Motaher21.net أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ ( বই # ১১৪২) [*‌‌*মানব জীবনে আখিরাতের বিশ্বাসের প্রভাব :- **“মানুষ যে চেষ্টা সাধনা করে তা ছাড়া তার আর কিছুই প্রাপ্য নেই।”:- ** সুপারিশও কোন কাজে আসতে পারে না যতক্ষণ না,:- *সত্যের মুকাবিলায় অনুমানের কোনই মূল্য নেই:-] www.motaher21.net সূরা:৫৩:আন-নাজম। পারা:২৭ ১৯-৪২ নং আয়াত:- আয়াতের ব্যাখ্যা:- ১) তাফসীরে ইবনে কাছীর:- ২) তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ:-

 

Motaher21.net
أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
( বই # ১১৪২)
[*‌‌*মানব জীবনে আখিরাতের বিশ্বাসের প্রভাব :-
**“মানুষ যে চেষ্টা সাধনা করে তা ছাড়া তার আর কিছুই প্রাপ্য নেই।”:-
** সুপারিশও কোন কাজে আসতে পারে না যতক্ষণ না,:-
*সত্যের মুকাবিলায় অনুমানের কোনই মূল্য নেই:-]
www.motaher21.net
সূরা:৫৩:আন-নাজম।
পারা:২৭
১৯-৪২ নং আয়াত:-
আয়াতের ব্যাখ্যা:-
১) তাফসীরে ইবনে কাছীর:-
২) তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ:-

সূরা:৫৩:আন-নাজম-১৯
اَفَرَءَیۡتُمُ اللّٰتَ وَ الۡعُزّٰی ﴿ۙ۱۹﴾
তোমরা কি ভেবে দেখেছ ‘লাত’ ও ‘উয্যা’ সম্বন্ধে।
সূরা:৫৩:আন-নাজম-২০
وَ مَنٰوۃَ الثَّالِثَۃَ الۡاُخۡرٰی ﴿۲۰﴾
এবং তৃতীয় আরেকটি ‘মানাত’ সম্বন্ধে?
সূরা:৫৩:আন-নাজম-২১
اَلَکُمُ الذَّکَرُ وَ لَہُ الۡاُنۡثٰی ﴿۲۱﴾
তবে কি তোমাদের জন্য পুত্ৰ সন্তান এবং আল্লাহর জন্য কন্যা সন্তান?
সূরা:৫৩:আন-নাজম-২২
تِلۡکَ اِذًا قِسۡمَۃٌ ضِیۡزٰی ﴿۲۲﴾
তাহলে এটা অত্যন্ত প্রতারণামূলক বন্টন।
সূরা:৫৩:আন-নাজম-২৩
اِنۡ ہِیَ اِلَّاۤ اَسۡمَآءٌ سَمَّیۡتُمُوۡہَاۤ اَنۡتُمۡ وَ اٰبَآؤُکُمۡ مَّاۤ اَنۡزَلَ اللّٰہُ بِہَا مِنۡ سُلۡطٰنٍ ؕ اِنۡ یَّتَّبِعُوۡنَ اِلَّا الظَّنَّ وَ مَا تَہۡوَی الۡاَنۡفُسُ ۚ وَ لَقَدۡ جَآءَہُمۡ مِّنۡ رَّبِّہِمُ الۡہُدٰی ﴿ؕ۲۳﴾
প্রকৃতপক্ষে এসব তোমাদের বাপ-দাদাদের রাখা নাম ছাড়া আর কিছুই না। এজন্য আল্লাহ‌ কোন সনদপত্র নাযিল করেননি।প্রকৃত ব্যাপার হচ্ছে, মানুষ শুধু ধারণা ও প্রবৃত্তির বাসনার দাস হয়ে আছে। অথচ তাদের রবের পক্ষ থেকে তাদের কাছে হিদায়াত এসেছে।
সূরা:৫৩:আন-নাজম-২৪
اَمۡ لِلۡاِنۡسَانِ مَا تَمَنّٰی ﴿۫ۖ۲۴﴾
মানুষ যা চায় তাই কি তার জন্য ঠিক?
সূরা:৫৩:আন-নাজম-২৫
فَلِلّٰہِ الۡاٰخِرَۃُ وَ الۡاُوۡلٰی ﴿٪۲۵﴾
দুনিয়া ও আখেরাতের মালিক তো একমাত্র আল্লাহ‌।
সূরা:৫৩:আন-নাজম-২৬
وَ کَمۡ مِّنۡ مَّلَکٍ فِی السَّمٰوٰتِ لَا تُغۡنِیۡ شَفَاعَتُہُمۡ شَیۡئًا اِلَّا مِنۡۢ بَعۡدِ اَنۡ یَّاۡذَنَ اللّٰہُ لِمَنۡ یَّشَآءُ وَ یَرۡضٰی ﴿۲۶﴾
আসমানে তো কত ফেরেশতা আছে যাদের সুপারিশও কোন কাজে আসতে পারে না যতক্ষণ না আল্লাহ‌ নিজ ইচ্ছায় যাকে খুশী তার জন্য সুপারিশ করার অনুমতি দান করেন।
সূরা:৫৩:আন-নাজম-২৭
اِنَّ الَّذِیۡنَ لَا یُؤۡمِنُوۡنَ بِالۡاٰخِرَۃِ لَیُسَمُّوۡنَ الۡمَلٰٓئِکَۃَ تَسۡمِیَۃَ الۡاُنۡثٰی ﴿۲۷﴾
কিন্তু যারা আখেরাত মানে না তারা ফেরেশতাদেরকে দেবীদের নামে নামকরণ করে।
সূরা:৫৩:আন-নাজম-২৮
وَ مَا لَہُمۡ بِہٖ مِنۡ عِلۡمٍ ؕ اِنۡ یَّتَّبِعُوۡنَ اِلَّا الظَّنَّ ۚ وَ اِنَّ الظَّنَّ لَا یُغۡنِیۡ مِنَ الۡحَقِّ شَیۡئًا ﴿ۚ۲۸﴾
অথচ এ বিষয়ে তাদের কোন জ্ঞান নেই, তারা শুধু অনুমানের অনুসরণ করে। আর সত্যের মুকাবিলায় অনুমানের কোনই মূল্য নেই।
সূরা:৫৩:আন-নাজম-২৯
فَاَعۡرِضۡ عَنۡ مَّنۡ تَوَلّٰی ۬ۙ عَنۡ ذِکۡرِنَا وَ لَمۡ یُرِدۡ اِلَّا الۡحَیٰوۃَ الدُّنۡیَا ﴿ؕ۲۹﴾
অতএব তাকে উপেক্ষা করে চল, যে আমার স্মরণে বিমুখ এবং যে শুধু পার্থিব জীবনই কামনা করে।
সূরা:৫৩:আন-নাজম-৩০
ذٰلِکَ مَبۡلَغُہُمۡ مِّنَ الۡعِلۡمِ ؕ اِنَّ رَبَّکَ ہُوَ اَعۡلَمُ بِمَنۡ ضَلَّ عَنۡ سَبِیۡلِہٖ ۙ وَ ہُوَ اَعۡلَمُ بِمَنِ اہۡتَدٰی ﴿۳۰﴾
তাদের জ্ঞানের দৌড় এই পর্যন্ত। নিশ্চয় তোমার প্রতিপালকই ভাল জানেন, কে তাঁর পথ হতে বিচ্যুত এবং তিনিই ভাল জানেন, কে সৎপথ প্রাপ্ত।
সূরা:৫৩:আন-নাজম-৩১
وَ لِلّٰہِ مَا فِی السَّمٰوٰتِ وَ مَا فِی الۡاَرۡضِ ۙ لِیَجۡزِیَ الَّذِیۡنَ اَسَآءُوۡا بِمَا عَمِلُوۡا وَ یَجۡزِیَ الَّذِیۡنَ اَحۡسَنُوۡا بِالۡحُسۡنٰی ﴿ۚ۳۱﴾
আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে তা আল্লাহরই। যাতে তিনি যারা মন্দ কর্ম করে তাদেরকে দেন মন্দ ফল এবং যারা সৎকর্ম করে তাদেরকে দেন উত্তম পুরস্কার।
সূরা:৫৩:আন-নাজম-৩২
اَلَّذِیۡنَ یَجۡتَنِبُوۡنَ کَبٰٓئِرَ الۡاِثۡمِ وَ الۡفَوَاحِشَ اِلَّا اللَّمَمَ ؕ اِنَّ رَبَّکَ وَاسِعُ الۡمَغۡفِرَۃِ ؕ ہُوَ اَعۡلَمُ بِکُمۡ اِذۡ اَنۡشَاَکُمۡ مِّنَ الۡاَرۡضِ وَ اِذۡ اَنۡتُمۡ اَجِنَّۃٌ فِیۡ بُطُوۡنِ اُمَّہٰتِکُمۡ ۚ فَلَا تُزَکُّوۡۤا اَنۡفُسَکُمۡ ؕ ہُوَ اَعۡلَمُ بِمَنِ اتَّقٰی ٪﴿۳۲﴾
যারা বড় বড় গোনাহ এবং প্রকাশ্য ও সর্বজনবিদিত অশ্লীল কাজ থেকে বিরত থাকে-তবে ছোটখাট ত্রুটি-বিচ্যুতি হওয়া ভিন্ন কথা -নিশ্চয়ই তোমার রবের ক্ষমাশীলতা অনেক ব্যাপক।যখন তিনি মাটি থেকে তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন এবং যখন তোমরা মাতৃগর্ভে ভ্রূণ আকারে ছিলে তখন থেকে তিনি তোমাদের জানেন। অতএব তোমরা নিজেদের পবিত্রতার দাবী করো না। সত্যিকার মুত্তাকী কে তা তিনিই ভাল জানেন।
সূরা:৫৩:আন-নাজম-৩৩
اَفَرَءَیۡتَ الَّذِیۡ تَوَلّٰی ﴿ۙ۳۳﴾
তুমি কি দেখেছ সে ব্যক্তিকে যে মুখ ফিরিয়ে নেয়;
সূরা:৫৩:আন-নাজম-৩৪
وَ اَعۡطٰی قَلِیۡلًا وَّ اَکۡدٰی ﴿۳۴﴾
এবং সামান্য মাত্র দিয়ে ক্ষান্ত হয়েছে?
সূরা:৫৩:আন-নাজম-৩৫
اَعِنۡدَہٗ عِلۡمُ الۡغَیۡبِ فَہُوَ یَرٰی ﴿۳۵﴾
তার কাছে কি গায়েবের জ্ঞান আছে যে সে প্রকৃত ব্যাপারটা দেখতে পাচ্ছে?
সূরা:৫৩:আন-নাজম-৩৬
اَمۡ لَمۡ یُنَبَّاۡ بِمَا فِیۡ صُحُفِ مُوۡسٰی ﴿ۙ۳۶﴾
তার কাছে কি মূসার সহীফাসমূহের কোন খবর পৌঁছেনি? সূরা:৫৩:আন-নাজম-৩৭
وَ اِبۡرٰہِیۡمَ الَّذِیۡ وَفّٰۤی ﴿ۙ۳۷﴾
যে ইবরাহীম তার সহীফাসমূহের কথাও কি পৌঁছেনি? যে আনুগত্যের পরম পরাকাষ্ঠা দেখিয়েছে ?
সূরা:৫৩:আন-নাজম-৩৮
اَلَّا تَزِرُ وَازِرَۃٌ وِّزۡرَ اُخۡرٰی ﴿ۙ۳۸﴾
একথা যে, “কোন বোঝা বহনকারী অন্যের বোঝা বহন করবে না।”
সূরা:৫৩:আন-নাজম-৩৯
وَ اَنۡ لَّیۡسَ لِلۡاِنۡسَانِ اِلَّا مَا سَعٰی ﴿ۙ۳۹﴾
একথা যে, “মানুষ যে চেষ্টা সাধনা করে তা ছাড়া তার আর কিছুই প্রাপ্য নেই।”
সূরা:৫৩:আন-নাজম-৪০
وَ اَنَّ سَعۡیَہٗ سَوۡفَ یُرٰی ﴿۪۴۰﴾
একথা যে, “তার চেষ্টা-সাধনা অচিরেই মূল্যায়ণ করা হবে।
সূরা:৫৩:আন-নাজম-৪১
ثُمَّ یُجۡزٰىہُ الۡجَزَآءَ الۡاَوۡفٰی ﴿ۙ۴۱﴾
এবং তাকে তার পুরো প্রতিদান দেয়া হবে।”
সূরা:৫৩:আন-নাজম-৪২
وَ اَنَّ اِلٰی رَبِّکَ الۡمُنۡتَہٰی ﴿ۙ۴۲﴾
একথা যে, “শেষ পর্যন্ত তোমার রবের কাছেই পৌঁছতে হবে।”

১৯-৪২ নং আয়াতের ব্যাখ্যা:-
তাফসীরে ইবনে কাছীর:-
১৯-২৬ নং আয়াতের তাফসীর:

আল্লাহ তাআলা এই আয়াতগুলোতে মুশরিকদের ধমকের সুরে বলছেন যে, তারা প্রতিমাগুলোকে এবং আল্লাহ ছাড়া অন্যদেরকে মা’বূদ বানিয়ে নিয়েছে এবং যেমনভাবে আল্লাহর বন্ধু হযরত ইবরাহীম (আঃ) আল্লাহর নির্দেশক্রমে তার ঘর নির্মাণ করেছেন তেমনিভাবে তারা নিজেদের বাতিল মাবুদগুলোর জন্যে ইবাদতখানা বানিয়েছে।

লাত ছিল একটি সাদা পাথর যা অংকিত ও নক্সকৃত ছিল। ওর উপর গম্বুজ নির্মাণ করা হয়েছিল। ওর উপর তারা গেলাফ উঠিয়েছিল। ওর জন্যে তারা খাদেম, রক্ষক ও ঝাড়দার নিযুক্ত করেছিল। ওর আশে পাশের জায়গাগুলোকে তারা হারাম শরীফের মত মর্যাদা সম্পন্ন মনে করতো। এটা ছিল তায়েফবাসীদের মূর্তির ঘর বা মন্দির। সাকীফ গোত্র এর উপাসক ছিল। তারাই ছিল এর মুতাওয়াল্লী। কুরায়েশ ছাড়া অন্যান্য সমস্ত আরব গোত্রের উপর তারা নিজেদের গৌরব প্রকাশ করতো।

ইমাম ইবনে জারীর (রঃ) বলেন যে, ঐ লোকগুলো আল্লাহ শব্দ হতে লাত শব্দটি বানিয়ে নিয়েছে। তারা যেন একে স্ত্রী লিঙ্গ রূপে ব্যবহার করেছিল। আল্লাহ তাআলার সত্তা সমস্ত শরীক হতে পবিত্র।

একটি কিরআতে, (আরবী) শব্দটির (আরবী) অক্ষরটি তাশদীদের সাথে রয়েছে। অর্থাৎ পানি দ্বারা মিশ্রিতকারী। ওকে (আরবী) এই অর্থে বলার কারণ এই যে, সে একটি সৎলোক ছিল। হজ্বের মৌসুমে সে হাজীদেরকে পানির সাথে ছাতু মিশিয়ে পান করাতো। তার মৃত্যুর পর জনগণ তার কবরের খিদমত করতে শুরু করে এবং ধীরে ধীরে তার ইবাদতের প্রচলন শুরু হয়। অনুরূপভাবে (আরবী) শব্দটি (আরবী) শব্দ হতে নেয়া হয়েছে। মক্কা ও মদীনার মধ্যস্থলে অবস্থিত নাখলা’ নামক স্থানে একটি বৃক্ষ ছিল। ওর উপরও গম্বুজ নির্মিত ছিল। ওটাকেও চাদর দ্বারা আবৃত করা হতো। কুরায়েশরা ওর খুবই সম্মান করতো। আবু সুফিয়ানও (রাঃ) উহুদের যুদ্ধের দিন বলেছিলেনঃ “আমাদের উযযা আছে এবং তোমাদের (মুসলমানদের) উয নেই।” এর জবাবে রাসূলুল্লাহ (সঃ) সাহাবীদেরকে (রাঃ) বলেছিলেন ? “আল্লাহ আমাদের মাওলা এবং তোমাদের কোন মাওলা নেই।”

হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি (ভুলক্রমে) লাত ও উযার কসম খেয়ে ফেলবে সে যেন তৎক্ষণাৎ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলে নেয়। আর যে ব্যক্তি তার সঙ্গীকে বলবেঃ ‘এসো, আমরা জুয়া খেলি। সে যেন সাদকা করে।” (এ হাদীসটি ইমাম বুখারী (রঃ) বর্ণনা করেছেন) ভাবার্থ এই যে, অজ্ঞতার যুগে যেহেতু এ ধরনের কসম খাওয়া হতো, সেই হেতু ইসলাম গ্রহণের পরেও যদি কারো মুখ দিয়ে পূর্বের অভ্যাস হিসেবে এ শব্দগুলো বেরিয়ে পড়ে তবে তার কালেমা পড়ে নেয়া উচিত।

এমনিভাবে একদা হযরত সা’দ ইবনে আবি অক্কাস (রাঃ) লাত ও উয্যার কসম খেয়ে বসেন। জনগণ তাঁকে সতর্ক করলে তিনি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নিকট গমন করেন এবং তাঁর কাছে ঘটনাটি উল্লেখ করেন। রাসূলুল্লাহ (সঃ) তখন তাকে বলেন, তুমি নিম্নের কালেমাটি পাঠ করঃ (আরবী)

অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া কোন মা’বূদ নেই, তিনি এক, তার কোন অংশীদার নেই, রাজ্য তাঁরই এবং প্রশংসাও তারই, আর তিনি প্রত্যেক জিনিসের উপর ক্ষমতাবান। তারপর তিনবার পাঠ করঃ (আরবী) অর্থাৎ ‘আমি আল্লাহর নিকট বিতাড়িত শয়তান হতে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। এরপর বাম দিকে তিনবার থুথু ফেলো এবং ভবিষ্যতে আর এরূপ করো না। (এ হাদীসটি ইমাম নাসাঈ (রঃ) বর্ণনা করেছেন)

মক্কা ও মদীনার মধ্যস্থলে কাদীদের পার্শ্বে মুসাল্লাল নামক স্থানে মানাত ছিল। অজ্ঞতার যুগে খুযাআহ, আউস ও খাযরাজ গোত্র ওর খুব সম্মান করতে। এখান হতে ইহরাম বেঁধে তারা কা’বার হজ্বের জন্যে যেতো। অনুরূপভাবে এই তিনটি মূর্তি ছাড়া আরো বহু মূর্তি ও থান ছিল আরবের লোকেরা যেগুলোর পূজা করতো। কিন্তু এই তিনটির খুব খ্যাতি ছিল বলে এখানে শুধু এই তিনটিরই বর্ণনা দেয়া হয়েছে। ঐ লোকগুলো এই জায়গাগুলোর তাওয়াফও করতো। তারা তথায় কুরবানীর জন্তুগুলো নিয়ে যেতো এবং তাদের নামে ওগুলোকে কুরবানী করতো। এতদসত্ত্বেও কিন্তু তারা কা’বা শরীফের মর্যাদার কথা স্বীকার করতো। ওটাকে তারা হযরত ইবরাহীম (আঃ)-এর মসজিদ বলে বিশ্বাস করতো এবং ওর খুবই সম্মান করতো।

সীরাতে ইবনে ইসহাকে রয়েছে যে, কুরায়েশ ও বানু কিনানাহ গোত্র উযযার পূজারী ছিল যা ছিল নাখলায়। ওর রক্ষক ও মুতাওয়াল্লী ছিল বানু শায়বান গোত্র। ওটা ছিল সালীম গোত্রের শাখা। বানু হাশিমের সাথে তাদের ভ্রাতৃত্ব ভাব ছিল। মক্কা বিজয়ের পর এই মূর্তিটি ভেঙ্গে ফেলার জন্যে রাসূলুল্লাহ (সঃ) হযরত খালিদ ইবনে ওয়ালীদ (রাঃ)-কে প্রেরণ করেন। হযরত খালিদ (রাঃ) ঐ মূর্তিটিকে ভেঙ্গে ফেলছিলেন এবং মুখে উচ্চারণ করছিলেনঃ (আরবী)

অর্থাৎ “হে উযযা! আমি তোমাকে অস্বীকার করছি, তোমার পবিত্রতা বর্ণনা করছি না। আমি দেখছি যে, আল্লাহ তোমাকে লাঞ্ছিত করেছেন।” এটা বাবলার তিনটি গাছের উপর ছিল। গাছগুলোকে কেটে ফেলা হয়। গম্বুজকেও ভেঙ্গে ফেলা হয়। অতঃপর হযরত খালিদ (রাঃ) ফিরে এসে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে এ সংবাদ দেন। রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাঁকে বলেনঃ “তুমি কিছুই করনি। আবার যাও।” তখন হযরত খালিদ (রাঃ) পুনরায় গেলেন। তথাকার রক্ষক ও খাদিমরা বড় বড় কৌশল অবলম্বন করলো। তারা খুব চীৎকার করে ‘হে উয! হে উম্!’ বলে ডাক দিলো। হযরত খালিদ (রাঃ) দেখলেন যে, একটি উলঙ্গ নারী রয়েছে, যার চুলগুলো এলোমেলো, আর সে তার মাথার উপর মাটি নিক্ষেপ করছে। হযরত খালিদ (রাঃ) তরবারী দ্বারা তাকে শেষ করে ফেলেন। তারপর ফিরে গিয়ে তিনি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে এ খবর দেন। রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেন যে, ওটাই ছিল উযযা। (এ হাদীসটি ইমাম নাসাঈ (রঃ) বর্ণনা করেছেন)

লাত ছিল সাকীফ গোত্রের মূর্তি। তারা ছিল তায়েফের অধিবাসী। ওর মুতাওয়াল্লী ও খাদেম ছিল বানু মু’তাব। ওটাকে ভেঙ্গে ফেলার জন্যে রাসূলুল্লাহ (সঃ) সেখানে হযরত মুগীরা ইবনে শুবা (রাঃ) ও হযরত আবু সুফিয়ান সাখর ইবনে হারব (রাঃ)-কে প্রেরণ করেন। তাঁরা ওটাকে নিশ্চিহ্ন করে দিয়ে ওর স্থলে মসজিদ নির্মাণ করেন।

মানাত ছিল আউস, খাযরাজ এবং তাদের ন্যায় মত পোষণকারী ইয়াসরিববাসী অন্যান্য লোকদের মূর্তি। ওটা মুসাল্লালের দিকে সমুদ্র তীরবর্তী কাদীদ নামক স্থানে অবস্থিত ছিল। সেখানেও রাসূলুল্লাহ (সঃ) হযরত আবু সুফিয়ান (রাঃ)-কে প্রেরণ করেন। তিনি সেখানে গিয়ে ওকে ভেঙ্গে টুকরো টুকরো করে ফেলেন। কারো কারো মতে ঐ কুফরিস্তান ধ্বংস হয় হযরত আলী (রাঃ)-এর হাতে।

যুলখালসা ছিল দাউস, খাশআম, বাজীলাহ এবং তাদেরই দেশস্থ আরবীয় অন্যান্য লোকদের বুতখানা। ওটা ছিল তাবালায় অবস্থিত এবং ঐ লোকগুলো ওটাকে কাবায়ে ইয়ামানিয়্যাহ বলতো। আর মক্কার কাবাকে তারা বলতো কা’বায়ে শামিয়্যাহ। ওটা রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নির্দেশক্রমে হযরত জারীর ইবনে আবদিল্লাহ (রাঃ)-এর হাতে ধ্বংস হয়।

কাস ছিল তাই গোত্র এবং তাদের আশেপাশে বসবাসকারী অন্যান্য আরবীয়দের বুতখানা। ওটা সালমা ও আজ্জার মধ্যস্থিত তাই পাহাড়ে অবস্থিত ছিল। ওটাকে ভেঙ্গে ফেলার কাজে হযরত আলী ইবনে আবি তালিব (রাঃ) আদিষ্ট হয়েছিলেন। তিনি ওটাকে ভেঙ্গে ফেলেন এবং সেখান হতে দু’টি তরবারী নিয়ে যান। একটির নাম রাসূব এবং অপরটির নাম মুখযিম ছিল। রাসূলুল্লাহ (সঃ) তরবারী দু’টি তাঁকেই দিয়ে দেন।

হুমায়ের গোত্র এবং ইয়ামনবাসী সানআ নামক স্থানে তাদের বুতখানা নির্মাণ করেছিল। ওটাকে রাইয়াম বলা হতো। কথিত আছে যে, ওর মধ্যে একটি কালো কুকুর ছিল। দুই জন হুমাইরী, যারা তুব্বর সঙ্গে বের হয়েছিল, তারা ঐ কুকুরটিকে বের করে হত্যা করে দেয় এবং ঐ বুতখানাকে ধ্বংস করে ফেলে।

বানু রাবীআহ ইবনে সা’দের বুতখানাটির নাম ছিল রিযা। ওটাকে মুসতাওগার ইবনে রাবীআহ ইবনে কা’ব ইবনে সা’দ ইসলামে ভেঙ্গে ফেলেন। ইবনে হিশাম (রাঃ) বলেন যে, তার বয়স ৩৩০ (তিনশ ত্রিশ) বছর হয়েছিল, যার বর্ণনা তিনি স্বয়ং তার কবিতার মধ্যে বর্ণনা করেছেন।

সানদাদ নামক স্থানে বকর, তাগলিব এবং আয়াদ গোত্রের একটি দেবমন্দির ছিল যাকে যুলকা’বাত বলা হতো।

এরপর আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা’আলা বলেনঃ তবে কি পুত্র সন্তান তোমাদের জন্যে এবং কন্যা সন্তান আল্লাহর জন্যে?’ কেননা এই মুশরিকরা নিজেদের বাজে ধারণার বশবর্তী হয়ে ফেরেশতাদেরকে আল্লাহর কন্যা বলতো। (নাউযুবিল্লাহি মিন যালিক)। তাই আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ তোমরা যদি তোমাদের পরস্পরের মধ্যে বন্টন করতে বস তখন যদি কাউকেও শুধু কন্যা দাও এবং কাউকেও শুধু পুত্র দাও তবে যাকে শুধু কন্যা দেয়া হবে সে কখনো এতে সম্মত হবে না এবং এই প্রকার বন্টনকে অসঙ্গত বন্টন মনে করা হবে। অথচ তোমরা আল্লাহর জন্যে সাব্যস্ত করছো কন্যা সন্তান আর নিজেদের জন্যে সাব্যস্ত করছো পুত্র সন্তান! এই প্রকার বন্টন তো খুবই বে-ঢংগা ও অসঙ্গত!

আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ এগুলো কতক নাম মাত্র যা তোমাদের পূর্বপুরুষরা ও তোমরা রেখেছো, যার সমর্থনে আল্লাহ কোন দলীল প্রেরণ করেননি। তারা প্রকৃতপক্ষে মা’বৃদও নয় এবং তারা কোন পবিত্র নামের হকদারও নয়। এ লোকগুলো নিজেরাও ঐ দেবতাদের উপাসনা করার উপর কোন দলীল পেশ করতে সক্ষম হবে না। তারা তাদের পূর্বপুরুষদের উপর ভাল ধারণা পোষণ করে তারা যা করতো তাই করছে মাত্র। তারা মাছির উপর মাছি মেরে চলছে। অথচ তাদের নিকট তাদের প্রতিপালকের পথ-নির্দেশ এসে গেছে। এতদসত্ত্বেও তারা তাদের পূর্বপুরুষদের ভ্রান্ত পথ পরিত্যাগ করছে না। এটা চরম পরিতাপের বিষয়ই বটে।

মহিমান্বিত আল্লাহ এরপর বলেনঃ মানুষ যা চায় তাই কি সে পায়? সে যে বলে যে, সে সত্যের উপর রয়েছে, তবে সে কি বাস্তবিকই সত্যের উপর রয়েছে। বলে প্রমাণিত হবে? তারা যতই লম্বা চওড়া দাবী করুক না কেন, তাদের দাবী দ্বারাই তাদের উদ্দেশ্য সফল হয়ে যায় না।

হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “যখন তোমাদের কেউ কোন কিছুর আকাঙ্ক্ষা করে তখন সে কিসের আকাঙ্ক্ষা করছে তা যেন চিন্তা করে। কারণ সে জানে না যে, তার ঐ আকাক্ষার জন্যে তার জন্যে কি লিখা হবে।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ) বর্ণনা করেছেন)

মহান আল্লাহ বলেনঃ বস্তুতঃ ইহকাল ও পরকাল আল্লাহরই।’ দুনিয়া ও আখিরাতের সমস্ত ব্যবস্থাপনা তিনিই করে থাকেন। তিনি যা চান তা হয় এবং যা চান না তা হয় না।

এরপর আল্লাহ তাআলা বলেনঃ “আকাশে কত ফেরেশতা রয়েছে। তাদের কোন সুপারিশ ফলপ্রসূ হবে না যতক্ষণ আল্লাহ যাকে ইচ্ছা এবং যার প্রতি সন্তুষ্ট তাকে অনুমতি না দেন। অর্থাৎ আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কোন বড় ও মর্যাদা সম্পন্ন ফেরেশতাও কারো জন্যে সুপারিশের কোন শব্দও উচ্চারণ করতে পারেন। যেমন আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা’আলা অন্য জায়গায় বলেনঃ (আরবী)

অর্থাৎ “কে সে, যে তাঁর অনুমতি ছাড়া তাঁর নিকট সুপারিশ করবে?” (২:২৫৫) আর এক জায়গায় বলেনঃ অর্থাৎ “তাঁর অনুমতি ছাড়া তাঁর কাছে কারো জন্যে কারো সুপারিশ উপকারী হবে না।” (৩৪:২৩) সুতরাং বড় বড় নৈকট্য লাভকারী ফেরেশতাদের যখন এই অবস্থা, তখন হে নির্বোধের দল! তোমাদের পূজনীয় এই মূর্তি ও থানগুলো তোমাদে কি উপকার করতে পারে? তাদের উপাসনা করতে আল্লাহ্ তা’আলা নিষেধ করেছেন। এটা করেছেন তিনি তাঁর সমস্ত রাসূলের ভাষায় এবং তাঁর সমুদয় সমানী কিতাব অবতীর্ণ করার মাধ্যমে।

২৭-৩০ নং আয়াতের তাফসীর:

আল্লাহ তাআলা মুশরিকদের এই উক্তি খণ্ডন করছেন যে, আল্লাহর। ফেরেশতারা তাঁর কন্যা। যেমন অন্য জায়গায় রয়েছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “রহমানের (আল্লাহর) বান্দা (এবং তার আজ্ঞাবহ) ফেরেশতাদেরকে তারা নারীরূপে স্থাপন করেছে, তাদের সৃষ্টির সময় তারা কি হাযির ছিল, তাদের সাক্ষ্য লিখে রাখা হবে এবং তারা (এ ব্যাপারে) জিজ্ঞাসিত হবে।” (৪৩:১৯) আর এখানে মহান আল্লাহ বলেনঃ তারাই ফেরেশতাদেরকে নারীবাচক নাম দিয়ে থাকে। এটা তাদের অজ্ঞতারই ফল। তাদের এটা মিথ্যা, অপবাদ এবং স্পষ্ট শিরক ছাড়া কিছুই নয়। এটা তাদের অনুমান মাত্র। আর এটা প্রকাশ্য ব্যাপার যে, সত্যের মুকাবিলায় অনুমানের কোন মূল্য নেই। সহীহ হাদীসে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “তোমরা অনুমান ও ধারণা করা হতে বেঁচে থাকো, কেননা ধারণা সবচেয়ে বড় মিথ্যা কথা।”

এরপর আল্লাহ তাআলা স্বীয় নবী (সঃ)-কে বলেনঃ হে নবী (সঃ)! যে আমার স্মরণে বিমুখ তাকে তুমি উপেক্ষা করে চল। সে তো শুধু পার্থিব জীবনই কামনা করে। আর যে শুধু পার্থিব জীবনই কামনা করে তার পরিণাম কখনো ভাল হতে পারে না। তার জ্ঞানের সীমাও এটাই যে, দুনিয়া সন্ধানেই সে সদা ডুবে থাকে।

উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “দুনিয়া ঐ ব্যক্তির ঘর যার (আখিরাতে) ঘর নেই এবং দুনিয়া ঐ ব্যক্তির মাল যার (আখিরাতে) মাল নেই। আর ওটাকে জমা করার চেষ্টায় ঐ ব্যক্তি লেগে থাকে যার বিবেক-বুদ্ধি নেই। (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ) বর্ণনা করেছেন) একটি দুআয়ে মাসূরায় নবী (সঃ)-এর নিম্নলিখিত ভাষাও এসেছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “হে আল্লাহ! আপনি আমাদের বড় চিন্তা ও চেষ্টার বিষয় এবং আমাদের জ্ঞানের উদ্দেশ্য ও সীমা শুধুমাত্র দুনিয়াকেই করবেন না।”

এরপর মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ হে নবী (সঃ)! নিশ্চয়ই তোমার প্রতিপালকই ভাল জানেন কে তাঁর পথ হতে বিচ্যুত, তিনিই ভাল জানেন কে সৎপথ প্রাপ্ত। অর্থাৎ আল্লাহ তাআলাই তাঁর বান্দাদের উপযোগিতা সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান রাখেন। যাকে ইচ্ছা তিনি হিদায়াত দান করেন এবং যাকে ইচ্ছা পথভ্রষ্ট করেন। সবকিছু তারই ক্ষমতা, জ্ঞান ও নৈপুণ্য দ্বারা হচ্ছে। তিনি ন্যায় বিচারক। স্বীয় শরীয়তে এবং পরিমাপ নির্ধারণে অন্যায় ও যুলুম কখনো করেন না।

৩১-৩২ নং আয়াতের তাফসীর:

আল্লাহ তা’আলা খবর দিচ্ছেন যে, আসমান ও যমীনের মালিক, অভাবমুক্ত, প্রকৃত শাহানশাহ, ন্যায় বিচারক ও সঠিক সৃষ্টিকর্তা এবং সত্য ও ন্যায়পরায়ণ আল্লাহ তা’আলাই বটে। তিনি প্রত্যেককেই তার আমলের প্রতিদান প্রদানকারী। পুণ্যের ভাল প্রতিদান এবং পাপের মন্দ শাস্তি তিনিই প্রদান করবেন। তার নিকট সৎলোক তারাই যারা তাঁর হারামকৃত জিনিস ও কাজ হতে, বড় বড় পাপ হতে এবং অন্যায় ও অশ্লীল কার্য হতে দূরে থাকে। মানুষ হিসেবে তাদের দ্বারা কোন ছোট-খাট গুনাহ হলেও আল্লাহ তাআলা তা ক্ষমা করে দেন। যেমন অন্য জায়গায় রয়েছেঃ (আরবী)

অর্থাৎ “যদি তোমরা বড় বড় পাপরাশি হতে বেঁচে থাকো তবে আমি তোমাদের ছোট ছোট পাপগুলোকে ক্ষমা করে দিবো এবং তোমাদেরকে সম্মানজনক স্থানে প্রবিষ্ট করবে।” (৪:৩১) আর এখানেও আল্লাহ তা’আলা বলে যে, তিনি মানবীয় ছোট-খাট অপরাধ ক্ষমা করে দিবেন।

হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, তাঁর মতে (আরবী)-এর যে তাফসীর হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত হাদীসে করা হয়েছে তা হতে উত্তম তাফসীর আর কিছু হতে পারে না। তা এই যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আল্লাহ তা’আলা আদম-সন্তানের উপর তার জেনা বা ব্যভিচারের অংশ লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন যা সে অবশ্যই পাবে। চক্ষুর জেনা হলো দর্শন করা, মুখের জেনা হলো বলা, অন্তরে অনুরাগ, আসক্তি ও আকাঙ্ক্ষা জাগে, এখন লজ্জাস্থান ওকে সত্য করে দেখায় অথবা মিথ্যারূপে প্রদর্শন করে।” (এ হাদীসটি সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে)

হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেছেনঃ “চক্ষুদ্বয়ের ব্যভিচার হলো তাকানো, ওষ্ঠদ্বয়ের জেনা হচ্ছে চুম্বন করা, হস্তদ্বয়ের ব্যভিচার ধরা এবং পদদ্বয়ের জেনা হলো চলা, আর লজ্জাস্থান ওটাকে সত্য অথবা মিথ্যারূপে প্রকাশ করে। অর্থাৎ লজ্জাস্থানকে যদি সে বাধা দিতে না পারে এবং কুকার্য করেই বসে তবে সমস্ত অঙ্গেরই জেনা সাব্যস্ত হয়ে যাবে। পক্ষান্তরে যদি সে লজ্জাস্থান বা গুপ্তাঙ্গকে সামলিয়ে নিতে পারে এবং কুকার্যে লিপ্ত না হয় তবে ঐগুলো সবই (আরবী)-এর অন্তর্ভুক্ত হবে।” (এটা ইমাম ইবনে জারীর (রঃ) বর্ণনা করেছেন)

হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) বলেন যে, (আরবী) হলো চুম্বন করা, দেখা ও স্পর্শ করা। আর যখন গুপ্তস্থানগুলো মিলিত হয়ে যাবে তখন গোসল ওয়াজিব হয়ে যাবে এবং ব্যভিচার সাব্যস্ত হয়ে পড়বে।

হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে এই বাক্যের তাফসীর এটাই বর্ণিত আছে যা উপরে বর্ণিত হলো।

হযরত মুজাহিদ (রঃ) বলেন যে, পাপে অপবিত্র হয়ে যাওয়ার পর তা ছেড়ে দিলে ওটা (আরবী)-এর মধ্যে গণ্য হবে। একজন কবি বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “হে আল্লাহ! যদি আপনি ক্ষমা করেন তবে সবকিছুই ক্ষমা করে দেন, আর আপনার কোন এমন বান্দা আছে যে, সে অপরাধ করেনি?”

হযরত মুজাহিদ (রঃ) বলেন যে, জাহেলিয়াত যুগের লোকেরা বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করার সময় প্রায়ই এই ছন্দটি পাঠ করতো। তাফসীরে ইবনে জারীরে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর উপরোক্তে শ্লোকটি পাঠ করার কথা বর্ণিত আছে এবং ইমাম তিরমিযী (রঃ) ওটাকে হাসান সহীহ গারীব বলেছেন। বাযযার (রঃ) বলেন যে, তাঁর এ হাদীসের অন্য কোন সনদ জানা নেই। শুধু এই সনদেই মারফু রূপে ওটা বর্ণিত আছে। ইবনে আবি হাতিম (রঃ) এবং বাগাভীও (রঃ) এটা বর্ণনা করেছেন। বাগাভী (রঃ) এটাকে সূরায়ে তানযীলের তাফসীরে রিওয়াইয়াত করেছেন। কিন্তু এটা মারফু হওয়ার ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনার অবকাশ রয়েছে। একটি রিওয়াইয়াতে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ (আরবী) এর ভাবার্থ এই যে, জেনার নিকটবর্তী হওয়ার পর তাওবা করে এবং আর ওদিকে ফিরে আসে না। চুরির নিকটবর্তী হওয়ার পর চুরি করলো না এবং তাওবা করে ফিরে আসলো। অনুরূপভাবে মদ্যপানের নিকটবর্তী হয়ে মদ্যপান করলো না এবং তাওবা করে ফিরে আসলো। এগুলো সবই (আরবী) -এর অন্তর্ভুক্ত। এগুলোর জন্যে মুমিন ক্ষমার্হ।

হযরত হাসান (রঃ) হতেও এটাই বর্ণিত আছে। একটি রিওয়াইয়াতে সাহাবীগণ (রাঃ) হতে প্রায়ই এটা বর্ণিত হওয়ার কথা বর্ণনা করা হয়েছে। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) বলেন যে, এর দ্বারা শিরক ছাড়া অন্যান্য গুনাহকে বুঝানো হয়েছে। হযরত ইবনে যুবায়ের (রাঃ) বলেন যে, (আরবী) হলো হদ্দে জেনা ও আযাবে আখিরাতের মধ্যবর্তী শুনাহ। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, (আরবী) হলো ঐ জিনিস যা দুই হদ্দের মাঝে অবস্থিত, হচ্ছে দুনিয়া ও হদ্দে আখিরাত। নামায এর কাফফারা হয়ে যায়। (আরবী) হলো জাহান্নাম ওয়াজিবকারী হতে ক্ষুদ্রতর পাপ। হদ্দে দুনিয়া তো ঐ পার্থিব শাস্তি যা আল্লাহ তাআলা কোন পাপের কারণে নির্ধারণ করেছেন। আর হদ্দে আখিরাত হলো ওটাই যার কারণে আল্লাহ তা’আলা জাহান্নাম ওয়াজিব করেছেন, কিন্তু ওর শাস্তি দুনিয়ায় নির্ধারণ করেননি।

মহান আল্লাহ বলেছেনঃ “তোমার প্রতিপালকের ক্ষমা অপরিসীম। ওটা প্রত্যেক জিনিসকে ঘিরে নিয়েছে এবং সমস্ত পাপকে ওটা পরিবেষ্টনকারী। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেনঃ (আরবী)

অর্থাৎ “ (হে নবী সঃ! আমার এ কথাটি আমার বান্দাদেরকে) তুমি বলঃ হে। আমার বান্দারা, যারা নিজেদের উপর অত্যাচার ও বাড়াবাড়ি করেছো! তোমরা আল্লাহর রহমত হতে নিরাশ হয়ে যেয়ো না, নিশ্চয়ই আল্লাহ সমস্ত গুনাহ মাফ করে দিবেন, নিশ্চয়ই তিনি ক্ষমাশীল, দয়ালু।” (৩৯:৫৩)

মহান আল্লাহ বলেনঃ আল্লাহ তোমাদের সম্পর্কে সম্যক অবগত- যখন তিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন মৃত্তিকা হতে। অর্থাৎ তোমাদের পিতা আদম (আঃ)-কে মৃত্তিকা হতে সৃষ্টি করেছেন এবং তাঁর পৃষ্ঠদেশ হতে তাঁর সন্তানদেরকে বের করেছেন, যারা পিঁপড়ার মত ছড়িয়ে পড়েছে। অতঃপর তিনি তাদেরকে দুই দলে বিভক্ত করেছেন, একদলকে জান্নাতের জন্যে এবং অপর দলকে জাহান্নামের জন্যে।

অতঃপর বলা হচ্ছেঃ যখন তোমরা মাতৃগর্ভে ভ্রূণরূপে অবস্থান কর। অর্থাৎ ঐ সময় আল্লাহর নির্ধারিত ফেরেশতা তোমাদের জীবিকা, বয়স, পুণ্য এবং পাপ লিখে নেয়। বহু শিশু পেট হতেই পড়ে যায়, অনেক শিশু দুগ্ধপান অবস্থায় মারা যায়, বহু শিশু মারা যায় দুধ ছাড়ানোর পর, অনেকে মারা যায় যৌবনে পদার্পণ করার পূর্বেই, যৌবনাবস্থাতেই বহু লোকে ইহলোক ত্যাগ করে। এখন এই সমুদয় মনযিল অতিক্রম করার পর যখন বার্ধক্য এসে পড়ে, যার পরে মৃত্যু ছাড়া আর কোন মনযিল নেই, এখনো যদি আমরা না বুঝি ও সতর্ক না হই তবে আমাদের চেয়ে বড় উদাসীন আর কে হতে পারে?

মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ “অতএব তোমরা আত্মপ্রশংসা করো না। অর্থাৎ তোমাদের সৎ আমলের প্রশংসা তোমরা নিজেরা করো না।

অতঃপর মহান আল্লাহ বলেনঃ “তোমাদের মধ্যে মুত্তাকী কে, কার অন্তরে আল্লাহর ভয় রয়েছে তা আল্লাহ তাআলাই খুব ভাল জানেন।’ যেমন অন্য আয়াতে রয়েছেঃ (আরবী)

অর্থাৎ “তুমি কি ঐ লোকদেরকে দেখোনি, যারা নিজেদের প্রশংসা নিজেরাই করেছে? বরং আল্লাহ যাকে চান তাকে পাক পবিত্র করে থাকেন এবং তাদের উপর সামান্য পরিমাণও যুলুম করা হবে না।” (৪:৪৯)

মহাম্মাদ ইবনে আমর ইবনে আতা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ “আমি আমার কন্যার নাম বিররাহ রেখেছিলাম। তখন আমাকে হযরত যায়নাব বিনতু আবি সালমা (রাঃ) বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সঃ) এ নাম রাখতে নিষেধ করেছেন। স্বয়ং আমার নামও বিররাহ ছিল। তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) আমাকে বলেনঃ “তোমরা আত্মপ্রশংসা করো না। তোমাদের পুণ্যবানদের সম্পর্কে আল্লাহ তাআলাই সম্যক অবহিত।” তখন সাহাবীগণ বললেনঃ “তাহলে এর নাম কি রাখতে হবে?” উত্তরে তিনি বললেনঃ “তোমরা এর নাম যায়নাব রেখে দাও।” (এ হাদীসটি ইমাম মুসলিম (রঃ) তার সহীহ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন)

হযরত আবু বাকরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, একটি লোক রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর সামনে কোন একটি লোকের খুব প্রশংসা করে। রাসূলুল্লাহ (সঃ) তখন তাকে বলেনঃ “তোমার অকল্যাণ হোক! তুমি তো তোমার সাথীর গলা কেটে দিলে?” একথা তিনি কয়েকবার বললেন। অতঃপর তিনি বললেন, কারো প্রশংসা যদি করতেই হবে তবে বলবেঃ “আমার ধারণা অমুক লোকটি এই রূপ। সঠিক জ্ঞান একমাত্র আল্লাহ তা’আলারই আছে।” (এ হাদীসটি মুসনাদে আহমাদে বর্ণিত হয়েছে)

হযরত হারিস ইবনে হাম্মাম (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, একটি লোক হযরত উসমান (রাঃ)-এর সামনে তাঁর প্রশংসা করে। তখন হযরত মিকদাদ ইবনে আসওয়াদ (রাঃ) লোকটির মুখে মাটি নিক্ষেপ করেন এবং বলেনঃ “আমাদেরকে রাসূলুল্লাহ (সঃ) নির্দেশ দিয়েছেন যে, আমরা যেন প্রশংসাকারীদের মুখে মাটি নিক্ষেপ করি।” (এ হাদীসটি ইমাম মুসলিম (রঃ) ও ইমাম আবু দাউদ (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
৩৩-৪১ নং আয়াতের তাফসীর:

পূর্ণ প্রতিদান, যারা আল্লাহর আনুগত্য হতে মুখ ফিরিয়ে নেয় তাদেরকে আল্লাহ তা’আলা নিন্দে করছেন। তিনি বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “সে বিশ্বাস করেনি, বরং সে সত্য প্রত্যাখ্যান করেছিল ও মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল।” (৭৫:৩১-৩২)

এখানে বলেনঃ “সে দান করে সামান্যই, পরে বন্ধ করে দেয়।’ অন্তরকে সে উপদেশ গ্রহণকারী করেনি। কখনো কখনো কিছু মেনে নেয়, অতঃপর রজু কর্তন করে পৃথক হয়ে যায়।

আরবের লোকেরা (আরবী) ঐ সময় বলে, যেমন কিছু লোকে কূপ খনন করতে রয়েছে, মাঝে যখন কোন শক্ত পাথর এসে পড়ে তখন তারা সমস্ত কাজ হতে বিরত থাকে এবং বলেঃ (আরবী) অর্থাৎ “আমরা কাজ বন্দ করে দিলাম।” অতঃপর তারা কাজ ছেড়ে দেয়।

মহান আল্লাহ বলেনঃ “তার। শ্যর জ্ঞান আছে যে, সে জানবে?’ অর্থাৎ সে কি জানবে যে, যদি সে আল্লাহর পথে খরচ করে তবে সে রিক্ত হস্ত হয়ে যাবে? আসলে তা নয়, বরং সে লোভ-লালসা, কার্পণ্য, স্বার্থপরতা এবং সংকীর্ণমনার কারণেই দান-খয়রাত করা হতে বিরত থাকছে।

এ জন্যেই হাদীসে এসেছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) হযরত বেলাল (রাঃ)-কে সম্বোধন করে বলেনঃ “হে বেলাল (রাঃ)! তুমি খরচ করে যাও এবং আরশের মালিকের নিকট হতে তুমি কমে যাওয়ার ভয় করো না। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “তোমরা যা কিছু খরচ করবে, আল্লাহ তোমাদেরকে তার বিনিময় প্রদান করবেন এবং তিনি উত্তম রিযকদাতা।” (৩৪:৩৯)

(আরবী)-এর এক অর্থ এই বর্ণনা করা হয়েছে যে, তাদেরকে যা হুকুম করা হয়েছিল তা তারা পূর্ণরূপে পৌঁছিয়ে দিয়েছে। আর দ্বিতীয় অর্থ এই করা হয়েছে যে, যে হুকুম তারা পেয়েছে তা তারা পূর্ণরূপে পালন করেছে। সঠিক কথা এই যে, অর্থ দুটোই হবে। যেমন অন্য আয়াতে রয়েছেঃ (আরবী)

অর্থাৎ “ইবরাহীম (আঃ)-কে যখনই তাঁর প্রতিপালক কোন কিছু দ্বারা পরীক্ষা করেছেন তখনই তিনি ওগুলো পূর্ণ করেছেন (এবং এভাবে কৃতকার্য হয়েছেন), তখন আল্লাহ তা’আলা তাকে বলেনঃ আমি তোমাকে লোকদের নেতা করলাম।” (২:১২৪) যেমন মহান আল্লাহ বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “অতঃপর আমি তোমার কাছে অহী করলাম যে, তুমি একনিষ্ঠভাবে ইবরাহীম (আঃ)-এর আদর্শের অনুসরণ করবে এবং সে মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত ছিল না।” (১৬:১২৩)।

হযরত আবু উমামা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাঁকে জিজ্ঞেস করেনঃ (আরবী) “কি তা তুমি জান কি?” উত্তরে তিনি বলেনঃ “আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলই (সঃ) খুব ভাল জানেন।” রাসূলুল্লাহ (সঃ) তখন বলেনঃ “তিনি (হযরত ইবরাহীম আঃ) প্রত্যহ দিনের প্রথমভাগে চার রাকআত নামায পড়তেন। এটাই ছিল তাঁর ওফাদারি বা পুরোপুরিভাবে দায়িত্ব পালন।” (এ হাদীসটি ইমাম ইবনে আবি হাতিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন। জা’ফর ইবনে যুবায়ের (রঃ)-এর হাদীস হতে ইমাম ইবনে জারীরও (রঃ) এটা বর্ণনা করেছেন। এটা দুর্বল হাদীস)

হযরত আবু দারদা (রাঃ) ও হযরত আবু যার (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন, আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ “হে আদম সন্তান! তুমি আমার জন্যে দিনের প্রথম ভাগে চার রাকআত নামায পড়ে নাও, তাহলে আমি দিবসের শেষ ভাগ পর্যন্ত তোমার জন্যে যথেষ্ট হবো (অর্থাৎ আমি তোমাকে যথেষ্ট পুণ্য প্রদান করবে)।”[এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন ইমাম তিরমিযী (রঃ)]

হযরত আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “হযরত ইবরাহীম (আঃ)-এর জন্যে (আরবী) শব্দ ব্যবহার করার কারণ এই যে, তিনি প্রত্যহ সকাল ও সন্ধ্যায় নিম্নলিখিত কালেমাগুলো পাঠ করতেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “তোমরা আল্লাহর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা কর সন্ধ্যায় ও সকালে।” (৩০:১৭) রাসূলুল্লাহ (সঃ) আয়াতটি শেষ পর্যন্ত পাঠ করেন।

এরপর হযরত মূসা (আঃ)-এর কিতাবে ও হযরত ইবরাহীম (আঃ)-এর কিতাবে কি ছিল তার বর্ণনা দেয়া হচ্ছেঃ ওগুলোতে এই ছিল যে, যে ব্যক্তি নিজের জীবনের উপর যুলুম করেছে, যেমন শিরক ও কুফরী করেছে অথবা সাগীরা বা কাবীরা গুনাহ করেছে, তার শাস্তি স্বয়ং তারই উপর আপতিত হবে। যেমন কুরআন কারীমে ঘোষিত হয়েছেঃ (আরবী)

অর্থাৎ “যদি কোন বোঝা বহনকারী তার বোঝা বহন করতে আহ্বান করে তবে তা হতে কিছুই বহন করা হবে না যদিও সে তার নিকটতম আত্মীয় হয়।” (৩৫:১৮) ঐ কিতাবগুলোতে এও ছিলঃ মানুষ তা-ই পায় যা সে করে। অর্থাৎ যেমন তার উপর অন্যের বোঝা চাপানো হবে না এবং অন্যের দুষ্কার্যের কারণে তাকে পাকড়াও করা হবে না, অনুরূপভাবে অন্যের পুণ্যও তার কোন উপকারে আসবে না। ইমাম শাফিয়ী (রঃ) এবং তাঁর অনুসারীগণ এই আয়াত দ্বারা দলীল গ্রহণ করেছেন যে, কুরআন পাঠের সওয়াব মৃত ব্যক্তির কাছে পৌঁছালে তা তার কাছে পৌঁছে না। কেননা, না এটা তার আমল এবং না তার উপার্জিত জিনিস। এই কারণেই রাসূলুল্লাহ (সঃ) না এর বৈধতা বর্ণনা করেছেন, না এ কাজে স্বীয় উম্মতকে উৎসাহিত করেছেন, কোন সুস্পষ্ট ঘোষণা দ্বারাও নয় এবং কোন ইঙ্গিত দ্বারাও নয়। অনুরূপভাবে সাহাবায়ে কিরাম (রাঃ)-এর মধ্য হতে কোন একজন হতেও এটা প্রমাণিত নয় যে, তারা কুরআন পড়ে ওর সওয়াবের হাদিয়া মৃতের জন্যে পাঠিয়ে দিয়েছেন। এটা যদি পুণ্যের কাজ হতো এবং শরীয়ত সম্মত আমল হতো তবে সওয়াবের কাজে আমাদের চেয়ে বহুগুণে অগ্রগামী সাহাবায়ে কিরাম (রাঃ) এ কাজ অবশ্যই করতেন। সাথে সাথে এটাও স্মরণ রাখার বিষয় যে, পুণ্যের কাজ কুরআন ও হাদীস দ্বারাই সাব্যস্ত হয়ে থাকে। কোন প্রকারের মত ও কিয়াসের স্থান সেখানে নেই। হ্যাঁ, তবে দু’আ ও দান-খয়রাতের সওয়াব মৃত ব্যক্তির কাছে পৌঁছে থাকে। এ ব্যাপারে ইজমা রয়েছে এবং শরীয়ত প্রবর্তকের শব্দ দ্বারা প্রমাণিত।

যে হাদীসটি সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “মানুষ যখন মারা যায় তখন তার আমল বন্ধ হয়ে যায়, কিন্তু তিনটি আমূল (বন্ধ হয় না)। (এক) সৎ সন্তান, যে তার জন্যে দু’আ করে, (দুই) ঐ সাদকা, যা তার মৃত্যুর পরেও জারী থাকে এবং (তিন) ঐ ইলম, যার দ্বারা উপকার লাভ করা হয়। এর ভাবার্থ এই যে, প্রকৃতপক্ষে এই তিনটি জিনিসও স্বয়ং মৃত ব্যক্তিরই চেষ্টা ও আমল। অর্থাৎ অন্য কারো আমলের প্রতিদান তাকে দেয়া হয় না। যেমন হাদীসে এসেছে যে, মানুষের সবচেয়ে উত্তম খাদ্য ওটাই যা সে স্বহস্তে উপার্জন করেছে। আর মানুষের সন্তানও তারই উপার্জিত। সুতরাং প্রমাণিত হলো যে, সন্তান, যে তার পিতার মৃত্যুর পর তার জন্যে দু’আ করে সেও প্রকৃতপক্ষে তারই আমল। অনুরূপভাবে সাদকায়ে জারিয়াহ প্রভৃতিও তারই আমলের ফল এবং তারই ওয়াকফকৃত জিনিস। স্বয়ং কুরআন কারীমে ঘোষিত হচ্ছেঃ (আরবী)

অর্থাৎ “আমিই মৃতকে করি জীবিত এবং লিখে রাখি যা তারা অগ্রে প্রেরণ করে ও যা তারা পশ্চাতে রেখে যায়।” (৩৬:১২) এর দ্বারা প্রমাণিত হচ্ছে যে, তার পিছনে ছেড়ে আসা সকার্যগুলোর সওয়াব তার নিকট পৌছতে থাকে। এখন থাকলো ঐ ইলম যা সে লোকদের মধ্যে ছড়িয়ে রেখেছে এবং তার ইন্তেকালের পরেও জনগণ ওর উপর আমল করতে থাকে, ওটাও প্রকৃতপক্ষে তারই চেষ্টা ও আমল যা তার পরে বাকী রয়েছে এবং ওর সওয়াব তার কাছে। পৌঁছতে রয়েছে। যেমন সহীহ হাদীসে রয়েছেঃ “যে ব্যক্তি হিদায়াতের দিকে আহ্বান করে এবং যত লোক তার আহ্বানে সাড়া দিয়ে হিদায়াতের অনুসারী হয়, তাদের সবারই কাজের প্রতিদান তাকে প্রদান করা হয়, আর তাদের পুণ্যের কিছুই কম করা হয় না।’

অতঃপর আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ “আর তার কর্ম অচিরেই দেখানো হবে।’ অর্থাৎ কিয়ামতের দিন তাকে তার কর্ম দেখানো হবে। যেমন মহান আল্লাহ অন্য জায়গায় বলেনঃ (আরবী)

অর্থাৎ “ (হে নবী সঃ)! তুমি বলঃ তোমরা আমল করে যাও, সত্বরই তোমাদের আমল দেখবেন আল্লাহ, তাঁর রাসূল (সঃ) এবং মুমিনরা, অতঃপর তোমরা প্রত্যানীত হবে অদৃশ্য ও দৃশ্যের পরিজ্ঞাতা আল্লাহর নিকট এবং তোমাদেরকে জানিয়ে দেয়া হবে যা তোমরা করতে।” (৯ :১০৫)

অনুরূপভাবে এখানে আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ অতঃপর তাকে দেয়া হবে পূর্ণ প্রতিদান।

১৯-৪২ নং আয়াতের ব্যাখ্যা:-
তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ:-
১৯-২৬ নম্বর আয়াতের তাফসীর : /b>

নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে যে সঠিক দীন ও তাওহীদ এসেছে তার আলোচনা করার পর মুশরিকদের বাতিল ধর্মের কথা তুলে ধরা হয়েছে। তারা আল্লাহ তা‘আলাকে বাদ দিয়ে যাদের ‘ইবাদত করে তারা তো আয়াতে উল্লিখিত গুণাবলির অধিকারী নয়, তারা কোন প্রকার উপকার ও ক্ষতি করতে পারে না। তারা ‘ইবাদত করে এমন সব মূর্তির যা তারা নিজের হাতে তৈরি করেছে, যার নামকরণ করেছে তাদের বাপ-দাদারা। যারা মূলত ‘ইবাদত পাবার হক্বদার নয়।

ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন : اللت (লাত) নামে একজন লোক ছিল, সে ছাতু তৈরি করে হাজীদের খাওয়াতো। (সহীহ বুখারী হা. ৪৮৫৯)

ইবনু জারীর (রহঃ) বলেন : العزى শব্দটি العزيز থেকে এসেছে। মক্কা ও মদীনার মধ্যবর্তী “নাখলা” নামক স্থানে একটি বৃক্ষ ছিল। তার ওপর গম্বুজ নির্মিত ছিল। তা চাদরাবৃত করা হত। কুরাইশরা তাকে খুব সম্মান করত। আমাদের দেশে ক্ববর পূজারীরা যেমন করে থাকে।

আবূ সুফিয়ান (রাঃ) উহূদের দিন বলেছিলেন, আমাদের উয্যা আছে, তোমাদের উয্যা নেই। জবাবে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছিলেন : আল্লাহ তা‘আলা আমাদের অভিভাবক, তোমাদের কোন অভিভাবক নেই। (সহীহ বুখারী হা. ৩০৩৯)

আবূ তুফায়েল (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন : মক্কা বিজয়ের পর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খালেদ ইবনু ওয়ালিদকে “নাখলা” নামক স্থানে প্রেরণ করলেন। সেখানে উয্যা নামক মূর্তি ছিল। খালেদ (রাঃ) সেখানে আসলেন। উয্যা তিনটি বাবলা গাছের ওপর ছিল। গাছগুলো কেটে ফেলা হলো। গম্বুজ ভেঙ্গে ফেলা হলো। অতঃপর খালেদ (রাঃ) ফিরে এসে নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জানালেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন : “ফিরে যাও, তুমি কিছুই করনি। খালেদ (রাঃ) ফিরে আসলেন এবং তখন দেখলেন তার রক্ষক ও খাদেমরা উয্যাকে রক্ষা করার জন্য বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করছে আর বলছে হে উয্যা! হে উয্যা! খালেদ (রাঃ) আসলেন এবং দেখলেন, একজন উলঙ্গ নারী রয়েছে, যার চুলগুলো এলোমেলো, আর সে তার মাথার ওপর মাটি নিক্ষেপ করছে। খালেদ (রাঃ) তরবারী দ্বারা তাকে হত্যা করলেন। অতঃপর ফিরে এসে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এ সংবাদ দিলেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন : ঐটাই হলো উয্যা। (মু’জামুল বুলদান ৪/১১৭)

(أَلَكُمُ الذَّكَرُ وَلَهُ الْأُنْثٰي)

অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলার জন্য তোমরা কন্যা সন্তান নির্ধারণ করো আর তোমাদের নিজেদের জন্য ছেলে সন্তান গ্রহণ করে নিচ্ছ। এরূপ বণ্টন কতইনা নিকৃষ্ট।

(أَمْ لِلْإِنْسَانِ مَا تَمَنّٰي)

অর্থাৎ মানুষ যা কিছু আকাক্সক্ষা করে তার সব পায় না।

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন : যখন তোমাদের কেউ কিছুর আকাক্সক্ষা করে তখন সে কিসের আকাক্সক্ষা করছে তা যেন লক্ষ্য করে। কেননা সে জানেনা তার ঐ আকাক্সক্ষার জন্য কী লেখা হবে। (মুসনাদ আহমাদ ২/৩৫৭, সহীহ)

(لَا تُغْنِيْ شَفَاعَتُهُمْ)

‘তাদের কোন সুপারিশ কাজে আসবে না’ শাফা‘য়াতের আলোচনা সূরা আল বাকারাতে করা হয়েছে।

সুতরাং যদি নৈকট্যশীল ফেরেশতাদের শাফা‘য়াত আল্লাহ তা‘আলার অনুমতি ছাড়া কাজে না আসে তাহলে কোথায় মূর্তি আর কোথায় মাজারে শায়িত ব্যক্তি ও পীর-গাউস-কুতুবদের শাফায়াত!

আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয় :

১. মক্কার মূর্তিগুলোর সংক্ষিপ্ত ইতিহাস জানলাম।
২. আল্লাহ তা‘আলা এক, অদ্বিতীয় তার কোন স্ত্রী ও সন্তানাদি নেই।
৩. যাদেরকে আল্লাহ তা‘আলা শাফা‘য়াত করার অনুমতি দেবেন এবং যাদের প্রতি তিনি খুশি কেবলমাত্র তারাই কারো জন্য শাফা‘য়াত করতে পারবে।
২৭-৩০ নম্বর আয়াতের তাফসীর :

ফেরেশতাদের সম্পর্কে মুশরিকদের ধারণা যে, তারা আল্লাহর কন্যা। তাদের এরূপ বিশ্বাসকে খণ্ডন করে আল্লাহ তা‘আলা বলেন : যারা আখিরাতে বিশ্বাসী না কেবলমাত্র তারাই ফেরেশতাদেরকে নারীদের নামে নামকরণ করে এবং আল্লাহ তা‘আলার কন্যা বলে আখ্যায়িত করে থাকে।

আল্লাহ অন্যত্র বলেন :

(وَجَعَلُوا الْمَلٰ۬ئِكَةَ الَّذِيْنَ هُمْ عِبَادُ الرَّحْمٰنِ إِنَاثًا ط أَشَهِدُوْا خَلْقَهُمْ سَتُكْتَبُ شَهَادَتُهُمْ وَيُسْأَلُوْنَ) ‏

“তারা দয়াময় আল্লাহর বান্দা ফেরেশতাদেরকে নারী গণ্য করে; এদের সৃষ্টির সময় কি তারা উপস্থিত ছিল? অচিরেই তাদের সাক্ষী লিপিবদ্ধ করা হবে এবং তাদেরকে জিজ্ঞাসা করা হবে।” (সূরা যুখরুফ ৪৩ : ১৯)

এজন্য আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, তাদের কোন সঠিক জ্ঞান নেই। তারা যা বলে থাকে সব মিথ্যা এবং অপবাদ। তারা মূলত ধারণার অনুসরণ করে চলে। আর ধারণা সত্যের স্থলাভিষিক্ত হতে পারে না। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন :

إِيَّاكُمْ وَالظَّنَّ، فَإِنَّ الظَّنَّ أَكْذَبُ الحَدِيثِ

তোমরা ধারণা থেকে বিরত থাকো। কেননা অধিকাংশ ধারণা মিথ্যা। (সহীহ বুখারী হা. ৪৮৪৯)

(ذٰلِكَ مَبْلَغُهُمْ مِّنَ الْعِلْمِ)

অর্থাৎ দুনিয়া অšে¦ষণ ও তার জন্য প্রচেষ্টার মধ্যেই তাদের জ্ঞানের দৌড়। যেমন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন : দুনিয়া ঐ ব্যক্তির ঘর যার (পরকালে) কোন ঘর নেই, দুনিয়া ঐ ব্যক্তির মাল যার (পরকালে) মাল নেই, আর এ দুনিয়াকে জমা করাতে ঐ ব্যক্তিই প্রচেষ্টা চালায় যার জ্ঞান নেই। (মুসনাদ আহমাদ ৬/৭১, মাজমাউজ জাওয়ায়েদ ১০/২৮৮, বর্ণনাকারীগণ নির্ভরযোগ্য।

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দু‘আ করে বলতেন- হে আল্লাহ! আপনি আমাদের চিন্তা-চেতনা ও চেষ্টার বিষয় এবং আমাদের জ্ঞানের উদ্দেশ্য ও সীমা শুধুমাত্র দুনিয়াকেই করবেন না। (তিরমিযী হা. ৩৫০২, নাসায়ী দিনয়াতের আমল অধ্যায়, সহীহ) সুতরাং আল্লাহ তা‘আলার ব্যাপারে ধারণাপ্রসূত কোন কথা বলা যাবে না। বরং আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নিজের সম্পর্কে এবং রাসূল মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহ তা‘আলা সম্পর্কে যা সংবাদ দিয়েছেন কেবল সে-সব গুণে গুণান্বিত করতে হবে।

আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয় :

১. যারা আখিরাতে বিশ্বাসী নয় কেবল তারাই অন্তরের ব্যাধিতে আক্রান্ত।
২. অধিকাংশ ফাসাদের কারণ হচ্ছে অজ্ঞতা।
৩১-৩২ নম্বর আয়াতের তাফসীর :

দুনিয়া ও আখিরাতের রাজত্ব একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার, তিনি যেভাবে ইচ্ছা তাঁর রাজত্ব পরিচালনা করেন, বান্দাদের ওপর বিধান জারি করেন, যারা তাঁর আনুগত্যশীল তাদেরকে ভাল প্রতিদান এবং যারা অবাধ্য পাপাচারী তাদের কর্মের উপযুক্ত শাস্তি প্রদান করবেন।

كَبَآئِرَ শব্দটি كبيرة-এর বহুবচন। অর্থ হল কবীরা গুনাহ, বড় পাপ। যার সংজ্ঞার মতপার্থক্য

(إِنْ تَجْتَنِبُوا كَبَائِرَ مَا تُنْهَوْنَ)

এ আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে।

الْفَوَاحِشَ শব্দটি فاحشة শব্দের বহুবচন। অর্থ হলো, অশ্লীল কাজ। যেমন ব্যভিচার, সমকামিতা, চুরি, ডাকাতি ইত্যাদি।

لمم-এর আভিধানিক অর্থ হল, অল্প ও ছোট হওয়া। আর এ থেকেই বলা হয় الم المكان বা ঘরে অল্পক্ষণ ছিল। অনুরূপ কোন জিনিসকে কেবল স্পর্শ করা বা তার নিকটবর্তী হওয়া অথবা কোন কাজকে লাগাতার নয় বরং কেবল একবার দু’বার করা কিংবা অন্তরে কেবল খেয়ালের উদ্রেগ হওয়া এ সবকেই لمم বলা হয়। (ফাতহুল কাদীর)

لمم-এর ভাষাগত প্রয়োগ ও তার অর্থের প্রতি লক্ষ্য করেই তার অর্থ করা হয়েছে “সাগীরা গুনাহ”।

ইবনু লুবাবাহ্ আত্ তায়েফী বলেন : আমি আবূ হুরাইরাহ (রাঃ)-কে الا اللمم সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছি। তিনি বললেন : لمم (লামাম) হল (পর নারীর প্রতি দৃষ্টি দেয়া, স্পর্শ করা) অতঃপর যদি খারাপ কাজে লিপ্ত হয়ে পড়ে তাহলে তা হবে ব্যভিচার।

নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন : আল্লাহ তা‘আলা আদম সন্তানের আমলনামায় ব্যভিচারের অপরাধের একটি অংশ লেখেন, যা তার দ্বারা হবেই তা থেকে বাঁচার কোনক্রমেই উপায় নেই। চোখের ব্যভিচার হলো দেখা, মুখের ব্যভিচার হল বলা, অন্তরের ব্যভিচার হলো আকাক্সক্ষা করা, লজ্জাস্থান হয় তা (বাস্তবায়নের মাধ্যমে) সত্যায়িত করে বা মিথ্যা প্রতিপন্ন করে। (সহীহ বুখারী হা. ৬২৪৩)

মোটকথা لمم হল সাগীরা গুনাহ যা ক্ষমা হয়ে যাবে কবীরা ও অশ্লীল কাজ থেকে বিরত থাকলে।

أَجِنَّةٌ হলো جنين-এর বহুবচন। মূল অর্থ গুপ্ত। গর্ভস্থ ভ্রুণকে جنين বলা হয়। কারণ তা মানুষের চক্ষু থেকে গোপনে থাকে।

(فَلَا تُزَكُّوْآ أَنْفُسَكُمْ)

অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলার নিকট তোমাদের খুঁটিনাটি, প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য সকল কিছু জানা, তাই নিজেদের প্রশংসা করার কোন সুযোগ নেই। তবে আল্লাহ তা‘আলা যার প্রশংসা করেন তার কথা ভিন্ন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন :

( أَلَمْ تَرَ إِلَي الَّذِيْنَ يُزَكُّوْنَ أَنْفُسَهُمْ ط بَلِ اللّٰهُ يُزَكِّيْ مَنْ يَّشَا۬ءُ وَلَا يُظْلَمُوْنَ فَتِيْلًا)‏

“তুমি কি তাদেরকে দেখনি, যারা নিজেদেরকে পবিত্র মনে করে? বরং আল্লাহ যাকে ইচ্ছা পবিত্র করেন এবং তাদের ওপর সামান্য পরিমাণও জুলুম করা হবে না। ” (সূরা নিসা ৪ : ৪৯)

মুহাম্মাদ ইবনু ‘আম্র ইবনু ‘আত্বা (রহঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন : আমার কন্যার নাম ‘বাররাহ’ রেখেছিলাম। তখন যায়নাব বিনতু আবি সালামাহ শুনলেন : নিশ্চয়ই রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এরূপ নামকরণ করা থেকে নিষেধ করেছেন। আমার নামও ‘বাররাহ’ ছিল। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন : তোমরা আত্মপ্রশংসা করো না। তোমাদের পুণ্যবানদের সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলাই অধিক ভাল জানেন। তখন সাহাবীগণ বললেন : তাহলে এর নাম কী রাখব? তিনি বললেন : ‘যায়নাব’ রাখো। (সহীহ মুসলিম, অধ্যায় : খারাপ নাম পরিবর্তন করা মুস্তাহাব)

আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয় :

১. আকাশ-জমিনের রাজত্ব একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার হাতে।
২. আল্লাহ তা‘আলা সৎ আমলকারীদের উত্তম প্রতিদান ও খারাপ আমলকারীদের মন্দ ফল দেবেন।
৩. কবীরা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার ফযীলত জানতে পারলাম।
৪. لمم-এর ব্যাখ্যা জানলাম।
৫. আত্মপ্রশংসা করা নিষেধ।
৬. খারাপ নাম থাকলে তা পরিবর্তন করা মুস্তাহাব।
৩৩-৪২ নম্বর আয়াতের তাফসীর :

যারা আল্লাহ তা‘আলার আনুগত্য থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় তাদেরকে এখানে ভর্ৎসনা করা হচ্ছে। অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন :

(فَلَا صَدَّقَ وَلَا صَلّٰي ‏ وَلٰكِنْ كَذَّبَ وَتَوَلّٰي)‏

“সে বিশ্বাস করেনি এবং সালাতও পড়েনি বরং সে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছিল ও মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল।” মুজাহিদ, মুকাতিলসহ প্রমুখ বলেন : এ আয়াতগুলো (তিনটি আয়াত) ওয়ালিদ বিন মুগীরাহ এর ব্যাপারে নাযিল হয়। সে প্রথমে নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর অনুসরণ করলে কিছু মুশরিক তাকে তিরস্কার করে বলে : কেন তুমি বাপ-দাদার ধর্ম ত্যাগ করলে এবং তাদেরকে পথভ্রষ্ট বলছ আর বিশ্বাস করছ তারা জাহান্নামে যাবে? সে বলল : আমি আল্লাহ তা‘আলার শাস্তির ভয় করছি। মুশরিকরা চিন্তা করল তাকে হয়তো কিছু সম্পদ দিলে সে আমাদের দীনে ফিরে আসবে। যে সম্পদ দেয়ার দায়িত্ব নিয়েছিল সে তাকে কিছু সম্পদ দিল কিন্তু পরে সে কৃপণতা করে ও দিতে বিরত থাকে (কুরতুবী)।

أَكْدٰي অর্থাৎ- অল্প দিয়ে হাত টেনে নিলো অথবা অল্প কিছু আনুগত্য করে পিছে সরে গেল। أَكْدٰي শব্দের মূল অর্থ হলো : মাটি খুঁড়তে খুঁড়তে শক্ত কোন পাথর এসে পড়লে আর খুড়া যায় না, পরিশেষে খুড়ার কাজ ছেড়ে দিলে বলা হয় أَكْدٰي এখান থেকেই এ শব্দের এমন ব্যক্তির ব্যাপারে ব্যবহার হয়, যে কাউকে কিছু দেয় কিন্তু পূর্ণরূপে দেয় না। অনুরূপ কোন কাজ আরম্ভ করে কিন্তু সমাপ্ত করে না।

(أَعِنْدَه۫ عِلْمُ الْغَيْبِ)

অর্থাৎ এ ব্যক্তি খরচ হয়ে যাবে, ফুরিয়ে যাবে এ আশঙ্কায় আল্লাহ তা‘আলার পথে ব্যয় ও ভাল কাজ করা থেকে বিরত থাকে তার নিকট কি গায়েবের জ্ঞান রয়েছে যে, আল্লাহ তা‘আলার পথে ব্যয় করলে সে রিক্ত হস্ত হয়ে রাস্তার ফকির হয়ে যাবে? না, বরং সে আল্লাহ তা‘আলার পথে ব্যয় করে না, ভাল কাজে নিজেকে সম্পৃক্ত না করে কার্পণ্য করে পরকালের প্রতি বিশ্বাসী নয় বলে।

হাদীসে এসেছে- হে বেলাল! তুমি ব্যয় করে যাও, আরশের মালিকের কাছে কমে যাওয়ার আশঙ্কা করো না। (মাজমাউয যাওয়ায়েদ ৩/পৃঃ ১৩৬, বর্ণনাকারীগণ নির্ভরযোগ্য)

আল্লাহ তা‘আলা বলেন :

(قُلْ إِنَّ رَبِّيْ يَبْسُطُ الرِّزْقَ لِمَنْ يَّشَا۬ءُ مِنْ عِبَادِه۪ وَيَقْدِرُ لَه۫ ط وَمَآ أَنْفَقْتُمْ مِّنْ شَيْءٍ فَهُوَ يُخْلِفُه۫ ج وَهُوَ خَيْرُ الرّٰزِقِيْنَ)‏

“বল : আমার প্রতিপালক তাঁর বান্দাদের মধ্যে যার প্রতি ইচ্ছা তার রিযিক বর্ধিত করেন অথবা ওটা সীমিত করেন। তোমরা যা কিছু ব্যয় করবে তিনি তার প্রতিদান দেবেন। তিনি শ্রেষ্ঠ রিযিকদাতা।” (সূরা সাবা ৩৪ : ৩৯)

(أَمْ لَمْ يُنَبَّأْ …….الَّذِیْ وَﰰ)

ক্বাতাদাহ বলেন : وَفّٰي অর্থাৎ ইব্রাহীম (আঃ) (পূর্ণ করেছেন) আল্লাহ তা‘আলার আনুগত্য, তাঁর রিসালাতের দায়িত্ব। আল্লামা ইবনু জারীর এ মত পছন্দ করেছেন। এ কথাতে সব কিছু শামিল। এ কথার প্রমাণ বহনকারী হচ্ছে আল্লাহ তা‘আলার এ বাণী :

(وَإِذِ ابْتَلٰٓي إِبْرَاهِيْمَ رَبُّه۫ بِكَلِمٰتٍ فَأَتَمَّهُنَّ)

“আর স্মরণ কর! যখন তিনি বললেন, তোমার প্রতিপালক ইবরাহীমকে কতিপয় বাক্য দ্বারা পরীক্ষা করেছিলেন, পরে তিনি তা পূর্ণ করেছিলেন; ” (সূরা বাকারাহ্ ২ : ১২৪)

(أَلَّا تَزِرُ وَازِرَةٌ)

অর্থাৎ একজন অপরের পাপের বোঝা কোনদিনই বহন করবে না যদিও নিকটাত্মীয় হয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন :

(وَلَا تَزِرُ وَازِرَةٌ وِّزْرَ أُخْرٰي ط وَإِنْ تَدْعُ مُثْقَلَةٌ إِلٰي حِمْلِهَا لَا يُحْمَلْ مِنْهُ شَيْءٌ وَّلَوْ كَانَ ذَا قُرْبٰي)

“কোন বোঝা বহনকারী অপরের (পাপের) বোঝা বহন করবে না। যদি কোন বোঝা ভারাক্রান্ত ব্যক্তি কাউকে তার বোঝা বহন করতে ডাকে, তবে তা থেকে কিছুই বহন করা হবে না, যদিও সে তার নিকটাত্মীয় হয়।” (সূরা ফাতির ৩৫ : ১৪)

(وَأَنْ لَّيْسَ لِلْإِنْسَانِ إِلَّا مَا سَعٰي)

অর্থাৎ একজনের পাপের বোঝা যেমন অন্যজন বহন করবে না বরং সে নিজে যা অর্জন করেছে তাই পাবে। তেমনি নিজে যা করেছে তাছাড়া অন্য কোন ব্যক্তির সওয়াবও সে পাবে না।

এ আয়াতকে কেন্দ্র করে ইমাম শাফেয়ীসহ ‘আলিমগণ বলেছেন : কুরআনখানীর সওয়াব মৃত ব্যক্তির নিকট পৌঁছবে না।

কারণ এ আমলের সাথে মৃত ব্যক্তির কোন সম্পৃক্ততা বা পরিশ্রম নেই। আর যে ব্যক্তি কোন কাজ করে না বা কাজের সাথে সম্পৃক্ত থাকে না তার প্রতিদান কখনো সে ব্যক্তি পেতে পারে না।

তাছাড়া মৃত ব্যক্তিদের জন্য কুরআনখানী করার ব্যাপারে নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উম্মাতকে কোন প্রকার উৎসাহ প্রদান করেননি। এ ব্যাপারে সরাসরি এমনকি ইঙ্গিতেও কোন কথা বলেননি।

অনুরূপ সাহাবীদের থেকেও এ ব্যাপারে কোন প্রমাণ নেই যে, তারা এরূপ কাজ করেছেন। যদি এ কাজ ভালই হত তাহলে অবশ্যই তারা এ কাজে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতেন।

তবে মৃত ব্যক্তির নামে দু‘আ ও দান খয়রাত করলে তার সওয়াব কবরে থেকেই পাবে। যেমন হাদীসে এসেছে :

إِذَا مَاتَ الْإِنْسَانُ انْقَطَعَ عَنْهُ عَمَلُهُ إِلَّا مِنْ ثَلَاثَةٍ : إِلَّا مِنْ صَدَقَةٍ جَارِيَةٍ، أَوْ عِلْمٍ يُنْتَفَعُ بِهِ، أَوْ وَلَدٍ صَالِحٍ يَدْعُو لَهُ

যখন মানুষ মারা যায় তখন তার আমলের দরজা বন্ধ হয়ে যায় তবে তিনটি ব্যতীত- (১) তার মৃত্যুর পর বহাল থাকে এমন সদাকাহ্। (২) এমন ইল্ম বা জ্ঞান রেখে যায় যা উপকারী। (৩) সৎ সন্তান তার জন্য দু‘আ করে। (সহীহ মুসলিম হা. ৪৩১০, আবূ দাঊদ হা. ২৮৮০)

অর্থাৎ এ তিনটিই মৃত ব্যক্তির স্বয়ং চেষ্টা ও পরিশ্রমের ফলাফল। যেমন হাদীসে এসেছে : মানুষ যা খায় তার মধ্যে উত্তম খাদ্য হলো সে নিজে যা উপার্জন করেছে। আর মানুষের সন্তানও তার উপার্জিত সম্পদ। (নাসায়ী হা. ৪৪৬৪, ইবনু মাযাহ হা. ২১৩৭, সহীহ)

আর যে ইলম মানুষের মাঝে রেখে গেছে, তার থেকে মানুষ উপকৃত হচ্ছে তা সে ব্যক্তির পরিশ্রমের ফসল।

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন :

مَنْ دَعَا إِلَي هُدًي، كَانَ لَهُ مِنَ الْأَجْرِ مِثْلُ أُجُورِ مَنْ تَبِعَهُ، لَا يَنْقُصُ ذَلِكَ مِنْ أُجُورِهِمْ شَيْئًا، وَمَنْ دَعَا إِلَي ضَلَالَةٍ، كَانَ عَلَيْهِ مِنَ الْإِثْمِ مِثْلُ آثَامِ مَنْ تَبِعَهُ، لَا يَنْقُصُ ذَلِكَ مِنْ آثَامِهِمْ شَيْئًا

যে ব্যক্তি মানুষকে হিদায়াতের দিকে ডাকবে, সে ব্যক্তি তেমন পূণ্য পাবে যেমন হিদায়াতের অনুসারী ব্যক্তি পাবে, এতে কারো প্রতিদান কমতি হবে না। অনুরূপ কেউ পথভ্রষ্টতার দিকে আহ্বান করলে সে তেমন গুনাহর ভাগী হবে যেমন গুনায় লিপ্ত ব্যক্তি পাবে, কারো পাপ কমতি করে দেয়া হবে না। (সহীহ মুসলিম হা. ২৬৭৪)

অনুরূপভাবে ঈসালে সওয়াব উপলক্ষে খতমে কুরআনের বিনিময়ে পারিশ্রমিক গ্রহণ করা সর্বসম্মতিক্রমে নাজায়িয।

আল্লামা শামী “দুররে মুখতারের শরাহ” এবং “শিফাউল আলীল” নামক গ্রন্থে বিস্তারিতভাবে এবং অকাট্য দলীলাদিসহ এ কথা প্রমাণ করেছেন যে, কুরআন শিক্ষাদান বা অনুরূপ অন্যান্য কাজের বিনিময়ে পারিশ্রমিক গ্রহণের যে অনুমতি পরবর্তীকালের ফকীহগণ দিয়েছেন তার কারণ এমন এক ধর্মীয় প্রয়োজন যে, তাতে বিচ্যুতি দেখা দিলে গোটা শরীয়তের বিধান ব্যবস্থার মূলে আঘাত আসবে।

সুতরাং এ সব বিশেষ প্রয়োজনের ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ রাখা একান্ত আবশ্যক। এ জন্য পারিশ্রমিকের বিনিময়ে মৃতদের ঈসালে সওয়াবের উদ্দেশ্যে কুরআন খতম করানো বা অন্য কোন দু‘আ কালাম ও অযিফা পড়ানো হারাম। (মারেফুল কুরআন পৃ : ৩৫)

(وَأَنَّ سَعْيَه۫ سَوْفَ يُرٰي)

অর্থাৎ কিয়ামতের দিন তার কর্মের ফলাফল দেখতে পাবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন :

(وَقُلِ اعْمَلُوْا فَسَيَرَي اللّٰهُ عَمَلَكُمْ وَرَسُوْلُه۫ وَالْمُؤْمِنُوْنَ ط وَسَتُرَدُّوْنَ إِلٰي عٰلِمِ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ فَيُنَبِّئُكُمْ بِمَا كُنْتُمْ تَعْمَلُوْنَ)‏

“আর বল : ‎ ‘তোমরা কর্ম করতে থাকো; আল্লাহ তোমাদের কার্যকলাপ লক্ষ্য করবেন এবং তাঁর রাসূল ও মু’মিনগণও করবে এবং অচিরেই তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে অদৃশ্য ও দৃশ্যের পরিজ্ঞাতার নিকট, অতঃপর তিনি তোমরা যা করতে তা তোমাদেরকে জানিয়ে দেবেন।’ (সূরা তাওবাহ ৯ : ১০৫)

আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয় :

১. দান করার ক্ষেত্রে কার্পণ্য করা নিন্দনীয়।
২. মূসা ও ইব্রা-হীম (আঃ)-এর ফযীলত জানতে পারলাম।
৩. কেউ অন্যের পাপের বোঝা বহন করবে না, যদিও সে নিকটাত্মীয় হয়।
৪. মানুষ যা করবে তারই ফল পাবে।
৫. ঈসালে সওয়াবের উদ্দেশ্যে কুরআনখানী করা হারাম।
৬. কুরআনখানীর মাধ্যমে মৃত ব্যক্তির কোন উপকার হয় না।

Leave a Reply