أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(বই#১০৯০)
[ * *বিশাল সৃষ্টিজগতে মানুষের অবস্থান, *কোনাে সুস্থ মানুষ আল্লাহর গােলামী না করে পারে না : -]
www.motaher21.net
সূরা:- ৪০: আল-মু’মিন
পারা:২৪
৫৭-৭৬ নং আয়াত:-
তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
# ওপরে সাড়ে তিনটি রুকূ’তে কুরাইশ নেতাদের ষড়যন্ত্রসমূহ পর্যালোচনা করার পর এখান থেকে সাধারণ মানুষকে সম্বোধন করা হচ্ছে। তাদের বুঝানো হচ্ছে যে, মুহাম্মাদ ﷺ তোমাদেরকে যেসব সত্য মেনে নেয়ার আহবান জানাচ্ছেন তা সম্পূর্ণরূপে যুক্তিসঙ্গত। তা মেনে নেয়ার মধ্যেই তোমাদের কল্যাণ এবং না মানা তোমাদের জন্য ধ্বংসাত্মক। এক্ষেত্রে সর্বপ্রথম আখেরাতের প্রতি বিশ্বাস স্থাপনের কথা বলে তার সপক্ষে যুক্তি-প্রমাণ পেশ করা হয়েছে। কারণ, কাফেরদের কাছে এ বিশ্বাস ছিল অদ্ভুত। একে তারা দুর্বোধ্য ও জ্ঞান বুদ্ধির পরিপন্থী বলে মনে করতো।
# এটি আখেরাত সম্ভব হওয়ার প্রমাণ। কাফেরদের ধারণা ছিল যে, মৃত্যুর পর মানুষের পুনরায় জীবিত হওয়া অসম্ভব। এর জবাবে বলা হচ্ছে, যারা এ ধরনের কথা বলে তারা প্রকৃতপক্ষে অজ্ঞ। যদি জ্ঞান বুদ্ধি কাজে লাগানো হয় তাহলে একথা বুঝা তাদের জন্য মোটেই কঠিন নয় যে, যে আল্লাহ এ বিশ্ব-জাহান বানিয়েছেন মানুষকে পুনরায় জীবিত করা তাঁর জন্য কোন কঠিন কাজ হতে পারে না।
# এটি আখেরাতের অনিবার্যতার প্রমাণ। ওপরের আয়াতাংশে বলা হয়েছিলো যে, আখেরাত হতে পারে তা হওয়া অসম্ভব নয়। আর এ আয়াতাংশে বলা হচ্ছে যে, আখেরাত হওয়া অনিবার্য, অবধারিত। জ্ঞান-বুদ্ধি ও ইনসাফের দাবী হলো তা হতেই হবে। তা হওয়া নয়, না হওয়াই জ্ঞান-বুদ্ধি ও ইনসাফের পরিপন্থী। কোন যুক্তিবাদী মানুষ কি কখনো একথা সঠিক বলে মেনে নিতে পারে যে, যারা পৃথিবীতে অন্ধদের মত জীবন যাপন করে এবং নিজেদের দুশ্চরিত্র ও দুষ্কর্ম দ্বারা আল্লাহর পৃথিবীকে বিপর্যন্ত করে তোলে তারা তাদের ভুল আচার-আচরণ ও কর্মকাণ্ডের কোন খারাপ পরিণাম আদৌ দেখবে না এবং অনুরূপ যারা দুনিয়াতে ভালমন্দ বিচার করে চলে এবং ঈমান গ্রহণ করে নেক কাজ করে, তারা নিজেদের এ উত্তম কর্মকাণ্ডের কোন ভালে ফলাফল থেকে বঞ্চিত থেকে যাবে? এ বিষয়টি যদি জ্ঞান-বুদ্ধি ও ইনসাফের পরিপন্থী হয় তাহলে আখেরাত অস্বীকৃতির আকীদাও অবশ্যই জ্ঞান-বুদ্ধি ও ইনসাফের পরিপন্থী হতে হবে। কারণ, আখেরাত না হওয়ার অর্থ হচ্ছে ভাল ও মন্দ উভয় শ্রেণীর মানুষ মরে মাটিতে মিশে যাওয়া এবং উভয়ের একই পরিণতি লাভ করা। এরূপ হলে শুধু জ্ঞান-বুদ্ধি ও ইনসাফকেই হত্যা করা হয় না, বরং নৈতিকতাও মূলোৎপাটিত হয়। কারণ, ভাল ও মন্দ উভয় শ্রেণীর মানুষের যদি একই পরিণাম হয় তাহলে মন্দ লোকেরা অত্যন্ত বুদ্ধিমান এ কারণে যে, তারা মৃত্যুর পূর্বে হৃদয় মনের সমস্ত কামনা বাসনা পূরণ করেছে। আর সৎলোকেরা অত্যন্ত নির্বোধ এ কারণে যে, তারা অযথা নিজেদের ওপরে নানা রকমের বাধ্যবাধকতা আরোপ করে রেখেছিলো।
# এটা হচ্ছে আখেরাত সংঘটিত হওয়ার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ঘোষণা। এ ধরনের ঘোষণা যুক্তি-তর্কের ভিত্তিতে দেয়া যায় না শুধু জ্ঞানের ভিত্তিতে দেয়া যায়। আর আল্লাহর বাণী ছাড়া অন্য কোন বাণীতে এ বিষয়টি এমন অকাট্যভাবে বর্ণিত হতে পারে না। অহী বাদ দিয়ে শুধু জ্ঞান-বুদ্ধির উদ্ভাবনী ক্ষমতা, যা বলা যেতে পারে, তা শুধু এতটুকু যে, আখেরাত সংঘটিত হতে পারে এবং হওয়া উচিত। এর চেয়ে অগ্রসর হয়ে আখেরাত অবশ্যই সংঘটিত হবে একথা কেবল সে মহান সত্তাই বলতে পারেন যার জানা আছে যে, আখেরাত হবে। আল্লাহ তা’আলা ছাড়া এমন সত্তা আর কেউ নেই। এখানে এসেই একথা পরিষ্কার হয়ে যায় যে, অনুমান ও যুক্তি-তর্কের পরিবর্তে নির্ভুল জ্ঞানের ওপর যদি দ্বীনের ভিত্তি স্থাপিত হয় তবে তা হতে পারে শুধু আল্লাহর অহীর মাধ্যমে।
# আখেরাতের আলোচনার পর এখন তাওহীদ সম্পর্কে বক্তব্য শুরু হচ্ছে। আর এটি ছিলো নবী ﷺ ও কাফেরদের মাঝে বিরোধের দ্বিতীয় বিষয়।
# দোয়া কবুল করা না করার সমস্ত ক্ষমতা ও ইখতিয়ার আমার কাছে। অথবা তোমরা অন্যদের কাছে দোয়া করো না, আমার কাছে দোয়া করো। এ আয়াতটির মূল ভাবধারা সঠিকভাবে বুঝতে হলে তিনটি বিষয় ভালভাবে বুঝে নিতে হবে।
প্রথমত, মানুষ দোয়া করে কেবল সে সত্তার কাছে যাকে সে سَمِيْعٌ (সর্বশ্রোতা), بَصِيْرٌ (সর্বদ্রষ্টা) এবং অতি প্রাকৃতিক ক্ষমতার (Super natural power) অধিকারী মনে করে। মূলত মানুষের আভ্যন্তরীণ অনুভূতি তাকে দোয়া করতে উদ্বুদ্ধ করে। বস্তুজগতের প্রাকৃতিক উপায়-উপকরণ যখন তার কোন কষ্ট নিবারণ কিংবা কোন প্রয়োজন পূরণ করার জন্য যথেষ্ট নয় বা যথেষ্ট বলে প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে না তখন কোন অতি প্রাকৃতিক ক্ষমতার অধিকারী সত্তার ধর্ণা দেয়া অপরিহার্য। তখনই মানুষ দোয়া করে এবং না দেখেই সে সত্তাকে ডাকে; প্রতি মুহূর্তে, প্রতিটি জায়গায় এবং সর্বাবস্থায় ডাকে। একাকী নির্জনে ডাকে, উচ্চস্বরেই শুধু নয়, চুপে চুপেও ডাকে এবং মনে মনেও তাঁর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করে। একটি বিশ্বাসের ভিত্তিতেই তা হয়। বিশ্বাসটি হচ্ছে, সেই সত্তা তাকে সর্বত্র সর্বাবস্থায় দেখছেন। তাঁর মনের কথাও শুনছেন। তিনি এমন অসীম ক্ষমতার অধিকারী যে, তাঁর কাছে প্রার্থনাকারী যেখানেই অবস্থান করুক না কেন তিনি তাকে সাহায্য করতে পারেন, তার বিপর্যন্ত ভাগ্যকে পুনরায় তৈরী করতে পারেন। দোয়ার এ তাৎপর্য অনুধাবন করার পর মানুষের জন্য একথা বুঝা আর কঠিন থাকে না যে, যে ব্যক্তি আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন সত্তাকে সাহায্যের জন্য ডাকে সে প্রকৃতই নিরেট নির্ভেজাল এবং স্পষ্ট শিরকে লিপ্ত হয়। কারণ, যেসব গুণাবলী কেবল আল্লাহর জন্যই নির্দিষ্ট তা সেসব সত্তার মধ্যেও আছে বলে সে বিশ্বাস করে। সে যদি তাদেরকে ঐ সব খোদায়ী গুণাবলীর ক্ষেত্রে আল্লাহর সাথে শরীক না করতো তাহলে তার কাছে দোয়া করার কল্পনা পর্যন্ত তার মনে কখনো আসতো না।
এ ব্যাপারে দ্বিতীয় যে কথাটি ভালভাবে বুঝে নিতে হবে তা হচ্ছে,কোন ব্যক্তি যদি কারো সম্পর্কে নিজের থেকেই একথা মনে করে বসে যে, সে অনেক ক্ষমতা ও ইখতিয়ারের মালিক তাহলে অনিবার্য রূপেই সে ক্ষমতা ও ইখতিয়ারের মালিক হয়ে যায় না। ক্ষমতা ও ইখতিয়ারের মালিক হওয়া একটি বাস্তব ব্যাপার যা কারো মনে করা বা না করার ওপর নির্ভর করে না। আপনি মালিক মনে করেন আর না করেন প্রকৃতই যে ক্ষমতা ইখতিয়ারের মালিক সে সর্বাবস্থায়েই মালিক থাকবে। আর যে প্রকৃত মালিক নয় আপনি তাকে মালিক মনে করে বসলেও মনে করাটা তাকে ক্ষমতা ও ইখতিয়ারের অতি সামান্য অংশও দিতে পারবে না। এটা বাস্তব ও সত্য যে, একমাত্র আল্লাহ তাআলার সত্তাই সর্বশক্তিমান, বিশব-জাহানের ব্যবস্থাপক ও শাসক এবং সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা। তিনিই সামগ্রিকভাবে সমস্ত ক্ষমতা ও ইখতিয়ারের মালিক। সমগ্র বিশ্ব-জাহানে দ্বিতীয় এমন কোন সত্তাই নেই, যে দোয়া শোনার কোন যোগ্যতা ও ইখতিয়ার রাখে বা তা কবুল করা বা না করার ক্ষেত্রে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করার ক্ষমতা রাখে। মানুষ যদি এ বাস্তবতার পরিপন্থী কাজ করে নিজের পক্ষ থেকে নবী-রসূল, আওলিয়া, ফেরেশতা, জিন, গ্রহ-উপগ্রহ ও মনগড়া দেবতাদেরকে ক্ষমতা ও ইখতিয়ারে অংশীদার মনে করে বসে তাতে বাস্তব অবস্থার সামান্যতম পরিবর্তনও হবে না। মালিক মালিকই থাকবেন এবং ক্ষমতা ও ইখতিয়ারহীন দাস দাসই থেকে যাবে।
তৃতীয় কথাটি হচ্ছে, আল্লাহ তা’আলা ছাড়া অন্যদের কাছে প্রার্থনা করা হুবহু এমন যেন কোন ব্যক্তি দরখাস্ত লিখে নিয়ে রাজ প্রাসাদে গেল কিন্তু ক্ষমতার প্রকৃত মালিককে বাদ দিয়ে সেখানে অন্য যেসব প্রার্থী নিজেদের অভাব পূরণের আশায় বসে আছে তাদের কারো সামনে দরখাস্ত পেশ করে কর জোড়ে কাকুতি-মিনতি করে বলতে থাকলো। হুজুরই সবকিছু, এখানে তো আপনার হুকুমই চলে, আমার প্রয়োজন যদি আপনি পূরণ করেন তবেই পূরণ হতে পারে। প্রথমত, এ আচরণ নির্বুদ্ধিতা ও অজ্ঞাতার পরিচায়ক কিন্তু তখন যদি প্রকৃত ক্ষমতার ও ইখতিয়ারের মালিক শাসক সামনে বিদ্যমান থাকেন আর তার উপস্থিতিতে তাকে বাদ দিয়ে অন্য কারোর সামনে দরখাস্ত পেশ করে কাকুতি-মিনতি করে প্রার্থনা করা হয় তাহলে এমন অবস্থায় তা চরম অশোভন ও ধৃষ্টতাপূর্ণ কাজ বলে পরিগণিত হয়। তাছাড়া এ অজ্ঞাতা চরমে পৌঁছে তখন, যখন যে ব্যক্তির সামনে দরখাস্ত পেশ করা হচ্ছে সে নিজে তাকে বারবার একথা বুঝায় যে, আমিও তোমার মত একজন প্রার্থী। আমার কাছে কিছুই নেই। আসল শাসক তো সামনেই আছেন। তুমি তার কাছে দরখাস্ত পেশ কর। কিন্তু তার বুঝানো ও নিষেধ সত্ত্বেও এ নির্বোধ যদি বলতেই থাকে যে, আমার মালিক মনিব আপনি। আপনি যদি করে দেন তবেই আমার কাজ হবে। বস্তুত এরূপ অবস্থায়ই এ অজ্ঞাতার চরম বহিঃপ্রকাশ ঘটে।
এ তিনটি বিষয় মনে রেখে আল্লাহ তা’আলার বাণী “আমাকে ডাকো। তোমাদের ডাকে সাড়া দানকারী আমি। তা গ্রহণ করা আমার কাজ।” আল্লাহ তা’আলার এ বাণীটি বুঝার চেষ্টা করুন।
# এ আয়াতের দু’টি বিষয় বিশেষভাবে লক্ষণীয়। একটি হচ্ছে, এখানে “দোয়া” ও “ইবাদাত” শব্দ দু’টিকে সমার্থক শব্দ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। কেননা, প্রথম বাক্যাংশে যে জিনিসকে দোয়া শব্দ দ্বারা প্রকাশ করা হয়েছে দ্বিতীয় বাক্যাংশে সে জিনিসকেই ইবাদাত শব্দ দ্বারা প্রকাশ হয়েছে। এ দ্বারা একথা পরিষ্কার হয়ে গেল যে, দোয়াও ঠিক ইবাদাত তথা ইবাদাতের প্রাণ। দ্বিতীয়টি হচ্ছে, আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে না এমন লোকদের জন্য “অহংকার ও গর্বভরে আমার ইবাদাত থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়” কথাটি প্রয়োগ করা হয়েছে। এ থেকে জানা যায় যে, আল্লাহর কাছে দোয়া করা বন্দেগী বা দাসত্বের দাবী। এর থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়ার অর্থ হচ্ছে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি গর্ব ও অহংকারে ডুবে আছে। এ কারণে নিজের স্রষ্টা ও মনিবের কাছে দাসত্বের স্বীকৃতি দিতে দ্বিধা করে। নবী ﷺ তাঁর বাণীতে আয়াতের এ দু’টি বিষয় পরিষ্কার বর্ণনা করেছেন। হযরত নু’মান ইবনে বাশীর (রা.) বর্ণনা করেছেন যে, নবী (সা.) বলেছেনঃ …………. إِنَّ الدُّعَاءَ هُوَ الْعِبَادَةُ ثُمَّ قَرَأَ ادْعُونِى أَسْتَجِبْ لَكُمْ……………………………… অর্থাৎ দোয়াই ‘ইবাদাত’। তারপর তিনি এ আয়াত পাঠ করলেন। (তোমরা আমাকে ডাকো আমি সাড়া দেবো। আহমাদ, তিরমিযী, আবুদ দাউদ, নাসায়ী, ইবনে মাজাহ, ইবনে আবী হাতেম, ইবনে জারীর)। হযরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত। নবী (সা.) বলেছেনঃ الدُّعَاءُ مُخُّ الْعِبَادَةِ “দোয়া হচ্ছে ইবাদাতের সারবস্তু” (তিরমিযী)। হযরত আবু হুরাইরা বলেন, নবী (সা.) বলেছেনঃ مَنْ لَمْ يَسْأَلِ اللَّهَ يَغْضَبْ عَلَيْهِ “যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে চায় না আল্লাহ তার প্রতি ক্রুদ্ধ হন” (তিরমিযী)।
এ পর্যায়ে একটি সমস্যারও সমাধান হয়ে যায় যা বহু সংখ্যক মানুষের মনে বেশীর ভাগ সময় দ্বিধা দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করতে থাকে। দোয়া করার ক্ষেত্রে মানুষের চিন্তাধারা হলো, তাকদীরের ভাল-মন্দ যখন আল্লাহর ইখতিয়ারে তখন তিনি তাঁর জ্ঞান ও প্রজ্ঞার ভিত্তিতে যে ফায়সালা করেছেন সেটাই অনিবার্যরূপে ঘটবে। সুতরাং আমার দোয়া করার সার্থকতা কি? এটা একটা বড় রকমের ভ্রান্তি। এ ভ্রান্তি মানুষের মন থেকে দোয়ার সমস্ত গুরুত্ব মুছে ফেলে। এ ভ্রান্ত ধারণার মধ্যে পড়ে থেকে মানুষ যদি দোয়া করেও সেসব দোয়ায় কোন প্রাণ থাকে না। কুরআন মজীদের এ আয়াতটি দু’টি পন্থায় এ ভ্রান্ত ধারণা দূর করে। প্রথমত, আল্লাহ তা’আলা দ্ব্যর্থহীনভাবে বলছেন, “আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের দোয়া কবুল করবো।” এ থেকে জানা যায়, তাকদীর এমন কোন জিনিস নয়। আমাদের মত (নাউযুবিল্লাহ) আল্লাহ তা’আলার হাত পাও বেঁধে দিয়েছে এবং তিনি দোয়া কবুল করার ক্ষমতা ও ইখতিয়ার হারিয়ে ফেলেছেন। নিঃসন্দেহে বান্দা আল্লাহর সিদ্বান্তসমূহ এড়ানো বা পরিবর্তন করার ক্ষমতা রাখে না। কিন্তু কোন বান্দার দোয়া ও আবেদন নিবেদন শুনে আল্লাহ নিজে তাঁর নিজের সিদ্বান্ত পরিবর্তনের ক্ষমতা অবশ্যই রাখেন। এ আয়াতে দ্বিতীয় যে কথাটি বলা হয়েছে তা হলো দোয়া কবুল হোক বা না হোক সর্বাবস্থায় তার একটি ছোট বা বড় ফায়দা থাকে কোন অবস্থায়ই তা ফায়দাহীন নয়। সে ফায়দা হলো, বান্দা তার প্রভুর সামনে নিজের অভাব ও প্রয়োজন পেশ এবং দোয়া করে তাঁর প্রভুত্ব ও শ্রেষ্টত্ব মেনে নেয় এবং নিজের দাসত্ব ও অক্ষমতা স্বীকার করে। নিজের দাসত্বের এ স্বীকৃতিই যথাস্থানে একটি ইবাদাত তথা ইবাদাতের প্রাণসত্তা। বান্দা যে উদ্দেশ্যে দোয়া করলো সেই বিশেষ জিনিসটি তাকে দেয়া হোক বা না হোক কোন অবস্থায়ই সে তার এ দোয়ার প্রতিদান থেকে বঞ্চিত হবে না।
আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সল্লামের হাদীস থেকে এ দু’ টি বিষয়ের ব্যাখ্যা পেয়ে যাই। নিম্ন বর্ণিত হাদীসগুলো প্রথমোক্ত বিষয়ের ওপর আলোকপাত করে। হযরত সালমান ফারসী থেকে বণিত নবী (সা.) বলেছেনঃ لاَ يَرُدُّ الْقَضَاءَ إِلاَّ الدُّعَاءُ(ترمذى) “দোয়া ছাড়া আর কোন কিছুই তাকদীরকে পরিবর্তন করতে পারে না” অর্থাৎ কোন কিছুর মধ্যেই আল্লাহর ফায়সালা পরিবর্তনের ক্ষমতা নেই। কিন্তু আল্লাহ নিজে তাঁর ফায়সালা পরিবর্তন করতে পারেন। আর এটা হয় কেবল তখনি যখন বান্দা তার কাছে দোয়া করে। হযরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ বলেন, নবী ﷺ বলেছেনঃ
مَا مِنْ أَحَدٍ يَدْعُو بِدُعَاءٍ إِلاَّ آتَاهُ اللَّهُ مَا سَأَلَ أَوْ كَفَّ عَنْهُ مِنَ السُّوءِ مِثْلَهُ مَا لَمْ يَدْعُ بِإِثْمٍ أَوْ قَطِيعَةِ رَحِمٍ(ترمذى)
“বান্দা যখনই আল্লাহর কাছে দোয়া করে আল্লাহ তখন হয় তার প্রার্থিত জিনিস তাকে দান করেন কিংবা তার ওপরে সে পর্যায়ের বিপদ আসা বন্ধ করে দেন—-যদি সে গোনাহর কাজে বা আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করার দোয়া না করে।”
আবু সা’ঈদ খুদরী (রা.) কর্তৃক রসূলুল্লাহ ﷺ থেকে বর্ণিত আরেকটি প্রায় অনুরূপ বিষয় বর্ণিত হয়েছে। উক্ত হাদীসে নবী (সা.) বলেছেনঃ
ما مِنْ مُسْلِمٍ يَدْعُو بِدَعْوَةٍ لَيْسَ فِيهَا إِثْمٌ وَلاَ قَطِيعَةُ رَحِمٍ إِلاَّ أَعْطَاهُ اللَّهُ إِحْدَى ثَلاَثٍ إِمَّا أَنْ تُعَجَّلَ لَهُ دَعْوَتُهُ وَإِمَّا أَنْ يَدَّخِرَهَا لَهُ فِى الآخِرَةِ وَإِمَّا أَنْ يَصْرِفَ عَنْهُ مِنَ السُّوءِ مِثْلَهَا (مسند احمد)
“একজন মুসলমান যখনই কোন দোয়া করে তা যদি কোন গোনাহ বা আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করার দোয়া না হয় তাহলে আল্লাহ তা’আলা তা তিনটি অবস্থার যে কোন এক অবস্থায় কবুল করে থাকেন। হয় তার দোয়া এ দুনিয়াতেই কবুল করা হয়, নয়তো আখেরাতে প্রতিদান দেয়ার জন্য সংরক্ষিত রাখা হয় অথবা তার ওপরে ঐ পর্যায়ের কোন বিপদ আসা বন্ধ করা হয়।”
হযরত আবু হুরাইরা (রা.) বর্ণনা করেন, নবী (সা.) বলেছেনঃ
إِذَا دَعَا أَحَدُكُمْ فلاَ يَقُلْ اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِى إِنْ شِئْتَ ، ارْحَمْنِى إِنْ شِئْتَ ، ارْزُقْنِى إِنْ شِئْتَ ، وَلْيَعْزِمْ مَسْأَلَتَهُ- (بخارى)
“তোমাদের কোন ব্যক্তি দোয়া করলে সে যেন এভাবে না বলে, হে আল্লাহ! তুমি চাইলে আমাকে মাফ করে দাও, তুমি চাইলে আমার প্রতি রহম করো এবং তুমি চাইলে আমাকে রিযিক দাও। বরং তাকে নির্দিষ্ট করে দৃঢ়তার সাথে বলতে হবে; “হে আল্লাহ, আমার অমুক প্রয়োজন পূরণ করো।”
হযরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকেই আরেকটি হাদীস বর্ণিত হয়েছে। হাদীসটির ভাষা হচ্ছে নবী (সা.) বলেছেনঃ
ادْعُوا اللَّهَ وَأَنْتُمْ مُوقِنُونَ بِالإِجَابَةِ(ترمذى)
“আল্লাহ দোয়া কবুল করবেন এ দৃঢ় বিশ্বাস নিয়ে দোয়া করো।”
আরেকটি হাদীসে হযরত আবু হুরাইরা (রা.) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এ বাণী উদ্ধৃত করেছেন যে,
يُسْتَجَابُ لِلْعَبْدِ مَا لَمْ يَدْعُ بِإِثْمٍ أَوْ قَطِيعَةِ رَحِمٍ مَا لَمْ يَسْتَعْجِلْ قِيلَ يَا رَسُولَ اللَّهِ مَا الاِسْتِعْجَالُ قَالَ يَقُولُ قَدْ دَعَوْتُ وَقَدْ دَعَوْتُ فَلَمْ أَرَ يَسْتَجِيبُ لِى فَيَسْتَحْسِرُ عِنْدَ ذَلِكَ وَيَدَعُ الدُّعَاءَ (مسلم)
“যদি গোনাহ বা আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করার দোয়া না হয় এবং তাড়াহুড়া না করা হয় তাহলে বান্দার দোয়া কবুল করা হয়।” জিজ্ঞেস করা হলোঃ হে আল্লাহর রসূল, তাড়াহুড়া কি? তিনি বললেনঃ তাড়াহুড়ো হচ্ছে ব্যক্তির একথা বলা যে, “আমি অনেক দোয়া করেছি। কিন্তু দেখছি আমার কোন দোয়াই কবুল হচ্ছেনা। এভাবে সে অবসন্ন গ্রস্ত হয়ে পড়ে এবং দোয়া করা ছেড়ে দেয়।”
দ্বিতীয় বিষয়টিও নিম্নবর্ণিত হাদীসসমূহ থেকে স্পষ্ট হয়ে যায়। হযরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত। নবী (সা.) বলেছেনঃ لَيْسَ شَىْءٌ أَكْرَمَ عَلَى اللَّهِ مِنَ الدُّعَاءِ(ترمذى , ابن ماجة)
“আল্লাহর কাছে দোয়ার চাইতে অধিক সস্মানার্হ জিনিস আর কিছুই নেই।”
হযরত ইবনে মাসউদ থেকে বর্ণিত। নবী ﷺ বলেছেনঃ
سَلُوا اللَّهَ مِنْ فَضْلِهِ فَإِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ أَنْ يُسْأَلَ(ترمذى) “আল্লাহর কাছে তাঁর করুণা ও রহমত প্রার্থনা করো। কারণ, আল্লাহ তাঁর কাছে প্রার্থনা করা পছন্দ করেন।”
হযরত ইবনে উমর (রা) ও মুআয ইবনে জাবাল বর্ণনা করেছেন যে, নবী (সা) বলেছেনঃ
إِنَّ الدُّعَاءَ يَنْفَعُ مِمَّا نَزَلَ وَمِمَّا لَمْ يَنْزِلْ فَعَلَيْكُمْ عِبَادَ اللَّهِ بِالدُّعَاءِ(ترمذى , مسند احمد)
“যে বিপদ আপতিত হয়েছে তার ব্যাপারেও দোয়া উপকারী এবং যে বিপদ এখনো আপতিত হয়নি তার ব্যাপারেও দোয়া উপকারী। অতএব হে আল্লাহর বান্দারা, তোমাদের দোয়া করা কর্তব্য।” (তিরমিযী, মুসনাদে আহমাদ)
يَسْأَلْ أَحَدُكُمْ رَبَّهُ حَاجَتَهُ كُلَّهَ حَتَّى يَسْأَلَ شِسْعَ نَعْلِهِ إِذَا انْقَطَعَ(ترمذى)
“তোমাদের প্রত্যেকের উচিত তার রবের কাছে নিজের প্রয়োজন প্রার্থনা করা। এমনকি জুতার ফিতা ছিঁড়ে গেলে তাও আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করবে।”
অর্থাৎ মানুষ যে ব্যাপারগুলো বাহ্যত নিজের ইখতিয়ারভুক্ত বলে মনে করে সে ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণের আগে আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করবে। কারণ, কোন ব্যাপারে আমাদের কোন চেষ্টা-তদবীরই আল্লাহর তাওফিক ও সাহায্য ছাড়া সাফল্য লাভ করতে পারে না। চেষ্টা-তদবীর শুরু করার আগে দোয়া করার অর্থ হচ্ছে, বান্দা সর্বাবস্থায় তার নিজের অক্ষমতা ও আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব স্বীকার করছে।
# এ আয়াতে দু’টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। প্রথমত, এতে রাত ও দিনকে তাওহীদের প্রমাণ হিসেবে পেশ করা হয়েছে। কারণ রাত ও দিনের নিয়মতান্ত্রিক ভাবে আগমনের অর্থ পৃথিবী ও সূর্যের ওপর একই আল্লাহর শাসন চলছে। আর তার ঘুরে ফিরে আসা এবং পৃথিবীর আর সব সৃষ্টির জন্য উপকারী হওয়া এ বিষয়ের সুস্পষ্ট প্রমাণ যে, এক মাত্র আল্লাহই এসব জিনিসের স্রষ্টাও। তিনি তাঁর চূড়ান্ত পর্যায়ের জ্ঞান ও কৌশল দ্বারা এমনভাবে এ ব্যবস্থা চালু করেছেন যাতে তাঁর সৃষ্টির জন্য কল্যাণকর হয়। দ্বিতীয়ত, এতে আল্লাহকে অস্বীকারকারী এবং আল্লাহর সাথে শরীক স্থাপনকারী মানুষদেরকেও এ অনুভূতি দেয়া হয়েছে যে, রাত ও দিনের আকারে আল্লাহ তাদেরকে কত বড় নিয়ামত দান করেছেন। কিন্তু তারা কত বড় অকৃতজ্ঞ যে, তার এ নিয়ামত নিজেদের কল্যাণে কাজে লাগিয়েও তারা দিন-রাত চব্বিশ ঘণ্টা তার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা ও বিশ্বাসহীনতার কাজ করে যাচ্ছে। (অধিক ব্যাখ্যার জন্য দেখুন, সূরা ইউনুস, টীকা ৬৫ ; আল ফুরকান, টীকা ৭৭ ; আন নামল, টীকা ১০৪ ; আল কাসাস, টীকা ৯১ ; আর রূম, টীকা ৩৬ ; লোকমান, আয়াত ২৯ ; টীকা ৫০ ; ইয়াসীন, আয়াত ৩৭ , টীকা ৩২ )
# রাত ও দিনের ঘুরে ফিরে আসা প্রমাণ করে যে, তিনিই তোমাদের ওসব জিনিসের সৃষ্টিকর্তা। তাছাড়া এ আবর্তনের মধ্যে তোমাদের জীবনের জন্য যে বিরাট কল্যাণ নিহিত আছে তা থেকে প্রমাণিত হয় যে, তিনি তোমাদের অত্যন্ত দয়াবান পালনকর্তা। সুতরাং একথা আপনা থেকেই নিঃসন্দেহে প্রমাণ হয় যে, তোমাদের প্রকৃত উপাস্যও তিনিই। তোমাদের স্রষ্টা ও পালনকর্তা হবেন আল্লাহ আর উপাস্য হবে অন্য কেউ এটা জ্ঞান-বুদ্ধি ও ইনসাফের সম্পূর্ণ পরিপন্থী।
# যে তোমাদের স্রষ্টাও নয় পালনকর্তাও নয় সে তোমাদের ইবাদাত তথা দাসত্ব পাওয়ার অধিকারী হবে একথা বলে তোমাদেরকে কে বিভ্রান্ত করছে?
# প্রত্যেক যুগেই সাধারণ মানুষ শুধু এ কারণে এসব বিভ্রান্তকারীদের ধোঁকাবাজির শিকার হয়েছে যে, সত্য বুঝানোর জন্য আল্লাহ তাঁর রসূলের মাধ্যমে যে আয়াত নাযিল করেছেন মানুষ তা মানেনি। ফল দাঁড়িয়েছে এই যে, তারা সেসব স্বার্থপর ধোঁকাবাজদের জালে আটকে পড়েছে যারা নিজেদের স্বার্থোদ্ধারের জন্য নকল খোদার আস্তানা বানিয়ে বসেছিল।
# তোমাদেরকে খোলা আকাশের নিচে এমনভাবে ছেড়ে দেয়া হয়নি যে, মহাশূন্যের বিপদাপদ বৃষ্টির মত বর্ষিত হয়ে তোমাদেরকে তছনছ করে দেবে। বরং পৃথিবীর ওপরে একটি সুদৃঢ় ব্যবস্থাপনা কায়েম করে দিয়েছেন (যা দেখতে গম্বুজের মত মনে হয়)। এ ব্যবস্থাপনা অতিক্রম করে কোন ধংসাত্মক বস্তুই তোমাদের কাছে পৌঁছতে পারে না। এমনকি মহাশূন্যের প্রাণ সংহারী রশ্মিসমূহও পৌঁছতে পারে না। এ কারণেই তোমরা নিরাপদে আরামে এ পৃথিবীতে বেঁচে আছ।
# তোমাদেরকে সৃষ্টি করার পূর্বেই এমন সুরক্ষিত ও নিরাপদ অবস্থানস্থল প্রস্তুত করেছেন। তারপর তোমাদেরকে এমনভাবে সৃষ্টি করেছেন যে, একটি সর্বোত্তম দেহ কাঠামো, উপযুক্ত অংগ-প্রত্যংগ এবং উন্নত দৈহিক ও চিন্তা শক্তি দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। এ সরল সোজা দেহ কাঠামো, হাত, পা, চোখ, নাক এবং কান, বাকশক্তি সম্পন্ন এ জিহবা এবং সর্বোত্তম যোগ্যতার ভাণ্ডার এ মস্তিষ্ক তোমরা নিজে তৈরী করে আনোনি, তোমাদের বাবা-মাও তৈরী করেনি, কোন নবী, অলী কিংবা দেবতার মধ্যেও তার তৈরী করার ক্ষমতা ছিল না। এসব যোগ্যতা ও ক্ষমতার সৃষ্টিকারী ছিলেন সে মহাজ্ঞানী, দয়ালু ও সর্বশক্তিমান সত্তা যিনি মানুষকে সৃষ্টি করার সময় পৃথিবীতে কাজ করার জন্য তাকে এ নজীরবিহীন দেহ দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর জন্মলাভ করার সাথে সাথে তাঁর দয়ায় তোমরা প্রচুর পবিত্র খাদ্য পেয়েছো, পানাহারের এমন সব পবিত্র উপকরণ লাভ করেছো যা বিষাক্ত নয়, সুস্বাস্থ্য দায়ক, তিক্ত, নোংরা ও বিস্বাদ নয় বরং সুস্বাদু, পচা-গলা ও দুর্গন্ধ নয় বরং সুবাসিত খাদ্য প্রাণহীন নয়, বরং তোমাদের দেহের লালন ও প্রবৃদ্ধির জন্য সর্বাপেক্ষা উপযোগী খাদ্য প্রাণ ও প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদানে সমৃদ্ধ। পানি, খাদ্য, শস্য, তরকারী ফলমূল, দুধ, মধু, গোশত লবণ মরিচ ও মসলা তোমাদের পুষ্টি সাধনের জন্য এসব অত্যন্ত উপযোগী এবং জীবনদায়িনী শক্তিই শুধু নয়, বরং জীবনের পরিপূর্ণ আস্বাদ লাভের জন্যও অত্যন্ত উপযোগী। এ পৃথিবীতে এসব জিনিস কে এত প্রচুর পরিমাণে সরবরাহ করেছে, ভূমি থেকে খাদ্যের এ অগণিত ভাণ্ডার উৎপাদনের এ ব্যবস্থা কে করেছে যে, তার যোগান কখনো বন্ধ হয় না? চিন্তা করে দেখো, রিযিকের এ ব্যবস্থা না করেই যদি তোমাদেরকে সৃষ্টি করা হতো তাহলে তোমাদের জীবনের পরিস্থিতি কি দাঁড়াতো? সুতরাং এটা কি এ বিষয়ের সুস্পষ্ট প্রমাণ নয় যে, তোমাদের স্রষ্টা শুধু স্রষ্টাই নন, বরং মহাজ্ঞানী স্রষ্টা বরং অত্যন্ত দয়ালু প্রভু? (অধিক ব্যাখ্যার জন্য দেখুন সূরা হূদ, টীকা ৬ ও ৭ , আন নামল, টীকা ৭৩ থেকে ৮৩ )।
# তাঁর জীবনই বাস্তব ও প্রকৃত জীবন। একমাত্র তিনিই আপন ক্ষমতায় জীবিত। তাঁর জীবন ছাড়া আর কারো জীবনই অনাদি ও চিরস্থায়ী নয়। আর সবার জীবনই আল্লাহ প্রদত্ত, মরণশীল ও ধ্বংসশীল।
# দ্বিতীয় আর কেউ নেই যার প্রশংসা ও স্তুতিবাদ করা যেতে পারে এবং যার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা যেতে পারে।
# এখানে পুনরায় ‘ইবাদাত’ ও দোয়াকে সমার্থক হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে।
# কেউ জন্মলাভের পূর্বে, কেউ যৌবন প্রাপ্তির পূর্বে এবং কেউ বৃদ্ধাবস্থায় পৌঁছার পূর্বে মৃত্যু বরণ করে থাকে।
# নির্ধারিত সময়ের অর্থ মৃত্যুর সময় অথবা সে সময় যখন পুনরায় জীবিত হওয়ার পর সমস্ত মানুষকে আল্লাহর দরবারে হাজির হতে হবে। প্রথম অর্থ গ্রহণ করার ক্ষেত্রে আয়াতের অর্থ হবে আল্লাহ তা’আলা প্রত্যেক মানুষকে জীবনের বিভিন্ন পর্যায় অতিক্রম করিয়ে সে বিশেষ সময় পর্যন্ত নিয়ে যান যা তিনি প্রত্যেক মানুষের জন্য নির্ধারিত করে রেখেছেন। বিশেষ সে মুহূর্তটি আসার পূর্বে যদি গোটা দুনিয়ার মানুষ মিলিত হয়েও তাকে হত্যা করতে চেষ্টা করে তবুও হত্যা করতে পারবে না। আবার সে মুহূর্তটি এসে যাওয়ার পর দুনিয়ার সমস্ত শক্তি মিলিত হয়েও যদি কাউকে জীবিত রাখার জন্য চেষ্টা করে তবুও সফল হতে পারবে না। দ্বিতীয় অর্থ গ্রহণের ক্ষেত্রে আয়াতের অর্থ হবে এ পৃথিবীতে তোমাদেরকে এজন্য সৃষ্টি করা হয়নি যে, তোমরা মরে মাটিতে মিশে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। বরং তিনি তোমাদেরকে জীবনের এসব পর্যায়ের মধ্য দিয়ে এজন্য অতিক্রম করান যাতে তাঁর নির্ধারিত সময়ে তোমরা তাঁর সামনে হাজির হও।
# জীবনের এসব পর্যায়ের মধ্য দিয়ে তোমাদেরকে অতিক্রম করানোর কারণ এ নয় যে, তোমরা পশুর মত জীবন-যাপন করবে এবং পশুর মত মরবে। বরং এসব পর্যায় অতিক্রম করানো হয় এজন্য যে, আল্লাহ তোমাদেরকে যে জ্ঞান-বুদ্ধি দিয়েছেন তা কাজে লাগাবে এবং সে নিয়ম-নীতি ও ব্যবস্থাপনা উপলব্ধি করবে যার অধীনে তোমাদের আপন সত্তার ওপর দিয়ে এসব আবার আবর্তন চলে। মাটির প্রাণহীন উপাদানসমূহের মধ্যে জীবনের মত বিস্ময়কর ও অদ্ভুত জিনিসের উৎপত্তি হওয়া, কেবল অনুবীক্ষণ যন্ত্রে দৃষ্টি-গোচর এমন অতি ক্ষুদ্র শুক্রকীট থেকে মানুষের মত বিস্ময়কর সৃষ্টির অস্তিত্ব লাভ করা তারপর মাতৃগর্ভে স্থিতিকাল থেকে প্রসবকাল পর্যন্ত সময়ের মধ্যেই এমনভাবে বেড়ে ওঠা যে, তার লিংগ, তার আকার-আকৃতি, তার দৈহিক কাঠামো, তার মানসিক বৈশিষ্টাবলী এবং তার ক্ষমতা ও যোগ্যতা সবকিছুই সেখানে নির্ধারিত হয়ে যায় এবং তার সৃষ্টির ব্যাপারে দুনিয়ার কোন শক্তিরই প্রভাব খাটাতে না পারা। তাছাড়া যার গর্ভপাত হয় তার গর্ভপাতের শিকার হওয়া, যে শিশুকালে মরে যায় তার শিশুকালে মরে যাওয়া, যে যৌবনকালে বা বৃদ্ধাবস্থায় কোন নির্দিষ্ট বয়স সীমায় পৌঁছে তার এমন সব ভয়ংকর পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে অতিক্রম করেও সে বয়সে উপনীত হওয়া যেসব পরিস্থিতিতে নিশ্চিত মৃত্যু হওয়া উচিত এবং যাকে বয়সের কোন এক পর্যায়ে মৃত্যুবরণ করতে হবে তার পৃথিবীর সর্বোত্তম কোন হাসপাতালে সুদক্ষ ডাক্তারদের চিকিৎসাধীন থেকেও মৃত্যুবরণ করা। এসব বিষয় কি এ সত্যটিই তুলে ধরছে না যে, আমাদের জীবনও কোন এক সর্বশক্তিমান সত্তার হাতে? বাস্তব অবস্থা যখন এই যে, এক সর্বশক্তিমান সত্তা আমাদের জীবন ও মৃত্যুর ব্যাপারে সর্বময় কর্তৃত্বের অধিকারী তখন কোন নবী, অলী, ফেরেশতা কিংবা তারকা বা গ্রহ-উপগ্রহ আমাদের ইবাদাত পাওয়ার যোগ্য হয় কিভাবে? তাছাড়া কোন মানব শক্তি এ পদমর্যাদা কিভাবে লাভ করলো যে, আমরা তার আইন-কানুন, তার আদেশ-নিষেধ এবং তার নিজের নির্ধারিত হালাল-হারাম বিনা বাক্যে মেনে নেব? (অধিক ব্যাখ্যার জন্য দেখুন, সূরা হজ্জ, টীকা ৯)
# ওপরের বক্তব্য শোনার পরও কি তুমি একথা উপলীব্ধ করতে পারনি যে, এসব লোকের ভ্রান্তি ও ভ্রান্ত আচরণের মূল উৎস কোথায় এবং তারা কোথায় ঠোকর খেয়ে গোমরাহীর এ গভীর গর্তে নিক্ষিপ্ত হয়েছে? (প্রকাশ থাকে যে, এখানে তুমি শব্দটি দ্বারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সম্বোধন করা হয়নি, বরং এ আয়াত ক’টি পাঠকারী ও শ্রবণকারী প্রত্যেক ব্যক্তিকে সম্বোধন করা হয়েছে)।
# এটা হচ্ছে তাদের হোঁচট খাওয়ার মূল কারণ। তাদের কুরআন এবং আল্লাহর রসূলদের আনীত শিক্ষা না মানা এবং আল্লাহর নিদর্শনসমূহ নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা-ভাবনা করার পরিবর্তে ঝগড়াটেপনা দিয়ে তার মোকাবেলা করা এসব মৌলিক কারণই তাদেরকে পথভ্রষ্ট করে দিয়েছে এবং তাদের সোজা পথে আসার সমস্ত সম্ভাবনা নিঃশেষ করে দিয়েছে।
# তারা যখন তীব্র পিপাসায় বাধ্য হয়ে পানি চাইবে তখন দোযখের কর্মচারীরা তাদেরকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করে টেনে হেচড়ে এমন ঝর্ণাধারার দিকে নিয়ে যাবে, যা থেকে টগবগে গরম পানি বেরিয়ে আসছে। অতঃপর তাদের সে পানি পান করা শেষ হলে আবার তারা তাদেরকে টেনে হেঁচড়ে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে এবং দোযখের আগুনে নিক্ষেপ করবে।
# তারা যদি সত্যিই রব হয়ে থাকে কিংবা প্রভুত্বে শরীক থেকে থাকে এবং বিপদের মুহূর্তে তারা তোমাদের কাজে আসবে এ আশায় তোমরা তাদের দাসত্ব করে থাকো তাহলে এখন তারা তোমাদেরকে উদ্ধার করছে না কেন?
# একথার অর্থ এই নয় যে, আমরা দুনিয়াতে শিরক করতাম না। বরং এর অর্থ হচ্ছে, এখন আমাদের কাছে একথা পরিষ্কার হয়ে গেছে যে, দুনিয়ায় আমরা যাদের ডাকতাম তারা কিছুই ছিল না, নগণ্য ছিল, মূল্যহীন ছিল।
# যা ন্যায় ও সত্য ছিল না তোমরা শুধু তার আনুগত্য ও অনুসরণ করেই ক্ষান্ত হওনি বরং সে অসত্য নিয়ে তোমরা এতটা মগ্ন ছিলে যে, তোমাদের সামনে ন্যায় ও সত্য পেশ করা হলে সেদিকে ভ্রুক্ষেপও করনি এবং নিজেদের বাতিল পূজার জন্য উল্টো গর্ব করেছো।
তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ বলেছেন:-
৫৭-৫৯ আয়াতের তাফসীর :
( لَخَلْقُ السَّمٰوٰتِ وَالْأَرْضِ…..)
অত্র আয়াতে মূলত আল্লাহ তা‘আলা যে মৃত্যুর পর মানবজাতিকে পুনরায় জীবিত করতে সক্ষম সে কথাই বলা হয়েছে। তাই আল্লাহ তা‘আলা বলেন : আকাশ ও জমিন সৃষ্টির তুলনায় তাদেরকে পুনরায় জীবিত করা কোন কঠিন কাজ নয়। এটা তাঁর নিকট অধিক সহজ একটি কাজ। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
(أَوَلَمْ يَرَوْا أَنَّ اللّٰهَ الَّذِيْ خَلَقَ السَّمٰوٰتِ وَالْأَرْضَ وَلَمْ يَعْيَ بِخَلْقِهِنَّ بِقَادِرٍ عَلٰٓي أَنْ يُّحْيِيَ الْمَوْتٰي ط بَلٰٓي إِنَّه۫ عَلٰي كُلِّ شَيْءٍ قَدِيْرٌ)
“তারা কি এটুকুও বোঝে না, যে আল্লাহ জমিন ও আসমান সৃষ্টি করলেন এবং এগুলো সৃষ্টি করতে তিনি ক্লান্ত হননি, সেই আল্লাহ মৃতকে অবশ্যই জীবিত করার ক্ষমতা রাখেন। কেন নয়? নিশ্চয়ই তিনি সব কিছুর ওপর শক্তিশালী।” (সূরা আহক্বা-ফ ৪৬ : ৩৩) এ সম্পর্কে পূর্বে সূরা নাহ্লসহ অন্যান্য স্থানেও আলোচনা করা হয়েছে।
এরপর আল্লাহ তা‘আলা বলেন : অন্ধ ও চক্ষুষ্মান ব্যক্তি যেমন সমান নয় তেমনি ঈমানদার সদামলকারী ও খারাপ লোক এক-সমান নয়। আর তা পরিষ্কার হয়ে যাবে কিয়ামতের দিন যা অবশ্যই সংঘটিত হবে। কিন্তু এভাবে স্পষ্ট বর্ণনার পরেও অধিকাংশ লোক তা বিশ্বাস করে না বা তা থেকে উপদেশ গ্রহণ করে না।
المسئ অর্থ হলো, “মন্দ কর্ম” এখানে যারা মন্দকর্মপরায়ণ তাদেরকে উদ্দেশ্য করা হয়েছে।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয় :
১. আল্লাহ তা‘আলা মানুষকে তার মৃত্যুর পর পুনরায় জীবিত করতে সক্ষম।
২. অন্ধ ও দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন ব্যক্তি যেমন সমান হতে পারে না। তেমনি সৎ কাজ ও মন্দ কাজ কখনো সমান হতে পারে না। সৎ কাজের প্রতিদান জান্নাত, আর অসৎ কাজের প্রতিদান হলো জাহান্নাম।
৩. কিয়ামত অবশ্যই সংঘটিত হবে, এটাকে অস্বীকার করার কোনই সুযোগ নেই।
৪. সংখ্যাগরিষ্ঠতা সত্যের মাপকাঠি না। কারণ সংখ্যা বেশি হলেই যে তা সঠিক এমনটি নয়।
৬০-৬৫ নম্বর আয়াতের তাফসীর :
আল্লাহ তা‘আলা বলেন, তোমরা আমাকে ডাক আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব। পূর্বোক্ত আয়াতে যেহেতু মহান আল্লাহ কিয়ামত সংঘটিত হওয়ার কথা আলোচনা করেছেন, তাই এখন এ আয়াতে এমন পথের দিশা দেয়া হচ্ছে যা অবলম্বন করলে মানুষ পরকালের সৌভাগ্য লাভ করতে পারবে। বেশির ভাগ তাফসীরবিদগণ আয়াতে দু‘আর অর্থ করেছেন ইবাদত। অর্থাৎ কেবল এক আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত করো। যেমন হাদীসেও দু‘আকে একটি ইবাদত বলা হয়েছে। রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন :
الدعاء هوالعبادة
দু‘আ, সেটি হলো ইবাদত। (মুসনাদ আহমাদ ৪/২৭১, মিশকাত হা. ২২৩০)
এ ছাড়াও পরে উল্লিখিত
(يَسْتَكْبِرُوْنَ عَنْ عِبَادَتِيْ)
থেকে পরিস্কার হয়ে যায় যে, এর অর্থ ইবাদত। কেউ কেউ বলেন, দু‘আ বলতে দু‘আ করাই বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ মঙ্গল অর্জন ও অমঙ্গল দূরীভূত করার জন্য আল্লাহ তা‘আলার নিকট প্রার্থনা করা। তবে প্রথম অর্থটাই অধিক সঠিক ।
( اَللّٰهُ الَّذِيْ جَعَلَ لَكُمُ اللَّيْلَ…. مُبْصِرًا)
এ সম্পর্কে সূরা ফুরক্বান-এর ৪৭ নম্বর আয়াতে আলোচনা করা হয়েছে।
( اَللّٰهُ الَّذِيْ جَعَلَ لَكُمُ الْأَرْضَ…..)
অত্র আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর ক্ষমতা এবং তিনি বান্দার প্রতি যে অনুগ্রহ করেছেন সে কথা বর্ণনা করা হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন : তিনি পৃথিবীকে করেছেন মানবজাতির জন্য বসবাস উপযোগী। যেখানে মানুষ বসবাস, চলাফেরা, কাজকর্ম এবং জীবন-যাপন করছে। পরিশেষে মৃত্যুবরণ করে কিয়ামত পর্যন্ত এরই মধ্যে সমাধিস্থ থাকবে। আর এ জমিনের ওপর তিনি আকাশকে করেছেন ছাদস্বরূপ। এবং তিনি তাদের সৃষ্টিকার্য সম্পন্ন করার পর তাদেরকে জীবিকা হিসেবে দিয়েছেন এমন সব খাদ্য যা সুস্বাদু ও পুষ্টিকর। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
(يٰٓأَيُّهَا النَّاسُ اعْبُدُوْا رَبَّكُمُ الَّذِيْ خَلَقَكُمْ وَالَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُوْنَ لا- الَّذِيْ جَعَلَ لَكُمُ الْأَرْضَ فِرَاشًا وَّالسَّمَا۬ءَ بِنَا۬ءً ص وَّأَنْزَلَ مِنَ السَّمَا۬ٓءِ مَآءً فَأَخْرَجَ بِه۪ مِنَ الثَّمَرَاتِ رِزْقًا لَّكُمْ ج فَلَا تَجْعَلُوْا لِلّٰهِ أَنْدَادًا وَّأَنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ)
“হে মানবমণ্ডলী! তোমরা তোমাদের রবের ইবাদত কর যিনি তোমাদেরকে ও তোমাদের পূর্ববর্তীদেরকে সৃষ্টি করেছেন যেন তোমরা তাক্বওয়া অবলম্বনকারী হও। যিনি তোমাদের জন্য জমিনকে বিছানা ও আকাশকে ছাদস্বরূপ করেছেন এবং যিনি আকাশ হতে পানি বর্ষণ করেন, অতঃপর তার দ্বারা তোমাদের জন্য জীবিকাস্বরূপ ফল উৎপাদন করেন, অতএব তোমরা জেনে শুনে আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক কর না।” (সূরা বাকারাহ্ ২ : ২১-২২)
এবং তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন সর্বোত্তম আকৃতিতে। জমিনে যত প্রকার সৃষ্টিজীব রয়েছে তার মধ্যে মানুষকে সবচেয়ে সুন্দর আকৃতি এবং সামঞ্জস্যপূর্ণ অবয়ব দান করেছেন। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
(لَقَدْ خَلَقْنَا الْإِنْسَانَ فِيْ۬ أَحْسَنِ تَقْوِيْمٍ)
“আমি সৃষ্টি করেছি মানুষকে সুন্দরতর অবয়বে”। (সূরা আত্ তীন ৯৫ : ৪)
এগুলো এটা প্রমাণ করে যে, স্রষ্টা হিসেবে একমাত্র আল্লাহ তা‘আলাই উপাস্য, অন্য কেউ নয়।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয় :
১. আল্লাহ তা‘আলাকে ডাকলে তিনি বান্দার ডাকে সাড়া দিয়ে থাকেন- এ কথা জানা গেল।
২. আল্লাহ তা‘আলার কতিপয় নেয়ামতের কথা জানতে পারলাম।
৩. একনিষ্ঠভাবে আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত করতে হবে, তার প্রশংসা করতে হবে এবং তাঁর নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করতে হবে।
৬৬-৬৮ নম্বর আয়াতের তাফসীর :
( قُلْ إِنِّيْ نُهِيْتُ أَنْ أَعْبُدَ….)
উক্ত আয়াতে আল্লাহ তা‘আলার একত্বের ওপর প্রতিষ্ঠিত এবং শির্ক থেকে বেঁচে থাকার জন্য মানবজাতিকে নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন : হে নাবী! তুমি বলে দাও : আল্লাহ তাঁকে ছাড়া অন্য কারো ইবাদত করতে আমাদের নিষেধ করেছেন। চাই তা পাথরের মূর্তি হোক, নাবী, ওলী বা কবরে সমাধিস্থ মৃত হোক। তিনি কেবলমাত্র তাঁরই ইবাদত করার নির্দেশ প্রদান করেছেন। কেননা তিনি হলেন একমাত্র প্রতিপালক যিনি ইবাদতের প্রকৃত হকদার।
(هُوَ الَّذِيْ خَلَقَكُمْ مِّنْ تُرَابٍ……)
“তিনিই তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন মাটি হতে, …” এখানে আল্লাহ তা‘আলা মানবসৃষ্টির স্তরসমূহ উল্লেখ করেছেন। এ সম্পর্কে সূরা হাজ্জ-এর ৫ নম্বর আয়াতে আলোচনা করা হয়েছে।
(فَإِذَا قَضٰيٓ أَمْرًا فَإِنَّمَا يَقُوْلُ لَه۫ كُنْ فَيَكُوْنُ)
“যখন তিনি কিছু করার সিদ্ধান্ত নেন তখন তিনি বলেন : হও এবং তা হয়ে যায়।” এখানে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর কর্মক্ষমতার কথা উল্লেখ করেছেন। এ সম্পর্কে সূরা নাহ্ল-এর ৪০ নম্বর আয়াতে আলোচনা করা হয়েছে।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয় :
১. একমাত্র আল্লাহ তা‘আলারই ইবাদত করতে হবে, কেননা তিনি ব্যতীত আর কেউ ইবাদতের যোগ্য নয়।
২. মানুষের সৃষ্টি পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে পারলাম।
৩. জীবন-মৃত্যুর মালিক একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা।
৬৯-৭৪ নম্বর আয়াতের তাফসীর :
কিয়ামতের মাঠে কাফির-মুশরিকদের যে করুণ অবস্থা হবে তারই বর্ণনা দেয়া হয়েছে এ আয়াতগুলোতে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন : যারা আল্লাহ তা‘আলার নিদর্শনসমূহ অবিশ্বাস করে এবং মিথ্যা দ্বারা সত্য সম্পর্কে ঝগড়া করে, ভালকে ছেড়ে দিয়ে মন্দকে আঁকড়ে ধরে, কিয়ামতের মাঠে তাদের অবস্থা হবে খুবই ভয়াবহ। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
(وَيْلٌ يَّوْمَئِذٍ لِّلْمُكَذِّبِيْنَ)
“সেদিন দুর্ভোগ মিথ্যা আরোপকারীদের জন্য।” (সূরা আল মুরসালা-ত ৭৭ : ১৫)
সেদিন তাদেরকে তাদের গলদেশে বেড়ি ও শৃংখল পরিয়ে জাহান্নামের দিকে নিয়ে যাওয়া হবে এবং তাদেরকে ফুটন্ত পানিতে নিক্ষেপ করা হবে ও তথায় তাদেরকে অগ্নি দ্বারা দগ্ধ করা হবে। যেমন-
আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
(هٰذِه۪ جَهَنَّمُ الَّتِيْ يُكَذِّبُ بِهَا الْمُجْرِمُوْنَ م يَطُوْفُوْنَ بَيْنَهَا وَبَيْنَ حَمِيْمٍ اٰنٍ)
“এটা সেই জাহান্নাম, যা অপরাধীরা মিথ্যা প্রতিপন্ন করত, তারা জাহান্নামের ফুটন্ত পানির মধ্যে ছুটাছুটি করবে।” (সূরা র্আ রহমান ৫৫ : ৪৩-৪৪)
আল্লাহ আরো বলেন,
(وَاَصْحٰبُ الشِّمَالِﺃ مَآ اَصْحٰبُ الشِّمَالِﭸﺚ فِیْ سَمُوْمٍ وَّحَمِیْمٍﭹﺫ وَّظِلٍّ مِّنْ یَّحْمُوْمٍﭺﺫ لَّا بَارِدٍ وَّلَا کَرِیْمٍﭻ)
“আর বাম দিকের দল, কত হতভাগা বাম দিকের দল! তারা থাকবে উত্তপ্ত বাতাস ও উত্তপ্ত পানিতে, কালো ধোঁয়ার ছায়ায়, যা শীতলও নয়, আরামদায়কও নয়।” (সূরা আল ওয়া-ক্বি‘আহ্ ৫৬ : ৪১-৪৪)
এরপর জাহান্নামীদেরকে জাহান্নামে জিজ্ঞাসা করা হবে। তোমরা আল্লাহর সাথে যাদের অংশীদার স্থাপন করতে তারা কোথায়? এ শরীকরা সেদিন তাদের অনুসারীদের থেকে অদৃশ্য হয়ে যাবে।
তারা তাদের অনুসারীদের কোনই সাহায্য করতে পারবে না এবং সেদিন তারা তাদের অপরাধের কথা অস্বীকারও করবে শাস্তি থেকে বাঁচার জন্য, কিন্তু তাতে তারা সফল হবে না, তারা জাহান্নামেই যাবে।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয় :
১. কাফিরদেরকে গলদেশে বেড়ি ও শিকল পরিয়ে জাহান্নামে টেনে নিয়ে যাওয়া হবে।
২. কাফিরদেরকে জাহান্নামে ফুটন্ত পানিতে আগুন দ্বারা দগ্ধ করা হবে।
৩. দুনিয়াতে যারা আল্লাহ তা‘আলার সাথে অন্যকে শরীক করত তারা তাদের অনুসারীদেরকে কোনই সাহায্য করতে পারবে না।
তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-
৫৭-৫৯ নং আয়াতের তাফসীর:
ব্যাপক ক্ষমতার অধিকারী আল্লাহ বলেন যে, তিনি কিয়ামতের দিন মাখলুককে নতুনভাবে অবশ্যই সৃষ্টি করবেন। তিনি যখন আকাশ ও পৃথিবীর মত বিরাট বস্তু সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছেন তখন মানুষকে সৃষ্টি করা অথবা ধ্বংস করে দিয়ে পুনরায় তাদেরকে সৃষ্টি করা তার কাছে মোটেই কঠিন নয়। যেমন আল্লাহ তাআলা অন্য আয়াতে বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “তারা কি দেখে না যে, যিনি আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন এবং ওগুলো সৃষ্টি করতে ক্লান্ত হননি, তিনি কি মৃতকে জীবিত করতে সক্ষম নন? হাঁ (অবশ্যই তিনি সক্ষম), নিশ্চয়ই তিনি প্রত্যেক জিনিসের উপর ক্ষমতাবান।” (৪৬:৩৩) যার সামনে এমন সুস্পষ্ট দলীল বিদ্যমান তার পক্ষে এটা অবিশ্বাস করা তার অজ্ঞানতা ও নির্বুদ্ধিতারই পরিচায়ক বটে। সে যে একেবারে নির্বোধ এতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। এটা বড়ই বিস্ময়কর ব্যাপার যে, বিরাট হতে বিরাটতম জিনিসকে মেনে নেয়া হচ্ছে, অথচ ক্ষুদ্র হতে ক্ষুদ্রতম জিনিসকে মেনে নেয়া হচ্ছে না! বরং এটাকে অসম্ভব মনে করা হচ্ছে! অন্ধ ও চক্ষুষ্মনের পার্থক্য যেমন প্রকাশমান, অনুরূপভাবে মুসলিম ও মুজরিমের পার্থক্যও সুস্পষ্ট। সৎকর্মশীল ও দুষ্কৃতিকারীর পার্থক্য পরিষ্কার। অধিকাংশ লোকই উপদেশ খুব কমই গ্রহণ করে থাকে।
কিয়ামত যে সংঘটিত হবে এতে কোন সন্দেহ নেই। তথাপি অধিকাংশ লোকই এটা বিশ্বাস করে না।
একজন ইয়ামনবাসী তার শোনা কথা বর্ণনা করেছেন যে, যখন কিয়ামত নিকটবর্তী হবে তখন মানুষের উপর খুব বেশী বিপদাপদ আপতিত হবে এবং সূর্যের প্রখরতা খুব বেশী হবে। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাই সবচেয়ে ভাল জানেন।
# আল্লাহ্ তাবারাকা ওয়া তা’আলার এই অনুগ্রহ ও দয়ার উপর আমাদের জীবনকে উৎসর্গ করা উচিত যে, তিনি আমাদেরকে তাঁর নিকট প্রার্থনা করার জন্যে হিদায়াত করছেন এবং তা কবূল করার ওয়াদা করছেন! হযরত সুফিয়ান সাওরী (রঃ) বলতেন:“হে ঐ সত্তা, যাঁর কাছে ঐ বান্দা খুবই প্রিয়পাত্র হয় যে তার কাছে খুব বেশী প্রার্থনা করে এবং ঐ বান্দা খুবই মন্দ ও অপ্রিয় হয় যে তার কাছে প্রার্থনা করে না। হে আমার প্রতিপালক! এই গুণ তো একমাত্র আপনার মধ্যেই রয়েছে। কবি বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “আল্লাহর মাহাত্ম্য এই যে, যদি তুমি তার কাছে চাওয়া পরিত্যাগ কর তবে তিনি অসন্তুষ্ট হন, পক্ষান্তরে আদম সন্তানের কাছে যখন চাওয়া হয় তখন সে অসন্তুষ্ট হয়।”
হযরত কা’বুল আহ্বার (রাঃ) বলেন, উম্মতে মুহাম্মাদ (সঃ)-কে এমন তিনটি জিনিস দেয়া হয়েছে যা পূর্ববর্তী কোন উম্মতকে দেয়া হয়নি। আল্লাহ তা’আলা যখন কোন নবী (আঃ)-কে পাঠাতেন তখন তাকে বলতেনঃ “তুমি তোমার উম্মতের উপর সাক্ষী থাকলে।” আর তোমাদেরকে (উম্মতে মুহাম্মাদী সঃ-কে) তিনি সমস্ত লোকের উপর সাক্ষী করেছেন। পূর্ববর্তী প্রত্যেক নবী (আঃ)-কে বলা হতোঃ “দ্বীনের ব্যাপারে তোমার উপর কোন বাধ্য-বাধকতা নেই। পক্ষান্তরে এই উম্মতকে বলা হয়েছেঃ “তোমাদের দ্বীনের ব্যাপারে তোমাদের উপর কোন বাধ্যবাধকতা নেই।” পূর্ববর্তী প্রত্যেক নবী (আঃ)-কে বলা হতোঃ “তুমি আমাকে ডাকো, আমি তোমার ডাকে সাড়া দিবো।” আর এই উম্মতকে বলা হয়েছেঃ “তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দিবো।” (এটা ইমাম ইবনে আবি হাতিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
হযরত আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) নবী (সঃ) হতে বর্ণনা করেছেন যে, আল্লাহ তা’আলা তাঁকে বলেনঃ “চারটি স্বভাব রয়েছে, যেগুলোর মধ্যে একটি আমার জন্যে, একটি তোমার জন্যে, একটি আমার ও তোমার মাঝে এবং একটি তোমার ও অন্যান্য বান্দাদের মাঝে। যা আমার জন্যে তা এই যে আমারই ইবাদত করবে এবং আমার সাথে অন্য কাউকেও শরীক করবে না। তোমার হক আমার উপর এই যে, আমি তোমাকে তোমার প্রতিটি ভাল কাজের পূর্ণ প্রতিদান প্রদান করবো। যা তোমার ও আমার মাঝে তা এই যে, তুমি আমার কাছে প্রার্থনা করবে এবং আমি তোমার প্রার্থনা কবুল করবো। আর যা তোমার এবং আমার অন্যান্য বান্দাদের মাঝে তা এই যে, তুমি তাদের জন্যে ওটাই পছন্দ করবে যা তুমি নিজের জন্যে পছন্দ কর।” (এ হাদীসটি হাফিয আবু ইয়ালা (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
হযরত নুমান ইবনে বাশীর (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “দু’আ হলো ইবাদত।” অতঃপর তিনি … (আরবী)-এই আয়াতটি পাঠ করেন। (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ) বর্ণনা করেছেন। সুনানের মধ্যে এ হাদীসটি রয়েছে। ইমাম তিরমিযী (রঃ) এটাকে হাসান সহীহ বলেছেন। ইবনে হিব্বান (রঃ) এবং হাকিমও (রঃ) এটা বর্ণনা করেছেন)
হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি মহামহিমান্বিত আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করে না তিনি তার প্রতি রাগান্বিত হন।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
হযরত মুহাম্মাদ ইবনে মুসাল্লামা আনসারীর (রাঃ) মৃত্যুর পর তাঁর তরবারীর কোষ হতে এক টুকরা কাগজ বের হয়। তাতে লিখিত ছিলঃ “তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের রহমত লাভের সুযোগ অন্বেষণ করতে থাকো। খুব সম্ভব যে, তোমরা কল্যাণের দু’আ করবে, আর ঐ সময় আল্লাহর রহমত উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠবে এবং তোমরা এমন সৌভাগ্য লাভ করবে যার পরে আর কখনো তোমাদেরকে দুঃখ ও আফসোস করতে হবে না।” (এটা হাফিয আবু মুহাম্মদ হাসান ইবনে আবদির রহমান রামহারামযী (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
এ আয়াতে ইবাদত দ্বারা দু’আ ও তাওহীদকে বুঝানো হয়েছে।
হযরত আমর ইবনে শুআয়েব (রাঃ) তাঁর পিতা হতে এবং তিনি তাঁর দাদা হতে বর্ণনা করেছেন যে, নবী (সঃ) বলেছেনঃ “কিয়ামতের দিন অহংকারী লোকদেরকে পিঁপড়ার আকারে একত্রিত করা হবে। ক্ষুদ্র হতে ক্ষুদ্রতম জিনিসও তাদের উপর থাকবে। তাদেরকে কূলাস নামক জাহান্নামের জেলখানায় নিক্ষেপ করা হবে। প্রজ্বলিত অগ্নি তাদের মাথার উপর থাকবে। তাদেরকে জাহান্নামীদের রক্ত, পুঁজ এবং প্রস্রাব-পায়খানা খেতে দেয়া হবে।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ) স্বীয় মুসনাদে বর্ণনা করেছেন)
অহীব ইবনুল অরদ (রঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, তাঁকে একজন বুযুর্গ ব্যক্তি বলেছেন, রোমে আমি কাফিরদের হাতে বন্দী হয়েছিলাম। একদা আমি শুনতে পেলাম যে, এক অদৃশ্য আহ্বানকারী পর্বতের চূড়া হতে উচ্চস্বরে আহ্বান করে বলছেঃ “হে আমার প্রতিপালক! ঐ ব্যক্তির জন্যে বিস্মিত হতে হয় যে আপনাকে চেনা জানা সত্ত্বেও অন্যের সাথে তার আশা-আকাঙ্ক্ষার সম্পর্ক রাখতে চায়। হে আমার প্রতিপালক! ঐ ব্যক্তির জন্যে বিস্ময়বোধ হয় যে আপনার পরিচয় লাভ করা সত্ত্বেও নিজের প্রয়োজন পুরো করবার জন্যে অন্যের কাছে গমন করে!” এরপর কিছুক্ষণ থেমে থেকে আরো উচ্চস্বরে বললোঃ “আরো বেশী বিস্মিত হতে হয় ঐ ব্যক্তির জন্যে যে মহান আল্লাহর পরিচয় জানা সত্ত্বেও অন্যের সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে এমন কাজ করে যে কাজে আল্লাহ অসন্তুষ্ট হন।” একথা শুনে আমি উচ্চস্বরে ডাক দিয়ে তাঁকে জিজ্ঞেস করলামঃ তুমি কি দানব, না মানব? সে উত্তরে বললোঃ “মানব!” তারপর বললোঃ “ঐ সব কাজ হতে তুমি তোমার ধ্যান সরিয়ে নাও যাতে তোমার কোন উপকার নেই এবং যে কাজে তোমার উপকার আছে সেই কাজে মগ্ন হয়ে পড়।” (এটা ইমাম ইবনে আবি হাতিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
৬১-৬৫ নং আয়াতের তাফসীর:
আল্লাহ তা’আলা স্বীয় অনুগ্রহের বর্ণনা দিচ্ছেন যে, তিনি রাত্রিকে সৃষ্টি করেছেন বিশ্রামের জন্যে, আর দিবসকে করেছেন আলোকোজ্জ্বল, যাতে মানুষ তাদের কাজে-কর্মে, সফরে এবং জীবিকা উপার্জনে সুবিধা লাভ করতে পারে এবং সারা দিনের ক্লান্তি রাত্রির বিশ্রামের মাধ্যমে দূর হতে পারে। আল্লাহ তা’আলা স্বীয় সৃষ্টজীবের প্রতি অত্যন্ত অনুগ্রহশীল। কিন্তু অধিকাংশ মানুষই মহান আল্লাহর নিয়ামতরাজির কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না। এই সমুদয় জিনিসের সৃষ্টিকর্তা এবং এই শান্তি ও বিশ্রামের ব্যবস্থাপক একমাত্র আল্লাহ। তিনিই সবকিছু সৃষ্টি করেছেন। তিনি ছাড়া সৃষ্টজীবের পালনকর্তা আর কেউ নেই। তাই তো মহান আল্লাহ বলেনঃ এই তো আল্লাহ, তোমাদের প্রতিপালক, সবকিছুর স্রষ্টা; তিনি ছাড়া কোন মাবুদ নেই! সুতরাং তোমরা কিভাবে বিপদগামী হচ্ছ? আল্লাহ ছাড়া তোমরা যাদের ইবাদত করছে তারা তো নিজেরাই সষ্ট। সুতরাং তারা কোন কিছুই সৃষ্টি করেনি। বরং তোমরা যেসব মূর্তির উপাসনা করছো সেগুলো তো তোমরা নিজেদের হাতেই তৈরী করেছে। এদের পূর্ববর্তী মুশরিকরাও এভাবেই বিভ্রান্ত হয়েছিল এবং বিনা দলীলে তারা গায়রুল্লাহর ইবাদত করতো। নিজেদের কুপ্রবৃত্তিকে সামনে রেখে তারা আল্লাহর দলীল প্রমাণকে অস্বীকার করতো। নিজেদের অজ্ঞতা ও নির্বুদ্ধিতাকে সামনে করে তারা বিভ্রান্ত হতো।
মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ আল্লাহই তোমাদের জন্যে পৃথিবীকে করেছেন বাসোপযোগী। অর্থাৎ পৃথিবীকে তিনি তোমাদের জন্যে বিছানা স্বরূপ বানিয়েছেন, যাতে আরাম-আয়েশে তোমরা এখানে জীবন যাপন করতে পার, চলো, ফিরো এবং গমনাগমন কর। যমীনের উপর পাহাড়-পর্বত স্থাপন করে তিনি যমীনকে হেলা দোলা হতে বাঁচিয়ে রেখেছেন। আসমানকে তিনি ছাদ স্বরূপ বানিয়েছেন যা সব দিক দিয়েই রক্ষিত রয়েছে। তিনিই তোমাদের আকৃতি গঠন করেছেন এবং ঐ আকৃতি করেছেন খুবই উৎকৃষ্ট। অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো তিনি সঠিকভাবে সজ্জিত করেছেন। মানানসই দেহ এবং সেই মুতাবেক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ এবং সুন্দর চেহারা দান করেছেন। আর তিনি তোমাদেরকে দান করেছেন উৎকৃষ্ট রিযক বা আহার্য। সৃষ্টি করেছেন তিনি, বসতি দান করেছেন তিনি, পানাহার করাচ্ছেন তিনি এবং পোশাক পরিচ্ছদ দান করেছেন তিনি। সুতরাং সঠিক অর্থে তিনিই হলেন সৃষ্টিকর্তা, আহার্যদাতা। তিনিই জগতসমূহের প্রতিপালক। যেমন সূরায়ে বাকারায় রয়েছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “হে মানবমণ্ডলী! তোমরা তোমাদের সেই প্রতিপালকের ইবাদত কর যিনি তোমাদেরকে ও তোমাদের পূর্ববর্তীদেরকে সৃষ্টি করেছেন যাতে তোমরা মুত্তাকী হতে পার। যিনি পৃথিবীকে তোমাদের জন্যে বিছানা ও আকাশকে ছাদ করেছেন এবং আকাশ হতে পানি বর্ষণ করে তদ্দ্বারা তোমাদের জীবিকার জন্যে ফল-মূল উৎপাদন করেন। সুতরাং জেনে শুনে কাউকেও আল্লাহর সমকক্ষ দাঁড় করো না।”(২:২১-২২)।
আল্লাহ তা’আলা এখানেও এ সমুদয় সৃষ্টির বর্ণনা দেয়ার পর বলেনঃ “এই তো আল্লাহ, তোমাদের প্রতিপালক! কত মহান জগতসমূহের প্রতিপালক আল্লাহ্! তিনি চিরঞ্জীব। তিনি শুরু হতেই আছেন এবং শেষ পর্যন্ত থাকবেন। তাঁর লয় নেই, ক্ষয় নেই। তিনিই প্রথম, তিনিই শেষ। তিনিই ব্যক্ত, তিনিই গুপ্ত। তার কোন গুণ অন্য কারো মধ্যে নেই। তাঁর সমতুল্য কেউই নেই। সুতরাং তোমাদের উচিত তোমরা তাঁর তাওহীদকে মেনে নিয়ে তাঁরই কাছে প্রার্থনা জানাতে থাকবে এবং তাঁরই ইবাদতে লিপ্ত থাকবে। সমুদয় প্রশংসা জগতসমূহের প্রতিপালক আল্লাহরই প্রাপ্য।
ইমাম ইবনে জারীর (রঃ) বলেন যে, আহলে ইলমের একটি দলের উক্তি হলোঃ “যে ব্যক্তি (আরবী) ‘লা-ইলাহা-ইল্লাল্লাহ’ পাঠ করে তার এর সাথে সাথে (আরবী) পড়ে নেয়াও উচিত, যাতে এই আয়াতের উপর আমল হয়ে যায়।” হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতেও এটা বর্ণিত আছে। হযরত সাঈদ ইবনে জুবাইর (রঃ) বলেনঃ “যখন তুমি (আরবী) পাঠ করবে তখন পড়ে নিবে এবং সাথে সাথে (আরবী) এটাও পাঠ করবে।”
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে যুবায়ের (রাঃ) প্রত্যেক নামাযের সালামের পরে নিম্নলিখিত কালেমাগুলো পাঠ করতেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “আল্লাহ ছাড়া কোন মা’বুদ নেই, তিনি এক, তার কোন অংশীদার নেই, রাজ্য তাঁরই, প্রশংসা তাঁরই এবং তিনি প্রত্যেক জিনিসের উপর ক্ষমতাবান। আল্লাহর তাওফীক ছাড়া পাপ হতে বিরত থাকা যায় না এবং ইবাদত করার শক্তিও থাকে না। আল্লাহ ছাড়া কোন মা’বুদ নেই, আমরা একমাত্র তাঁরই ইবাদত করি। নিয়ামত তাঁরই, অনুগ্রহ তাঁরই এবং উত্তম প্রশংসাও তারই প্রাপ্য। আল্লাহ ছাড়া কোন মা’বূদ নেই। আমরা একনিষ্ঠভাবে তারই আনুগত্য করি, যদিও কাফিররা অসন্তুষ্ট হয়। আর তিনি বলতেন যে, রাসূলুল্লাহও (সঃ) ঐ কালেমাগুলো প্রত্যেক নামাযের পরে পাঠ করতেন। (এ হাদীসটি ইমাম মুসলিম (রঃ), ইমাম আবু দাউদ (রঃ) এবং ইমাম নাসাঈ (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
৬৬-৬৮ নং আয়াতের তাফসীর:
আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ হে মুহাম্মাদ (সঃ)! তুমি এই মুশরিকদেরকে বলে দাও- আল্লাহ তা’আলা নিজের ছাড়া অন্য যে কারো ইবাদত করতে স্বীয় সৃষ্টজীবকে নিষেধ করে দিয়েছেন। তিনি ছাড়া অন্য কেউ ইবাদতের হকদার নয়। এর বড় দলীল হলো এর পরবর্তী আয়াতটি যাতে বলা হয়েছেঃ তিনিই তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন মৃত্তিকা হতে, পরে শুক্রবিন্দু হতে, তারপর রক্তপিণ্ড হতে, তারপর তোমাদেরকে বের করেন (তোমাদের মায়ের পেট হতে) শিশুরূপে, অতঃপর যেন তোমরা উপনীত হও যৌবনে, তারপর হও বৃদ্ধ। এসব কাজ ঐ এক আল্লাহর নির্দেশক্রমে হয়ে থাকে। সুতরাং এটা কত বড়ই না অকৃতজ্ঞতা যে, তার সাথে অন্য কারো ইবাদত করা হবে। তোমাদের মধ্যে কারো এর পূর্বেই মৃত্যু ঘটে। কেউ পূর্বে নষ্ট হয়ে যায় অর্থাৎ শিশু পরিপুষ্ট হওয়ার পূর্বে গর্ভপাত হয়ে যায়। কেউ শৈশবেই মারা যায়, কেউ মারা যায় যৌবনাবস্থায় এবং বার্ধক্যের পূর্বে প্রৌঢ় অবস্থায় দুনিয়া হতে বিদায় নেয়। কুরআন কারীমের অন্য জায়গায় রয়েছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “আমার চাহিদামত একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত আমি মাতৃ গর্ভাশয়ে স্থিতিশীল রাখি।” (২২:৫) আর এখানে মহান আল্লাহ বলেনঃ এটা এই জন্যে যে, তোমরা নির্ধারিত কাল প্রাপ্ত হও এবং যাতে তোমরা অনুধাবন করতে পার। অর্থাৎ তোমাদের অবস্থার এই পরিবর্তন দেখে তোমরা যেন এই বিশ্বাস স্থাপন কর যে, এই দুনিয়ার পরেও তোমাদেরকে নতুন জীবনে একদিন দণ্ডায়মান হতে হবে।
মহান আল্লাহ বলেনঃ তিনিই জীবন দান করেন ও মৃত্যু ঘটান। তার কোন হুকুমকে, কোন ফায়সালাকে এবং তার ইচ্ছাকে কেউ টলাতে পারে না। তিনি যা ইচ্ছা করেন তাই হয়ে থাকে এবং যা তিনি চান না তা হওয়া সম্ভব নয়।
৬৯-৭৬ নং আয়াতের তাফসীর:
আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ হে মুহাম্মাদ (সঃ)! যারা আল্লাহর নিদর্শনসমূহকে অবিশ্বাস করে এবং বাতিল দ্বারা সত্য সম্পর্কে বিতণ্ডা করে তাদের এ কাজে কি তুমি বিস্ময় বোধ করছো না? কিভাবে তাদেরকে বিপথগামী করা হচ্ছে তা কি তুমি দেখো না? কিভাবে তারা ভালকে ছেড়ে মন্দকে আঁকড়ে ধরে থাকছে তা কি লক্ষ্য করছো না?
অতঃপর কাফিরদেরকে ভীতি প্রদর্শন করা হচ্ছে যারা অস্বীকার করে কিতাব এবং যা সহ আমি রাসূলদেরকে প্রেরণ করেছিলাম, তা, অর্থাৎ হিদায়াত ও বর্ণনা, তারা শীঘ্রই এর পরিণাম জানতে পারবে। যেমন প্রবল প্রতাপান্বিত আল্লাহ্ বলেন (আরবী) অর্থাৎ “সেই দিন দুর্ভোগ মিথ্যা আরোপকারীদের জন্যে।” (৭৭:১৫)
মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ যখন তাদের গলদেশে বেড়ি ও শৃংখল থাকবে এবং জাহান্নামের রক্ষকগণ টেনে নিয়ে যাবেন ফুটন্ত পানিতে, অতঃপর তাদেরকে দগ্ধ করা হবে অগ্নিতে, সেদিন তারা নিজেদের দুষ্কর্মের পরিণাম জানতে পারবে। যেমন অন্য জায়গায় রয়েছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “এটাই সেই জাহান্নাম যা অপরাধীরা অবিশ্বাস করতো। তারা জাহান্নামের অগ্নি ও ফুটন্ত পানির মধ্যে ছুটাছুটি করবে।” (৫৫:৪৩-৪৪) অন্য আয়াতসমূহে তাদের যাকূম গাছ খাওয়া ও গরম পানি পান করার বর্ণনা দেয়ার পর আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “আর তাদের গন্তব্য হবে অবশ্যই প্রজ্বলিত অগ্নির দিকে।” (৩৭:৬৮) আল্লাহ তা’আলা আর এক জায়গায় বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “আর বাম দিকের দল, কত হতভাগ্য বাম দিকের দল! তারা থাকবে অত্যুষ্ণ বায়ু ও উত্তপ্ত পানিতে, কৃষ্ণবর্ণ ধূম্রের ছায়ায়, যা শীতলও নয়, আরামদায়কও নয়।” (৫৬:৪১-৪৪) কয়েকটি আয়াতের পর আবার বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “অতঃপর হে বিভ্রান্ত মিথ্যা আরোপকারীরা! তোমরা অবশ্যই আহার করবে যাকূম বৃক্ষ হতে, এবং ওটা দ্বারা তোমরা উদর পূর্ণ করবে। তারপর তোমরা পান করবে অত্যুষ্ণ পানি পান করবে তৃষ্ণার্ত উষ্ট্রের ন্যায়। কিয়ামতের দিন এটাই হবে তাদের আপ্যায়ন।” (৫৬:৫১-৫৬) মহামহিমান্বিত আল্লাহ আরো বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “নিশ্চয়ই যাকূম বৃক্ষ হবে পাপীর খাদ্য, গলিত তাম্রের মত; ওটা তার উদরে ফুটতে থাকবে ফুটন্ত পানির মত। তাকে ধর এবং টেনে নিয়ে যাও জাহান্নামের মধ্যস্থলে। অতঃপর তার মস্তকের উপর ফুটন্ত পানি ঢেলে শাস্তি দাও। আর বলা হবেঃ আস্বাদ গ্রহণ কর, তুমি তো ছিলে সম্মানিত, অভিজাত। এটা তো ওটাই, যে বিষয়ে তোমরা সন্দেহ করতে।” (৪৪:৪৩-৫০) উদ্দেশ্য। এই যে, এক দিকে তো তারা দুঃখ-কষ্ট ভোগ করতে থাকবে, যা উপরে বর্ণিত হলো, অপর দিকে তাদেরকে লাঞ্ছিত ও অপমানিত করার জন্যে শাসন-গর্জন, ধমক, ঘৃণা ও তাচ্ছিল্যের সুরে তাদের সাথে কথা বলা হবে, যা উল্লিখিত হলো।
হযরত ইয়া’লা ইবনে মুনাব্বাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) বলেছেন, মহামহিমান্বিত আল্লাহ্ জাহান্নামীদের জন্যে একদিকে কালো মেঘ উঠাবেন এবং তাদেরকে জিজ্ঞেস করবেনঃ “হে জাহান্নামবাসী! তোমরা (এ মেঘ হতে) কি চাও?” তারা ওটা দুনিয়ার মেঘের মতই মেঘ মনে করে বলবেঃ “আমরা চাই যে, এ মেঘ হতে বৃষ্টি বর্ষিত হোক!” তখন ঐ মেঘ হতে বেড়ি, শৃংখল এবং আগুনের অঙ্গার বর্ষিত হতে শুরু করবে, যার শিখা তাদেরকে জ্বালাতে পুড়াতে থাকবে এবং তাদের গলদেশে যে বেড়ি ও শৃংখল থাকবে, ওগুলোর সাথে এগুলোও যুক্ত করে দেয়া হবে।” (এ হাদীসটি ইমাম ইবনে হাতিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন। কিন্তু এটা গারীব হাদীস)
অতঃপর তাদেরকে বলা হবেঃ “দুনিয়ায় আল্লাহ ছাড়া যাদের পূজা করতে তারা আজ কোথায়? কোথায় গেল তোমাদের উপাস্য প্রতিমাগুলো? কেন আজ তারা তোমাদের সাহায্যার্থে এগিয়ে আসছে না? কেন আজ তারা তোমাদেরকে এ অসহায় অবস্থায় ছেড়ে দিয়েছে?” তারা উত্তরে বলবেঃ “তারা তো আজ বিলুপ্ত হয়ে গেছে। তারা আজ আমাদের কোনই উপকার করবে না।” অতঃপর তাদের মনে একটা খেয়াল জাগবে এবং বলবেঃ ‘ইতিপূর্বে আমরা তাদের মোটেই ইবাদত করিনি। পূর্বে আমরা এমন কিছুকেই আহ্বান করিনি।’ অর্থাৎ তারা তাদের ইবাদতকে অস্বীকার করবে। যেমন মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “অতঃপর তাদের ফিত্না তো এটাই যে, তারা বলবেঃ আল্লাহর শপথ! আমরা মুশরিক ছিলাম না।” (৬:২৩) মহান আল্লাহ বলেনঃ এই ভাবে তিনি কাফিরদেরকে বিভ্রান্ত করেন।
ফেরেশতারা তাদেরকে বলবেনঃ এটা এই কারণে যে, তোমরা পৃথিবীতে অযথা উল্লাস করতে এবং এই জন্যে যে, তোমরা দম্ভ-অহংকার করতে। সুতরাং যাও, এখন জাহান্নামে প্রবেশ কর। তথায় তোমাদেরকে চিরস্থায়ীভাবে অবস্থান। করতে হবে। আর উদ্ধতদের আবাসস্থল কতই না নিকৃষ্ট! অর্থাৎ তোমরা যে পরিমাণ গর্ব ও অহংকার করতে সেই পরিমাণই তোমরা আজ লাঞ্ছিত ও অপমাণিত হবে। যতটা উপরে চড়েছিলে ততটা আজ নীচে নেমে যাবে। এসব ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাই সবচেয়ে ভাল জানেন।