(Book# 114/١٥٢)-৩৫৪ www.motaher21.net إِنَّ اللَّهَ لَا يَغْفِرُ أَن يُشْرَكَ بِهِۦ নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমা করেন না তাঁর সাথে শরীক করাকে। Verily, Allah forgives not (the sin of) setting up partners (in worship) with Him, সুরা: আন-নিসা আয়াত নং :-১১৬-১২২

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ

(Book# 114/١٥٢)-৩৫৪
www.motaher21.net

إِنَّ اللَّهَ لَا يَغْفِرُ أَن يُشْرَكَ بِهِۦ

নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমা করেন না তাঁর সাথে শরীক করাকে।
Verily, Allah forgives not (the sin of) setting up partners (in worship) with Him,

সুরা: আন-নিসা
আয়াত নং :-১১৬-১২২

اِنَّ اللّٰهَ لَا یَغْفِرُ اَنْ یُّشْرَكَ بِهٖ وَ یَغْفِرُ مَا دُوْنَ ذٰلِكَ لِمَنْ یَّشَآءُؕ وَ مَنْ یُّشْرِكْ بِاللّٰهِ فَقَدْ ضَلَّ ضَلٰلًۢا بَعِیْدًا

আল্লাহ কেবলমাত্র শিরকের গোনাহ মাফ করেন না। এছাড়া আর যাবতীয় গোনাহ তিনি যাকে ইচ্ছা মাফ করে দেন। যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে আর কাউকে শরীক করে, সে গোমরাহীর মধ্যে অনেক দূর এগিয়ে গেছে।

আয়াত নং :-১১৭

اِنْ یَّدْعُوْنَ مِنْ دُوْنِهٖۤ اِلَّاۤ اِنٰثًاۚ وَ اِنْ یَّدْعُوْنَ اِلَّا شَیْطٰنًا مَّرِیْدًاۙ

এ ধরনের লোকেরা আল্লাহকে বাদ দিয়ে দেবীর পূজা করে। তারা সেই বিদ্রোহী শয়তানের পূজা করে,

আয়াত নং :-১১৮

لَّعَنَهُ اللّٰهُۘ وَ قَالَ لَاَتَّخِذَنَّ مِنْ عِبَادِكَ نَصِیْبًا مَّفْرُوْضًاۙ

যাকে আল্লাহ‌ অভিশপ্ত করেছেন। (তারা সেই শয়তানের আনুগত্য করছে) যে আল্লাহকে বলেছিল, “আমি তোমার বান্দাদের থেকে একটি নির্দিষ্ট অংশ নিয়েই ছাড়বো।

আয়াত নং :-১১৯

وَّ لَاُضِلَّنَّهُمْ وَ لَاُمَنِّیَنَّهُمْ وَ لَاٰمُرَنَّهُمْ فَلَیُبَتِّكُنَّ اٰذَانَ الْاَنْعَامِ وَ لَاٰمُرَنَّهُمْ فَلَیُغَیِّرُنَّ خَلْقَ اللّٰهِؕ وَ مَنْ یَّتَّخِذِ الشَّیْطٰنَ وَلِیًّا مِّنْ دُوْنِ اللّٰهِ فَقَدْ خَسِرَ خُسْرَانًا مُّبِیْنًاؕ

আমি তাদেরকে পথভ্রষ্ট করবো। তাদেরকে আশার ছলনায় বিভ্রান্ত করবো। আমি তাদেরকে হুকুম করবো এবং আমার হুকুমে তারা পশুর কান ছিঁড়বেই। আমি তাদেরকে হুকুম করবো এবং আমার হুকুমে তারা আল্লাহর সৃষ্টি আকৃতিতে রদবদল করে ছাড়বেই।” যে ব্যক্তি আল্লাহকে বাদ দিয়ে এই শয়তানকে বন্ধু ও অভিভাবক বানিয়েছে সে সুস্পষ্ট ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন।

আয়াত নং :-১২০

یَعِدُهُمْ وَ یُمَنِّیْهِمْؕ وَ مَا یَعِدُهُمُ الشَّیْطٰنُ اِلَّا غُرُوْرًا

সে তাদের কাছে ওয়াদা করে এবং তাদেরকে নানা প্রকার আশা দেয়, কিন্তু শয়তানের সমস্ত ওয়াদা প্রতারণা ছাড়া আর কিছুই নয়।

আয়াত:- ১২১

أُولٰٓئِكَ مَأْوٰىهُمْ جَهَنَّمُ وَلَا يَجِدُونَ عَنْهَا مَحِيصًا

এদেরই আশ্রয়স্থল জাহান্নাম। আর তারা সেখান থেকে পালাবার জায়গা পাবে না।

আয়াত:- ১২২

وَالَّذِينَ ءَامَنُوا وَعَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ سَنُدْخِلُهُمْ جَنّٰتٍ تَجْرِى مِن تَحْتِهَا الْأَنْهٰرُ خٰلِدِينَ فِيهَآ أَبَدًا ۖ وَعْدَ اللَّهِ حَقًّا ۚ وَمَنْ أَصْدَقُ مِنَ اللَّهِ قِيلًا

আর যারা ঈমান এনেছে এবং নেক আমল করেছে, অচিরেই তাদেরকে আমি প্রবেশ করাব জান্নাতসমূহে, যার তলদেশে প্রবাহিত হচ্ছে নহরসমূহ। সেখানে তারা হবে স্থায়ী। আল্লাহর প্রতিশ্রুতি সত্য। আর কথায় আল্লাহ অপেক্ষা অধিক সত্যবাদী কে?

১১৬-১২২ নং আয়াতের তাফসীর:

তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ বলেছেন:-

শির্ক সম্পর্কে সূরা বাকারাহ ও অত্র সূরার শুরুতে আলোচনা করা হয়েছে। যে প্রকার শির্কের গুনাহ আল্লাহ তা‘আলা ক্ষমা করবেন না তা হল শির্কে আকবার বা বড় শির্ক। যেমন মাযারে দু‘আ করা, চাওয়া, জবেহ করা, সিজদা করা, কোন গাছের পূজা করা, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) গায়েব জানেন বলে বিশ্বাস করা, তিনি সর্বত্র হাজির-নাযির বলে বিশ্বাস করা। মোটকথা আকীদাহ ও ইবাদত সংক্রান্ত বিষয় আল্লাহ তা‘আলাকে ব্যতীত অন্য কারো জন্য সম্পাদন বা তাকে সমকক্ষ নির্ধারণ করাই শির্কে আকবার।

إناثا (নারী) বলতে সে মূর্তি বা দেবদেবীগুলো বুঝানো হয়েছে, যাদের নাম ছিল স্ত্রীবাচক। যেমন উযযা, মানাত, নায়েলা ইত্যাদি। অথবা ফেরেশতাদেরকে বুঝানো হয়োছে। কেননা মুশরিকদের ধারণা মতে ফেরেশতাগণ আল্লাহ তা’আলার কন্যা। (নাউযুবিল্লাহ)

(وَإِنْ يَّدْعُوْنَ إِلَّا شَيْطٰنًا مَّرِيْدًا)

‘বিদ্রোহী শয়তানেরই পূজা করে’ অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত ফেরেশতা বা অন্য কোন কিছুর ইবাদত করাই হল শয়তানের ইবাদত করা। উবাই বিন কাব বলেন: প্রত্যেক মূর্তির সাথে জিন শয়তান রয়েছে। (ইবনু কাসীর, ২/৪৬১) আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন:

(أَلَمْ أَعْهَدْ إِلَيْكُمْ يٰبَنِيْٓ اٰدَمَ أَنْ لَّا تَعْبُدُوا الشَّيْطٰنَ ج إِنَّه۫ لَكُمْ عَدُوٌّ مُّبِيْنٌ)

“হে বানী আদম! আমি কি তোমাদেরকে নির্দেশ দিইনি, তোমরা শয়তানের ইবাদত কর না; সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্র।”(সূরা ইয়াসিন ৩৬:৬০)

শয়তানের ওপর আল্লাহ তা‘আলার লা‘নত। কারণ শয়তান বলল:

১. আমি নির্দিষ্ট কিছু বান্দাকে পথভ্রষ্ট করবই। অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন, শয়তান বলে আমি আপনার সব বান্দাকে পথভ্রষ্ট করবই:

(إِلَّا عِبَادَكَ مِنْهُمُ الْمُخْلَصِيْنَ)

‘তবে তাদের মধ্যে আপনার নির্বাচিত বান্দাগণ ব্যতীত।’(সূরা হিজর ১৫:৪০)

২. وَلَأُمَنِّيَنَّهُمْ ‘তাদের হৃদয়ে মিথ্যা বাসনার সৃষ্টি করব’অর্থাৎ আমি তাদেরকে তাওবাহ ত্যাগ করার ব্যাপারে মিথ্যা বাসনাকে সৌন্দর্যময় করে দেব। আমি আশার ওয়াদা দেব এবং তাওবাহ করতে বিলম্ব করার নির্দেশ দেব।

৩. আমি তাদেরকে নির্দেশ দেব, ফলে তারা পশুর কর্ণচ্ছেদ করবে।

সুদ্দী (রহঃ) বলেন: এটা হল বাহিরা, সায়েবা পশুর নিদর্শন ও তাদের আকার-আকৃতি। এ পশুগুলো মুশরিকরা মূর্তিদের নামে উৎসর্গ করত এবং নিদর্শন স্বরূপ কানে ছিদ্র করত।

৪. আমি নির্দেশ দেব, ফলে তারা সৃষ্টি পরিবর্তন করবে।

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তাদের ওপর আল্লাহ তা‘আলার লা‘নত যারা উল্কী করে ও করিয়ে নেয়, ভ্রুর চুল তুলে ও তুলিয়ে নেয় এবং যারা সৌন্দর্যের জন্য দাঁত চিকন করে আল্লাহ তা‘আলার সৃষ্টি পরিবর্তন করে। (সহীহ বুখারী হা: ৫৯৩১) এছাড়া ক্লিন সেভ ও অন্যান্য সকল সৃষ্টির পরিবর্তন এতে শামিল।

এসবই শয়তানের কাজ। আর যে ব্যক্তি এসব করবে সে শয়তানকে বন্ধু বানিয়ে নিল। আর যে ব্যক্তি শয়তানকে বন্ধু বানিয়ে নিল সে ক্ষতিগ্রস্ত। কেননা শয়তান তাদেরকে যে প্রতিশ্র“তি প্রদান করে তা সবই ধোঁকা।

কিয়ামাতের দিন শয়তান বলবে-

(وَقَالَ الشَّيْطٰنُ لَمَّا قُضِيَ الْأَمْرُ إِنَّ اللّٰهَ وَعَدَكُمْ وَعْدَ الْحَقِّ وَوَعَدْتُّكُمْ فَأَخْلَفْتُكُمْ ط وَمَا كَانَ لِيَ عَلَيْكُمْ مِّنْ سُلْطَانٍ)

“যখন বিচারকার্য সম্পন্ন হবে তখন শয়তান বলবে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদেরকে প্রতিশ্র“তি দিয়েছিলেন সত্য প্রতিশ্র“তি, আমিও তোমাদেরকে প্রতিশ্র“তি দিয়েছিলাম, কিন্তু আমি তোমাদেরকে প্রদত্ত প্রতিশ্র“তি ভঙ্গ করেছি। আমার তো তোমাদের ওপর কোন আধিপত্য ছিল না।” (সূরা ইবরাহীম ১৪:২২) শয়তান এবং শয়তানের বন্ধুরা উভয়েরই ঠিকানা জাহান্নাম। পক্ষান্তরে যারা ঈমানদার তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত যার তলদেশে নহরসমূহ প্রবাহিত।

আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:

১. আল্লাহ তা‘আলা শির্ক-এর গুনাহ ব্যতীত যাকে ইচ্ছা সব মাফ করে দেবেন। কিন্তু শির্কে আকবারের গুনাহ মাফ করবেন না।
২. আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত অন্য সকলের ইবাদতকারীরা শয়তান পূজারী।
৩. শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করা শয়তানকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করার নামান্তর।
৪. শয়তানের অস্ত্র হল মিথ্যা প্রতিশ্রুতি।

তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-

টিকা:১৪৪) এই রুকূ’তে ওপরের প্রসঙ্গের জের টেনে বলা হয়েছেঃ নিজের জাহেলিয়াতের স্রোতে ভেসে এ ব্যক্তি যে পথে পাড়ি জামিয়েছে সেটি কোন্‌ ধরনের পথ এবং সৎলোকদের দল থেকে আলাদা হয়ে যাদের সাথে সে জোট বেঁধেছে তারা কেমন লোক।

টিকা:১৪৫) শয়তানকে কেউ আনুষ্ঠানিকভাবে পূজা অর্চনা করে না বা তাকে সরাসরি আল্লাহর মর্যাদায় অভিসিক্ত করে না। এ অর্থে কেউ শয়তানকে মাবুদ বানায় না, একথা ঠিক। তবে নিজের প্রবৃত্তি, ইচ্ছা আশা-আকাংখা ও চিন্তা–ভাবনার লাগাম শয়তানের হাতে তুলে দিয়ে যেদিকে সে চালায় সেদিকে চলা এবং এমনভাবে চলা যেন সে শয়তানের বান্দা এবং শয়তান তার প্রভু—এটাইতো শয়তানকে মাবুদ বানাবার একটি পদ্ধতি। এ থেকে জানা যায়, বিনা বাক্য ব্যয়ে, নির্দেশ মেনে চলা এবং অন্ধভাবে কারো হুকুম পালন করার নামই ‌‌‌‌‌‘ইবাদত।’ আর যে ব্যক্তি এভাবে কারও আনুগত্য করে সে আসলে তার ইবাদাত করে।

টিকা:১৪৬) অর্থাৎ তাদের সময়, পরিশ্রম, প্রচেষ্টা, শক্তি ও যোগ্যতা এবং তাদের সন্তান ও ধন-সম্পদ থেকে নিজের একটি অংশ নিয়ে নেবো। তাদের এমনভাবে প্ররোচিত করবো যার ফলে তারা এসবের একটি বিরাট অংশ আমার পথে ব্যয় করবে।

টিকা:১৪৭) আরববাসীদের বহুতর কুসংস্কারের মধ্যে একটির দিকে এখানে ইশারা করা হয়েছে। তাদের নিয়ম ছিল, উটনী পাঁচটি বা দশটি বাচ্চা প্রসব করার পর তার কান চিরে তাকে তারা নিজেদের দেবতার নামে ছেড়ে দিতো এবং তাকে কোন কাজে ব্যবহার করা হারাম মনে করতো। এভাবে যে উটের ঔরশে দশটি বাচ্চা জন্ম নিতো তাকেও দেবতার নামে উৎসর্গ করা হতো। পশুর কান চিরে দেয়া দেবতার নামে উৎসর্গ করার আলামত হিসেবে বিবেচিত হতো।

টিকা:১৪৮) আল্লাহর সৃষ্টি-আকৃতিতে রদবদল করার অর্থ বস্তুর সৃষ্টিকালীন কাঠামোও আকার-আকৃতির পরিবর্তন নয়। এ অর্থ গ্রহণ করলে তো সমগ্র মানব সভ্যতা-সংস্কৃতি শয়তানের অবৈধ হস্তক্ষেপের ফসল গণ্য হবে। কারণ আল্লাহর সৃষ্ট বস্তুতে মানুষের হস্তক্ষেপের নামই হচ্ছে সভ্যতা ও সংস্কৃতি। আসলে এখানে যে রদবদলকে শয়তানী কাজ বলা হয়েছে সেটি হচ্ছে, কোন বস্তুকে আল্লাহ‌ যে কাজের জন্য সৃষ্টি করেননি তাকে সেই কাজে লাগানো এবং যে কাজের জন্য সৃষ্টি করেছেন সে কাজে না লাগানো। অন্যকথায় বলা যায়, মানুষ নিজের ও বস্তুর প্রকৃতির বিরুদ্ধে যেসব কাজ করে এবং প্রকৃতির প্রকৃত উদ্দেশ্য উপেক্ষা করে যেসব পন্থা অবলম্বন করে তা সবই এই আয়াতের প্রেক্ষিতে শয়তানের বিভ্রান্তিকর আন্দোলনের ফসল। যেমন লূত জাতির কাজ, জন্ম শাসন, বৈরাগ্যবাদ, ব্রহ্মচর্য, নারী-পুরুষের বন্ধাকরণ, পুরুষদেরকে খোজা বানানো, মেয়েদের ওপর প্রকৃতি যে দায়িত্ব অর্পণ করেছে সে দায়িত্ব সম্পাদন করা থেকে তাদেরকে সরিয়ে রাখা এবং সমাজ-সংস্কৃতির এমনসব বিভাগে তাদের টেনে আনা যেগুলোর জন্য পুরুষদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে। এসব কাজ এবং শয়তানের শাগরিদরা দুনিয়ায় এ ধরনের আরো যেসব অসংখ্য কাজ করে বেড়াচ্ছে সেগুলো। আসলে এই অর্থ প্রকাশ করছে যে, তারা বিশ্ব-জাহানের স্রষ্টার নির্ধারিত বিধি-বিধান ভুল মনে করে এবং তার মধ্যে সংস্কার সাধন করতে চায়।

টিকা:১৪৯) শয়তানের সমস্ত কারবারটাই চলে মৌখিক ওয়াদা ও আশা-ভরসা দেবার ভিত্তিতে। সে ব্যক্তিগত বা সমষ্টিক পর্যায়ে যখন মানুষকে কোন ভুল পথে পরিচালনা করতে চায়, তার সামনে এক আকাশ কুসুম রচনা করে। কাউকে ব্যক্তিগত আনন্দ উপভোগ এ সাফল্য লাভের আশায় উদ্বেল করে তোলে। কাউকে জাতীয় উন্নতি ও অগ্রগতির আশ্বাস দেয়। কাউকে মানবজাতির কল্যাণ ও শ্রীবৃদ্ধির নিশ্চয়তা বিধান করে। কাউকে সত্যের কাছে পৌঁছে গেছে বলে মানসিক সান্ত্বনা দান করে। কারো মনে এই ধারণা বদ্ধমূল করে যে, আল্লাহ‌ বা আখেরাত বলে কিছুই নেই, মরে যাওয়ার পর সবাইকে মাটিতে মিশে যেতে হবে। কাউকে আশ্বাস দেয়, আখেরাত বলে যদি কিছু থেকেও থাকে তাহলে উমুক হুজুরের বদৌলতে, উমুকের দোয়ার তোফায়েলে সেখানকার ধর-পাকড় থেকে নিষ্কৃতি পাওয়া যাবে। মোটকথা যাকে যে ধরনের আশার ছলনায় ভুলানো যায় তাকে সেভাবে নিজের প্রতারণা জালে ফাঁসাবার চেষ্টা করে।

তাফসীরে আবুবকর ‌যাকারিয়া‌ বলেছেন:-

[১] বর্তমান পৃথিবীতে ইয়াযিদী ফের্কা ছাড়া শয়তানকে কেউ আনুষ্ঠাকিভাবে পূজা করে না বা তাকে সরাসরি আল্লাহর মর্যাদায় অভিষিক্ত করে না। এ অর্থে কেউ শয়তানকে মা’বুদ বানায় না একথা সত্য; তবে নিজের প্রবৃত্তি, ইচ্ছা-আকাংঙ্ক্ষা ও চিন্তা-ভাবনার লাগাম শয়তানের হাতে তুলে দিয়ে যেদিকে সে চালায় সেদিকেই চলা এবং এমনভাবে চলা যেন সে শয়তানের বান্দা ও শয়তান তার প্রভু- এটাই তো শয়তানকে মা’বুদ বানাবার একটি পদ্ধতি। এ থেকে জানা যায়, বিনা বাক্য ব্যয়ে নির্দেশ মেনে চলা এবং অন্ধভাবে কারো হুকুম পালন করার নামই ইবাদাত। আর যে ব্যক্তি এভাবে কারো আনুগত্য করে, সে আসলেই তার ইবাদাত করে।

[২] আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেনঃ আল্লাহ্ তা’আলার লা’নত করেছেন সে সমস্ত মহিলাদের উপর যারা শরীর কেটে উল্কি আঁকে এবং যারা এ অংকনের কাজ করে, আরো লা’নত করেছেন যারা সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য ভ্রু কাটে এবং যারা সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য দাঁত কাটে। আল্লাহর সৃষ্টিকে পরিবর্তন করে। [বুখারীঃ ৪৮৮৬] আয়াতে বর্ণিত, (خَلْقَ اللّٰهِ) অর্থ উপরে করা হয়েছে, আল্লাহর সৃষ্টি। এর আরেক অর্থ, ‘আল্লাহর দ্বীন’। যা ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত হয়েছে। [তাবারী] সুতরাং দ্বীনের মধ্যে পরিবর্তন, পরিবর্ধন করার জন্যও শয়তান কিছু লোককে নিয়োজিত করবে।

[৩] বস্তুত: আল্লাহর কথা বা বাণীর উপর কারও কথা সত্য হতে পারে না। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, সবচেয়ে উত্তম বাণী হচ্ছে, আল্লাহর কিতাব। আর সবচেয়ে উত্তম পদ্ধতি হচ্ছে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর দেয়া পদ্ধতি। আর সবচেয়ে খারাপ কাজ হচ্ছে, দ্বীনে প্রবর্তিত নতুন পদ্ধতিসমূহ, আর তোমাদেরকে যার ওয়াদা করা হয়েছে তা অবশ্যই আসবে, তোমরা তাকে অপারগ করে দিতে সক্ষম নও। [বুখারী: ৭২৭৭; মুসনাদে আহমাদ ৩/৩১০]

তাফসীরে আহসানুল বায়ান বলেছেন:-

[১] إِنَاثٌ (নারী) বলতে হয় সেই মূর্তি বা দেবীগুলোকে বুঝানো হয়েছে, যাদের নাম ছিল স্ত্রীবাচক। যেমন, উয্যা, মানাত, নায়েলা ইত্যাদি। অথবা এ থেকে ফিরিশতাদেরকে বুঝানো হয়েছে। কেননা, আরবের মুশরিকরা ফিরিশতাদেরকে আল্লাহর বেটী গণ্য করত এবং তাদের ইবাদত করত।

[২] মূর্তি, ফিরিশতা বা অন্য কোন সত্তার ইবাদত করার মানেই হল প্রকৃতার্থে শয়তানের ইবাদত করা। কারণ, শয়তানই মানুষকে আল্লাহ থেকে সরিয়ে অন্যের আস্তানা ও চৌকাঠে সিজদায় ঝুঁকিয়ে দেয়। পরের আয়াতে এ কথাই আলোচিত হয়েছে।

[৩] ‘নির্দিষ্ট অংশ’ বলতে এমন নযর-নিয়াযও হতে পারে যা মুশরিকরা নিজেদের মূর্তির জন্য এবং কবরে সমাধিস্থ ব্যক্তিবর্গের নামে নিবেদন করত, আবার জাহান্নামীদের সে সংখ্যাও হতে পারে, যাদেরকে শয়তান ভ্রষ্ট করে নিজের সাথে জাহান্নামে নিয়ে যাবে।

[৪] মিথ্যা বাসনা হল এমন আশা-আকাঙ্ক্ষা, যা মানুষের মনে শয়তানের কুমন্ত্রণা ও তার হস্তক্ষেপ দ্বারা সৃষ্টি হয় এবং মানুষের ভ্রষ্টতার কারণ হয়।

[৫] এটা হল ‘বাহিরা’ এবং ‘সায়েবা’ পশুগুলোর নিদর্শন ও তাদের আকার-আকৃতি। এই পশুগুলোকে মুশরিকরা মূর্তিদের নামে উৎসর্গ করত এবং নিদর্শন স্বরূপ তাদের কান চিড়ে দিত।

[৬] تَغْيِيْرُ خَلْقِ اللهِ আল্লাহর সৃষ্টির পরিবর্তন করা তিনভাবে হয়। প্রথম এটা, যা এখন আলোচিত হল। যেমন, কান কাটা, চিড়া এবং ছিদ্র করা। এ ছাড়াও আরো কয়েকভাবে তা করা হয়। যেমন, মহান আল্লাহ চাঁদ, সূর্য, পাথর এবং আগুন ইত্যাদি অনেক জিনিস বিভিন্ন উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করেছেন। কিন্তু তাঁর সৃষ্টির উদ্দেশ্য পরিবর্তন করে সেগুলোকে উপাস্যে পরিণত করা। আবার পরিবর্তনের অর্থ প্রাকৃতিক নিয়মে পরিবর্তন এবং হালাল ও হারামের মধ্যে পরিবর্তনও হয়। পুরুষের জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহণ করা অনুরূপ মহিলাদের গর্ভাশয় তুলে ফেলে তাদের সন্তান জন্মানোর যোগ্যতা থেকে বঞ্চিত করাও এই পরিবর্তনের আওতায় পড়ে। মেকআপের নামে ভ্রূর চুল চেঁছে নিজের আকৃতির পরিবর্তন করা এবং চেহারা ও হাতে দেগে নকসা করা ইত্যাদিও এরই মধ্যে শামিল। এ সবই হল শয়তানী কার্যকলাপ, তা থেকে বিরত থাকা জরুরী। তবে পশু দ্বারা অধিক উপকৃত হওয়ার জন্য, তার ভালো গোশত লাভের জন্য অথবা এই ধরনের আরো কোন বৈধ উদ্দেশ্যে যদি তার খাসি করানো হয়, তবে তা বৈধ হবে। এর সমর্থন এ থেকেও হয় যে, নবী করীম (সাঃ) খাসি ছাগল কুরবানীতে জবাই করেছেন। যদি পশুর খাসি করানো বৈধ না হত, তাহলে তিনি (সাঃ) তার কুরবানী করতেন না। (বা খাসি হওয়া একটি ত্রুটি বলে গণ্য করতেন।)

[৭] শয়তানের প্রতিশ্রুতি তো নিছক ধোকা-প্রতারণা বৈ কিছু নয়। পক্ষান্তরে আল্লাহর অঙ্গীকার যা তিনি ঈমানদারদের সাথে করেছেন তা সত্য ও যথার্থ। আল্লাহর চেয়ে অধিক সত্যবাদী কে হতে পারে? কিন্তু মানুষের ব্যাপার বড়ই বিস্ময়কর। এরা সত্যকে গ্রাহ্য কমই করে এবং মিথ্যার পিছনেই এরা বেশী চলে। তাই তো শয়তানী জিনিসের প্রচলন অতি ব্যাপক। পক্ষান্তরে আল্লাহর কর্ম সম্পাদন করার মানুষ প্রত্যেক যুগে এবং প্রত্যেক স্থানে কমই থেকেছে ও কমই পাওয়া যায়। [وَقَلِيلٌ مِنْ عِبَادِيَ الشَّكُورُ] “আমার কৃতজ্ঞ বান্দা কমই হয়।” (সাবাঃ ১৩)

১১৬-১২২ নং আয়াতের তাফসীর:

তাফসীরে ইবনে ‌কাসীর বলেছেন:-

এ সূরার প্রথম দিকে আমরা (আরবী) -এ আয়াতটির তাফসীর করেছি এবং তথায় এ আয়াতের সাথে সম্পর্কিত হাদীসগুলোও বর্ণনা করেছি। জামেউত তিরমিযীতে রয়েছে, হযরত আলী (রাঃ) বলতেনঃ কুরআন কারীমের অন্য কোন আয়াত আমার নিকট এ আয়াত অপেক্ষা প্রিয় নেই। দুনিয়া ও আখিরাত মুশরিকদের হাত ছাড়া হয়ে যাচ্ছে। তারা সত্য পথ হতে দূরে সরে পড়ছে। তারা নিজেদের জীবনকে ও উভয় জগতকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। এ মুশরিকরা নারীদের পূজারী ।

মুসনাদ-ই- ইবনে আবি হাতিমে রয়েছে, হযরত কা’ব (রাঃ) বলেন যে, প্রত্যেক প্রতিমার সাথে একটি মহিলা জ্বিন রয়েছে। হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন যে, (আরবী) শব্দের ভাবার্থ হচ্ছে মূর্তি। এটা অন্যান্য মুফাসৃসিরগণেরও উক্তি।

হযরত যহ্হাক (রঃ) বলেন যে, মুশরিকরা ফেরেশতাদেরকে পূজা করতো এবং তাদেরকে আল্লাহ তাআলার মেয়ে বলে বিশ্বাস করতো ও বলতোঃ ‘তাদের ইবাদত দ্বারা আমাদের একমাত্র উদ্দেশ্য হচ্ছে আল্লাহ তা’আলার নৈকট্য লাভ।’ তারা নারীদের আকারে ফেরেশতাদের ছবি প্রতিষ্ঠিত করতো। অতঃপর অন্ধভাবে তাদের ইবাদত করতো এবং বলতো যে, এগুলো হচ্ছে ফেরেশতাদের ছবি, তারা আল্লাহর কন্যা। এ তাফসীর (আরবী) (৫৩:১৯) -এ আয়াতের বিষয়বস্তুর সঙ্গে বেশ মিলে যায়। তথায় তাদের মূর্তিগুলোর নাম নিয়ে নিয়ে আল্লাহ তা’আলা বলেন- তাদের কি সুন্দর বিচার যে, ছেলেগুলো হচ্ছে তাদের এবং মেয়েগুলো আমার!’ আর এক জায়গায় আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ তারা আল্লাহর দাস ফেরেশতাদেরকে মহিলা মনে করে নিয়েছে।’ (৪৩:১৯) আর এক আয়াতে আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ তারা আল্লাহ ও জ্বিনদের মধ্যে বংশ সম্পর্ক স্থাপন করেছে। (৩৭:১৫৮)

হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে (আরবী)-এর অর্থ হচ্ছে মৃত। হযরত হাসান বসরী (রঃ) বলেন যে, আত্মাহীন প্রত্যেক জিনিসই (আরবী) সেটা শুষ্ক কাঠই হোক বা পাথরই হোক। কিন্তু এ উক্তি দুর্বল।

অতঃপর বলা হচ্ছে যে, প্রকৃতপক্ষে তারা শয়তানেরই পূজারী। কেননা, সে-ই তাকে এ পথে চালিত করেছে এবং আসলে তাকেই সে মানছে। যেমন আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ হে আদম সন্তান ! আমি কি তোমাদের কাছে অঙ্গীকার নেইনি যে, তোমরা শয়তানের পূজা করবে না’? (৩৬:৬০) এ কারণেই কিয়ামতের দিন ফেরেশতাগণ স্পষ্টভাবে বলে দেবেনঃ ‘আমাদেরকে ইবাদত করার দাবীদারেরা প্রকৃতপক্ষে শয়তানেরই ইবাদত করতো, তাদের অধিকাংশই তাদের উপর বিশ্বাস স্থাপন করেছিল। শয়তানকে আল্লাহ তা’আলা স্বীয় করুণা হতে দূর করে। দিয়েছিলেন। তাই সেও প্রতিজ্ঞা করেছিল যে, আল্লাহ তা’আলার বহুসংখ্যক বান্দাকে সে পথভ্রষ্ট করে ফেলবে। হযরত কাতাদাহ (রঃ) বলেন- অর্থাৎ প্রতি হাজারে নয়শ নিরানব্বই জনকে সে নিজের সাথে জাহান্নামে নিয়ে যাবে। একজন মাত্র অবশিষ্ট থাকবে যে জান্নাতে প্রবেশ লাভ করবে। সে বলেছিল, ‘আমি মানুষকে সত্যপথ হতে ভ্রষ্ট করবো, তাকে আমি এমন আশা দিতে থাকবো যে, সে তাওবা করা ছেড়ে দেবে, স্বীয় প্রবৃত্তির অনুসরণ করবে এবং মরণকে ভুলে যাবে। ফলে সে আখেরাত হতে বহু দূরে সরে পড়বে। তাদের দ্বারা আমি জন্তুর কান কাটিয়ে নিয়ে ছিদ্র করিয়ে দেবো এবং আল্লাহকে ছেড়ে অন্যের ইবাদতে লিপ্ত হওয়ার জন্যে তাদেরকে উপদেশ দিতে থাকবো। আল্লাহর তৈরী করা আকৃতি নষ্ট করার কার্যে তাদের উৎসাহিত করবো। যেমন অণ্ডকোষ কর্তিত করা। একটি হাদীসে এটার ব্যাপারেও নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। চেহারার উপর উল্কী করা এবং উল্কী করিয়ে নেয়া এও একটি অর্থ করা হয়েছে। সহীহ মুসলিমে এটা নিষিদ্ধ বলে ঘোষিত হয়েছে এবং যে এরূপ উল্কী করিয়ে নেয় তাকে অভিসম্পাত করা হয়েছে।

সহীহ সনদে হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, ‘আল্লাহর সৃষ্টি পরিবর্তন করতঃ সৌন্দর্য বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে যারা উল্কী করে ও করিয়ে নেয়, কপালের চুল তুলে ও তুলিয়ে নেয় এবং দাঁতে বিস্তৃতি সাধন করে, তাদের উপর অভিসম্পাত রয়েছে। আমি তাদের উপর অভিসম্পাত করবো না কেন যাদের উপর রাসূলুল্লাহ (সঃ) অভিসম্পাত করেছেন এবং যা আল্লাহ তা’আলার কিতাবে বিদ্যমান রয়েছে?’ অতঃপর তিনি (আরবী) -এ আয়াতটি পাঠ করেন। অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ (সঃ) তোমাদেরকে যা দেন তা গ্রহণ কর এবং যা হতে নিষেধ করেন তা হতে বিরত থাক।'(৫৯:৭) কোন কোন ব্যাখ্যাদাতার মতে এর ভাবার্থ হচ্ছে আল্লাহর দিনকে পরিবর্তিত করা। যেমন অন্য আয়াতে রয়েছে (আরবী) অর্থাৎ তুমি তোমার মুখমণ্ডলকে আল্লাহর একমুখী ধর্মের প্রতি প্রতিষ্ঠিত রাখ, এটা হচ্ছে আল্লাহর সৃষ্টি যার উপর তিনি মানব জাতিকে সৃষ্টি করেছেন, আল্লাহর সৃষ্টিতে কোন পরিবর্তন নেই।’ (৩০:৩০) এ পরের বাক্যটিকে যখন আদেশবাচক ক্রিয়া অর্থে নেয়া হবে তখন এ তাফসীর ঠিকই হবে। অর্থাৎ আল্লাহর প্রকৃতিকে পরিবর্তন করে না। মানুষকে তিনি যে প্রকৃতির উপর সৃষ্টি করেছেন ওর উপরেই থাকতে দাও।

সহীহ বুখারী ও মুসলিমের মধ্যে হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “প্রত্যেক শিশু প্রকৃতির উপরই জন্মগ্রহণ করে। অতঃপর তার বাপ-মা তাকে ইয়াহূদী করে, খ্রীষ্টান করে বা মাজুসী করে। যেমন ছাগলের নিখুঁত বাচ্চা সম্পূর্ণরূপে দোষমুক্ত হয়ে থাকে কিন্তু মানুষেরাই তার কান ইত্যাদি কেটে নিয়ে তাকে দোষযুক্ত করে থাকে।

সহীহ মুসলিমে হযরত আইয়ায ইবনে হাম্মাদ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আল্লাহ তা’আলা বলেন- আমি আমার বান্দাকে এক মুখী দ্বীনের উপর সৃষ্টি করেছি। কিন্তু শয়তান এসে তাকে পথভ্রষ্ট করেছে। অতঃপর আমি আমার বৈধকে তাদের উপর অবৈধ করেছি।’

শয়তানকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করে সে নিজেরই ক্ষতি সাধন করে, যে ক্ষতির আর পূরণ নেই। কেননা, শয়তান তাকে ধোকা দিতে রয়েছে, শয়তান তাকে বুঝিয়ে দিয়েছে যে, তার মুক্তি ও মঙ্গল ঐ ভুল পথেই রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে সে বড় প্রতারক, সে স্পষ্টভাবে তাকে ধোকা দিচ্ছে। যেমন কিয়ামতের দিন শয়তান পরিষ্কার ভাষায় মানুষকে বলবে, আল্লাহ তা’আলার ওয়াদা সত্য ছিল। আর আমি তো ওয়াদা ভঙ্গকারী। তোমাদের উপর আমার কেনি জোর ছিল না। আমার আহ্বান শুনামাত্রই তোমরা নির্বোধের মত কেন তাতে সাড়া দিয়েছিলে? এখন আমাকে ভৎসনা করছো কেন? বরং তোমরা নিজেকেই ভৎসনা কর।’ শয়তানের অঙ্গীকারকে সঠিক জ্ঞানকারী, তার প্রদত্ত আশা পূর্ণ হওয়ার ধারণাকারী জাহান্নামেই পৌছে যাবে, যেখান হতে পলায়ন করা অসম্ভব।

ঐ হতভাগাদের বর্ণনা দেয়ার পর আল্লাহ তাআলা এখন সৎ লোকদের অবস্থা বর্ণনা করছেন। তিনি বলেন-যে আমাকে অন্তরে বিশ্বাস করে এবং শরীরের দ্বারা আমার আনুগত্য স্বীকার করে, আমার নির্দেশাবলীর উপর আমল করে, আমি যা নিষেধ করেছি সেটা হতে বিরত থাকে, তাকে আমি আমার নিয়ামত দান করবো এবং তাকে জান্নাতে প্রবিষ্ট করবো। ঐ জান্নাতের নদীগুলো তাদের ইচ্ছেমত বইতে থাকবে, সেখানে না আছে ধ্বংস না আছে মৃত্যু এবং না আছে কোন ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা। আল্লাহ তাআলার এ অঙ্গীকার অটল ও সম্পূর্ণ সত্য। তিনি ছাড়া অন্য কোন মাবুদ নেই এবং তিনি ছাড়া কেউ পালনকর্তাও নেই।’

রাসূলুল্লাহ (সঃ) স্বীয় ভাষণে বলতেনঃ ‘সবচেয়ে সত্য কথা হচ্ছে আল্লাহর কথা এবং সর্বাপেক্ষা উত্তম পথ হচ্ছে মুহাম্মাদ (সঃ)-এর প্রদর্শিত পথ। আর সমস্ত কাজের মধ্যে জঘন্যতম কাজ হচ্ছে দ্বীনের মধ্যে নতুন জিনিস আনয়ন করা এবং প্রত্যেক এ নতুন জিনিসই হচ্ছে বিদআত, আর প্রত্যেক বিদআতই হচ্ছে পথভ্রষ্টতা এবং প্রত্যেক পথভ্রষ্টতাই জাহান্নামে নিয়ে যাবে।’

English Tafsir:-
Ibn Kathir:-
An Nisah, Number :- 116-122

Shirk Shall not be Forgiven, in Reality the Idolators Worship Shaytan

We talked about Allah’s statement,

إِنَّ اللّهَ لَا يَغْفِرُ أَن يُشْرَكَ بِهِ وَيَغْفِرُ مَا دُونَ ذَلِكَ لِمَن يَشَاء

Verily, Allah forgives not (the sin of) setting up partners (in worship) with Him, but He forgives whom He wills, sins other than that,

before (Ayah 48) and mentioned the relevant Hadiths in the beginning of this Surah.

Allah’s statement,

وَمَن يُشْرِكْ بِاللّهِ فَقَدْ ضَلَّ ضَلَلاً بَعِيدًا

and whoever sets up partners in worship with Allah, has indeed strayed far away.

means, he will have taken other than the true path, deviated from guidance and righteousness, destroyed himself in this life and the Hereafter, and lost contentment in this life and the Hereafter

إِن يَدْعُونَ مِن دُونِهِ إِلاَّ إِنَاثًا

They invoke nothing but female deities besides Him (Allah),

Juwaybir said that Ad-Dahhak said about Allah’s statement,

“The idolators claimed that the angels are Allah’s daughters, saying, `We only worship them so that they bring us closer to Allah.’

So they took the angels as gods, made the shapes of girls and decided, `These (idols) resemble the daughters of Allah (i.e., the angels), Whom we worship.”‘

This is similar to Allah’s statements,

أَفَرَءَيْتُمُ اللَّـتَ وَالْعُزَّى

Have you then considered Al-Latand Al-`Uzza! (53:19)

وَجَعَلُواْ الْمَلَـيِكَةَ الَّذِينَ هُمْ عِبَادُ الرَّحْمَـنِ إِنَـثاً

And they make the angels who themselves are servants of the Most Gracious (Allah) females. (43:19)

and,

وَجَعَلُواْ بَيْنَهُ وَبَيْنَ الْجِنَّةِ نَسَباً

And they have invented a kinship between Him and the Jinn. (37:158)

Allah’s statement,

وَإِن يَدْعُونَ إِلاَّ شَيْطَانًا مَّرِيدًا

and they invoke nothing but Shaytan, a persistent rebel!

means, Shaytan has commanded them to do this and made it seem fair and beautiful in their eyes. Consequently, they are worshipping Shaytan in reality, just as Allah said in another Ayah,

أَلَمْ أَعْهَدْ إِلَيْكُمْ يبَنِى ءَادَمَ أَن لاَّ تَعْبُدُواْ الشَّيطَـنَ

Did I not command you, O Children of Adam, that you should not worship Shaytan. (36:60)

Allah said that, on the Day of Resurrection, the angels shall proclaim about the idolators who worshipped them in this life:

بَلْ كَانُواْ يَعْبُدُونَ الْجِنَّ أَكْـثَرُهُم بِهِم مُّوْمِنُونَ

Nay, but they used to worship the Jinn; most of them were believers in them. (34:41)

Allah’s statement

لَّعَنَهُ اللّهُ

Allah cursed him,

means, He expelled him and banished him from His mercy and His grace.

وَقَالَ لَاَتَّخِذَنَّ مِنْ عِبَادِكَ نَصِيبًا مَّفْرُوضًا

And he (Shaytan) said:”I will take an appointed portion of your servants”

means, a fixed and known share.

Muqatil bin Hayyan commented,

“From every one thousand, nine hundred and ninety-nine will go to the Fire and one to Paradise.

وَلاُضِلَّنَّهُمْ

Verily, I will mislead them,

from the true path,

وَلاُمَنِّيَنَّهُمْ

and surely, I will arouse in them false desires;

tempting them to feign repentance, arousing false hopes in them, encouraging them to delay and procrastinate with righteous deeds, deceiving them.

وَلامُرَنَّهُمْ فَلَيُبَتِّكُنَّ اذَانَ الَانْعَامِ

and certainly, I will order them to slit the ears of cattle,

Qatadah and As-Suddi stated,

meaning, slitting their ears to designate them as Bahirah, Sa’ibah, and a Wasilah.

وَلامُرَنَّهُمْ فَلَيُغَيِّرُنَّ خَلْقَ اللّهِ

And indeed I will order them to change the nature created by Allah.

According to Al-Hasan bin Abi Al-Hasan Al-Basri,

means tattooing.

In his Sahih, Muslim recorded the prohibition of tattooing the face, which in one of its wordings states:

“May Allah curse whoever does this.”

It is also recorded in the Sahih that Ibn Mas`ud said,

“May Allah curse those who have tattoos and those who do it, who pluck their (facial) hairs and the one who does it for them, and those who make spaces between their teeth for the purpose of beauty, changing what Allah has created.”

He then said,

“Why should not I curse whom the Messenger of Allah has cursed, when the Book of Allah commands it,” referring to the Ayah,

وَمَأ ءَاتَـكُمُ الرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَـكُمْ عَنْهُ فَانتَهُواْ

And whatsoever the Messenger gives you, take it; and whatsoever he forbids you, abstain (from it). (59:7)

Allah’s statement,

وَمَن يَتَّخِذِ الشَّيْطَانَ وَلِيًّا مِّن دُونِ اللّهِ فَقَدْ خَسِرَ خُسْرَانًا مُّبِينًا

And whoever takes Shaytan as a Wali (protector or helper) instead of Allah, has surely suffered a manifest loss.

means, he will have lost this life and the Hereafter.

Indeed, this is a type of loss that cannot be compensated or restored.

Allah’s statement,

يَعِدُهُمْ وَيُمَنِّيهِمْ وَمَا يَعِدُهُمُ الشَّيْطَانُ إِلاَّ غُرُورًا
He (Shaytan) makes promises to them, and arouses in them false desires;

explains the true reality. Surely, Shaytan deceitfully promises his supporters and tempts them into believing that they are winners in this and the Hereafter.

This is why Allah said,
وَمَا يَعِدُهُمُ الشَّيْطَانُ إِلاَّ غُرُورًا
(and Shaytan’s promises are nothing but deceptions).

Allah states that on the Day of Return,

وَقَالَ الشَّيْطَانُ لَمَّا قُضِيَ الَامْرُ إِنَّ اللّهَ وَعَدَكُمْ وَعْدَ الْحَقِّ وَوَعَدتُّكُمْ فَأَخْلَفْتُكُمْ وَمَا كَانَ لِيَ عَلَيْكُم مِّن سُلْطَانٍ

And Shaytan will say when the matter has been decided:”Verily, Allah promised you a promise of truth. And I too promised you, but I betrayed you. I had no authority over you, until,
إِنَّ الظَّالِمِينَ لَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ
(Verily, there is a painful torment for the wrongdoers). (14:22)

Allah’s statement

أُوْلَـيِكَ

of such (people),

refers to those who like and prefer what Shaytan is promising and assuring them of.

مَأْوَاهُمْ جَهَنَّمُ

The dwelling of such (people) is Hell,

as their destination and abode on the Day of Resurrection,

وَلَا يَجِدُونَ عَنْهَا مَحِيصًا

and they will find no way of escape from it.

meaning, they will not be able to avoid, avert, evade or elude the Hellfire.
The Reward of Righteous Believers

Allah then mentions the condition of the content righteous believers and the perfect honor they will earn in the end.

Allah said

وَالَّذِينَ امَنُواْ وَعَمِلُواْ الصَّالِحَاتِ

And those who believe and do righteous good deeds,

meaning, their hearts were truthful and their limbs obedient with the righteous acts they were commanded, all the while abandoning the evil they were prohibited from doing.

سَنُدْخِلُهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الَانْهَارُ

We shall admit them to Gardens under which rivers flow (Paradise).

meaning, they will think of where they want these rivers to flow and they will flow there,

خَالِدِينَ فِيهَا أَبَدًا

to dwell therein forever,

without end or being removed from it.

وَعْدَ اللّهِ حَقًّا

Allah’s promise is the truth,

meaning, this is a true promise from Allah, and verily, Allah’s promise shall come to pass.

Allah then said,

وَمَنْ أَصْدَقُ مِنَ اللّهِ قِيلً

and whose words can be truer than those of Allah!

meaning, none is more truthful in statement and narration than Allah.

There is no deity worthy of worship, or Lord except Him.

The Messenger of Allah used to proclaim in his speech,

إِنَّ أَصْدَقَ الْحَدِيثِ كَلَمُ اللهِ وَخَيْرَ الْهَدْيِ هَدْيُ مُحَمَّدٍصلى الله عليه وسلّم

وَشَرَّ الاُْمُورِ مُحْدَثَاتُهَا وَكُلَّ مُحْدَثَةٍ بِدْعَةٌ وَكُلَّ بِدْعَةٍ ضَلَلَةٌ وَكُلَّ ضَلَلَةٍ فِي النَّار

The most truthful speech is Allah’s Speech, and the best guidance is the guidance of Muhammad.

The worst matters are the newly invented (in religion), every newly invented matter is an innovation, and every innovation is a heresy, and every heresy is in the Fire

Leave a Reply