بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ ( বই # ১১৭১/ এবং কাফের-রা বলে:-১৮, মুনাফিক কী, কেন ও কীভাবে:-৫০) [* কাফির ও মুনাফিকদের বিরুদ্ধে জিহাদ করুন এবং তাদের প্রতি কঠোর হোন:-] www.motaher21.net সুরা: ৬৬: আত্-তাহরীম পারা:২৮ ৯-১২ নং আয়তের ব্যাখ্যা:- #তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন:-

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
( বই # ১১৭১/ এবং কাফের-রা বলে:-১৮, মুনাফিক কী, কেন ও কীভাবে:-৫০)
[* কাফির ও মুনাফিকদের বিরুদ্ধে জিহাদ করুন এবং তাদের প্রতি কঠোর হোন:-]
www.motaher21.net
সুরা: ৬৬: আত্-তাহরীম
পারা:২৮

৯-১২ নং আয়তের ব্যাখ্যা:-
#তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন:-

সুরা: ৬৬: আত্-তাহরীম:-৯
یٰۤاَیُّہَا النَّبِیُّ جَاہِدِ الۡکُفَّارَ وَ الۡمُنٰفِقِیۡنَ وَ اغۡلُظۡ عَلَیۡہِمۡ ؕ وَ مَاۡوٰىہُمۡ جَہَنَّمُ ؕ وَ بِئۡسَ الۡمَصِیۡرُ ﴿۹﴾
হে নবী! কাফির ও মুনাফিকদের বিরুদ্ধে জিহাদ করুন এবং তাদের প্রতি কঠোর হোন। আর তাদের আশ্ৰয়স্থল জাহান্নাম এবং তা কত নিকৃষ্ট ফিরে যাওয়ার স্থান!
সুরা: ৬৬: আত্-তাহরীম:-১০
ضَرَبَ اللّٰہُ مَثَلًا لِّلَّذِیۡنَ کَفَرُوا امۡرَاَتَ نُوۡحٍ وَّ امۡرَاَتَ لُوۡطٍ ؕ کَانَتَا تَحۡتَ عَبۡدَیۡنِ مِنۡ عِبَادِنَا صَالِحَیۡنِ فَخَانَتٰہُمَا فَلَمۡ یُغۡنِیَا عَنۡہُمَا مِنَ اللّٰہِ شَیۡئًا وَّ قِیۡلَ ادۡخُلَا النَّارَ مَعَ الدّٰخِلِیۡنَ ﴿۱۰﴾
যারা কুফরী করে, আল্লাহ তাদের জন্য দৃষ্টান্ত পেশ করছেন নূহের স্ত্রী ও লূতের স্ত্রীর, তারা ছিল আমাদের বান্দাদের মধ্যে দুই সৎকর্মপরায়ণ বান্দার অধীন। কিন্তু তারা তাদের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল। ফলে নূহ ও লূত তাদেরকে আল্লাহর শাস্তি হতে রক্ষা করতে পারলেন না এবং তাদেরকে বলা হল, তোমরা উভয়ে প্ৰবেশকারীদের সাথে জাহান্নামে প্ৰবেশ কর।’
সুরা: ৬৬: আত্-তাহরীম:-১১
وَ ضَرَبَ اللّٰہُ مَثَلًا لِّلَّذِیۡنَ اٰمَنُوا امۡرَاَتَ فِرۡعَوۡنَ ۘ اِذۡ قَالَتۡ رَبِّ ابۡنِ لِیۡ عِنۡدَکَ بَیۡتًا فِی الۡجَنَّۃِ وَ نَجِّنِیۡ مِنۡ فِرۡعَوۡنَ وَ عَمَلِہٖ وَ نَجِّنِیۡ مِنَ الۡقَوۡمِ الظّٰلِمِیۡنَ ﴿ۙ۱۱﴾
আর যারা ঈমান আনে, আল্লাহ্‌ তাদের জন্য পেশ করেন ফির’আউনের স্ত্রীর দৃষ্টান্ত, যখন সে এ বলে প্রার্থনা করেছিল, ‘হে আমার রব! আপনার সন্নিধানে জান্নাতে আমার জন্য একটি ঘর নির্মাণ করুন এবং আমাকে উদ্ধার করুন ফির’আউন ও তার দুস্কৃতি হতে এবং আমাকে উদ্ধার করুন যালিম সম্প্রদায় হতে।’
সুরা: ৬৬: আত্-তাহরীম:-১২
وَ مَرۡیَمَ ابۡنَتَ عِمۡرٰنَ الَّتِیۡۤ اَحۡصَنَتۡ فَرۡجَہَا فَنَفَخۡنَا فِیۡہِ مِنۡ رُّوۡحِنَا وَ صَدَّقَتۡ بِکَلِمٰتِ رَبِّہَا وَ کُتُبِہٖ وَ کَانَتۡ مِنَ الۡقٰنِتِیۡنَ ﴿٪۱۲﴾
আরও দৃষ্টান্ত পেশ করেন ‘ইমরান-কন্যা মারইয়ামের— যে তার লজ্জাস্থানের পবিত্ৰতা রক্ষা করেছিল, ফলে আমরা তার মধ্যে ফুঁকে দিয়েছিলাম আমাদের রূহ হতে। আর সে তার রবের বাণী ও তাঁর কিতাবসমূহ সত্য বলে গ্রহণ করেছিল এবং সে ছিল অনুগতদের অন্যতম ।

৯-১২ নং আয়তের ব্যাখ্যা:-
#তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন:-
সুরা: আত-তাহরীম
আয়াত নং :-৯

یٰۤاَیُّهَا النَّبِیُّ جَاهِدِ الْكُفَّارَ وَ الْمُنٰفِقِیْنَ وَ اغْلُظْ عَلَیْهِمْ١ؕ وَ مَاْوٰىهُمْ جَهَنَّمُ١ؕ وَ بِئْسَ الْمَصِیْرُ

হে নবী, কাফের ও মুনাফিকরদের বিরুদ্ধে জিহাদ করো এবং তাদের প্রতি কঠোরতা দেখাও। তাদের ঠিকানা জাহান্নাম। তা অত্যন্ত মন্দ ঠিকানা।

** এ পর্যন্ত মুনাফিকদের কার্যকলাপের ব্যাপারে বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে উপেক্ষার নীতি অবলম্বন করা হচ্ছিল। এর দু’টি কারণ ছিল। এক, তখনো পর্যন্ত মুসলমানদের হাত এত বেশী শক্তিশালী হতে পারেনি, যে, বাইরের শত্রুদের বিরুদ্ধে লড়াই করার সাথে সাথে তারা ভেতরের শত্রুদের সাথেও লড়াই করতে পারতো। দুই, যারা সন্দেহ-সংশয়ে ডুবে ছিল ঈমান ও প্রত্যয় লাভ করার জন্য তাদেকে যথেষ্ট সুযোগ দেয়াই ছিল উদ্দেশ্য। এ দু’টি কারণ এখন আর বর্তমান ছিল না। মুসলিম শক্তি এখন সমগ্র আরব ভূখণ্ডকে তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন করে নিয়েছিল এবং আরবের বাইরের শক্তিগুলোর সাথে সংঘাতের সিলসিলা শুরু হতে যাচ্ছিল। এ কারণে ঘরের এ শত্রুদের মাথা গুড়ো করে দেয়া এখন সম্ভবও ছিল এবং অপরিহার্যও হয়ে পড়েছিল। তাহলে তারা আর বিদেশী শক্তির সাথে হাত মিলিয়ে দেশে আভ্যন্তরীণ বিপদ সৃষ্টি করতে পারতো না। তাছাড়া তাদেরকে ৯ বছর সময় দেয়া হয়েছিল চিন্তা-ভাবনা করার, বুঝার এবং আল্লাহর সত্য দ্বীনকে যাচাই-পর্যালোচনা করার জন্য। তাদের মধ্যে যথার্থ কল্যাণ লাভের কোন আকাঙ্ক্ষা থাকলে তারা এ সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে পারতো। এরপর তাদেরকে আরো বেশী সুযোগ সুবিধা দেয়ার মুনাফিকদের বিরুদ্ধেও এবার জিহাদ শুরু করে দিতে হবে এবং এদের ব্যাপারে এ পর্যন্ত যে উদার নীতি অবলম্বন করা হয়েছে তার অবসান ঘটিয়ে কঠোর নীতি অবলম্ব করতে হবে।

তাই বলে মুনাফিকদের বিরুদ্ধে জিহাদ করা ও কঠোর নীতি অবলম্বন করার মানে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা নয়। আসলে এর অর্থ হচ্ছে, তাদের মুনাফিকী মনোভাব ও কর্মনীতিকে এ পর্যন্ত যেভাবে উপেক্ষা করা হয়েছে এবং যে কারণে তারা মুসলমানদের সাথে মিলেমিশে থেকেছে, সাধারণ মুসলমানরা তাদেরকে নিজেদের সমাজেরই একটি অংশ মেনে করেছে এবং তারা ইসলামী দল ও সংগঠনের ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করার ও ইসলামী সমাজে মুনাফিকীর বিষ ছড়াবার যে সুযোগ পেয়েছে তা এখন ভবিষ্যতের জন্য সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দিতে হবে। এখন যে ব্যক্তিই মুসলমানদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে মুনাফিকী নীতি অবলম্বন করবে এবং যার কার্যধারা থেকে একথাও প্রকাশ হবে, যে সে আল্লাহ, তাঁর রসূল ও মু’মিনদের অন্তরঙ্গ বন্ধু নয়, সর্ব সম্মুখে তার মুখোশ খুলে দিতে হবে এবং নিন্দা করতে হবে। মুসলিম সমাজে তার মর্যাদা ও আস্থা লাভের সকল প্রকার সুযোগ খতম করে দিতে হবে। তাকে সামাজিকভাবে বয়কট করতে হবে। দলীয় পরামর্শের ক্ষেত্রে থেকে তাকে দূরে রাখতে হবে। আদালতে তার সাক্ষ্য অনির্ভরযোগ্য গণ্য করতে হবে। বড় বড় পদ ও মর্যাদার দরজা তার জন্য বন্ধ করে দিতে হবে। সভা-সমিতিতে তাকে গুরুত্ব দেবে না। প্রত্যেক মুসলমান তার সাথে এমন আচরণ করবে যাতে সে নিজে অনুভব করতে পারে যে, সমগ্র মুসলিম সমাজে কোথাও তার কোন মর্যাদা ও গুরুত্ব নেই এবং কারো অন্তরে তার জন্য এতটুকু সম্ভ্রমবোধও নেই। তারপর তাদের মধ্য থেকে কোন ব্যক্তি যদি কোন সুস্পষ্ট বিশ্বাসঘাতকতা করে তাহলে তার অপরাধ লুকানো যাবে না এবং তাকে ক্ষমা করা ও যাবে না। বরং সর্ব সম্মুখে তার বিরুদ্ধে মোকদ্দামা চালাতে হবে এবং তাকে উপযুক্ত শাস্তি দিতে হবে।

এটি ছিল একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশ। এ পর্যায়ে মুসলমানদেরকে এ নির্দেশটি দেয়ার প্রয়োজন ছিল। এছাড়া ইসলামী সমাজকে অবনতি ও পতনের আভ্যন্তরীণ কার্যকারণ থেকে সংরক্ষণ করা সম্ভব হতো না। যে জামায়াত ও সংগঠন তার নিজের মধ্যে মুনাফিক ও বিশ্বাসঘাতকদেরকে লালন করে এবং যেখানে দুধকলা দিয়ে সাপ পোষা হয়, তার নৈতিক অধঃপতন এবং সবশেষে পূর্ণ ধ্বংস ছাড়া গত্যন্তর নেই। মুনাফিকী প্লেগের মতো একটি মহামারী। আর মুনাফিক হচ্ছে এমন একটি ইঁদুর যে এ মহামারীর জীবাণু বহন করে বেড়ায়। তাকে জনবসতির মধ্যে স্বাধীনভাবে চলাফেরা করার সুযোগ দেয়ার অর্থ গোটা জনবসতিকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়া। মুসলমানদের সমাজে একজন মুনাফিকদের মর্যাদা ও সম্ভ্রম লাভ করার অর্থ হলো হাজার হাজার মানুষকে বিশ্বাসঘাতকতা ও মুনাফিকী করতে দুঃসাহস যোগানো। এতে সাধারণ্যে এ ধারণা বিস্তার লাভ করে যে, এ সমাজে মার্যাদা লাভ করার জন্য আন্তরিকতা, সদিচ্ছা ও সাচ্চা ঈমানদারীর কোন প্রয়োজন নেই। বরং মিথ্যা ঈমানদের প্রদর্শনীয় সাথে খেয়ানত ও বিশ্বাসঘাতকতার পথ অবলম্বন করেও এখানে মানুষ ফুলে ফেঁপে বড় হয়ে উঠতে পারে। একথাটিই রসূলুল্লাহ ﷺ তার একটি সংক্ষিপ্ত জ্ঞানগর্ভ বক্তব্যের মাধ্যমে এভাবে বর্ণনা করেছেনঃ

من وقر صاحب بدعة فقد أعان على هدم الإسلام

“যে ব্যক্তি কোন বিদআত পন্থীকে সম্মান করলো সে আসলে ইসলামের ইমারত ভেঙ্গে ফেলতে সাহায্য করলো।”

সুরা: আত-তাহরীম
আয়াত নং :-১০

ضَرَبَ اللّٰهُ مَثَلًا لِّلَّذِیْنَ كَفَرُوا امْرَاَتَ نُوْحٍ وَّ امْرَاَتَ لُوْطٍ١ؕ كَانَتَا تَحْتَ عَبْدَیْنِ مِنْ عِبَادِنَا صَالِحَیْنِ فَخَانَتٰهُمَا فَلَمْ یُغْنِیَا عَنْهُمَا مِنَ اللّٰهِ شَیْئًا وَّ قِیْلَ ادْخُلَا النَّارَ مَعَ الدّٰخِلِیْنَ

আল্লাহ কাফেরদের ব্যাপারে নূহ এবং লুতের স্ত্রীদেরকে উদাহরণ হিসেবে পেশ করেছেন। তারা আমার দুই নেক্‌কার বান্দার স্ত্রী ছিল। কিন্তু তারা তাদের স্বামীর সাথে খেয়ানত করেছিল। তারা আল্লাহর মোকাবিলায় তাদের কোন কাজেই আসতে পারেনি। দু’জনকেই বলে দেয়া হয়েছেঃ যাও, আগুনে প্রবেশকারীদের সাথে তুমিও প্রবেশ কর।

তাফসীর : তাফহীমুল কুরআন:-

টিকা:২৪) এখানে খেয়ানতের অর্থ এ নয় যে, তারা ব্যভিচারে লিপ্ত হয়েছিল। এখানে খেয়ানতের অর্থ হচ্ছে তারা হযরত নূহ (আঃ) ও লূতের (আঃ) সাথে ঈমানের পথে চলেনি, বরং তাদের বিরুদ্ধে দ্বীন ইসলামের শত্রুদের সহযোগিতা করে এসেছে। ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেনঃ কোন নবীর স্ত্রী কখনো ব্যভিচারী ছিল না। প্রকৃতপক্ষে এ দু’জন মহিলার খেয়ানত ছিল দ্বীনের ব্যাপারে। তারা হযরত নূহ (আঃ) ও লূতের (আঃ) দ্বীন গ্রহণ করেনি। হযরত নূহের (আঃ) স্ত্রী তার কওমের জালেমদের কাছে ঈমান গ্রহণকারী সম্পর্কে খবর পৌঁছাত এবং হযরত লূতের (আঃ) স্ত্রী তার স্বামীর কাছে আগত লোকদের খবর তার কওমের দুশ্চরিত্র লোকদের কাছে পৌঁছে দিত। (ইবনে জারীর)
সুরা: আত-তাহরীম
আয়াত নং :-১১

وَ ضَرَبَ اللّٰهُ مَثَلًا لِّلَّذِیْنَ اٰمَنُوا امْرَاَتَ فِرْعَوْنَ١ۘ اِذْ قَالَتْ رَبِّ ابْنِ لِیْ عِنْدَكَ بَیْتًا فِی الْجَنَّةِ وَ نَجِّنِیْ مِنْ فِرْعَوْنَ وَ عَمَلِهٖ وَ نَجِّنِیْ مِنَ الْقَوْمِ الظّٰلِمِیْنَۙ

আর ঈমানদারদের ব্যাপারে ফেরাউনের স্ত্রীর উদাহরণ পেশ করছেন। যখন সে দোয়া করলো, হে আমার রব, আমার জন্য তোমার কাছে জান্নাতে একটি ঘর বানিয়ে দাও। আমাকে ফেরাউন ও তার কাজকর্ম থেকে রক্ষা করো এবং জালেম কওমের হাত থেকে বাঁচাও।

তাফসীর : তাফহীমুল কুরআন:-

টিকা:২৫) অর্থাৎ ফেরাউন যেসব খারাপ কাজ-কর্ম করে আমাকে তার মন্দ পরিণামের অংশীদার করো না।

সুরা: আত-তাহরীম
আয়াত নং :-12
/

وَ مَرْیَمَ ابْنَتَ عِمْرٰنَ الَّتِیْۤ اَحْصَنَتْ فَرْجَهَا فَنَفَخْنَا فِیْهِ مِنْ رُّوْحِنَا وَ صَدَّقَتْ بِكَلِمٰتِ رَبِّهَا وَ كُتُبِهٖ وَ كَانَتْ مِنَ الْقٰنِتِیْنَ۠

ইমরানের কন্যা২৬ মারয়ামের উদাহরণও পেশ করছেন, যে তাঁর লজ্জাস্থানকে হিফাজত করেছিল।২৭ অতঃপর আমি আমার পক্ষ থেকে তার মধ্যে রূহ ফুঁৎকার করছিলাম।২৮ সে তার বাণীসমুহ এবং কিতাবসমুহের সত্যতা প্রতিপন্ন করেছে। সে ছিল আনুগত্যকারীদের অন্তর্ভুক্ত।২৯

তাফসীর : তাফহীমুল কুরআন:-

টিকা:২৬) হয়তো হযরত মারয়ামের বাপের নাম ইমরান ছিল, অথবা তাঁকে ইমরানের কন্যা বলার কারণ হচ্ছে, তিনি ইমরানের বংশধর ছিলেন।

টিকা:২৭) এটা ইহুদীদের অপবাদের জবাব। ইহুদীদের অপবাদ ছিল, তাঁর গর্ভে হযরত ঈসা আলাইহিস সালামের জন্ম (নাউযুবিল্লাহ) কোন গোনাহর ফল ছিল। সূরা নিসার ১৫৬ আয়াতে এই জালেমদের এই অপবাদকে بُهْتَان عَظِيم মারাত্মক অপবাদ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। (ব্যাখ্যার জন্য দেখুন তাফহীমুল কুরআন, সূরা আন নিসা, টীকা-১৯০ )।

টিকা:২৮) অর্থাৎ কোন পুরুষের সংস্পর্শ ছাড়াই তার গর্ভাশয়ে নিজের পক্ষ থেকে একটি প্রাণ সৃষ্টি করা হয়েছিল। (ব্যাখ্যার জন্য দেখুন তাফহীমুল কুরআন, সূরা আন-নিসা, টীকা ২১২ ও ২১৩ ; সূরা আল-আম্বিয়া, টীকা-৮৯)।

টিকা:২৯) যে উদ্দেশ্যে এই তিন শ্রেণীর নারীর উদাহরণ পেশ করা হয়েছে এই সূরার ভূমিকায় তার ব্যাখ্যা করেছি। তাই এখানে তা পুনরালোচনার প্রয়োজন নেই।

ফী জিলালিল কুরআন:

*কাফেরদের পরিবারে মুসলিম এবং মুসলিম পরিবারে কাফির স্ত্রী : এরপর শুরু হচ্ছে সূরার তৃতীয় পর্ব। মনে হয়, এটি সরাসরি প্রথম পর্বেরই উপসংহার। কেননা, এই পর্বে নবীর পরিবারে কাফের স্ত্রী এবং কাফের পরিবারে মােমেন স্ত্রীর প্রসংগ আলােচিত হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আল্লাহ কাফেরদের উদাহরণ দিয়েছেন নূহের স্ত্রী ও লূতের স্ত্রীর দ্বারা। তারা আমার দু’জন সৎ বান্দার অধীন ছিলাে। অতপর তাদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করলো…’ এখানে বিশ্বাসঘাতকতার তাফসীর প্রসংগে বর্ণিত হয়েছে যে, নবীর দাওয়াতী কাজের বিরােধিতা করার মাধ্যমে তারা বিশ্বাসঘাতকতা করেছিলাে- ব্যভিচারের মাধ্যমে নয়। নূহের স্ত্রী নূহের প্রতি ঠাট্টা বিদ্রুপ করতাে তৎকালীন কাফের জনগােষ্ঠীর মতােই। আর লূতের স্ত্রী তার জাতির চরিত্র জানা সত্তেও তাদের লুতের কাছে আগত অতিথিদের সংবাদ জানাতো। ফেরাউনের স্ত্রী সম্পর্কে বর্ণিত আছে, তিনি ফেরাউনের প্রাসাদে বসেই ঈমান এনেছিলেন। সম্ভবত তিনি হযরত মূসার পূর্ববর্তী অন্য কোনাে নবীর দাওয়াতে ঈমান আনয়নকারী জাতির অবশিষ্টাংশেরই অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। ইতিহাসে এ কথাও লিপিবদ্ধ আছে যে, সম্রাট চতুর্থ আমনহুনাব- যিনি মিসরে একক উপাস্য প্রতিষ্ঠা করেন, তার প্রতীক হিসাবে সূর্যের প্রতিকৃতি স্থাপন করেন এবং নিজেকে ‘ইখনাতুন’ নামকরণ করেন, তার মাতা সাধারণ মিসরীয়দের থেকে আলাদা ধর্মের অনুসারী ছিলেন। আলােচ্য আয়াতে আল্লাহ এই মহিলার দিকেই ইংগিত করেছেন, তিনি মূসা(আ)-এর সমকালীন ফেরাউনের স্ত্রী এবং এই ফেরাউন উক্ত আমনাহুনাব ছাড়া অন্য কেউ কিনা, তা আল্লাহ তায়ালাই ভালাে জানেন। এখানে ফেরাউনের স্ত্রীর ব্যক্তিগত পরিচয় নির্ণয়ের জন্যে ঐতিহাসিক অনুসন্ধান চালানাে জরুরী নয়। কোরআন এখানে একটি স্থায়ী তত্ত্বের উল্লেখ করেছে, যা ব্যক্তি পরিচয়ের উঞ্চের জিনিস। ব্যক্তি এখানে উক্ত তত্ত্বের উদাহরণ মাত্র। নিজেকে ও পরিবার পরিজনকে দোযখ থেকে রক্ষা করার নির্দেশদানের পর ব্যক্তিগত দায়দায়িত্ব সংক্রান্ত তত্ত্ব বর্ণনা এখানে উদ্দেশ্য। অন্য কথায় বলা যায়, রসূল(স.)-এর স্ত্রীদের বিশেষভাবে ও মুসলমানদের স্ত্রীদের সাধারণভাবে এ কথাই বলা হয়েছে যে, সবার আগে তারা যেন নিজেদের দোযখ থেকে রক্ষা করেন। তারা সর্বাগ্রে তাদের নিজেদের সম্পর্কেই দায়ী, নবীর স্ত্রী হওয়া বা কোনাে নেককার মােমেন বান্দার স্ত্রী হওয়ার কারণে তাদের ব্যক্তিগত দায়দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হবে না। নূহের স্ত্রী ও লূতের স্ত্রীর কথাই ধরা যাক। ‘তারা আমার বান্দাদের মধ্য থেকে দুজন সৎ বান্দার অধীনে থাকে। কিন্তু তারা তাদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করলাে। কিন্তু আল্লাহর কাছে জবাবদিহি থেকে তারা অব্যাহতি পেলাে না। ‘তাদের বলা হলাে, যারা যারা দোযখে প্রবেশ করছে, তাদের সাথে তােমরাও প্রবেশ করাে।’ সুতরাং ঈমান ও কুফরের ব্যাপারে এবং আদর্শের সাথে বিশ্বাসঘাতকতার ব্যাপারে কোনাে আপােষ, সুপারিশ বা সম্মান প্রদর্শনের অবকাশ নেই, এমনকি নবীদের স্ত্রীদের ক্ষেত্রেও নয়। অপরদিকে রয়েছে ফেরাউনের স্ত্রীর উদাহরণ। ফেরাউনের প্রাসাদে কুফুর এবং আল্লাহদ্রোহিতার সয়লাবও তাকে নিজের মুক্তির পথ খুঁজে পাওয়া থেকে ফিরিয়ে রাখতে পারেনি। তিনি ফেরাউনের প্রাসাদে বাস করেও তার গোমরাহী থেকে আত্মরক্ষা করেছেন এবং নিজের বসবাসের জন্যে আল্লাহর কাছে চেয়েছেন জান্নাতের একটি ঘর। তিনি ফেরাউনের সাথে নিজের সম্পর্ক অগ্রাহ্য করে তার কবল থেকে আল্লাহর কাছে নিস্কৃতি চেয়েছেন। তার অতি ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্যে থাকার কারণে তার কার্যকলাপ দ্বারা তিনি কোনােভাবে প্রভাবিত হয়ে বসেন কিনা সেই আশংকায় তার কার্যকলাপ থেকে অব্যাহতি চেয়েছেন। ফেরাউনের গােটা জনগােষ্ঠী থেকেও তিনি নিকৃতি চেয়েছেন, যদিও তাদের মধ্যেই তাঁকে অবস্থান করতে হতাে। ফেরাউনের স্ত্রীর দোয়া ও তার বলিষ্ঠ নীতি দুনিয়ার সবচেয়ে জাঁকজমকপূর্ণ বিত্তবৈভবের মােহত্যাগের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তখনকার দিনে ফেরাউনের স্ত্রী দুনিয়ার সকল রাজা মহারাজার চেয়েও ঐশ্বর্যশালিনী ছিলেন। ফেরাউনের প্রাসাদে তিনি যা চাইতেন তাই ভােগ করতে পারতেন, কিন্তু তিনি তার ওপর ঈমানকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন। এই বিপুল বিস্তবৈভবকে তিনি শুধু যে ত্যাগ করেছেন তাই নয়; বরং তাকে নােংরা ও অপবিত্র জিনিস ভেবে তা থেকে আল্লাহর পানাহ এবং নিষ্কৃতি চেয়েছেন। তিনি ছিলেন এক দোর্দন্ড প্রতাপশালী বিশাল সাম্রাজ্যের একজন মহীয়সী নারী। আর এটা আল্লাহর আর একটি অতি বড় অনুগ্রহ। কেননা, আমি আগেই বলেছি যে, সমাজে প্রচলিত রীতিনীতি ও ধ্যানধারণা সম্পর্কে নারী অপেক্ষাকৃত অধিক সচেতন ও স্পর্শকাতর হয়ে থাকে। তবে এই মহিলা একেবারেই একাকিনী বিরাজমান সমাজ, রাজপ্রাসাদ, রাজা, রাজকীয় পারিষদবর্গ এবং রাজকীয় প্রতাপ সব কিছুর চাপ অগ্রাহ্য করে একমাত্র আল্লাহর দিকে মুখ তুললেন এবং এই আগ্রাসী কুফরী শক্তির পতন কামনা করলেন। এত সব বাধাবিপত্তি, চাপ ও বন্ধন অগ্রাহ্য করে আল্লাহর প্রতি সম্পর্ক ও আনুগত্যকে একনিষ্ঠ ও অটুট করার যে দৃষ্টান্ত তিনি স্থাপন করেছেন, তা অত্যন্ত উঁচুস্তরের দৃষ্টান্ত। এ কারণেই আল্লাহর এই অমর ও অক্ষয় গ্রন্থে তাঁর নাম স্থান পেয়েছে। এটি সেই গ্রন্থ যার প্রতিটি শব্দ মহান আল্লাহর কাছ থেকে নাযিল হয়ে মহাবিশ্বের কোণে কোণে ধ্বনিত-প্রতিধ্বনিত হয়ে থাকে। ‘আর ইমরানের কন্যা মারইয়াম’… তিনিও আজন্ম আল্লাহর একনিষ্ঠ অনুগত বান্দী। তার কাহিনী আল্লাহ অন্যান্য সূরায় বর্ণনা করেছেন। এখানে আল্লাহ তায়ালা তার চারিত্রিক পবিত্রতা ও সতীত্বের উল্লেখ করেছেন এই বলে যে, ‘যে নিজের লজ্জাস্থানকে সুরক্ষিত করেছে।’ অর্থাৎ পাপিষ্ঠ ইহুদীরা তার ওপর যে অভিযােগ আরােপ করেছে, তা থেকে তিনি নিজেকে মুক্ত প্রমাণিত করেছেন। ‘অতপর আমি তার মধ্যে নিজের আত্মার একাংশ ফুকে দিলাম।’ ঈসা(আ.) এই ফুকেরই একটি অংশ ছিলেন। হযরত ঈসার কাহিনী সূরা মারইয়ামে যেখানে সবিস্তার বর্ণনা করা হয়েছে, সেখানে এ বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। যেহেতু আলােচ্য আয়াতটির উদ্দেশ্য মারইয়ামের পবিত্রতা, তার পরিপূর্ণ ঈমান ও আনুগত্যের চিত্র তুলে ধরা, তাই এখানে সে বিষয়টির পুনরাবৃত্তি করছি না। আর সে (মারইয়াম) তাঁর প্রতিপালকের সমস্ত বাণী ও তাঁর কিতাবগুলােকে সত্য বলে স্বীকার করেছিলাে এবং সে ছিলাে অনুগতদের অন্তর্ভুক্ত। ফেরাউনের স্ত্রীকে ইমরানের কন্যা মারইয়ামের সাথে বিশেষভাবে উল্লেখ করা দ্বারা বুঝা যায় ফেরাউনের স্ত্রী আল্লাহর কাছে কতাে উচ্চ মর্যাদার অধিকারী ছিলেন, যার বদৌলতে তিনি মারইয়ামের সাথে উল্লেখের যােগ্য হয়েছিলেন। আগেই উল্লেখ করেছি যে, তার এই মহত্ত্ব ও উচ্চ মর্যাদার একমাত্র কারণ তাঁর জীবনের স্বতন্ত্র ঈমানী বৈশিষ্ট্য। এরা দুজন সতী, ঈমানদার, সচ্চরিত্র ও অনুগত মহিলার দৃষ্টান্ত। এ দুজনের দৃষ্টান্তকে আল্লাহ তায়ালা রসূল(স.)-এর স্ত্রীদের সামনে এবং পরবর্তী সকল প্রজন্মের মােমেন নারীদের সামনে তুলে ধরেছেন। সূরার শুরুতে যে ঘটনার উল্লেখ করা হয়েছে, সেই প্রসংগক্রমেই এ দুই মহীয়সী নারীর দৃষ্টান্ত তুলে ধরা হয়েছে। উপসংহারে বলতে চাই, শুধু এই সূরাটিই নয়, বরং এই সমগ্র পারাটিই মহানবী(স.)-এর জীবনের একটি জীবন্ত অধ্যায়, যা কোরআন নিজস্ব ভংগিতে তুলে ধরেছে। কোরআনের এই ভংগি স্বয়ং আল্লাহর নির্বাচিত। মানুষের কোনাে ঐতিহাসিক বর্ণনা কোরআনের ন্যায় এমন নিপুণ ভংগিতে সেই সময়কার ঘটনা তুলে ধরতে পারে না। কোরআনের বর্ণনা অধিকতর ব্যাপকধর্মী। একটি ঘটনা ব্যবহার করে সে এমন একটি নিরেট সত্য তুলে ধরে, যার অবস্থান এ ঘটনা এবং তার স্থান ও কালের অনেক ঊর্ধ্বে, তার চেয়ে অনেক ব্যাপক, স্থায়ী ও সুদূরপ্রসারী। এটাই কোরআনের বৈশিষ্ট্য।

 

 

 

 

৯-১২ নং আয়াতের ব্যাখ্যা:-
২) তাফসীরে ফী জিলালিল কুরআন:-
**মুসলিম সমাজকে রক্ষা করার স্বার্থেই রসূল(স.)-কে ইসলামের ও মুসলমানদের শত্রুদের বিরুদ্ধে লড়াই করার নির্দেশ দেয়া হয়েছিলাে। বলা হচ্ছে, হে নবী, কাফের ও মােনাফেকদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করাে এবং তাদের ওপর কঠোরতা প্রয়ােগ করাে। তাদের বাসস্থান হচ্ছে জাহান্নাম এবং তা নিকৃষ্ট ঠিকানা। ইতিপূর্বে মােমেনদেরকে যে নিজেদের ও তাদের পরিবার পরিজনকে দোযখের আগুন থেকে রক্ষা করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে, তার আলােকে বিবেচনা করলে এ আয়াতটিতে প্রদত্ত মােনাফেক ও কাফেরদের বিরুদ্ধে সংগ্রামের নির্দেশ তাৎপর্যবহ। পূর্বের আয়াতে যে খাঁটি তাওবার নির্দেশ দেয়া হয়েছে, যা তাদের গুনাহ মাফ করাতে ও জান্নাতে প্রবেশ করাতে সক্ষম, তার পরিপ্রেক্ষিতেও এ আদেশ অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। যে সমাজে দোযখের আগুন থেকে বাঁচা ও বাঁচানাের সাধনা চলে, সে সমাজকে বাইরে থেকে আগ্রাসী কাফেররা ও ভেতর থেকে গৃহ শত্রু বিভীষণ মােনাফেকরা অন্যায়ভাবে ধ্বংস করে দেবে, সেটা হতে দেয়া যায় না। এ সমাজকে তাই অত্যাচারী ও নৈরাজ্যবাদীদের আক্রমণ থেকে রক্ষা করা অপরিহার্য। লক্ষণীয় যে, আয়াতে কাফের ও মোনাফেকদের একই সমতলে সমবেত করা হয়েছে এবং তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ করা ও কঠোরতা প্রয়ােগ করার আদেশ দেয়া হয়েছে। কারণ, ইসলামী শিবিরকে হুমকি দেয়া, ধ্বংস করা ও ছিন্নভিন্ন করার ব্যাপারে তারা একই রকম ভূমিকা পালন করে থাকে। সুতরাং তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ পরিচালনা দোযখের আগুন থেকে বাঁচার সংগ্রামেরই পর্যায়ভুক্ত এবং রাসূল(স.) ও মােমেনদের পক্ষ থেকে দুনিয়ার জীবনে নিষ্ঠুর কঠোর আচরণ পাওয়া তাদের প্রাপ্য নগদ শাস্তি, আর আখেরাতে তাদের শাস্তি হলাে জাহান্নাম। এভাবে সূরার এ অংশটির আয়াতগুলাে যেমন পরস্পরের সাথে সুসমন্বিত, তেমনি তা পূর্ববর্তী অংশের সাথেও সার্বিকভাবে সমন্বিত।
ফী জিলালিল কুরআন:   *কাফেরদের পরিবারে মুসলিম এবং মুসলিম পরিবারে কাফির স্ত্রী : এরপর শুরু হচ্ছে সূরার তৃতীয় পর্ব। মনে হয়, এটি সরাসরি প্রথম পর্বেরই উপসংহার। কেননা, এই পর্বে নবীর পরিবারে কাফের স্ত্রী এবং কাফের পরিবারে মােমেন স্ত্রীর প্রসংগ আলােচিত হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আল্লাহ কাফেরদের উদাহরণ দিয়েছেন নূহের স্ত্রী ও লূতের স্ত্রীর দ্বারা। তারা আমার দু’জন সৎ বান্দার অধীন ছিলাে। অতপর তাদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করলো…’ এখানে বিশ্বাসঘাতকতার তাফসীর প্রসংগে বর্ণিত হয়েছে যে, নবীর দাওয়াতী কাজের বিরােধিতা করার মাধ্যমে তারা বিশ্বাসঘাতকতা করেছিলাে- ব্যভিচারের মাধ্যমে নয়। নূহের স্ত্রী নূহের প্রতি ঠাট্টা বিদ্রুপ করতাে তৎকালীন কাফের জনগােষ্ঠীর মতােই। আর লূতের স্ত্রী তার জাতির চরিত্র জানা সত্তেও তাদের লুতের কাছে আগত অতিথিদের সংবাদ জানাতো। ফেরাউনের স্ত্রী সম্পর্কে বর্ণিত আছে, তিনি ফেরাউনের প্রাসাদে বসেই ঈমান এনেছিলেন। সম্ভবত তিনি হযরত মূসার পূর্ববর্তী অন্য কোনাে নবীর দাওয়াতে ঈমান আনয়নকারী জাতির অবশিষ্টাংশেরই অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। ইতিহাসে এ কথাও লিপিবদ্ধ আছে যে, সম্রাট চতুর্থ আমনহুনাব- যিনি মিসরে একক উপাস্য প্রতিষ্ঠা করেন, তার প্রতীক হিসাবে সূর্যের প্রতিকৃতি স্থাপন করেন এবং নিজেকে ‘ইখনাতুন’ নামকরণ করেন, তার মাতা সাধারণ মিসরীয়দের থেকে আলাদা ধর্মের অনুসারী ছিলেন। আলােচ্য আয়াতে আল্লাহ এই মহিলার দিকেই ইংগিত করেছেন, তিনি মূসা(আ)-এর সমকালীন ফেরাউনের স্ত্রী এবং এই ফেরাউন উক্ত আমনাহুনাব ছাড়া অন্য কেউ কিনা, তা আল্লাহ তায়ালাই ভালাে জানেন। এখানে ফেরাউনের স্ত্রীর ব্যক্তিগত পরিচয় নির্ণয়ের জন্যে ঐতিহাসিক অনুসন্ধান চালানাে জরুরী নয়। কোরআন এখানে একটি স্থায়ী তত্ত্বের উল্লেখ করেছে, যা ব্যক্তি পরিচয়ের উঞ্চের জিনিস। ব্যক্তি এখানে উক্ত তত্ত্বের উদাহরণ মাত্র। নিজেকে ও পরিবার পরিজনকে দোযখ থেকে রক্ষা করার নির্দেশদানের পর ব্যক্তিগত দায়দায়িত্ব সংক্রান্ত তত্ত্ব বর্ণনা এখানে উদ্দেশ্য। অন্য কথায় বলা যায়, রসূল(স.)-এর স্ত্রীদের বিশেষভাবে ও মুসলমানদের স্ত্রীদের সাধারণভাবে এ কথাই বলা হয়েছে যে, সবার আগে তারা যেন নিজেদের দোযখ থেকে রক্ষা করেন। তারা সর্বাগ্রে তাদের নিজেদের সম্পর্কেই দায়ী, নবীর স্ত্রী হওয়া বা কোনাে নেককার মােমেন বান্দার স্ত্রী হওয়ার কারণে তাদের ব্যক্তিগত দায়দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হবে না। নূহের স্ত্রী ও লূতের স্ত্রীর কথাই ধরা যাক। ‘তারা আমার বান্দাদের মধ্য থেকে দুজন সৎ বান্দার অধীনে থাকে। কিন্তু তারা তাদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করলাে। কিন্তু আল্লাহর কাছে জবাবদিহি থেকে তারা অব্যাহতি পেলাে না। ‘তাদের বলা হলাে, যারা যারা দোযখে প্রবেশ করছে, তাদের সাথে তােমরাও প্রবেশ করাে।’ সুতরাং ঈমান ও কুফরের ব্যাপারে এবং আদর্শের সাথে বিশ্বাসঘাতকতার ব্যাপারে কোনাে আপােষ, সুপারিশ বা সম্মান প্রদর্শনের অবকাশ নেই, এমনকি নবীদের স্ত্রীদের ক্ষেত্রেও নয়। অপরদিকে রয়েছে ফেরাউনের স্ত্রীর উদাহরণ। ফেরাউনের প্রাসাদে কুফুর এবং আল্লাহদ্রোহিতার সয়লাবও তাকে নিজের মুক্তির পথ খুঁজে পাওয়া থেকে ফিরিয়ে রাখতে পারেনি। তিনি ফেরাউনের প্রাসাদে বাস করেও তার গোমরাহী থেকে আত্মরক্ষা করেছেন এবং নিজের বসবাসের জন্যে আল্লাহর কাছে চেয়েছেন জান্নাতের একটি ঘর। তিনি ফেরাউনের সাথে নিজের সম্পর্ক অগ্রাহ্য করে তার কবল থেকে আল্লাহর কাছে নিস্কৃতি চেয়েছেন। তার অতি ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্যে থাকার কারণে তার কার্যকলাপ দ্বারা তিনি কোনােভাবে প্রভাবিত হয়ে বসেন কিনা সেই আশংকায় তার কার্যকলাপ থেকে অব্যাহতি চেয়েছেন। ফেরাউনের গােটা জনগােষ্ঠী থেকেও তিনি নিকৃতি চেয়েছেন, যদিও তাদের মধ্যেই তাঁকে অবস্থান করতে হতাে। ফেরাউনের স্ত্রীর দোয়া ও তার বলিষ্ঠ নীতি দুনিয়ার সবচেয়ে জাঁকজমকপূর্ণ বিত্তবৈভবের মােহত্যাগের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তখনকার দিনে ফেরাউনের স্ত্রী দুনিয়ার সকল রাজা মহারাজার চেয়েও ঐশ্বর্যশালিনী ছিলেন। ফেরাউনের প্রাসাদে তিনি যা চাইতেন তাই ভােগ করতে পারতেন, কিন্তু তিনি তার ওপর ঈমানকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন। এই বিপুল বিস্তবৈভবকে তিনি শুধু যে ত্যাগ করেছেন তাই নয়; বরং তাকে নােংরা ও অপবিত্র জিনিস ভেবে তা থেকে আল্লাহর পানাহ এবং নিষ্কৃতি চেয়েছেন। তিনি ছিলেন এক দোর্দন্ড প্রতাপশালী বিশাল সাম্রাজ্যের একজন মহীয়সী নারী। আর এটা আল্লাহর আর একটি অতি বড় অনুগ্রহ। কেননা, আমি আগেই বলেছি যে, সমাজে প্রচলিত রীতিনীতি ও ধ্যানধারণা সম্পর্কে নারী অপেক্ষাকৃত অধিক সচেতন ও স্পর্শকাতর হয়ে থাকে। তবে এই মহিলা একেবারেই একাকিনী বিরাজমান সমাজ, রাজপ্রাসাদ, রাজা, রাজকীয় পারিষদবর্গ এবং রাজকীয় প্রতাপ সব কিছুর চাপ অগ্রাহ্য করে একমাত্র আল্লাহর দিকে মুখ তুললেন এবং এই আগ্রাসী কুফরী শক্তির পতন কামনা করলেন। এত সব বাধাবিপত্তি, চাপ ও বন্ধন অগ্রাহ্য করে আল্লাহর প্রতি সম্পর্ক ও আনুগত্যকে একনিষ্ঠ ও অটুট করার যে দৃষ্টান্ত তিনি স্থাপন করেছেন, তা অত্যন্ত উঁচুস্তরের দৃষ্টান্ত। এ কারণেই আল্লাহর এই অমর ও অক্ষয় গ্রন্থে তাঁর নাম স্থান পেয়েছে। এটি সেই গ্রন্থ যার প্রতিটি শব্দ মহান আল্লাহর কাছ থেকে নাযিল হয়ে মহাবিশ্বের কোণে কোণে ধ্বনিত-প্রতিধ্বনিত হয়ে থাকে। ‘আর ইমরানের কন্যা মারইয়াম’… তিনিও আজন্ম আল্লাহর একনিষ্ঠ অনুগত বান্দী। তার কাহিনী আল্লাহ অন্যান্য সূরায় বর্ণনা করেছেন। এখানে আল্লাহ তায়ালা তার চারিত্রিক পবিত্রতা ও সতীত্বের উল্লেখ করেছেন এই বলে যে, ‘যে নিজের লজ্জাস্থানকে সুরক্ষিত করেছে।’ অর্থাৎ পাপিষ্ঠ ইহুদীরা তার ওপর যে অভিযােগ আরােপ করেছে, তা থেকে তিনি নিজেকে মুক্ত প্রমাণিত করেছেন। ‘অতপর আমি তার মধ্যে নিজের আত্মার একাংশ ফুকে দিলাম।’ ঈসা(আ.) এই ফুকেরই একটি অংশ ছিলেন। হযরত ঈসার কাহিনী সূরা মারইয়ামে যেখানে সবিস্তার বর্ণনা করা হয়েছে, সেখানে এ বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। যেহেতু আলােচ্য আয়াতটির উদ্দেশ্য মারইয়ামের পবিত্রতা, তার পরিপূর্ণ ঈমান ও আনুগত্যের চিত্র তুলে ধরা, তাই এখানে সে বিষয়টির পুনরাবৃত্তি করছি না। আর সে (মারইয়াম) তাঁর প্রতিপালকের সমস্ত বাণী ও তাঁর কিতাবগুলােকে সত্য বলে স্বীকার করেছিলাে এবং সে ছিলাে অনুগতদের অন্তর্ভুক্ত। ফেরাউনের স্ত্রীকে ইমরানের কন্যা মারইয়ামের সাথে বিশেষভাবে উল্লেখ করা দ্বারা বুঝা যায় ফেরাউনের স্ত্রী আল্লাহর কাছে কতাে উচ্চ মর্যাদার অধিকারী ছিলেন, যার বদৌলতে তিনি মারইয়ামের সাথে উল্লেখের যােগ্য হয়েছিলেন। আগেই উল্লেখ করেছি যে, তার এই মহত্ত্ব ও উচ্চ মর্যাদার একমাত্র কারণ তাঁর জীবনের স্বতন্ত্র ঈমানী বৈশিষ্ট্য। এরা দুজন সতী, ঈমানদার, সচ্চরিত্র ও অনুগত মহিলার দৃষ্টান্ত। এ দুজনের দৃষ্টান্তকে আল্লাহ তায়ালা রসূল(স.)-এর স্ত্রীদের সামনে এবং পরবর্তী সকল প্রজন্মের মােমেন নারীদের সামনে তুলে ধরেছেন। সূরার শুরুতে যে ঘটনার উল্লেখ করা হয়েছে, সেই প্রসংগক্রমেই এ দুই মহীয়সী নারীর দৃষ্টান্ত তুলে ধরা হয়েছে। উপসংহারে বলতে চাই, শুধু এই সূরাটিই নয়, বরং এই সমগ্র পারাটিই মহানবী(স.)-এর জীবনের একটি জীবন্ত অধ্যায়, যা কোরআন নিজস্ব ভংগিতে তুলে ধরেছে। কোরআনের এই ভংগি স্বয়ং আল্লাহর নির্বাচিত। মানুষের কোনাে ঐতিহাসিক বর্ণনা কোরআনের ন্যায় এমন নিপুণ ভংগিতে সেই সময়কার ঘটনা তুলে ধরতে পারে না। কোরআনের বর্ণনা অধিকতর ব্যাপকধর্মী। একটি ঘটনা ব্যবহার করে সে এমন একটি নিরেট সত্য তুলে ধরে, যার অবস্থান এ ঘটনা এবং তার স্থান ও কালের অনেক ঊর্ধ্বে, তার চেয়ে অনেক ব্যাপক, স্থায়ী ও সুদূরপ্রসারী। এটাই কোরআনের বৈশিষ্ট্য।

৯-১২ নং আয়াতের ব্যাখ্যা:-
৩) তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ:-
৯-১২ নম্বর আয়াতের তাফসীর :

আল্লাহ তা‘আলা নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে কাফির ও মুনাফিকদের বিরুদ্ধে জিহাদ ও কঠোরতা অবলম্বন করার নির্দেশ প্রদান করছেন। এতে দাওয়াত, উত্তম উপদেশ, তাদের ভ্রান্ত মতবাদ খণ্ডন করা ও সশস্ত্র জিহাদ সব কিছু শামিল। (তাফসীর সা‘দী)।

তারপর আল্লাহ তা‘আলা কাফির ও মু’মিনদের জন্য দুটি উদারহণ পেশ করছেন। প্রথমেই আল্লাহ তা‘আলা কাফিরদের জন্য উদাহরণ পেশ করছেন দুজন প্রসিদ্ধ খ্যাতনামা দুজন নাবীর স্ত্রীদের দ্বারা। তারা বড় বড় দুজন নাবীর স্ত্রী, কিন্তু তা সত্ত্বেও ঈমান না থাকার কারণে জাহান্নাম থেকে রেহাই পাবে না। আল্লাহ তা‘আলা এর দ্বারা কাফির সম্প্রদায়কে বুঝাতে চাচ্ছেন যে, তোমরা নিজেদেরকে যত বড় দাবী কর আর যত বড় নেক লোকদের নেতৃত্বাধীন থাকো না কেন ঈমান না আনলে কোন বাহাদুরী কাজে আসবে না।

فَخٰنَتٰهُمَا এখানে খেয়ানত দ্বারা ব্যভিচারে লিপ্ত হয়েছে তা নয়। কারণ নাবীদের স্ত্রী ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়া থেকে মুক্ত। এটা রাসূলদের সম্মানার্থে। বরং তাদের খেয়ানত ছিল দীনের ব্যাপারে। নূহ (আঃ)-এর স্ত্রী লোকদের বলে বেড়াতো যে, সে (আমার স্বামী নূহ) একজন পাগল। আর লূত (আঃ)-এর স্ত্রী নিজ বাড়িতে আগত মেহমানদের ব্যাপারে জাতিকে অবগত করিয়ে দিত যাতে তারা তাদের সাথে খারাপ কাজে লিপ্ত হয়। (ইবনু কাসীর)

কেউ বলেছেন : এরা উভয়েই তাদের জাতির লোকদের মাঝে নিজ নিজ স্বামীর চুগলি করে বেড়াত। তারপর আল্লাহ তা‘আলা মু’মিনদের জন্য উদাহরণ পেশ করছেন ফেরাউনের স্ত্রী আসিয়া ও মারইয়াম (আঃ) দ্বারা। ফির‘আউন ছিল তৎকালীন একজন ক্ষমতাধর কাফির বাদশা। এতদসত্ত্বেও আসিয়া আল্লাহ তা‘আলার আনুগত্য স্বীকার করেছে এবং শরয়ী বিধি বিধান যথাযথ পালন করেছে, যার কারণে তার স্বামীর কুফরী তার ঈমানকে বিন্দুমাত্র ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারেনি।

অনুরূপভাবে মারইয়াম (আঃ) নিজের সতীত্ব হেফাযত করেছিলেন আর আল্লাহ তা‘আলা চাচ্ছিলেন তার মর্যাদা বৃদ্ধি করবেন। ফলে তাকে বিনা স্বামীতে সন্তান দিয়ে পরীক্ষা করলেন। তিনি সে পরীক্ষায় ধৈর্যের পরিচয় দিয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন। এর দ্বারা আল্লাহ তা‘আলা মু’মিন নর ও নারীদের বুঝাতে চাচ্ছেন যে, প্রতিকুল পরিবেশেও যারা ঈমানের ওপর অটল থাকে তাদের জন্য রয়েছে মহা পুরস্কার।

ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন : রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জমিনে চারটি দাগ টানলেন এবং বললেন : তোমরা কি জান এটা কী? সাহাবীগণ বললেন : আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ভাল জানেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন : জান্নাতীদের শ্রেষ্ঠ মহিলা হলেন খাদিজা বিনতু খুওয়াইলিদ, ফাতিমা বিনতু মুহাম্মাদ, মারইয়াম বিনতু ইমরান ও আসিয়া (ফির‘আউনের স্ত্রী)। (আহমাদ হা. ২৬৬৮, সনদ সহীহ)।

এরূপ তাদের ফযীলতের আরেকটি সহীহ হাদীস রয়েছে যার আলোচনা সূরা আলি ইমরানের ৪২ নম্বর আয়াতে করা হয়েছে।
সুতরাং কাফির নারীদের শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত তাদের পক্ষে স্বামীদের আনুগত্য না করে একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার আনুগত্য করা উচিত এবং মু’মিন নারীদের উচিত স্বামী যতই আল্লাহ তা‘আলার অবাধ্য কাজে জড়িত করার চেষ্টা করুক তারা তাতে লিপ্ত না হয়ে আল্লাহ তা‘আলার ভয়কে সর্বদা প্রাধান্য দেবে।

আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয় :

১. কাফির ও মুনাফিকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা ওয়াজিব। তবে স্থান ও কাল ভেদে এ বিধান ভিন্ন হয়।
২. ঈমান ছাড়া আল্লাহ তা‘আলার কাছে কোন সদামল গ্রহণযোগ্য হবে না, সে যে কেউ হোক না কেন।
৩. প্রতিকুল পরিবেশে ঈমান ধরে রাখার ফযীলত জানলাম।
৪. চারজন মহিলার ফযীলত জানতে পারলাম।
৫. মারইয়াম (আঃ)-এর সতিত্ব সম্পর্কে স্বয়ং আল্লাহ তা‘আলা সাক্ষ্য দিয়েছেন যে, তিনি নিজের সতীত্ব সংরক্ষণ করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা তাঁকে বিনা স্বামীতে ঈসা (আঃ)-কে সন্তান হিসাবে দান করেছেন।

 

৯-১২ নং আয়াতের ব্যাখ্যা:-
৪) তাফসীরে ইবনে কাছীর:-
৯-১০ নং আয়াতের তাফসীর

আল্লাহ তা’আলা স্বীয় রাসূল (সঃ)-কে কাফির ও মুনাফিকদের বিরুদ্ধে অস্ত্র-শস্ত্রসহ জিহাদ করার নির্দেশ দিচ্ছেন। আরো নির্দেশ দিচ্ছেন দুনিয়ায় তাদের প্রতি কঠোর হতে। আর পরকালেও তাদের আশ্রয়স্থল হবে জাহান্নাম এবং ওটা কতই না নিকৃষ্ট প্রত্যাবর্তন স্থল।

এরপর আল্লাহ দৃষ্টান্ত দ্বারা বুঝাচ্ছেন যে, কাফিরদের তাদের কুফরী সত্ত্বেও মুসলমানদের সাথে দুনিয়ায় মিলে মিশে থাকা কিয়ামতের দিন কোনই উপকারে আসবে না। যেমন দুই জন নবী, হযরত নূহ (আঃ) ও হযরত লূত (আঃ)-এর স্ত্রীদ্বয়, যারা সদা-সর্বদা এই নবীদের সাহচর্যে থাকতো, তাঁদের সাথে সব সময় উঠা বসা করতো, এক সাথে পানাহার করতো এবং এক সাথে রাত্রি যাপনও করতো, কিন্তু যেহেতু তাদের মধ্যে ঈমান ছিল না, বরং তারা কুফরীর উপর কায়েম ছিল, সেই হেতু নবীদের অষ্ট প্রহরের সাহচর্য তাদের কোন কাজে আসলো না। নবীগণ তাদের পারলৌকিক কোন উপকার করতে পারলেন না এবং তাদেরকে ধ্বংসের হাত হতে রক্ষা করতে সক্ষম হলেন না। বরং তাদেরকেও জাহান্নামীদের সাথে জাহান্নামে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হলো।

এটা স্মরণ রাখার বিষয় যে, এখানে খিয়ানত দ্বারা ব্যভিচার উদ্দেশ্য নয়। নবীদের (আঃ) পবিত্রতা ও সততা এতো ঊর্ধ্বে যে, তাদের স্ত্রীদের মধ্যে ব্যভিচাররূপ জঘন্য পাপকার্য প্রকাশ পাওয়া সম্ভব হতে পারে না। আমরা সূরায়ে নূরের তাফসীরে এর পূর্ণ বর্ণনা দিয়েছি। বরং এখানেও উদ্দেশ্য দ্বীনের ব্যাপারে খিয়ানত করা। অর্থাৎ তারা দ্বীনের ব্যাপারে তাদের স্বামীদের খিয়ানত বা বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল। দ্বীনের কাজে তাদের সঙ্গিনী হয়নি।

হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, তাদের বিশ্বাসঘাতকতা ব্যভিচার ছিল না। বরং এই ছিল যে, হযরত নূহ (আঃ)-এর স্ত্রী বলতো যে, এই লোকটি অর্থাৎ হযরত নূহ (আঃ) একজন পাগল। আর হযরত লূত (আঃ)-এর স্ত্রীর বিশ্বাসঘাতকতা এই ছিল যে, তাঁর বাড়ীতে কোন মেহমান আসলে সে কাফিরদেরকে খবর দিয়ে দিতো। হযরত নূহ (আঃ)-এর স্ত্রী তাঁর গোপন তথ্য এবং গোপনে ঈমান আনয়নকারীদের নাম কাফিরদের কাছে প্রকাশ করে দিতো। অনুরূপভাবে হযরত লূত (আঃ)-এর স্ত্রীও তার স্বামী হযরত লূত (আঃ)-এর বিরুদ্ধাচরণ করতো এবং যাঁরা মেহমানরূপে তাঁর বাড়ীতে আসতেন তাঁদের খবর তার কওমকে দিয়ে দিতো, যাদের কু-কাজের অভ্যাস ছিল।

হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে একথাও বর্ণিত আছে যে, কোন নবীরই স্ত্রী কখনো ব্যভিচার করেনি। হযরত যহহাক (রঃ) প্রমুখ গুরুজনও একথাই বলেন। এটাকে দলীলরূপে গ্রহণ করে কোন কোন আলেম বলেছেনঃ সাধারণ লোকদের মধ্যে একথা প্রসিদ্ধ হয়ে রয়েছে যে, হাদীসে আছেঃ যে ব্যক্তি এমন লোকের সাথে পানাহার করে যাকে ক্ষমা করে দেয়া হয়েছে, ঐ লোকটিকেও ক্ষমা করে দেয়া হয়, এটা খুবই দুর্বল হাদীস। আর প্রকৃত ব্যাপারও এটাই যে, এ হাদীসটি একেবারে ভিত্তিহীন। তবে হ্যাঁ, একজন বুযুর্গ ব্যক্তি হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি স্বপ্নে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর সাথে সাক্ষাৎ করেছিলেন এবং তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিলেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! যাকে ক্ষমা করা হয়েছে তার সাথে যে থাকবে তাকেও ক্ষমা করে দেয়া হবে’ একথা কি আপনি বলেছেন?” উত্তরে তিনি বলেনঃ “না, কিন্তু এখন আমি একথা বলছি।”
১১-১২ নং আয়াতের তাফসীর

এখানে আল্লাহ তা’আলা মুসলমানদের জন্যে দৃষ্টান্ত পেশ করে বলেনঃ যদি মুসলমানরা প্রয়োজনবোধে কাফিরদের সাথে মিলে মিশে থাকে তবে তাদের কোন অপরাধ হবে না। যেমন অন্য জায়গায় আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ (আরবি)

অর্থাৎ “মুমিনগণ যেন মুমিনগণ ব্যতীত কাফিরদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করে। যে কেউ এরূপ করবে তার সাথে আল্লাহর সম্পর্ক থাকবে না; তবে ব্যতিক্রম যদি তোমরা তাদের নিকট হতে আত্মরক্ষার জন্যে সতর্কতা অবলম্বন কর।” (৩:২৮)

হযরত কাতাদাহ (রঃ) বলেন যে, সারা জগতের লোকের মধ্যে সর্বাপেক্ষা উদ্ধত লোক ছিল ফিরাউন। কিন্তু তার কুফরীও তার স্ত্রীর কোন ক্ষতি করতে পারেনি। কেননা, তার স্ত্রী তাঁর যবরদস্ত ঈমানের উপর পূর্ণমাত্রায় কায়েম ছিলেন। আল্লাহ তা’আলা ন্যায় বিচারক ও হাকিম। তিনি একজনের পাপের কারণে অন্যজনকে পাকড়াও করেন না।

হযরত সালমান (রঃ) বলেন যে, ফিরাউন ঐ সতী-সাধ্বী নারীর উপর সর্বপ্রকারের নির্যাতন করতো। কঠিন গরমের সময় তাকে রৌদ্রে দাঁড় করিয়ে দিতো। কিন্তু পরম করুণাময় আল্লাহ ফেরেশতাদের পরের দ্বারা তাঁকে ছায়া করতেন এবং তাঁকে গরমের কষ্ট হতে রক্ষা করতেন। এমন কি তিনি তাকে তার জান্নাতী ঘর দেখিয়ে দিতেন। ফলে তাঁর রূহ তাযা হয়ে উঠতে এবং ঈমান বৃদ্ধি পেতো। তিনি ফিরাউন ও হযরত মূসা (আঃ)-এর ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করতে থাকতেন যে, জয়লাভ কে করলো? সব সময় তিনি শুনতে পেতেন যে, হযরত মূসাই (আঃ) জয়লাভ করেছেন। তখন ওটাই তাঁর ঈমান আনয়নের কারণ হয়ে দাঁড়ায় এবং তিনি ঘোষণা করেনঃ ‘আমি হযরত মূসা (আঃ) ও হযরত হারূন (আঃ)-এর প্রতিপালকের প্রতি ঈমান আনলাম।”

ফিরাউন এ খবর জানতে পেরে তার লোকজনকে বললোঃ সবচেয়ে বড় পাথর তোমরা খোঁজ করে নিয়ে এসো। অতঃপর তাকে চিত করে শুইয়ে দাও এবং তাকে বললোঃ “তুমি তোমার এই আকীদা হতে বিরত থাকো। যদি বিরত থাকে তবে ভাল কথা, সে আমার স্ত্রী। তাকে মর্যাদা সহকারে আমার কাছে ফিরিয়ে আনবে। আর যদি না মানে তবে ঐ পাথর তার উপর নিক্ষেপ করবে এবং তার মাংস টুকরো টুকরো করে ফেলবে। অতঃপর তার লোকেরা পাথর নিয়ে আসলো এবং তাঁকে নিয়ে গেল ও চিত করে শুইয়ে দিলো এবং তাঁর উপর ঐ পাথর নিক্ষেপ করার জন্যে উঠালো। ঐ সময় তিনি আকাশের দিকে তার চক্ষু উঠালেন। মহান আল্লাহ পর্দা সরিয়ে দিলেন এবং তিনি জান্নাত এবং সেখানে তাঁর জন্যে যে ঘর তৈরী করা হয়েছে তা স্বচক্ষে দেখে নিলেন। ওতেই তাঁর রূহ বেরিয়ে পড়লো। যখন পাথর তার উপর নিক্ষেপ করা হয় তখন তার মধ্যে রূহ ছিলই না। তিনি শাহাদাতের সময় দু’আ করেছিলেনঃ “হে আমার প্রতিপালক। ‘আপনার সন্নিধানে জান্নাতে আমার জন্যে একটি গৃহ নির্মাণ করুন। তাঁর দু’আর সূক্ষ্মতার প্রতি লক্ষ্য করা যাক, প্রথমে তিনি আল্লাহর সন্নিধান কামনা করছেন, তারপর ঘরের প্রার্থনা করছেন। এই ঘটনার বর্ণনায় মারফূ’ হাদীসও এসেছে। তারপর তিনি দুআ করছেনঃ “আমাকে উদ্ধার করুন ফিরাউন ও তার দুষ্কৃতি হতে এবং আমাকে উদ্ধার করুন যালিম সম্প্রদায় হতে।”

ঐ পুণ্যবতী মহিলার নাম ছিল, আসিয়া বিনতু মাযাহিম (রাঃ)। তার ঈমান আনয়নের ঘটনাটি হযরত আবূল আলিয়া নিম্নরূপে বর্ণনা করেছেনঃ

ফিরাউনের দারোগার স্ত্রীর ঈমান ছিল হযরত আসিয়ার (রাঃ) ঈমান আনয়নের কারণ। দারোগার স্ত্রী একদা ফিরাউনের কন্যার মাথার চুলে চিরুণী করে দিচ্ছিলেন। হঠাৎ করে চিরুণী তার হাত হতে পড়ে যায়। তখন তার মুখ দিয়ে বেরিয়ে যায়ঃ “কাফিররা ধ্বংস হোক।” ফিরাউনের কন্যা তার মুখে একথা শুনে বললোঃ “তুমি কি আমার পিতা ছাড়া অন্য কাউকে প্রতিপালক বলে স্বীকার কর?” মহিলাটি উত্তরে বলল “আমার, তোমার পিতার এবং অন্যান্য সবারই প্রতিপালক হলেন আল্লাহ।” সে তখন ক্রোধে অগ্নিশর্মা হয়ে মহিলাটিকে খুবই মারপিট করলো। অতঃপর তার পিতাকে এ খবর দিয়ে দিলো। ফিরাউন মহিলাটিকে ডেকে নিয়ে নিজেই জিজ্ঞেস করলোঃ “তুমি কি আমার ছাড়া আর কারো ইবাদত কর?” মহিলাটি জবাবে বললেনঃ “হ্যাঁ, আমার, তোমার এবং সমস্ত সৃষ্টজীবের প্রতিপালক হলেন, আল্লাহ। আমি তাঁরই ইবাদত করি।” একথা শুনে ফিরাউন তার লোকদেরকে হুকুম করলোঃ “মহিলাটিকে চিৎ করে শুইয়ে দাও। তার হাতে পায়ে পেরেক মেরে দাও আর সাপ ছেড়ে দাও যে তাকে কামড়াতে থাকবে।” মহিলাটি এই অবস্থাতেই থাকেন। আবার একদিন ফিরাউন তার কাছে এসে বললোঃ “এখনো কি তোমার চিন্তার পরিবর্তন হয়নি। পুনরায় তিনি জবাব দিলেনঃ “তোমার আমার এবং সব জিনিসের প্রতিপালক হলেন একমাত্র আল্লাহ।” ফিরাউন বললোঃ “আচ্ছা, এখন আমি তোমার চোখের সামনে তোমার ছেলেকে টুকরো টুকরো করে ফেলছি। সুতরাং এখনো তোমাকে বলছিঃ আমার কথা মেনে নাও এবং তোমার এই দ্বীন হতে ফিরে এসো।” মহিলাটি উত্তর দিলেনঃ “তোমার যা ইচ্ছা হয় তাই কর।” ঐ অত্যাচারী তখন তাঁর পুত্রকে ধরে আনতে বললো এবং তার সামনে মেরে ফেললো। ছেলেটির রূহ যখন বের হয় তখন সে বললোঃ “মা! তুমি সন্তুষ্ট হয়ে যাও। আল্লাহ তোমার জন্যে বড় বড় পুণ্য রেখেছেন এবং তুমি অমুক অমুক নিয়ামত লাভ করবে।” মহিলাটি তাঁর ছেলের রূহ এভাবে বের হতে স্বচক্ষে দেখলেন। কিন্তু তিনি ধৈর্যধারণ করলেন এবং আল্লাহ পাকের ফায়সালাকে সন্তুষ্ট চিত্তে মেনে নিলেন। ফিরাউন আবার তাঁকে বেধে ফেলে রাখলো এবং সাপ ছেড়ে দিলো। পুনরায় একদিন এসে নিজের কথার পুনরাবৃত্তি করলো। মহিলাটি এবারও অত্যন্ত ধৈর্যের সাথে একই জবাব দিলেন। ফিরাউন তাকে আবার ঐ হুমুকই দিলো এবং তাঁর আরেকটি ছেলে ধরে এনে তার চোখের সামনে মেরে ফেললো। ছেলেটির রূহ অনুরূপভাবেই তার মাতাকে সুসংবাদ দিলো এবং তাকে ধৈর্যধারণে উৎসাহিত করলো।

ফিরাউনের স্ত্রী এই মহিলাটির বড় ছেলের রূহের সুসংবাদ শুনেছিলেন। এই ছোট ছেলেটিরও সুসংবাদ শুনলেন। সুতরাং তিনিও ঈমান আনয়ন করলেন। ওদিকে ঐ মহিলাটির রূহ আল্লাহ তা’আলা কবয করে নিলেন এবং তাঁর মনযিল ও মরতবা যা আল্লাহ তা’আলার নিকট ছিল তা পর্দা সরিয়ে ফিরাউনের স্ত্রীকে দেখিয়ে দেয়া হলো। সুতরাং তার ঈমান বহু গুণে বৃদ্ধি পেয়ে গেল। শেষ পর্যন্ত ফিরাউনের কানেও তাঁর ঈমানের কথা পৌঁছে গেল। সে একদা তার সভাষদবর্গকে বললোঃ “তোমরা আমার স্ত্রীর কোন খবর রাখো কি? তোমরা তাকে কিরূপ মনে কর?” তার এই প্রশ্নের উত্তরে সবাই তাঁর খুব প্রশংসা করলো এবং তার গুণাবলীর বর্ণনা দিলো। ফিরাউন তখন তাদেরকে বললোঃ “না, না, তোমরা তার খবর রাখে না। সে আমি ছাড়া অন্যকে উপাস্যরূপে মেনে থাকে।” তারপর তাদের মধ্যে পরামর্শ হলো যে, তাঁকে হত্যা করে ফেলা হবে। অতঃপর তাঁর হাতে পায়ে পেরেক মেরে শুইয়ে দেয়া হলো। ঐ সময় তিনি আল্লাহ তা’আলার নিকট প্রার্থনা করেনঃ “হে আমার প্রতিপালক! আপনার সন্নিধানে জান্নাতে আমার জন্যে একটি গৃহ নির্মাণ করুন। আল্লাহ তা’আলা তাঁর দুআ কবুল করেন এবং পর্দা সরিয়ে দিয়ে তাকে তার জান্নাতী ঘর দেখিয়ে দেন। তা দেখে তিনি হেসে ওঠেন। ঠিক ঐ সময়েই তাঁর কাছে ফিরাউন এসে পড়ে এবং তাঁকে হাসির অবস্থায় দেখতে পায়। তখন সে তার লোকজনকে বলেঃ “হে জনমণ্ডলী! তোমরা কি বিস্ময়বোধ করছে না যে, এরূপ কঠিন শাস্তির অবস্থাতেও এ মহিলা হাসতে রয়েছে? নিশ্চয়ই এর মাথা খারাপ হয়েছে।” মোটকথা ঐ শাস্তিতেই তিনি শাহাদাত বরণ করেন। আল্লাহ তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট থাকুন।

এরপর আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা’আলা দ্বিতীয় দৃষ্টান্ত বর্ণনা করছেন। তা হলো হযরত মরিয়ম বিনতে ইমরানের (আঃ) দৃষ্টান্ত। তিনি ছিলেন অত্যন্ত সতী-সাধ্বী রমণী। মহান আল্লাহ বলেনঃ আমি আমার ফেরেশতা জিবরাঈল (আঃ)-এর মাধ্যমে তার মধ্যে রূহ ফুঁকে দিয়েছিলাম।

আল্লাহ তা’আলা হযরত জিবরাঈলকে মানুষের রূপ দিয়ে হযরত মরিয়ম (আঃ)-এর নিকট প্রেরণ করেন এবং তাঁকে নির্দেশ দেন যে, তিনি যেন তার মুখ দিয়ে মরিয়ম (আঃ)-এর জামার ফাঁকে ফুঁকে দেন। তাতেই তিনি গর্ভবতী হয়ে যান এবং হযরত ঈসা (আঃ) জন্মগ্রহণ করেন। তাই আল্লাহ পাক বলেনঃ আমি তাঁর মধ্যে রূহ ফুঁকে দিয়েছিলাম।

এরপর মহান আল্লাহ হযরত মরিয়ম (আঃ)-এর আরো প্রশংসা করে বলেনঃ সে তাঁর প্রতিপালকের বাণী ও তাঁর কিতাব সত্যি বলে গ্রহণ করেছিল, সে ছিল অনুগতদের একজন। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) মাটিতে চারটি রেখা টানেন এবং সাহাবীদেরকে জিজ্ঞেস করেনঃ “এগুলো কি তা তোমরা জান কি?” তাঁরা উত্তরে বললেনঃ “আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল (সঃ)-ই ভাল জানেন।” তিনি তখন বললেনঃ “জেনে রেখো যে, জান্নাতী রমণীদের মধ্যে চারজন হলো সর্বোত্তম। তাঁরা হলো খাদীজা বিনতু খুওয়াইলিদ (রাঃ), ফাতেমা বিনতু মুহাম্মাদ (সঃ) (রাঃ), মরিয়ম বিনতু ইমরান (আঃ) এবং ফিরাউনের স্ত্রী আসিয়া বিনতু মাযাহিম (রাঃ)।” (এ হাদসীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ) স্বীয় মুসনাদে বর্ণনা করেছেন)

হযরত আবূ মূসা আশআরী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, নবী (সঃ) বলেছেনঃ “পুরুষ লোকদের মধ্যে তো পূর্ণতাপ্রাপ্ত লোক বহু রয়েছে। কিন্তু রমণীদের মধ্যে পূর্ণতাপ্রাপ্তা রমণী রয়েছে শুধুমাত্র ফিরাউনের স্ত্রী আসিয়া (রাঃ), মরিয়ম বিন্তু ইমরান (আঃ) ও খাদীজা বিন্তু খুওয়াইলিদ (রাঃ)। আর সমস্ত রমণীর মতো আয়েশা (রাঃ)-এর ফযীলত এমনই যেমন সমস্ত খাদ্যের মধ্যে সারীদ মাদক খাদ্যের ফযীলত।” (এ হাদীসটি সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে)

আমরা আমাদের কিতাব আল বিদাইয়াহ্ ওয়ান নিহাইয়াহ এর মধ্যে হযরত ঈসা (আঃ)-এর বর্ণনায় এই হাদীসের সনদ ও শব্দসমূহ বর্ণনা করেছি। সুতরাং সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর। আর আল্লাহ তা’আলার ফযল ও করমে এই সূরারই আয়াতের শব্দ (আরবি)-এর তাফসীরের মধ্যে ঐ হাদীসটির বর্ণনা করে দিয়েছি যাতে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ্ (সঃ)-এর স্ত্রীদের মধ্যে হযরত আসিয়া বিন্তু মাযাহিম (রাঃ)-ও একজন।

Leave a Reply