! আমিও তোমাদেরকে স্মরণ করব আর তোমরা আমার শুকরিয়া আদায় কর ও অকৃতজ্ঞ হয়ো না।” (সূরা বাকারাহ ২:১৫১-১৫২)
হাদীসে এসেছে, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: আল্লাহ তা‘আলা বলেন: যে ব্যক্তি আমাকে একাকী স্মরণ করে আমিও তাকে একাকী স্মরণ করি। আর যে আমাকে কোন দলের মধ্যে স্মরণ করে আমি তাকে তার চেয়ে উত্তম (ফেরেশতাদের) দলের মধ্যে স্মরণ করি। (সহীহ বুখারী হা: ৭৪০৫, সহীহ মুসলিম হা: ২৬৭৫)
এমনকি ফেরেশতারাও যিকিরকারীদের জন্য আল্লাহ তা‘আলার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(اَلَّذِيْنَ يَحْمِلُوْنَ الْعَرْشَ وَمَنْ حَوْلَه۫ يُسَبِّحُوْنَ بِحَمْدِ رَبِّهِمْ وَيُؤْمِنُوْنَ بِه۪ وَيَسْتَغْفِرُوْنَ لِلَّذِيْنَ اٰمَنُوْا ج رَبَّنَا وَسِعْتَ كُلَّ شَيْءٍ رَّحْمَةً وَّعِلْمًا فَاغْفِرْ لِلَّذِيْنَ تَابُوْا وَاتَّبَعُوْا سَبِيْلَكَ وَقِهِمْ عَذَابَ الْجَحِيْمِ -رَبَّنَا وَأَدْخِلْهُمْ جَنّٰتِ عَدْنِ نِالَّتِيْ وَعَدْتَّهُمْ وَمَنْ صَلَحَ مِنْ اٰبَآئِهِمْ وَأَزْوَاجِهِمْ وَذُرِّيّٰتِهِمْ ط إِنَّكَ أَنْتَ الْعَزِيْزُ الْحَكِيْمُ)
“যারা আরশ ধারণ করে আছে এবং যারা এর চারপাশে রয়েছে, তারা তাদের প্রতিপালকের পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে প্রশংসার সাথে এবং তাতে বিশ্বাস স্থাপন করে এবং মু’মিনদের জন্য ক্ষমা পার্থনা করে (বলে:) হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি সকল কিছুকেই (তোমার) জ্ঞান ও রহমত দ্বারা পরিবেষ্টন করেছ, অতএব যারা তাওবা করে ও তোমার পথের অনুসরণ করে তুমি তাদেরকে ক্ষমা কর এবং তাদেরকে জাহান্নামের শাস্তি হতে রক্ষা কর। হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি তাদেরকে প্রবেশ করাও স্থায়ী জান্নাতে যার অঙ্গীকার তুমি তাদেরকে দিয়েছ এবং তাদের বাপ-দাদা, স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততির মধ্যে যারা সৎ কর্ম করেছে তাদেরকেও। তুমি তো পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাবান।” (সূরা মু’মিন ৪০:৭-৯)
এরপর আল্লাহ তা‘আলা বলেন: তারা যখন আল্লাহ তা‘আলার সাথে সাক্ষাত করবে অর্থাৎ জান্নাতে প্রবেশ করবে তখন তারা তথায় শুধু শান্তিপূর্ণ অভিবাদন শুনবে। এ সম্পর্কে সূরা ইউনুসের প্রথম দিকে আলোচনা করা হয়েছে।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. যিকির করতে হবে একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার জন্য। নম্রভাবে ভয়ের সাথে চুপে চুপে এবং সহীহ সুন্নাহ মোতাবেক।
২. সকাল-সন্ধ্যায় অর্থাৎ সর্বক্ষণ আল্লাহ তা‘আলার তাসবীহ পাঠ করতে হবে।
৩. ফেরেশতারা মু’মিনদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
৪. জান্নাতে শান্তিপূর্ণ অভিবাদন ছাড়া আর কিছুই সেখানে থাকবে না।
তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
# মুসলমানদেরকে এ উপদেশ দেয়াই এর উদ্দেশ্য যে, যখন শত্রুদের পক্ষ থেকে আল্লাহর রসূলের প্রতি ব্যাপকভাবে বিদ্রূপ ও নিন্দাবাদ করা হয় এবং আল্লাহর সত্য দ্বীনকে ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য রসূলের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের তুফান সৃষ্টি করা হয় তখন নিশ্চিন্তে এসব বাজে খিস্তি খেউড় শুনতে থাকা, নিজেই শত্রুদের ছাড়নো সন্দেহ সংশয়ে জড়িয়ে পড়া এবং জবাবে তাদেরকেও গালাগালি করতে থাকা মু’মিনদের কাজ নয়। বরং তাদের কাজ হচ্ছে, সাধারণ দিনগুলোর তুলনায় এসব দিনে বিশেষভাবে আল্লাহকে আরো বেশী করে স্মরণ করা। “আল্লাহকে বেশী বেশী স্মরণ করা”র অর্থ ৬৩ টীকায় বর্ণনা করা হয়েছে। সকাল সাঁঝে আল্লাহর মহিমা ঘোষণা করার অর্থ হচ্ছে সর্বক্ষণ তাঁর তাসবীহ করা। আর তাসবীহ করা মানে আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করা, নিছক তাসবীহর দানা হাতে নিয়ে গুণতে থাকা নয়।
# মুসলমানদের মনে এ অনুভূতি সৃষ্টি করাই এর উদ্দেশ্য যে, কাফের ও মুনাফিকদের মনের সমস্ত জ্বালা ও আক্রোশের কারণ হচ্ছে আল্লাহর রহমত, যা তাঁর রসূলের বদৌলতে তোমাদের ওপর বর্ষিত হয়েছে। এরই মাধ্যমে তোমরা ঈমানী সম্পদ লাভ করেছো, কুফরী ও জাহেলিয়াতের অন্ধকার ভেদ করে ইসলামের আলোকে চলে এসেছো এবং তোমাদের মধ্যে এমন উন্নত নৈতিক বৃত্তি ও গুণাবলীর সৃষ্টি হয়েছে যেগুলোর কারণে অন্যদের থেকে তোমাদের সুস্পষ্ট শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিভাত হচ্ছে। হিংসুটেরা রসূলের ওপর এরই ঝাল ঝাড়ছে। এ অবস্থায় এমন কোন নীতি অবলম্বন করো না যার ফলে তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত হয়ে যাও। অনুগ্রহের ভাব প্রকাশ করার জন্য মূলে সালাত (يصلى-صلوة) শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। “সালাত” শব্দটি যখন আরো (على) অব্যয় সহকারে আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দাদের জন্য ব্যবহার করা হয় তখন এর অর্থ হয় রহমত, অনুগ্রহ, করুণা ও স্নেহশীষ। আর যখন এটি ফেরেশতাদের পক্ষ থেকে মানুষের জন্য ব্যবহৃত হয় তখন এর অর্থ হয় রহমতের দোয়া করা। অর্থাৎ ফেরেশতারা আল্লাহর কাছে মানুষের জন্য এই মর্মে দোয়া করে যে, হে আল্লাহ, তুমি এদের প্রতি অনুগ্রহ করো এবং তোমার দানে এদেরকে আপ্লুত করে দাও। এভাবে يُصَلِّي عَلَيْكُمْ এর অর্থ এও হয় যে, يشيع عنكم الذكر الجميل فى عباد الله অর্থাৎ আল্লাহ তাঁর বান্দাদের মধ্যে তোমাদেরকে খ্যাতি দান করেন এবং এমন পর্যায়ে উন্নীত করেন যার ফলে আল্লাহর সমুদয় সৃষ্টি তোমাদের প্রশংসা করতে থাকে এবং ফেরেশতারা তোমাদের প্রশংসা ও সুনামের আলোচনা করতে থাকে।
# মূলে বলা হয়েছেঃ تَحِيَّتُهُمْ يَوْمَ يَلْقَوْنَهُ سَلَامٌ “তার সাথে মোলাকাতের সময় সেদিন তাদের অভ্যর্থনা হবে সালাম” এর তিনটি অর্থ হতে পারে। এক, আল্লাহ নিজেই “আসসালামু আলাইকুম” বলে তাদেরকে অভ্যর্থনা করবেন। যেমন সূরা ইয়াসীন–এর ৫৮ আয়াত বলা হয়েছেঃ سَلَامٌ قَوْلًا مِنْ رَبٍّ رَحِيمٍ দুই, ফেরেশতারা তাদেরকে সালাম করবে। যেমন সূরা নাহলে বলা হয়েছেঃ الَّذِينَ تَتَوَفَّاهُمُ الْمَلَائِكَةُ طَيِّبِينَ يَقُولُونَ سَلَامٌ عَلَيْكُمُ ادْخُلُوا الْجَنَّةَ بِمَا كُنْتُمْ تَعْمَلُونَ “ফেরেশতারা যাদের রূহ কবয করবে এমন অবস্থায় যখন তারা পবিত্র লোক ছিল, তাদেরকে তারা বলবে, শান্তি ও নিরাপত্তা হোক তোমাদের প্রতি, প্রবেশ করো জান্নাতে তোমাদের সৎকাজসমূহের বদৌলতে, যা তোমরা দুনিয়ায় করতে।” (৩২ আয়াত) তিন, তারা নিজেরাই পরস্পরকে সালাম করবে। সূরা ইউনুসে বলা হয়েছেঃ دَعْوَاهُمْ فِيهَا سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ وَتَحِيَّتُهُمْ فِيهَا سَلَامٌ وَآخِرُ دَعْوَاهُمْ أَنِ الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ “সেখানে তাদের আওয়াজ হবে, হে আল্লাহ! পবিত্র তোমার সত্তা, তাদের অভ্যর্থনা হবে ‘সালাম’ এবং তাদের কথা শেষ হবে এ বাক্য দিয়ে যে, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ রব্বুল আলামিনের জন্যই।” (১০ আয়াত)
তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-
৪১-৪৪ নং আয়াতের তাফসীর
বহু প্রকারের নিয়ামতদাতা আল্লাহ তা’আলা বলছেনঃ আমাকে অধিক মাত্রায় স্মরণ করা তোমাদের উচিত। তাছাড়াও তিনি আরো বহু প্রকারের নিয়ামত প্রদানের ওয়াদা করেছেন। হযরত আবু দারদা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আমি কি তোমাদেরকে উত্তম কাজ, পবিত্র আমল, সবচেয়ে উচ্চ পর্যায়ের পুণ্য, স্বর্ণ-রৌপ্য আল্লাহর পথে ব্যয় করা অপেক্ষা অধিক উত্তম এবং জিহাদ হতে অধিক মর্যাদা সম্পন্ন কাজের কথা বলবো না?” সাহাবীগণ বললেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! সেটা কি উত্তরে রাসূলুল্লাহ (সঃ) বললেনঃ “আল্লাহর যিক্র বা স্মরণ। (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ), ইমাম তিরমিযী (রঃ) এবং ইমাম ইবনে মাজাহ (রঃ) বর্ণনা করেছেন) (আরবি) আয়াতের তাফসীরে এগুলো ইতিপূর্বে বর্ণিত হয়েছে।
হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ “আমি রাসূলুল্লাহ (সঃ) হতে এমন এক দু’আ শুনেছি যা আমি কখনো পরিত্যাগ করি না। তা হলো: (আরবি)
অর্থাৎ “হে আল্লাহ! আপনি আমাকে আপনার বড় কৃতজ্ঞতা প্রকাশকারী, আপনার উপদেশের অনুসরণকারী, আপনার অধিক যিকরকারী এবং আপনার অসিয়তের অধিক হিফাযতকারী বানিয়ে দিন।” (এটা ইমাম আহমাদ (রঃ) ও ইমাম তিরমিযী (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে বাশার (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, দু’জন বেদুঈন রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নিকট আগমন করলো। তাদের একজন জিজ্ঞেস করলো: “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! লোকদের মধ্যে সবচেয়ে উত্তম কে?” উত্তরে তিনি বললেনঃ “যে ব্যক্তি দীর্ঘ সময় পেলো ও ভাল কাজ করলো।” দ্বিতীয়জন জিজ্ঞেস করলো: “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আমাদের উপর ইসলামের বিধান তো অনেক রয়েছে। আমাকে একটি উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন বিধান বাতলিয়ে দিন যার সাথে আমি সদা লেগে থাকবো।” তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাকে বললেনঃ “আল্লাহর যিক্র দ্বারা সদা-সর্বদা তোমার জিহ্বাকে সিক্ত রাখবে। (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ) ও ইমাম তিরমিযী (রঃ) বর্ণনা করেছেন এবং ইমাম তিরমিযী হাদীসটিকে হাসান গারীব বলেছেন)
হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, আল্লাহর রাসূল (সঃ) বলেছেনঃ “তোমরা খুব বেশী বেশী আল্লাহর যি কর, এমনকি জনগণ তোমাদেরকে পাগল বলে ফেলে।” (এ হাদীসটিও ইমাম আহমাদ (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “তোমরা খুব বেশী বেশী আল্লাহর যিক্র কর, শেষ পর্যন্ত যেন মুনাফিকরা বলতে শুরু করে যে, তোমরা লোক দেখানো যিক্র করছে। (এ হাদীসটি ইমাম তিবরানী (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
হযরত আবদুল্লহ ইবনে আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “যে কওম এমন মজলিসে বসে যেখানে আল্লাহর যিক্র হয় না, তারা কিয়ামতের দিন এ জন্যে আফসোস ও দুঃখ প্রকাশ করবে।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
(আরবি) আল্লাহ তা’আলার এই উক্তির ব্যাপারে হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, প্রত্যেক ফরয কাজের একটা সীমা আছে এবং বিশেষ ওজর বশতঃ তা মাফও করা হয়েছে। কিন্তু আল্লাহর যিক্রের কোন সীমা নেই। কোন সময়েই তা সঙ্গ ছাড়া হয় না। তবে কেউ যদি পাগল হয়ে যায় তবে সেটা অন্য কথা। দাঁড়িয়ে, বসে, রাত্রে, দিবসে, স্থলে, পানিতে, বাড়ীতে, সফরে, ধনী অবস্থায় ও দরিদ্র অবস্থায়, সুস্থ অবস্থায় ও অসুস্থ অবস্থায়, গোপনে ও প্রকাশ্যে, মোটকথা সর্বাবস্থায়ই আল্লাহর যিকর করতে হবে। সকাল-সন্ধ্যায় আল্লাহর তাসবীহ পাঠ করতে হবে। তুমি যখন এগুলো করতে থাকবে তখন আল্লাহ তা’আলা তোমার উপর তার রহমত বর্ষণ করতে থাকবেন। আর ফেরেশতারাও তোমার জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকবেন।
এ সম্পর্কে আরো বহু হাদীস ও আসার রয়েছে। এই আয়াতেও খুব বেশী বেশী আল্লাহর যিক্র করার হিদায়াত করা হয়েছে। অনেকে আল্লাহর যিক্র ও অযীফা সম্পর্কে বহু স্বতন্ত্র পুস্তক রচনা করেছেন, যেমন ইমাম নাসাঈ (রঃ), ইমাম মামারী (রঃ) প্রমুখ। এগুলোর মধ্যে এ বিষয়ের উপর সর্বোত্তম কিতাব হচ্ছে ইমাম নববী (রঃ)-এর লিখিত কিতাব।
মহান আল্লাহ বলেনঃ সকাল-সন্ধ্যায় আল্লাহর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করবে। যেমন মহামহিমান্বিত আল্লাহ অন্য জায়গায় বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “আল্লাহর পবিত্রতা ঘোষণা কর সন্ধ্যায় ও সকালে। তারই জন্যে প্রশংসা আকাশসমূহে ও পৃথিবীতে এবং বিকালে ও যোহরের সময়।” (৩০:১৭-১৮)
অতঃপর এর ফযীলত বর্ণনা এবং এর প্রতি উৎসাহ প্রদান করার জন্যে মহান আল্লাহ বলেনঃ আল্লাহ স্বয়ং তোমাদের প্রতি অনুগ্রহ করেন। এতদসত্ত্বেও কি তোমরা তাঁর যি হতে উদাসীন থাকবে? যেমন মহামহিমান্বিত আল্লাহ অন্য জায়গায় বলেনঃ (আরবি)
অর্থাৎ “যেমন আমি তোমাদের মধ্যে তোমাদেরই মধ্য হতে এমন এক রাসূল পাঠিয়েছি যে তোমাদের কাছে আমার নিদর্শনাবলী পাঠ করে থাকে ও তোমাদেরকে (পাপ হতে) পবিত্র করে এবং তোমাদেরকে কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দেয় এবং তোমাদেরকে এমন কিছু শিক্ষা দেয় যা তোমরা জানতে না। সুতরাং তোমরা আমাকে স্মরণ কর, আমিও তোমাদেরকে স্মরণ করবো, এবং তোমরা আমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর ও অকৃতজ্ঞ হয়ো না।” (২:১৫১-১৫২)।
নবী (সঃ) বলেছেন যে, আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ “যে আমাকে তার অন্তরে স্মরণ করে আমিও তাকে আমার অন্তরে স্মরণ করি, আর যে আমাকে কোন জামাআত বা দলের মধ্যে স্মরণ করে, আমি তাকে এমন জামাআতের মধ্যে স্মরণ করি যা তার জামাআত হতে উত্তম।”
(আারবি) শব্দটি যখন আল্লাহ তা’আলার দিকে সম্বন্ধযুক্ত হয় তখন ওর অর্থ হয় আল্লাহ তা’আলা তার কল্যাণ ও মঙ্গল তাঁর ফেরেশতাদের সামনে বর্ণনা করেন। অন্য কেউ বলেছেন যে, (আারবি) শব্দটি আল্লাহ তা’আলার দিকে সম্বন্ধযুক্ত হলে ওর অর্থ হবে রহমত। এ দু’টি উক্তির মধ্যে কোন বৈপরিত্য নেই। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাই সর্বাধিক সঠিক জ্ঞানের অধিকারী। আর শব্দটি (আারবি) ফেরেশতাদের দিকে সম্বন্ধযুক্ত হলে তখন অর্থ হবে মানুষের জন্যে দু’আ ও ক্ষমা প্রার্থনা করা। যেমন আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা’আলা বলেনঃ (আারবি)
অর্থাৎ “আরশ বহনকারীরা ও ওর আশে-পাশে অবস্থানকারীরা তাদের প্রতিপালকের মহিমা কীর্তন করে ও তাঁর উপর ঈমান আনে এবং মুমিন বান্দাদের জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করতে গিয়ে বলেঃ হে আমাদের প্রতিপালক! আপানি প্রত্যেক জিনিসকে রহমত ও ইলম দ্বারা পরিবেষ্টন করে রেখেছেন। হে আল্লাহ! আপনি তাদেরকে ক্ষমা করুন যারা তাওবা করে ও আপনার পথে চলে। তাদেরকে আপনি জাহান্নামের শাস্তি হতে রক্ষা করুন এবং জান্নাতে আদনে প্রবিষ্ট করুন যার ওয়াদা আপনি তাদের সাথে করেছেন। আর তাদের সাথে তাদেরকেও পৌছিয়ে দিন যারা তাদের বাপ-দাদা, স্ত্রী ও সন্তানদের মধ্যে সৎকর্মশীল নিশ্চয়ই আপনি পরাক্রমশালী, বিজ্ঞ। আর তাদেরকে মন্দ ও অসৎ কাজ হতে বাঁচিয়ে নিন।” (৪০:৭-৯)
এই দু’আ ও ক্ষমা প্রার্থনার পরিপ্রেক্ষিতে মুমিন বান্দাদের উপর মহান আল্লাহ স্বীয় রহমত বর্ষণ করেন। তাদেরকে তিনি অজ্ঞতা ও কুফরীর অন্ধকার হতে বের করে ঈমানের আলোকের দিকে আনয়ন করেন। আল্লাহ তাআলা মুমিনদের প্রতি পরম দয়ালু। দুনিয়ায় তিনি তাদেরকে সত্যের পথ প্রদর্শন করেন ও জীবিকার ব্যবস্থা করেন এবং আখিরাতে তিনি তাদেরকে ভয়-ভীতি ও কঠিন শাস্তি হতে বাঁচিয়ে নিবেন। ফেরেশতারা বারবার মুমিনদের কাছে এসে তাদেরকে সুসংবাদ দেন। তাদেরকে তারা বলেনঃ “তোমরা জাহান্নাম হতে মুক্তি পেয়েছে এবং জান্নাতে প্রবেশের অধিকার লাভ করেছে। এর একমাত্র কারণ হচ্ছে এই যে, মহান আল্লাহ তার মুমিন বান্দাদের উপর অত্যন্ত দয়ালু ও স্নেহশীল।
হযরত আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, একদা রাসূলুল্লাহ (সঃ) সাহাবীদেরকে সাথে নিয়ে পথ চলছিলেন। ঐ সময় রাস্তার উপর একটি ছোট ছেলে ছিল। একটি দল আসছে দেখে ছেলেটির মা ভয় পেয়ে গেল এবং আমার ছেলে আমার ছেলে বলে চীৎকার করতে করতে ছুটে আসলো এবং ছেলেকে কোলে উঠিয়ে নিয়ে একদিকে সরে গেল। ছেলের প্রতি মায়ের এই স্নেহ ও মমতা দেখে সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! মা কি এই ছেলেটিকে আগুনে ফেলতে পারে?” রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাদের উদ্দেশ্য বুঝে নিয়ে বললেনঃ “না, আল্লাহর কসম! আল্লাহ তা’আলা কখনো তাঁর বন্ধুকে আগুনে নিক্ষেপ করবেন না।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ) স্বীয় মুসনাদে বর্ণনা করেছেন)
আমীরুল মুমিনীন হযরত উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) একটি বন্দিনী নারীকে দেখেন যে তার দুগ্ধপোষ্য শিশুকে দেখা মাত্রই উঠিয়ে নিলো এবং বুকে লাগিয়ে দিয়ে দুধ পান করাতে শুরু করলো। এ দেখে রাসূলুল্লাহ (সঃ) সাহাবীদেরকে বললেনঃ “আচ্ছা বল তো, ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও এই মহিলাটি তার এই ছেলেটিকে আগুনে নিক্ষেপ করতে পারে কি? সাহাবীগণ উত্তরে বললেনঃ “না।” তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) বললেনঃ “আল্লাহর শপথ! এই মহিলা তার ছেলের প্রতি যতটা স্নেহশীল ও দয়ালু, আল্লাহ তাঁর বান্দাদের প্রতি এর চেয়ে অনেক বেশী দয়ালু।” (এ হাদীসটি ইমাম বুখারী (রঃ) স্বীয় সহীহ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন)
মহান আল্লাহর উক্তিঃ যেদিন তারা আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করবে, সেদিন তাদের প্রতি অভিবাদন হবে ‘সালাম’। যেমন মহামহিমান্বিত আল্লাহ অন্য জায়গায় বলেনঃ (আারবি)
অর্থাৎ “পরম দয়ালু প্রতিপালকের পক্ষ হতে তাদেরকে বলা হবেঃ সালাম।” (৩৬:৫৮) কাতাদা (রঃ) বলেন যে, এর ভাবার্থ হলো: পরকালে মুমিনরা যখন আল্লাহ তা’আলার সাথে সাক্ষাৎ করবে তখন তারা একে অপরকে সালাম দেবে। ইবনে জারীর (রঃ) এ উক্তিটি পছন্দ করেছেন। আমি বলিঃ এই উক্তির স্বপক্ষে দলীল হচ্ছে নিম্নের আয়াতটিঃ(আারবি)
অর্থাৎ “সেখানে তাদের ধ্বনি হবে- হে আল্লাহ! আপনি মহান, পবিত্র! এবং সেখানে তাদের অভিবাদন হবেঃ সালাম এবং তাদের শেষ ধ্বনি হবে- প্রশংসা জগতসমূহের প্রতিপালক আল্লাহর প্রাপ্য।” (১০:১০)
মহান আল্লাহ বলেনঃ তিনি তাদের জন্যে প্রস্তুত রেখেছেন উত্তম প্রতিদান। অর্থাৎ জান্নাত এবং ওর সমুদয় ভোগ্যবস্ত যেগুলো তাদের জন্যে নির্ধারিত করে রাখা হয়েছে। সেখানে তারা পানাহারের দ্রব্য, পরিধানের বস্ত্র, বাসস্থান, স্ত্রী, নয়নাভিরাম সৌন্দর্য অবলোকন ইত্যাদি সবকিছুই পাবে! এগুলোর ধ্যান-ধারণা মানুষ করতেই পারে না। এগুলো এমনই যে, মানুষ চোখে দেখেনি, কানে শুনেনি এবং অন্তরে কল্পনাও করেনি।
أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book#1055)
[The Virtue of remembering Allah much:-]
www.motaher21.net
Sura:33:Al-Ahzaab
Para:22
Ayat: – 41
33:41
یٰۤاَیُّہَاالَّذِیۡنَ اٰمَنُوا اذۡکُرُوا اللّٰہَ ذِکۡرًا کَثِیۡرًا﴿ۙ۴۱﴾
O you who have believed, remember Allah with much remembrance
The Virtue of remembering Allah much
Allah commands:
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ امَنُوا اذْكُرُوا اللَّهَ ذِكْرًا كَثِيرًا
O you who believe!
Remember Allah with much remembrance.
Allah commands His believing servants to remember their Lord much, Who has bestowed upon them all kinds of blessings and favors, because this will bring them a great reward and a wonderful destiny.
Imam Ahmad recorded that Abdullah bin Busr said:
“Two Bedouins came to the Messenger of Allah and one of them said:`O Messenger of Allah, which of the people is best’
He said:
مَنْ طَالَ عُمْرُهُ وَحَسُنَ عَمَلُه
The one whose life is long and whose deeds are good.
The other one said:`O Messenger of Allah, the laws of Islam are too much for us. Teach me something that I can adhere to.’
He said,
لَاايَزَالُ لِسَانُكَ رَطْبًا بِذِكْرِ اللهِ تَعَالَى
Keep your tongue moist with the remembrance of Allah, may He be exalted.
At-Tirmidhi and Ibn Majah recorded the second part of this report.
At-Tirmidhi said, “This Hadith is Hasan Gharib”.
Imam Ahmad recorded that Abdullah bin `Amr, may Allah be pleased with him, said that the Messenger of Allah said,
مَا مِنْ قَوْمٍ جَلَسُوا مَجْلِسًا لَمْ يَذْكُرُوا اللهَ تَعَالَى فِيهِ إِلاَّ رَأَوْهُ حَسْرَةً يَوْمَ الْقِيَامَة
No people sit together without mentioning Allah, but they will see that as regret on the Day of Resurrection.
Ali bin Abi Talhah reported that Ibn Abbas, may Allah be pleased with him, commented on the Ayah:
اذْكُرُوا اللَّهَ ذِكْرًا كَثِيرًا
(Remember Allah with much remembrance),
“Allah did not enjoin any duty upon His servants without setting known limits and accepting the excuses of those who have a valid excuse — apart from Dhikr, for Allah has not set any limits for it, and no one has any excuse for not remembering Allah unless he is oppressed and forced to neglect it.
Allah says:
فَاذْكُرُواْ اللَّهَ قِيَـماً وَقُعُوداً وَعَلَى جُنُوبِكُمْ
Remember Allah standing, sitting down, and (lying down) on your sides. (4:103)
By night and by day, on land and on sea, when traveling and when staying home, in richness and in poverty, in sickness and in health, in secret and openly, in all situations and circumstances.
And Allah says:
وَسَبِّحُوهُ بُكْرَةً وَأَصِيلً
33:42
وَّ سَبِّحُوۡہُ بُکۡرَۃً وَّ اَصِیۡلًا ﴿۴۲﴾
And exalt Him morning and afternoon.
And glorify His praises morning and Asila.
If you do this, He and His angels will send blessings upon you.”
There are very many Ayat, Hadiths and reports which encourage the remembrance of Allah, and this Ayah urges us to remember Him much. People such as An-Nasa’i and Al-Ma`mari and others have written books about the Adhkar to be recited at different times of the night and day.
وَسَبِّحُوهُ بُكْرَةً وَأَصِيلً
And glorify His praises morning and Asila.
in the morning and in the evening.
This is like the Ayah:
فَسُبْحَانَ اللَّهِ حِينَ تُمْسُونَ وَحِينَ تُصْبِحُونَ
وَلَهُ الْحَمْدُ فِى السَّمَـوَتِ وَالاٌّرْضِ وَعَشِيّاً وَحِينَ تُظْهِرُونَ
So glorify Allah, when you come up to the evening, and when you enter the morning. And His are all the praises and thanks in the heavens and the earth; and in the afternoon and when you come up to the time, when the day begins to decline. (30:17-18)
33:43
ہُوَ الَّذِیۡ یُصَلِّیۡ عَلَیۡکُمۡ وَ مَلٰٓئِکَتُہٗ لِیُخۡرِجَکُمۡ مِّنَ الظُّلُمٰتِ اِلَی النُّوۡرِ ؕ وَ کَانَ بِالۡمُؤۡمِنِیۡنَ رَحِیۡمًا ﴿۴۳﴾
It is He who confers blessing upon you, and His angels [ask Him to do so] that He may bring you out from darknesses into the light. And ever is He, to the believers, Merciful.
هُوَ الَّذِي يُصَلِّي عَلَيْكُمْ وَمَلَيِكَتُهُ
He it is Who sends Salah on you, and His angels too,
This is encouragement to remember Allah, i.e., He will remember you, so remember Him.
This is like the Ayah:
كَمَأ أَرْسَلْنَا فِيكُمْ رَسُولاً مِّنْكُمْ يَتْلُواْ عَلَيْكُمْ ايَـتِنَا وَيُزَكِّيكُمْ وَيُعَلِّمُكُمُ الْكِتَـبَ وَالْحِكْمَةَ وَيُعَلِّمُكُم مَّا لَمْ تَكُونُواْ تَعْلَمُونَ
فَاذْكُرُونِى أَذْكُرْكُمْ وَاشْكُرُواْ لِي وَلَا تَكْفُرُونِ
Similarly, We have sent among you a Messenger of your own, reciting to you Our Ayat and purifying you, and teaching you the Book and the Hikmah, and teaching you that which you used not to know. Therefore remember Me. I will remember you, and be grateful to Me and never be ungrateful to Me. (2:151-152)
The Prophet said:
يَقُولُ اللهُ تَعَالَى مَنْ ذَكَرَنِي فِي نَفْسِهِ ذَكَرْتُهُ فِييَنفْسِي وَمَنْ ذَكَرَنِي فِي مَلٍَ ذَكَرْتُهُ فِي مَلٍَ خَيْرٍ مِنْه
Allah says:”Whoever remembers Me to himself, I will remember him to Myself, and whoever remembers Me in a gathering, I will remember him in a better gathering.”
The Meaning of Salah
Allah’s Salah means that He praises His servant before the angels, as Al-Bukhari recorded from Abu Al-Aliyah. This was recorded by Abu Jafar Ar-Razi from Ar-Rabi bin Anas from Anas.
Others said:”Allah’s Salah means mercy.”
It may be said that there is no contradiction between these two views. And Allah knows best.
Salah from the angels means their supplication and seeking forgiveness for people, as Allah says:
الَّذِينَ يَحْمِلُونَ الْعَرْشَ وَمَنْ حَوْلَهُ يُسَبِّحُونَ بِحَمْدِ رَبِّهِمْ وَيُوْمِنُونَ بِهِ وَيَسْتَغْفِرُونَ لِلَّذِينَ ءَامَنُواْ رَبَّنَا وَسِعْتَ كُـلَّ شَىْءٍ رَّحْمَةً وَعِلْماً فَاغْفِرْ لِلَّذِينَ تَابُواْ وَاتَّبَعُواْ سَبِيلَكَ وَقِهِمْ عَذَابَ الْجَحِيمِ
رَبَّنَا وَأَدْخِلْهُمْ جَنَّـتِ عَدْنٍ الَّتِى وَعَدْتَّهُمْ وَمَن صَـلَحَ مِنْ ءَابَأيِهِمْ وَأَزْوَجِهِمْ وَذُرِّيَّـتِهِمْ إِنَّكَ أَنتَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ
وَقِهِمُ السَّيّيَـتِ
Those who bear the Throne and those around it glorify the praises of their Lord, and believe in Him, and ask forgiveness for those who believe (saying):
“Our Lord! You comprehend all things in mercy and knowledge, so forgive those who repent and follow Your way, and save them from the torment of the blazing Fire!
Our Lord! And make them enter the `Adn Garden which you have promised them — and to the righteous among their fathers, their wives, and their offspring! Verily, You are the All-Mighty, the All-Wise.
And save them from the sins.” (40:7-9)
لِيُخْرِجَكُم مِّنَ الظُّلُمَاتِ إِلَى النُّورِ
that He may bring you out from darkness into light.
means, by means of His mercy towards you, His praise of you and the supplication of His angels for you, He brings you forth from the darkness of ignorance and misguidance into the light of guidance and certain faith.
وَكَانَ بِالْمُوْمِنِينَ رَحِيمًا
And He is Ever Most Merciful to the believers.
means, in this world and in the Hereafter:
in this world He guides them to the truth of which others are ignorant, and He shows them the path from which others have gone astray, those who call for disbelief and innovation, and their followers among the wrongdoers. His mercy towards them in the Hereafter means that He will save them from the greater terror (of the Day of Resurrection) and will command His angels to greet them with the glad tidings of Paradise and salvation from the Fire, which will only be because of His love for them and His kindness towards them.
Imam Ahmad recorded that Anas, may Allah be pleased with him, said:
“The Messenger of Allah and a group of his Companions, may Allah be pleased with them, passed by a young child in the road. When his mother saw the people, she feared that her child may be crushed by the crowd, so she rushed forward, crying, `My son, my son!’ She ran and picked him up, and the people said, `O Messenger of Allah, she would never throw her child in the Fire.’
The Messenger of Allah convincingly said:
لَاا وَاللهِ لَاايُلْقِي حَبِيبَهُ فِي النَّار
No, and Allah will not throw His beloved in the Fire.
Its chain of narrators meets the conditions of the Two Sahihs, although none of the authors of the Six Books recorded it.
But in Sahih Al-Bukhari it is recorded from the Commander of the faithful Umar bin Al-Khattab, may Allah be pleased with him, that the Messenger of Allah saw a woman among the prisoners of war picking up her child, clasping the child to her breast and nursing him. The Messenger of Allah said:
أَتُرَوْنَ هَذِهِ تُلْقِي وَلَدَهَا فِي النَّارِ وَهِيَ تَقْدِرُ عَلَى ذَلِكَ
Do you think that this woman would throw her child into the Fire even though she is (physically) able to do so?
They said, “No.”
The Messenger of Allah said:
فَوَاللهِ للهُ أَرْحَمُ بِعِبَادِهِ مِنْ هَذِهِ بِوَلَدِهَا
By Allah, Allah is more merciful towards His servants than this woman is to her child.
33:44
تَحِیَّتُہُمۡ یَوۡمَ یَلۡقَوۡنَہٗ سَلٰمٌ ۖۚ وَ اَعَدَّ لَہُمۡ اَجۡرًا کَرِیۡمًا ﴿۴۴﴾
Their greeting the Day they meet Him will be, “Peace.” And He has prepared for them a noble reward.
تَحِيَّتُهُمْ يَوْمَ يَلْقَوْنَهُ سَلَمٌ
Their greeting on the Day they shall meet Him will be “Salam!”
The apparent meaning — and Allah knows best — is that their greeting, from Allah on the Day that they meet Him, will be Salam, i.e., He will greet them with Salam, as He says elsewhere:
سَلَمٌ قَوْلاً مِّن رَّبٍّ رَّحِيمٍ
(It will be said to them):Salam — a Word from the Lord, Most Merciful. (36:58)
Qatadah claimed that the meaning was that they would greet one another with Salam on the Day when they meet Allah in the Hereafter.
This is like the Ayah:
دَعْوَهُمْ فِيهَا سُبْحَـنَكَ اللَّهُمَّ وَتَحِيَّتُهُمْ فِيهَا سَلَمٌ وَءَاخِرُ دَعْوَاهُمْ أَنِ الْحَمْدُ للَّهِ رَبِّ الْعَـلَمِينَ
Their way of request therein will be `Glory to You, O Allah,’ and `Salam’ will be their greetings therein! and the close of their request will be `All praise is due to Allah, the Lord of all that exits.’ (10:10)
وَأَعَدَّ لَهُمْ أَجْرًا كَرِيمًا
And He has prepared for them a generous reward.
means Paradise and everything in it of food, drink, clothing, dwellings, physical pleasure, luxuries and delightful scenes, such as no eye has seen, no ear has heard and has never entered the mind of man
For getting Quran app: play.google.com/store/apps/details?id=com.ihadis.quran