بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ (বই#১১০১)[*  *আইন প্রণয়নে আল্লাহর সাথে শিরক করা : -] www.motaher21.net সূরা:৪২:আশ-শূরা পারা:২৫ ২১-২৪ নং আয়াত:-

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(বই#১১০১)[*  *আইন প্রণয়নে আল্লাহর সাথে শিরক করা : -]
www.motaher21.net
সূরা:৪২:আশ-শূরা
পারা:২৫
২১-২৪ নং আয়াত:-
সূরা:৪২:আশ-শূরা-২১
اَمۡ لَہُمۡ شُرَکٰٓؤُا شَرَعُوۡا لَہُمۡ مِّنَ الدِّیۡنِ مَا لَمۡ یَاۡذَنۡۢ بِہِ اللّٰہُ ؕ وَ لَوۡ لَا کَلِمَۃُ الۡفَصۡلِ لَقُضِیَ بَیۡنَہُمۡ ؕ وَ اِنَّ الظّٰلِمِیۡنَ لَہُمۡ عَذَابٌ اَلِیۡمٌ ﴿۲۱﴾
এসব লোক কি আল্লাহর এমন কোন শরীকে বিশ্বাস করে যে এদের জন্য দ্বীনের মত এমন একটি পদ্ধতি নির্ধারিত করে দিয়েছে আল্লাহ যার অনুমোদন দেননি? যদি ফায়সালার বিষয়টি পূর্বেই মীমাংসিত হয়ে না থাকতো তাহলে তাদের বিবাদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দিয়ে দেয়া হতো। এ জালেমদের জন্য নিশ্চিত কষ্টদায়ক শাস্তি রয়েছে।
সূরা:৪২:আশ-শূরা-২২
تَرَی الظّٰلِمِیۡنَ مُشۡفِقِیۡنَ مِمَّا کَسَبُوۡا وَ ہُوَ وَاقِعٌۢ بِہِمۡ ؕ وَ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا وَ عَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ فِیۡ رَوۡضٰتِ الۡجَنّٰتِ ۚ لَہُمۡ مَّا یَشَآءُوۡنَ عِنۡدَ رَبِّہِمۡ ؕ ذٰلِکَ ہُوَ الۡفَضۡلُ الۡکَبِیۡرُ ﴿۲۲﴾
তোমরা দেখতে পাবে, সে সময় এসব জালেম তাদের কৃতকর্মের ভয়াবহ পরিণামের আশঙ্কা করতে থাকবে। আর সে পরিণাম তাদের জন্য আসবেই। পক্ষান্তরে যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে তারা জান্নাতের বাগ-বাগিচার মধ্যে অবস্থান করবে। তারা যা-ই চাইবে তা-ই তাদের রবের কাছে পাবে। এটাই বড় মেহেরবানী।
সূরা:৪২:আশ-শূরা-২৩
ذٰلِکَ الَّذِیۡ یُبَشِّرُ اللّٰہُ عِبَادَہُ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا وَ عَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ ؕ قُلۡ لَّاۤ اَسۡـَٔلُکُمۡ عَلَیۡہِ اَجۡرًا اِلَّا الۡمَوَدَّۃَ فِی الۡقُرۡبٰی ؕ وَ مَنۡ یَّقۡتَرِفۡ حَسَنَۃً نَّزِدۡ لَہٗ فِیۡہَا حُسۡنًا ؕ اِنَّ اللّٰہَ غَفُوۡرٌ شَکُوۡرٌ ﴿۲۳﴾
এটাই সেই জিনিস যার সুসংবাদ আল্লাহ‌ তাঁর সেই সব বান্দাদের দেন যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে। হে নবী, এসব লোককে বলে দাও, এ কাজের জন্য আমি তোমাদের কাছে কোন পারিশ্রমিক চাই না।তবে আত্মীয়তার ভালবাসা অবশ্যই চাই। যে কল্যাণ উপার্জন করবে আমি তার জন্য তার সেই কল্যাণের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে দেব। নিশ্চয়ই আল্লাহ‌ বড় ক্ষমাশীল ও নেক কাজের মর্যাদাদাতা।
সূরা:৪২:আশ-শূরা-২৪
اَمۡ یَقُوۡلُوۡنَ افۡتَرٰی عَلَی اللّٰہِ کَذِبًا ۚ فَاِنۡ یَّشَاِ اللّٰہُ یَخۡتِمۡ عَلٰی قَلۡبِکَ ؕ وَ یَمۡحُ اللّٰہُ الۡبَاطِلَ وَ یُحِقُّ الۡحَقَّ بِکَلِمٰتِہٖ ؕ اِنَّہٗ عَلِیۡمٌۢ بِذَاتِ الصُّدُوۡرِ ﴿۲۴﴾
নাকি তারা বলে যে, সে আল্লাহ্ সম্পর্কে মিথ্যা উদ্ভাবন করেছে, যদি তা-ই হত তবে আল্লাহ্ ইচ্ছে করলে আপনার হৃদয় মোহর করে দিতেন। আর আল্লাহ্ মিথ্যাকে মুছে দেন এবং নিজ বাণী দ্বারা সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করেন। নিশ্চয় অন্তরসমূহে যা আছে সে বিষয়ে তিনি সবিশেষ অবগত।

ফী জিলালিল কুরআন বলেছেন:-

*আইন প্রণয়নে আল্লাহর সাথে শিরক করা : এরপর প্রসংগ চলে যাচ্ছে আদি সত্যের দিকে। বলা হচ্ছে, তাদের কি এমন শরীক দেবতা আছে যারা তাদের জন্যে এমন জীবন ব্যবস্থা প্রণয়ন করে…'(আয়াত ২১-২৩) ইতিপূর্বে বলা হয়েছে যে, মুসলিম উম্মার জন্যে যে বিধান আল্লাহ তায়ালা প্রবর্তন করেছেন তা হচ্ছে সেই বিধান যা মেনে চলার জন্যে নূহ, ইবরাহীম, মূসা এবং ঈসা(আ.) প্রমুখ নবী। রসূলরা নিজ নিজ জাতি ও সম্প্রদায়কে উপদেশ দিয়ে গিয়েছেন। আর একই বিধান সর্বশেষ নবী মােহাম্মদ(স.)-কেও দান করা হয়েছে। এখন আলােচ্য আয়াতে নিন্দার সুরে প্রশ্ন করা হচ্ছে, যদি এই বিধান স্বয়ং আল্লাহ তায়ালাই প্রবর্তন না করে থাকেন, তাহলে কে করলাে? আল্লাহর কোনাে শরীক দেবতা এ কাজ করেছে কি? আসলে সৃষ্টিজগতে এমন কেউ নেই যাকে আল্লাহ তায়ালা প্রবর্তিত বিধানের বিরােধী কোনাে বিধান প্রবর্তন করার অনুমতি দেয়া হয়েছে, সে যে কেউ হােক না কেন। কারণ, একমাত্র আল্লাহ তায়ালাই তাঁর বান্দাদের জন্যে বিধান রচনা করার অধিকার রাখেন। যেহেতু স্বয়ং আল্লাহ তায়ালাই এই গােটা জগতের সৃষ্টিকর্তা এবং বিশেষ নিয়মের মাধ্যমে এর পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছেন, আর যেহেতু মানবজীবন জগত নামক এই বিশাল চাকারই একটা ক্ষুদ্র অংশ, কাজেই এই জীবনকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্যে এমন বিধানের প্রয়ােজন যা হবে সেই বিশেষ প্রাকৃতিক নিয়মের সাথে সংগতিপূর্ণ। এ জাতীয় বিধান রচনা করা কেবল এমন সত্ত্বার পক্ষেই সম্ভব যিনি প্রাকৃতিক নিয়মগুলাের ব্যাপারে সম্যক জ্ঞাত। আল্লাহ তায়ালা ব্যতীত এমন জ্ঞানের অধিকারী যে আর কেউ নেই, তা বলাই বাহুল্য। অন্য সবার জ্ঞান অসম্পূর্ণ। তাই অসম্পূর্ণ জ্ঞানের অধিকারী। কাউকে মানব জীবন নিয়ন্ত্রণ করার মত বিধান রচনার গুরুদায়িত্ব দেয়া যেতে পারে না। এই স্বতঃসিদ্ধ বাস্তব সত্য সুস্পষ্ট হওয়া সত্তেও অনেকেই সেই ব্যাপারে তর্কে লিপ্ত হয়, অথবা সেটাকে যথেষ্ট বলে মেনে নিতে পারে না। তারা আল্লাহর আইনের বাইরেও আইন রচনা করার ধৃষ্টতা দেখায়। তাদের ধারণা, এর মাধ্যমে তারা দেশ ও জাতির মংগল সাধন করছে এবং ও জাতির চাহিদা ও প্রয়ােজনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ আইন রচনা করছে। ভাবখানা যেন এই যে, তারা তাদের দেশ ও জাতির অবস্থা ও প্রয়ােজন সম্পর্কে আল্লাহর চেয়েও বেশী জ্ঞাত। অথবা আল্লাহ তায়ালা ছাড়াও তাদের আরও শরীক দেবতা আছে যারা আল্লাহর আইনের বাইরেও আইন রচনা করার অধিকার রাখে। এদের চেয়ে হতভাগা আর কে হতে পারে? এদের চেয়ে আল্লাহর সামনে বড় ধৃষ্টতা প্রদর্শনকারী আর কে হতে পারে। আল্লাহ তায়ালা মানুষের স্বভাব, প্রকৃতি, পরিবেশ ও পরিস্থিতির প্রতি লক্ষ্য রেখেই তাদের। জন্যে উপযােগী আইন প্রণয়ন করেছেন। এই আইন ও বিধান একাধারে তাদের পরস্পরের মাঝে সর্বোচ্চ সহযােগিতার জন্ম দেবে এবং একই সাথে গােটা বিশ্বজগতের অন্যান্য শক্তির মাঝেও একটা সহযােগিতার বন্ধন সৃষ্টি করবে। তাছাড়া তিনি কেবল মৌলিক নীতিগুলােই নির্ধারণ করে দিয়েছেন এবং মানুষকে তার নতুন নতুন চাহিদা ও প্রয়ােজনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ খুঁটি নাটি বিধান এই মূলনীতি থেকেই গ্রহণ করার স্বাধীনতা দিয়ে রেখেছেন। তবে এই গ্রহণ হতে হবে সামগ্রিক পদ্ধতি ও সাধারণ নিয়মের সীমারেখার ভেতর থেকে। সেই ব্যাপারে মানুষের মধ্যে মতবিরােধ দেখা দিলে তার নিষ্পত্তি হতে হবে সেই মূলনীতিরই আলােকে যা আল্লাহ তায়ালা মানুষের জন্যে মানদন্ডস্বরূপ প্রণয়ন ও প্রবর্তন করেছেন। এই মূলনীতি মেনে চললে সংবিধানের উৎস হবে এক এবং শাসন ও বিচার হবে একমাত্র আল্লাহরই। কারণ তিনিই হচ্ছেন সর্বশ্রেষ্ঠ শাসক ও বিচারক। আর এই মূলনীতিকে পাশ কাটিয়ে যে বিধান রচনা করা হবে তা হবে আল্লাহর আইনের বিরােধী, আল্লাহর দ্বীনের বিরােধী এবং সেই আদর্শের বিরােধী যার প্রচার করে গেছেন নূহ, ইবরাহীম, মূসা, ঈসা এবং স্বয়ং মােহাম্মদ(স.) সহ আল্লাহর অন্যান্য নবী-রসূলরা। এরপর বলা হচ্ছে, যদি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না থাকতাে, তবে তাদের ব্যাপারে ফয়সালা হয়ে যেতাে… অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালা সিদ্ধান্ত করে রেখেছেন যে, এদের বিচার শেষ বিচারের দিনই হবে। তাই এখন এদেরকে একটু সুযােগ দেয়া হয়েছে। যদি আল্লাহর পূর্ব সিদ্ধান্ত না থাকতাে, তাহলে তাদের একটা ফয়সালা এই পৃথিবীর বুকেই হয়ে যেতাে, ফলে তিনি তাঁর প্রবর্তিত আইনের ও বিধানের বিরােধিতাকারী এবং মানবরচিত সংবিধান তথা আইনের অনুসারীদেরকে তাৎক্ষণিকভাবে পাকড়াও করতেন এবং তাদেরকে শাস্তির সম্মুখীন করতেন। কিন্তু তিনি তাদেরকে শেষ বিচারের দিন পর্যন্ত ছেড়ে দিয়েছেন। তবে পরকালে তাদেরকে অবশ্যই বেদনাদায়ক শাস্তি ভােগ করতে হবে। বলা হয়েছে, ‘নিশ্চয় যালেমদের জন্যে রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি’ এই যালেম কারা? এই যালেম হচ্ছে তারা, যারা আল্লাহর আইনের বিরােধিতা করে এবং মানবরচিত আইনকে মেনে চলে। কেয়ামতের দিন এই যালেমদের যে কি করুণ অবস্থা হবে, তা পরবর্তী আয়াতে বলা হয়েছে। যেমন, ‘তুমি কাফেরদেরকে তাদের কৃতকর্মের জন্যে ভীতসন্ত্রস্ত দেখবে…'(আয়াত ২২) বর্ণনা ভংগির মাধ্যমে তাদের এই করুণ অবস্থা যেভাবে চিত্রায়িত করা হয়েছে তাতে মনে হয়, ওদের কৃতকর্মই যেন ওদের সামনে ভয়ংকর রূপ ধারণ করে ভীতি ও ত্রাসের সৃষ্টি করবে। অথচ জাগতিক জীবনে এসব কর্মই ছিলাে তাদের জন্যে আনন্দের বিষয়, গর্বের বিষয়। আর আজ এসব কর্মই তাদের জন্যে ভয় ভীতির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে এবং মনে হচ্ছে, সেইগুলােই যেন আযাবের রূপ ধারণ করে তাদেরকে গ্রাস করে ফেলবে। এ থেকে তাদের যেন কোনাে মুক্তি নেই। অপরদিকে যারা মােমেনবান্দা, যারা এই দিনটিকে ভয় করতাে, আজ তারা নিরাপদে আছে, শান্তিতে আছে ও সুখে আছে। তাদের সম্পর্কে বলা হয়েছে, আর যারা মােমেন ও সৎকর্মী তারা জান্নাতের উদ্যানে থাকবে…।'(আয়াত ২২) আলােচ্য আয়াতের বর্ণনা ভংগির মাধ্যমে যে ব্যঞ্জনা ফুটে উঠেছে তাতে সুখ ও শান্তির চিত্রই দেখতে আমরা পাই। যেমন ‘জান্নাতের উদ্যান’ ‘তাদের পালনকর্তার কাছে তাদের জন্যে রয়েছে যা তারা কামনা করবে…’ অর্থাৎ অগণিত ও অসংখ্য নেয়ামত তাদের জন্যে রয়েছে। ‘এটাই হচ্ছে মহা অনুগ্রহ’ এরই সুসংবাদ দেন আল্লাহ তায়ালা তার বান্দাদেরকে….’ এসব বক্তব্যে মােমন বান্দাদের পরকালীন জীবনের সুখ শান্তি ও সমৃদ্ধির চিত্রই লক্ষ্য করা যায়।

*দ্বীনের দায়ীদের জন্যে একটি বিশেষ নির্দেশনা : সুখ সমৃদ্ধি ও আরাম আয়েশের এই দৃশ্যের পাশাপাশি রসূলুল্লাহ(স.)-কে একটা বিশেষ উপদেশ প্রদান করা হচ্ছে। আর তা হচ্ছে এই যে, তিনি যেন হেদায়াত ও দাওয়াতের কোনাে বিনিময় তাদের কাছে কামনা না করেন। এই হেদায়াত ও দাওয়াতের বদৌলতেই তারা জান্নাতের অগণিত লাভে সক্ষম হয়েছে এবং জাহান্নামের আযাব থেকে রক্ষা পেয়েছে। এটা নিসন্দেহে তাদের প্রতি রসূলের বিরাট দয়া। এই দয়া তার সাথে সম্পর্ক রাখার ফলেই তারা লাভ করতে পেরেছে। আর এটাই রসূলের বড় পাওনা। বলা হচ্ছে, ‘বলাে, আমি আমার দাওয়াতের কোনাে বিনিময় তােমাদের কাছে চাই না, চাই কেবল আত্মীয়তা জনিত সৌহার্দ…'(আয়াত ২৩) আলােচ্য আয়াতে রসূলুল্লাহ(স)-কে কোনােরূপ বিনিময় কামনা না করার উপদেশ দেয়া হয়েছে। তিনি তাই বিনিময় কামনা করেছেন না। এর ফলে হৃদ্যতা ও সৌহার্দ লাভ হবে। আমরা জানি যে, কোরায়শ বংশের বিভিন্ন পরিবারের সাথে রসূলুল্লাহ (স.)-এর আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিলাে। আর এই আত্মীয়তার কারণে তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিলেন। তাই তিনি তাদেরকে সত্যপথে পরিচালিত করতে চাইতেন। এটাই ছিলাে তার বড় পাওয়া। আয়াতটি যে যে ক্ষেত্রে এসেছে সেসব ক্ষেত্রের প্রতি লক্ষ্য রেখে আমি যখন এর অর্থ করি তখন সেই উপরের ব্যাখ্যাটায়ই আমার মনে আসে। অবশ্য এর আর একটি ব্যাখ্যা আছে যা, ইবনে আব্বাস(রা.)-এর বরাত দিয়ে ইমাম বোখারী উল্লেখ করেছেন। সেটা আমি এখানে উল্লেখ করছি। এতে বলা হয়েছে যে, একবার তাউস ইবনে আব্বাস(রা.)-কে ‘আত্মীয়তাজনিত সৌহার্দ’ এর ব্যাখ্যা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তার কাছে বসা সাঈদ ইবনে যােবায়র বললেন, ‘মােহাম্মদ(স)-এর আত্মীয়স্বজন’। এই কথা শুনে ইবনে আব্বাস(রা.) বললেন, ‘তুমি খুব তাড়াহুড়াে করেউত্তর দিয়েছো। আসল ঘটনা হচ্ছে এই যে, কোরায়শ বংশের এমন কোনাে পরিবার ছিলাে না যাদের সাথে রসূলুল্লাহ(স.)-এর আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিলাে না। তাই তিনি বলেছেন, ‘আমি তােমাদের কাছে কোনাে বিনিময় চাই না, তবে এতােটুকু চাই যে, আমাদের মধ্যকার আত্মীয়তার সম্পর্কটা যেন তােমরা অটুট রাখো। এই ব্যাখ্যার অর্থ দাঁড়াচ্ছে, আত্মীয়তার সম্পর্কের খাতিরে তােমরা আমার কোনাে ক্ষতি করবে না এবং আমি তােমাদেরকে হেদায়াতের যে বাণী শুনাচ্ছি তা উদার মন নিয়ে শুনবে। আর এটাই হবে আমার জন্যে প্রকৃত বিনিময় বা পারিশ্রমিক; অন্য কিছু নয়। হযরত ইবনে আব্বাস(রা.)-এর ব্যাখ্যা সাঈদ ইবনে যােয়র এর ব্যাখ্যার চেয়ে অধিক যুক্তিসংগত ও প্রকৃত ঘটনার কাছাকাছি। তবে আমি এখনও মনে করছি, উপরে আমি যে ব্যাখ্যাটি উল্লেখ করেছি সেটা আরও যুক্তিসংগত ও প্রকৃত ঘটনার সাথে অধিকতর সংগতিপূর্ণ। তবুও আমি স্বীকার করছি, সঠিক ব্যাখ্যা একমাত্র আল্লাহ তায়ালাই ভাল জানেন; আমরা নই। মােটকথা, রসূলুল্লাহ(স.) তাদেরকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন যে, হেদায়াতের বদৌলতে পরকালে তারা যা কিছু লাভ করবে, তার কোনাে বিনিময় তিনি তাদের কাছে দাবী করছেন না। অথচ পৃথিবীর বুকে এর চেয়েও নগণ্য ও তুচ্ছ কিছু পাইয়ে দিলে মােটা অংকের দালালী দিতে হয়। কিন্তু, আল্লাহর বড়ই মেহেরবানী যে, তিনি বান্দাদের হিসাব নিকাশ ব্যবসা অথবা আইনের তুলাদন্ডে মেপে করবেন না। বরং উদারতা ও করুণার মানদন্ডে মেপে করবেন। তাই বলা হয়েছে, যে কেউ উত্তম কাজ করে, আমি তার জন্যে তাতে পুণ্য বাড়িয়ে দেই।’ এটা নিছক বিনিময় নয়, বরং বিনিময়ের অতিরিক্ত। এখানেই শেষ নয়। এরপর রয়েছে ক্ষমা ও কর্মের মূল্যায়ন। বলা হচ্ছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল, গুনগ্রাহী।’ অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালা ক্ষমা করেন, আল্লাহ তায়ালা কর্মের মূল্যায়ন করেন। কার কর্মের মূল্যায়ন করেন আপন বান্দাদের কর্মের মূল্যায়ন করেন। অথচ তাদের এই কর্মের শক্তি ও সামর্থ্য তিনিই তাদেরকে দান করেছেন, তিনি এই কর্মের নিছক মূল্যায়নই করছেন না; বরং তিনি তাদের বিনিময় ও পুরস্কার বাড়িয়েও দিচ্ছেন। আবার তাদের ত্রুটি-বিচ্যুতি ক্ষমাও করে দিচ্ছেন। কি অপূর্ব এই উদারতা ও বদান্যতা। মানুষের পক্ষে এর অনুকরণ করাতাে দূরের কথা, তাদের পক্ষে এই উদারতা ও বদান্যতার জন্যে যথার্থরূপে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করাও সম্ভব নয়।
* এরপর প্রসংগ পুনরায় চলে যাচ্ছে সেই আদি সত্যের আলােচনার দিকে। ওই প্রসংগে বলা হয়েছে, ‘তারা নাকি এ কথা বলে যে, তিনি আল্লাহর বিরুদ্ধে মিথ্যা রটনা করেছেন?…'(আয়াত ২৪) অর্থাৎ ওহীর উৎস, প্রকৃতি, উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যের ব্যাপারে তারা যে সন্দেহ প্রকাশ করে সেটার কারণ হিসেবে কি তারা বলতে চায় যে, মােহাম্মদ(স.) আল্লাহর নামে মিথ্যা প্রচার করে বেড়াচ্ছে না? তারা কি বলতে চায়, আল্লাহ তায়ালা ওহীর মাধ্যমে তাঁর প্রতি কোনাে বাণী অবতীর্ণ করেননি? কিন্তু তাদের এই আশংকা সম্পূর্ণরূপে অগ্রাহ্য। কারণ কেউ আল্লাহর কাছ থেকে কোনাে বাণী প্রাপ্ত না হয়েও দাবী করছে সে বাণীপ্রাপ্ত হয়েছে, আর আল্লাহ তায়ালা তাকে ছেড়ে দেবেন এটা কখনও হতে পারে না। তিনি এ জাতীয় লােকদের অন্তরে মােহর লাগিয়ে দিতে পারেন। ফলে তাদের পক্ষে কখনও কোরআন সম্পর্কে মিথ্যা দাবী করার সুযােগ হবে না; বরং তাদের এমন মিথ্যা দাবীর স্বরূপ উন্মােচন করে তা ধরা-পৃষ্ঠ থেকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে পারেন এবং সত্যকে স্বমহিমায় উদ্ভাসিত করে মিথ্যার ওপর জয়ী করতে পারেন। তাই বলা হয়েছে, ‘আল্লাহ তায়ালা ইচ্ছা করলে তােমার অন্তরে মােহর এঁটে দিতেন।’ বস্তুত, তিনি মিথ্যাকে মিটিয়ে দেন এবং নিজ বাক্য দ্বারা সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করেন। শুধু তাই নয়, বরং মােহাম্মদ(স.)-এর অন্তরের সকল গােপন কথাই তার জানা আছে। বলা হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই তিনি অন্তর্নিহিত বিষয় সম্পর্কে সবিশেষ জ্ঞাত।’ তাহলে বুঝা গেলাে যে, ওদের আশঙ্কা বা সন্দেহের কোনাে ভিত্তিমূল নেই। এটা কেবলই ভিত্তিহীন একটা ধারণা এবং একটি দাবী যা আল্লাহর অসীম জ্ঞানের পরিপন্থী, তাঁর অসীম কুদরতের পরিপন্থী এবং তাঁর সেই শাশ্বত বিধানের পরিপন্থী যার ওপর ভিত্তি করে তিনি মিথ্যাকে মিটিয়ে দেন আর সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করেন। তাই প্রমাণিত হলাে, এই ওহীর ঘটনা সত্য ঘটনা এবং মােহাম্মদ(স.) যা বলেছেন তা সত্য বলেছেন। তিনি আল্লাহর নামে মিথ্যা কথা প্রচার করেননি। কারণ যারা এমনটি করে তারা মিথ্যুক, অত্যাচারী ও বিপথগামী। আর এই বক্তব্যের সাথেই আপাতত, ওহী সংক্রান্ত সন্দেহের অবসান ঘটলাে। এখন তাদের সামনে ভিন্ন আর একটি পর্ব তুলে ধরা হচ্ছে। আর সেটা হচ্ছে এই, তিনি তাঁর বান্দাদের তাওবা কবুল করেন, পাপসমূহ মার্জনা করেন এবং তােমরা যা করাে- সে বিষয় সম্পর্কে অবগত আছেন।

তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
** একথা সুস্পষ্ট যে এ আয়াতে شُرَكَاءُ অর্থে সেই সব শরীক বুঝানো হয়নি মানুষ যাদের কাছে প্রার্থনা করে বা যাদেরকে নযর-নিয়াজ দেয় কিংবা যাদের সামনে পূজা অর্চনার অনুষ্ঠানাদি সম্পন্ন করা হয়। বরং নিশ্চিতভাবে সেই সব মানুষকে বুঝানো হয়েছে মানুষ যাদেরকে আদেশ দানের ক্ষেত্রে অংশীদার বানিয়ে নিয়েছে, যাদের শেখানো ধ্যান-ধারণা, আকীদা-বিশ্বাস, মতবাদ এবং দর্শনের প্রতি মানুষ বিশ্বাস পোষণ করে, যাদের দেয়া মূল্যবোধ মেনে চলে, যাদের পেশকৃত নৈতিক নীতিমালা এবং সভ্যতা ও সংস্কৃতির মানদণ্ডসমূহ গ্রহণ করে, যাদের রচিত আইন-কানুন, পন্থা ও বিধি-বিধানকে নিজেদের ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও ইবাদতসমূহে, ব্যক্তি জীবনে, সমাজে, সভ্যতায়, কায়কারবার ও লেনদেনে, বিচারালয়সমূহে এবং নিজেদের রাজনীতি ও সরকার ব্যবস্থায় এমনভাবে গ্রহণ করে যেন এটাই সেই শরীয়ত যার অনুসরণ তাদের করা উচিত। এটা যেন বিশ্ব-জাহানের রব আল্লাহর রচিত আইনের পরিপন্থী একটা পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা এবং তাঁর অনুমোদন ছাড়াই উদ্ভাবকরা উদ্ভাবন করেছে এবং মান্যকারীরা মেনে নিয়েছে। আল্লাহ‌ ছাড়া অন্য কাউকে সিজদা করা এবং অন্য কারো কাছে প্রার্থনা করা যেমন শিরক এটাও ঠিক তেমনি শিরক। (অধিক ব্যাখ্যার জন্য দেখুন তাফহীমুল কুরআন, সূরা বাকারা, আয়াত ১৭২, টীকা ১৭০ , আয়াত ২৫৬, টীকা ২৮৬ ; আল ইমরান আয়াত ৬৪ ও ৬৫, টীকা ৫৭ ও ৫৮ , আয়াত ৭৫ থেকে ৭৭, টীকা ৬৪, ৬৫ ; আন নিসা, আয়াত ৫৮-৬০, টীকা ৯০ ; আল মায়েদা, আয়াত ১ ও ২ টীকাসহ , আয়াত ৮৭ ও ৮৮ টীকাসহ ; আন-আম, আয়াত ১১৯ থেকে ১২১, টীকাসহ , আয়াত ১৩৬, ১৩৭ টীকাসহ ; আত তাওবা, আয়াত ৩১ টীকাসহ ; ইউনুস আয়াত ৫৯, ৬০ টীকাসহ ; ইবরাহীম, আয়াত ২২ টীকাসহ ; মারয়াম, আয়াত ৪২ টীকাসহ ; আল-কাসাস, আয়াত ৬২, ৬৩ টীকাসহ ; সাবা আয়াত ৪১ টীকা ৬৩ ; ইয়সীন, আয়াত ৬০, টীকা ৫৩ )।
*এটা আল্লাহর বিরুদ্ধে এমন এক ধৃষ্টতা যে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের ব্যাপারটি যদি কিয়ামত পর্যন্ত সময়ের জন্য মুলতবী করা না হতো তাহলে আল্লাহর বান্দা হয়ে যারা আল্লাহর পৃথিবীতে নিজেদের রচিত ‘দ্বীন’ চালু করেছে তাদের প্রত্যেকের ওপর আযাব নাযিল করা হতো এবং তাদেরকেও ধ্বংস করে দেয়া হতো যারা আল্লাহর দ্বীন পরিত্যাগ করে অন্যদের রচিত দ্বীন গ্রহণ করেছে।
** ‘এ কাজ’ অর্থ যে প্রচেষ্টার মাধ্যমে নবী ﷺ মানুষকে আল্লাহর আযাব থেকে বাঁচানো এবং জান্নাতের সুসংবাদের উপযুক্ত বানানোর জন্য যে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন।
** মূল আয়াতের বাক্যাংশ হলো অর্থাৎ আমি তোমাদের কাছে কোন পারিশ্রমিক চাই না। তবে إِلَّا الْمَوَدَّةَ فِي الْقُرْبَى র ভালবাসা অবশ্যই প্রত্যাশা করি। এই قُرْبَى শব্দটির ব্যাখ্যায় মুফসসিরদের মধ্যে বেশ মতভেদ সৃষ্টি হয়েছে।

এক দল এ শব্দটিকে আত্মীয়তা (আত্মীয়তার বন্ধন) অর্থে গ্রহণ করেছেন এবং আয়াতের অর্থ বর্ণনা করেছেন এই যে, “আমি এ কাজের জন্য তোমাদের কাছে কোন পারিশ্রমিক বা বিনিময় চাই না। তবে তোমাদের ও আমাদের মাঝে আত্মীয়তার যে বন্ধন আছে তোমরা (কুরাইশরা) অন্তত সেদিকে লক্ষ্য রাখবে এতটুকু আমি অবশ্যই চাই। তোমাদের উচিত ছিল আমার কথা মেনে নেয়া। কিন্তু যদি তোমরা তা না মানো তাহলে গোটা আরবের মধ্যে সবার আগে তোমরাই আমার সাথে দুশমনী করতে বদ্ধপরিকর হবে তা অন্তত করো না।” এটা হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাসের ব্যাখ্যা। ইমাম আহমদ, বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী, ইবনে জারীর, তাবারানী, বায়হাকী, ইবনে সা’দ ও অন্যান্য পণ্ডিতগণ বহু সংখ্যক বর্ণনাকারীর মাধ্যমে এ ব্যাখ্যাটি উদ্ধৃত করেছেন এবং মুজাহিদ, ইকরিমা, কাতাদা, সুদ্দী, আবু মালেক, আবদুর রহমান ইবনে যায়েদ ইবনে আসলাম, দাহহাক, আতা ইবনে দীনার এবং আরো অনেক বড় বড় মুফাসসির এ ব্যাখ্যাটাই বর্ণনা করেছেন।

দ্বিতীয় দলটি قُرْبَى শব্দটিকে নৈকট্য বা নৈকট্য অর্জন অর্থে গ্রহণ করেন এবং আয়াতটির অর্থ করেছেন, তোমাদের মধ্যে আল্লাহর নৈকট্যের আগ্রহ সৃষ্টি হওয়া ছাড়া আমি তোমাদের কাছে এ কাজের জন্য আর কোন বিনিময় চাই না। অর্থাৎ তোমরা সংশোধিত হয়ে যাও। শুধু এটাই আমার পুরস্কার। এ ব্যাখ্যা হাসান বাসারী থেকে উদ্ধৃত হয়েছে এবং কাতাদা থেকেও এর সমর্থনে একটি মত বর্ণিত হয়েছে। এমনকি তাবারানীর একটি বর্ণনায় ইবনে আব্বাসের সাথেও এ মতকে সম্পর্কিত করা হয়েছে। কুরআন মজীদেরও আরেক স্থানে বিষয়টি এ ভাষায় বলা হয়েছেঃ

قُلْ مَا أَسْأَلُكُمْ عَلَيْهِ مِنْ أَجْرٍ إِلَّا مَنْ شَاءَ أَنْ يَتَّخِذَ إِلَى رَبِّهِ سَبِيلًا- الفرقان : 58

“এদের বলে দাও, এ কাজের জন্য আমি তোমাদের কাছে কোন পারিশ্রমিক চাই না। যার ইচ্ছা সে তার রবের পথ অনুসরণ করুক, আমার পারিশ্রমিক শুধু এটাই।”

তৃতীয় দলটি قُرْبَى শব্দটিকে নিকট আত্মীয় (আত্মীয় স্বজন) অর্থে গ্রহণ করেন। তারা আয়াতের অর্থ করেনঃ “তোমরা আমার আত্মীয় ও আপনজনদের ভালবাসবে এছাড়া আমার এ কাজের কোন পারিশ্রমিক আমি চাই না।” এই দলের কেউ আত্মীয়দের মধ্যে গোটা বনী আবদুল মুত্তালিবকে অন্তর্ভুক্ত করেন আবার কেউ কেউ একে শুধু হযরত আলী, ফাতেমা ও তাঁদের সন্তান-সন্ততি পর্যন্ত সীমিত রাখেন। এ ব্যাখ্যাটি সাঈদ ইবনে জুবায়ের এবং ‘আমর ইবনে শু’আইব থেকে উদ্ধৃত হয়েছে। আবার কোন কোন বর্ণনাতে একে ইবনে আব্বাস ও হযরত আলী ইবনে হুসাইনের (যয়নুল আবেদীন) সাথে সম্পর্কিত করা হয়েছে। কিন্তু বেশ কিছু কারণে এ ব্যাখ্যা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। প্রথমত সন্তানের প্রশ্ন তো দূরের কথা মক্কায় যে সময় এ সূরা শূরা নাযিল হয় সে সময় হযরত আলী ও ফাতিমার বিয়ে পর্যন্ত হয়নি। বনী আবদুল মুত্তালিব গোষ্ঠীরও সবাই আবার নবী সাল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সহযোগিতা করছিলো না। বরং তাদের কেউ কেউ তাঁর প্রকাশ্য দুশমনদের সহযোগী ছিল। এক্ষেত্রে আবু লাহাবের শত্রুতার বিষয় তো সর্বজনবিদিত। দ্বিতীয়ত, শুধু বনী আবদুল মুত্তালিব গোষ্ঠীই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আত্মীয় ছিল না। নবীর ﷺ মহিয়ষী মা, তাঁর মহান বাপ এবং হযরত খাদীজার (রা.) মাধ্যমে কুরাইশদের সকল পরিবারের সাথেই তাঁর আত্মীয়তা ছিল। সেই সব পরিবারে নবীর ﷺ গুণী সাহাবা যেমন ছিলেন তেমনি ঘোরতর শত্রুও ছিল। তাই ঐ সব আত্মীয়দের মধ্য থেকে তিনি কেবল বনী আবদুল মুত্তালিব গোষ্ঠীকে নিজের ঘনিষ্ঠজন আখ্যায়িত করে এই ভালবাসার দাবীকে তাদের জন্য নির্দিষ্ট রাখবেন তা নবীর ﷺ জন্য কি করে সম্ভব ছিল? তৃতীয়ত, যে বিষয়টি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তা হচ্ছে, একজন নবী যে উচ্চাসনে দাঁড়িয়ে সুউচ্চ কন্ঠে আল্লাহর দিকে আহবান জানান সেই উচ্চাসন থেকে এ মহান কাজের জন্য তিনি এত নীচ পর্যায়ের পুরস্কার চাইবেন যে, তোমরা আমার আত্মীয়-স্বজনকে ভালবাসো, তা কোনত্রুমেই সম্ভব নয়। এটা এমনই নীচ পর্যায়ের ব্যাপার যে কোন সুস্থ-স্বাভাবিক রুচিসম্পন্ন ব্যক্তি কল্পনাও করতে পারে না যে, আল্লাহ‌ তাঁর নবীকে একথা শিখিয়ে থাকবেন আর নবী কুরাইশদের মধ্যে দাঁড়িয়ে একথা বলে থাকবেন। কুরআন মজীদে নবী-রসূলদের যেসব কাহিনী বর্ণিত হয়েছে তাতে আমরা দেখি একের পর এক নবী এসে তাঁদের কওমকে বলছেনঃ আমি তোমাদের কাছে কোন বিনিময় প্রত্যাশা করি না। আমার পারিশ্রমিক বিশ্ব-জাহানের রব আল্লাহর কাছে প্রাপ্য (ইউনুস ৭২ , হূদ ২৯ ও ৫১ , আশ-শুআরা ১০৯ , ১২৭ , ১৪৫ , ১৬৪ ও ১৮০ আয়াত)। সূরা ইয়াসীনে নবীর সত্যতা যাচাইয়ের মানদণ্ড বলা হয়েছে এই যে, তিনি দাওয়াতের ব্যাপারে নিস্বার্থ হন ( আয়াত ২১ )। কুরআন মজিদে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মুখ দিয়ে বার বার একথা বলানো হয়েছে যে, আমি তোমাদের কাছে কোন পারিশ্রমিক চাই না (আল আনয়াম ৯০ , ইউসুফ ১০৪ , আল মু’মিনুন ৭২ , আল ফুরকান ৫৭ , সাবা ৪৭ , সোয়াদ ৮৬ , আত তুর ৪০ , আল কলম ৪৬ আয়াত)। এরপরে একথা বলার কি কোন সুযোগ থাকে যে, আমি আল্লাহর পক্ষ থেকে আহবান জানানোর যে কাজ করছি তার বিনিময়ে তোমরা আত্মীয়-স্বজনকে ভালোবাসো। তাছাড়া যখন আমরা দেখি, এ ঈমানদারদেরকে সম্বোধন করে বলা হয়নি বরং এখানে সম্বোধন করা হয়েছে কাফেরদেরকে তখন তা আরো খাপছাড়া বলে মনে হয়। আগে থেকেই কাফেরদেরকে লক্ষ্য করেই গোটা বক্তব্য চলে আসছে এবং পরবর্তী বক্তব্যও তাদের লক্ষ্য করেই পেশ করা হয়েছে। বক্তব্যের এই ধারাবাহিকতার মধ্যে বিরোধীদের কাছে কোন রকম বিনিময় চাওয়ার প্রশ্ন কি করে আসতে পারে? বিনিময় চাওয়া যায় তাদের কাছে যাদের কাছে কোন ব্যক্তির তাদের জন্য সম্পাদিত কাজের কোন মূল্য থাকে। কাফেররা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এ কাজের কি মূল্য দিচ্ছিলো যে, তিনি তাদের কাছে বলতেন, আমি তোমাদের জন্য যে কাজ করেছি তার বিনিময়ে তোমরা আমার আত্মীয়-স্বজনদের ভালবাসবে? তারা তো উল্টা সেটাকে অপরাধ মনে করছিলো এবং সেজন্য তাঁকে হত্যা করতে সংকল্পবদ্ধ ছিলো।
**যারা জেনে বুঝে নাফরমানী করে সেই সব অপরাধীদের সাথে যে ধরনের আচরণ করা হয় নেক কাজে সচেষ্ট বান্দাদের সাথে আল্লাহর আচরণ তেমন নয়। তাদের সাথে আল্লাহর আচরণ হচ্ছে (১) তারা নিজের পক্ষ থেকে যতটা সৎকর্মশীল হওয়ার চেষ্টা করে আল্লাহ‌ তাদেরকে তার চেয়েও বেশী সৎকর্মশীল বানিয়ে দেন। (২) তাদের কাজকর্মে যে ত্রুটি-বিচ্যুতি থেকে যায় অথবা সৎকর্মশীল হওয়ার প্রচেষ্টা সত্ত্বেও যে গোনাহ সংঘটিত হয় আল্লাহ‌ তা উপেক্ষা করেন এবং (৩) যে সামান্য পরিমাণ নেক কাজের পুঁজি তারা নিয়ে আসে সেজন্য আল্লাহ‌ তাদেরকে মর্যাদা দেন এবং অধিক পুরস্কার দান করেন।
**এই প্রশ্নবোধক বাক্যাংশে তীব্র তিরস্কার প্রচ্ছন্ন আছে, যার সারকথা হলো, হে নবী, এসব লোক কি এতই দুঃসাহসী ও নির্ভিক যে তোমার বিরুদ্ধে আল্লাহ‌ সম্পর্কে মিথ্যা বলার মত ঘৃণিত অপবাদ আরোপ করতে আদৌ লজ্জা অনুভব করলো না? এরা তোমার বিরুদ্ধে অপবাদ আরোপ করে যে তুমি নিজেই এ কুরআন রচনা করে মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে তা আল্লাহর সাথে সম্পর্কিত করছো?
**এত বড় মিথ্যা কেবল তারাই বলে যাদের হৃদয়ে মোহর করে দেয়া হয়েছে। আল্লাহ‌ ইচ্ছা করলে তোমাকেও তাদের মধ্যে শামিল করে দেবেন। কিন্তু এটা তাঁর মেহেরবানী যে তিনি তোমাকে এই দল থেকে আলাদা করে রেখেছেন। এই জবাবের মাধ্যমে সেই সব লোকদের প্রতি তীব্র কটাক্ষ করা হয়েছে যারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি এ অপবাদ আরোপ করছিলো। এর তাৎপর্য হচ্ছেঃ হে নবী, এরা তোমাকেও তাদের মত স্বভাবের মানুষ মনে করে নিয়েছে। এরা যেমন নিজ স্বার্থের জন্য বড় বড় মিথ্যা বলতে কুন্ঠিত হয় না। তেমনি মনে করে নিয়েছে তুমিও অনুরূপ আপন স্বার্থ হাসিলের জন্য একটি মিথ্যা সাজিয়ে এনেছো। কিন্তু এটা আল্লাহরই মেহেরবানী যে তিনি তাদের মত তোমার হৃদয়ে তো মোহর লাগাননি।
**এটা আল্লাহর নিয়ম যে তিনি বাতিলকে কখনো স্থায়িত্ব দান করেন না এবং পরিশেষে ন্যায় ও সত্যকে ন্যায় ও সত্য হিসেবে প্রমাণ করে দেখিয়েছেন। অতএব, হে নবী (সা.), তুমি এসব মিথ্যা অপবাদের আদৌ পরোয়া করো না এবং নিজের কাজ করতে থাকো। এমন এক সময় আসবে যখন এসব মিথ্যা ধূলিকণার মত উড়ে যাবে। কিন্তু তুমি যা পেশ করছো তার ন্যায় ও সত্য হওয়া স্পষ্ট হয়ে যাবে।
** তিনি জানেন, তোমার বিরুদ্ধে এসব অপবাদ কেন আরোপ করা হচ্ছে এবং তোমাকে ব্যর্থ করে দেয়ার জন্য যে চেষ্টা-সাধনা করা হচ্ছে প্রকৃতপক্ষে তার পেছনে কি লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য কাজ করছে।

তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ বলেছেন:-
# (أَمْ لَهُمْ شُرَكَا۬ءُ شَرَعُوْا لَهُمْ مِّنَ الدِّيْنِ مَا لَمْ يَأْذَنْۭ بِهِ اللّٰه)

‘তাদের কি এমন কতকগুলো শরীক আছে যারা তাদের জন্য দীনের এমন বিধান প্রবর্তন করেছে যার অনুমতি আল্লাহ দেননি?’ অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলা অনুমতি দেননি এমন কোন ধর্ম, বিধান ও ইবাদত কেউ বিধান হিসেবে জারি করলে আর তা মাথা পেতে মেনে নিলে তাদেরকে আল্লাহ তা‘আলার সাথে অংশী স্থাপন করা হয়। যেমন ইসলাম ছাড়া যত ধর্ম রয়েছে, আ্ল্লাহর বিধান ছাড়া মানবরচিত যত বিধান রয়েছে ইত্যাদি। মূলত এভাবে বলে আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে তিরস্কার করছেন যারা আল্লাহ তা‘আলার দেয়া ধর্ম ইসলাম ছাড়া অন্য ধর্ম মেনে চলে, আল্লাহ তা‘আলার দেয়া বিধান ছাড়া অন্যের বিধান মেনে চলে এবং আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া অন্যের ইবাদত করে।

আল্লাহ তা‘আলা বলছেন, যদি কিয়ামতের প্রতিশ্রুতি না দেয়া থাকত তাহলে দুনিয়াতেই জালিমদেরকে তাদের প্রাপ্য শাস্তি দিয়ে দেয়া হত। কিন্তু আখিরাতে জালিমদের জন্য যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি প্রস্তুত করা আছে। এ সকল জালিমরা আখিরাতে চিন্তিত থাকবে যে, এখন তাদের কী হবে। কিন্তু মু’মিনরা থাকবে আরাম-আয়েশে জান্নাতে।

সুতরাং প্রতিটি মানুষের সতর্ক হওয়া উচিত, আমি কার দেয়া ধর্ম অনুসরণ করছি, কার তৈরী করা বিধান মানছি। কারণ আমার সকল কাজের হিসাব দিতে হবে।
২৩-২৪ নম্বর আয়াতের তাফসীর :

সৎ আমলকারী মু’মিনরা আখিরাতে জান্নাতে থাকবে। এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে সুসংবাদ, যাতে দুনিয়াতেই তারা আশস্ত হতে পারে এবং আল্লাহ তা‘আলার প্রতি খুশি হয়ে শুকরিয়া আদায় করে। এখানে আল্লাহ তা‘আলা তারই বর্ণনা দিয়েছেন।

(إِلَّا الْمَوَدَّةَ فِي الْقُرْبٰي)

‘তোমাদের নিকট হতে আত্মীয়তার ভালবাসা ব্যতীত অন্য কোন বিনিময় চাই না’ নাবীরা তাদের রেসালাতের দায়িত্ব পালনে কোন প্রকার প্রতিদান চান না- এর বর্ণনা অনেক স্থানে এসেছে। সূরা হূদের ২৯ নম্বর আয়াতেও উল্লেখ করা হয়েছে। নাবীকুল শিরোমণি রিসালাতের দায়িত্ব পালনে প্রতিদান চাওয়া থেকে পবিত্র, তবে আত্মীয়তার ভালবাসা ছাড়া। আত্মীয়তার ভালবাসার অর্থ কী এ নিয়ে ইমাম শানকিতী (রহঃ) চারটি বক্তব্য তুলে ধরেছেন :

(১) ইবনু আব্বাস, মুজাহিদ, কাতাদাহ প্রমুখ বলেন : এর অর্থ হল-আমার মাঝে ও তোমাদের মাঝে যে আত্মীয়তার সম্পর্ক রয়েছে তা বজায় রাখ, আমাকে দীন প্রচার করার কারণে কষ্ট দিওনা, মানুষকে আমায় কষ্ট দিতে বারণ কর। যেমন তোমাদের প্রত্যেক আত্মীয়-স্বজনদের ব্যাপারে করে থাক। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কুরাইশদের সাথে আত্মীয়তা রয়েছে। আরবদের নিয়ম হল তারা আত্মীয়দের সাথে কোনদিন খারাপ ব্যবহার করে না। সে হিসেবে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ কথা বলেছিলেন। যেমন আবূ তালেব রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সংরক্ষণ করেছেন, অথচ তাঁর দীন গ্রহণ করেননি।

(২) তোমরা আমার আত্মীয় ও বংশধরকে কষ্ট দিওনা। এ কথা সাইদ বিন যুবাইর, আমর বিন শুআইব বলেছেন। এরূপ আরো দু’টি বক্তব্য রয়েছে। প্রথম বক্তব্যই সঠিক।

এ আয়াতের তাফসীরে ইমাম বুখারী (রহঃ) বলেন : ‘আবদুল মালিক ইবনু মাইসারা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন : আমি ত্বউস থেকে তিনি ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, ইবনু ‘আব্বাস একদা এ আয়াতের ব্যাখ্যা সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হন। তখন সা‘ঈদ ইবনু যুবাইর বলেন : এর দ্বারা মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকটাত্মীয়দেরকে বুঝানো হয়েছে। ইবনু ‘আব্বাস বলেন : তুমি খুব তাড়াতাড়ি করেছ। কুরাইশের যতগুলো গোত্র ছিল সবারই সাথে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিল। এর ভাবার্থ হবে, তোমরা ঐ আত্মীয়তার সম্পর্কের প্রতি লক্ষ্য রেখ যা আমার ও তোমাদের মধ্যে রয়েছে। (সহীহ বুখারী হা. ৪৮১৮)

নাবী পরিবারের সম্মান ও মহব্বত : উপরের আলোচনা থেকে বুঝা গেলে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দাওয়াতী কাজ করতে গিয়ে কুরাইশদের থেকে যে কষ্ট পেয়েছেন সে জন্য তাদেরকে বলছেন : তোমাদের সাথে আমার যে আত্মীয়তার সম্পর্ক রয়েছে সেজন্যও তো তোমরা আমাকে কষ্ট দেয়া থেকে বিরত থাকতে পার।

সুতরাং বুঝা যাচ্ছে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও তাঁর পরিবারকে সম্মান ও মহব্বত করতে হবে। নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও তাঁর বংশের মহব্বত নিয়ে কোন সময় মুসলিমরা মতবিরোধ করেনি। সর্বসম্মতিক্রমে তাদেরকে ভালবাসা অপরিহার্য, এমনকি ঈমানের অঙ্গ। তবে বিরোধ হল মহব্বত কিভাবে করব? শিয়াদের রাফেযী সম্প্রদায় নাবী পরিবারকে সম্মান দেখাতে গিয়ে বাড়াবাড়ি করে, অন্যান্য সাহাবীদেরকে গালিগালাজ করে, আবার কেউ নাবী পরিবারকে সম্মান দেখাতে গিয়ে শিথীলতা প্রদর্শন করেছে। উভয়টি পরিত্যাজ্য। বরং নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও তাঁর পরিবারকে ভালবাসতে হবে তবে বাড়াবাড়ি করা যাবে না, তাদেরকে ভালবাসতে গিয়ে অন্যদেরকে গালিগালাজ করা যাবে না এবং স্বীয় সম্মান থেকে বেশি দেয়া যাবে। নাবী পরিবারকে ভালবাসতে গিয়ে শিয়া ও রাফিযী সম্প্রদায় হাজার হাজার হাদীস তৈরি করেছে, যা ইসরাঈলী বর্ণনা ও তাদের তাফসীর গ্রস্থসহ অনেক তাফসীর গ্রন্থে বিদ্যমান। তাছাড়া শিয়ারা নাবী পরিবারের প্রতি ভালবাসার যে দলীল পেশ করে তাও ঠিক নয়। কারণ এই আয়াত ও সূরাটি হলো মাক্কী। তখন ‘আলী ও ফাতিমাহ্ (রাঃ)-এর মধ্যে বিবাহ বন্ধন সম্পন্ন হয়নি। যার প্রতি মনগড়া ভালবাসা রাখার প্রমাণ এ আয়াত থেকে করা হয়।

এরপর আল্লাহ তা‘আলা বর্ণনা করেন, যে ব্যক্তি উত্তম কাজ করে আমি তার নেকী ও সওয়াব বৃদ্ধি করি। যেমন আল্লাহ তা‘আলার বাণী :

(إِنَّ اللّٰهَ لَا يَظْلِمُ مِثْقَالَ ذَرَّةٍ ج وَإِنْ تَكُ حَسَنَةً يُّضٰعِفْهَا وَيُؤْتِ مِنْ لَّدُنْهُ أَجْرًا عَظِيْمًا)‏

“আল্লাহ অণু পরিমাণও জুলুম করেন না। আর কোন পুণ্য কর্ম হলে আল্লাহ তাকে দ্বিগুণ বাড়িয়ে দেন এবং আল্লাহ তাঁর নিকট হতে মহাপুরস্কার প্রদান করেন।” (সূরা নিসা ৪ : ৪০)

(أَمْ يَقُوْلُوْنَ افْتَرٰي)

অর্থাৎ কাফির-মুশরিকরা যেমন বলে থাকে- মুহাম্মাদ এ কুরআন নিজে রচনা করে আল্লাহ তা‘আলার নামে চালিয়ে দিয়েছে। প্রকৃতপক্ষে এরূপ হলে আল্লাহ তা‘আলা কঠোর হস্তে দমন করতেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

(وَلَوْ تَقَوَّلَ عَلَیْنَا بَعْضَ الْاَقَاوِیْلِﭻلَاَخَذْنَا مِنْھُ بِالْیَمِیْنِﭼثُمَّ لَقَطَعْنَا مِنْھُ الْوَتِیْن َفَمَا مِنْکُمْ مِّنْ اَحَدٍ عَنْھُ حٰجِزِیْنَ‏)‏ ‏

“যদি সে নিজে কোন কথা বানিয়ে আমার কথা বলে চালিয়ে দিত, তবে অবশ্যই আমি তার ডান হাত ধরে ফেলতাম, এবং কেটে দিতাম তার হৃৎপিণ্ডের শিরা।

অতঃপর তোমাদের মধ্যে এমন কেউ থাকত না, যে তার থেকে আমাকে বিরত রাখতে পারে।” (সূরা হা-ক্কাহ ৬৯ : ৪৪-৪৭)

অতএব এটা আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকেই অবতারিত কিতাব, এটা কোন মানুষের রচিত কিতাব নয়।

এরপর আল্লাহ তা‘আলা বলেন : তিনি মিথ্যাকে মিটিয়ে দেন সত্য দ্বারা, আর সত্যকে নিজ বাণী দ্বারা প্রতিষ্ঠিত করেন। এমনকি এ কুরআনও যদি মিথ্যা হত, যদি এতে কোন মানুষের উক্তি থাকত তাহলে তিনি এটাকেও মিটিয়ে দিতেন। কারণ এটাই হলো তাঁর নীতি।

আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয় :

১. আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখতে হবে।
২. ভাল কাজের প্রতিদান আল্লাহ তা‘আলা বৃদ্ধি করে দেন।
৩. কুরআন কোন মানব রচিত কিতাব নয়, বরং এটা ঐশী গ্রন্থ।
৪. সত্যের মোকাবেলায় মিথ্যা কখনো বিজয়ী হয় না, মিথ্যা কোন এক সময় মুছে যাবেই।
৫. আল্লাহ তা‘আলা সকলের অন্তরের খবর সম্পর্কেও অবহিত।
৬. নাবী পরিবারকে ভালবাসার নামে বাড়াবাড়ি করা যাবে না।

তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-
** এরপর মহান আল্লাহ বলেনঃ এই মুশরিকরা তো আল্লাহর দ্বীনের অনুসরণ করে না, বরং তারা জ্বিন, শয়তান ও মানবদেরকে নিজেদের পূজনীয় হিসেবে মেনে নিয়েছে। ওরা যে আহকাম এদেরকে বাতলিয়ে দেয় এগুলোর সমষ্টিকেই এরা দ্বীন মনে করে। ওরা যেগুলোকে হারাম বা হালাল বলে, এরা সেগুলোকেই হারাম বা হালাল মনে করে থাকে। তাদের ইবাদতের পন্থা এদেরই আবিষ্কৃত। মোটকথা, এই জ্বিন ও মানুষ যেটাকে শরীয়ত বলেছে সেটাকেই এই মুশরিকরা শরীয়ত বলে মেনে নিয়েছে। যেমন অজ্ঞতার যুগে তারা কতকগুলো জন্তুকে নিজেরাই হারাম করে নিয়েছিল। যেমন কোন কোন জন্তুর কান কেটে নিয়ে তারা ওটাকে তাদের বাতিল দেবতাদের নামে ছেড়ে দিতো। দাগ দিয়ে তারা ষাঁড় ছেড়ে দিতো এবং মাদীর বাচ্চাকে গর্ভাবস্থাতেই ঐ দেবতাদের নামে রেখে দিতো। যে উষ্ট্রীর তারা দশটি বাচ্চা লাভ করতো ওটাকেও তাদের নামে ছেড়ে দিতো। অতঃপর ওগুলোকে সম্মানিত মনে করে নিজেদের উপর হারাম করে নিতো। আর কতকগুলো জিনিসকে নিজেরাই হালাল করে নিতো। যেমন মৃত, রক্ত, জুয়া ইত্যাদি। সহীহ হাদীসে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আমি আমর ইবনে লুহাই ইবনে কামআহকে দেখি যে, সে নিজের নাড়িভূড়ি জাহান্নামের মধ্যে টানতে রয়েছে।” সে ঐ ব্যক্তি যে সর্বপ্রথম গায়রুল্লাহর নামে জন্তু ছেড়ে দেয়ার প্রথা চালু করেছিল। সে ছিল খুযাআ’র বাদশাহদের একজন। সেই সর্বপ্রথম এসব কাজের সূচনা করেছিল। সেই কুরায়েশদেরকে প্রতিমা পূজায় উদ্বুদ্ধ করেছিল। আল্লাহ তা’আলা তার প্রতি অভিসম্পাত নাযিল করুন!

প্রবল প্রতাপান্বিত আল্লাহ বলেনঃ ফায়সালার ঘোষণা না থাকলে এদের বিষয়ে তো সিদ্ধান্ত হয়েই যেতো। অর্থাৎ আল্লাহ তা’আলা যদি এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ না করে থাকতেন যে, তিনি পাপীদেরকে কিয়ামত পর্যন্ত অবকাশ দিবেন, তবে তৎক্ষণাৎ তাদের প্রতি তার শাস্তি আপতিত হতো। নিশ্চয়ই এই যালিমদেরকে কিয়ামতের দিন কঠিন বেদনাদায়ক শাস্তি ভোগ করতে হবে।

প্রবল পরাক্রান্ত আল্লাহ বলেনঃ তুমি এই যালিমদেরকে তাদের কৃতকর্মের জন্যে ভীত-সন্ত্রস্ত দেখবে। আর এটাই তাদের উপর আপতিত হবে। সেদিন এমন কেউ থাকবে না যে তাদেরকে এই শাস্তি হতে রক্ষা করতে পারে। সেদিন তারা তাদের কৃতকর্মের শাস্তি আস্বাদন করবেই। পক্ষান্তরে, যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে তারা থাকবে জান্নাতের মনোরম স্থানে। তারা সেথায় চরম সুখে অবস্থান করবে। সেখানে তাদের মোটেই কোন দুঃখ কষ্ট হবে না। তারা যা কিছু চাইবে তাই তাদের প্রতিপালকের নিকট পাবে। তারা এমন সুখ ভোগ করবে যা কল্পনাও করা যায় না।

হযরত আবু তায়বাহ (রঃ) বলেন যে, জান্নাতীদের মাথার উপর মেঘমালা আনয়ন করা হবে এবং তাদেরকে বলা হবেঃ “তোমরা এই মেঘমালা হতে কি বর্ষণ কামনা কর?” তারা তখন যে জিনিসের বর্ষণ কামনা করবে তা-ই তাদের উপর বর্ষিত হবে। এমনকি তারা বলবেঃ “আমাদের উপর সমবয়স্কা উদভিন্ন যৌবনা তরুণী বর্ষিত হোক।” তখন তাদের উপর তা-ই বর্ষিত হবে। এজন্যেই মহান আল্লাহ বলেনঃ এটাই তো মহা অনুগ্রহ। পূর্ণ সফলতা এটাই।

২৩-২৪ নং আয়াতের তাফসীর:

উপরের আয়াতগুলোতে মহান আল্লাহ জান্নাতের নিয়ামতরাশির বর্ণনা দেয়ার পর এখানে বলেনঃ আল্লাহ এই সু-সংবাদ তাঁর ঐ বান্দাদেরকে দেন যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে। অতঃপর তিনি স্বীয় নবী (সঃ)-কে বলেনঃ এই কুরায়েশ মুশরিকদেরকে বলে দাও আমি এই তাবলীগের কাজে এবং তোমাদের মঙ্গল কামনার বিনিময়ে তোমাদের কাছে তো কিছুই চাচ্ছি না। আমি তোমাদের কাছে। শুধু এটুকুই চাই যে, আত্মীয়তার সম্পর্কের প্রতি লক্ষ্য রেখে আমাকে আমার প্রতিপালকের বাণী জনগণের নিকট পৌছাতে দাও এবং আমাকে কষ্ট দেয়া হতে বিরত থাকো। এটুকু করলেই আমি খুশী হবো।

সহীহ বুখারীতে রয়েছে যে, হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ)-কে এ আয়াতের তাফসীর জিজ্ঞেস করা হলে হযরত সাঈদ ইবনে জুবাইর (রঃ) বলেনঃ “এর দ্বারা আলে মুহাম্মাদ (সঃ)-এর আত্মীয়তা বুঝানো হয়েছে।” তখন হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) তাকে বলেন, তুমি খুব তাড়াতাড়ি করেছে। জেনে রেখো যে, কুরায়েশের যতগুলো গোত্র ছিল সবারই সাথে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিল। তাহলে ভাবার্থ হবেঃ “তোমরা ঐ আত্মীয়তার সম্পর্কের প্রতি লক্ষ্য রাখো যা আমার ও তোমাদের মধ্যে রয়েছে।” হযরত মুজাহিদ (রঃ), হযরত ইকরামা (রঃ), হযরত কাতাদা (রঃ), হযরত সুদ্দী (রঃ), হযরত আবূ মালিক (রঃ), হযরত আবদুর রহমান (রঃ) প্রমুখ গুরুজনও এই আয়াতের এই তাফসীরই করেছেন।

হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) মুশরিক কুরায়েশদেরকে বলেনঃ “আমি তোমাদের কাছে কোন বিনিময় চাচ্ছি না, আমি তোমাদের কাছে শুধু এটুকু কামনা করি যে, তোমরা ঐ আত্মীয়তার প্রতি লক্ষ্য করবে যা আমার এবং তোমাদের মধ্যে রয়েছে। তোমাদের উপর আমার আত্মীয়তার যে অধিকার রয়েছে তা আদায় কর।” (এ হাদীসটি হাফিয আবুল কাসিম তিবরানী (রঃ) বর্ণনা করেছেন)

হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “আমি তোমাদের কাছে যে দলীল প্রমাণাদি পেশ করছি এবং তোমাদেরকে যে হিদায়াতের পথ প্রদর্শন করছি এর বিনিময়ে আমি তোমাদের কাছে কিছুই চাচ্ছি না, শুধু এটুকুই কামনা করি যে, তোমরা আল্লাহকে চাইতে থাকে এবং তার আনুগত্যের মাধ্যমে তাঁর নৈকট্য লাভ কর।” (এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন ইমাম আহমাদ (রঃ))

হযরত হাসান বসরী (রঃ) হতেও এই তাফসীরই বর্ণিত আছে। এটা হলো দ্বিতীয় উক্তি। রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর প্রথম উক্তি হলো কুরায়েশদেরকে নিজের আত্মীয়তার সম্পর্ক স্মরণ করিয়ে দেয়া। তৃতীয় উক্তি, যা হযরত সাঈদ ইবনে জুবায়ের (রঃ)-এর রিওয়াইয়াতে রয়েছে তা হলোঃ “তোমরা আমার আত্মীয়তার প্রতি লক্ষ্য রেখে আমার সাথে সৎ ব্যবহার কর।”

আবুদ দায়লাম (রঃ) বলেন যে, হযরত হুসাইন ইবনে আলী (রাঃ)-কে বন্দী করে এনে যখন দামেশকের প্রাসাদে রাখা হয় তখন একজন সিরিয়াবাসী তাকে বলেঃ “সমুদয় প্রশংসা আল্লাহর যে, তিনি আপনাকে হত্যা ও ধ্বংস সাধনের ব্যবস্থা করে ক্রমবর্ধমান হাঙ্গামার সমাপ্তি ঘটিয়েছেন। তখন তিনি বলেনঃ “তুমি কি কুরআন পড়েছো?” সে উত্তরে বলেঃ “কুরআন আবার পড়িনি?” তিনি আবার প্রশ্ন করেনঃ (আরবী) যুক্ত সূরাগুলো পড়নি কি? সে জবাব দেয়ঃ “গোটা কুরআন যখন পড়েছি তখন (আরবী) যুক্ত সূরাগুলো কেন পড়বো না?” তিনি বললেনঃ “তাহলে তুমি কি নিম্নের আয়াতটি পড়নি?” (আরবী) অর্থাৎ “আমি এর বিনিময়ে তোমাদের নিকট হতে আত্মীয়ের সৌহার্দ্য ব্যতীত অন্য কোন প্রতিদান চাই না।” সে তখন বললোঃ “তাহলে তারা কি তোমরাই?” তিনি জবাব দিলেনঃ “হ্যা।”

হযরত আমর ইবনে শুআ’য়েব (রাঃ)-কে এ আয়াতের তাফসীর জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেনঃ “এর দ্বারা রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর আত্মীয়তা বুঝানো হয়েছে।”

হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, আনসারগণ বলেনঃ “আমরা (ইসলামের জন্যে) এই কাজ করেছি, ঐ কাজ করেছি। তারা যেন এটা গর্ব করে বলেন। তখন হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) অথবা হযরত আব (রাঃ) তাদেরকে বলেনঃ “আমরা তোমাদের চেয়ে উত্তম।” রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নিকট এ সংবাদ পৌঁছলে তিনি আনসারদের মজলিসে এসে বলেনঃ “হে আনসারের দল! তোমরা লাঞ্ছিত অবস্থায় ছিলে না, অতঃপর আল্লাহ তা’আলা আমার কারণে তোমাদেরকে সম্মানিত করেন?” তারা উত্তরে বলেনঃ “নিশ্চয়ই আপনি সত্য কথা বলেছেন। তিনি আবার বলেনঃ “তোমরা কি পথভ্রষ্ট ছিলে না, অতঃপর আল্লাহ আমার মাধ্যমে তোমাদেরকে হিদায়াত দান করেন?” উত্তরে তাঁরা এবারও বলেনঃ “হ্যা, অবশ্যই আপনি সত্য বলছেন।” তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাঁদেরকে বললেনঃ “তোমরা কেন আমাকে আমার প্রতি তোমাদের অনুগ্রহের কথা বলছো না?” তারা জবাব দিলেনঃ “আমরা কি বলবো?” তিনি বললেন, তোমরা আমাকে বলঃ “আপনার কওম কি আপনাকে বের করে দেয়নি, অতঃপর আমরা আপনাকে আশ্রয় দিয়েছি? তারা কি আপনাকে অবিশ্বাস করেনি, অতঃপর আমরা আপনার সত্যতা স্বীকার করেছি? তারা কি আপনাকে নীচু করতে চায়নি, অতঃপর আমরা আপনাকে সাহায্য করেছি?” অনুরূপভাবে রাসূলুল্লাহ (সঃ) আরো বহু কথা বললেন। শেষ পর্যন্ত আনসারগণ তাঁদের হাঁটুর উপর ঝুঁকে পড়েন এবং বলেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আমাদের সন্তান-সন্ততি এবং যা কিছু আমাদের আছে সবই আল্লাহর এবং তাঁর রাসূল (সঃ)-এর। তখন … (আরবী)-এ আয়াত অবতীর্ণ হয়।

ইমাম ইবনে আবি হাতিমও (রঃ) এটা প্রায় অনুরূপভাবে দুর্বল সনদে বর্ণনা করেছেন। সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমেও এ হাদীসটি রয়েছে। এতে আছে যে, এ ঘটনাটি হুনায়েনের যুদ্ধের যুদ্ধলব্ধ মাল বন্টনের সময় ঘটেছিল। ঐ সময় এ আয়াতটি অবতীর্ণ হওয়ার কথা তাতে উল্লেখ করা হয়নি। এ আয়াতটি মদীনায় অবতীর্ণ হওয়ার ব্যাপারেও চিন্তা-ভাবনার অবকাশ রয়েছে। কেননা, এটা মক্কী সূরার আয়াত। আবার যে ঘটনাটি হাদীসে উল্লিখিত হয়েছে ঐ ঘটনা এবং এই আয়াতটির মধ্যে তেমন কোন সম্বন্ধ নেই।

একটি রিওয়াইয়াতে রয়েছে যে, জনগণ জিজ্ঞেস করেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! যাঁদের সঙ্গে মহব্বত রাখার নির্দেশ আমাদেরকে এ আয়াতে দেয়া হয়েছে। তাঁরা কারা?” উত্তরে রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “হযরত ফাতিমা (রাঃ) এবং তার সন্তান-সন্ততি।” কিন্তু এর সনদ দুর্বল। এর বর্ণনাকারী অস্পষ্ট এবং অপরিচিত। আবার তার উস্তাদ একজন শীআহ যার উপর মোটেই আস্থা রাখা যায় না। তার নাম হুসাইন ইবনে আশকার। এরূপ লোক হতে বর্ণিত এই ধরনের হাদীস কি করে মেনে নেয়া যেতে পারে? আবার এ আয়াতটি মদীনায় অবতীর্ণ হওয়া তো অবিশ্বাস্য কথা। এটা তো মক্কী আয়াত। আর মক্কা শরীফে হযরত ফাতিমা (রাঃ)-এর বিবাহই হয়নি। সুতরাং সন্তান হয় কি করে? হযরত আলী (রাঃ)-এর। সঙ্গে তার বিবাহ তো হয় বদর যুদ্ধের পর হিজরী ৪র্থ সনে। সুতরাং এর সঠিক তাফসীর ওটাই যেটা মুফাসসিরুল কুরআন হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) তাফসীর করেছেন এবং যা ইমাম বুখারী (রঃ) উল্লেখ করেছেন। আমরা আহলে বায়েতের শুভাকাক্ষা অস্বীকার করি না। আমরা বিশ্বাস করি যে, তাদের সাথে উত্তম ব্যবহার করা এবং তাঁদের মর্যাদার প্রতি লক্ষ্য রাখা একান্ত কর্তব্য। সারা বিশ্বে তাঁদের অপেক্ষা বেশী পাক-সাফ পরিবার আর একটিও নেই। বংশ মর্যাদায় ও আত্মশুদ্ধিতে নিঃসন্দেহে তারা সবারই ঊর্ধ্বে রয়েছেন। বিশেষ করে যাঁরা সুন্নাতে রাসূল (সঃ)-এর অনুসারী। পূর্ব যুগীয় মনীষীদের রীতিনীতি এটাই ছিল। তাঁরা হলেন হযরত আব্বাস (রাঃ) এবং তাঁর বংশধর এবং হযরত আলী (রাঃ) ও তার বংশধর। আল্লাহ তা’আলা তাঁদের সবারই প্রতি সন্তুষ্ট থাকুন!

সহীহ হাদীসে এসেছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) স্বীয় ভাষণে বলেছেনঃ “আমি তোমাদের মধ্যে দু’টি জিনিস ছেড়ে যাচ্ছি, তাহলো আল্লাহর কিতাব এবং আমার সন্তান-সন্ততি। এ দুটো পৃথক হবে না যে পর্যন্ত না হাউযের উপর আমার পার্শ্বে এসে পড়ে।”

একদা হযরত আব্বাস ইবনে আবদিল মুত্তালিব (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নিকট অভিযোগ করে বলেনঃ “কুরায়েশরা যখন পরস্পর মিলিত হয় তখন হাসিমুখে মিলিত হয়, কিন্তু তারা আমাদের সাথে যখন মিলিত হয় তখন খুশী মনে মিলিত হয় না। একথা শুনে রাসূলুল্লাহ (সঃ) খুবই দুঃখিত হন এবং বলেনঃ “যার অধিকারে আমার প্রাণ রয়েছে তার শপথ! কারো অন্তরে ঈমান প্রবেশ করতে পারে না যে পর্যন্ত না তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সঃ)-এর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে তোমাদের সাথে মহব্বত বা ভালবাসা রাখবে।

অন্য রিওয়াইয়াতে আছে যে, হযরত আব্বাস (রাঃ) বলেনঃ “কুরায়েশরা পরস্পর কথা বলতে বলতে আমাদেরকে দেখেই নীবর হয়ে যায়।” একথা শুনে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর কপাল মুবারক ক্রোধে কুঞ্চিত হয়ে যায় এবং তিনি বলেনঃ “আল্লাহর কসম! কোন মুসলমানের অন্তরে ঈমান স্থান লাভ করতে পারে না যে পর্যন্ত না সে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে এবং আমার আত্মীয়তার সম্পর্কের কারণে তোমাদের সাথে মহব্বত রাখবে।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ) স্বীয় মুসনাদে বর্ণনা করেছেন)

হযরত ইবনে উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, হযরত আবূ বকর (রাঃ) বলেনঃ “মুহাম্মাদ (সঃ)-এর আহলে বায়েতের ব্যাপারে তোমরা তাঁর প্রতি লক্ষ্য রাখবে।” (এটা ইমাম বুখারী (রঃ) বর্ণনা করেছেন)

সহীহ হাদীসে এসেছে যে, হযরত আবু বকর (রাঃ) হযরত আলী (রাঃ)-কে বলেনঃ আল্লাহর কসম! আমার নিকট আল্লাহর রাসূল (সঃ)-এর আত্মীয়দের সাথে উত্তম ব্যবহার করা আমার নিজের আত্মীয়দের সাথে উত্তম ব্যবহার করা অপেক্ষা বেশী প্রিয়।”

হযরত উমার ইবনে খাত্তাব (রাঃ) হযরত আব্বাস (রাঃ)-কে বলেনঃ “আল্লাহর কসম! আপনার ইসলাম গ্রহণ আমার কাছে আমার পিতা খাত্তাবের ইসলাম গ্রহণের চেয়েও ভাল বোধ হয়েছে। কেননা, আপনার ইসলাম গ্রহণ আল্লাহর রাসূল (সঃ)-এর নিকট খাত্তাবের ইসলাম গ্রহণ অপেক্ষা বেশী প্রিয় ছিল।” নবী ও রাসূলদের (আঃ) পরে যে দু’জন মনীষী সমগ্র মানব জাতির মধ্যে সর্বাপেক্ষা অধিক শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী, তারা রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর আত্মীয়দের ও আহলে বায়েতের সাথে যে উত্তম ব্যবহার করেছিলেন, সমস্ত মুসলমানের কর্তব্য হবে তাঁদের সাথে ঐ রূপ উত্তম ব্যবহার করা। আল্লাহ তা’আলা এ দু’ খলীফা, আহলে বায়েত এবং সমস্ত সাহাবীর প্রতি সন্তুষ্ট থাকুন এবং তাঁদের সকলকে সন্তুষ্ট রাখুন।

আবু হাইয়ান তামীমী (রঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, হযরত ইয়াযীদ ইবনে হাইয়ান (রঃ), হযরত হুসাইন ইবনে মাইরা (রঃ) এবং হযরত উমার ইবনে মুসলিম (রঃ) হযরত যায়েদ ইবনে আরকাম (রাঃ)-এর নিকট গমন করেন। তারা তাঁর নিকট বসে পড়েন। হযরত হুসাইন (রঃ) বলেনঃ “হে যায়েদ (রাঃ)! আপনি তো বড় বড় কল্যাণ ও বরকত লাভ করেছেন। আপনি আল্লাহর রাসূল (সঃ)-কে স্বচক্ষে দেখেছেন, তাঁর কথা নিজের কানে শুনেছেন, তাঁর সাথে থেকে জিহাদ করেছেন এবং তার পিছনে নামায পড়েছেন। সত্য কথা তো এই যে, আপনি বড় বড় ফযীলত লাভে সক্ষম হয়েছেন! মেহেরবানী করে আমাদেরকে কোন হাদীস শুনিয়ে দিন।” হযরত যায়েদ (রাঃ) তখন বলেনঃ “হে আমার ভ্রাতুস্পুত্র। আমার বয়স বেশী হয়ে গেছে। আল্লাহর রাসূল (সঃ) বহু পূর্বে বিদায়:গ্রহণ করেছেন। বহু কথা আমি বিস্মৃতও হয়ে গেছি। এখন একটি কথা এই যে, আমি যা বলছি তা শুনো এবং মেনে নাও। নাহলে আমাকে অযথা কষ্ট দিয়ে না।” অতঃপর তিনি বলতে শুরু করলেনঃ মক্কা ও মদীনার মাঝে ‘খুম’ নামক একটি পানির জায়গায় দাড়িয়ে একদা আল্লাহর নবী (সঃ) আমাদের সামনে ভাষণ দেন। আল্লাহ তা’আলার হামদ ও সানার পর বলেনঃ “হে লোক সকল! আমি একজন মানুষ। এতে বিস্ময়ের কিছুই নেই যে, এখনই হয়তো আমার কাছে আমার প্রতিপালকের দূত আসবেন এবং আমি তার কথা মেনে নিবো। জেনে রেখো যে, আমি তোমাদের কাছে দু’টি জিনিস ছেড়ে যাচ্ছি। একটি হচ্ছে আল্লাহর কিতাব, যাতে নূর ও হিদায়াত রয়েছে। তোমরা আল্লাহর কিতাবকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরে থাকবে। এভাবে তিনি এর প্রতি খুবই উৎসাহ প্রদান করলেন এবং বহু কিছুর গুরুত্বারোপ করলেন। অতঃপর বললেনঃ “আমার আহলে বায়েত, আমার আহলে বায়েতের ব্যাপারে তোমাদেরকে আমি আল্লাহকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি।” একথা শুনে হযরত হুসাইন (রঃ) হযরত যায়েদ (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলেনঃ “আহলে বায়েত কারী? তাঁর স্ত্রীগণও কি তাঁর আহলে বায়েতের অন্তর্ভুক্ত?” হযরত যায়েদ (রাঃ) উত্তরে বললেনঃ “তার স্ত্রীগণ তাঁর আহলে বায়েতের অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু তাঁর (প্রকৃত) আহলে বায়েত হলেন তাঁরা যাদের উপর সাদকা হারাম।” হযরত হুসাইন (রঃ) পুনরায় জিজ্ঞেস করলেনঃ “তারা কারা? জবাবে হযরত যায়েদ (রাঃ) বললেনঃ “তারা হলেন হযরত আলী (রাঃ)-এর বংশধর, হযরত আকীল (রাঃ)-এর বংশধর, হযরত জাফর (রাঃ)-এর বংশধর এবং হযরত আব্বাস (রাঃ)-এর বংশধর।” হযরত হুসাইন (রঃ) আবার প্রশ্ন করলেনঃ “এঁদের সবারই উপর কি সাদকা হারাম?” তিনি জবাব দিলেনঃ হ্যাঁ।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ), ইমাম মুসলিম (রঃ) এবং ইমাম নাসাঈ (রঃ) বর্ণনা করেছেন)

হযরত যায়েদ ইবনে আরকাম (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আমি তোমাদের নিকট এমন জিনিস ছেড়ে যাচ্ছি যে, যদি তোমরা তা দৃঢ়ভাবে ধারণ কর তবে তোমরা পথভ্রষ্ট হবে না। একটি অপরটি অপেক্ষা বেশী মর্যাদাসম্পন্ন। তা হলো আল্লাহর কিতাব, যা আল্লাহ তা’আলার পক্ষ হতে একটি লটকানো রঞ্জু, যা আসমান হতে যমীন পর্যন্ত এসেছে। আর দ্বিতীয় জিনিস হলো আমার সন্তান-সন্ততি, আমার আহলে বায়েত। এ দুটি পৃথক হবে না যে পর্যন্ত না দু’টি হাউযে কাওসারের উপর আমার কাছে আসবে। দেখো, কিভাবে তোমরা আমার পরে তাদের মধ্যে আমার স্থলাভিষিক্ত কর।” (এ হাদীসটি ইমাম আবু ঈসা তিরমিযী (রঃ) বর্ণনা করেছেন। তিনি এটাকে হাসান গারীব বলেছেন)

হযরত জাবির ইবনে আবদিল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি বিদায় হজ্বে আরাফার দিন রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে তাঁর কাসওয়া নাম্নী উষ্ট্রীর উপর আরোহিত অবস্থায় ভাষণ দিতে শুনেছেনঃ “হে লোক সকল! আমি তোমাদের মধ্যে এমন জিনিস ছেড়ে যাচ্ছি যে, যদি তোমরা তা ধারণ করে থাকো তবে তোমরা কখনো পথভ্রষ্ট হবে না। তা হলো আল্লাহর কিতাব এবং আমার সন্তান-সন্ততি, আমার আহলে বায়েত।” (এ হাদীসটিও ইমাম তিরমিযী (রঃ) বর্ণনা করেছেন। এটাকেও তিনি হাসান গারীব বলেছেন)

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আল্লাহ তা’আলার নিয়ামতরাশিকে সামনে রেখে তোমরা তাঁর সাথে মহব্বত রাখো, আল্লাহর সাথে মহব্বতের কারণে আমার সাথে মহব্বত রাখো এবং আমার সাথে মহব্বতের কারণে আমার আহলে বায়েতের সাথে মহব্বত রাখো।” (এ হাদীসটিও ইমাম তিরমিযী (রঃ) বর্ণনা করেছেন এবং তিনি এটাকেও হাসান গারীব বলেছেন) এ বিষয়ের আরো হাদীস আমরা (আরবী) অর্থাৎ “হে নবী পরিবার! আল্লাহ তো শুধু চান তোমাদের হতে অপবিত্রতা দূর করতে এবং তোমাদেরকে সম্পূর্ণরূপে পবিত্র করতে।”(৩৩:৩৩) এই আয়াতের তাফসীরে আনয়ন করেছি। সুতরাং এখানে পুনরাবৃত্তি নিষ্প্রয়োজন। প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতা আল্লাহ তা’আলারই প্রাপ্য।

একদা হযরত আবু যার (রাঃ) বায়তুল্লাহ শরীফের দরযার শিকল ধরে থাকা অবস্থায় বলেনঃ “হে লোক সকল! যারা আমাকে চিনে তারা তো চিনেই, আর যারা আমাকে চিনে না তারা জেনে রাখুক যে, আমার নাম আবু যার (রাঃ)। তোমরা শুনে নাও যে, আমি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে বলতে শুনেছিঃ “তোমাদের মধ্যে আমার আহলে বায়েতের দৃষ্টান্ত হচ্ছে হযরত নূহ (আঃ)-এর নৌকার ন্যায়। যারা ঐ নৌকায় আরোহণ করেছিল তারা পরিত্রাণ পেয়েছিল, আর যারা ঐ নৌকায় আরোহণ করেনি তারা ডুবে গিয়ে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল।” (এ হাদীসটি হাফিয আবু ইয়ালা (রঃ) বর্ণনা করেছেন। কিন্তু এ হাদীসটি দুর্বল)

মহান আল্লাহ বলেনঃ যে উত্তম কাজ করে আমি তার জন্যে এতে কল্যাণ বর্ধিত করি অর্থাৎ প্রতিদান ও পুরস্কার বৃদ্ধি করি। যেমন মহান আল্লাহ অন্য আয়াতে বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “আল্লাহ অণু পরিমাণও যুলুম করেন না এবং অণু পরিমাণ পুণ্যকার্য হলেও আল্লাহ ওকে দ্বিগুণ করেন এবং আল্লাহ তাঁর নিকট হতে মহা পুরস্কার প্রদান করেন।”(৪:৪০)

কোন কোন গুরুজন বলেন যে, পুণ্যের পুরস্কার হলো ওর পরে পুণ্যকর্ম এবং মন্দকার্যের বিনিময় হলো ওর পরে মন্দকার্য।

মহান আল্লাহ বলেনঃ আল্লাহ ক্ষমাশীল, গুণগ্রাহী। তিনি পুণ্য কর্মের মর্যাদা দিয়ে থাকেন এবং ওটা বৃদ্ধি করে দেন।

এরপর মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ তারা কি বলে যে, সে আল্লাহ সম্পর্কে মিথ্যা উদ্ভাবন করেছে? অর্থাৎ এই মূখ কাফিররা রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে বলতো ? “তুমি এই কুরআন নিজেই রচনা করে আল্লাহর নামে চালিয়ে দিচ্ছ।” মহান আল্লাহ তাদের এ কথার উত্তরে স্বীয় নবী (সঃ)-কে বলেনঃ “এটা কখনো নয়। যদি তাই হতো তবে আল্লাহ ইচ্ছা করলে তোমার হৃদয় মোহর করে দিতেন।” যেমন মহা প্রতাপান্বিত আল্লাহ বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “সে যদি আমার নামে কিছু রচনা করে চালাতে চেষ্টা করতো, তবে অবশ্যই আমি তার দক্ষিণ হস্ত ধরে ফেলতাম এবং কেটে দিতাম তার জীবন ধমনী। অতঃপর তোমাদের মধ্যে এমন কেউই নেই, যে তাকে রক্ষা করতে পারে।”(৬৯:৪৪-৪৭) অর্থাৎ যদি হযরত মুহাম্মাদ (সঃ) আল্লাহর কালামের মধ্যে কিছু বৃদ্ধি করতেন তবে আল্লাহ তাআলা তার প্রতিশোধ এমনভাবে গ্রহণ করতেন যে, কেউ তাকে রক্ষা করতে পারতো না।

এর পরবর্তী বাক্য … (আরবী) এটা (আরবী)-এর উপর (আরবী) বা সংযোগ হয়নি, বরং এটা (আরবী) এবং (আরবী) হওয়ার কারণেই (আরবী) হয়েছে, (আরবী)-এর উপর সংযোগ নয় যে, (আরবী) বা জযম বিশিষ্ট হবে। (আরবী) টির লিখায় না আসা, এটা শুধু ইমামের (আরবী)-এর আনুকূল্যের কারণে হয়েছে। (আরবী)-এর মধ্যে (আরবী) টি লিখাতে এসেছে এবং (আরবী)-এর মধ্যে (আরবী) টি লিখিত হয়েছে। হ্যা, তবে এর পরবর্তী বাক্য (আরবী)-এর সংযোগ (আরবী)-এর উপর হয়েছে। অর্থাৎ তিনি নিজ বাণী দ্বারা সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করেন। অর্থাৎ দলীল প্রমাণ বর্ণনা করে এবং যুক্তি তর্ক পেশ করে তিনি সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করেন। অন্তরে যা আছে সে বিষয়ে তিনি তো সবিশেষ অবহিত। অর্থাৎ অন্তরের গোপন কথা তার কাছে প্রকাশমান।

Leave a Reply