أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(বই#১০৯৪)[* এবং কাফিররা বলে -৪*
এসব কাফেররা বলে, এ কুরআন তোমরা কখনো শুনবে না। আর যখন তা শুনানো হবে তখন হট্টগোল বাধিয়ে দেবে। হয়তো এভাবে তোমরা বিজয়ী হবে:-]
www.motaher21.net
সূরা:৪১:হামীম-আস-সাজদাহ
পারা:২৪
২৬-২৯ নং আয়াত:-
৪১:২৬ নং আয়াত:-
وَ قَالَ الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا لَا تَسۡمَعُوۡا لِہٰذَا الۡقُرۡاٰنِ وَ الۡغَوۡا فِیۡہِ لَعَلَّکُمۡ تَغۡلِبُوۡنَ ﴿۲۶﴾
কাফেররা বলে, “এই কুরআনের কথা শুনিওনা।”
এই কুরআনের কথা কখনই শুনবেন আর তা যখন শুনানো হয় তখন তাতে গন্ডগোল সৃষ্টি কর সম্ভবত: এভাবেই তোমরা জয়ী হবে। (সুরা হা-মীম সেজদা: ৪১, আয়াত-২৬)
وَقَالَ الَّذِيْنَ كَفَرُواْ لاَتَسْمَعُوا لِهَذَا الْقُرْآنِ وَالْغَوْا فِيْهِ لَعَلَّكُمْ تَغْلِبُونَ
শানে নুযুল (নাযিল হওয়ার প্রেক্ষাপট ও সময়কাল)
নির্ভরযোগ্য বর্ণনার ভিত্তিতে বলা যায়, এর নাযিল হওয়ার সময়কাল হলো হযরত হামযা (রা) এর ঈমান আনার পর এবং হযরত ওমর (রা) ঈমান আনার পূর্বে। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রাচীনতম জীবনী লেখক মুহাম্মদ ইবনে ইসহাক প্রখ্যাত তাবেয়ী মুহাম্মদ ইবনে কা’আব আল কুরাশীর সূত্রে এই কাহিনীটি উদ্ধৃত করেছেন যে, একবার কতিপয় কুরাইশ সরদার কাবা ঘরে একত্র হয়ে বসেছিল। মসজিদে হারামের অপরদিকের এক কোনায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একাকী বসে ছিলেন। এ সময় হযরত হামযা (রা) ঈমান এনেছিলেন এবং কুরাইশের লোকেরা মুসলমানদের দল দিন দিন ভারী হতে দেখে খুব শংকিত ও চিন্তান্বিত হয়ে পড়েছিল। এ সময় উৎত্তা ইবনে রাবীআ (আবু সুফিয়ানের শ্বশুর) কুরাইশ নেতাদের বলল “হে ভায়েরা আপনারা ভাল মনে করলে আমি গিয়ে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে কথা বলে দেখতে পারি। আর তার সামনে কয়েকটি প্রস্তাব পেশ করতে পারি। সে হয়তো তার কোনটি মেনে নিতে পারে এবং আমাদের কাছেও তা গ্রহণযোগ্য হতে পারে। এভাবে সে হয়ত আমাদের বিরুদ্ধতা থেকে বিরত হতে পারে।” উপস্থিত সকলেই তার সাথে একমত হলো এবং উৎবা উঠে নবী সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে গিয়ে বসল। তিনি তার দিকে ফিরে বসলেন। তখন সে বলল: “ভাইপো জাতির মধ্যে তোমার বংশ-মর্যাদা যে কত ভাল তা তুমি জান। কিন্তু তা সত্ত্বেওতুমি তোমার জাতির উপর একটা বিপদ টেনে এনেছ। তুমি আমাদের ঐক্যবদ্ধ সমাজে একটা ভাংগন সৃষ্টি করে দিচ্ছ। গোটা জাতিকে তুমি নির্বোধ প্রতিপন্ন করেছ, জাতির ধর্ম ও তার মাবুদদের মন্দ বলছো। আরো এমনসব কথা বলতে শুরু করেছ, যার অর্থ এই দাঁড়ায় যে, আমাদের সকলের বাপ-দাদা যেন কাফের ছিল। এখন আমার কথা একটু মনোযোগ দিয়ে শুন। তোমার সামনে কয়েকটি প্রস্তাব পেশ করছি, তা চিন্তা ও বিবেচনা করে দেখ, হয়তো তার কোন একটি তুমি মেনে নিতে পারবে।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জবাবে বলেলেন “হে অলিদের পিতা! আপনি বলুন আমি শুনছি।” তখন সে বললো “ভাইপো, তুমি এই যে কাজ শুরু করেছ, এ দ্বারা যদি তোমার ধন-সম্পদ লাভ করাই উদ্দেশ্য হয়ে থাকে, তাহলে আমরা সকলে একত্রিত হয়ে তোমাকে এতো ধন-সম্পদ দান করব যে, তুমি আমাদের মধ্যে সবার চেয়ে সম্পদশালী-ধনী হয়ে যাবে। আর তার দ্বারা যদি নিজের শ্রেষ্টত্ব প্রতিষ্ঠিত করতে চাও তাহলে বলো, আমরা তোমাকে আমাদের সরদার ও নেতা করে দেই। তোমার কথাছাড়া কোন বিষয়েই ফায়সালা হতে পারবেনা। আর যদি বাদশাহ হতে চাও, তাহলে আমরা তোমাকে বাদশাহ করে নেব। আর যদি তোমার উপর কোন জিনের প্রভাব পড়ে থাকে যাকে তুমি নিজে তাড়াতে পারনা, তাহলে আমরা সুদক্ষ চিকিৎসক ডেকে আনব এবং নিজেদের খরচেই তোমার চিকিৎসা করাব।”
উৎত্তা এসব কথা বলছিল, নবী করীম সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাল্লাম চুপচাপ বসেছিলেন। পরে তিনি বললেন, “আবুল অলীদ! আপনার যা কিছু বলার ছিল, তা কি বলেছেন?” সে বললো: হ্যাঁ বলেছি। তখন তিনি বললেন, “আচ্ছা এখন আমার কথা শুনুন”। এরপর তিনি বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম পড়ে এ সুরাটিই তেলাওয়াত শুরু করলেন, আর উৎবা নিজের দু’খানা হাত পিছনে ঠেক লাগিয়ে গভীর মনোনিবেশ সহকারে শুনতে লাগলেন। এ সূরার সিজদার আয়াত-৩৮ আয়াত পর্যন্ত পৌঁছে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সিজদা করলেন। পরে মাথা উঠিয়ে বললেন, “হে আবুল অলীদ! আমার জওয়াব আপনি শুনতে পেলেন। এখন আপনি জানেন আপনার কাজ।” উতবা উঠে কুরাইশ সরদারদের মজলিশের দিকে চলে গেল। দূর হতে লোকেরা দেখে বলে উঠল, “আল্লাহর কসম উতবার চেহারা বদলে গেছে। যে চেহারা নিয়ে সে গিয়েছিল, সে চেহারা নিয়ে সে ফিরেআসছেনা।” সে যখন এসে বসল, তখন সকলেই বলল, “কি শুনে আসলে?” সে বলল, “আল্লাহর কসম, আমি এমন কালাম শুনেছি যা ইতিপূর্বে আর কখনই শুনতে পাইনি। আল্লাহর কসম, এ কবিতা নয়, যাদুর কথা নয়, গণকদারী নয়। হে কুরাইশ সরদাররা! আমার কথা শুন। এ ব্যক্তিকে তার অবস্থাতেই থাকতে দাও। আমি মনে করি এ কালাম সফল হবেই। মনে কর আরবরা যদি তার উপর জয়ী হতে পারে, তাহলে তোমরা নিজেরা নিজের ভাইয়ের উপর আক্রমণ করা হতে রক্ষা পেলে, অন্য লোকেরা তার সংগে বোঝাপড়া করবে। কিন্তু সে যদি আরবদের উপর জয়ী হয় তাহলে তার রাজত্ব তো তোমাদেরই রাজত্ব হবে, তার ইজ্জত সম্মান তোমাদেরই ইজ্জত ও সম্মানের কারণ হবে।” কুরাইশ সরদাররা তার এ কথা শুনেই বলে উঠলো, “ অলীদের বাপ শেষ পর্যন্ত তোমার উপরেও তার যাদুর প্রভাব পড়ে।” উৎবা বলল, “আমার মত আমি তোমাদের বললাম, এখন তোমাদের মনে যা হয় তা করতে থাক। (ইবনে হিসাম ১ম খন্ড পৃষ্ঠা ৩১৩-৩১৪)
আলোচ্য আয়াত
উৎবার এ কথাবার্তার জবাবে আল্লাহ তাআলার নিকট হতে যে কালাম নাযিল হয় তাতে ঐ সব অর্থহীন কথা বার্তার দিকে আদৌ ভ্রুক্ষেপ করা হয়নি। কারণ সে যা কিছু বলেছিল, আসলে তা ছিল রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিয়ত ও বুদ্ধি বিবেচনার উপর হামলা। তার সব কথার পেছনেই এই অনুমান কাজ করছিল যে, “তার নবী হওয়া এবং কুরআনের অহী হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই, তাহলে তিনি যে এসব কথা বলছেন, এর মূলে হয় ধন-মালের লোভ, নেতৃত্ব-কর্তৃত্ব লাভের ইচ্ছা এবং শাসন ক্ষমতা ও প্রভৃত্ব লাভই হলো প্রেরণার উৎস। অথবা তার জ্ঞান-বুদ্ধিই লোপ পেয়েছে (নাউযুবিল্লাহ)। প্রথম ক্ষেত্রে সে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে বিকিকিনির কারবার করতে চাচ্ছিল। আর দ্বিতীয় ক্ষেত্রে আমরা নিজেদের খরচে তোমার চিকিৎসা করাব বলে নবী করীম (সা) কে হেয় করছিল। এখন বিরুদ্ধবাদীরা যখন এতটা নীচ হতে পারে তখন তার কোন জবাব দেয়া কোন শরীফ ব্যক্তির কাজ নয়। তাকে সম্পূর্ণভাবে উপেক্ষা করে নিজের বক্তব্য বলে দেয়াই বাঞ্চনীয়।
এক্ষেত্রে উৎবার কথাগুলোর প্রতি কোন ভ্রুক্ষেপ না করেই মক্কার কাফেরদের মূল বিরুদ্ধতাকেই আলোচ্য বিষয়রূপে গন্য করা হয়েছে। কেননা কাফেররা তখনকুরআন মজিদের দাওয়াতকে প্রতিরুদ্ধ ও ক্ষতিগ্রস্থ করার জন্য অত্যন্ত হঠকারিতা ও অনৈতিকতা সহকারে চেষ্টা করছিল। তারা নবী করীম সাল্লাল্লাহ আলাইহে ওয়াসাল্লামকে বলছিল, আপনি যা-ই করুন না কেন আমরা আপনার কোন কথাই শুনবনা। আমরা আমাদের দিলের উপর পর্দা ফেলে রেখেছি, আমাদের কান রুদ্ধ করে দিয়েছি। আমাদের ও আপনার মাঝে একটা প্রাচীর দাঁড়িয়ে রয়েছে তা আপনাকে ও আমাদের কখনো এক হতে দেবেনা।
তারা তাঁকে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছিলো যে, আপনি আপনার দাওয়াতের কাজ চালিয়ে যান, আমরা আমাদের সাধ্যানুসারে আপনার বিরোধিতা করে যাব, করতে থাকব।
তারা নবী করীম সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লামকে পরাস্ত করার উদ্দেশ্যে যে কার্মসূচী-পরিকল্পনা তৈরী করল তা হচ্ছে যখনই তিনি কিংবা তাঁর অনুসারীদের কেউ সাধারণ মানুষকে কুরআন শুনানোর চেষ্টা করবেন তখনই আকষ্মিকভাবে হাংগামা সৃষ্টি করতে হবে। এমন ভাবে চিৎকার দিতে হবে যেন কানে তালা লেগে যায়।
কুরআন মজিদের আয়াত সমূহের উল্টা-পাল্টা অর্থকরে জনসাধারণের মধ্যে নানা প্রকার বিভ্রান্তি ছড়ানোর কাজ তারা পূর্ণ তৎপরতার সাথে চালিয়ে যাচ্ছিল। ফলে কুরআনে বলা হত এক কথা তারা তাকে বানিয়ে দিত অন্য কথা। সরল সোজা কথায় বক্রতা আবিষ্কার করার কাজে লিপ্ত ছিল। পূর্বাপর সম্পর্ক ছিন্ন করে কোথাও হতে একটি শব্দ বা বাক্যাংশ বের করে তার সংগে নিজেদের তরফহতে অনেক কথা যোগ করে দিয়ে একটা নতুন কথা দাঁড় করাত-যেন কুরআন ও তার উপস্থাপনকারী সম্পর্কে লোকদের ধারণা খারাপ হয়।
বর্তমান কালেও আমরা দেখতে পাচ্ছি কাফেরদের সেই চক্রান্ত ষড়যন্ত্র পূর্ণউদ্দমে চালু আছে। বরং তা আরো ব্যাপক ও মারাত্মক রূপ ধারণ করেছে। এই আয়াতটি মুসলমানদেরকে কাফেরদের ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সর্তক করে দিচ্ছিল। কিন্তু মুসলমানরা এই সর্তকবানীকে যথাযথ গুরুত্ব দেয় নেই ফলে আজ অবস্থা চরম বিপর্যয়কর পর্যায়ে পৌছে গেছে। অবস্থা এরূপ পর্যায়ে দাঁড়িয়েছে যে তাদেরকে মৌলবাদী, সন্ত্রাসবাদী ইত্যাদি নানা অপবাদে অভিযুক্ত করছে। কুরআনের মর্যাদা বৃদ্ধির কথা বলে, সম্মানের কথা বলে কুরআনকে সাধারণ মানুষের নাগালের বাহিরে রেখে দিয়েছে। তারা বলছে এই কুরআন বুঝা অত্যন্ত কঠিন, এটা শুধুমাত্র যারা বড় বড়মাদ্রাসায় তাফসীর শাস্ত্রে উচ্চশিক্ষা লাভ করবে তারাই বুঝতে পারবে। অন্যরা বুঝতে পারবেনা এবং বুঝার চেষ্টা করারও প্রয়োজন নেই। অথচ আল্লাহ পাক পবিত্র কুরআনে সুরা কামার ৫৪ নং সুরায় ৪ যায়গায় ১৭,২২,৩২,ও ৪০ নং আয়াতে এরশাদ করেছেন-
وَلَقَدْ يَسِّرْنَا الْقُرْآنَ لِذَّكَ فَهَلْ مِنْ مُدَّكِرْ ؟ আর কুরআনকে বুঝার জন্য সহজ করে দিয়েছি। অতএব কোন চিন্তাশীল আছে কি (বুঝার জন্য)। “তারা মানুষকে কিছু তাসবীহ, তাহলীল, দাঁড়ি, টুপি, পাঞ্জাবী, জুব্বা, এসব গুটি কয়েক জিনিসের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখতে চায়, এবং পূর্ণ কুরআন বাস্তবায়নে চরম বিরোধীতা করে।
তাদের প্রথম চেষ্টা হলো মানুষকে ধর্মের কথা, ধর্মীয় বিধান সম্পর্কে অজ্ঞরাখা, এই প্রচেষ্টার অংশ হিসাবে তারা নাচ, গান, অশ্লীলতা, বেহায়াপনা নানা প্রকার খেলাধুলা, মাদক দ্রব্য ইত্যাদিতে এমনভাবে মগ্নরাখে যাতে ইসলাম সম্পর্কে মানুষ চিন্তা করার বা শিক্ষা লাভ করার সুযোগ না পায়।
এ পর্যায় অতিক্রম করে যারা অগ্রসর হয় তাদেরকে গুটিকয় তাসবীহ, তাহলিল এবং দাঁড়ি পাগড়ীর মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে চায় এবং কুরআন থেকে যতদুর সম্ভব দূরে রাখতে চায়। এপর্যায়ে যারা অতিক্রম করে পূর্ণাংগ কুরআন তখা পূর্ণাংগ ইসলাম বাস্তবায়ন করতে চায় তাদেরকে ক্ষমতালোভী, অর্থসম্পদ লোভী, দুনিয়াদার এবং নানাধরনের কুৎসা রটনা করে তাদেরকে হেয় ও হীনবল করে তাদের অগ্রযাত্রা প্রতিহত করে দিতে চায়। এ পর্যায়ে এসে কাফের মুশরেক এমনকি বাহ্যিকভাবে ইসলামের নাম ব্যবহারকারী সকলে অভ্যন্তরীন এবং আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র একজোট হয়ে অংশগ্রহণ করে। ঠিক যেমনটি অত্র আয়াতে এবং অত্র সুরায় বর্ণনা করা হয়েছে। অতএব আমরা যারা কুরআনের অনুসারী বলে, মুসলিম বলে, ঈমানদার বলে নিজেদের দাবী করি তাদের কর্তব্য হলো সকল প্রকার চক্রান্ত, ষড়যন্ত্র বাধা অতিক্রম করে কুরআন নিজে বুঝা অন্যকেও বুঝার জন্য উৎসাহিত এবং ব্যবস্থা করা সাথে সাথে ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে কুরআনকে পূর্ণাংগরূপে বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করা। আল্লাহ পাক আমাদের সকলকে এই দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।সূরা আলে ইমরানে ইতিপূর্বে আহলি কিতাব অর্থাৎ ইয়াগুদী ও খৃষ্টানদের আকিদার ভ্রান্তি ও নৈতিক ত্রুটি সম্পর্কে সতর্কবাণী উচ্চারণ করে বলা হয়েছে- এই রাসূল (সঃ) ও এই কুরআন সেই দ্বীন-ইসলামের দিকেই আহবান জানাচ্ছে, যেদিকে প্রথম থেকেই সমগ্র নবীই (আঃ) আহবান জানিয়ে আসছেন। এবং যাহা প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর স্থায়ী প্রাকৃতিক বিধান অনুযায়ী একমাত্র সত্য জীবন ব্যবস্থা। এই দ্বীনের সহজ, সরল ও সঠিক পথ পরিত্যাগ করে যে পথই তোমরা অবলম্বন করেছ, তাহা তোমাদের স্বীকৃত আসমানী কিতাব সমূহের দৃষ্টিতেও সঠিক নহে। কাজেই এই মাহন সত্যকে গ্রহণ কর। যার সত্যতা তোমরা নিজেরাও অস্বীকার করতে পারনা। অত্র সূরারই ৬৪ নং আয়াতে এরশাদ হয়েছে-
“বল হে আহলি কিতাব, আস একটি কথার দিকে, যা তোমাদের ও আমাদের মধ্যে সম্পূর্ণ সমান; তা এই যে, আমরা উভয়েই আল্লাহ্ ছাড়া আর কারো বন্দেগী করব না, তাঁর সাথে কাউকে শরীক করব না, এবং আমাদের মধ্যে কেহ আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কাহাকেও নিজেদের রব বলে গ্রহণ করবো না। এই দাওয়াত কবুল করতে তারা যদি প্রস্তুত না হয় তবে পরিষ্কার বলে দাও, তোমরা স্বাক্ষী থাক আ- মরাতো মুসলিম (অর্থাৎ কেবলমাত্র এক আল্লাহ্র আনুগত্য ও বন্দেগীতে নিজেদেরকে সোপর্দ করে দিয়েছি)।”
অতঃপর ঈমানদারদেরকে পূর্ববর্তী উম্মতদের ধর্মীয় ও নৈতিক অধঃপতনের মর্মান্তিক চিত্র দেখিয়ে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে এবং উহাদের পদাঙ্ক অনুসরণ থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
আলোচ্য ১০০নং আয়াতটি এবং এর পরবর্তী আয়াতটিতে অত্যন্ত জোরালোভাবে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে যে, আমরা মুমিনগণ যদি আহলে কিতাবদের কোন একটি অংশেরও পদাঙ্ক অনুসরণ করি তাহলে তারা আমাদেরকে ঈমান থেকে শিরক ও কুফরীর দিকে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে। ঈমানের জন্য এর চেয়ে মারাত্মক
আর কি হতে পারে?
আমাদের বর্তমান পারিপার্শ্বিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপটে বিশেষত: পশ্চিমা সভ্যতা তথা আহলি কিতাব অর্থাৎ ইহুদী, খৃষ্টানদের আগ্রাসনের মুখে আলোচ্য আয়াতটি একটি আলোবর্তীকা হয়ে রয়েছে। তাদের যাবতীয় প্রচার প্রপাগান্ডা, নানামুখী চক্রান্ত, ষড়যন্ত্র বিশেষত: এন.জি.ও. নামধারীদের নানামুখী চক্রান্ত, ষড়যন্ত্রের মধ্যে আমাদেরকে এই আয়াত থেকে যথাযথ শিক্সা নিয়ে পথ চলতে হবে।
৪১:২৭ নং আয়াত:-
فَلَنُذِیۡقَنَّ الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا عَذَابًا شَدِیۡدًا ۙ وَّ لَنَجۡزِیَنَّہُمۡ اَسۡوَاَ الَّذِیۡ کَانُوۡا یَعۡمَلُوۡنَ ﴿۲۷﴾
আমি এসব কাফেরদের কঠিন শাস্তির মজা চাখাবো এবং যে জঘন্যতম তৎপরতা তারা চালিয়ে যাচ্ছে তার পুরো বদলা তাদের দেবো।
৪১:২৮ নং আয়াত:-
ذٰلِکَ جَزَآءُ اَعۡدَآءِ اللّٰہِ النَّارُ ۚ لَہُمۡ فِیۡہَا دَارُ الۡخُلۡدِ ؕ جَزَآءًۢ بِمَا کَانُوۡا بِاٰیٰتِنَا یَجۡحَدُوۡنَ ﴿۲۸﴾
প্রতিদানে আল্লাহর দুশমনরা যা লাভ করবে তা হচ্ছে দোযখ। সেখানেই হবে তাদের চিরদিনের বাসস্থান। তারা আমার আয়াতসমূহ অস্বীকার করতো। এটা তাদের সেই অপরাধের শাস্তি।
৪১:২৯ নং আয়াত:-
وَ قَالَ الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا رَبَّنَاۤ اَرِنَا الَّذَیۡنِ اَضَلّٰنَا مِنَ الۡجِنِّ وَ الۡاِنۡسِ نَجۡعَلۡہُمَا تَحۡتَ اَقۡدَامِنَا لِیَکُوۡنَا مِنَ الۡاَسۡفَلِیۡنَ ﴿۲۹﴾
সেখানে এসব কাফের বলবে, ‘হে আমাদের রব, সেই সব জিন ও মানুষ আমাদের দেখিয়ে দাও যারা আমাদের পথভ্রষ্ট করেছিলো। আমরা তাদের পদদলিত করবো, যাতে তারা লাঞ্ছিত ও অপমানিত হয়’।
-শানে নুযুল (নাযিল হওয়ার সময়কালও প্রেক্ষাপট)
নির্ভরযোগ্য বর্ণনার ভিত্তিতে বলা যায়, সূরা হামীম আস সেজদা নাযিল হয়েছিল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মাক্কী জীবনের প্রাথমিক কালে, হযরত হামযাহ (রা) ঈমান আনার পর এবং হযরত ওমর (রা) ঈমান আনার পূর্বে। নবী করীম, সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রাচীনতম জীবনী লেখক মুহাম্মদ ইবনে ইসহাক প্রখ্যাত তাবেয়ী মুহাম্মদ ইবনে কাআব আল কুরাসীর সুত্রে এই কাহিনটি বর্ণনা করেছেন যে একবার কতিপয় কুরাইশ সরদার কাবা ঘরে একত্রিত হয়ে বসেছিল। মসজিদে হারামের অপরদিকে এক কোনায় রাসূল্লাহু সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একাকী বসেছিলেন। এটা তখনকার কথা যখন হামযা (রা) ঈমান এনেছিলো এবং কুরাইশ কাফেররা মুসলমানের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে দেখে খুব শংকিত ও চিন্তান্বিত হয়ে পড়েছিল। এ সময় উৎত্তা ইবনে রাবীআ (আবু সুফিয়ানের শ্বশুর) কুরাইশ নেতাদের বলল, হে ভায়েরা আপনারা ভাল মনে করলে আমি গিয়ে মুহাম্মদের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাথে কথা বলে দেখতে পারি। আর তাঁর সামনে কয়েকটি প্রস্তাব রাখতে পারি। তিনি হয়তো তার কোনটি মেনে নিতে পারেন এবং আমাদের কাছেও তা গ্রহণযোগ্য হতে পারে। উপস্থিত সকলেই তার সাথে একমত হলো এবং উৎবা উঠে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে গিয়ে বসল। তিনি তার দিকে ফিরে বসলেন, তখন উৎবা বলল, ভাইপো জাতির মধ্যে তোমার বংশ মর্যাদা যে কত ভালো তা তুমি জান! কিন্তু তা সত্ত্বেও তুমি তোমার জাতীর উপর একটা বিপদ ডেকে এনেছ। তুমি আমাদের ঐক্যবদ্ধ সমাজে একটা ভাংগন সৃষ্টি করে দিচ্ছ। গোটা জাতীকে তুমি নির্বোধ প্রতিপন্ন করছ। জাতীর ধর্ম ও তার মাবুদদের তুমি মন্দ বলছ। আরো এমন সব কথা-বার্তা বলতে শুরু করে ছ যার অর্থ দাঁড়ায় আমাদের বাপ-দাদারা সকলে কাফের ছিল। এখন আমার কথা একটু মনোযোগ দিয়ে শোন। তোমার সামনে কয়েকটি’ প্রস্তাব পেশ করছি তা চিন্তা ও বিবেচনা করে দেখ। হয়তো তার কোন একটি তুমি মেনে নিতে পারবে।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জবাবে বললেন, “হে অলিদের পিতা! বলুন আমি শুনছি।” তখন সে বললো, “ভাইপো! তুমি এই যে কাজ শুরু করেছো এর দ্বারা যদি তোমার ধনসম্পদ লাভ করাই উদ্দেশ্য হয়ে থাকে, তাহলে আমরাসকলে একত্রিত হয়ে তোমাকে এতো ধন-সম্পদ দান করবো যে, তুমি আমাদের মধ্যে সবার চেয়ে সম্পদশালী ধনী হয়ে যাবে। আর তার দ্বারা যদি তোমার নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠিত করতে চাও তাহলে বলো আমরা তোমাকে আমাদের সরদার ও কর্তা করে নেব। তোমার কথা ছাড়া কোন বিষয়েই ফায়সালা হতে পারবেনা। আর যদি বাদশাহ হতে চাও, তাহলে আমরা তোমাকে বাদশাহ করে নেব। আর যদি তোমার উপর কোন জিনের প্রভাব পড়ে থাকে যাকে তুমি নিজে তাড়াতে পারনা, তাহলে আমরা সুদক্ষ চিকিৎসক ডেকে আনব এবং নিজ খরচেই তোমর চিকিৎসা করাব।”
উৎত্তা এসব কথা বলছিল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চুপচাপ বসে তার কথা শুনছিলেন। তারপর তিনি বললেন,” আবুল ওলীদ” আপনার যা কিছু বলার ছিল, তা কি বলেছেন?” সে বলল, হ্যাঁ বলেছি।” তখন তিনি বললেন, তাহলে আমার কথা শুনুন” অত:পর তিনি বিস্মিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ বলে এই সূরাটিই তেলাওয়াত শুরু করলেন। আর উৎবা নিজের দুখানা হাত পেছনে ঠেক লাগিয়ে গভীর মনোনিবেশ সহকারে শুনতে লাগলেন। এ সূরার সিজদার আয়াত-৩৮ আয়াত পর্যন্ত পড়ে সিজদা করলেন। পরে মাথা উঠিয়ে বললেন, “হে আবুল ওলীদ! আমার জওয়াব আপনি শুনতে পেলেন, এখন আপনি জানেন আপনার কাজ”
উৎত্তা উঠে কুরাইশ সরদারদের মজলিশের দিকে চলে গেল, দূর হতে লোকেরা দেখে বলে উঠল, “আল্লাহর কসম উৎবার চেহারা বদলে গেছে। যে চেহারা নিয়ে সে গিয়েছিল সে চেহারা নিয়ে সে ফিরে আসছেনা।” সে যখন এসে বসল তখন সকলে বলল, ” কি শুনে আসলে?” সে বলল, “আল্লাহর কসম আমি এমন বাণী শুনে এসেছি যা ইতিপূর্বে কখনই শুনতে পাইনি। আল্লাহর কসম, এ কবিতা নয়। যাদুর কথা নয়, গণকদারী নয়, হে করাইশ সরদাররা! আমার কথা শুন! এ ব্যক্তিকে তার অবস্থাতেই থাকতে দাও। আমি মনে করি এ কালাম সফল হবেই। তোমরা নিজেরা আরবরা যদি তার উপর বিজয়ী হতে পারো। তাহলে তোমরা নিজেরা নিজের ভায়ের উপর আক্রমন করা হতে রক্ষা পেলো, অন্য লোকেরা তার সংগে বোঝাপড়া করবে। কিন্তু সে যদি আরবদের উপর বিজয়ী হয় তাহলে তার রাজত্ব তো তোমাদেরই রাজত্ব হবে। তার ইজ্জত-সম্মান তোমাদেরই ইজ্জত-সম্মানের কারণ হবে কুরাইশ সরদাররা তার এ কথা শুনেই বলে উঠল! ওলীদের বাপ! শেষপর্যন্ত তোমার উপরও তার যাদুর প্রভাব পড়ল! উৎত্তা বলল, আমার মত আমি তোমাদের বললাম, এখন তোমাদের মনে যা হয় তা করতে থাক। (সীরাতে ইবনে হিসাম ১ম খন্ড পৃষ্ঠা- ৩১৩ -৩১৪)
এখানে লক্ষনীয় বর্তমানেও যে বা যারাই ইসলামের দিকে মানুষকে ডাকতে থাকে। তাকে বা তাদেরকেই বিরোধীরা মনে করে। “সে বা তারা ধনসম্পদ লাভ, অথবা, নেতৃত্ব-কর্তত্ব অথবা ক্ষমতা লাভ করার জন্যই এই আন্দোলন করছে।” সে অভিযোগ বা সন্দেহ কুরাইশ কাফেররা রাসূল সাল্লালআাহু আলাইহি ওয়অ সাল্লামের উপর করেছিল ঠিক একই অভিযোগ তারা বর্তমানে দায়ী ইলাল্লাহর বিরুদ্ধেও উত্থাপন করে। সুতরাং ইসলামের দায়ীদেরও একই ভুমিকা হয়ে যা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কুরাইশ কাফেরদের বিরুদ্ধে গ্রহণ করেছিলেন। অর্থাৎ তাদের মিথ্যা অপবাদ চরিত্র হনন এবং সকল প্রকার প্রলোভন এবং ভীতি প্রদর্শনের জবাবে খালেসভাবে আল্লাহর দিকে তাদের আহবান এবং কর্মতৎপরতা চালিয়ে যেতে হবে।
আলোচ্য আয়াত: আলোচ্য আয়াতটিতে কিয়ামতের সেই দৃশ্যের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে যখন বাহ্যিক সকল প্রকার পর্দা সরে যাবে এবং মানুষ ও জ্বীন প্রকৃত সত্যের মুখোমুখী হবে। তখন সকলেই হাশরের মাঠে মহান রাব্বুলআলামিনের দরবারে সমবেত হবে এবং সকলেই নিজেদের কর্মফলের অপেক্ষায় ভীত সন্ত্রস্ত থাকবে। সাধারণ মানুষ, যারা আজ দুনিয়ায় নিজেদের নেতা, সরদার, পীর ও শাসকদের অন্ধ অনুসারী এবং তাদের বিরুদ্ধে কোন উপদেশ দাতার কথায় কর্ণপাত করতে প্রস্তুত নয়, তারাই যখন প্রকৃত সত্য কি ছিল এবং তাদের নেতারা তাদের কি বুঝাছিল তা স্বচক্ষে দেখবে এবং যখন তারা একথা জানতে পারবে সে এ নেতাদের অনুসরণ তাদের কে চরমতম সর্বনাশ করেছে তখন তারা নিজেদের এসব মনীষীদের বিরুদ্ধে মারমুখো হবে এবং তাদের এই সর্বনাশের জন্য প্রতিশোধ নিতে চাইবে।
এই আয়াতের পূর্ববর্তী ২৭ নং আয়াতে বলা হয়েছে কাফেররা (বিশেষত কাফের সর্দাররা এই কুরআনের প্রচার ও প্রসারের বিরুদ্ধে নানা প্রকার চক্রান্ত ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করে রাখে। যাতে সাধারণ মানুষজন এই কুরআনের বানী শুনতে না পারে এবং এর অনুসরণকারী না হয়। তাদের বহুমুখী চক্রান্ত, ষড়যন্ত্র এবং প্রতারণার ফাঁদে পড়ে সাধারণ মানুষজন আল-কুরআন থেকে দূরে থাকে এবং পরিনামে পথভ্রষ্টতায় লিপ্ত থেকে আখেরাতে চূড়ান্ত পরিণতি জাহান্নাম তথা চরমতম সর্বনাশে পতিত হয়।
দুনিয়ায় এই জনসাধারণ মনের দিক দিয়ে এতো দুর্বল থেকেছে যে, মাথা উঁচু করে কখনো কথা বলতে পারেনি, কথা বলতে গেলে তাদের ঠোঁট কেঁপে উঠেছে। কিন্তু আখিরাতের আজ সকল মিথ্যা মর্যাদা শেষ হয়ে যাবে। সেদিন যারা দুর্বল ছিল, নানা চাপে পড়ে যারা দুনিয়াতে চুপ থাকত তারা আর চুপ থাকবেনা। এবং পৃথিবীর মত অবনত মাথায়ও থাকবেনা। বরং পৃথিবীর সেসব অহংকারী ও দাপট প্রদর্শনকারী যালেমদের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে তাদের সকল ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে দেবে। ছাফ ছাফ তাদের মুখের উপর তাদের সত্য বিরোধীতার কথা, তাদের হঠকারীতা ও সত্যকে গোপন করার কথা ঘোষনা করতে থাকবে। শক্তি-ক্ষমতা ব্যবহার করে অন্যায় কাজে মানুষকে উস্কানি দেয়ার কথা জানাতে থাকবে। অন্যায় কাজের দিকে মানুষকে এগিয়ে দেয়ার জন্য এবং মানুষকে পথভ্রষ্ট করার জন্য তারা তাদের সকল ক্ষমতা যেভাবে ব্যবহার করেছে সেসব কথা সেদিন সবই প্রকাশ করে দেয়া হবে।
হাশরের সেই ভয়ানক দিনে, তারা দেখবে দুনিয়ার বুকে অমুক অমুক যারা ক্ষমতার দাপট এবং যারা কিয়ামতের আযাব থেকে মানুষদেরকে বাঁচিয়ে নেবে বলে গলাবাজি করতো, তাদের কোনই ক্ষমতা নেই, তারা কোন বলদর্পী ও আত্মম্ভরী ব্যক্তিকে বাঁচাতে পারবেনা, না পারবে কোন দুর্বল ও অসহায় ব্যক্তিকে উদ্ধার করতে। প্রত্যেকেই তার নিজের ভুল-ভ্রান্তি ও ইচ্ছাকৃত অপরাধের জন্য দায়ী হবে। এই পরিবেশ পরিস্থিতিতে তারা চরম হতাশ ও ক্ষুদ্ধ হবে। তাই তারা তাদের এই চরম সর্বনাশকারী সর্দার, নেতা, পীর ও শাসকদের বিরুদ্ধে দাবী জানাবে, যারা তাদেরকে নানা প্রকার ছলে-বলে কৌশলে চাতুরী ও প্রতারনার জালে আবদ্ধ করে এই পরিনতির দিকে ঠেলে দিয়েছে তাদেরকে চুড়ান্তভাবে অপমানিত ও লাঞ্ছিত করতে চাইবে। তারা চাইবে তাদেরকে এই বিশ্ব সমাবেশে সকলের সামনে পদদলিত করে লাঞ্ছিত করতে। সেই সব জীন ও মানুষ যারা তাদেরকে এই কুরআনের বাণী শুনতে দেয় নাই তাদেরকে তারা পদতলে পিষ্ট করে তাদের মনের দুঃখ ও ক্ষোভ লাঘব করতে চাইবে। যদিও তাদেরকে ভুলপথে পরিচালনা কারীরা নিজেদের গুনাহের শাস্তির সাথে সাথে অন্যদেরকে ভুল পথে পরিচালনা করারশাস্তিও ভোগ করবে। কিন্তু তাদের অনুসারণকারীরা আল্লাহ প্রদত্ত বিবেক বুদ্ধি, এবং তাদেরকে সৎপথে আহবানকারী নবী, রাসূল ও সত্যপন্থীদের আহবানকে উপেক্ষা করার কারণে শাস্তি থেকে রক্ষা পাবেনা।
আল্লাহপাক আমাদের সকলকে বিভ্রান্তকারী সকল জ্বিন ও মানব শয়তান, গুমরাহ নেতা, সরদার, মাতব্বর ও গুমরাহ পীর এদের থেকে হেফাযত করে তাঁর কুরআন থেকে নিজেদের বিবেক বুদ্ধি কাজে লাগিয়ে সত্যকে জানার এবং সেই অনুযায়ী চলার তাওফিক দান করুন। এবং আখিরাতে জাহান্নামের আযাব থেকে রক্ষা করুন। আমিন।।
ফী জিলালিল কুরআন বলেছেন:-
*বিপথগামী নেতা ও তাদের অনুসারীদের পরিণতি : আর সেই নিকৃষ্ট সাথীদের অন্যতম প্রধান ভূমিকা হচ্ছে, ওরা তাদের সাথীদেরকে আল কোরআনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানাের জন্যে সদা-সর্বদা উস্কানি দিতে থাকে। কেননা তারা আল কোরআনের সম্মােহনী ক্ষমতা অনেক সময় তাদেরকে সত্যের পথে টেনে আনতে চায়। বলা হয়েছে, ‘কাফেররা বলে ওঠে, এ কোরআন তােমরা শুনাে না, গন্ডগোল করাে, এতেই হয়তাে তােমরা বিজয়ী হবে।’ কোরায়শ সর্দাররা পরস্পরকে এইভাবে উস্কানি দিতাে এবং সাধারণ মানুষকে এসব কথা বলে ধোকার মধ্যে ফেলে দিতাে। অথচ বাস্তবে কী হয়েছে? আল কোরআনের প্রভাব থেকে তারা না নিজেদেরকে মুক্ত রাখতে পেরেছে-আর না সাধারণ মানুষকে তারা আল কোরআনের প্রভাব বলয় থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে সক্ষম হয়েছে। এই জন্যেই রসূল(স.)-এর মিশনকে ব্যর্থ করতে গিয়ে শেষ চেষ্টা হিসেবে তারা বলে উঠলাে, তোমরা এ কুরআন শুনাে না আল কোরআনের সম্মােহনী শক্তি এমন ছিলাে যে এর কারণে তারা নিজেরা বশীভূত হয়ে যেতাে এবং তারা হতবুদ্ধি হয়ে যেতাে। তারা অনুভব করতাে, আল কোরআন তাদের কায়েমী ও সুবিধাবাদী সমাজকে ওলট পালট করে দিচ্ছ। পিতা ও পুত্রের এবং স্ত্রী ও স্বামীর মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে দিচ্ছে । অবশ্যই আল কোরআন সত্য ও মিথ্যার মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করছিলাে, সঠিক পথ ও বেঠিক পথের মধ্যে পার্থক্য মানুষদের জানিয়ে দিচ্ছিলাে। আল কোরআন অবতরণের ফলে তাদের অন্তরে নিষ্ঠা পয়দা হচ্ছিলাে এবং মানুষ অনুভব করছিলাে আল কোরআনের ভিত্তিতে গড়া সম্পর্ক ছাড়া অন্য কোনাে সম্পর্কই টেকসই নয়-মূলত এইই ছিলাে আল কোরআনের পার্থক্য নির্ণয়কারীর ভূমিকা। আর এই কারণেই ওরা বলতাে। ‘গন্ডগােল করার মাধ্যমে হয়তাে তােমরা জয়ী হবে।’ এটা ছিলাে নবী(স.)-এর জন্যে একটা ভীষণ কঠিন অবস্থা। বাধ্য হয়ে তারা এই পন্থা অবলম্বন করেছিলাে, কেননা কোরআন তাদের আত্মমর্যাদার ওপর আঘাত হেনেছিলাে। তাই তারা সঠিক যুক্তি বা প্রমাণ দ্বারা আল কোরআনের মােকাবেলা করতে তারা অক্ষম হওয়ার কারণে অবশেষে এই কূট-বুদ্ধি অবলম্বন করেছিলাে এবং দৰ্পভরে ঈমান থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করছিলাে। আল কোরআনের মহা আকর্ষণ থেকে দূরে থাকার ও অপরকে দূরে রাখার দুরভিসন্ধি নিয়ে। তারা মালেক ইবনে নাদরের অপচেষ্টার মতে, ইসকানদারিয়া ও রুস্তমের বহু কল্প কাহিনী রচনা করেছিলাে, কেননা সেইগুলাের মাধ্যমে মানুষের মনােযােগ আকৃষ্ট করে রাখা যায়। আল কোরআন থেকে মানুষের মনােযােগ দূরে সরিয়ে দেয়ার জন্যে তারা ছােট বড় ছন্দময় বহু কবিতাও রচনা করে ফেলেছিলাে। সেগুলাে খুব সুর দিয়ে গাইতাে, কখনও নবী(স.)-এর প্রতি বিদ্রুপ বাণ নিক্ষেপ করতাে। কিন্তু এ সব অপচেষ্টা সবই ব্যর্থতায় পর্যবসিত হলাে এবং আল কোরআন তার মায়াময় মহিমায় আরও সুন্দর আরও আকর্ষণীয় ও আরও বেশী উজ্জল হয়ে মানুষের কাছে তার মধুময় আবেদন রাখতে সক্ষম হলাে। আল কোরআনই ছিলাে আল্লাহ রব্বুল আলামীনের প্রেরিত কিতাব। এ কিতাব এসেছে সত্য সহ এবং এ কিতাবের মাধ্যমে সত্যের বিজয় অবশ্যম্ভাবী, তাই বাতিলপন্থীরা একে পর্যুদস্ত করার জন্যে যতাে চেষ্টাই চালাক না কেন তা ব্যর্থ হবেই। অতপর তাদের অপ্রিয় কথাগুলাে রদ করে দিয়ে তাদের প্রতি কঠোর ধমক আসছে। বলা হচ্ছে, ‘আমি অবশ্যই কাফেরদেরকে কঠিন আযাবের স্বাদ গ্রহণ করাবাে। যে অন্যায় কাজ তারা করেছে তার নিকৃষ্ট প্রতিদান দেবো।’ শীঘ্রই আমরা তাদেরকে দোযখের আগুনের মধ্যে দেখতে পাবেন এবং দেখবাে ধােকা খাওয়ার কারণে আজ তারা কতাে ভীষণভাবে অপমানিত হচ্ছে। এদেরকে এদের সাথীরা সামনে এবং পেছন থেকে এসে এদের পাপ কাজগুলােকে সুন্দর করে দেখিয়েছে, আজকের এই ধ্বংসাত্মক পরিণতি সম্পর্কে এদের সদা সর্বদা ধোকার মধ্যে রেখেছে এবং বলেছে, পরকাল বা হিসাব নিকাশ কিছুই হবে না, মরে গেলে তাে সবই শেষ হয়ে যাবে। তাদের কথা উদ্ধৃত করতে গিয়ে জানানাে হচ্ছে, ‘আর কাফেররা বলবে, হে আমাদের রব, আমাদেরকে জ্বিন ও মানবজাতির সেসব লােকদের দেখিয়ে দাও, যারা আমাদের পথভ্রষ্ট করেছে। যাতে করে আজ আমরা তাদেরকে পায়ের নীচে ফেলে মাড়াতে পারি, যাতে করে তারা সব থেকে অপদস্থ ব্যক্তিদের মধ্যে গণ্য হয়ে যায়।’ ওপরের আয়াতে কেয়ামতের দিন তারা কতাে ভীষণভাবে রেগে যাবে তারই একটি ছবি তুলে ধরা হয়েছে, প্রতিশােধের আগুনে কিভাবে তারা জ্বলবে তার একটি জীবন্ত দৃশ্যের চিত্র আকা হয়েছে। বলা হচ্ছে, পায়ের নীচে ফেলে মাড়িয়ে মারবাে যাতে করে তারা সব থেকে নিকৃষ্ট এক প্রাণীতে পরিণত হয়ে যায়।’ এই ভীষণ আক্রোশের ফলে তাদের নিকট থেকে তারা ঝরে পড়বে, যারা এককালে তাদের বড়ই আপনজন ছিলাে, ভালোবাসার পাত্র, অত্যন্ত বিশ্বস্ত ও অন্তরংগ বন্ধু-খয়েরখাহ ছিলাে। যারা অন্যায় কাজে নানাভাবে প্রেরণা যুগিয়েছে এবং তাদের মন্দ কাজ ও আচরণগুলােকে সুন্দর করে দেখিয়েছে।
তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ বলেছেন:-
২৬-২৯ নম্বর আয়াতের তাফসীর :
কাফিররা পরস্পর বলে তোমরা কুরআন শুনিও না বরং তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নাও এবং কুরআন তিলাওয়াত কালে শোরগোল সৃষ্টি করবে। তাহলে তোমরা সফলকাম হবে। আল্লাহ তাদের এসব অপকর্মের জন্য কঠিন শাস্তি আস্বাদন করাবেন এবং খুব খারাপ প্রতিদান দেবেন।
সুতরাং কুরআন তিলাওয়াতকালে হৈ হুল্লা করা যাবে না বরং তা মনোযোগসহকারে শুনতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
(وَإِذَا قُرِئَ الْقُرْاٰنُ فَاسْتَمِعُوْا لَه۫ وَأَنْصِتُوْا لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُوْنَ )
“যখন কুরআন পাঠ করা হয় তখন তোমরা মনোযোগের সাথে সেটা শ্রবণ করবে এবং নিশ্চুপ হয়ে থাকবে যাতে তোমাদের প্রতি দয়া করা হয়।” (সূরা আ‘রাফ ৭ : ২০৪)
সুতরাং যারাই কুরআন পাঠকালে হৈ হুল্লা করবে, শোরগোল সৃষ্টি করবে তাদের জন্য থাকবে কঠিন ও লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি। কুরআন তেলাওয়াতকালে শোরগোল সৃষ্টি করা কাফির-মুশরিকদের কাজ।
কিয়ামত দিবসে কাফিররা বলবে, হে আমাদের রব! যারা দুনিয়াতে আমাদেরকে পথভ্রষ্ট করেছে তাদেরকে দেখিয়ে দিন, আমরা তাদেরকে পদদলিত করে খুব লাঞ্ছিত ও অপদস্থ করি। জাহান্নামীরা যেসব পথভ্রষ্ট নেতাদের অনুসরণ করত তাদের ওপর যে রাগ হবে তা মিটানোর জন্য তারা এ কথা বলবে। অথচ তারা সকলেই অপরাধী এবং সকলেই একই সাথে জাহান্নামে শাস্তি ভোগ করবে।
আল্লাহ তা‘আলার বাণী : “আল্লাহ বলবেন, ‘তোমাদের পূর্বে যে জিন ও মানবদল গত হয়েছে তাদের সাথে তোমরা জাহান্নামে প্রবেশ কর’। যখনই কোন দল তাতে প্রবেশ করবে তখনই অপর দলকে তারা অভিসম্পাত করবে, এমনকি যখন সকলে তাতে একত্রিত হবে তখন তাদের পরবর্তীগণ পূর্ববর্তীদের সম্পর্কে বলবে, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! এরাই আমাদেরকে পথভ্রষ্ট করেছিল; সুতরাং এদেরকে দ্বিগুণ আগুনের শাস্তি দাও। ‘আল্লাহ বলবেন, ‘প্রত্যেকের জন্য দ্বিগুণ রয়েছে, কিন্তু তোমরা জান না।’ (সূরা আ‘রাফ ৭ : ৩৮)
অতএব যে সকল মানুষ ও জিন শয়তান আল্লাহ তা‘আলার সাথে কুফরী করার জন্য সে পথকে চাকচিক্যময় করে তুলে ধরে তাদের থেকে আমাদের সাবধান থাকতে হবে। কারণ কিয়ামতের দিন তাদের দোষারোপ করে নিজেকে জাহান্নাম থেকে রক্ষা করা যাবে না।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয় :
১. শয়তানের অনুসরণ করা যাবে না, কারণ সে মানুষকে জাহান্নামে নিয়ে যাওয়ার জন্য আল্লাহ তা‘আলার কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
২. জিন্দের মধ্যে যেমন শয়তান রয়েছে তেমনি মানুষের মধ্যেও শয়তান রয়েছে, তবে মানুষ শয়তান জিন শয়তানের চেয়ে অধিক ক্ষতিকর।
৩. কুরআন পাঠকালে গান-বাজনা, হৈ হুল্লা করা যাবে না, বরং মনযোগসহকারে শুনতে হবে।
৪. যার যার কার্যের শাস্তি তাকেই ভোগ করতে হবে।
তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-
২৬-২৯ নং আয়াতের তাফসীর:
কাফিররা পারস্পরিক পরামর্শক্রমে এই ঐকমত্যে পৌঁছেছিল যে, তারা আল্লাহর কালামকে মানবে না এবং এর হুকুমের আনুগত্য করবে না। বরং তারা একে অপরকে বলে দেয় যে, যখন কুরআন পাঠ করা হবে তখন যেন শোরগোল ও হৈ চৈ শুরু করে দেয়া হয়। যেমন হাততালি দেয়া, বাঁশী বাজানো এবং চিৎকার করা। কুরায়েশরা তাই করতো। তারা দোষারোপ করতো, অস্বীকার করতো, শত্রুতা করতো এবং এটাকে নিজেদের বিজয় লাভের কারণ মনে করতো। প্রত্যেক অজ্ঞ, মূর্খ কাফিরের এই একই অবস্থা যে, তার কুরআন শুনতে ভাল লাগে না। এজন্যেই এর বিপরীত করতে আল্লাহ তা’আলা মুমিনদের নির্দেশ দিয়ে বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “যখন কুরআন পাঠ করা হয় তখন তোমরা তা শুনো ও চুপ থাকো, যাতে তোমাদের উপর দয়া করা হয়।”(৭:২০৪)।
ঐ কাফিরদেরকে ধমকানো হচ্ছে যে, কুরআন কারীমের বিরোধিতা করার কারণে তাদেরকে কঠিন শাস্তি প্রদান করা হবে। আর অবশ্যই তারা তাদের দুষ্কর্মের শাস্তি আস্বাদন করবে। আল্লাহর এই শত্রুদের বিনিময় হলো জাহান্নামের আগুন। এর মধ্যেই রয়েছে তাদের জন্যে স্থায়ী আবাস, আল্লাহর নিদর্শনাবলী অস্বীকৃতির প্রতিফল স্বরূপ।
এর পরবর্তী আয়াতের ভাবার্থ হযরত আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, এখানে ‘জ্বিন’ দ্বারা ইবলীস এবং ইনস’ (মানুষ) দ্বারা হযরত আদম (আঃ)-এর ঐ সন্তানকে বুঝানো হয়েছে যে তার ভাইকে হত্যা করেছিল।
অন্য রিওয়াইয়াতে আছে যে, ইবলীস তো প্রত্যেক মুশরিককে ডাক দিবে, আর হযরত আদম (আঃ)-এর এই সন্তানটি প্রত্যেক কাবীরা গুনাহকারীকে ডাক দিবে। সুতরাং ইবলীস শিরক এবং সমস্ত পাপকার্যের দিকে মানুষকে আহ্বানকারী এবং প্রথম রাসূল হযরত আদম (আঃ)-এর যে ছেলেটি তার ভাইকে হত্যা করেছিল সেও এই কাজে শরীক রয়েছে। যেমন হাদীসে এসেছেঃ “ভূ-পৃষ্ঠে যত অন্যায় হত্যাকাণ্ড ঘটতে আছে এর প্রত্যেকটার পাপ হযরত আদম (আঃ)-এর এই প্রথম ছেলের উপরও চেপে থাকে। কেননা, সে-ই প্রথম হত্যাকাস্ত্রে সূচনাকারী।”
সুতরাং কিয়ামতের দিন কাফিররা তাদেরকে পথভ্রষ্টকারী দানব ও মানবদেরকে নিম্নস্তরের জাহান্নামের মধ্যে প্রবেশ করাতে চাইবে, যাতে তাদের শাস্তি কঠিন হয় এবং তারা অত্যন্ত লাঞ্ছিত হয়। মোটকথা, তাদের চেয়ে ওদের শাস্তি যেন বহুগুণে বেশী হয় এটাই তারা কামনা করবে। যেমন সূরায়ে আ’রাফে এ বর্ণনা গত হয়েছে যে, কিয়ামতের দিন অনুসারীরা অনুসৃতদের দ্বিগুণ শাস্তির জন্যে আল্লাহ তা’আলার নিকট আবেদন করবে, তখন উত্তরে বলা হবেঃ (আরবী) অর্থাৎ “প্রত্যেকের জন্যেই দ্বিগুণ শাস্তি, কিন্তু তোমরা জান না।”(৭:৩৮) অর্থাৎ প্রত্যেককেই তার আমল অনুযায়ী শাস্তি দেয়া হবে। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “যারা কুফরী করেছে ও আল্লাহর পথ হতে বিরত রেখেছে, তাদেরকে আমি তাদের বিপর্যয় সৃষ্টির কারণে শাস্তির উপর শাস্তি বৃদ্ধি করবো।” (১৬:৮৮)
তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
# মক্কার কাফেররা যেসব পরিকল্পনার মাধ্যমে নবী ﷺ এর আন্দোলন ও তাঁর প্রচারকে ব্যর্থ করে দিতে চাচ্ছিলো এটি ছিল তারই একটি। কুরআন কি অসাধারণ প্রভাব ক্ষমতার অধিকারী, কুরআনের দাওয়াত পেশকারী ব্যক্তি কেমন অতুলনীয় মর্যাদা সম্পন্ন মানুষ এবং তাঁর এহেন ব্যক্তিত্বের সাথে উপস্থাপনার ভঙ্গি কেমন বিস্ময়করভাবে কার্যকর তা তারা ভালো করেই জানতো। তারা মনে করতো, এ রকম উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন ব্যক্তির মুখ থেকে এমন হৃদয়গ্রাহী ভঙ্গিতে এই নজিরবিহীন বাণী যেই শুনবে সে শেষ পর্যন্ত ঘায়েল হবেই। অতএব তারা পরিকল্পনা করলো, এ বাণী না নিজে শুনবে, না কাউকে শুনতে দেবে। মুহাম্মাদ ﷺ যখনই তা শুনাতে আরম্ভ করবেন তখনই হৈ চৈ করবে। তালি বাজাবে, বিদ্রূপ করবে, আপত্তি ও সমালোচনার ঝড় তুলবে এবং চিৎকার জুড়ে দেবে যেন তার মধ্যে তাঁর কথা হারিয়ে যায়। তারা আশা করতো, এই কৌশল অবলম্বন করে তারা আল্লাহর নবীকে ব্যর্থ করে দেবে।
# পৃথিবীতে তো এরা তাদের নেতৃবৃন্দ ও প্রতারক শয়তানদের ইঙ্গিতে নাচছে, কিন্তু কিয়ামতের দিন যখন বুঝতে পারবে এসব নেতা তাদের কোথায় এনে দাঁড় করিয়েছে তখন এরাই আবার তাদেরকে অভিশাপ দিতে থাকবে এবং চাইবে কোনভাবে তাদেরকে হাতের কাছে পেলে পায়ের নীচে ফেলে পিষ্ট করতে।