(Book# 114/١٦١)-৩৬৩ www.motaher21.net إِنَّ الْمُنَافِقِينَ يُخَادِعُونَ اللّهَ وَهُوَ خَادِعُهُمْ Verily, the hypocrites seek to deceive Allah, but it is He Who deceives them. নিশ্চয় মুনাফিকরা আল্লাহকে ধোঁকা দেয়। আর তিনি তাদেরকে ধোঁকায় ফেলেন। সুরা: আন-নিসা আয়াত নং :-১৪২-১৪৩

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ

(Book# 114/١٦١)-৩৬৩
www.motaher21.net
إِنَّ الْمُنَافِقِينَ يُخَادِعُونَ اللّهَ وَهُوَ خَادِعُهُمْ

Verily, the hypocrites seek to deceive Allah, but it is He Who deceives them.

নিশ্চয় মুনাফিকরা আল্লাহকে ধোঁকা দেয়। আর তিনি তাদেরকে ধোঁকায় ফেলেন।

সুরা: আন-নিসা
আয়াত নং :-১৪২-১৪৩

اِنَّ الْمُنٰفِقِیْنَ یُخٰدِعُوْنَ اللّٰهَ وَ هُوَ خَادِعُهُمْۚ وَ اِذَا قَامُوْۤا اِلَى الصَّلٰوةِ قَامُوْا كُسَالٰىۙ یُرَآءُوْنَ النَّاسَ وَ لَا یَذْكُرُوْنَ اللّٰهَ اِلَّا قَلِیْلًا٘ۙ

এই মুনাফিকরা আল্লাহর সাথে ধোঁকাবাজি করছে। অথচ আল্লাহই তাদেরকে ধোঁকার মধ্যে ফেলে রেখে দিয়েছেন। তারা যখন নামাযের জন্য ওঠে, আড়মোড়া ভাঙতে ভাঙতে শৈথিল্য সহকারে নিছক লোক দেখাবার জন্য ওঠে এবং আল্লাহকে খুব কমই স্মরণ করে।

সুরা: আন-নিসা
আয়াত নং :-১৪৩

مُّذَبْذَبِیْنَ بَیْنَ ذٰلِكَ ط لَاۤ اِلٰى هٰۤؤُلَآءِ وَ لَاۤ اِلٰى هٰۤؤُلَآءِؕ وَ مَنْ یُّضْلِلِ اللّٰهُ فَلَنْ تَجِدَ لَهٗ سَبِیْلًا

কুফর ও ঈমানের মাঝে দোদুল্যমান অবস্থায় থাকে, না পুরোপুরি এদিকে, না পুরোপুরি ওদিকে। যাকে আল্লাহ‌ পথভ্রষ্ট করে দিয়েছেন তার জন্য তুমি কোন পথ পেতে পারো না।

১৪২ ও ১৪৩ নং আয়াতের তাফসীর:

তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ বলেছেন:-

মুনাফিকরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে ধোঁকা দেয়ার অর্থ কী এ সম্পর্কে সূরা বাকারার শুরুতে আলোচনা করা হয়েছে।

এ সকল মুনাফিকদের বৈশিষ্ট্য হল এরা সালাতের ব্যাপারে অবহেলা ও অলসতা প্রদর্শন করে।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(وَلَا يَأْتُوْنَ الصَّلٰوةَ إِلَّا وَهُمْ كُسَالٰي وَلَا يُنْفِقُوْنَ إِلَّا وَهُمْ كٰرِهُوْنَ)

“সালাতে অলসতার সাথে উপস্থিত হয় এবং অনিচ্ছাকৃতভাবে অর্থ দিয়ে সাহায্য করে।”

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:

إنَّ أَثْقَلَ الصَّلَاةِ علي الْمُنَافِقِينَ صَلَاةُ الْعِشَاءِ وَصَلَاةُ الْفَجْرِ

মুনাফিকদের ওপর সবচেয়ে ভারী সালাত হল, ইশা ও ফজরের সালাত। (সহীহ বুখারী হা: ৬৫৮)

আর মুনাফিকরা মানুষকে দেখানোর জন্য আমল করে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: এরা মানুষকে দেখানোর জন্য সুন্দর করে সালাত আদায় করে আর মানুষ না থাকলে খারাপ করে আদায় করে। এটাই হল তুচ্ছ মনে করা, এর মাধ্যমে তারা আল্লাহ তা‘আলাকে তুচ্ছ করতে চায়।

(وَلَا يَذْكُرُوْنَ اللّٰهَ إِلَّا قَلِيْلًا)

‘আল্লাহকে তারা অল্পই স্মরণ করে’তারা অল্প সময় ছাড়া আল্লাহ তা‘আলাকে স্মরণ করে না। অর্থাৎ সালাতে বিনয় নম্রতার সাথে দাঁড়ায় না, সালাতের ব্যাপারে তারা উদাসীন ও অমনোযোগী।

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যে ব্যক্তি বসে বসে সূর্যের দিকে তাকিয়ে থাকে, এমনকি সূর্য যখন শয়তানের দুই শিং-এর মধ্য দিয়ে অস্তমিত হয়ে চলে, তখন উঠে তাড়াতাড়ি চার রাকআত সালাত আদায় করে নেয়, সে নামমাত্র অল্প সময় আল্লাহ তা‘আলার যিকির করে থাকে। (সহীহ মুসলিম হা: ১৯৫, নাসাঈ হা: ৫১০, তিরমিযী হা: ১৬০)

[অর্থাৎ এখানে আসরের সালাতের কথা বলা হয়েছে, আসরের সালাত বিলম্ব করে আদায় করা মুনাফিকদের বৈশিষ্ট্য। সুতরাং আউয়াল ওয়াক্তে সালাত আদায় করা উত্তম, বিলম্ব করে মুনাফিকদের পরিচয় দেয়া উচিত নয়।]

(مُّذَبْذَبِيْنَ بَيْنَ ذٰلِكَ)

‘দোটানায় দোদুল্যমান’অর্থাৎ মুনাফিকরা ঈমান ও কুফরীর মধ্যে অস্থির। তারা বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণভাবে মু’মিনদের সাথেও নয় এবং কাফিরদের সাথেও নয়। বরং তারা বাহ্যিকভাবে মু’মিনদের সাথে থাকলেও প্রকৃতপক্ষে কাফিরদের অন্তুর্ভুক্ত। সেজন্য আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:

(یَکَادُ الْبَرْقُ یَخْطَفُ اَبْصَارَھُمْﺚ کُلَّمَآ اَضَا۬ئَ لَھُمْ مَّشَوْا فِیْھِﺪ وَاِذَآ اَظْلَمَ عَلَیْھِمْ قَامُوْاﺚ وَلَوْ شَا۬ئَ اللہُ لَذَھَبَ بِسَمْعِھِمْ وَاَبْصَارِھِمْﺚ اِنَّ اللہَ عَلٰی کُلِّ شَیْءٍ قَدِیْرٌﭣﺟ)

“মনে হয় যেন বিদ্যুৎ চমক তাদের দৃষ্টি শক্তি কেড়ে নেবে, যখন তিনি তাদের জন্য একটু আলো (বিদ্যুৎ) প্রজ্জ্বলিত করেন তখন তাতে তারা চলতে থাকে এবং যখন তাদেরকে অন্ধকারাচ্ছন্ন করেন তখন তারা দাঁড়িয়ে থাকে। আর যদি আল্লাহ ইচ্ছা করেন নিশ্চয় তাদের শ্রবণশক্তি ও তাদের দর্শনশক্তি হরণ করতে পারেন। নিশ্চয় আল্লাহ সর্ব বিষয়ের ওপর শক্তিমান।”(সূরা বাকারাহ ২:২০)

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: মুনাফিকদের উদাহরণ হল: দুটি ছাগলের দলের মধ্যস্থিত ছাগলের মত, যা ভ্যা-ভ্যা করে একবার এ দলের দিকে দৌড়ায় আবার অন্য দলের দিকে দৌড়ায়, সে বুঝতে পারে না কোন দলের অনুসরণ করবে। (নাসাঈ হা: ৫৫২)

মুনাফিকদের এরূপ অনেক দৃষ্টান্ত সহীহ হাদীসে রয়েছে।

এ সকল মুনাফিকরা যতই ঈমানের দাবী করুক না কেন তারা পথভ্রষ্ট। আল্লাহ তা‘আলা এদের ব্যাপারে বলেন:

(مَنْ كَانَ يُرِيْدُ الْعَاجِلَةَ عَجَّلْنَا لَه۫ فِيْهَا مَا نَشَا۬ءُ لِمَنْ نُّرِيْدُ ثُمَّ جَعَلْنَا لَه۫ جَهَنَّمَ ج يَصْلَاهَا مَذْمُوْمًا مَّدْحُوْرًا)

“কেউ পার্থিব সুখ-সম্ভোগ কামনা করলে আমি যাকে যা ইচ্ছা এখানেই সত্বর দিয়ে থাকি; পরে তার জন্য জাহান্নাম নির্ধারিত করি যেথায় সে প্রবেশ করবে নিন্দিত ও অনুগ্রহ হতে দূরীকৃত অবস্থায়।”(সূরা কাহফ ১৮:১৭)

আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:

১. মুনাফিকদের বৈশিষ্ট্য জানতে পারলাম।
২. মানুষকে দেখানোর জন্য আমল করা শির্ক।
৩. আল্লাহ তা‘আলাকে বেশি বেশি স্মরণ করা উচিত।
৪. সালাতের ব্যাপারে শৈথিল্যতা প্রদর্শন করা মুনাফিকের আলামত।

তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-

টিকা:১৭২) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জামানায়কোন ব্যক্তি নিয়মিত নামায না পড়ে মুসলমানদের দলের অন্তর্ভুক্ত হতে পারতো না। দুনিয়ার বিভিন্ন দল ও মজলিস যেমন তাদের বৈঠকগুলোতে কোন সদস্যের বিনা ওজরে অনুপস্থিত থাকাকে দলের প্রতি তার অনাগ্রহ মনে করে থাকে এবং পরপর কয়েকটি সভায় অনুপস্থিত থাকলে তার সদস্যপদ বাতিল করে তাকে দল থেকে বের করে দেয়, ঠিক তেমনি ইসলামী জামায়াতের কোন সদস্যের জামায়াতের সাথে নামাযে গরহাযির থাকাকে সে জামানায় সে ব্যক্তির ইসলামের প্রতি অনাগ্রহের সুস্পষ্ট প্রমাণ মনে করা হতো। আর যদি সে অনবরত কয়েক বার জামায়াতে গরহাযির থাকতো তাহলে ধরে নেয়া হতো সে মুসলমান নয়। তাই বড় বড় কট্টর মুনাফিকদেরও সে যুগে পাঁচ ওয়াক্ত মসজিদে হাযিরি দিতে হতো। কারণ এছাড়া তাদের মুসলমানদের দলের অন্তর্ভুক্ত থাকার আর দ্বিতীয় কোন পথ ছিল না। তবে যে জিনিসটা তাদের সাচ্চা ঈমানদার থেকে আলাদা করতো সেটি হচ্ছে এই যে, সাচ্চা মু’মিনরা বিপুল উৎসাহ আগ্রহ নিয়ে মসজিদে আসতো, জামায়াতের সময়ের পূর্বেই মসজিদে পৌঁছে যেতো এবং নামায শেষ হবার পরও মসজিদে বসে থাকতো। তাদের প্রতিটি পদক্ষেপে একথা সুস্পষ্ট হয়ে উঠতো যে নামাযের প্রতি তাদের যথার্থই হৃদয়ের টান ও আগ্রহ রয়েছে। বিপরীত পক্ষে আযানের আওয়াজ কানে আসতেই মুনাফিকদের যেন জান বেরিয়ে যেতো। মন চাইতো না তবুও নেহাত দায়ে ঠেকে তারা উঠতো। তাদের মসজিদের দিকে আসার ধরনর দেখে পরিষ্কার বুঝা যেতো যে স্বতঃস্ফূর্তভাবে তারা আসছে না বরং অনিচ্ছায় নিজেদের টেনে টেনে আনছে। জামায়াত শেষ হবার পর এমনভাবে মসজিদ থেকে পালাতো যেন মনে হতো কয়েদীরা বন্দীশালা থেকে মুক্তি পেয়েছে। তাদের ওঠাবসা চলাফেরা তথা প্রতিটি পদক্ষেপ সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দিতো যে, আল্লাহর যিকিরের প্রতি তাদের বিন্দুমাত্রও মানসিক টান ও আগ্রহ নেই।

টিকা:১৭৩) অর্থাৎ যে ব্যক্তি আল্লাহর কালাম ও রসূলের জীবন চরিত্র থেকে হিদায়াত লাভ করেনি, যাকে সত্য বিমুখ ও বাতিলের প্রতি গভীর অনুরাগী দেখে আল্লাহও তাকে সেদিকেই ফিরিয়ে দিয়েছেন যেদিকে সে নিজে ফিরে যেতে চায় এবং তার গোমরাহীকে আঁকড়ে ধরার কারণে আল্লাহ তার জন্য হিদায়াতের দরজা বন্ধ করে কেবল মাত্র গোমরাহীর দরজা খুলে দিয়েছেন। এহেন ব্যক্তিকে সঠিক পথ দেখানো আসলে কোন মানুষের সাধ্যের অতীত। রিযিকের দৃষ্টান্ত থেকে এ বিষয়টি অনুধাবন করা যেতে পারে।

রিযিকের সমস্ত সম্পদ মহান ও সর্বশক্তিমান আল্লাহর ক্ষমতা ও কুদরতের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণাধীন, এটা একটা জাজ্জ্বল্যমান সত্য। মানুষ যা কিছু পায়, যতটুকু পায় আল্লাহর কাছ থেকেই পায়। কিন্তু যে ব্যক্তি যে পথে রিযিক চায় আল্লাহ‌ তাকে সেই পথেই রিযিক দান করেন। যদি কোন ব্যক্তি হালাল পথে রিযিক চায় এবং সেজন্য প্রচেষ্টাও চালাতে থাকে তাহলে আল্লাহ‌ তার জন্য রিযিকের হালাল পথগুলো খুলে দেন। তার নিয়ত যে পরিমাণ সৎ ও নিষ্কলুষ হয় সেই পরিমাণ হারাম পথ তার জন্য বন্ধ করে দেন। বিপরীত পক্ষে যে ব্যক্তি হারাম খাবার জন্য উঠে পড়ে লাগে এবং এ জন্য চেষ্টা-চরিত্র করতে থাকে, আল্লাহর হুকুমে সে হারাম খাবারই পায়। এরপর তার ভাগ্যে হালাল রুজি লিখে দেবার ক্ষমতা আর কারো থাকে না। অনুরূপভাবে এটাও একটা জাজ্জ্বল্যমান সত্য যে, এই দুনিয়ায় চিন্তা ও কর্মের সমস্ত পথ আল্লাহ‌র ক্ষমতা ও ইখতিয়ারের অধীন। আল্লাহর হুকুম, অনুমতি ও তাওফীক তথা সুযোগ দান ছাড়া কোন একটি পথেও চলার ক্ষমতা মানুষের নেই। তবে কোন্ ‌ব্যক্তি কোন পথে চলার অনুমতি পায় এবং কোন্ পথে চলার উপকরণ তার জন্য সংগ্রহ করে দেয়া হয় এটা পুরোপুরি নির্ভর করে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির নিজের চাহিদা, প্রচেষ্টা ও সাধনার ওপর। যদি আল্লাহর সাথে তার মানসিক সংযোগ থাকে, সে সত্যানুসন্ধানী হয় এবং সাচ্চা নিয়তে আল্লাহর পথে চলার জন্য প্রচেষ্টা চালায় তাহলে আল্লাহ‌ তাকে তারই অনুমতি ও সুযোগ দান করেন। তখন এ পথে চলার যাবতীয় উপকরণ ও সরঞ্জাম তার আয়ত্তাধীন হয়ে যায়। বিপরীত পক্ষে যে ব্যক্তি গোমরাহী ও পথভ্রষ্টতা পছন্দ করে এবং ভুল পথে চলার জন্য চেষ্টা-সাধনা করে, আল্লাহর পক্ষ থেকে তার জন্য হিদায়াতের সমস্ত দরজা বন্ধ হয়ে যায় এবং সেই সমস্ত পথ তার জন্য খুলে দেয়া হয় যেগুলো সে নিজের জন্য বাছাই করে নিয়েছে। এহেন ব্যক্তিকে ভুল চিন্তা করার, ভুল কাজ করার ও ভুল পথে নিজের শক্তি-সামর্থ্য ব্যয় করা থেকে নিরস্ত রাখার ক্ষমতা কারো নেই। যে ব্যক্তি নিজেই তার ভাগ্যের সঠিক পথ হারিয়ে বসে এবং আল্লাহ‌ যাকে সঠিক পথ থেকে বঞ্চিত করেন, কেউ তাকে সঠিক পথের সন্ধান দিতে এবং এই হারানো নেয়ামত খুঁজে দিতে পারে না।

তাফসীরে আবুবকর ‌যাকারিয়া‌ বলেছেন:-

[১] কাফেরদের ধোঁকার কারণে আল্লাহর পক্ষ থেকে তাদেরকে ধোঁকায় ফেলা যুক্তিযুক্ত ও যথার্থ। এতে আল্লাহর জন্য খারাপ গুণ বিবেচিত হবে না। কারণ, এটি তাদের কর্মের বিপরীতে আল্লাহর কর্ম। অনুরূপ আলোচনা সূরা আল-বাকারার ৯ ও ১৫ নং আয়াতের ব্যাখ্যাতেও বর্ণিত হয়েছে। তবে তাদেরকে কিভাবে আল্লাহ তা’আলা ধোঁকায় ফেলবেন, তার বর্ণনায় সুদ্দী ও হাসান বসরী বলেন, কিয়ামতের দিন তাদেরকে কিছু নূর বা আলো দেয়া হবে, ফলে তারা মুমিনদের সাথে চলতে থাকবে। যেমনিভাবে তারা দুনিয়াতে মুমিনদের সাথে ছিল। তারপর আল্লাহ্ তা’আলা তাদের সে নূর বা আলো ছিনিয়ে নিবেন। ফলে তাদের আলো নিষ্প্রভ হয়ে যাবে। তখন তারা অন্ধকারে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকবে। আর ঠিক তখনি তাদের ও মুমিনদের মধ্যে প্রাচীর পড়ে যাবে। পরস্পর পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। [আত-তাফসীরুস সহীহ] মূলত: এটি সূরা আল-হাদীদের ১৩ নং আয়াতের তাফসীরও বটে।

[২] আয়াতে মুনাফিকদের তিনটি খারাপ গুণ উল্লেখ করা হয়েছে। এক. তারা তাদের সালাতে অলসতা করে। দুই. তারা সালাতে প্রদর্শনেচ্ছাসহকারে দাঁড়ায়। তিন. তারা খুব কমই আল্লাহর যিকর করে। পবিত্র কুরআনের অন্যান্য আয়াতেও তাদের এ বদ স্বভাবসমূহের কথা উল্লেখিত হয়েছে। যেমন, সূরা আত-তাওবাহ্‌: ৫৪; সূরা আল-মাউন: ৪-৬।

তাছাড়া হাদীসেও মুনাফিকের এ সমস্ত চরিত্রের কথা স্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে। যেমন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘ঐটি হচ্ছে মুনাফিকের সালাত। সে সূর্যের দিকে তাকিয়ে অপেক্ষা করতে থাকে। তারপর যখন সূর্য শয়তানের দু শিংয়ের মাঝখানে পৌছে (অর্থাৎ ডুবার কাছাকাছি পৌছে) তখন সে উঠে চারবার ঠোকর লাগায়। যাতে আল্লাহর স্মরণ খুব কমই করে থাকে’। [মুসলিম: ৬২২]

[৩] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, মুনাফিকের উদাহরণ হচ্ছে, ঐ ছাগীর ন্যায়, যে দুই পাঠা ছাগলের মধ্যে ঘুরে বেড়ায়। (প্রবৃত্তির তাড়নায়) কখনও এটার কাছে যায়, কখনও অপরটির কাছে যায়। [মুসলিম: ২৭৮৪] মুনাফিক নিজেকে মুশরিকও বলতে চায় না। আবার ঈমানদারও হতে চায় না। [তাবারী]

তাফসীরে আহসানুল বায়ান বলেছেন:-

[১] এর সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা সূরা বাক্বারার শুরুতে (২:৮-১৫ আয়াতে) করা হয়েছে।

[২] নামায ইসলামের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ রুকন এবং অতি মহান ফরয কাজ। এতেও তারা অবহেলা ও অলসতা প্রদর্শন করত। কারণ তাদের অন্তর ঈমান, আল্লাহভীতি এবং ঐকান্তিকতা থেকে ছিল বঞ্চিত ও শূন্য। আর এ কারণেই বিশেষ করে এশা ও ফজরের নামায তাদের উপর ভারী ছিল। যেমন, নবী করীম (সাঃ) বলেন, ((إِنَّ أَثْقَلَ صَلَاةٍ عَلَى الْمُنَافِقِينَ صَلَاةُ الْعِشَاءِ وَصَلَاةُ الْفَجْرِ )) অর্থাৎ, মুনাফিকদের উপর এশা এবং ফজরের নামায সব থেকে বেশী ভারী।” (বুখারী, মুসলিম ৬৫১নং)

[৩] এই নামাযও তারা কেবল লোক প্রদর্শনের জন্য পড়ত। যাতে তারা মুসলিমদেরকে ধোঁকা দিতে পারে।

[৪] আল্লাহর স্মরণ নামে মাত্র করে অথবা নামায সংক্ষিপ্তাকারে পড়ে। অর্থাৎ, لاَ يُصَلُّوْنَ إِلاَّ صَلاَةً قَلِيْلَةً (নামায খুবই সংক্ষিপ্তাকারে পড়ে।) আর নামায আল্লাহর ভয় ও বিনয়-নম্রতা থেকে খালি হলে তা ধীর-স্থিরতার সাথে আদায় করা বড়ই কঠিন হয়। যেমন, [وَإِنَّهَا لَكَبِيرَةٌ إِلَّا عَلَى الْخَاشِعِينَ] (বিনীতগণ ব্যতীত আর সকলের নিকট নিশ্চিতভাবে এ কঠিন।) (সূরা বাক্বারাহ ২:৪৫ আয়াত) থেকেও সে কথা জানা যায়। হাদীসে নবী করীম (সাঃ) বলেন, “এটা মুনাফিকের নামায, এটা মুনাফিকের নামায, এটা মুনাফিকের নামায। সে বসে বসে সূর্যের অপেক্ষা করতে থাকে। অবশেষে যখন সূর্য শয়তানের দু’টি শিঙের মধ্যবর্তী স্থানে (অস্ত যাওয়ার কাছাকাছি সময়ে) পৌঁছে, তখন (তড়িঘড়ি) উঠে চারটি ঠোকর মেরে নেয়।” (সহীহ মুসলিম, মাসাজিদ অধ্যায়, মুঅত্তা, কুরআন অধ্যায়)

[৫] কাফেরদের কাছে গিয়ে ওদের সাথে এবং মুসলিমদের কাছে এসে এদের সাথে বন্ধুত্ব ও সম্পর্ক থাকার কথা প্রকাশ করে। প্রকাশ্যে ও অপ্রকাশ্যে না তারা মুসলিমদের সাথে আছে, আর না কাফেরদের সাথে। বাহ্যিক তাদের মুসলিমদের সাথে থাকলে অভ্যন্তর থাকে কাফেরদের সাথে। আবার কোন কোন মুনাফিক তো ঈমান ও কুফরীর মধ্যে দোদুল্যমান অবস্থায় ঝুলতে থাকে। নবী করীম (সাঃ) বলেন, “মুনাফিক হল সেই ছাগীর মত, যে সঙ্গমের জন্য দু’টি পালের মধ্যে (পাঁঠার খোঁজে) ঘুরাঘুরি করে। কখনো এই পালের দিকে আসে, আবার কখনো অন্য পালের দিকে যায়।”

(সহীহ মুসলিম, মুনাফিক্বীন অধ্যায়)

১৪২-১৪৩ নং আয়াতের তাফসীর:

তাফসীরে ইবনে ‌কাসীর বলেছেন;-

সূরা-ই-বাকারার প্রথমেও (আরবী) (২:৯) -এ আয়াতটির তাফসীর বর্ণিত হয়েছে। এখানেও বর্ণনা করা হচ্ছে যে, এ নির্বোধ মুনাফিকরা আল্লাহ তাআলার সাথে প্রতারণা করতে রয়েছে, অথচ তিনি তাদের অন্তরের সমস্ত কথা সম্যক অবগত রয়েছেন। স্বল্প বুদ্ধির কারণে এ মুনাফিকরা মনে করে নিয়েছে যে, তাদের কপটতা যেমন দুনিয়ায় চলছে এবং মুসলমানদের মধ্যে চলছে, তদ্রুপ কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলার সমীপেও চলবে। যেমন কুরআন পাকে রয়েছে-কিয়ামতের দিনেও এরা আল্লাহ তাআলার সম্মুখে শপথ করে বলবে যে, তারা সত্যের উপরেই প্রতিষ্ঠিত ছিল, যেমন আজ তারা তোমাদের সামনে শপথ করে বলছে। কিন্তু সেই সর্বজ্ঞাতা আল্লাহর সামনে তাদের এ বাজে শপথে কোনই কাজ দেবে না। আল্লাহ তাআলাও তাদেরকে প্রতারণা প্রত্যার্পণকারী। তিনি তাদেরকে অবকাশ দিচ্ছেন। তাই তারা আজ বেড়ে চলেছে ও ফুলে উঠেছে এবং এটাকে তাদের জন্যে মঙ্গলজনক মনে করেছে।

কিয়ামতের দিনেও তাদের অবস্থা এমনই হবে। তারা মুসলমানদের আলোকের উপর নির্ভর করে থাকবে। মুসলমানেরা সামনে এগিয়ে যাবে। এ মুনাফিকরা তখন তাদেরকে ডাক দিয়ে বলবে-তোমরা থাম, আমরা তোমাদের আলোকের সাহায্যে চলতে থাকি। মুসলমানেরা তখন উত্তর দেবে-তোমরা পিছনে ফিরে যাও এবং আলো অনুসন্ধান কর। তারা পিছনে ফিরবে এমন সময় তাদের মধ্যে পর্দা পড়ে যাবে। মুসলমানদের দিকে থাকবে করুণা এবং তাদের দিকে থাকবে দুঃখ ও বেদনা।

হাদীস শরীফে রয়েছে, যে ব্যক্তি শুনাবে আল্লাহ তা’আলা সেটা শুনিয়ে দেবেন এবং যে রিয়াকারী করবে আল্লাহ তা’আলা সেটা দেখিয়ে দেবেন। অন্য হাদীসে রয়েছে যে, ঐ মুনাফিকদের মধ্যে এমন লোকও হবে যাদের সম্পর্কে বাহ্যতঃ লোকের সামনে আল্লাহ তা’আলা জান্নাতে নিয়ে যাবার নির্দেশ দেবেন। ফেরেশতাগণ তখন তাদেরকে নিয়ে গিয়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন। আল্লাহ পাক আমাদেকে ওটা হতে রক্ষা করুন।

আল্লাহ তা’আলা বলেন-‘যখন তারা নামাযের জন্যে দণ্ডায়মান হয় তখন তারা শৈথিল্যের সাথে দণ্ডায়মান হয়। অর্থাৎ নামাযের মত উত্তম ইবাদত তারা একাগ্রচিত্তে ও আন্তরিকতার সাথে আদায় করে না। কেননা সত্য নিয়ত, উত্তম আমল, প্রকৃত ঈমান এবং সত্য বিশ্বাস তাদের মধ্যে মোটেই নেই। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) পরিশ্রান্ত দেহে ছটফট করা অবস্থায় নামায পড়াকে মাকরূহ মনে করতেন এবং বলতেনঃ মানুষের উচিত যে, সে যেন পূর্ণ আগ্রহ ও একাগ্রতার সাথে নামাযে দণ্ডায়মান হয় এবং এ বিশ্বাস রাখে যে, তার কথার উপর আল্লাহর কান রয়েছে। তিনি তার আকাঙ্খা পুরো করার জন্যে সদা প্রস্তুত রয়েছেন। এ তো হলো মুনাফিকদের বাহ্যিক অবস্থা যে তারা পরিশ্রান্ত দেহে ও সংকীর্ণ অন্তরে বেগার পরিশোধের নামাযের জন্যে আগমন করে। আর তাদের আভ্যন্তরীণ অবস্থা এই যে, আন্তরিকতা হতে বহু দূরে রয়েছে। তারা প্রভুর সঙ্গে কোন সম্পর্ক রাখে না। তারা শুধু মানুষের মধ্যে নামাযী রূপে পরিচিত হবার জন্যে এবং নিজেদের ঈমান প্রকাশ করার উদ্দেশ্যে নামায পড়ে থাকে। তাহলে এ অস্থিরচিত্ত মানুষেরা নামাযে কি পাবে? এ কারণেই তারা ঐ নামাযে অনুপস্থিত থাকে যে নামাযে মানুষ একে অপরকে দেখতে কম পায়। যেমন ইশা ও ফজরের নামায।

সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ মুনাফিকদের উপর সবচেয়ে ভারী নামায হচ্ছে ইশা ও ফজরের নামায। যদি তারা এ নামাযের ফযীলতের কথা অন্তরে বিশ্বাস করতো তবে জানুর ভরে চলে হলেও অবশ্যই এ নামাযে হাযির হতো। কাজেই আমি তখন ইচ্ছে করি যে, তাকবীর বলিয়ে দিয়ে কাউকে ইমামতির স্থানে দাঁড় করতঃ নামায আরম্ভ করিয়ে দেই, অতঃপর আমি গিয়ে লোকদেরকে বলি যে তারা যেন জ্বালানী কাষ্ঠ নিয়ে এসে ঐ লোকদের বাড়ীর চতুর্দিকে রেখে দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে দেয় এবং তাদের ঘর বাড়ী পুড়িয়ে দেয় যারা জামাআতে হাজির হয় না। অন্য একটি বর্ণনায় রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আল্লাহর শপথ! যদি তাদের একটি চর্বিযুক্ত অস্থি বা দু’টি উত্তম (পশ্বাদির) খুর পাওয়ার আশা থাকতো তবে তারা দৌড়ে চলে আসতো। কিন্তু তাদের নিকট আখিরাতের এবং আল্লাহ প্রদত্ত পুণ্যের ওর সমানও মর্যাদা নেই। বাড়ীতে যেসব স্ত্রীলোক ও শিশু অবস্থান করে তাদের খেয়াল যদি আমার না থাকতো তবে অবশ্যই আমি তাদের ঘর-বাড়ী জ্বালিয়ে দিতাম।

মুসনাদ-ই-আবি ইয়ালায় রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি লোকদের উপস্থিতির সময় তো নামাযকে সুন্দরভাবে থেমে থেমে আদায় করে কিন্তু যখন কেউ থাকে না তখন যেন-তেনভাবে পড়ে নেয়, সে ঐ ব্যক্তি যে স্বীয় প্রভুর প্রতি অবজ্ঞা প্রকাশ করে।

আল্লাহর তা’আলা বলেন-তারা আল্লাহকে খুব কমই স্মরণ করে থাকে। অর্থাৎ নামায়ে তাদের মোটেই মন বসে না। তারা যে কথা বলে তা নিজেই বুঝে না বরং তারা উদাসীনভাবে নামায পড়ে থাকে। রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ ওটা মুনাফিকের নামায যে ব্যক্তি বসে বসে সূর্যের দিকে তাকাতে রয়েছে, অবশেষে ওটা অস্তমিত হতে চলেছে এবং শয়তানের শৃংগদ্বয়ের মধ্যে হয়ে গেছে সে সময় সে উঠে পড়ে এবং তাড়াতাড়ি চার রাকআত নামায আদায় করে নেয় যার মধ্যে আল্লাহর যিকির নামেমাত্র করে থাকে।’ (সহীহ মুসলিম ইত্যাদি) এ মুনাফিক সদা স্তম্ভিত ও হতভম্ব অবস্থায় কালাতিপাত করে। ঈমান ও কুফরীর মধ্যে তাদের মন অস্থির থাকে। তারা না স্পষ্টভাবে মুসলমানদের সঙ্গী, না সম্পূর্ণরূপে কাফিরদের সাথী। কখনও ঈমানের জ্যোতি অন্তরে পরিস্ফুট হয়ে উঠলে তারা ইসলামের সত্যতা স্বীকার করতে থাকে। আবার কখনও কুফরীর অন্ধকার তাদের উপর জয়যুক্ত হলে তারা ঈমান হতে দূরে সরে পড়ে। না তারা রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর সাহাবীদের দিকে রয়েছে, না ইয়াহূদীদের পক্ষে রয়েছে।

রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ মুনাফিকের অবস্থা হচ্ছে দু’টি পালের মধ্যস্থিত ছাগলের অবস্থার ন্যায় যা ভ্যা-ভ্যা করতে করতে কখনও এ পালের দিকে দৌড় দেয় এবং কখনও ঐপালের দিকে দৌড় দেয়। সে এখনও স্থির সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারেনি যে, এর পিছনে যাবে কি ওর পিছনে যাবে। একটি বর্ণনায় রয়েছে যে, এ অর্থের হাদীসটি হযরত উবায়েদ ইবনে উমায়ের (রাঃ) হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমার (রাঃ)-এর উপস্থিতিতে শব্দের কিছু হেরফের করে বর্ণনা করলে তিনি নিজ কানে শুনা শব্দগুলোর পুনরাবৃত্তি করতঃ বলেন যে, সেরূপ নয়, বরং প্রকৃত হাদীস হচ্ছে এরূপ।’ এতে হযরত উবায়েদ ইবনে উমায়ের (রাঃ) অসন্তুষ্ট হন।

‘মুসনাদ-ই-ইবনে আবি হাতিমে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন যে, মুমিন, কাফির এবং মুনাফিকের উপমা হচ্ছে ঐ তিনটি লোকের ন্যায় যারা একটি নদীর তীরে উপস্থিত হয়েছে। একজন তীরেই দাঁড়িয়ে রয়েছে, দ্বিতীয়জন নদী অতিক্রম করতঃ গন্তব্যস্থানে পৌঁছে গেছে এবং তৃতীয় ব্যক্তি নদীতে নেমে পড়েছে। যখন সে নদীর মধ্যস্থলে * পৌছেছে তখন এ তীরের লোকটি তাকে ডাক দিয়ে বলছে- ‘ধ্বংস হতে কোথায় চলেছে এ তীরে ফিরে এসো।’ আবার ঐ তীরের লোকটি তাকে ডাক দিয়ে বলছে-এ তীরে চলে এসো, মুক্তি পেয়ে যাবে এবং আমার মত গন্তব্যস্থলে পৌঁছতে পারবে, অর্ধেক পথতো অতিক্রম করেই ফেলেছে। এখন সে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে একবার এদিকে দেখে এবং একবার ওদিকে দেখে। এ দোদুল্যমান অবস্থায় সে রয়েছে এমন সময় একটি বিরাট তরঙ্গ এসে তাকে ভাসিয়ে নেয় এবং অবশেষে সে নদীতে নিমজ্জিত হয়ে প্রাণ হারিয়ে ফেলে। অতএব নদী অতিক্রমকারী হচ্ছে মুসলমান, তীরে দণ্ডায়মান ব্যক্তি হচ্ছে কাফির এবং ডুবে মৃত্যুবরণকারী ব্যক্তি হচ্ছে মুনাফিক। অন্য হাদীসে রয়েছে যে, মুনাফিকের উপমা হচ্ছে ঐ ছাগলটির ন্যায় যে একটি সবুজ শ্যামল পাহাড়ের উপর গুটিকয়েক ছাগল দেখে তথায় আসে এবং শুঁকে চলে যায়। তারপরে আর একটি পাহাড়ের উপর উঠে এবং শুঁকে চলে আসে।

এরপর আল্লাহ তা’আলা বলেন-“আল্লাহ যাকে পথভ্রান্ত করেছেন, তার পথ প্রদর্শক আর কে আছে? আল্লাহ তাআলা মুনাফিকদেরকে তাদের জঘন্য কার্যের কারণে সঠিক পথ হতে ধাক্কা দিয়ে দূরে নিক্ষেপ করেছেন। এখন আর কেউ তাকে সঠিক পথের উপর আনতেও পারবে না এবং তার মুক্তির ব্যবস্থাও করতে পারবে না। আল্লাহ তা’আলার ইচ্ছের বিপরীত কাজ কেউ করতে পারবে না। তিনি সকলেরই শাসনকর্তা। তার উপর কারও শাসন ক্ষমতা নেই।

English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
An Nisa:-
Verse:- 142 -143

The Hypocrites Try to Deceive Allah and Sway Between Believers and Disbelievers

In the beginning of Surah Al-Baqarah we mentioned Allah’s statement,
يُخَادِعُونَ اللّهَ وَالَّذِينَ امَنُوا
(They (think to) deceive Allah and those who believe). (2:8)

Here, Allah states,

إِنَّ الْمُنَافِقِينَ يُخَادِعُونَ اللّهَ وَهُوَ خَادِعُهُمْ

Verily, the hypocrites seek to deceive Allah, but it is He Who deceives them.

There is no doubt that Allah can never be deceived, for He has perfect knowledge of the secrets and what the hearts conceal. However, the hypocrites, due to their ignorance, scarce knowledge and weak minds, think that since they were successful in deceiving people, using Islamic Law as a cover of safety for themselves, they will acquire the same status with Allah on the Day of Resurrection and deceive Him too.

Allah states that on that Day, the hypocrites will swear to Him that they were on the path of righteousness and correctness thinking that such statement will benefit them with Allah.

For instance, Allah said,

يَوْمَ يَبْعَثُهُمُ اللَّهِ جَمِيعاً فَيَحْلِفُونَ لَهُ كَمَا يَحْلِفُونَ لَكُم

On the Day when Allah will resurrect them all together; then they will swear to Him as they swear to you. (58:18)

Allah’s statement,
وَهُوَ خَادِعُهُمْ
(but it is He Who deceives them) means,

He lures them further into injustice and misguidance. He also prevents them from reaching the truth in this life and on the Day of Resurrection.

Allah said,

يَوْمَ يَقُولُ الْمُنَـفِقُونَ وَالْمُنَـفِقَـتُ لِلَّذِينَ ءَامَنُواْ انظُرُونَا نَقْتَبِسْ مِن نُّورِكُمْ

On the Day when the hypocrites ـ men and women ـ will say to the believers:”Wait for us! Let us get something from your light!” It will be said:”Go back to your rear! Then seek a light!” until,
وَبِيْسَ الْمَصِيرُ
(And worst indeed is that destination). (57:13-15)

A Hadith states;

مَن سَمَّعَ سَمَّعَ اللهُ بِهِ وَمَنْ رَاءَى رَاءَى اللهُ بِه

Whoever wants to be heard of, Allah will make him heard of, and whoever wants to be seen, Allah will show him.

Allah’s statement,

وَإِذَا قَامُواْ إِلَى الصَّلَةِ قَامُواْ كُسَالَى

And when they stand up for Salah, they stand with laziness.

This is the characteristic of the hypocrites with the most honored, best and righteous act of worship, the prayer. When they stand for prayer, they stand in laziness because they neither truly intend to perform it nor do they believe in it, have humility in it, or understand it. This is the description of their outward attitude!

As for their hearts, Allah said,

يُرَاوُونَ النَّاسَ

to be seen of men,

meaning, they do not have sincerity when worshipping Allah. Rather, they show off to people so that they gain closeness to them. They are often absent from the prayers that they can hide away from, such as the Isha prayer and the Dawn prayer that are prayed in darkness.

In the Two Sahihs, it is recorded that the Messenger of Allah said,

أَثْقَلُ الصَّلَةِ عَلَى الْمُنَافِقِينَ صَلَةُ الْعِشَاءِ وَصَلَةُ الْفَجْرِ وَلَوْ يَعْلَمُونَ مَا فِيهِمَا لَاَتَوْهُمَا وَلَوْ حَبْوًا وَلَقَدْ هَمَمْتُ أَنْ امُرَ بِالصَّلَةِ فَتُقَامُ ثُمَّ امُرَ رَجُلً فَيُصَلِّي بِالنَّاسِ ثُمَّ أَنْطَلِقَ مَعِيَ بِرِجَالٍ مَعَهُمْ حُزَمٌ مِنْ حَطَبٍ إِلى قَوْمٍ لَا يَشْهَدُونَ الصَّلَةَ فَأُحَرِّقَ عَلَيْهِمْ بُيُوتَهُمْ بِالنَّار

The heaviest prayers on the hypocrites are the Isha and Dawn prayers. If they know their rewards, they will attend them even if they have to crawl.

I was about to order someone to pronounce the Adhan for the prayer, then order someone to lead the prayer for the people, then order some men to collect fire-wood (fuel); then I would burn the houses around men who did not attend the (compulsory congregational) prayer.

In another narration, the Prophet said,

وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَوْ عَلِمَ أَحَدُهُمْ أَنَّهُ يَجِدُ عَرْقًا سَمِينًا أَوْ مِرْمَاتَيْنِ حَسَنَتَيْنِ لَشَهِدَ الصَّلَاةَ وَلَوْلَاا مَا فِي الْبُيُوتِ مِنَ النِّسَاءِ وَالذُّرِّيَّـةِ لَحَرَّقْتُ عَلَيْهِمْ بُيُوتَهُمْ بِالنَّار

By Him, in Whose Hand my soul is, if anyone of them had known that he would get a bone covered with good meat or two (small) pieces of meat between two ribs, he would have turned up for the prayer, and had it not been that the houses have women and children in them, I would burn their homes around them.

Allah’s statement,

وَلَا يَذْكُرُونَ اللّهَ إِلاَّ قَلِيلً

And they do not remember Allah but little.

means, during the prayer they do not feel humbleness or pay attention to what they are reciting. Rather, during their prayer, they are inattentive, jesting and avoid the good that they are meant to receive from prayer.

Imam Malik reported that Al-Ala’ bin Abdur-Rahman said that Anas bin Malik said that the Messenger of Allah said,

تِلْكَ صَلَةُ الْمُنَافِقِ

تِلْكَ صَلَةُ الْمُنَافِقِ

تِلْكَ صَلَةُ الْمُنَافِقِ

يَجْلِسُ يَرْقُبُ الشَّمْسَ حَتَّى إِذَا كَانَتْ بَيْنَ قَرْنَيِ الشَّيْطَانِ قَامَ فَنَقَرَ أَرْبَعًا لَا يَذْكُرُ اللهَ فِيهَا إِلاَّ قَلِيلً

This is the prayer of the hypocrite, this is the prayer of the hypocrite, this is the prayer of the hypocrite.

He sits watching the sun until when it goes down between the two horns of the devil, he stands up pecks out four Rak`ahs (for Asr) without remembering Allah during them except little.

Muslim, At-Tirmidhi and An-Nasa’i also recorded it.

At-Tirmidhi said “Hasan Sahih”.

Allah’s statement:-

مُّذَبْذَبِينَ بَيْنَ ذَلِكَ لَا إِلَى هَـوُلاء

(They are) swaying between this and that, belonging neither to these,

means that the hypocrites are swaying between faith and disbelief. So they are neither with believers inwardly or outwardly nor with disbelievers inwardly or outwardly. Rather, they are with the believers outwardly and with the disbelievers inwardly. Some of them would suffer fits of doubt, leaning towards these sometimes and towards those sometimes.

كُلَّمَأ أَضَأءَ لَهُم مَّشَوْاْ فِيهِ وَإِذَا أَظْلَمَ عَلَيْهِمْ قَامُواْ

Whenever it flashes for them, they walk therein, and when darkness covers them, they stand still. (2:20)

Mujahid said;
مُّذَبْذَبِينَ بَيْنَ ذَلِكَ لَا إِلَى هَـوُلاء
((They are) swaying between this and that, belonging neither to these),

“The Companions of Muhammad,

وَلَا إِلَى هَـوُلاء

nor to those:

the Jews.”

Ibn Jarir recorded that Ibn Umar said that the Prophet said,

مَثَلُ الْمُنَافِقِ كَمَثَلِ الشَّاةِ الْعَايِرَةِ بَيْنَ الْغَنَمَيْنِ تَعِيرُ إِلى هَذِهِ مَرَّةً وَإِلَى هَذِهِ مَرَّةً وَلَا تَدْرِي أَيَّتَهُمَا تَتْبَع

The example of the hypocrite is the example of the sheep wandering between two herds, sometimes she goes to one of them, and sometimes the other, confused over whom she should follow.

Muslim also recorded it.

This is why Allah said afterwards,

وَمَن يُضْلِلِ اللّهُ فَلَن تَجِدَ لَهُ سَبِيلً

and he whom Allah sends astray, you will not find for him a way.

meaning, whomever He leads astray from the guidance,
فَلَن تَجِدَ لَهُ وَلِيًّا مُّرْشِدًا
(For him you will find no Wali (guiding friend) to lead him (to the right path)) (18:17) because,
مَن يُضْلِلِ اللّهُ فَلَ هَادِيَ لَهُ
(Whomsoever Allah sends astray, none can guide him). (7:186)

So the hypocrites whom Allah has led astray from the paths of safety will never find a guide to direct them, nor someone to save them. There is none who can resist Allah’s decision, and He is not asked about what He does, while they all will be asked.

Leave a Reply