أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ (বই#১১০২)[তোমার নগ্ন চেহারা/মনফেকি কী-৩৮ নং] (সুরা:- ৩-আলে আল্ ইমরান, আয়াত:-১১৮-১২০ , পারা:-৪) www.motaher21.net কবি :- মুহাম্মদ মোতাহার হোসাইন ###

: أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(বই#১১০২)[তোমার নগ্ন চেহারা/মনফেকি কী-৩৮ নং]
(সুরা:- ৩-আলে আল্ ইমরান, আয়াত:-১১৮-১২০ , পারা:-৪)
www.motaher21.net
কবি :- মুহাম্মদ মোতাহার হোসাইন
###
তোমার নগ্ন চেহারা প্রকাশিত হয়ে গেছে।
এতো দিন যা ঢাকা ছিল পাতলা পর্দার অন্তরালে।
যদিও আমার স্থুল দৃষ্টির কারনেই তা আড়ালে ছিল।
তোমার পোষা‌ কুকুরকেও আমি চিনেছি।
যদিও তা অনেক আগেই চেনা উচিৎ ছিল।!

পুর্ব-তিমুরের ঘটনা আমাকে নাড়া দিতে পারেনি।
কি-তৎপ ভাবেই না তুমি ছিনিয়ে নিলে,
তুমি ও তোমার পোষা প্রাণীরা,
ইন্দোনেশিয়ায় থেকে ছিনিয়ে নিলে?

অথচ পাশের মিন্দানাও্ এর স্বাধীনতা , স্বাধিকার-ঐ ঐ
কোনটাই তোমার দৃষ্টি আকর্ষণ করে না!
শুধু কি মুসলিম বলে???

তখনো আমার চক্ষু উম্মিলিতশ হয়নি!
যখন সার্ব হায়েনারা , বসনিয়ায় নিধনযজ্ঞ চালাচ্ছিল,
আর তোমরা, অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা দিয়ে ,
বসনিয়ার মুসলিমদের, হাত পা‌ বেঁধে,
হায়ানার মুখে নিক্ষেপ করছিলে।

আমি বুঝতে পারিনি –
ইরাক সে তো তোমার অস্ত্র পরিক্ষার ক্ষেত্র।
তোমার সকল মারনাস্র পরিক্ষার জন্য –
ইরাকী শিশুদের চেয়ে ভালো গিনিপিগ আর কি হতে পারে??

ফিলিস্তিন সেত, তোমার শিকার ক্ষেত্র।
ফিলিস্তিনিরা তোমার দৃষ্টিতে পশুর চেয়ে অধম নয় কি!?

কাশ্মীর তো আমার স্মৃতির পাতায় মলিন হয়ে গেছে!!!
যদিও সেখানে অবিরত রক্তক্ষরণ হচ্ছে।

লিবিয়া, সোমালিয়া, সুদান, নাইজেরিয়া অথবা আলজেরিয়ার কথা নাই বা বললাম।

কিন্তু আফগানিস্তানে এসে,
তুমি নগ্ন হয়ে গেছ!!
প্রকাশিত হয়েছে তোমার কুৎসিত চেহারা।।
এবং তোমার পশু টিরও দন্ত নখর।

স‌্যটেলাইটে টিভিতে যখন শুনলাম,
তোমার মুখ থেকে,
“ক্রসেড” – এর ঘোষনা,
আমারে নীদ টুটে গেছে!
চোখ খুলে গেছে!!

স্নায়ু সতেজ হয়েছে,
তীক্ষ্ণ হয়েছে।
তাই আজ আমি দেখতে পাচ্ছি,
তোমার চেহারা।
আর তোমরা শিকারী প্রানি টির চেহারা ও।

এবং আমার মনে পড়েছে,
আল্ কুরআন এর সেই ঘোষণা:-
” শত্রুতা প্রসুত বিদ্বেষ মুখ ফসকে বেরোয় ,
আর যা কিছু তাদের মনে লুকিয়ে আছে,
তা আরও অনেক অনেক বেশি জঘন্য।”
(সুরা:- ৩-আলে আল্ ইমরান, আয়াত:-১১৮ , পারা:-৪)
یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا لَا تَتَّخِذُوۡا بِطَانَۃً مِّنۡ دُوۡنِکُمۡ لَا یَاۡلُوۡنَکُمۡ خَبَالًا ؕ وَدُّوۡا مَا عَنِتُّمۡ ۚ قَدۡ بَدَتِ الۡبَغۡضَآءُ مِنۡ اَفۡوَاہِہِمۡ ۚۖ وَ مَا تُخۡفِیۡ صُدُوۡرُہُمۡ اَکۡبَرُ ؕ قَدۡ بَیَّنَّا لَکُمُ الۡاٰیٰتِ اِنۡ کُنۡتُمۡ تَعۡقِلُوۡنَ ﴿۱۱۸﴾
হে মুমিনগণ! তোমরা নিজেদের ছাড়া অন্য কাউকে অন্তরঙ্গ বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না । তারা তোমাদের অনিষ্ট করতে ত্রুটি করবে না; যা তোমাদেরকে বিপন্ন করে তা-ই তারা কামনা করে। তাদের মুখে বিদ্বেষ প্রকাশ পায় এবং তাদের হৃদয় যা গোপন রাখে তা আরো গুরুতর । তোমাদের জন্য আয়াতসমূহ বিশদভাবে বিবৃত করেছি, যদি তোমরা অনুধাবন কর ।

(সুরা:- ৩-আলে আল্ ইমরান, আয়াত:-১১৯, পারা:-৪)
ہٰۤاَنۡتُمۡ اُولَآءِ تُحِبُّوۡنَہُمۡ وَ لَا یُحِبُّوۡنَکُمۡ وَ تُؤۡمِنُوۡنَ بِالۡکِتٰبِ کُلِّہٖ ۚ وَ اِذَا لَقُوۡکُمۡ قَالُوۡۤا اٰمَنَّا ۚ٭ۖ وَ اِذَا خَلَوۡا عَضُّوۡا عَلَیۡکُمُ الۡاَنَامِلَ مِنَ الۡغَیۡظِ ؕ قُلۡ مُوۡتُوۡا بِغَیۡظِکُمۡ ؕ اِنَّ اللّٰہَ عَلِیۡمٌۢ بِذَاتِ الصُّدُوۡرِ ﴿۱۱۹﴾
দেখ, তোমরাই তাদেরকে ভালবাস কিন্তু তারা তোমাদেরকে ভালবাসে না অথচ তোমরা সব কিতাবে ঈমান রাখ। আর তারা যখন তোমাদের সংস্পর্শে আসে তখন বলে, ‘আমরা ঈমান এনেছি; কিন্তু তারা যখন একান্তে মিলিত হয় তখন তোমাদের প্রতি আক্রোশে তারা নিজেদের আঙ্গুলের অগ্রভাগ দাঁত দিয়ে কাটতে থাকে’। বলুন, ‘তোমাদের আক্রোশেই তোমরা মর’। নিশ্চয় অন্তরে যা রয়েছে সে সম্পর্কে আল্লাহ সবিশেষ অবগত।
(সুরা:- ৩-আলে আল্ ইমরান, আয়াত:-১২০, পারা:-৪)
اِنۡ تَمۡسَسۡکُمۡ حَسَنَۃٌ تَسُؤۡہُمۡ ۫ وَ اِنۡ تُصِبۡکُمۡ سَیِّئَۃٌ یَّفۡرَحُوۡا بِہَا ؕ وَ اِنۡ تَصۡبِرُوۡا وَ تَتَّقُوۡا لَا یَضُرُّکُمۡ کَیۡدُہُمۡ شَیۡـًٔا ؕ اِنَّ اللّٰہَ بِمَا یَعۡمَلُوۡنَ مُحِیۡطٌ ﴿۱۲۰﴾٪
তোমাদের মঙ্গল হলে তা তাদেরকে কষ্ট দেয় আর তোমাদের অমঙ্গল হলে তারা তাতে আনন্দিত হয়। তোমরা যদি ধৈর্যশীল হও এবং মুত্তাকী হও তবে তাদের ষড়যন্ত্র তোমাদের কিছুই ক্ষতি করতে পারবে না । তারা যা করে নিশ্চয় আল্লাহ তা পরিবেষ্টন করে রয়েছেন।

ফী জিলালিল কুরআন বলেছেন:-

বিধর্মীরা কখনোই  মুসলমানদের কল্যাণ চায় না : পরবর্তী তিনটি আয়াত হচ্ছে আহলে কেতাব সংক্রান্ত এ আলোচনার উপসংহার স্বরূপ। এ আলোচনা শুরু হয়েছিলো আহলে কেতাবদের বিকৃতি ও বিভ্রান্তির বর্ণনা, তাদের উত্থাপিত বিতর্কে নিহিত মুসলমানদের মনে বিভ্রান্তি সৃষ্টির মধ্য দিয়ে । তাদের অপচেষ্টার স্বরূপ উদঘাটন, মুসলমানদের বিরুদ্ধে তাদের পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র ফাসকরণ, মুসলমানদেরকে তাদের দায়িত্ব পালনে উদ্যোগী হওয়ার আদেশ দান ছিলো এর অন্তর্ভুক্ত। এ কাজ করতে গিয়ে বিতর্ক সৃষ্টির প্রয়াসী ফাসেক লোকদের প্রতি ভ্রুক্ষেপ না করার নির্দেশ এখানে দেয়া হয়েছে। এখানে এসে সূরার এই দীর্ঘতম অংশটির শেষ হয়ে যায়। এ পর্যায়ে এসে মুসলমানদের এই মর্মে সাবধান করা হয়েছে যে, তারা যেন তাদের আজন্ম শত্রুদেরকে বিশ্বস্ত বন্ধু হিসাবে গ্রহণ না করে, তাদেরকে নিজেদেরকে গোপন তথ্য না জানায় এবং নিজেদের ভালোমন্দের খবরদারী করার কোনো সুযোগ তাদেরকে না দেয়। কেননা, ওরা আসলে মোমেনদের দুশমন। এই সতর্কবাণী এতোটা সুদূরপ্রসারী ও চিরস্থায়ী যে আমরা প্রত্যেক যুগে এবং পৃথিবীর প্রত্যেক ভূখন্ডে এর উপযোগিতা দেখতে পাই । চিরস্থায়ী গ্রন্থ কোরআনে এই সতর্কবাণী দেয়া সত্ত্বেও কোরআনের ধারক-বাহকরা এ ব্যাপারে উদাসীন । আর এ কারণে তারা অনবরতই দুঃখ, কষ্ট ও লাঞ্ছনা ভোগ করে চলেছে। ১১৮, ১১৯ ও ১২০ নং আয়াত পড়ুন এবং সতর্কবাণী দেখুন, “হে মোমেনরা! তোমরা তোমাদের নিজেদের লোকদের ব্যতীত আর কাউকে বিশ্বস্ত সহকারী রূপে গ্রহণ করো না….।” এ হচ্ছে একটি পুর্ণাংগ চিত্র। এতে রয়েছে মুসলমানদের আভ্যন্তরীণ অবস্থার কিছু আবেগ, অনুভূতি ও বাহ্যিক প্রক্রিয়ার বিবরণ । সব কিছু মিলিয়ে এতে এমন একটি মানবীয় নমুনা তুলে ধরা হয়েছে, যা প্রত্যেক যুগে ও প্রত্যেক স্থানে প্রতিনিয়ত পুনরাবির্ভূত হচ্ছে। মুসলমানরা যখন কোথাও বিজয়ী ও ক্ষমতাশালী হয়, তখন আহলে কেতাবদের প্রতি তারা প্রীতি ও ভালোবাসা প্রদর্শন করে, কিন্তু তাদের প্রতিটি কার্যকলাপ সে ভালোবাসাকে মিথ্যা প্রমাণিত করে দেয়। অথচ মুসলমানরা তাদের প্রীতির হাতছানিতে প্রতারিত হয়ে তাদেরকে বিশ্বাস করে। অথচ তারা মুসলমানদেরকে পথে কাটা বিছাতে ও তাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করতে তারা বিন্দুমাত্রও পিছপা হয় না। এ কথা সত্য যে, কোরআন এখানে যে বিস্ময়কর দৃশ্য অংকন করেছে, তা প্রাথমিকভাবে মদীনার মুসলমানদের প্রতিবেশী আহলে কেতাব গোষ্ঠীর ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য । তাদের মনে মুসলমানদের বিরুদ্ধে প্রচন্ড ঘৃণা ও আক্রোশ লুকিয়ে ছিলো, কোরআন তা স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছে। কোরআন আরও বলেছে যে, মুসলমানরা আল্লাহর এই দুশমনদের সম্পর্কে তখনো প্রতারণার শিকার ছিলো ৷ তখনো তারা তাদের সাথে প্রীতির সম্পর্ক বজায় রেখে চলছিলো । তারা তখনো নিজেদের অভ্যন্তরীণ গোপনীয় তথ্যাদি সম্পর্কে নিরাপদ ভাবছিলো ৷ তাদেরকে তখনো অন্তরংগ বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করছিলো এবং এতে যে তাদের কাছে গোপন তথ্য পাচার হয়ে যেতে পারে সে আশংকা বোধ করছিলো না। এ জন্যই এই সতর্কবাণী এসে মুসলমানদের সামনে প্রকৃত সত্য উদঘাটন করে দিলো ৷ কোরআন একথা বুঝিয়ে দিলো যে আহলে কেতাব কখনো তোমাদের শুভাকাংখী হতে পারে না এবং মুসলমানদের পক্ষ থেকে তাদের যতো হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসা ও সাহায্যই দেয়া হোক না কেন, তাদের মন থেকে মুসলমানদের বিরুদ্ধে প্রতিহিংসা কখনো দূর হবে না। এই চিরন্তন সতর্কবাণী কোনো নির্দিষ্ট যুগের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিলো না। আমাদের বর্তমান যুগেও আমরা এ সত্য প্রকাশ্যভাবে দেখতে পাচ্ছি। খাটি মোমেনদেরকে ছাড়া আর কাউকে অন্তরংগ বন্ধু হিসাবে গ্রহণ না করা অর্থাৎ যারা আদর্শগতভাবে নিম্নমানের ও ভিন্নপন্থী তাদেরকে কখনো বিশ্বাস না করা, তাদের কোনো গোপন তথ্য না জানানো ও তাদের সাথে কোনো পরামর্শ না করার জন্যে আল্লাহ তায়ালা যে আদেশ দিয়েছেন, সে ব্যাপারে মুসলমানরা উদাসীন থাকার কারণেই আজ অমূসলিমদেরকে মুসলমান নামধারীরা চিন্তাধারা, মতবাদ ইত্যাদি যাবতীয় বিষয়ের উৎস ও সনদরূপে গণ্য করে। আল্লাহর সতর্কবাণী উপেক্ষা করে মুসলমানরা আল্লাহ ও তার রসূলের কট্টর দুশমনদের সাথে মিতালি করছে এবং তাদের জন্য নিজেদের বক্ষকে উন্মুক্ত করে দিচ্ছে। অথচ আল্লাহ তায়ালা প্রথম মুসলিম প্রজন্মকেই শুধু নয় বরং সকল যুগের সকল মুসলিম প্রজন্মকে বলেছেন, “তোমাদের জন্যে কষ্টদায়ক প্রতিটি জিনিসকেই তারা ভালোবাসে ৷ তাদের মুখ থেকে তো প্রতিহিংসা ফুটে বের হয়েছেই । আর তাদের বুকে যা প্রছন্ন রয়েছে, তা আরো সাংঘাতিক ।” আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন, “তোমরা তো তাদেরকে ভালোবাসো, অথচ তারা তোমাদেরকে ভালোবাসে না। তোমরা সকল কিতাবে বিশ্বাসী । যখন তারা তোমাদের সাথে সাক্ষাত করে, তখন বলে আমরা ঈমান এনেছি। আর নিভৃতে গেলেই তোমাদের ওপর আক্রোশবশত নিজেদের আংগুল কামড়ায় ৷” আল্লাহ তায়ালা আরো বলেন, ‘তোমাদের কোনো কল্যাণ হলে তারা দুঃখ পায়। আর তোমাদের কোনো ক্ষতি হলে তারা আনন্দিত হয় ।’ বারবার অর্জিত এই তিক্ত অভিজ্ঞতা আমাদেরকে চপেটাঘাত করে। তবু আমাদের হুঁশ হয় না। বারবার আমাদের সামনে তাদের ষড়যন্ত্র উদঘাটিত হয়। তবু আমরা শিক্ষা গ্রহণ করি না। তাদের লুকানো প্রতিহিংসা বারবার তাদের মুখ থেকে বেরিয়ে পড়ে৷ মুসলমানদের পক্ষ থেকে এতো খাতির, তোয়ায, উদারতা প্রদর্শন করা সত্ত্বেও সে প্রতিহিংসায় কিছুমাত্র ঘাটতি নেই৷ তবু আমরা তাদেরকে বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করি, তাদের জন্যে হৃদয় উজাড় করে দেই । মানসিক পরাজয় হেতু আমাদের আকীদা ও আদর্শে এমন সংকোচ ও হীনমন্যতা বোধ করি যে, আমরা নিজেদের কথা উল্লেখ করতেই দ্বিধা বোধ করি। আমাদের জীবন যাপন পদ্ধতির ব্যাপারেও আজ আমরা পরাজিত মনোভাবের শিকার । ফলে জীবনের সকল ক্ষেত্রে আমরা ইসলামকে বাস্তবায়িত করি না। আমাদের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের বিকৃতির প্রশ্নেও আমরা পরাজিত মনোভাবের শিকার ৷ ফলে আমাদের পূর্বপুরুষ ও আহলে কেতাব গোষ্ঠীভুক্ত এই সব কট্টর দুশমনের মধ্যে যে সংঘাত ছিলো তার উল্লেখ আমরা এড়িয়ে যাই । এ সব কারণে আমাদের ওপর আল্লাহর আদেশ লংঘনকারীদের যথাযোগ্য শাস্তি নাযিল হচ্ছে। আর এ কারণে আমরা দিনে দিন দুর্বল হচ্ছি, লাঞ্ছিত ও অপদস্ত হচ্ছি। আর আমাদের তথাকথিত বন্ধুদের কাছে এটাই হচ্ছে কাংখিত, আর তারা প্রতিনিয়ত আমাদের মধ্যে নানা রকমের বিভ্রান্তি ছড়ানোর কাজে লিপ্ত। আল্লাহর এই মহান কেতাব সে দিনের সেই প্রথম মুসলিম সংগঠনকে যেমন শিক্ষা দিয়েছে, আজ আমাদেরকেও তেমনি শিক্ষা দিচ্ছে, কিভাবে আমরা তাদের ষড়যন্ত্র তাদের ক্ষতি, তাদের হৃদয়ে লুকানো দুরভিসন্ধি থেকে নিষ্কৃতি পাবো। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তোমরা যদি ধৈর্যধারণ করো ও আল্লাহকে ভয় করো, তাহলে তাদের চক্রান্ত তোমাদের কোনো ক্ষতি করতে পারবে না …..।’ অর্থাৎ তাদের ক্ষতি ও চক্রান্ত থেকে বাচার উপায় হলো, তারা শক্তিশালী হলেও তাদের শক্তির সামনে প্রতিরোধ গড়ে তোলা, দৃঢ় মনোবল ও ধৈর্যধারণ করা, আর তারা যদি যুদ্ধ কিংবা ষড়যন্ত্রের পথ ধরে তাহলে তাকেও দৃঢ়তার সাথে রুখে দাড়ানো । তাদের মৈত্রী ও বন্ধুত্ব লাভের আশায় আদর্শের ব্যাপারে আপোস করার বদলে দৃঢ়তা ও ধৈর্য অবলস্বনই মুসলমানদের বাচার একমাত্র পথ। সেই সাথে একমাত্র আল্লাহকেই ভয় করা ও আল্লাহর সাথেই সব কিছুকে সম্পৃক্ত করতে হবে । আল্লাহভীরু মানুষ আদর্শের প্রশ্নে কারো সাথে আপোস করে না এবং আল্লাহর রজ্জু ছাড়া আর কোনো রজ্জু ধারণ করে না। হৃদয় যখন আল্লাহর সাথে মিলিত হবে, তখন তা আল্লাহর শক্তি ছাড়া আর সকল শক্তিকে তুচ্ছ মনে করবে এবং এই সম্পর্ককেই সে নিজের অত্যাবশ্যকীয় বস্তু মনে করবে। এর ফলে আত্মরক্ষার্থে কিংবা সম্মান লাভের উদ্দেশ্যে কোনো দুশমনকে তোয়ায করবে না। বস্তুত ধৈর্য, আল্লাহভীরুতা, দৃঢ়তা ও আল্লাহর রজ্জু ধারণ- এই কয়টি জিনিসই হচ্ছে মুসলমানদের বাচার উপায়। যতোদিন মুসলমানরা একমাত্র আল্লাহর রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করেছে এবং নিজেদের সমগ্র জীবনে আল্লাহর বিধানকে বাস্তবায়িত করেছে, ততদিন তারা শ্রদ্ধাভাজন থেকেছে, বিজয়ী হয়েছে। আল্লাহ তায়ালাও তাদেরকে তাদের শত্রুদের ষড়যন্ত্র থেকে রক্ষা করেছেন এবং তাদের আদর্শই সর্বোচ্চ আসনে আসীন হয়েছে। মুসলমানরা তাদের ইতিহাসের কোনো পর্যায়ে যখনই তদের আজন্ম দুশমন (ইহদী, খৃষ্টান বা পৌত্তলিকদের) ধ্বজাধারী ও পদলেইী হয়েছে, তাদের পরামর্শ গ্রহণ করেছে এবং তাদেরকে উপদেষ্টা, বিশেষজ্ঞ ও সাহায্যকারী হিসেবে গ্রহণ করেছে, তখনই আল্লাহ তায়ালা তাদের ভাগ্যে জুটিয়েছেন পরাজয় ও লাঞ্ছনা।  মুসলমানদের এই আজন্ম শত্রুরা প্রকাশ্যে হোক আর গোপনেই হোক- ইসলামী আকীদা, আদর্শ ও জীবনপদ্ধতির বিরুদ্ধে সর্বদাই যুদ্ধে লিপ্ত রয়েছে। ইতিহাস সাক্ষী যে, আল্লাহর বাণীই চিরস্থায়ী এবং আল্লাহর নীতিই কার্যকর ৷ আল্লাহর এই নীতির প্রতি যারা ভ্রুক্ষেপ করে না, তাদের ভাগ্য অপমান ও লাঞ্ছনা ছাড়া আর কিছুই জোটে না। এখানে এসে সূরার এই অংশটি শেষ হয়ে যাচ্ছে। পরবর্তী অংশে আল্লাহ ও মুসলমানদের শত্রুদের সাথে চূড়ান্ত যুদ্ধ ও সর্বাত্মক বিচ্ছেদ সম্পর্কিত বিষয়টি আলোচিত হয়েছে। এই পর্বটি সমাপ্ত করার আগে আর একটি বিষয় আলোচনা করা সমীচীন মনে করছি। সেটি হলো এমন প্রবল ও কষ্টর দুশমনদের প্রতিও ইসলামের উদারতা ও মহানুভবতার নীতি সম্পর্কিত । ইসলাম অমুসলিমদেরকে অন্তরংগ ও ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করতে মুসলমানদেরকে নিষেধ করলেও তাদের হিংসা, ষড়যন্ত্র ও ধোকাবাজির জবাবে একই রকম ধোকাবাজি, ষড়যন্ত্র ও হিংসার আচরণ করতে অনুমতি দেয়নি। ইসলাম শুধুমাত্র মুসলিম সমাজকে সতর্ক করেছে ও অন্যদের প্রতারণা থেকে তাদের রক্ষা করেছে। মুসলমান সব সময় উদারতা, মহানুভবতা, ভদ্রতা, শিষ্টতা এবং প্রীতি ও ভালোবাসার সাথে সকলের সাথে ব্যবহার করবে। সে নিজে ধোকা থেকে আত্মরক্ষা করবে কিন্তু কাউকে ধোকা দেবে না। হিংসা-দ্বেষ থেকে আত্মরক্ষা করবে কিন্তু কাউকে হিংসা করবে না । তবে কেউ যদি তার জীবনবিধানের ওপর আক্রমণ চালায়, তার আদর্শ পরিত্যাগের জন্য বল প্রয়োগ করে, তাহলে সেই ক্ষেত্রে তাকে যুদ্ধ করার আদেশ দেয়া হয়েছে। শত্রুর বল প্রয়োগ, আল্লাহর পথে চলার পথে বাধা ও জীবনে আল্লাহ্‌র বিধান বাস্তবায়নে অন্তরায়কে দূর করার জন্যে তাকেও বল প্রয়োগ করতে বলা হয়েছে। এটাই আল্লাহর পথে জেহাদ- ব্যক্তিগত শত্রুতা, প্রতিহিংসা বা প্রতিশোধপরায়ণতা নয়। মানবজাতিকে তাদের কল্যাণের পথে চলতে যে বাধা দেয়া হয় সেই বাধা দূর করার জন্যেই এ যুদ্ধের নির্দেশ। আধিপত্য বিস্তার ও শোষণ করার সুযোগ লাভের জন্যে নয়। এ যুদ্ধ হচ্ছে শান্তির নিশ্চয়তা দানকারী আল্লাহর নিখুঁত ও নির্ভুল বিধান বাস্তবায়নের জন্যে- বিশেষ কোনো জাতীয় পতাকা বা সাম্রাজ্যবাদ প্রতিষ্ঠার জন্যে নয়। কোরআন ও সুন্নাহর বহু অকাট্য উক্তি এ বিষয়টিকে স্পষ্ট করে দিয়েছে এবং আল্লাহর এই বিধান অনুযায়ী প্রথম যুগের মুসলমানদের জীবন যাপন দ্বারা তার বাস্তব ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। বস্তুত আল্লাহর এ বিধান সর্বতোভাবে কল্যাণকর । মানবজাতির জঘন্যতম দুশমন যারা, তারাই মানুষকে এ বিধান গ্রহণে নানাভাবে বাধা দেয়। মানবজাতির উচিত এই দুশমনদেরকে প্রতিহত করা এবং বিশ্ব-নেতৃত্ব থেকে হটিয়ে দেয়া । এটাই মুসলিম জাতির দায়িত্ব চিরদিনই তাকে এ দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানানো হয়েছে এবং কেয়ামত পর্যন্তই তাই জেহাদ চালু থাকবে।

তাফসীরে ইবনে কাছীর বলেছেন:-
১১৮-১২০ নং আয়াতের তাফসীর:

এখানে আল্লাহ পাক মুমিনদেরকে কাফির ও মুনাফিকদের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করতে নিষেধ করছেন। তিনি বলছেন- এরা তো তোমাদের শত্রু। সুতরাং তোমরা তাদের বাহ্যিক মিষ্ট কথায় ভুলে যেও না এবং তাদের প্রতারণার ফাঁদে পড়ো না। নতুবা তারা সুযোগ পেয়ে তোমাদেরকে ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে এবং তদের ভেতরের শত্রুতা তখন প্রকাশ পেয়ে যাবে। তোমরা তাদের নিকট তোমাদের গুপ্ত কথা কখনও প্রকাশ করো না। (আরবী) বলা হয় মানুষের বিশ্বস্ত বন্ধুকে এবং (আরবী) দ্বারা ইসলাম ছাড়া অন্যান্য সমস্ত দলকে বুঝানো হয়েছে। সহীহ বুখারী প্রভৃতির মধ্যে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ ‘আল্লাহ তা’আলা যে নবীকেই প্রেরণ করেছেন এবং যে প্রতিনিধিকেই নিযুক্ত করেছেন, তাঁর জন্যে তিনি দু’জন বন্ধু নির্ধারিত করেছেন। একজন তাকে ভাল কথা বুঝিয়ে থাকেন ও ভালকার্যে উৎসাহ দিয়ে থাকেন এবং অপরজন তাকে মন্দকার্যের পথ-প্রদর্শন করে ও সেই কার্যে উত্তেজিত করে। সুতরাং আল্লাহ যাকে রক্ষা করেন সেই রক্ষা পেতে পারে।’ হযরত উমার ইবনে খাত্তাব (রাঃ)-কে বলা হয়ঃ ‘এখানে ‘হীরার’ একজন লোক রয়েছে, খুব ভাল লিখতে পরে এবং তার স্মরণশক্তি খুব ভাল সুতরাং আপনি তাকে আপনার লিখক নিযুক্ত করুন।’ একথা শুনে হযরত উমার (রাঃ) বলেনঃ তাহলে তো আমি একজন অমুসলিমকে আমার বন্ধু বানিয়ে নেবো যা আল্লাহ তা’আলা নিষেধ করেছেন’! এ ঘটনাটিও এ আয়াতটিকে সামনে রেখে চিন্তা করলে এ সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যাবে যে, যিম্মী কাফিরদেরকেও এরূপ কার্যে নিয়োগ করা উচিত নয়। কেননা, হতে পারে যে, তারা শত্রুপক্ষকে মুসলমানদের গোপনীয় কথা ও উদ্দেশ্য সম্বন্ধে অবহিত করবে এবং তাদেরকে সতর্ক করে দেবে। কারণ, মুসলমানদের পতনই তাদের কাম্য। হযরত আযহার ইবনে রাশেদ (রঃ) বলেন যে, মানুষ হযরত আনাস ইবনে মালিক (রাঃ)-এর নিকট হাদীস শুনতেন। কোন হাদীসের ভাবার্থ বোধগম্য না হলে তারা হযরত হাসান বসরী (রঃ)-এর নিকট তা বুঝে নিতেন। একদা হযরত আনাস (রাঃ) নিম্নের হাদীসটি বর্ণনা করেনঃ “তোমরা অংশীবাদীদের অগ্নি হতে আলোক গ্রহণ। করো না এবং স্বীয় আংটিতে আরবী অংকন করো না। তারা এসে খাজা সাহেবকে এর ব্যাখ্যা জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেনঃ দ্বিতীয় বাক্যটির ভাবার্থ হচ্ছে- “তোমরা আংটিতে মুহাম্মদ (সঃ)-এর নাম খোদাই করো না এবং প্রথম বাক্যটির ভাবার্থ হচ্ছেঃ ‘তোমরা নিজেদের কার্যের ব্যাপারে মুশরিকদের পরামর্শ গ্রহণ করো না।’ দেখুন, আল্লাহ তা’আলাও স্বীয় গ্রন্থে বলেনঃ “হে ঈমানদারগণ! তোমরা নিজেদের ছাড়া অন্যদের বিশ্বস্ত বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না’। (আবু ইয়ালা) কিন্তু খাজা সাহেবের এ ব্যাখ্যাটি একটি বিবেচ্য বিষয়। সম্ভবতঃ হাদীসটির সঠিক ভাবার্থ হবেঃ (আরবী) (৪৯:২৯) আরবী অক্ষরে আংটির উপর খোদাই করো না। যেমন অন্য হাদীসে এর নিষিদ্ধতা পরিষ্কারভাবে বিদ্যমান রয়েছে। এর কারণ এই যে, এর ফলে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর মোহরের সঙ্গে সাদৃশ্য এসে যাবে। আর প্রথম বাক্যটির ভাবার্থ হবেঃ “তোমরা মুশরিকদের গ্রামের পার্শ্বে থেকো না, তাদের প্রতিবেশী হয়ো না এবং তাদের শহর হতে হিজরত কর।’ যেমন সুনান-ই-আবু দাউদে রয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ মুসলমান ও মুশরিকদের মধ্যকার যুদ্ধ কি তোমরা দেখ না? অন্য হাদীসে রয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ যারা মুশরিকদের সাথে মেলামেশা করে, তাদের সাথে বসবাস করে, তারা তাদের মতই।

অতঃপর আল্লাহ তাআলা বলেনঃ তাদের কথাতেও শুক্রতা প্রকাশ পাচ্ছে। তাদের চেহারা দেখেই শুভাশুভ নিরূপকগণ তাদের ভেতরের দুষ্টামির কথা জানতে পারে। তাদের অন্তরে যে ধ্বংসাত্মক মনোভাব রয়েছে তা তোমাদের জানা নেই। কিন্তু আমি স্পষ্টভাবে বর্ণনা করে দিলাম। সুতরাং জ্ঞানীরা কখনও তাদের প্রতারণার ফাঁদে পড়বে না।

এরপর আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ “দেখ, এটা কত বড় দুর্বলতার কথা যে, তোমরা তাদেরকে ভালবাসছো, অথচ তারা তোমাদেরকে চায় না। তোমরা সমস্ত গ্রন্থকে স্বীকার করে থাক বটে, কিন্তু তারা সন্দেহের মধ্যেই পড়ে রয়েছে। তোমরা তাদের গ্রন্থে বিশ্বাস কর বটে, কিন্তু তারা তোমাদের গ্রন্থে বিশ্বাস করে না। অতএব, উচিত তো ছিল যে, তোমরা তাদের দিকে কড়া দৃষ্টিতে দেখতে। পক্ষান্তরে তারা কিন্তু তোমাদের প্রতি শত্রুতাই পোষণ করছে।

তারা মুসলমানদের মুখোমুখি হলে নিজেদের ঈমানদারীর কাহিনী বলতে আরম্ভ করে। কিন্তু যখনই তাদের হতে পৃথক হয় তখনই হিংসা ও ক্রোধে নিজেদের অঙ্গুলি কামড়াতে থাকে। সুতরাং মুসলমানদের উচিত যে, তারা যেন মুনাফিকদের বাহ্যিক ভাব দেখেই তাদেরকে বন্ধু মনে না করে। এ মুনাফিকরা মুসলমানদের উন্নতি দেখে হিংসায় জ্বলে পুড়ে মরলেও আল্লাহ তা’আলা ইসলাম ও মুসলমানদের উন্নতি সাধন করতেই থাকবেন। মুসলমানরা সর্বদিক দিয়ে বেড়েই চলবে, যদিও মুশরিক ও মুনাফিকরা হিংসা ও ক্রোধে জ্বলে পুড়ে মরে যায়। আল্লাহ পাক তাদের অন্তরের কথা খুব ভাল করেই জানেন। তাদের সমুদয় ষড়যন্ত্রের উপর মাটি পড়ে যাবে এবং তারা তাদের জঘন্য কার্যে কৃতকার্য হবে না। তারা মুসলমানদের উন্নতি চায় না তথাপি মুসলমানেরা দিন দিন উন্নতি লাভ করতেই থাকবে এবং পরকালেও তাদেরকে সুখময় জান্নাতে দেখতে পাবে। পক্ষান্তরে এ মুশরিক ও মুনাফিকরা ইহজগতেও লাঞ্ছিত ও অপমানিত হবে এবং পরকালেও তারা জাহান্নামের জ্বালানিরূপে ব্যবহৃত হবে। তারা যে তোমাদের চরমশ তার বড় প্রমাণ এই যে, যখন তোমাদের কোন মঙ্গল সাধিত হয় তখন তারা অত্যন্ত অসন্তুষ্ট হয়। আর যদি তোমাদের কোন ক্ষতি সাধিত হয় তখন তারা তাতে আনন্দ লাভ করে। অর্থাৎ যখন আল্লাহ পাক মুমিনদেরকে সাহায্য করেন এবং তারা কাফিরদের উপর বিজয় লাভ করতঃ যুদ্ধলব্ধ দ্রব্য প্রাপ্ত হয় তখন ঐ মুনাফিকরা অত্যন্ত অসন্তুষ্ট হয়। আর যখন মুমিনগণ পরাজয় বরণ করে তখন তারা কাফিরদের সাথে মিলিত হয়ে আনন্দ প্রকাশ করে। এখন মহান আল্লাহ মুমিনদেরকে সম্বোধন করে বলেন‘হে মুমিনগণ! যদি তোমরা তাদের দুষ্টামি হতে মুক্তি পেতে চাও তবে ধৈর্যধারণ কর, সংযমী হও এবং আমার উপর নির্ভর কর, আমি তোমাদের শত্রুদেরকে ঘিরে নেবো। কোন মঙ্গল লাভ করা এবং কোন অমঙ্গল হতে রক্ষা পাওয়ার ক্ষমতা কারও নেই। আল্লাহ তা’আলা যা চান তাই হয় এবং যা চান না তা হতে পারে না। তোমরা যদি আল্লাহর উপর সম্পূর্ণরূপে নির্ভর কর তবে তিনিই তোমাদের জন্যে যথেষ্ট।’ এ সম্পর্কেই এখন উহুদ যুদ্ধের বর্ণনা শুরু হচ্ছে, যার মধ্যে মুসলমানদের ধৈর্য ও সহনশীলতার বর্ণনা রয়েছে এবং যার মধ্যে রয়েছে আল্লাহ তা’আলার পরীক্ষার পূর্ণচিত্র ও যদ্দ্বারা মুমিন ও মুনাফিকদের মধ্যে প্রভেদ প্রকাশ পেয়েছে।

তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ বলেছেন:-
১১৮-১২০ নং আয়াতের তাফসীর:

মু’মিনগণ কেবল মু’মিনদেরকেই বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করবে, অন্য কাউকে না। এ সম্পর্কে সূরা বাকারাতে আলোচনা করা হয়েছে। এখানে আল্লাহ তা‘আলা আরো কঠোরভাবে ধমক দিয়ে কাফির-মুশরিকসহ অন্যান্যদেরকে অন্তরঙ্গ বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করতে নিষেধ করছেন। যদিও আয়াতে মুনাফিকদের সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে, তবে মুনাফিকসহ সকল কাফির এতে শামিল; কারণ তারা তোমাদের ভাল চায় না, সুযোগ পেলেই তোমাদের ক্ষতি করবে। মুখে বাহ্যিকভাবে খুব সুসম্পর্কের কথা বলবে, এমনকি অনেক কিছু আদান-প্রদান করবে। মাঝে মাঝে বিদ্বেষমূলক কথা বের হয়ে যাবে। কিন্তু অন্তরে যে বিদ্বেষ গোপন করে আছে তা আরো ভয়ংকর। আমরা মুসলিমরা তাদের প্রতি ভালবাসা দেখালে কি হবে, তারা মূলত আমাদের ভালবাসে না, তাদের স্বার্থ হাসিলের জন্য ক্ষণিকের সম্পর্ক রাখে; কিন্তু সুযোগ পেলেই তাদের আসল চেহারা প্রকাশ পেয়ে যাবে। সুতরাং তাদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করার কোন সুযোগ নেই। যদি মুসলিমরা তাদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করে তাহলে কখনো পূর্ণ ঈমানের ওপর টিকে থাকতে পারবে না এবং দুনিয়াতে তাদের ওপর বিজয়ী হতে পারবে না। আরবিতে একটি প্রবাদ রয়েছে যার অর্থ হলো: কোন ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করো না; বরং ব্যক্তির বন্ধু সম্পর্কে জিজ্ঞাসা কর। কারণ ব্যক্তি তার বন্ধুর অনুসরণ করে চলে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: একজন ব্যক্তি তার বন্ধুর ধর্ম অনুরসণ করে থাকে। সুতরাং তোমাদের প্রত্যেকে যেন লক্ষ রাখে সে কাকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করছে। (সিলসিলা সহীহাহ হা: ৯২৭)

আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: আল্লাহ তা‘আলা এমন কোন নাবী প্রেরণ ও খলীফা নির্ধারণ করেননি যার জন্য দু’জন অন্তরঙ্গ বন্ধু দেননি। একজন বন্ধু তাকে ভাল কাজের পরামর্শ দেয় ও ভাল কাজে উৎসাহ দেয় অপর জন খারাপ কাজের পরামর্শ দেয় ও খারাপ কাজের ইন্ধন যোগায়। আল্লাহ তা‘আলা যাকে রক্ষা করেন সেই কেবল রক্ষা পায়। (সহীহ বুখারী হা: ৬৬১১, ৭১৯৬)

সুতরাং রাষ্ট্র প্রধানদেরও লক্ষ রাখা দরকার কাদের সাথে রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক করছেন।

بِطَانَةً এমন অন্তরঙ্গ বন্ধু যার নিকট গোপন তথ্য বলা হয়।

لَا يَأْلُوْنَكُمْ

তোমাদের ক্ষতি করতে ত্র“টি করে না।

خَبَالًا যা তোমাদের দীন ও দুনিয়া উভয়ের জন্য অনিষ্টকর।

تُحِبُّوْنَهُمْ তোমরা মুনাফিকদের বাহ্যিক সালাত এবং ঈমানের ধোঁকায় তাদের বন্ধু বানিয়ে নাও। জেনে রেখ! তারা তোমাদেরকে ভালবাসে না।

এরপর আল্লাহ তা‘আলা কাফির-মুনাফিকদের অন্তরে হিংসা-বিদ্বেষ ও শত্র“তা পোষণ করার কথা তুলে ধরছেন। যদি মুসলিমদের কোন বিজয়, গনীমত ও সাহায্য আসে তা হলে তারা ব্যথিত হয়। পক্ষান্তরে মুসমিদের পরাজয় হলে অথবা জানমালের কোন ক্ষতি হলে তারা খুব খুশি হয়। তাই আমাদের সতর্ক হওয়া উচিত। কাফির-মুশরিকদের সাথে সম্পর্ক রাখাই আমাদের অধঃপতনের অন্যতম কারণ।

আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:

১. কাফির-মুশরিকদের সাথে বন্ধুত্ব হারাম। তবে কোন ক্ষতির আশঙ্কা থাকলে অন্তরে ঘৃণা রেখে বাহ্যিক সম্পর্ক বজায় রাখা যেতে পারে।
২. কাফিরদের প্রতি মুসলিমরা সহানুভূতি দেখালেও তারা মূলত মুসলিমদেরকে ভালবাসে না।
৩. মুসলিমদের প্রতি কাফির-মুশরিক ও মুনাফিকদের হিংসার দাবানল সর্বদা জ্বলতে থাকে।

তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
# মদীনার আশেপাশে যেসব ইহুদী বাস করতো আওস ও খাযরাজ গোত্রের লোকদের সাথে প্রাচীন কাল থেকে তাদের বন্ধুত্ব চলে আসছিল। এ দুই গোত্রের লোকেরা ব্যক্তিগতভাবেও বিভিন্ন ইহুদীর সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রাখতো এবং গোত্রীয়ভাবেও তারা ছিল পরস্পরের প্রতিবেশী ও সহযোগী। আওস ও খাযরাজ গোত্রের লোকেরা মুসলমান হয়ে যাবার পরও ইহুদীদের সাথে তাদের সেই পুরাতন সম্পর্ক বজায় রেখেছিল। ব্যক্তিগতভাবেও তারা তাদের পুরাতন ইহুদী বন্ধুদের সাথে আগের মতই প্রীতি ও আন্তরিকতার সাথে মেলামেশা করতো। কিন্তু নবী ﷺ ও তাঁর মিশনের বিরুদ্ধে ইহুদীদের মধ্যে যে শত্রুতাপূর্ণ মনোভাব সৃষ্টি হয়ে গিয়েছিল তার ফলে তারা এই নতুন আন্দোলনে যোগদানকারীকোন ব্যক্তির সাথে আন্তরিকতাপূর্ণ সম্পর্ক রাখতে প্রস্তুত ছিল না। আনসারদের সাথে তারা বাহ্যত আগের সম্পর্ক বজায় রেখেছিল। কিন্তু মনে মনে তারা হয়ে গিয়েছিল তাদের চরম শত্রু। ইহুদীরা তাদের এই বাহ্যিক বন্ধুত্বকে অবৈধভাবে ব্যবহার করে মুসলমানদের জামায়াতে অভ্যন্তরীণ ফিত্‌না ও ফাসাদ সৃষ্টি করার এবং তাদের জামায়াতের গোপন বিষয়গুলোর খবর সংগ্রহ করে শত্রুদের হাতে পৌঁছিয়ে দেবার জন্য সর্বক্ষণ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল। মহান আল্লাহ‌ এখানে তাদের এই মুনাফেকী কর্মনীতি থেকে মুসলমানদের সাবধান থাকার নির্দেশ দিয়েছেন।
# এটা একটা অদ্ভুত ব্যাপারই বলতে হবে, কোথায় তোমরা তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করবে, তা নয় বরং তারা তোমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করছে। তোমরা তো কুরআনের সাথে তাওরাতকেও মানো, তাই তোমাদের বিরুদ্ধে তাদের অভিযোগ করার কোন যুক্তিসঙ্গত কারণ থাকতে পারে না। বরং তাদের বিরুদ্ধে তোমাদের অভিযোগ থাকতে পারতো। কারণ তারা কুরআনকে মানে না।
engrmotaher: WhatsApp

Leave a Reply