Motaher21.net
أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
( বই # ১২১৫/হে মানুষ:-২২)
[# তোমাদের নিয়ামতগুলো সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে!:-]
সুরা: ১০২:আত্- তাকাসুর
পারা:৩০
১- ৮ নং আয়াতের বেখ্যা :-
#তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন:-
#তাফসীরে ফী জিলালিল কুরআন:-
# তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ:-
# তাফসীরে ইবনে কাছীর:-
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book#1215/O Ye Mankind:-22]
[ # You will surely be asked that Day about pleasure:-]
Surah.102: At-Takaathur
Para:30 Ayat:- 1-8
www.motaher21.net
Motaher21.net
أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
( বই # ১২১৫/হে মানুষ:-২২)
[# তোমাদের নিয়ামতগুলো সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে!:-]
সুরা: ১০২:আত্- তাকাসুর
পারা:৩০
১- ৮ নং আয়াতের বেখ্যা :-
#তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন:-
#তাফসীরে ফী জিলালিল কুরআন:-
সুরা: আত-তাকাসুর
بِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِیْمِ
পরম করুণাময় মেহেরবান আল্লাহর নামে
* ভূমিকা:১০২
(১০২-তাকাসুর) : নামকরণ:
প্রথম শব্দ আত তাকাসুরকে (التَّكَاثُرُۙ ) এই সূরার নাম হিসেবে গণ্য করা হয়েছে।
(১০২-তাকাসুর) : নাযিল হওয়ার সময়-কাল :
আবু হাইয়ান ও শওকানী বলেন, সকল তাফসীরকার একে মক্কী সূরা গণ্য করেছেন। এ ব্যাপারে ইমাম সুয়ুতির বক্তব্য হচ্ছে, মক্কী সূরা হিসেবেই এটি বেশী খ্যাতি অর্জন করেছে। কিন্তু কিছু কিছু বর্ণনায় একে মাদানী সূরা বলা হয়েছে। যেমন: ইমাম আবু হাতেম আবু বুরাইদার (রা.) রেওয়ায়াত উদ্ধৃত করেছেন। তাতে বলা হয়েছে: বনী হারেসা ও বনিল হারস নামক আনসারদের দু’টি গোত্রের ব্যাপারে এ সূরাটি নাযিল হয়। উভয় গোত্র পরস্পরের বিরুদ্ধে প্রতিযোগিতামূলকভাবে প্রথমে নিজেদের জীবিত লোকদের গৌরবগাঁথা বর্ণনা করে। তারপর কবরস্থানে গিয়ে মৃত লোকদের গৌরবগাঁথা বর্ণনা করে। তাদের এই আচরণের ফলে আল্লাহর এই বাণী أَلْهَاكُمُ التَّكَاثُرُ নাযিল হয়। কিন্তু শানে নুযূল বা নাযিল হওয়ার কারণ ও উপলক্ষ্য বর্ণনার ব্যাপারে সাহাবায়ে কেরাম ও তাবেঈগণ যে পদ্ধতি অবলম্বন করেছেন তা সামনে রাখলে এই রেওয়ায়াত যে উপলক্ষ্যে বর্ণনা করা হয়েছে তাকে এই সূরা নাযিলের উপলক্ষ্য বলে মেনে নেবার সপক্ষে প্রমাণ হিসেবে গ্রহণ করা যায় না। বরং এ থেকে এই অর্থ গ্রহণ করা যায় যে, এই দু’টি গোত্রের কর্মকাণ্ডের সাথে সূরাটি খাপ খেয়ে যায়।
ইমাম বুখারী ও ইবনে জারীর হযরত উবাই ইবনে কাবের (রা.) একটি উক্তি উদ্ধৃত করেছেন। তাতে তিনি বলেছেন: “আমরা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এ বাণীটিকে لَوْ أَنَّ لِابْنِ آدَمَ وَادِيَيْنِ مِنْ مَالٍ لَتَمَنَّى وَادِيًا ثَالِثًا , وَلَا يَمْلَأُ جَوْفَ ابْنِ آدَمَ إِلَّا التُّرَابُ (বনী আদমের কাছে যদি দুই উপত্যকা সমান সম্পদ থাকে তারপরও সে তৃতীয় একটি উপত্যকা আকাঙ্ক্ষা করবে। আদম সন্তানের পেট মাটি ছাড়া আর কিছু দিয়ে ভরে না)— কুরআনের মধ্যে মনে করতাম। এমনকি শেষ পর্যন্ত আল হাকুমুত তাকাসুর সূরাটি নাযিল হয়।” হযরত উবাই মদীনায় মুসলমান হয়েছিলেন বলে এই হাদীসটিকে সূরা আত তাকাসুরের মদীনায় অবতীর্ণ হবার সপক্ষে প্রমাণ হিসেবে পেশ করা হয়। কিন্তু হযরত উবাইর এই বক্তব্য থেকে সাহাবায়ে কেরাম কোন্ অর্থে রসূলের এই বাণীকে কুরআনের মধ্যে মনে করতেন তা সুস্পষ্ট হয় না। যদি এর অর্থ এই হয়ে থাকে যে, তারা একে কুরআনের একটি আয়াত মনে করতেন তাহলে একথা মেনে নেয়া যেতে পারে না। কারণ সাহাবীগণের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ কুরআনের প্রতিটি হরফ সম্পর্কে অবহিত ছিলেন। এই হাদীসটিকে কুরআনের আয়াত মনে করার মতো ভুল ধারণা তাঁরা কেমন করে পোষণ করতে পারতেন! আর কুরআনের মধ্যে হবার মানে যদি কুরআন থেকে হওয়া মনে করা হয় তাহলে এই হাদীসটির এ অর্থও হতে পারে যে, মদীনা তাইয়েবায় যাঁরা মুসলমান হয়েছিলেন তাঁরা প্রথমবার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পবিত্র কণ্ঠে এই সূরা উচ্চারিত হতে শুনে মনে করেন, সূরাটি এই মাত্র নাযিল হয়েছে এবং রসূলের উপরোল্লিখিত বাণী সম্পর্কে তাঁরা মনে করতে থাকেন এটি এই সূরা থেকেই গৃহীত।
ইবনে জারীর, তিরমিযী ও ইবনুল মুনযির প্রমুখ মুহাদ্দিসগণ হযরত আলীর (রা.) একটি উক্তি উদ্ধৃত করেছেন। তাতে তিনি বলেছেন: “কবরের আযাব সম্পর্কে আমরা সব সময় সন্দেহের মধ্যে ছিলাম। এমন কি শেষ পর্যন্ত ‘আলহা-কুমুত তাকাসুর’ নাযিল হলো। হযরত আলীর (রা.) এই বক্তব্যটিকে এই সূরার মাদানী হবার প্রমাণ হিসেবে গণ্য করার কারণ হচ্ছে এই যে, কবরের আযাবের আলোচনা মদীনায় শুরু হয়। মক্কায় এ সম্পর্কে কোন আলোচনাই হয়নি। কিন্তু একথাটি আসলে ঠিক নয়। কুরআনের মক্কী সূরাগুলোর বিভিন্ন স্থানে এমন দ্ব্যর্থহীন ভাষায় কবরের আযাবের কথা বলা হয়েছে যে, এ সম্পর্কে সন্দেহের কোন অবকাশই সেখানে নেই। উদাহরণ স্বরূপ দেখুন সূরা আন’আম ৯৩ আয়াত, আন নামল ২৮ আয়াত, আল মু’মিনূন ৯৯-১০০ আয়াত, আল মু’মিন ৪৫-৪৬ আয়াত। এগুলো সবই মক্কী সূরা। তাই হযরত আলীর (রা.) উক্তি থেকে যদি কোন জিনিস প্রমাণ হয় তাহলে তা হচ্ছে এই যে, উপরোল্লিখিত মক্কী সূরাগুলো নাযিলের পূর্বে সূরা আত তাকাসুর নাযিল হয় এবং এই সূরাটি নাযিল হবার ফলে সাহাবীগণের মধ্যে বিরাজিত কবরের আযাব সম্পর্কিত সংশয় দূর হয়ে যায়।
এ কারণে এই হাদীসগুলো সত্ত্বেও মুফাস্সিরগণের অধিকাংশই এর মক্কী হবার ব্যাপারে একমত। আমার মতে এটি শুধু মক্কী সূরাই নয় বরং মক্কী জীবনের প্রথম দিকে অবতীর্ণ সূরাগুলোর অন্যতম।
(১০২-তাকাসুর) : বিষয়বস্তু ও মূল বক্তব্য:
এই সূরায় মানুষকে দুনিয়ার প্রতি ভালোবাসা ও বৈষয়িক স্বার্থ পূজার অশুভ পরিণাম সম্পর্কে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে। এই ভালোবাসা ও স্বার্থ পূজার কারণে মানুষ মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত বেশী বেশী ধন-সম্পদ আহরণ, পার্থিব লাভ, স্বার্থ উদ্ধার, ভোগ, প্রতিপত্তি, ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব লাভ এবং তার মধ্যে প্রতিযোগিতামূলকভাবে একজন আর একজনকে টপকে যাওয়ার প্রচেষ্টা চালিয়ে যায়। আর এসব অর্জন করার ব্যাপারে অহংকারে মত্ত থাকে। এই একটি মাত্র চিন্তা তাদেরকে এমনভাবে মশগুল করে রেখেছে যার ফলে এর চেয়ে উন্নততর কোন জিনিসের প্রতি নজর দেবার মানসিকতাই তাদের নেই। এর অশুভ পরিণতি সম্পর্কে সতর্ক করে দেবার পর লোকদেরকে বলা হয়েছে, এই যেসব নিয়ামত তোমরা নিশ্চিন্তে সংগ্রহ করতে ব্যস্ত, এগুলো শুধুমাত্র নিয়ামত নয় বরং এগুলো তোমাদের জন্য পরীক্ষার বস্তুও। এগুলোর মধ্য থেকে প্রত্যেকটি নিয়ামত সম্পর্কে তোমাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
ফী জিলালিল কুরআন:
সংক্ষিপ্ত আলোচনা : এ সূরাটি অত্যন্ত গভীর, ভীতিময় ও গাম্ভীর্যপূর্ণ বক্তব্যে সমৃদ্ধ। মনে হয় যেন একজন সতর্ককারী কোনো উচ্চস্থানে আরোহণ করে সুউচ্চ কণ্ঠে চিৎকার করে ঢেড়া পিটিয়ে সেই সব লোককে হুশিয়ার করছে, যারা অলস, উদাসীন, অপরিণামদর্শী, গভীর ঘুমে অচেতন । জাহান্নামের কিনারে পৌছেও চোখ বুজে পড়ে আছে এবং তাদের গোটা স্বায়ুমন্ডলী জাদুর প্রভাবে অবশ হয়ে আছে । সতর্ককারী যত জোরে সম্ভব চিৎকার করে তাদেরকে বলছে, “কবরের সাক্ষাত হওয়া পর্যন্ত বেশী বেশী সম্পদ লাভের প্রতিযোগিতা তোমাদেরকে উদাসীন করে দিয়েছে ।”
সুরা: আত-তাকাসুর
আয়াত নং :-1
টিকা নং:1,
اَلْهٰىكُمُ التَّكَاثُرُۙ
বেশী বেশী এবং একে অপরের থেকে বেশী দুনিয়ার স্বার্থ লাভ করার মোহ তোমাদের গাফলতির মধ্যে ফেলে দিয়েছে।১
তাফসীর :
তাফহীমুল কুরআন:
টিকা:১) মূলে বলা হয়েছে (اَلۡهٰٮكُمُ التَّكَاثُرُۙ ) এখানে মাত্র দু’টি শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু এই দু’টি শব্দের মধ্যে এত বেশী ব্যাপকতা রয়েছে যা মাত্র একটি বাক্যের মাধ্যমে প্রকাশ করা সম্ভব নয়।
‘আলহাকুম’ (اَلۡهٰٮكُمْ ) শব্দটির মূলে রয়েছে লাহউন। (لهو ) এর আসল অর্থ গাফলতি। কিন্তু যেসব কাজের প্রতি মানুষের আগ্রহ ও আকর্ষণ এত বেশী বেড়ে যায় যে সে তার মধ্যে মগ্ন হয়ে অন্য অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ জিনিস থেকে গাফেল হয়ে পড়ে সেই ধরনের প্রত্যেকটি কাজের জন্য আরবী ভাষায় এ শব্দটি বলা হয়ে থাকে। আলহাকুম শব্দটিকে যখন এর মূল অর্থে বলা হবে তখন এর অর্থ হবে কোন ‘লাহওয়া’ তোমাকে তার মধ্যে এমনভাবে মশগুল করে রেখেছে যে, তার চাইতে অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ কোন জিনিসের প্রতি আর তোমার আকর্ষণ ও আগ্রহ থাকেনি। তার মোহ তোমাকে আচ্ছন্ন করে রেখেছে। তারই চিন্তায় তুমি নিমগ্ন। আর এই মোহ ও নিমগ্নতা তোমাকে একেবারে গাফেল করে দিয়েছে। তাকাসুর (تَكَاثُرُۙ ) এর মূল কাসরাত (كَثرَتْ )। এর তিনটি অর্থ হয়। এক, মানুষের বেশী বেশী প্রাচুর্য লাভ করার চেষ্টা করা। দুই, প্রাচুর্য লাভ করার জন্য মানুষের পরস্পরের অগ্রবর্তী হওয়ার চেষ্টা করা। তিন, লোকদের অন্যের তুলনায় বেশী প্রাচুর্য লাভ করার কথা নিয়ে পরস্পরের মোকাবেলায় বড়াই করে বেড়ানো।
কাজেই “আলহাকুমুত তাকাসুরের” অর্থ দাঁড়ায় তাকাসুর বা প্রাচুর্য তোমাদেরকে তার নিজের মধ্যে এমনভাবে মশগুল করে নিয়েছে, যার ফলে তার প্রতি মোহাচ্ছন্নতা তোমাদের তার চেয়ে বেশী গুরুত্বপূর্ণ জিনিস থেকে গাফেল করে দিয়েছে। ‘তাকাসুরের মধ্যে কোন জিনিসের প্রাচুর্য রয়েছে, ‘আলহাকুম’—এ কোন্ জিনিস থেকে গাফেল হয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে এবং আলহাকুম—এ কাদেরকে সম্বোধন করা হয়েছে—এ বাক্যে সে কথা সুস্পষ্ট করে বলা হয়নি। অর্থের এই অস্পষ্টতার কারণে এই শব্দগুলো ব্যাপকতর অর্থে ব্যবহারের দুয়ার খুলে গেছে। এক্ষেত্রে ‘তাকাসুর’ বা প্রাচুর্যের অর্থ সীমাবদ্ধ হয়ে থাকেনি। বরং দুনিয়ার সমস্ত সুবিধা ও লাভ, বিলাস দ্রব্য, ভোগের সামগ্রী, শক্তি ও কর্তৃত্বের উপকরণ বেশী বেশী অর্জন করার প্রচেষ্টা চালানো, এগুলো অর্জন করার জন্য একে অন্যের থেকে অগ্রবর্তী হবার চেষ্টা করা এবং এগুলোর প্রাচুর্যের কারণে পরস্পরের মোকাবেলায় বড়াই করা এর অর্থের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেছে। অনুরূপভাবে ‘আলহাকুম’—এ যাদেরকে সম্বোধন করা হয়েছে তারাও সীমাবদ্ধ হয়ে থাকেনি। বরং প্রত্যেক যুগের লোকেরা ব্যক্তিগত পর্যায়ে ও সামগ্রিকভাবে এর সম্বোধনের আওতাভুক্ত হয়েছে। এর অর্থ দাঁড়ায়, বেশী বেশী বৈষয়িক স্বার্থ অর্জন করা, তার মধ্যে একে অন্যের অগ্রবর্তী হওয়া এবং অন্যের মোকাবেলায় তা নিয়ে গর্ব করার মোহ যেমন ব্যক্তিকে আচ্ছন্ন করে তেমনি আচ্ছন্ন করে গোত্র ও জাতিকেও। অনুরূপভাবে ‘আলহাকুমুত তাকাসুর’—এ যেহেতু একথা সুস্পষ্ট করে বলা হয়নি যে, প্রাচুর্য লোকদেরকে নিজের মধ্যে নিমগ্ন করে কোন জিনিস থেকে গাফেল করে দিয়েছে, তাই এর অর্থের মধ্যেও ব্যাপকতা সৃষ্টি হয়েছে। এর অর্থ হচ্ছে, এই প্রাচুর্যের মোহ লোকদেরকে এর চেয়ে বেশী গুরুত্বপূর্ণ প্রত্যেকটি জিনিস থেকে গাফেল করে দিয়েছে। তারা আল্লাহ থেকে গাফেল হয়ে গেছে। আখেরাত থেকে গাফেল হয়ে গেছে। নৈতিকতার সীমা ও নৈতিক দায়িত্ব থেকে গাফেল হয়ে গেছে। অধিকারীর অধিকার এবং তা আদায় করার ব্যাপারে নিজেদের দায়িত্ব ও কর্তব্য থেকে গাফেল হয়ে গেছে। তারা নিজেদের জীবন যাপনের মান উন্নয়নের চিন্তায় ব্যাকুল। মানবতার মান কত নেমে যাচ্ছে সে চিন্তা তাদেরকে একটুও ব্যতিব্যস্ত করে না। তাদের চাই বেশী বেশী অর্থ। কোন্ পথে এ অর্থ অর্জিত হচ্ছে তার কোন পরোয়াই তাদের নেই। তারা বিলাস দ্রব্য ও ভোগের সামগ্রী বেশী বেশী চায়। এই প্রবৃত্তি পূজায় লিপ্ত হয়ে তারা এহেন আচরণের পরিণাম থেকে সম্পূর্ণ গাফেল হয়ে গেছে। তারা বেশী বেশী শক্তি, সেনাবাহিনী ও অস্ত্রশস্ত্র সংগ্রহের চিন্তায় মশগুল। এ প্রশ্নে তারা একে অপরকে ডিঙ্গিয়ে যাবার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তারা এ চিন্তা করছে না যে, এগুলো আল্লাহর দুনিয়াকে জুলুমে পরিপূর্ণ করার এবং মানবতাকে ধ্বংস ও বরবাদ করার সরঞ্জাম মাত্র। মোটকথা, এভাবে অসংখ্য ধরনের ‘তাকাসুর’ ব্যক্তি ও জাতিদেরকে তার মধ্যে এমনভাবে মশগুল করে রেখেছে যে, দুনিয়া এবং বৈষয়িক স্বার্থ ও ভোগের চাইতে বড় কোন জিনিসের কথা তারা মুহূর্তকালের জন্য চিন্তা করে না।
সুরা: আত-তাকাসুর
আয়াত নং :-2
টিকা নং:2,
حَتّٰى زُرْتُمُ الْمَقَابِرَؕ
এমনকি (এই চিন্তায় আচ্ছন্ন হয়ে) তোমরা কবর পর্যন্ত পৌঁছে যাও। ২
তাফসীর :
তাফহীমুল কুরআন:
টিকা:২) অর্থাৎ সারাটা জীবন তোমরা এই প্রচেষ্টায় নিয়োজিত রয়েছো। মরার এক মুহূর্ত আগেও এ চিন্তা থেকে তোমাদের রেহাই নেই।
সুরা: আত-তাকাসুর
আয়াত নং :-3
টিকা নং:3,
كَلَّا سَوْفَ تَعْلَمُوْنَۙ
কখ্খনো না, শীঘ্রই তোমরা জানতে পারবে।৩
তাফসীর :
তাফহীমুল কুরআন:
টিকা:৩) অর্থাৎ তোমরা ভুল ধারণার শিকার হয়েছো। বৈষয়িক সম্পদের এ প্রাচুর্য এবং এর মধ্যে পরস্পর থেকে অগ্রবর্তী হয়ে যাওয়াকেই তোমরা উন্নতি ও সাফল্য মনে করে নিয়েছো। অথচ এটা মোটেই উন্নতি ও সাফল্য নয়। শীঘ্রই তোমরা এর অশুভ পরিণতি জানতে পারবে। সারাটা জীবন যে ভুলের মধ্যে তোমরা লিপ্ত ছিলে সেটা যে কত বড় ভুল ছিল তা তোমরা শীঘ্রই জানতে পারবে। শীঘ্রই অর্থ আখেরাতও হতে পারে। কারণ আদি থেকে অন্ত পর্যন্ত সমগ্রকাল ব্যাপী যে সত্তার দৃষ্টি প্রসারিত তাঁর কাছে কয়েক হাজার বা কয়েক লাখ বছরও কালের সামান্য একটি অংশ মাত্র। কিন্তু এর অর্থ মৃত্যুও হতে পারে। কারণ কোন মানুষ থেকে তার অবস্থান বেশী দূরে নয়। আর মানুষ তার সারা জীবন যে সব কাজের মধ্যে কাটিয়ে এসেছে সে মরে যাবার সাথে সাথেই সেগুলো তার জন্য সৌভাগ্য বা দুর্ভাগ্য ও অশুভ পরিণামের বাহন ছিল কিনা তা তার কাছে একেবারে সুস্পষ্ট হয়ে যাবে।
সুরা: আত-তাকাসুর
আয়াত নং :-4
ثُمَّ كَلَّا سَوْفَ تَعْلَمُوْنَؕ
আবার (শুনে নাও) কখ্খনো না শীঘ্রই তোমরা জানতে পারবে।
সুরা: আত-তাকাসুর
আয়াত নং :-5
كَلَّا لَوْ تَعْلَمُوْنَ عِلْمَ الْیَقِیْنِؕ
কখ্খনো না, যদি তোমরা নিশ্চিত জ্ঞানের ভিত্তিতে (এই আচরণের পরিণাম) জানতে (তাহলে তোমরা এ ধরনের কাজ করতে না)।
সুরা: আত-তাকাসুর
আয়াত নং :-6
لَتَرَوُنَّ الْجَحِیْمَۙ
অবশ্যই তোমরা জাহান্নাম দেখবেই।
তাফসীর :
তাফহীমুল কুরআন:
তাফসীরের জন্য পরবর্তী আয়াত দেখুন।।
সুরা: আত-তাকাসুর
আয়াত নং :-7
ثُمَّ لَتَرَوُنَّهَا عَیْنَ الْیَقِیْۙنِ
আবার (শুনে নাও) তোমরা একেবারে স্থির নিশ্চিতভাবে তা দেখবেই।
সুরা: আত-তাকাসুর
আয়াত নং :-8
টিকা নং:4,
ثُمَّ لَتُسْئَلُنَّ یَوْمَئِذٍ عَنِ النَّعِیْمِ۠
তারপর অবশ্যই সেদিন তোমাদের এই নিয়ামতগুলো সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।৪
তাফসীর :
তাফহীমুল কুরআন:
টিকা:৪) এই বাক্যে জাহান্নামে নিক্ষেপ করার পর জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে এই অর্থে ‘তারপর’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়নি। বরং এর অর্থ হচ্ছেঃ তারপর এ খবরটিও আমি তোমাদের দিয়ে দিচ্ছি যে, এসব নিয়ামত সম্পর্কে তোমাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। আর একথা সুস্পষ্ট, আল্লাহর আদালতে হিসেব নেবার সময় এ জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এর সবচেয়ে বড় প্রমাণ হচ্ছে এই যে, বিভিন্ন হাদীসে রসূলুল্লাহ ﷺ থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেছেন, মহান আল্লাহ বান্দাদেরকে যেসব নিয়ামত দান করেছেন সে সম্পর্কে মু’মিন ও কাফের সবাইকে জবাবদিহি করতে হবে। এটা আলাদা ব্যাপার যারা নিয়ামত অস্বীকার করেনি এবং আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ হয়ে জীবন যাপন করেছে তারা এই জিজ্ঞাসাবাদে সফলকাম হবে। আর যারা আল্লাহর নিয়ামতের হক আদায় করেনি এবং নিজেদের কথা ও কাজের মাধ্যমে অথবা উভয়ের সাহায্যে তাঁর নাফরমানি করেছে তারা ব্যর্থ হবে।
হযরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) রেওয়ায়াত করেছেন, রসূলুল্লাহ ﷺ আমাদের এখানে এলেন। আমার তাঁকে তাজা খেজুর খাওয়ালাম এবং ঠাণ্ডা পানি পান করালাম। তিনি বললেনঃ “এগুলো এমন সব নিয়ামতের অন্তর্ভুক্ত যেগুলো সম্পর্কে তোমাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।” (মুসনাদে আহমাদ, নাসাঈ, ইবনে জারীর, ইবনুল মুনযির, ইবনে মারদুইয়া, আবদ ইবনে হুমাইদ ও বাইহাকী ফিশ্ শু’আব)।
হযরত আবু হুরাইরাহ (রা.) থেকে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ ﷺ হযরত আবু বকর (রা.) ও হযরত উমরকে (রা.) বললেন, চলো আবুল হাইসাম ইবনুত তাইহান আনসারীর ওখানে যাই। কাজেই তাদেরকে নিয়ে তিনি ইবনুত তাইহানের খেজুর বাগানে গেলেন। তিনি এক কাঁদি খেজুর এনে মেহমানদের সামনে রাখলেন। রসূলুল্লাহ ﷺ তাকে বললেন, তুমি নিজে খেজুর ছিঁড়ে আনলে না কেন? তিনি বললেন আমি চাচ্ছিলাম আপনারা নিজেরা বেছে বেছে খেজুর খাবেন। কাজেই তারা খেজুর খেলেন এবং ঠাণ্ডা পানি পান করলেন। খাওয়া দাওয়া শেষ করে রসূলুল্লাহ (সা.) বলেন “সেই সত্তার কসম যার হাতে আমার প্রাণ সমর্পিত, কিয়ামতের দিন যেসব নিয়ামত সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে এই ঠাণ্ডা ছায়া, ঠাণ্ডা খেজুর ও ঠাণ্ডা পানি— এগুলো তার অন্তর্ভুক্ত।” (এই ঘটনা মুসলিম, ইবনে মাজাহ, আবু দাউদ, তিরমিযী, নাসায়ী, ইবনে জারীর ও আবুল ইয়ালা প্রমুখ মুহাদ্দিসগণ বিভিন্ন সূত্রে আবু হুরাইরাহ থেকে উদ্ধৃত করেছেন। এদের কেউ কেউ উক্ত আনসার সাহাবীর নাম উল্লেখ করেছেন আবার কেউ কেউ শুধুমাত্র একজন আনসারী বলেই ক্ষান্ত হয়েছেন। এ ঘটনাটি বিভিন্ন সূত্রে এবং বিস্তারিত আকারে ইবনে আবু হাতেম হযরত উমর থেকে এবং ইমাম আহমাদ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আবু আসী নামক একজন মুক্তি প্রাপ্ত গোলাম থেকে উদ্ধৃত করেছেন। ইবনে হাইয়ান ও ইবনে মারদুইয়া হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে একটি রেওয়ায়াত উদ্ধৃত করেছেন। তা থেকে জানা যায়, প্রায় এই একই ধরনের ঘটনা হযরত আবু আইউব আনসারীর ওখানেও ঘটেছিল)।
এই হাদীসগুলো থেকে একথা সুস্পষ্ট হয়ে যায় যে, জিজ্ঞাসাবাদ কেবল কাফেরদেরকে করা হবে না, সৎ মু’মিনদেরকেও করা হবে। আর আল্লাহ মানুষকে যে নিয়ামতগুলো দান করেছেন সেগুলো সীমা সংখ্যাহীন। সেগুলো গণনা করা সম্ভব নয়। বরং এমন অনেক নিয়ামতও আছে যেগুলোর মানুষ কোন খবরই রাখে না। কুরআন মজীদে বলা হয়েছে (وَاِنۡ تَعُدُّوۡا نِعۡمَتَ اللّٰهِ لَا تُحۡصُوۡهَاؕ ) অর্থাৎ “যদি তোমরা আল্লাহর নিয়ামতগুলো গণনা করতে থাকো তাহলে সেগুলো পুরোপুরি গণনা করতেও পারবে না।” ( ইবরাহীম ৩৪ আয়াত ) এই নিয়ামতগুলোর মধ্য থেকে অসংখ্য নিয়ামত মহান আল্লাহ সরাসরি মানুষকে দিয়েছেন। আবার বিপুল সংখ্যক নিয়ামত মানুষকে দান করা হয় তার নিজের উপার্জনের মাধ্যমে। নিজের উপার্জিত নিয়ামতগুলো মানুষ কিভাবে উপার্জন ও ব্যয় করেছে সে সম্পর্কে তাকে জবাবদিহি করতে হবে। আল্লাহর কাছ থেকে সরাসরি যে নিয়ামতগুলো সে লাভ করেছে সেগুলোকে সে কিভাবে ব্যবহার করেছে তার হিসেব তাকে দিতে হবে। আর সামগ্রিকভাবে সমস্ত নিয়ামত সম্পর্কে তাকে বলতে হবে যে, সেগুলো যে আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রদত্ত এর স্বীকৃতি সে দিয়েছিল কিনা এবং নিজের ইচ্ছা, মনোভাব ও কর্মের সাহায্যে সেগুলোর জন্য আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছিল কি না? অথবা সে কি একথা মনে করতো, এসব কিছু হঠাৎ ঘটনাক্রমেই সে পেয়ে গেছে? অথবা সে কি একথা মনে করেছিল যে, অনেকগুলো খোদা তাকে এগুলো দিয়েছেন? অথবা সে কি একথা মনে করেছিল যে, এগুলো একজন আল্লাহর নিয়ামত ঠিকই কিন্তু এগুলো দান করার ব্যাপারে আরো অনেক সত্তার হাত রয়েছে? এ কারণে তাদেরকে মাবুদ গণ্য করেছিল এবং তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছিল?
ফী জিলালিল কুরআন:
হে অপরিণামদর্শী সীমালংঘনকারী মোহমত্ত জনমন্ডলী, শোনো! যারা খেলাধুলায় মত্ত-জনবল,ধনবল ও পার্থিক ভোগের উপকরণের আধিক্যে গর্বিত অথচ একদিন এগুলো ছেড়ে যেতেই হবে সে কথা বিস্মৃত, তারা শোনো! বর্তমান জীবনের অব্যবহিত পরে যে জীবন, তাকে যারা ভুলে বসে আছ, তারা শোনো! অর্জিত প্রাচুর্যের গর্বে এবং আরো অধিক অর্জনের প্রতিযোগিতায় যারা ভুলে আছো যে, একদিন এসব সম্পদ ত্যাগ করে সংকীর্ণ একটা গর্তে আশ্রয় নিতে হবে, তারা শোনো! প্রতিযোগিতা ও অহংকার এবার থামাও। জাগো এবং চোখ মেলে তাকাও ৷ ‘অতিরিক্ত অর্জনের নেশা তোমাদেরকে উদাসীন করে দিয়েছে। কবরের সাক্ষাত না পাওয়া পর্যন্ত তোমাদের এ অবস্থাই চলতে থাকবে ।’ অতপর কবরের সাক্ষাত লাভের পর সেখানে তাদের জন্যে যে পরিণাম অপেক্ষা করছে, তার ভয়াবহতার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে তাদের মনকে হুশিয়ারী সংকেত দিচ্ছেন অত্যন্ত শাস্ত ও গুরুগম্ভীর ভাষায়, ‘কখনো নয়, তোমরা অচিরেই জানতে পারবে ৷’ তারপর এই হুশিয়ারী সংকেতের পুনরাবৃত্তি করছেন একই ধরনের ভীতি সঞ্চারক গুরুগম্ভীর ভাষায়, ‘পুনরায় (বলছি) কখনো নয়, তোমরা শীঘ্রই জানতে পারবে ৷’ এরপর অধিকতর গভীর ও ভীতিপ্রদ ভংগিতে, আরো জোরালো ভাষায় একই হুশিয়ারীর পুনরাবৃত্তি করা হচ্ছে। দৃষ্টির আড়ালে যে গুরুতর ব্যাপার রয়েছে, যার প্রকৃত স্বরূপ শ্রোতাদের কাছে তাদের প্রাচুর্যের মোহ ও অহংকারের দরুন সুস্পষ্টরূপে প্রতিভাত হচ্ছে না, তার প্রতি ইংগিত দেয়া হচ্ছে, ‘কখনো নয়, তোমরা যদি সংশয়মুক্তভাবে জানো ।’ তারপর এই ঈপ্সিত ভয়াল সত্যটি উম্মোচন করা হচ্ছে ‘তোমরা অবশ্যই দোযখকে দেখতে পাবে ।’ অতপর এ সত্যের পুনরুল্লেখ করা হচ্ছে যাতে মানুষের হৃদয়ে এর প্রভাব আরো গভীর হয়, “পুনরায়, তোমরা চাক্ষুস নিশ্চয়তা সহকারে তা দেখতে পাবে ।” অতপর সর্বশেষ হশিয়ারীটি উচ্চারণ করা হচ্ছে, যাতে উদাসীন লোকেরা সম্বিত ফিরে পায়। অচেতন লোকদের চেতনা জাগে, অহংকারী সতর্ক হয়, সুখী ও বিলাসী লোকদের মধ্যে জাগরণ আসে এবং প্রাচুর্যের মধ্যেও যেন দায়িত্বের অনুভূতি অক্ষুণ্ন থাকে, ‘অতপর তোমাদেরকে নেয়ামতসমূহ সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে ।’ জিজ্ঞাসা করা হবে কোথা থেকে তোমরা সম্পদ অর্জন করেছো এবং কোথায় তোমরা তা ব্যয়করেছো? আল্লাহর আনুগত্যের ভেতর দিয়ে উপার্জন ও ব্যয় করেছো, না তাঁর অবাধ্যতা ও নাফরমানীর ভেতর দিয়ে? হালাল উপায়ে না হারাম উপায়ে? তোমরা আল্লাহর শোকর আদায় করেছো, না নাশোকরী করেছো? তোমার অর্থের দায়িত্ব কি পালন করেছো? সমাজের কাজে কি অবদান রেখেছো? অপরের স্বার্থকে কি অগ্রাধিকার দিয়েছো? তোমরা যে প্রাচুর্যের অহংকার ও প্রতিযোগিতায় লিপ্ত, সে সম্পর্কে অবশ্যই জিজ্ঞাসিত হবে। সম্পদের প্রাচুর্য আসলে একটা ভারী বোঝা । তোমরা নিজেদের খেলা তামাশার মধ্যে অতিমাত্রায় মগ্ন থাকার কারণে তাকে হালকা মনে করো । অথচ তার অপরদিকে রয়েছে দুর্ভাবনা ও দুশ্চিন্তার ভারী বোঝা ৷ এ সূরাটি নিজেই নিজের ব্যাখ্যা দিচ্ছে, এর মর্ম ও ছন্দময় ভাষা চেতনায় এক অনির্বচনীয় অনুভূতির সঞ্চার করে। দুনিয়ার যতো আজেবাজে চিন্তা ও তুচ্ছ কাজে নিষ্কর্মা লোকেরা ব্যস্ত থাকে, তার উর্ধে আখেরাতের চিন্তাকে স্থান দেয়ার জন্যে এ সূরা শ্রোতার মনকে উদ্বুদ্ধ করে। সূরাটি দুনিয়ার জীবনকে একটি দীর্ঘ ভিডিও ক্যাসেটের এক জায়গায় চোখ ধাধানো আলোর ঝলকানি হিসাবে চিত্রিত করে। ‘প্রাচুর্যের প্রতিযোগিতা তোমাদেরকে উদাসীন করে দিয়েছে এমনি করেই তোমরা কবরের কাছে গিয়ে হাযির হবে’ এ কথাটুকুতে সেই ধারণা বিদ্যমান । দুনিয়ার জীবনে দেখা দেয়া আলোর ঝলক এক সময় শেষ হয়ে যায় এবং তার জীবনের ক্ষুদ্র পাতাটিও এক সময় উন্টানো সম্পন্ন হয়। তারপর সময় প্রলম্বিত হয় ও গড়িয়ে যায় এবং দায়িত্বের বোঝাও সম্প্রসারিত হতে থাকে । ভাষাগত অভিব্যক্তি স্বয়ং এই বক্তব্য উচ্চারণ করে, ফলে বাস্তবতা ও ভাষাগত অভিব্যক্তির মধ্যে পূর্ণ ঐকতান প্রতিষ্ঠিত হয়। এই গুরুগম্ভীর ভীতি সঞ্চারক সূরাটি যখন কেউ পড়ে এবং তার সুউচ্চ ও সুদূরপ্রসারী বক্তব্যকে তার সুগভীর তাৎপর্যসহ উপলব্ধি করে, তখন সে তার এই পার্থিব জীবনের গুরুদায়িত্বসমূহ অনুভব করে এবং তা পালন ও বহন করে পথ চলতে থাকে। অতপর সে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ব্যাপারেও নিজেই নিজের হিসাব নেয় এবং নিজের কাছে জবাবদিহি করে।
# তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ:-
নামকরণ:
التَّكَاثُرُ শব্দটি باب تفاعل এর ক্রিয়ামূল (مصدر), অর্থ আধিক্যতার প্রতিযোগিতা করা, বেশি কামনা করা। এখানে কথাটি ব্যাপক : প্রাচুর্যে ধন-মাল, সন্তান-সন্ততি, সহযোগী, বংশ-গোত্র প্রভৃতি সবই শামিল। প্রত্যেক ঐ বস্তু যার প্রাচুর্য ও আধিক্য মানুষের প্রিয় এবং যা অধিক পাওয়ার প্রচেষ্টা ও কামনা মানুষকে আল্লাহ তা‘আলার দীন ও আখেরাত হতে উদাসীন করে দেয় তাই এখানে উদ্দেশ্য।
التَّكَاثُرُ শব্দটি এ সূরার প্রথম আয়াতে উল্লেখ আছে, এ থেকেই উক্ত নামে সূরার নামকরণ করা হয়েছে। প্রাচুর্যের লালসা মানুষকে আখিরাত বিমুখ করে রেখেছে, অথচ তাকে অবশ্যই সব কিছু ছেড়ে পরপারে পাড়ি জমাতে হবে, অতঃপর তাকে দেওয়া সব নেয়ামত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবেÑএ সম্পর্কে সূরায় আলোচনা করা হয়েছে।
يلهي -ألهي অর্থ : গাফেল বা উদাসীন করে দেয়া। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন : দুনিয়ার ভালবাসা ও তার সুখ-সাচ্ছন্দ্য তোমাদেরকে আখিরাতের ব্যাপারে উদাসীন করে ফেলেছে। এমনকি তোমরা মুমূর্ষু অবস্থাতেও দুনিয়ার প্রতি এ লালসায় পড়ে আছো। উবাই বিন কা‘ব (রাঃ) বলেছেন: আমরা-
لو كان لإبن أدم واد من ذهب أحب أن يكون له واديان
অর্থাৎ আদম সন্তানের একটি স্বর্ণের উপত্যকা থাকলে আরেকটি কামনা করবে। এটাকে কুরআনের আয়াত মনে করতাম এমনবস্থায় (أَلْهٰكُمُ التَّكَاثُرُ) সূরাটি অবতীর্ণ হয়। (সহীহ বুখারী, কিতাবুর রিকাক)
আব্দুল্লাহ বিন শিখ্খির (রাঃ) তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে, আমরা নাবী (সাঃ)-এর নিকট হাজির হলাম। এমন সময় তিনি বললেন :
(أَلْهٰكُمُ التَّكَاثُرُ)
আদম সন্তান বলে : আমার সম্পদ-আমার সম্পদ, অথচ তোমার সম্পদ তো সেটুকুই যা তুমি খেয়েছো এবং পরিধান করে ছিড়ে ফেলেছো অথবা সাদকা করে অবশিষ্ট রেখেছো। (সহীহ মুসলিম হা. ২৯৫৮)
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন : মৃত ব্যক্তির সাথে তিনটি জিনিস যায়, তার মধ্যে দু’টি ফিরে আসে, শুধু একটি সাথে থেকে যায়। (যে দু’টি জিনিস ফিরে আসে) আত্মীয়-স্বজন ও ধন-সম্পদ। (একটি জিনিস সাথে যায় তা হলো) আমল। (সহীহ বুখারী হা. ৬৫১৪)
বস্তুত অধিক ধনলিপ্সা ও প্রভাব-প্রতিপত্তির আকাক্সক্ষা মানুষকে আল্লাহ তা‘আলার আনুগত্য এবং আখেরাতের চিন্তা হতে গাফেল রাখে। মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত এ আকাক্সক্ষার শেষ হয় না। আর এটি মানুষের একটি স্বভাবগত প্রবণতা। কাফির-মুশরিকরা এতে ডুবে থাকে। কিন্তু মু’মিন এ থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখে এবং সর্বদা আখেরাতের জন্য প্রস্তুত থাকে।
(حَتّٰي زُرْتُمُ الْمَقَابِرَ)
অর্থাৎ যতক্ষণ না তোমাদের মৃত্যু এসে যায়। অতঃপর তোমরা কবরস্থানে পৌঁছে যাও ও তার বাসিন্দা হয়ে যাও। কবরে যাওয়া পর্যন্ত তোমরা দুনিয়াবী প্রাচুর্যের লালসায় লিপ্ত থাক। মানুষের জীবন আনুমানিক ৬০ থেকে ৭০ বছর। অধিকাংশ মান্ষুই এ সময়ের মাঝেই দুনিয়া ছেড়ে চলে যায়। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন : আমার উম্মাতের আয়ু ৬০ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে হবে। খুব কম সংখ্যকই তা অতিক্রম করবে। (তিরমিযী হা. ৩৫৫০, মিশকাত হা. ৫২৮০, সহীহ) এ অল্প সময়ের জীবনের মাঝে শৈশবের দুর্বলতায় চলে যায় ১৫-১৬ বছর, যৌবন কাল মাত্র ১৬-৪০ বছর তারপর আবার বার্ধ্যকের দুর্বলতা চলে আসে। অতঃপর চলে যেতে হয় অনন্ত কালের জন্য আখিরাতে। সুতরাং এ ক্ষণিক সময়ের জন্য মানুষের এত ব্যস্ততা যে, সে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করার সময়ও পায় না।
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন : তুমি দুনিয়াতে এমনভাবে বসবাস কর যেন তুমি একজন আগন্তুক অথবা মুসাফীর। (অর্থাৎ মুসাফীর যেমন পথিমধ্যে রাত্রি যাপন করার জন্য কোনরকম একটি তাঁবু তৈরি করে রাত অতিক্রম করেÑ ঠিক সেভাবেই তোমরা দুনিয়াকে মূল্যায়ন কর) (সহীহ বুখারী হা. ৬৪১৬)। অন্য হাদীসে বলা হয়েছে, তুমি নিজেকে সর্বদা কবরবাসীদের মধ্যে গণ্য কর। (তিরমিযী হা. ২৩৩৩, মিশকাত হা. ৫২৭৪, সহীহ)। আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে আখিরাতমুখী হয়ে দুনিয়াতে সচ্ছল জীবন যাপন করার তাওফীক দান করুন।
(كَلَّا سَوْفَ تَعْلَمُوْنَ)
হাসান বাসরী (রহঃ) বলেছেন : এটা ধমকের পর ধমক। অর্থাৎ তোমরা যা করছো তা আদৌ ঠিক নয়। যদি তোমরা জানতে তোমাদের সামনে কী কঠিন অবস্থা অপেক্ষা করছে আর আখিরাতের তুলনায় দুনিয়া কত নগণ্য তাহলে সৎ কাজের প্রতি ধাবিত হতে। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন : জান্নাতের একটি চাবুক রাখার স্থান দুনিয়া ও তার মধ্যকার সবকিছুর চাইতে উত্তম। (সহীহ বুখারী হা. ৩২৫০) অন্যত্র তিনি বলেন : সর্বশেষ যে ব্যক্তি জান্নাতে যাবে তার জন্য দুনিয়া ও তার সমপরিমাণ দশটি দুনিয়ার মত জায়গা জান্নাতে রয়েছে। কিন্তু প্রকৃত জ্ঞান না থাকার কারণে মানুষ দুনিয়ার বাহ্যিক চাকচিক্যের প্রতি ধাবিত হচ্ছো।
ইলম বা ইয়াকিন (يقين) তিন প্রকার:
(১) حق اليقين এটি তিন প্রকারের সর্বোচ্চ প্রকার। এটা হলো প্রগাঢ় জ্ঞান যা দোদুল্যমান হয়না এবং দূরীভূত হয় না। অথবা এমন জ্ঞান যা আস্বাদন ও সংস্পর্শতার মাধ্যমে অর্জিত হয়।
(২) علم اليقين যে জ্ঞান কোন সংবাদের মাধ্যমে অর্জিত হয়।
(৩) عين اليقين যে জ্ঞান দর্শনের মাধ্যম অর্জিত হয়। (তাফসীর সা‘দী)
এখানে আল্লাহ তা‘আলা علم اليقين ও عين اليقين দুই প্রকার উল্লেখ করেছেন। অর্থাৎ অবশ্য অবশ্যই তোমরা জাহান্নাম স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করবে। এখানে সাধারণভাবে প্রত্যেক আদম সন্তানকে বুঝানো হয়েছে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
(وَإِنْ مِّنْكُمْ إِلَّا وَارِدُهَا ج كَانَ عَلٰي رَبِّكَ حَتْمًا مَّقْضِيًّا)
“এবং তোমাদের প্রত্যেকেই তা (পুলসিরাত) অতিক্রম করবে; এটা তোমার প্রতিপালকের অনিবার্য সিদ্ধান্ত।” (সূরা মারইয়াম ১৯: ৭১) এখানে পৌঁছানোর অর্থ প্রবেশ করা নয়, বরং অতিক্রম করা। একে পুলসিরাত বলা হয়। হাদীসে এসেছে, মু’মিনগণ পুলসিরাত পার হয়ে জান্নাতে চলে যাবে বিদ্যুতের বেগে, জাহান্নামের কোন উত্তাপ তারা অনুভব করবে না। কিন্তু কাফির-মুশরিকরা তাতে আটকে যাবে এবং জাহান্নামে পতিত হবে। (আহমাদ হা. ২৪৪৭, মিশকাত হা. ৫৭৩৮, সহদ সহীহ) যেমন পরের আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
(ثُمَّ نُنَجِّي الَّذِيْنَ اتَّقَوْا وَنَذَرُ الظَّالِمِيْنَ فِيْهَا جِثِيًّا)
“অতঃপর আমি মুত্তাকীদেরকে রক্ষা করব এবং জালিমদেরকে সেথায় নতজানু অবস্থায় রেখে দেব।” (সূরা মারইয়াম ১৯: ৭২)
অতএব মু’মিন-কাফির সবাই জাহান্নামকে প্রত্যক্ষ করবে। মু’মিনগণ সহজে পার হয়ে যাবে। কিন্তু কাফিররা জাহান্নামে পতিত হবে। আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে সেদিনের কঠিন পাকড়াও থেকে রক্ষা করুন। আমীন!
(لَتُسْأَلُنَّ يَوْمَئِذٍ عَنِ النَّعِيْمِ)
অর্থাৎ দুনিয়াতে যত নেয়ামত প্রদান করা হয়েছে সকল নেয়ামত সম্পর্কে আখিরাতে জিজ্ঞাসা করা হবে। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন : একদা আবূ বকর (রাঃ) ও উসমান (রাঃ) বসেছিলেন। এমন সময় রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাদের কাছে এসে বললেন : এখানে বসে আছো কেন? উত্তরে তারা বললেন : যিনি আপনাকে সত্যসহ প্রেরণ করেছেন তাঁর শপথ! ক্ষুধা আমাদেরকে ঘর হতে বের করে এনেছে। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তখন বললেন : যিনি আমাকে সত্যসহ প্রেরণ করেছেন তাঁর শপথ! ক্ষুধা আমাকেও বের করে এনেছে। তারপর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) দু’জনকে সঙ্গে নিয়ে এক আনসারীর বাড়িতে গেলেন। আনসারী বাড়িতে ছিলেন না। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আনসারীর স্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার স্বামী কোথায়? মহিলা বলল : তিনি আমাদের জন্য মিষ্টি পানি আনার জন্য বাইরে গেছেন। ইতোমধ্যে ঐ আনসারী পানির মশক নিয়ে চলে আসল। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ও সাহাবীদের দেখে আনসারী আনন্দে আটখানা হয়ে গেলেন। তিনি বললেন : আমার বাড়িতে আজ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাশরীফ এনেছেন, সুতরাং আমার মত ভাগ্যবান আর কেউ নেই। পানির মশক ঝুলিয়ে রেখে আনসারী বাগানে গিয়ে তাজাতাজা খেজুরের কাঁদি নিয়ে আসলেন। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন : বেছে বেছে আনলেই তো হতো। আনসারী বললেন : ভাবলাম যে, আপনি পছন্দ মত বাছাই করে গ্রহণ করবেন। তারপর আনসারী একটি ছুরি হাতে নিলেন (মেষ যবাই করার জন্য)। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন : দেখো, দুগ্ধবতী মেষ জবাই করো না। অতঃপর আনসারী তাদের জন্য একটি মেষ জবাই করলেন এবং তাঁরা সেখানে আহার করলেন। তারপর সাহাবীদের লক্ষ্য করে বললেন : দেখো তোমরা ক্ষুধার্ত অবস্থায় তোমাদের ঘর থেকে বেরিয়েছিলে অথচ এখন পেট পূর্ণ করে ফিরে যাচ্ছো। এ নেয়ামত সম্পর্কে তোমরা জিজ্ঞাসিত হবে। (সহীহ মুসলিম, পানি অধ্যায়, হা. ১৪০)
নাবী (সাঃ) বলেন : কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলা বলবেন : হে আদম সন্তান! আমি তোমাকে ঘোড়ায় ও উটে আরোহণ করিয়েছিলাম, নারীদের সাথে বিয়ে দিয়েছি, তোমাকে হাসি-খুশিভাবে আনন্দ-উজ্জ্বল জীবন যাপনের সুযোগ দিয়েছি। এবার বল : এগুলোর শুকরিয়া কোথায়? (আহমাদ ২/৪৯২, সনদ সহীহ)
এছাড়াও এ ব্যাপারে অনেক সহীহ হাদীস রয়েছে। সুতরাং আমরা আল্লাহ তা‘আলা প্রদত্ত প্রত্যেক নেয়ামতের যথার্থ ব্যবহার করব এবং তাঁর শুকরিয়া আদায় করব।
সূরা হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. আখিরাতকে ভুলে দুনিয়া ও তার চাকচিক্য নিয়ে ব্যস্ত থাকা নিন্দনীয়।
২. কবর জীবনের প্রমাণ পেলাম।
৩. মানুষ বৃদ্ধ হয়ে যায় কিন্তু দুনিয়ার প্রতি তার আশা ও লালসা থেকে যায়।
৪. يقين এর প্রকারভেদ জানা গেল।
৫. প্রত্যেক নেয়ামত সম্পর্কে আখিরাতে প্রশ্ন করা হবে।
# তাফসীরে ইবনে কাছীর:-
১-৮ নং আয়াতের তাফসীর
আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ দুনিয়ার প্রতি ভালবাসা, দুনিয়া পাওয়ার প্রচেষ্টা তোমাদেরকে আখেরাতের প্রত্যাশা এবং সৎকাজ থেকে বেপরোয়া করে দিয়েছে। তোমরা এ দুনিয়ার ঝামেলাতেই লিপ্ত থাকবে, হঠাৎ মৃত্যু এসে তোমাদেরকে কবরে পৌঁছিয়ে দিবে।
হযরত যায়েদ ইবনে আসলাম (রঃ) তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “দুনিয়ার সন্ধানে ব্যাপৃত হয়ে তোমরা আল্লাহর আনুগত্যের ব্যাপারে উদাসীন হয়ে পড়েছে। এবং মৃত্যুর সময় পর্যন্ত এ উদাসীনতা অক্ষুন্ন থেকেছে!”
হযরত হাসান বসরী (রঃ) বলেন যে, মানুষের ধন সম্পদ ও সন্তান সংখ্যা বৃদ্ধির লালসা তার মৃত্যুর চিন্তাকে দূরে নিক্ষেপ করেছে।
সহীহ বুখারী শরীফের কিতাবুর রিকাকে আছে যে, হযরত উবাই ইবনে কাব (রাঃ) বলেনঃ আমরা এটাকে কুরআনের আয়াত মনে করতাম,(আরবি) (অর্থাৎ বানী আদমের যদি এক উপত্যকা ভর্তি সোনা থাকে) এটাকে কুরআনের আয়াত মনে করতাম, এমতাবস্থায় (আরবি) এ সূরাটি অবতীর্ণ হয়।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে শুখায়ের (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেনঃ আমি যখন নবী করীম (সঃ)-এর দরবারে হাজির হই তখন তিনি এ আয়াত পাঠ করছিলেন। তিনি বলছিলেনঃ “বানী আদম বলছেঃ আমার, মাল, আমার মাল। অথচ তোমার মাল শুধু সেগুলো যেগুলো তুমি খেয়ে শেষ করেছে এবং পরিধান করে ছিড়ে ফেলেছে। অথবা সাদকা করে অবশিষ্ট রেখেছো।” [এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন ইমাম আহমাদ (রঃ)]
সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে অতিরিক্ত এ কথাও রয়েছেঃ “এ ছাড়া অন্য যা কিছু রয়েছে সেগুলো তুমি মানুষের জন্যে রেখে চলে যাবে।” (এ হাদীসটি ইমাম মুসলিম (রঃ), ইমাম তিরমিযী (রঃ) এবং ইমাম নাসাঈও (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
সহীহ বুখারীতে হযরত আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “মৃত ব্যক্তির সাথে তিনটি জিনিষ যায়, তার মধ্যে দুটি ফিরে আসে, শুধু একটি সাথে থেকে যায়। (ওগুলো হলো) আত্মীয়-স্বজন, ধন-সম্পদ এবং আমল। প্রথমোক্ত দুটি ফিরে আসে শুধু আমল সাথে থেকে যায়।”
মুসনাদে আহমাদে হযরত আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, নবী করীম (সঃ) বলেছেনঃ “আদম সন্তান বৃদ্ধ হয়ে যায়, কিন্তু দুটি জিনিস তার সাথে অবশিষ্ট থেকে যায়, লোভ ও আকাঙখা।” (ইমাম বুখারী (রঃ) ও ইমাম মুসলিম (রঃ) এ হাদীসটি তাখরীজ করেছেন)
হযরত যহহাক (রঃ) একটি লোকের হাতে একটি দিরহাম দেখে তাকে জিজ্ঞেস করেনঃ “এ দিরহাম কার?” উত্তরে লোকটি বললোঃ “আমার।” তখন হযরত যহহাক (রঃ)তাকে বললেনঃ “এটা তোমার তখনই হবে যখন তুমি এটাকে সকাজে অথবা কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনার্থে (আল্লাহর পথে) খরচ করবে।” অতঃপর তিনি দৃষ্টান্ত স্বরূপ নিম্নের কবিতাংশটি পাঠ করেন। (আরবি)
অর্থাৎ “যখন তুমি মাল (আল্লাহর পথে খরচ না করে) রুকে রাখবে তখন তুমি হবে তার মালিকানাধীন। আর যখন তুমি তা খরচ করবে তখন ঐমাল তোমার মালিকানাধীন হয়ে যবে।” (এটা ইবনে আসাকির (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
মুসনাদে ইবনে আবী হাতিমে হযরত ইবনে বুরাইদাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, এই সূরাটি আনসারের দুটি গোত্র বানূ হারিসাহ্ এবং বানূ হারিসের ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়। তারা একে অপরের উপর গর্ব প্রকাশ করতে থাকে। তারা বলেঃ দেখো, আমাদের মধ্যে অমুক ব্যক্তি এ রকম বাহাদুর, এ রকম অর্থ-সম্পদের অধিকারী ইত্যাদি। জীবিত ব্যক্তিদের ব্যাপারে এ রকম গর্ব প্রকাশ করার পর বলেঃ চলো, কবরস্থানে যাই। সেখানে তারা নিজ নিজ সর্দারের কবরের প্রতি ইশারা করে বলতে শুরু করেঃ বলতো, এর মত তোমাদের মধ্যে কেউ কি ছিল? মৃত ব্যক্তিদের নাম নিয়ে নিয়ে তারা নানা অপবাদ দিতে থাকে এবং তাদেরকে ভৎর্সনা করে। আল্লাহ তায়ালা তখন এ সূরার প্রথম দু’টি আয়াত অবতীর্ণ করেন। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ প্রাচুর্যের প্রতিযোগিতা তোমাদেরকে মোহাচ্ছন্ন রাখে, এমন কি তোমরা কবরে উপনীত হও। অর্থাৎ কবরে উপনীত হয়ে নিজেদের সর্দারদের ব্যাপারেও গর্ব করতে থাকো। অথচ তোমাদের উচিত ছিল সেখানে গিয়ে শিক্ষা গ্রহণ করা। পূর্ব পুরুষদের মরে যাওয়া ও পচে গলে যাওয়ার কথা চিন্তা করে নিজেদের পরিণতি চিন্তা করা উচিত ছিল।
হযরত কাতাদা (রঃ) বলেনঃ মানুষ নিজের প্রাচুর্যের ব্যাপারে অহংকার করছে আর একে একে কবরে গিয়ে প্রবেশ করছে। অর্থাৎ প্রাচুর্যের আকাক্ষা তাকে উদাসীনতায় নিমজ্জিত রেখেছে এমতাবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছে এবং সমাধিস্থ হয়েছে।
সহীহ্ হাদীসে এসেছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) এক বেদুইনের মৃত্যুকালে তার পরিচর্যার জন্যে হাজির হলেন এবং যথা অভ্যাস বললেনঃ “কোন ভয় নেই, ইনশাআল্লাহ তুমি গুনাহ থেকে পবিত্রতা লাভ করবে।” লোকটি তখন বললোঃ আপনি পবিত্রতা লাভ করার কথা বলছেন, কিন্তু এটা এমন জ্বর যার প্রকোপ বড়দেরকেও ঘায়েল করে ফেলে এবং কবরে পৌছিয়ে দেয়।” তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাকে বললেনঃ “আচ্ছা, তাহলে তোমার কথাই ঠিক।” এ হাদীসেও (আরবি) শব্দ রয়েছে। আলোচ্য সূরাতেও (আরবি) রয়েছে। এর অর্থ হলো মৃত্যুবরণ করে কবরে উপনীত হওয়া।
জামে তিরমিযীতে হযরত আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেনঃ “এ আয়াত অবতীর্ণ না হওয়া পর্যন্ত আমরা কবরের আযাব সম্পর্কে সন্ধিহানই ছিলাম।” (এ হাদীসটি উসূলে হাদীসের পরিভাষায় গারীব বা দুর্বল)
মুসনাদে ইবনে আবী হাতিমে মায়মূন ইবনে মিহরান (রঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি একদা হযরত উমর ইবনে আবদিল আযীয (রঃ)-এর নিকট উপবিষ্ট ছিলেন। ঐ সময় তিনি (আরবি)
এই আয়াত পাঠ করেন। তারপর কিছুক্ষণ চিন্তা করে বলেনঃ “হে মায়মূন (রঃ)! কবরসমূহ দেখার উদ্দেশ্য হলো যিয়ারত করা, প্রত্যেক যিয়ারতকারী নিজের জায়গায় ফিরে যায়। অর্থাৎ হয়তো জাহান্নামের দিকে যায়, না হয় জান্নাতের দিকে যায়।”
একজন বেদুইন এক ব্যক্তির মুখে এ আয়াত দু’টি শুনে বলেছিলঃ “আসল বাসস্থান তো অন্যত্রই বটে।”
এরপর আল্লাহ্ তা’আলা হুমকির সুরে দু’দুবার বলেনঃ কখনো নয়, শ্রীঘ্রই তোমরা জানতে পারবে। আবারও বলিঃ কখনো নয়, অচিরেই তোমরা জানতে পারবে। এ অর্থও করা হয়েছে যে, প্রথমবার কাফিরদের উদ্দেশ্যে বলা হয়েছে। এবং দ্বিতীয়বার মু’মিনদের উদ্দেশ্যে বলা হয়েছে।
তারপর মহা প্রতাপান্বিত আল্লাহ বলেনঃ কখনো নয়, যদি তোমরা নিশ্চিতরূপে অবগত হতে তবে এরূপ দাম্ভিকতার মধ্যে পতিত থাকতে না। অর্থাৎ মৃত্যুর মুহূর্ত পর্যন্ত নিজেদের শেষ মনযিল আখেরাত সম্পর্কে উদাসীন থাকতে না। এরপর প্রথমোক্ত বিষয়ের বর্ণনা প্রসঙ্গে আল্লাহ্ বলেছেনঃ তোমরা তো জাহান্নাম দেখবেই। সেই জাহান্নামের ভয়াবহতা এক নযর দেখেই ভয়ে-ভীতিতে অন্যেরা তো বটেই, আম্বিয়ায়ে কিরামও হাঁটুর ভরে পড়ে যাবেন। ওর কাঠিন্য ও ভীতি প্রত্যেকের অন্তরে ছেয়ে যাবে। এ সম্পর্কে বহু হাদীসে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে।
অতঃপর আল্লাহ্ তা’আলা বলেনঃ এরপর অবশ্যই সেইদিন তোমাদেরকে নিয়ামত সম্বন্ধে প্রশ্ন করা হবে। স্বাস্থ্য, সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য নিরাপত্তা, রিহ্যাক ইত্যাদি সকল নিয়ামত সম্বন্ধেই প্রশ্ন করা হবে। এসব নিয়ামতের কতটুকু কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়েছে তা জিজ্ঞেস করা হবে।
মুসনাদে ইবনে আবী হাতিমে হযরত উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, একদা ঠিক দুপুরে রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) ঘর হতে বের হন। কিছু দূর যাওয়ার পর দেখেন যে, হযরত আবু বকর (রাঃ)ও মসজিদের দিকে আসছেন। রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) তাকে জিজ্ঞেস করলেনঃ “ এ সময়ে বের হলে কেন?” উত্তরে হযরত আবু বকর (রাঃ) বললেনঃ “যে কারণ আপনাকে ঘর হতে বের করেছে ঐ একই কারণ আমাকেও ঘর হতে বের করেছে।” ঐ সময়ে হযরত উমর (রাঃ)ও এসে তাঁদের সাথে মিলিত হন। তাঁকে রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) জিজ্ঞেস করলেনঃ “এই সময়ে বের হলে কেন?” তিনি জবাবে বললেনঃ “যে কারণ আপনাদের দুজনকে বের করেছে ঐ কারণই আমাকেও বের করেছে।” এরপর রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) তাদের সাথে আলাপ শুরু করলেন। তিনি তাদেরকে বললেনঃ “সম্ভব হলে চলো, আমরা ঐ বাগান পর্যন্ত যাই। ওখানে আহারেরও ব্যবস্থা হবে এবং ছায়াদানকারী জায়গাও পাওয়া যাবে। তারা বললেন, “ঠিক আছে, চলুন।” অতঃপর রাসুলুল্লাহ (সঃ) তাদেরকে সঙ্গে নিয়ে আবুল হায়সাম (রাঃ) নামক সাহাবীর বাগানের দরজায় উপনীত হলেন। রাসূলুল্লাহ (সঃ) দরজায় গিয়ে সালাম জানালেন এবং ভিতরে প্রবেশের অনুমতি চাইলেন। উম্মে হায়সাম দরজার ওপাশেই দাড়িয়ে সবকিছু শুনতে পাচ্ছিলেন, কিন্তু উচ্চস্বরে জবাব দিচ্ছিলেন না। তিনি আল্লাহর রাসূল (সঃ)-এর নিকট থেকে শান্তির দু’আ বেশী পরিমানে পাওয়ার লোভেই এ নীরবতা পালন করছিলেন। তিনবার সালাম জানিয়েও কোন জবাব না পেয়ে রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) সঙ্গীদ্বয়সহ ফিরে আসতে উদ্যত হলেন। এবার উম্মে হায়সাম (রাঃ) ছুটে গিয়ে বললেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আপনার আওয়ায আমি শুনছিলাম, কিন্তু আপনার সালাম বেশী বেশী পাওয়ার লোভেই উচ্চস্বরে জবাব দেইনি। এখন আপনি চলুন।” রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) হযরত উম্মে হায়সাম (রাঃ)-এর এ ব্যবহারে বিরক্ত হলেন না। জিজ্ঞেস করলেনঃ “আবু হায়সাম (রাঃ) কোথায়?” উম্মে হায়সাম (রাঃ) উত্তরে বললেনঃ “তিনি নিকটেই আছেন, পানি আনতে গেছেন। এক্ষুণি তিনি এসে পড়বেন, আপনি এসে বসুন!” রাসূলুল্লাহ্ (রাঃ) এবং তাঁর সঙ্গীদ্বয় বাগানে প্রবেশ করলেন। উম্মে হায়সাম (রাঃ) ছায়া দানকারী একটি গাছের তলায় কিছু বিছিয়ে দিলেন। রাসুলুল্লাহ (সঃ) স্বীয় সঙ্গীদ্বয়কে সেখানে উপবেশন করলেন। ইতিমধ্যে আবু হায়সামও (রাঃ) এসে পড়লেন। রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) এবং তাঁর সঙ্গীদ্বয়কে দেখে তাঁর আনন্দের কোন সীমা থাকলো না। এতে তিনি মানসিক শান্তি লাভ করলেন। তাড়াতাড়ি একটা খেজুর গাছে উঠলেন এবং ভাল ভাল খেজুর পাড়তে লাগলেন। রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) নিষেধ করার পর থামলেন এবং নেমে এলেন। এসে বললেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! কাঁচা, পাকা, শুকনো, সিক্ত ইত্যাদি সব রকম খেজুরই রয়েছে। যেটা ইচ্ছা ভক্ষণ করুন।” তারা ওগুলো ভক্ষণ করলেন। তারপর মিষ্টি ও ঠাণ্ডা পানি দেয়া হলো। তারা সবাই পান করলেন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) বললেনঃ “এই নিয়ামত সম্পর্কে তোমাদেরকে আল্লাহর দরবারে জিজ্ঞেস করা হবে।” এ ধারায় এ হাদীসটি গারীব বা দুর্বল।
ইমাম ইবনে জারীর (রঃ) এ হাদীসটি নিম্নরূপে বর্ণনা করেছেনঃ
হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, হযরত আবু বকর (রাঃ) ও হযরত উমার (রাঃ) এসেছিলেন এমন সময় রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাঁদের কাছে এলেন এবং বললেনঃ “এখানে বসে আছ কেন?” উত্তরে তাঁরা বললেনঃ “যিনি আপনাকে সত্যসহ প্রেরণ করেছেন তার শপথ! ক্ষুধা আমাদেরকে ঘর হতে বের করে এনেছে।” রাসূলুল্লাহ (সঃ) তখন বললেনঃ “যিনি আমাকে সত্যসহ প্রেরণ করেছেন তাঁর শপথ! ক্ষুধা আমাকেও বের করে এনেছে।” তারপর রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) ঐ দুই সাহাবী (রাঃ)-কে সঙ্গে নিয়ে এক আনসারীর বাড়িতে গেলেন। আনসারী বাড়িতে ছিলেন না। রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) আনসারীর স্ত্রীকে জিজ্ঞেস করেনঃ “তোমার স্বামী কোথায়?” মহিলা উত্তরে বললেনঃ “তিনি আমাদের জন্যে মিষ্টি পানি আনতে গেছেন। ইতিমধ্যে ঐ আনসারী পানির মশক নিয়ে এসেই পড়লেন। রাসূলুল্লাহ (সঃ) এবং তাঁর সঙ্গীদ্বয়কে দেখে আনসারী আনন্দে আটখানা হয়ে গেলেন। তিনি বললেনঃ “আমার বাড়িতে আজ আল্লাহর রাসূল (সঃ) তাশরীফ এনেছেন, সুতরাং আমার মত ভাগ্যবান আর কেউ নেই।” পানির মশক ঝুলিয়ে রেখে আনসারী বাগানে গিয়ে তা তাযা খেজুরের কাদি নিয়ে আসলেন। রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) বললেনঃ বেছে বেছে আনলেই তো হতো?” আনসারী বললেনঃ “ভাবলাম যে, আপনি পছন্দ মত বাছাই করে গ্রহণ করবেন। তারপর (একটা বকরী বা মেষ যবাহ করার জন্যে) আনসারী একটি ছুরি হাতে নিলেন। রাসূলুল্লাহ্ বললেনঃ “দেখো, দুগ্ধবতী (কোন বকরী বা মেষ) যবাহ করো না।” অতঃপর আনসারী তাঁদের জন্যে (কিছু একটা) যবাহ করলেন এবং তারা সেখানে আহার করলেন। তারপর তিনি সাহাবীদেরকে লক্ষ্য করে বললেনঃ “দেখো, ক্ষুধার্ত অবস্থায় তোমরা ঘর থেকে বেরিয়েছিলে, অথচ এখন পেট পূর্ণ করে ফিরে যাচ্ছ। এই নিয়ামত সম্পর্কে তোমরা কিয়ামতের দিন জিজ্ঞাসিত হবে।”
রাসূলুল্লাহ্ (সঃ)-এর আযাদকৃত দাস হযরত আবূ উসায়েব (রাঃ) বলেনঃ “একদা রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) আমার পার্শ্ব দিয়ে গমন করে আমাকে ডাক দেন। তারপর হযরত আবূ বকর (রাঃ) ও হযরত উমার (রাঃ)-এর পার্শ্ব দিয়ে গমন করেন এবং তাদেরকেও ডেকে নেন। তারপর এক আনসারীর বাগানে গিয়ে বললেনঃ “দাও ভাই, খেতে দাও।” আনসারী তখন এক গুচ্ছ আঙ্গুর এনে দিলেন। রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) এবং সঙ্গীরা তা ভক্ষণ করলেন। তারপর রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) আনসারীকে বললেনঃ “ঠাণ্ডা পানি নিয়ে এসো।” আনসারী পানি এনে দিলে রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) এবং তাঁর সঙ্গীরা তা পান করলেন। তারপর নবীকরীম (সঃ) বললেনঃ “কিয়ামতের দিন এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।”এ কথা শুনে হযরত উমার (রাঃ) খেজুর গুচ্ছ উঠিয়ে মাটিতে ছুঁড়ে ফেলে বললেনঃ “এ সম্পর্কেও জিজ্ঞাসিত হতে হবে?” রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) উত্তরে বললেনঃ “হ্যা। তবে তিনটি জিনিস সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে না। তা হলো সম্ভ্রম রক্ষার উপযোগী পোশাক, ক্ষুধা নিবৃত্তির উপযোগী খাদ্য এবং শীত-গ্রীষ্ম থেকে রক্ষা পাওয়ার উপযোগী গৃহ।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রাঃ) বর্ণনা করেছেন)
হযরত জাবির ইবনে আবদিল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, একদা রাসূলুল্লাহ (সঃ) হযরত আবু বকর (রাঃ) এবং হযরত উমার (রাঃ) খেজুর ভক্ষণ করেন ও পানি পান করেন। তারপর রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “এই নিয়ামত সম্বন্ধে তোমরা অবশ্যই জিজ্ঞাসিত হবে।” (এ হাদীসটিও মুসনাদে আহমাদে বর্ণিত হয়েছে)
হযরত মাহমুদ ইবনে রাবী হতে বর্ণিত আছে যে, যখন (আরবি) এ সূরা অবতীর্ণ হয়, তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) সাহাবীদেরকে এটা পাঠ করে শুনান। যখন তিনি(আরবি) পর্যন্ত পৌঁছেন তখন সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! কোন নিয়ামত সম্বন্ধে আমাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে? খেজুর খাচ্ছি, পানি পান করছি, ঘাড়ের উপর তরবারী ঝুলছে, শত্রু শিয়রে দাঁড়িয়ে আছে। সুতরাং আমরা কোন নিয়ামত সম্বন্ধে জিজ্ঞাসিত হববা?” রাসূলুল্লাহ (সঃ) উত্তরে বললেনঃ “ভয় করো না, শীঘ্রই নিয়ামত এসে পৌঁছবে।” (ইমাম আহমাদ (রঃ) এর হাদীসটি বর্ণনা করেছেন)
মুআয ইবনে আবদিল্লাহ ইবনে হাবীব (রঃ) হতে বর্ণিত, তিনি তাঁর পিতা হতে এবং তিনি তাঁর চাচা হতে বর্ণনা করেছেন, তিনি (তাঁর চাচা) বলেনঃ
“আমরা এক মজলিসে বসেছিলাম এমন সময় নবী করীম (সঃ) আমাদের নিকট আগমন করলেন, তাঁর মাথায় পানির চিহ্ন পরিলক্ষিত হচ্ছিল (তিনি গোসল করে এসেছেন বলে মনে হচ্ছিল)। আমরা বললামঃ হে আল্লাহর রাসুল (সঃ)! আপনাকে তো বেশ আনন্দিত চিত্ত মনে হচ্ছে? তিনি উত্তরে বললেনঃ “হ্যা, তাই।” তারপর “গিনা বা ধন ঐশ্বর্য সম্পর্কে আলোচনা করা হলো। রাসূলুল্লাহ (সঃ) বললেনঃ “যার অন্তরে আল্লাহ ভীতি রয়েছে তার জন্যে “গিনা বা ধন সম্পদ খারাপ জিনিষ নয়। মনে রেখো, পরহেযগার ব্যক্তির জন্যে সুস্থতা গিনার চেয়েও উত্তম। আনন্দ চিত্ততাও আল্লাহ তা’আলার নিয়ামত।” (এ হাদীসটিও মুসনাদে আহমাদে বর্ণিত হয়েছে। সুনানে ইবনে মাজাহতেও রয়েছে)
হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, নবী করীম (সঃ) বলেছেনঃ “নিয়ামতের প্রশ্নে কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথমে বলা হবেঃ “আমি কি তোমাকে স্বাস্থ্য ও সুস্থতা দান করিনি? ঠাণ্ডা পানি দিয়ে তোমাকে কি পরিতৃপ্ত করিনি?”
হযরত ইকরামা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, যখন (আরবি) এ আয়াত অবতীর্ণ হলো তখন সাহাবীগণ বললেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আমরা কি এমন নিয়ামত ভোগ করছি যে, সে সম্বন্ধে আমাদেরকে প্রশ্ন করা হবে? আমরা তো যবের রুটি ভক্ষণ করছি, (তাও পেট পুরে নয়, বরং) অর্ধভুক্ত থেকে যাচ্ছি?” তখন আল্লাহ তা’আলা তাঁর নবী (সঃ) এর কাছে অহী পাঠালেনঃ তুমি তাদেরকে বলে দাওঃ তোমরা কি (পায়ের আরামের জন্যে) জুতা পরিধান কর না এবং (তৃষ্ণা নিবারণের জন্যে) ঠাণ্ডা পানি পান কর না? এই নিয়ামতগুলো সম্পর্কেই তোমরা জিজ্ঞাসিত হবে। (এ হাদীসটি ইমাম ইবনে আবী হাতিম (রঃ) করেছেন) অন্য এক বর্ণনায় রয়েছে যে, শান্তি, নিরাপত্তা এবং সুস্থতা সম্পর্কে প্রশ্ন করা হবে।
পেট পুরে আহার করা, ঠাণ্ডা পানি পান করা ছায়াদানকারী ঘরে বাস করা, আরামদায়ক ঘুম যাওয়া, আনন্দ ও তৃপ্তি লাভ করা, এমনকি মধু পান করা, সকাল বিকাল আহার করা, ঘি, মধু, ময়দার রুটি ইত্যাদি সম্পর্কে আল্লাহর দরবারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) এ আয়াতের তাফসীর প্রসঙ্গে বলেনঃ শারীরিক সুস্থতা, কান চোখের সুস্থতা ইত্যাদি সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবেঃ তোমরা এ সবকে কি কাজে ব্যবহার করেছো? যেমন আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ (আরবি)
অর্থাৎ ‘কর্ণ, চক্ষু, হৃদয় ওগুলোর প্রত্যেকটির সম্পর্কে কৈফিয়ত তলব করা হবে।” (১৭:৩৬)।
সহীহ বুখারী, সুনানে তিরমিযী, সুনানে নাসাঈ এবং সুনানে ইবনে মাজাহতে হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ
“দু’টি নিয়ামত সম্পর্কে মানুষ খুবই উদাসীনতার মধ্যে রয়েছে। ও দু’টি নিয়ামত হলো স্বাস্থ্য ও স্বচ্ছলতা।” অর্থাৎ মানুষ এ দুটোর পূর্ণ কৃতজ্ঞতা ও প্রকাশ করে না এবং এদুটোর শ্রেষ্ঠত্ব এবং বৈশিষ্ট্য সম্পর্কেও অবগত নয়। আল্লাহর সন্তুষ্টির পথে এ দুটি ব্যয় করে না। উল্লেখ্য যে, সম্ভ্রম রক্ষার উপযোগী পোশাক, ক্ষুধা নিবৃত্তির উপযোগী আহার এবং শীত গ্রীষ্ম হতে রক্ষা পাওয়ার গহ ছাড়া অন্য সবকিছু সম্পর্কেই কিয়ামতের দিন হিসাব দিতে হবে।
মুসনাদে আহমাদে হযরত আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, নবী করীম (সঃ) বলেছেনঃ মহামহিমান্বিত আল্লাহ কিয়ামতের দিন বলবেনঃ “হে আদম সন্তান! আমি তোমাকে ঘোড়ায় ও উষ্ট্রে আরোহণ করিয়েছি, নারীদের সাথে বিয়ে দিয়েছি। তোমাকে হাসি খুশীভাবে আনন্দ উজ্জ্বল জীবন যাপনের। সুযোগ দিয়েছি। এবার বল তো, এগুলোর জন্যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কোথায়?”
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book#1215/O Ye Mankind:-22]
[ # You will surely be asked that Day about pleasure:-]
Surah.102: At-Takaathur
Para:30 Ayat:- 1-8
www.motaher21.net
102:1
اَلۡہٰکُمُ التَّکَاثُرُ ۙ﴿۱﴾
Competition in [worldly] increase diverts you
Allah Says:
أَلْهَاكُمُ التَّكَاثُرُ
حَتَّى زُرْتُمُ الْمَقَابِرَ
102:2
حَتّٰی زُرۡتُمُ الۡمَقَابِرَ ؕ﴿۲﴾
Until you visit the graveyards.
The mutual increase diverts you,
Until you visit the graves.
The Result of Loving the World and Heedlessness of the Hereafter
Allah says that all are preoccupied by love of the world, its delights and its adornments, and this distracts you from seeking the Hereafter and desiring it. This delays you until death comes to you and you visit the graves, thus becoming its inhabitants.
In Sahih Al-Bukhari, it is recorded in the Book of Ar-Riqaq (Narrations that soften the Heart) from Anas bin Malik, who reported that Ubayy bin Ka`b said,
“We used to think that this was a part of the Qur’an until the Ayah was revealed which says;
أَلْهَـكُمُ التَّكَّاثُرُ
(The mutual increase diverts you.”
He was referring to the Hadith in which the Prophet said,
لَوْ كَانَ لاِبْنِ ادَمَ وَادٍ مِنْ ذَهَب
If the Son of Adam had a valley of gold, he would desire another like it…
Imam Ahmad recorded from Abdullah bin Ash-Shikhkhir that he said,
“I came to the Messenger of Allah while he was saying,
أَلْهَـكُمُ التَّكَّاثُرُ
(The mutual increase diverts you.”
He was referring to the Hadith in which the Prophet said,
If the Son of Adam had a valley of gold, he would desire another like it…
Imam Ahmad recorded from `Abdullah bin Ash-Shikhkhir that he said,
“I came to the Messenger of Allah while he was saying,
أَلْهَـكُمُ التَّكَّاثُرُ
(The mutual increase diverts you.)
يَقُولُ ابْنُ ادَمَ مَالِي مَالِي
وَهَلْ لَكَ مِنْ مَالِكَ إِلاَّ مَا أَكَلْتَ فَأَفْنَـيْتَ
أَوْ لَبِسْتَ فَأَبْلَيْتَ
أَوْ تَصَدَّقْتَ فَأَمْضَيْتَ
The Son of Adam says, “My wealth, my wealth.”
But do you get anything (of benefit) from your wealth except for that which you ate and you finished it,
or that which you clothed yourself with and you wore it out,
or that which you gave as charity and you have spent it”
Muslim, At-Tirmidhi and An-Nasa’i also recorded this Hadith.
Muslim recorded in his Sahih from Abu Hurayrah that the Messenger of Allah said,
يَقُولُ الْعَبْدُ مَالِي مَالِي
وَإِنَّمَا لَهُ مِنْ مَالِهِ ثَلَإثٌ
مَا أَكَلَ فَأَفْنَى أَوْ لَبِسَ فَأَبْلَى أَوْ تَصَدَّقَ فَأَمْضَى
وَمَا سِوَى ذَلِكَ فَذَاهِبٌ وَتَارِكُهُ لِلنَّاس
The servant says “My wealth, my wealth.”
Yet he only gets three (benefits) from his wealth:
– that which he eats and finishes,
– that which he eats and finishes,
– that which he wears until it is worn out, or that which he gives in charity and it is spent.
Everything else other than that will go away and leave him for the people.)
Muslim was alone in recording this Hadith.
Al-Bukhari recorded from Anas bin Malik that the Messenger of Allah said,
يَتْبَعُ الْمَيِّتَ ثَلَثَةٌ فَيَرْجِعُ اثْنَانِ وَيَبْقَى مَعَهُ وَاحِدٌ
يَتْبَعُهُ أَهْلُهُ وَمَالُهُ وَعَمَلُهُ
فَيَرْجِعُ أَهْلُهُ وَمَالُهُ وَيَبْقَى عَمَلُه
Three things follow the deceased person, and two of them return while one remains behind with him.
The things which follow him are his family, his wealth and his deeds.
His family and his wealth return while his deeds remain.
This Hadith has also been recorded by Muslim, At-Tirmidhi and An-Nasa’i.
Imam Ahmad recorded from Anas that the Prophet said,
يَهْرَمُ ابْنُ ادَمَ وَيَبْقَى مِنْهُ اثْنَتَانِ الْحِرْصُ وَالاَْمَل
The Son of Adam becomes old with senility, but yet two things remain with him:greed and hope.
Both of them (Al-Bukhari and Muslim) recorded this Hadith in the Two Sahihs.
The Threat of seeing Hell and being questioned about the Delights
كَلَّ سَوْفَ تَعْلَمُونَ
102:3
کَلَّا سَوۡفَ تَعۡلَمُوۡنَ ۙ﴿۳﴾
No! You are going to know.
ثُمَّ كَلَّ سَوْفَ تَعْلَمُونَ
102:4
ثُمَّ کَلَّا سَوۡفَ تَعۡلَمُوۡنَ ؕ﴿۴﴾
Then no! You are going to know.
Nay! you shall come to know!
Again nay! you shall come to know!
Al-Hasan Al-Basri said, “This is a threat after a threat.”
Ad-Dahhak said,
كَلَّ سَوْفَ تَعْلَمُونَ
Nay! you shall come to know! “Meaning, `O you disbelievers.’
ثُمَّ كَلَّ سَوْفَ تَعْلَمُونَ
Again nay! you shall come to know! meaning, `O you believers.”‘
Then Allah says,
كَلَّ لَوْ تَعْلَمُونَ عِلْمَ الْيَقِينِ
102:5
کَلَّا لَوۡ تَعۡلَمُوۡنَ عِلۡمَ الۡیَقِیۡنِ ؕ﴿۵﴾
No! If you only knew with knowledge of certainty…
Nay! If you knew with a sure knowledge.
meaning, `if you knew with true knowledge, you would not be diverted by rivalry for wealth away from seeking the abode of the Hereafter until you reach the graves.’
Then Allah says,
لَتَرَوُنَّ الْجَحِيمَ
102:6
لَتَرَوُنَّ الۡجَحِیۡمَ ۙ﴿۶﴾
You will surely see the Hellfire.
ثُمَّ لَتَرَوُنَّهَا عَيْنَ الْيَقِينِ
102:7
ثُمَّ لَتَرَوُنَّہَا عَیۡنَ الۡیَقِیۡنِ ۙ﴿۷﴾
Then you will surely see it with the eye of certainty.
Verily, you shall see the blazing Fire! And again you shall see it with certainty of sight!)
This is the explanation of the previous threat which was in Allah’s saying,
كَلَّ سَوْفَ تَعْلَمُونَ ثُمَّ كَلَّ سَوْفَ تَعْلَمُونَ
Nay! you shall come to know! Again nay! you shall come to know!
Thus, Allah threatens them with this situation, which is what the people of the Fire will see. It is a Fire, which if it exhaled one breath, every angel who is near (to Allah) and every Prophet who was sent would all fall down on their knees due to fear, awe and the sight of its horrors.
This is based upon what has been reported in the narrations concerning it.
Allah then says,
ثُمَّ لَتُسْأَلُنَّ يَوْمَيِذٍ عَنِ النَّعِيمِ
102:8
ثُمَّ لَتُسۡـَٔلُنَّ یَوۡمَئِذٍ عَنِ النَّعِیۡمِ ٪﴿۸﴾
Then you will surely be asked that Day about pleasure.
Then on that Day you shall be asked about the delights!
meaning, `on that Day you all will be questioned concerning your gratitude towards the favors that Allah blessed you with, such as health, safety, sustenance and other things.
You will be asked did you return His favors by being thankful to Him and worshipping Him.’
Ibn Jarir recorded that Al-Husayn bin `Ali As-Suda’i narrated to him from Al-Walid bin Al-Qasim, who reported from Yazid bin Kaysan, who reported from Abi Hazim, who reported from Abu Hurayrah that he said, “Once while Abu Bakr and `Umar were sitting, the Prophet came to them and said,
What has caused you two to sit here?
They replied,
`By He Who has sent you with the truth, nothing has brought us out of our houses except hunger.’
The Prophet said,
وَالَّذِي بَعَثَنِي بِالْحَقِّ مَا أَخْرَجَنِي غَيْرُه
By He Who has sent me with the truth, nothing has brought me out other than this.
So they went until they came to the house of a man from the Ansar, and the woman of the house received them. The Prophet said to her,
Where is so-and-so?
She replied, `He went to fetch some drinking water for us.’
So the man came carrying his bucket and he said, `Welcome. Nothing has visited the servants (of Allah) better than a Prophet who has visited me today.’ Then he hung his bucket near a palm tree, and climbed it and returned to them with a cluster of dates. So the Prophet said,
Why didn’t you pick (some of them)?
The man replied, `I wanted you to choose with your own eyes.’ Then he took a blade (to slaughter a sheep) and the Prophet said,
Do not slaughter one that gives milk.
So he slaughtered a sheep for them that day and they all ate.
Then the Prophet said,
لَتُسْأَلُنَّ عَنْ هَذَا يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَخْرَجَكُمْ مِنْ بُيُوتِكُمُ الْجُوعُ فَلَمْ تَرْجِعُوا حَتَّى أَصَبْتُمْ هَذَا فَهَذَا مِنَ النَّعِيم
You will be asked about this on the Day of Judgement. Hunger caused you to come out of your homes and you did not return until you had eaten this meal. So this is from the delights.”
Muslim also recorded this Hadith.
It has been confirmed in Sahih Al-Bukhari and the Sunans of At-Tirmidhi, An-Nasa’i and Ibn Majah from Ibn `Abbas that the Messenger of Allah said,
نِعْمَتَانِ مَغْبُونٌ فِيهِمَا كَثِيرٌ مِنَ النَّاسِ الصِّحَّةُ وَالْفَرَاغ
Two favors are treated unjustly by most people:
– health and
– free time.
This means that the people are lacking gratitude for these two favors. They do fulfill their obligations to them. Therefore, whoever does not maintain the right that is obligatory upon him, then he is unjust.
Imam Ahmad recorded from Abu Hurayrah that the Prophet said,
يَقُولُ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ قال عفان يَوْمَ الْقِيَامَةِ
يَا ابْنَ ادَمَ
حَمَلْتُكَ عَلَى الْخَيْلِ وَالاِْبِلِ وَزَوَّجْتُكَ النِّسَاءَ وَجَعَلْتُكَ تَرْبَعُ وَتَرْأَسُ فَأَيْنَ شُكْرُ ذَلِكَ
Allah the Mighty and Majestic says on the Day of Judgement,
“O Son of Adam!
I made you ride upon the horses and camels, I gave you women to marry, and I made you reside and rule (in the earth). So where is the thanks for that”
Ahmad was alone in recording this Hadith in this manner.
This is the end of the Tafsir of Surah At-Takathur, and all praise and blessings are due to Allah
For getting Quran app: play.google.com/store/apps/details?id=com.ihadis.quran