(বই#১০৫২)
[পরপুরুষের সাথে কোমল কণ্ঠে কথা বলো না:-]
www.motaher21.net
সূরা:- ৩৩:আহযাব
পারা:২২
৩২-৩৪ নং আয়াত:-
তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-
৩২-৩৪ নং আয়াতের তাফসীর
আল্লাহ্ তা’আলা স্বীয় প্রিয়তম নবী (সঃ)-এর সহধর্মিণীদেরকে আদব-কায়দা ও ভদ্রতা শিক্ষা দিচ্ছেন। সমস্ত স্ত্রীলোক তাদের অধীনস্থ। সুতরাং এই নির্দেশাবলী সমস্ত মুসলিম নারীর জন্যেই প্রযোজ্য। তিনি নবী (সঃ)-এর সহধর্মিণীদেরকে সম্বোধন করে বলেনঃ হে নবী-পত্নীরা! তোমরা অন্যান্য সাধারণ নারীদের মত নও। তাদের তুলনায় তোমাদের মর্যাদা অনেক বেশী। যদি তোমরা আল্লীহূকে ভয় কর তবে পরপুরুষের সাথে কোমল কণ্ঠে এমনভাবে কথা বলো না যাতে অন্তরে যার ব্যাধি আছে সে প্রলুব্ধ হয় এবং তোমরা ন্যায়সঙ্গত কথা বলবে। স্ত্রীলোকদের পরপুরুষের সাথে কোমল সুরে ও লোভনীয় ভঙ্গিতে কথা বলা নিষিদ্ধ। সুমিষ্ট ভাষায় ও নরম সুরে শুধুমাত্র স্বামীর সাথে কথা বলা যেতে পারে।
এরপর মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ কোন জরুরী কাজকর্ম ছাড়া তোমরা বাড়ী হতে বের হবে না। মসজিদে নামায পড়তে যাওয়া শরয়ী প্রয়োজন। যেমন রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) বলেছেনঃ “আল্লাহর বাদীদেরকে আল্লাহ্র মসজিদে যেতে বাধা প্রদান করো না। কিন্তু তাদের উচিত যে, তারা বাড়ীতে যে সাদাসিধা পোশাক পরে থাকে ঐ পোশাক পরেই যেন মসজিদে গমন করে। অন্য একটি রিওয়াইয়াতে আছে যে, স্ত্রীলোকদের জন্যে বাড়ীই উত্তম।
হযরত আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা স্ত্রীলোকেরা রাসূলুল্লাহ্ (সঃ)-এর নিকট এসে বলেঃ হে আল্লাহর রাসূল (সঃ) ! পুরুষ লোকেরা আল্লাহর পথে জিহাদের ফযীলত নিয়ে যায়। আমাদের জন্যে কি এমন আমল আছে যার দ্বারা আমরা আল্লাহর পথে জিহাদকারীদের সমমর্যাদা লাভ করতে পারি?” উত্তরে রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “যারা নিজেদের বাড়ীতে (পর্দার সাথে) বসে থাকে (অথবা এ ধরনের কথা তিনি বললেন), তারা আল্লাহর পথে জিহাদকারীদের আমলের মর্যাদা লাভ করবে। (এ হাদীসটি হাফিয আবূ বকর আল বায্যার (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
হযরত আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, নবী (সঃ) বলেছেনঃ “নিশ্চয়ই স্ত্রীলোক পর্দার বস্তু। এরা যখন বাড়ী হতে বের হয় তখন শয়তান তাদের প্রতি ওঁৎ পেতে থাকে। তারা আল্লাহ্ তা’আলার খুব বেশী নিকটবর্তী হয় তখন যখন নিজেদের বাড়ীতে অবস্থান করে। (এ হাদীসটিও হাফিয আবু বকর আল বাযার (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
নবী (সঃ) বলেছেনঃ “নারীর অন্দর মহলের নামায তার বাড়ীর নামায হতে উত্তম এবং বাড়ীর নামায আঙ্গিনার নামায হতে উত্তম। (এ হাদীসটি ইমাম আবু দাউদ (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
অজ্ঞতার যুগে নারীরা বেপর্দাভাবে চলাফেরা করতো। ইসলাম এরূপ বেপর্দাভাবে চলাফেরা করাকে হারাম ঘোষণা করেছে। ভঙ্গিমা করে নেচে নেচে চলাকে ইসলামে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। দো-পাট্টা ও চাদর গায়ে দিয়ে চলাফেরা করতে হবে। তা গায়ে দিয়ে গলায় জড়িয়ে রাখা ঠিক নয়। যাতে গলা ও কানের অলংকার অন্যের নযরে না পড়ে সেভাবে গায়ে দিতে হবে। এগুলো অসত্য ও বর্বর যুগের নিয়ম-পদ্ধতি ছিল। যা এ আয়াত দ্বারা নিষিদ্ধ করে দেয়া হয়েছে।
হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, হযরত নূহ (আঃ) ও হযরত ইদরীস (আঃ)-এর মধ্যকার ব্যবধান ছিল এক হাজার বছর। এই মধ্যবর্তী যুগে হযরত আদম (আঃ)-এর দু’টি বংশ আবাদ ছিল। একটি পাহাড়ী এলাকায় এবং অপরটি সমতল ভূমিতে বসবাস করতো। পাহাড়ীয় অঞ্চলের পুরুষ লোকেরা চরিত্রবান ও সুন্দর ছিল এবং স্ত্রীলোকেরা ছিল কুৎসিত। পুরুষদের দেহের রং ছিল শ্যামল ও সুশ্রী। ইবলীস তাদেরকে বিভ্রান্ত করার উদ্দেশ্যে মানুষের রূপ ধারণ করে সমতল ভূমির লোকদের কাছে গেল। একটি লোকের গোলাম হয়ে তথায় থাকতে লাগলো। সেখানে সে বাঁশীর মত একটি জিনিস আবিষ্কার করলো এবং তা বাজাতে লাগলো। এই বশীর সুরে জনগণ খুবই মুগ্ধ হয়ে গেল এবং সেখানে ভীড় জমাতে শুরু করলো। এভাবে একদিন সেখানে মেলা বসে গেল। হাজার হাজার নারী-পুরুষ সেখানে একত্রিত হলো। আকস্মিকভাবে একদিন এক পাহাড়ী লোকও সেখানে পৌঁছে গেল। বাড়ী ফিরে গিয়ে সে নিজের লোকদের সামনে তাদের সৌন্দর্যের আলোচনা করতে লাগলো। তখন তারাও খুব ঘন ঘন সেখানে আসতে লাগলো। দেখাদেখির মাধ্যমে এদের নারীদের সাথে তাদের মেলামেশা বেড়ে গেল। সাথে সাথে ব্যভিচার ও অনান্য অসৎ কর্ম বেড়ে চললো। এভাবেই অসভ্যতা ও বর্বরতার পত্তন হলো।
এ ধরনের কাজে বাধা দেয়ার পর কিছু কিছু নির্দেশাবলীর বর্ণনা দেয়া হচ্ছে। মহান আল্লাহ্ বলেনঃ আল্লাহর ইবাদত সমূহের মধ্যে সবচেয়ে বড় ইবাদত হচ্ছে নামায। সুতরাং তোমরা নিয়মানুবর্তিতার সাথে নামায প্রতিষ্ঠিত করবে। অনুরূপভাবে আল্লাহর সৃষ্টির সাথে সদ্ব্যবহার করতে হবে। অর্থাৎ যাকাত প্রদান করতে হবে। এই বিশেষ আদেশ প্রদানের পর মহামহিমান্বিত আল্লাহ তার ও তাঁর রাসূল (সঃ)-এর আনুগত্য করার নির্দেশ দিচ্ছেন। তিনি বলেনঃ হে নবী-পরিবার! আল্লাহ তো শুধু চান তোমাদের হতে অপবিত্রতা দূর করতে এবং তোমাদেরকে সম্পূর্ণরূপে পবিত্র করতে। এই আয়াতটি এটাই প্রমাণ করে যে, নবী (সঃ)-এর সহধর্মিণীরা আহলে বায়েতের অন্তর্ভুক্ত। এ আয়াতটি তাঁদের ব্যাপারেই অবতীর্ণ হয়েছে। আয়াতের শানে নুযূল তো আয়াতের আদেশ-নিষেধ। মুতাবেক হয়ে থাকে। কেউ কেউ বলেন যে, আয়াতের বিষয়বস্তু তাদের উপর বর্তাবে যাদের শানে এ আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে। আবার কেউ কেউ বলেন যে, তারা তো হবেই, তা ছাড়া তারাও এর অন্তর্ভুক্ত হবে যাদের ক্রিয়া-কলাপ এদের অনুরূপ হবে। দ্বিতীয় কথাটিই অধিকতর সঠিক। হযরত ইকরামা (রাঃ) বাজারে বাজারে বলে বেড়াতেনঃ “এ আয়াতটি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর স্ত্রীদের জন্যে বিশেষভাবে অবতীর্ণ হয়েছে।” ইমাম ইবনে জারীর (রঃ), ইবনে আবি হাতিম (রঃ) এবং হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) এ কথা বলেছেন। হযরত ইকরামা (রাঃ) বলতেনঃ “যদি কেউ এ ব্যাপারে মুকাবিলা করতে চায় তবে আমি মুকাবিলা করতে সদা প্রস্তুত।” এ আয়াতটি শুধুমাত্র রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর সহধর্মিণীদের শানে অবতীর্ণ হয়েছে- একথার ভাবার্থ এই যে, এর শানে নুযূল অবশ্যই এটাই। যদি এর উদ্দেশ্য এই হয় যে, আহূলে বায়েতের সাথে অন্যান্যরাও জড়িত, তবে এখানে আবার প্রশ্ন থেকে যায়। কারণ হাদীসে উল্লিখিত হয়েছে যে, এ আয়াতে বর্ণিত আহলে বায়েত ছাড়া অন্যান্যরাও শামিল রয়েছে।
মুসনাদে আহমাদ ও জামেউত তিরমিযীতে উল্লিখিত হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) যখন ফজরের নামাযের জন্যে বের হতেন তখন তিনি হযরত ফাতিমা (রাঃ)-এর দরযার নিকট গিয়ে বলতেনঃ “হে আহলে বায়েত! নামাযের সময় হয়ে গেছে। অতঃপর তিনি এই পবিত্র আয়াতটি তিলাওয়াত করতেন। (ইমাম তিরমিযী (রঃ) এ হাদীসটিকে হাসান ও গারীব বলেছেন। ইমাম ইবনে জারীর (রঃ)-এর এরূপ একটি হাদীসে সাত মাসের বর্ণনা রয়েছে) (এই হাদীসের একজন বর্ণনাকারী আবু দাউদ আমানাকী ইবনে হারিস চরম মিথ্যাবাদী। এ রিওয়াইয়াতটি সঠিক নয)
শাদ্দাদ ইবনে আম্মার (রঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ “আমি একবার হযরত ওয়াসিলা ইবনে আসফা (রাঃ)-এর নিকট গেলাম। ঐ সময় সেখানে আরো কিছু লোক বসেছিল এবং হযরত আলী (রাঃ) সম্পর্কে আলোচনা চলছিল। তারা তাঁকে ভাল-মন্দ বলছিল। আমিও তাদের সাথে যোগ দিলাম। যখন তারা চলে গেল তখন হযরত ওয়াসিলা (রাঃ) বললেনঃ “তুমিও হযরত আলী (রাঃ) সম্পর্কে অসম্মানজনক মন্তব্য করলে?” আমি উত্তরে বললামঃ হ্যাঁ, আমি তাদের কথায় সমর্থন যোগিয়েছি মাত্র। তখন তিনি আমাকে বললেনঃ “তাহলে শুনো, আমি যা দেখেছি তা তোমাকে শুনাচ্ছি। একদা আমি হযরত আলী (রাঃ)-এর বাড়ী গিয়ে জানতে পারি যে, তিনি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর দরবারে গিয়েছেন। আমি তার আগমনের অপেক্ষায় সেখানেই বসে রইলাম। কিছুক্ষণ পরেই দেখি যে, রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) আসছেন এবং তার সাথে হযরত আলী (রাঃ), হযরত হাসান (রাঃ) ও হযরত হুসাইনও (রাঃ) রয়েছেন। হযরত হাসান (রাঃ) ও হযরত হুসাইন (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর অঙ্গুলী ধরে ছিলেন। তিনি হযরত আলী (রাঃ) ও হযরত ফাতিমা (রাঃ)-এর সামনে বসলেন এবং নাতিদ্বয়কে কোলের উপর বসালেন। একখানা চাদর দ্বারা তাদেরকে আবৃত করলেন। অতঃপর এ আয়াতটি তিলাওয়াত করে তিনি বললেনঃ “হে আল্লাহ! এরাই আমার আহলে বায়েত। আর আমার আহলে বায়েতই বেশী হকদার।” অন্য রিওয়াইয়াতে নিম্নের কথাটুকু বেশী আছে যে, হযরত ওয়াসিলা (রাঃ) বলেন, আমি এ দেখে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আমিও কি আপনার আহ্লে বায়েতের অন্তর্ভুক্ত? উত্তরে তিনি বললেনঃ “হ্যা, তুমিও আমার আহলে বায়েতেরই অন্তর্ভুক্ত।” হযরত ওয়াসিলা (রাঃ) বলেনঃ “আল্লাহর রাসূল (সঃ)-এর এই ঘোষণা আমার জন্যে বড়ই আশাব্যঞ্জক।”
অন্য রিওয়াইয়াতে আছে যে, হযরত ওয়াসিলা (রাঃ) বলেনঃ “আমি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর সাথে ছিলাম এমন সময় হযরত আলী (রাঃ), হযরত ফাতিমা (রাঃ), হযরত হাসান (রাঃ) এবং হযরত হুসাইন (রাঃ) আসলেন। রাসূলুল্লাহ (সঃ) স্বীয় চাদরখানা তাঁদের উপর ফেলে দিয়ে বলেনঃ “হে আল্লাহ! এরা আমার আহলে বায়েত। হে আল্লাহ! তাদের হতে অপবিত্রতা দূরীভূত করুন এবং তাদেরকে পবিত্র করে দিন।” আমি বললামঃ আমিও কি? তিনি জবাব দিলেনঃ “হ্যা, তুমিও। নিশ্চয়ই তুমি কল্যাণের উপর রয়েছে।”
হযরত উম্মে সালমা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ “আমার ঘরে রাসূলুল্লাহ (সঃ) অবস্থান করছিলেন এমন সময় হযরত ফাতিমা (রাঃ) রেশমী কাপড়ের একটি পুঁটলিতে করে কিছু নিয়ে আসলেন। তিনি (নবী সঃ) বললেনঃ “তোমার স্বামীকে ও দুই শিশুকে নিয়ে এসো।” সুতরাং তারাও এসে গেলেন ও খেতে শুরু করলেন। রাসূলুল্লাহ (সঃ) তার বিছানায় ছিলেন। বিছানায় খায়বারের একটি উত্তম চাদর বিছানো ছিল। আমি কামরায় নামায পড়ছিলাম। এমন সময় এ আয়াতটি অবতীর্ণ হলো। রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাঁদেরকে চাদর দিয়ে ঢেকে দিলেন। তিনি চাদরের ভিতর থেকে হাত দুটি বের করলেন এবং আকাশের দিকে উঠিয়ে দু’আ করলেনঃ “হে আল্লাহ! এরা আমার আহলে বায়েত ও আমার সাহায্যকারী। আপনি এদের অপবিত্রতা দূর করে দিন এবং এদেরকে পবিত্র করুন!” আমি আমার মাথাটি ঘর থেকে বের করে বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আমিও তো আপনাদের সবারই সাথে রয়েছি। রাসূলুল্লাহ (সঃ) উত্তরে বললেনঃ “হ্যা, অবশ্যই। তুমি তো সদা কল্যাণের উপর রয়েছে। (এ হাদীসটি মুসনাদে আহমাদে বর্ণিত হয়েছে) এ রিওয়াইয়াতের সনদে আতার নাম উল্লেখ করা হয়নি এবং তিনি কি ধরনের বর্ণনাকারী সেটাও বলা হয়নি। অবশিষ্ট বর্ণনাকারীরা বিশ্বাসযোগ্য।
অন্য একটি রিওয়াইয়াতে আছে যে, হযরত উম্মে সালমা (রাঃ) বলেনঃ “একদা আমার সামনে হযরত আলী (রাঃ)-এর আলোচনা শুরু হলো। আমি বললাম, আয়াতে তাতহীর তো আমার ঘরে অবতীর্ণ হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সঃ) আমার নিকট এসে বললেনঃ “কাউকেও এখানে আসার অনুমতি দেবে না।” অল্পক্ষণ পরেই হযরত ফাতিমা (রাঃ) আসলেন। কি করে আমি মেয়েকে তাঁর পিতার নিকট যেতে বাধা দিতে পারি? অতঃপর হযরত হাসান (রাঃ) আসলেন। কে নাতিকে তার নানার কাছে যেতে বাধা দেবে? তারপর হযরত হুসাইন (রাঃ)আসলেন। তাঁকেও আমি বাধা দিলাম না। এরপর হযরত আলী (রাঃ) আগমন করলেন। তাঁকেও আমি বাধা দিতে পারলাম না। তারা সবাই যখন একত্রিত হলেন তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাঁদেরকে চাদর দ্বারা আবৃত করলেন এবং বললেনঃ “হে আল্লাহ! এরা আমার আহলে বায়েত। সুতরাং আপনি এদের অপবিত্রতা দূর করে দিন এবং এদেরকে পবিত্র করুন!” ঐ সময় এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। যখন এঁদেরকে চাদর দ্বারা আবৃত করা হলো তখন আমি বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আমিও কি এদের অন্তর্ভুক্ত? কিন্তু আল্লাহ জানেন, তিনি আমার এ প্রশ্নে সন্তোষ প্রকাশ করলেন না। তবে শুধু বললেনঃ “তুমি কল্যাণের দিকেই রয়েছে।”
হাদীসের অন্য ধারাঃ
হযরত আতিয়্যাহ তাফাভী (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেছেন যে, হযরত উম্মে সালমা (রাঃ) তার কাছে বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ (সঃ) আমার ঘরে ছিলেন। খাদেম খবর দিলো যে হযরত ফাতিমা (রাঃ) ও হযরত আলী (রাঃ) এসেছেন। তখন তিনি আমাকে বললেনঃ “একটু সরে যাও, আমার আহলে বায়েত এসেছে।” একথা শুনে আমি ঘরের এক কোণে সরে গেলাম। রাসূলুল্লাহ (সঃ) শিশুদ্বয়কে কোলে নিলেন ও আদর করলেন। একটি হাত তিনি হযরত আলী (রাঃ)-এর উপর রাখলেন এবং আর একটি হাত রাখলেন হযরত ফাতিমা (রাঃ)-এর ঘাড়ের উপর। অতঃপর উভয়কেই তিনি স্নেহ করলেন। তারপর একটি কালো রং এর চাদর সকলের উপর বিছিয়ে দিয়ে তাঁদেরকে আবৃত করলেন। এরপর তিনি বললেনঃ “হে আল্লাহ! আমি আপনার দিকে আকৃষ্ট হচ্ছি, আগুনের দিকে নয়। এরাও আমার আহলে বায়েত।” আমি জিজ্ঞেস করলামঃ আমিও কি? উত্তরে তিনি বললেনঃ “হ্যা, তুমিও। (এ বর্ণনাটি মুসনাদে আহমাদে বর্ণিত হয়েছে)
অন্য ধারাঃ
হযরত উম্মে সালমা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ (আরবি) -এ আয়াতটি আমার বাড়ীতে অবতীর্ণ হয়েছে। আমি ঘরের দরজায় বসেছিলাম এমতাবস্থায় আমি বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আমি কি আহলে বায়েতের অন্তর্ভুক্ত নই? জবাবে তিনি বললেনঃ “তুমি কল্যাণের উপর রয়েছে এবং তুমি নবী (সঃ)-এর স্ত্রীদের একজন।” ঐ সময় আমার বাড়ীতে রাসূলুল্লাহ্ (সঃ), হযরত আলী (রাঃ), হযরত ফাতিমা (রাঃ), হযরত হাসান (রাঃ) ও হযরত হুসাইন (রাঃ) অবস্থান করছিলেন।” (এটা ইমাম ইবনে জারীর (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
অন্য ধারাঃ
হযরত উম্মে সালমা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ “রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) হযরত আলী (রাঃ), হযরত ফাতিমা (রাঃ), হযরত হাসান (রাঃ) ও হযরত হুসাইন (রাঃ)-কে একত্রিত করেন। অতঃপর তিনি তাদেরকে তার কাপড়ের নীচে প্রবিষ্ট করেন। অতঃপর তিনি মহামহিমান্বিত আল্লাহকে বলেনঃ “হে আল্লাহ! এরা আমার আহ্লে বায়েত।” তখন আমি বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আমাকেও তাদের অন্তর্ভুক্ত করে নিন। তিনি তখন বললেনঃ “তুমিও আমার পরিবারের একজন।”
অন্য হাদীসঃ
হযরত আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ “একদা সকালে রাসূলুল্লাহ (সঃ) কালো চাদর গায়ে দিয়ে বের হলেন। অতঃপর পর্যায়ক্রমে হযরত হাসান (রাঃ), হযরত হুসাইন (রাঃ), হযরত ফাতিমা (রাঃ) ও হযরত আলী (রাঃ) আসলেন। সকলকেই তিনি তার ঐ চাদরের মধ্যে প্রবিষ্ট করলেন। তারপর তিনি (আরবি) এ আয়াতটি পাঠ করলেন। (এটা ইমাম ইবনে জারীর (রঃ) ও ইমাম মুসলিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
অন্য ধারাঃ
হযরত ইবনে হাওশিব (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি তাঁর চাচাতো ভাই হতে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেছেন, একদা আমি হযরত আয়েশা (রাঃ)-এর নিকট গমন করে তাঁকে হযরত আলী (রাঃ) সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করি। তখন তিনি বলেনঃ তুমি আমাকে এমন এক ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছো যিনি ছিলেন রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নিকট সবচেয়ে প্রিয় ব্যক্তি। তার বাড়ীতেই তাঁর প্রিয়তমা কন্যা ছিলেন। যিনি ছিলেন রাসুলুল্লাহ (সঃ)-এর নিকট সবচেয়ে বেশী ভালবাসার পাত্রী আমি অবশ্যই রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে দেখেছি যে, তিনি হযরত আলী (রাঃ), হযরত ফাতিমা (রাঃ), হযরত হাসান (রাঃ) ও হযরত হুসাইন (রাঃ)-কে আহ্বান করেন। অতঃপর তিনি তাঁদের উপর কাপড় নিক্ষেপ করেন এবং বলেনঃ “হে আল্লাহ! এরা আমার আহলে বায়েত। সুতরাং আপনি তাদের থেকে অপবিত্রতা দূরীভূত করুন এবং তাদেরকে পবিত্র করে দিন!” আমি তখন তাদের নিকটবর্তী হলাম। অতঃপর বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আমিও কি আপনার আহলে বায়েতের অন্তর্ভুক্ত? তিনি জবাবে বললেনঃ “নিশ্চয়ই, জেনে রেখো যে, তুমি কল্যাণের উপর রয়েছে।” (এ হাদীসটি ইবনে আবি হাতিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
অন্য হাদীসঃ
হযরত আবু সাঈদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ (আরবি) এ আয়াতটি আমাদের পাঁচজনের ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়। অর্থাৎ আমি, হযরত আলী (রাঃ), হযরত হাসান (রাঃ), হযরত হুসাইন (রাঃ) এবং হযরত ফাতিমা (রাঃ)।” অন্য সনদে এটা হযরত আবু সাঈদ (রাঃ)-এর নিজস্ব উক্তিরূপে বর্ণিত আছে। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাই সর্বাধিক সঠিক জ্ঞানের অধিকারী ।
হযরত সা’দ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, যখন রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর উপর অহী অবতীর্ণ হয় তখন তিনি হযরত আলী (রাঃ), তাঁর দুই ছেলে এবং হযরত ফাতিমা (রাঃ)-কে ধরে তাঁর কাপড়ের নীচে প্রবিষ্ট করেন। অতঃপর বলেনঃ “হে আমার প্রতিপালক! এরা আমার আহলে বায়েত।” (এ হাদীসটি ইমাম ইবনে জারীর (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
হযরত ইয়াযীদ ইবনে হিব্বান (রঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমি, হুসাইন ইবনে সাবরা (রঃ) এবং হযরত উমার ইবনে সালমা (রঃ) হযরত যায়েদ ইবনে আরকাম (রাঃ)-এর নিকট গমন করি। আমরা তাঁর কাছে উপবেশন করলে হযরত হুসাইন (রাঃ) তাঁকে বলেনঃ “হে যায়েদ (রাঃ)! আপনি তো বহু কল্যাণ লাভ করেছেন। আপনি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে দেখেছেন, তাঁর হাদীস শুনেছেন, তার সাথে যুদ্ধ করেছেন এবং তার পিছনে নামায পড়েছেন। সুতরাং হে যায়েদ (রাঃ)! আপনি বহু কল্যাণ ও মঙ্গল লাভ করেছেন! হে যায়েদ (রাঃ)! আপনি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নিকট হতে যা শুনেছেন তা আমাদের নিকট বর্ণনা করুন।” তিনি তখন বললেন, হে আমার ভ্রাতুস্পুত্র! আল্লাহর কসম! এখন আমার বয়স খুব বেশী হয়ে গেছে, রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর যমানা দূরে চলে গেছে, যা আমি রাসূলুল্লাহ (সঃ) হতে শুনেছি তার কিছু কিছু বিস্মরণ হয়েছি। এখন আমি তোমাকে যা বলি তাই কর এবং তা মেনে নাও আমাকে তুমি এ ব্যাপারে কষ্ট দিয়ো না। শুনো, মক্কা ও মদীনার মাঝখানে একটি পানির জায়গা রয়েছে যার নাম ‘খাম’। সেখানে রাসূলুল্লাহ (সঃ) দাঁড়িয়ে আমাদের সামনে ভাষণ দান করেন। তিনি বলেনঃ “আমি একজন মানুষ। খুব সম্ভব আমার প্রতিপালকের পক্ষ হতে আমার নিকট একজন দূত আগমন করবেন। আমি যেন তার কথা মেনে নিই। আমি তোমাদের কাছে দু’টি বস্তু ছেড়ে যাচ্ছি। একটি হলো আল্লাহর কিতাব, যাতে হিদায়াত ও জ্যোতি রয়েছে। তোমরা আল্লাহর কিতাবকে গ্রহণ কর ও ওকে দৃঢ়ভাবে ধারণ কর।” অতঃপর তিনি আল্লাহর কিতাবের দিকে আমাদের দৃষ্টি পূর্ণভাবে আকর্ষণ করলেন। তারপর তিনি বললেনঃ “আমার আহলে বায়েতের ব্যাপারে আমি আল্লাহর কথা তোমাদেরকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি ।” তিনবার তিনি একথার পুনরাবৃত্তি করলেন। তখন হুসাইন (রঃ) তাঁকে জিজ্ঞেস করলেনঃ “হে যায়েদ (রাঃ)! আহলে বায়েত কারা? তাঁর স্ত্রীরা কি আহলে বায়েতের অন্তর্ভুক্ত নন?” উত্তরে তিনি বলেনঃ “তাঁর স্ত্রীরাও আহলে বায়েতের অন্তর্ভুক্ত বটে, তবে তার আহ্ল তাঁরা যাদের উপর তার পরে সাদকা হারাম।” আবার তিনি জিজ্ঞেস করলেনঃ “তারা কারা?’ জবাবে তিনি বললেনঃ “তারা হলেন হযরত আলী (রাঃ)-এর বংশধর, হযরত আকীল (রাঃ)-এর বংশধর ও হযরত আব্বাস (রাঃ)-এর বংশধর।” তাকে প্রশ্ন করা হলো: “এঁদের সবারই উপর কি সাদকা হারাম?” তিনি উত্তর দিলেনঃ “হ্যা। (এ হাদীসটি ইমাম মুসলিম (রঃ) স্বীয় সহীহ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন)
অন্য সনদে বর্ণনা করা হয়েছেঃ আমি জিজ্ঞেস করলাম, রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর স্ত্রীরাও কি আহলে বায়েতের অন্তর্ভুক্ত? তিনি জবাব দিলেনঃ “না। আল্লাহর কসম! স্ত্রীরা তো দীর্ঘদিন ধরে স্বামীর সাথে অবস্থান করে। কিন্তু যদি স্বামী তাকে তালাক দিয়ে দেয় তবে সে তার পিত্রালয়ের সদস্যা ও নিজ লোকদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর আহলে বায়েত হবে তাঁর মূল ও আসাবা।. যেসব ওয়ারিশের অংশ নির্ধারিত থাকে না, বরং যাদের অংশ নির্ধারিত রয়েছে তাদের অংশ নেয়ার পর বাকী অংশ যারা পায় তাদেরকেই ফারায়েযের পরিভাষায় আসাবা বলা হয়। তার পরে তাদের উপর সাদকা হারাম।” এ রিওয়াইয়াতে এ রকমই আছে। কিন্তু প্রথম রিওয়াইয়াতটিই বেশী গ্রহণযোগ্য। আর দ্বিতীয়টিতে রয়েছে তার উদ্দেশ্য হলো শুধু ঐ আহলে বায়েত যাদের কথা হাদীসে উল্লিখিত হয়েছে। কেননা সেখানে ঐ (আরবি) উদ্দেশ্য যাদের উপর সাদকা হারাম। কিংবা এটাই যে, উদ্দেশ্য শুধু স্ত্রীরাই নয়, বরং তারাসহ তার অন্যান্য (আরবি)-ও উদ্দেশ্য। এ কথাটিই বেশী যুক্তিযুক্ত। এর দ্বারা এ বর্ণনা ও পূর্ববর্তী বর্ণনার মধ্যে সমন্বয় সাধিত হচ্ছে। কুরআন ও পূর্ববর্তী হাদীসগুলোর মধ্যেও সমন্বয় হয়ে যাচ্ছে। তবে তখনই তা সম্ভব হবে যখন এ হাদীসগুলোকে সহীহ বলে মেনে নেয়া হবে। কেননা, এগুলোর কোন কোন সনদের ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনার অবকাশ রয়েছে। এসব ব্যাপারে সর্বাধিক সঠিক জ্ঞান একমাত্র আল্লাহ তা’আলারই রয়েছে।
যে ব্যক্তি মারেফাতের জ্যোতি লাভ করেছে এবং যাদের কুরআন কারীম সম্পর্কে গবেষণা করার অভ্যাস আছে তারা এক দৃষ্টিতেই এটা অবশ্যই জানতে পারবে যে, নবী (সঃ)-এর স্ত্রীরাও নিঃসন্দেহে এ আয়াতের অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন। কেননা, উপর হতেই প্রসঙ্গটি তাদের সম্পর্কে এবং তাঁদের ব্যাপারেই চলে আসছে।
এরপরে মহান আল্লাহ ঘোষণা করছেনঃ আল্লাহর আয়াত ও জ্ঞানের কথা, যা তোমাদের গৃহে পঠিত হয় তা তোমরা স্মরণ রাখবে; আল্লাহ অতি সূক্ষ্মদর্শী, সর্ববিষয়ে অবহিত।
সুতরাং হযরত কাতাদা (রঃ) প্রমুখ গুরুজনের উক্তি হিসেবে আল্লাহর আয়াত ও হিকমত দ্বারা কিতাব ও সুন্নাতকে বুঝানো হয়েছে। সুতরাং এটা একটা বিশেষ বৈশিষ্ট্য যা তাঁরা ছাড়া আর কেউই লাভ করতে পারেনি। তা এই যে, তাঁদের গৃহেই আল্লাহর অহী ও রহমতে ইলাহী অবতীর্ণ হয়ে থাকে। আর তাঁদের মধ্যে এই বৈশিষ্ট্য ও মর্যাদা উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা (রাঃ) সবচেয়ে বেশী লাভ করতে সক্ষম হয়েছিলেন। কেননা, হাদীসে পরিষ্কারভাবে উল্লিখিত হয়েছে যে, হযরত আয়েশা (রাঃ)-এর বিছানা ছাড়া আর কারো বিছানায় রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নিকট অহী আসেনি। এটা এ কারণেই যে, রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) হযরত আয়েশা (রাঃ) ছাড়া অন্য কোন কুমারী নারীকে বিয়ে করেননি। তাঁর বিছানা রাসূলুল্লাহ (সঃ) ছাড়া আর কারো জন্যে ছিল না। সুতরাং তিনি সঠিকভাবেই এই উচ্চ মর্যাদার অধিকারিণী ছিলেন। হ্যা, তবে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর সহধর্মিণীরাই যখন তাঁর আহলে বায়েতের অন্তর্ভুক্ত তখন তাঁর নিকটাত্মীয়গণ স্বাভাবিকভাবেই তাঁর আহলে বায়েতের অন্তর্ভুক্ত হবেন। যেমন হাদীসে গত হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আমার আহ্বালে বায়েত সবচেয়ে বেশী হকদার।”
সহীহ মুসলিমে যে হাদীসটি এসেছে এটা ওর সঙ্গে খুবই সামঞ্জস্যপূর্ণ। তা এই যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে যখন (আরবি) মসজিদ যার ভিত্তি প্রথম দিন হতেই তাকওয়ার উপর স্থাপিত) (৯:১০৮) সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয় তখন তিনি বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “ওটা আমার এই মসজিদ।” কথাটি মসজিদে কুবা সম্বন্ধে বলা হয়েছে। হাদীসে এটা পরিষ্কারভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। কিন্তু সহীহ্ মুসলিমে আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হলো: “এই মসজিদ বলতে কোন মসজিদকে বুঝানো হয়েছে?” উত্তরে তিনি বললেনঃ “আমার মসজিদ অর্থাৎ মসজিদে নববী (সঃ)।” সুতরাং যে মর্যাদা মসজিদে কুবার ছিল সে মর্যাদা মসজিদে নববীরও (সঃ) রয়েছে। এ জন্যে এই মসজিদকেও ঐ নামের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
মুসনাদে ইবনে আবি হাতিমে বর্ণিত হয়েছে যে, হযরত আলী (রাঃ)-এর শাহাদাতের পর হযরত হাসান (রাঃ)-কে খলীফা নির্বাচন করা হলো। তিনি ঐ সময় নামায পড়ছিলেন। বানী আসাদের গোত্রভুক্ত এক ব্যক্তি হঠাৎ এসে পড়লো এবং সিজদারত অবস্থায় তাঁকে ছুরি মেরে দিলো। ছুরিটি তাঁর গোশতের উপর লাগলো। কয়েক ঘন্টা মাত্র তিনি শয্যাগত থাকলেন। যখন একটু সুস্থ হলেন তখন তিনি মসজিদে এলেন এবং মিম্বরের উপর বসে বসে খুৎবা পাঠ করলেন ও বললেনঃ “হে ইরাকবাসী! আমাদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় কর। আমি তোমাদের নেতা ও তোমাদের মেহমান। আমি আহলে বায়েতের অন্তর্ভুক্ত। যাদের সম্পর্কে (আরবি) আয়াতটি অবতীর্ণ হয়েছে। এ কথাটির উপর তিনি খুব জোর দিলেন এবং বাক্যগুলো বারবার ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে বললেন। যারা মসজিদে ছিল তারা কাঁদতে লাগলো।
একবার তিনি এক সিরিয়াবাসীকে বলেছিলেনঃ “তুমি কি সরায়ে আহযাবের আয়াতে তাতহীর তিলাওয়াত করেছো?” সে জবাব দিলো: “হ্যা। এর দ্বারা কি আপনাদেরকেই বুঝানো হয়েছে?” তিনি উত্তরে বললেনঃ হ্যা। সে বললো: “আল্লাহ তা’আলা বড়ই স্নেহশীল, দয়াময়, সবজান্তা এবং সবকিছুরই খবর তিনি রাখেন। তিনি জানতেন যে, আপনারা তাঁর দয়া ও স্নেহলাভের যোগ্য। তাই তিনি আপনাদেরকে এ নিয়ামতগুলো দান করেছেন।”
সুতরাং তাফসীরে ইবনে জারীরের বর্ণনা অনুযায়ী আয়াতের অর্থ হবেঃ “হে মুমিনদের মাতা ও নবী (সঃ)-এর স্ত্রীরা! তোমাদের উপর যে আল্লাহর নিয়ামত রয়েছে তা তোমরা স্মরণ কর। তিনি তোমাদেরকে এমন বাড়ীতে অবস্থান করতে দিয়েছেন যেখানে আল্লাহর আয়াত ও জ্ঞানের কথা পঠিত হয়। আল্লাহর এসব নিয়ামতের জন্যে তোমাদের তাঁর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা উচিত। এখানে হিকমতের অর্থ হাদীস আল্লাহ তাআলা শেষ পরিণতিরও খবর রাখেন। তাই তিনি সঠিক ও পূর্ণ জ্ঞান দ্বারা পরীক্ষা নিরীক্ষা করে থাকেন। নবী (সঃ)-এর সহধর্মিণী হওয়ার সৌভাগ্য অর্জনকারিণী কারা হবেন তা তিনি নির্বাচন করেন। প্রকৃতপক্ষে এগুলোও তোমাদের উপর আল্লাহ তা’আলার পক্ষ হতে বড় অনুগ্রহ। তিনি সূক্ষ্মদর্শী, সর্ববিষয়ে অবহিত।
أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book#1052)
[Don’t be soft in speech [to men]:-]
www.motaher21.net
Sura:33:Al-Ahzaab
Para:22
Ayat: – 32
33:32
یٰنِسَآءَ النَّبِیِّ لَسۡتُنَّ کَاَحَدٍ مِّنَ النِّسَآءِ اِنِ اتَّقَیۡتُنَّ فَلَا تَخۡضَعۡنَ بِالۡقَوۡلِ فَیَطۡمَعَ الَّذِیۡ فِیۡ قَلۡبِہٖ مَرَضٌ وَّ قُلۡنَ قَوۡلًا مَّعۡرُوۡفًا ﴿ۚ۳۲﴾
O wives of the Prophet, you are not like anyone among women. If you fear Allah, then do not be soft in speech [to men], lest he in whose heart is disease should covet, but speak with appropriate speech.
Enjoining certain Manners so that the Mothers of the Believers may be an Example; and the Prohibition of Tabarruj
Allah enjoined upon the wives of the Prophet;
يَا نِسَاء النَّبِيِّ لَسْتُنَّ كَأَحَدٍ مِّنَ النِّسَاء إِنِ اتَّقَيْتُنَّ
O wives of the Prophet!
You are not like any other women. If you keep you have Taqwa,
These are the good manners which Allah enjoined upon the wives of the Prophet so that they would be an example for the women of the Ummah to follow. Allah said, addressing the wives of the Prophet that they should fear Allah as He commanded them, and that no other woman is like them or can be their equal in virtue and status.
Then Allah says:
فَلَ تَخْضَعْنَ بِالْقَوْلِ
then be not soft in speech,
As-Suddi and others said, this means, do not be gentle in speech when addressing men.
Allah says:
فَيَطْمَعَ الَّذِي فِي قَلْبِهِ مَرَضٌ
lest he in whose heart is a disease should be moved with desire,
means, something unclean.
وَقُلْنَ قَوْلاً مَّعْرُوفًا
but speak in an honorable manner.
Ibn Zayd said:
“Decent and honorable talk that is known to be good.”
This means that she should address non-Mahram men in a manner in which there is no softness, i.e., a woman should not address a non-Mahram man in the same way that she addresses her husband.
33:33
وَ قَرۡنَ فِیۡ بُیُوۡتِکُنَّ وَ لَا تَبَرَّجۡنَ تَبَرُّجَ الۡجَاہِلِیَّۃِ الۡاُوۡلٰی وَ اَقِمۡنَ الصَّلٰوۃَ وَ اٰتِیۡنَ الزَّکٰوۃَ وَ اَطِعۡنَ اللّٰہَ وَ رَسُوۡلَہٗ ؕ اِنَّمَا یُرِیۡدُ اللّٰہُ لِیُذۡہِبَ عَنۡکُمُ الرِّجۡسَ اَہۡلَ الۡبَیۡتِ وَ یُطَہِّرَکُمۡ تَطۡہِیۡرًا ﴿ۚ۳۳﴾
And abide in your houses and do not display yourselves as [was] the display of the former times of ignorance. And establish prayer and give zakah and obey Allah and His Messenger. Allah intends only to remove from you the impurity [of sin], O people of the [Prophet’s] household, and to purify you with [extensive] purification.
وَقَرْنَ فِي بُيُوتِكُنَّ
And stay in your houses,
means, stay in your houses and do not come out except for a purpose.
One of the purposes mentioned in Shariah is prayer in the Masjid, so long as the conditions are fulfilled, as the Messenger of Allah said:
لَاا تَمْنَعُوا إِمَاءَ اللهِ مَسَاجِدَ اللهِ وَلْيَخْرُجْنَ وَهُنَّ تَفِلَات
Do not prevent the female servants of Allah from the Masjids of Allah, but have them go out without wearing fragrance.
According to another report:
وَبُيُوتُهُنَّ خَيْرٌ لَهُن
even though their houses are better for them.
وَلَا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِيَّةِ الاُْولَى
and do not Tabarruj yourselves like the Tabarruj of the times of ignorance,
Mujahid said:
“Women used to go out walking in front of men, and this was the Tabarruj of Jahiliyyah.”
Qatadah said:
وَلَا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِيَّةِ الاُْولَى
(and do not Tabarruj yourselves like the Taburruj of the times of ignorance),
“When they go out of their homes walking in a shameless and flirtatious manner, and Allah, may He be exalted, forbade that.”
Muqatil bin Hayyan said:
“Tabarruj is when a woman puts a Khimar on her head but does not tie it properly.”
So her necklaces, earrings and neck, and all of that can be seen. This is Tabarruj, and Allah addresses all the women of the believers with regard to Tabarruj.
وَأَقِمْنَ الصَّلَأةَ وَاتِينَ الزَّكَاةَ وَأَطِعْنَ اللَّهَ وَرَسُولَهُ
and perform the Salah, and give Zakah and obey Allah and His Messenger.
Allah first forbids them from evil, then He enjoins them to do good by establishing regular prayer, which means worshipping Allah alone with no partner or associate, and paying Zakah, which means doing good to other people.
وَأَطِعْنَ اللَّهَ وَرَسُولَهُ
(and obey Allah and His Messenger). This is an instance of something specific being followed by something general.
The Wives of the Prophet are Members of His Household (Ahl Al-Bayt)
Allah says;
إِنَّمَا يُرِيدُ اللَّهُ لِيُذْهِبَ عَنكُمُ الرِّجْسَ أَهْلَ الْبَيْتِ وَيُطَهِّرَكُمْ تَطْهِيرًا
Allah wishes only to remove Ar-Rijs from you, O members of the family, and to purify you with a thorough purification.
This is a clear statement that the wives of the Prophet are included among the members of his family (Ahl Al-Bayt) here, because they are the reason why this Ayah was revealed, and the scholars are unanimously agreed that they were the reason for revelation in this case, whether this was the only reason for revelation or there was also another reason, which is the correct view.
Ibn Jarir recorded that Ikrimah used to call out in the marketplace:
إِنَّمَا يُرِيدُ اللَّهُ لِيُذْهِبَ عَنكُمُ الرِّجْسَ أَهْلَ الْبَيْتِ وَيُطَهِّرَكُمْ تَطْهِيرًا
(Allah wishes only to remove Ar-Rijs from you, O members of the family, and to purify you with a thorough purification).
“This was revealed solely concerning the wives of the Prophet.”
Ibn Abi Hatim recorded that Ibn Abbas said concerning the Ayah:
إِنَّمَا يُرِيدُ اللَّهُ لِيُذْهِبَ عَنكُمُ الرِّجْسَ أَهْلَ الْبَيْتِ وَيُطَهِّرَكُمْ تَطْهِيرًا
(Allah wishes only to remove Ar-Rijs from you, O members of the family),
“It was revealed solely concerning the wives of the Prophet.”
Ikrimah said:
“Whoever disagrees with me that it was revealed solely concerning the wives of the Prophet, I am prepared to meet with him and pray and invoke the curse of Allah upon those who are lying.”
So they alone were the reason for revelation, but others may be included by way of generalization.
Ibn Jarir narrated that Safiyyah bint Shaybah said:
“A’ishah, may Allah be pleased with her, said,
`The Prophet went out one morning wearing a striped cloak of black camel’s hair. Al-Hasan, may Allah be pleased with him, came and he wrapped him in the cloak with him. Then Al-Hussein, may Allah be pleased with him, came and he wrapped him in the cloak with him. Then Fatima, may Allah be pleased with her, came and he wrapped her in the cloak with him. Then Ali, may Allah be pleased with him, came and he wrapped him in the cloak with him, then he said:
إِنَّمَا يُرِيدُ اللَّهُ لِيُذْهِبَ عَنكُمُ الرِّجْسَ أَهْلَ الْبَيْتِ وَيُطَهِّرَكُمْ تَطْهِيرًا
(Allah wishes only to remove Ar-Rijs from you, O members of the family, and to purify you with a thorough purification).
This was recorded by Muslim.
In his Sahih, Muslim recorded that Yazid bin Hayyan said:
“Husayn bin Sabrah, Umar bin Muslim and I went to Zayd bin Arqam, may Allah be pleased with him, and when we had sat down with him, Husayn said:
`You are so fortunate, O Zayd! You saw the Messenger of Allah and heard his speeches, and you went on military campaigns with him, and you prayed behind him. You are so fortunate, O Zayd! Tell us what you heard from the Messenger of Allah.’
He said, `O son of my brother, by Allah, I have grown old and it has been a long time, and I have forgotten some of the things that I used to know from the Messenger of Allah. Whatever I tell you, accept it, and whatever I do not tell you, do not worry about it.’ Then he said,
`One day, the Messenger of Allah stood up to address us by the well of Khumm, between Makkah and Al-Madinah, and he praised Allah and thanked Him, and he preached and reminded us. Then he said:
أَمَّا بَعْدُ أَلَا أَيُّهَا النَّاسُ فَإِنَّمَا أَنَا بَشَرٌ يُوشِكُ أَنْ يَأْتِيَنِي رَسُولُ رَبِّي فَأُجِيبَ وَأَنَا تَارِكٌ فِيكُمْ ثَقَلَيْنِ أَوَّلُهُمَا كِتَابُ اللهِ تَعَالَى فِيهِ الْهُدَى وَالنُّورُ فَخُذُوا بِكِتَابِ اللهِ وَاسْتَمْسِكُوا بِه
Thereafter! O people, I am merely a human being and soon the messenger of my Lord will come and I will answer him. I am leaving behind two things with you, the first of which is the Book of Allah in which is guidance and light, so seize the Book of Allah and hold fast to it.
He urged them to cling to the Book of Allah, then he said:
وَأَهْلُ بَيْتِي أُذَكِّرُكُمُ اللهَ فِي أَهْلِ بَيْتِي أُذَكِّرُكُمُ اللهَ فِي أَهْلِ بَيْتِي
And the members of my family (Ahl Al-Bayt):Remember Allah with regard to the members of my family, remember Allah with regard to the members of my family.
saying it three times.’ Husayn said to him, `Who are the members of his family (Ahl Al-Bayt), O Zayd! Are not his wives members of his family?’
He said, `His wives are members of his family, but the members of his family are those who are not permitted to receive charity after he died.’
He said, `Who are they!’
He said, `They are the family of Ali, the family of Aqil, the family of Jafar and the family of Abbas, may Allah be pleased with them.’
He said, `Were all of these forbidden to receive charity after his death!’
He said, `Yes.”‘
This Commentary is from Zayd bin Arqam and is not Marfu`
The Command to follow the Qur’an and Sunnah
The one who ponders the meaning of the Qur’an will have no doubt that the wives of the Prophet are included among those who are referred to in the Ayah:
إِنَّمَا يُرِيدُ اللَّهُ لِيُذْهِبَ عَنكُمُ الرِّجْسَ أَهْلَ الْبَيْتِ وَيُطَهِّرَكُمْ تَطْهِيرًا
(Allah wishes only to remove Ar-Rijs from you, O members of the family, and to purify you with a thorough purification). The context clearly refers to them.
Allah then says
33:34
وَ اذۡکُرۡنَ مَا یُتۡلٰی فِیۡ بُیُوۡتِکُنَّ مِنۡ اٰیٰتِ اللّٰہِ وَ الۡحِکۡمَۃِ ؕ اِنَّ اللّٰہَ کَانَ لَطِیۡفًا خَبِیۡرًا ﴿٪۳۴﴾
And remember what is recited in your houses of the verses of Allah and wisdom. Indeed, Allah is ever Subtle and Acquainted [with all things].
وَاذْكُرْنَ مَا يُتْلَى فِي بُيُوتِكُنَّ مِنْ ايَاتِ اللَّهِ وَالْحِكْمَةِ
And remember, that which is recited in your houses of the Ayat of Allah and Al-Hikmah.
meaning, `act in accordance with that of the Qur’an and Sunnah which Allah revealed to His Messenger in your houses.’
This was the view of Qatadah and others.
`And remember this blessing with which you alone of all the people have been favored, that the revelation comes down in your houses and not those of other people.’
A’ishah As-Siddiqah bint As-Siddiq, may Allah be pleased with them, was foremost among them with in this blessing and was the most fortunate, and the most favored with this mercy. For the revelation did not come to the Messenger of Allah in the bed of any of his wives except hers, as he stated. Some of the scholars, may Allah have mercy on them, said:
“This was because he did not marry any other virgin besides her, and no man slept with her in her bed before him, may Allah be pleased with her.”
So it was befitting that she should be singled out for this blessing and high status. But if his wives are members of his household, then this title is even more fitting for his own relatives.
Ibn Abi Hatim recorded that Abu Jamilah said:
“Al-Hasan bin Ali, may Allah be pleased with them both, was appointed as Khalifah when Ali was killed.”
He said:
“While he was praying, a man leapt on him and stabbed him with a dagger.”
Hussein claimed that he heard that the one who stabbed him was a man from Banu Asad, and Al-Hasan, may Allah be pleased with him, was prostrating at the time.
He said, “They claimed that he received the wound in his hip. He was ill as a result for many months, then he recovered. He ascended the Minbar and said:`O people of Iraq! Have Taqwa of Allah concerning us, for we are your leaders and your guests, and we are members of the family (Ahl Al-Bayt) concerning whom Allah said:
إِنَّمَا يُرِيدُ اللَّهُ لِيُذْهِبَ عَنكُمُ الرِّجْسَ أَهْلَ الْبَيْتِ وَيُطَهِّرَكُمْ تَطْهِيرًا
(Allah wishes only to remove Ar-Rijs from you, O members of the family, and to purify you with a thorough purification).’ He kept saying this until there was no one left in the Masjid who was not weeping and sobbing.”
Allah then says:
إِنَّ اللَّهَ كَانَ لَطِيفًا خَبِيرًا
Verily, Allah is Ever Most Courteous, Well-Acquainted with all things.
means, `by His kindness towards you, you have reached this status, and by His knowledge of you and that you are qualified for that status, He has given this to you and singled you out for it.’
Ibn Jarir, may Allah have mercy on him, said:
“And remember how Allah blessed you by causing the Ayat of Allah and Al-Hikmah to be recited in your houses, so give thanks to Allah for that and praise Him.
إِنَّ اللَّهَ كَانَ لَطِيفًا خَبِيرًا
(Verily, Allah is Ever Most Courteous, Well-Acquainted with all things).
means, `He is kind towards you, for He has caused the Ayat of Allah and Al-Hikmah to be recited in your houses,’
and Al-Hikmah means the Sunnah.
And He is Well-Acquainted with you means, `He chose you as wives for His Messenger.’
Qatadah said:
وَاذْكُرْنَ مَا يُتْلَى فِي بُيُوتِكُنَّ مِنْ ايَاتِ اللَّهِ وَالْحِكْمَةِ
(And remember, that which is recited in your houses of the Ayat of Allah and Al-Hikmah),
“He is reminding them of His favor.”
This was narrated by Ibn Jarir.
Atiyah Al-`Awfi commented on the Ayah:
إِنَّ اللَّهَ كَانَ لَطِيفًا خَبِيرًا
(Verily, Allah is Ever Most Courteous, Well-Acquainted with all things).
“He knows when and where to reveal Al-Hikmah.”
This was recorded by Ibn Abi Hatim, then he said:”This was also narrated from Ar-Rabi` bin Anas from Qatadah.
For getting Quran app: play.google.com/store/apps/details?id=com.ihadis.quran