(Book# 114/١٦٣)-৩৬৫ www.motaher21.net إِن تُبْدُوا خَيْرًا أَوْ تُخْفُوهُ যদি তোমরা ভালো কিছু প্রকাশ কর, কিংবা গোপন কর, Whether you disclose a good deed, or conceal it, সুরা: আন-নিসা আয়াত নং :-১৪৮-১৪৯

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ

(Book# 114/١٦٣)-৩৬৫
www.motaher21.net

إِن تُبْدُوا خَيْرًا أَوْ تُخْفُوهُ
যদি তোমরা ভালো কিছু প্রকাশ কর, কিংবা গোপন কর,
Whether you disclose a good deed, or conceal it,

সুরা: আন-নিসা
আয়াত নং :-১৪৮-১৪৯

4:148

لَّا يُحِبُّ اللَّهُ الْجَهْرَ بِالسُّوٓءِ مِنَ الْقَوْلِ إِلَّا مَن ظُلِمَ ۚ وَكَانَ اللَّهُ سَمِيعًا عَلِيمًا

মন্দ কথার প্রচার আল্লাহ পছন্দ করেন না, তবে কারো উপর যুলম করা হলে ভিন্ন কথা। আর আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞানী।

আয়াত নং :-১৪৯

اِنْ تُبْدُوْا خَیْرًا اَوْ تُخْفُوْهُ اَوْ تَعْفُوْا عَنْ سُوْٓءٍ فَاِنَّ اللّٰهَ كَانَ عَفُوًّا قَدِیْرًا

যদি তোমরা প্রকাশ্যে ও গোপনে সৎকাজ করে যাও অথবা কমপক্ষে অসৎকাজ থেকে বিরত থাকো, তাহলে আল্লাহও বড়ই ক্ষমা-গুণের অধিকারী। অথচ তিনি শাস্তি দেবার পূর্ণ ক্ষমতা রাখেন।

১৪৮-১৪৯ নং আয়াতের তাফসীর:
তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ বলেছেন:-
কেউ অযথা মন্দ কথা প্রকাশ করুক আল্লাহ তা‘আলা এটা পছন্দ করেন না। এ মন্দ কথার ভেতর সকল মন্দ কথা শামিল যা মানুষকে কষ্ট দেয় ও দুঃশ্চিন্তিত করে। যেমন গালি দেয়া, মিথ্যা অপবাদ দেয়া, এ জাতীয় যা আছে সব নিষেধাজ্ঞার অন্তর্ভুক্ত।

ইবনু আব্বাস (রাঃ) এ আয়াতের তাফসীরে বলেন: কেউ কারো ওপর বদদু‘আ করুক আল্লাহ তা‘আলা এটা পছন্দ করেন না।

তবে যে ব্যক্তি নির্যাতিত সে ব্যক্তির জন্য অনুমতি রয়েছে। তিনি যালেমের বিরুদ্ধে বদদু‘আ করতে পারবেন। তার যুলুমের কথা শাসকের কাছে বলতে পারবেন কিন্তু বলার ক্ষেত্রে সীমালঙ্ঘন করতে পারবে না। এতদসত্ত্বেও ক্ষমা করে দিলে উত্তম হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(وَلَمَنِ انْتَصَرَ بَعْدَ ظُلْمِه۪ فَأُولٰ۬ئِكَ مَا عَلَيْهِمْ مِّنْ سَبِيْلٍ)

“তবে অত্যাচারিত হবার পর যে প্রতিশোধ নেয়, তার বিরুদ্ধে দোষারোপের কোন সুযোগ নেই।”(সূরা শুরা ৪২:৪১)

জনৈক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর দরবারে উপস্থিত হয়ে বলল: আমার প্রতিবেশী আমাকে কষ্ট দেয়। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: তোমার ঘরের জিনিস পত্র বের করে রাস্তার ওপর রেখে দাও। লোকটি তাই করল। তারপর যে ব্যক্তি রাস্তা দিয়ে পার হয়ে যায়, সেই তার কারণ জিজ্ঞেস করে। আর সে প্রতিবেশীর অত্যাচারের কথা বলতেই প্রত্যেকে অভিশাপ করে। প্রতিবেশী এ পরিস্থিতি দেখে নিজের ভুল স্বীকার করল এবং ভবিষ্যতে আর কোনদিন কষ্ট দেবে না বলে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হল। আর প্রতিবেশীকে জিনিসপত্রগুলোকে ঘরে নিয়ে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করল। (আবূ দাঊদ হা: ৫১৫, সহীহ)

(إِنْ تُبْدُوْا خَيْرًا)

‘যদি তোমরা সৎ কর্ম প্রকাশ্যে কর’ অর্থাৎ ভাল কাজ প্রকাশ্যে করা বা গোপনে করা বা অপরাধ ক্ষমা করে দেয়া সবই প্রসংশনীয়। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:

ما نَقَصَتْ صَدَقَةٌ مِنْ مَالٍ وَمَا زَادَ اللّٰهُ عَبْدًا بِعَفْوٍ اِلَّا عِزًّا وَمَا تَوَاضَعَ عَبْدٌ اِلَّا رَفَعَهُ اللّٰهُ

দান করার কারণে সম্পদ কমে যায় না, ক্ষমা ও মাফ করে দেয়ার কারণে আল্লাহ তা‘আলা সম্মান বৃদ্ধি করে দেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ তা‘আলার জন্য বিনয় নম্রতা প্রকাশ করে, আল্লাহ তা‘আলা তার সম্মান ও মর্যাদা আরো বাড়িয়ে দেন। (মুসলিম, তিরমিযী হা: ২০২৯, সহীহ)

আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:

১. অযথা খারাপ কথা বলা ও প্রচার করে বেড়ানো হারাম।
২. সৎ কাজ প্রকাশ্যে ও গোপনে উভয়টাই কল্যাণকর।
৩. যথাসম্ভব ক্ষমা করা ঈমানের বৈশিষ্ট্য।

তাফসীরে ইবনে ‌কাসীর বলেছেন:-

হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) এ আয়াতের তাফসীরে বলেন যে, কোন মুসলমানের জন্য বদ দু’আ করা বৈধ নয়। তবে যার উপর অত্যাচার করা হবে সে অত্যাচারীর জন্যে বদ দু’আ করতে পারে। কিন্তু সেও যদি ধৈর্যধারণ করে তবে ফযীলত তাতেই রয়েছে। সুনান-ই-আবি দাউদে রয়েছে যে, হযরত আয়েশা (রাঃ)-এর কোন জিনিস চুরি যায়। তখন তিনি চোরের জন্যে বদ দুআ করতে থাকেন। রাসূলুল্লাহ (সঃ) এটা শুনে বলেনঃ তার বোঝা হালকা করছো কেন? হযরত হাসান বসরী (রঃ) বলেন যে, তার জন্যে বদ দু’আ করা উচিত নয়, বরং নিম্নের দু’আটি পাঠ করা উচিতঃ (আরবী) অর্থাৎ হে আল্লাহ! আপনি আমাকে তার উপর সাহায্য করুন এবং তার নিকট হতে আমার প্রাপ্য বের করে দিন। এ মনীষী হতেই বর্ণিত আছে যে, অত্যাচারীর জন্যে বদ দু’আ করার অনুমতি যদিও অত্যাচারিত ব্যক্তির রয়েছে, কিন্তু সেটা যেন সীমা ছাড়িয়ে না যায়, সেদিকে তাকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

হযরত আবদুল করিম ইবনে মালিক জাযারী (রঃ) এ আয়াতের তাফসীরে বলেন যে, যে ব্যক্তি গালি দেবে অর্থাৎ মন্দ বলবে তাকে মন্দ বলা যাবে, কিন্তু কেউ অপবাদ দিলে তাকে অপবাদ দেয়া যারে না। অন্য একটি আয়াতে রয়েছেঃ (আরবী) অর্থাৎ যে অত্যাচারিত ব্যক্তি অত্যাচারী হতে তার অত্যাচারের প্রতিশোধ গ্রহণ করে তাদের উপর কোন জবাবদিহী নেই। (৪২:৪১) সুনান-ই-আবি দাউদে হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ ‘দু’জন গালিদাতা যা বলে ওর শাস্তি তার উপর রয়েছে যে প্রথমে গালি দিয়েছে যে পর্যন্ত না অত্যাচারিত ব্যক্তি সীমা অতিক্রম করে।

হযরত মুজাহিদ (রঃ) বলেনঃ “যদি কোন ব্যক্তি কারও নিকট অতিথি হিসেবে আগমন করে এবং অতিথি সেবক তার আতিথেয়তার হক আদায় না করে তবে অতিথি সেবকের দুর্নাম করতে পারে যে পর্যন্ত না সে জিয়াফতের হক আদায় করে।’ সুনান-ই-আবি দাউদ, সুনান-ই-ইবনে মাজা প্রভৃতি হাদীস গ্রন্থে রয়েছে যে, সাহাবীগণ রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নিকট অভিযোগ পেশ করেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আপনি আমাদেরকে বিভিন্ন স্থানে পাঠিয়ে থাকেন। কোন কোন সময় এমনও হয় যে, তথাকার লোক আমাদের মেহমানদারী করে না। এতে আপনার অভিমত কি?’ রাসূলুল্লাহ (সঃ) তখন তাদেরকে বলেনঃ যখন তোমরা কোন সম্প্রদায়ের নিকট গমন করবে তখন যদি তারা মেহমানের উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করে তবে তোমরা তা কবুল করবে। আর যদি তারা তা না করে তবে তোমরা তাদের সাধ্য অনুপাতে তাদের নিকট হতে অতিথির উপযুক্ত প্রাপ্য আদায় করবে।’

মুসনাদ-ই-আহমাদে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “যে মুসলমান। কোন এক লোকের বাড়ীতে অতিথি হিসেবে উপস্থিত হয়, রাত্রি অতিবাহিত হয়ে যায় অথচ তারা তার আতিথ্যের কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করে না, সে সময় প্রত্যেক মুসলমানের অবশ্যকর্তব্য হবে ঐ ব্যক্তির মাল হতে ও ক্ষেত হতে ঐ রাত্রির মেহমানদারীর জিনিস আদায় করে দিয়ে অতিথিকে সাহায্য করা।’ অন্য বর্ণনায় রয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ জিয়াফতের রাত্রি প্রত্যেক মুসলমানের উপর ওয়াজিব। যদি কোন মুসাফির সকাল পর্যন্ত বঞ্চিত থাকে, তবে এটা ঐ মেজবানের দায়িত্বে কর্জ রূপে থাকবে, এখন সে তা আদায় করুক বা ছেড়ে দিক।’ এসব হাদীসের পরিপ্রেক্ষিতে ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল প্রমুখ মনীষীর মাযহাব এই যে, নিমন্ত্রণ ওয়াজিব।

সুনান-ই-আবি দাউদ প্রভৃতির মধ্যে রয়েছে, একটি লোক রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর দরবারে উপস্থিত হয়ে আরয করেঃ হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আমার প্রতিবেশী আমাকে খুব কষ্ট দিচ্ছে।’ রাসূলুল্লাহ (সঃ) তখন তাকে বলেনঃ “তুমি এক কাজ কর, তোমার বাড়ীর সমস্ত আসবাবপত্র বাইরে এনে রেখে দাও। লোকটি ঐ কাজই করে এবং সমস্ত আসবাবপত্র রাস্তার উপর রেখে বসে পড়ে। রাস্তা দিয়ে যেই গমন করে সেই তাকে জিজ্ঞেস করে-ব্যাপার কি? সে বলে, আমার প্রতিবেশী আমাকে জ্বালাতন করছে। আমি অধৈর্য হয়ে এখানে চলে এসেছি। সবাই তখন তার প্রতিবেশীকে ভাল-মন্দ বলতে থাকে। কেউ বলে যে, তার উপর আল্লাহ তা’আলার ক্রোধ বর্ষিত হোক। কেউ বলে যে, আল্লাহ তাআলা তাকে ধ্বংস করুন, তার প্রতিবেশী যখন এভাবে অপমানিত হওয়ার কথা জানতে পারে, তখন সে অনুরোধ করে তাকে বাড়ী নিয়ে যায় এবং বলে-আল্লাহর শপথ! এখন আর মৃত্যু পর্যন্ত আপনার প্রতি কোন অত্যাচার করবো না।

অতঃপর ইরশাদ হচ্ছে-‘হে লোক সকল! যদি তোমরা কোন সৎ কার্য প্রকাশ কর বা গোপন কর, কিংবা তোমার উপর কেউ হয়তো অত্যাচার করেছে, তাকে তুমি ক্ষমা কর তবে আল্লাহ তা’আলার নিকট তোমার জন্যে রয়েছে বড় পুণ্য ও মহা প্রতিদান। তিনি নিজেও ক্ষমাকারী এবং বান্দার মধ্যেও তিনি এ অভ্যাস পছন্দ করেন। প্রতিশোধ নেয়ার পূর্ণ ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও তিনি ক্ষমা করে থাকেন। একটি বর্ণনায় রয়েছে যে, আরশ বহনকারী ফেরেশতাগণ। আল্লাহ তা’আলার তাসবীহ পাঠ করে থাকেন। কেউ বলেন (আরবী) অর্থাৎ হে আল্লাহ! আমরা আপনার পবিত্রতা বর্ণনা করছি যে, আপনি জানা। সত্ত্বেও সহনশীলতা প্রদর্শন করছেন। আবার কেউ কেউ বলেন- (আরবী) অর্থাৎ ‘হে ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও ক্ষমকারী প্রভু! সমস্ত পবিত্রতা আপনার সত্তার জন্যই উপযুক্ত।

সহীহ হাদীসে রয়েছে যে, সাদকা ও খায়রাতের কারণে কারও মাল কমে যায় না। ক্ষমা ও মাফ করে দেয়ার কারণে আল্লাহ তা’আলা সম্মান বৃদ্ধি করে থাকেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ তা’আলার নির্দেশক্রমে বিনয় ও নম্রতা প্রকাশ করে, আল্লাহ তা’আলা তার সম্মান ও মর্যাদা আরও বাড়িয়ে দেন।

তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-

টিকা:১৭৭) এ আয়াতে মুসলমানদের একটি অত্যন্ত উন্নত পর্যায়ের নৈতিক শিক্ষা দান করা হয়েছে। সে সময় মুনাফিক, ইহুদী ও মূর্তি পূজারী সবাই একই সঙ্গে সম্ভাব্য যাবতীয় উপায়ে ইসলামের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্ট করার ও ইসলাম গ্রহণকারীকে কষ্ট দেবার ও হয়রানী করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছিল। এই নতুন আন্দোলনটির বিরুদ্ধে এমন কোন নিকৃষ্টতম কৌশল ছিল না যা তারা অবলম্বন করেনি। কাজেই মুসলমানদের মধ্যে এর বিরুদ্ধে ঘৃণা ও ক্রোধের অনুভূতি সৃষ্টি হওয়া একটা স্বাভাবিক ব্যাপার ছিল। তাদের মনে এই ধরনের অনুভূতির প্রবল জোয়ার সৃষ্টি হতে দেখে আল্লাহ‌ বলেন তোমাদের খারাপ কথা বলা ও অশ্লীল বাক্য উচ্চারণ করা আল্লাহর কাছে কোন পছন্দনীয় কাজ নয়। তোমরা মজলুম, এতে সন্দেহ নেই। আর মজলুম যদি জালেমদের বিরুদ্ধে অশ্লীল কথা বলে, তাহলে তাদের সে অধিকার আছে। কিন্তু তবুও প্রকাশ্যে গোপণে সর্বাবস্থায় ভাল কাজ করে যাওয়া ও খারাপ কাজ পরিহার করাই উত্তম। কারণ তোমাদের চরিত্র আল্লাহর চরিত্রের নিকটতর হওয়া উচিত। তোমরা যার নৈকট্য লাভ করতে চাও তাঁর অবস্থা হচ্ছে এই যে, তিনি অত্যন্ত ধৈর্যশীল ও সহিষ্ণু। মারাত্মক অপরাধীদেরও তিনি রিযিক দান করেন এবং বড় বড় পাপ ও ত্রুটি-বিচ্যুতিও তিনি ক্ষমা করে দেন। কাজেই তাঁর নিকটতর হবার জন্য তোমরাও উচ্চ মনোবল, বুলন্দ হিম্মত ও উদার হৃদয়ের অধিকারী হও।

তাফসীরে আবুবকর ‌যাকারিয়া‌ বলেছেন:-

[১] এ আয়াতে দুনিয়া হতে জোর-যুলুমের অবসান ঘটানোর এক অপূর্ব বিধান পেশ করা হয়েছে। যার মধ্যে একদিকে ইনসাফ ও ন্যায়নীতি প্রতিষ্ঠা ও অপরাধ দমনের জন্য মযলুমকে অত্যাচারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপন করে তাকে আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর আধিকার দিয়েছে। অন্যদিকে প্রতিশোধ নিতে গিয়ে আবার যুলুম ও বাড়াবাড়ি করা থেকে নিষেধ করা হয়েছে। অন্য আয়াতে আল্লাহ তা’আলা বলেন, “যদি তোমরা প্রতিশোধ নিতে চাও, তবে তোমাদের উপর যে পরিমাণ যুলুম করা হয়েছে, তোমরা ঠিক ততটুকুই প্রতিশোধ নিতে পার”। [সূরা আন-নাহল: ১২৬]

সাথে সাথে এ কথাও বলে দেয়া হয়েছে যে, প্রতিশোধ গ্রহণ করার ক্ষমতা ও অধিকার থাকা সত্বেও যদি তোমরা ধৈর্য ধারণ কর এবং ক্ষমা করে দাও, তবে নিঃসন্দেহে তা তোমাদের জন্য অতি উত্তম। মোটকথাঃ আয়াত থেকে বোঝা যায় যে, মযলুম ব্যক্তি যদি অত্যাচারীর অন্যায়-অত্যাচারের কাহিনী লোকদের কাছে প্রকাশ করে বা আদালতে অভিযোগ করে, তবে তা হারাম গীবতের আওতায় পড়বে না। কারণ যালিম নিজেই মযলুমকে অভিযোগ উত্থাপন করতে সুযোগ করে দিয়েছে, বরং বাধ্য করেছে।

[২] আল্লাহ্ তা’আলা একদিকে মযলুমকে তার প্রতি যুলুমের সমতুল্য প্রতিশোধ গ্রহণ করার অনুমতি দিয়েছেন। অপরদিকে প্রতিশোধ গ্রহণ করার পরিবর্তে উন্নত চরিত্রের শিক্ষা ও ক্ষমার মনোভাব সৃষ্টি করার জন্য আখেরাতের উত্তম প্রতিদানের আশ্বাস শুনিয়ে ক্ষমা ও ত্যাগের আদর্শ গ্রহণ করার জন্য উদ্বুদ্ধ ও অনুপ্রাণিত করেছেন। এ আয়াতে মুখ্য উদ্দেশ্য কারো অন্যায়কে ক্ষমা করার আদর্শ শিক্ষা দেয়া। প্রকাশ্যে বা গোপনে নেক কাজ করার উল্লেখ করে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, ক্ষমা করাও একটি বিশিষ্ট সৎকার্য। যে ব্যক্তি অন্যের অপরাধ মার্জনা করবে, সে আল্লাহ তা’আলার ক্ষমা ও করুণার যোগ্য হবে। আয়াতের শেষে আল্লাহর দুটি গুণবাচক নাম উল্লেখ করে বলে দেয়া হয়েছে যে, আল্লাহ তা’আলা সর্বশক্তিমান, যাকে ইচ্ছা তিনি শাস্তি দিতে পারেন এবং যখন ইচ্ছা প্রতিশোধ গ্রহণ করতে পারেন। তথাপি তিনি অতি ক্ষমাশীল। আর মানুষের শক্তি ও ক্ষমতা যখন সামান্য ও সীমাবদ্ধ, তাই ক্ষমা বা মার্জনার পথ অবলম্বন করা তার জন্য অধিক বাঞ্ছনীয়।

এ হচ্ছে অন্যায়-অত্যাচার প্রতিরোধ ও সামাজিক সংস্কারসাধনের ইসলামী মূলনীতি এবং অভিভাবকসুলভ সিদ্ধান্ত। একদিকে ন্যায়সঙ্গত প্রতিশোধ গ্রহণের অধিকার প্রদান করে ইনসাফ ও ন্যায়নীতিকে সমুন্নত রাখা হয়েছে, অপরদিকে উত্তম চরিত্র ও নৈতিকতা শিক্ষা দিয়ে ক্ষমা বা মার্জনা করতে অনুপ্রাণিত করা হয়েছে। যার অনিবাৰ্য ফলশ্রুতি সম্পর্কে কুরআনুল কারীমের অন্য আয়াতে এরশাদ হয়েছেঃ “তোমার ও অন্য যে ব্যক্তির মধ্যে দুশমনী ছিল, এমতাবস্থায় সে ব্যক্তি আন্তরিক বন্ধু হয়ে যাবে”। [সূরা ফুস্‌সিলাতঃ ৩৪]

আইন-আদালত বা প্রতিশোধ গ্রহণ করার মাধ্যমে যদিও অন্যায়-অত্যাচার প্রতিরোধ করা যায়, কিন্তু এর দীর্ঘস্থায়ী প্রতিক্রিয়া অব্যাহত থাকে। যার ফলে পারস্পরিক বিবাদের সূত্রপাত হওয়ার আশংকা বিদ্যমান থাকে। কিন্তু কুরআনুল কারীম যে অপূর্ব নৈতিকতার আদর্শ শিক্ষা দিয়েছে, তার ফলে দীর্ঘকালের শক্রতাও গভীর বন্ধুত্বে রূপান্তরিত হয়ে থাকে। হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘সাদকাহ দ্বারা সম্পদ কমে না এবং কোন বান্দার মধ্যে ক্ষমা প্রবণতার গুণের কারণে আল্লাহ তা’আলা কেবল তার মর্যাদাই বৃদ্ধি করেন। আর যে কেউ আল্লাহর জন্য বিনয়ী হয়, আল্লাহ তাকে উচ্চ মর্যাদায় আসীন করেন। [মুসলিম: ২৫৮৮]

তাফসীরে আহসানুল বায়ান বলেছেন:-

[১] কারো মধ্যে যদি কোন ত্রুটি পরিলক্ষিত হয়, তাহলে তার প্রকাশ্যে সমালোচনা না করার প্রতি শরীয়তে খুবই গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে, বরং তাকে নির্জনে বুঝাতে বলা হয়েছে। কিন্তু যদি ধর্মীয় কোন কল্যাণ থাকে, তাহলে প্রকাশ্যে সমালোচনা করায় কোন অসুবিধা নেই। এমনিভাবেই জনসমক্ষে প্রকাশ্যে কোন কুকর্ম করা নিতান্ত অপছন্দনীয়। একে তো কুকর্মে লিপ্ত হওয়াটাই নিষিদ্ধ, যদিও তা পর্দার অন্তরালে হয়, তার উপর সেটা জনসমক্ষে প্রকাশ্যে করা অতিরিক্ত আর একটি অপরাধ। আর তার জন্য ঐ কুকর্মের অপরাধ দ্বিগুণ হতে পারে। উক্ত দুই ধরনের অপরাধের কথা এই আয়াতে উল্লিখিত হয়েছে। আর তাতে এটাও বলা হয়েছে যে, কারো কৃত বা অকৃত অপরাধের কারণে তাকে প্রকাশ্যে ভৎর্সনা করো না। অবশ্য যালেমের যুলুমের কথা জনসমক্ষে বর্ণনা করার ব্যাপারটা ব্যতিক্রম। যালেমের যুলুমের কথা প্রকাশ্যে ব্যক্ত করার মাঝে কয়েকটি মঙ্গল নিহিত আছে। যেমন, সম্ভবতঃ সে যুলুম করা থেকে বিরত হতে পারে অথবা সে আত্মশুদ্ধির চেষ্টা করবে। দ্বিতীয়তঃ লোকে তার ব্যাপারে সাবধান ও সতর্ক থাকবে। হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, একজন লোক রসূল (সাঃ)-এর দরবারে উপস্থিত হয়ে বলল, ‘আমার প্রতিবেশী আমাকে কষ্ট দেয়।’ রসূল (সাঃ) তাকে বললেন, “তুমি তোমার ঘরের জিনিসপত্র বের করে রাস্তার উপর রেখে দাও।” লোকটি তাই করল। তারপর যেই রাস্তা দিয়ে পার হয়ে যায়, সেই তার কারণ জিজ্ঞাসা করে। আর সে প্রতিবেশীর অত্যাচারের কথা বলতেই প্রত্যেকেই তাকে অভিশাপ করে। প্রতিবেশী এই পরিস্থিতি দেখে নিজের ভুল স্বীকার করল এবং ‘ভবিষ্যতে আর কোনদিন কষ্ট দেবে না’ বলে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হল। আর প্রতিবেশীকে নিজ জিনিসপত্রগুলিকে ঘরে নিয়ে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করল। (আবু দাউদ, আদব অধ্যায়)

[২] কোন ব্যক্তি যদি কারো উপর যুলুম বা অন্যায়-উৎপীড়ন করে, তাহলে শরীয়তে মযলুম ব্যক্তির জন্য ততটুকু পরিমাণে প্রতিশোধ নেওয়ার অনুমতি আছে, যতটুকু পরিমাণ যুলুম তার প্রতি করা হয়েছে। নবী (সাঃ) বলেন, “আপোসের মধ্যে গালিগালাজ করে এমন দুই ব্যক্তি যা কিছু বলে পাপ সূচনাকারী ব্যক্তির উপরই বর্তায়; যদি না অত্যাচারিত ব্যক্তি (অর্থাৎ যাকে প্রথমে গালি দেওয়া হয়েছে এবং প্রতিশোধে সেও গালি দিয়েছে সে) সীমালংঘন করে।” (মুসলিম ৪৫৮৭নং) কিন্তু প্রতিশোধ গ্রহণের অনুমতির সাথে সাথে ক্ষমা প্রদর্শন করার প্রতি অধিক অনুপ্রাণিত করা হয়েছে। কেননা আল্লাহ তাআলা প্রতিশোধ নেওয়ার ব্যাপারে পূর্ণাঙ্গরূপে ক্ষমতাবান, তা সত্ত্বেও তিনি ক্ষমা করে দেন। এই জন্য তিনি বলেন, {وَجَزَاء سَيِّئَةٍ سَيِّئَةٌ مِّثْلُهَا فَمَنْ عَفَا وَأَصْلَحَ فَأَجْرُهُ عَلَى اللهِ إِنَّهُُ لَا يُحِبُّ الظَّالِمِينَ} অর্থাৎ, মন্দের প্রতিফল তো অনুরূপ মন্দই। কিন্তু যে ক্ষমা করে দেয় ও আপোস-নিষ্পত্তি করে, তার পুরস্কার আল্লাহর নিকট আছে। নিশ্চয় তিনি অত্যাচারীদেরকে ভালবাসেন না। (সূরা শূরা ৪২:৪০) আর হাদীসে মহানবী (সাঃ) বলেছেন, “অপরাধ মার্জনা করার কারণে, আল্লাহ (মার্জনাকারীর) সম্মান ও ইজ্জত বাড়িয়ে দেন।” (মুসলিম)

English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
An Nisa:-
Verse:- 148-149

The Permission to Utter Evil in Public, For One Who Was Wronged

Allah says;

لااَّ يُحِبُّ اللّهُ الْجَهْرَ بِالسُّوَءِ مِنَ الْقَوْلِ إِلااَّ مَن ظُلِمَ وَكَانَ اللّهُ سَمِيعًا عَلِيمًا

Allah does not like that the evil should be uttered in public except by him who has been wronged. And Allah is Ever All-Hearer, All-Knower.

Ali bin Abi Talhah said that Ibn Abbas commented on the Ayah,
لااَّ يُحِبُّ اللّهُ الْجَهْرَ بِالسُّوَءِ مِنَ الْقَوْلِ
(Allah does not like that the evil should be uttered in public),

“Allah does not like that any one should invoke Him against anyone else, unless one was wronged. In this case, Allah allows one to invoke Him against whoever wronged him. Hence Allah’s statement,
إِلاَّ مَن ظُلِمَ
(except by him who has been wronged). Yet, it is better for one if he observes patience.”

Al-Hasan Al-Basri commented,

“One should not invoke Allah (for curses) against whoever wronged him. Rather, he should supplicate, `O Allah! Help me against him and take my right from him.”‘

In another narration, Al-Hasan said,

“Allah has allowed one to invoke Him against whoever wronged him without transgressing the limits.”

Abdul-Karim bin Malik Al-Jazari said about this Ayah;

“When a man curses you, you could curse him in retaliation. But if he lies about you, you may not lie about him.

وَلَمَنِ انتَصَرَ بَعْدَ ظُلْمِهِ فَأُوْلَـيِكَ مَا عَلَيْهِمْ مِّن سَبِيلٍ

And indeed whosoever takes revenge after he has suffered wrong, for such there is no way (of blame) against them.” (42:41)

Abu Dawud recorded that Abu Hurayrah said that the Messenger of Allah said,

المُسْتَبَّانِ مَا قَالَا فَعَلَى الْبَادِي مِنْهُمَا مَا لَمْ يَعْتَدِ الْمَظْلُوم

Whatever words are uttered by those who curse each other, then he who started it will carry the burden thereof, unless the one who was wronged transgresses the limit.

Allah said,

إِن تُبْدُواْ خَيْرًا أَوْ تُخْفُوهُ أَوْ تَعْفُواْ عَن سُوَءٍ فَإِنَّ اللّهَ كَانَ عَفُوًّا قَدِيرًا

Whether you disclose a good deed, or conceal it, or pardon an evil; verily, Allah is Ever Pardoning, All-Powerful.

Meaning when you, mankind, admit to a good favor done to you, or conceal it, and forgive those who wrong you, then this will bring you closer to Allah and increase your reward with Him.

Among Allah’s attributes is that He forgives and pardons His servants, although He is able to punish them. Hence Allah’s statement,
فَإِنَّ اللّهَ كَانَ عَفُوًّا قَدِيرًا
(Verily, Allah is Ever Pardoning, All-Powerful).

It was reported that some of the angels who carry Allah’s Throne praise Him saying,

“All praise is due to You for Your forbearing even though You have perfect knowledge (in all evil committed).”

Some of them supplicate,

“All praise is due to You for Your forgiving even though You have perfect ability (to punish).”

An authentic Hadith states,

مَا نَقَصَ مَالٌ مِنْ صَدَقَةٍ وَلَاا زَادَ اللهُ عَبْدًا بِعَفْوٍ إِلاَّ عِزًّا وَمَنْ تَوَاضَعَ للهِ رَفَعَهُ الله

No charity shall ever decrease wealth, and Allah will only increase the honor of a servant who pardons, and he who is humble for Allah’s sake, then Allah will elevate his grade.

Leave a Reply