Motaher21.net
أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
( বই # ১২১৯)
[#কুরাইশদের মর্যাদা
:-]
সুরা: ১০৬: আল-কুরাইশ
পারা:৩০
১- ৪ নং আয়াতের বেখ্যা :-
#তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন:-
#তাফসীরে ফী জিলালিল কুরআন:-
# তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ:-
# তাফসীরে ইবনে কাছীর:-
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book#1219)
[ # Security of the Quraysh]
Surah.106: Al-Quraish
Para:30 Ayat:- 1- 4
www.motaher21.net
সুরা: আল-কুরাইশ
بِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِیْمِ
পরম করুণাময় মেহেরবান আল্লাহর নামে
* ভূমিকা:১০৬
(১০৬-কুরাইশ) : নামকরণ:
প্রথম আয়াতের কুরাইশ (قُرَيْشٍ) শব্দটিকে সূরার নাম হিসেবে গণ্য করা হয়েছে।
(১০৬-কুরাইশ) : নাযিল হওয়ার সময়-কাল :
যাহ্হাক ও কাল্বী একে মাদানী বললেও মুফাস্সিরগণের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ দল এর মক্কী হবার ব্যাপারে একমত। তাছাড়া এ সূরার শব্দাবলীর মধ্যেও এর মক্কী হবার সুস্পষ্ট প্রমাণ নিহিত রয়েছে। যেমন رَبَّ هَذَا الْبَيْتِ (এ ঘরের রব)। এ সূরাটি মদীনায় নাযিল হলে কাবাঘরের জন্য ‘এ ঘর’ শব্দ দু’টি কেমন করে উপযোগী হতে পারে? বরং সূরা আল ফীলের বিষয়বস্তুর সাথে এর এত গভীর সম্পর্ক রয়েছে যে, সম্ভবত আল ফীল নাযিল হবার পর পরই এ সূরাটি নাযিল হয়ে থাকবে বলে মনে হয়। উভয় সূরার মধ্যে এই গভীর সম্পর্ক ও সামঞ্জস্যের কারণে প্রথম যুগের কোন কোন মনীষী এ দু’টি সূরাকে মুলত: একটি সূরা হবার মত পোষণ করতেন। হযরত উবাই ইবনে কাব (রা.) তাঁর সংকলিত কুরআনের অনুলিপিতে এ দু’টি সূরাকে একসাথে লিখেছেন এবং সেখানে এ দু’য়ের মাঝখানে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম লেখা ছিল না। এ ধরনের রেওয়ায়াত পূর্বোক্ত চিন্তাকে আরো শক্তিশালী করেছে। তাছাড়া হযরত উমর (রা.) একবার কোন ভেদ চিহ্ন ছাড়াই এই সূরা দু’টি এক সাথে নামাযে পড়েছিলেন। কিন্তু এ রায় গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ সাইয়েদুনা হযরত উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু বিপুল সংখ্যাক সাহাবায়ে কেরামের সহযোগিতায় সরকারীভাবে কুরআন মজীদের যে অনুলিপি তৈরি করে ইসলামী দুনিয়ার বিভিন্ন কেন্দ্রে পাঠিয়েছেন তাতে এ উভয় সূরার মাঝখানে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম লেখা ছিল। তখন থেকে নিয়ে আজ পর্যন্ত সারা দুনিয়ার সমস্ত কুরআন মজীদ এ দু’টি আলাদা আলাদা সূরা হিসেবেই লিখিত হয়ে আসছে। এছাড়াও এ সূরা দু’টির বর্ণনাভংগী পরস্পর থেকে এত বেশী বিভিন্ন যে, এ দু’টির ভিন্ন সূরা হবার ব্যাপারটি একেবারে সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
(১০৬-কুরাইশ) : ঐতিহাসিক পটভূমি :
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রপিতামহ কুসাই ইবনে কিলাবের সময় পর্যন্ত কুরাইশ গোত্র হিজাযে বিক্ষিপ্ত অবস্থায় বসবাস করছিল। কুসাই সর্বপ্রথম তাদেরকে মক্কায় একত্র করে। এভাবে বাইতুল্লাহর মুতাওয়াল্লীর দায়িত্ব তাদের হাতে আসে। এজন্য কুসাইকে “মুজাম্মে” বা একত্রকারী উপাধি দান করা হয়। এ ব্যক্তি নিজের উন্নত পর্যায়ের বুদ্ধিবৃত্তিক কুশলতা ও ব্যবস্থাপনার সাহায্যে মক্কায় একটি নগর রাষ্ট্রের বুনিয়াদ স্থাপন করে। আরবের বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত হাজীদের খেদমতের উত্তম ব্যবস্থা করে। এর ফলে ধীরে ধীরে আরবের সকল গোত্রের মধ্যে এবং সমস্ত এলাকায় কুরাইশদের প্রভাব প্রতিপত্তি প্রতিষ্ঠিত হতে থাকে। কুসাইয়ের পর তার পুত্র আবদে মান্নাফ ও আবদুদ্দারের মধ্যে মক্কা রাষ্ট্রের শাসন কর্তৃত্ব বিভক্ত হয়ে যায়। কিন্তু দুই ভাইয়ের মধ্যে পিতার আমলেই আবদে মান্নাফ অধিকতর খ্যাতি লাভ করে এবং সমগ্র আরবে তার মর্যাদা স্বীকৃতি লাভ করতে থাকে। আবদে মান্নাফের ছিল চার ছেলে: হাশেম, আবদে শামস, মুত্তালিব ও নওফাল। এদের মধ্যে থেকে আবদুল মুত্তালিবের পিতা ও রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রপিতামহ হাশেমের মনে সর্বপ্রথম আরবের পথে প্রাচ্য এলাকার দেশসমূহ এবং সিরিয়া ও মিসরের মধ্যে যে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য চলতো তাতে অংশগ্রহণ করার এবং এই সংগে আরববাসীদের জীবন যাপনের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রও কিনে আনার চিন্তা জাগে। তার ধারণামতে এভাবে বাণিজ্য পথের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা গোত্ররা তাদের কাছে থেকে দ্রব্য-সামগ্রী কিনবে এবং মক্কার বাজারসমূহে দেশের অভ্যন্তরের ব্যবসায়ীরা সামগ্রী কেনার জন্য ভিড় জমাবে। এটা এমন এক সময়ের কথা যখন উত্তরাঞ্চলের দেশসমূহ ও পারস্য উপসাগরের পথে রোম সম্রাজ্য ও প্রাচ্য দেশসমূহের মধ্যে যে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য চলতো তার ওপর ইরানের সাসানীয় সম্রাটরা পুরোপুরি কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত করেছিল। এ কারণে দক্ষিণ আরব থেকে লোহিত সাগরের উপকূল ঘেঁষে সিরিয়া ও মিসরের দিকে প্রসারিত বাণিজ্য পথে ব্যবসা বিপুলভাবে জমে উঠেছিল। আরবের অন্যান্য বাণিজ্য কাফেলার তুলনায় কুরাইশদের বাড়তি সুবিধা ছিল। কাবার খাদেম হবার কারণে পথের সমস্ত গোত্র তাদেরকে মর্যাদার চোখে দেখতো। হজ্বের সময় কুরাইশ বংশীয় লোকেরা যে আন্তরিকতা, উদারতা ও বদান্যতা সহকারে হাজীদের খেদমত করতো সে জন্য সবাই তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ ছিল। কাজেই কুরাইশদের বাণিজ্য কাফেলার ওপর পথে ডাকাতদের আক্রমণ হবে এ আশংকা ছিল না। পথের বিভিন্ন গোত্র অন্যান্য বাণিজ্য কাফেলার কাছ থেকে যে বিপুল পরিমাণ পথকর আদায় করতো তাও তাদের কাছ থেকে আদায় করতে পারতো না। এসব দিক বিবেচনা করে হাশেম একটি বাণিজ্য পরিকল্পনা তৈরি করে এবং এই পরিকল্পনায় তার অন্য তিন ভাইকেও শামিল করে। হাশেম সিরিয়ার গাস্সানী বাদশাহ থেকে, আবদে শামস হাবশার বাদাশাহর থেকে, মুত্তালিব ইয়ামনের গভর্ণরদের থেকে এবং নওফল ইরাক ও পারস্যের সরকারদের থেকে বাণিজ্যের সুযোগ-সুবিধা লাভ করে। এভাবে তাদের ব্যবসা দ্রুত উন্নতি লাভ করতে থাকে। ফলে তারা চার ভাই “মুত্তাজিরীন” বা সওদাগর নামে খ্যাত হয়। আর এই সংগে তারা আশপাশে গোত্রদের ও বিভিন্ন রাষ্ট্রের সাথে যে সম্পর্ক গড়ে তুলেছিল সেজন্য তাদেরকে “আসহাবুল ঈলাফ” তথা প্রীতির সম্পর্ক সৃষ্টিকারী বলা হতো।
এ ব্যবসার কারণে কুরাইশবংশীয় লোকেরা সিরিয়া, মিসর, ইরান, ইয়ামন ও হাবশার সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলার সুযোগ লাভ করে। সরাসরি বিভিন্ন দেশের সমাজ, সংস্কৃতি, সভ্যতার সংস্পর্শে আসার কারণে তাদের দেখার, জানার ও উপলব্ধি করার মান অনেক উন্নত হতে থাকে। ফলে আরবের দ্বিতীয় কোন গোত্র তাদের সমপর্যায়ে পৌঁছতে পারেনি। ধন-সম্পদের দিক দিয়েও তারা আরবের সবচেয়ে উঁচু পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিল। মক্কা পরিণত হয়েছিল সমগ্র আরব উপদ্বীপের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসা কেন্দ্রে। এ আন্তর্জাতিক সম্পর্কের একটি বড় সুফল হিসেবে তারা ইরাক থেকে বর্ণমালাও আমদানী করে। পরবর্তী কালে কুরআন মজীদ লেখার জন্য এ বর্ণমালাই ব্যবহৃত হয়। আরবের কোন গোত্রে কুরাইশদের মতো এত বেশী লেখাপড়া জানা লোক ছিল না। এসব কারণেই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছিলেন: قُرَيْشُ قَادَةُ النَّاسِ অর্থাৎ কুরাইশরা হচ্ছে জনগণের নেতা। (মুসনাদে আহমাদ: আমর ইবনুল আস (রা.) বর্ণিত হাদীস সমষ্টি) বাইহাকী হযরত আলীর (রা.) রেওয়ায়াত উদ্ধৃত করেছেন। তাতে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
كَانَ هَذَا الأَمْرُ فِى حِمْيَرَ فَنَزَعَهُ اللَّهُ مِنْهُمْ وَجَعَلَهُ فِى قُرَيْشٍ
“প্রথমে আরবদের নেতৃত্ব ছিল হিময়ারী গোত্রের দখলে তারপর মহান আল্লাহ তা তাদের থেকে ছিনিয়ে নিয়ে কুরাইশদেরকে দান করেন।”
কুরাইশরা এভাবে একের পর এক উন্নতির মনযিল অতিক্রম করে চলছিল। এমন সময় আবরাহার মক্কা আক্রমণের ঘটনা ঘটে। যদি সে সময় আবরাহা কা’বা ভেঙ্গে ফেলতে সক্ষম হতো তাহলে আরবদেশে শুধুমাত্র কুরাইশদেরই নয়, কা’বা শরীফের মর্যাদাও খতম হয়ে যেতো। এটি যে সত্যিই বাইতুল্লাহ বা আল্লাহর ঘর, জাহেলী যুগের আরবদের এই বিশ্বাসের ভিত্ও নড়ে উঠতো। এ ঘরের খাদেম হিসেবে সারা দেশে কুরাইশদের যে মর্যাদা ও প্রভাব প্রতিপত্তি ছিল তাও মুহূর্তের মধ্যে ধূলিসাৎ হয়ে যেতো। হাবশীদের মক্কা দখল করার পর রোম সম্রাট সামনের দিকে এগিয়ে গিয়ে সিরিয়া ও মক্কার মাঝখানের বাণিজ্য পথও দখল করে নিতো। ফলে কুসাই ইবনে কিলাবের আগে কুরাইশরা যে দুর্গত অবস্থার শিকার ছিল তার চাইতেও মারাত্মক দুরবস্থার মধ্যে তারা পড়তো। কিন্তু মহান আল্লাহ তাঁর অসীম কুদরতের খেলা দেখান। পক্ষীবাহিনী পাথর মেরে মেরে আবরাহার ৬০ হাজারের বিশাল হাবশী বাহিনীকে ধ্বংস করে দেয়। মক্কা থেকে ইয়ামন পর্যন্ত সারাটা পথে বিধ্বস্ত সেনাবাহিনীর লোকেরা পড়ে মরে যেতে থাকে। এ সময় কা’বা শরীফের আল্লাহর ঘর হবার ব্যাপারে সমস্ত আরববাসীর ঈমান আগের চাইতে কয়েকগুণ বেশী মজবুত হয়ে যায়। এই সংগে সারা দেশে কুরাইশদের প্রতিপত্তি আগের চাইতেও আরো অনেক বেশী প্রতিষ্ঠিত হয়। এখন আরবদের মনে বিশ্বাস জন্মে, এদের প্রতি আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ বর্ষিত হয়। ফলে এরা নির্বিঘ্নে আরবের যে কোন অংশে যেতো এবং নিজেদের বাণিজ্য কাফেলা নিয়ে যে কোন এলাকা অতিক্রম করতো। এদের গায়ে হাত দেবার সাহস কারো হতো না। এদের গায়ে হাত দেয়া তো দূরের কথা এদের নিরাপত্তার ছত্রছায়ায় কোন অকুরাইশী থাকলেও তাকে কেউ বিরক্ত করতো না।
(১০৬-কুরাইশ) : বিষয়বস্তু ও মূল বক্তব্য:
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আবির্ভাবকালে যেহেতু এ অবস্থা সবার জানা ছিল তাই এ সব কথা আলোচনা করার প্রয়োজন ছিল না। এ কারণে এ ছোট্ট সূরাটিতে চারটি বাক্যের মধ্য দিয়ে কুরাইশদেরকে কেবলমাত্র এতটুকু কথা বলাই যথেষ্ট মনে করা হয়েছে যে, যখন তোমরা নিজেরাই এ ঘরটিকে (কা’বা ঘর) দেবমূর্তির মন্দির নয় বরং আল্লাহর ঘর বলে মনে করো এবং যখন তোমরা ভালোভাবেই জানো যে, আল্লাহই তোমাদেরকে এ ঘরের বদৌলতে এ পর্যায়ের শান্তি ও নিরাপত্তা দান করেছেন, তোমাদের ব্যবসায় এহেন উন্নতি দান করেছেন এবং অভাব-অনাহার থেকে রক্ষা করে তোমাদেরকে এ ধরনের সমৃদ্ধি দান করেছেন তখন তোমাদের তো আসলে তাঁরই ইবাদাত করা উচিত।
সুরা: আল-কুরাইশ
আয়াত নং :-1
টিকা নং:1,
لِاِیْلٰفِ قُرَیْشٍۙ
যেহেতু কুরাইশরা অভ্যস্ত হয়েছে,১
তাফসীর :
তাফহীমুল কুরআন:
টিকা:১) মূল শব্দ হচ্ছে لِإِيلَافِ قُرَيْشٍ । এখানে ঈলাফ (ايلاف) শব্দটি এসেছে উলফাত (الفت) শব্দ থেকে। এর অর্থ হয় অভ্যস্ত হওয়া, পরিচিত হওয়া, বিচ্ছেদের পর মিলিত হওয়া এবং কোন জিনিসের অভ্যাস গড়ে তোলা। ঈলাফ শব্দের পূর্বে যে ‘লাম’টি ব্যবহৃত হয়েছে সে সম্পর্কে অনেক আরবী ভাষাবিদ পণ্ডিত এ মত প্রকাশ করেছেন যে, আরবী প্রচলন ও বাকরীতি অনুযায়ী এর মাধ্যমে বিস্ময় প্রকাশ করা বুঝায়। যেমন আরবরা বলে, لِزَيْدٍ وَمَا صَنَعْنَا بِهِ “এই যায়েদের ব্যাপারটা দেখো, আমরা তার সাথে ভালো ব্যবহার করলাম কিন্তু সে আমাদের সাথে কেমন ব্যবহারটা করলো।” কাজেই لِإِيلَافِ قُرَيْشٍ মানে হচ্ছে কুরাইশদের ব্যবহারে বড়ই অবাক হতে হয়। কেননা আল্লাহর অনুগ্রহে তারা বিচ্ছিন্ন ও বিক্ষিপ্ত হবার পর একত্র হয়েছে এবং এমন ধরনের বাণিজ্য সফরে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে যা তাদের প্রাচুর্য ও সমৃদ্ধির মাধ্যমে পরিণত হয়েছে। অথচ তারা সেই আল্লাহর বন্দেগী করতে অস্বীকার করছে। ভাষাতত্ববিদ আখ্ফশ, কিসাঈ ও ফাররা এ মত ব্যক্ত করেছেন। ইবনে জারীর এ মতকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে লিখেছেন, আরবরা যখন এ ‘লাম’ ব্যবহার করে কোন কথা বলে তখন সেই কথাটি এ বিষয়টি প্রকাশ করার জন্য যথেষ্ট বিবেচিত হয় যে, একথার পরও যে ব্যক্তি কোন আচরণ করে তা বিস্ময়কর। বিপরীতপক্ষে খলীল ইবনে আহমদ, সিবওয়াইহে ও যামাখ্শারী প্রমুখ ভাষাতত্ব ও অলংকার শাস্ত্রবিদগণ বলেন, এখানে লাম অব্যয় সূচক এবং এর সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছে আগের বাক্য فَلْيَعْبُدُوا رَبَّ هَذَا الْبَيْتِ এর সাথে। এর অর্থ হচ্ছে, এমনিতেই তো কুরাইশদের প্রতি আল্লাহর নিয়ামত সীমা-সংখ্যাহীন, কিন্তু অন্য কোন নিয়ামতের ভিত্তিতে না হলেও আল্লাহর অনুগ্রহের কারণে তারা এই বাণিজ্য সফরে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে, অন্তত এই একটি নিয়ামতের কারণে তাদের আল্লাহর বন্দেগী করা উচিত। কারণ এটা মূলত তাদের প্রতি একটা বিরাট অনুগ্রহ।
সুরা: আল-কুরাইশ
আয়াত নং :-2
টিকা নং:2,
اٖلٰفِهِمْ رِحْلَةَ الشِّتَآءِ وَ الصَّیْفِۚ
(অর্থাৎ) শীতের ও গ্রীষ্মের সফরে অভ্যস্ত।২
তাফসীর :
তাফহীমুল কুরআন:
টিকা:২) শীত ও গ্রীষ্মের সফরের মানে হচ্ছে গ্রীষ্মকালে কুরাইশরা সিরিয়া ও ফিলিস্তিনের দিকে বাণিজ্য সফর করতো। কারণ এ দু’টি শীত প্রধান দেশ। আর শীতকালে সফর করতো দক্ষিণ আরবের দিকে। কারণ সেটি গ্রীষ্ম প্রধান এলাকা।
সুরা: আল-কুরাইশ
আয়াত নং :-3
টিকা নং:3,
فَلْیَعْبُدُوْا رَبَّ هٰذَا الْبَیْتِۙ
কাজেই তাদের এই ঘরের রবের ইবাদাত করা উচিত,৩
তাফসীর :
তাফহীমুল কুরআন:
টিকা:৩) এ ঘর মানে কা’বা শরীফ। এখানে আল্লাহর বক্তব্যের অর্থ হচ্ছে, এ ঘরের বদৌলতেই কুরাইশরা এ নিয়ামতের অধিকারী হয়েছে। তারা নিজেরাই একথা মেনে নিয়েছেযে, এই যে ৩৬০টি মূর্তিকে তারা পূজা করে এরা এ ঘরের রব নয়। বরং একমাত্র আল্লাহই এর রব। তিনিই আসহাবে ফীলের আক্রমণ থেকে তাদেরকে বাঁচিয়েছেন। আবরাহার সেনাবাহিনীর মোকাবিলায় সাহায্য করার জন্য তাঁর কাছেই তারা আবেদন জানিয়েছিল। তাঁর ঘরের আশ্রয় লাভ করার আগে যখন তারা আরবের চারদিকে ছড়িয়েছিল তখন তাদের কোন মর্যাদাই ছিল না। আরবের অন্যান্য গোত্রের ন্যায় তারাও একটি বংশধারার বিক্ষিপ্ত দল ছিল মাত্র। কিন্তু মক্কায় এই ঘরের চারদিকে একত্র হবার এবং এর সেবকের দায়িত্ব পালন করতে থাকার পর সমগ্র আরবে তারা মর্যাদাশালী হয়ে উঠেছে। সবদিকে তাদের বাণিজ্য কাফেলা নির্ভয়ে যাওয়া আসা করছে। কাজেই তারা যা কিছুই লাভ করেছে এ ঘরের রবের বদৌলতেই লাভ করেছে। কাজেই তাদের একমাত্র সেই রবেরই ইবাদাত করা উচিত।
সুরা: আল-কুরাইশ
আয়াত নং :-4
টিকা নং:4, 5,
الَّذِیْۤ اَطْعَمَهُمْ مِّنْ جُوْعٍ١ۙ۬ وَّ اٰمَنَهُمْ مِّنْ خَوْفٍ۠
যিনি তাদেরকে ক্ষুধা থেকে রেহাই দিয়ে খাবার দিয়েছেন৪ এবং ভীতি থেকে নিরাপত্তা দান করেছেন।৫
তাফসীর :
তাফহীমুল কুরআন:
টিকা:৪) মক্কায় আসার পূর্বে কুরাইশরা যখন আরবের চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল তখন তারা অনাহারে মরতে বসেছিল। এখানে আসার পর তাদের জন্য রিযিকের দরজাগুলো খুলে যেতে থাকে। তাদের সপক্ষে হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম এই বলে দোয়া করেছিলেন— “হে আল্লাহ! আমি তোমার মর্যাদাশালী ঘরের কাছে একটি পানি ও শস্যহীন উপত্যকায় আমার সন্তানদের একটি অংশের বসতি স্থাপন করিয়েছি, যাতে তারা নামায কায়েম করতে পারে। কাজেই তুমি লোকদের হৃদয়কে তাদের অনুরাগী করে দিয়ো, তাদের খাবার জন্য ফলমূল দান করো।” (সূরা ইবরাহীম ৩৭) তাঁর এই দোয়া অক্ষরে অক্ষরে পূর্ণ হয়।
টিকা:৫) অর্থাৎ যে ভীতি থেকে আরব দেশে কেউ নিরাপদ নয়, তা থেকে তারা নিরাপদ রয়েছে। সে যুগে আরবের অবস্থা এমন ছিল যে, সারা দেশে এমন কোন জনপদ ছিল না যেখানে লোকেরা রাতে নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারতো। কারণ সবসময় তারা আশঙ্কা করতো, এই বুঝি কোন লুটেরা দল রাতের অন্ধকরে হঠাৎ তাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লো এবং তাদের সবকিছু লুট করে নিয়ে গেলো। নিজের গোত্রের সীমানার বাইরে পা রাখার সাহস কোন ব্যক্তির ছিল না। কারণ একাকী কোন ব্যক্তির জীবিত ফিরে আসা অথবা গ্রেফতার হয়ে গোলামে পরিণত হবার হাত থেকে বেঁচে যাওয়া যেন অসম্ভব ব্যাপার ছিল। কোন কাফেলা নিশ্চিন্তে সফর করতে পারতো না। কারণ পথে বিভিন্ন স্থানে তাদের ওপর ছিল দস্যু দলের আক্রমণের ভয়। ফলে পথ-পার্শ্বের প্রভাবশালী গোত্র সরদারদেরকে ঘুষ দিয়ে বাণিজ্য কাফেলাগুলো দস্যু ও লূটেরাদের হাত থেকে নিজেদেরকে নিরাপদ রেখে এগিয়ে যেতে পারতো। কিন্তু কুরাইশরা মক্কায় সম্পূর্ণ নিরাপদ ছিল। তাদের নিজেদের ওপর কোন শত্রুর আক্রমণের ভয় ছিল না। তাদের ছোট বড় সব রকমের কাফেলা দেশের প্রত্যেক এলাকায় যাওয়া আসা করতো। হারাম শরীফের খাদেমদের কাফেলা, একথা জানার পর কেউ তাদের ওপর আক্রমণ করার সাহস করতো না। এমন কি একজন কুরাইশী একাই যদি কখনো কোন জায়গায় যেতো এবং সেখানে কেউ তার ক্ষতি করতে যেতো তাহলে তার পক্ষে শুধুমাত্র হারমী اَنَا مِنْ حَرَمِ اللهِ বা (حرمى) আমি হারম শরীফের লোক বলে দেয়াই যথেষ্ট ছিল। একথা শুনার সাথেই আক্রমণকারীর হাত নিচের দিকে নেমে আসতো।
ফী জিলালিল কুরআন:
সংক্ষিপ্ত আলোচনা : হযরত ইবরাহীম (আ.) পবিত্র কাবাঘর নির্মাণ করে তা পরিস্কার -পরিছন্ন করার পর আল্লাহ তায়ালার দরবারে যে দোয়া করেছিলেন, মহান আল্লাহ তায়ালা তার খলীল ইবরাহীম (আ.)-এর সব দোয়াই কবুল করেছিলেন । তিনি আল্লাহর নিকট এ আরযি পেশ করেছিলেন, ‘হে আমার প্রভু! তুমি এ নগরকে নিরাপদ নগরীতে পরিণত করো। আর এর অধিবাসীদেরকে ফলমূল, বিভিন্ন খাদ্য দ্রব্য এবং যাবতীয় জীবনধারণ সামগ্রীর প্রাচুর্য দ্বারা সমৃদ্ধ করো ৷’ আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা তার প্রিয় খলীলের দোয়া কবুল করে পৃথিবীর সকল রাজা-বাদশাহ ও সকল শক্তিধর এবং অত্যাচারী শাসকদের হাত থেকে এ ঘরকে বরাবর পবিত্র ও মুক্ত রেখেছেন। যারা আশ্রয় গ্রহণ করতে চায়-তাদের জন্য এ ঘরকে নিরাপত্তার কেন্দ্রে পরিণত করেছেন। আর এ ঘরের আশেপাশের প্রতিটি ঘরকেও ভয় ভীতি ও ক্ষতি থেকে তিনি নিরাপদ রেখেছেন । এমন কি এ পবিত্র ঘরের ইযযতের কারণে এর প্রতিবেশীরা শেরেক, কুফর ও মূর্তিপূজায় লিপ্ত হওয়া সত্ত্বেও এবং এ ঘরের প্রভুর এবাদাতকে পরিহার করা সত্ত্বেও আল্লাহ সুবাহানাহু তায়ালা তার ঘরের মর্যাদার খাতিরে তাদেরকেও ক্ষতি ও ভীতি থেকে মুক্ত রেখেছেন। এমনকি কোরায়শরা এ ঘরের মালিকের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে এ ঘরে শত শত মূর্তি স্থাপন করা সত্ত্বেও এ ঘরের প্রতিবেশী হওয়ার কারণে আল্লাহ রব্বুল আলামীন হস্তিবাহিনীর হাত থেকে কোরায়শ ও বায়তুল্লাহকে নিরাপদ রেখেছেন এর হেফাযত করে এ ঘরের মান-মর্যাদাকে রক্ষা করেছেন। সূরা ফীলের তাফসীরে বর্ণনা করা হয়েছে, আল্লাহ্ তায়ালা, কোরআনে হাকীমের অপর আয়াতে এরশাদ করেছেন, ‘তোমরা কি দেখোনি? আমি (আল্লাহ) এ হারামকে (বায়তুল্লাহকে) নিরাপদ করেছি, অথচ এর আশেপাশে মানুষের ওপর ছোবল মারা হয় ।’
ফী জিলালিল কুরআন:
‘আমুল ফীলে’ অনুষ্ঠিত হস্তিবাহিনীর ঘটনা কোরায়শ তথা আরববাসীর নিকট ,এ ঘরের গুরুত্ব ও মর্যাদাকে আরও অধিক পরিমাণে বৃদ্ধি করলো! সমগ্র আরব উপদ্বীপে এর প্রভাব-প্রতিপত্তি ও মর্যাদার প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস আরও সুদৃঢ় হলো। এ ঘর ও এ ঘরের কারণে এর প্রতিবেশীদের নিরাপত্তার এ ধারণা মানব মনে আরও সুদৃঢ় ও বদ্ধমূল হয়ে গেলো। কাবার মর্যাদার কারণে কোরায়শদের মর্যাদাও ও আরব ভূখন্ডে বৃদ্ধি পেলো। কোরায়শদের প্রভাবও চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়লো । নিরাপদে চলাফেরা তাদের জন্য সহজতর হলো । সর্বত্র খ্যাতি ও সম্মান প্রদর্শন বেড়ে গেলো। উত্তর ও দক্ষিণ তথা ইয়েমেন ও সিরিয়ায় তাদের জন্য বাণিজ্যের পথ আরো উন্মুক্ত হয়ে গেলো । শীতকালে দক্ষিণে (ইয়েমেনে) তাদের বাণিজ্যিক কাফেলা সফর করতো আর গ্রীষ্মকালে উত্তরে (সিরিয়ায়) তাদের বাণিজ্যিক সফর পরিচালিত হতো। আবরাহার ধ্বংসাভিযান থেকে বায়তুল্লাহ এবং কোরায়শ সম্প্রদায় নিরাপদে মুক্তি লাভের পর সমস্ত আরব ভূখন্ডে তাদের সম্মান ও প্রভাব-প্রতিপত্তি যথেষ্ট পরিমাণে বৃদ্ধি পায়, এমনকি তাদের প্রতি ঈর্ষা ও শত্রুভাবাপন্ন গোত্রসমূহের মধ্যেও অভাবনীয়ভাবে তাদের মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। তাদের কষ্টকর বাণিজ্যিক সফরও তাদের জন্য নিরাপদ ও লাভজনক হয়ে গেলো। প্রকাশ্যভাবে কোরায়শ সম্প্রদায় এক বিশেষ সম্মান ও মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হলো । তাদের সামনে জীবন ধারণের উপায়-উপাদানের প্রশস্ত দ্বার উন্মুক্ত হলো। কাবার মর্যাদার কারণে তাদের রিযিকের প্রশস্ততাও বৃদ্ধি পেলো । তারা অকল্পনীয় নিরাপত্তা, শান্তি এবং সমগ্র বিশ্ববাসীর কাছে একটি বিশেষ সম্মান করলো। তারা উত্তর ও দক্ষিণ অর্থাৎ ইয়েমেন ও সিরিয়ার সর্বত্রই বাণিজ্যিক সফরে ব্যস্ত হয়ে পড়লো ৷ এমনিভাবে লাভজনক বাণিজ্যিক সফর তাদের প্রিয় অভ্যাসে পরিণত হলো । তাই এ দু’সফরের প্রতি দুর্বলতার কথাই আল্লাহ তায়ালা সূরা কোরায়শের ‘শীত ও গ্রীষ্মকালীন দু’সফরের প্রতি’ আসক্তির কথা দ্বারা বর্ণনা করেছেন। হযরত ইবরাহীম (আ.)-এর দোয়া তাদের বাস্তব জীবনে আল্লাহ তায়ালা কিভাবে প্রতিফলিত করেছেন তার বাস্তব নযীর স্থাপিত হলো । আল্লাহ তায়ালা পর্ববর্তী ‘সুরা ফীলে’ ও সরা ‘কোরায়শে’ কোরায়শ সম্প্রদায়ের প্রতি তার এ অপার অনুগ্রহের ঘটনাকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। কোরায়শদের বিশেষ মর্যাদা : শীত ও গ্রীষ্মের বাণিজ্যিক সফরে কোরায়শদেরকে বিশেষ সুযোগ দানের মাধ্যমে তাদের রিযিকের প্রশস্ততার ক্ষেত্রেও আল্লাহর অসীম অনুগ্রহের কথা তাদেরকে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে তিনি স্মরণ করিয়েছেন। বিভিন্ন নগর ও জনপদে তাদের নিরাপদ ভ্রমণ, তাদের জীবন ও জীবিকার সহজতর ব্যবস্থা, ভীতিমুক্ত নিরাপদ পরিবেশ, মরুভূমির পরিবেশেও তাদের জন্যে বিশেষ ব্যবস্থায় জীবিকা অর্জনের উপায়, ঘরে ও বাইরে তাদের শান্তিপূর্ণ নিরাপদ অবস্থানের অনুগ্রহের কথা এ সূরায় আল্লাহ তায়ালা উপস্থাপন করেছেন। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কাবা ঘরের ইযযত ও মর্যাদার কারণে তাদের ঘরে ও বাইরে কিভাবে অফুরন্ত রহমত বর্ষণ করেছেন, তাদেরকে সকল শত্রুর ক্ষতি দুশমনী হ’তে হেফাযত করেছেন, সে সকল অনুগ্রহের প্রতি এ সূরায় ইংগিত করা হয়েছে। আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা কোরায়শদের মানসপটে তার এ সকল অনুগ্রহসমূহ স্মরণ করিয়ে দেয়ার মাধ্যমে চাইছেন তারা যেন লজ্জিত ও অনুতপ্ত হয়ে গায়রুল্লাহর পূজা-উপাসনা ও পরিহার করে একমাত্র লা শরীক আল্লাহর এবাদাতে মশগুল হয়ে যায়। তাদের অন্তরে যেন এ বিশ্বাস ও চেতনা জাগ্রত হয় যে, এ ঘরের তিনিই প্রভু-এ ঘরের প্রতিবেশী হওয়ার কারণেই আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে পূর্ণ নিরাপত্তা ও শাস্তির সাথে আহার বিহার ও নিরাপদ জীবন যাপনের সুযোগ দান করেছেন। আল্লাহ তায়ালা কোরায়শদেরকে উদ্দেশ্য করে এ আয়াতে বলেছেন, শীত ও গ্রীষ্মে তাদের হৃদয়ে তিনি সফরের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি করে দিয়েছেন, যাতে করে তারা এ ঘরের মালিকের এবাদাত ও বন্দেগীতে লিপ্ত হয়৷ আল্লাহ তায়ালা তাদের নিরাপত্তার দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন, যার ফলে তাদের হৃদয়ে শীত ও গ্রীষ্মে সফরের আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। আর তাদের জীবন যাপনের যে সকল বস্তু সামগ্রী ও রসদ প্রয়োজন এ বাণিজ্যিক সফরের মাধ্যমে তারা তা পেয়ে যাচ্ছে। তাই আল্লাহর এ সকল অনুগ্রহের কারণে তাদের অবশ্যই আল্লাহর বন্দেগীতে লিপ্ত থাকা উচিত- যে আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে ক্ষুধা দিয়ে আহারের ব্যবস্থাও করে দিয়েছেন। তাদেরকে ভয়ভীতি থেকে মুক্ত করে নিরাপত্তা প্রদান করেছেন। অথচ বৃক্ষ-তরুলতাহীন আরবের মরুভূমিতে স্বাভাবিকভাবে আহার বিহারের ব্যবস্থার অভাবে ক্ষুধার তাড়নায় তাদের অস্থির হওয়ার কথা । দুর্বল ও শক্তিহীন অবস্থায় এবং জীবনের নিরাপত্তাহীনতার কারণে তাদের ভীত ও সন্ত্রস্ত থাকার কথা । আল্লাহ তায়ালা এ সূরার মাধ্যমে তাদের স্মৃতিতে এ দৃশ্যই জ্ঞাত করতে চেয়েছেন। আল্লাহর এ সকল অনুগ্রহকে স্মরণ করে তাদের অন্তর বিনয় ও লজ্জায় অবনত হয়ে আল্লাহর দিকে রুজু হোক ৷ তারা যেন কোনো অবস্থায়ই আল্লাহর ঘরের গুরুত্ব ও মর্যাদাকে ভুলে না যায়। তারা যেন তাদের জীবনের কোনো পর্যায়েই সে কঠিন বিপদকালীন অলৌকিক ও বিস্ময়কর ঘটনার স্মৃতিকে ভুলে না যায় যে, এ পবিত্র ঘরের মর্যাদা, বরকত ও ইযযতের কারণেই আল্লাহ তায়ালা আবরাহার হস্তিবাহিনীর প্রচন্ড আক্রমন থেকে এ ঘরের হেফাযত করেছেন। আবদুল মোত্তালেব সে চরম বিপদের সময় সম্পূর্ণ নিরূপায় অবস্থায় একমাত্র আল্লাহর সাহায্য কামনা করেছে, বিনয় ও নিষ্ঠার সাথে একমাত্র আল্লাহর হাতে তার ঘরকে সোপর্দ করেছে, একমাত্র আল্লাহর ওপরই নির্ভর করেছে৷ সে সময়ে আবদুল মোত্তালেব অপর কোনো শক্তির ওপর নির্ভর না করে একমাত্র আল্লাহর দিকেই ‘রুজু’ হয়েছে। এ ঘরের সংরক্ষণের অন্য এ ঘরের প্রভুর কাছেই দোয়া করেছে। সে মুহূর্তে কোরায়শ গোত্রপতি আবদুল মোত্তালেব এমন কোনো কথা উচ্চারণ করেনি যার দ্বারা আল্লাহ ছাড়া আর কোনো শক্তির ওপর নির্ভরশীলতা প্রকাশ পেয়েছে। আবদুল মোত্তালেব তখন কোনো দেবতা বা মূর্তির স্মরণাপন্ন হয়নি; এমন কথা বলেনি যে, আমাদের অমুক দেবতা, অমুক দেবী, অমুক মুর্তি ক্রোধান্বিত হয়ে এর প্রতিশোধ গ্রহণ করবে, অমুক দেব দেবী এ ঘরের হেফাযত করবে, বরং আবরাহার কাছে আবদুল মোত্তালেব অত্যন্ত পরিষ্কার ভাষায় এ বাক্যই উচ্চারণ করেছে, ‘উটের মালিক আমি, তাই তা ফেরত দানের দাবী নিয়েই আমি এসেছি। আর কাবার মালিক যিনি তিনিই তার ঘরকে রক্ষা করবেন ।’ কিন্তু এর পর দেখা যাচ্ছে যে, জাহেলী মন-মানসিকতা কোনো যুক্তির ধার ধারেনা ৷ অজ্ঞতা ও গৌড়ামি কখনও যুক্তিনির্ভর নয়। অজ্ঞতা কখনও মানব প্রবৃত্তিকে সত্যের পথে পরিচালিত করে না। অজ্ঞতা কখনও বুদ্ধিমত্তা ও প্রজ্ঞার প্রতি আকৃষ্ট করে না। বস্তুত, অজ্ঞতা পশুত্বেরই নামান্তর । যদিও মাঝখানে তাসমিয়া (বিসমিল্লাহ) সংযোজনের ফলে সূরা কোরায়শ সূরা ‘ফীল’ থেকে পৃথক ও একটি স্বতন্ত্র সূরা হিসাবেই অবতীর্ণ হয়েছে বলা যায়। নয়তো উভয় সূরারই প্রতিপাদ্য ও আলোচ্য বিষয় এক ও অভিন্ন । তাই আলাদা আলাদা সময়ে অবতীর্ণ হওয়া সত্ত্বেও বিষয়বস্তুর অভিন্নতার কারণে বিন্যাস ও সংযোজনের ক্ষেত্রে উভয় সূরাকে পাশাপাশি রাখা হয়েছে। সংকলন কালীন সময়ে প্রতিপাদ্য বিষয়ের সম্পৃক্ততার কারণেই সূরা ‘ফীলের’ পরেই সূরা ‘কোরায়শকে’ সংযোজন ও সংকলন করা হয়েছে ।
# তাফসীরে ফাতহুল মাজিদ:-
নামকরণ ও গুরুত্ব:
কুরাইশ আরবের একটি সম্ভ্রান্ত বংশ। এ বংশেই নাবী (সাঃ)-এর জন্ম। সূরার প্রথম আয়াতে উল্লিখিত কুরাইশ শব্দ থেকেই উক্ত নামে সূরার নামকরণ করা হয়েছে। এ সূরাকে “সূরা ইলাফ”ও বলা হয়। অনেকে মনে করেন পূর্বের সূরার সাথে এ সূরার সম্পর্ক রয়েছে।
উম্মু হানী বিনতু আবূ তালেব (রাঃ) হতে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন : আল্লাহ তা‘আলা কুরাইশদের সাতটি বিষয়ে মর্যাদা দান করেছেন:
(১) আমি তাদের মধ্য হতে।
(২) নবুওয়াত তাদের মধ্য হতে এসেছে।
(৩) কাবাগৃহের তত্ত্বাবধান।
(৪) হাজীদের পানি পান করানোর দায়িত্ব পালন।
(৫) আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে হস্তীবাহিনী বিরুদ্ধে সাহায্য করেছেন।
(৬) উক্ত ঘটনার পর কুরাইশরা দশবছর যাবৎ আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত কারো ইবাদত করেনি।
(৭) আল্লাহ তা‘আলা তাদের বিষয়ে কুরআনে পৃথক একটি সূরা নাযিল করেছেন যাতে তাদের ব্যতীত আর কারো আলোচনা করা হয়নি। অতঃপর তিনি ‘বিসমিল্লাহ’সহ অত্র সূরাটি তেলাওয়াত করেন। (সিলসিলা সহীহাহ হা. ১৯৪৪, সহীহুল জামে হা. ৪২০৯)
لِإِيْلٰفِ- শব্দের অর্থ : স্বাভাবিক ও অভ্যস্ত হওয়া। অর্থাৎ কোন কষ্ট ও বিরাগ অনুভব না করা। মুজাহিদ (রহঃ) বলেন : তারা ব্যবসায় অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিল। ফলে শীত ও গ্রীষ্মকালে ব্যবসায় করা তাদের জন্য কষ্টকর হত না। (সহীহ বুখারী)
কুরাইশদের প্রধান জীবনোপকরণ ছিল ব্যবসায়। প্রতি বছর তাদের বাণিজ্যিক কাফেলা দুবার অন্য দেশে সফর করত। তারা সেখান থেকে পণ্য নিয়ে আসত। শীতকালে গরম এলাকা ইয়ামান, আর গ্রীষ্মকালে ঠাণ্ডা এলাকা শাম সফর করত। কাবাঘরের খাদেম বলে আরবরা তাদের সম্মান করত। এজন্যই তাদের বাণিজ্যিক কাফেলা বিনা বাধায় সফর করত। তাই আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে এ ঘরের একমাত্র মালিক আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত করার নির্দেশ দিয়েছেন যে ঘরের কারণে তারা বিনা বাধায় ব্যবসায় করতে পারে ও প্রভূত সম্মানের পাত্র হয়েছে।
(أَطْعَمَهُمْ مِّنْ جُوْعٍ)
অর্থাৎ উক্ত ব্যবসায়-বাণিজ্যের মাধ্যমে তাদেরকে খাদ্য দেন।
اٰمَنَهُمْ مِّنْ خَوْفٍ))
অর্থাৎ সকল লুণ্ঠন ও হত্যাযজ্ঞ হতে তাদেরকে নিরাপদে রেখেছেন। কারণ তারা হারামের অধিবাসী ও হারামের খাদেম। আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
(وَضَرَبَ اللہُ مَثَلًا قَرْیَةً کَانَتْ اٰمِنَةً مُّطْمَئِنَّةً یَّاْتِیْھَا رِزْقُھَا رَغَدًا مِّنْ کُلِّ مَکَانٍ فَکَفَرَتْ بِاَنْعُمِ اللہِ فَاَذَاقَھَا اللہُ لِبَاسَ الْجُوْعِ وَالْخَوْفِ بِمَا کَانُوْا یَصْنَعُوْنَ)
“আল্লাহ দৃষ্টান্ত দিচ্ছেন এক জনপদের যা ছিল নিরাপদ ও নিশ্চিন্ত, যেথায় আসত সর্বদিক হতে তার প্রচুর জীবনোপকরণ। অতঃপর তার অধিবাসীরা আল্লাহর অনুগ্রহ অস্বীকার করল, ফলে তারা যা করত তজ্জন্য আল্লাহ তাদেরকে আস্বাদ গ্রহণ করালেন ক্ষুধা ও ভীতির।” (সূরা নাহল ১৬: ১১২)
তাই যে আল্লাহ তা‘আলা ক্ষুধার সময় খাদ্য দান করেন, ভয় থেকে নিরাপত্তা দান করেন তার শুকরিয়া জ্ঞাপনার্থে কাবা ঘরের মালিক একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত করা উচিত।
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. কুরাইশদের মর্যাদা সম্পর্কে জানলাম।
২. বাইতুল্লাহর কারণে তারা যে সম্মানের পাত্র ও নিরাপত্তা পেয়েছিল তা অবগত হলাম।
৩. কুরাইশদের জীবনচিত্র সম্পর্কে জানলাম।
৪. ক্ষুধার সময় খাদ্য পাওয়া ও ভয়ের সময় নিরাপত্তা পাওয়া অনেক বড় নেয়ামত।
# তাফসীরে ইবনে কাছীর:-
এ সূরার ফযীলত সম্পর্কে ইমাম বায়হাকী (রঃ) তাঁর কিতাবুল খিলাফিয়্যাত’ এ একটি গারীব হাদীস বর্ণনা করেছেন। হাদীসটি হলোঃ হযরত উম্মিহানী বিনতে আবী তালিব (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) বলেছেনঃ “আল্লাহ্ তা’আলা কুরায়েশদেরকে সাতটি ফযীলত প্রদান করেছেন। (এক) আমি তাদেরই অন্তর্ভুক্ত। (দুই) নবুওয়াত তাদের মধ্যে রয়েছে। (তিন) তারা আল্লাহর ঘরের তত্ত্বাবধায়ক। (চার) তারা যমযম কূপের পানি পরিবেশনকারী। (পাঁচ) আল্লাহ্ তা’আলা তাদেরকে হস্তী অধিপতিদের উপর বিজয় দান করেছেন। (ছয়) দশবছর পর্যন্ত তারা আল্লাহর ইবাদত করেছে যখন অন্য কেউ ইবাদত করতো না। (সাত) তাদের সম্পর্কে আল্লাহ্ তা’আলা কুরআন কারীমের একটি সূরা অবতীর্ণ করেছেন।” অতঃপর রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) পাঠ করেনঃ (আরবি)
১-৪ নং আয়াতের তাফসীর
কুরআনের বর্তমান উসমানী (রাঃ) সংস্করণের বিন্যাসে এ সূরাটিকে সূরা ফীল হতে পৃথকভাবে বিন্যস্ত করা হয়েছে। উভয় সূরার মধ্যে (আরবি) দ্বারা পার্থক্য সৃষ্টি করা হয়েছে। বিষয়বস্তুর দিক থেকে এ সূরাটিও সূরা ফীল এরই অনুরূপ। মুহাম্মদ ইবনে ইসহাক (রঃ), আব্দুর রহমান ইবনে যায়েদ ইবনে আসলাম (রঃ) প্রমুখ গুরুজন যে ব্যাখ্যা করেছেন তাতে বলা হয়েছেঃ আমি মক্কা হতে হাতীদের ফিরিয়ে রেখেছি এবং হাতী ওয়ালাদেরকে ধ্বংস করে দিয়েছি। কুরায়েশদেরকে সান্ত্বনা দেয়ার জন্যে এবং শান্তিপূর্ণভাবে মক্কায় অবস্থানের জন্যেও এ সূরার বক্তব্য উপস্থাপিত হয়েছে এরূপ ব্যাখ্যাও করা হয়েছে। আবার এই অর্থও লিখিত হয়েছে যে, শীত-গ্রীষ্ম যে কোন ঋতুতে কুরায়েশরা দূর দূরান্তে শান্তিপূর্ণভাবে সফর করতো। কেননা, মক্কার মত সম্মানিত শহরে বসবাস করার কারণে সবাই তাদের সম্মান করতো। তাদের সঙ্গে যারা থাকতো তারাও শান্তিপূর্ণভাবে সফর করতে সক্ষম হতো। একইভাবে নিজ দেশেও তারা। সর্বপ্রকার নিরাপত্তা ও সুযোগ-সুবিধা লাভ করতো। যেমন কুরআনের অন্য এক আয়াতে রয়েছেঃ (আরবি)
অর্থাৎ “তারা কি দেখে না যে, আমি হরমকে শান্তিমূলক স্থান হিসেবে মনোনীত করেছি, অথচ লোকদেরকে তাদের চতুর্দিক হতে ছিনতাই করা হয়?” (২৯:৬৭) কিন্তু সেখানে যারা অবস্থান করে তারা সম্পূর্ণ নির্ভয় ও নিশ্চিন্ত থাকে।
ইমাম ইবনে জারীর (রঃ) বলেন যে, (আরবি) এর মধ্যে প্রথম যে (আরবি) টি রয়েছে ওটা বিস্ময় প্রকাশক (আরবি) এবং উভয় সূরা অর্থাৎ সূরা ফীল এবং সূরা লিঈলাফি কুরাইশ সম্পূর্ণ পৃথক। এ ব্যাপারে মুসলমানদের ইজমা রয়েছে।
আল্লাহ তাআলা কুরায়েশদের প্রতি তাঁর নিয়ামতের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলছেনঃ এই গৃহের মালিকের ইবাদত করা তাদের উচিত, যিনি তাদেরকে ক্ষুধায় আহার দিয়েছেন এবং ভীতি হতে তাদেরকে নিরাপত্তা দান করেছেন। যেমন আল্লাহ্ পাক অন্য জায়গায় বলেনঃ (আরবি)
অর্থাৎ “হে নবী (সঃ)! তুমি বলে দাও আমাকে শুধু এ আদেশই দেয়া হয়েছে যে, আমি এই শহরের প্রভুর ইবাদত করবো যিনি ওকে হরম বানিয়েছেন, যিনি সকল জিনিষের মালিক। আমাকে আত্মসমর্পণকারীদের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।” (২৭:৯১) সুতরাং আল্লাহ্ তা’আলা বলছেনঃ যিনি ক্ষুধায় আহার্য দিয়েছেন এবং ভয়ভীতি থেকে নিরাপত্তা দান করেছেন তাঁর ইবাদত কর এবং ছোট বড় কোন কিছুকে তার অংশীদার করো না। আল্লাহ্ তা’আলার এ আদেশ যে পালন করবে আল্লাহ্ তাকে দুনিয়ায় ও আখেরাতে সুখে-শান্তিতে কালাতিপাত করাবেন। পক্ষান্তরে তার অবাধ্যাচরণ যে করবে তার ইহকালের শান্তিকেও অশান্তিতে পরিণত করা হবে এবং আখেরাতেও সে শান্তির পরিবর্তে ভয়ভীতি ও হতাশার সম্মুখীন হবে। যেমন আল্লাহ্ তা’আলা বলেনঃ (আরবি)
অর্থাৎ “আল্লাহ দৃষ্টান্ত দিচ্ছেন এক জনপদের যা ছিল নিরাপদ ও নিশ্চিন্ত, যেথায় আসতো সর্বদিক হতে ওর প্রচুর জীবনোপকরণ; অতঃপর ওটা আল্লাহর অনুগ্রহ অস্বীকার করলো; ফলে, তারা যা করতো তজ্জন্যে আল্লাহ্ তাদেরকে আস্বাদ গ্রহণ করালেন ক্ষুধা ও ভীতির আচ্ছাদনের। তাদের নিকট তো এসেছিল এক রাসূল তাদেরই মধ্য হতে, কিন্তু তারা তাকে অস্বীকার করেছিল; ফলে, সীমা লংঘন করা অবস্থায় শাস্তি তাদেরকে গ্রাস করলো।” (১৬:১১২-১১৩)
একটি হাদীসে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ্ (সঃ) বলেছেনঃ “হে কুরায়েশগণ! আল্লাহ্ তা’আলা তোমাদের জন্যে আরাম আয়েশের ব্যবস্থা করেছেন, ঘরে বসিয়ে তোমাদেরকে পানাহার করিয়েছেন, চতুর্দিকে অশান্তির দাবানল ছড়িয়ে থাকা সত্ত্বেও তোমাদেরকে তিনি শান্তি ও নিরাপত্তা দান করেছেন। এরপরও তোমাদের কি হলো যে, তোমরা এই বিশ্ব প্রতিপালকের ইবাদত করবে না এবং তাঁর তাওহীদ বা একত্ববাদকে অবিশ্বাস করবে? তোমাদের উপর কি এমন বিপদ আপতিত হলো, যে কারণে তোমরা আল্লাহ্ ছাড়া অন্যদের সামনে মাথানত করবে?”
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book#1219)
[ # Security of the Quraysh]
Surah.106: Al-Quraish
Para:30 Ayat:- 1- 4
www.motaher21.net
106:1
لِاِیۡلٰفِ قُرَیۡشٍ ۙ﴿۱﴾
For the accustomed security of the Quraysh –
This Surah has been separated from the one that preceded it in the primary Mushaf (the original copy of `Uthman) .
They (the Companions) wrote “In the Name of Allah, the Most Gracious, the Most Merciful” on the line (i.e., the space) between these two Surahs. They did this even though this Surah is directly related to the one which precedes it, as Muhammad bin Ishaq and `Abdur-Rahman bin Zayd bin Aslam have both clarified. This is because the meaning of both of them is,
“We have prevented the Elephant from entering Makkah and We have destroyed its people in order to gather (Ilaf) the Quraysh, which means to unite them and bring them together safely in their city.”
It has also been said that the meaning of this (Ilaf) is what they would gather during their journey in the winter to Yemen and in the summer to Ash-Sham through trade and other than that. Then they would return to their city in safety during their journeys due to the respect that the people had for them because they were the residents of Allah’s sanctuary. Therefore, whoever knew them would honor them. Even those who came to them and traveled with them, would be safe because of them. This was their situation during their journeys and travels during their winter and summer. In reference to their living in the city, then it is as Allah said,
أَوَلَمْ يَرَوْاْ أَنَّا جَعَلْنَا حَرَماً ءامِناً وَيُتَخَطَّفُ النَّاسُ مِنْ حَوْلِهِمْ
Have they not seen that We have made it a secure sanctuary, while men are being snatched away from all around them. (29:67).
Thus, Allah says,
لاِإِيلَإفِ قُرَيْشٍ
إِيلَـفِهِمْ
For the Ilaf of the Quraysh. Their Ilaf,
This is a subject that has been transferred from the first sentence in order to give it more explanation.
Thus, Allah says,
إِيلَفِهِمْ رِحْلَةَ الشِّتَاء وَالصَّيْفِ
106:2
اٖلٰفِہِمۡ رِحۡلَۃَ الشِّتَآءِ وَ الصَّیۡفِ ۚ﴿۲﴾
Their accustomed security [in] the caravan of winter and summer –
Their Ilaf caravans, in winter and in summer.
Ibn Jarir said,
“The correct opinion is that the letter Lam is a prefix that shows amazement. It is as though He (Allah) is saying,
`You should be amazed at the uniting (or taming) of the Quraysh and My favor upon them in that.”‘
He went on to say,
“This is due to the consensus of the Muslims that they are two separate and independent Surahs.”
Then Allah directs them to be grateful for this magnificent favor in His saying,
فَلْيَعْبُدُوا رَبَّ هَذَا الْبَيْتِ
106:3
فَلۡیَعۡبُدُوۡا رَبَّ ہٰذَا الۡبَیۡتِ ۙ﴿۳﴾
Let them worship the Lord of this House,
So, let them worship the Lord of this House.
meaning, then let them single Him out for worship, just as He has given them a safe sanctuary and a Sacred House.
This is as Allah says,
إِنَّمَأ أُمِرْتُ أَنْ أَعْبُدَ رَبِّ هَذِهِ الْبَلْدَةِ الَّذِى حَرَّمَهَا وَلَهُ كُلُّ شَىءٍ وَأُمِرْتُ أَنْ أَكُونَ مِنَ الْمُسْلِمِينَ
I have been commanded only to worship the Lord of this city, Who has sanctified it and to Whom belongs everything. And I am commanded to be from among the Muslims. (27:91)
Then Allah says
106:4
الَّذِیۡۤ اَطۡعَمَہُمۡ مِّنۡ جُوۡعٍ ۬ۙ وَّ اٰمَنَہُمۡ مِّنۡ خَوۡفٍ ٪﴿۴﴾
Who has fed them, [saving them] from hunger and made them safe, [saving them] from fear.
الَّذِي أَطْعَمَهُم مِّن جُوعٍ
Who has fed them against hunger,
meaning, He is the Lord of the House and He is the One Who feeds them against hunger.
وَامَنَهُم مِّنْ خَوْفٍ
And has made them safe from fear.
meaning, He favors them with safety and gentleness, so they should single Him out for worship alone, without any partner. They should not worship any idol, rival or statue besides Him. Therefore, whoever accepts this command, Allah will give him safety in both this life and the Hereafter. However, whoever disobeys Him, He will remove both of them from him.
This is as Allah says,
وَضَرَبَ اللَّهُ مَثَلً قَرْيَةً كَانَتْ ءَامِنَةً مُّطْمَيِنَّةً يَأْتِيهَا رِزْقُهَا رَغَدًا مِّن كُلِّ مَكَانٍ فَكَفَرَتْ بِأَنْعُمِ اللَّهِ فَأَذَاقَهَا اللَّهُ لِبَاسَ الْجُوعِ وَالْخَوْفِ بِمَا كَانُواْ يَصْنَعُونَ
وَلَقَدْ جَأءَهُمْ رَسُولٌ مِّنْهُمْ فَكَذَّبُوهُ فَأَخَذَهُمُ الْعَذَابُ وَهُمْ ظَـلِمُونَ
And Allah puts forward the example of a township, that dwelt secure and well-content:its provision coming to it in abundance from every place, but it denied the favors of Allah. So, Allah made it taste extreme of hunger and fear, because of that which they used to do.
And verily, there had come unto them a Messenger from among themselves, but they denied him, so the torment overtook them while they were wrongdoers. (16:112-113)
This is the end of the Tafsir of Surah Quraysh, and all praise and thanks are due to Allah
For getting Quran app: play.google.com/store/apps/details?id=com.ihadis.quran