Book# 114/D/59

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ

(Book# 114/D/59) www.motaher21.net

أَمَانِىَّ وَإِنْ هُمْ إِلَّا يَظُنُّونَ

“কাল্পনিক ধারণা পোষণ করে।”

” False desires and guess.”

সুরা: আল-বাক্বারাহ
আয়াত নং :-৭৮

وَ مِنْهُمْ اُمِّیُّوْنَ لَا یَعْلَمُوْنَ الْكِتٰبَ اِلَّاۤ اَمَانِیَّ وَ اِنْ هُمْ اِلَّا یَظُنُّوْنَ

এদের মধ্যে দ্বিতীয় একটি দল হচ্ছে নিরক্ষরদের। তাদের কিতাবের জ্ঞান নেই, নিজেদের ভিত্তিহীন আশা-আকাঙ্ক্ষাগুলো নিয়ে বসে আছে এবং নিছক অনুমান ও ধারণার ওপর নির্ভর করে চলছে।

৭৯ নং আয়াতে

فَوَيْلٌ لِّلَّذِينَ يَكْتُبُونَ الْكِتٰبَ بِأَيْدِيهِمْ ثُمَّ يَقُولُونَ هٰذَا مِنْ عِندِ اللَّهِ لِيَشْتَرُوا بِهِۦ ثَمَنًا قَلِيلًا ۖ فَوَيْلٌ لَّهُم مِّمَّا كَتَبَتْ أَيْدِيهِمْ وَوَيْلٌ لَّهُم مِّمَّا يَكْسِبُونَ

সুতরাং অভিসম্পাত তাদের জন্য যারা নিজ হাতে কিতাব রচনা করে এবং নিকৃষ্ট মূল্য লাভের জন্য বলে এটা মহান আল্লাহ্‌র নিকট থেকে, তাদের হাত যা রচনা করেছে, তার জন্য তাদের শাস্তি অবধারিত এবং তারা যা উপার্জন করে তার জন্যও শাস্তি রয়েছে।

৭৮ ও ৭৯ নং আয়াতের তাফসীর:

(اَمَانِيَّ) শব্দের অনুবাদ করা হয়েছে, মিথ্যা আশা। এ অর্থের পক্ষে অন্যান্য আয়াতও সাক্ষ্য দেয়। যেমন বলা হয়েছে, “আর তারা বলে, ইয়াহুদী অথবা নাসারা ছাড়া অন্য কেউ কখনো জান্নাতে প্রবেশ করবে না। এটা তাদের মিথ্যা আশা। ” [সূরা আল-বাকারাহ ১১১]

আরও এসেছে, “তোমাদের আশা-আকাংখা ও কিতাবীদের আশা-আকাংখা অনুসারে কাজ হবে না” [সূরা আন-নিসা ১২৩] উপরোক্ত দুই আয়াতেও (اَمَانِيَّ) শব্দ মিথ্যা আশা-আকাংখা অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। তবে কোন কোন তাফসীরকার এর আরও একটি অর্থ করেছেন, তা হচ্ছে, লেখাপড়া না জানা। অর্থাৎ ইয়াহুদীদের মধ্যে এক গোষ্ঠী আছে যারা কোন লেখা পড়া জানে না। তাদের কাজ হলো অন্যের অন্ধ অনুসরণ করা। কিন্তু বাক্যের প্রথমে (اُمِّيُّوْنَ) শব্দের উল্লেখ থাকায় এ অর্থটি খুব বেশী উপযুক্ত নয়। [আদওয়াউল বায়ান]

‘উম্মী’ শব্দের অর্থ

ومنهم ‘তাদের মাঝে’ অর্থাৎ আহলে কিতাবদের মাঝে। মুজাহিদ (রহঃ) বলেনঃ أُمِّيُّنَ শব্দটি أُمِّيٌّ এর বহু বচন। আর أُمِّىْ শব্দের অর্থ হচ্ছে ঐ ব্যক্তি যে ভালোভাবে লেখতে জানে না। আবুল ‘আলিয়া, রাবী‘ ইবনে আনাস, কাতাদাহ, ইবরাহীম আন নাখ‘ঈ (রহঃ) সহ অনেকই এরূপ বলেছেন। আর এটাই মহান আল্লাহ্‌র বাণী لَا یَعْلَمُوْنَ الْكِتٰبَ ‘কিতাবের কোন জ্ঞানই নেই’ এর বাহ্যিক অর্থ। অর্থাৎ তারা জানে না যে তার মধ্যে কি রয়েছে। আর এজন্যেই রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর একটি বিশেষণ হচ্ছে أُمِّىْ। কেননা তিনি ভালো লেখতে জানতেন না। মহান আল্লাহ বলেনঃ ﴿وَ مَا كُنْتَ تَتْلُوْا مِنْ قَبْلِهٖ مِنْ كِتٰبٍ وَّ لَا تَخُطُّهٗ بِیَمِیْنِكَ اِذًا لَّارْتَابَ الْمُبْطِلُوْنَ﴾

‘তুমি তো এর পূর্বে কোন কিতাব পাঠ করোনি এবং স্বহস্তে কোন দিন কিতাব লেখোনি যে, মিথ্যাচারীরা সন্দেহ পোষণ করবে।’ (২৯ নং সূরা ‘আনকাবূত, আয়াত নং ৪৮)

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ

“إنا أمة أمية، لا نكتب ولا نحسب، الشهر هكذا وهكذا وهكذا”

‘আমরা তো এক ‘উম্মী’ ও নিরক্ষর জাতী, আমরা লেখতেও জানি না এবং হিসাবও বুঝিনা, মাস কখনো এরকম হয় এবং কখনো এরকম ও এরকম হয়।’ (হাদীস সহীহ। সহীহুল বুখারী ৪/১৯১৩, সহীহ মুসলিম ২/২৩১৯, সুনান নাসাঈ ৪/২১৩৯, মুসনাদে আহমাদ ২/৪৩, ৫২, ১২২, ১২৯, ফাতহুল বারী ৪/১৫১) প্রথমবারে তিনি তাঁর দু’হাতের সমস্ত আঙ্গুল তিনবার নীচের দিকে ঝুঁকিয়ে দেন অর্থাৎ ত্রিশ দিনে এবং দ্বিতীয় বারে দু’বার দু’হাতের সমস্ত অঙ্গুলি ঝুঁকান এবং তৃতীয়বার এক হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি বৃত্ত করে রাখেন, অর্থাৎ উনত্রিশ দিনে। ভাবার্থ এই যে, আমাদের ‘ইবাদত এবং এর সময় হিসাব নিকাশের ওপর নির্ভর করে না। কুর’আন মাজীদের এক স্থানে আছেঃ

﴿هُوَ الَّذِیْ بَعَثَ فِی الْاُمِّیّنَ رَسُوْلًا مِّنْهُمْ﴾

তিনিই উম্মীদের মধ্যে তাদের মধ্যেকারই একজনকে পাঠিয়েছেন রাসূল রূপে। (৬২ নং সূরা আল জুমু‘আহ, আয়াত নং ২)

ইবনে ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। أَمَىَّ এর অর্থ হচ্ছে মিথ্যা আশা ও মন ভুলানো কথা। (তাফসীর তাবারী ২/২৬১)

‘তারা শুধু ধারণার ওপরই রয়েছে’ অর্থাৎ তারা প্রকৃত ব্যাপার অবগত নয়; বরং নিরর্থক ধারণা করে থাকে। অতঃপর ইয়াহুদীদের অন্য এক শ্রেণীর লোকের বর্ণনা দেয়া হচ্ছে যে, তারা লেখা পড়া জানতো এবং জনগণকে ভ্রান্ত পথের দিকে আহ্বান করতো। মহান আল্লাহ সম্বন্ধে মিথ্যা কথা বলতো এবং শিষ্যদের নিকট হতে টাকা পয়সা আদায় করার উদ্দেশ্যে ভুল পন্থা অবলম্বন করতো।

অয়েল শব্দের অর্থ ও বিশ্লেষণ

وَيْلٌ এর অর্থ হচ্ছে ‘দুর্ভাগ্য’ ও ‘ক্ষতি’- এটা একটি প্রসিদ্ধ শব্দ। সুফইয়ান সাওরী (রহঃ) বলেন, এটা জাহান্নামের একটি গর্তের নাম। ‘আত্বা ইবনু ইয়াসার বলেন, অয়েল হলো জাহান্নামের একটি উপত্যকার নাম, যার আগুনের তাপ এতো প্রচণ্ড যে, তার ভিতর পাহাড় নিক্ষেপ করলেও তা গলে যাবে।
মুসনাদ ইবনে আবি হাতিমে রয়েছে, আবূ সা‘ঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “ويل واد في جهنم، يهوي فيه الكافر أربعين خريفًا قبل أن يبلغ قعره”.

‘জাহান্নামের একটি উপত্যকার নাম হলো অয়েল। যার মধ্যে কাফিরকে নিক্ষেপ করা হলে চল্লিশ বছর পর তার তলদেশে গিয়ে পৌছবে।’ (হাদীসটি য ‘ঈফ। জামি ‘তিরমিযী ৫/৩১৬৪, সহীহ ইবনে হিব্বান ৯ম খন্ড ২৭৭ পৃষ্ঠা, হাদীস ৭৪২৪, মুসনাদে আহমাদ ৩/৭৫, মুসতাদরাক হাকিম ৪/৫৯৬, তারগীব ওয়াত তারহীব ৪/২৬৫) কেননা এর গভীরতা খুবই বেশি। কিন্তু সনদ হিসেবে এ হাদীসটি গারীব বা দুর্বল।

ইয়াহুদীরা তাওরাতের মধ্যে পরিবর্তন করেছিলো। তাওরাতে উল্লেখ রয়েছে যে, তারা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নাম তা হতে মুছে ফেলেছিলো।

এ আয়াতাংশের তাফসীরে ইবনে জারীর (রহঃ) ‘উসমান ইবনে ‘আফ্ফান (রাঃ) এর একটি সূত্র উল্লেখ করে বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ

“الويل جبل في النار. وهو الذي أنزل في اليهود؛ لأنهم حَرَّفوا التوراة، زادوا فيها ما أحبوا، ومحوا منها ما يكرهون، ومحوا اسم محمد صلى الله عليه وسلم من التوراة. ولذلك غضب الله عليهم، فرفع بعض التوراة، فقال: { فَوَيْلٌ لَهُمْ مِمَّا كَتَبَتْ أَيْدِيهِمْ وَوَيْلٌ لَهُمْ مِمَّا يَكْسِبُونَ

অয়েল জাহান্নামের একটি পাহাড়, যাতে ইয়াহুদীদেরকে নিক্ষেপ করা হবে। কেননা তারাই তাওরাতের মধ্যে পরিবর্তন করেছিলো। পছন্দনীয় বিষয় বৃদ্ধি করেছিলো আর অপছন্দনীয় বিষয়গুলো তারা মিটিয়ে দিয়েছিলো। এমনটি তারা মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নামও তাওরাত থেকে মুছে ফেলেছিলো। এ জন্য তাদের ওপর মহান আল্লাহ্‌র অভিশাপ নাযিল হয়েছিলো। অতঃপর মহানবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অত্র আয়াতটি পাঠ করেনঃ

فَوَيْلٌ لَهُمْ مِمَّا كَتَبَتْ أَيْدِيهِمْ وَوَيْلٌ لَهُمْ مِمَّا يَكْسِبُونَ

‘যা তারা হাত দ্বারা লিখেছে এবং যা কিছু উপার্জন করেছে তার জন্য তাদের সর্বনাশ হবে।’ (তাফসীরে ত্বাবারী-১/১৩৯৮। সনদটি অপরিচিত)

‘অয়েল’ এর অর্থ কঠিন শাস্তি, ভীষণ ক্ষতি, ধ্বংস, দুঃখ-কষ্ট ইত্যাদিও হয়ে থাকে।

সত্যত্যাগী ইয়াহুদীদের জন্য দুর্ভোগ

এখানে ইয়াহুদী ‘আলেমদেরকে নিন্দা করা হচ্ছে যে, তারা নিজেদের কথাকে মহান আল্লাহ্‌র কালাম বলে আখ্যায়িত করতো এবং নিজেদের লোককে সন্তুষ্ট করে দুনিয়ায় উপার্জন করতো। ‘আবদুল্লাহ ইবনে ‘আব্বাস (রাঃ) বলতেনঃ ‘তোমরা কিতাবীদেরকে কোন কিছু জিজ্ঞেস করো কেন? তোমাদের কাছে তো নব প্রেরিত মহান আল্লাহ্‌র কিতাবই বিদ্যমান আছে। কিতাবীরা তো মহান আল্লাহ্‌র কিতাবের মধ্যে পরিবর্তন করে ফেলেছে। নিজেদের হস্তলিখিত কথাকেই মহান আল্লাহ্‌র দিকে সম্বন্ধ লাগিয়ে তা ছড়িয়ে দিয়েছে। কাজেই তোমাদের নিজস্ব কিতাব বাদ দিয়ে তাদের পরিবর্তিত কিতাবের কি প্রয়োজন? বড়ই দুঃখের বিষয় এই যে, তারা তোমাদেরকে জিজ্ঞস করছে না, অথচ তোমরা তাদেরকে জিজ্ঞেস করছো।’ (তাফসীর ইবনে আবি হাতিম ১/২৪৫, ফাতহুল বারী ৫/২৪৪, ১৩/৩৪৫, ৫৫৫)

‘অল্প মূল্যে’র অর্থ হচ্ছে আখিরাতের তুলনায় বর্তমান দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ী জীবন এবং এর সাথের নি ‘য়ামত। (তাফসীর ইবনে আবি হাতিম ১/২৪৭) অর্থাৎ ওর বিনিময়ে সারা দুনিয়া পেলেও আখিরাতের তুলনায় এটা অতি নগণ্য জিনিস। অতঃপর আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা ‘আলা বলেন ﴿ وَ وَیْلٌ لَّهُمْ مِّمَّا یَكْسِبُوْنَ﴾ তারা যে এভাবে নিজেদের কথাকে মহান আল্লাহ্‌র কথা বলে জনগণের কাছ থেকে স্বীকৃতি নিচ্ছে এবং এর বিনিময়ে দুনিয়া উপার্জনই করছে, এর ফলে তাদের সর্বনাশ হবে। (তাফসীর তাবারী ২/২৭৩)

এ ছিল তাদের জনগণের অবস্থা। আল্লাহর কিতাবের কোন জ্ঞানই তাদের ছিল না। আল্লাহ‌ তাঁর কিতাবে দ্বীনের কি কি মূলনীতি বর্ণনা করেছেন, শরীয়াত ও নৈতিকতার কি বিধান দিয়েছেন এবং কোন কোন জিনিসের ওপর মানুষের কল্যাণ ও ক্ষতির ভিত রেখেছেন, তার কিছুই তারা জানতো না। এই জ্ঞান না থাকার কারণে তারা নিজেদের ইচ্ছা, আশা-আকাঙ্ক্ষা ও কল্পনার অনুসারী বিভিন্ন মনগড়া কথাকে দ্বীন মনে করতো এবং এরই ভিত্তিতে গড়ে ওঠা মিথ্যা আশা বুকে নিয়ে জীবন ধারণ করতো।

اُمِّي বলা হয় ঐ ব্যক্তি যে ভালভাবে লেখতে ও পড়তে জানে না। اُمِّیُّوْنَ শব্দটি তার বহুবচন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর একটি বিশেষণ হচ্ছে اُمِّي, তিনি লেখতে ও পড়তে জানতেন না।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(وَمَا کُنْتَ تَتْلُوْا مِنْ قَبْلِھ۪ مِنْ کِتٰبٍ وَّلَا تَخُطُّھ۫ بِیَمِیْنِکَ اِذًا لَّارْتَابَ الْمُبْطِلُوْنَ)

“তুমি তো পূর্বে কোন কিতাব পাঠ করনি এবং স্বহস্তে কোন কিতাব লেখনি যে, মিথ্যাচারীরা সন্দেহ পোষণ করবে।”(সূরা আনকাবুত ২৯:৪৮)
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:

إِنَّا أُمَّةٌ أُمِّيَّةٌ لَا نَكْتُبُ وَلَا نَحْسُبُ الشَّهْرُ هَكَذَا وَهَكَذَا

আমরা নিরক্ষর লোক, আমরা লেখতেও জানি না এবং হিসাবও বুঝি না, মাস কখন এরকম হয় এবং কখনও এ রকম, এ রকম হয়। (সহীহ বুখারী হা: ১৯১৩, সহীহ মুসলিম হা: ১১০৮০)

أَمَا نِيْ (ধারণা) দ্বারা কী বুঝানো হয়েছে এ ব্যাপারে দু’টি মতামত পাওয়া যায়-

১. যারা শুধু কিতাব তেলাওয়াত ছাড়া এর অর্থ কিছুই জানে না। তবে অত্র আয়াতে এটা উদ্দেশ্য নয়।

২. যারা কিতাব সম্পর্কে কোন জ্ঞান রাখে না কিন্তু বাতিল আশা-আকাক্সক্ষা করে যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(وَقَالُوْا لَنْ یَّدْخُلَ الْجَنَّةَ اِلَّا مَنْ کَانَ ھُوْدًا اَوْ نَصٰرٰیﺚ تِلْکَ اَمَانِیُّھُمْﺚ قُلْ ھَاتُوْا بُرْھَانَکُمْ اِنْ کُنْتُمْ صٰدِقِیْنَ﮾)

“আর তারা বলে, যারা ইয়াহূদী বা খ্রিস্টান হয়েছে তারা ছাড়া আর কেউই জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না, এটা তাদের বাসনা মাত্র। তুমি বল, যদি তোমরা সত্যবাদী হও, তবে তোমাদের প্রমাণ উপস্থিত কর।” (সূরা বাকারাহ ২:১১১) অত্র আয়াতে এটা উদ্দেশ্য। (আযউয়াউল বায়ান, ১/৮৫)

(فَوَیْلٌ لِّلَّذِیْنَ)

‘তাদের জন্য অভিশম্পাত’এটা ইয়াহূদীদের অন্য এক শ্রেণির লোক যারা মানুষদেরকে ভ্রান্ত পথের দিকে আহ্বান করত, আল্লাহ তা‘আলা সম্পর্কে মিথ্যা আরোপ করত এবং শিষ্যদের নিকট হতে অন্যায়ভাবে টাকা-পয়সা আত্মসাৎ করে খেত। তারা স্বহস্তে মনগড়া কিতাব লিপিবদ্ধ করে তা আল্লাহ তা‘আলার দিকে সোপর্দ করত। আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে এ সকল অন্যায়ের কারণে জাহান্নামের শাস্তির কথা বলেছেন।

আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

১. ঈমান ও সৎ আমল না থাকলে বংশ ও প্রভাব প্রতিপত্তি পরকালে কোন উপকারে আসবে না।
২. ছোট ও বড় সকল প্রকার গুনাহ থেকে সতর্ক থাকা দরকার। মৃত্যুর পূর্বেই গুনাহ থেকে তাওবাহ করা উচিত।
৩. শরীয়তের কোন হালাল বিধানকে হারাম করে দেয় অথবা কোন হারামকে হালাল করে দেয় এমন ফতওয়া দেয়া থেকে সতর্ক থাকা আবশ্যক। অথবা নিজের তৈরি কোন কথা আল্লাহ তা‘আলার নামে চালিয়ে দেয়া থেকে সতর্ক থাকতে হবে। এসব ইয়াহূদীদের চরিত্র।

সুরা: আল-বাক্বারাহ
আয়াত নং :-৮০

وَ قَالُوْا لَنْ تَمَسَّنَا النَّارُ اِلَّاۤ اَیَّامًا مَّعْدُوْدَةًؕ قُلْ اَتَّخَذْتُمْ عِنْدَ اللّٰهِ عَهْدًا فَلَنْ یُّخْلِفَ اللّٰهُ عَهْدَهٗۤ اَمْ تَقُوْلُوْنَ عَلَى اللّٰهِ مَا لَا تَعْلَمُوْنَ

তারা বলে, জাহান্নামের আগুন আমাদের কখনো স্পর্শ করবে না, তবে কয়েক দিনের শাস্তি হলেও হয়ে যেতে পারে। এদেরকে জিজ্ঞেস করো, তোমরা কি আল্লাহর কাছ থেকে কোন অঙ্গীকার নিয়েছো, যার বিরুদ্ধাচারণ তিনি করতে পারেন না? অথবা তোমরা আল্লাহর ওপর চাপিয়ে দিয়ে এমন কথা বলছো যে কথা তিনি নিজের ওপর চাপিয়ে নিয়েছেন বলে তোমাদের জানা নেই? আচ্ছা জাহান্নামের আগুন তোমাদেরকে স্পর্শ করবে না কেন?

৮১ নং আয়াতে

بَلٰى مَن كَسَبَ سَيِّئَةً وَأَحٰطَتْ بِهِۦ خَطِيٓـَٔتُهُۥ فَأُولٰٓئِكَ أَصْحٰبُ النَّارِ ۖ هُمْ فِيهَا خٰلِدُونَ

হ্যাঁ, যে পাপ উপার্জন করেছে এবং তার পাপরাশি তাকে পরিবেষ্টন করে রেখেছে, তারাই অগ্নিবাসি, সেখানে তারা স্থায়ী হবে।

৮২ নং আয়াতে

وَالَّذِينَ ءَامَنُوا وَعَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ أُولٰٓئِكَ أَصْحٰبُ الْجَنَّةِ ۖ هُمْ فِيهَا خٰلِدُونَ

আর যারা ঈমান এনেছে ও সৎকাজ করেছে তারাই জান্নাতবাসী, তারা সেখানে স্থায়ী হবে।

৮০ হতে ৮২ নং আয়াতের তাফসীর:

ইয়াহুদীদের অলীক কল্পনা যে, তারা মাত্র কয়েক দিন জাহান্নামের ‘আযাব ভোগ করবে

ইয়াহুদী জাতি যা বর্ণনা করে এবং যে মিথ্যা দাবী করে যে ‘ সামান্য কয়েকদিন ব্যতীত জাহান্নামের আগুন তাদেরকে স্পর্শই করবে না। অর্থাৎ কিছু দিন জাহান্নামের আগুনে থাকলে পরে তারা তা থেকে মুক্তি পাবে’ এমন দাবীকে প্রত্যাখ্যান করে মহান আল্লাহ বলেন, ‘বলো, ‘তোমরা কি মহান আল্লাহ্‌র নিকট থেকে প্রতিশ্রুতি নিয়েছো যে প্রতিশ্রুতি মহান আল্লাহ ভঙ্গ করবেন না?’ অত্র আয়াতে أم এর অর্থ হলো بل তথা বরং। অর্থাৎ বরং তোমরা মহান আল্লাহ্‌র ওপর এমন কিছু মিথ্যা অপবাদ প্রদান করছো যা তোমরা জানো না।

ইবনে ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, ইয়াহুদীরা বলতোঃ ‘পৃথিবীর মোট সময়কাল হচ্ছে সাত হাজার বছর। প্রতি হাজার বছরের পরিবর্তে আমাদের একদিন শাস্তি হবে। তাহলে আমাদেরকে মাত্র সাত দিন জাহান্নামে থাকতে হবে।’ তাদের এ কথাকে খণ্ডন করতে এ আয়াত অবতীর্ণ হয়।

কারো কারো মতে তারা চল্লিশ দিন জাহান্নামে থাকবে বলে ধারণা করতো। (তাফসীর তাবারী ২/২৭৬) কেননা তাদের পূর্বপুরুষরা চল্লিশ দিন পর্যন্ত গো-বৎসের পূজা করেছিলো। কারো কারো মতে তাদের এই ধারণা হওয়ার কারণ ছিলো এই যে, তাওরাতে আছেঃ ‘জাহান্নামের দুই তীরের ‘যাক্কুম’ নামক বৃক্ষ পর্যন্ত চল্লিশ দিনের পথ।’ তাই তারা বলতো যে, এ সময়ের পরে শাস্তি উঠে যাবে।

একটি বর্ণনায় আছে যে, তারা রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সামনে বললো, চল্লিশ দিন পযন্ত আমরা জাহান্নামে অবস্থান করবো, অতঃপর অন্যেরা আমাদের জায়গায় এসে যাবে অথাৎ আপনার উম্মাত। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তখন তাদের মাথায় হাত রেখে বলেন না, বরং তোমারা চিরকাল জাহান্নামে অবস্থান করবে। সেই সময় এই আয়াত অবতীর্ণ হয়।

এ ছাড়া হাফিয আবূ বাকর ইবনে মারদুওয়ায় (রহঃ) আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেনঃ খাইবার যুদ্ধে বিজয় লাভ করার পর ইয়াহূদীরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বিষ মিশ্রিত একটি আস্ত ভেড়ার রোষ্ট উপহার হিসাবে পাঠায়। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আদেশ করলেনঃ এ এলাকায় যে ইয়াহুদীরা রয়েছে তাদের সকলকে সমবেত করো। ইয়াহুদীরা উপস্থিত হলে তিনি তাদেরকে জিজ্ঞেস করলেনঃ তোমাদের পিতা কে? তারা উত্তরে বললোঃ অমুক, অমুক, অমুক। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমরা মিথ্যা বলছো, তোমাদের পিতা অমুক, অমুক এবং অমুক। তখন তারা বললোঃ আপনি ঠিকই বলেছেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদেরকে জিজ্ঞেস করলেনঃ আচ্ছা বলতো, এবার যদি আমি তোমাদেরকে কোন কিছু সম্পর্কে জিজ্ঞেস করি তাহলে সঠিক উত্তর দিবে কি? তারা উত্তরে বললোঃ হ্যাঁ আবুল কাসিম! আমরা যদি মিথ্যা বলি তাহলে আপনি তো আমাদের পিতাদের নাম মিথ্যা বলার মতো সত্য ঘটনা বুঝতেই পারবেন। এরপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রশ্ন করলেনঃ বলো তো জাহান্নামের অধিবাসী কারা? তারা উত্তরে বললোঃ আমরা কিছুদিন জাহান্নামে অবস্থান করবো এবং এরপর আপনার উম্মাত আমাদের স্থলাভিষিক্ত হবে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমাদের ধ্বংস হোক এবং তোমরা অপমানিত হও! মহান আল্লাহ্‌র শপথ! আমরা কখনো তোমাদের স্থলাভিষিক্ত হবো না। অতঃপর তিনি বললেনঃ আমি যদি আর একটি প্রশ্ন করি তাহলে তোমরা সঠিক উত্তর দিবে কি? তারা বললোঃ হ্যাঁ আবুল কাসিম! তিনি প্রশ্ন করলেনঃ তোমরা কি এই ভেড়ার গোস্তে বিষ মিশিয়েছো? তারা বললোঃ হ্যাঁ। তিনি আবার প্রশ্ন করলেনঃ কোন উদ্দেশ্যে তোমরা এটা করেছো? তারা বললোঃ আমরা জানতে চাচ্ছিলাম যে, আপনি যদি মিথ্যা নবীর দাবীদার হোন তাহলে আমরা যেন আপনার কাছ থেকে পরিত্রাণ পাই, আর আপনি যদি সত্য নবী হোন তাহলে বিষ আপনার কোনই ক্ষতি করতে পারবে না। (সহীহুল বুখারী-৬/৩১৬৯, ১০/৫৭৭৭, সুনান দারিমী ১/৪৭/হা৬৯, মুসনাদে আহমাদ ২/৪৫১, ফাতহুল বারী ৬/৩১৪, নাসাঈ ৬/৪১৩, দালায়েলুন নবুওয়্যাহ ৪/২৫৬)

মহান আল্লাহ বলছেন আসলে তোমরা যা দাবী করছো বা আশা করছো তা বাস্তব নয়। বরং যার কর্ম সবই মন্দ, যার মধ্যে সাওয়াবের লেশ মাত্র নেই সে জাহান্নামী, পক্ষান্তরে যে মহান আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ওপর ঈমান এনেছে এবং সহীহ সুন্নাহ অনুযায়ী কাজ করেছে সে জান্নাতবাসী। যেমন অন্যস্থানে আছেঃ

﴿لَیْسَ بِاَمَانِیِّكُمْ وَ لَاۤ اَمَانِیِّ اَهْلِ الْكِتٰبِ١ؕ مَنْ یَّعْمَلْ سُوْٓءًا یُّجْزَ بِهٖ١ۙ وَ لَا یَجِدْ لَهٗ مِنْ دُوْنِ اللّٰهِ وَلِیًّا وَّ لَا نَصِیْرًا۝۱۲۳ وَمَنْ یَّعْمَلْ مِنَ الصّٰلِحٰتِ مِنْ ذَكَرٍ اَوْ اُنْثٰى وَ هُوَ مُؤْمِنٌ فَاُولٰٓىِٕكَ یَدْخُلُوْنَ الْجَنَّةَ وَ لَا یُظْلَمُوْنَ نَقِیْرًا﴾

‘না তোমাদের বৃথা আশায় কাজ হবে, আর না আহলে কিতাবের বৃথা আশায়; যে অসৎ কাজ করবে সে তার প্রতিফল পাবে এবং সে মহান আল্লাহ্‌র পরিবর্তে কাউকে বন্ধু অথবা সাহায্যকারী প্রাপ্ত হবে না। পুরুষ অথবা নারীর মধ্যে যারা সৎ কাজ করে এবং সে বিশ্বাসীও হয়, তাহলে তারাই জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং তারা খেজুর দানার কণা পরিমাণও অত্যাচারিত হবে না। (৪ নং সূরা নিসা, আয়াত নং ১২৩-১২৪)

ইবনে ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, এখানে মন্দ কাজের অর্থ কুফরী। আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ), আবূ অয়েল (রহঃ), আবূল ‘আলিয়া (রহঃ), মুজাহিদ (রহঃ), ইকরামাহ (রহঃ), হাসান বাসরী (রহঃ) কাতাদাহ (রহঃ) এবং রাবী‘ ইবনে আনাস (রহঃ) প্রভৃতি মনীষীগণ وَّ اَحَاطَتْ بِه خَطِیْٓـَٔتُه এর অর্থ করেছেন, শির্ক তাকে আষ্টে-পৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরেছে। (তাফসীর ইবনে আবি হাতিম ১/২৫২) রাবী‘ ‘ইবনে খুশাইয়াম (রহঃ) এর মতে এর দ্বারা ঐ ব্যক্তিকে বুঝানো হয়েছে যে পাপের অবস্থায়ই মারা যায় এবং তাওবাহ করার সুযোগ লাভ করে না। সুদ্দী (রহঃ) এবং আবূ রাজিন (রহঃ) ও অনুরূপ বলেছেন। (তাফসীর ইবনে আবি হাতিম ১/২৫৩) আবুল ‘আলিয়া (রহঃ), মুজাহিদ (রহঃ), হাসান বাসরী (রহঃ), কাতাদাহ (রহঃ) এবং রাবী‘ ইবনে আনাস (রহঃ) ও বলেছেন যে, এখানে বড় পাপ অর্থাৎ কাবীরাহ গুনাহর কথা বলা হয়েছে, যা স্তুপীকৃত হয়ে অন্তরের অবস্থা খারাপ করে দেয়। (তাফসীর ইবনে আবি হাতিম ১/২৫৩) প্রতিটি বর্ণনাই আসলে একই অর্থ বহন করে। মহান আল্লাহই উত্তম জ্ঞানের অধিকারী।

ছোট ছোট পাপ আস্তে আস্তে বড় ও ধ্বংসাত্মক কাজে প্রবৃত্ত করে

মুসনাদে আহমাদে ‘আবদুল্লাহ ইবনে মাস‘উদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ

“إيَّاكم ومحقرات الذنوب، فإنهن يجتمعن على الرجل حتى يهلكنه”.

‘তোমরা পাপকে ছোট মনে করো না, এগুলো জমা হয়ে মানুষের ধ্বংসের কারণ হবে।’ এর পর তিনি একটি উপমা দিয়ে বলেন যে, তোমরা কি দেখো না, কতকগুলো লোক একটি করে খড়ি নিয়ে এলে খড়ির একটি স্তুপ হয়ে যায়। অতঃপর ওতে আগুন ধরিয়ে দিলে এটা বড় বড় জিনিসকে পুড়িয়ে ছারখার করে দেয়? (হাদীসটি সহীহ। মুসনাদ আহমাদ ১/২০৪, ৪০৩, আল মাজমা‘উয যাওয়ায়েদ ১০/১৮৯) অতঃপর ঈমানদারগণের বর্ণনা প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন যে, তোমাদের মধ্যে যারা কুফরীর মুকাবিলায় ঈমান আনে এবং অসৎ কাজের মুকাবিলায় সৎকাজ করে, তাদের জন্য চিরস্থায়ী আরাম ও শান্তি। তারা শান্তিদায়ক জান্নাতে চিরকাল অবস্থান করবে। মহান আল্লাহ প্রদত্ত শান্তি ও শাস্তি উভয়ই চিরস্থায়ী।

এখানে ইহুদি সমাজে ব্যাপকভাবে প্রচলিত একটি ভুল ধারণার কথা বর্ণনা করা হয়েছে। তাদের আলেম, অ-আলেম, শিক্ষিত অশিক্ষিত নির্বিশেষে সর্বস্তরের মানুষ এই ভুল ধারণায় লিপ্ত। তারা মনে করতো, আমরা যাই কিছু করি না কেন, আমাদের সাত খুন মাফ, জাহান্নামের আগুন আমাদের ওপর হারাম। কারণ আমরা ইহুদি। আর ধরে নেয়া যাক যদি আমাদের কখনো শাস্তি দেয়াও হয় তাহলেও তা হবে মাত্র কয়েক দিনের। কয়েক দিন জাহান্নামে রেখে তারপর আমাদের জান্নাতে পাঠিয়ে দেয়া হবে।

অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা ইয়াহূদীদের একটি দাবির কথা উল্লেখ করেছেন যে, তারা বলে আমরা মাত্র কয়েকদিন জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করব তারপর নাজাত পেয়ে যাব।

আল্লাহ তা‘আলা তাদের দাবির প্রতিবাদ করে বলছেন: হে নাবী আপনি বলে দিন তোমরা কি এ বিষয়ে আল্লাহ তা‘আলার কাছ থেকে কোন অঙ্গীকারনামা নিয়েছ? মূলত আল্লাহ তা‘আলার ব্যাপারে তারা মিথ্যা আরোপ করে।

আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন: ইয়াহূদীরা বলে, আমরা কেবল চল্লিশ দিন জাহান্নামে অবস্থান করব। কাতাদাহ (রহঃ) বলেন: ইয়াহূদীরা বলে আমরা কেবল যে চল্লিশ দিন গো-বৎসের পূজা করেছিলাম সে চল্লিশ দিন জাহান্নামে অবস্থান করব।

ইকরামার বর্ণনায় পাওয়া যায়, একদা ইয়াহূদীরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে বিবাদ করে। তারা বলল: আমরা কেবল চল্লিশ দিন জাহান্নামে অবস্থান করব। অতঃপর আমাদের স্থানে মুহাম্মাদ ও তাঁর সাথীরা যাবে। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের মাথার দিকে ইশারা করে বললেন: বরং তোমরাই জাহান্নামে আজীবন থাকবে। তোমাদের স্থলাভিষিক্ত আর কেউ হবে না। তখন এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। (ফাতহুল বারী ১০/২৫৭)

এরপর আল্লাহ তা‘আলা জানিয়ে দিলেন যে, মৌখিক দাবি যথেষ্ট নয় বরং যারা অপরাধ করবে তারা জাহান্নামী আর যারা সৎ আমল করবে তারা জান্নাতে যাবে। আর তথায় চিরস্থায়ী হবে।

আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

১. জান্নাত লাভ ও জাহান্নাম থেকে রক্ষা পাওয়ার কথা শুধু মুখে বললে হবে না বরং এর জন্য প্রয়োজন ঈমান ও সৎ আমল।
২. যে কোন ধর্মের অনুসরণ করে তার বিধি-বিধান মেনে চললেই জান্নাতে যাওয়া ও জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে না, বরং ইসলামের অনুসরণ আবশ্যক, তবেই জান্নাত পাওয়া সম্ভব।

Leave a Reply