أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book# 114/١٢٠)-৩২২
www.motaher21.net
وَاعْبُدُوا اللَّه
তোমরা আল্লাহর ‘ইবাদাত কর,
Serve Allah,
সুরা: আন-নিসা
আয়াত নং :-৩৬
وَ اعْبُدُوا اللّٰهَ وَ لَا تُشْرِكُوْا بِهٖ شَیْــٴًـا وَّ بِالْوَالِدَیْنِ اِحْسَانًا وَّ بِذِی الْقُرْبٰى وَ الْیَتٰمٰى وَ الْمَسٰكِیْنِ وَ الْجَارِ ذِی الْقُرْبٰى وَ الْجَارِ الْجُنُبِ وَ الصَّاحِبِ بِالْجَنْۢبِ وَ ابْنِ السَّبِیْلِۙ وَ مَا مَلَكَتْ اَیْمَانُكُمْؕ اِنَّ اللّٰهَ لَا یُحِبُّ مَنْ كَانَ مُخْتَالًا فَخُوْرَاۙ
আর তোমরা সবাই আল্লাহর বন্দেগী করো। তাঁর সাথে কাউকে শরীক করো না। বাপ-মার সাথে ভালো ব্যবহার করো। নিকট আত্মীয় ও এতিম-মিসকিনদের সাথে সদ্ব্যবহার করো। আত্মীয় প্রতিবেশী, অনাত্মীয় প্রতিবেশী, পার্শ্বসাথী, মুসাফির এবং তোমাদের মালিকানাধীন বাদী ও গোলামদের প্রতি সদয় ব্যবহার করো। নিশ্চিতভাবে জেনে রাখো, আল্লাহ এমন কোন ব্যক্তিকে পছন্দ করেন না যে আত্মঅহংকারে ধরাকে সরা জ্ঞান করে এবং নিজের বড়াই করে।
৩৬ নং আয়াতের তাফসীর:-
তাফসীরে ইবনে কাসীর বলেছেন:-
আল্লাহ তা’আলা স্বীয় ইবাদতের নির্দেশ দিচ্ছেন এবং স্বীয় একত্বে বিশ্বাস স্থাপন করতে বলছেন এবং তার সাথে অন্য কাউকে অংশীদার করতে নিষেধ করছেন। কেননা, সৃষ্টিকর্তা, আহার্যদাতা, নিআমত প্রদানকারী এবং সমস্ত সৃষ্টজীবের উপর সদা-সর্বদা ও সর্বাবস্থায় দানের বৃষ্টি বর্ষণকারী একমাত্র তিনিই। সুতরাং একমাত্র তিনিই হচ্ছেন ইবাদতের যোগ্য।
হযরত মুআয (রাঃ)-কে রাসূলুল্লাহ (সঃ) জিজ্ঞেস করেনঃ “বান্দাদের উপর আল্লাহর হক কী তা জান কি?” তিনি উত্তরে বলেন, “আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই (সঃ) খুব ভাল জানেন।” তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “তা হচ্ছে এই যে, বান্দা একমাত্র তাঁরই ইবাদত করবে এবং তার সাথে অন্য কাউকে অংশীদার করবে না।” অতঃপর তিনি বলেনঃ “বান্দা যখন এটা করবে তখন আল্লাহর জিম্মায় তাদের হক কী রয়েছে তা জান কি? তা এই যে, তিনি তাদেরকে শাস্তি দেবেন না।”
আল্লাহ তা’আলা বলেন-তোমরা পিতা-মাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করতে থাক। কেননা, তারাই তোমাদেরকে অস্তিত্বহীনতা হতে অস্তিত্বে আনয়ন করার কারণ। কুরআন কারীমের অনেক আয়াতে আল্লাহ তা’আলা স্বীয় ইবাদতের সঙ্গে সঙ্গেই পিতা-মাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করার নির্দেশ দিয়েছেন। যেমন এক জায়গায় রয়েছে (আরবী) অর্থাৎ “তোমরা আমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর এবং তোমার পিতা-মাতার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।” (৩১:১৪) আর এক জায়গায় রয়েছে (আরবী) অর্থাৎ “তোমার প্রভু এ নির্দেশ দিয়েছেন যে, তোমার একমাত্র তাঁরই ইবাদত করবে এবং পিতা-মাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করবে।” (১৭:২৩) এখানেও এ নির্দেশ দেয়ার পর হুকুম দিচ্ছেন- “তোমরা তোমাদের আত্মীয়স্বজনদের সাথেও ভাল ব্যবহার কর।’ যেমন হাদীস শরীফে এসেছেঃ “মিসকীনদের উপর সাদকা শুধ সাদকাই হয় এবং আত্মীয়দের উপর সাদকা। সাদকাও হয় এবং সাথে সাথে আত্মীয়তার সংযোগ স্থাপনও হয়।”
অতঃপর নির্দেশ হচ্ছে-‘তোমরা পিতৃহীনদের সাথেও উত্তম ব্যবহার কর। কেননা, তাদের দেখাশুনাকারী, তাদের মস্তকোপরি স্নেহের হস্তচালনাকারী, তাদেরকে সোহাগকারী এবং স্নেহ ও আদরের সাথে তাদেরকে পানাহারকারী দুনিয়া হতে বিদায় গ্রহণ করেছে।’
এরপর মিসকীনদের সাথে ভাল ব্যবহার করার নির্দেশ দিচ্ছেন। কেননা, তারা অভাবগ্রস্ত, রিক্ত হস্ত এবং পরমুখাপেক্ষী। তাই আল্লাহ পাক বলেন-“তোমরা এ মিসকীনদের অভাব দূর কর এবং তাদের কাজকর্ম করে দাও।’ ফকীর ও মিসকীনের পূর্ণ বর্ণনা সূরা-ই-বারাআতে ইনশাআল্লাহ আসবে।
এবারে আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ “তোমরা প্রতিবেশীর প্রতি লক্ষ্য রাখ। তাদের সাথে ভাল ব্যবহার কর। তারা সম্পর্কীয় প্রতিবেশীই হোক আর সম্পর্ক বিহীনই হোক, তারা মুসলমানই হোক বা ইয়াহুদী ও খ্রীষ্টানই হোক।’ এও বলা হয়েছে যে, (আরবী)-এর ভাবার্থ হচ্ছে স্ত্রী এবং (আরবী)-এর ভাবার্থ হচ্ছে সফরের বন্ধু। প্রতিবেশীদের ব্যাপারে বহু হাদীস এসেছে। নিম্নে কিছু বর্ণিত হচ্ছে- (১) মুসনাদ-ই-আহমাদে রয়েছে, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “হযরত জিবরাঈল (আঃ) আমাকে প্রতিবেশীদের সম্বন্ধে এত বেশী উপদেশ দেন যে, আমার ধারণা হয় তিনি প্রতিবেশীদেরকে উত্তরাধিকারী বানিয়ে দেবেন।” (২) মুসনাদ-ইআহমাদেই রয়েছে, হযরত আমর ইবনে আস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, নবী (সঃ) বলেনঃ “সঙ্গীদের মধ্যে আল্লাহ তা’আলার নিকট উত্তম সঙ্গী ঐ ব্যক্তি যে তার সঙ্গীর সাথে উত্তম ব্যবহার করে থাকে এবং প্রতিবেশীদের মধ্যে আল্লাহ তাআলার নিকট উত্তম প্রতিবেশী ঐ ব্যক্তি যে প্রতিবেশীদের সাথে ভাল ব্যবহার করে।” (৩) মুসনাদ-ই-আহমাদে রয়েছে; হযরত উমর (রাঃ) বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “মানুষের উচিত নয় যে, সে প্রতিবেশীকে পরিতৃপ্ত না করে নিজে তৃপ্তি সহকারে আহার করে। (৪) মুসনাদ-ই-আহমাদে রয়েছে, হযরত মিকদাদ ইবনে আসওয়াদ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) একদা স্বীয় সাহাবীবর্গকে জিজ্ঞেস করেনঃ “ব্যভিচার সম্বন্ধে তোমরা কি বল?” সাহাবীগণ বলেন, এটা অবৈধ। আল্লাহ তা’আলা ও রাসূল (সঃ) ওটাকে অবৈধ বলে ঘোষণা করেছেন এবং কিয়ামত পর্যন্ত এটা অবৈধই থাকবে। তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “জেনে রেখ যে, দশজন নারীর সাথে ব্যভিচারকারী ব্যক্তি ঐ ব্যক্তি অপেক্ষা কম পাপী যে তার প্রতিবেশীর স্ত্রীর সাথে ব্যভিচার করে।” পুনরায় তিনি তাদেরকে জিজ্ঞেস করেনঃ “তোমরা চুরি সম্বন্ধে কি বল? তারা উত্তরে বলেন, “ওটাকেও আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সঃ) হারাম করেছেন এবং ওটাও কিয়ামত পর্যন্ত হারামই থাকবে।” রাসূলুল্লাহ (সঃ) তখন বলেনঃ “জেনে রেখ যে, যে চোর দশ বাড়ীতে চুরি করেছে তার পাপ ঐ চোরের পাপ হতে হালকা, যে তার প্রতিবেশীর ঘর হতে কিছু চুরি করে।” (৫) সহীহ বুখারী ও মুসলিমে রয়েছে, হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! সবচেয়ে বড় পাপ কোন্টি?” তিনি বলেনঃ “তা এই যে, তুমি আল্লাহর সাথে অংশী স্থাপন কর, অথচ তিনিই তোমাকে সৃষ্টি করেছেন। আমি বলি, তারপর কোনটি? তিনি বলেনঃ “তারপরে এই যে, তুমি তোমার প্রতিবেশিনীর সাথে ব্যভিচারে লিপ্ত হও।” (৬) একজন আনসারী সাহাবী (রাঃ) বর্ণনা করেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর খিদমতে হাযির হওয়ার উদ্দেশ্যে বাড়ী হতে বের হই। তথায় গিয়ে দেখি যে, একটি লোক দাঁড়িয়ে আছেন এবং রাসূলুল্লাহ (সঃ) তার মুখোমুখী হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। আমি ধারণা করি যে, সম্ভবতঃ রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর সাথে তার কোন কাজ রয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সঃ) দাঁড়িয়ে রয়েছেন এবং লোকটির সাথে কথাবার্তা চলছে। অধিক বিলম্ব হয়ে যায়। অবশেষে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর ক্লান্তির ধারণা আমাকে উদ্বিগ্ন করে তোলে। অনেকক্ষণ পর তিনি ফিরে আসেন এবং আমার নিকট আগমন করেন। আমি বলি, “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! ঐ লোকটি তো বহুক্ষণ ধরে আপনাকে দাঁড় করিয়ে রেখেছিল। আমি তো উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলাম। হয়তো আপনার পা ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। তিনি বলেনঃ “আচ্ছা তুমি তাকে দেখেছো?” আমি বলি, হ্যা খুব ভাল করে দেখেছি। তিনি বলেন, “তুমি কি জান তিনি কে ছিলেন? তিনি ছিলেন হর্ষরত জিবরাঈল (আঃ)। তিনি প্রতিবেশীর হকের ব্যাপারে আমার প্রতি চাপ সৃষ্টি করছিলেন। তিনি তাদের এত বেশী হক বর্ণনা করেন যে, আমার মনে সন্দেহ হয়, না জানি আজ তিনি প্রতিবেশীকে উত্তরাধিকারীই বানিয়ে দেন।” অতঃপর তিনি বলেন, “তুমি যদি তাকে সালাম করতে তবে অবশ্যই তিনি তোমার সালামের উত্তর দিতেন।(মুসনাদই-আহমাদ)
(৭) মুসনাদ-ই-আদ ইবনে হামীদে রয়েছে, হযরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, পল্লী অঞ্চল হতে একটি লোক রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নিকট আগমন করে। সে সময় রাসূলুল্লাহ (সঃ) ও হযরত জিবরাঈল (আঃ) ঐ জায়গায় নামায পড়ছিলেন যেখানে জানাযার নামায পড়া হতো। নামায শেষে ঐ লোকটি বলেন, হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! অন্য একটি লোক যে আপনার সাথে নামায পড়ছিলেন তিনি কে? রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেন, “তুমি তাঁকে দেখেছো?’ লোকটি বলেন, ‘হ্যাঁ’। তিনি বলেন, ‘তুমি খুব উত্তম জিনিস দেখেছে। তিনি ছিলেন জিবরাঈল (আঃ)।তিনি প্রতিবেশীর ব্যাপারে উপদেশ দিচ্ছিলেন। আমার ধারণা হয় যে, অতিসত্বরই তাকে উত্তরাধিকারী বানিয়ে দেবেন।””
(৮), আবু বকর আল বায (রঃ)-এর গ্রন্থে হযরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “প্রতিবেশী তিন প্রকারের রয়েছেঃ (১) এক হক বিশিষ্ট অর্থাৎ নিম্নতম। (২) দু’ হক বিশিষ্ট এবং (৩) তিন হক বিশিষ্ট অর্থাৎ সর্বোচ্চ। এক হক বিশিষ্ট ঐ প্রতিবেশী যে মুশরিক এবং যার সঙ্গে কোন আত্মীয়তার সম্পর্ক নেই। দু’ হক বিশিষ্ট ঐ প্রতিবেশী যে মুসলমান, কিন্তু তার সঙ্গে আত্মীয়তার সম্পর্ক নেই। তার এক হক হলো ইসলামের হক এবং দ্বিতীয় হক হচ্ছে প্রতিবেশীর হক। তিন হক বিশিষ্ট হচ্ছে ঐ প্রতিবেশী যে মুসলমান এবং তার সাথে আত্মীয়তার সম্পর্কও রয়েছে। কাজেই তার প্রথম হক হলো ইসলামের হক, দ্বিতীয় হক হলো প্রতিবেশীর হক এবং তৃতীয় হক হলো আত্মীয়তার হক।”
(৯) মুসনাদ-ই-আহমাদে হযরত আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে জিজ্ঞেস করেন, আমার দু’টি প্রতিবেশী রয়েছে। আমি একজনের কাছে উপঢৌকন পাঠাতে চাই, তাহলে কার কাছে পাঠাবো? তিনি উত্তরে বলেনঃ “যার দরজা নিকটে হবে।”
(১০) তাবরানীর হাদীস গ্রন্থে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) অযু করেন। জনগণ তার অযুর পানি নিয়ে শরীরে মলতে আরম্ভ করেন। তিনি জিজ্ঞেস করেনঃ ‘এরূপ করছো কেন? তাঁরা বলেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সঃ)-এর মহব্বতে’। তখন তিনি বলেনঃ ‘যে- এতে খুশী হয় যে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সঃ) তাকে ভালবাসেন সে যেন যখন কথা বলে তখন সত্য বলে, যখন আমানত দেয়া হয় তখন তা আদায় করে এবং প্রতিবেশীর সঙ্গে সদ্ব্যবহার করে।’
(১১) মুসনাদ-ই-আহমাদে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা’আলার সামনে প্রথম যে ঝগড়া পেশ করা হবে তা হবে দু’জন প্রতিবেশীর ঝগড়া।
এরপর আল্লাহ নির্দেশ দিচ্ছেন-‘তোমরা পার্শ্ববর্তী সহচরের সঙ্গে উত্তম ব্যবহার কর।’ বহু তাফসীর কারকের মতে এর ভাবার্থ হচ্ছে স্ত্রী, আবার অনেকের মতে এর ভাবার্থ হচ্ছে সফরের সঙ্গী। এও বর্ণিত হয়েছে যে, সাধারণভাবে এর ভাবার্থ হচ্ছে বন্ধু ও সঙ্গী। সে সঙ্গী সফরেরই হোক বা বাড়ীর পার্শ্বেরই হোক। (আরবী)-এর ভাবার্থ হচ্ছে অতিথি। আবার যে পথ চলতে চলতে থেমে গেছে এরূপ লোককেও ইবনুস সাবিল’ বলা হয়েছে। সুতরাং যদি অতিথিরও এ অর্থ নেয়া হয় যে সফরে চলতে চলতে অতিথি হয়ে গেছে তবে দু’টো এক হয়ে যায়। এরও পূর্ণ বর্ণনা সূরা-ই-বারাআতে আসবে ইনশাআল্লাহ।
অতঃপর বলা হচ্ছে-‘তোমাদের দক্ষিণ হস্ত যাদের অধিকারী তাদের সঙ্গেও সৎ ব্যবহার কর। কেননা, ঐ গরীবেরা তো তোমাদের হাতে রয়েছে। তাদের উপর তো তোমাদের পূর্ণ অধিকার রয়েছে। কাজেই তাদের প্রতি দয়া প্রদর্শন করা এবং সাধ্যানুসারে তাদের প্রয়োজনের প্রতি লক্ষ্য রাখা উচিত।
রাসূলুল্লাহ (সঃ) তো স্বীয় মরণ রোগেও স্বীয় উম্মতকে এর জন্যে অসিয়ত করে গেছেন। তিনি বলেনঃ “হে লোক সকল! নামায ও দাসদের প্রতি খুব খেয়াল রাখবে।’ বার বার তিনি একথা বলতেই থাকেন, অবশেষে তাঁর বাকশক্তি রহিত হয়ে যায়।
মুসনাদ-ই-আহমাদে রয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “তুমি নিজে যা খাও ওটাও সাদকা, যা তোমার সন্তানদেরকে খাওয়াও ওটাও সাদকা, যা তোমার স্ত্রীকে খাওয়াও ওটাও সাদকা এবং যা তোমার পরিচারককে খাওয়াও ওটাও সাদকা।”
সহীহ মুসলিমে রয়েছে যে, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) স্বীয় দারোগাকে বলেন, “গোলামদেরকে তাদের আহার্য দিয়েছো কি?’ তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত দেইনি।’ তখন হযরত আবদুল্লাহ (রঃ) বলেন, যাও, দিয়ে এসো। রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ মানুষের জন্যে এ পাপই যথেষ্ট যে, সে যে আহার্যের মালিক তা সে আটকিয়ে রাখে।’
সহীহ মুসলিমে হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ অধীনস্থ গোলামের হক এই-যে, তাকে খাওয়ানো, পান করানো ও পরানো হবে এবং তার দ্বারা তার সাধ্যের অতিরিক্ত কাজ করিয়ে নেয়া হবে না।’
সহীহ বুখারী শরীফে রয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “যখন তোমাদের কারও পরিচারক তার খাদ্য নিয়ে আসে তখন তোমাদের উচিত যে, যদি পার্শ্বে বসিয়ে খাওয়াতে না পার তবে কমপক্ষে তাকে দু’ এক গ্লাস দিয়ে দেবে। তোমরা এটা খেয়াল রাখবে যে, রান্না করার গরম ও কষ্ট তাকেই ভোগ করতে হয়েছে। অন্য বর্ণনা রয়েছেঃ “তোমাদের উচিত তো এই যে, তাকে সঙ্গে বসিয়ে খাওয়াবে। যদি খাদ্য কম হয় তবে তাকে দু’ গ্রাস দিয়ে দেবে।’ তিনি বলেন, ‘তোমাদের গোলামও তোমাদের ভাই। আল্লাহ তা’আলা তাদেরকে তোমাদের অধীনস্থ করেছেন। সুতরাং যার অধীনে তার ভাই থাকবে তাকে যেন সে তার খাবার হতে খেতে দেয়, যা সে প্রবে তা হতে যেন তাকেও পরতে দেয়। তাদের দ্বারা এমন কাজ করিয়ে নেবে না যাতে তারা অসমর্থ হয়ে পড়ে। যদি এরূপ কোন কাজ এসেই পড়ে তবে নিজেরাও তাদেরকে সাহায্য করবে। (সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম)।
আল্লাহ তা’আলা বলেন-‘অহংকারীও আত্মাভিমানীকে আল্লাহ তা’আলা ভালবাসেন না। তারা নিজেদেরকে ভাল মনে করলেও আল্লাহ পাকের নিকট তারা আদৌ ভাল নয়। তারা নিজেদেরকে বড় ও সম্মানিত মনে করলেও আল্লাহ তা’আলার নিকট তারা লাঞ্ছিত ও ঘৃণিত। জনগণের দৃষ্টিতেও তারা হেয় ও তুচ্ছ। তারা কত বড় অত্যাচারী ও অকৃতজ্ঞ যে, কারও উপর কিছু অনুগ্রহ করলে তাকে সে অনুগ্রহের খোটা দেয়, কিন্তু তাদের প্রভুর যে নিআমত তাদের উপর রয়েছে তার জন্য তারা তাঁর নিকট কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না। মানুষের মধ্যে বসে তারা গর্ব করে বলে আমি এত বড় লোক, আমার এটা আছে, ওটা আছে।
হযরত আবু রাজা হারভী (রঃ) বলেন যে, প্রত্যেক দুশ্চরিত্র ব্যক্তি অহংকারী ও আত্মম্ভরী হয়ে থাকে। অতঃপর তিনি এ আয়াতটি পাঠ করেন এবং বলেন, ‘পিতা-মাতার অবাধ্য ব্যক্তি পাপাচারী ও হতভাগা হয়ে থাকে। অতঃপর তিনি (আরবী) (১৯:৩২) -এ আয়াতটি পাঠ করেন। হযরত আওয়াম ইবনে হাওশাবও (রঃ) এটাই বলেন।
হযরত মাতরাফ (রঃ) বলেন, আমার নিকট হযরত আবু যার (রাঃ)-এর একটি বর্ণনা পৌছেছিল এবং আমার মনের বাসনা ছিল যে, কোন সময় নিজেই তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করে তার নিজেরই মুখে, বর্ণনাটি শুনবো। ঘটনাক্রমে একবার তার সাথে সাক্ষাৎ হলে আমি তাকে বলি, আমার নিকট সংবাদ পৌছেছে যে, আপনি রাসূলুল্লাহ (সঃ) হতে একটি হাদীস বর্ণনা করে থাকেন। হাদীসটি হচ্ছেঃ “আল্লাহ তাআলা তিন প্রকার লোককে পছন্দ করেন এবং তিন প্রকার লোককে অপছন্দ করেন। হযরত আবু যার (রাঃ) বলেন-“হ্যাঁ, এটা সত্য।আমি কি আমার বন্ধুর (সঃ) উপর মিথ্যা আরোপ করবো? এ কথা তিনি তিনবার বলেন, আমি তখন বলি আচ্ছা, ঐ তিন প্রকারের লোক কারা যাদের প্রতি আল্লাহ তাআলা কুপিত? তিনি বলেন, ‘অহংকারী ও আত্মাভিমানী ব্যক্তি। তারপরে তিনি বলেন-“এটা তো আপনি আল্লাহ তা’আলার কিতাবের মধ্যেও পেয়ে থাকেন। অতঃপর তিনি (আরবী) (৪:৩৬)-এ আয়াতটি পাঠ করেন। বানু হাজীম গোত্রের একটি লোক রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে বলেন আমাকে কিছু উপদেশ দিন।’ তিনি বলেনঃ কাপড় পায়ের গিঠের নীচে ঝুলিয়ে (লটকিয়ে) দিওনা। কেননা, এটা হচ্ছে অহংকার ও আত্মম্ভরিতা যা আল্লাহ পাক পছন্দ করেন না।
তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
মূল ইবারতে বলা হয়েছেঃ “আস্সা-হিবু বিল জানবে।” এর অর্থ অন্তরঙ্গ বন্ধু-বান্ধব হতে পারে আবার এমন লোকও হতে পারে যে জীবন পথে চলার ক্ষেত্রে কোন এক পর্যায়ে সঙ্গ দিয়ে থাকে। যেমন, আপনি বাজারে যাচ্ছেন এবং পথেকোন ব্যক্তি আপনার সাথে চলছে। অথবা কোন দোকানে আপনি সওদা কিনছেন এবং অন্য কোন খরিদ্দারও আপনার পাশে বসে রয়েছে। অথবা সফরের মাঝপথেকোন ব্যক্তি আপনার সফর সঙ্গী হয়ে গেলেন। এই সাময়িক সঙ্গও প্রত্যেক ভদ্র ও শালীন ব্যক্তির ওপর বেশ কিছু অধিকার ও দায়িত্ব অর্পণ করে। যার ফলে সে যথাসম্ভব তার সাথে সদ্ব্যবহার করে এবং তাকে কষ্ট দিতে বিরত থাকে।
তাফসীরে আবুবকর যাকারিয়া বলেছেন:-
[১] অর্থাৎ আল্লাহর ইবাদাত কর এবং ইবাদাতের বেলায় তাঁর সাথে অন্য কাউকে অংশীদার সাব্যস্ত করো না। মু’আয ইবন জাবাল রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের পিছনে তার বাহনে বসা ছিলাম। এমতাবস্থায় তিনি বললেন, তুমি কি জান, বান্দার উপর আল্লাহর কি হক? আমি বললামঃ আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলই ভাল জানেন। তিনি বললেনঃ বান্দার উপর আল্লাহর হক হল, একমাত্র তাঁরই ইবাদাত করা। তাঁর সাথে অন্য কাউকে শরীক না করা। তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো অনেক পথ চলার পর আবার বললেনঃ হে মুআয ইবন জাবাল! তুমি কি জান, বান্দা যদি এ কাজটি করে তাহলে আল্লাহর উপর বান্দার কি হক রয়েছে? আমি বললামঃ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই ভাল জানেন। তিনি বললেনঃ আল্লাহর উপর বান্দার হক হল, তাদেরকে শাস্তি না দেয়া। [বুখারীঃ ৬৫০০]
[২] আয়াত থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় যে, তাওহীদের পর সমস্ত আপনজন-আত্মীয় ও সম্পর্কযুক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে পিতা-মাতার অধিকার সর্বাগ্রে। আল্লাহ্ তা’আলা স্বীয় ইবাদাত বন্দেগী ও হকসমূহের পর পরই পিতা-মাতার হক সম্পর্কিত বিবরণ দানের মাধ্যমে ইঙ্গিত করেছেন যে, প্রকৃতপক্ষে সমস্ত নেয়ামত ও অনুগ্রহ একান্তই আল্লাহ তা’আলার পক্ষ থেকে, কিন্তু বাহ্যিক উপকরণের দিক দিয়ে লক্ষ্য করলে দেখা যায়, আল্লাহর পরে মানুষের প্রতি সর্বাধিক ইহসান বা অনুগ্রহ থাকে পিতা-মাতার। সাধারণ উপকরণসমূহের মাঝে মানুষের অস্তিত্বের পিছনে পিতা-মাতাই বাহ্যিক কারণ। তাছাড়া জন্ম থেকে যৌবন প্রাপ্তি পর্যন্ত যে সমস্ত কঠিন ও বন্ধুর পথ ও স্তর রয়েছে, পিতা-মাতাই তাকে সেগুলোতে সাহায্য করেন এবং তার প্রতিপালন ও পরিবর্ধনের জামানতদার হয়ে থাকেন। সে জন্যই আল্লাহ তা’আলা অন্যান্য জায়গায়ও পিতামাতার হকসমূহকে তাঁর ইবাদাত ও আনুগত্যের সাথে যুক্ত করে বর্ণনা করা হয়েছে। বলা হয়েছেঃ “আমার এবং তোমার পিতা-মাতার শুকরিয়া আদায় কর”। [সূরা লুকমান: ১৪]
রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণীসমূহে যেমন পিতা-মাতার আনুগত্য এবং তাদের সাথে সদ্ব্যবহারের তাকিদ রয়েছে, তেমনিভাবে তার সীমাহীন ফযীলত, মর্তবা ও সওয়াবের কথাও উল্লেখ রয়েছে। এক হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “আল্লাহ্ তা’আলার সন্তুষ্টি পিতার সন্তুষ্টির মধ্যে এবং আল্লাহর অসন্তুষ্টি পিতার অসন্তুষ্টির মধ্যেই নিহিত রয়েছে”। [তিরমিযী: ১৮৯৯]
[৩] এখানে সমস্ত আত্মীয়-স্বজনের সাথে সদ্ব্যবহার করার তাকিদ দেয়া হয়েছে। কুরআনুল কারীমের প্রসিদ্ধ এক আয়াতে বিষয়টি এভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যা রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রায়শঃই বিভিন্ন ভাষণের পর তেলাওয়াত করতেন। তা হলো, “আল্লাহ সবার সাথে ন্যায় ও সদ্ব্যবহারের নির্দেশ দিচ্ছেন এবং নির্দেশ দিচ্ছেন আত্মীয়-স্বজনের হক আদায় করার জন্য”। [সূরা আন-নাহল: ৯০]
এতে সামর্থ্যানুযায়ী আত্মীয়-আপনজনদের কায়িক ও আর্থিক সেবা-যত্ন করা, তাদের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ করা এবং তাদের খবরা-খবর নেয়াও অন্তর্ভুক্ত। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সদকার মাল সাধারণ গরীব-মিসকীনকে দান করলে তাতে তো শুধু সদকার সওয়াবই পাওয়া যায়, অথচ তা যদি নিজের রক্ত সম্পর্কের আত্মীয়-আপনজনকে দান করা হয়, তাহলে তাতে দুটি সওয়াব পাওয়া যায়। একটি হল সদকার সওয়াব এবং আরেকটি হল সেলায়ে-রেহমীর সওয়াব। [মুসনাদে আহমাদ ৪/২১৪, নাসায়ী: ২৫৮২] অর্থাৎ আত্মীয়তার হক আদায় করার সওয়াব।
[৪] অর্থাৎ লাওয়ারিশ তথা অনাথ শিশু এবং অসহায় মানুষের সাহায্য-সহযোগিতাও এমনি গুরুত্বপূর্ণ ও জরুরী বিবেচনা করবে, যেমন আত্মীয়-আপনজনদের বেলায় করে থাক ।
[৫] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, হে আবু যর, যখন তরকারী রান্না করবে তখন তাতে বেশী পরিমাণে পানি দিও এবং এর দ্বারা তোমার পড়শীর খোজখবর নিও। [মুসলিমঃ ২৬২৫]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেন, তোমাদের মধ্যে যে আল্লাহ ও শেষ দিবসের উপর ঈমান রাখে সে যেন তার পড়শীর সম্মান করে, তোমাদের মধ্যে যে আল্লাহ ও শেষ দিবসের উপর ঈমান আনে সে যেন তার মেহমানের পুরস্কার দিয়ে তাকে সম্মানিত করে। সাহাবায়ে কিরাম বললেন, মেহমানের পুরস্কার কি? তিনি বললেন, একদিন ও রাত্রি। আর মেহমান তিন দিন এর পরের যা সময় তাতে ব্যয় করা সদকাস্বরূপ। তোমাদের মধ্যে যে আল্লাহ ও শেষ দিনে উপর ঈমান আনে সে যেন ভাল বলে অথবা চুপ থাকে। [বুখারী: ৬০১৯]
অপর হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আল্লাহর নিকট সবচেয়ে উত্তম সংগী হচ্ছেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সংগীগণ। আর আল্লাহর নিকট সবচেয়ে উত্তম পড়শী হচ্ছেন ঐ পড়শী, যে তার পড়শীর জন্য উত্তম। [তিরমিযী: ১৯৪৪]
[৬] এ আয়াতে দু’রকমের প্রতিবেশীর কথা বলা হয়েছে। এ উভয় প্রকার প্রতিবেশীর বিশ্লেষণ প্রসঙ্গে সাহাবায়ে কেরামের বিভিন্ন বর্ণনা রয়েছে। আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, (جَارِذِى القُرْبٰى) বলতে সেসব প্রতিবেশীকে বোঝায়, যারা প্রতিবেশী হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আত্মীয়ও বটে। এভাবে এতে দু’টি হক সমন্বিত হয়ে যায়। আর (وَالْجَارِ الْجُنُبِ) বলতে শুধু সে প্রতিবেশীকে বোঝায় যার সাথে আত্মীয়তার সম্পর্ক নেই। আর সে জন্যই তার উল্লেখ করা হয়েছে দ্বিতীয় পর্যায়ে । [তাবারী] কোন কোন মনীষী বলেছেন, ‘জারে-যিলকোরবা’ এমন প্রতিবেশীকে বলা হয়, যে ইসলামী ভ্রাতৃত্বের অন্তর্ভুক্ত এবং মুসলিম। আর ‘জারে-জুনুব’ বলা হয় অমুসলিম প্রতিবেশীকে। কুরআনে ব্যবহৃত শব্দে অবশ্য এ সমুদয় সম্ভাব্যতাই বিদ্যমান। অবশ্য প্রতিবেশী হওয়া ছাড়াও যার অন্যান্য হক রয়েছে, অন্যান্য প্রতিবেশীদের তুলনায় তাকে মর্যাদাগত অগ্রাধিকার দিতে হবে।
[৭] যদিও এর শাব্দিক অর্থ হল সহকর্মী। এতে সেসব সফর সঙ্গীরাও অন্তর্ভুক্ত যারা রেল, জাহাজ, বাস, মোটর প্রভৃতিতে পাশাপাশি বসে ভ্রমণ করে এবং সে সমস্ত লোকও অন্তর্ভুক্ত যারা কোন সাধারণ বা বিশেষ বৈঠক বা অধিবেশনে আপনার সাথে উপবেশন করে থাকে। ইসলামী শরী’আত নিকটবর্তী ও দূরবর্তী স্থায়ী প্রতিবেশীদের অধিকার সংরক্ষণকে যেমন ওয়াজিব করে দিয়েছে, তেমনিভাবে সে ব্যক্তির সাহচর্যের অধিকার বা হককেও অপরিহার্য করে দিয়েছে, যে সামান্য সময়ের জন্য হলেও কোন মজলিস, বৈঠক অথবা সফরের সময় আপনার সমপর্যায়ে উপবেশন করে। তাদের মধ্যে মুসলিম, অমুসলিম, আত্মীয়, অনাত্মীয় সবাই সমান -সবার সাথেই সদ্ব্যবহার করার হেদায়াত করা হয়েছে। এর সর্বনিম্ন পর্যায় হচ্ছে এই যে, আপনার কোন কথায় বা কাজে যেন সে কোন রকম কষ্ট না পায়। এমন কোন কথা বলবেন না, যাতে সে মৰ্মাহত হতে পারে। এমন কোন আচরণ করবেন না, যাতে তার কষ্ট হতে পারে। যেমন, ধুমপান করে তার দিকে ধোঁয়া ছাড়া, পান খেয়ে তার দিকে পিক ফেলা এবং এমনভাবে বসা যাতে তার বসার জায়গা সংকুচিত হয়ে যায় প্রভৃতি। যানবাহনে অন্য কোন যাত্রী পাশে বসতে গেলে এ কথা ভাবা উচিত যে, এখানে তার ততটুকুই অধিকার রয়েছে যতটা রয়েছে আমার। কোন কোন তাফসীরকার বলেছেন, এমন প্রতিটি লোকই ‘সাহেবে-বিল-জাম্ব’-এর অন্তর্ভুক্ত যে কোন কাজে, কোন পেশায় বা কোন বিষয়ে আপনার সাথে জড়িত বা আপনার অংশীদার; তা শিল্প-শ্রমেই হোক অথবা অফিস-আদালতের চাকরিতেই হোক অথবা কোন সফরে বা স্থায়ী বসবাসেই হোক। [রুহুল মা’আনী]
[৮] আয়াতে এমন লোককে বোঝানো হয়েছে যে সফরের অবস্থায় আপনার নিকট এসে উপস্থিত হয় কিংবা আপনার মেহমান হয়ে যায়। যেহেতু এই অজানা-অচেনা লোকটির কোন আত্মীয় বা সম্পৰ্কীয় লোক এখানে উপস্থিত থাকে না, সেহেতু কুরআন ইসলামী তথা মানবীয় সম্পর্কের প্রেক্ষিতে তার হকও আপনার উপর অপরিহার্য বলে সাব্যস্ত করে দিয়েছে। তা হল, সামর্থ্য ও সাধ্যানুযায়ী তার সাথে সদ্ব্যবহার করা।
[৯] এতে অধিকারভুক্ত দাস-দাসীকে বোঝানো হয়েছে। তাদের ব্যাপারেও এ হক সাব্যস্ত ও অপরিহার্য করে দেয়া হয়েছে যে, তাদের সাথে সদ্ব্যবহার করতে হবে। সাধ্যানুযায়ী তাদের খাওয়া পরার ব্যাপারে কার্পণ্য করবে না। তাছাড়া তাদের সাধ্যের অতিরিক্ত কোন কাজ তাদের দ্বারা করাবে না। এখানে আয়াতের বাক্যগুলো যদিও সরাসরিভাবে অধিকারভুক্ত দাস-দাসীকেই বোঝাচ্ছে, কিন্তু কারণ-উপকরণের সামঞ্জস্য এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিভিন্ন বক্তব্যের ভিত্তিতে আলোচ্য নির্দেশ ও বিধি-বিধান দাস-দাসী, চাকর-চাকরানী ও অন্যান্য কর্মচারীর ক্ষেত্রেও ব্যাপকভাবে প্রযোজ্য। তাদের হকও একই রকম। নির্ধারিত বেতন-ভাতা, খানাপিনা প্রভৃতির ব্যাপারে কার্পণ্য বা বিলম্ব করা যাবে না এবং তাদের উপর সাধ্যাতীত কোন কাজও চাপানো যাবে না। যদি শরীআত মত তাদেরকে পরিচালনা করা হয় তবে তাদের যাবতীয় খরচও সদকার অন্তর্ভুক্ত। এক হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তুমি নিজে যা খাও তা তোমার জন্য সদকা এবং যা তোমার ছেলেকে খাওয়াও তাও তোমার জন্য সদকা, যা তোমার স্ত্রীকে খাওয়াও তাও তোমার জন্য সদকা। অনুরূপভাবে যা তোমার খাদেমকে খাওয়াও সেটাও তোমার জন্য সদকা হিসাবে গণ্য হবে। [মুসনাদে আহমাদঃ ৪/১৩১]
অপর বর্ণনায় এসেছে, মা’রূর ইবন সা’য়ীদ বলেন, আমি আবু যর রাদিয়াল্লাহু আনহুর গায়ে একটি চাদর দেখলাম, অনুরূপ আরেকটি চাদর তার দাসের গায়ে দেখলাম। এ ব্যাপারে আমরা আবু যর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, একদিন এক লোককে গালি দিয়েছিলাম। সে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এ ব্যাপারে গালি দিলে রাসূল আমাকে বললেন, তুমি কি তাকে তার মায়ের ব্যাপার উল্লেখ করে অপমান করলে? তারপর তিনি বললেন, “এরা তোমাদের ভাই, তোমাদের অনুগামী। আল্লাহ্ তা’আলা তাদেরকে তোমাদের কর্তৃত্বাধীন করেছেন। অতএব যার কোন ভাই তার কর্তৃত্বাধীন থাকে, তবে সে যা খায় তা থেকে যেন তাকে খাওয়ায়, যা পরিধান করে তা থেকে যেন তাকে পরিধান করায়। তাদের সাধ্যের অতিরিক্ত কোন দায়িত্ব তাদেরকে দিবে না, যদি সাধ্যের অতিরিক্ত কোন দায়িত্ব দাও তবে তাদেরকে সাহায্য কর।” [বুখারী: ২৫৪৫; মুসলিম: ১৬৬২]
[১০] আল্লাহ্ এমন লোককে পছন্দ করেন না, যে দাম্ভিক এবং নিজেকে অন্যের চাইতে বড় প্রতিপন্ন করে। আয়াতের এই শেষ বাক্যটি পূর্ববর্তী সমস্ত বক্তব্যের উপসংহার। কারণ, পূর্ববতী আটটি পর্যায়ে যে সমস্ত লোকের হক সম্পর্কে তাকীদ করা হয়েছে, সেগুলোর ব্যাপারে সে সমস্ত লোকই শৈথিল্য প্রদর্শন করে যাদের মন-মানসিকতায় আত্মগৰ্ব, অহমিকা, তাকাববুর ও দাম্ভিকতা বিদ্যমান। এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক সাহাবীকে ওসীয়ত করে বলেছেনঃ কাউকে গালি দিও না। সাহাবী বললেনঃ এরপর আমি কোন স্বাধীন, দাস, উট বা ছাগল কাউকেই গালি দেইনি। তিনি আরো বললেনঃ সামান্য কোন নেক কাজকেও হেয় করে দেখবে না যদিও তোমার কোন ভাইয়ের সাথে হাসি মুখে কথা বলা হোক। আর তোমার কাপড়কে টাখনুর অর্ধেক পর্যন্ত উঠাবে, যদি তা করতে না চাও তবে দুই গিরা পর্যন্ত নামাতে পার। কাপড়কে ‘ইসবাল’ বা গিরার নীচে পরা সম্পূর্ণভাবে পরিত্যাগ কর। কেননা, এটাই অহংকারের চিহ্ন। আল্লাহ তা’আলা অহংকারীকে পছন্দ করেন না। যদি কোন লোক তোমাকে গালি দেয় অথবা তোমার কোন ক্রটি জানতে পেরে তা নিয়ে উপহাস করে, তুমি তার সেরকম কিছু জেনেও তাকে উপহাস করো না। কারণ, এর প্রতিফল তাকেই ভোগ করতে হবে। [আবু দাউদঃ ৪০৮৪, তিরমিযীঃ ২৭২২]
তাফসীরে আহসানুল বায়ান বলেছেন:-
[১] الْجَارِ الْجُنُبِ (অনাত্মীয় প্রতিবেশী) আত্মীয় প্রতিবেশীর বিপরীতার্থক শব্দ হিসাবে ব্যবহার হয়েছে। এর অর্থ হল, এমন প্রতিবেশী যার সাথে আত্মীয়তার কোন সম্পর্ক নেই। অর্থাৎ, প্রতিবেশীর সাথে প্রতিবেশী হওয়ার কারণে উত্তম ব্যবহার করো। তাতে সে আত্মীয় হোক অথবা না হোক। অনুরূপ হাদীসেও এর প্রতি বড়ই তাকীদ করা হয়েছে।
[২] এ থেকে সফর-সঙ্গী, সহকর্মী, স্ত্রী এবং এমন ব্যক্তিকে বুঝানো হয়েছে, যে কোন লাভের আশায় কারো সাথে নৈকট্য ও ওঠা-বসার সম্পর্ক গড়ে তোলে। বরং এর আওতায় এমন লোকও আসতে পারে, যারা জ্ঞানচর্চা এবং কোন কাজ শেখার জন্য অথবা কোন ব্যবসা বা পেশার খাতিরে আপনার কাছে ওঠা-বসার সুযোগ লাভ করেছে। (ফাতহুল ক্বাদীর)
[৩] এতে ঘরের দাস-দাসী, ভৃত্য-চাকর, দোকানের এবং কারখানা ও মিলের কর্মচারীরাও এসে যায়। ক্রীতদাস-দাসীদের সাথে সদ্ব্যবহার করার বড়ই তাকীদ অনেক হাদীস এসেছে।
[৪] দাম্ভিকতা ও অহংকারকে মহান আল্লাহ চরম ঘৃণা করেন। এমন কি একটি হাদীসে এসেছে যে, “এমন ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না, যার অন্তরে সরিষার দানা পরিমাণ অহংকার থাকবে।” (মুসলিম ৯১নং) এখানে বিশেষ করে অহংকারের নিন্দা করার উদ্দেশ্য হল, আল্লাহ তাআলার ইবাদত এবং যাদের সাথে সদ্ব্যবহার করার তাকীদ করা হয়েছে, এর উপর আমল কেবল সেই ব্যক্তির পক্ষে করা সম্ভব, যার অন্তর অহংকার থেকে খালি। দাম্ভিক প্রকৃতার্থে না ইবাদতের হক আদায় করতে পারবে, না আপনজন ও অপরজনদের সাথে সদ্ব্যবহার করতে পারবে।
তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ বলেছেন:-
এখানে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নিজের উলুহিয়ার বা এক আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত করার নির্দেশ দিচ্ছেন এবং সাথে সাথে উলুহিয়া বিধ্বংসী আমল শির্ক করা থেকে নিষেধ করছেন।
একদা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মুয়ায বিন জাবালকে বলেন, হে মুয়ায (রাঃ) তুমি কি জান! বান্দার ওপর আল্লাহ তা‘আলার হক কী? এবং আল্লাহ তা‘আলার ওপর বান্দার হক কী? মুয়ায (রাঃ) বলেন, আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর রাসূল অধিক জানেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, বান্দার ওপর আল্লাহ তা‘আলার হক হল: বান্দা একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত করবে এবং তাঁর সাথে কাউকে শরীক করবে না। আর বান্দা যখন এ কাজ করবে তখন আল্লাহ তা‘আলার ওপর বান্দার হক হল: আল্লাহ তা‘আলা তাকে শাস্তি দেবেন না। (সহীহ বুখারী হা: ২৮৫৬)
আল্লাহ তা‘আলার হকের সাথে সাথে মানুষের মাঝে যারা সবচেয়ে বেশি সৎ আচরণ পাবার হকদার মাতা-পিতার কথা উল্লেখ করেছেন। যেখানেই আল্লাহ তা‘আলা নিজের কথা বলেছেন সেখানেই পিতা-মাতার হকের কথা উল্লেখ করেছেন। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَقَضٰي رَبُّكَ أَلَّا تَعْبُدُوْآ إِلَّآ إِيَّاهُ وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا)
“তোমার প্রতিপালক আদেশ দিয়েছেন তিনি ব্যতীত অন্য কারও ‘ইবাদত কর না ও পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার কর।”(সূরা ইসরা ১৭:২৩)
পিতা-মাতার সাথে সৎ আচরণের পরেই নিকট আত্মীয়, ইয়াতীম, মিসকিন, পাড়া-প্রতিবেশি, মুসাফির ও ক্রীতদাস-দাসীদের সাথেও সৎ আচরণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:
مَا زَالَ جِبْرِيلُ يُوصِينِي بِالْجَارِ، حَتّٰي ظَنَنْتُ أَنَّهُ سَيُوَرِّثُهُ
জিবরীল আমাকে সর্বদা প্রতিবেশীর ব্যাপারে অসীয়ত করতে থাকে এমনকি আমার মনে হল অচিরেই আমার ওয়ারিশ বানিয়ে দেবে। (সহীহ বুখারী হা: ৬০১৫)
(وَالْجَارِ ذِي الْقُرْبٰي وَالْجَارِ الْجُنُبِ)
‘নিকট প্রতিবেশী, দূর প্রতিবেশী’ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন,
(وَالْجَارِ ذِي الْقُرْبٰي)
হল এমন প্রতিবেশী যার সাথে আত্মীয়তা আছে। الجارالجنب হল যার সাথে আত্মীয়তা সম্পর্ক নেই। কেউ কেউ বলেন, প্রথমটা হল মুসলিম, আর দ্বিতীয়টা হল অমুসলিম।
والصاحب بالجنب
কেউ বলেন, এর দ্বারা উদ্দেশ্য হল: স্ত্রী, কেউ বলেছেন; সৎবন্ধু। আর কেউ বলেন, বাড়িতে অবস্থান ও ভ্রমণে যে বন্ধু।
(وَمَا مَلَکَتْ اَیْمَانُکُمْ)
‘দক্ষিণ হস্ত যাদের মালিক হয়েছে’ অর্থাৎ ক্রীতদাস-দাসী। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: তুমি যা খাও তোমার দাস-দাসীকে তাই খাওয়াও। তুমি যা পর তোমার দাস-দাসীকেও তা-ই পরাও। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, যদি তোমার কর্মচারী খাবার নিয়ে আসে তাহলে তাকে সাথে নিয়ে বসে খাও, না খেলে এক লোকমা বা দুই লোকমা দিয়ে দাও। কেননা সে আগুনের তাপ সহ্য করেছে। (সহীহ বুখারী হা: ৫৪৬০) তারপর আল্লাহ তা‘আলা যাদেরকে ভালবাসেন না তাদের আলোচনা উল্লেখ করেছেন।
মাতরাফ (রহঃ) বলেন: আমার নিকট আবূ যার (রাঃ)-এর একটি বর্ণনা পৌঁছে ছিল। আমার মনের আশা ছিল তার সাথে সাক্ষাত করার। একদিন তাঁর সাথে সাক্ষাত হয়ে গেল। আমি বললাম: হে আবূ যার, আমার কাছে পৌঁছেছে যে, আপনি নাকি মনে করেন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আপনাদের এ হাদীস বলেছেন: নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা তিন প্রকার লোককে ভালবাসেন, আবার তিন প্রকার লোককে অপছন্দ করেন। তিনি বললেন: হ্যাঁ সত্য। তুমি কি মনে কর আমি আমার বন্ধুর ব্যাপারে মিথ্যা বলব! যে তিন প্রকার লোককে আল্লাহ তা‘আলা ভালবাসেন না তারা হল, অহঙ্কারী দাম্ভিক। তোমরা কি কিতাবে পাওনি? তখন
(إِنَّ اللّٰهَ لَا يُحِبُّ مَنْ كَانَ مُخْتَالًا فَخُوْرَا)
‘নিশ্চয়ই আল্লাহ পছন্দ করেন না দাম্ভিক, অহঙ্কারীকে।’এ আয়াতটি পাঠ করেন।
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. সকল ইবাদত একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার জন্য করতে হবে।
২. ইবাদত বিধ্বংসী শির্ক থেকে অবশ্যই দূরে থাকতে হবে।
৩. পিতা-মাতাসহ অন্যান্যদের সাথে সদাচরণ করতে হবে।
৪. অহঙ্কারী ও দাম্ভিক লোকেদের আল্লাহ তা‘আলা ভালবাসেন না।