Motaher21.net أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ ( বই # ১১৯০/এবং কাফের-র। বলে:-৩৪) [**সুরা: আল-মুরসালাত وَیْلٌ یَّوْمَئِذٍ لِّلْمُكَذِّبِیْنَ *সেদিন ধ্বংস রয়েছে মিথ্যা আরোপকারীদের জন্য:- *কাফেরদের জন্যে মহাবিপর্যয় : সেদিন অমান্যকারীদের জন্যে:-] www.motaher21.net সুরা: ৭৭: আল্- মুরসালাত পারা:২৯ ১-৫০ নং আয়াতের ‌বেখ্যা :- তাফসীরে ইবনে কাছীর:-

Motaher21.net
أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
( বই # ১১৯০/এবং কাফের-র। বলে:-৩৪)
[**সুরা: আল-মুরসালাত
وَیْلٌ یَّوْمَئِذٍ لِّلْمُكَذِّبِیْنَ
*সেদিন ধ্বংস রয়েছে মিথ্যা আরোপকারীদের জন্য:-
*কাফেরদের জন্যে মহাবিপর্যয় : সেদিন অমান্যকারীদের জন্যে:-]
www.motaher21.net
সুরা: ৭৭: আল্- মুরসালাত
পারা:২৯
১-৫০ নং আয়াতের ‌বেখ্যা :-

তাফসীরে ইবনে কাছীর:-

সুরা: ৭৭: আল্- মুরসালাত:-১
وَ الۡمُرۡسَلٰتِ عُرۡفًا ۙ﴿۱﴾
শপথ কল্যাণ স্বরূপ প্রেরিত অবিরাম বায়ুর।
সুরা: ৭৭: আল্- মুরসালাত:-২
فَالۡعٰصِفٰتِ عَصۡفًا ۙ﴿۲﴾
অতঃপর প্রলয়ংকরী ঝটিকার,
সুরা: ৭৭: আল্- মুরসালাত:-৩
وَّ النّٰشِرٰتِ نَشۡرًا ۙ﴿۳﴾
শপথ প্ৰচণ্ড সঞ্চালনকারীর,
সুরা: ৭৭: আল্- মুরসালাত:-৪
فَالۡفٰرِقٰتِ فَرۡقًا ۙ﴿۴﴾
শপথ মেঘমালা-বিক্ষিপ্তকারী বায়ুর,
সুরা: ৭৭: আল্- মুরসালাত:-৫
فَالۡمُلۡقِیٰتِ ذِکۡرًا ۙ﴿۵﴾
শপথ তাদের যারা (মানুষের অন্তরে) উপদেশ পৌঁছিয়ে দেয়।
সুরা: ৭৭: আল্- মুরসালাত:-৬
عُذۡرًا اَوۡ نُذۡرًا ۙ﴿۶﴾
ওজর হিসেবে অথবা ভীতি হিসেবে।
সুরা: ৭৭: আল্- মুরসালাত:-৭
اِنَّمَا تُوۡعَدُوۡنَ لَوَاقِعٌ ؕ﴿۷﴾
যে জিনিসের প্রতিশ্রুতি তোমাদের দেয়া হচ্ছে তা অবশ্যই সংঘটিত হবে।
সুরা: ৭৭: আল্- মুরসালাত:-৮
فَاِذَا النُّجُوۡمُ طُمِسَتۡ ۙ﴿۸﴾
যখন নক্ষত্ররাজির আলো নির্বাপিত হবে।
সুরা: ৭৭: আল্- মুরসালাত:-৯
وَ اِذَا السَّمَآءُ فُرِجَتۡ ۙ﴿۹﴾
যখন আকাশ বিদীর্ণ হবে।
সুরা: ৭৭: আল্- মুরসালাত:-১০
وَ اِذَا الۡجِبَالُ نُسِفَتۡ ﴿ۙ۱۰﴾
যখন পর্বতমালা চূর্ণ-বিচূর্ণ করে উড়িয়ে দেওয়া হবে।
সুরা: ৭৭: আল্- মুরসালাত:-১১
وَ اِذَا الرُّسُلُ اُقِّتَتۡ ﴿ؕ۱۱﴾
আর যখন রাসূলগণকে নির্ধারিত সময়ে উপস্থিত করা হবে ,
সুরা: ৭৭: আল্- মুরসালাত:-১২
لِاَیِّ یَوۡمٍ اُجِّلَتۡ ﴿ؕ۱۲﴾
এই সমুদয় বিলম্বিত করা হয়েছে কোন্ দিবসের জন্য?
সুরা: ৭৭: আল্- মুরসালাত:-১৩
لِیَوۡمِ الۡفَصۡلِ ﴿ۚ۱۳﴾
বিচার দিনের জন্য।
সুরা: ৭৭: আল্- মুরসালাত:-১৪
وَ مَاۤ اَدۡرٰىکَ مَا یَوۡمُ الۡفَصۡلِ ﴿ؕ۱۴﴾
তুমি কি জান সে ফায়সালার দিনটি কি?
সুরা: ৭৭: আল্- মুরসালাত:-১৫
وَیۡلٌ یَّوۡمَئِذٍ لِّلۡمُکَذِّبِیۡنَ ﴿۱۵﴾
সেদিন দুর্ভোগ মিথ্যাজ্ঞানকারীদের জন্য।
সুরা: ৭৭: আল্- মুরসালাত:-১৬
اَلَمۡ نُہۡلِکِ الۡاَوَّلِیۡنَ ﴿ؕ۱۶﴾
আমি কি পূর্ববর্তীদেরকে ধ্বংস করিনি?
সুরা: ৭৭: আল্- মুরসালাত:-১৭
ثُمَّ نُتۡبِعُہُمُ الۡاٰخِرِیۡنَ ﴿۱۷﴾
আবার পরবর্তী লোকদের তাদের অনুগামী করে দেব।
সুরা: ৭৭: আল্- মুরসালাত:-১৮
کَذٰلِکَ نَفۡعَلُ بِالۡمُجۡرِمِیۡنَ ﴿۱۸﴾
অপরাধীদের প্রতি আমি এরূপই করে থাকি।
সুরা: ৭৭: আল্- মুরসালাত:-১৯
وَیۡلٌ یَّوۡمَئِذٍ لِّلۡمُکَذِّبِیۡنَ ﴿۱۹﴾
সেদিন দুর্ভোগ মিথ্যাজ্ঞানকারীদের জন্য।
সুরা: ৭৭: আল্- মুরসালাত:-২০
اَلَمۡ نَخۡلُقۡکُّمۡ مِّنۡ مَّآءٍ مَّہِیۡنٍ ﴿ۙ۲۰﴾
আমি কি তোমাদেরকে এক নগণ্য পানি থেকে সৃষ্টি করিনি ?
সুরা: ৭৭: আল্- মুরসালাত:-২১
فَجَعَلۡنٰہُ فِیۡ قَرَارٍ مَّکِیۡنٍ ﴿ۙ۲۱﴾
একটি নির্দিষ্ট জায়গায় তা স্থাপন করেছিলাম না?
সুরা: ৭৭: আল্- মুরসালাত:-২২
اِلٰی قَدَرٍ مَّعۡلُوۡمٍ ﴿ۙ۲۲﴾
এক নির্দিষ্ট কাল পর্যন্ত।
সুরা: ৭৭: আল্- মুরসালাত:-২৩
فَقَدَرۡنَا ٭ۖ فَنِعۡمَ الۡقٰدِرُوۡنَ ﴿۲۳﴾
আমি একে গঠন করেছি পরিমিতভাবে, আমি কত সুনিপুণ স্রষ্টা!
সুরা: ৭৭: আল্- মুরসালাত:-২৪
وَیۡلٌ یَّوۡمَئِذٍ لِّلۡمُکَذِّبِیۡنَ ﴿۲۴﴾
সেদিন ধ্বংস রয়েছে মিথ্যা আরোপকারীদের জন্য।
সুরা: ৭৭: আল্- মুরসালাত:-২৫
اَلَمۡ نَجۡعَلِ الۡاَرۡضَ کِفَاتًا ﴿ۙ۲۵﴾
আমি কি যমীনকে ধারণ ক্ষমতার অধিকারী বানাইনি,
সুরা: ৭৭: আল্- মুরসালাত:-২৬
اَحۡیَآءً وَّ اَمۡوَاتًا ﴿ۙ۲۶﴾
জীবিত ও মৃত উভয়ের জন্য?
সুরা: ৭৭: আল্- মুরসালাত:-২৭
وَّ جَعَلۡنَا فِیۡہَا رَوَاسِیَ شٰمِخٰتٍ وَّ اَسۡقَیۡنٰکُمۡ مَّآءً فُرَاتًا ﴿ؕ۲۷﴾
আমি ওতে স্থাপন করেছি সুদৃঢ় উচ্চ পর্বতমালা এবং তোমাদেরকে দিয়েছি সুপেয় পানি।
সুরা: ৭৭: আল্- মুরসালাত:-২৮
وَیۡلٌ یَّوۡمَئِذٍ لِّلۡمُکَذِّبِیۡنَ ﴿۲۸﴾
সেদিন দুর্ভোগ মিথ্যাজ্ঞানকারীদের জন্য।
সুরা: ৭৭: আল্- মুরসালাত:-২৯
اِنۡطَلِقُوۡۤا اِلٰی مَا کُنۡتُمۡ بِہٖ تُکَذِّبُوۡنَ ﴿ۚ۲۹﴾
চলো এখন সে জিনিসের কাছে যাকে তোমরা মিথ্যা বলে মনে করতে।
সুরা: ৭৭: আল্- মুরসালাত:-৩০
اِنۡطَلِقُوۡۤا اِلٰی ظِلٍّ ذِیۡ ثَلٰثِ شُعَبٍ ﴿ۙ۳۰﴾
চল তিন শাখা বিশিষ্ট ছায়ার দিকে।
সুরা: ৭৭: আল্- মুরসালাত:-৩১
لَّا ظَلِیۡلٍ وَّ لَا یُغۡنِیۡ مِنَ اللَّہَبِ ﴿ؕ۳۱﴾
যে ছায়া শীতল নয় এবং যা রক্ষা করে না অগ্নিশিখা হতে।
সুরা: ৭৭: আল্- মুরসালাত:-৩২
اِنَّہَا تَرۡمِیۡ بِشَرَرٍ کَالۡقَصۡرِ ﴿ۚ۳۲﴾
এটা উৎক্ষেপ করবে বৃহৎ স্ফুলিঙ্গ অট্টালিকা তুল্য।
সুরা: ৭৭: আল্- মুরসালাত:-৩৩
کَاَنَّہٗ جِمٰلَتٌ صُفۡرٌ ﴿ؕ۳۳﴾
ওটা হলুদ বরণ উটদলের মত।
সুরা: ৭৭: আল্- মুরসালাত:-৩৪
وَیۡلٌ یَّوۡمَئِذٍ لِّلۡمُکَذِّبِیۡنَ ﴿۳۴﴾
সেদিন দুর্ভোগ মিথ্যাজ্ঞানকারীদের জন্য।
সুরা: ৭৭: আল্- মুরসালাত:-৩৫
ہٰذَا یَوۡمُ لَا یَنۡطِقُوۡنَ ﴿ۙ۳۵﴾
এটা এমন একদিন যেদিন কারো মুখে কথা ফুটবে না।
সুরা: ৭৭: আল্- মুরসালাত:-৩৬
وَ لَا یُؤۡذَنُ لَہُمۡ فَیَعۡتَذِرُوۡنَ ﴿۳۶﴾
এবং না তাদেরকে ওজর পেশ করার সুযোগ দেয়া হবে।
সুরা: ৭৭: আল্- মুরসালাত:-৩৭
وَیۡلٌ یَّوۡمَئِذٍ لِّلۡمُکَذِّبِیۡنَ ﴿۳۷﴾
সেদিন দুর্ভোগ মিথ্যাজ্ঞানকারীদের জন্য।
সুরা: ৭৭: আল্- মুরসালাত:-৩৮
ہٰذَا یَوۡمُ الۡفَصۡلِ ۚ جَمَعۡنٰکُمۡ وَ الۡاَوَّلِیۡنَ ﴿۳۸﴾
এটা চূড়ান্ত ফায়সালার দিন। আমি তোমাদের ও তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের একত্রিত করেছি।
সুরা: ৭৭: আল্- মুরসালাত:-৩৯
فَاِنۡ کَانَ لَکُمۡ کَیۡدٌ فَکِیۡدُوۡنِ ﴿۳۹﴾
তোমাদের যদি কোন অপকৌশল থেকে থাকে তাহলে আমার বিরুদ্ধে প্রয়োগ করে দেখো।
সুরা: ৭৭: আল্- মুরসালাত:-৪০
وَیۡلٌ یَّوۡمَئِذٍ لِّلۡمُکَذِّبِیۡنَ ﴿٪۴۰﴾
সেদিন দুর্ভোগ মিথ্যাজ্ঞানকারীদের জন্য।
সুরা: ৭৭: আল্- মুরসালাত:-৪১
اِنَّ الۡمُتَّقِیۡنَ فِیۡ ظِلٰلٍ وَّ عُیُوۡنٍ ﴿ۙ۴۱﴾
মুত্তাকীরা আজ সুশীলত ছায়া ও ঝর্ণাধারার মধ্যে অবস্থান করছে।
সুরা: ৭৭: আল্- মুরসালাত:-৪২
وَّ فَوَاکِہَ مِمَّا یَشۡتَہُوۡنَ ﴿ؕ۴۲﴾
তাদের বাঞ্ছিত ফলমূলের প্রাচুর্যের মধ্যে।
সুরা: ৭৭: আল্- মুরসালাত:-৪৩
کُلُوۡا وَ اشۡرَبُوۡا ہَنِیۡٓــًٔۢا بِمَا کُنۡتُمۡ تَعۡمَلُوۡنَ ﴿۴۳﴾
‘তোমাদের কর্মের পুরস্কারস্বরূপ তোমরা তৃপ্তির সাথে পানাহার কর।’
সুরা: ৭৭: আল্- মুরসালাত:-৪৪
اِنَّا کَذٰلِکَ نَجۡزِی الۡمُحۡسِنِیۡنَ ﴿۴۴﴾
এভাবে আমরা মুহসিনদেরকে পুরস্কৃত করে থাকি।
সুরা: ৭৭: আল্- মুরসালাত:-৪৫
وَیۡلٌ یَّوۡمَئِذٍ لِّلۡمُکَذِّبِیۡنَ ﴿۴۵﴾
সেদিন দুর্ভোগ মিথ্যারোপকারীদের জন্য।
সুরা: ৭৭: আল্- মুরসালাত:-৪৬
کُلُوۡا وَ تَمَتَّعُوۡا قَلِیۡلًا اِنَّکُمۡ مُّجۡرِمُوۡنَ ﴿۴۶﴾
তোমরা অল্প কিছুদিন পানাহার ও ভোগ করে নাও; তোমরা তো অপরাধী।
সুরা: ৭৭: আল্- মুরসালাত:-৪৭
وَیۡلٌ یَّوۡمَئِذٍ لِّلۡمُکَذِّبِیۡنَ ﴿۴۷﴾
সেদিন দুর্ভোগ মিথ্যাজ্ঞানকারীদের জন্য।
সুরা: ৭৭: আল্- মুরসালাত:-৪৮
وَ اِذَا قِیۡلَ لَہُمُ ارۡکَعُوۡا لَا یَرۡکَعُوۡنَ ﴿۴۸﴾
যখন তাদেরকে বলা হয়, রুকু কর তখন তারা রুকু করে না ।
সুরা: ৭৭: আল্- মুরসালাত:-৪৯
وَیۡلٌ یَّوۡمَئِذٍ لِّلۡمُکَذِّبِیۡنَ ﴿۴۹﴾
সেদিন দুর্ভোগ মিথ্যারোপকারীদের জন্য।
সুরা: ৭৭: আল্- মুরসালাত:-৫০
فَبِاَیِّ حَدِیۡثٍۭ بَعۡدَہٗ یُؤۡمِنُوۡنَ ﴿٪۵۰﴾
এখন এ কুরআন ছাড়া আর কোন বাণী এমন হতে পারে যার ওপর এরা ঈমান আনবে?

১-৫০ নং আয়াতের ব্যাখ্যা:-
তাফসীরে ইবনে কাছীর:-

সহীহ বুখারীতে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেনঃ “একদা আমরা রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর সাথে মিনার গুহায় ছিলাম এমতাবস্থায় (আরবি) সূরাটি অবতীর্ণ হয়। রাসূলুল্লাহ (সঃ) সূরাটি তিলাওয়াত করছিলেন এবং আমি তা শুনে মুখস্থ করছিলাম। হঠাৎ একটি সর্প আমাদের উপর লাফিয়ে পড়ে। তখন নবী (সঃ) বলেনঃ “সাপটিকে মেরে ফেলো।” আমরা তাড়াতাড়ি করে সাপটিকে মারতে গেলাম, কিন্তু দেখি যে, সে পালিয়ে গেছে। তখন নবী (সঃ) বললেনঃ “সে তোমাদের অনিষ্ট হতে রক্ষা পেয়েছে এবং তোমরাও তার অনিষ্ট হতে রক্ষা পেয়েছো।”

মুসনাদে আহমাদে হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, তাঁর মাতা (হযরত উম্মে ফযল রাঃ) নবী (সঃ)-কে (আরবি) সূরাটি মাগরিবের নামাযে পাঠ করতে শুনতে পান। অন্য

হাদীসে আছে যে, হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ)-কে এ সূরাটি পড়তে শুনে হযরত উম্মে ফযল (রাঃ) বলেনঃ “হে আমার প্রিয় বৎস! তুমি এই সূরাটি পাঠ করে আমাকে এ কথাটি স্মরণ করিয়ে দিলে যে, আমি শেষ বার রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে এ সূরাটি মাগরিবের নামাযে পাঠ করতে শুনেছি।” (এ হাদীসটি মুসনাদে আহমাদ, সহীহ বুখারী এবং সহীহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে)

১-১৫ নং আয়াতের তাফসীর

কতকগুলো বুযুর্গ সাহাবী, তাবেয়ী প্রমুখ হতে তো বর্ণিত আছে যে, উল্লিখিত শপথগুলো এসব গুণ বিশিষ্ট ফেরেশতাদের নামে করা হয়েছে। কেউ কেউ বলেছেন যে, প্রথম চারটি শপথ হলো বায়ুর এবং পঞ্চমটি হলো ফেরেশতাদের। (আরবি) দ্বারা ফেরেশতারা উদ্দেশ্য কি বায়ু উদ্দেশ্য এ ব্যাপারে কেউ কেউ কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা মুলতবি রেখেছেন। আর (আরবি)-এর ব্যাপারে বলেন যে, এর দ্বারা বায়ু উদ্দেশ্য। কেউ (আরবি)-এর ব্যাপারে এটাই বলেছেন, কিন্তু (আরবি)-এর ব্যাপারে কোন ফায়সালা করেননি। এটাও বলা হয়েছে যে, (আরবি) দ্বারা বৃষ্টি উদ্দেশ্য। বাহ্যতঃ তো এটাই বুঝা যাচ্ছে যে, (আরবি) দ্বারা বায়ু উদ্দেশ্য। যেমন অন্য জায়গায় মহান আল্লাহ বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “আমি বায়ু প্রবাহিত করে থাকি যা মেঘকে (বৃষ্টিতে) ভারী করে থাকে।” (১৫:২২) আর এক জায়গায় বলেনঃ (আরবি)

অর্থাৎ “আল্লাহ তিনিই যিনি তাঁর রহমত (বর্ষণের)-এর পূর্বে সুসংবাদদাতা হিসেবে ঠাণ্ডা বায়ু প্রবাহিত করে থাকেন।” (আরবি) দ্বারাও বায়ুকে বুঝানো হয়েছে। এটা হচ্ছে নরম, হালকা এবং মৃদু মন্দ বায়ু। এটা সামান্য জোরে প্রবহমান এবং অল্প শব্দকারী বায়ু। (আরবি) দ্বারাও উদ্দেশ্য হলো বায়ু, যা মেঘমালাকে আকাশের চতুর্দিকে ছড়িয়ে দেয় এবং আল্লাহ পাক যেদিকে হুকুম করেন সেই দিকে নিয়ে যায়। (আরবি) এবং (আরবি) দ্বারা অবশ্যই ফেরেশতাদেরকে বুঝানো হয়েছে, যারা আল্লাহ তা’আলার নির্দেশক্রমে রাসূলদের কাছে ওহী নিয়ে আসেন। যার দ্বারা সত্য-মিথ্যা, হালাল-হারাম এবং গুমরাহী ও হিদায়াতের মধ্যে পার্থক্য সৃষ্টি হয়, যাতে লোকদের ওযরের কোন অবকাশ না থাকে এবং সত্য প্রত্যাখ্যানকারীরা সতর্ক হয়ে যায়।

এই শপথগুলোর পর মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ যেই দিনের তোমাদেরকে ওয়াদা দেয়া হয়েছে, যেই দিন তোমরা প্রথম হতে শেষ পর্যন্ত সবাই নিজ নিজ কবর হতে পুনর্জীবিত হয়ে উথিত হবে ও নিজেদের কৃতকর্মের ফল পাবে, পূণ্যকর্মের পুরস্কার ও পাপকর্মের শাস্তি প্রাপ্ত হবে, শিংগায় ফুৎকার দেয়া হবে এবং এক সমতল ময়দানে তোমরা সবাই একত্রিত হবে, এই ওয়াদা নিশ্চিত রূপে সত্য, এটা অবশ্যই হবে। ঐদিন তারকারাজি কিরণহীন হয়ে যাবে এবং ওগুলোর ঔজ্জ্বল্য হারিয়ে যাবে। যেমন মহান আল্লাহ বলেনঃ (আরবি)

অর্থাৎ “যখন নক্ষত্ররাজি খসে পড়বে।” (৮১:২) আর এক জায়গায় বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “যখন নক্ষত্ররাজি বিক্ষিপ্তভাবে ঝরে পড়বে।” (৮২:২)।

মহান আল্লাহ বলেনঃ যখন আকাশ বিদীর্ণ হবে ও টুকরো টুকরো হয়ে যাবে এবং পবর্তমালা চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে উড়ে যাবে। এমনকি ওর কোন নাম নিশানাও থাকবে না। যেমন অন্য জায়গায় রয়েছেঃ (আরবি) অর্থাৎ “তারা তোমাকে পর্বতসমূহ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করছে। তুমি বলে দাও- আমার প্রতিপালক ওগুলোকে সমূলে উৎপাটিত করে বিক্ষিপ্ত করে দিবেন।” (২০:১০৫)

ইরশাদ হচ্ছেঃ রাসূলগণকে যখন নিরূপিত সময়ে উপস্থিত করা হবে। যেমন অন্য জায়গায় রয়েছেঃ (আরবি) অর্থাৎ “যেই দিন আল্লাহ রাসূলদেরকে একত্রিত করবেন।” (৫:১০৯) যেমন আল্লাহ পাক বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “যমীন স্বীয় প্রতিপালকের নূরে চমকিত হয়ে উঠবে, আমলনামা আনয়ন করা হবে এবং নবীগণ ও সাক্ষীগণকে উপস্থিত করা হবে। ও ইনসাফের সাথে ফায়সালা করা হবে এবং তারা অত্যাচারিত হবে না।” (৩৯:৬৯)

এরপর মহান আল্লাহ বলেনঃ এই সমুদয় স্থগিত রাখা হয়েছে কোন্ দিবসের জন্যে? বিচার দিবসের জন্যে। বিচার দিবস সম্বন্ধে তুমি কী জান? সেই দিন দুর্ভোগ মিথ্যা আরোপকারীদের জন্যে। ঐ রাসূলদেরকে থামিয়ে রাখা হয়েছিল এই জন্যে যে, কিয়ামতের দিন ফায়সালা করা হবে। যেমন আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ (আরবি)

অর্থাৎ “তুমি কখনো মনে করো না যে, আল্লাহ তাঁর রাসূলদের প্রতি প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি ভঙ্গকারী। আল্লাহ পরাক্রমশালী, দণ্ড বিধায়ক। যেদিন এই পৃথিবী পরিবর্তিত হয়ে অন্য পৃথিবী হবে এবং আকাশমণ্ডলীও , আর মানুষ উপস্থিত হবে আল্লাহর সম্মুখে, যিনি এক, পরাক্রমশালী।” (১৪:৪৭-৪৮) ঐদিনকেই এখানে ফায়সালার দিন বলা হয়েছে। স্বীয় নবী (সঃ)-কে বলেনঃ হে নবী (সঃ)! আমার জানিয়ে দেয়া ছাড়া তুমিও ঐ দিনের হাকীকত সম্বন্ধে অবগত হতে পার না। ঐদিনকে অস্বীকারকারীর জন্যে বড় দুর্ভোগ! একটি হাদীসে এটাও গত হয়েছে যে, অয়েল’ জাহান্নামের একটি উপত্যকার নাম। কিন্তু হাদীসটি বিশুদ্ধ নয়।

১৬-২৮ নং আয়াতের তাফসীর

আল্লাহ তা’আলা কাফিরদেরকে লক্ষ্য করে বলেনঃ তোমাদের পূর্বেও যারা আমার রাসূলদের রিসালাতকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছিল তাদেরকে আমি তচনচ করেছি। তাদের পরে অন্যেরা এসেছিল এবং তারাও অনুরূপ কাজ করেছিল, ফলে তাদেরকেও আমি ধ্বংস করে দিয়েছি। আমি অপরাধীদের প্রতি এরূপই করে থাকি। কিয়ামতের দিন অবিশ্বাসকারীদের কি দুর্গতিই না হবে!

অতঃপর স্বীয় মাখলূককে মহান আল্লাহ নিজের অনুগ্রহের কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন এবং কিয়ামত অস্বীকারকারীদের সামনে দলীল পেশ করছেন যে, তিনি তাদেরকে তুচ্ছ পানি (শুক্র) হতে সৃষ্টি করেছেন যা বিশ্ব সৃষ্টিকর্তার সামনে ছিল অতি নগণ্য জিনিস। যেমন সূরা ইয়াসীনের তাফসীরে হযরত বিশর ইবনে জাহহাশ (রাঃ) বর্ণিত হাদীসে রয়েছেঃ “হে আদম সন্তান! তুমি আমাকে অপারগ করতে পারবে? অথচ আমি তোমাকে এরূপ (তুচ্ছ ও নগণ্য) জিনিস দিয়ে সৃষ্টি করেছি!”

মহান আল্লাহ বলেনঃ অতঃপর আমি ওটাকে স্থাপন করেছি নিরাপদ আধারে। অর্থাৎ ঐ পানিকে আমি রেহেমে জমা করেছি যা ঐ পানির জমা হওয়ার জায়গা। ওটাকে আমি এক নির্দিষ্ট কাল পর্যন্ত বৃদ্ধি করেছি ও নিরাপদে রেখেছি। অর্থাৎ ছয় মাস বা নয় মাস। আমি এটাকে গঠন করেছি পরিমিতভাবে, কত নিপুণ স্রষ্টা আমি! এরপরেও যদি ঐ দিনকে বিশ্বাস না কর তবে বিশ্বাস রেখো যে, কিয়ামতের দিন তোমাদেরকে বড়ই আফসোস ও দুঃখ করতে হবে।

এরপর আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা’আলা বলেনঃ আমি যমীনের উপর কি এই খিদমত অৰ্পণ করিনি যে, সে তোমাদের জীবিতাবস্থায় তোমাদেরকে স্বীয় পৃষ্ঠে বহন করছে এবং তোমাদের মৃত্যুর পরেও তোমাদেরকে নিজের পেটের মধ্যে লুকিয়ে রাখছে? তারপর যমীন যেন হেলা-দোলা করতে না পারে তজ্জন্যে আমি ওতে সুউচ্চ পর্বতমালা স্থাপন করেছি এবং তোমাদেরকে দিয়েছি মেঘ হতে বর্ষিত পানি এবং ঝরণা হতে প্রবাহিত সুপেয় পানি। এসব নিয়ামত প্রাপ্তির পরেও যদি তোমরা আমার কথাকে অবিশ্বাস কর তবে জেনে রেখো যে, এমন এক সময় আসছে যখন তোমরা দুঃখ ও আফসোস করবে, কিন্তু তখন তা কোনই কাজে আসবে না!

২৯-৪০ নং আয়াতের তাফসীর

যে কাফিররা কিয়ামতের দিনকে, পুরস্কার ও শাস্তিকে এবং জান্নাত ও জাহান্নামকে অবিশ্বাস করতো, তাদেরকে কিয়ামতের দিন বলা হবেঃ তোমরা দুনিয়ায় যে শাস্তি ও জাহান্নামকে মানতে না তা আজ বিদ্যমান রয়েছে। তাতে প্রবেশ কর। ওর অগ্নিশিখা প্রজ্বলিত রয়েছে এবং উঁচু হয়ে হয়ে তাতে তিনটি টুকরো হয়ে গেছে। সাথে সাথে ধুম্রও উপরের দিকে উঠে যাচ্ছে, ফলে মনে হচ্ছে যেন নীচে ছায়া পড়ে গেছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ওটা ছায়াও নয় এবং এটা আগুনের তেজস্বিতা বা প্রখরতাকে কিছু কমিয়েও দিচ্ছে না। এই জাহান্নাম এতো তেজ, গরম এবং অধিক অগ্নি বিশিষ্ট যে, এর যে অগ্নি স্ফুলিঙ্গগুলো উড়ে যায় সেগুলো এক একটা দুর্গের মত এবং বড় বড় গাছের লম্বা চওড়া কাণ্ডের মত। দর্শকদের ওগুলোকে মনে হয় যেন কালো রঙের উট বা নৌকার রঞ্জু অথবা তামার টুকরো।

হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেনঃ “আমরা শীতকালে তিন হাত বা তার চেয়ে বেশী লম্বা কাষ্ঠ নিয়ে উঁচু করে ধরতাম এবং ওটাকে আমরা ‘কাসর’ বলতাম।” (এটা ইমাম বুখারী (রঃ) বর্ণনা করেছেন) নৌকার রশিগুলো একত্রিত করলে ওগুলো উঁচু দেহ বিশিষ্ট মানুষের সমান হয়ে যায়। এখানে এটাই উদ্দেশ্য। ঐদিন দুর্ভোগ মিথ্যারোপকারীদের জন্যে।

আজকের দিনে অর্থাৎ কিয়ামত দিবসে তারা কিছু বলতেও পারবে না এবং তাদেরকে কোন ওযর পেশ করার অনুমিতও দেয়া হবে না। কেননা, তাদের যুক্তি-প্রমাণ প্রতিষ্ঠিত হয়েই গেছে এবং যালিমদের উপর আল্লাহর কথা সাব্যস্ত হয়ে গেছে। সুতরাং আর তাদের কোন কথা বলার অনুমতি নেই।

কুরআন কারীমে কাফিরদের কথা বলা এবং ওযর পেশ করারও বর্ণনা রয়েছে। সুতরাং তখন ভাবার্থ হবে এই যে, হুজ্জত বা যুক্তি-প্রমাণ কায়েম হয়ে যাওয়ার পূর্বে তারা ওযর ইত্যাদি পেশ করবে। অতঃপর যখন সবকিছু ভেঙ্গে দেয়া হবে এবং যুক্তি-প্রমাণ পেশ হয়ে যাবে তখন কথা বলার এবং ওযর-আপত্তি পেশ করার আর কোন সুযোগ থাকবে না। মোটকথা, হাশরের ময়দানের বিভিন্ন পরিস্থিতি এবং জনগণের বিভিন্ন অবস্থা হবে। কোন সময় এটা হবে এবং কোন সময় ওটা হবে। এজন্যেই এখানে প্রত্যেক কথা বা বাক্যের শেষে অবিশ্বাসকারীদের দুর্ভোগের খবর দেয়া হয়েছে।

এরপর ইরশাদ হচ্ছেঃ এটাই ফায়সালার দিন। এখানে আমি তোমাদেরকে এবং পূর্বদেরকে অর্থাৎ পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকলকেই একত্রিত করেছি। এখন আমার বিরুদ্ধে তোমাদের কোন অপকৌশল থাকলে তা প্রয়োগ কর। এটা সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা’আলার তাঁর বান্দাদের প্রতি কঠোর ধমক সূচক বাণী। তিনি কিয়ামতের দিন স্বয়ং কাফিরদেরকে বলবেনঃ তোমরা এখন নীরব রয়েছে কেন? আজ তোমাদের চালাকী-চতুরতার, সাহসিকতা এবং চক্রান্ত কোথায় গেল? দেখো, আজ আমি আমার ওয়াদা অনুযায়ী তোমাদের সকলকেই এক ময়দানে একত্রিত করেছি। যদি কোন কৌশল করে আমার হাত হতে ছুটে যাবার কোন পথ বের করতে পার তবে তাতে কোন ত্রুটি করো না। যেমন তিনি অন্য জায়গায় বলেনঃ (আরবি)

অর্থাৎ “হে দানব ও মানব! আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সীমা তোমরা যদি অতিক্রম করতে পার তবে অতিক্রম কর, কিন্তু তোমরা তা পারবে না শক্তি ব্যতিরেকে।” (৫৫:৩৩) অন্য এক জায়গায় আল্লাহ পাক বলেনঃ (আরবি) অর্থাৎ “তোমরা তাঁর (আল্লাহর) কিছুই ক্ষতি করতে পারবে না।”

হযরত আবূ আবদিল্লাহ জাদালী (রঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ একদা আমি বায়তুল মুকাদ্দাসে গিয়ে দেখি যে, সেখানে হযরত উবাদাহ ইবনে সামিত (রাঃ), হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) এবং হযরত কা’ব আহবার (রাঃ) বসে রয়েছেন এবং পরস্পর আলাপ আলোচনা করছেন। আমিও তাদের পাশে বসে পড়লাম। হযরত উবাদাহ ইবনে সামিত (রাঃ) বললেন যে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা’আলা পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকলকেই এক সমতল ও পরিষ্কার ময়দানে একত্রিত করবেন। একজন আহ্বানকারী এসে সকলকে সতর্ক করে দিবেন। অতঃপর আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা’আলা বলবেনঃ ‘এটাই ফায়সালার দিন, আমি তোমাদের পূর্ববর্তী ও পরবর্তীদের একত্রিত করেছি। তোমাদের আমার বিরুদ্ধে কোন অপকৌশল থাকলে তা প্রয়োগ কর। জেনে রেখো যে, আজ কোন অহংকারী, উদ্ধত, অস্বীকারকারী এবং মিথ্যা প্রতিপন্নকারী আমার পাকড়াও হতে বাঁচতে পারে না। আর পারে না কোন নাফরমান শয়তান আমার আযাব হতে বাচতে।’ তখন হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) বলেনঃ আমিও আপনাদেরকে একটি হাদীস শুনাচ্ছি। সেই দিন জাহান্নাম স্বীয় গ্রীবা উঁচু করে লোকদের মাঝে তা পৌঁছিয়ে দিয়ে উচ্চস্বরে বলবেঃ হে লোক সকল! তিন শ্রেণীর লোককে এখনই পাকড়াও করার আমাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আমি তাদেরকে ভালরূপেই চিনি। কোন পিতা তার পুত্রকে এবং কোন ভাই তার ভাইকে ততটা চিনে না যতটা আমি তাদেরকে চিনি। আজ তারা না নিজেরা আমার হতে লুকাতে পারে, না অন্য কেউ তাদেরকে আমার হতে লুকিয়ে রাখতে পারে। একশ্রেণীর লোক হলো ঐ ব্যক্তি যে আল্লাহর সাথে অন্যকে শরীক বানিয়ে নিয়েছে। দ্বিতীয় শ্রেণীর লোক হলো ঐ ব্যক্তি যে অবিশ্বাসকারী ও অহংকারী। আর তৃতীয় শ্রেণী হলো প্রত্যেক নাফরমান শয়তান। অতঃপর সে ঘুরে ঘুরে বেছে বেছে এই গুণাবলীর লোকদেরকে হাশরের ময়দান হতে বের করে নিবে এবং এক এক করে ধরে ধরে নিজের মধ্যে ফেলে দিবে। হিসাব গ্রহণের চল্লিশ বছর পূর্বেই তারা জাহান্নামের পেটে চলে যাবে।” (এ হাদীসটি ইমাম ইবনে আবী হাতিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন)।

৪১-৫০ নং আয়াতের তাফসীর

উপরে অসৎ লোকদের শাস্তির বর্ণনা দেয়া হয়েছে, এখন এখানে সৎকর্মশীলদের পুরস্কারের বর্ণনা দেয়া হচ্ছে। যারা মুত্তাকী ও পরহেযগার ছিল, আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগীতে সদা লিপ্ত থাকতো, ফারায়েয ও ওয়াজেবাতের পাবন্দ থাকতো, আল্লাহর নাফরমানী ও হারাম কার্যাবলী হতে বেঁচে থাকতো, তারা কিয়ামতের দিন জান্নাতে থাকবে। এখানে নানা প্রকারের নহর জারী রয়েছে। পাপী ও অপরাধীরা কালো ও দুর্গন্ধময় ধূম্রের মধ্যে পরিবেষ্টিত থাকবে। আর পুণ্যবানরা জান্নাতের ঘন, ঠাণ্ডা ও পরিপূর্ণ ছায়ায় আরামে শুয়ে থাকবে। তাদের সামনে দিয়ে নির্মল প্রস্রবণ প্রবাহিত হবে। বিভিন্ন প্রকারের ফল-ফলাদি ও তরি-তরকারী বিদ্যমান থাকবে যেটা খাবার মন চাইবে খেতে পারবে। কোন বাধা প্রতিবন্ধকতা থাকবে না। না কমে যাবার ভয় থাকবে, না ধ্বংস, না শেষ হয়ে যাবার আশংকা থাকবে। তারপর উৎসাহ বাড়াবার জন্যে ও মনের খুশী বৃদ্ধি করার উদ্দেশ্যে আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা’আলা বার বার বলবেনঃ হে আমার প্রিয় বান্দারা! হে জান্নাত বাসীরা! তোমরা মনের আনন্দে তৃপ্তির সাথে পানাহার করতে থাকো। এভাবেই আমি সৎকর্মশীলদেরকে পুরস্কৃত করে থাকি। হ্যাঁ, তবে মিথ্যা আরোপকারীদের জন্যে আজ বড়ই দুর্ভোগ!

এরপর অবিশ্বাসকারীদেরকে ধমকের সুরে বলা হচ্ছেঃ তোমরা পানাহার কর ও ভোগ করে নাও অল্প কিছু দিন, তোমরা তো অপরাধী। সুতরাং সত্বরই এসব নিয়ামত শেষ ও ধ্বংস হয়ে যাবে এবং তোমাদেরকে মৃত্যুর ঘাটে অবতরণ করতে হবে। অতঃপর পরিণামে তোমরা জাহান্নামেই যাবে। তোমাদের দুষ্কর্ম ও অন্যায় কার্যকলাপের শাস্তি আল্লাহ তা’আলার নিকট তৈরী রয়েছে। পাপীরা তাঁর দৃষ্টির অন্তরালে নেই। যারা কিয়ামতকে বিশ্বাস করে না, তাঁর নবী (সঃ)-কে মানে না এবং তাঁর ওহীকে অবিশ্বাস করে, তারা কিয়ামতের দিন কঠিন ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাদের জন্যে বড়ই দুর্ভোগ! যেমন অন্য জায়গায় আল্লাহ পাক বলেনঃ (আরবি)

অর্থাৎ “অল্প কিছুদিন আমি তাদেরকে সুখ ভোগ করতে দিবো, অতঃপর তাদেরকে আমি কঠিন শাস্তির দিকে আসতে বাধ্য করবো” (৩১:২৪) অন্য এক জায়গায় আল্লাহ্ পাক বলেনঃ (আরবী)

অর্থাৎ “নিশ্চয়ই যারা আল্লাহর উপর মিথ্যা আরোপ করে তারা সফলকাম হয়। দুনিয়ায় তারা সামান্য কয়েক দিন সুখ ভোগ করবে মাত্র, অতঃপর আমার নিকটই তাদের প্রত্যাবর্তন স্থল। তাদের কুফরীর কারণে আমি তাদেরকে কঠিন শাস্তির স্বাদ গ্রহণ করাবো।” (১০:৬৯-৭০)

এরপর মহা মহিমান্বিত আল্লাহ বলেনঃ এই অজ্ঞ অস্বীকারকারীদেরকে যখন বলা হয়ঃ তোমরা আল্লাহর সামনে নত হয়ে যাও, জামাআতের সাথে নামায আদায় কর, তখন তা হতেও তারা বিমুখ হয়ে যায় এবং ওটাকে ঘৃণার চক্ষে দেখে ও অহংকারের সাথে অস্বীকার করে বসে। এই মিথ্যা আরোপকারীদের জন্যে কিয়ামতের দিন বড়ই দুর্ভোগ ও বিপদ রয়েছে।

এরপর মহান আল্লাহ্ বলেনঃ এ লোকগুলো যখন এই পাক কালামের উপর ঈমান আনয়ন করছে না তখন আর কোন্ কালামের উপর তারা বিশ্বাস স্থাপন করবে! যেমন অন্য জায়গায় আল্লাহ পাক বলেনঃ (আরবি)

অর্থাৎ তারা আল্লাহর উপর ও তার আয়াতসমূহের উপর যখন ঈমান আনছে তখন আর কোন্ কালামের উপর তারা ঈমান আনয়ন করবে!” (৪৫:৬)

মুসনাদে ইবনে আবী হাতিমে হযরত আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে। যে, রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি (আরবি) সূরাটি পাঠ করবে এবং (আরবি)-এ আয়াতটিও পড়বে তখন সে যেন বলেঃ (আরবি) অর্থাৎ “আমি আল্লাহর উপর এবং তিনি যা অবতীর্ণ করেছেন তার উপর ঈমান এনেছি”। এ হাদীসটি সূরা কিয়ামাহর তাফসীরে গত হয়েছে।

১-৫০ নং আয়াতের ‌বেখ্যা:-
তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ:-
নামকরণ :

المرسلٰت শব্দটি المرسلة এর বহুবচন। অর্থ হল : প্রেরিত, যাকে প্রেরণ করা হয়েছে। এখানে মুরসালাত (المرسلٰت) বলতে ঐ সকল ফেরেশতাদেরকে বুঝানো হয়েছে যাদেরকে আল্লাহ তা‘আলা বিশ্বজাহান পরিচালনা ও তার সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয় এবং শরয়ী বিষয় দিয়ে প্রেরণ করে থাকেন। এ শব্দটি অত্র সূরার প্রথম আয়াতে এসেছে। আর এখান থেকেই উক্ত নামে এ সূরার নামকরণ করা হয়েছে।

গুরুত্ব :

ইবনু মাসঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে মিনার গুহায় ছিলাম। এমনবস্থায় المرسلٰت সূরাটি অবতীর্ণ হয়। আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূরাটি তেলাওয়াত করলেন এবং আমি তাঁর মুখ থেকে শুনে মুখস্ত করে নিলাম। আর তাঁর মুখ এ সূরা দ্বারা সিক্ত ছিল। এমন সময় একটি সাপ আমাদের ওপর লাফিয়ে পড়ে। তখন নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন : সাপটিকে মেরে ফেলো। আমরা তাড়াতাড়ি করে সাপটিকে মারতে গেলাম কিন্তু সে পালিয়ে গেল। নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন : সে তোমাদের অনিষ্ট হতে রক্ষা পেয়েছে এবং তোমরাও তার অনিষ্ট হতে রক্ষা পেয়েছো। (সহীহ বুখারী হা. ১৮৩০)

ইবনু আব্বাস (রাঃ) তাঁর মাতা থেকে বর্ণনা করেন যে, তাঁর মা নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে মাগরীবের সালাতে সূরা মুরসালাত পড়তে শুনেছেন। (মুত্তাফাকুন আলাইহি, মিশকাত হা. ৮৩২)

ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, ফজলের মা ইবনু আব্বাসকে এ সূরাটি পড়তে শুনতে পেলে বলেন : হে বৎস! তোমার এ ক্বিরাত আমাকে এ সূরা স্মরণ করিয়ে দিলো। এটা সবর্শেষ সূরা যা তিনি আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মুখ থেকে মাগরীবের সালাতে পড়তে শুনেছেন। (সহীহ বুখারী হা. ৭৬৩)

সূরার শুরুর দিকে কয়েক শ্রেণির ফেরেশতার শপথ করা হয়েছে যারা বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত। তারপর কিয়ামতের দৃশ্যপটের ভয়ঙ্কর চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। এ চিত্র সে সময়কার যখন রাসূলগণ সবাই মানব জাতির সাথে সমবেত হয়ে হিসাব চুকিয়ে দেবেন। তারপর আল্লাহ তা‘আলা সত্যের দাওয়াত প্রত্যাখ্যানকারীদের সাথে কী নীতি অবলম্বন করে থাকেন সে কথা আলোচনা করা হয়েছে। অতঃপর দুনিয়ার জীবনে মানুষের সূচনা, পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনা সংক্রান্তসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

১-১৫ নম্বর আয়াতের তাফসীর :

প্রচন্ড আলোড়ন সৃষ্টিকারী অনেকগুলো দৃশ্য ও সুতীব্র প্রভাব বিস্তারকারী বহু বক্তব্যে এ সূরাটি পরিপূর্ণ। মনে হয় যেন প্রত্যেকটি বাক্য এক একটি জ্বলন্ত আগুনের কাঠি। সূরা আর রহমানে যেমন প্রত্যেক নেয়ামতের কথা উল্লেখ করার পর “অতঃপর তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কোন নেয়ামতকে অস্বীকার করবে?” কথাটি বর্ণিত হয়েছে তেমনি অত্র সূরায় “সেদিন দুর্ভোগ মিথ্যা আরোপকারীদের জন্য।” কথাটি বর্ণিত হয়েছে। পুরো সূরায় দশবার এ ছন্দায়িত বাণীটি পেশ করা হয়েছে।

আল্লাহ তা‘আলা ফেরেশতাদের শপথ করে বলছেন : পুনরুত্থান, হিসাব-নিকাশ ও আমলের প্রতিদান অবশ্যই প্রদান করা হবে। عرفا শব্দটি المرسلٰت শব্দের অবস্থা বর্ণনা করছে। অর্থাৎ যে সকল ফেরেশতা জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও কল্যাণসহ প্রেরিত হয়েছে।

الْعَاصِفٰتِ এরাও ফেরেশতা যাদেরকে আল্লাহ তা‘আলা প্রেরণ করেছেন। এ প্রকার ফেরেশতার গুণ বর্ণনা করতে আল্লাহ তা‘আলা বলছেন عَصْفًا বা যারা আল্লাহ তা‘আলার নির্দেশনাবলী বাস্তবায়নে দ্রুতগামী। অথবা প্রচন্ড বেগে প্রবাহিত বায়ু।

النَّاشِرٰتِ এরাও ফেরেশতা যারা প্রকাশ করে তা যা প্রকাশ করার জন্য প্রস্তুত করে। অথবা এর দ্বারা উদ্দেশ্য মেঘমালা যার দ্বারা আল্লাহ তা‘আলা জমিনকে পুনরুজ্জীবিত করেন।

الْمُلْقِيٰتِ এরা হল ফেরেশতা যারা উত্তম নির্দেশাবলী পৌঁছে দেয়। তাহল এমন যিকির যার দ্বারা আল্লাহ তা‘আলা বান্দাদেরকে রহম করেন এবং এমন কিছু স্মরণ করিয়ে দেন যাতে তাদের কল্যাণ ও উপকারিতা রয়েছে।

(عُذْرًا أَوْ نُذْرًا) অর্থাৎ

إعذارا او إنذارا للناس

যে সকল ফেরেশতারা মানুষদের ভীতি প্রদর্শন করে। (তাফসীর সা‘দী)

আবূ সালেহ (রহঃ) বলেন,

العاصفات والناشرات والفارقات والملقيات

দ্বারা ফেরেশতাদেরকে বুঝোনো হয়েছে। (ইবনু কাসীর)

(إِنَّمَا تُوْعَدُوْنَ لَوَاقِعٌ)

এ আয়াত হল পূর্বের শপথের জবাব। অর্থাৎ তোমাদেরকে যে পুনরুত্থান, আমলের প্রতিদান এবং সকলকে একত্রিত করার প্রতিশ্র“তি দেওয়া হয়েছিল তা অবশ্যই সংঘটিত হবে। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা কিয়ামতের নিদর্শন বর্ণনা করছেন যে, সেদিন তারকার আলো থাকবেনা। যেমন অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন :

( وَإِذَا النُّجُوْمُ انْكَدَرَتْ) ‏

“নক্ষত্ররাজি যখন খসে পড়বে” (সূরা তাকভীর ৮১ : ২)

فُرِجَتْ অর্থ ফেটে যাবে, বিদীর্ণ হবে।

نُسِفَتْ অর্থ পাহাড়কে নিয়ে যাওয়া হবে, ফলে তার কোন আলামতই থাকবেনা।

যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন :

(وَيَسْأَلُوْنَكَ عَنِ الْجِبَالِ فَقُلْ يَنْسِفُهَا رَبِّيْ نَسْفًا لا فَيَذَرُهَا قَاعًا صَفْصَفًا لا ‏ لَّا تَرٰي فِيْهَا عِوَجًا وَّلَآ أَمْتًا)

“তারা তোমাকে পর্বতসমূহ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। বল : ‎ ‘আমার প্রতিপালক তাদেরকে সমূলে উৎপাটন করে বিক্ষিপ্ত করে দেবেন। ‘অতঃপর তিনি তাকে পরিণত করবেন মসৃণ সমতল ময়দানে, ‘যাতে তুমি বক্রতা ও উচ্চতা দেখতে পাবে না।” (সূরা ত্বহা ২০ : ১০৫-১০৭)

আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন :

(وَيَوْمَ نُسَيِّرُ الْجِبَالَ وَتَرَي الْأَرْضَ بَارِزَةً لا وَّحَشَرْنٰهُمْ فَلَمْ نُغَادِرْ مِنْهُمْ أَحَدًا) ‏

“স্মরণ কর‎, যেদিন আমি পর্বতমালাকে করব সঞ্চালিত এবং তুমি পৃথিবীকে দেখবে উন্মুক্ত প্রান্ত‎র, সেদিন তাদের সকলকে আমি একত্র করব এবং তাদের কাউকেও অব্যাহতি দেব না”। (সূরা কাহ্ফ ১৮ : ৪৭)

أُقِّتَتْ অর্থ : একত্রিত করা হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন :

(يَوْمَ يَجْمَعُ اللّٰهُ الرُّسُلَ)

“স্মরণ কর! যেদিন আল্লাহ রাসূলগণকে একত্র করবেন।”

(لِأَيِّ يَوْمٍ أُجِّلَتْ)

‘কোন্ দিবসের জন্য বিলম্বিত করা হচ্ছে?’ যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন :

(فَلَا تَحْسَبَنَّ اللہَ مُخْلِفَ وَعْدِھ۪ رُسُلَھ۫ﺚ اِنَّ اللہَ عَزِیْزٌ ذُو انْتِقَامٍﭾیَوْمَ تُبَدَّلُ الْاَرْضُ غَیْرَ الْاَرْضِ وَالسَّمٰوٰتُ وَبَرَزُوْا لِلہِ الْوَاحِدِ الْقَھَّارِ)

“তুমি কখনও মনে কর না যে, আল্লাহ তাঁর রাসূলগণের প্রতি প্রদত্ত প্রতিশ্র“তি ভঙ্গ করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ পরাক্রমশালী, দণ্ড-বিধায়ক। যেদিন এ পৃথিবী পরিবর্তিত হয়ে অন্য পৃথিবী হবে এবং আকাশসমূহও; এবং মানুষ উপস্থিত হবে আল্লাহর সম্মুখে-যিনি এক, পরাক্রমশালী।” (ইবরাহীম ১৪ : ৪৭-৪৮) এটাই হল يَوْمِ الْفَصْلِ বা বিচারের দিন।

(وَيْلٌ يَّوْمَئِذٍ لِّلْمُكَذِّبِيْنَ)

অর্থাৎ সে কিয়ামতের দিন কাফিরদের জন্য আল্লাহ তা‘আলার শাস্তির দুর্ভোগ। বস্তুত সূরার প্রত্যেকটি আয়াত হচ্ছে এক একটি শিহরণ। ঠিক যেন কোন ব্যক্তিকে ঘড়ি ধরে এক একটা ঝাঁকুনি দিয়ে তার অপরাধ সম্পর্কে বা সত্য অস্বীকার করার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হচ্ছে, অতঃপর ‘সেদিন দুর্ভোগ মিথ্যা আরোপকারীদের জন্য।’ বলে চরম একটা হুমকি দিয়ে তাকে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে।

আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয় :

১. আল্লাহ তা‘আলা তাঁর মাখলুকের যেকোন জিনিস নিয়ে শপথ করতে পারেন, কিন্তু মানুষ আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া অন্য কারো নামে শপথ করতে পারবে না।
২. কিয়ামত অবশ্যই পূর্ব প্রতিশ্র“তি অনুযায়ী সংঘটিত হবে।
৩. যারা ঈমান ছাড়া কিয়ামতের মাঠে হাজির হবে তাদের জন্য সেদিন দুর্ভোগ।
৪. বিষাক্ত জন্তু হত্যা করা যায়েয।

১৬-২৮ নম্বর আয়াতের তাফসীর :

এ আয়াতগুলোতে পূর্ববর্তী অবাধ্য জাতির ধ্বংসের কথা ও মানুষের প্রতি আল্লাহ তা‘আলার কয়েকটি নেয়ামতের কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে। যাতে মানুষ সতর্ক হয়ে অবাধ্য কাজ বর্জন করে আল্লাহ তা‘আলার আনুগত্য করে জীবন যাপন করে।

(أَلَمْ نُهْلِكِ الْأَوَّلِيْنَ)

অর্থাৎ পূর্ববর্তী জাতিদের মধ্য হতে যারা নাবীদেরকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছিল আমি তাদেরকে ধ্বংস করেছি। আর তাদের সদৃশ যারা আসবে তাদেরকেও ধ্বংস করব। এটাই আমার নীতি। সুতরাং যারা আল্লাহ তা‘আলা ও রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করবে তাদের সাবধান হওয়া উচিত।

(مَّا۬ءٍ مَّهِيْنٍ) অর্থাৎ তুচ্ছ বা নগণ্য পানি যা পুরুষের পৃষ্ঠদেশ আর নারীর বক্ষদেশ থেকে আল্লাহ তা‘আলা বের করেন, তারপর তা (قَرَارٍ مَّكِيْنٍ) বা মায়ের জরায়ুতে স্থাপন করেন।

(إِلٰي قَدَرٍ مَّعْلُوْمٍ)

অর্থাৎ মায়ের জরায়ুতে এ পানি নির্দিষ্ট দিন পর্যন্ত স্থাপন করে রাখেন, আর তা হল ছয়মাস থেকে নয় মাস বা তারও বেশি। (ইবনু কাসীর)

كِفَاتًا অর্থাৎ জমিনকে সৃষ্টি করেছেন ধারণকারীরূপে। জীবিতদের জন্য জমিন তার ওপরে ধারণ করে আর মৃতদেরকে কবরে ধারণ করে।

رَوَاسِيَ শব্দটি رَاسِيَة এর বহুবচন। অর্থ সুদৃঢ় পাহাড়, شامخات অর্থ সুউচ্চ।

(مَّا۬ءً فُرَاتًا) অর্থ : মিষ্টি সুপেয় পানি, যা আকাশ থেকে নাযিল করেন অথবা জমিনে তার উৎস সৃষ্টি করে দিয়েছেন।

আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয় :

১. যুগে যুগে যারা নাবীদেরকে প্রত্যাখ্যান করেছে আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে ধ্বংস করেছেন এবং কিয়ামত পর্যন্ত এ রীতি বিদ্যমান থাকবে।
২. আকাশ-জমিনের মাঝে যা কিছু আছে সবই আল্লাহ তা‘আলা মানুষের উপকারার্থে সৃষ্টি করেছেন।
২৯-৪০ নম্বর আয়াতের তাফসীর :

অত্র আয়াতগুলোতে তাদেরকে সম্বোধন করা হচ্ছে যারা আখিরাতের প্রতি অবিশ্বাসী-কাফির, জান্নাত-জাহান্নাম, হাশর-নাশর ইত্যাদি বিশ্বাস করে না। কিয়ামতের দিন দীর্ঘ অবরুদ্ধ ও আটক জীবন শেষে মুক্ত হয়ে রওনা দেবে কিন্তু কোথায় যাবে? মনে হয় সে মুক্তিলাভ ও রওনা হওয়ার চেয়ে অবরুদ্ধ ও আটক থাকাই ভাল ছিল। তাদেরকে বলা হবে :

( اِنْطَلِقُوْآ إِلٰي ظِلٍّ ذِيْ ثَلٰثِ شُعَبٍ)

“চল সে ছায়ার দিকে যার তিনটি শাখা রয়েছে।”

(ثَلٰثِ شُعَبٍ) অর্থাৎ এমন ছায়া যা তিন শাখাবিশিষ্ট অর্থাৎ জাহান্নাম থেকে যে ধোঁয়া বের হবে তা উঁচু হয়ে তিন দিকে ছড়িয়ে পড়বে। যেমন দেওয়াল অথবা গাছের ছায়া হয়। এ ধোঁয়ার ছায়ায় জাহান্নামীদের শাস্তি বৃদ্ধি ছাড়া কোন স্বস্তি লাভ হবে না। এ ছায়া ঠাণ্ডাও হবে না এবং জাহান্নামের উষ্ণতা থেকে রক্ষাও করবে না।

(إِنَّهَا تَرْمِيْ بِشَرَرٍ كَالْقَصْرِ)

ইবনু কাসীর (রহঃ) বলেন : জাহান্নামের যে অগ্নিস্ফুলিঙ্গগুলো উড়ে যায় সেগুলো এক একটা দুর্গের মত এবং বড় বড় গাছের লম্বা চওড়া কান্ডের মত হবে। আব্দুর রহমান বিন আবিস (রহঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন : আমি এ আয়াতের ব্যাখ্যায় ইবনু আব্বাস (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, আমরা তিন গজ বা এর চেয়ে ছোট কাঠের খন্ড জোগাড় করে শীতকালের জন্য উঠিয়ে রাখতাম। এটাকেই আমরা বলতাম القصر। (সহীহ বুখারী হা. ৪৯৩২)

(كَأَنَّه۫ جِمَالَتٌ صُفْرٌ)

অর্থাৎ দর্শকদের কাছে ওগুলোকে মনে হবে যেন হলুদ রঙের উট বা নৌকার রজ্জু অথবা তামার টুকরো। (ইবনু কাসীর)

(ذَا يَوْمُ لَا يَنْطِقُوْنَ)

অর্থাৎ কিয়ামতের ভয়াবহতা দেখে কাফিররা কথা বলতে পারবে না। অথবা কথা বলতে গিয়ে মিথ্যা বলবে ফলে তাদের মুখ বন্ধ করে দেওয়া হবে। অথবা এমন পরিস্থিতি হবে যে, তারা কথা বলতেই জানবে না।

(وَلَا يُؤْذَنُ لَهُمْ فَيَعْتَذِرُوْنَ)

অর্থাৎ সেদিন তাদের কোন ওজর কবূল করা হবে না, যদিও তারা ওজর পেশ করে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন :

(فَيَوْمَئِذٍ لَّا يَنْفَعُ الَّذِيْنَ ظَلَمُوْا مَعْذِرَتُهُمْ وَلَا هُمْ يُسْتَعْتَبُوْنَ)‏

“সেদিন জালিমদের ওজর আপত্তি তাদের কোন উপকারে আসবে না এবং তাওবা করে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের সুযোগও তাদেরকে দেওয়া হবে না।” (সূরা রূম ৩০ : ৫৭)

(هٰذَا يَوْمُ الْفَصْلِ)

‘এটা চূড়ান্ত ফায়সালার দিন,’ কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলা বান্দাদেরকে এ কথা বলবেন।

(فَإِنْ كَانَ لَكُمْ كَيْدٌ فَكِيْدُوْنِ)

‘তোমাদের কোন অপকৌশল থাকলে তা প্রয়োগ কর আমার বিরুদ্ধে।’ এটা আল্লাহ তা‘আলার ধমক, যদি তোমরা আমার পাাকড়াও থেকে বাঁচতে পার এবং আমার রাজত্ব থেকে বের হয়ে যেতে পার তাহলে চলে যাও?

অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন :

(يَا مَعْشَرَ الْجِنِّ وَالْإِنْسِ إِنِ اسْتَطَعْتُمْ أَنْ تَنْفُذُوْا مِنْ أَقْطَارِ السَّمٰوٰتِ وَالْأَرْضِ فَانْفُذُوْا لَا تَنْفُذُوْنَ إِلَّا بِسُلْطَانٍ)

“হে জিন ও মানুষ জাতি! আকাশসমূহ ও পৃথিবীর সীমা হতে যদি তোমরা বের হতে পার, তবে বের হয়ে যাও; কিন্তু তোমরা তা পারবে না, শক্তি ব্যতিরেকে (আর সে শক্তি তোমাদের নেই)।” (সুুরা আর রহমান ৫৫ : ৩৩)

কিয়ামতের এমন কঠিন বিভীষিকাময় অবস্থা থেকে মুক্তির জন্য আমাদের দুনিয়াতে থাকতেই পাথেয় গ্রহণ করা উচিত। নয়তো সেদিন কোন কিছুই উপকারে আসবে না।

আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয় :

১. জাহান্নামীদের শাস্তির বিবরণ জানতে পারলাম।
২. কিয়ামতের মাঠে মিথ্যুকদের যে অবস্থা হবে তা জানতে পারলাম।
৩. হাশরের ময়দানে আল্লাহ তা‘আলা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সকল মানুষকে একত্রিত করবেন।
৪১-৫০ নম্বর আয়াতের তাফসীর :

এ আয়াতগুলোতে আল্লাহ তা‘আলার প্রিয় বান্দা মুত্তাকীদের জন্য আখিরাতে প্রস্তুত রাখা নেয়ামত সম্ভারের সুসংবাদ প্রদান করছেন। তারপর তাঁর শত্র“দের ধমক দিয়ে ক্ষণিকের জন্য দুনিয়ার ভোগ করার অবকাশ দিয়ে বলছেন- এরপর তোমরা কোন্ কিতাবের প্রতি ঈমান আনবে?

(فِيْ ظِلٰلٍ وَّعُيُوْنٍ)

অর্থাৎ জান্নাতীরা বৃক্ষাদি ও অট্টালিকার সুশীতল ছায়ার ও ঝরণাবিশিষ্ট জান্নাতে থাকবে। জাহান্নামীরা যে ধোঁয়ার ছায়ায় থাকবে তার বিপরীত। এভাবে যারা আল্লাহ তা‘আলার ইবাদতের প্রতি যতœবান ও তাঁর বান্দাদের প্রতি দয়ার্দ্র তাদেরকে আল্লাহ তা‘আলা প্রতিদান দিয়ে থাকেন।

(كُلُوْا وَتَمَتَّعُوْا قَلِيْلًا إِنَّكُمْ مُّجْرِمُوْنَ)

যারা আখিরাতকে অস্বীকার করে তাদেরকে ধমকসহকারে আল্লাহ তা‘আলা বলছেন : তোমরা স্বল্পদিনের দুনিয়ায় খেয়ে-দেয়ে আনন্দ ভোগ করে নাও, কিন্তু আখিরাতে তোমাদের জন্য রয়েছে চিরস্থায়ী জাহান্নাম। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন :

(نُمَتِّعُهُمْ قَلِيْلًا ثُمَّ نَضْطَرُّهُمْ إِلٰي عَذَابٍ غَلِيْظٍ) ‏

“আমি অল্প সময়ের জন্য তাদেরকে সুখ-সম্ভোগ দেব, পুনরায় তাদেরকে বাধ্য করব কঠিন শাস্তি ভোগ করতে।” (সূরা লুকমান ৩১ : ২৪)

(وَإِذَا قِيْلَ لَهُمُ ارْكَعُوْا)

অর্থাৎ দুনিয়াতে যখন এসকল কাফিরদেরকে জামাতে সালাত আদায় করার কথা বলা হত তখন তারা কর্ণপাত করত না বরং অহংকারবশত তা ত্যাগ করত। এজন্য আল্লাহ তা‘আলা বলেন :

( وَيْلٌ يَّوْمَئِذٍ لِّلْمُكَذِّبِيْنَ) ‘সেদিন ধ্বংস মিথ্যা আরোপকারীদের জন্য।”

অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা বলেন :

(فَبِاَیِّ حَدِیْثٍۭ بَعْدَھ۫ یُؤْمِنُوْنَ)

অর্থাৎ যদি এ কুরআনের প্রতি ঈমান না আনে তাহলে আর কোন্ কিতাব আছে যার প্রতি ঈমান আনবে? এখানে হাদীস দ্বারা কুরআনকে বুঝানো হয়েছে।

যেমন আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন :

(تِلْکَ اٰیٰتُ اللہِ نَتْلُوْھَا عَلَیْکَ بِالْحَقِّﺆ فَبِاَیِّ حَدِیْثٍۭ بَعْدَ اللہِ وَاٰیٰتِھ۪ یُؤْمِنُوْنَ) ‏

“এগুলো আল্লাহর আয়াত, যা আমি তোমার নিকট তেলাওয়াত করছি যথাযথভাবে; সুতরাং আল্লাহ এবং তাঁর আয়াতের পরে তারা আর কোন্ বাণীতে বিশ্বাস করে।” (সূরা জাসিয়া ৪৫ : ৬)

(فَبِاَیِّ حَدِیْثٍۭ بَعْدَھ۫ یُؤْمِنُوْنَ)

‘সুতরাং তারা এর পরিবর্তে আর কোন্ কথায় বিশ্বাস করবে?’ অর্থাৎ তারা বিশ্বাস করবে না।

আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয় :

১. পুনরুত্থান, আমলের প্রতিদান ইত্যাদির স্বীকৃতি পেলাম।
২. মুত্তাকীদের জন্য প্রস্তুত রাখা নেয়ামতের কথা জানতে পারলাম।
৩. আখিরাত অস্বীকারকারীদের জন্য রয়েছে জাহান্নাম।
৪. যদি কোন ব্যক্তি মাসজিদে প্রবেশ করে এমতাবস্থায় মাসজিদে সালাত আদায় হচ্ছে তাহলে সে ব্যক্তিও সালাতে শরীক হবে যদিও সে উক্ত সালাত পূর্বে আদায় করেছে।
৫. কুরআনকে আল্লাহ তা‘আলা অত্র সূরার শেষ আয়াতে হাদীস বলে উল্লেখ করেছেন।

Leave a Reply