Book# 114/A/6

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ

(Book# 114/A/) www.motaher21.net

إِنَّ الَّذِينَ ءَامَنُوا

” নিশ্চয় যারা ঈমান এনেছে,”

” Verily!. Those who believe !”

সুরা: আল-বাক্বারাহ
আয়াত নং :-৬২

اِنَّ الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا وَ الَّذِیْنَ هَادُوْا وَ النَّصٰرٰى وَ الصّٰبِـٕیْنَ مَنْ اٰمَنَ بِاللّٰهِ وَ الْیَوْمِ الْاٰخِرِ وَ عَمِلَ صَالِحًا فَلَهُمْ اَجْرُهُمْ عِنْدَ رَبِّهِمْۚ وَ لَا خَوْفٌ عَلَیْهِمْ وَ لَا هُمْ یَحْزَنُوْنَ

নিশ্চিতভাবে জেনে রেখো, যারা শেষ নবীর প্রতি ঈমান আনে কিংবা ইহুদি, খৃষ্টান বা সাবি তাদের মধ্য থেকে যে ব্যক্তিই আল্লাহ‌ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান আনবে এবং সৎকাজ করবে তার প্রতিদান রয়েছে তাদের রবের কাছে এবং তাদের জন্য কোন ভয় ও মর্মবেদনার অবকাশ নেই।

৬২ নং আয়াতের তাফসীর:

সৎ ‘আমলকারীগণের জন্য সব সময়েই রয়েছে উত্তম প্রতিদান

এ আয়াতের পূর্বে অবাধ্যদের শাস্তির বর্ণনা ছিলো। এখানে তাদের মধ্যে যারা ভালো লোক তাদের প্রতিদানের বর্ণনা দেয়া হচ্ছে। নবীগণের অনুসারীদের জন্য এ সু-সংবাদ কিয়ামত পর্যন্ত রয়েছে যে, তারা ভবিষ্যতের ভয় হতে নির্ভয় এবং অতীতের হাতছাড়া হয়ে যাওয়া জিনিসের জন্য আফসোস করা হতে পবিত্র। অতএব যে নিরক্ষর নবী ও রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর অনুসরণ করবে সে প্রাপ্ত হবে অন্তহীন শান্তি— এবং ভবিষ্যতের কোন আশঙ্কার জন্য সে ভীত হবে না, আর অতীতে কোন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার জন্য সে দুঃখিত হবে না। অন্য জায়গায় মহান আল্লাহ বলেনঃ

﴿اَلَاۤ اِنَّ اَوْلِیَآءَ اللّٰهِ لَا خَوْفٌ عَلَیْهِمْ وَ لَا هُمْ یَحْزَنُوْنَ﴾

মনে রেখো, মহান আল্লাহর বন্ধুদের না কোন আশঙ্কা আছে, আর না তারা বিষন্ন হবে। (১০ নং সূরাহ্ ইউনুস, আয়াত নং ৬২) যে ফিরিশতাগণ মুসলিমদের রুহ্ বের করার জন্য আগমন করেন তাঁদের কথা উদ্ধৃত করে কুর’আন মাজীদে বলা হয়েছেঃ

﴿اِنَّ الَّذِیْنَ قَالُوْا رَبُّنَا اللّٰهُ ثُمَّ اسْتَقَامُوْا تَتَنَزَّلُ عَلَیْهِمُ الْمَلٰٓىِٕكَةُ اَلَّا تَخَافُوْا وَلَا تَحْزَنُوْا وَاَبْشِرُوْا بِالْجَنَّةِ الَّتِیْ كُنْتُمْ تُوْعَدُوْنَ﴾

নিঃসন্দেহে যারা বলেঃ আমাদের রাব্ব মহান আল্লাহ! অতঃপর অবিচল থাকে, তাদের নিকট অবতীর্ণ হয় ফিরিশতা এবং তাঁরা বলেঃ তোমরা ভীত হয়ো না, চিন্তিত হয়ো না এবং তোমাদেরকে যে জান্নাতের প্রতিশ্র“তি দেয়া হয়েছিলো তার জন্য আনন্দিত হও। (৪১ নং সূরাহ্ হা-মীম সাজদাহ, আয়াত নং ৩০)

‘মু’মিন’ শব্দের অর্থ

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে ইবনু আবী হাতিম (রহঃ) বর্ণনা করেন যে, এ আয়াতের পর মহান আল্লাহ এ আয়াতটি অবতীর্ণ করেন। (তাফসীর ইবনু আবী হাতিম ১/১৯৮) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-এর বর্ণনা থেকে জানা যায় যে, মহান আল্লাহ কোন ব্যক্তির ‘আমল কবূল করবেন না যদি ঐ ‘আমল মহান আল্লাহর রাসূল মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নির্দেশ মতো করা না হয়। মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নাবুওয়াত প্রাপ্তির পূর্বে অন্যান্য নবীর উম্মাতগণ তাদের নবীর মতাদর্শ অনুযায়ী ‘আমল করলে তা ছিলো গ্রহণযোগ্য, কিন্তু রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর আবির্ভাবের পর তাঁর পূর্ববর্তী নবীগণের নির্দেশিত পথ ও ‘আমলের গ্রহণযোগ্যতা আর থাকে না।

সালমান ফারসী (রাঃ) বলেনঃ ‘আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে হাযির হওয়ার পূর্বে যেসব ধর্মপ্রাণ লোকের সাথে সাক্ষাৎ করি, তাদের সালাত, সিয়াম ইত্যাদির বর্ণনা দেই। তখন এই আয়াত অবতীর্ণ হয়।’ (মুসনাদ ইবনু আবী হাতিম) আর একটি বর্ণনায় আছে যে, সালমান ফারিসী (রাঃ) তাঁদের আলোচনা করতে গিয়ে বলেনঃ ‘তারা সালাত আদায়কারী, সিয়াম পালনকারী ও ঈমানদার ছিলো এবং আপনি যে প্রেরিত পুরুষ এর ওপরও তাদের বিশ্বাস ছিলো।’ তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ‘হে সালমান! তারা জাহান্নামী।’ (হাদীস য‘ঈফ। তাফসীরে ত্বাবারী-১/১১১৩, আসবাবুন নুযূল ২৮ পৃষ্ঠা) এতে সালমান (রাঃ) দুঃখিত হলে তখন আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। কিন্তু এটা স্পষ্ট কথা যে, ইয়াহূদীদের মধ্যে ঈমানদার ঐ ব্যক্তি যে তাওরাতের ওপর ঈমান আনে এবং সে অনুযায়ী কাজ করে, কিন্তু যখন ‘ঈসা (আঃ) আগমন করেন তখন তাঁরও অনুসরণ করে এবং তাঁর নাবুওয়াতকে সত্য বলে বিশ্বাস করে। কিন্তু তখনও যদি তাওরাতের ওপর অটল থাকে এবং ‘ঈসা (আঃ)-কে অস্বীকার করে এবং তাঁর অনুসরণ না করে তাহলে সে বেদ্বীন হয়ে যাবে। অনুরূপভাবে, খ্রিষ্টানদের মধ্যে ঈমানদার হলো ঐ ব্যক্তি, যে ইনজীলকে মহান আল্লাহর কিতাব বলে বিশ্বাস করে, ‘ঈসা (আঃ)-এর শারী‘আত অনুযায়ী ‘আমল করে এবং শেষ নবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে পেলে তাঁর আনুগত্য স্বীকার করে ও তাঁর নাবুওয়াতকে সত্য বলে বিশ্বাস করে। কিন্তু তখনও যদি ইনজীল ও ‘ঈসা (আঃ)-এর আনুগত্যের ওপর স্থির থাকে এবং মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সুন্নাতের অনুসরণ না করে তাহলে সে ধ্বংস হয়ে যাবে। সুদ্দী (রহঃ)-ও এটাই বর্ণনা করেছেন। সা‘ঈদ ইবনু জুবাইর (রহঃ)-ও এটাই বলেছেন। ভাবার্থ এই যে, প্রত্যেক নবীর অনুসারী, তাঁকে মান্যকারী ঈমানদার ও সৎ লোক। সুতরাং সে মহান আল্লাহর নিকট মুক্তি পেয়ে যাবে। কিন্তু তার জীবিতাবস্থায়ই যদি অন্য নবী এসে যান এবং আগমনকারী নবীকে সে অস্বীকার করে তাহলে সে কাফির। কুর’আন মাজীদে অন্য জায়গায় রয়েছেঃ

﴿وَ مَنْ یَّبْتَغِ غَیْرَ الْاِسْلَامِ دِیْنًا فَلَنْ یُّقْبَلَ مِنْهُ١ۚ وَ هُوَ فِی الْاٰخِرَةِ مِنَ الْخٰسِرِیْنَ﴾

‘যে ব্যক্তি ইসলাম ছাড়া অন্য কোন ধর্ম অনুসন্ধান করে, তা কবূল করা হবে না এবং আখিরাতে সে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে।’ (৩ নং সূরাহ্ আলি ‘ইমরান, আয়াত নং ৮৫)

এই দু’টি আয়াতের মধ্যে আনুকূল্য এটাই। কোন ব্যক্তির কোন কাজ ও কোন পন্থা গ্রহণীয় নয় যে পর্যন্ত না শারী‘আতে মুহাম্মাদীর অনুসারী হয়। কিন্তু এটা সে সময় যে সময় তিনি প্রেরিত নবী রূপে দুনিয়ায় এসে গেছেন। তাঁর পূবে যে নবীর যুগ ছিলো এবং যেসব লোক সে যুগে ছিলো তাদের জন্য ঐ নবীর অনুসরণ ও তাঁর শারী‘আতেরও অনুসরণ করা শর্ত।

‘ইয়াহূদ’ এর হাদীস

ইয়াহূদীরা হলো মূসা (আঃ)-এর অনুসারী। তাদের ধর্মীয় আইন-কানুন তাওরাতের বাণী অনুযায়ী করা হয়েছে বলে তারা দাবী করে থাকে। ইয়াহূদ শব্দের অর্থ অনুশোচনা বা অনুতপ্ত হওয়া, যেমনটি মূসা (আঃ) বলেছিলেন ‘ইন্না হুদনা ইলাইকা’ অর্থাৎ নিশ্চয়ই আমরা তোমার কাছে অনুশোচনাকারী। এ থেকে এটা প্রতীয়মান হয় যে, তাদেরকে এ জন্য ইয়াহূদ বলা হতো যে, তারা ছিলো অনুশোচনাকারী এবং একে অন্যের প্রতি দয়ার্দ্র।

আবার কেউ কেউ বলেন যে, তারা ইয়াহূদের সন্তান ছিলো বলে তাদেরকে ইয়াহূদী বলা হয়েছে। ইয়া‘কূব (আঃ)-এর বড় ছেলের নাম ছিলো ইয়াহূদ। একটি মত এও আছে যে, তারা তাওরাত পড়ার সময় নড়াচড়া করতো বলে তাদেরকে ইয়াহূদ অর্থাৎ হরকতকারী বলা হয়েছে।

খ্রীষ্টানদের কেন ‘নাসারা’ বলা হয়

‘ঈসা (আঃ)-এর নাবুওয়াতের যুগ এলে বানী ইসরাঈলদের ওপর তাঁর নাবুওয়াতকে বিশ্বাস করা এবং তাঁর অনুসারী হওয়া ওয়াজিব হয়ে যায় এবং তাদের নাম হয় ‘নাসারা’ অর্থাৎ সাহায্যকারী। কেননা তারা একে অপরের সাহায্য করেছিলো। তাদেরকে আনসারও বলা হয়েছে। পবিত্র কুর’আনে ‘ঈসা (আঃ)-এর কথা উদ্ধৃত করে বলা হয়েছেঃ

﴿مَنْ اَنْصَارِیْۤ اِلَى اللّٰهِ١ؕ قَالَ الْحَوَارِیُّوْنَ نَحْنُ اَنْصَارُ اللّٰهِ ﴾

‘মহান আল্লাহর পথে কে আমার সাহায্যকারী হবে? হাওয়ারীগণ বলেছিলোঃ আমরাই তো মহান আল্লাহর পথে সাহায্যকারী।’ (৬১ নং সূরাহ্ সাফফ, আয়াত নং ১৪) কেউ কেউ বলেন যে, এসব লোক যেখানে অবতরণ করে ঐ জায়গার নাম ছিলো ‘নাসিরাহ’ এ জন্য তাদেরকে ‘নাসারা’ বলা হয়েছে। কাতাদাহ (রহঃ) এবং ইবনু জুরাইজের (রহঃ) এটাই অভিমত। মহান আল্লাহই সর্বাধিক জ্ঞানের অধিকারী। نَصَرَى শব্দটি نَصْرَان শব্দের বহুবচন।

অতঃপর যখন শেষ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যুগ এসে গেলে এবং তিনি সারা দুনিয়ার জন্য রাসূলরূপে প্রেরিত হলেন তখন তাদের সবারই ওপর তাঁর সত্যতা স্বীকার ও তাঁর অনুসরণ ওয়াজিব হয়ে গেলো। আর তাঁর উম্মাতের ঈমান বা বিশ্বাসের পরিপক্কতার কারণে তাদের নাম রাখা হয় মু’মিন এবং এ জন্যও যে, পূর্বের নবীগণের প্রতি ও ভবিষ্যতের সমস্ত কথার প্রতিও তাদের ঈমান রয়েছে।

সাবি‘ঈ দল

صَابِىْ-এর একটি অর্থ তো হচ্ছে বেদ্বীন ও ধর্মহীন। এটা আহলে কিতাবের একটি দলেরও নাম ছিলো যারা ‘যাবূর’ পড়তো। এরই ভিত্তিতে ইমাম আবূ হানীফা (রহঃ) ও ইসহাক (রহঃ)-এর মাযহাব এই যে, সাবিঈদের হাতে যবেহ কৃত প্রাণী আমাদের জন্য খাওয়া বৈধ এবং তাদের নারীদের বিবাহ করাও বৈধ। হাসান বাসরী (রহঃ) এবং হাকাম বলেন যে, এ দলটি মাজূসদের মতো। এটাও বর্ণিত আছে যে, তারা ফিরিশতাদের পূজা করতো। যিয়াদ শুনতে পারলেন যে, তারা কিবলামুখী হয়ে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করে তখন তিনি তাদের কর মাওকূফ করতে চাইলেন। কিন্তু তৎক্ষণাৎ তিনি জানতে পারলেন যে, তারা ফিরিশতাগণের পূজা করে। ফলে তিনি ইচ্ছা বাস্তবায়ন করা থেকে বিরত হোন।

আবূ যিনাদ (রহঃ) বলেন যে, সাবিঈরা ‘ইরাকের কাওসার অধিবাসী। তারা সব নবীকেই মানে। প্রতি বছর ত্রিশটি সাওম পালন করে। ইয়ামনের দিক মুখ করে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করে। ওয়াহাব ইবনু মুনাব্বাহ (রহঃ) বলেন যে, তারা মহান আল্লাহকে বিশ্বাস করে। কিন্তু তারা কোন শারী‘আতের অনুসারী নয় এবং কাফিরও নয়।

‘আব্দুর রহমান ইবনু যায়দ (রহঃ)-এর মত এই যে, এটাও একটি স্বতন্ত্র মাযহাব। তারা মুসিল দ্বীপে ছিলো। তারা ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ পড়তো। কিন্তু কোন কিতাব বা কোন নবীকে মানতো না। এমনকি নির্দিষ্ট কোন শারী‘আতেরও অনুসারী ছিলো না। আর এর ওপরই ভিত্তি করে অর্থাৎ ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ পড়ার কারণেই মুশরিকরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সহ তাঁর সাহাবায়ি কিরাম (রাঃ)-কে ‘সাবী’ বলতো। তাদের ধর্ম খ্রিষ্টানদের ধর্মের সাথে সামাঞ্জস্যপূর্ণ ছিলো। তাদের কিবলা ছিলো দক্ষিণ দিক। তারা নিজেদেরকে নূহ (আঃ)-এর অনুসারী বলে দাবী করতো।

সুফইয়ান সাওরী (রহঃ)-এর মতে ইয়াহূদ ও মাজুস ধর্মের সংমিশ্রণেই ছিলো এ মাযহাবটি। (আর রাযী ৩/৯৭) মুজাহিদ (রহঃ), হাসান বাসরী (রহঃ) এবং ইবনু আবী নাজীহর (রহঃ) এটাই ফাতাওয়া। (তাফসীর তাবারী ২/১৪৬)

ইমাম কুরতুবী (রহঃ) বলেনঃ ‘আমি যেটুকু জেনেছি তাতে বুঝেছি যে, সাবি‘ঈরা মহান আল্লাহর একাত্মবাদে বিশ্বাসী ছিলো, কিন্তু তারকার ফলাফলের প্রতি এবং নক্ষত্রের প্রতিও তারা বিশ্বাসী ছিলো। ইমাম রাযী (রহঃ) বলেন যে, তারা ছিলো তারকা পূজারী। তারা কাসরানীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলো, যাদের নিকট ইবরাহীম (আঃ) প্রেরিত হয়েছিলো। প্রকৃত অবস্থা তো মহান আল্লাহই জানেন। তবে বাহ্যত এ মতটিই সঠিক বলে মনে হচ্ছে যে, এসব লোক ইয়াহূদী, খ্রিষ্টান, মাজুসী বা মুশরিক ছিলো না। বরং তারা স্বভাব ধর্মের ওপর ছিলো। তারা কোন বিশেষ মাযহাবের অনুসারী ছিলো না। এই অর্থেই মুশরিকরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাহাবীগণকে (রাঃ) ‘সাবী’ বলতো, অর্থাৎ তাঁরা সমস্ত ধর্ম পরিত্যাগ করেছেন। কোন কোন ‘আলিমের অভিমত এই যে, ‘সাবী’ তারাই যাদের কাছে কোন নবীর দা‘ওয়াত পৌঁছেনি। মহান আল্লাহই সবচেয়ে ভালো জানেন।

বক্তব্য ও বিষয়বস্তু বর্ণনার ধারাবাহিকতাকে সামনে রাখলে একথা আপনা আপনি সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে যে, এখানে ঈমান ও সৎকাজের বিস্তারিত বর্ণনা দেয়া মূল লক্ষ্য নয়। কোন্ বিষয়গুলো মানতে হবে এবং কোন্ কাজগুলো করলে মানুষ আল্লাহর কাছে প্রতিদান লাভের অধিকারী হবে, এ আয়াতে সে প্রসঙ্গ আলোচিত হয়নি। বরং যথাস্থানে এগুলোর বিস্তারিত আলোচনা আসবে। ইহুদিরা যে একমাত্র ইহুদি গোষ্ঠীকেই নাজাত ও পরকালীন মুক্তির ইজারদার মনে করতো সেই ভ্রান্ত ধারণাটির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানোই এখানে এই আয়াতটির উদ্দেশ্য। তারা এই ভুল ধারণা পোষণ করতো যে, তাদের দলের সাথে আল্লাহর কোন বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে – যা অন্য মানুষের সাথে নেই, কাজেই তাদের দলের সাথে যে-ই সম্পর্ক রাখবে, তার আকীদা-বিশ্বাস, আমল-আখলাক যাই হোক না কেন, সে নির্ঘাত নাজাত লাভ করবে। আর তাদের দলের বাইরে বাদ বাকি সমগ্র মানবজাতি কেবল জাহান্নামের ইন্ধন হবার জন্যই সৃষ্টি হয়েছে। এই ভুল ধারণা দূর করার জন্য বলা হচ্ছে, আল্লাহর কাছে তোমাদের এই দল ও গোত্র বিভক্তিই আসল কথা নয় বরং সেখানে একমাত্র নির্ভরযোগ্য বিষয় হচ্ছে তোমাদের ঈমান ও সৎকাজ। যে ব্যক্তি এগুলো নিয়ে আল্লাহর সামনে হাযির হবে সে তার রবের কাছ থেকে তার প্রতিদান লাভ করবে। আল্লাহর ওখানে ফয়সালা হবে মানুষের গুণাবলীর ওপর, জনসংখ্যার হিসাবের খাতাপত্রের ওপর নয়।

যারা উম্মাতে মুহাম্মাদীর সৎ লোক, আল্লাহ তা‘আলা ও রাসূলের প্রতি ঈমান আনয়ন করতঃ শরীয়ত মোতাবেক আমল করে এবং রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে রাসূল হিসেবে প্রেরণের পূর্বে যে সকল ইয়াহূদী-খ্রিস্টান ও সাবিয়ী তাদের স্বীয় ধর্মের ওপর প্রতিষ্ঠিত ছিল ও তাওহীদভিত্তিক ঈমান এনেছিল, আখিরাতের প্রতি বিশ্বাসী ছিল এবং আল্লাহ তা‘আলা যে সকল আমল পছন্দ করেন সে অনুপাতে আমল করেছিল, তাদের সকলকে আল্লাহ তা‘আলা নিজের পক্ষ থেকে প্রতিদানস্বরূপ জান্নাত প্রদান করবেন। তাদের কোন ভয় ও চিন্তা থাকবে না। কিন্তু নাবী (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নাবী হিসেবে আগমনের পর কোন জাতির ধর্ম আল্লাহ তা‘আলা কবূল করবেন না। কেবল ইসলাম ছাড়া যা নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিয়ে এসেছেন। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(إِنَّ الدِّينَ عِنْدَ اللّٰهِ الْإِسْلَامُ)

“আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য দীন (জীবন ব্যবস্থা) কেবল ইসলাম।”(সূরা আল-ইমরান ৩: ১৯)

صابئين ‘সাবিয়ী’দ্বারা কাদের বুঝানো হয়েছে এ সম্পর্কে কয়েকটি মতামত পাওয়া যায়।

কেউ কেউ বলেন: তারা ইয়াহূদীও নয়, খ্রিস্টানও নয়। অন্য একদল বলেন: তারা হল, যাদের কাছে নাবীর দাওয়াত পৌঁছেনি। আরেক দল বলেন: তারা কোন এক ধর্মের অনুসারী। তাদের কোন আমল, কোন কিতাব, কোন নাবী ছিল না কেবল এ কথা বলা ছাড়া যে, لا إله إلا اللّٰه আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া সত্য কোন মা‘বূদ নেই। (তাফসীর ইবনে কাসীর, অত্র আয়াতের তাফসীর)

সঠিক কথা হচ্ছে তারা হল খ্রিস্টানদের একটি দল। (তাফসীরে সা‘দী ৩২পৃঃ)

এ আয়াতকে কেন্দ্র করে অনেকে বলে থাকে, সকল ধর্ম সমান। অর্থাৎ ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করা জরুরী নয়, যে কোন ধর্মের অনুসরণ করলেই চলবে। এ দর্শন বিভ্রান্তিকর দর্শন। বরং সঠিক কথা হল তা-ই যা পূর্বে উল্লেখ করেছি- নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আগমনের পর সকল ধর্ম বাতিল হয়ে গেছে। ইসলাম ছাড়া অন্য কোন ধর্মের অনুসরণ করলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(وَمَنْ يَّبْتَغِ غَيْرَ الْإِسْلَامِ دِيْنًا فَلَنْ يُّقْبَلَ مِنْهُ ج وَهُوَ فِي الْاٰخِرَةِ مِنَ الْخٰسِرِيْنَ)

“আর যে কেউ ইসলাম বাদ দিয়ে অন্য কোন জীবন ব্যবস্থা তালাশ করবে তার কাছ থেকে কিছুই কবূল করা হবে না এবং সে আখিরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে।”(সূরা আলি-ইমরান ৩:৮৫)

আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

১. মুখের দাবি নয়, বরং প্রকৃত অবস্থা লক্ষণীয়। ইয়াহূদ, খ্রিস্টান ও অন্যান্য ধর্মের অনুসারীরা যতই দাবি করুক যে তারা সঠিক ধর্মের অনুসারী তা কখনই সঠিক নয়। কারণ ইসলামের আগমনের পর সকল ধর্ম বাতিল।
২. যারা ইসলামে বিশ্বাসী হবে ও সৎ আমল করবে তাদের পরকালে রয়েছে মহাপুরষ্কার এবং তাদের কোন ভয়ও থাকবে না, কোন চিন্তাও থাকবে না।

সুরা: আল-বাক্বারাহ
আয়াত নং :-৬৩

وَ اِذْ اَخَذْنَا مِیْثَاقَكُمْ وَ رَفَعْنَا فَوْقَكُمُ الطُّوْرَؕ خُذُوْا مَاۤ اٰتَیْنٰكُمْ بِقُوَّةٍ وَّ اذْكُرُوْا مَا فِیْهِ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُوْنَ

স্মরণ করো সেই সময়ের কথা যখন আমরা ‘তূর’কে তোমাদের ওপর উঠিয়ে তোমাদের থেকে পাকাপোক্ত অঙ্গীকার নিয়েছিলাম এবং বলেছিলামঃ “যে কিতাব আমরা তোমাদেরকে দিচ্ছি তাকে মজবুতভাবে আঁকড়ে ধরো এবং তার মধ্যে যে সমস্ত নির্দেশ ও বিধান রয়েছে সেগুলো স্মরণ রেখো। এভাবেই আশা করা যেতে পারে যে, তোমরা তাকওয়ার পথে চলতে পারবে।”

৬৩ নং আয়াতের তাফসীর:

مِيْثَاقٌ বা অঙ্গীকার দ্বারা উদ্দেশ্য হল একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত করা, নিকটাত্মীয় ও পিতা-মাতার সাথে সদাচরণ করা, সালাত প্রতিষ্ঠা করা, যাকাত প্রদান করা।

যেমন আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন:

(وَاِذْ اَخَذْنَا مِیْثَاقَ بَنِیْٓ اِسْرَا۬ءِیْلَ لَا تَعْبُدُوْنَ اِلَّا اللہَﺤ وَبِالْوَالِدَیْنِ اِحْسَانًا وَّذِی الْقُرْبٰی وَالْیَتٰمٰی وَالْمَسٰکِیْنِ وَقُوْلُوْا لِلنَّاسِ حُسْنًا وَّاَقِیْمُوا الصَّلٰوةَ وَاٰتُوا الزَّکٰوةَﺚ ثُمَّ تَوَلَّیْتُمْ اِلَّا قَلِیْلًا مِّنْکُمْ وَاَنْتُمْ مُّعْرِضُوْنَﮢوَاِذْ اَخَذْنَا مِیْثَاقَکُمْ لَا تَسْفِکُوْنَ دِمَا۬ءَکُمْ وَلَا تُخْرِجُوْنَ اَنْفُسَکُمْ مِّنْ دِیَارِکُمْ ثُمَّ اَقْرَرْتُمْ وَاَنْتُمْ تَشْھَدُوْنَ)

“আর যখন আমি বানী ইসরাঈল হতে অঙ্গীকার নিয়েছিলাম যে, তোমরা আল্লাহ ব্যতীত আর কারো ইবাদত করবে না, পিতা-মাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করবে ও আত্মীয়দের, অনাথদের ও মিসকিনদের সঙ্গেও (সদ্ব্যবহার করবে), আর তোমরা মানুষের সাথে উত্তমভাবে কথা বলবে এবং সালাত কায়িম করবে ও যাকাত প্রদান করবে; তৎপর তোমাদের মধ্য হতে অল্প সংখ্যক ব্যতীত তোমরা সকলেই বিমুখ হয়েছিলে যেহেতু তোমরা অগ্রাহ্যকারী ছিলে। এবং আমি যখন তোমাদের অঙ্গীকার গ্রহণ করছিলাম যে, পরস্পর রক্তপাত করবে না এবং স্বীয় বাসস্থান হতে আপন ব্যক্তিদেরকে বহিস্কৃত করবে না; তৎপর তোমরা স্বীকৃতি দিয়েছিলে এবং তোমরাই ওর সাক্ষী ছিলে।”(বাকারাহ ২:৮৩-৮৪)

অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা তাদের ওপর পাহাড় তুলে ধরলেন। আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন:

(وَاِذْ نَتَقْنَا الْجَبَلَ فَوْقَھُمْ کَاَنَّھ۫ ظُلَّةٌ وَّظَنُّوْٓا اَنَّھ۫ وَاقِعٌۭ بِھِمْﺆ خُذُوْا مَآ اٰتَیْنٰکُمْ بِقُوَّةٍ وَّاذْکُرُوْا مَا فِیْھِ لَعَلَّکُمْ تَتَّقُوْنَ)

“স্মরণ কর, আমি পর্বতকে তাদের ঊর্ধ্বে উত্তোলন করি ছায়া সদৃশ। তারা মনে করল যে, সেটা তাদের ওপর পড়ে যাবে। বললাম, ‘আমি যা দিলাম তা দৃঢ়ভাবে ধারণ কর এবং তাতে যা আছে তা স্মরণ কর, যাতে তোমরা তাক্ওয়ার অধিকারী হও।” (সূরা আ‘রাফ ৭:১৭১)

তারা আল্লাহ তা‘আলার অঙ্গীকার সঠিকভাবে পালন না করায় আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে ভীতিপ্রদর্শন মূলক তাদের মাথার ওপর পর্বত তুলে ধরে তাদের অঙ্গীকার গ্রহণ করেন।

এ ঘটনাটিকে কুরআনের বিভিন্ন স্থানে যেভাবে বর্ণনা করা হয়েছে তা থেকে সহজেই বুঝা যায় যে, এটি বনী ইসরাঈলদের মধ্যে একটি সুবিখ্যাত ও সর্বজনবিদিত ঘটনা ছিল। কিন্তু বর্তমানে এর বিস্তারিত অবস্থা জানা কঠিন। তবে সংক্ষেপে এতটুকু বুঝে নেয়া উচিত যে, পাহাড়ের পাদদেশে অঙ্গীকার নেয়ার সময় এমন ভয়াবহ অবস্থা সৃষ্টি করে দেয়া হয়েছিল যার ফলে তারা মনে করছিল পাহাড় তাদের ওপর আপতিত হবে। সূরা আ’রাফের ১৭১ আয়াতে কিছুটা এ ধরনেরই একটি ছবি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।

আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

১. আল্লাহ তা‘আলা সকল জাতির কাছ থেকে একমাত্র তাঁর ইবাদত করার অঙ্গীকার নিয়েছেন।
২. আমাদের উচিত নাবী ইসরাঈলের মত কিতাবকে ছেড়ে না দিয়ে দৃঢ়ভাবে ধারণ করা, ফলে ইহকালে শান্তি ও পরকালে মুক্তি লাভ করি।

আল্ – বাকারাহ
৬৪-৬৫ নং আয়াতে

ثُمَّ تَوَلَّيْتُم مِّنۢ بَعْدِ ذٰلِكَ ۖ فَلَوْلَا فَضْلُ اللَّهِ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَتُهُۥ لَكُنتُم مِّنَ الْخٰسِرِينَ

এরপরেও তোমরা মুখ ফিরিয়ে নিলে; মহান আল্লাহ্‌র অনুগ্রহ ও অনুকম্পা তোমাদের প্রতি না থাকলে তোমরা অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্তদের পর্যায়ভুক্ত হয়ে যেতে।

সুরা: আল-বাক্বারাহ
আয়াত নং :-৬৫

وَ لَقَدْ عَلِمْتُمُ الَّذِیْنَ اعْتَدَوْا مِنْكُمْ فِی السَّبْتِ فَقُلْنَا لَهُمْ كُوْنُوْا قِرَدَةً خٰسِـٕیْنَۚ

নিজেদের জাতির সেইসব লোকের ঘটনা তো তোমাদের জানাই আছে যারা শনিবারের বিধান ভেঙেছিল। আমরা তাদের বলে দিলামঃ বানর হয়ে যাও এবং এমনভাবে অবস্থান করো যাতে তোমাদের সবদিক থেকে লাঞ্ছনা গঞ্জনা সইতে হয়।

৬৬ নং আয়াতের

فَجَعَلْنٰهَا نَكٰلًا لِّمَا بَيْنَ يَدَيْهَا وَمَا خَلْفَهَا وَمَوْعِظَةً لِّلْمُتَّقِينَ

আমি তা তাদের সমসাময়িক ও পরবর্তীগণের শিক্ষা গ্রহণের জন্য দৃষ্টান্ত এবং মুত্তাক্বীদের জন্য উপদেশ স্বরূপ করেছি।

৬৪-৬৬ নং আয়াতের তাফসীর:

ইয়াহূদীদের প্রতিশ্রতি ভঙ্গ এবং চেহারার পরিবর্তন

সূরাহ্ আ‘রাফের ১৬৩ নং আয়াতে এ ঘটনা বিস্তারিত বর্ণিত হয়েছে। সেখানে এর তাফসীরও ইনশা’আল্লাহ পূর্ণভাবে করা হবে। ঐ লোকগুলো আইলা নামক গ্রামের অধিবাসী ছিলো। শনিবার দিনের সম্মান করা তাদের ওপর ফরয করে দেয়া হয়েছিলো। ঐ দিন শিকার করা তাদের জন্য নিষিদ্ধ ছিলো। আর মহান আল্লাহর হুকুমে সেই দিনই নদীর তীরে মাছ খুব বেশি আসতো। তারা একটা কৌশল অবলম্বন করতো। একটা গর্ত খনন করে শনিবারে এর মধ্যে জাল, রশি ও ঝোপ-ঝাড় ফেলে রাখতো। শনিবার মাছসমূহ ঐ ফাঁদে পড়তো এবং রোববার রাতে তারা সেগুলো ধরে নিতো। ঐ অপরাধের কারণে মহান আল্লাহ তাদের রূপ পাল্টে দেন।

মুজাহিদ (রহঃ) বলেন, তাদের আকার পরিবর্তন হয়নি। বরং অন্তর পরিবর্তন হয়েছিল। এটা শুধুমাত্র উপমা দেয়ার জন্য আনা হয়েছে। যেমন মহান আল্লাহ ‘আমলহীন ‘আলিমের দৃষ্টান্ত দিয়েছেন গাধার সাথে। কিন্তু এ উক্তিটি দুর্বল। তাছাড়া এটা কুর’আনুল কারীমের প্রকাশ্য শব্দের বিপরীত।

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, যুবকেরা বানর হয়েছিলো এবং বুড়োরা শূকর হয়েছিলো। (তাফসীর ইবনু আবী হাতিম ১/২১০) কাতাদাহ (রহঃ) বলেন যে, নারী পুরুষ সবাই লেজযুক্ত বানর হয়ে গিয়েছিলো। (তাফসীর ইবনু আবী হাতিম ১/২০৯) আকাশ থেকে বাণী হয়ঃ ‘তোমরা সব বানর হয়ে যাও।’ আর তেমনই সব বানর হয়ে যায়। যেসব লোক তাদেরকে ঐ কৌশল অবলম্বন করতে নিষেধ করেছিলো তারা তখন তাদের নিকট এসে বলতে থাকেঃ ‘আমরা কি তোমাদেরকে পূর্বেই নিষেধ করিনি?’ তখন তারা মাথা নেড়ে সম্মতি জানায়। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, অল্প সময়ের মধ্যে তারা সব ধ্বংস হয়ে গিয়েছিলো এবং তাদের বংশ বৃদ্ধি হয়নি। (হাদীসটির সনদ হাসান। তাফসীর ইবনু আবী হাতিম ১/২০৯) দুনিয়ার কোন আকার পরিবর্তিত বিকৃত গোত্র তিন দিনের বেশি বাঁচেনি। এরাও তিন দিনের মধ্যেই ধ্বংস হয়ে যায়। নাক ঘসতে ঘসতে তারা সব মারা যায়। পানাহার ও বংশ বৃদ্ধি সবই বিদায় নেয়। যে বানরগুলো এখন আছে এবং তখনও ছিলো, এরা তো জন্তু এবং এরা গতানুগতিকভাবেই সৃষ্টি হয়েছে। মহান আল্লাহ যা চান এবং যেভাবে চান সেভাবেই সৃষ্টি করেন। (তাফসীর তাবারী ২/১৬৭) তিনি মহান, ক্ষমতাবান।

ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ

ইবনু ‘আব্বাস (হাদীসটির সনদ য‘ঈফ) (রাঃ) বলেন যে, শুক্রবারের মর্যাদা ও সম্মান রক্ষা করা তাদের ওপর ফরয করা হয়, কিন্তু তারা শুক্রবারের পরিবর্তে শনিবারকে পছন্দ করে। ঐ দিনের সম্মানার্থে তাদের জন্য ঐ দিন শিকার করা হারাম করা হয়। এদিকে মহান আল্লাহর পরীক্ষা হিসেবে ঐদিনই সমস্ত মাছ নদীর ধারে চলে আসতো এবং লাফ-ঝাঁপ দিতো। অন্য দিন সেগুলো দেখাই যেতো না। কিছু দিন পর্যন্ত তো ঐসব লোক নীরবই থাকে এবং শিকার করা হতে বিরত থাকে। একদিন এদের মধ্যে এক লোক এই ফন্দি বের করে, শনিবার মাছ ধরে জালের মধ্যে আঁটকে দেয় এবং তীরের কোন জিনিসের সাথে বেঁধে রাখে। এরপর রোববার দিন গিয়ে সেগুলো বের করে নেয় এবং বাড়ীতে এনে রান্না করে খায়। মাছের সুঘ্রাণ পেয়ে লোকেরা তাকে জিজ্ঞেস করলে সে বলেঃ ‘আমি তো আজ রোববার মাছ শিকার করেছি।’ অবশেষে এ রহস্য প্রকাশ হয়ে যায়। লোকেরাও ঐ কৌশল পছন্দ করে এবং ঐভাবে তারাও মাছ শিকার করতে থাকে। কেউ কেউ নদীর তীরে গর্ত খনন করে। শনিবার মাছগুলো ঐ গর্তের ভিতরে জমা হলে তারা এর মুখ বন্ধ করে দিতো। রোববার ধরে নিতো। তাদের মধ্যে যারা খাঁটি মু’মিন ছিলো তারা তাদেরকে এ কাজে বাধা দিতো এবং নিষেধ করতো। কিন্তু তাদের উত্তর এই হতো ‘আমরা তো শনিবার শিকারই করি না, শিকার করি আমরা রোববার।’

শিকারীরা ও নিষেধকারীদের ছাড়া আরো একটি দল সৃষ্টি হয়, যারা দুই দলকেই সন্তুষ্ট রাখতো। তারা নিজেরা শিকার করতো না বটে, কিন্তু যারা শিকার করতো তাদেরকে নিষেধও করতো না। বরং নিষেধকারীগণকে বলতোঃ

﴿لِمَ تَعِظُوْنَ قَوْمَا١ۙ اِ۟للّٰهُ مُهْلِكُهُمْ اَوْ مُعَذِّبُهُمْ عَذَابًا شَدِیْدًا١ؕ قَالُوْا مَعْذِرَةً اِلٰى رَبِّكُمْ وَلَعَلَّهُمْ یَتَّقُوْنَ﴾

‘তোমরা এমন সম্প্রদায়কে উপদেশ কেন দিচ্ছো যাদেরকে মহান আল্লাহ ধ্বংস করবেন কিংবা কঠিন শাস্তি দিবেন? তোমরা তো তোমাদের কর্তব্য পালন করেছো যেহেতু তাদেরকে নিষেধ করেছো। তারা যখন মানছে না তখন তাদেরকে তাদের কাজের ওপর ছেড়ে দাও।’ তখন নিষেধকারীগণ উত্তর দিতোঃ ‘প্রথমতঃ এ জন্য যে, আমরা মহান আল্লাহর নিকট ওযর পেশ করতে পারবো। দ্বিতীয়তঃ এ জন্যও যে, তারা হয়তো আজ না হয় কাল কিংবা কাল না হয় পরশু আমাদের কথা মানতে পারে এবং মহান আল্লাহর কঠিন শাস্তি হতে মুক্তি পেয়ে যেতে পারে।’ (৭ নং সূরাহ আল আ‘রাফ, আয়াত নং ১৬৪) অবশেষে এই মু’মিন দলটি সেই কৌশলীদল হতে সম্পূর্ণ রূপে সম্পর্ক ছিন্ন করলো এবং তাদের থেকে পৃথক হয়ে গেলো। গ্রামের মধ্যস্থলে একটি প্রাচীর দিয়ে দিলো। একটি দরজা দিয়ে এরা যাতায়াত করতো এবং অপর দরজা দিয়ে ঐ ফাঁকিবাজরা যাতায়াত করতো। এভাবেই দীর্ঘদিন অতিবাহিত হয়। হঠাৎ এক বিস্ময়কর ঘটনা ঘটে। একবার রাত্রি শেষে ভোর হলো। মু’মিনরা সব জেগে উঠেছেন। কিন্তু এ পর্যন্ত ঐ ফাকিবাজরা তাদের দরজা খুলছে না এবং কোন সাড়া শব্দও পাওয়া যাচ্ছেনা। মু’মিনরা বিষ্মিত হলেন যে, ব্যাপার কি? অনেক বিলম্বের পরেও যখন তাদের কোন খোঁজ পাওয়া গেলো না তখন তারা প্রাচীরের ওপর উঠে গেলো। সেখানে এক বিষ্ময়কর দৃশ্য তারা অবলোকন করলো। তারা দেখলো যে, ঐ ফন্দিবাজরা নারী ও শিশুসহ সবাই বানর হয়ে গেছে। তাদের ঘরগুলো রাতে যেমন বন্ধ ছিলো ঐরূপ বন্ধই আছে, আর ভিতরের সমস্ত মানুষ বানরের আকার বিশিষ্ট হয়ে গেছে এবং তাদের লেজও গজিয়েছে। শিশুরা ছোট বানর, পুরুষেরা বড় বানর এবং নারীরা বানরীতে পরিণত হয়েছে। প্রত্যেককেই চেনা যাচ্ছে যে, এ অমুক লোক সে অমুক নারী এবং এ অমুক শিশু ইত্যাদি। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, মহান আল্লাহ যদি নিষেধকারীদলকে রক্ষা করেছেন মর্মে সংবাদ না দিতো তাহলে আমরা বলতাম মহান আল্লাহ তাদের সবাইকে ধ্বংস করেছেন। তিনি আরো বলেন এটাই হলো সেই গ্রাম যার সম্পর্কে মহান আল্লাহ মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে নির্দেশ বলেনঃ

﴿وَسْـَٔلْهُمْ عَنِ الْقَرْیَةِ الَّتِیْ كَانَتْ حَاضِرَةَ الْبَحْرِ﴾

‘তাদের জিজ্ঞেস করো ঐ জনবসতি সম্পর্কে যা সমুদ্রের উপকূলে বিদ্যমান ছিলো।’ (৭ নং সূরাহ আল আ‘রাফ, আয়াত-১৬৩)

এতে যে শুধু মাছ শিকারকারীরাই ধ্বংস হয়েছিলো তা নয়, বরং যারা তাদেরকে শুধু নিষেধ করেই চুপচাপ বসে থাকতো এবং তাদের সাথে মেলা-মেশা বন্ধ করতো না তারাও ধ্বংস হয়েছিলো। এ শাস্তি থেকে শুধুমাত্র তারাই মুক্তি পেয়েছিলো যারা তাদেরকে নিষেধ করে তাদের থেকে সম্পূর্ণরূপে পৃথক হয়েছিলো।

যে ইয়াহূদীদের বানর ও শুকরে রূপান্তিরত করা হয়েছিলো তাদের বংশধর বর্তমানের বানর ও শুকর নয়

মহান আল্লাহ ইরশাদ করেনঃ ﴿فَاَخَذَهُ اللّٰهُ نَكَالَ الْاٰخِرَةِ وَ الْاُوْلٰى﴾

‘অতঃপর মহান আল্লাহ তাকে ধৃত করলেন আখিরাত ও ইহকালের দণ্ডের নিমিত্ত।’ (৭৯ নং সূরাহ্ নাযি‘আত, আয়াত নং ২৫) অপর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেনঃ

﴿وَ لَقَدْ اَهْلَكْنَا مَا حَوْلَكُمْ مِّنَ الْقُرٰى وَ صَرَّفْنَا الْاٰیٰتِ لَعَلَّهُمْ یَرْجِعُوْنَ﴾

আমি তো ধ্বংস করেছিলাম তোমাদের চতুস্পার্শ্ববর্তী জনপদসমূহ; আমি তাদেরকে বিভিন্নভাবে আমার নিদর্শনাবলী বিবৃত করেছিলাম, যাতে তারা ফিরে আসে সৎ পথে। (৪৬ নং সূরাহ্ আহকাফ, আয়াত নং ২৭)

যাহ্হাক (রহঃ) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, বানী ইসরাঈলের পাপের শাস্তি স্বরূপ তাদেরকে বানরে রূপান্তিরত করা হয়। তারা পৃথিবীতে মাত্র তিন দিন জীবিত ছিলো, কারণ রূপান্তিরত কোন ব্যক্তি তিন দিনের বেশি বাঁচেনা। তারা আহার করতো না, পান করতো না এবং তারা কোন বংশধরও রেখে যায়নি। মহান আল্লাহ যা ইচ্ছা তা করেন, যাকে যেমনভাবে ইচ্ছা তেমনভাবে রূপান্তিরত করেন। বানর, শুকর এবং অন্যান্য প্রাণী মহান আল্লাহ ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন যা তাঁর কিতাব থেকে জানা যায়। (তাফসীর তাবারী ২/১৬৭)

পবিত্রতা লঙ্ঘন করার কারণে সাব্বাদবাসীদের জন্যও মহান আল্লাহ বিপর্যয় সৃষ্টি করেছিলেন। অনুরূপভাবে মহান আল্লাহ ফির‘আউন সম্পর্কে বলেনঃ

﴿ فَاَخَذَهُ اللّٰهُ نَكَالَ الْاٰخِرَةِ وَ الْاُوْلٰى﴾

ফলে মহান আল্লাহ তাকে ধৃত করলেন আখিরাত ও ইহকালের দণ্ডের নিমিত্ত। (৭৯ নং সূরাহ্ নাযি‘আত, আয়াত নং ২৫) ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেনঃ মহান আল্লাহ ঐ জনপদকে এর পার্শ্ববর্তী অন্যান্যদের জন্য একটি উপমা হিসেবে রেখে দিয়েছেন, যাতে তারা এ থেকে শিক্ষা লাভ করে। তারা দেখুক যে, কেমন ছিলো সেই শাস্তি! অনুরূপভাবে মহান আল্লাহ বলেনঃ

﴿وَلَقَدْ اَهْلَكْنَا مَا حَوْلَكُمْ مِّنَ الْقُرٰى وَ صَرَّفْنَا الْاٰیٰتِ لَعَلَّهُمْ یَرْجِعُوْنَ﴾

‘আমি তো ধ্বংস করেছিলাম তোমাদের চতুস্পার্শ্ববর্তী জনপদসমূহ; আমি তাদেরকে বিভিন্নভাবে আমার নিদর্শনাবলী বিবৃত করেছিলাম, যাতে তারা ফিরে আসে সৎ পথে। (৪৬ নং সূরাহ্ আহকাফ, আয়াত নং ২৭)

অতএব মহান আল্লাহর ‘আযাবের নিদর্শন ও শিক্ষণীয় তাদের জন্যও যারা পরবর্তী সময়ে পৃথিবীতে আগমন করবে এবং কিতাবের মাধ্যমে ঘটনা জানতে পারবে। আয়াতের ভাবার্থ এও যে, গ্রামবাসী যে বিপর্যয় ও শাস্তির সম্মুখীন হয়েছিলো তার কারণ ছিলো মহান আল্লাহর নিষেধাজ্ঞাকে অবজ্ঞা ও তাদের কপটতা। সুতরাং যাদের অন্তরে মহান আল্লাহ-ভীতি রয়েছে তারা এ থেকে শিক্ষা লাভ করবে যাতে গ্রামবাসীদের প্রতি যে শাস্তি নেমে এসেছিলো তা তাদের ওপর পতিত না হয়। ইমাম আবূ ‘আবদুল্লাহ ইবনু বাত্তাহ (রহঃ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেছেনঃ

“لا ترتكبوا ما ارتكب (২) اليهود، فتستحلوا محارم الله بأدنى الحيل”

‘তোমরা তেমনটি করো না যা ইয়াহূদীরা করেছিলো। মহান আল্লাহ তাদেরকে যা নির্দেশ করেছিলেন তা তারা অমান্য করেছে ফন্দি করার মাধ্যমে।’ (হাদীস সহীহ। ইরওয়া আল গালীল ৫/৩৭৫, ১৫৩৫)এ হাদীসটি সম্পূর্ণ সহীহ, এর সমস্ত বর্ণনাকারী নির্ভরযোগ্য। মহান আল্লাহই সবচেয়ে ভালো জানেন।

বনী ইসরাঈলদের জন্য শনিবারের বিধান তৈরি করা হয়েছিল। অর্থাৎ আইনের মাধ্যমে শনিবার দিনটি তাদের বিশ্রাম ও ইবাদাত করার জন্য নির্দিষ্ট করা হয়েছিল। এদিনে তারা পার্থিব কোন কাজ এমন কি রান্না-বান্নার কাজ নিজেরা করতে পারবে না এবং চাকর-বাকরদের দ্বারাও এ কাজ করাতে পারবে না। এ প্রসঙ্গে কড়া নির্দেশ জারী করে বলা হয়েছিল, যে ব্যক্তি এই পবিত্র দিনের নির্দেশ অমান্য করবে তাকে হত্যা করা অবশ্য কর্তব্য হয়ে পড়বে। (যাত্রা পুস্তক, ৩১ অধ্যায়, ১২-১৭ শ্লোক)।কিন্তু বনী ইসরাঈলরা নৈতিক ও ধর্মীয় পতনের শিকার হবার পর প্রকাশ্যে শনিবারের বিধানের অবমাননা করতে থাকে। এমনকি তাদের শহরগুলোতে প্রকাশ্যে শনিবার ব্যবসা-বানিজ্য, কাজ-কারবার চলতে থাকে।

সূরা আ’রাফের ২১ রুকু’ তে এ ঘটনাটির বিস্তারিত বিবরণ এসেছে। তাদেরকে বানরে পরিণত করার ধরন সম্পর্কে মতবিরোধ রয়েছে। অনেকে মনে করেন, তাদের দৈহিক কাঠামো পরিবর্তন করে বানরে রূপান্তরিত করে দেয়া হয়েছিল। আবার অনেকে এর অর্থ এই গ্রহণ করে থাকে যে, তাদের মধ্যে বানরের স্বভাব ও বানরের গুণাবলী সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু কুরআনের শব্দাবলী ও বর্ণনাভংগী থেকে মনে হয়, তাদের মধ্যে নৈতিক নয়, দৈহিক বিকৃতি ঘটেছিল। আমার মতে, তাদের মস্তিষ্ক ও চিন্তাশক্তিকে পূর্ববৎ অবিকৃত রেখে শারীরিক বিকৃতি ঘটিয়ে বানরে রূপান্তরিত করা হয়েছিল এটিই যুক্তিসঙ্গত বলে মনে হয়।

আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

১. ইয়াহূদীরা আল্লাহ তা‘আলার নির্দেশ অমান্য করার অপকৌশল গ্রহণ করার কারণে তাদের ওপর আপতিত শাস্তির কথা জানলাম।
২. শরীয়তের বিধানকে পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করা ইয়াহূদীদের কাজ।
৩. বিজ্ঞানী ডারউনের অভিমত (বানর থেকে মানুষের সৃষ্টি) সঠিক নয়, কারণ এ আয়াত থেকে জানতে পারলাম তাদের বংশ বৃদ্ধি হয়নি, দুনিয়ায় তারা তিন দিনের বেশি বাঁচেনি।

Leave a Reply