Motaher21.net أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ ( বই # ১১৯৮/এবং কফেরর-রা বলে:-৪০) [#রক্তরঞ্জিত ইতিহাস:- # কাফেরদের অত্যাচার:-] www.motaher21.net সুরা: ৮৫ : আল্ – বুরুজ পারা:৩০ ১- ২২ নং আয়াতের ‌বেখ্যা :- # তাফসীরে ফী জিলালিল‌ কুরআন:- # তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন:-

Motaher21.net
أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
( বই # ১১৯৮/এবং কফেরর-রা বলে:-৪০)
[#রক্তরঞ্জিত ইতিহাস:-
# কাফেরদের অত্যাচার:-]
www.motaher21.net
সুরা: ৮৫ : আল্ – বুরুজ
পারা:৩০
১- ২২ নং আয়াতের ‌বেখ্যা :-
# তাফসীরে ফী জিলালিল‌ কুরআন:-
# তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন:-

সুরা: ৮৫ : আল্ – বুরুজ:-১
وَ السَّمَآءِ ذَاتِ الۡبُرُوۡجِ ۙ﴿۱﴾
কসম মজবুত দুর্গ বিশিষ্ট আকাশের।
সুরা: ৮৫ : আল্ – বুরুজ:-২
وَ الۡیَوۡمِ الۡمَوۡعُوۡدِ ۙ﴿۲﴾
এবং সেই দিনের যার ওয়াদা করা হয়েছে ।
সুরা: ৮৫ : আল্ – বুরুজ:-৩
وَ شَاہِدٍ وَّ مَشۡہُوۡدٍ ؕ﴿۳﴾
আর যে দেখে তার এবং সেই জিনিসের যা দেখা যায়।
সুরা: ৮৫ : আল্ – বুরুজ:-৪
قُتِلَ اَصۡحٰبُ الۡاُخۡدُوۡدِ ۙ﴿۴﴾
ধ্বংস হয়েছে কুন্ডের অধিপতিরা।
সুরা: ৮৫ : আল্ – বুরুজ:-৫
النَّارِ ذَاتِ الۡوَقُوۡدِ ۙ﴿۵﴾
যে গর্তে দাউদাউ করে জ্বলা জ্বালানীর আগুন ছিল,
সুরা: ৮৫ : আল্ – বুরুজ:-৬
اِذۡ ہُمۡ عَلَیۡہَا قُعُوۡدٌ ۙ﴿۶﴾
যখন তারা তার কিনারায় বসেছিল।
সুরা: ৮৫ : আল্ – বুরুজ:-৭
وَّ ہُمۡ عَلٰی مَا یَفۡعَلُوۡنَ بِالۡمُؤۡمِنِیۡنَ شُہُوۡدٌ ؕ﴿۷﴾
এবং তারা মুমিনদের সাথে যা করছিল তা প্রত্যক্ষ করছিল।
সুরা: ৮৫ : আল্ – বুরুজ:-৮
وَ مَا نَقَمُوۡا مِنۡہُمۡ اِلَّاۤ اَنۡ یُّؤۡمِنُوۡا بِاللّٰہِ الۡعَزِیۡزِ الۡحَمِیۡدِ ۙ﴿۸﴾
তারা তাদেরকে নির্যাতন করেছিল শুধু এ কারণে যে, তারা ঈমান এনেছিল পরাক্রমশালী ও প্রশংসার যোগ্য আল্লাহ্র উপর—
সুরা: ৮৫ : আল্ – বুরুজ:-৯
الَّذِیۡ لَہٗ مُلۡکُ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضِ ؕ وَ اللّٰہُ عَلٰی کُلِّ شَیۡءٍ شَہِیۡدٌ ؕ﴿۹﴾
যিনি আকাশ ও পৃথিবীর রাজত্বের অধিকারী। আর সে আল্লাহ‌ সবকিছু দেখছেন।
সুরা: ৮৫ : আল্ – বুরুজ:-১০
اِنَّ الَّذِیۡنَ فَتَنُوا الۡمُؤۡمِنِیۡنَ وَ الۡمُؤۡمِنٰتِ ثُمَّ لَمۡ یَتُوۡبُوۡا فَلَہُمۡ عَذَابُ جَہَنَّمَ وَ لَہُمۡ عَذَابُ الۡحَرِیۡقِ ﴿ؕ۱۰﴾
যারা মু’মিন পুরুষ ও নারীদের ওপর জুলুম-নিপীড়ন চালিয়েছে, তারপর তা থেকে তওবা করেনি, নিশ্চিতভাবেই তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের আযাব এবং জ্বালা-পোড়ার শাস্তি।
সুরা: ৮৫ : আল্ – বুরুজ:-১১
اِنَّ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا وَ عَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ لَہُمۡ جَنّٰتٌ تَجۡرِیۡ مِنۡ تَحۡتِہَا الۡاَنۡہٰرُ ۬ؕؑ ذٰلِکَ الۡفَوۡزُ الۡکَبِیۡرُ ﴿ؕ۱۱﴾
যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে, তাদের জন্যই রয়েছে জান্নাত, যার নিম্নে নদীমালা প্রবাহিত; এটাই মহা সাফল্য।
সুরা: ৮৫ : আল্ – বুরুজ:-১২
اِنَّ بَطۡشَ رَبِّکَ لَشَدِیۡدٌ ﴿ؕ۱۲﴾
নিশ্চয় আপনার রবের পাকড়াও বড়ই কঠিন।
সুরা: ৮৫ : আল্ – বুরুজ:-১৩
اِنَّہٗ ہُوَ یُبۡدِئُ وَ یُعِیۡدُ ﴿ۚ۱۳﴾
তিনিই প্রথমবার সৃষ্টি করেন আবার তিনিই দ্বিতীয় বার সৃষ্টি করবেন।
সুরা: ৮৫ : আল্ – বুরুজ:-১৪
وَ ہُوَ الۡغَفُوۡرُ الۡوَدُوۡدُ ﴿ۙ۱۴﴾
এবং তিনি ক্ষমাশীল, অতিস্নেহময় ,
সুরা: ৮৫ : আল্ – বুরুজ:-১৫
ذُو الۡعَرۡشِ الۡمَجِیۡدُ ﴿ۙ۱۵﴾
আরশের মালিক, শ্রেষ্ঠ-সম্মানিত।
সুরা: ৮৫ : আল্ – বুরুজ:-১৬
فَعَّالٌ لِّمَا یُرِیۡدُ ﴿ؕ۱۶﴾
তিনি যা ইচ্ছা, তাই করে থাকেন।
সুরা: ৮৫ : আল্ – বুরুজ:-১৭
ہَلۡ اَتٰىکَ حَدِیۡثُ الۡجُنُوۡدِ ﴿ۙ۱۷﴾
তোমার নিকট কি সৈন্যবাহিনীর বৃত্তান্ত পৌঁছেছে?
সুরা: ৮৫ : আল্ – বুরুজ:-১৮
فِرۡعَوۡنَ وَ ثَمُوۡدَ ﴿ؕ۱۸﴾
ফিরআউন ও সামূদের?
সুরা: ৮৫ : আল্ – বুরুজ:-১৯
بَلِ الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا فِیۡ تَکۡذِیۡبٍ ﴿ۙ۱۹﴾
কিন্তু যারা কুফরী করেছে, তারা মিথ্যা আরোপ করার কাজে লেগে রয়েছে।
সুরা: ৮৫ : আল্ – বুরুজ:-২০
وَّ اللّٰہُ مِنۡ وَّرَآئِہِمۡ مُّحِیۡطٌ ﴿ۚ۲۰﴾
আল্লাহ্ সবদিক থেকে তাদেরকে পরিবেষ্টন করে রয়েছেন।
সুরা: ৮৫ : আল্ – বুরুজ:-২১
بَلۡ ہُوَ قُرۡاٰنٌ مَّجِیۡدٌ ﴿ۙ۲۱﴾
বরং এটা গৌরবান্বিত কুরআন।
সুরা: ৮৫ : আল্ – বুরুজ:-২২
فِیۡ لَوۡحٍ مَّحۡفُوۡظٍ ﴿٪۲۲﴾
সংরক্ষিত ফলকে লিপিবদ্ধ।

Motaher21.net
أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
( বই # ১১৯৮/এবং কফেরর-রা বলে:-৪০)
[#রক্তরঞ্জিত ইতিহাস:-
# কাফেরদের অত্যাচার:-]
www.motaher21.net
সুরা: ৮৫ : আল্ – বুরুজ
পারা:৩০
১- ২২ নং আয়াতের ‌বেখ্যা :-
# তাফসীরে ফী জিলালিল‌ কুরআন:-

সুরা: আল-বুরুজ

بِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِیْمِ

পরম করুণাময় মেহেরবান আল্লাহর নামে

* ভূমিকা:৮৫

ফী জিলালিল কুরআন:

সংক্ষিপ্ত আলোচনা : এই ক্ষুদ্র সূরাটি ইসলামী আকীদার তত্ত্ব ও ঈমানী চিন্তাধারার ভিত্তিসমূহকে অত্যস্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসাবে তুলে ধরেছে। এগুলোর চারদিকে সুদূরপ্রসারী প্রখর জ্যোতি বিকীর্ণ হয়। সে জ্যোতি ঠিকরে পড়ে আয়াতের প্রত্যক্ষ মর্ম ও তত্ত্বের ওপরে, যাতে প্রতিটি আয়াত, এমন কি কখনো কখনো প্রতিটি শব্দ বিশাল বিশ্বজগতের তত্ত্ব ও তথ্য অনুসন্ধানের জন্যে জানালা খুলে দিতে সক্ষম হয়। যে বিষয়টি এই সূরায় প্রত্যক্ষভাবে আলোচিত হয়েছে, তা হচ্ছে ‘আসহাবুল উখদুদের’ ঘটনা ৷ ঘটনাটি এই যে, প্রাচীনকালে ইসলাম গ্রহণকারী একদল মোমেন তাদের শত্রু, একটি খোদাদ্রোহী দুর্বৃত্তদের হাতে নিষ্ঠুর নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন। কথিত আছে যে মুমিনদের এই দলটি হযরত ঈসা আলাইহিস সালামের অনুসারীদের মধ্যে যারা খালেস তাওহীদপন্থী ছিলেন তাদেরই অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। নির্যাতনকারী খোদাদ্রোহী গোষ্ঠীটি যুলুম নিপীড়নের মাধ্যমে তাদেরকে তাদের আকীদা বিশ্বাস পরিত্যাগ ও ইসলাম বর্জন করে সাবেক শিরকী আকীদা বিশ্বাসের দিকে ফিরে আসার জন্যে চাপ দিচ্ছিলো । কিন্তু তারা সব কিছু উপেক্ষা করেও তাদের নির্দেশ প্রত্যাখ্যান করে নিজেদের আকীদা বিশ্বাসে অটল থাকেন। খোদাদ্রোহী গোষ্ঠীটি তখন তাদের জন্যে মাটিতে একটা গর্ত খোড়ে এবং তাতে আগুন জ্বালিয়ে মোমেনদেরকে সেই জ্বলন্ত অগ্নিকুন্ডে নিক্ষেপ করে পুড়িয়ে মেরে ফেলে । এহেন পাশবিক পন্থায় মোমেনদেরকে হত্যা করার ঘটনাটি প্রত্যক্ষ করার জন্যে ইসলামের শত্রুরা বিপুল সংখ্যক জনতাকে সমবেত করে। সেই জনতার চোখের সামনেই এই লোমহর্ষক ঘটনা ঘটে! খোদাদ্রোহী গোষ্ঠীটি মোমেনদেরকে পুড়িয়ে মারার এই ঘটনা প্রত্যক্ষ করে নারকীয় উল্লাসে মেতে উঠতে চেয়েছিলো । আল্লাহ্‌ তায়ালা বলেন, ‘চির প্রশংসিত মহাপরাক্ররান্ত আল্লাহর ওপর তারা কেন ঈমান আনলো মোমেনদের কাছ থেকে তারা শুধুমাত্র তারই প্রতিশোধ নিয়েছিলো ।’ সূরাটি শুরু হয়েছে কয়েকটি শপথ বাক্যের মাধ্যমে ৷ ‘বুরুজ সম্বলিত আকাশের শপথ, প্রতিশ্রুতি দিবসের শপথ, দর্শকের শপথ এবং যা কিছু পরিদৃষ্ট হয় তার শপথ, গর্তের মালিকরা ধংস হয়েছে।’ এখানে আকাশ ও তার বিস্ময়কর বুরুজসমূহের মধ্যে, প্রতিশ্রুতি দিবস ও তারঅসাধারণ ঘটনাবলীর মধ্যে এই ঘটনা প্রত্যক্ষকারী সমবেত জনতা ও পরিদৃষ্ট ঘটনাবলীর মধ্যে যোগসূত্র স্থাপন করা হয়েছে। আবার এই সবগুলোকে আলোচ্য ঘটনার সাথে এবং অগ্নিকুন্ড সৃষ্টিকারী খোদাদ্রোহী চক্রের ওপর আকাশের প্রতিশোধ গ্রহণের সাথে সম্পর্কযুক্ত করা হয়েছে। এরপর এমন আকস্মিকভাবে সেই হৃদয়বিদারক ঘটনাটি তুলে ধরা হয়েছে, যাতে কোনো দীর্ঘ ও বিশদ বিবরণ ছাড়াই আবেগ অনুভূতিতে ঘটনার পৈশাচিক ও বীভৎস রূপ প্রতিভাত হয়। এখানে আনুষংগিকভাবে এই ধারণাও দেয়া হয়েছে যে, মানুষের যুলুম-নিপীড়ন যতো কঠিন ও লোমহর্ষকই হোক না কেন, ইসলামী আকীদা-বিশ্বাসের স্থান তার চেয়ে অনেক উর্ধে । এ আকীদা ও আদর্শ আগুনের ওপর বিজয়ী এমনকি স্বয়ং মানুষের জীবনের ওপরও তার প্রাধান্য রয়েছে। এ আদর্শ সেই সর্বোচ্চ শিখরে উন্নীত, যা সর্বকালে ও সকল প্রজন্মের মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব ও মহত্ত্বের উৎস। এখানে এই মর্মেও ইংগিত রয়েছে যে, এই হত্যাকান্ডটি কতো মর্মান্তিক ও পৈশাচিক আর এর পেছনে কতো নীচতা, হীনতা, শঠতা এবং আগ্রাসী ও বিদ্রোহাত্মক মানসিকতা কার্যকর রয়েছে। আর এর পাশাপাশি মোমেনদের মধ্যে কত নিষ্পাপত্ব, কতো পবিত্রতা এবং কতো মহৎ ও উচ্চ মানসিকতা বিরাজমান ছিলো ৷ অভিশাপ তাদের ওপর যারা অগ্নিকুন্ডের পাশে বসে ছিলো, আর তারা মোমেনদের সাথে কি আচরণ করছিলো, তা দেখছিলো। এরপরই এক এক করে আসছে সংক্ষিপ্ত মন্তব্য ও পর্যালোচনা, ইসলামী দাওয়াত, ইসলামী আকীদা ও মৌলিক ঈমানী চিন্তাধারার সাথে যে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো ওৎপ্রোতভাবে জড়িত । পরবর্তী সংক্ষিপ্ত মন্তব্যগুলোতে সেগুলো অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।’ পরবর্তী আয়াতে এই মর্মে ইংগিত করা হয়েছে যে, আকাশ ও পৃথিবীর ওপর আল্লাহর সার্বভৌম ও নিরংকুশ কর্তৃত্ব বিরাজমান। আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু ঘটে, তাতে আল্লাহ তায়ালা সরাসরি উপস্থিত থাকেন ও তা প্রত্যক্ষ করেন। ‘যার রাজত্ব বিরাজিত আকাশ ও পৃথিবীতে এবং আল্লাহ তায়ালা সব কিছুরই প্রত্যক্ষদর্শী ।’ পরবর্তী আয়াতে জাহান্নামের সেই আযাব এবং সেই দহনযন্ত্রনার উল্লেখ করা হয়েছে, যা সীমা অতিক্রমকারী পাপিষ্ঠ বর্বর লোকদের জন্যে অপেক্ষা করছে। আর তার পাশাপাশি বেহেশতের নেয়ামতের বিবরণ দেয়া হয়েছে এবং তা পাওয়াকে বিরাট সাফল্যরূপে উল্লেখ করা হয়েছে। আপন আদর্শকে জীবনের ওপর অগ্রাধিকার দিয়ে আগুন ও আগুনে দগ্ধীভূত হওয়ার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া মোমেনদের জন্যে সেই নেয়ামত নির্দিষ্ট রয়েছে। ‘নিশ্চয়ই যারা মোমেন নারী ও পুরুষদের ওপর অত্যচার করেছে এবং তারপর তাওবা করেনি, তাদের জন্যে জাহান্নামের আযাব ও দহন-যন্ত্রণা নির্দিষ্ট রয়েছে। আর যারা ঈমান এনেছে ও সৎকর্ম করেছে, তাদের জন্যে নির্দিষ্ট রয়েছে বেহেশত যার- তলদেশ দিয়ে ঝর্ণাসমূহ প্রবাহিত । আর তাই বিরাট সাফল্য ।’ সূরাটিতে আল্লাহর কঠোর পাকড়াও সম্পর্কেও হুশিয়ার করা হয়েছে, ‘যিনি প্রথম সৃষ্টি করেন এবং পুনসৃষ্টি করেন ।’ বস্তুত এটি এমন এক সত্য, যা আলোচ্য ঘটনায় বিনষ্ট প্রাণগুলোর সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত এবং এই ঘটনার ওপর সুদূর প্রসারী আলোকপাত করে। এরপর আল্লাহর বিভিন্ন গুণ বর্ণনা করা হয়েছে এবং এর প্রত্যেকটি গুণই সুনির্দিষ্ট তাৎপর্য বহন করে। ‘তিনি ক্ষমাশীল ও স্নেহময়’ কেউ যতো বড় ও যতো নৃশংস অপরাধই করুক না কেন, তাওবা করলে তিনি তার জন্যে ক্ষমাশীল, আর তার যে বান্দারা তাকে অন্য সব কিছুর উর্ধে স্থান দেয় তাদের জন্যে তিনি স্নেহময় । স্নেহ এখানে আল্লাহর নির্যাতিত বান্দাদের মনের ক্ষত সারানোর ওষুধ তথা প্রবোধ বাক্য । ‘তিনি মহান আরশের অধিপতি, যা ইচ্ছা করেন তা করেই ছাড়েন ।’ এ গুণগুলো আল্লাহর নিরংকুশ কর্তৃত্ব, নিরংকুশ ক্ষমতা ও সর্বাত্মক ইচ্ছাশক্তির প্রতীক । এগুলো সবই ঘটনার সাথে সরাসরি জড়িত । এগুলোও ঘটনার ওপর সুদূরপ্রসারী আলোকপাত করে। এরপর অতি দ্রুতগতিতে খোদাদ্রোহী শক্তিসমূহের অতীত কর্মকান্ডের প্রসংগ এসেছে। এই সব খোদাদ্রোহী শক্তি যাবতীয় অস্ত্র ও সরঞ্জামে সুসজ্জিত ছিলো । ‘তোমার কাছে কি ফেরাউন ও সামুদ-এই দুটি বাহিনীর খবর এসেছে?’ বস্তুত উল্লেখিত দুটি শক্তির পতন ও ধ্বংসের ঘটনা আপন আপন প্রকৃতি ও ফলাফলের দিক থেকে বিভিন্নতার দাবী রাখে ৷ ‘উখদুদ’ বা পরিখার ঘটনার পাশাপাশি এই ঘটনাও তাৎপর্যমন্ডিত ৷ সর্বশেষে কাফেরদের বর্তমান অবস্থা ও পরিণতি এবং তাদের অজ্ঞাতসারেই যে আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে ঘেরাও করেন, সে কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ‘বরঞ্চ কাফেররা অস্বীকার করার নীতিতেই অবিচল রয়েছে। অথচ আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে তাদের আড়াল থেকে ঘেরাও করে ফেলবেন ।’ আল কোরআনের সত্যতা, তার মূল ভাষ্য ও তার শাখাপ্রশাখার স্থায়িত্বের নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে৷ ‘বরঞ্চ এটি মহান কোরআন, মহান ফলকে সুরক্ষিত ।’ এর অর্থ দাড়ালো এই যে, কোরআন যে সিদ্ধান্ত দেয় সেটাই সর্ববিষয়ে চুড়ান্ত ও সর্বশেষ সিদ্ধান্ত। এ পর্যন্ত সংক্ষেপে আলোচিত হলো সূরা বুরুজের ব্যাপক ও সুদূর প্রসারী আলোচনার বিষয়বস্তু ও বক্তব্য । এর মাধ্যমে ওই বক্তব্য ও আলোচ্য বিষয়ের বিশদ আলোচনার পটভূমি প্রস্তুত করা হচ্ছে!

সুরা: আল-বুরুজ
আয়াত নং :-2

وَ الْیَوْمِ الْمَوْعُوْدِۙ

এবং সেই দিনের যার ওয়াদা করা হয়েছে ।

ফী জিলালিল কুরআন:

‘বুরুজ সমন্বিত আকাশের শপথ, প্রতিশ্রুত দিবসের শপথ এবং দর্শক ও যা কিছু পরিদৃষ্ট হয় তার শপথ!’ পরিখার ঘটনার আভাস দেয়ার আগেই সূরাটি এভাবে বুরুজ সমন্বিত আকাশের শপথের মাধ্যমে শুরু হয়েছে। ‘বুরুজ’ অর্থ প্রাসাদ । এ দ্বারা বড় বড় নক্ষত্রকেও বুঝানো হয়ে থাকতে পারে। এগুলো যেন মহাকাশের বড় বড় প্রাসাদ। যেমন আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, “আকাশকে আমিই নিজ হাতে নির্মাণ করেছি এবং আমি তাকে আরো প্রশস্ত বানাবো ।” তিনি আরো বলেছেন, ‘তোমাদেরকে সৃষ্টি করা কঠিন না আকাশ সৃষ্টি করা?’ এর অর্থ আকাশের গ্রহ-নক্ষত্র প্রভৃতির মনযিলসমূহও হতে পারে । আপন আপন কক্ষপথে পরিভ্রমণকালে তারা সেসব মনযিলে স্থানান্তরিত হয়ে থাকে । আকাশে চলার সময় এসব গ্রহ-নক্ষত্র নিজ নিজ কক্ষপথের সীমা অতিক্রম করে না। এ সব মনযিলের উল্লেখ করে এগুলোর বিশালতা সম্পর্কে ধারণা দেয়া হয়েছে। আলোচ্য প্রেক্ষাপটে মানবমনে যে নিণূঢ় শিক্ষা ঢুকানোর ইচ্ছা ছিলো, সে শিক্ষা এখানেই নিহিত । ‘শপথ প্রতিশ্রুত দিবসের’ এটি হলো পার্থিব ঘটনাবলীর ক্ষেত্রে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং পৃথিবীর যাবতীয় হিসাব-নিকাশ মেটানোর দিন৷ এ দিনটা যে নির্ঘাত আসবেই এবং এ দিনেই যে হিসাব-নিকাশের পর কর্মফল দেয়া হবে, সে ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন । যারা আল্লাহর বিচারের প্রত্যাশী তাদেরকে তিনি এই দিন পর্যন্ত সময় দিয়েছেন। এটাই সর্বোচ্চ গুরুত্বসম্পন্ন সেই দিন যার অপেক্ষায় কোটি কোটি সষ্টি অপেক্ষমান রয়েছে বিশেষ করে কিভাবে বিবাদ মেটানো হয় তা দেখার জন্যে ।

সুরা: আল-বুরুজ
আয়াত নং :-9

الَّذِیْ لَهٗ مُلْكُ السَّمٰوٰتِ وَ الْاَرْضِ١ؕ وَ اللّٰهُ عَلٰى كُلِّ شَیْءٍ شَهِیْدٌؕ

যিনি আকাশ ও পৃথিবীর রাজত্বের অধিকারী। আর সে আল্লাহ‌ সবকিছু দেখছেন।

ফী জিলালিল কুরআন:

রক্তরঞ্জিত ইতিহাস : ‘শপথ সাক্ষীর এবং যা কিছু পরিদৃষ্ট হয়েছে তার।’ যেদিন সকল সৃষ্টিকে এবং সকল কর্মতৎপরতাকে তুলে ধরা হবে, সেদিন সব কিছুই প্রকাশিত হবে এবং সকলেই তা প্রত্যক্ষ করবে, সব কিছুই জানবে এবং চর্মচক্ষু ও মানসচক্ষু উভয়ের সামনেই সবকিছু প্রকাশিত হবে, কেউ কোনো কিছু লুকাতে পারবে না। বুরুজ সম্বলিত আকাশ, প্রতিশ্রুতি দিবস এবং সাক্ষী ও সাক্ষ্য দেয়া জিনিস, এই সব কয়টি শপথ একত্রিত হয়েছে এ জন্যে যে, যে পরিবেশে অচিরেই আসহাবুল উখদুদের ঘটনা বর্ণনা করা হবে, সেখানে এর গুরুত্ব, বিরাটত্ব ও বিশালত্বের ধারণা যেন দেয়া যায়। তাছাড়া সেই ব্যাপক ও বিস্তৃত প্রেক্ষাপটের প্রতিও ইংগিত এসেছে যেখানে এ ঘটনা পেশ করা হয়েছে, তার যথাযথ মূল্যায়ন করা হয়েছে এবং তার হিসাব স্পষ্ট করা হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে স্বয়ং পৃথিবীর চেয়েও বড় এবং পার্থিব জীবন ও তার সীমিত আয়ুষ্কালের চেয়ে প্রশস্ততার। পরিবেশ ও প্রেক্ষাপট অংকনের কাজটি সমাপ্ত হবার পর অতিদ্রুত মূল ঘটনার প্রতি ইংগিত করা হয়েছে। ‘ধ্বংস হোক গর্তের অধিপতিরা, যে গর্তে কুন্ডলি পাকানো আগুন ছিলো । তারা সেই কুন্ডের পাশে উপবিষ্ট ছিলো আর মোমেনদের সাথে তারা যে আচরণ করেছিলো তা স্বচক্ষে দেখছিলো ৷ এই মোমেনদের সাথে তাদের শত্রুতা ছিলো শুধু এ কারণে যে, তারা সেই আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছিলো যিনি প্রবল পরাক্রান্ত ও প্রশংসিত, যিনি আকাশ ও পৃথিবীর মালিক এবং আল্লাহ তায়ালা সকল (ঘটনা ও সকল) জিনিসেরই দ্রষ্টা ।’ ঘটনাটির বর্ণনা শুরু হয়েছে উখদুদ তথা কুন্ডের অধিপতিদের বিরুদ্ধে প্রচন্ড প্রতিশোধ গ্রহণের ঘোষণার মাধ্যমে ৷ ‘কুতিলা’-‘ধ্বংস হয়েছে শব্দটি ক্রোধ ও আক্রোশের অর্থ বহন করে। আল্লাহর এই ক্রোধ ও আক্রোশ অগ্নিকুন্ড প্রজ্বলনকারী গোষ্ঠীর ওপর নিপতিত ৷ এ দ্বারা এ কথাও বুঝানো হয়েছে যে, অপরাধটি এতই নিকৃষ্ট ও ঘৃণ্য যে, তা মহা ধৈর্যশীল আল্লাহরও ক্রোধের উদ্রেক করেছে এবং তাঁকে প্রতিশোধ গ্রহণ, তাদেরকে হত্যা ও ধ্বংসের হুমকি প্রদান পর্যন্ত উদ্বুদ্ধ করেছে। এরপর ‘উখদুদ’ শব্দটির তাফসীর করা হয়েছে যে কথাটি দ্বারা, তা হচ্ছে ‘ইন্ধনপূর্ণ যে কুন্ডে ছিলো আগুন ।’ ‘উখদুদ’ হচ্ছে পরিখা । পরিখা খননকারীরা তা খনন করার পর তাকে আগুন দিয়ে ভরে দেয়। এভাবে তা এক ভয়াবহ লেলিহান অগ্নিকুন্ডে পরিণত হয়।’অগ্নিকুন্ডের অধিবাসীরা ধ্বংস হোক ।’ বাস্তবিক পক্ষে তারা এই আক্রোশ ও প্রতিশোধ গ্রহণের যোগ্য । বিশেষত যে পরিস্থিতিতে তারা ওই অপরাধটি সংঘটিত করেছিলো । ‘যখন তারা তার পাশে উপবিষ্ট ছিলো এবং মোমেনদের সাথে কৃত আচরণ প্রত্যক্ষ করছিলো ।’ এ কথাটা দ্বারা তাদের নীতি ও অবস্থান নির্দেশ করা হচ্ছে, তারা অগ্নিকুন্ডের পাশে বসে আগুন জ্বালাচ্ছিলো এবং মোমেন নারী ও পুরুষদেরকে ধরে ধরে তাতে নিক্ষেপ করছিলো । তারা এই পৈশাচিক ও মর্মন্তুদ ঘটনার অতি কাছে অবস্থান করছিলো। তারা নির্যাতনের বিভিন্ন রূপ ও স্তর এবং দেহে আগুনের দহনক্রিয়া উল্লাস সহকারে উপভোগ করছিলো । অন্য কথায় বলা যায়, তারা নিজ নিজ চেতনা ও অনুভূতিতে এই পৈশাচিক ও বর্বরোচিত দৃশ্য ধরে রাখছিলো। মোমেনরা কোনো অপরাধ করেনি এবং সে জন্যে তাদের ওপর কোনো প্রতিশোধ গ্রহণেরও প্রশ্ন ওঠেনি । ‘তাদের বিরুদ্ধে অগ্নিকুন্ডের অধিবাসীদের এছাড়া আর কোনো অভিযোগ ছিলো না যে, তারা….. আল্লাহ্‌ তায়ালা সকল জিনিসের প্রত্যক্ষকারী ।’ বস্তুত তাদের এটাই ছিলো একমাত্র অপরাধ যে, তারা একমাত্র আল্লাহর ওপর ঈমান এনেছিলো ৷ ‘আযীয’ অর্থ যা ইচ্ছা তা করার ক্ষমতাসম্পন্ন । ‘হামীদ’ অর্থ সর্বাবস্থায় প্রশংসনীয় এবং আপন অধিকার বলে প্রশংসিত, চাই অজ্ঞ লোকেরা তার প্রশংসা করুক বা না করুক। তিনিই ঈমান আনার ও এবাদাত করার উপযুক্ত । তিনি এককভাবে আকাশ ও পৃথিবীর সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক । তিনি সকল জিনিস প্রত্যক্ষ করেন ও সকল জিনিসে উপস্থিত থাকেন । তার ইচ্ছা প্রতিটি কর্মকান্ডের সাথে এমন অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক রাখে যেমন তিনি সেখানে উপস্থিত । মোমেনদের এবং অগ্নিকুন্ডের অধিপতিদের অবস্থা তিনি সরাসরি প্রত্যক্ষ করেছেন৷ এ উক্তিটি দ্বারা এমন একটি স্নেহের পরশ বুলানো হয় যা মোমেনদের মনকে আশ্বস্ত করে, আর স্বেচ্ছাচারী খোদাদ্রোহীদের প্রতি উচ্চারণ করে কঠোর হুঁশিয়ারি ৷ বস্তুত আল্লাহ তায়ালা ওই ঘটনার চাক্ষুষ দর্শক ছিলেন, আর চাক্ষুষ দর্শক হিসাবে আল্লাহ তায়ালাই যথেষ্ট মাত্র এই কয়টি ক্ষুদ্র আয়াতেই ঘটনার বিবরণ দেয়া শেষ হয়েছে। আর তা এমন ভাষায় দেয়া হয়েছে যে, মানুষের মন এই নারকীয় হত্যাকান্ডের বিরুদ্ধে ও এর হোতাদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ও ধিক্কারে ভরে ওঠে, আর ঘটনার নেপথ্যে এর সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়া নিয়ে ভাবতেও অনুপ্রাণিত করে। আল্লাহর কাছে এ ঘটনার মূল্যায়ন কী হতে পারে এবং এর হোতারা তাঁর পক্ষ থেকে কিরূপ ক্রোধ ও প্রতিশোধের সম্মুখীন হতে পারে, সে সম্পর্কেও চিন্তাভাবনা করতে উদ্বুদ্ধ করে। বস্তুত এ অপরাধের এখানেই পরিসমাপ্তি ঘটেনি, বরং আল্লাহর হিসাবে এর আরো অনেক কিছু ঘটতে বাকী রয়েছে, যা ঘটবে পরকালীন জীবনে । অনুরূপভাবে ঘটনাটির বিবরণ এমনভাবে সমাপ্ত হয়েছে যে, ঈমানকে এমন কঠিন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে দেখে, আকীদা বিশ্বাসকে জীবনের ব্যাপারে এমন বেপরোয়া হতে দেখে এবং দৈহিক নির্যাতন ও পার্থিব স্বার্থকে উপেক্ষা করে সামনে এগিয়ে যেতে দেখে পাঠকমাত্রেই অভিভূত হয়ে যায়। ঈমানের পরাজয় মেনে নিয়ে জীবনটাকে বাঁচানো হয়তো মোমেনদের পক্ষে সম্ভবপর ছিলো । কিন্তু এভাবে জীবন বাচালে আখেরাতের পূর্বে এই দুনিয়াতে তারা ব্যক্তিগতভাবেই বা কতোখানি ক্ষতিগ্রস্ত হতেন, আর গোটা মানবজাতিই বা তাতে কতোখানি ক্ষতিগ্রস্ত হতো, সেটা ভেবে দেখা দরকার। নিহত হওয়ায় জীবনের সার্থকতা কি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে? জীবনের সার্থকতা বলতে বুঝা যায় আদর্শবান জীবন । কেননা আদর্শ ছাড়া জীবন অর্থহীন । আর স্বাধীনতা ছাড়া জীবন মর্যাদাহীন । খোদাদ্রোহীরা যদি মানুষের দেহকে কবযা করার পর তার আত্মার ওপরও আধিপত্য বিস্তার করে, তাহলে সে জীবনকে মানবেতর জীবন ছাড়া আর কিছু বলা যায় না। বস্তুত এটা হচ্ছে অত্যন্ত মহান তাৎপর্য ও বিরাট সার্থকতা ৷ ‘আসহাবুল উখদুদের’ ঘটনায় যে মোমেনরা অগ্নিকুন্ডে জীবন্ত দগ্ধ হন তাদের জীবন এই তাৎপর্যের দিক দিয়ে সফল ও সার্থক । যখন তারা আগুনের স্পর্শ অনুভব করছিলো এবং তাদের দেহ দগ্ধ হচ্ছিলো, তখন তারা এ সার্থকতা অর্জন ও অনুভব করেছে। এ মহান সার্থকতা ও তাৎপর্য আগুনের দহনক্রিয়ার মাধ্যমে বিশুদ্ধ হয়ে তাদের জীবনকে সাফল্যমন্ডিত করেছে। এরপর তাদের প্রতিপালকের কাছে তাদের জন্যে সংরক্ষিত রয়েছে এক পরিণাম। আর তাদের শত্রু খোদাদ্রোহীদের জন্যে রয়েছে ভিন্ন পরিণাম। পরবর্তী আয়াতগুলোতে বিবরণ আসছে ।

সুরা: আল-বুরুজ
আয়াত নং :-10

اِنَّ الَّذِیْنَ فَتَنُوا الْمُؤْمِنِیْنَ وَ الْمُؤْمِنٰتِ ثُمَّ لَمْ یَتُوْبُوْا فَلَهُمْ عَذَابُ جَهَنَّمَ وَ لَهُمْ عَذَابُ الْحَرِیْقِؕ

যারা মু’মিন পুরুষ ও নারীদের ওপর জুলুম-নিপীড়ন চালিয়েছে, তারপর তা থেকে তওবা করেনি, নিশ্চিতভাবেই তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের আযাব এবং জ্বালা-পোড়ার শাস্তি।

ফী জিলালিল কুরআন:

‘যারা মোমেন নারী ও পুরুষদেরকে নির্যাতন করেছে এবং তারপর তাওবা করেনি, তাদের জন্যে রয়েছে জাহান্নামের আযাব ও দহন যন্ত্রণা। আর যারা ঈমান এনেছে ও সৎকাজ করেছে, তাদের জন্যে রয়েছে বাগিচাসমূহ, যার নিচ দিয়ে ঝর্ণাসমূহ প্রবাহিত হবে। বস্তুত ওটাই হচ্ছে বিরাট সাফল্য ।’ পৃথিবীতে ও পার্থিব জীবনে যা কিছু ঘটে, তা শেষ ঘটনা নয় এবং যাত্রাপথের শেষ প্রান্তও নয়। বাকী অংশ পরকালীন জীবনে আসবে । যে পরিণাম মোমেন ও খোদাদ্রোহীদের জন্যে নির্দিষ্ট রয়েছে, তা যথাসময়ে অনিবার্যভাবেই দেখা দেবে। ‘যারা মোমেন নারী ও পুরুষদেরকে নির্যাতনের শিকার করেছে …….. তাদের সেই ভ্রান্ত নীতিতে অবিচল থেকেছে এবং নিজেদের কৃতকর্মের ব্যাপারে অনুতপ্ত হয়নি এবং তাওবা করেনি, তাদের জন্যে রয়েছে জাহান্নামের আযাব এবং দহনের আযাব ।’ এখানে ‘দহন’ শব্দটি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, যদিও ‘জাহান্নামের আযাব’ কথাটা দ্বারাই তা বুঝা যায় এবং আলাদাভাবে উল্লেখ করার প্রয়োজন হয় না। এভাবে উল্লেখ করার উদ্দেশ্য হলো, ‘উখদুদ’ বা পরিখায় যে দহন যন্ত্রণা দেয়া হয়েছে, তার বিপরীতে এই শব্দ দ্বারা আর একটি দহন যন্ত্রণার বর্ণনা দেয়া । কিন্তু কোথায় সেই দহন আর কোথায় এই দহন? কি তীব্রতায় এবং কি দীর্ঘস্থায়ীত্বে- এ দুই দহন যন্ত্রণার কোনো তুলনাই হয় না। দুনিয়ার দহন-যন্ত্রণা যে আগুন দিয়ে দেয়া হয়, সে আগুন জ্বালায় মানুষ আর আখেরাতের দহন-যন্ত্রণা যে আগুন দিয়ে দেয়া হয়, তা স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা জ্বালান । দুনিয়ার দহনক্রিয়া কয়েক মুহূর্ত স্থায়ী হয় এবং শেষ হয়ে যায় । আর আখেরাতের দহন এতো দীর্ঘস্থায়ী হবে যে, আল্লাহ তায়ালা ছাড়া আর কেউ তার পরিমাপ জানে না। পার্থিব জীবনে যে মোমেনরা দহন-যন্ত্রণায় ভোগেন, তারা আল্লাহর সম্তোষও লাভ করেন। এবং মানব জীবনের সুমহান সার্থকতা ও তাৎপর্য অর্জন করে সফল হন। পক্ষান্তরে আখেরাতের দহন যন্ত্রণার সাথে আল্লাহর ক্রোধও সংযুক্ত রয়েছে এবং সেই সাথে রয়েছে লাঞ্চনা, অপমান ও ধিক্কার ।

সুরা: আল-বুরুজ
আয়াত নং :-11

اِنَّ الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا وَ عَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ لَهُمْ جَنّٰتٌ تَجْرِیْ مِنْ تَحْتِهَا الْاَنْهٰرُ١ۣؕ۬ ذٰلِكَ الْفَوْزُ الْكَبِیْرُؕ

যারা ঈমান এনেছে ও সৎকাজ করেছে নিশ্চিতভাবেই তাদের জন্য রয়েছে জান্নাতের বাগান যার নিম্নদেশে প্রবাহিত হতে থাকবে ঝরণাধারা। এটিই বড় সাফল্য।

ফী জিলালিল কুরআন:

  যারা ঈমান এনেছে ও সৎকাজ করেছে, বেহেশতে তাদের ওপর বর্ষিত হবে আল্লাহর সন্তোষ ও অনুগ্রহ ৷ বস্তুত এটাই হচ্ছে প্রকৃত মুক্তি এবং ‘এটাই বিরাট সাফল্য ।’ ‘আলফাওযু’ বলতে মুক্তি ও সাফল্য দুটোই বুঝায় । আখেরাতের আযাব থেকে নিষ্কৃতি লাভই যেখানে সাফল্য, সেখানে নিম্নদেশ দিয়ে ঝর্ণাধারা প্রবাহিত রয়েছে এমন বেহেশত লাভ করা যে আরো কতো বড় সাফল্য তা বলারই অপেক্ষা রাখে না। এই পরিণতি ও কর্মফল প্রদানের মাধ্যমে প্রক্রিয়াটি স্বীয় নির্দিষ্ট রূপে স্থিতি লাভ করে। বস্তুত এটাই ঘটনার প্রকৃত পরিণতি । পৃথিবীতে যেটুকু ঘটেছে, সেটি ঘটনার একটি প্রান্ত বা অংশ মাত্র ৷ এখানে তা শেষ হয়নি। ঘটনার এই প্রথম পর্যালোচনাটিতে এ কথাই বুঝানো হয়েছে, যাতে সে সময় মক্কায় অবস্থিত মুষ্টিমেয় সংখ্যক মোমেনের মনে এবং সর্বযুগের সকল নির্যাতিত মোমেন দলের মনে প্রবোধ দেয়া যায়।

সুরা: আল-বুরুজ
আয়াত নং :-16

فَعَّالٌ لِّمَا یُرِیْدُؕ

এবং তিনি যা চান তাই করেন।

ফী জিলালিল কুরআন:

আল্লাহর কিছু ছিফাত : এরপর ক্রমাগত পর্যালোচনা আসছে। ‘নিশ্চয় তোমার প্রতিপালকের পাকড়াও অত্যন্ত কঠিন ।’ এখানে পাকড়াওকে কঠিন বলে মন্তব্য করা ইতিপূর্বে বর্ণীত ঘটনার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। সেখানে একটি ক্ষুদ্র ও নগণ্য পাকড়াও এর দৃশ্য দেখানো হয়েছে। সেটিকে ওই পাকড়াও-এর হোতারা এবং সাধারণ মানুষরা বিরাট বড়ো ও নিদারুণ কঠিন ব্যাপার মনে করে। আসলে কঠিন পাকড়াও হচ্ছে সেই মহাপরাক্রমশালী ও দোর্দন্ডপ্রতাপশালী খোদার পাকড়াও, যিনি আকাশ ও পৃথিবীর রাজত্বের মালিক । ইতিহাসের একটি সীমিত সময়ে একটি সীমিত ভূখন্ডের ওপর আধিপত্য বিস্তারকারী দুর্বল ও নগণ্য লোকদের পাকড়াও সে তুলনায় তেমন কঠিন জিনিস নয়। বাক্যটির বাচনভংগি শ্রোতা অর্থাৎ রসূল (স.) ও বক্তা অর্থাৎ আল্লাহর মধ্যকার সম্পর্কের ওপর আলোকপাত করে । আল্লাহ তায়ালা বলেছেনঃ তোমার প্রতিপালকের পাকড়াও ….. অর্থাৎ তোমার সেই প্রতিপালক, যার প্রতিপালনের সাথে তুমি ওৎপ্রোতভাবে জড়িত এবং তার সহায়তার ওপর তুমি নির্ভরশীল……….. আর এই সম্পর্ক এ ক্ষেত্রে খুবই মূল্যবান। কেননা এখানে মোমেনদের নির্যাতনের দায়ে পাপিষ্ঠদের পাকড়াও হবার বর্ণনা রয়েছে। ‘নিশ্চয়ই তিনি প্রথম সৃষ্টি ও পুনসৃষ্টিকারী ।’ প্রথম সৃষ্টি ও পুনসৃষ্টি শব্দ দুটি দ্বারা যদিও মূলত ইহকালের জন্ম ও পরকালের পুনর্জন্মকে বুঝানো হয়ে থাকে, তথাপি এ দুটি সৃজন প্রক্রিয়া দিনরাত্রের প্রতি মুহূর্তে কার্যকর রয়েছে! প্রতি মুহূর্তে নতুন সৃজন চলছে এবং প্রতি মুহূর্তে যা পুরাতন হয়ে ধ্বংস ও মৃত্যুর মুখে পতিত হচ্ছে তার পুনসৃজন চলছে। গোটা বিশ্ব প্রকৃতিতে চলছে ক্রমাগত নব নব সৃজন এবং অব্যাহত প্রাচীনত্ব প্রাপ্তি ও বিলুপ্তি। আর এই চিরন্তন ও সর্বাত্মক সৃজন ও পুনসৃজন প্রক্রিয়ারই এ পর্যায়ে ‘উখদুদ’ বা পরিখার ঘটনা ঘটে । এর প্রকাশিত ফলাফলও ছিলো বাস্তব ও অদৃষ্ট তত্ত্বে একটা চলন্ত ও পালাক্রমিক ব্যাপার। সুতরাং বলা চলে, পরিখার এ ঘটনা ছিলো এক পুনসৃজন পালার সূচনা অথবা একটা প্রথম সৃষ্টির পুনরাবৃত্তি। আর এটা ছিলো শাশ্বত সৃজন প্রক্রিয়ারই একটি পালা মাত্র ৷ ‘আর তিনি ক্ষমাশীল মমতাময় ।’ ইতিপূর্বে ‘অতপর তাওবা করেনি’ উক্তিটির সাথে ক্ষমাশীলতার সম্পর্ক রয়েছে। এই ক্ষমাশীলতা আল্লাহর প্রবহমান দয়া ও অনুগ্রহের এক সীমাহীন ও অফুরন্ত প্রকাশ। এটি এমন এক চির উন্মুক্ত দুয়ার, যা কখনো কোনো তাওবাকারী বা প্রত্যাবর্তনকারীর মুখের ওপর বন্ধ করা হয় না, তা তার পাপ যতো বড় ও জঘন্য হোক না কেন। ‘মমতাময়তা’ গুণটি মোমেনদের অবস্থার সাথে সম্পৃক্ত । মোমেনরা তাদের দয়ালু স্মেহমমতাময় প্রভুকে সব কিছুর উর্ধে স্থান দিয়ে থাকে । আর আল্লাহ তায়ালা তার সেই বান্দাদের অবস্থান উন্নীত করেন, যারা তাকে ভালোবাসে এবং তাকে অন্য সব কিছুর ওপর স্থান দেয়। তিনি তাদের অবস্থান এতো উন্নত করেন যে, আল্লাহর অনুগ্রহ না হলে লেখনী দিয়ে তা বর্ণনা করা যায় না। সেই অবস্থান হচ্ছে আল্লাহ তায়ালা ও তার বান্দার মধ্যকার বন্ধুত্বের অবস্থান আর ‘মমতাময়তা’র অবস্থান হলো আল্লাহর প্রিয়তম ও ঘনিষ্ঠতমদের অবস্থান । যে বান্দারা নিজেদের নশ্বর জীবনকে তার জন্যে বিসর্জন দেয়, তাদের জীবনের মর্যাদা কতো উন্নীত হতে পারে ভেবে দেখার দাবী রাখে । পার্থিব জীবনের যে ক্ষণস্থায়ী যুলুম নির্যাতনকে তার প্রিয় বান্দারা হাসিমুখে বরদাশত করে, আল্লাহর এক ফোটা মিষ্টি স্নেহ, মমতা ও প্রীতির সামনে তা যে কতো তুচ্ছ ও নগণ্য, বলে বুঝানো কঠিন । দুনিয়ার কোন মানুষের গোলাম বা চাকর নফররা মনিবের মুখ থেকে একটি অতি ক্ষুদ্র উৎসাহবর্ধক বাক্য শুনলে কিংবা তাঁর মুখে বিন্দুমাত্র সন্তোষের লক্ষণ ফুটে উঠলে তার জন্যে জীবন বিলিয়ে দিতে প্রস্তুত হয়ে যায়। অথচ সে আল্লাহর একজন বান্দা এবং তারাও তারই বান্দা। তাহলে আল্লাহর বান্দাদের মধ্যকার অবস্থাটা কি রকম হওয়া উচিত? যিনি মহান আরশের অধিপতি, যার অবস্থান সর্বোচ্চে, যিনি মহীয়ান গরীয়ান, পরাক্রান্ত, তিনি যখন প্রীতি, স্নেহ ও মমতা মাখা স্বরে কথা বলেন ও নিজের দিকে আকৃষ্ট করেন, তখন তার প্রতি কিরূপ মনোভাব দেখানো উচিত? বস্তুত সেই মহান আরশের অধিপতি, স্নেহময় মালিকের মুখ থেকে যখন সামান্যতম সস্তোষের আভাস ফুটে উঠবে, তখন তার সামনে জীবন যন্ত্রণা, দুঃখ মুসিবত এবং যে কোনো মুল্যবান বা প্রিয় জিনিসকে তুচ্ছ মনে করা উচিত । ‘তিনি যা ইচ্ছা করেন তা করে ছাড়েন ।’ এটি তার এমন একটি গুণ, যা প্রতিনিয়ত ও সর্বক্ষণ কার্যকর থাকে। তিনি যা ইচ্ছা করেন করে ছাড়েন । সুতরাং তিনি ব্যাপকতম স্বাধীন ইচ্ছাশক্তির অধিকারী, যা ইচ্ছা করেন মনোনীত করেন, আর যা মনোনীত করেন তা বাস্তবায়িত করেন । এটা তার চিরস্থায়ী গুণ বৈশিষ্ট্য। কখনো তিনি ইচ্ছা করেন যে, মোমেনরা এই দুনিয়াতেই সফল ও বিজয়ী হোক। নিজের কোনো প্রজ্ঞা, সূক্ষ্মদর্শিতা, দূরদর্শিতা বা কৌশল জ্ঞানের খাতিরেই তিনি এরূপ ইচ্ছা করে থাকেন। আবার কখনো ইচ্ছা করেন যে, নির্যাতন নিপীড়নের ওপর ঈমান জয়ী হোক এবং নশ্বর দেহ বিলীন হয়ে যাক। এ রকম সিদ্ধান্তও তিনি নিয়ে থাকেন কোনো বৃহত্তর কল্যাণের খাতিরে । কখনো খোদাদ্রোহী যালেমদেরকে পৃথিবীতেই পাকড়াও করার সিদ্ধান্ত নেন, আবার কখনো তাদেরকে কেয়ামত পর্যন্ত অবকাশ দিতে চান ৷ এ সবই করেন তার নিজের কৌশল হিসাবে, যা কখনো ইহকালে কখনো পরকালে বাস্তবায়িত হয় । আর এসবই আল্লাহর পরিকল্পনার অধীনে হয়ে থাকে। এ হচ্ছে আল্লাহর ইচ্ছাধীন কাজের একটা দিক যা আলোচ্য ঘটনার সাথে এবং পরবর্তীতে আলোচিত ফেরাউন ও সামুদের ঘটনার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ । কিন্তু এছাড়া পৃথিবীতে প্রতিদিন যে ঘটনাসমূহ ঘটে থাকে তার পশ্চাতে এবং জীবন ও জগতের পেছনে আল্লাহর যে স্বাধীন, সার্বভৌম ও শর্তহীন ইচ্ছাশক্তি বিদ্যমান, তা সমস্ত বিশ্ব-চরাচরে ও প্রকৃতিতে সর্বক্ষণ কার্যকর রয়েছে । তিনি যা ইচ্ছা করেন তা যে করে ছাড়েন তার একটা নমুনা দেখুন পরবর্তী ঘটনা বর্ণনায়।

সুরা: আল-বুরুজ
আয়াত নং :-20

وَّ اللّٰهُ مِنْ وَّرَآئِهِمْ مُّحِیْطٌۚ

অথচ আল্লাহ‌ তাদেরকে ঘেরাও করে রেখেছেন।

ফী জিলালিল কুরআন:

‘তোমার কাছে কি ফেরাউন ও সামুদের বাহিনীর খবর পৌছেছে?’ এখানে দুটো লম্বা ঘটনার দিকে ইংগিত দেয়া হয়েছে। কেননা কোরআনে তাদের ঘটনা বহু জায়গায় বর্ণীত হয়েছে। তাই শ্রোতাদের এ ব্যাপারে কিছু জানা আছে ধরে নিয়েই এ কথা বলা হয়েছে। তাদের শক্তি ও যোগ্যতার প্রতি ইংগিত স্বরূপ তাদেরকে ‘বাহিনী’ বলা হয়েছে। এই দুই বাহিনীর ঘটনাবলী এবং তাদের ক্ষেত্রে আল্লাহ তায়ালা কিভাবে নিজের ইচ্ছা বাস্তবায়িত করেছেন তোমরা তা জানো কি? এই দুটো ঘটনাই নিজ নিজ ফলাফল ও প্রকৃতির দিক থেকে ভিন্ন ধরনের ৷ ফেরাউনের ক্ষেত্রে তো আল্লাহ তায়ালা তাকে ও তার বাহিনীকে ধ্বংস করে দিয়েছিলেন এবং বনী ইসরাঈল জাতিকে তার হাত থেকে মুক্ত করেছিলেন । তারপর বনী ইসরাঈলকে কিছুকাল পৃথিবীতে ক্ষমতা ও স্বাধীনতা দান করেন, যাতে তাদের দিয়ে তিনি নিজের কিছু ইচ্ছা ও পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করেন । আর সামুদ জাতিকে আল্লাহ তায়ালা ধ্বংস করে দেন এবং হযরত সালেহ (আ.)-কে ও তার মুষ্টিমেয় সংখ্যক মোমেন সংগীকে মুক্তি দেন। পরবর্তী সময় তারা কোনো রাজত্ব বা রাষ্ট্র হাতে পাননি । নিছক একটা ফাসেক জাতির আধিপত্য ও গোলামী থেকে মুক্তি পেয়েছেন। এ দুটি ঘটনায় আল্লাহর ইচ্ছার দুটি নমুনা এবং আল্লাহর দিকে দাওয়াত দান ও তার সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়ার দুটি ধরন দেখতে পাওয়া যায়। এরই তৃতীয় ধরন হলো ‘উখদুদের’ ঘটনা । মক্কার সংখ্যালঘু মোমেন দল এবং প্রত্যেক প্রজন্মের মোমেনদের জন্যে আল্লাহ তায়ালা এই সব কয়টি নমুনা পেশ করেছেন। পরিশেষে দুটি জোরদার ও বলিষ্ঠ মন্তব্য করা হয়েছে। এর প্রত্যেকটিতে রয়েছে একটি প্রতিবেদন এবং একটি চূড়ান্ত রায় ও সিদ্ধান্ত, ‘বরঞ্চ কাফেররা অবিশ্বাসের নীতিতেই অনড় রয়েছে। অথচ আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে তাদের আড়াল থেকে ঘেরাও করে ফেলবেন ।’ কাফেরদের নীতি ও অবস্থা হলো এই যে, তারা রসূল (স.)-কে তার দাওয়াতের ব্যাপারে মিথ্যুক সাব্যস্ত করার নীতি অব্যাহত রাখতে বদ্ধপরিকর ৷ ‘অথচ আল্লাহ্‌ তায়ালা তাদেরকে সবদিক থেকে ঘিরে রেখেছেন ।’ অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালা কি ভয়াবহ ক্রোধ ও গযব দ্বারা তাদেরকে ঘিরে রেখেছেন তা তারা জানেন না। আসলে সর্বব্যাপী ঝড়-বন্যায় আটকে পড়া ইঁদুরের চেয়েও তারা দুর্বল।

সুরা: আল-বুরুজ
আয়াত নং :-22

فِیْ لَوْحٍ مَّحْفُوْظٍ۠

সংরক্ষিত ফলকে লিপিবদ্ধ।

ফী জিলালিল কুরআন:

‘বরঞ্চ তা হচ্ছে মহান কোরআন, যা মহান ফলকে সংরক্ষিত রয়েছে।’ ‘মজীদ’” শব্দের অর্থ হচ্ছে উন্নত, মহান, গৌরবময় ৷ সুতরাং আল্লাহর কথার চেয়ে উন্নত, মহৎ ও গৌরবময় কথা আর কারো নেই। এটি রয়েছে সংরক্ষিত স্থানে । ‘লাওহে মাহফুয’ কি বা কেমন আমরা জানতে পারি না। কেননা এটি অদৃশ্য জ্ঞানের আওতাভুক্ত, যা আল্লাহ তায়ালা ছাড়া আর কারোই জানা নেই । আমরা কেবল ওহীকৃত বচনের কিছু ভাব ও ইংগিতটুকুই বুঝতে পারি। এ বচনটুকু থেকে আমরা শুধু এতটুকু বুঝেছি যে, এই কোরআন সংরক্ষিত ও চিরস্থায়ী । এর প্রতিটি উক্তি সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অকাট্য ও চূড়ান্ত বক্তব্য । দুনিয়ার সব বাণীই অরক্ষিত, একমাত্র কোরআনের বাণী সংরক্ষিত। কাজেই উখদুদের ঘটনা ও তার নেপথ্য রহস্য সম্পর্কে কোরআন যা কিছু বলেছে, তাও অকাট্য, চূড়ান্ত ও শেষ কথা ।

তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন:-

(৮৫-বুরুজ) : নামকরণ:

প্রথম আয়াতে اَلْبُرُوْجَ শব্দটিকে এর নাম হিসেবে গণ্য করা হয়েছে।

(৮৫-বুরুজ) : নাযিল হওয়ার সময়-কাল :

এর বিষয়বস্তু থেকেই একথা সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, এ সূরাটি মক্কা মুয়ায্‌যমায় এমন এক সময় নাযিল হয় যখন মুশরিকদের জুলুম-নিপীড়ন তুংগে উঠেছিল এবং তারা কঠিনতম শাস্তি দিয়ে মুসলমানদের ইসলাম থেকে বিচ্যূত করার চেষ্টা করছিল।

(৮৫-বুরুজ) : বিষয়বস্তু ও মূল বক্তব্য :

এর মূল বিষয়বস্তু হচ্ছে, ঈমানদারদের ওপর কাফেররা যে জুলুম করছিল সে সম্পর্কে তাদেরকে সতর্ক করা এবং ঈমানদারদেরকে এই মর্মে সান্ত্বনা দেয়া যে, যদি তারা এসব জুলুম-নিপীড়নের মোকাবিলায় অবিচল থাকে তাহলে তারা এর জন্য সর্বোত্তম পুরস্কার পাবে এবং আল্লাহ নিজেই জালেমদের থেকে বদলা নেবেন।

এ প্রসংগে সর্বপ্রথম আসহাবুল উখদূদের (গর্ত ওয়ালাদের) কাহিনী শুনানো হয়েছে। তারা ঈমানদারদেরকে আগুনে ভরা গর্তে ফেলে দিয়ে পুড়িয়ে মেরেছিল। এ কাহিনীর মাধ্যমে মু’মিন ও কাফেরদেরকে কয়েকটি কথা বুঝানো হয়েছে।

এক, গর্তওয়ালারা যেমন আল্লাহর অভিশাপ ও তাঁর শাস্তির অধিকারী হয়েছে তেমনি মক্কার মুশরিক সরদাররাও তার অধিকারী হচ্ছিল।

দুই, ঈমানদাররা যেমন তখন ঈমান ত্যাগ করার পরিবর্তে আগুনে ভরা গর্তে নিক্ষিপ্ত হয়ে জীবন দেয়াকে বেছে নিয়েছিল, ঠিক তেমনিভাবে এখনও ঈমানদারদের ঈমানের পথ থেকে সামান্যতমও বিচ্যূত না হয়ে সব রকমের কঠিনতম শাস্তি ভোগ করা উচিত।

তিন, যে আল্লাহকে মেনে নেবার কারণে কাফেররা বিরোধী হয়ে গেছে এবং ঈমানদাররা তাদের মেনে নেবার ওপর অবিচল রয়েছে, তিনি সবার ওপর ক্ষমতাশালী ও বিজয়ী, তিনি পৃথিবী ও আকাশের কর্তৃত্বের অধিকারী, নিজের সত্তায় তিনি নিজেই প্রশংসার অধিকারী এবং তিনি উভয় দলের অবস্থা দেখছেন। কাজেই নিশ্চিতভাবেই কাফেররা তাদের কুফরীর কারণে কেবল জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করবে না বরং এই সংগে নিজেদের জুলুম-নিপীড়নের শাস্তিও তারা ভোগ করবে আগুনে দগ্ধীভূত হয়ে। অনুরূপভাবে যারা ঈমান এনে সৎকাজ করেছে তারা নিশ্চিতভাবে জান্নাতে যাবে এবং এটিই বৃহত্তম সাফল্য।

তারপর কাফেরদেরকে এ মর্মে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে যে, আল্লাহ অত্যন্ত শক্ত ও কঠোরভাবে পাকড়াও করে থাকেন। যদি তোমরা নিজেদের বিরাট দলীয় শক্তির ওপর ভরসা করে থাকো তাহলে তোমাদের চাইতে বড় দলীয় শক্তির অধিকারী ছিল ফেরাউন ও সামূদরা। তাদের সেনাবাহিনীর পরিণাম থেকে তোমরা শিক্ষা গ্রহণ করো। আল্লাহর অসীম শক্তি তোমাদেরকে চারদিক থেকে ঘিরে আছে। এই ঘেরাও কেটে বের হবার ক্ষমতা তোমাদের নেই। আর যে কুরআনকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করার জন্য তোমরা সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছো, তার প্রত্যেকটি শব্দ অপরিবর্তনীয়। এই কুরআনের প্রতিটি শব্দ লওহে মাহফুযের গায়ে এমনভাবে খোদিত আছে যে হাজার চেষ্টা করেও কেউ তা বদলাতে পারবে না।

সুরা: আল-বুরুজ
আয়াত নং :-1
টিকা নং:1,

وَ السَّمَآءِ ذَاتِ الْبُرُوْجِۙ

কসম মজবুত দুর্গ বিশিষ্ট আকাশের১

তাফসীর :
তাফহীমুল কুরআন:

টিকা:১) মূলে دَاتِ البُرُوْج বলা হয়েছে। অর্থাৎ বুর্জ বিশিষ্ট আকাশ। প্রাচীন জ্যোতির্বিদ্যা অনুযায়ী মুফাসসিরগণের কেউ কেউ এ থেকে আকাশের বারটি বুর্জ অর্থ করেছেন। অন্যদিকে ইবনে আব্বাস (রা.), মুজাহিদ, কাতাদাহ, হাসান বসরী, যাহহাক ও সুদ্দীর মতে এর অর্থ হচ্ছে, আকাশের বিশাল গ্রহ ও তারকাসমূহ।

সুরা: আল-বুরুজ
আয়াত নং :-3
টিকা নং:3,

وَ شَاهِدٍ وَّ مَشْهُوْدٍؕ

আর যে দেখে তার এবং সেই জিনিসের যা দেখা যায়।৩

তাফসীর :
তাফহীমুল কুরআন:

টিকা:৩) যে দেখে এবং যা দেখা যায়— এ ব্যাপারে মুফাসসিরগণের বিভিন্ন বক্তব্য পাওয়া যায়। কিন্তু আমার মতে বক্তব্যের ধারাবাহিকতার সাথে যে কথাটি সম্পর্ক রাখে সেটি হচ্ছে, যে দেখে বলতে এখানে কিয়ামতের দিন উপস্থিত প্রত্যেক ব্যক্তিকে এবং যা দেখা যায় বলতে কিয়ামতকেই বুঝানো হয়েছে। কিয়ামতের ভয়াবহ ও লোমহর্ষক ঘটনাবলী সেদিন যারা দেখে তারা প্রত্যেকেই দেখবে। এটি মুজাহিদ, ইকরামা, যাহহকা, ইবনে নুজাইহ্ এবং অন্যান্য কতিপয় মুফাসসিরের বক্তব্য।

সুরা: আল-বুরুজ
আয়াত নং :-7
টিকা নং:4,

وَّ هُمْ عَلٰى مَا یَفْعَلُوْنَ بِالْمُؤْمِنِیْنَ شُهُوْدٌؕ

এবং ঈমানদারদের সাথে তারা যাকিছু করছিল তা দেখছিল।৪

তাফসীর :
তাফহীমুল কুরআন:

টিকা:৪) যারা বড় বড় গর্তের মধ্যে আগুন জ্বালিয়ে ঈমানদারদেরকে তার মধ্যে ফেলে দিয়েছিল এবং তাদের জ্বলে পুড়ে মরার বীভৎস দৃশ্য নিজেদের চোখে দেখেছিল তাদেরকে এখানে গর্তওয়ালা বলা হয়েছে। মারা পড়েছে অর্থ তাদের ওপর আল্লাহর লানত পড়েছে এবং তারা আল্লাহর আযাবের অধিকারী হয়েছে। এ বিষয়টির জন্য তিনটি জিনিসের কসম খাওয়া হয়েছে। প্রথম বুর্জ বিশিষ্ট আকাশের, দ্বিতীয় কিয়ামতের দিনের, যার ওয়াদা করা হয়েছে। তৃতীয় কিয়ামতের ভয়াবহ ও লোমহর্ষক দৃশ্যাবলীর এবং সেই সমস্ত সৃষ্টির যারা এ দৃশ্যাবলী প্রত্যক্ষ করবে। প্রথম জিনিসটি সাক্ষ্য দিচ্ছে, যে সর্বময় ক্ষমতাসম্পন্ন মহাশক্তিধর সত্ত্বা বিশ্ব-জাহানের বিশাল তারকা ও গ্রহরাজির ওপর কর্তৃত্ব করছেন তাঁর পাকড়াও থেকে এ তুচ্ছ নগণ্য মানুষ কেমন করে বাঁচতে পারে? দ্বিতীয় জিনিসটির কসম এজন্য খাওয়া হয়েছে যে, দুনিয়ায় তারা ইচ্ছামতো জুলুম করেছে কিন্তু এমন একটি দিন অবশ্যি আসবে যেদিনটি সম্পর্কে সমস্ত মানুষকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে যে সেদিন প্রত্যেক মজলুমের বদলা দেয়া হবে এবং প্রত্যেক জালেমকে পাকড়াও করা হবে। তৃতীয় জিনিসটির কসম খাওয়ার কারণ হচ্ছে এই যে, এ জালেমরা যেভাবে ওই ঈমানদারদের জ্বলে পুড়ে মরার দৃশ্য দেখেছে ঠিক তেমনি কিয়ামতের দিন এদের শাস্তি দেয়ার দৃশ্য সমগ্র সৃষ্টি প্রত্যক্ষ করবে।

গর্তে আগুন জ্বালিয়ে ঈমানদারদেরকে তার মধ্যে নিক্ষেপ করার একাধিক ঘটনা হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। এ থেকে জানা যায়, এ ধরণের জুলুম ও নিপীড়নমূলক ঘটনা দুনিয়ায় কয়েকবার ঘটেছে।

হযরত সুহাইব রুমী (রা) এ ধরণের একটি ঘটনা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন। ঘটনাটি হচ্ছেঃ এক বাদশার কাছে একজন যাদুকর ছিল। বৃদ্ধ বয়সে সে বাদশাকে বললো, একটি ছেলেকে আমার কাছে নিযুক্ত করো, সে আমার কাছ থেকে এ যাদু শিখে নেবে। বাদশাহ যাদু শেখার জন্য যাদুকরের কাছে একটি ছেলেকে নিযুক্ত করলো। কিন্তু সেই ছেলেটি যাদুকরের কাছে আসা যাওয়ার পথে একজন রাহেবের (যিনি সম্ভবত হযরত ঈসা আলাইহিস সালামের দ্বীনের অনুসারী একজন সাধক ছিলেন) সাক্ষাত করতে লাগলো। তাঁর কথায় প্রভাবিত হয়ে সে ঈমান আনলো। এমন কি তাঁর শিক্ষার গুণে সে অলৌকিক শক্তির অধিকারীও হয়ে গেলো। সে অন্ধদের দৃষ্টি শক্তি ফিরিয়ে দিতে এবং কুষ্ঠরোগ নিরাময় করতে লাগলো। ছেলেটি তাওহীদের প্রতি ঈমান এনেছে, একথা জানতে পেরে বাদশাহ প্রথমে রাহেবকে হত্যা করলো তারপর ছেলেটিকে হত্যা করতে চাইলো। কিন্তু কোন অস্ত্র দিয়েই এবং কোনভাবেই তাকে হত্যা করতে পারলো না। শেষে ছেলেটি বললো, যদি তুমি আমাকে হত্যা করতে চাও তাহলে প্রকাশ্য জনসমাবেশে بِاسْمِ رَبِّ الْغُلَمِ “বিসমি রব্বিল গুলাম” (অর্থাৎ এই ছেলেটির রবের নামে) বাক্য উচ্চারণ করে আমাকে তীর মারো, তাতেই আমি মারা যাবো। বাদশাহ তাই করলো। ফলে ছেলেটি মারা গেলো। এ ঘটনা প্রত্যক্ষ করে লোকেরা চীৎকার করে উঠলো, আমরা এই ছেলেটির রবের প্রতি ঈমান আনলাম। বাদশাহর সভাসদরা তাকে বললো, এখন তো তাই হয়ে গেলো যা থেকে আপনি বাঁচতে চাচ্ছিলেন। লোকেরা আপনার ধর্ম ত্যাগ করে এ ছেলেটির ধর্মগ্রহণ করেছে। এ অবস্থা দেখে বাদশাহ অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হলো। সে রাস্তার পাশে গর্ত খনন করালো। তাতে আগুন জ্বালালো। যারা ঈমান ত্যাগ করতে রাজী হলো না তাদের সবাইকে তার মধ্যে নিক্ষেপ করলো। (মুসনাদে আহমাদ, মুসলিম, নাসায়ী, তিরমিযী, ইবনে জারীর, আবদুর রাজ্জাক, ইবনে আবী শাইবা, তাবারানী, আবদ ইবনে হুমাইদ)

দ্বিতীয় ঘটনাটি বর্ণনা করেছেন হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু। তিনি বলেন, ইরানের এক বাদশাহ শরাব পান করে নিজের বোনের সাথে ব্যভিচার করে এবং উভয়ের মধ্যে অবৈধ সম্পর্ক স্থাপিত হয়ে যায়। কথাটি প্রকাশ হয়ে গেলে বাদশাহ জনসম্মুখে ঘোষণা করে দেয় যে, আল্লাহ‌ বোনের সাথে বিয়ে হালাল করে দিয়েছেন। লোকেরা তার একথা মানতে প্রস্তুত হয় না। ফলে সে নানান ধরণের শাস্তি দিয়ে লোকদের একথা মানতে বাধ্য করতে থাকে। এমনকি সে অগ্নিকুণ্ড জ্বালিয়ে যে ব্যক্তি তার একথা মানতে প্রস্তুত হয়নি তাকে তার মধ্যে নিক্ষেপ করতে থাকে। হযরত আলী (রা.) বলেন, সে সময় থেকেই অগ্নি উপাসকদের মধ্যে রক্ত সম্পর্কের আত্মীয়কে বিয়ে করার পদ্ধতি প্রচলিত হয়। (ইবনে জারীর)

তৃতীয় ঘটনাটি হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) সম্ভবত ইসরাঈলী বর্ণনা থেকে উদ্ধৃত করেছেন। তিনি বলেনঃ বেবিলনের অধিবাসীরা বনী ইসরাঈলকে হযরত মূসা আলাইহিস সালামের দ্বীন থেকে বিচ্যূত করতে বাধ্য করেছিল। এমন কি যারা তাদের কথা মানতে অস্বীকার করতো তাদেরকে জ্বলন্ত ভরা গর্তে নিক্ষেপ করতো। (ইবনে জারীর, আবদ ইবনে হুমাইদ)

নাজরানের ঘটনাটিই সবচেয়ে বেশী প্রসিদ্ধি লাভ করেছে। ইবনে হিশাম, তাবারী, ইবনে খালদূন, মু’জামুল বুলদান গ্রন্থ প্রণেতা ইত্যাদি মুসলিম ঐতিহাসিকগণ এ ঘটনাটি বর্ণনা করেছেন। এর সংক্ষিপ্তসার হচ্ছেঃ হিময়ারের (ইয়ামন) বাদশাহ তুবান আসয়াদ আবু কারিবা একবার ইয়াসরিবে যায়। সেখানে ইহুদিদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে ইহুদি ধর্ম গ্রহণ করে এবং বনি কুরাইযার দু’জন ইহুদি আলেমকে সঙ্গে করে ইয়ামনে নিয়ে যায়। সেখানে সে ব্যাপকভাবে ইহুদি ধর্মের প্রচার চালায়। তারপর তার ছেলে যু-নুওয়াস তার উত্তরাধিকারী হয়। সে দক্ষিণ আরবে ঈসায়ীদের কেন্দ্রস্থল নাজরান আক্রমণ করে। সেখান থেকে ঈসায়ী ধর্মকে উৎখাত করা এবং সেখানকার অধিবাসীদেরকে জোরপূর্বক ইহুদি ধর্মে দীক্ষিত করাই ছিল তার লক্ষ্য। (ইবনে হিশাম বলেন, নাজরানবাসীরা হযরত ঈসার আসল দ্বীনের ওপর প্রতিষ্ঠিত ছিল।) নাজরান পৌঁছে সে লোকদেরকে ইহুদি ধর্মগ্রহণ করার আহবান জানায়। লোকেরা অস্বীকার করে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সে বিপুল সংখ্যক লোককে দাউ দাউ করে জ্বলা আগুনের কুয়ায় নিক্ষেপ করে জ্বালিয়ে দেয় এবং অনেককে হত্যা করে। এভাবে মোট বিশ হাজার লোক নিহত হয়। নাজরানবাসীদের মধ্য থেকে দাউস যু-সা’লাবান নামক এক ব্যক্তি কোনক্রমে প্রাণ রক্ষা করে পালিয়ে যায়। এক বর্ণনা মতে, সে রোমের কায়সারের দরবারে চলে যায় এবং অন্য একটি বর্ণনা মতে সে চলে যায় হাবশার (ইথিওপিয়া) বাদশাহ নাজ্জাসীর দরবারে। সেখানে সে এই জুলুমের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে। প্রথম বর্ণনা অনুযায়ী রোমের কায়সার হাবশার বাদশাকে লেখেন এবং দ্বিতীয় বর্ণনা অনুযায়ী নাজ্জাশী কায়সারে কাছে নৌবাহিনীর জাহাজ সরবরাহের আবেদন জানান। যাহোক সবশেষে হাবশার সত্তর হাজার সৈন্য আরইয়াত নামক একজন সেনাপতির পরিচালনাধীনে ইয়ামন আক্রমণ করে। যু-নুওয়াস নিহত হয়। ইহুদি রাষ্ট্রের পতন ঘটে। ইয়ামন হাবশার ঈসায়ী রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত হয়।

অন্যান্য ঐতিহাসিক তথ্য প্রমাণাদি থেকে মুসলিম ঐতিহাসিকদের এ বর্ণনার কেবল সত্যতাই প্রমাণিত হয় না বরং এ সম্পর্কিত আরো বিস্তারিত তথ্যাদিও জানা যায়। সর্বপ্রথম ৩৪০ খৃস্টাব্দে ইয়ামন হাবশার ঈসায়ীদের দখলে আসে। ৩৭৮ খৃঃ পর্যন্ত সেখানে তাদের রাজত্ব প্রতিষ্ঠিত থাকে। এ সময় ঈসায়ী মিশনারীরা ইয়ামনে প্রবেশ করতে শুরু করে। এরই নিকটবর্তী সময়ে ফেমিউন (Faymiyun) নামক একজন সংসার ত্যাগী সাধক পুরুষ, কাশফ ও কারামতের অধিকারী ঈসায়ী পর্যটক নাজরানে আসেন। তিনি স্থানীয় লোকদেরকে মূর্তি পূজার গলদ বুঝাতে থাকেন। তার প্রচার গুণে নাজরানবাসীরা ঈসায়ী ধর্মে দীক্ষিত হয়। সে সময় তিনজন সরদার তাদের শাসন ব্যবস্থা পরিচালনা করতেন। তাদের একজনকে বলা হতো সাইয়েদ। তিনি উপজাতীয় সরদারদের মতো একজন বড় সরদার ছিলেন। বিদেশ সংক্রান্ত বিষয়াবলী, সন্ধি চুক্তি এবং সেনাবাহিনী পরিচালনা তার দায়িত্বের অন্তর্ভুক্ত ছিল। দ্বিতীয় জনকে বলা হতো আকেব। তিনি আভ্যন্তরীণ বিষয়াবলী দেখাশুনা করতেন। তৃতীয় জনকে বলা হতো উসকুফ (বিশপ)। তিনি ছিলেন ধর্মীয় নেতা। দক্ষিণ আরবে নাজরান ছিল একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। এটি ছিল একটি বৃহত্তম বাণিজ্য ও শিল্প কেন্দ্র। এখানে তসর, চামড়া ও অস্ত্র নির্মাণ শিল্প উন্নতি লাভ করেছিল। প্রসিদ্ধ ইয়ামনী বর্মও এখানে নির্মিত হতো। এ কারণে নিছক ধর্মীয় কারণেই নয় বরং রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কারণেও যু-নুওয়াস এ গুরুত্বপূর্ণ স্থানটি আক্রমণ করে। নাজরানের সাইয়েদ হারেশাকে, সুরিয়ানী ঐতিহাসিকগণ যাকে Arethas বলেছেন, হত্যা করে। তার স্ত্রী রুমার সামনে তার দুই কন্যাকে হত্যা করে এবং তাদের রক্ত পান করতে তাকে বাধ্য করে। তারপর তাকেও হত্যা করে। উসকুফ বিশপ পলের (Paul) শুকনো হাড় কবর থেকে বের করে এনে জ্বালিয়ে দেয়। আগুন ভরা গর্তসমূহে নারী, পুরুষ, শিশু, যুবা, বৃদ্ধ, পাদরী, রাহেব সবাইকে নিক্ষেপ করে। সামগ্রিকভাবে ত্রিশ থেকে চল্লিশ হাজার লোক নিহত হয়েছিল বলা হয়। ৫২৩ খৃস্টাব্দে এ ঘটনা ঘটে। অবশেষে ৫২৫ খৃস্টাব্দে হাবশীরা ইয়ামন আক্রমণ করে যু-নুওয়াস ও তার হিমইয়ারী রাজত্বের পতন ঘটায়। প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষকগণ ইয়ামন হিসনে গুরাবের যে শিলালিপি উদ্ধার করেছেন তা থেকেও এর সত্যতা প্রমাণিত হয়।

খৃস্টীয় ষষ্ঠ শতকে ঈসায়ী লেখকদের বিভিন্ন লেখায় গর্তওয়ালাদের এই ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ পাওয়া যায়। এর মধ্যে মূল ঘটনার সময় এবং এ ঘটনা যারা প্রত্যক্ষ করেছিল তাদের বিবরণ সহকারে লিখিত বেশ কিছু গ্রন্থ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে তিনটি গ্রন্থের রচয়িতারা এই ঘটনার সমসাময়িক। তাদের একজন হচ্ছেনঃ প্রকোপিউস দ্বিতীয় জন কসমস ইনডিকোপ্লিউসটিস (Cosmos Indicopleustis) তিনি নাজ্জাশী এলিস বুয়ানের (Elesboan) নির্দেশে সে সময় বাতলিমুসের গ্রীক ভাষায় লিখিত বইগুলোর অনুবাদ করছিলেন। এ সময় তিনি হাবশার সমুদ্রোপকূলবর্তী এডোলিশ (Adolis) শহরে অবস্থান করছিলেন। তৃতীয় জন হচ্ছেন জোহান্নাস মালালা (Johnnes Malala)। পরবর্তী বহু ঐতিহাসিক তাঁর রচনা থেকে ঘটনাটি উদ্ধৃতি করেছেন। এদের পর এফেসুসের জোহান্নাসের (Johannes of Ephesus) নাম করা যায়। তিনি ৫৮৫ খৃস্টাব্দে মারা যান। তাঁর গীর্জার ইতিহাস গ্রন্থে নাজরানের ঈসায়ী সম্প্রদায়ের ওপর এই নিপীড়নের কাহিনী এ ঘটনার সমসাময়িক বর্ণনাকারী বিশপ শিমউনের (Simeon) একটি পত্র থেকে উদ্ধৃত করেছেন। এ পত্রটি লিখিত হয় জাবলা ধর্ম মন্দিরের প্রধানের (Abbot Von Gabula) নামে। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী বিভিন্ন ইয়ামনবাসীর বর্ণনার মাধ্যমে শিমউন তাঁর এই পত্রটি তৈরি করেন। এ পত্রটি ১৮৮১ খৃস্টাব্দে রোম থেকে এবং ১৮৮০ খৃস্টাব্দে ঈসায়ী শহীদানের অবস্থা বর্ণনা প্রসঙ্গে প্রকাশিত হয়।

ইয়াকূবী পত্রিয়ার্ক ডিউনিসিউস (Patriarch Dionysius) ও জাকারিয়া সিদলিনি (Zacharia of Mitylene) তাদের সুরিয়ানী ইতিহাসেও এ ঘটনাটি উদ্ধৃত করেছেন। নাজরানের ঈসায়ী সমাজ সম্পর্কিত ইয়াকূব সুরুজীর গ্রন্থেও এর উল্লেখ রয়েছে। আর রাহা (Edessa) এর বিশপ পোলাস (PULUS) নাজরানের নিহতদের উদ্দেশ্যে শোকগীতি লিখেছেন। এটি এখনো পাওয়া যায়। সুরিয়ানী ভাষার বই “আল হিময়ারীন” এর ইংরেজী অনুবাদ (Book of the Himyarites) ১৯২৪ সালে লণ্ডন থেকে প্রকাশিত হয়েছে। এ বইটি মুসলিম ঐতিহাসিকদের বর্ণনার সত্যতা প্রমাণ করে। বৃটিশ মিউজিয়ামে সেই আমলের এবং তার নিকটবর্তী আমলের কিছু ইথিয়োপীয় শিলালিপি সংরক্ষিত রয়েছে। এগুলো থেকেও এই ঘটনার সমর্থন পাওয়া যায়। কিলবি তাঁর Arabian Highlands নামক সফরনামায় লিখেছেনঃ গর্তওয়ালাদের ঘটনা যেখানে সংঘটিত হয়েছিল সে জায়গাটি আজও নাজরানবাসীদের কাছে সুস্পষ্ট। ‘উম্মু খারাক’ —এর কাছে এক জায়গায় পাথরের গায়ে খোদিত কিছু চিত্রও পাওয়া যায়। আর নাজরানের কাবা যেখানে প্রতিষ্ঠিত ছিল বর্তমান নাজরানবাসীরা সে জায়গাটিও জানে।

হাবশার ঈসায়ীরা নাজরান অধিকার করার পর সেখানে কাবার আকৃতিতে একটি ইমারত তৈরি করে। মক্কার কাবার মোকাবিলায় এই ঘরটিকে তারা কেন্দ্রীয় মর্যাদা দিতে চাচ্ছিল। এখানকার বিশপরা মাথায় পাগড়ী বাঁধতেন। এই ঘরকে তারা হারাম শরীফ গণ্য করেন। রোমান সম্রাটের পক্ষ থেকেও এই কাবাঘরের জন্য আর্থিক সাহায্য পাঠানো হতো। এই নাজরানের কাবার পাদরী তাঁর সাইয়েদ, আকেব ও উসকুফের নেতৃত্বে ‘মুনাযিয়া’ (বিতর্ক) করার জন্য নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দরবারে হাযির হয়েছিলেন। সেখানে যে বিখ্যাত ‘মুবাহিলা’র ঘটনা অনুষ্ঠিত হয় সূরা আলে ইমরানের ৬১ আয়াতে তা উল্লেখিত হয়েছে। (দেখুন তাফহীমুল কুরআন, আল ইমরান ২৯ ও ৫৫ টীকা )

সুরা: আল-বুরুজ
আয়াত নং :-9
টিকা নং:5,

الَّذِیْ لَهٗ مُلْكُ السَّمٰوٰتِ وَ الْاَرْضِ١ؕ وَ اللّٰهُ عَلٰى كُلِّ شَیْءٍ شَهِیْدٌؕ

যিনি আকাশ ও পৃথিবীর রাজত্বের অধিকারী। আর সে আল্লাহ‌ সবকিছু দেখছেন।৫

তাফসীর :
তাফহীমুল কুরআন:

টিকা:৫) এ আয়াতগুলোতে মহান আল্লাহর এমন সব গুণাবলীর উল্লেখ করা হয়েছে যেগুলোর মাধ্যমে তাঁর প্রতি ঈমান আনার অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আবার অন্যদিকে এগুলোর প্রতি ঈমান আনার কারণে যারা অসন্তুষ্ট ও বিক্ষুব্ধ হয় তারা জালেম।

সুরা: আল-বুরুজ
আয়াত নং :-10
টিকা নং:6,

اِنَّ الَّذِیْنَ فَتَنُوا الْمُؤْمِنِیْنَ وَ الْمُؤْمِنٰتِ ثُمَّ لَمْ یَتُوْبُوْا فَلَهُمْ عَذَابُ جَهَنَّمَ وَ لَهُمْ عَذَابُ الْحَرِیْقِؕ

যারা মু’মিন পুরুষ ও নারীদের ওপর জুলুম-নিপীড়ন চালিয়েছে, তারপর তা থেকে তওবা করেনি, নিশ্চিতভাবেই তাদের জন্য রয়েছে জাহান্নামের আযাব এবং জ্বালা-পোড়ার শাস্তি।৬

তাফসীর :
তাফহীমুল কুরআন:

টিকা:৬) জাহান্নামের আযাব থেকে আবার আলাদাভাবে জ্বালা-পোড়ার শাস্তির উল্লেখ করার কারণ হচ্ছে এই যে, তারা মজলুমদেরকে আগুনে ভরা গর্তে নিক্ষেপ করে জীবন্ত পুড়িয়েছিল। সম্ভবত এটা জাহান্নামের সাধারণ আগুন থেকে ভিন্ন ধরণের এবং তার চেয়ে বেশী তীব্র কোন আগুন হবে এ বিশেষ আগুনে তাদেরকে জ্বালানো হবে।

সুরা: আল-বুরুজ
আয়াত নং :-16
টিকা নং:7,

فَعَّالٌ لِّمَا یُرِیْدُؕ

এবং তিনি যা চান তাই করেন।৭

তাফসীর :
তাফহীমুল কুরআন:

টিকা:৭) “তিনি ক্ষমাশীল” বলে এই মর্মে আশান্বিত করা হয়েছে যে, কোন ব্যক্তি গোনাহ করা থেকে বিরত হয়ে যদি তাওবা করে তাহলে সে আল্লাহর রহমত লাভ করতে পারে। “প্রেমময়” বলে একথা বলা হয়েছে যে, তিনি নিজের সৃষ্টির প্রতি কোন শত্রুতা পোষণ করেন না। অযথা তাদেরকে শাস্তি দেয়া তাঁর কাজ নয়। বরং নিজের সৃষ্টিকে তিনি ভালোবাসেন। তাকে তিনি কেবল তখনই শাস্তি দেন যখন সে বিদ্রোহাত্মক আচরণ করা থেকে বিরত হয় না। “আরশের মালিক” বলে মানুষের মধ্যে এ অনুভূতি জাগানো হয়েছে যে সমগ্র বিশ্ব-জাহানের রাজত্বের তিনিই একমাত্র অধিপতি। কাজেই তাঁর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে কেউ তাঁর হাত থেকে নিস্তার পেতে পারে না। “শ্রেষ্ঠ সম্মানিত” বলে এ ধরণের বিপুল মর্যাদাসম্পন্ন সত্তার প্রতি অশোভন আচরণ করার হীন মনোবৃত্তির বিরুদ্ধে মানুষকে সতর্ক করা হয়েছে। তাঁর শেষ গুণটি বর্ণনা করে বলা হয়েছে, “তিনি যা চান তাই করেন।” অর্থাৎ আল্লাহ‌ যে কাজটি করতে চান তাতে বাধা দেবার ক্ষমতা এ সমগ্র বিশ্ব-জাহানে কারোর নেই।

সুরা: আল-বুরুজ
আয়াত নং :-18
টিকা নং:8,

فِرْعَوْنَ وَ ثَمُوْدَؕ

ফেরাউন ও সামূদের সেনাদলের?৮

তাফসীর :
তাফহীমুল কুরআন:

টিকা:৮) যারা নিজেদের দল ও জনশক্তির জোরে আল্লাহর এ যমীনে বিদ্রোহের ঝাণ্ডা বুলন্দ করছে এখানে তাদেরকে সম্বোধন করা হয়েছে। বলা হচ্ছে, তোমাদের কি জানা আছে, ইতিপূর্বে যারা নিজেদের দলীয় শক্তির জোরে এ ধরণের বিদ্রোহ করেছিল তাদের পরিণাম কি হয়েছিল?

সুরা: আল-বুরুজ
আয়াত নং :-22
টিকা নং:9,

فِیْ لَوْحٍ مَّحْفُوْظٍ۠

সংরক্ষিত ফলকে লিপিবদ্ধ।৯

তাফসীর :
তাফহীমুল কুরআন:

টিকা:৯) এর অর্থ হচ্ছে, এ কুরআনের লেখা অপরিবর্তনীয়। এর বিলুপ্তি হবে না। আল্লাহর এমন সংরক্ষিত ফলকে এর লেখাগুলো খোদিত রয়েছে যেখানে এর মধ্যে কোন রদবদল করার ক্ষমতা কারোর নেই। এর মধ্যে যে কথা লেখা হয়েছে তা অবশ্যি পূর্ণ হবে। সারা দুনিয়া একজোট হয়ে তাকে বাতিল করতে চাইলেও তাতে সফল হবে না

Leave a Reply