(Book# 114/١١٥)-৩১৭ www.motaher21.net إِن تَجْتَنِبُوا كَبَآئِرَ যদি তোমরা নিষিদ্ধ কাজের বড় বড় গুলো হতে বিরত থাক, If you avoid the great sins, সুরা: আন-নিসা আয়াত নং :-৩১

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ

(Book# 114/١١٥)-৩১৭
www.motaher21.net
إِن تَجْتَنِبُوا كَبَآئِرَ

যদি তোমরা নিষিদ্ধ কাজের বড় বড় গুলো হতে বিরত থাক,

If you avoid the great sins,

সুরা: আন-নিসা
আয়াত নং :-৩১

اِنْ تَجْتَنِبُوْا كَبَآئِرَ مَا تُنْهَوْنَ عَنْهُ نُكَفِّرْ عَنْكُمْ سَیِّاٰتِكُمْ وَ نُدْخِلْكُمْ مُّدْخَلًا كَرِیْمًا

তোমরা যদি বড় বড় গোনাহ থেকে দূরে থাকো, যা থেকে দূরে থাকার জন্য তোমাদের বলা হচ্ছে, তাহলে তোমাদের ছোট-খাটো খারাপ কাজগুলো আমি তোমাদের হিসেব থেকে বাদ দিয়ে দেবো এবং তোমাদের সম্মান ও মর্যাদার জায়গায় প্রবেশ করিয়ে দেবো।

৩১ নং আয়াতের তাফসীর:

তাফসীরে ইবনে ‌কাসীর বলেছেন:-

বলা হচ্ছে-‘আল্লাহ তা’আলার হারাম কাজগুলো করে অবাধ্য হয়ে, আর অন্যায়ভাবে একে অপরের মাল ভক্ষণ করে তোমরা নিজেরাই নিজেদেরকে ধ্বংস করো না। আল্লাহ তা’আলা তোমাদের উপর অত্যন্ত দয়ালু। তাঁর প্রত্যেক আদেশ ও নিষেধ দয়ায় পরিপূর্ণ।

মুসনাদ-ই-আহমাদে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) হযরত আমর ইবনে আল আস (রাঃ)-কে ‘যাতুস্সালাসিলের’ যুদ্ধের বছরে প্রেরণ করেছিলেন। তিনি বলেন, একদা কঠিন শীতের রাত্রে আমার স্বপ্নদোষ হয়, এমনকি গোসল করাতে আমি আমার জীবনের উপর ভয় করি। সুতরাং আমি তায়াম্মুম করে নিয়ে আমার জামাআতকে ফজরের নামায পড়িয়ে দেই। অতঃপর ফিরে এসে আমরা রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর খিদমতে হাযির হই। তাঁর নিকট আমি আমার এ ঘটনাটি বর্ণনা করি।

তিনি বলেনঃ তুমি কি তাহলে অপবিত্র অবস্থায় তোমার সঙ্গীদেরকে নামায পড়িয়েছ?’ আমি বলি, হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! কঠিন ঠাণ্ডা ছিল এবং আমার প্রাণের ভয় ছিল। অতঃপর আমার মনে পড়ে গেল যে, আল্লাহ তা’আলা বলেছেন-“তোমরা নিজেদেরকে ধ্বংস করো না।’ একথা শুনে রাসূলুল্লাহ (সঃ) হেসে উঠেন এবং আমাকে কিছুই বলেননি।

অন্য একটি বর্ণনায় রয়েছে যে, লোকেরাই ঘটনাটি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নিকট বর্ণনা করেছিলেন এবং তিনি জিজ্ঞেস করায় হযরত আমর ইবনে আস (রাঃ) এ ওর পেশ করেছিলেন।

সহীহ বুখারী ও মুসলিম শরীফে রয়েছেঃ “যে ব্যক্তি কোন লোহা দ্বারা আত্মহত্যা করবে, সে কিয়ামত পর্যন্ত জাহান্নামের মধ্যে লোহা দ্বারা আত্মহত্যা করতে থাকবে। আর যে ব্যক্তি জেনে-শুনে জীবন দেয়ার উদ্দেশ্যে বিষপান করবে, সে সদা-সর্বদার জন্যে জাহান্নামে বিষপান করতে থাকবে।’

আর একটি বর্ণনায় রয়েছেঃ ‘যে নিজেকে যে জিনিস দ্বারা হত্যা করবে, কিয়ামতের দিন তাকে সে জিনিস দ্বারা শাস্তি দেয়া হবে।’ রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর ঘোষণায় রয়েছেঃ তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের মধ্যে একটি লোক আহত হয়। সে ছুরি দিয়ে স্বীয় হাত কেটে দেয়। রক্ত বন্ধ হয় না এবং তাতেই সে মারা যায়। তখন আল্লাহ পাক বলেন-“আমার বান্দা নিজেকে ধ্বংস করার ব্যাপারে তাড়াতাড়ি করেছে, সুতরাং আমি তার উপর জান্নাত হারাম করে দিয়েছি।’

এজন্যেই আল্লাহ তা’আলা এখানে বলেন-“যে কেউ অত্যাচার ও সীমা অতিক্রম করে একাজ করবে, অর্থাৎ হারাম জেনেও স্বীয় বীরত্বপণা দেখিয়ে ঐ কাজ করবে, সে জাহান্নামী হবে। সুতরাং প্রত্যেকেরই এ কঠিন ভীতি প্রদর্শন ব্যাপারে ভয় করা উচিত। অন্তরের পর্দা খুলে আল্লাহ তা’আলার এ নির্দেশ শ্রবণ করতঃ হারাম কাজ হতে (মানুষের) বিরত থাকা উচিত।

অতঃপর আল্লাহ তা’আলা বলেন-“তোমরা যদি বড় বড় পাপ হতে বেঁচে থাক তবে আমি তোমাদের ছোট ছোট পাপগুলো ক্ষমা করে দেবো এবং তোমাদেরকে জান্নাতে প্রবিষ্ট করবো।’

হযরত আনাস (রাঃ) হতে মার’ রূপে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, ‘আমরা ওর মত কিছুই দেখিনি যা আমাদের প্রভুর পক্ষ হতে আমাদের নিকট পৌছেছে, অতঃপর আমরা তাঁর জন্যে আমাদের পরিবার ও সম্পদ হতে পৃথক হবো না যে, তিনি আমাদের বড় বড় পাপগুলো ছাড়া ছোট ছোট পাপগুলো ক্ষমা করে দেবেন’। এরপর তিনি এ আয়াতটি পাঠ করেন। এ আয়াত সম্পর্কে বহু হাদীসও রয়েছে। আমরা কিছু কিছু এখানে বর্ণনা করছি।

মুসনাদ-ই-আহমাদে হযরত সালমান ফারেসী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সঃ) আমাকে বলেনঃ ‘জুমআর দিন কি, তা তুমি জান কি’? আমি উত্তরে বলি, ওটা ঐদিন যে দিনে আল্লাহ তা’আলা আমাদের পিতা হযরত আদম (আঃ)-এর সৃষ্টি জমা করেন।

তিনি বলেনঃ “আমি যা জানি তা শুন। যে ব্যক্তি এ দিন ভালভাবে পবিত্রতা লাভ করতঃ জুম’আর নামাযের জন্যে আগমন করে এবং নামায শেষ না হওয়া পর্যন্ত নীরবতা অবলম্বন করে, তার সে কাজ পরবর্তী জুম’আ পর্যন্ত সমস্ত পাপ মোচনের কারণ হয়ে থাকে, যতক্ষণ পর্যন্ত সে হত্যা কাজ হতে বেঁচে থাকে।

তাফসীর-ই-ইবনে জারীরে রয়েছে, হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) ও হযরত সাঈদ (রাঃ) বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ (সঃ) আমাদেরকে ভাষণ দান কালে বলেনঃ “যে আল্লাহর হাতে আমার প্রাণ রয়েছে, তাঁর শপথ! এ কথা তিনি তিনবার বলেন। অতঃপর তিনি মাথা নীচু করেন। আমরা সকলেই নীচু করি এবং জনগণ কাঁদতে আরম্ভ করে। আমাদের অন্তর কেঁপে উঠে যে, আল্লাহর রাসূল (সঃ) কোন্ জিনিসের উপরই বা শপথ করলেন এবং নীরবতাই বা অবলম্বন করলেন কেন? অল্পক্ষণ পরে তিনি মস্তক উত্তোলন করেন এবং তাঁর চেহারা প্রফুল্ল ছিল, যা দেখে আমরা এত খুশী হই যে, আমরা লাল রঙ্গের উট পেলেও এত খুশী হতাম না। তখন তিনি বলতে আরম্ভ করেনঃ “যে ব্যক্তি পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করে, রমযানের রোযা রাখে, যাকাত আদায় করে এবং সাতটি কাবীরা গুনাহ হতে বেঁচে থাকে, তার জন্যে জান্নাতের সমস্ত দরজা খুলে রাখা হবে এবং তাকে বলা হবে-‘নিরাপত্তার সাথে তথায় চলে যাও।’

তাতে যে সাতটি পাপের উল্লেখ আছে তার বিস্তারিত বিবরণ সহীহ বুখারী ও মুসলিমে নিম্নরূপ এসেছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “ধ্বংসকারী সাতটি পাপ হতে তোমরা বেঁচে থাক।’ জিজ্ঞেস করা হয়, “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! ঐপাপগুলো কি?’ তিনি বলেনঃ (১) আল্লাহর সাথে অংশী স্থাপন করা। (২) যাকে হত্যা করা নিষিদ্ধ তাকে হত্যা করা, তবে শরীয়তের কোন কারণে যদি তার রক্ত হালাল হয় সেটা অন্য কথা। (৩) যাদু করা। (৪) সুদ ভক্ষণ করা। (৫) পৃতিহীনের মাল ভক্ষণ করা। (৬) কাফিরদের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় যুদ্ধক্ষেত্র হতে পলায়ন করা। (৭) সতীসাধ্বী পবিত্র মুসলমান নারীদেরকে অপবাদ দেয়া।

একটি বর্ণনায় যাদুর পরিবর্তে ‘হিজরত করার পর পুনরায় ফিরে এসে স্বদেশে অবস্থান’ এ উক্তিটি রয়েছে। এটা অবশ্যই স্মরণযোগ্য কথা যে, উল্লিখিত সাতটি পাপকে কাবীরা বলার ভাবার্থ এই নয় যে, শুধুমাত্র এগুলোই কাবীরা.. গুনাহ, যেমন কারও কারও এ ধারণা রয়েছে। কিন্তু এটা একেবারেই ভুল কথা, বিশেষ করে ঐ সময়, যখন ওর বিপরীত দলীল বিদ্যমান থাকে। আর এখানেতো পরিষ্কার ভাষায় অন্যান্য কাবীরা গুনাহগুলোরও বর্ণনা বিদ্যমান রয়েছে। নিম্নলিখিত হাদীসগুলো দ্রষ্টব্যঃ

মুসতাদরিক-ই-হাকিমে রয়েছে যে, বিদায় হজ্বে রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “হে জনমণ্ডলী! জেনে রেখো যে, নামাযীরা হচ্ছে আল্লাহর বন্ধু, যারা পাঁচ ওয়াক্ত নামায নিয়মিতভাবে আদায় করে, রমযানের রোযা রাখে, ফরয জেনে এবং পুণ্য লাভের নিয়ত করে খুশী মনে যাকাত আদায় করে, আর ঐ সমুদয় কাবীরা গুনাহ হতে বিরত থাকে যেগুলো হতে আল্লাহ্ দূরে থাকতে বলেছেন।”

এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! ঐ কাবীরা গুনাহগুলো কি?’ তিনি বলেনঃ ‘শিরুক, হত্যা, যুদ্ধক্ষেত্র হতে পলায়ন, পিতৃহীনের মাল ভক্ষণ, পবিত্র নারীদেরকে অপবাদ দেয়া, পিতা- মাতার অবাধ্য হওয়া এবং তোমাদের জীবন ও মরণের কিবলাহ্ বায়তুল্লাহ শরীফের মর্যাদা ক্ষুন্ন করা। জেনে রেখো যে ব্যক্তি মৃত্যু পর্যন্ত এ বড় বড় পাপগুলো হতে দূরে সরে থাকবে এবং নামায ও যাকাত নিয়মিতভাবে আদায় করবে, সে আল্লাহর নবী (সঃ)-এর সঙ্গে জান্নাতে সোনার অট্টালিকায় অবস্থান করবে।

হযরত তায়লাস ইবনে মাইয়াস (রঃ) বলেন, আমি কয়েকটি পাপকার্য করে বসি যা আমার মতে কারীরা গুনাহই ছিল। আমি হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমার (রাঃ)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাঁকে বলি যে, আমি কয়েকটি পাপকার্য। করেছি যেগুলোকে কাবীরা গুনাহ বলেই মনে করি। তিনি বলেন, ঐগুলো কি? আমি বলি যে, আমি এই এই কাজ করেছি। তিনি বলেন, এগুলো কাবীরা। গুনাহ্ নয়। আমি বলি যে, আমি আরও এই এই কাজ করেছি। তিনি বলেন, ‘এগুলোও কাবীরা গুনাহ নয়।’ এসো, আমি তোমাকে কাবীরা গুনাহগুলো গণনা করে শুনিয়ে দেই। ঐগুলো হচ্ছে নয়টি। (১) আল্লাহ তা’আলার সঙ্গে অংশী স্থাপন করা। (২) কাউকে বিনা কারণে হত্যা করা। (৩) যুদ্ধক্ষেত্রে শত্রুদের থেকে পৃষ্ঠ প্রদর্শন করা। (৪) পবিত্রা নারীদেরকে অপবাদ দেয়া। (৫) সুদ ভক্ষণ করা। (৬) অন্যায়ভাবে ইয়াতিমের মাল ভক্ষণ করা। (৭) মসজিদ-ই-হারামে ধর্মদ্রোহীতা ছড়িয়ে দেয়া। (৮) যাদুকে বৈধ মনে করা। (৯) বিনা কারণে পিতা-মাতাকে কাঁদানো।

হযরত তায়লাস (রঃ) বলেন, এটা বর্ণনা করার পরেও হযরত ইবনে উমার (রাঃ) লক্ষ্য করেন যে, আমার ভয় তখনও কমেনি। কাজেই তিনি বলেন, তোমার কি জাহান্নামে প্রবেশের ভয় এবং জান্নাতে প্রবেশের আকাক্ষখা আছে? আমি বলি, হ্যাঁ! তিনি বলেন, “আচ্ছা, তোমার পিতা-মাতা বেঁচে আছেন কি? আমি বলি, শুধু মা বেঁচে আছেন। তিনি তখন বলেন, “আচ্ছা, তুমি তাকে নরম কথা বল, আহার করাতে থাক এবং এসব কাবারী গুনাহ থেকে বেঁচে থাক, তাহলেই তুমি অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ লাভ করবে।’

অন্য বর্ণনায় রয়েছে যে, হযরত তায়তাসা ইবনে আলী হিন্দী (রঃ) হযরত ইবনে উমার (রাঃ)-এর সঙ্গে আরাফা প্রান্তরে আরাফার দিনে ‘পীলু’ বৃক্ষের নীচে সাক্ষাৎ করেছিলেন। তখন হযরত আবদুল্লাহ (রাঃ) স্বীয় মস্তক ও চেহারার উপর পানি ঢালছিলেন। তাতে এও রয়েছে যে, যখন হযরত আবদুল্লাহ (রাঃ) অপবাদ দেয়ার কথা উল্লেখ করেন, তখন আমি বলি, এটাও কি হত্যার মতই খুব বড় পাপ? তিনি বলেনঃ হ্যা, হ্যাঁ। ওর মধ্যে পাপসমূহের বর্ণনায় যাদুরও উল্লেখ রয়েছে।

আর একটি বর্ণনায় রয়েছে, তার সাথে আমার সাক্ষাৎ সন্ধ্যার সময় হয়েছিল এবং আমি তাঁকে কাবীরা গুনাহ সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নিকট শুনেছি যে, কাবীরা গুনাহ সাতটি।’ আমি জিজ্ঞেস করি, কি কি? তিনি বলেনঃ ‘শিরক ও অপবাদ। আমি বলি, এ দু’টোও কি রক্তের মতই অন্যায়? তিনি বলেনঃ “হাঁ, হাঁ। আর কোন মুমিনকে বিনা কারণে হত্যা করা, যুদ্ধক্ষেত্র হতে পলায়ন করা, যাদু করা, সুদ খাওয়া, ইয়াতিমের মাল ভক্ষণ করা, পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া এবং তোমাদের জীবন ও মৃত্যুর কিবলাহ বায়তুল্লাহ শরীফে ধর্মদ্রোহীতার কাজ করা।

মুসনাদ-ই-আহমাদে রয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আল্লাহর যে বান্দা। আল্লাহর সঙ্গে কাউকে অংশীদার করে না, নামায সু-প্রতিষ্ঠিত করে, যাকাত আদায় করে, রমযানের রোযা রাখে এবং কাবীরা গুনাহ হতে বেঁচে থাকে, সে জান্নাতী।’ একটি লোক জিজ্ঞেস করেন, কাবীরা গুনাহগুলো কি?’ তিনি বলেনঃ ‘আল্লাহর সঙ্গে অংশীদার স্থাপন করা, মুমিন প্রাণকে হত্যা করা এবং যুদ্ধক্ষেত্র হতে পলায়ন করা।

ইবনে মিরদুওয়াই স্বীয় তাফসীরে বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) ইয়ামানবাসীর নিকট একটি পত্র লিখিয়ে পাঠিয়ে দেন। যাতে ফরযসমূহ, সুন্নাতসমূহ এবং দিয়্যাত অর্থাৎ জরিমানার নির্দেশসমূহ লিখিত ছিল এবং এ পত্রখানা তিনি হযরত আমর ইবনে হাযাম (রাঃ)-এর হাতে তাদের নিকট পাঠিয়েছিলেন। এ পত্রে নিম্নলিখিত কথাটিও ছিলঃ “কিয়ামতের দিন বড় বড় পাপসমূহের মধ্যে সবচেয়ে বড় পাপ হবে এই যে, মানুষ আল্লাহর সঙ্গে অংশীদার স্থাপন করে, কোন মুমিন ব্যক্তিকে অন্যায়ভাবে হত্যা করে, আল্লাহর পথে যুদ্ধের জন্যে যুদ্ধক্ষেত্রে গিয়ে যুদ্ধ করতে করতে প্রাণের ভয়ে পলায়ন করে, মা-বাপের অবাধ্য হয়, স্ত্রীলোকেরা যে পাপ করেনি তাদের প্রতি এরূপ পাপের অপবাদ দেয়, যাদু শিক্ষা করে, সুদ খায় এবং ইয়াতিমের মাল ধ্বংস করে।

অন্য বর্ণনায় কাবীরা গুনাহসমূহের মধ্যে মিথ্যা কথা বলা বা মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়ার কথাও রয়েছে। আর একটি হাদীসে রয়েছে যে, কাবীরা গুনাহগুলো বর্ণনা করার সময় রাসূলুল্লাহ (সঃ) হেলান দিয়ে বসেছিলেন। কিন্তু যখন তিনি মিথ্যা সাক্ষ্য ও মিথ্যা কথার উল্লেখ করেন তখন তিনি সোজা হয়ে বসে পড়েন এবং বলেনঃ “সাবধান! তোমরা মিথ্যা সাক্ষ্য ও মিথ্যা কথা হতে দূরে থাকবে। তিনি একথা বার বার বলতে থাকেন। শেষ পর্যন্ত সাহাবীগণ বলেন, যদি তিনি নীরব হতেন।

সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে রয়েছে যে, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে জিজ্ঞেস করি, হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! সবচেয়ে বড় গুনাহ কোন্টি? তিনি বলেনঃ ‘তা এই যে, তুমি অন্য কাউকে আল্লাহর অংশীদার কর, অথচ একমাত্র তিনিই তোমাকে সৃষ্টি করেছেন। আমি জিজ্ঞেস করি, তার পরে কোটি ? তিনি বলেনঃ তার পরে এই যে, তোমার সন্তান তোমার সাথে আহার করবে এ ভয়ে তুমি তাকে হত্যা করে ফেল। আমি জিজ্ঞেস করি, তারপর কোন্টি? তিনি বলেনঃ তারপরে এই যে, তুমি তোমার প্রতিবেশীর স্ত্রীর সাথে ব্যভিচারে লিপ্ত হয়ে পড়।’ অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সঃ) (আরবী) (২৫:৬৮) হতে। (আরবী) (২৫:৭০) পর্যন্ত আয়াতগুলো পাঠ করেন।

মুসনাদ-ই-ইবনে হাতিমে রয়েছে যে, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস (রাঃ) মসজিদ-ই-হারামে হাতীমের মধ্যে বসে ছিলেন। তাঁকে এক ব্যক্তি মদ্য সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করে। তখন তিনি বলেনঃ আমার মত বুড়ো বয়সের মানুষ কি এ স্থানে বসে আল্লাহর রাসূলের (সঃ) উপর মিথ্যা কথা বলতে পারে? অতঃপর তিনি বলেন, ‘মদ্য পান হচ্ছে বড় পাপসমূহের মধ্যে সবচেয়ে বড় পাপ। এ কাজ হচ্ছে সমস্ত দুশ্চরিত্রতার মূল। মদখোর ব্যক্তি নাম পরিত্যাগকারী হয়ে থাকে। সে স্বীয় মা, খালা এবং ফুফুর সাথে ব্যভিচার করতেও দ্বিধাবোধ করে না। এ হাদীসটি গারীব।

তাফসীর-ই-ইবনে মিরদুওয়াই-এর মধ্যে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর ইন্তিকালের পর হযরত আবু বকর (রাঃ), হযরত উমার (রাঃ) এবং অন্যান্য আরও বহু সাহাবা-ই-কিরাম একবার একটি মজলিসে বসেছিলেন। তথায়। কাবীরা গুনাহগুলোর আলোচনা চলছিল যে, সবচেয়ে বড় গুনাহ কোনটি? কারও নিকট সর্বশেষ উত্তর ছিল না। তখন তারা হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমার (রাঃ)-কে পাঠান যে, তিনি যেন হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করে আসেন। তিনি তাঁর নিকট গমন করেন। তিনি উত্তরে বলেন যে, সবচেয়ে বড় পাপ হচ্ছে মদ্যপান। হযরত ইবনে উমার (রাঃ) বলেন, ‘আমি ফিরে এসে উক্ত মজলিসে এ উত্তর শুনিয়ে দেই। কিন্তু মজলিসের লোক। সান্ত্বনা লাভ করলেন না। সুতরাং তারা সবাই উঠে গিয়ে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস (রাঃ)-এর বাড়ী গমন করেন এবং তারা নিজেরাই তাঁকে জিজ্ঞেস করেন।

তখন তিনি বর্ণনা করেনঃ জনগণ নবী (সঃ)-এর সামনে একটি ঘটনা বর্ণনা করে যে, বানী ইসরাঈলের বাদশাহদের মধ্যে একজন বাদশাহ্ একটি লোককে গ্রেফতার করে। অতঃপর লোকটিকে বলে, হয় তুমি জীবনের আশা ত্যাগ কর না হয় এ কাজগুলোর মধ্যে কোন একটি কর, অর্থাৎ মদ্যপান কর বা অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা কর কিংবা শূকরের মাংস ভক্ষণ কর। লোকটি কিছুক্ষণ চিন্তা ভাবনার পর হাল্কা জিনিস মনে করে মদ্যপান করতে সম্মত হয়। কিন্তু মদ্যপান করা মাত্রই সে নেশার অবস্থায় ঐ সমুদয় কাজও করে বসে যা হতে সে পূর্বে বিরত ছিল।

রাসূলুল্লাহ (সঃ) এ ঘটনাটি শুনে আমাদেরকে বলেনঃ “যে ব্যক্তি মদ্যপান করে, আল্লাহ তা’আলা চল্লিশ দিন পর্যন্ত তার নামায কবুল করেন না। আর যে ব্যক্তি মদ্যপানে অভ্যস্ত অবস্থাতেই মারা যায় এবং তার মূত্রস্থলীতে সামান্য পরিমাণও মদ্য থেকে যায়, আল্লাহ তা’আলা তার জন্যে জান্নাত হারাম করে দেন এবং যদি মদ্যপান করার পর চল্লিশ দিনের মধ্যেই মারা যায় তবে তার অজ্ঞতা যুগের মৃত্যু হয়ে থাকে। এ হাদীসটি দুর্বল। অন্য একটি হাদীসে মিথ্যা শপথকেও রাসূলুল্লাহ (সঃ) কাবীরা গুনাহ বলে গণ্য করেছেন। (সহীহ বুখারী ইত্যাদি)

মুসনাদ-ই-ইবনে আবি হাতিমে মিথ্যা শপথের পর নিম্নের উক্তিও রয়েছেঃ “যে ব্যক্তি আল্লাহর শপথ করে কোন কথা বলে এবং তাতে মশার সমানও বাড়িয়ে কিছু বলে, তার অন্তরে একটা কাল দাগ হয়ে যায়, যা কিয়ামত পর্যন্ত বাকী থেকে যায়। মুসনাদ-ই-ইবনে আবি হাতিমে রয়েছে রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ মানুষের তার পিতা-মাতাকে গালি দেয়াও কাবীরা গুনাহ। জনগণ জিজ্ঞেস করে, “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! মানুষ তার পিতা-মাতাকে কিরূপে গালি দেবে?’ তিনি বলেনঃ ‘এভাবে যে, সে অন্যের বাপকে গালি দেয়, অন্য লোকটি তখন তার বাপকে গালি দেয়, সে অন্যের মাকে গালি দেয়, অন্য লোকটি তখন তার মাকে গালি দেয়।

সহীহ বুখারী শরীফে রয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ ‘সবচেয়ে বড় কাবীরা গুনাহ এই যে, মানুষ তার পিতা-মাতাকে অভিশাপ দেয়। জনগণ জিজ্ঞেস করে, “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! এটা কিরূপে হতে পারে?’ তিনি বলেনঃ ‘অন্যের মা-বাপকে বলে নিজের মা-বাপকে বলিয়ে নেয়া। সহীহ হাদীসে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ মুসলমানকে গালি প্রদান মানুষকে ফাসিক বানিয়ে দেয় এবং তাকে হত্যা করা হচ্ছে কুফরী।

মুসনাদ-ই-ইবনে আবি হাতিমে রয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ ‘কাবীরা গুনাহসমূহের মধ্যে সবচেয়ে বড় গুনাহ হচ্ছে কোন মুসলমানের মর্যাদা ক্ষুন্ন করা এবং একটা গালির পরিবর্তে দু’টো গালি দেয়া। জামেউত তিরমিযীতে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি বিনা ওযরে দু’টি নামাযকে একত্রিত করে, সে কাবীরা গুনাহসমূহের দু’টি দরজার একটি দরজার মধ্যে প্রবেশ করে থাকে।’

মুসনাদ-ই-ইবনে আবি হাতিমে হযরত আবু কাতাদাতুল আদাভী হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, হযরত উমার ইবনে খাত্তাব (রাঃ)-এর যে পত্র আমাদের সামনে পাঠ করা হয় তাতে এও ছিল যে, বিনা ওযরে দু’ নামাযকে একত্রিত করা কাবীরা গুনাহ এবং যুদ্ধক্ষেত্র হতে পলায়ন করাও কাবীরা গুনাহ। মোটকথা, যোহর, আসর কিংবা মাগরিব ও ইশা সময়ের পূর্বে বা পরে শরীয়তের অবকাশ ছাড়া একত্রিত করে পড়া কাবীরা গুনাহ। তাহলে যারা মোটেই (নামায) পড়ে না তাদের পাপের তো কোন ঠিক ঠিকানাই নেই। যেমন, সহীহ মুসলিমে রয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ বান্দা ও শিরকের মধ্যেস্থলে রয়েছে নামাযকে ছেড়ে দেয়া।

সুনানের একটি হাদীসে রয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আমাদেরও কাফিরদের মধ্যে পৃথককারী জিনিস হচ্ছে নামাযকে ছেড়ে দেয়া। যে ব্যক্তি নামাযকে ছেড়ে দিল সে কুফরী করলো। অন্য একটি বর্ণনায় তাঁর এ উক্তিটিও নকল করা হয়েছে যে, যে ব্যক্তি আসরের নামায ছেড়ে দিল তার কার্যাবলী বিনষ্ট হয়ে গেল। অন্য হাদীসে রয়েছে যে, যে ব্যক্তির আসরের নামায ছুটে গেল তার যেন মাল ও পরিবার পরিজন ধ্বংস হয়ে গেল।

মুসনাদ-ই-আহমাদে রয়েছে যে, একটি লোক রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে জিজ্ঞেস করে, হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! কাবীরা গুনাহ কি কি?’ তিনি বলেনঃ “আল্লাহ তা’আলার সঙ্গে অংশী স্থাপন করা, তাঁর নিয়ামত ও করুণা হতে নিরাশ হয়ে যাওয়া এবং আল্লাহর মকর হতে (মকর শব্দটি আল্লাহর ব্যাপারে ফন্দির প্রতিশোধ নেয়া বুঝায়) নির্ভয় থাকা এবং এটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় গুনাহ।’

হযরত বাযযার (রঃ) হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন যে, একটি লোক জিজ্ঞেস করেন, হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! কাবীরা গুনাহগুলো কি?’ তিনি বলেনঃ “আল্লাহর সঙ্গে শিরক করা, আল্লাহর নিয়ামত ও করুণা হতে নিরাশ হওয়া এবং আল্লাহর মকর থেকে নির্ভয় থাকা এবং এটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় পাপ।’ কিন্তু এর ইসনাদে সমালোচনা রয়েছে। সবচেয়ে সঠিক কথা এই যে, এ হাদীসটি মাওকুফ।

তাফসীর-ই-ইবনে মিরদুওয়াই এর মধ্যে রয়েছে, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমার (রাঃ) বলেন, সর্বাপেক্ষা বড় পাপ হচ্ছে মহা সম্মানিত আল্লাহ তাআলার প্রতি কু-ধারণা পোষণ করা।’ এ বর্ণনাটি অত্যন্ত দুর্বল। ইতিপূর্বে ঐ হাদীসটিও বর্ণিত হয়েছে যার মধ্যে হিজরতের পর পুনরায় কাফিরদের দেশে বসতি স্থাপন করাকেও কাবীরা গুনাহ বলা হয়েছে। এ হাদীসটি তাফসীর-ই-ইবনে মিরদুওয়াই-এর মধ্যে রয়েছে। সাতটি কাবীরা গুনাহর মধ্যে একটি এটিকে গণনা করা হয়েছে। কিন্তু এর ইসনাদের ব্যাপারে চিন্তার বিষয় রয়েছে এবং একে মারফু বলা সম্পূর্ণ ভুল। সঠিক কথা এটাই যা তাফসীরে ইবনে জারীরের মধ্যে বর্ণিত আছে যে, একদা হযরত আলী (রাঃ) কুফার মসজিদে মিম্বরে দাঁড়িয়ে খুৎবা দিচ্ছিলেন। তাতে তিনি বলেন, হে জনগণ! কবীরা গুনাহ সাতটি।’ একথা শুনে লোকগুলো চীৎকার করে উঠে। তিনি তিনবার ওরই পুনরাবৃত্তি করেন।

অতঃপর তিনি বলেন, তোমরা আমাঁকে এর ব্যাখ্যা জিজ্ঞেস করছো না কেন? জনগণ তখন বলে, “হে আমীরুল মুমিনীন! বলুন, ওগুলো কি?’ তিনি বলেন, আল্লাহর সঙ্গে অংশী স্থাপন করা, যে প্রাণ বধ করা আল্লাহ হারাম করেছেন তা বধ করা, পবিত্র স্ত্রীলোকদের প্রতি অপবাদ দেয়া, পিতৃহীনের মাল ভক্ষণ করা, সুদ খাওয়া, যুদ্ধের দিন পৃষ্ঠ প্রদর্শন করা এবং হিজরতের পর পুনরায় কাফিরদের দেশে এসে বসতি স্থাপন করা।’ হাদীসটির বর্ণনাকারী হযরত সাহল (রঃ) তাঁর পিতা হযরত সাহল ইবনে খাইসুমার (রঃ)-কে জিজ্ঞেস করেন, ‘এটাকে কিভাবে কাবীরা গুনাহর অন্তর্ভুক্ত করলেন?’ তিনি উত্তরে বললেন, হে প্রিয় বৎস! একটি লোক হিজরত করে মুসলমানদের সঙ্গে মিলিত হলো, গনীমতের মালে তার অংশ নির্ধারিত হলো, মুজাহিদদের নামের তালিকায় তার নাম এসে গেছে। অতঃপর সে সমস্ত জিনিস পরিত্যাগ করতঃ বেদুঈন হয়ে গিয়ে কাফিরদের দেশে ফিরে গেল এবং যেমন ছিল তেমনই হলো, এর চেয়ে বড় অন্যায় আর কি হতে পারে?

মুসনাদ-ই-আহমাদে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাঁর বিদায় হজ্বের খুৎবায় বলেনঃ সাবধান! আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরীক করো না, অন্যায় হত্যা হতে বেঁচে থাক, তবে শরীয়তের অনুমতি অন্য জিনিস, ব্যভিচার করো না এবং চুরি করো না।’ ঐ হাদীসটি পূর্বে বর্ণিত হয়েছে যে, অসিয়তের ব্যাপারে কারও ক্ষতি সাধন করাও একটি কাবীরা গুনাহ। তাফসীর-ই-ইবনে জারীরে রয়েছে যে, একদা সাহাবায়ে কেরাম কবীরা গুনাহসমূহের উল্লেখ করেন যে, আল্লাহর সঙ্গে অংশীদার স্থির করা, ইয়াতিমের মাল ভক্ষণ করা, ধর্মযুদ্ধ থেকে পলায়ন করা, পাক পবিত্র রমণীদের প্রতি অপবাদ দেয়া, পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া, মিথ্যা বলা, ধোকা দেয়া, খিয়ানত করা, যাদু করা, সুদ খাওয়া এগুলো সব কাবীরা গুনাহ। তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ আর ঐ গুনাহকে কোথায় রাখছে যে, লোকেরা আল্লাহর ওয়াদা এবং নিজেদের কসমকে অল্প মূল্যে বিক্রি করে ফিরছে। আয়াতের শেষ পর্যন্ত তিনি তেলাওয়াত করেন। এর ইসনাদ স্পষ্ট এবং হাদীসটি হাসান।

তাফসীর-ই-ইবনে জারীরে রয়েছে যে, মিসরে কতগুলো লোক হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমার (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করেনঃ ‘আল্লাহ তা’আলার কিতাবের মধ্যে আমরা কতগুলো জিনিস এমন পাচ্ছি যেগুলোর উপর আমাদের আমল নেই। তাই, আমরা এ সম্বন্ধে আমীরুল মুমিনীন হযরত উমার (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করতে চাই।’ হযরত ইবনে উমার (রাঃ) তাঁদেরকে নিয়ে মদীনায় আগমন করেন। তিনি তাঁর পিতার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। হযরত উমার (রাঃ) তাকে জিজ্ঞেস করেন, কবে এসেছে? তিনি উত্তরে বলেন, এতদিন হলো।’ পুনরায় জিজ্ঞেস করেন, অনুমতিক্রমে এসেছো কি? তারও উত্তর তিনি দেন। অতঃপর তিনি জনগণের কথা উল্লেখ করেন।

হযরত উমার (রাঃ) বলেন, তাদেরকে একত্রিত কর।’ এরপর তিনি তাদের নিকট আগমন করেন এবং তাদের মধ্যে একজনকে জিজ্ঞেস করেন, তোমাকে আল্লাহ ও ইসলামের সত্যতার শপথ! তুমি কি সম্পূর্ণ কুরআন কারীম পাঠ করেছো?’ লোকটি বলেন, হ্যা।’ তিনি বলেন, “তুমি কি ওকে তোমার অন্তরে রক্ষিতও রেখেছো ?’ তিনি বলেন , না।’ তিনি যদি ‘হ্যা’ বলতেন তবে হযরত উমার (রাঃ) তাকে দলীল প্রমাণাদি দ্বারা অপারগ করে দিতেন।

এরপর তিনি বলেন, “তুমি ওকে স্বীয় চক্ষে, স্বীয় জিহবায় এবং স্বীয় চালচলনেও রক্ষিত রেখেছো কি?’ তিনি বলেনঃ না। অতঃপর তিনি এক এক করে সবাইকেই এ প্রশ্নই করেন। তারপর তিনি বলেন, “তোমরা উমার (রাঃ)-কে এ কষ্টের মধ্যে নিক্ষেপ করতে চাচ্ছ যে, তিনি যেন জনগণকে আল্লাহর কিতাব অনুযায়ী সোজা করে দেন। আমার দোষত্রুটির কথা আমার এ পূর্ব হতেই জানতেন। অতঃপর তিনি (আরবী)-এ আয়াতটি শেষ পর্যন্ত পাঠ করেন। অর্থাৎ যদি তোমরা সেই মহাপাপসমূহ হতে বিরত হও যা হতে তোমাদেরকে নিষেধ করা হয়েছে, তাহলেই আমি তোমাদের অপরাধ ক্ষমা করবো। এরপর তিনি বলেন, মদীনাবাসী তোমাদের আগমনের কারণ জানে কি? তাঁরা বলেন, ‘না।’ তিনি বলেন, তারাও যদি এটা জানতো তবে এ সম্বন্ধে আমার তাদেরকেও উপদেশ দিতে হতো। এর ইসনাদও হাসান এবং পঠনও হাসান। যদিও হযরত উমার (রাঃ) হতে হাসানের এ বর্ণনাটির মধ্যে ইনকিতা রয়েছে তথাপি এ ত্রুটি পূরণের পক্ষে এর পূর্ণ প্রসিদ্ধিই যথেষ্ট।

মুসনাদ-ই-ইবনে আবি হাতিমে রয়েছে, হযরত আলী (রাঃ) বলেন, কাবীরা গুনাহ্ হচ্ছে, আল্লাহর সঙ্গে অংশী স্থাপন করা, কাউকে হত্যা করা, পিতৃহীনের মাল ভক্ষণ করা, পবিত্র স্ত্রীলোকদেরকে অপবাদ দেয়া, যুদ্ধক্ষেত্র হতে পলায়ন করা, হিজরতের পর কাফিরদের দেশে অবস্থান করা, যাদু করা, পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া, সুদ খাওয়া, জামাআত হতে পৃথক হওয়া এবং ক্রয়-বিক্রয় ভেঙ্গে দেয়া। পূর্বেই বর্ণিত হয়েছে যে, হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেন, সবচেয়ে বড় পাপ হচ্ছে আল্লাহর সঙ্গে অংশী স্থাপন করা, তাঁর প্রশস্ততা ও করুণা হতে নিরাশ হওয়া এবং তার মকর হতে নির্ভয় থাকা।

তাফসীর-ই-ইবনে জারীরে হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতেই বর্ণিত আছে। যে, সূরা-ই-নিসার প্রথম তির্মটি আয়াতে কাবীরা গুনাহর বর্ণনা রয়েছে। অতঃপর তিনি (আরবী) এ আয়াতটি শেষ পর্যন্ত পাঠ করেন। হযরত বুরাইদা (রাঃ) বলেন, কাবীরা গুনাহ্ হচ্ছে আল্লাহর সঙ্গে অংশী স্থাপন করা, বাপ-মাকে অসন্তুষ্ট করা, পরিতৃপ্তির পর অতিরক্তি পানি প্রয়োজন বোধকারীদেরকে না দেয়া এবং নিজের নরপশুকে কারও মাদী পশুর জন্যে কিছু নেয়া ছাড়া না দেয়া।

সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমের একটি মারফু হাদীসে রয়েছে, নবী (সঃ) বলেছেনঃ ‘প্রয়োজনের অতিরিক্ত পানি আটকিয়ে রাখা যাবে না এবং অতিরিক্ত ঘাস হতেও বাধা দেয়া যাবে না। অন্য একটি বর্ণনায় রয়েছে যে, কিয়ামতের দিন তিন প্রকারের পাপীদের দিকে আল্লাহ তা’আলা করুণার দৃষ্টিতে দেখবেন না, তাদেরকে পবিত্র করবেন না এবং তাদের জন্যে রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।

মুসনাদ-ই-আহমাদে রয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি অতিরিক্ত পানি ও অতিরিক্ত ঘাসকে আটকিয়ে রাখে, কিয়ামতের দিন আলাহ তা’আলা তার প্রতি অনুগ্রহ করবেন না। হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, ‘কাবীরা গুনাহ দু’টি যা নারীদের নিকট বায়আত নেয়ার বর্ণনায় বর্ণিত হয়েছে, অর্থাৎ (আরবী) (৬০:১২) -এ আয়াতটির মধ্যে। হযরত আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) এ আয়াতটিকে আল্লাহ তাআলার বিরাট ইহসানের মধ্যে বর্ণনা করেন এবং এর উপর বড় সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। অর্থাৎ আয়াতটিকে।

একবার হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ)-এর সামনে জনগণ বলেন, কাবীরা গুনাহ হচ্ছে সাতটি।’ তিনি বলেন, কোন কোন সময় সাতটি।’ অন্য বর্ণনায় রয়েছে যে, তিনি বলেন, ‘কমপক্ষে সাতটি নচেৎ সত্তরটি।’ অন্য একটি লোকের কথায় তিনি বলেনঃ “ওটা হচ্ছে সাতশ পর্যন্ত এবং সাতশ হচ্ছে খুবই নিকটে। হ্যা, তবে জেনে রেখো যে, ক্ষমা প্রার্থনার পর কাবীরা আর কাবীরা থাকে না। আর সদা-সর্বদা করতে থাকলে সাগীরাও আর সাগীরা থাকে না।’

অন্য সনদে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন, “যে পাপের উপর জাহান্নামের, আল্লাহর ক্রোধের, অভিসম্পাতের এবং শাস্তির ভীতি প্রদর্শন রয়েছে সেটাই কাবীরা গুনাহ।’ আর একটি বর্ণনায় রয়েছে যে, যা হতে আল্লাহ তা’আলা নিষেধ করেন সেটাই কাবীরা। যে কার্যে আল্লাহর অবাধ্যতা প্রকাশ পায় ওটাই বড় পাপ। এখন তাবেঈগণের উক্তি আলোচনা করা যাচ্ছেঃ

হযরত উবাইদাহ (রঃ) বলেন, ‘কাবীরা গুনাহ্ হচ্ছে-আল্লাহ তা’আলার সঙ্গে শিরক করা, অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করা, যুদ্ধক্ষেত্রে পৃষ্ঠপ্রদর্শন করা, ইয়াতীমের মাল ভক্ষণ করা, সুদ খাওয়া, সচ্চরিত্রা মেয়েদের (ব্যভিচারের) অপবাদ দেয়া ও হিজরতের পর স্বদেশ প্রিয়তা।’ হাদীসের বর্ণনাকারী হযরত ইবনে আউন (রঃ) স্বীয় শিক্ষক মুহাম্মাদ (রঃ)-কে জিজ্ঞেস করেনঃ ‘যাদু কাবীরা গুনাহ নয় কি?’ তিনি বলেন, এটা অপবাদের মধ্যে এসে গেল। এ শব্দটির মধ্যে বহু জঘন্যতা জড়িত রয়েছে। হযরত উবায়েদ ইবনে উমায়ের (রঃ) কাবীরা গুনাহের উপর কুরআন কারীমের আয়াত পড়েও শুনিয়ে দেন। শিরকের উপর আয়াত পাঠ করেন (আরবী) অর্থাৎ “যে ব্যক্তি আল্লাহর সঙ্গে শিরক করলো সে যেন আকাশ হতে পড়ে গেল অতঃপর পাখী তাকে ছোঁ মেরে নিয়ে যাবে অথবা বাতাস তাকে দূরে কোন অজানা জঘন্য স্থানে নিক্ষেপ করবে।’ (২২:৩১) ইয়াতীমের মাল নষ্ট করার উপর আয়াত পেশ করেন (আরবী) অর্থাৎ “নিশ্চয়ই যারা অন্যায়ভাবে ইয়াতীমের মাল ভক্ষণ করে, নিশ্চয়ই তারা তাদের পেটের মধ্যে আগুন ভক্ষণ করে।’ (৪:১০) সুদ খাওয়ার উপর পাঠ করেন (আরবী) অর্থাৎ যারা সুদ ভক্ষণ করে তারা কিয়ামতের দিন জ্ঞানশূন্য ও পাগলের মত হয়ে উঠবে।’ (২:২৭৫) অপবাদের উপর পড়েন- (আরবী) অর্থাৎ যারা পবিত্রা, উদাসীনা, মুমিনা নারীদেরকে অপবাদ দেয়। (২৪:২৩) যুদ্ধক্ষেত্র হতে পলায়নকারীদের উপর পাঠ করেন (আরবী) অর্থাৎ “হে মুমিনগণ! যখন তোমরা কাফিরদের মোকাবিলায় দণ্ডায়মান হও, তখন তোমরা পৃষ্ঠ প্রদর্শন করো না।’ (৮:১৫) হিজরতের পর কাফিরদের দেশে অবস্থানের উপর আয়াত পাঠ করেন (আরবী) অর্থাৎ যারা সুপথ প্রাপ্তির পর ধর্মত্যাগী হয়।’ (৪৭:২৫) কোন মুমিনকে অন্যায়ভাবে হত্যা করার উপর আয়াত পাঠ করেন (আরবী) অর্থাৎ যে কোন মুমিনকে ইচ্ছাপূর্বক হত্যা করে তার শাস্তি হচ্ছে জাহান্নাম, যার মধ্যে সে চির অবস্থান করবে।’ (৪:৯৩)।

হযরত আতা’ (রঃ) হতেও কাবীরা গুনাহ্র বর্ণনা বিদ্যমান রয়েছে এবং তাতে মিথ্যা সাক্ষ্যের কথাও রয়েছে। হযরত মুগীরা (রঃ) বলেন, ‘হযরত আবু বকর (রাঃ) এবং হযরত উমার (রাঃ)-কে মন্দ বলাও কাবীরা গুনাহই।’ আমি বলি যে, আলেমদের একটি দল ঐ লোকদেরকে কাফির বলেছেন যারা সাহাবা-ই-কিরাম (রাঃ)-কে মন্দ বলে থাকে। হযরত ইমাম মালিক ইবনে আনাস (রঃ) হতে এটা বর্ণিত আছে।

হযরত ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে সীরীন (রঃ) বলেন, আমি এটা কল্পনা করতে পারি না যে, কোন ব্যক্তির অন্তরে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর প্রতি ভালবাসা রয়েছে অথচ হযরত আবু বকর (রাঃ)-এর প্রতি শত্রুতা পোষণ করে।’ (জামেউত্ তিরমিযী)

হযরত যায়েদ ইবনে আসলাম (রঃ) এ আয়াতের তাফসীরে বলেন, কাবীরা গুনাহ্ হচ্ছে-আল্লাহ তা’আলার সঙ্গে অংশী স্থাপন করা, তার আয়াতসমূহ ও রাসূলদের সাথে কুফরী করা, যাদু করা, সন্তানদেরকে হত্যা করা, আল্লাহ তাআলার সন্তান ও স্ত্রী সাব্যস্ত করা এবং এ ধরনের কাজ ও কথা যার পরে কোন পুণ্যের কাজ গৃহীত হয় না। হ্যাঁ, তবে যেসব পাপকার্যের পর ধর্ম অবশিষ্ট থাকতে পারে এবং আমল গৃহীত হতে পারে এরূপ পাপসমূহ আল্লাহ তাআলা পুণ্যের বিনিময়ে ক্ষমা করে থাকেন।

হযরত কাতাদাহ (রঃ) বলেন, আল্লাহ তাআলা ঐ লোকদেরকে ক্ষমা করার অঙ্গীকার করেছেন যারা কাবীরা গুনাহ হতে বেঁচে থাকে। আর আমাদের নিকট এটাও বর্ণনা করা হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “তোমরা কাবীরা গুনাহ হতে বেঁচে থাক, সোজা ও ঠিক এবং শুভ সংবাদ গ্রহণ কর।

মুসনাদ-ই-আবদুর রাযযাকে সহীহ সনদে রাসূলুল্লাহ (সঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেছেনঃ “আমার উম্মতের কাবীরা গুনাহকারীদের জন্যেও আমার শাফাআত রয়েছে।’ ইমাম তিরমিযীও (রঃ) একে হাসান বলেছেন। যদিও এর বর্ণনা ও সনদ দুর্বলতা শূন্য নয়, তথাপি এর যে সাক্ষীগুলো রয়েছে তাতেও সঠিক বর্ণনা রয়েছে। যেমন একটি হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ ‘তোমরা কি মনে কর যে, আমার শাফা’আত শুধু মুত্তাকী ও মুমিনদের জন্যই? , না। বরং ঐ গুনাহগার পাপীদের জন্যেই।

এখন আলেমদের উক্তি বর্ণিত হচ্ছেঃ কাবীরা গুনাহ কাকে বলে সে সম্বন্ধে কেউ কেউ বলেন যে, যার উপর শরঈ হদ্দ (শরীয়তের শাস্তি) রয়েছে সেটাই কাবীরা গুনাহ্। কেউ বলেন যে, যার উপর কুরআন কারীম ও হাদীস শরীফে কোন শাস্তির উল্লেখ রয়েছে, সেটাই কাবীরা গুনাহ্। কারও উক্তি এই যে, যাতে দ্বীনদারী কম হয় এবং সততা হ্রাস পায়, সেটাই হচ্ছে কাবীরা গুনাহ্। কাযী আবূ সাঈদ হারভী (রঃ) বলেন যে, যার হারাম হওয়া শব্দের দ্বারা প্রমাণিত হয় এবং যার অবাধ্যতার উপর কোন হদ্দ থাকে, সেটাই কাবীরা গুনাহ্। যেমন হত্যা ইত্যাদি। অনুরূপভাবে যে কোন ফরয কাজ ছেড়ে দেয়া, মিথ্যা সাক্ষ্য, মিথ্যা বর্ণনা এবং মিথ্যা শপথও কাবীরা গুনাহ্।

কাযী রূইয়ানী (রঃ) বলেন যে, কাবীরা গুনাহ্ হচ্ছে সাতটিঃ বিনা কারণে কাউকে হত্যা করা, ব্যভিচার করা, পুরুষে পুরুষে নির্লজ্জতার কাজে (লোওয়াতাত) লিপ্ত হওয়া, মদ্যপান করা, চুরি করা, জবরদখল করা এবং অপবাদ দেয়া (সতী নারীকে)। অপর বর্ণনায় অষ্টমও একটি আছে, তা হচ্ছে মিথ্যা সাক্ষ্য প্রদান। আর এর সাথে নিম্নেরগুলোকে জড়িয়ে দেয়া হয়েছে-সুদ খাওয়া, বিনা ওযরে রমযানের রোযা পরিত্যাগ করা, মিথ্যা শপথ করা, আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা, মা-বাপের অবাধ্য হওয়া, জিহাদ হতে পলায়ন করা, ইয়াতিমের মাল ভক্ষণ করা, বিনা ওযরে সময়ের পূর্বে নামায আদায় করা ওজনে কম বেশী করা, বিনা কারণে মুসলমাকে হত্যা করা, জেনে শুনে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর উপর মিথ্যা আরোপ করা, তাঁর সাহাবীগণকে গালি দেয়া, বিনা কারণে সাক্ষ্য গোপন করা, ঘুষ নেয়া, পুরুষ ও স্ত্রীদের মধ্যে তিক্ততা সৃষ্টি করা, বাদশাহের নিকট পরোক্ষ নিন্দে করা, যাকাত দেয়া বন্ধ করা, ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও ভাল কার্যের আদেশ ও মন্দ কাজ হতে নিষেধ না করা, কুরআন কারীম শিক্ষা করে ভুলে যাওয়া, প্রাণীকে আগুন দ্বারা পুড়িয়ে ফেলা, বিনা ওযরে স্ত্রীর তার স্বামীর নিকটে না যাওয়া, আল্লাহর করুণা হতে নিরাশ হওয়া, তাঁর মকর হতে নির্ভয় হওয়া, আলেম ও কারীদের ক্ষতিসাধন করা, যিহার করা (যাদের সাথে বিবাহ নিষিদ্ধ এরূপ কোন নারীর কোন অঙ্গের সঙ্গে স্ত্রীর তুলনা করাকে যিহার বলে। যেমন স্বামী তার স্ত্রীকে বলে অর্থাৎ (আরবী) তুমি আমার কাছে আমার মায়ের পিঠের মত), শূকরের গোশত ভক্ষণ করা এবং মৃত জিনিস খাওয়া। তবে খুবই প্রয়োজন বোধে মৃত জন্তুর গোশত খেলে সেটা অন্য কথা।

ইমাম রাফেঈ (রঃ) বলেন যে, এগুলোর কয়েকটির সিদ্ধান্তের ব্যাপারে মৌনতা অবলম্বনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। বড় বড় গুনাহসমূহের ব্যাপারে মনীষীগণ বহু গ্রন্থও প্রণয়ন করেছেন। আমাদের শায়েখ হাকিম আবু আবদুল্লাহ যাহরী (রঃ) একটি পুস্তক লিখেছেন, যার মধ্যে তিনি সত্তরটি কাবীরা গুনাহর সংখ্যা দিয়েছেন। এও বলা হয়েছে যে, কাবীরা গুনাহ্ হচ্ছে ঐগুলো যেগুলোর উপর রাসূলুল্লাহ (সঃ) জাহান্নামের ভীতি প্রদর্শন করেছেন। এ প্রকারের গুনাহই যদি গণনা করা যায় তবে বহু গুনাহই বেরিয়ে যাবে। আর যদি কাবীরা গুনাহ্ ঐ (ধরনের) কাজের প্রত্যেকটিকে বলা হয় যা হতে রাসূলুল্লাহ (সঃ) দূরে থাকতে বলেছেন তবে তো কাবীরা গুনাহ্ অসংখ্য হয়ে যাবে। এ বিষয়ে আল্লাহ তাআলাই সবচেয়ে ভাল জ্ঞান রাখেন।

তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-

অর্থাৎ আমি সংকীর্ণমনা নই এবং সংকীর্ণ দৃষ্টির অধিকারীও নই। ছোটখাটো ভুল-ভ্রান্তি ধরে আমি বান্দাকে শাস্তি দেই না। তোমাদের আমলনামায় যদি বড় বড় অপরাধ না থাকে তাহলে ছোটখাটো অপরাধগুলোকে উপেক্ষা করা হবে এবং তোমাদের বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগ আনাই হবে না। তবে যদি তোমরা বড় বড় অপরাধ করে থাকো, তাহলে তোমাদের বিরুদ্ধে মামলা চালানো হবে এবং তাতে ছোটখাটো অপরাধগুলোও ধর্তব্যের গণ্য হবে, সেজন্য পাকড়াও করা হবে।

এখানে বড় গোনাহ ও ছোট গোনাহর মধ্যে নীতিগত পার্থক্য বুঝে নেয়া উচিত। কুরআন ও সুন্নাতের মধ্যে আমি যতটুকু চিন্তা-ভাবনা করতে পেরেছি তাতে আমি এটা বুঝতে সক্ষম হয়েছি (তবে যথার্থ সত্য একমাত্র আল্লাহ জানেন) যে, তিনটি কারণে কোন কাজ বড় গোনাহে পরিণত হয়ঃ

একঃ কারো অধিকার হরণ করা। সে অধিকার আল্লাহর, বাপ-মার, অন্য মানুষের বা হরণকারীর নিজেরও হতে পারে। তারপর যার অধিকার যত বেশী হবে তার অধিকার হরণও ঠিক তত বেশী বড় গোনাহ হবে। এ কারণেই গোনাহকে ‘জুলুম’ও বলা হয়। আর এ জন্য কুরআনে শিরককে জুলুম বলা হয়েছে।

দুইঃ আল্লাহকে ভয় না করা এবং আল্লাহর মোকাবিলায় আত্মম্ভরিতা করা, এর ফলে মানুষ আল্লাহর আদেশ ও নিষেধের পরোয়া করে না। তাঁর নাফরমানি করার উদ্দেশ্যে ইচ্ছা করেই এমন কাজ করে যা করতে তিনি নিষেধ করেছেন এবং জেনে বুঝে এমন কাজ থেকে বিরত থাকে যা করার জন্য তিনি হুকুম দিয়েছেন। এই নাফরমানি যে পরিমাণ নির্লজ্জতা, অহমিকা, দুঃসাহস ও আল্লাহভীতির মনোভাবে সমৃদ্ধ হবে গোনাহটিও ঠিক সেই পর্যায়ের কঠিন ও মারাত্মক হবে। এই অর্থের প্রেক্ষিতেই গোনাহের জন্য ‘ফিস্‌ক’ (ফাসেকী) ও ‘মাসিয়াত’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। তিনঃ যে সমস্ত সম্পর্কের সুস্থতা ও বলিষ্ঠতার ওপর মানব জীবনের শান্তি ও নিরাপত্তা নির্ভর করে সেগুলো বিকৃত ও ছিন্ন করা। এ সম্পর্ক বান্দা ও আল্লাহর মধ্যে এবং বান্দা ও বান্দার মধ্যে হতে পারে। আবার যে সম্পর্ক যত বেশী গুরুত্বপূর্ণ, যা ছিন্ন করলে শাস্তি ও নিরাপত্তার যত বেশী ক্ষতি হয় এবং যার ব্যাপারে যত বেশী নিরাপত্তার আশা করা যেতে পারে, তাকে ছিন্ন করা, কেটে ফেলা ও নষ্ট করার গোনাহ তত বেশী বড় হয়। যেমন যিনা ও তার বিভিন্ন পর্যায় সম্পর্কে চিন্তা করুন। এ কাজটি আসলে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ব্যবস্থায় বিপর্যয় ডেকে আনে। তাই এটি মূলত একটি বড় গোনাহ। কিন্তু এর বিভিন্ন অবস্থা গোনাহের ব্যাপারে একটি অন্যটির চাইতে বেশী মারাত্মক। বিবাহিত ব্যক্তির যিনা করা অবিবাহিত ব্যক্তির যিনা করার তুলনায় অনেক কঠিন গোনাহ। বিবাহিত মহিলার সাথে যিনা করা অবিবাহিতা মেয়ের সাথে যিনা করার তুলনায় অনেক বেশী দুষনীয়। প্রতিবেশীর স্ত্রীর সাথে যিনা করা অপ্রতিবেশির স্ত্রীর সাথে যিনা করার তুলনায় বেশী খারাপ। মাহরাম মহিলা যেমন, মা, মেয়ে, বোনের সাথে যিনা করা অন্য অনাত্মীয় মহিলার সাথে যিনা করার তুলনায় অনেক বেশী পাপ। অন্য কোন জায়গায় যিনা করার তুলনায় মসজিদে যিনা করা কঠিন গোনাহ। ওপরে বর্ণিত কারণের ভিত্তিতে এই দৃষ্টান্তগুলোতে একই কাজের বিভিন্ন অবস্থার মধ্যে গোনাহ হবার দিক দিয়ে পর্যায়ের পার্থক্য সূচিত হয়েছে। যেখানে নিরাপত্তার আশা যত বেশী, যেখানে মানবিক সম্পর্ক যত বেশী সম্মানের অধিকারী এবং যেখানে এই সম্পর্ক ছিন্ন করা যত বেশী বিপর্যয়ের কারণ বলে বিবেচিত হয়, সেখানে যিনা করা তত বেশী বড় গোনাহ। এই অর্থের প্রেক্ষিতে গোনাহের জন্য ‘ফুজুর’ এর পরিভাষা করা হয়।

তাফসীরে আবুবকর ‌যাকারিয়া‌ বলেছেন:-

[১] আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেনঃ এমন প্রত্যেক গোনাহ যার পরিণতিতে কুরআন ও হাদীসে জাহান্নামের ভয় দেখানো হয়েছে অথবা আল্লাহর গযবের কথা এসেছে, অথবা লা’নতের কথা অথবা আযাবের কথা এসেছে, তাই কবীরা গোনাহ্‌। কবীরা গোনাহ্‌র সংখ্যা অনেক। কেউ কেউ তা সাতশ’ পর্যন্ত বর্ণনা করেছেন। [তাবারী, ইবন আবী হাতেম]

[২] উল্লেখিত আয়াত দ্বারা প্রতীয়মান হল যে, পাপ বা গোনাহ দু’রকম। কিছু ‘কবীরা’ অর্থাৎ কঠিন ও বড় রকমের পাপ, আর কিছু সগীরা অর্থাৎ হাল্‌কা ও ছোট পাপ। এ কথাও প্রতীয়মান হচ্ছে যে, যদি কেউ সাহস করে কবীরা গোনাহ থেকে বেঁচে থাকতে পারে, তাহলে আল্লাহ্ তা’আলা ওয়াদা করেছেন যে, তিনি তার সগীরা গোনাহগুলো নিজেই ক্ষমা করে দেবেন। যাবতীয় ফরয-ওয়াজিবগুলো সম্পাদন করাও কবীরা গোনাহ্‌ থেকে বাঁচার অন্তর্ভুক্ত। কারণ, ফরয-ওয়াজিবসমূহ ত্যাগ করাও কবীরা গোনাহ্‌। বস্তুতঃ যে লোক ফরয-ওয়াজিবসমূহ পালনের ব্যাপারে যথাযথ অনুবর্তিতা অবলম্বন করে এবং যাবতীয় কবীরা গোনাহ থেকে বেঁচে থাকে, আল্লাহ স্বয়ং তার সগীরা গোনাহসমূহের কাফ্‌ফারা করে দেবেন। এখানে গোনাহের কাফ্‌ফার হওয়ার অর্থ এই যে, কর্তার সৎকর্মসমূহকে সগীরা গোনাহের ক্ষতিপূরণ হিসেবে দেখিয়ে তার হিসাব সমান সমান করে দেয়া হবে। জাহান্নামের পরিবর্তে সে জান্নাত প্রাপ্ত হবে। বিশুদ্ধ হাদীসে বর্ণিত রয়েছে যে, ‘কোন লোক যখন সালাত আদায়ের জন্য অযু করে, তখন প্রতিটি অঙ্গ ধৌত হওয়ার সাথে সাথে তার গোনাহর কাফফারা হয়ে যায়। মুখমণ্ডল ধুয়ে নিলে চোখ, কান ও নাক প্রভৃতি অঙ্গের পাপসমূহের কাফ্‌ফারা হয়ে যায়। কুলি করার সঙ্গে সঙ্গে জিহবার পাপের কাফফারা হয়ে যায়; আর পা ধোয়ার সাথে সাথে ধুয়ে যায় পায়ের পাপসমূহ। তারপর যখন সে মসজিদের দিকে রওয়ানা হয়, তখন প্রতিটি পদক্ষেপে পাপের কাফ্‌ফারা হতে থাকে।’ [নাসায়ীঃ ১/১০৩, মুসনাদে আহমাদঃ ৪/৩৪৯]

আলোচ্য আয়াতের দ্বারা এ কথাও বোঝা গেল যে, অযু, সালাত প্রভৃতি সৎকর্মের মাধ্যমে গোনাহর কাফ্‌ফারা হওয়ার ব্যাপারে হাদীসে যা উল্লেখ করা হয়েছে, তার অর্থ হল সগীরা গোনাহ। কবীরা গোনাহ একমাত্র তাওবা ছাড়া মাফ হয় না। বস্তুতঃ সগীরা গোনাহ মাফের শর্ত হল, সাহস ও চেষ্টার মাধ্যমে কবীরা গোনাহ থেকে বেঁচে থাকা। অন্য হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে কেউ আল্লাহর ইবাদত করবে এবং তার সাথে কাউকে শরীক করবে না, সালাত কায়েম করবে, যাকাত প্রদান করবে এবং কবীরা গোনাহ থেকে বেঁচে থাকবে, তার জন্য রয়েছে জান্নাত। সাহাবীগণ কবীরা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করা, মুসলিম কোন আত্মাকে হত্যা করা এবং যুদ্ধের দিনে ময়দান থেকে পলায়ন করা।’ [মুসনাদে আহমাদ ৫/৪১৩]

তাফসীরে আহসানুল বায়ান বলেছেন:-

[১] কাবীরা তথা মহাপাপের সংজ্ঞায় মতভেদ রয়েছে। কেউ বলেছেন, মহাপাপ হল এমন পাপ, যার জন্য দন্ড বা শাস্তি নির্দিষ্ট আছে। কেউ বলেছেন, তা হল এমন পাপ, যার উপর কুরআন ও হাদীসে কঠোর ধমক অথবা লানত এসেছে। আবার কেউ বলেছেন, যে সমস্ত কাজ থেকে আল্লাহ ও তাঁর রসূল বাধা দান করেছেন সে সমস্ত কাজ করলে কাবীরা গুনাহ হবে। বস্তুতঃ উল্লিখিত যে কথাই কোন পাপে পাওয়া যাবে, তা কাবীরা গুনাহ বিবেচিত হবে। হাদীসসমূহে বিভিন্ন কাবীরা গুনাহের কথা উল্লেখ হয়েছে। কোন কোন আলেম তো কাবীরা গুনাহগুলো একটি কিতাবে একত্রিত করে দিয়েছেন। যেমন, ইমাম যাহাবীর ‘আল-কাবায়ের’, ইমাম হায়তামীর ‘আয্যাওয়াজের আ’ন ইকতিরাফিল কাবায়ের’ ইত্যাদি। এখানে একটি নীতিকথা বলা হল যে, যে মুসলিম কাবীরা গুনাহ যেমন, শিরক, পিতা-মাতার অবাধ্যতা এবং মিথ্যা কথা ইত্যাদি থেকে বিরত থাকবে, আমি তার স্বাগীরা গুনাহ মাফ করে দিব। সূরা নাজম ৫৩:৩১ নং আয়াতেও এই বিষয়টি আলোচিত হয়েছে। তবে সেখানে স্বাগীরা গুনাহ মাফের জন্য কাবীরা গুনাহের সাথে সাথে নির্লজ্জকর কাজ থেকেও বিরত থাকা জরুরী বলা হয়েছে। এ ছাড়াও অব্যাহতভাবে স্বাগীরা গুনাহ করতে থাকলে, তা কাবীরা গুনাহে পরিণত হয়ে যায়। অনুরূপ কাবীরা গুনাহ থেকে বিরত থাকার সাথে সাথে ইসলামের বিধি-বিধান ও তার ফরয কার্যাদি পালন করা এবং সৎ কর্মসমূহের প্রতি যত্ন নেওয়াও অতীব জরুরী। সাহাবায়ে কেরামগণ শরীয়তের এই লক্ষ্য বুঝে নিয়েছিলেন। তাই তাঁরা কেবল ক্ষমার অঙ্গীকারের উপরেই ভরসা করে বসে ছিলেন না, বরং আল্লাহর ক্ষমা ও তাঁর রহমত সুনিশ্চিতভাবে পাওয়ার জন্য উল্লিখিত সমূহ বিষয়ের প্রতি যত্ন নিয়েছিলেন। আর আমাদের ঝুলি তো আমল শূন্য, কিন্তু অন্তর আমাদের আশা-ভরসায় পরিপূর্ণ।

তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ বলেছেন:-

যারা কাবীরা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকবে তাদের ফযীলত বর্ণনা করা হচ্ছে যে, আল্লাহ তা‘আলা তাদের অন্যান্য সকল গুনাহ ও মন্দ কাজ মোচন করে দেবেন এবং সম্মানজনক স্থানে প্রবেশ করাবেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: পাঁচ ওয়াক্ত সালাত, এক জুমুআ থেকে আর এক জুমুআ ও এক রমাযান থেকে আর এক রমাযান এর মধ্যবর্তী গুনাহসমূহের কাফফারাস্বরূপ, তবে যদি কবীরা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকে। (সহীহ মুসলিম হা: ২৩৩)

কবীরা তথা মহাপাপসমূহের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে মুফাসসিরগণ অনেক মতামত প্রদান করেছেন। সকল মতামতের সারাংশ নিয়ে এসেছেন ইমাম তাহাবী তাঁর আকিদা তাহাবীয়াতে। সেখানেও প্রায় ১-১৪টি সংজ্ঞা উল্লেখ করেছেন। সবচেয়ে উত্তম সংজ্ঞা হল;

(كُلُّ ذَنْبٍ مَا تَوَعَّدَ اللَّهُ عَلَيْهَ بِنَارٍ أَوْ عَذَابٍ أَوْ غَضَبٍ أَوْ لَعْنَةٍ)

প্রত্যেক ঐ সব অপরাধ যেগুলো করার কারণে আল্লাহ তা‘আলা জাহান্নাম, শাস্তি, তাঁর ক্রোধ অথবা তাঁর লা’নতের ধমক দিয়েছেন। (আকীদা তাহাবীয়া)

কাবীরা গুনাহর সংখ্যা কত এ নিয়েও অনেক মতামত বিদ্যমান।

ইমাম যাহাবী (রহঃ) প্রণীত “কবীরা গুনাহ” কিতাবে সত্তরটির মত কবীরা গুনাহর বর্ণনা করেছেন। এ সম্পর্কে আরো বিস্তারিত আলোচনা রয়েছে তাফসীর ইবনে কাসীরে।

আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. কবীরা গুনাহ থেকে দূরে থাকা ওয়াজিব এবং নেকীর কাজ।
২. কবীরা গুনাহ ক্ষমার জন্য তাওবাহ করা শর্ত।
৩. কবীরা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকলে আল্লাহ তা‘আলা সাগীরাহ গুনাহ এমনিতেই মাফ করে দেবেন।

Leave a Reply