أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book# 114/١٣٤)-৩৩৬
www.motaher21.net
يٰٓأَيُّهَا الَّذِينَ ءَامَنُوا خُذُوا حِذْرَكُمْ
হে ঈমানদারগণ! মোকাবিলা করার জন্য সর্বক্ষণ প্রস্তুত থাকো।
O you who believe! Take your precautions,
সুরা: আন-নিসা
আয়াত নং :-৭১-৭৪
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا خُذُوْا حِذْرَكُمْ فَانْفِرُوْا ثُبَاتٍ اَوِ انْفِرُوْا جَمِیْعًا
হে ঈমানদারগণ! মোকাবিলা করার জন্য সর্বক্ষণ প্রস্তুত থাকো।তারপর সুযোগ পেলে পৃথক পৃথক বাহিনীতে বিভক্ত হয়ে বের হয়ে পড়ো অথবা এক সাথে।
আয়াত নং :-৭২
وَ اِنَّ مِنْكُمْ لَمَنْ لَّیُبَطِّئَنَّۚ فَاِنْ اَصَابَتْكُمْ مُّصِیْبَةٌ قَالَ قَدْ اَنْعَمَ اللّٰهُ عَلَیَّ اِذْ لَمْ اَكُنْ مَّعَهُمْ شَهِیْدًا
হ্যাঁ, তোমাদের কেউ কেউ এমনও আছে যে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে গড়িমসি করে। যদি তোমাদের ওপর কোন মুসিবত এসে পড়ে তাহলে সে বলে আল্লাহ আমার প্রতি বড়ই অনুগ্রহ করেছেন, আমি তাদের সাথে যাইনি।
(৭৩)
وَلَئِنْ أَصٰبَكُمْ فَضْلٌ مِّنَ اللَّهِ لَيَقُولَنَّ كَأَن لَّمْ تَكُنۢ بَيْنَكُمْ وَبَيْنَهُۥ مَوَدَّةٌ يٰلَيْتَنِى كُنتُ مَعَهُمْ فَأَفُوزَ فَوْزًا عَظِيمًا
আর তোমাদের কাছে আল্লাহর পক্ষ থেকে কোন অনুগ্রহ এসে পৌঁছলে অবশ্যই সে বলবে যেন তোমাদের ও তার মধ্যে কোন হৃদ্যতা ছিল না, ‘হায়! যদি আমি তাদের সাথে থাকতাম, তাহলে আমি মহাসফলতা অর্জন করতাম।
আয়াত নং :-৭৪
فَلْیُقَاتِلْ فِیْ سَبِیْلِ اللّٰهِ الَّذِیْنَ یَشْرُوْنَ الْحَیٰوةَ الدُّنْیَا بِالْاٰخِرَةِؕ وَ مَنْ یُّقَاتِلْ فِیْ سَبِیْلِ اللّٰهِ فَیُقْتَلْ اَوْ یَغْلِبْ فَسَوْفَ نُؤْتِیْهِ اَجْرًا عَظِیْمًا
(এই ধরনের লোকদের জানা উচিত) আল্লাহর পথে তাদের লড়াই করা উচিত যারা আখেরাতের বিনিময়ে দুনিয়ার জীবন বিকিয়ে দেয়। তারপর যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে লড়বে এবং মারা যাবে অথবা বিজয়ী হবে তাকে নিশ্চয়ই আমি মহাপুরস্কার দান করবো।
৭১-৭৪ নং আয়াতের তাফসীর:
তাফসীরে ইবনে কাসীর বলেছেন:-
আল্লাহ তা’আলা মুসলমানদেরকে নির্দেশ দিচ্ছেন যে, তারা যেন সর্বদা আত্মরক্ষার ব্যবস্থা গ্রহণ করে। সদা যেন অস্ত্র-শস্ত্রে সজ্জিত থাকে যাতে শত্রুরা অতি সহজে তাদের উপর জয়যুক্ত না হয়। তারা সব সময় যেন প্রয়োজনীয় অস্ত্র প্রস্তুত রাখে, নিজেদের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে থাকে এবং শক্তি দৃঢ় করে। নির্দেশ মাত্রই যেন তারা বীর বেশে যুদ্ধের জন্য বেরিয়ে যায়। ছোট ছোট সৈন্যদলে বিভক্ত হয়েই হোক বা সবাই সম্মিলিত হয়েই হোক সুযোগমত তারা যেন যুদ্ধের অহ্বান মাত্রই বেড়িয়ে পড়ে। (আরবী) হচ্ছে (আরবী) শব্দের বহু বচন। আবার কখনও (আরবী)-এর বহু বছন (আরবী) ও আসে।
হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ)-এর উক্তি অনুসারে (আরবী)-এর অর্থ হচ্ছে তোমরা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দল হয়ে বহির্গত হও। আর (আরবী)-এর অর্থ হচ্ছে ‘তোমরা সম্মিলিতভাবে বেড়িয়ে পড়।’ মুজাহিদ (রঃ), ইকরামা (রঃ), সুদ্দী (রঃ), কাতাদাহ্ (রঃ), যহহাক (রঃ), আতা’ আল খুরাসানী (রঃ), মুকাতিল ইবনে হিব্বান (রঃ) এবং খাসীফ আল জাযারীও (রঃ) এ কথাই বলেন।
মুজাহিদ (রঃ) এবং আরও কয়েকজন মনীষী বলেন যে, (আরবী)-এ আয়াতটি মুনাফিকদের ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়। মুনাফিকদের স্বভাব এই যে, নিজেও তারা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করা হতে বিরত থাকে এবং অপরকেও যুদ্ধে না যেতে উৎসাহিত করে। যেমন মুনাফিকদের নেতা আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই ইবনে সাকূলের কার্যকলাপ ছিল। আল্লাহ তা’আলা তাকে। অপমানিত করুন।
তাদের অবস্থা এই যে, আল্লাহ তাআলার কোন হিকমতের কারণে যদি মুসলমানরা তাদের শত্রুদের উপর বিজয় লাভে অসমর্থ হয় বরং শত্রুরাই তাদের উপর চেপে বসে এবং মুসলমানদের ক্ষতি হয় ও তাদের লোক শাহাদাত বরণ করে তখন ঐ মুনাফিকরা বাড়িতে বসে ফুলতে থাকে এবং স্বীয় বুদ্ধির উপর গৌরব বোধ করে। তারা তখন তাদের জিহাদে অংশগ্রহণ না করাকে আল্লাহ তা’আলার দান বলে গণ্য করে। কিন্তু ঐ নির্বোধেরা বুঝে না যে, ঐ মুজাহিদেরা জিহাদে অংশগ্রহণের ফলে যে পুণ্য লাভ করেছে তা হতে তারা সম্পূর্ণরূপে বঞ্চিত রয়েছে। যদি তারাও জিহাদে অংশ নিত তবে মুসলমানদের মত তারাও গাযী হওয়ার মর্যাদা এবং ধৈর্য ধারণের পুণ্য লাভ করতে অথবা শহীদ হওয়ার গৌরব লাভ করতো। পক্ষান্তরে যদি মুসলমান মুজাহিদগণ আল্লাহ তাআলার অনুগ্রহ প্রাপ্ত হয় অর্থাৎ শত্রুদের উপর জয়ী হয় এবং শত্রুরা সমূলে ধ্বংস হয়ে যায় আর এর ফলে মুসলমানেরা যুদ্ধলব্ধ মাল নিয়ে ও দাস-দাসী নিয়ে নিরাপদে প্রত্যাবর্তন করে, তবে ঐ মুনাফিকরা চরম দুঃখিত হয় এবং দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে এত হা-হুতাশ করে ও এমন এমন কথা মুখ দিয়ে বের করে যে, যেন মুসলমানদের সঙ্গে তাদের কোন সম্বন্ধই ছিল না। তাদের ধর্মই যেন অন্য। তারা তখন বলে, হায়! আমরাও যদি তাদের সঙ্গে থাকতাম তবে আমরাও গনীমতের মাল পেতাম এবং তাদের মত আমরাও দাস-দাসী ও ধন-সম্পদের অধিকারী হয়ে যেতাম।
মোটকথা, দুনিয়া লাভই তাদের চরম ও পরম উদ্দেশ্য। সুতরাং যারা ইহকালের বিনিময়ে পরকালকে বিক্রি করে তাদের বিরুদ্ধে মুসলমানদের জিহাদ ঘোষণা করা উচিত। তারা কুফরী ও অবিশ্বাসের কারণে দুনিয়ার সামান্য লাভের বিনিময়ে আখিরাতকে ধ্বংস করেছে। তাই মুনাফিকদের বলা হচ্ছে- হে মুনাফিকের দল! তোমরা জেনে রেখো যে, যারা আল্লাহ তাআলার পথের মুজাহিদ তারা কখনও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে না। তাদের উভয় হস্তে লাড়ু রয়েছে। নিহত হলেও তাদের জন্য মহান আল্লাহর নিকট রয়েছে বিরাট প্রতিদান এবং বিজয়ী বেশে ফিরে আসলেও রয়েছে গনীমতের মালের বিরাট অংশ।
সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে রয়েছেঃ “আল্লাহর পথের মুজাহিদের যামিন হচ্ছেন স্বয়ং আল্লাহ। হয় তিনি তাকে মৃত্যু দান করে জান্নাতে পৌছিয়ে দেবেন, আর না হয় যেখান হতে সে বের হয়েছে সেখানেই যুদ্ধলব্ধ মালসহ নিরাপদে ফিরিয়ে আনবেন।
তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
টিকা: ১:-
উল্লেখ্য এ ভাষণটি এমন এক সময় নাযিল হয়েছিল যখন ওহোদ যুদ্ধের পরাজয়ের পর মদীনার পার্শ্ববর্তী এলাকার গোত্রগুলোর সাহস বেড়ে গিয়েছিল এবং বিপদ আপদ চতুর্দিক থেকে মুসলমানদেরকে ঘিরে ফেলেছিল। সে সময় প্রায় প্রতিদিনই নানান ধরনের দুঃসংবাদ আসতো। উমুক গোত্র বিরূপ হয়ে গেছে। মুসলমানদের সাথে এক নাগাড়ে বিশ্বাসঘাতকতা করা হচ্ছিল। তাদের প্রচারকদেরকে দ্বীন প্রচারের উদ্দেশ্যে দাওয়াত দিয়ে ধোঁকা দিয়ে হত্যা করা হতো। মদীনার বাইরে তাদের জানমালের কোন নিরাপত্তা ছিল না। এ অবস্থায় এসব বিপদের ঢেউয়ের আঘাতে যাতে ইসলামের তরী ডুবে না যায় সেজন্য মুসলমানদের পক্ষ থেকে একটি জোরদার প্রচেষ্টা ও জীবন উৎসর্গকারী সংগ্রাম পরিচালনার প্রয়োজন ছিল।
টিকা: ২:-
এর এক অর্থ এও হতে পারে যে, নিজে তো গড়িমসি করেই, এমন কি অন্যদেরকেও হিম্মতহারা করে দেয়, তাদের বুকে ভয় ঢুকিয়ে দেয় এবং জিহাদ বন্ধ করার জন্য এমন ধরনের কথা বলতে থাকে যার ফলে তারা নিজেদের জায়গায় চুপচাপ বসে থাকে।
টিকা: ৩:-
অর্থাৎ আল্লাহর পথে লড়াই করা দুনিয়ার লাভ ও দুনিয়ার স্বার্থ পূজারী লোকদের কাজ নয়। এটা এমন এক ধরনের লোকের কাজ যারা কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য কাজ করে, যারা আল্লাহ ও আখেরাতের ওপর পূর্ণ আস্থা রাখে এবং নিজেদের পার্থিব প্রাচুর্য ও সমৃদ্ধির সমস্ত সম্ভাবনা ও সব ধরনের পার্থিব স্বার্থ একমাত্র আল্লাহর জন্য ত্যাগ করতে প্রস্তুত হয়ে যায়। তাদের একমাত্র উদ্দেশ্য হয়, তাদের রব যেন তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে যান এবং এই দুনিয়ায় তাদের ত্যাগ কুরবানী বিফল হয়ে গেলেও আখেরাতেও যেন বিফলে না যায়।
তাফসীরে আবুবকর যাকারিয়া বলেছেন:-
[১] আয়াতের প্রথমাংশে জিহাদের জন্য অস্ত্র সংগ্রহ এবং আয়াতের দ্বিতীয় অংশে জিহাদে অংশ গ্রহণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এতে বেশকিছু শিক্ষা রয়েছে – (১) কোন ব্যাপারে বাহ্যিক উপকরণ অবলম্বন করা তাওয়াক্কুল বা আল্লাহর উপর নির্ভরশীলতার পরিপন্থী নয়। (২) অস্ত্র সংগ্রহের নির্দেশ দেয়া হলেও এমন প্রতিশ্রুতি কিন্তু দেয়া হয়নি যে, এ অস্ত্রের কারণে তোমরা নিশ্চিতভাবেই নিরাপদ হতে পারবে । এতে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, বাহ্যিক উপকরণ অবলম্বন করাটা মূলতঃ মানসিক স্বস্তি লাভের জন্যই হয়ে থাকে। (৩) এ আয়াতে প্রথমে জিহাদের প্রস্তুতি গ্রহণের নির্দেশ অতঃপর জিহাদের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হওয়ার সুশৃংখল নিয়ম বাতলে দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, তোমরা যখন জিহাদের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হবে, তখন একা একা বাহির হবেনা, বরং ছোট ছোট দলে বাহির হবে কিংবা (সম্মিলিত) বড় সৈন্যদল নিয়ে বাহির হবে। তার কারণ, একা একা যুদ্ধ করতে গেলে ক্ষতির আশংকা রয়েছে। শক্ররা এমন সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে মোটেই শৈথিল্য করে না।
[২] মুজাহিদ বলেন, এ আয়াত ও পূর্ববর্তী আয়াতে যাদেরকে বলা হয়েছে, তারা হচ্ছে, মুনাফিক। যারা সাহাবাদের সাথে মিশে থাকত। [আত-তাফসীরুস সহীহ] যুদ্ধের ঘোষণা শোনার সথে সাথেই তাদের মধ্যে গড়িমসি শুরু হত। এরপর যদি মুসলিমদের কোন বিপদ হতো, তখন তারা বলত যে, তাদের সাথে না থাকাটা আমাদের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে আশীর্বাদস্বরূপ। অন্য আয়াতে বলা হয়েছে যে, এ অবস্থায় তারা খুশীও প্রকাশ করত। আল্লাহ বলেন, “তোমাদের মঙ্গল হলে তা তাদেরকে কষ্ট দেয় আর তোমাদের অমঙ্গল হলে তারা তাতে আনন্দিত হয়”। [সূরা আলে-ইমরান :১২০]
“আপনার মংগল হলে তা ওদেরকে কষ্ট দেয় এবং আপনার বিপদ ঘটলে ওরা বলে, “আমরা তো আগেই আমাদের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করেছিলাম” এবং ওরা উৎফুল্ল চিত্তে সরে পড়ে” [আত-তাওবাহ্: ৫০] পক্ষান্তরে যখন মুসলিমদের কোন বিজয়ের কথা শুনত, তখন তারা বোল পাল্টিয়ে ফেলত যাতে করে যুদ্ধলন্দ সম্পদে ভাগ বসাতে পারে। যদিও মুসলিমদের বিজয় তাদের মনের জ্বালা বাড়িয়ে দেয়। [আদওয়াউল বায়ান]
তাফসীরে আহসানুল বায়ান বলেছেন:-
[১] حِذْرَكُمْ অর্থাৎ, অস্ত্র-শস্ত্র, যুদ্ধ-সামগ্রী এবং অন্য উপকরণাদি দ্বারা আত্মরক্ষার ব্যবস্থা গ্রহণ কর।
[২] এখানে মুনাফিকদের কথা বলা হচ্ছে। ‘পিছনে থাকবেই’-এর অর্থ, জিহাদে না গিয়ে পিছনে থেকে যাবেই।
[৩] অর্থাৎ, জিহাদে বিজয় এবং গনীমতের মাল লাভ হয়।
[৪] অর্থাৎ, গনীমতের মালের অংশ পাওয়া যেত, যা দুনিয়াদার মানুষের মূল লক্ষ্য।
[৫] অর্থাৎ, যেন সে তোমাদের ধর্মাবলম্বিদের কেউ নয়; বরং সে যেন অপরিচিত পর কেউ।
[৬] شَرَى يَشْرِي ক্রয়-বিক্রয় উভয় অর্থেই ব্যবহার হয়। যদি এর অর্থ করা হয় বিক্রয় করা, তাহলে فَلْيُقَاتِلْ ‘ফে’ল’ বা ক্রিয়াপদের ‘ফায়েল’ বা কর্তৃপদ হবে [الَّذِينَ يَشْرُونَ الْحَيَاةَ] আর যদি অর্থ করা হয় ক্রয় করা, তাহলে الَّذِيْنَ হবে মাফউল বা কর্মপদ এবং فَلْيُقَاتِلْ ক্রিয়ার কর্তৃপদ المُؤْمِنُ النَّافِر (জিহাদের পথে যাত্রাকারী মু’মিন) ঊহ্য থাকবে। মু’মিনের তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা উচিত, যারা পরকালের বিনিময়ে পার্থিব জীবনকে ক্রয় করে। অর্থাৎ, যারা দুনিয়ার সামান্য মালের বিনিময়ে দ্বীনকে বিক্রি করে দিয়েছে। এ থেকে মুনাফিক এবং কাফেরদেরকে বুঝানো হয়েছে। (ইবনে কাসীর এই অর্থই বর্ণনা করেছেন।)
তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ বলেছেন:-
আল্লাহ তা‘আলা মু’মিনদেরকে কাফির-মুশরিক শত্র“দের ব্যাপারে সর্বোচ্চ সর্তক থাকতে নির্দেশ প্রদান করতঃ এক দলের পর আরেক দল বা একত্রে সকলকে শত্র“দের বিরুদ্ধে বের হবার আদেশ দিচ্ছেন। এ নির্দেশ শত্র“দের বিরুদ্ধে সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করা শামিল করে। তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ করার জন্য অস্ত্র সংগ্রহ ও প্রশিক্ষণ গ্রহণ, তাদের চক্রান্ত প্রতিহত করতে কৌশল গ্রহণ ও অর্জন সর্বোপরি তাদের বিরুদ্ধে জিহাদে অংশ গ্রহণ করা। এজন্য আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:
فَانْفِرُوْا ثُبَاتٍ
অর্থাৎ বিচ্ছিন্নভাবে যে এক দল তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ করবে আরেক দল অবস্থান করবে, অথবা প্রয়োজনে সকলেই বের হয়ে যাবে।
তারপর মুনাফিকদের কথা উল্লেখ করেছেন। তারা যখন মু’মিনদের ওপর কোন বিপদ-আপদ দেখে যে, মু’মিনরা যুদ্ধের ময়দানে শহীদ হয়েছে বা আহত হয়েছে তখন তারা বলে, আল্লাহ তা‘আলার অনুগ্রহ যে আমরা সেখানে যাইনি। এদের ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(إِنْ تُصِبْكَ حَسَنَةٌ تَسُؤْهُمْ وَإِنْ تُصِبْكَ مُصِيْبَةٌ يَّقُوْلُوْا قَدْ أَخَذْنَآ أَمْرَنَا مِنْ قَبْلُ وَيَتَوَلَّوْا وَّهُمْ فَرِحُوْنَ)
“তোমার মঙ্গল হলে তা তাদেরকে পীড়া দেয় এবং তোমার বিপদ ঘটলে তারা বলে, ‘আমরা তো পূর্বেই আমাদের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করেছিলাম’এবং তারা উৎফুল্লচিত্তে সরে পড়ে।”(সূরা তাওবাহ ৯:৫০)
পক্ষান্তরে যদি মু’মিনরা কোন বিজয় লাভ করে বা গনীমত পায় তাহলে আফসোস করে বলে হায় যদি সেখানে থাকতাম তাহলে সফলকাম হতাম। মু’মিনদের সফলতা দেখে তারা ব্যথিত হয়।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(إِنْ تَمْسَسْكُمْ حَسَنَةٌ تَسُؤْهُمْ)
“যদি কোন কল্যাণ তোমাদের কাছে আসে তবে তাদের খারাপ লাগে।”(সূরা আলি-ইমরান ৩:১২০)
অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা মু’মিনদেরকে তাঁর পথে যুদ্ধ করার প্রতি উৎসাহ প্রদান করছেন। কারণ যারা আল্লাহ তা‘আলার রাস্তায় যুদ্ধ করবে তারা শহীদ হোক বা বিজয় লাভ করুক উভয় অবস্থায় মহা প্রতিদান পাবে।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(قُلْ هَلْ تَرَبَّصُوْنَ بِنَآ إِلَّآ إِحْدَي الْحُسْنَيَيْنِ)
“বল: ‘তোমরা আমাদের দু’টি মঙ্গলের একটির প্রতীক্ষা করছ।”(সূরা তাওবাহ ৯:৫২)
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: যে ব্যক্তি একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার পথে জিহাদ করার জন্য বের হয়, আল্লাহ তা‘আলার ওপর বিশ্বাস করে এবং রাসূলকে সত্য বলে জানে সে ব্যক্তির দায়িত্ব আল্লাহ তা‘আলা নিয়েছেন। হয় তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন অথবা তাকে গনীমত বা প্রতিদানসহ সেই বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে আসবেন যে বাড়ি থেকে বের হয়ে আসছিল। (সহীহ বুখারী হা: ৩১২৩, সহীহ মুসলিম হা: ১৯৭৬)
তাই মু’মিনদের উচিত সদা শত্র“দের ব্যাপারে সর্তক থাকা, আর প্রয়োজনানুপাতে তাদের বিরুদ্ধে আল্লাহ তা‘আলার পথে যুদ্ধ করা।
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. মু’মিনদের সর্বদা শত্র“দের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকা আবশ্যক।
২. মু’মিনদের আল্লাহ তা‘আলার পথে যুদ্ধ করার জন্য প্রশিক্ষণ গ্রহণ করা উচিত।
৩. মুনাফিকরা সর্বদা মু’মিনদের অমঙ্গল কামনা করে।
৪. সর্বোত্তম মৃত্যু শহীদি মৃত্যু। আল্লাহ তা‘আলার রাস্তায় যুদ্ধ করলে উভয় অবস্থায় মহাসাফল্য।