(Book# 114/١٦٢)-৩৬৪ www.motaher21.net إِنَّ الْمُنٰفِقِينَ فِى الدَّرْكِ الْأَسْفَلِ مِنَ النَّار নিশ্চয় মুনাফিকরা জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তরে থাকবে। Verily, the hypocrites will be in the lowest depths of the Fire; সুরা: আন-নিসা আয়াত নং :-১৪৪-১৪৭

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ

(Book# 114/١٦٢)-৩৬৪
www.motaher21.net
إِنَّ الْمُنٰفِقِينَ فِى الدَّرْكِ الْأَسْفَلِ مِنَ النَّار

নিশ্চয় মুনাফিকরা জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তরে থাকবে।

Verily, the hypocrites will be in the lowest depths of the Fire;

সুরা: আন-নিসা
আয়াত নং :-১৪৪-১৪৭

يٰٓأَيُّهَا الَّذِينَ ءَامَنُوا لَا تَتَّخِذُوا الْكٰفِرِينَ أَوْلِيَآءَ مِن دُونِ الْمُؤْمِنِينَ ۚ أَتُرِيدُونَ أَن تَجْعَلُوا لِلَّهِ عَلَيْكُمْ سُلْطٰنًا مُّبِينًا

হে মুমিনগণ, তোমরা মুমিনগণ ছাড়া কাফিরদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না। তোমরা কি আল্লাহর জন্য তোমাদের বিপক্ষে কোন স্পষ্ট দলীল সাব্যস্ত করতে চাও?

আয়াত:-১৪৫

4:145

إِنَّ الْمُنٰفِقِينَ فِى الدَّرْكِ الْأَسْفَلِ مِنَ النَّارِ وَلَن تَجِدَ لَهُمْ نَصِيرًا

নিশ্চয় মুনাফিকরা জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তরে থাকবে। আর তুমি কখনও তাদের জন্য কোন সাহায্যকারী পাবে না।

সুরা: আন-নিসা
আয়াত নং :-১৪৬

اِلَّا الَّذِیْنَ تَابُوْا وَ اَصْلَحُوْا وَ اعْتَصَمُوْا بِاللّٰهِ وَ اَخْلَصُوْا دِیْنَهُمْ لِلّٰهِ فَأُولَٰئِكَ مَعَ الْمُؤْمِنِیْنَؕ وَ سَوْفَ یُؤْتِ اللّٰهُ الْمُؤْمِنِیْنَ اَجْرًا عَظِیْمًا

তবে তাদের মধ্য থেকে যারা তাওবা করবে, নিজেদের কর্মনীতি সংশোধন করে নেবে, আল্লাহকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরবে এবং নিজেদের দ্বীনকে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর জন্য নির্ধারিত করে নেবে, তারা মুমিনদের সাথে থাকবে। আর আল্লাহ‌ নিশ্চিয়ই মুমিনদেরকে মহাপুরস্কার দান করবেন।

সুরা: আন-নিসা
আয়াত নং :-১৪৭

مَا یَفْعَلُ اللّٰهُ بِعَذَابِكُمْ اِنْ شَكَرْتُمْ وَ اٰمَنْتُمْؕ وَ كَانَ اللّٰهُ شَاكِرًا عَلِیْمًا

আল্লাহর কি প্রয়োজন তোমাদের অযথা শাস্তি দেবার, যদি তোমরা কৃতজ্ঞ বান্দা হয়ে থাকো। এবং ঈমানের নীতির ওপর চলো? আল্লাহ‌ বড়ই পুরস্কার দানকারী ও সর্বজ্ঞ।

১৪৪-১৪৭ নং আয়াতের তাফসীর:

তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ বলেছেন:-

এ আয়াতের শুরুতেই মহান আল্লাহ তা‘আলা মু’মিনদেরকে মু’মিন ছাড়া অন্য কাউকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করতে নিষেধ করেছেন।

মু’মিন মু’মিন ছাড়া কাউকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করবে না। এ সম্পর্কে সূরা বাকারাহ ও আলি ইমরানে আলোচনা করা হয়েছে। যদি মু’মিনরা আল্লাহ তা‘আলার এ আদেশ ভঙ্গ করে অন্য কোন বিধর্মীদের সাথে সম্পর্ক করে তাহলে মু’মিনদের নিজেদের বিরুদ্ধে আল্লাহ তা‘আলার দলীল কায়েম হয়ে যাবে, ফলে তিনি তাদেরকে শাস্তি দিতে পারেন।

তারপর সকল বিশ্বাসগত মুনাফিকদের ঠিকানার কথা বলছেন, তারা জাহান্নামের অতল তলে থাকবে। তবে যারা নিফাকী বর্জন করে তাওবাহ করে নিজেদেরকে সংশোধন করে নিয়েছে, আল্লাহ তা‘আলাকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করেছে এবং আমল সংশোধন করে নিয়েছে তারা মু’মিনদের অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে মহা প্রতিদান দেবেন।

অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা বান্দার প্রতি নিজের দয়া ও সহানুভূতি প্রকাশ করে বলছেন, তিনি তোমাদেরকে শাস্তি দিয়ে কী করবেন যদি তোমরা ঈমান আন ও শুকরিয়া আদায় কর। অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলা চান না কোন বান্দাকে জাহান্নামে দিতে। কিন্তু বান্দারাই নিজেদের কর্মের কারণে জাহান্নামে যাবে।

যে ব্যক্তির মাঝে চারটি জিনিস আছে সে চারটি জিনিস তার উপকারে আসবে। চারটি জিনিস হল: শুকরিয়া আদায় করা, ঈমান আনা, দু’আ করা, ক্ষমা প্রার্থনা করা। আর তিনটি জিনিস কোন ব্যক্তির মাঝে থাকলে সে তিনটি জিনিস তার ক্ষতির কারণ হবে। তিনটি জিনিস হল: চক্রান্ত করা, ফাসাদ সৃষ্টি করা এবং অঙ্গীকার ভঙ্গ করা। (তাফসীর কুরতুবী ৫/৩২১)

আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. মু’মিন ব্যতীত অন্যদের বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করা হারাম।
২. কাফিরদের আচার-আচরণ, বেশ-ভূষা ও সংস্কৃতি গ্রহণ করা বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করার নামান্তর।
৩. তাওবাহ পূর্বের সকল অপরাধ ক্ষমা করে দেয়।
৪. আল্লাহ তা‘আলার ন্যায়পরায়ণতা জানতে পারলাম যে, তিনি কারো বিরুদ্ধে দলীল প্রমাণিত না হলে শাস্তি দেবেন না।
৫. আল্লাহ তা‘আলার দয়ার প্রশস্ততার কথা জানতে পারলাম।

১৪৪-১৪৭ নং আয়াতের তাফসীর:

তাফসীরে ইবনে ‌কাসীর বলেছেন:-

কাফিরদের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করতে, তাদের প্রতি আন্তরিক ভালবাসা রাখতে, তাদের সাথে সর্বদা উঠাবসা করতে, মুসলমানদের গুপ্তকথা তাদের নিকট প্রকাশ করতে এবং তাদের সাথে গোপন সম্পর্ক বজায় রাখতে আল্লাহ তা’আলা মুসলমানদেরকে নিষেধ করছেন। অন্য আয়াতে আছে (আরবী) অর্থাৎ ‘মুমিনগণ যেন মুমিনদেরকে ছেড়ে কাফিরদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করে, আর যে ব্যক্তি এরূপ করে সে আল্লাহ তা’আলার নিকট কোন মঙ্গলের অধিকারী নয়। হঁ্যা, তবে যদি আত্মরক্ষার জন্যে বাহ্যিক ভালবাসা রাখ সেটা অন্য কথা এবং আল্লাহ তোমাদেরকে নিজ হতে ভয় প্রদর্শন করছেন।’ (৩:২৮) অর্থাৎ তোমরা যদি তাঁর অবাধ্য হও তবে তোমাদের তাঁর হতে ভীত হওয়া উচিত। মুসনাদ-ই-ইবনে আবি হাতিমে’ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেনঃ কুরআন কারীমের মধ্যে যেখানেই এরূপ ইবাদতের মধ্যে (আরবী) শব্দ রয়েছে তথায় তার ভাবার্থ হচ্ছে দলীল। অর্থাৎ তোমরা যদি মুমিনদেরকে ছেড়ে কাফিরদেরকে তোমাদের অন্তরঙ্গ বন্ধু হিসেবে গ্রহণ কর তবে তোমাদের ঐ কাজ তোমাদের উপর ঐ বিষয়ের দলীল হয়ে যাবে যে আল্লাহ তা’আলা তোমাদেরকে শাস্তি প্রদান করবেন। পূর্বযুগীয় কয়েকজন মুফাসৃসির এ আয়াতের এ তাফসীরই করেছেন।

এরপর আল্লাহ তা’আলা মুনাফিকদের পরিণাম বর্ণনা করেছেন যে, তারা তাদের কঠিন কুফরীর কারণে জাহান্নামের একেবারে নিম্নস্তরে প্রবেশ করবে। (আরবী) শব্দটি হচ্ছে (আরবী) শব্দের বিপরীত। জান্নাতের দরজা রয়েছে একটির উপর আরেকটি। পক্ষান্তরে জাহান্নামের দারক’ রয়েছে একটির নীচে অপরটি। হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) বলেন যে, মুনাফিকদেরকে আগুনের বাক্সে পুরে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে এবং তারা ওর মধ্যে জ্বলতে পুড়তে থাকবে। হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলেন যে, এ বাক্সটি হবে লোহার, যাতে আগুন দেয়া মাত্রই আগুন হয়ে যাবে এবং তার চার দিক সম্পূর্ণরূপে বন্ধ থাকবে। কেউ এমন হবে না যে তাকে কোন প্রকারের সাহায্য করতে পারে বা তাকে জাহান্নাম হতে বের করতে পারে অথবা শাস্তি কিছু কম করাতে পারে। তবে হ্যা, তাদের মধ্যে যারা তাওবা করবে, লজ্জিত হবে এবং ঐ পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবে, অতঃপর সংশোধিত হয়ে যাবে, একমাত্র আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে সকার্য সম্পাদন করবে, রিয়াকে আন্তরিকতার সাথে পরিহার করবে এবং আল্লাহ তা’আলার দ্বীনকে দৃঢ়রূপে ধারণ করবে, তিনি তাদের তাওবা কবুল করবেন, তাদেরকে খাঁটি মুমিনদের অন্তর্ভুক্ত করবেন এবং উত্তম পুণ্যের অধিকারী করবেন। মুসনাদ-ই-ইবনে আবি হাতিমে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “তোমরা তোমাদের দ্বীনকে খাটি কর তবে অল্প আমলই তোমাদের জন্যে যথেষ্ট হবে।

এরপর ইরশাদ হচ্ছে-‘আল্লাহ তা’আলা হচ্ছেন বেনিয়ায, তিনি বান্দাদেরকে শাস্তি দিতে চান না। হ্যাঁ, তবে যদি সে সম্পূর্ণ নির্ভয়ে পাপ কার্য করতে থাকে তবে অবশ্যই শাস্তি প্রাপ্ত হবে। তাই আল্লাহ তা’আলা বলেন-“যদি তোমরা তোমাদের আমল সুন্দর করে নাও এবং আল্লাহর উপর ও তাঁর রাসূল (সঃ)-এর উপর অন্তরের সাথে বিশ্বাস স্থাপন কর তবে কোন কারণ নেই যে, আল্লাহ তা’আলা তোমাদেরকে শাস্তি প্রদান করবেন। তিনিতো ছোট ছোট পুণ্যের বেশ মর্যাদা দিয়ে থাকেন। যে তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তিনি তাকে সম্মান দিয়ে থাকেন। তিনি পূর্ণ ও সঠিক জ্ঞানের অধিকারী। কার আমল যে খাটি ও গ্রহণযোগ্য তা তিনি ভালই জানেন। কার অন্তরে যে দৃঢ় বিশ্বাস রয়েছে এবং কার অন্তর যে ঈমান শূন্য তিনি সেটাও জানেন। সুতরাং তিনি তাদেরকে পূর্ণ প্রতিদান প্রদান করবেন।

তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-

টিকা:১৭৪) নিজের দ্বীনকে একান্তভাবে আল্লাহর জন্য করে নেয়ার অর্থ হচ্ছে, মানুষ আল্লাহ‌ ছাড়া আর কারো আনুগত্য করবে না, একমাত্র আল্লাহর প্রতি অনুগত ও বিশ্বস্ত হবে। তার সমস্ত আগ্রহ আকর্ষণ, প্রীতি-ভালোবাসা, ভক্তি-শ্রদ্ধা একমাত্র আল্লাহর প্রতি নিবেদিত হবে। আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কোন জিনিসকে যে কোন মুহূর্তে বিসর্জন দিতে কুন্ঠিত হবে এমন ধরনের কোন ভালোবাসা বা হৃদয়ের টান তার কোন জিনিসের প্রতি থাকবে না।

টিকা:১৭৫) মূল আয়াতে ‘শোকর’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। ‘শোকর’ শব্দের আসল অর্থ হচ্ছে নেয়ামতের স্বীকৃতি দেয়া ও কৃতজ্ঞতা স্বীকার করা এবং অনুগৃহীত হওয়া। এক্ষেত্রে আয়াতের অর্থ হচ্ছে, যদি তোমরা আল্লাহর প্রতি অকৃতজ্ঞ না হও এবং তার সাথে নিমকহারামী না করো বরং যথার্থই তার প্রতি কৃতজ্ঞ ও অনুগৃহীত থাকো, তাহলে আল্লাহ‌ অনর্থক তোমাদের শাস্তি দেবেন না। একজন অনুগ্রহকারীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের সঠিক পদ্ধতি কি? হৃদয়ের সমগ্র অনুভূতি দিয়ে তার অনুগ্রহের স্বীকৃতি দেয়া, মুখে এই অনুভূতির স্বীকারোক্তি করা এবং নিজের কার্যকলাপের মাধ্যমে অনুগৃহীত হবার প্রমাণ পেশ করাই হচ্ছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশের সঠিক উপায়। এই তিনটি কাজের সমবেত রূপই হচ্ছে ‘শোকর’। এই শোকরের দাবী হচ্ছে, প্রথমত অনুগ্রহকে অনুগ্রহকারীর অবদান বলে স্বীকার করতে হবে। অনুগ্রহের শোকরগুজারী করার এবং নেয়ামতের স্বীকৃতি দেবার ক্ষেত্রে অনুগ্রহকারীর সাথে আর কাউকে শরীক করা যাবে না। দ্বিতীয়, অনুগ্রহকারীর প্রতি প্রেম, প্রীতি, বিশ্বস্ততা ও আনুগত্যের অনুভূতিতে নিজের হৃদয় ভরপুর থাকবে এবং অনুগ্রহকারীর বিরোধীদের প্রতি এ প্রসঙ্গে বিন্দুমাত্র প্রীতি, আন্তরিকতা, আনুগত্য ও বিশ্বস্ততার সম্পর্ক থাকবে না। তৃতীয়ত, কার্যত অনুগ্রহকারীর আনুগত্য করতে হবে, তার হুকুম মেনে চলতে হবে এবং তিনি যে নেয়ামতগুলো দান করেছেন সেগুলো তার মর্জীর বিরুদ্ধে ব্যবহার করা যাবে না।

টিকা:১৭৬) কুরআনের আয়াতে এখানে মূলত ‘শাকির’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। এর অনুবাদ করতে গিয়ে আমি ‘বড়ই পুরস্কারদানকারী’ শব্দ ব্যবহার করেছি। আল্লাহর তরফ থেকে যখন বান্দার প্রতি শোকর করার কথা বলা হয় তখন এর অর্থ হয় ‘কাজের স্বীকৃতি দেয়া বা কদর করা, মূল্য দান করা ও মর্যাদা দেয়া’। আর যখন বান্দার পক্ষ থেকে আল্লাহর প্রতি শোকর করার কথা বলা হয় তখন এর অর্থ হয়, নেয়ামতের স্বীকৃতি দান বা অনুগৃহীত হবার কথা প্রকাশ করা। আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দার শোকরিয়া আদায় করার অর্থ হচ্ছে, আল্লাহ‌ বান্দার কাজের যথার্থ মূল্যদান করার ব্যাপারে কুণ্ঠিত নন। বান্দা তাঁর পথে যে ধরনের যতটুক কাজ করে আল্লাহ তার কদর করেন, তার যথার্থ মূল্য দেন। বান্দা কোন কাজ, পারিশ্রমিক ও পুরস্কার লাভ থেকে বঞ্চিত থাকে না। বরং তিনি মুক্ত হস্তে তার প্রত্যেকটি কাজের তার প্রাপ্যের চাইতে অনেক বেশী প্রতিদান দেন। মানুষের অবস্থা হচ্ছে, মানুষ যা কিছু কাজ করে তার প্রকৃত মূল্যের চাইতে কম মূল্য দেয় আর যা কিছু করে না সে সম্পর্কে কঠোরভাবে পাকড়াও করে। বিপরীত পক্ষে আল্লাহর অবস্থা হচ্ছে, মানুষ যে কাজ করেনি সে ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করার ক্ষেত্রে তিনি অত্যন্ত কোমল, উদার ও উপেক্ষার নীতি অবলম্বন করেন। আর যে কাজ সে করেছে তার মূল্য তার চাইতে অনেক বেশী দেন, যা তার প্রকৃতপক্ষে পাওয়া উচিত।

তাফসীরে আবুবকর ‌যাকারিয়া‌ বলেছেন:-

[১] এ আয়াতের তাফসীরে পূর্ববর্তী ১৩৯ নং আয়াতের তাফসীর ও সূরা আলে ইমরানের ২৮ নং আয়াতের তাফসীর দেখা যেতে পারে।
[২] এ আয়াতে মুনাফিকদের স্থান নির্দেশ করে বলা হয়েছে যে, তারা জাহান্নামের সর্বনিম স্তরে থাকবে। অন্য স্থানে ফিরআউন ও তার অনুসারীদের জন্য কঠিন শাস্তির ঘোষণা দেয়া হয়েছে। “আগুন, তাদেরকে তাতে উপস্থিত করা হয় সকাল ও সন্ধ্যায় এবং যেদিন কিয়ামত ঘটবে সেদিন বলা হবে, ফিরআউন গোষ্ঠীকে নিক্ষেপ কর কঠোর শাস্তিতে” [সূরা গাফির: ৪৬]

আবার অন্যত্র বনী ইসরাইলের মধ্যে যাদেরকে আকাশ থেকে দস্তরখানসহ খাবার দেয়া হয়েছিল, তাদের মধ্যে যারা কুফরী করবে তাদের জন্য এমন শাস্তির ঘোষণা দেয়া হয়েছে যে শাস্তি আল্লাহ আর কাউকে দিবেন না। “আল্লাহ বললেন, ‘আমিই তোমাদের কাছে ওটা পাঠাব; কিন্তু এর পর তোমাদের মধ্যে কেউ কুফরী করলে তাকে এমন শাস্তি দেব, যে শাস্তি বিশ্বজগতের আর কাউকেও দেব না” [সূরা আল-মায়িদাহ ১১৫]

সুতরাং এটাই বলা চলে যে, সবচেয়ে কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হবে এ তিন শ্রেণীর লোক। [আদওয়াউল বায়ান] এ আয়াতে বর্ণিত ‘দারকুল আসফাল’ বা নিম্নতম স্তর কি এ সম্পর্কে আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, সেটা হবে বদ্ধ সিন্ধুক। [মুসান্নাফে ইবন আবী শাইবাহঃ ১৩/১৫৪, নং ১৫৯৭২]

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, দারকুল আসফাল হচ্ছে, এমন কিছু ঘর যেগুলোর দরজা বন্ধ করা আছে। আর সেগুলোকে উপর ও নিচ থেকে প্রজ্জলিত করা হবে। [আত-তাফসীরুস সহীহ] ইবন আব্বাস বলেন, এর অর্থ, জাহান্নামের নীচে থাকবে। [তাবারী]

[৩] কাতাদাহ বলেন, এখানে সংশোধন করার অর্থ হচ্ছে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল এবং তাদের মধ্যকার সম্পর্ক ঠিক করে নেয়া। [আত-তাফসীরুস সহীহ]

[৪] এ আয়াত দ্বারা বোঝা যায় যে, আল্লাহ তা’আলার দরবারে একমাত্র ঐসব আমলই গৃহীত ও কবুল হয় যা শুধু তাঁর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে করা হয়েছে এবং কোনরূপ রিয়া তথা লোক দেখানো ও শোনানোর লেশমাত্র উদ্দেশ্য যার মধ্যে নেই।

[৫] আয়াতে শোকর শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। এর আসল অর্থ হচ্ছে নেয়ামতের স্বীকৃতি দেয়া ও কৃতজ্ঞতা স্বীকার করা এবং অনুগৃহীত হওয়া। এ ক্ষেত্রে আয়াতের অর্থ হচ্ছে, যদি তোমরা আল্লাহর প্রতি অকৃতজ্ঞ না হও এবং তাঁর সাথে নিমকহারামী না কর; বরং যথার্থই তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ ও শোকর আদায়কারী হও তাহলে আল্লাহ অনর্থক তোমাদের শাস্তি দেবেন না। মোটকথা: আল্লাহ তা’আলা ঈমানদার এবং শোকরগুজারকে শাস্তি দিবেন না। [তাবারী] কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, অনুগ্রহকারীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের সঠিক পদ্ধতি কি? বস্তুতঃ হৃদয়ের সমগ্র অনুভূতি দিয়ে তার অনুগ্রহের স্বীকৃতি দেয়া, মুখে এ অনুভূতির স্বীকারোক্তি করা এবং কার্যকলাপের মাধ্যমে অনুগৃহীত হওয়ার প্রমাণ পেশ করাই হচ্ছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশের সঠিক উপায়। এ তিনটি কাজের সমবেত রূপই হচ্ছে শোকর। এ শোকরের দাবী হচ্ছে প্রথমতঃ অনুগ্রহকে অনুগ্রহকারীর অবদান বলে স্বীকার করা। অনুগ্রহের স্বীকৃতি দেয়ার ক্ষেত্রে অনুগ্রহকারীর সাথে আর কাউকে অংশীদার না করা। দ্বিতীয়তঃ অনুগ্রহকারীর প্রতি ভালবাসা, বিশ্বস্ততা ও আনুগত্যের অনুভূতি নিজের হৃদয়ে ভরপুর থাকা এবং অনুগ্রহকারীর বিরোধীদের প্রতি এ প্রসঙ্গে বিন্দুমাত্র ভালবাসা, আন্তরিকতা, আনুগত্য ও বিশ্বস্ততার সম্পর্ক না থাকা। তৃতীয়তঃ অনুগ্রহকারীর আনুগত্য করা, তার হুকুম মেনে চলা, তার নেয়ামগুলোকে তার মর্জির বাইরে ব্যবহার না করা।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান বলেছেন:-

[১] অর্থাৎ, মহান আল্লাহ তোমাদেরকে কাফেরদের সাথে বন্ধুত্ব করতে নিষেধ করেছেন। এখন যদি তোমরা তাদের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন কর, তাহলে তার অর্থ হবে তোমরা নিজেদের বিরুদ্ধে আল্লাহর দলীল কায়েম করছ; যাতে তিনি তোমাদেরকে শাস্তি দিতে পারেন। (অর্থাৎ, আল্লাহর অবাধ্যতা এবং তাঁর নির্দেশ অমান্য করার কারণে।)

[২] জাহান্নামের সর্ব নিম্নস্তরকে هَاوِيَة (হাবিয়াহ) বলা হয়। أَعَاذَنَا اللهُ مِنْهَا উল্লিখিত মুনাফিক্বী স্বভাব ও আচার-আচরণ থেকে যেন আল্লাহ আমাদের রক্ষা করেন!

[৩] অর্থাৎ, মুনাফিকদের মধ্য থেকে যে ব্যক্তি এই চারটি কর্মের প্রতি ঐকান্তিকতার সাথে যত্নবান হবে, সে জাহান্নামে যাওয়ার পরিবর্তে ঈমানদারদের সাথে জান্নাতে প্রবেশ করবে।

[৪] আল্লাহর কৃতজ্ঞতা করার অর্থ হল, তাঁর নির্দেশ অনুযায়ী অন্যায়-অনাচার থেকে বিরত থাকা এবং নেক আমলের প্রতি যত্ন নেওয়া। এটাই হল আল্লাহর নিয়ামতের কার্যতঃ কৃতজ্ঞতা। আর ঈমান (বিশ্বাস) বলতে আল্লাহর তাওহীদ (একত্ব), তাঁর রুবূবিয়্যাত (প্রতিপালকত্ব) এবং শেষ নবী মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর রিসালাত এবং অন্যান্য দ্বীনী বিষয়ের উপর বিশ্বাস স্থাপন করা।

[৫] অর্থাৎ, যে তাঁর (আল্লাহর) কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে, তিনি তার মূল্যায়ন করবেন। যে অন্তর থেকে ঈমান আনবে, তিনি তাকে জেনে নেবেন এবং সেই অনুযায়ী তাকে উত্তম প্রতিদানও দেবেন।

English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
An Nisa:-
Verse:- 144-147

The Prohibition of Wilayah with the Disbelievers

Allah

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ امَنُواْ لَا تَتَّخِذُواْ الْكَافِرِينَ أَوْلِيَاء مِن دُونِ الْمُوْمِنِينَ

O you who believe! Do not take disbelievers as friends instead of believers.

Allah forbids His believing servants from taking the disbelievers as friends instead of the believers. This includes being friends and associates of the disbelievers, advising them, being intimate with them and exposing the secrets of the believers to them.

In another Ayah, Allah said,

لااَّ يَتَّخِذِ الْمُوْمِنُونَ الْكَـفِرِينَ أَوْلِيَأءَ مِن دُونِ الْمُوْمِنِينَ وَمَن يَفْعَلْ ذَلِكَ فَلَيْسَ مِنَ اللَّهِ فِي شَىْءٍ إِلَا أَن تَتَّقُواْ مِنْهُمْ تُقَـةً وَيُحَذِّرْكُمُ اللَّهُ نَفْسَهُ

Let not the believers take the disbelievers as friends instead of the believers, and whoever does that, will never be helped by Allah in any way, except if you indeed fear a danger from them. And Allah warns you against Himself. (3:28)

meaning, He warns you against His punishment if you fall into what He has prohibited.

This is why Allah said here,

أَتُرِيدُونَ أَن تَجْعَلُواْ لِلّهِ عَلَيْكُمْ سُلْطَانًا مُّبِينًا

Do you wish to offer Allah a manifest Sultan against yourselves!

meaning, proof against you that warrants receiving His torment.

Ibn Abi Hatim narrated that Ibn Abbas commented;
سُلْطَانًا مُّبِينًا
(manifest Sultan),

“The word Sultan in the Qur’an means proof.”

There is an authentic chain of narration for this statement, which is also the saying of Mujahid, Ikrimah, Sa`id bin Jubayr, Muhammad bin Ka`b Al-Qurazi, Ad-Dahhak, As-Suddi and An-Nadr bin Arabi.
The Hypocrites and the Friends of Disbelievers are in the Lowest Depth of the Fire, Unless they Repent

Allah then states that
إِنَّ الْمُنَافِقِينَ فِي الدَّرْكِ الَاسْفَلِ مِنَ النَّارِ

Verily, the hypocrites will be in the lowest depths of the Fire;

on the Day of Resurrection due to their tremendous Kufr.

Al-Walibi (Ali bin Abi Talhah) said that Ibn Abbas said,
فِي الدَّرْكِ الَاسْفَلِ مِنَ النَّارِ
(in the lowest depths (grade) of the Fire),

means, in the bottom of the Fire.

Other scholars said that;

the Fire has ever lower depths just as Paradise had ever higher grades.

Ibn Jarir recorded that Abdullah bin Mas`ud said that,
إِنَّ الْمُنَافِقِينَ فِي الدَّرْكِ الَاسْفَلِ مِنَ النَّارِ
(Verily, the hypocrites will be in the lowest depths (grade) of the Fire),

“Inside coffins of Fire that surround them, for they are closed and sealed in them.”

Ibn Abi Hatim recorded that when Ibn Mas`ud was asked about the hypocrites, he said,

“They will be placed in coffins made of fire and they will be closed in them in the lowest depth of the Fire.”

وَلَن تَجِدَ لَهُمْ نَصِيرًا

no helper will you find for them.

to save them from their misery and painful torment.

Allah then states that whoever among the hypocrites repents in this life, Allah will accept his repentance and sorrow, if his repentance were sincere and he then follows it by performing righteous deeds, all the while depending on his Lord.

Allah said
إِلاَّ الَّذِينَ تَابُواْ وَأَصْلَحُواْ وَاعْتَصَمُواْ بِاللّهِ وَأَخْلَصُواْ دِينَهُمْ لِلّهِ

Except those who repent (from hypocrisy), do righteous good deeds, depend on Allah, and purify their religion for Allah,

replacing showing off with sincerity, so that their good deeds will benefit them, even if they were minute.

فَأُوْلَـيِكَ مَعَ الْمُوْمِنِينَ

then they will be with the believers.

on the Day of Resurrection.

وَسَوْفَ يُوْتِ اللّهُ الْمُوْمِنِينَ أَجْرًا عَظِيمًا

And Allah will grant to the believers a great reward.

Allah then states that He is too Rich to need anyone and that He only punishes the servants because of their sins.
مَّا يَفْعَلُ اللّهُ بِعَذَابِكُمْ إِن شَكَرْتُمْ وَامَنتُمْ

Why should Allah punish you if you have thanked (Him) and have believed in Him.

by correcting your actions and having faith in Allah and His Messenger.

وَكَانَ اللّهُ شَاكِرًا عَلِيمًا

And Allah is Ever All-Appreciative (of good), All-Knowing.

Allah appreciates those who appreciate Him, and has knowledge of those whose hearts believe in Him, and He will give them perfect reward.

Leave a Reply