أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book# 114/١٦٦)-৩৬৮
www.motaher21.net
فَبِمَا نَقْضِهِم مِّيثَاقَهُمْ وَكُفْرِهِم بَأيَاتِ اللّهِ
কারণ, তারা তাদের অঙ্গীকার ভঙ্গ করেছিল, আল্লাহর আয়াতসমূহকে অবিশ্বাস করেছিল,
Because of their breaking the covenant, and their rejecting the Ayat of Allah,
সুরা: আন-নিসা
আয়াত নং :-১৫৫-১৫৯
সুরা: আন-নিসা
আয়াত নং :-১৫৫
فَبِمَا نَقْضِهِمْ مِّیْثَاقَهُمْ وَ كُفْرِهِمْ بِاٰیٰتِ اللّٰهِ وَ قَتْلِهِمُ الْاَنْۢبِیَآءَ بِغَیْرِ حَقٍّ وَّ قَوْلِهِمْ قُلُوْبُنَا غُلْفٌؕ بَلْ طَبَعَ اللّٰهُ عَلَیْهَا بِكُفْرِهِمْ فَلَا یُؤْمِنُوْنَ اِلَّا قَلِیْلًا۪
শেষ পর্যন্ত তাদের অঙ্গীকার ভঙ্গের জন্য, আল্লাহর আয়াতের ওপর মিথ্যা আরোপ করার জন্য, নবীদেরকে অন্যায়ভাবে হত্যা করার জন্য এবং “আমাদের দিল আবরণের মধ্যে সুরক্ষিত” তাদের এই উক্তির জন্য(তারা অভিশপ্ত হয়েছিল) । অথচ মূলত তাদের বাতিল পরস্তির জন্য আল্লাহ তাদের দিলের ওপর মোহর মেরে দিয়েছেন এবং এ জন্য তারা খুব কমই ঈমান এনে থাকে।
সুরা: আন-নিসা
আয়াত নং :-১৫৬
وَّ بِكُفْرِهِمْ وَ قَوْلِهِمْ عَلٰى مَرْیَمَ بُهْتَانًا عَظِیْمًاۙ
তারপর তাদের নিজেদের কুফরীর মধ্যে অনেক দূর অগ্রসর হয়ে মারয়ামের ওপর গুরুতর অপবাদ লাগাবার জন্য।
সুরা: আন-নিসা
আয়াত নং :-১৫৭
وَّ قَوْلِهِمْ اِنَّا قَتَلْنَا الْمَسِیْحَ عِیْسَى ابْنَ مَرْیَمَ رَسُوْلَ اللّٰهِۚ وَ مَا قَتَلُوْهُ وَ مَا صَلَبُوْهُ وَ لٰكِنْ شُبِّهَ لَهُمْؕ وَ اِنَّ الَّذِیْنَ اخْتَلَفُوْا فِیْهِ لَفِیْ شَكٍّ مِّنْهُؕ مَا لَهُمْ بِهٖ مِنْ عِلْمٍ اِلَّا اتِّبَاعَ الظَّنِّۚ وَ مَا قَتَلُوْهُ یَقِیْنًۢاۙ
এবং তাদের ‘আমরা আল্লাহর রসূল মারয়াম পুত্র ঈসা মসীহ্কে হত্যা করেছি’, এই উক্তির জন্য (তারা অভিশপ্ত হয়েছিল) । অথচ প্রকৃতপক্ষে তারা তাকে হত্যাও করেনি এবং শূলেও চড়ায়নি বরং ব্যাপারটিকে তাদের জন্য সন্দিগ্ধ করে দেয়া হয়েছে।আর যারা এ ব্যাপারে মতবিরোধ করেছে তারাও আসলে সন্দেহের মধ্যে অবস্থান করছে। তাদের কাছে এ সম্পর্কিত কোন জ্ঞান নেই, আছে নিছক আন্দাজ-অনুমানের অন্ধ অনুসৃতি। নিঃসন্দেহে তারা ঈসা মসীহকে হত্যা করেনি।
সুরা: আন-নিসা
আয়াত নং :-১৫৮
بَلْ رَّفَعَهُ اللّٰهُ اِلَیْهِؕ وَ كَانَ اللّٰهُ عَزِیْزًا حَكِیْمًا
বরং আল্লাহ তাঁকে নিজের দিকে উঠিয়ে নিয়েছেন। আল্লাহ জবরদস্ত শক্তিশালী ও প্রজ্ঞাময়।
সুরা: আন-নিসা
আয়াত নং :-১৫৯
وَ اِنْ مِّنْ اَهْلِ الْكِتٰبِ اِلَّا لَیُؤْمِنَنَّ بِهٖ قَبْلَ مَوْتِهٖۚ وَ یَوْمَ الْقِیٰمَةِ یَكُوْنُ عَلَیْهِمْ شَهِیْدًاۚ
আর আহলি কিতাবদের মধ্য থেকে এমন একজনও হবে না। যে তার মৃত্যুর পূর্বে তার ঈমান আনবে না, এবং কিয়ামতের দিন সে তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে।
তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
টিকা:১৮৭) সূরা বাকারার ৮৮ আয়াতে ইহুদীদের এই বক্তব্যটির দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। আসলে দুনিয়ার সমস্ত বাতিল পূজারী জাহেলদের মতো এরাও এই মর্মে গর্ব করতো যে, নিজেদের বাপ-দাদাদের থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে তারা যে সমস্ত চিন্তাধারা, বংশ-প্রীতি, গোত্র-প্রীতি, রীতি-নীতি, রসম-রেওয়াজ লাভ করেছে সেসবের ওপর তাদের আকীদা-বিশ্বাস এতো বেশী পাকাপোক্ত হয়ে গেছে যে, কোন ক্রমেই তাদেরকে সেসব থেকে সরানো যাবে না। যখনই আল্লাহর পক্ষ থেকে পয়গাম্বররা এসে তাদের বুঝাবার চেষ্টা করেছেন তখনই তারা তাদের এই একই জবাব দিয়েছেনঃ তোমরা যে কোন যুক্তি-প্রমাণ, যে কোন নিদর্শন আনো না কেন আমরা তোমাদের কোন কথায় প্রভাবিত হবো না। এ পর্যন্ত আমরা যা কিছু মেনে এসেছি ও যা কিছু করে এসেছি এখনো তাই মানবো ও তাই করে যেতে থাকবো। (সূরা বাকারার ৯৪ নম্বর টীকা দেখুন)।
সুরা: বাকারা
আয়াত নং :-৮৭
وَ لَقَدْ اٰتَیْنَا مُوْسَى الْكِتٰبَ وَ قَفَّیْنَا مِنْۢ بَعْدِهٖ بِالرُّسُلِ٘ وَ اٰتَیْنَا عِیْسَى ابْنَ مَرْیَمَ الْبَیِّنٰتِ وَ اَیَّدْنٰهُ بِرُوْحِ الْقُدُسِؕ اَفَكُلَّمَا جَآءَكُمْ رَسُوْلٌۢ بِمَا لَا تَهْوٰۤى اَنْفُسُكُمُ اسْتَكْبَرْتُمْۚ فَفَرِیْقًا كَذَّبْتُمْ٘ وَ فَرِیْقًا تَقْتُلُوْنَ
আমরা মূসাকে কিতাব দিয়েছি। তারপর ক্রমাগতভাবে রসূল পাঠিয়েছি। অবশেষে ঈসা ইবনে মারয়ামকে পাঠিয়েছি উজ্জ্বল নিশানী দিয়ে এবং পবিত্র রূহের মাধ্যমে তাকে সাহায্য করেছি। এরপর তোমরা এ কেমনতর আচরণ করে চলছো, যখনই কোন রসূল তোমাদের প্রবৃত্তির কামনা বিরোধী কোন জিনিস নিয়ে তোমাদের কাছে এসেছে তখনই তোমরা তার বিরুদ্ধাচরণ করেছো, কাউকে মিথ্যা বলেছো এবং কাউকে হত্যা করেছো।
টিকা: 93
‘পবিত্র রূহ’ বলতে অহী-জ্ঞান বুঝানো হয়েছে। অহী নিয়ে দুনিয়ায় আগমনকারী জিব্রীলকেও বুঝানো হয়েছে। আবার হযরত ঈসা আলাইহিস সালামের পাক রূহকেও বুঝানো হয়েছে। আল্লাহ নিজেই তাঁকে পবিত্র গুণাবলীতে ভূষিত করেছিলেন। ‘উজ্জ্বল নিশানী’ অর্থ সুস্পষ্ট আলামত ও চিহ্ন, যা দেখে প্রত্যেকটি সত্যপ্রিয় ও সত্যানুসন্ধিৎসু ব্যক্তি হযরত ঈসা আলাইহিস সালামকে আল্লাহর নবী বলে চিনতে পারে।
টিকা:১৮৮) এটি প্রসঙ্গক্রমে আগত একটি বিচ্ছিন্ন বাক্য।
টিকা:১৮৯) এ বাক্যটি মূল ভাষণের ধারাবাহিক বিবরণীর সাথে সংশ্লিষ্ট।
টিকা:১৯০) হযরত ঈসা আলাইহিস সালামের জন্মবৃত্তান্ত সম্পর্কে আসলে ইহুদী জাতির মধ্যে বিন্দুমাত্র সংশয় ছিল না। বরং যেদিন তার জন্ম হয়েছিল সেদিনই আল্লাহ সমগ্র জাতিকে এই মর্মে সাক্ষী বানিয়েছিলেন যে, এটি একটা অসাধারণ ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন শিশু। তাঁর জন্ম কোন নৈতিক অপরাধের নয় বরং একটি মু’জিযার ফলশ্রুতি। যখন বনী ইসরাঈলের সবচাইতে ভদ্র, শরীফ ও খ্যাতনামা ধর্মীয় পরিবারের একটি কুমারী মেয়ে একটি শিশু পুত্র কোলে নিয়ে এগিয়ে এলেন এবং জাতির ছোট বড় শত শত হাজার হাজার লোক তার ঘরে ভিড় জমালো, তখন কুমারী মেয়েটি তাদের প্রশ্নের জবাব না দিয়ে নীরবে নবজাত সন্তানের দিকে অংগুলি নির্দেশ করলেন। অর্থাৎ এই নবজাতকেই তোমাদের সব প্রশ্নের জবাব দেবে। লোকেরা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলোঃ একে আমরা কি জিজ্ঞেস করবো, এতো দোলনায় শুয়ে আছে? কিন্তু হঠাৎ শিশুটি বোল ফুটলো এবং সে সুস্পষ্টও বলিষ্ট কণ্ঠে বলে উঠলোঃ
إِنِّي عَبْدُ اللَّهِ آتَانِيَ الْكِتَابَ وَجَعَلَنِي نَبِيًّا
“আমি আল্লাহর বান্দা, আল্লাহ আমাকে কিতাব দিয়েছেন ও নবী বানিয়েছেন।”(সূরা মারয়াম, ২য় রুকূ’ )
এভাবে ঈসা মসীহ আলাইহিস সালামের জন্ম সম্পর্কে যে সংশয় জমে ওঠার সম্ভাবনা ছিল আল্লাহ নিজেই তার মূলোৎপাটন করেন। এজন্য হযরত ঈসা আলাইহিস সালামের যৌবনে পদার্পণ করা পর্যন্ত কেউ কোন দিন হযরত মারয়ামের বিরুদ্ধে ব্যভিচারের অভিযোগ আনেনি এবং হযরত ঈসাকে অবৈধ সন্তানও বলেনি। কিন্তু তিরিশ বছর বয়স হবার পর যখন তিনি নবুওয়াতের কাজের সূচনা করলেন এবং যাবতীয় অসৎকাজের জন্য ইহুদীদের তিরস্কার করতে শুরু করলেন, তাদের আলেমও ফকীহদের রিয়াকারীর সমালোচনা করতে থাকলেন তাদের সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও সাধারণ মানুষকে তাদের নৈতিক ও চারিত্রিক অবনতির জন্য সতর্ক করতে লাগলেন এবং আল্লাহর দ্বীনকে বাস্তবে কায়েম করার জন্য নিজের জাতিকে সব রকমের ত্যাগ স্বীকার করার ও সব ক্ষেত্রে শয়তানি শক্তির সাথে লড়াই করার আহবান জানালেন, তখন এই নির্লজ্জ অপরাধীরা সত্য ও সততার কণ্ঠরোধ করার জন্য সব রকমের নিকৃষ্ঠতম অস্ত্র ব্যবহার করতে এগিয়ে এলো। তখন তারা এমন সব কথা বলতে থাকলো যা তারা তিরিশ বছর পর্যন্ত বলেনি। অর্থাৎ মারয়াম আলাইহাস সালাম (নাউযুবিল্লাহ) একজন ব্যভিচারিণী এবং ঈসা ইবনে মারয়াম তার অবৈধ সন্তান। অথচ এই জালেমরা নিশ্চিতভাবেই জানতো, এই মাতা ও পুত্র উভয়েই এই ধরনের কলুষতা থেকে সম্পূর্ণরূপে মুক্ত। কাজেই তাদের মনে যথার্থই এ ধরনের কোন সন্দেহ পুঞ্জিভূত ছিল না যার ভিত্তিতে তারা এই দোষারোপ করেছিল। এটা ছিল তাদের একটা স্বেচ্ছাকৃত দোষারোপ। জেনে বুঝে নিছক হকের বিরোধিতা করার জন্য তারা তাদের মাতা পুত্রের বিরুদ্ধে এই মিথ্যাটি তৈরী করেছিল। তাই আল্লাহ একে জুলুম ও মিথ্যার পরিবর্তে কুফরী গণ্য করেছেন। কারণ এই দোষারোপের মাধ্যমে তারা আসলে আল্লাহর দ্বীনের পথে বাধা সৃষ্টি করতে চাচ্ছিল। একজন নিষ্পাপ ও নিরপরাধ মহিলার বিরুদ্ধে দোষারোপ করা তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল না।
টিকা:১৯১) অর্থাৎ তাদের অপরাধ করার দুঃসাহস এতই বেড়ে গিয়েছিল যার ফলে তারা আল্লাহর রসূলকে রসূল জেনেও হত্যা করার পদক্ষেপ নিয়েছিল এবং গর্ব করে বলেছিলঃ আমরা আল্লাহর রসূলকে হত্যা করেছি। ওপরে আমরা দোলনার ঘটনার যে বর্ণনা দিয়েছি তা থেকে একথা পরিষ্কার হয়ে যায় যে, ইহুদীদের জন্য ঈসা আলাইহিস সালামের নবুওয়াতে সন্দেহ করার কোন অবকাশই ছিল না। এছাড়াও তারা হযরত ঈসা আলাইহিস সালামের কাছে থেকে যে উজ্জ্বল নিশানীগুলো প্রত্যক্ষ করেছিল (সূরা আলে ইমরানের ৫ম রুকূ’তে ইতিপূর্বে এটি আলোচিত হয়েছে) তা থেকে তিনি যে আল্লাহর রসূল এ বিষয়টি সকল প্রকার সন্দেহের ঊর্ধ্বে চলে গিয়েছিল। কাজেই দেখা যাচ্ছে, প্রকৃতপক্ষে তারা তাঁর সাথে যা কিছু করেছিল তা কোন ভুল বুঝাবুঝির ভিত্তিতে করেনি বরং তারা ভালোভাবেই জানতো যে, এই অপরাধ তারা এমন এক ব্যক্তির সাথে করছে যিনি আল্লাহর পক্ষ থেকে পয়গাম্বর হয়ে এসেছেন। কোন জাতি এক ব্যক্তিকে নবী বলে জানার ও মেনে নেয়ার পরও তাকে হত্যা করেছে, আপাতঃ দৃষ্টিতে এটা একটা বিস্ময়কর ব্যাপার বলে মনে হয়। কিন্তু দুনিয়ার বিকৃত জাতিদের রীতিনীতি, কাজ-কারবার এমনই বিস্ময়করই হয়ে থাকে। যে ব্যক্তি তাদের অন্যায় ও পাপ কাজের সমালোচনা করে এবং তাদের অবৈধ কাজে বাধা দেয়, এমনকোন ব্যক্তিকে তারা নিজেদের মধ্যে বরদাশ্ত করতে পারে না। নবী হলেও এই ধরনের লোকেরা হামেশা অসৎ, দুশ্চরিত্র ও পাপাচারী জাতিদের হাতে কারাযন্ত্রণা ও মৃত্যুদণ্ড ভোগ করে এসেছেন। তালমুদে লিখিত হয়েছেঃ বখতে নসর বায়তুল মাক্দিস জয় করে সুলাইমানী হাইকেলে প্রবেশ করলেন এবং সেখানে ঘুরে ফিরে দেখতে লাগলেন। যে স্থানে কুরবানী করা হয় সে স্থানের ঠিক সামনে দেয়ালে এক জায়গায় তিনি একটি তীরের নিশানী দেখলেন। তিনি ইহুদীদেরকে জিজ্ঞেস করলেন, এটা কিসের নিশানী? ইহুদীরা জবাব দিল, “এখানে আমরা যাকারিয়া নবীকে হত্যা করেছিলাম। তিনি আমাদের অসৎকাজের জন্য তিরস্কার করতেন। অবশেষে তার তিরস্কারে অতিষ্ঠ হয়ে আমরা তাকে হত্যা করেছি।” বাইবেলে ইয়ারমিয়াহ নবী সম্পর্কে বলা হয়েছেঃ বনী ইসরাইলদের অসৎ কর্মসীমা ছাড়িয়ে যাওয়ার পর হযরত ইয়ারমিয়াহ তাদের এই মর্মে সতর্ক করে দিলেন যে, এসব বদ কাজের প্রতিফল হিসেবে আল্লাহ অন্য জাতিদের হাতে তোমাদের ধ্বংস করে দেবেন। এর জবাবে তার বিরুদ্ধে দোষারোপ করলোঃ “এই ব্যক্তি ‘কালদানী’ জাতির সাথে হাত মিলিয়েছে, তাদের সাথে যোগসাজশ করেছে। এই ব্যক্তি জাতির সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে।” এই অভিযোগে তাকে কারাগারে পাঠিয়ে দেয়া হলো। এমনকি হযরত ঈসা আলাইহিস সালামের শূলে চড়াবার ঘটনার মাত্র দুই আড়াই বছর পূর্বে হযরত ইয়াহ্ইয়ার (আ) ব্যাপারটি ঘটে গিয়েছিল। ইহুদীরা সাধারণভাবে তাকে নবী বলে জানতো। অন্তত তাকে জাতির সবচাইতে সৎলোক হিসেবে মানতো। কিন্তু যখন তিনি হিরোডিয়াসের (ইহুদী রাষ্ট্র প্রধান) দরবারের অন্যায় ও অসৎকাজের সমালোচনা করলেন তখন আর তাকে বরদাশত করা হলো না। প্রথমে তাকে কারারুদ্ধ করা হলো তারপর রাষ্ট্র প্রধানের প্রেমিকার দাবী অনুযায়ী তার গর্দান উড়িয়ে দেয়া হলো। ইহুদী জাতির এই অতীত রেকর্ডগুলো পর্যবেক্ষণ করার পর একথা মোটেই বিস্ময়কর মনে হয় না যে, তাদের ধারণা মতে তারা হযরত ঈসা মসীহকে (আ) শূলে চড়াবার পর বুকে ঠুকে একথা বলেছেঃ “আমরা আল্লাহর রসূলকে হত্যা করেছি।”
টিকা:১৯২) এটি আবার প্রসঙ্গক্রমে আগত একটি অন্তরবর্তী বিচ্ছিন্ন বাক্য।
টিকা:১৯৩) এ আয়াতটি দ্ব্যর্থহীনভাবে একথা প্রমাণ করে যে, হযরত ঈসা আলাইহিস সালামকে শূলে চাড়াবার আগেই উঠিয়ে নেয়া হয়েছিল। আর ঈসা মসীহ (আ) শূলবিদ্ধ হয়ে জীবন বিসর্জন দিয়েছিলেন বলে খৃস্টান ও ইহুদীরা যে ধারণা পোষণ করে তা নিছক একটি ভুল বুঝাবুঝি ছাড়া আর কিছুই নয়। কুরআনে ও বাইবেলের তুলনামূলক অধ্যয়ন করে আমরা জানতে পারি, সম্ভবত পীলাতুসের আদালতে হযরত ঈসা আলাইহিস সালামকেই পেশ করা হয়েছিল। কিন্তু যখন সে তার মৃত্যুদণ্ডের রায় শুনিয়ে দিল এবং ইহুদীরা ঈসা মসীহের মতো পূণ্যাত্মার প্রাণের চাইতে একজন দস্যূর প্রাণকে অধিক মূল্যবান গণ্য করে নিজেদের সত্য বিরোধিতা ও বাতিল প্রীতির চূড়ান্ত প্রমাণটিও পেশ করে দিলো, তখন কোন এক সময় আল্লাহ তাকে উঠিয়ে নিয়েছিলেন। পরে ইহুদীরা যে ব্যক্তিকে শূলে চড়ালো সে ঈসা ইবনে মারয়াম ছিল না। সে ছিল অন্যকোন ব্যক্তি। কোন অজ্ঞাত কারণে তারা তাকে ঈসা ইবনে মারয়াম মনে করে নিয়েছিলেন। তবুও এতে তাদের অপরাধের পরিমাণ হ্রাস হবে না। কারণ যাকে তারা কাঁটার টুপি পরিয়ে ছিলেন, যার মুখে থু থু নিক্ষেপ করেছিল এবং যাকে লাঞ্ছনা সহকারে শূলে চড়িয়েছিল তাকে তো তারা ঈসা ইবনে মারয়ামই মনে করছিল। ব্যাপারটি কিভাবে তাদের কাছে সংশয়িত হয়ে গিয়েছিল তা জানার কোন উপায় আমাদের আয়ত্বে নেই। যেহেতু এই পর্যায়ে সঠিক তথ্য সংগ্রহের কোন উৎস আমাদের জানা নেই তাই ঈসা ইবনে মারয়াম ইহুদীদের কবলমুক্ত হয়ে যাওয়ার পরও তারা ঈসা ইবনে মারয়ামকেই শূলবিদ্ধ করেছে বলে যে সংশয় পোষণ করছিল নিছক ধারণা, আন্দাজ-অনুমান ও জনশ্রুতির ভিত্তিতে তার স্বরূপ নির্ধারণ করা কোনক্রমেই সম্ভবপর নয়।
টিকা:১৯৪) মতবিরোধকারী বলে এখানে খৃস্টানদেরকে বুঝানো হয়েছে। ঈসা আলাইহিস সালামকে শূলে চড়াবার ব্যাপারে তাদের কোন একটি সর্বসম্মত মত বা বক্তব্য নেই। এ ব্যাপারে তাদের মধ্যে বহু মতের প্রচলন রয়েছে। তাদের এই অসংখ্য মতই প্রমাণ করে যে, আসল ব্যাপারটি তাদের কাছেও সংশয়পূর্ণই রয়ে গেছে। তাদের একদল বলেঃ যে ব্যক্তিকে শূলে চড়ানো হয়েছিল সে ঈসা মসীহ ছিল না। ঈসার চেহারায় সে ছিল অন্য এক ব্যক্তি। ইহুদী ও রোমীয় সৈন্যরা তাকে লাঞ্ছনার সাথে শূলে চড়াচ্ছিল। আর ঈসা মসীহ সেখানে কোনো এক স্থানে দাঁড়িয়ে তাদের নির্বুদ্ধিতায় হাসছিলেন। অন্য এক দল বলেঃ শূলদণ্ডে ঈসা মসীহকেই চড়ানো হয়েছিলো। কিন্তু শূলদণ্ডে তাঁর মৃত্যু হয়নি বরং নামিয়ে নেয়ার পর তাঁর মধ্যে প্রাণ ছিল। আর একদল বলেঃ তিনি শূলে মৃত্যুবরণ করেছিলেন আবার প্রাণ লাভ করেছিলেন। এরপর কমপক্ষে দশবার নিজের বিভিন্ন ‘হাওয়ারী’দের সাথে সাক্ষাত করে তাদের সাথে আলাপ করেছিলেন। চতুর্থ আর একদল বলেঃ শূলের ওপর ঈসার মানবিক দেহের মৃত্যু ঘটেছিলো এবং তাকে দাফনও করা হয়েছিল। কিন্তু তার মধ্যে খোদায়ীর যে আত্মা ছিল তাকে উঠিয়ে নেয়া হয়েছিল। পঞ্চম দলটি বলেঃ মরার পর ঈসা মসীহ আলাইহিস সালাম এই জড়দেহসহ জীবিত হয়ে গিয়েছিলেন এবং সশরীরেই তাকে উঠিয়ে নেয়া হয়েছে। এ প্রেক্ষিতে বলা যায়, আসল সত্য ঘটনাটি তাদের জানা থাকলে সে সম্পর্কে এতগুলো পরস্পর বিরোধী কথা ও মত তাদের মধ্যে প্রচলিত থাকতো না।
টিকা:১৯৫) এ প্রসঙ্গে এটিই হচ্ছে প্রকৃত সত্য। আল্লাহ সুস্পষ্ট ভাষায় এটি ব্যক্ত করেছেন। এ ব্যাপারে দৃঢ়তা সহকারে যে সুস্পষ্ট বক্তব্য পেশ করা হয়েছে তা কেবল এতটুকু যে, হযরত ঈসা আলাইহিস সালামকে হত্যা করতে ইহুদীরা কামিয়াব হয়নি এবং আল্লাহ তাকে নিজের দিকে উঠিয়ে নিয়েছেন। এখন প্রশ্ন ওঠে কিভাবে উঠিয়ে নেয়া হয়েছিল। কুরআনে এর কোন বিস্তারিত বিবরণ দেয়া হয়নি। কুরআন যেমন একথা বলে না যে, আল্লাহ তাকে এই জড়দেহ ও আত্মাসহকারে পৃথিবী থেকে তুলে নিয়ে আকাশ রাজ্যের কোথাও রেখে দিয়েছেন আবার তেমনি একথাও বলে না যে, পৃথিবীতে তাঁর স্বাভাবিক মৃত্যু ঘটেছিল কেবল তাঁর রূহটি ওপরে উঠিয়ে নেয়া হয়েছিল। তাই কুরআনের ভিত্তিতে এর কোন একটি দিককে চূড়ান্তভাবে গ্রহণ ও অন্য দিকটিকে চূড়ান্তভাবে বর্জন করা যেতে পারে না। কিন্তু কুরআনের বর্ণনাভংগী সম্পর্কে গভীরভাবে চিন্তা করলে একথা সুস্পষ্ট অনুভূত হয় যে, উঠিয়ে নেবার ধরণ ও অবস্থা যাই হোক না কেন ঈসা আলাইহিস সালামের সাথে আল্লাহ অবশ্যি এমন কিছু ব্যাপার করে থাকবেন যা নিঃসন্দেহে অস্বাভাবিক পর্যায়ের। তিনটি বিষয় থেকে এই অস্বাভাবিকতার পরিচয় পাওয়া যায়।
একঃ ঈসা আলাইহিস সালামকে এই জড় দেহ ও প্রাণ সহকারে উঠিয়ে নেবার ধারণা খৃস্টানদের মধ্যে আগে থেকেই প্রচলিত ছিল। আর খৃস্টানদের একটি বড় দল যে হযরত ঈসাকে ‘খোদা’ বলে ধারণা করতো এটিই ছিল তার একটি অন্যতম কারণ। কিন্তু এতদসত্ত্বেও কুরআন দ্ব্যর্থহীন ভাষায় শুধু যে এর প্রতিবাদই জানায়নি তাই নয় বরং খৃস্টানরা এ ঘটনাটির জন্য যে ‘উঠিয়ে নেয়া’ (Ascension) শব্দটি ব্যবহার করে থাকে কুরআনেও হুবহু সেই একই শব্দ ব্যবহার করেছে। কোন একটি চিন্তার প্রতিবাদ করতে চেয়েও তার জন্য এমন ভাষা ব্যবহার করা যা ঐ চিন্তাকে আরো শক্তিশালী করে-এটা কুরআনের মতো দ্ব্যর্থহীন বক্তব্য উপস্থাপনকারী কিতাবের রীতি ও মর্যাদার সাথে মোটেই খাপ খায় না।
দুইঃ যদি ঈসা আলাইহিস সালামকে উঠিয়ে নেয়া তেমন ধরনের কোন উঠিয়ে নেয়া হতো যেমন প্রত্যেক মৃত্যুবরণকারীকে দুনিয়া থেকে উঠিয়ে নেয়া হয়ে থাকে অথবা এই উঠিয়ে নেয়ার অর্থ যদি শুধু সম্মান ও মর্যাদার উন্নতি হতো যেমন হযরত ইদরীস আলাইহিস সালাম সম্পর্কে বলা হয়েছেঃ ورفعنآه مكاناعايا (আর তাঁকে আমি উচ্চ মর্যাদায় উন্নীত করেছিলাম) তাহলে এখানে কথাটা বলা অধিক যুক্তিযুক্ত হতো। যেমনঃ “নিঃসন্দেহে তারা ঈসাকে হত্যা করেনি বরং আল্লাহ তাঁকে প্রাণে বাঁচিয়ে নিয়েছেন। তারপর তাঁকে স্বাভাবিক মৃত্যুদান করেছেন। ইহুদীরা তাঁকে হত্যা করতে চাইছিল কিন্তু আল্লাহ তাঁকে উন্নত মর্যাদা দান করেছেন।”
তিনঃ যদি এই উঠিয়ে নেয়াটা যেমন তেমন মামুলি ধরনের উঠিয়ে নেয়া হতো, যেমন প্রচলিত নিয়মে কোন মৃত ব্যক্তি সম্পর্কে আমরা বলে থাকিঃ “আল্লাহ তায়ালা তাকে উঠিয়ে নিয়েছেন”, তাহলে এর উল্লেখ করার পর আবার “আল্লাহ মহাশক্তিধর ও জ্ঞানী” এই বাক্যটি বলা সম্পূর্ণ অসমীচীন ও অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়তো। যে ঘটনায় আল্লাহর জবরদস্ত শক্তি ও জ্ঞানের অস্বাভাবিক প্রকাশ ঘটে একমাত্র তেমন কোন ঘটনার পরই এ ধরনের বাক্য উচ্চারণ করা উপযোগী ও সমীচীন হতে পারে।
এর জবাবে কুরআন থেকে কোন যুক্তি প্রমাণ পেশ করতে চাইলে বড় জোর এতটুকু বলা যায় যে, সূরা আলে ইমরানে আল্লাহ متوفيك শব্দটি ব্যবহার করেছেন (৫৫ আয়াত)। কিন্তু সেখানে ৫১ নং টীকায় আমরা একথা পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করেছি যে, স্বাভাবিক মৃত্যু অর্থে এ শব্দটির ব্যবহার তেমন সুস্পষ্ট নয়। বরং এ শব্দটি থেকে ‘প্রাণ হরণ’ এবং ‘প্রাণ ও দেহ উভয়টি হরণ’ করা অর্থ হতে পারে। কাজেই আমরা ওপরে যে সমস্ত কারণ ও নিদর্শন বর্ণনা করেছি সেগুলো নাকচ করে দেবার জন্য এটি মোটেই যথেষ্ট নয়। ঈসা আলাইহিস সালাম স্বাভাবিক মৃত্যুবরণ করেছেন বলে যারা দাবী জানিয়ে আসছে তারা হঠাৎ প্রশ্ন করে বসে, প্রাণ ও দেহ হরণ করার ব্যাপারে توني শব্দটির ব্যবহারের আর কোন নজির আছে কি? কিন্তু মানব জাতির সমগ্র ইতিহাসে প্রাণ ও দেহ হরণ করার ব্যাপারটি যখন মাত্র একবারই সংঘটিত হয়েছে তখন এই অর্থে মানুষের ভাষায় এ শব্দটির ব্যবহারের নজির দাবী করা একবারেই অর্থহীন। ভাষার মূল আভিধানিক পরিসরে এ শব্দটির এ ধরনের অর্থ ব্যবহারের অবকাশ আছে কি না এখানে কেবল এতটুকুই দেখা দরকার। যদি অবকাশ থেকে থাকে তাহলে একথা মানতে হবে যে, কুরআন সশরীরে উঠিয়ে নেয়ার আকীদার দ্ব্যর্থহীন প্রতিবাদ জানাবার পরিবর্তে এ শব্দটি ব্যবহার করে এই আকীদাটির সহায়ক কারণ ও নির্দশনগুলোর সংখ্যা আরো একটি বাড়িয়ে দিয়েছে। অন্যথায় যেখানে পূর্ব থেকেই সশরীরে উঠিয়ে নেবার আকীদা বর্তমান ছিল এবং যার ফলে ঈসাকে খোদায়ী শক্তির অধিকারী মনে করার আকীদা সৃষ্টি হয়ে গিয়েছিল, সেখানে, ‘মৃত্যু-এর ন্যায় সুস্পষ্ট ও দ্ব্যর্থহীন শব্দ ব্যবহার না করে ‘ওফাত’-এর ন্যায় দ্ব্যর্থবোধক শব্দ ব্যবহার করার কোন কারণ ছিল না।
অসংখ্যা হাদীসেও সশরীরে উঠিয়ে নেবার আকীদাকে আরো শক্তিশালী করেছে। এ হাদীসগুলোতে হযরত ঈসা ইবনে মারয়াম আলাইহিস সালামের পুনর্বার দুনিয়ার আগমন ও দাজ্জালকে হত্যা করার ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। (সূরা আহযাবের তাফসীরের পরিশিষ্টে আমি এ ধরনের সমস্ত হাদীস একত্র করে দিয়েছি)। এগুলো থেকে হযরত ঈসা আলাইহিস সালামের দ্বিতীয় বার আগমনের ব্যাপারটি অকাট্যভাবে প্রমাণিত হয়েছে। মৃত্যুর পর তিনি পুনর্বার জীবিত হয়ে এই মরজগতে ফিরে আসবেন অথবা আল্লাহর এই বিশাল সাম্রাজ্যের কোথাও তিনি আছেন এবং সেখানে থেকে আবার এই দুনিয়ার ফিরে আসবেন-এ দু’টির মধ্যে কোন্টি এখন অধিকতর যুক্তিসঙ্গত বলে মনে হয়? যে কোন বিবেকবান ব্যক্তি নিজেই এর মীমাংসা করতে পারেন।
টিকা:১৯৬) এ বাক্যটির দু’টি অর্থ করা হয়েছে। দু’টি অর্থের সমান অবকাশও এখানে রয়েছে। এর একটি অর্থ আমরা আয়াতের তরজমায় বর্ণনা করেছি। আর এর দ্বিতীয় অর্থটি হচ্ছেঃ “আহলে কিতাবের মধ্যে এমন একজনও নেই যে মৃত্যুর পূর্বে ঈসার ওপর ঈমান আনবে না।” আহলে কিতাব অর্থ হচ্ছে ইহুদী। এর অর্থ খৃস্টানও হতে পারে। প্রথম অর্থটির পরিপ্রক্ষিতে বাক্যটির মূল বক্তব্য হবেঃ ঈসার যখন স্বাভাবিক মৃত্যু ঘটবে সে সময় যত আহলে কিতাব থাকবে তারা সবাই তাঁর ওপর (অর্থাৎ তাঁর রিসালাতের ওপর) ঈমান আনবে। দ্বিতীয় অর্থটির দৃষ্টিতে এর মূল বক্তব্য হবেঃ মৃত্যুর পূর্বে সমস্ত আহলে কিতাবের সামনে ঈসা আলাইহিস সালামের রিসালাতের সত্যত্য সুস্পষ্ট হয়ে যায় এবং তারা ঈসার (আ) ওপর ঈমান আনে। কিন্তু তারা এমন এক সময় এ ঈমান আনে যখন ঈমান ফলপ্রসূ হতে পারে না। এই দু’টি অর্থই বিপুল সংখ্যক সাহাবা, তাবেঈ ও প্রধান মুফাস্সিরদের থেকে বর্ণিত হয়েছে। তবে এর সঠিক অর্থ একমাত্র আল্লাহই জানেন।
টিকা:১৯৭) অর্থাৎ ইহুদী ও খৃস্টানরা ঈসা আলাইহিস সালামের সাথে এবং তিনি যে বাণী এনেছিলেন তার সাথে যে ব্যবহার করেছে তার ওপর তিনি আল্লাহর দরবারে সাক্ষ্য দেবেন। এই সাক্ষ্যের ওপর কিছু বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে সূরা মায়েদার শেষ রুকূ’ তে।
সুরা: আল-মায়িদাহ
আয়াত নং :-১১৬
وَ اِذْ قَالَ اللّٰهُ یٰعِیْسَى ابْنَ مَرْیَمَ ءَاَنْتَ قُلْتَ لِلنَّاسِ اتَّخِذُوْنِیْ وَ اُمِّیَ اِلٰهَیْنِ مِنْ دُوْنِ اللّٰهِؕ قَالَ سُبْحٰنَكَ مَا یَكُوْنُ لِیْۤ اَنْ اَقُوْلَ مَا لَیْسَ لِیْۗ بِحَقٍّ ط اِنْ كُنْتُ قُلْتُهٗ فَقَدْ عَلِمْتَهٗؕ تَعْلَمُ مَا فِیْ نَفْسِیْ وَ لَاۤ اَعْلَمُ مَا فِیْ نَفْسِكَؕ اِنَّكَ اَنْتَ عَلَّامُ الْغُیُوْبِ
(মোটকথা এসব অনুগ্রহের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে) আল্লাহ যখন বলবেন, “হে মারয়াম পুত্র ঈসা! তুমি কি লোকদের বলেছিলে, আল্লাহকে বাদ দিয়ে আমাকে ও আমার মাকে ইলাহ হিসেবে গ্রহণ করো?” তখন সে জবাব দেবে, সুবহানাল্লাহ! যে কথা বলার কোন অধিকার আমার ছিল না সে ধরনের কোন কথা বলা আমার জন্য ছিল অশোভন ও অসঙ্গত। যদি আমি এমন কথা বলতাম তাহলে আপনি নিশ্চয়ই তা জানতে পারতেন, আমার মনে যা আছে আপনি জানেন কিন্তু আপনার মনে যা আছে আমি তা জানি না, আপনি তো সমস্ত গোপন সত্যের জ্ঞান রাখেন।
টিকা:১৩০) খৃস্টানরা আল্লাহর সাথে কেবলমাত্র ঈসা ও রূহুল কুদুস তথা পবিত্র আত্মাকে ইলাহ হিসেবে গ্রহণ করে ক্ষান্ত হয়নি। এ সঙ্গে তারা ঈসার মাতা হযরত মারয়ামকেও (আ) এক স্বতন্ত্র ইলাহে পরিণত করেছে। হযরত মারয়ামের ইলাহ হবার বা তার দেবত্ব বা অতি মানবিকতা সম্পর্কিত কোন ইঙ্গিতও বাইবেলে নেই। হযরত ঈসার (আ) পরে প্রথম তিনশ বছর পর্যন্ত খৃস্টবাদী জগত এ ধারণার সাথে সম্পূর্ণরূপে অপরিচিত ছিল। খৃস্টীয় তৃতীয় শতকের শেষের দিকে ইসকানদারিয়ার কিছু খৃস্টান পণ্ডিত হযরত মারয়ামের জন্য সর্বপ্রথম ‘উম্মুল্লাহ’ বা ‘আল্লাহর মাতা’ শব্দ ব্যবহার করেন। এরপর ধীরে ধীরে মারয়ামের ইলাহ হবার আকীদা এবং মারয়াম বন্দনা ও মারয়াম পূজার পদ্ধতি খৃস্টানদের মধ্যে প্রচলিত হতে থাকে। কিন্তু প্রথম প্রথম চার্চ এটাকে আনুষ্ঠানিকভাবে মেনে নিতে প্রস্তুত হয়নি। বরং মারয়াম পূজারীদেরকে ভ্রান্ত আকীদা সম্পন্ন বলে অভিহিত করতো। তারপর যখন মসীহের একক সত্তার মধ্যে দু’টি স্বতন্ত্র ও পৃথক সত্তার সমাবেশ ঘটেছে এ মর্মে প্রচারিত নাসতুরিয়াসের আকীদা নিয়ে সমগ্র খৃস্টীয় জগতে বিতর্ক ও আলোচনা-সমালোচনার ঝড় উঠলো। তখন এর মীমাংসা করার জন্য ৪৩১ খৃস্টাব্দে আফসোস নগরে একটি কাউন্সিল অধিবেশন অনুষ্ঠিত হলো। এ কাউন্সিলে সর্বপ্রথম গীর্জার সরকারী ভাষায় হযরত মারয়ামের জন্য ‘আল্লাহর মাতা’ শব্দ ব্যবহার করা হলো। এর ফলে এতদিন মারয়াম পূজার যে রোগ গীর্জার বাইরে প্রসার লাভ করছিল এখন তা গীর্জার মধ্যেও দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে লাগলো। এমন কি কুরআন নাযিলের যুগে পৌঁছতে পৌঁছতে হযরত মারয়াম এত বড় দেবীতে পরিণত হয়ে গিয়েছিলেন যার ফলে পিতা, পুত্র ও পবিত্র আত্মা তিনজনই তার সামনে তুচ্ছ হয়ে গিয়েছিলেন। চার্চের বিভিন্ন স্থানে তাঁর মূর্তি স্থাপিত হয়ে গিয়েছিল। তার সামনে ইবাদাতের সমস্ত অনুষ্ঠান পালন করা হতো। তার কাছে প্রার্থনা করা হতো। তিনিই ছিলেন ফরিয়াদ শ্রবণকারী, অভাব ও প্রয়োজন পূর্ণকারী, সংকট থেকে উদ্ধারকারী এবং অসহায়ের সহায় ও পৃষ্ঠপোষক। একজন নিষ্ঠাবান খৃস্ট বিশ্বাসীর জন্য সবচেয়ে বড় ভরসার স্থল ছিল আল্লাহর মাতা’র সমর্থন ও পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করা। রোম সম্রাট জাষ্টিনিন তাঁর একটি আইনের ভূমিকায় হযরত মারয়ামকে তার রাজত্বের সংরক্ষক ও সাহায্যকারী গণ্য করেছেন। তাঁর প্রখ্যাত সেনাপতি নারসিস যুদ্ধ ক্ষেত্রে হযরত মারয়ামের কাছ থেকে নির্দেশনা চাইতেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সমকালীন রোম সম্রাট হিরাকেল তার পতাকায় আল্লাহর মাতার ছবি এঁকে রেখেছিলেন। তিনি বিশ্বাস করতেন, এ ছবির বদৌলতে এ পতাকা কোনদিন ধূলায় লুন্ঠিত হবে না। যদিও পরবর্তী শতাব্দীগুলোয় সংস্কার আন্দোলনের প্রভাবে প্রটেস্ট্যান্ট খৃস্টানরা মারয়াম পূজার বিরুদ্ধে প্রবল প্রতিবাদ জানায় কিন্তু রোমান ক্যাথলিক গীর্জাগুলো এখনো তাদের আগের পদ্ধতি অনুসরণ করে চলেছে।
১৫৫-১৫৯ নং আয়াতের তাফসীর:
তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ বলেছেন:-
আল্লাহ তা’আলা যেসকল অপরাধের কারণে ইয়াহূদীদের ওপর লা‘নত করেছিলেন তা এখানে বর্ণনা করেছেন:
১. তাদের নিকট যেসকল অঙ্গীকার নেয়া হয়েছিল তা ভঙ্গ করার কারণে।
২. আল্লাহ তা‘আলার নিদর্শন ও মুজিযার সাথে কুফরীর কারণে যা তারা সচক্ষে প্রত্যক্ষ করেছিল।
৩. তাদের এ কথার কারণে যে, আমাদের অন্তর মোহরাঙ্কিত।
যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَقَالُوْا قُلُوْبُنَا فِيْٓ أَكِنَّةٍ مِّمَّا تَدْعُوْنَآ إِلَيْهِ)
“তারা বলেঃ তুমি যার প্রতি আমাদেরকে আহ্বান করছ সে বিষয়ে আমাদের অন্তর আবরণে আচ্ছাদিত।” (সূরা হা-মীম সিজদাহ ৪১:৫)
মূলত আল্লাহ তা‘আলা তাদের অন্তরে মোহর মেরে দিয়েছিলেন তাদের কুফরীর কারণে ফলে তাদের অল্প সংখ্যকই ঈমান আনে।
৪. মারইয়াম (আলাইহাস সালাম)-এর ওপর মিথ্যা অপবাদ প্রদানের কারণে। তারা মারইয়াম (আঃ)-কে ব্যভিচারের অপবাদ প্রদান করেছিল।
৫. তাদের এ কথা বলার কারণে যে, আমরা ঈসা (আঃ)-কে হত্যা করেছি।
এসব কথা ও কাজের কারণে কিয়ামত দিবস অবধি তাদের ওপর আল্লাহ তা’আলার অভিশাপ।
তারা ঈসা (আঃ)-কে হত্যা করেছে বলে যে দাবী করে তা মিথ্যা। প্রকৃতপক্ষে তারা ঈসা (আঃ)-কে হত্যা করতে পারেনি এবং শুলিতেও চড়াতে পারেনি। বরং একজন লোককে ঈসা (আঃ)-এর সদৃশ করে দেয়া হয়েছিল। তারা তাকে হত্যা করেছে। তারা নিহত লোকটির ব্যাপারে যে মতানৈক্য করেছে তা ধারণাপ্রসূত।
পূর্বেও উল্লেখ করা হয়েছে যে, যখন ঈসা (আঃ) বুঝতে পারলেন ইয়াহূদীরা তাকে হত্যা করার চক্রান্ত করছে তখন তিনি বার বা সতেরজন সহচর নিয়ে একত্র হয়ে তাদেরকে লক্ষ করে বলেন, তোমাদের মধ্যে কে আছো যাকে আমার সাদৃশ্য প্রদান করা হবে, আর তাকে হত্যা করা হবে। ফলে সে জান্নাতে আমার সাথে থাকবে। তাদের মধ্যে একজন যুবক বলেন, আমি। এভাবে তিনবার ঈসা (আঃ) বললে যুবকটি তিনবারই দাঁড়ায়।
অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা তাকে ঈসা (আঃ)-এর আকৃতি দান করেন। তারপর আল্লাহ তা‘আলা ঈসা (আঃ)-কে আকাশে তুলে নেন। পরে ইয়াহূদীরা এসে সে যুবকটিকে হত্যা করল এবং ক্রুস বিদ্ধ করল আর মনে করল তারা ঈসা (আঃ)-কেই হত্যা করেছে। (ইবনে কাসীর, ২/ ৫০১ এ বর্ণনা বিভিন্ন শব্দে এসেছে)
ঈসা (আঃ)-এর মত আকৃতিবিশিষ্ট লোকটিকে হত্যা করার পর ইয়াহূদীদের মধ্যে মতবিরোধ সৃষ্টি হয়। একদল বলল, ঈসাকে হত্যা করা হয়েছে, অন্য দল বলল, ক্রুসবিদ্ধ ব্যক্তি ঈসা (আঃ) নয়। অন্যদল বলল তারা ঈসা (আঃ)-কে আসমানে চড়তে স্বচক্ষে দেখেছে। মোট কথা তারা হত্যার ব্যাপারে মতবিরোধের শিকার।
(بَلْ رَّفَعَهُ اللّٰهُ إِلَيْهِ)
‘বরং আল্লাহ তাকে তাঁর নিকট তুলে নিয়েছেন’এ আয়াত দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রতিয়মান হয় যে, আল্লাহ তা‘আলা ঈসা (আঃ)-কে জীবিত অবস্থায় স্বশরীরে আকাশে তুলে নেন।
বিভিন্ন সূত্রে বর্ণিত হাদীসেও এ কথা প্রমাণিত। এ সকল হাদীসে ঈসা (আঃ)-কে আসমানে তুলে নেয়া ছাড়াও পুনরায় কিয়ামত দিবসের প্রাক্কালে পৃথিবীতে তার অবতরণ এবং আরো বহু কথা তার ব্যাপারে উল্লেখ করা হয়েছে। ইমাম ইবনু কাসীর (রহঃ) উক্ত হাদীসগুলো বর্ণনা করার পর বললেন, উল্লিখিত হাদীসগুলো রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে প্রমাণিত। অনেক সংখ্যক সাহাবী এসব হাদীস বর্ণনা করেছেন।
এ সমস্ত হাদীসে ঈসা (আঃ) কোথায় ও কিভাবে অবতরণ করবেন তা উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি দামেশকের মিনারা শারকিয়াতে ফজরের সালাতের ইকামাতের সময় অবতরণ করবেন। তিনি শূকর হত্যা করবেন, ক্রুস ভেঙ্গে ফেলবেন ও জিযিয়া কর বাতিল করবেন। তার শাসনামলে পৃথিবীর সমস্ত মানুষ মুসলিম হয়ে যাবে। তিনিই দাজ্জালকে হত্যা করবেন, তার যুগেই ইয়াযুজ-মাযুজ ও তাদের ফেতনা প্রকাশ পাবে এবং তার বদদু‘আয় বিনাশ ও ধ্বংস হয়ে যাবে। قبل موته “তার মৃত্যুর পূর্বে” আলোচ্য আয়াতে ه (তার সর্বনামটি কার দিকে প্রত্যাবর্তন করেছে এ নিয়ে মতভেদ রয়েছে।)
একদল মুফাসসীরগণের মতে, খ্রিস্টানদেরকে বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ প্রত্যেক খ্রিস্টানগণ মৃত্যুর পূর্বে ঈসা (আঃ)-এর নবুওয়াতের সত্যতা উপলব্ধি করে তাঁর প্রতি ঈমান আনবে। কিন্তু সে মুহূর্তে ঈমান কোন কাজে আসবে না।
আরেক দল মুফাসসিরগণের মতে, (এবং এ ব্যাখ্যাটি সঠিক) ’’هُ‘‘ সর্বনামটি প্রত্যাবর্তন ঈসা (আঃ)-এর দিকে তিনি দ্বিতীয়বার যখন দুনিয়াতে অবতরণ করবেন, দাজ্জালকে হত্যা করবেন, ইসলাম প্রচারে মগ্ন হবেন, ইয়াহূদী ও খ্রিস্টানগণের মধ্যে যারা বিরুদ্ধাচরণ করবে তাদেরকে হত্যা করবেন এবং সর্বত্র ইসলামের একচ্ছত্র আধিপত্য কায়িম হবে। অবশিষ্ট আহলে কিতাবরা ঈসা (আঃ)-এর মৃত্যুর পূর্বেই তাঁর প্রতি যথাযথ ঈমান আনবে।
সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যার হাতে আমার প্রাণ। সেই সত্তার শপথ! অবশ্যই এমন একদিন আসবে যেদিন তোমাদের মধ্যে ঈসা বিন মারইয়াম একজন ন্যায়পরায়ন শাসক হিসেবে অবতরণ করবেন। ক্রুস ভেঙ্গে চুরমার করবেন, শুকর নিধন করবেন, জিযিয়া কর বাতিল করবেন, মাল-সম্পদ এত বেশি হবে যে, (দান-সদাক্বাহ) গ্রহণ করার মত লোক থাকবে না। সেই সময় একটি সিজদা দুনিয়া এবং তার মধ্যে যা কিছু আছে তার থেকেও উত্তম হবে। এ হাদীস বর্ণনার পর আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) বললেন: তোমরা ইচ্ছা করলে কুরআনের এ আয়াত তেলাওয়াত করতে পার:
(وَإِنْ مِّنْ أَهْلِ الْكِتٰبِ إِلَّا لَيُؤْمِنَنَّ بِه۪ قَبْلَ مَوْتِه۪ ج وَيَوْمَ الْقِيٰمَةِ يَكُوْنُ عَلَيْهِمْ شَهِيْدًا)
“আহলে কিতাবীগণের মধ্যে প্রত্যেকে নিজ মৃত্যুর পূর্বে তাকে (ঈসা) বিশ্বাস করবেই এবং কিয়ামাতের দিন সে তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে”(সূরা নিসা ৪:১৫৯, সহীহ বুখারী হা: ৩৪৪৮)
এ ব্যাপারে আরো অনেক সহীহ হাদীস রয়েছে, যা প্রমাণ করে ঈসা (আঃ) আকাশে জীবিত রয়েছেন। কিয়ামাতের পূর্বে দুনিয়াতে আসবেন। এটাই আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের আক্বীদাহ।
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. ইয়াহূদীদের ওপর লা‘নতের কারণসমূহ জানতে পারলাম।
২. খ্রিস্টানদের বাতিল আক্বীদাহ সম্পর্কে জানতে পারলাম।
أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book# 114/١٦٦)-৩৬৮
www.motaher21.net
فَبِمَا نَقْضِهِم مِّيثَاقَهُمْ وَكُفْرِهِم بَأيَاتِ اللّهِ
কারণ, তারা তাদের অঙ্গীকার ভঙ্গ করেছিল, আল্লাহর আয়াতসমূহকে অবিশ্বাস করেছিল,
Because of their breaking the covenant, and their rejecting the Ayat of Allah,
সুরা: আন-নিসা
আয়াত নং :-১৫৫-১৫৯
সুরা: আন-নিসা
আয়াত নং :-১৫৫
فَبِمَا نَقْضِهِمْ مِّیْثَاقَهُمْ وَ كُفْرِهِمْ بِاٰیٰتِ اللّٰهِ وَ قَتْلِهِمُ الْاَنْۢبِیَآءَ بِغَیْرِ حَقٍّ وَّ قَوْلِهِمْ قُلُوْبُنَا غُلْفٌؕ بَلْ طَبَعَ اللّٰهُ عَلَیْهَا بِكُفْرِهِمْ فَلَا یُؤْمِنُوْنَ اِلَّا قَلِیْلًا۪
শেষ পর্যন্ত তাদের অঙ্গীকার ভঙ্গের জন্য, আল্লাহর আয়াতের ওপর মিথ্যা আরোপ করার জন্য, নবীদেরকে অন্যায়ভাবে হত্যা করার জন্য এবং “আমাদের দিল আবরণের মধ্যে সুরক্ষিত” তাদের এই উক্তির জন্য(তারা অভিশপ্ত হয়েছিল) । অথচ মূলত তাদের বাতিল পরস্তির জন্য আল্লাহ তাদের দিলের ওপর মোহর মেরে দিয়েছেন এবং এ জন্য তারা খুব কমই ঈমান এনে থাকে।
সুরা: আন-নিসা
আয়াত নং :-১৫৬
وَّ بِكُفْرِهِمْ وَ قَوْلِهِمْ عَلٰى مَرْیَمَ بُهْتَانًا عَظِیْمًاۙ
তারপর তাদের নিজেদের কুফরীর মধ্যে অনেক দূর অগ্রসর হয়ে মারয়ামের ওপর গুরুতর অপবাদ লাগাবার জন্য।
সুরা: আন-নিসা
আয়াত নং :-১৫৭
وَّ قَوْلِهِمْ اِنَّا قَتَلْنَا الْمَسِیْحَ عِیْسَى ابْنَ مَرْیَمَ رَسُوْلَ اللّٰهِۚ وَ مَا قَتَلُوْهُ وَ مَا صَلَبُوْهُ وَ لٰكِنْ شُبِّهَ لَهُمْؕ وَ اِنَّ الَّذِیْنَ اخْتَلَفُوْا فِیْهِ لَفِیْ شَكٍّ مِّنْهُؕ مَا لَهُمْ بِهٖ مِنْ عِلْمٍ اِلَّا اتِّبَاعَ الظَّنِّۚ وَ مَا قَتَلُوْهُ یَقِیْنًۢاۙ
এবং তাদের ‘আমরা আল্লাহর রসূল মারয়াম পুত্র ঈসা মসীহ্কে হত্যা করেছি’, এই উক্তির জন্য (তারা অভিশপ্ত হয়েছিল) । অথচ প্রকৃতপক্ষে তারা তাকে হত্যাও করেনি এবং শূলেও চড়ায়নি বরং ব্যাপারটিকে তাদের জন্য সন্দিগ্ধ করে দেয়া হয়েছে।আর যারা এ ব্যাপারে মতবিরোধ করেছে তারাও আসলে সন্দেহের মধ্যে অবস্থান করছে। তাদের কাছে এ সম্পর্কিত কোন জ্ঞান নেই, আছে নিছক আন্দাজ-অনুমানের অন্ধ অনুসৃতি। নিঃসন্দেহে তারা ঈসা মসীহকে হত্যা করেনি।
সুরা: আন-নিসা
আয়াত নং :-১৫৮
بَلْ رَّفَعَهُ اللّٰهُ اِلَیْهِؕ وَ كَانَ اللّٰهُ عَزِیْزًا حَكِیْمًا
বরং আল্লাহ তাঁকে নিজের দিকে উঠিয়ে নিয়েছেন। আল্লাহ জবরদস্ত শক্তিশালী ও প্রজ্ঞাময়।
সুরা: আন-নিসা
আয়াত নং :-১৫৯
وَ اِنْ مِّنْ اَهْلِ الْكِتٰبِ اِلَّا لَیُؤْمِنَنَّ بِهٖ قَبْلَ مَوْتِهٖۚ وَ یَوْمَ الْقِیٰمَةِ یَكُوْنُ عَلَیْهِمْ شَهِیْدًاۚ
আর আহলি কিতাবদের মধ্য থেকে এমন একজনও হবে না। যে তার মৃত্যুর পূর্বে তার ঈমান আনবে না, এবং কিয়ামতের দিন সে তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে।
তাফসীরে ইবনে কাসীর বলেছেন:-
১৫৫-১৫৯ নং আয়াতের তাফসীর:
আহলে কিতাবের ঐ পাপসমূহের বর্ণনা দেয়া হচ্ছে যার কারণে তারা আল্লাহ তা’আলার করুণা হতে দূরে নিক্ষিপ্ত হয়েছে। অভিশপ্ত জাতি হিসেবে পরিগণিত হয়েছে। প্রথম হচ্ছে এই যে, তারা আল্লাহ তা’আলার সাথে যে অঙ্গীকার করেছিল তার উপর প্রতিষ্ঠিত থাকেনি। দ্বিতীয় হচ্ছে এই যে, তারা আল্লাহ তা’আলার আয়াতসমূহ অর্থাৎ হুজ্জত, দলীল এবং নবীদের মুজিযাকে অস্বীকার করে। তৃতীয় হচ্ছে এই যে, তারা বিনা কারণে অন্যায়ভাবে নবীদেরকে হত্যা করে। আল্লাহ পাকের রাসূলগণের একটি বিরাট দল তাদের হাতে নিহত হন। চতুর্থ এই যে, তারা বলে- আমাদের অন্তর গিলাফের অর্থাৎ পর্দার মধ্যে রয়েছে। যেমন মুশরিকরা বলেছিলঃ (আরবী) অর্থাৎ তারা বলেছিল- “হে নবী (সঃ)! আপনি আমাদেরকে যেদিকে আহ্বান করছেন তা হতে আমাদের অন্তর পর্দার মধ্যে রয়েছে।”(৪১৪ ৫) আবার এও বলা হয়েছে যে, এর ভাবার্থ হচ্ছে- আমাদের অন্তর হচ্ছে জ্ঞান ও বিদ্যার পাত্র। সেই পাত্র জ্ঞানে পরিপূর্ণ রয়েছে।
সরা-ই-বাকারার মধ্যেও এর দৃষ্টান্ত বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহ তাআলা তাদের। এ কথাকে খণ্ডন করে বলেনঃ এটা নয় বরং তাদের কুফরীর কারণে আল্লাহ তা’আলা তাদের অন্তরে মোহর মেরে দিয়েছেন। প্রথম তাফসীরের ভিত্তিতে ভাবার্থ হবে- তারা ওযর পেশ করে বলেছিল, আমাদের অন্তরের উপর পর্দা পড়ে গেছে বলে আমরা নবী (আঃ)-এর কথাগুলো মনে রাখতে পারি না। তখন আল্লাহ তা’আলা উত্তরে বলেন-“এরূপ নয়, বরং তোমাকে কারণে তোমাদের অন্তরে মোহর মেরে দেয়া হয়েছে। দ্বিতীয় তাফসীরের ভিত্তিতে তো ভাবার্থ সবদিক দিয়েই স্পষ্ট। সূরা-ই-বাকারার তাফসীরে এর বিস্তারিত বিবরণ দেয়া হয়েছে। সুতরাং পরিণাম হিসেবে বলা হয়েছে যে, এখন তাদের অন্তর কুফরী, অবাধ্যতা এবং ঈমানের স্বল্পতার উপরেই থাকবে।
অতঃপর তাদের পঞ্চম বড় অপরাধের বর্ণনা দেয়া হয়েছে যে, তারা সতীসাধ্বী নারী হযরত মারইয়াম (আঃ)-এর উপরও ব্যভিচারের জঘন্যতম অপবাদ দেয় এবং তারা একথা বলতেও দ্বিধাবোধ করেনি যে, এ ব্যভিচারের মাধ্যমেই হযরত ঈসা (আঃ) জন্মগ্রহণ করেছেন। কেউ কেউ আবার আর এক পা অগ্রসর হয়ে বলে যে, এ ব্যভিচার ঋতু অবস্থায় হয়েছিল। তাদের উপর আল্লাহ তা’আলার অভিসম্পাত বর্ষিত হোক যে, তাঁর গৃহীত বান্দাও তাদের কু-কথা হতে রক্ষা পাননি। তাদের ষষ্ঠ অপরাধ এই যে, তারা বিদ্রুপ করে এবং গৌরব বোধ করে বলেছিল, আমরা হযরত ঈসা (আঃ)-কে হত্যা করেছি। যেমন মুশরিকরা রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে উপহাস করে বলেছিল-“হে ঐ ব্যক্তি! যার উপর কুরআন মাজীদ অবতীর্ণ হয়েছে, তুমি তো পাগল।”
পূর্ণ ঘটনা এই যে, যখন আল্লাহ তা’আলা হযরত ঈসা (আঃ)-কে নবীরূপে প্রেরণ করেন এবং তাঁকে বড় বড় মুজিযা প্রদান করেন, যেমন জন্মান্ধকে চক্ষুদান করা, শ্বেতকুষ্ঠ রোগীকে ভাল করে দেয়া, মৃতকে জীবিত করা, মাটি দ্বারা পাখি তৈরী করে তার ভিতর ফুক দিয়ে তাকে জীবন্ত পাখি করে উড়িয়ে দেয়া ইত্যাদি। তখন ইয়াহুদীরা অত্যন্ত কুপিত হয় এবং তার বিরুদ্ধাচরণে উঠে পড়ে লেগে যায় ও সর্ব প্রকারের কষ্ট দিতে আরম্ভ করে। তারা তাঁর জীবন দুর্বিসহ করে তুলে। কোন গ্রামে কদিন ধরে নিরাপদে অবস্থানও তার ভাগ্যে জুটেনি। সারা জীবন তিনি মায়ের সঙ্গে জঙ্গলে ও প্রান্তরে ভ্রমণের অবস্থায়। কাটিয়ে দেন। সে অবস্থাতেও তিনি নিশ্চিন্ত থাকতে পারেননি। সে যুগের দামেস্কের বাদশাহর নিকট তিনি গমন করেন। সে বাদশাহ ছিল তারকা পূজক। সে সময় ঐ মাযহাবের লোককে ‘ইউনান’ বলা হতো। ইয়াহুদীরা এখানে এসে হযরত ঈসা (আঃ)-এর বিরুদ্ধে বাদশাহকে উত্তেজিত করে। তারা বলে, এ লোকটি বড়ই বিবাদী। সে জনগণকে বিপথে চালিত করছে। প্রত্যহ নতুন নতুন গণ্ডগোল সৃষ্টি করছে ও শান্তি ভঙ্গ করছে। সে জনগণের মধ্যে বিদ্রোহের আগুন প্রজ্জ্বলিত করছে।
বাদশাহ বায়তুল মুকাদ্দাসে অবস্থানরত স্বীয় শাসনকর্তার নিকট নির্দেশনামা প্রেরণ করে যে, সে যেন হযরত ঈসা (আঃ)-কে গ্রেফতার করতঃ শূলে চড়িয়ে দেয় এবং তাঁর মস্তকোপরি কাটার মুকুট পরিয়ে দেয় এবং এভাবে জনগণকে এ বিপদ থেকে রক্ষা করে। বাদশাহর এ নির্দেশনামা পাঠ করে ঐ শাসনকর্তা ইয়াহূদীদের একটি দলকে সঙ্গে নিয়ে ঐ ঘরটি অবরোধ করে যেখানে হযরত ঈসা (আঃ) অবস্থান করছিলেন। সে সময় তার সঙ্গে বারোজন বা তেরোজন অথবা খুব বেশী হলে সতেরোজন লোক ছিল। শুক্রবার আসরের পর তারা ঐ ঘরটি অবরোধ করে এবং শনিবারের রাত পর্যন্ত অবরোধ স্থায়ী থাকে। যখন ঈসা (আঃ) অনুভব করেন যে, এখন হয় তারাই জোর করে ঘরে প্রবেশ করতঃ তাকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাবে, না হয় তাকেই বাইরে যেতে হবে। তাই তিনি স্বীয় সহচরদেরকে বলেনঃ “তোমাদের মধ্যে কে এটা পছন্দ করবে যে, তার উপর আমার সদৃশ আনয়ন করা হবে অর্থাৎ তার আকার আমার আকারের মত হয়ে যাবে, অতঃপর সে তাদের হাতে গ্রেফতার হবে এবং আল্লাহ পাক আমাকে মুক্তি দেবেন? আমি তার জন্যে জান্নাতের জামিন হচ্ছি।” এ কথা শুনে এক নব্য যুবক দাঁড়িয়ে গিয়ে বলেনঃ “আমি এতে সম্মত আছি।” কিন্তু ঈসা (আঃ) তাঁকে এর যোগ্য মনে না করে দ্বিতীয়বার এবং তৃতীয়বারও একথাই বলেন। কিন্তু প্রত্যেকবার তিনিই প্রস্তুত হয়ে যান। তখন হযরত ঈসাও (আঃ) মেনে নেন এবং দেখতে না দেখতেই আল্লাহ তা’আলার হুকুমে তাঁর আকার পরিবর্তিত হয়, আর মনে হয় যে, তিনিই হযরত ঈসা (আঃ)। সে সময় ছাদের এক দিকে একটি ছিদ্র প্রকাশিত হয় এবং হযরত ঈসা (আঃ)-এর উপর তন্দ্রার ন্যায় অবস্থা ছেয়ে যায়। ঐ অবস্থাতেই তাকে আকাশে উঠিয়ে নেয়া হয়। যেমন আল্লাহ পাক বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ যখন আল্লাহ তাআলা বলেন- হে ঈসা! নিশ্চয়ই আমি তোমাকে গ্রহণকারী এবং আমার নিকট উত্তোলনকারী।’ (৩:৫৫)।
হযরত ঈসা (আঃ)-কে আকাশে উঠিয়ে নেয়ার পর এ লোকগুলো ঘর হতে বেরিয়ে আসে। যে মহান সাহাবীকে হযরত ঈসা (আঃ)-এর আকারবিশিষ্ট করে দেয়া হয়েছিল তাঁকেই ঈসা (আঃ) মনে করে ইয়াহূদীদের দলটি ধরে নেয় এবং রাতারাতিই তাকে শূলের উপর চড়িয়ে দিয়ে তার মাথার উপর কাঁটার মুকুট পরিয়ে দেয়। তখন ইয়াহূদীরা আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়ে যে, তারা হযরত ঈসা (আঃ)-কে হত্যা করে ফেলেছে। সবচেয়ে বিস্ময়কর ব্যাপার এই যে, খ্রীষ্টানদের একটি নির্বোধ দলও ইয়াহূদীদের সুরে সুর মিলিয়ে দেয়। শুধুমাত্র যারা হযরত ঈসা (আ)-এর সঙ্গে ঐ ঘরে উপস্থিত ছিল এবং যারা নিশ্চিতরূপে জানতো যে, তাকে আকাশে উঠিয়ে নেয়া হয়েছে, আর ইনি হচ্ছেন অমুক ব্যক্তি যিনি প্রতারণায় তার স্থানে শহীদ হয়েছেন, তারা ছাড়া অবশিষ্ট সমস্ত খ্রীষ্টানই মতই আলাপ আলোচনা করতে থাকে। এমন কি তারা একথাও বানিয়ে নেয় যে, হযরত ঈসা (আঃ)-এর মাতা হযরত মারইয়াম (আঃ) শূলের নীচে বসে ক্রন্দন করছিলেন। তারা একথাও বলে যে, হযরত মারইয়াম (আঃ) সে সময় স্বীয় পুত্রের সঙ্গে কিছু কথাবার্তাও বলেছিলেন। আল্লাহ তা’আলাই সবচেয়ে ভাল জানেন।
প্রকৃতপক্ষে এটা ছিল আল্লাহ তা’আলার পক্ষ হতে তাঁর বান্দাদের উপর পরীক্ষা যা তাঁর পূর্ণ নৈপুণ্যের পরিচায়ক। অতঃপর আল্লাহ তাআলা এ অপপ্রচারকে প্রকাশ করে দিয়ে প্রকৃত অবস্থা সম্বন্ধে স্বীয় বান্দাদেরকে অবহিত করেন এবং স্বীয় সর্বশ্রেষ্ঠ রাসূল ও বড় মর্যাদাসম্পন্ন নবী (সঃ)-এর মাধ্যমে তাঁর পবিত্র ও সত্য কালামে পরিষ্কারভাবে বর্ণনা করেছেন যে, প্রকৃতপক্ষে না কেউ হযরত ঈসা (আঃ)-কে হত্যা করেছে, না তাকে শূলে দিয়েছে। বরং যে ব্যক্তির আকার তারই আকারের ন্যায় করে দেয়া হয়েছিল তাকেই তারা হযরত ঈসা (আঃ) মনে করে শূলে দিয়েছিল।”যেসব ইয়াহুদী ও খ্রীষ্টান হযরত ঈসা (আঃ)-এর নিহত হওয়ার কথা বলে থাকে তারা সন্দেহ ও ভ্রান্তির মধ্যে রয়েছে। তাদের নিকট না আছে কোন দলীল, না তাদের আছে সে সম্পর্কে কোন জ্ঞান। কল্পনার অনুসরণ ব্যতীত তাদের এ বিষয়ে কোনই জ্ঞান নেই। এ জন্যেই আল্লাহ তা’আলা এরই সাথে আবার বলে দিয়েছেন যে, হযরত ঈসা রূহুল্লাহ (আঃ)-কে কেউ যে হত্যা করেনি এটা নিশ্চিত স্বরূপ কথা। বরং প্রবল পরাক্রান্ত ও মহাজ্ঞানী আল্লাহ তাঁকে নিজের নিকট উঠিয়ে নিয়েছেন।
হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, যখন আল্লাহ তা’আলা হযরত ঈসা (আঃ)-কে আকাশে উঠিয়ে নিতে ইচ্ছে করেন তখন তিনি বাড়িতে আসেন। সে সময় ঘরে বারোজন সাহায্যকারী ছিলেন। তাঁর চুল হতে পানির ফোটা ঝরে ঝরে পড়ছিলো। তিনি তাঁর সহচরদেরকে বলেনঃ “তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ এমন আছে যারা আমার উপর বিশ্বাস স্থাপন করেছে কিন্তু বারো বার আমার সঙ্গে কুফরী করবে। অতঃপর তিনি বলেনঃ “তোমাদের মধ্যে কে এমন আছে যে পছন্দ করে যে, আমার মত তার আকার করে দেয়া হবে এবং আমার স্থলে তাকে হত্যা করা হবে এবং জান্নাতে সে আমার বন্ধু হবে।’
এ বর্ণনায় এও আছে যে, হযরত ঈসা (আঃ)-এর ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী কেউ কেউ তার সাথে বারো বার কুফরী করে। অতঃপর তাদের তিনটি দল হয়ে যায়। (১) ইয়াকুবিয়্যাহ, (২) নাসতুরিয়াহ এবং (৩) মুসলমান। ইয়াকুবিয়্যাহ তো বলতে থাকে-“স্বয়ং আল্লাহ আমাদের মধ্যে অবস্থান করছিলেন। যতোদিন থাকার তাঁর ইচ্ছে ছিল ততোদিন ছিলেন। অতঃপর আকাশে উঠে গেছেন। নাসতুরিয়্যাহ বলে-‘আল্লাহর পুত্র আমাদের মধ্যে ছিলেন। তাঁকে কিছুকাল আমাদের মধ্যে রাখার পর তিনি তাঁকে নিজের নিকট উঠিয়ে নিয়েছেন। মুসলমানদের বিশ্বাস ছিল যে, আল্লাহর বান্দা ও রাসূল তাদের মধ্যে ছিলেন। যতোদিন রাখার ইচ্ছা ততোদিন তাদের মধ্যে রেখেছেন। অতঃপর নিজের নিকট উঠিয়ে নিয়েছেন।
পূর্ববর্তী দু’দলের প্রভাব খুব বেশী হয় এবং তারা তৃতীয় সত্য ও ভাল দলটিকে পিষ্ট ও দলিত করতে থাকে। সুতরাং তারা দুর্বল হয়ে পড়ে। অবশেষে আল্লাহ তা’আলা শেষ নবী হযরত মুহাম্মাদ (সঃ)-কে প্রেরণ করতঃ ইসলামকে জয়যুক্ত করেন। এর ইসনাদ সম্পূর্ণ সঠিক এবং সুনান-ই-নাসাঈতে হযরত আবু মুআবিয়া (রঃ) হতেও এটা বর্ণিত আছে। অনুরূপভাবে পূর্বযুগীয় বহু মনীষীরও এটা উক্তি রয়েছে। হযরত অহাব ইবনে মুনাব্বাহ (রঃ) বলেন যে, সে সময় শাহী সৈন্য ও ইয়াহূদীরা হযরত ঈসা (আঃ)-এর উপর আক্রমণ চালায় ও তাকে অবরোধ করে। সে সময় তাঁর সঙ্গে তাঁর সতেরোজন সহচর ছিলেন। ঐ লোকগুলো দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করে দেখে যে সমস্ত লোকই হচ্ছে হযরত ঈসা (আঃ)-এর আকার বিশিষ্ট। ওরা তখন তাদেরকে বলেঃ ‘তোমাদের মধ্যে যিনি প্রকৃত ঈসা তাঁকে আমাদের হাতে সমর্পণ কর, নতুবা তোমাদের সকলকেই হত্যা করে ফেলবো।’
তখন হযরত ঈসা (আঃ) স্বীয় সহচরবৃন্দকে বলেনঃ “তোমাদের মধ্যে এমন কে আছে যে জান্নাতে আমার বন্ধু হতে ইচ্ছে করে এবং তার বিনিময়ে আমার স্থলে শূলে চড়া স্বীকার করে নেয়।” একথা শুনে একজন সাহাবী প্রস্তুত হয়ে যান এবং বলেনঃ “আমিই ঈসা।” সুতরাং ধর্মের শত্রুরা তাকে গ্রেফতার করতঃ হত্যা করে শূলে চড়িয়ে দেয় এবং প্রফুল্লচিত্তে বলে, “আমরা ঈসা (আঃ)-কে হত্যা করেছি।” অথচ প্রকৃতপক্ষে এরূপ হয়নি, বরং তারা প্রতারিত হয়েছে এবং আল্লাহ তা’আলা সেই সময় স্বীয় নবী (আঃ)-কে নিজের নিকট উঠিয়ে নিয়েছেন।
তাফসীর-ই-ইবনে জারীরে রয়েছে যে, যখন আল্লাহ তা’আলা হযরত ঈসা (আঃ)-এর অন্তরে এ বিশ্বাস জাগ্রত করেন যে, তাঁকে দুনিয়া হতে ফিরে আসতে হবে তখন সেটা তাঁর নিকট খুবই কঠিন ঠেকে এবং মৃত্যুর ভয়ে তিনি
অত্যন্ত ভীত হয়ে পড়েন। তাই তিনি স্বীয় সহচরগণকে জিয়াফত দান করেন। খানা তৈরী করেন এবং সকলকে বলে দেন-‘অজি রাতে তোমরা সবাই আমার বাড়ীতে অবশ্যই আসবে, তোমাদের সাথে আমার জরুরী কথা আছে।’ তাঁর সহচরগণ উপস্থিত হলে তিনি স্বহস্তে তাদেরকে ভোজন করান। সমস্ত কাজ-কর্ম তিনি নিজেই করতে থাকেন। তাদের খাওয়া শেষ হলে তিনি স্বহস্তে তাঁদের হাত ধৌত করিয়ে দেন এবং নিজের কাপড় দিয়ে তাঁদের হাত মুছিয়ে দেন। এটা তাঁর সাহাবীদের নিকট ভাল মনে হয় না। তখন তিনি তাদেরকে বলেনঃ “আজকে যদি তোমাদের মধ্যে কেউ আমার কাজে বাধা দান করে তবে তার সাথে আমার কোনই সম্পর্ক নেই। আমিও তার নই এবং সেও আমার নয়।” একথা শুনে তারা নীরব হয়ে যান।
অতঃপর যখন তিনি ঐ সম্মানজনক কাজ হতে অবসর গ্রহণ করেন তখন সহচরগণকে সম্বোধন করে বলেনঃ “দেখ আমি তোমাদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা সম্মানিত ব্যক্তি, তথাপি আমি স্বহস্তে তোমাদের খিদমত করেছি যেন তোমরা আমার এ সুন্নাতের অনুসারী হয়ে যাও। সাবধান! তোমাদের কেউ যেন নিজেকে স্বীয় মুসলমান ভাই হতে উত্তম মনে না করে। বরং বড়রা যেন ছোটদের সেবা করে যেমন স্বয়ং আমি তোমাদের খিদমত করলাম। যাক, তোমাদের সঙ্গে আমার বিশেষ এক কাজ ছিল যার জন্যে আমি তোমাদেরকে ডেকেছি। তা হচ্ছে এই যে, তোমরা আজ রাতে অত্যন্ত বিনয়ের সাথে আমার জন্যে প্রার্থনা কর যেন আমার প্রভু আমার মৃত্যুর সময় পিছিয়ে দেন।”
অতএব, তাঁরা প্রার্থনা করতে আরম্ভ করেন। কিন্তু বিনয় প্রকাশের সময়ের পূর্বেই তাদেরকে ঘুম এমনভাবে চেপে বসে যে, তাদের মুখ দিয়ে একটি শব্দ বের হওয়াও কঠিন হয়ে পড়ে। তিনি তাদেরকে জাগ্রত করতে থাকেন ও বলেনঃ “তোমাদের হলো কি যে এক রাতও তোমরা জেগে থাকতে পারছো
?” সকলেই তখন উত্তরে বলেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (আঃ)! আমরা নিজেরাই তো হতবুদ্ধি হয়ে পড়েছি যে, এটা হচ্ছে কি? এক রাতই নয়, বরং ক্রমাগত ক’রাত জেগে থাকারও আমাদের অভ্যাস আছে। কিন্তু আল্লাহ তাআলাই জানেন আজ আমাদেরকে ঘুম ঘিরে নেয়ার কারণ কি? প্রার্থনা ও আমাদের মধ্যে কোন কুদরতী’ বাধার সৃষ্টি হয়েছে।” তখন তিনি বলেনঃ “তাহলে রাখাল থাকবে না এবং ছাগলগুলো ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়বে।”
মোটকথা, তিনি ইশারা-ইঙ্গিতে স্বীয় অবস্থা প্রকাশ করতে থাকেন। তারপরে তিনি বলেনঃ “দেখ, তোমাদের মধ্যকার এক ব্যক্তি সকালে মোরগ ডাক দেয়ার পূর্বে আমার সাথে তিনবার কুফরী করবে এবং তোমাদের মধ্যে একটি লোক গুটিকয়েক রৌপ্যমুদ্রার বিনিময়ে আমাকে বিক্রি করতঃ আমার মূল্য ভক্ষণ করবে।” তখন এ লোকগুলো এখান থেকে বেরিয়ে পড়ে এদিক। ওদিক চলে যান। ইয়াহূদীরা তাদের অনুসন্ধানে লেগে ছিল। তারা শামউন নামে হযরত ঈসা (আঃ)-এর একজন সহচরকে চিনে নিয়ে ধরে ফেলে এবং বলে যে, এও তার একজন সঙ্গী। কিন্তু শামউন বলে-এটা ভুল কথা, আমি তাঁর সঙ্গী নই। তারা তার কথা বিশ্বাস করে তাকে ছেড়ে দেয়। কিছু দূরে এগিয়ে গিয়ে সে অন্য দলের হাতে ধরা পড়ে যায় এবং সেখানে ঐভাবেই অস্বীকার করে নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়। এমন সময় মোরগ ডাক দেয়। তখন সে অনুতাপ করতে থাকে এবং অত্যন্ত চিন্তিত হয়ে পড়ে।
সকালে হযরত ঈসা (আঃ)-এর একজন সহচর ইয়াহুদীদের নিকটে গিয়ে বলেঃ “আমি যদি তোমাদেরকে হযরত ঈসা (আঃ)-এর ঠিকানা বলে দেই তবে তোমরা আমাকে কি দেবে?” তারা বলেঃ “ত্রিশটি রৌপ্যমুদ্রা দেবো।” সুতরাং সে সেই মুদ্রা গ্রহণ করে ও হযরত ঈসা (আঃ)-এর ঠিকানা তাদেরকে বলে দেয়। তখন তারা তাকে গ্রেফতার করে নেয় এবং রশি দ্বারা বেঁধে টানতে টানতে নিয়ে যায় ও বিদ্রুপ করে বলে-“আপনিতো মৃতকে জীবিত করতেন, জ্বিনদেরকে তাড়িয়ে দিতেন, পাগলকে ভাল করতেন। কিন্তু এখন ব্যাপার কি যে, নিজেকেই বাঁচাতে পারছেন না? রঞ্জুকেই ছিড়ে ফেলতে পারছেন না? ধিক আপনাকে।” এসব কথা বলতে বলতে যাচ্ছিল এবং তার দিকে কন্টক নিক্ষেপ করছিল। এরূপ নির্দয়ভাবে টেনে এনে যখন শূলের কাঠের নিকট নিয়ে আসে এবং শূলের উপর চড়িয়ে দেয়ার ইচ্ছে করে সে সময় আল্লাহ পাক স্বীয় নবী (আঃ)-কে নিজের কাছে উঠিয়ে নেন এবং তারা তারই আকারের সাদৃশ্যযুক্ত একজন লোককে শূলের উপর উঠিয়ে দেয়।
অতঃপর সাতদিন পরে হযরত মারইয়াম (আঃ) এবং যে স্ত্রীলোকটিকে হযরত ঈসা (আঃ) জ্বিন হতে রক্ষা করেছিলেন তথায় আগমন করেন ও ক্রন্দন করতে থাকেন। তখন হযরত ঈসা (আঃ) তথায় আগমন করতঃ বলেনঃ “আপনারা কাঁদছেন কেন? আমাকে তো আল্লাহ তা’আলা তাঁর নিকট উঠিয়ে নিয়েছেন এবং আমার নিকট তাদের কষ্ট পৌছেনি। বরং তাদেরকে সংশয়াবিষ্ট করা হয়েছে। আমার সহচরদেরকে সংবাদ দিন যে, তারা যেন অমুক স্থানে – আমার সাথে সাক্ষাৎ করে।” ঐ শুভ সংবাদ পেয়ে এ এগারজন লোক সবাই তথায় উপস্থিত হন। যে সহচর তাঁকে বিক্রি করেছিল, তাকে তথায় দেখতে পেলেন না। জিজ্ঞেস করে জানতে পারলেন যে, সে অত্যন্ত লজ্জিত ও অনুতপ্ত হয়ে আত্মহত্যা করেছে। তিনি বলেনঃ “যদি সে তাওবা করতো তবে আল্লাহ। তাআলা তার তাওবা কবূল করতেন।
অতঃপর তিনি তাদেরকে বলেনঃ “যে শিশুটি তোমাদের সঙ্গে রয়েছে, তার নাম ইয়াহ্ইয়া। সে এখন তোমাদের সঙ্গী। জেনে রেখো, সকালে তোমাদের ভাষা পরিবর্তন করে দেয়া হবে। প্রত্যেকেই স্ব-স্ব সম্প্রদায়ের ভাষা বলতে পারবে। সুতরাং তাদের উচিত যে তারা যেন স্ব-স্ব সম্প্রদায়ের নিকটে গিয়ে তাদের নিকট আমার দাওয়াত পৌছে দেয় এবং আল্লাহর ভয় প্রদর্শন করে। এ ঘটনাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইবনে ইসহাক (রাঃ)-এর উক্তি এই যে, বানী ইসরাঈলের যে বাদশাহ হযরত ঈসা (আঃ)-কে হত্যা করার জন্যে স্বীয় সৈন্য বাহিনী প্রেরণ করেছিল তার নাম ছিল দাউদ। সে সময় হযরত ঈসা (আঃ) অত্যন্ত ভীত সন্ত্রস্ত ছিলেন। কোন ব্যক্তিই স্বীয় মৃত্যুতে এত বেশী উদ্বিগ্ন ও হা-হুতাশকারী নেই যে হা-হুতাশ তিনি সে সময় করেছিলেন। এমন কি তিনি বলেনঃ “হে আল্লাহ! কারও মাধ্যমে যদি আপনি আমার মৃত্যুকে সরিয়ে দেন তবে খুবই ভাল হয়।” তার এত ভয় হয় যে, ভয়ের কারণে তার শরীর দিয়ে রক্ত ফুটে বের হয়। সে সময় সে ঘরে তার সাথে তার বারোজন সাহায্যকারী ছিলেন। তাঁদের নাম নিম্নে দেয়া হলোঃ (১) ফারতুস, (২) ইয়াকুবাস, (৩) অয়লা ওয়ানাস (ইয়াকূবের ভাই), (৪) আনদ্রা ইয়াস, (৫) ফাইলাসা ইবনে ইয়ালামা, (৬) মুনতা, (৭) মাস, (৮) ইয়াকূব ইবনে হালকা, (৯) নাদ, (১০) আসীস, (১১) কাতাবিয়া এবং (১২) লাইউদাসরাক রিয়াইউতা। কেউ কেউ বলেন যে, তাঁরা ছিলেন তেরোজন। আর একজনের নাম ছিল সারজাস। তিনিই হযরত ঈসা (আঃ)-এর শুভ সংবাদের পরিপ্রেক্ষিতে তার স্থলে শূলবিদ্ধ হতে সম্মত হয়েছিলেন।
যখন হযরত ঈসা (আঃ)-কে আকাশে উঠিয়ে নেয়া হয় এবং অবশিষ্ট লোক ইয়াহূদীদের হাতে বন্দী হন তখন তাদেরকে গণনা করা হলে দেখা যায় যে, একজন কম হচ্ছেন। তখন তাদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দেয়। ঐদলটি যখন হযরত ঈসা (আঃ) ও তাঁর সহচরদের উপর আক্রমণ চালায় ও তাদেরকে গ্রেফতার করার ইচ্ছে করে তখন তারা হযরত ঈসা (আঃ)-কে চিনতে পারেনি। সে সময় লাইউদাসরাকরিয়াইউতা ইয়াহূদীদের নিকট হতে ত্রিশটি রৌপ্যমুদ্রা গ্রহণ করতঃ তাদেরকে বলেছিল, আমি সর্বপ্রথমে যাচ্ছি। গিয়ে যে লোকটিকে আমি চুম্বন দান করবো, তোমরা বুঝে নেবে, উনিই হযরত ঈসা (আঃ)।
অতঃপর যখন এ লোকটি ভেতরে প্রবেশ করে তখন আল্লাহ তা’আলা হযরত ঈসা (আঃ)-কে উঠিয়ে নিয়ে ছিলেন এবং হযরত সারজাসকে তার আকার বিশিষ্ট করে দেয়া হয়। ঐ লোকটি গিয়ে চুক্তি অনুযায়ী তাঁকেই চুম্বন দেয়। সুতরাং হযরত সারজাসকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হয়। এ পাপকার্য সাধনের পর সে বড়ই লজ্জিত ও অনুতপ্ত হয় এবং স্বীয় গলদেশে রশি লাগিয়ে ফাঁসির উপর ঝুলে যায়। এভাবে সে খ্রীষ্টানদের মধ্যে অভিশপ্ত হিসেবে পরিগণিত হয়। কেউ কেউ বলেন যে, তার নাম লাইউদাসরাকরিয়াইউতা। যখনই সে হযরত ঈসা (আঃ)-কে চিনিয়ে দেয়ার উদ্দেশ্যে ঐ ঘরে প্রবেশ করে তখনই হযরত ঈসা (আঃ)-কে উঠিয়ে নেয়া হয় এবং স্বয়ং তারই আকার হযরত ঈসা (আঃ)-এর মত হয়ে যায়। কাজেই লোকেরা তাকেই ধরে নেয়। সে বহুবার চীৎকার করে বলে- আমি হযরত ঈসা (আঃ) নই। আমি তো তোমাদের সঙ্গী। আমিইতো হযরত ঈসা (আঃ)-কে চিনিয়েছিলাম। কিন্তু তা শুনবে কে? শেষে তাকেই শূলে বিদ্ধ করা হয়। এখন আল্লাহ তা’আলাই জানেন যে, হযরত ঈসা (আঃ)-এর আকারের সহিত সাদৃশ্যযুক্ত শূলবিদ্ধ ব্যক্তি মুমিন সারজাস ছিলেন, না মুনাফিক সহচর লাইউদাসকরিয়াইউতা ছিল। হযরত মুজাহিদ (রঃ) বলেন যে, হযরত ঈসা (আঃ)-এর সাদৃশ্য যার উপর আনয়ন করা হয়েছিল তাকেই ইয়াহুদীরা শূলবিদ্ধ করেছিল এবং হযরত ঈসা (আঃ)-কে আল্লাহ তা’আলা জীবিত আকাশে উঠিয়ে নিয়েছিলেন। ইমাম ইবনে জারীর (রঃ) বলেন যে, হযরত ঈসার আকারের সাদৃশ্য তাঁর সমস্ত সঙ্গীর উপরই আনয়ন করা হয়েছিল।
এরপর বর্ণনা করা হচ্ছে যে, হযরত ঈসা (আঃ)-এর মৃত্যুর পূর্বে সমস্ত আহলে কিতাব তার উপর বিশ্বাস স্থাপন করবে এবং কিয়ামতের দিন তিনি তাদের উপর সাক্ষী হবেন। ইমাম ইবনে জারীর (রঃ) বলেন যে, এ আয়াতের তাফসীরে কয়েকটি উক্তি আছে। প্রথমতঃ এই যে, হযরত ঈসা (আঃ)-এর মৃত্যুর পূর্বে অর্থাৎ যখন তিনি দাজ্জালকে হত্যা করার জন্যে দ্বিতীয়বার ভূপৃষ্ঠে আগমন করবেন তখন সমস্ত মাযহাব উঠে যাবে। শুধুমাত্র ইসলাম ধর্ম অবশিষ্ট থাকবে, যা হচ্ছে প্রকৃতপক্ষে হযরত ইবরাহীম (আঃ)-এর সুদৃঢ় ধর্ম।
হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে (আরবী)-এর ভাবার্থ হযরত ঈসা (আঃ)-এর মৃত্যু। হযরত আবূ মালিক (রঃ) বলেন যে, যখন হযরত ঈসা (আঃ) অবতরণ করবেন তখন সমস্ত আহলে কিতাব তার উপর ঈমান আনয়ন করবে। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ)-এর দ্বিতীয় বর্ণনায় রয়েছে যে, বিশেষ করে ইয়াহুদী একজনও অবশিষ্ট থাকবে না। হযরত হাসান বসরী (রঃ) বলেন যে, এর ভাবার্থ হচ্ছে নাজাসী এবং তাঁর সঙ্গী। তিনি আরও বলেন, আল্লাহর শপথ! হযরত ঈসা (আঃ) আল্লাহ তাআলার নিকট জীবিত বিদ্যমান রয়েছেন। যখন তিনি ভূ-পৃষ্ঠে অবতরণ করবেন তখন একজনও এমন আহলে কিতাব অবশিষ্ট থাকে না যে তার উপর বিশ্বাস স্থাপন করবে না। তাকে এ আয়াতের তাফসীর জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেনঃ “আল্লাহ তাআলা হযরত ঈসা (আঃ)-কে নিজের কাছে উঠিয়ে নিয়েছেন এবং কিয়ামতের পূর্বে তাঁকে পুনরায় পৃথিবীতে এ হিসেবে প্রেরণ করবেন যে, ভালমন্দ সবাই তার উপরে ঈমান আনয়ন করবে। হযরত কাতাদাহ (রঃ), হযরত আবদুর রহমান (রঃ) প্রমুখ মুফাসসিরগণের সিদ্ধান্ত এটা এবং এটাই সঠিক উক্তি। এ তাফসীর হচ্ছে সম্পূর্ণ সঠিক তাফসীর।
দ্বিতীয় উক্তি এই যে, প্রত্যেক আহলে কিতাব স্বীয় মৃত্যুর পূর্বে হযরত ঈসা (আঃ)-এর উপর বিশ্বাস স্থাপন করবে। কেননা, মৃত্যুর সময় সত্য ও মিথ্যা প্রত্যেকের উপর প্রকাশিত হয়ে যায়। তাই প্রত্যেক আহলে কিতাব এ নশ্বর জগত হতে ‘বিদায় গ্রহণের সময় হযরত ঈসা (আঃ)-এর সত্যতা স্বীকার করবে। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, কোন কিতাবী মারা যায় না যে পর্যন্ত না সে হযরত ঈসা (আঃ) -এর উপর ঈমান আনয়ন করে। হযরত মুজাহিদেরও (রাঃ) এটাই উক্তি। এমন কি হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে তা এতদূর পর্যন্ত বর্ণিত আছে যে, যদি কোন আহলে কিতাবের গর্দান তরবারী দ্বারা উড়িয়ে দেয়া হয় তথাপি তার আত্মা বের হয় না যে পর্যন্ত না সে হযরত ঈসা (আঃ)-এর উপর ঈমান আনে এবং এটা বলে দেয় যে, তিনি আল্লাহ তাআলার বান্দা ও তাঁর রাসূল। হযরত উবাই (রাঃ)-এর পঠনে (আরবী) রয়েছে। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হয়ঃ মনে করুন কেউ হয়তো দেয়াল হতে পড়ে মারা গেল। তখন সে কি করে ঈমান আনতে পারে? তিনি উত্তরে বলেনঃ “সে ঐ মধ্যবর্তী দূরত্বের মধ্যেই ঈমান আনতে পারে।” ইকরামা (রঃ), মুহম্মদ ইবনে সীরিন (রঃ), যহ্হাক (রঃ), জুয়াইবির (রঃ) হতেও এটাই বর্ণিত আছে।
তৃতীয় উক্তি এই যে, আহলে কিতাবের মধ্যে কেউ এমন নেই যে, তার মৃত্যুর পূর্বে হযরত মুহম্মাদ (সঃ)-এর উপর বিশ্বাস স্থাপন করবে না। ইকরামা (রঃ) একথাই বলেন। ইমাম ইবনে জারীর (রঃ) বলেনঃ এসব উক্তির মধ্যে অধিকতর সঠিক উক্তি হচ্ছে প্রথম উক্তিটিই। তা এই যে, কিয়ামতের নিকটবর্তী সময়ে হযরত ঈসা (আঃ) যখন আকাশ হতে অবতরণ করবেন, কোন আহলে কিতাবই ঐ সময় তাঁর উপর ঈমান আনা ছাড়া থাকবে না। প্রকৃতপক্ষে ইমাম ইবনে জারীর (রঃ)-এর এই উক্তিটিই সঠিকতম উক্তি। কেননা, এখানকার আয়াতগুলো দ্বারা স্পষ্টভাবে এটা প্রতীয়মান হচ্ছে যে, প্রকৃত উদ্দেশ্য হচ্ছে ইয়াহূদীদের “আমরা হযরত ঈসা (আঃ)-কে হত্যা করেছি ও শূলে দিয়েছি” এ দাবীর অসারতা প্রমাণিত করা।
সহীহ মুতাওয়াতির হাদীসসমূহে রয়েছে যে, হযরত ঈসা (আঃ) দাজ্জালকে হত্যা করবেন, ক্রুশকে ভেঙ্গে দেবেন, শূকরকে হত্যা করবেন এবং তিনি জিযিয়া কর গ্রহণ করবেন না। তিনি ঘোষণা করবেন- হয় তোমরা ইসলাম গ্রহণ কর, না হয় তরবারীর সম্মুখীন হও।’ সুতরাং এ আয়াতে সংবাদ দেয়া হচ্ছে যে, সমস্ত আহলে কিতাব তাঁর হাতে ইসলাম গ্রহণ করবেন। একজনও এমন থাকবে না যে ইসলাম গ্রহণ হতে বিরত থাকবে বা কাউকে বিরত রাখবে। অতএব, যাকে এ পথভ্রষ্ট ইয়াহূদ ও নির্বোধ খ্রীষ্টানেরা মৃত মনে করে থাকে এবং বিশ্বাস রাখে যে, তাকে শূলবিদ্ধ করা হয়েছিল, তারা তাঁর প্রকৃত মৃত্যুর পূর্বেই তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবে এবং যে কাজ তারা তার সামনে করেছে বা করবে, তিনি কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা’আলার সম্মুখে তার সাক্ষ্য প্রদান করবেন। অর্থাৎ তাকে আকাশে উঠিয়ে নেয়ার পূর্বের জীবনে তাদেরকে তিনি যেসব কাজ করতে দেখেছেন এবং দ্বিতীয়বার পৃথিবীতে অবতরণের পর সেই শেষ জীবনে তারা তাঁর সামনে যা কিছু করবে, কিয়ামতের দিন ঐ সমস্তই তাঁর চোখের সামনে ভেসে উঠবে এবং তিনি আল্লাহ পাকের সামনে ওগুলো পেশ করবেন। হ্যা, তবে এ আয়াতের তাফসীরে অন্য যে দু’টি উক্তি বর্ণিত হয়েছে, ঘটনা হিসেবে সে দু’টোও সম্পূর্ণ সত্য। মৃত্যুর ফেরেশতা এসে যাওয়ার পর আখেরাতের অবস্থা তার সামনে প্রকাশ হয়ে পড়ে। সে সময় প্রত্যেক ব্যক্তি সত্যকে সত্যরূপেই অনুধাবন করে থাকে। কিন্তু সে সময়ের ঈমান তার কোন উপকারে আসে না। এ সূরারই প্রথমদিকে রয়েছে (আরবী) অর্থাৎ “যারা অসৎ কাজ করতে থাকে, অবশেষে যখন তাদের কারও নিকট মৃত্যু উপস্থিত হয় তখন বলে-আমি এখন তাওবা করলাম, তার তাওবা গৃহীত হবে না।” (৪:১৮) আর এক জায়গায় আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “যখন তারা আমার শাস্তি অবলোকন করে তখন বলে—আমি এক আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করলাম।” (৪০:৮৪) তাদেরও সেই ঈমানে কোন উপকার হবে না।
অতএব এ দু’টি আয়াতকে সামনে রেখে আমরা বলি যে, ইমাম ইবনে জারীর শেষের উক্তি দু’টিকে যে খণ্ডন করেছেন, এটা তিনি ঠিক করেননি। তিনি যুক্তি দিয়ে বলেন যে, এ আয়াতের তাফসীরে যদি এ উক্তিদ্বয়কে সঠিক মেনে নেয়া হয় তবে সেই ইয়াহূদী বা খ্রীষ্টানদের আত্মীয়-স্বজন তার উত্তরাধিকারী না হওয়া অপরিহার্য হয়ে পড়ে। কেননা, সে তো তখন হযরত ঈসা (আঃ) ও হযরত মুহাম্মাদ (সঃ)-এর উপর ঈমান এনে মারা গেল, অথচ তার উত্তরাধিকারীগণ হচ্ছে ইয়াহুদী ও খ্রীষ্টান। আর মুসলমানের উত্তরাধিকারী কাফিরগণ হতে পারে না। কিন্তু আমরা বলি যে, এটা ঐ সময় প্রযোজ্য যখন সে এমন সময়ে ঈমান আনবে যে সময়ের ঈমান আল্লাহ তাআলার নিকট গৃহীত হয়। কিন্তু সে সময়ের ঈমান আনয়ন নয় যা একেবারে বৃথা যায়। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ)-এর উক্তির উপর গভীরভাবে চিন্তা করলে দেখা যায় যে, দেয়াল হতে পড়ে গিয়ে মৃত্যুবরণকারী, হিংস্র জন্তুর মুখে পড়ে মৃত্যু মুখে পতিত ব্যক্তি এবং তরবারির আঘাতে নিহত ব্যক্তিও বিশ্বাস স্থাপন করে থাকে।
আর এটা স্পষ্টকথা যে, এরূপ অবস্থায় ঈমান আনয়ন মোটেই কোন উপকারে আসতে পারে না, যেমন কুরআন কারীমে উপরোক্ত আয়াতদ্বয়ে এটাই প্রকাশ পাচ্ছে। আল্লাহ তা’আলাই সবচেয়ে ভাল জানেন। আমার ধারণায় তো এ কথা খুব পরিষ্কার যে, এ আয়াতের তাফসীরের পরবর্তী উক্তিদ্বয়কেও বিশ্বাসযোগ্যরূপে মেনে নিতে কোনই অসুবিধে নেই। ও দু’টোও স্ব-স্ব স্থানে ঠিকই আছে। কিন্তু হ্যাঁ, আয়াতের প্রকাশ্য ভাবার্থতো সেটাই যা প্রথম উক্তি। তাহলে ভাবার্থ এই যে, হযরত ঈসা (আঃ) আকাশে বিদ্যমান রয়েছেন। কিয়ামতের নিকটবর্তী সময়ে তিনি পৃথবীতে অবতরণ করবেন এবং ইয়াহুদী ও খ্রীষ্টান উভয় জাতিকেই মিথ্যাবাদী বলে ঘোষণা করবেন। আর যে ইফরাত ও ‘তাফরীত’ (খুবই বাড়িয়ে দেয়াকে ‘ইফরাত’ এবং খুবই নীচে নামিয়ে দেয়াকে ‘তাফরীত’ বলে) তারা করেছিল তাকেও তিনি বাতিল বলবেন। একদিকে রয়েছে অভিশপ্ত ইয়াহুদী দল যারা তাঁকে তাঁর প্রকৃত মর্যাদা হতে বহু নীচে নামিয়ে দিয়েছিল এবং তাঁর সম্পর্কে এমন জঘন্য উক্তি করেছিল যে, যা শুনতে ভাল মানুষ ঘৃণাবোধ করেন। অপরদিকে ছিল খ্রীষ্টান জাতি, যারা তার মর্যাদা এত বেশী বাড়িয়ে দিয়েছিল যে, যা তাঁর মধ্যে ছিল না তাই তারা তাঁর মধ্যে আনয়ন করেছিল এবং তাঁকে নবুওয়াতের পর্যায় হতে প্রভুত্বের পর্যায়ে পৌছিয়ে দিয়েছিল। যা হতে মহান আল্লাহর সত্তা সম্পূর্ণরূপে পবিত্র।
এখন ঐ সব হাদীসের বর্ণনা দেয়া হচ্ছে যেগুলোর মধ্যে রয়েছে যে, হযরত ঈসা (আঃ) শেষ যুগে কিয়ামতের পূর্বে আকাশ হতে পৃথিবীতে অবতরণ করবেন এবং অংশীবিহীন এক আল্লাহর ইবাদতের দিকে মানুষকে আহবান করবেন। ইমাম বুখারী (রঃ) স্বীয় হাদীস গ্রন্থ ‘সহীহের’ (আরবী)-এর মধ্যে এ হাদীসটি এনেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “যে আল্লাহর হাতে আমার প্রাণ রয়েছে, তার শপথ! অতিসত্বরই তোমাদের মধ্যে ইবনে মারইয়াম (আঃ) অবতীর্ণ হবেন। তিনি ন্যায়পরায়ণ শাসকরূপে ক্রুশকে ভেঙ্গে ফেলবেন, শূকরকে হত্যা করবেন এবং জিযিয়া কর উঠিয়ে দেবেন। সম্পদ এত বৃদ্ধি পাবে যে, তা গ্রহণ করতে কেউ সম্মত হবে না। একটি সিজদা করে নেয়া দুনিয়া ও দুনিয়ার সমুদয় জিনিস হতে প্রিয়তর হবে। অতঃপর হাদীসটির বর্ণনাকারী হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) বলেনঃ “তোমরা ইচ্ছে করলে। (আরবী)-এ আয়াতটি পাঠ কর। অর্থাৎ আহলে কিতাবের মধ্যে প্রত্যেকেই তার মৃত্যুর পূর্বে তার উপর (ঈসা আঃ -এর উপর) অবশ্যই বিশ্বাস স্থাপন করবে এবং সে কিয়ামতের দিন তাদের উপর সাক্ষী হবে। সহীহ মুসলিমেও এ হাদীসটি বর্ণিত আছে। অন্য সনদে এ বর্ণনাটি সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমের মধ্যে রয়েছে, তাতে এও আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “সে সময় সিজদাহ শুধু বিশ্ব প্রভু আল্লাহর জন্যেই হবে। তারপর হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) বলেনঃ ‘তোমরা ইচ্ছে করলে পাঠ কর (আরবী) তাঁর মৃত্যুর পূর্বে অর্থাৎ হযরত ঈসা ইবনে মারইয়াম (আঃ)-এর মৃত্যুর পূর্বে। অতঃপর হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) তিনবার এর পুনরাবৃত্তি করেন।
মুসনাদ-ই-আহমাদের হাদীসে রয়েছে যে, হযরত ঈসা (আঃ) ‘ফাজ্জেরাওহা প্রান্তরে হজ্বের উপর বা উমরার উপর অথবা হজ্ব ও উমরা দু’টোর উপরই লাব্বায়েক বলবেন। এ হাদীসটি সহীহ মুসলিমেও রয়েছে। মুসনাদ-ই-আহমাদের অন্য হাদীসে রয়েছে যে, হযরত ইবনে মারইয়াম অবতরণ করবেন, শূকরকে হত্যা করবেন, ক্রুশকে নিশ্চিহ্ন করবেন, নামায জামাআতের সঙ্গে হবে এবং আল্লাহ তাআলার পথে সম্পদ এত বেশী প্রদান করা হবে যে, কোন গ্রহণকারী পাওয়া যাবে না। তিনি খাজনা ছেড়ে দেবেন, রওহায় গমন করবেন এবং তথা হতে হজ্ব বা উমরা পালন করবেন অথবা একই সাথে দুটোই করবেন।
অতঃপর হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) উপরোক্ত আয়াতটি পাট করেন। কিন্তু তার ছাত্র হযরত হানযালা (রঃ)-এর ধারণা এই যে, হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) বলেনঃ “হযরত ঈসা (আঃ)-এর ইন্তিকালের পূর্বে আহলে কিতাব তার উপর বিশ্বাস স্থাপন করবে।” হযরত হানযালা (রঃ) বলেনঃ “আমার জানা নেই যে, এগুলো হাদীসেরই শব্দ, না হযরত আবূ হুরাইরা (রাঃ)-এর নিজের কথা।” সহীহ বুখারীর মধ্যে হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “ঐ সময় তোমাদের কি অবস্থা হবে যখন হযরত ঈসা (আঃ) তোমাদের মধ্যে অবতীর্ণ হবেন এবং তোমাদের ইমাম তোমাদের মধ্য হতেই হবে?”
সুনান-ই-আবি দাউদ, মুসনাদ-ই-আহমাদ প্রভৃতির মধ্যে রয়েছে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ নবীগণ (আঃ) সবাই বৈমাত্রেয় ভাই, তাদের মা বিভিন্ন বটে, কিন্তু ধর্ম একই। হযরত ঈসা (আঃ)-এর বেশী নিকটবর্তী আমিই। কেননা, তাঁর ও আমার মধ্যে কোন নবী নেই। তিনি অবতীর্ণ হবেন, তোমরা তাঁকে চিনে নাও। তিনি হবেন মধ্যম দেহ বিশিষ্ট ও শ্বেত রক্তিম বর্ণের। তিনি দুটি মিসরীয় কাপড় পরিহিত থাকবেন। তাঁর মস্তক হতে পানির ফোটা ঝরে ঝরে পড়বে যদিও পানিতে সিক্ত হবেন না। তিনি ক্রুশ ভেঙ্গে ফেলবেন, শূকরকে হত্যা করবেন, জিযিয়া কর গ্রহণ করবেন না এবং মানুষকে ইসলামের দিকে আহ্বান করবেন। তার যুগে সমস্ত ধর্ম বিলুপ্ত হয়ে যাবে। শুধু ইসলাম ধর্মই থাকবে। তার যুগে আল্লাহ আআলা মাসীহ দাজ্জালকে ধ্বংস করবেন। অতঃপর সারা জগতে নিরাপত্তা বিরাজ করবে। এমনকি কৃষ্ণ সর্প উটের সঙ্গে, চিতা ব্যাঘ্র গাভীর সঙ্গে এবং নেকড়ে বাঘ ছাগলের সঙ্গে চরে বেড়াবে। শিশুরা সাপের সাথে খেলা করবে। তারা তাদের কোন ক্ষতি করবে না। তিনি চল্লিশ বছর পর্যন্ত পৃথিবীতে অবস্থান করবেন। অতঃপর তিনি মৃত্যুমুখে পতিত হবেন এবং মুসলমানেরা তার জানাযার নামায পড়াবে।
তাফসীর-ই-ইবনে জারীরের এ বর্ণনায় রয়েছে যে, তিনি ইসলামের জন্যে লোকের সঙ্গে জিহাদ করবেন। এ হাদীসের একটি অংশ সহীহ বুখারীর মধ্যেও রয়েছে। অন্য একটি বর্ণনায় আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ, “দুনিয়া ও আখিরাতে হযরত ঈসা (আঃ)-এর বেশী নিকটবর্তী আমিই।” সহীহ মুসলিমে হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ কিয়ামত সংঘটিত হবে না যে পর্যন্ত রোমকগণ ‘আ’মাক’ বা ‘দাবিকে অবতরণ না করবে এবং তাদের মোকাবিলায় মদীনা হতে মুসলিম সেনাবাহিনী গমন না করবে। সে সময় ঐ মুসলমানেরা সারা দুনিয়ার লোকের মধ্যে আল্লাহ তা’আলার নিকট সবচেয়ে বেশী প্রিয়পাত্র হবে।
যখন তারা সারি বেঁধে দাঁড়িয়ে যাবে তখন রোমকগণ তাদেরকে বলবে‘আমরা তোমাদের সাথে যুদ্ধ করতে চাইনে। আমাদের মধ্য হতে যারা ধর্মান্তরিত হয়ে তোমাদের নিকট চলে এসেছে আমরা তাদের সাথে যুদ্ধ করতে চাই। তোমরা তাদের মধ্য হতে সরে যাও।’ তখন মুসলমানেরা বলবেআল্লাহর শপথ! এটা কখনও হতে পারে না যে, আমরা আমাদের দুর্বল ভাইদেরকে তোমাদের হাতে সমর্পণ করে দেবো। অতঃপর যুদ্ধ শুরু হয়ে যাবে। ঐ মুসলিম সেনাবাহিনীর এক তৃতীয়াংশ পরাজিত হয়ে পলায়ন করবে। তাদের তাওবা আল্লাহ তা’আলা কখনও গ্রহণ করবেন না। এক তৃতীয়াংশ শহীদ হয়ে যাবে। তারা আল্লাহ তা’আলার কাছে সবচেয়ে উত্তম শহীদ। কিন্তু শেষ তৃতীয়াংশ রোমকদের উপর জয়লাভ করবে। এরপর তারা আর কোন হাঙ্গামায় পতিত হবে না।
তারা (মুসলমানেরা) কনস্টান্টিনোপল জয় করবে। তারা যায়তুন বৃক্ষের উপর নিজেদের তরবারী ঝুলিয়ে রেখে যুদ্ধলব্ধ মাল বন্টন করতে থাকবে। এমন সময় শয়তান চীৎকার করে বলবেঃ “তোমাদের সন্তানদের মধ্য দাজ্জাল এসে গেছে। তারা এ মিথ্যা কথাকে সত্য মনে করে এখান হতে বেরিয়ে সিরিয়ায় পৌছে শত্রুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার উদ্দেশ্যে ব্যুহ ঠিক করতে থাকবে? এমন সময় অন্যদিকে নামাযের ইকামত হবে এবং হযরত ঈসা ইনে। মারইয়াম (আঃ) অবতীর্ণ হয়ে তাদের ইমামতি করবেন। শত্রু বাহিনী যখন মুসলমানদেরকে দেখবে তখন তারা গলে যাবে যেমন লবণ পানিতে গলে যায়। যদি হযরত ঈসা (আঃ) তাদেরকে ছেড়েও দেন তবুও তারা গলে গলেই শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু আল্লাহ তাআলা তার হাতে তাদেরকে হত্যা করাবেন এবং হযরত ঈসা (আঃ) স্বীয় বর্শার রক্ত তাদেরকে দেখাবেন।
মুসনাদ-ই-আহমাদ,ও সুনান-ই-ইবনে মাজায় রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ মিরাজের রাত্রে আমি হররত ইবরাহীম (আঃ), হযরত মূসা (আঃ) এবং হযরত ঈসা (আঃ)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছি। তারা পরস্পরের মধ্যে কিয়ামত সম্পর্কে আলোচনা করতে থাকেন। হযরত ইবরাহীম (আঃ) বলেনঃ ‘এ সম্পর্কে আমার কিছুই জানা নেই।’ হযরত মূসা (আঃ)-ও এরূপই বলেন। কিন্তু হযরত ঈসা (আঃ) বলেনঃ “এর সঠিক জ্ঞান আল্লাহ তাআলা ছাড়া আর কারও নেই। হ্যা, তবে আমার প্রভু আমার নিকট যে অঙ্গীকার করেছেন তা এই যে, দাজ্জাল বের হবে। দু’টি দল তার সঙ্গী হবে। সে আমাকে দেখে এমনভাবে গলে যাবে যেমনভাবে সীসা গলে যায়। আল্লাহ তা’আলা তাকে ধ্বংস করে দেবেন। এমন কি পাথর ও গাছ বলবে-হে মুসলমান! এখানে আমার পিছনে একটি কাফির আছে, তাকে হত্যা কর। সুতরাং আল্লাহ তা’আলা তাদের সকলকে ধ্বংস করবেন এবং মানুষ শান্তি ও নিরাপত্তার সাথে নিজ নিজ গ্রাম ও শহরে ফিরে যাবে। তারপরে ইয়াজুয ও মাজুয বের হবে এবং চতুর্দিক হতে তারা আক্রমণ চালাবে। সমস্ত শহরকে তারা ধ্বংস করবে। যেসব স্থান তারা অতিক্রম করবে ঐ সবই ধ্বংস করে দেবে। যে পানির পার্শ্ব দিয়ে তারা গমন করবে তার সবই পান করে নেবে। লোকেরা পুনরায় আমার নিকট ফিরে আসবে। আমি আল্লাহ তা’আলার নিকট প্রার্থনা করবো। তিনি তখন তাদের সকলকেই একই সাথে ধ্বংস করে দেবেন। কিন্তু তাদের মৃত দেহের দুর্গন্ধে বাতাস দুর্গন্ধযুক্ত হয়ে পড়বে। ফলে চতুর্দিকে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়বে। অতঃপর এত বেশী বৃষ্টি বর্ষিত হবে যে, ঐ সমস্ত মৃতদেহকে ভাসিয়ে নিয়ে গিয়ে সমুদ্রে নিক্ষেপ করবে। সে সময় কিয়ামতের সংঘটন এত নিকটবর্তী হবে যেমন পূর্ণ গর্ভবতী নারীর অবস্থা হয়ে থাকে যে, সকালে হবে কি সন্ধ্যায় হবে বা দিনে হবে কি রাত্রে হবে তা তার বাড়ীর লোকেরা জানতে পারে না।”
মুসনাদ-ই-আহমাদে রয়েছে, হযরত আবু নায়রা (রাঃ) বলেনঃ “আমরা জুমআর দিন হযরত উসমান ইবনে আবুল আস (রাঃ)-এর নিকট আগমন করি, আমার লিখিত কুরআন কারীমকে তাঁর পঠনের সঙ্গে মিলিয়ে নেয়াই আমার তাঁর নিকট আগমনের একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল। জুমআর নামাযের সময় হলে তিনি আমাদেরকে বলেনঃ “গোলস করুন। তারপর তিনি সুগন্ধি নিয়ে আসেন। আমরা সুগন্ধি মেখে মসজিদে হাযির হই এবং একটি লোকের পার্শ্বে বসে পড়ি। এ লোকটি দাজ্জালের হাদীস বর্ণনা করছিলেন। অতঃপর হযরত উসমান ইবনে আবুল আস (রাঃ)-কে বলতে শুনেছি, মুসলমানদের তিনটি শহর হবে, একটি হবে দু’টি সমুদ্রের মিলিত হওয়ার জায়গায়, দ্বিতীয়টি হবে হীরায় এবং তৃতীয়টি হবে সিরিয়ায়।
তারপর মানুষ তিনটি সন্ত্রাসের সম্মুখীন হবে। অতঃপর দাজ্জাল বহির্গত হবে। তারা প্রথম শহরটিতে যাবে। তথাকার লোক তিন অংশে বিভক্ত হবে। এক অংশ বলবে- আমরা তাদের মোকাবিলা করবো এবং কি সংঘটিত হয় তা দেখবো। দ্বিতীয় দলটি গ্রামের লোকের সঙ্গে মিলিত হয়ে যাবে এবং তৃতীয় দল তাদের নিকটবর্তী শহরে চলে যাবে। দাজ্জালের সঙ্গে সত্তর হাজার লোক থাকবে। তাদের মাথায় মুকুট থাকবে। তাদের অধিকাংশই হবে ইয়াহুদী ও স্ত্রীলোক। এখানকার মুসলমানগণ একটি ঘাঁটিতে অবরুদ্ধ হবে।
তাদের গৃহপালিত পশুগুলো মাঠে চরতে গিয়েছিল ঐগুলোও ধ্বংস হয়ে যাবে। সুতরাং তাদের বিপদ খুব বৃদ্ধি পেয়ে যাবে। ক্ষুধার তাড়নায় তাদের অবস্থা অত্যন্ত সংকটময় হয়ে পড়বে। এমনকি তারা তাদের কামানের তারগুলো পুড়িয়ে পুড়িয়ে খেতে থাকবে। এরূপ সংকটময় অবস্থায় সমুদ্রের মধ্য হতে তাদের কানে শব্দ আসবে- হে লোক সকল! তোমাদের জন্যে সাহায্য এসে গেছে। এ শব্দ শুনে লোকগুলো খুব খুশী হবে। কেননা, তারা বুঝতে পারবে যে, এটা কোন পরিতৃপ্ত ব্যক্তির কথা।
ঠিক ফজরের নামাযের সময় ঈসা ইবনে মারইয়াম (আঃ) অবতীর্ণ হবেন। মুসলমাদের আমীর তাঁকে বলবেন- “হে রূহুল্লাহ (আঃ)! আগে বাড়ুন এবং নামায পড়িয়ে দিন। কিন্তু তিনি বলবেনঃ ‘এ উম্মতের কিছু সংখ্যক লোক কিছু সংখ্যক লোকের আমীর রয়েছে। সুতরাং এ দলের আমীরই তাদের নামাযের ইমাম হবে। অতএব, তাদের আমীরই ইমাম হয়ে নামায পড়াবেন। নামায শেষ করেই হযরত ঈসা (আঃ) বর্শা হাতে নিয়ে মাসীহ দাজ্জালের দিকে অগ্রসর হবেন। দাজ্জাল তাঁকে দেখামাত্রই সীসার মত গলতে থাকবে। তিনি তার বক্ষে আঘাত করবেন। ঐ আঘাতেই সে ধ্বংস হয়ে যাবে এবং তার সঙ্গীরা পরাজিত হয়ে পলায়ন করবে। কিন্তু কোন স্থানেই তারা নিরাপত্তা লাভ করতে পারবে না। এমনকি তারা যদি কোন গাছের আড়ালে লুকিয়ে থাকে তবে সেই গাছও বলবে-“হে মুমিন! একটি কাফির আমার নিকট লুকিয়ে রয়েছে।’ এ কথা পাথরও বলবে।
সুনান-ই-ইবনে মাজায় রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাঁর এক ভাষণের কম বেশী অংশ দাজ্জালের ঘটনা বর্ণনায় এবং সে দাজ্জাল হতে ভয় প্রদর্শনেই কাটিয়ে দেন। সে ভাষণে তিনি একথাও বলেনঃ দুনিয়ার প্রথম হতে শেষ পর্যন্ত এর অপেক্ষা বড় হাঙ্গামা আর নেই। সমস্ত নবী (আঃ) নিজ নিজ উম্মতকে সতর্ক করে গেছেন। আমি সর্বশেষ নবী এবং তোমরা সর্বশেষ উম্মত। সে নিশ্চিতরূপে তোমাদের মধ্যেই আসবে। যদি আমার জীবদ্দশায় সে এসে পড়ে তবে তো আমি তাকে বাধা দান করবো। আর যদি আমার পরে আসে তবে প্রত্যেক ব্যক্তিকে তার আক্রমণ হতে নিজেকে বাঁচাতে হবে। আমি আল্লাহ তা’আলাকেই প্রত্যেক মুসলমানের অভিভাবক করে যাচ্ছি। সে সিরিয়া ও ইরাকের মধ্যবর্তী স্থানে বের হবে। সে ডান ও বামে খুব ঘুরাফেরা করবে। হে জনমণ্ডলী ও হে আল্লাহর বান্দাগণ! দেখ, তোমরা অটল থাকবে। জেনে রেখো, আমি তোমাদেরকে তার এমন পরিচয় জানিয়ে দিচ্ছি যা অন্য কোন নবী স্বীয় উম্মতকে জানিয়ে যাননি। সে প্রথমতঃ দাবী করবে-আমি নবী। সুতরাং তোমরা স্মরণ রেখো যে, আমার পরে কোন নবী নেই। অতঃপর এর চেয়েও বেড়ে গিয়ে বলবে-“আমি আল্লাহ’। অতএব তথায় তোমরা জেনে রেখো যে, আল্লাহকে এই চোখে কেউ দেখতে পারে না। মৃত্যুর পর তথায় তার দর্শন লাভ ঘটতে পারে। আরও স্মরণ রেখো যে, সে এক চক্ষু বিশিষ্ট হবে এবং তোমাদের প্রভু এক চক্ষু বিশিষ্ট নন। তার চক্ষুদ্বয়ের মধ্যবর্তী স্থানে কাফির’ লিখিত থাকবে যা প্রত্যেক শিক্ষিত অশিক্ষিত মোটকথা প্রত্যেক ঈমানদারই পড়তে পারবে।
তার সাথে আগুন থাকবে ও বাগান থাকবে। তার আগুন হবে আসলে জান্নাত এবং বাগানটি হবে প্রকৃতপক্ষে জাহান্নাম। তোমাদের মধ্যে যাকে সে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবে সে যেন আল্লাহ তা’আলার নিকট সাহায্য প্রার্থনা করে এবং সূরা-ই-কাহাফের প্রাথমিক আয়াতগুলো পাঠ করে। ঐ আগুন তার জন্যে ঠাণ্ডা ও শান্তিদায়ক হয়ে যাবে। যেমন হযরত ইবরাহীম (আঃ)-এর উপর নমরূদের আগুন শান্তিদায়ক হয়েছিল। তার এক হাঙ্গামা এও হবে যে, সে এক বেদুঈনকে বলবে-“আমি যদি তোমার মৃত পিতা-মাতাকে জীবিত করতে পারি তবে কি তুমি আমাকে প্রভু বলে স্বীকার করবে?’ এমন সময়ে দু’জন শয়তান তার পিতা-মাতার আকারে প্রকাশিত হবে এবং তাকে বলবে-বৎস! এটাই তোমার প্রভু। সুতরাং তাকে মেনে নাও।’
তার আর একটা ফিত্না এও হবে যে, তাকে একটি লোকের উপর জয়যুক্ত করা হবে। সে তাকে করাত দ্বারা ফেড়ে দু’টুকরো করে দেবে। তারপর সে জনগণকে বলবেঃ আমার এ বান্দাকে তোমরা দেখ, এখন আমি তাকে জীবিত করবো। কিন্তু সে পুনরায় এ কথাই বলবে যে, তার প্রভু আমি ছাড়া অন্য কেউ। অতঃপর এ দু’ দুবৃত্ত তাকে উঠা-বসা করাবে এবং বলবেঃ তোমার প্রভু কে? সে উত্তরে বলবেঃ আমার প্রভু আল্লাহ এবং তুমি তার শত্রু দাজ্জাল। আল্লাহর শপথ! এখন তো আমার পূর্বাপেক্ষাও বেশী বিশ্বাস হয়েছে। অন্য সনদে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ ‘এ মুমিন ব্যক্তি আমার উম্মতের মধ্যে সবচেয়ে উচ্চ শ্রেণীর জান্নাতের অধিকারী হবে। হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, এ হাদীসটি শুনে আমাদের ধারণা হয় যে, এ লোকটি হযরত উমার ইবনে খাত্তাবই (রাঃ) হবেন, তাঁর শাহাদাত লাভ পর্যন্ত আমাদের ধারণা এটাই ছিল। রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ তার একটি হাঙ্গামা এও হবে যে, সে আকাশকে পানি বর্ষণ করার নির্দেশ দেবে এবং আকাশ হতে পানি বর্ষিত হবে। সে যমীনকে ফসল উৎপাদন করার নির্দেশ দেবে এবং যমীন হতে ফসল উৎপাদিত হবে।
তার আর একটি ফিত্না এও হবে যে, সে একটি গোত্রের নিকট যাবে এবং তারা তাকে বিশ্বাস করবে না। সে সময়ই তাদের সমস্ত জিনিস ধ্বংস হয়ে যাবে। অতঃপর সে অন্য গোত্রের নিকট যাবে। তৎক্ষণাৎ তার হুকুমে আকাশ। হতে বৃষ্টি বর্ষিত হবে এবং যমীনে ফলস উৎপাদিত হবে। তাদের গৃহপালিত পশু পূর্বাপেক্ষা বেশী মোটা-তাজা ও দুগ্ধবতী হয়ে যাবে। তারা মক্কা ও মদীনা ছাড়া যমীনের সমস্ত জায়গায় ঘুরে বেড়াবে। যে যখন মদীনামুখী হবে তখন সারা পথে সে তরবারীধারী ফেরেশতাগণকে দেখতে পাবে। সে তখন ‘সানতার শেষ প্রান্তে, যারীবে আহমারের নিকট থেমে যাবে। অতঃপর মদীনায় তিনটি ভূমিকম্প হবে। ফলে মদীনায় যত মুনাফিক নর ও নারী থাকবে সবাই মদীনা হতে বেরিয়ে গিয়ে দাজ্জালের সেনাবাহিনীর সাথে মিলিত হয়ে যাবে। এভাবে মদীনা নিজের মধ্য হতে অপবিত্র লোকদেরকে দূর করে দেবে যেমন লোহার ভাটা লোহার মরিচা দূর করে থাকে। সেদিনের নাম হবে ‘ইয়াওমুল খালাস’ (মুক্তির দিন)।
হযরত উম্মে শুরায়েক (রাঃ) রাসূলুরলাহ (সঃ)-কে জিজ্ঞেস করেন, “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! সেদিন আরববাসী কোথায় থাকবে?” রাসূলুল্লাহ (সঃ) উত্তরে বলেনঃ প্রথমতঃ তারা থাকবেই খুব কম এবং তাদের অধিকাংশই থাকবে বাইতুল মুকাদ্দাসে। তাদের ইমাম হবে একজন সৎ ব্যক্তি। সে ফজরের নামায পড়াতে থাকবে এমন সময় হযরত ঈসা ইবনে মারইয়াম (আঃ) অবতীর্ণ হবেন। ঐ ইমাম তখন পিছনে সরতে থাকবে যেন ঈসা (আঃ) ইমামতি করেন। কিন্তু তিনি তার স্কন্ধে হাত রেখে বলবেনঃ “তুমি সামনে এগিয়ে নামায পড়িয়ে দাও, ইকামত তোমার জন্যেই দেয়া হয়েছে। সুতরাং তাদের ইমামই নামায পড়িয়ে দেবে। নামায শেষে তিনি বলবেনঃ দরজা খুলে দাও। দরজা খুলে দেয়া হবে। এদিকে দাজ্জাল সত্তর হাজার সৈন্য নিয়ে হাযির হবে। তাদের মস্তকে মুকুট থাকবে এবং তাদের তরবারীর উপর সোনা থাকবে। দাজ্জাল তাঁকে দেখে এমনভাবে গলতে থাকবে যেমনভাবে পানিতে লবণ গলে থাকে। অতঃপর সে পৃষ্ঠ প্রদর্শন করতঃ পালাতে শুরু করবে। কিন্তু তিনি বলবেনঃ ‘আল্লাহ তাআলা এটা নির্ধারণ করে দিয়েছেন যে, তুমি আমার হাতেই একটা মার খাবে, সুতরাং ওটা হতে রক্ষা পেতে পার না। অতএব, তিনি তাকে পূর্ব দরজা লুদ-এর নিকট ধরে নেবেন এবং সেখানেই তাকে হত্যা করে ফেলবেন। তখন ইয়াহূদীরা হতবুদ্ধি হয়ে যাবে এবং ছত্রভঙ্গ হয়ে পলায়ন করবে। কিন্তু তারা কোথাও মাথা লুকানোর জায়গা পাবে না। প্রত্যেক পাথর, বৃক্ষ, দেয়াল ও জীবজন্তু বলতে থাকবেঃ “হে মুসলমান! এখানে ইয়াহুদী রয়েছে। এসে তাকে হত্যা কর।” তবে বাবলা গাছ হচ্ছে ইয়াহূদীদের গাছ। সে কিন্তু বলবে না।
রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “সে চল্লিশ বছর পর্যন্ত থাকবে। বছর হবে অর্ধ বছরের মত, বছর হবে মাসের মত, মাস হবে জুম’আর মত এবং শেষ দিনগুলো হবে ‘শারারার মত। তোমাদের কোন লোক সকালে শহরের একটি দরজা হতে চলতে আরম্ভ করে দ্বিতীয় দরজায় পৌছতে পারবে না। এমন সময়েই সন্ধ্যা হবে যাবে।” জনগণ জিজ্ঞেস করেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! ঐ ছোট দিনগুলোতে আমরা কিভাবে নামায আদায় করবো?” তিনি বলেনঃ “তোমরা এ দীর্ঘ দিনগুলোতে যেমনভাবে অনুমান করে নামায পড়ছো, তখনও সেভাবেই অনুমান করে নামায পড়বে।”
অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “তারপর হযরত ঈসা (আঃ) আমার উম্মতের মধ্যে শাসনকর্তা হবেন, ন্যায়পরায়ণ হবেন, ইমাম হবেন এবং ন্যায় বিচারক হবেন। তিনি ক্রুশ ভেঙ্গে ফেলবেন, শূকরকে হত্যা করবেন এবং জিযিয়া কর উঠিয়ে দেবেন। তিনি সাদকা গ্রহণ করবেন না। সুতরাং ছাগল ও উটের উপর কোন চেষ্টা করা হবে না। হিংসা বিদ্বেষ সম্পূর্ণরূপে বিদূরিত হবে। প্রত্যেক বিষাক্ত প্রাণীর বিষক্রিয়া নষ্ট করে দেয়া হবে। শিশু স্বীয় অঙ্গুলি সাপের মুখে প্রবেশ করাবে। কিন্তু ওটা তার কোন ক্ষতি করবে না। ছেলেরা সিংহের সাথে খেলা করবে, অথচ তাদের কোন বিপদ ঘটবে না। নেকড়ে বাঘ ছাগলের সঙ্গে এমন গলায় গলায় মিলে থাকবে যে, যেন সে পাহারাদার কুকুর। সমগ্র জগৎ ইসলাম ও ন্যায়নীতিতে এমনভাবে পরিপূর্ণ হয়ে যাবে যেমনভাবে বর্তন পানিতে পরিপূর্ণ হয়। সকলের একই কালেমা’ হয়ে যাবে। আল্লাহ ছাড়া আর কারও ইবাদত করা হবে না। যুদ্ধবিগ্রহ সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে যাবে। কুরাইশ স্বীয় রাজ্য ছিনিয়ে নেবে। পৃথিবী সাদা চাদির ন্যায় উজ্জ্বল হয়ে উঠবে। হযরত আদম (আঃ)-এর বরকতময় যুগের ন্যায় ফসল উৎপাদিত হবে। একটা দলের পরিতৃপ্তির জন্যে এক গুচ্ছ আঙ্গুরই যথেষ্ট হবে। এক একটি ডালিম ফল এত বড় হবে যে, একটি দল একটি ডালিম খেয়ে পরিতৃপ্ত হয়ে যাবে। বলদ এরূপ মূল্যে পাওয়া যাবে’ (অর্থাৎ বলদের মূল্য খুব বেশী হবে) এবং ঘোড়া কতগুলো দিরহামের বিনিময়েই পাওয়া যাবে।”
জনগণ জিজ্ঞেস করলেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! ঘোড়ার মূল্য হ্রাস পাওয়ার কারণ কি?” তিনি বলেনঃ “কেননা, যুদ্ধে ওর সোয়ারী মোটেই নেয়া হবে না। তারা প্রশ্ন করেনঃ “বলদের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ার কারণ কি?” তিনি বলেনঃ “কেননা, সমগ্র পৃথিবীতে কৃষিকার্য শুরু হয়ে যাবে।” দাজ্জাল প্রকাশিত হওয়ার তিন বছর পূর্বেই ভীষণ দুর্ভিক্ষ দেখা দেবে। প্রথম বছরে বৃষ্টির এক তৃতীয়াংশ আল্লাহ তা’আলার নির্দেশক্রমে বন্ধ করে দেয়া হবে। তারপরে ভূমির উৎপাদনেরও এক তৃতীয়াংশ কমে যাবে। অতঃপর দ্বিতীয় বছরে আকাশকে নির্দেশ দেয়া হবে যে, সে যেন বৃষ্টি দুই তৃতীয়াংশ বন্ধ রাখে এবং এ নির্দেশ ভূমিকেও দেয়া হবে যে, সে যেন উৎপাদনের দুই তৃতীয়াংশ কম করে। তৃতীয় বছর আকাশ হতে বৃষ্টির এক ফোটাও বর্ষিত হবে না। অনুরূপভাবে ভূমিতে একটি চারাগাছও জন্ম নেবে না। সমস্ত জীবজন্তু এ দুর্ভিক্ষে ধ্বংস হয়ে যাবে।
কিন্তু আল্লাহ তা’আলা যাকে রক্ষা করবেন সেই রক্ষা পাবে। তাকে জিজ্ঞেস করা হয় তাহলে সে সময় মানুষ কিরূপে জীবিত থাকবে?’ তিনি বলেনঃ “সে সময় তাদের খাদ্যের স্থলবর্তী হবে তাদের লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলা, আল্লাহু আকবার উচ্চারণ করা, সুবহানাল্লাহ পাঠ করা এবং আলহামদুল্লিাহ বলা।” ইমাম ইবনে মাজা (রঃ) বলেন, আমার উস্তাদ তাঁর উস্তাদ হতে শুনেছেন, তিনি বলতেনঃ “এ হাদীসটি এ যোগ্যতা রাখে যে, শিশুদের শিক্ষক শিশুদেরকেও এটা শিক্ষা দেবেন, এমনকি লিখিয়ে দেবেন, যেন তাদেরও এটা স্মরণ থাকে।” এ হাদীসটি এ সম্বন্ধে গারীব বটে, কিন্তু এর কোন কোন অংশের প্রমাণ স্বরূপ অন্য হাদীসও রয়েছে। এ হাদীসের মতই একটি হাদীস হযরত নাওয়াস ইবনে সামআন (রাঃ) বর্ণনা করেছেন। আমরা ওটাও এখানে বর্ণনা করছি।
সহীহ মুসলিম শরীফে হযরত নাওয়াস ইবনে শামআন (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সঃ) একদা সকালে দাজ্জালের বর্ণনা দেন এবং এমনভাবে তাকে উঁচু ও নীচু করেন যে, আমাদের মনে হয় না জানি সে মদীনার খেজুরের বাগানেই বিদ্যমান রয়েছে। অতঃপর আমরা তাঁর নিকট ফিরে আসলে আমাদের চেহারা দেখে আমাদের মনের অবস্থা বুঝে নেন এবং জিজ্ঞেস করেনঃ “ব্যাপার কি?” তখন আমরা তা বর্ণনা করলে তিনি বলেনঃ “তোমাদের উপর দাজ্জালের চেয়েও আর একটা বেশী ভয় রয়েছে। আমার বিদ্যমানতায় যদি সে বের হয় তবে আমি তাকে বুঝে নেবো। কিন্তু যদি আমার পরে সে বের হয় তবে প্রত্যেক মুসলমানকেই তাকে বাধা দিতে হবে। আমি মহান আল্লাহকেই প্রত্যেক মুসলমানের প্রতিনিধি বানিয়ে দিয়েছি। জেনে রেখো, সে যুবক হবে, টেরা চক্ষু বিশিষ্ট হবে। এটুকু বুঝে নাও যে, সে দেখতে অনেকটা আবদুল উয্যা ইবনে কাতনের মত হবে। তোমাদের যে তাকে দেখবে সে যেন সূরা-ই-কাহাফের প্রাথমিক আয়াতগুলো পাঠ করে। সে সিরিয়া ও ইরাকের মধ্যবর্তী প্রান্ত হতে বের হবে এবং ডানে-বামে ঘুরে বেড়াবে। হে আল্লাহর বান্দারা! তোমরা (ঈমানের উপরে) খুব অটল থাকবে।” আমরা জিজ্ঞেস করলামঃ হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! সে কতদিন অবস্থান করবে। তিনি বললেনঃ “চল্লিশ দিন। এক দিন হবে এক বছরের সমান, এক দিন হবে এক মাসের সমান, একদিন হবে এক জুমআর সমান এবং অবশিষ্ট দিনগুলো তোমাদের সাধারণ দিনগুলোর মত হবে।”
অতঃপর আমরা জিজ্ঞেস করি, যে দিনটি এক বছরের সমান হবে সেদিনে কি একদিনের নামাযই যথেষ্ট হবে? তিনি বলেনঃ না, বরং তোমরা অনুমান করে নেবে। আমরা পুনরায় জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! তাদের চলন গতি কিরূপ দ্রুত হবে? তিনি বলেনঃ মেঘ যেমন বাতাসে তাড়িত হয়ে চলতে থাকে। সে একটি গোত্রকে নিজের দিকে আহ্বান করবে। তারা তাকে মেনে নেবে। তখন তাদের উপর আকাশ হতে বৃষ্টি বর্ষিত হবে, যমীন হতে ফলস উৎপাদিত হবে এবং তাদের গৃহপালিত পশুগুলো মোটা তাজা হয়ে যাবে ও খুব বেশী দুধ দেবে। সে আর এক সম্প্রদায়ের নিকট যাবে। তারা তাকে মিথ্যাবাদী বলবে ও অস্বীকার করবে। সে সেখান হতে ফিরে আসবে। তখন তাদের হাতে মাল-ধন কিছুই থাকবে না। সে অনুর্বর ভূমির উপর দাঁড়িয়ে নির্দেশ দেবে, “হে যমীন! তোমার ধনাগারকে বের করে দাও।” তখন যমীনের মধ্য হতে ধন-ভাণ্ডার বেরিয়ে আসবে।
সে তখন মৌমাছির মত ঐ ধনের পিছনে পিছনে ফিরতে থাকবে। সে একজন নব্য যুবককে আহ্বান করবে এবং তাকে হত্যা করতঃ দু’টুকরো করে এতদূরে নিক্ষেপ করবে যতো দূরে একটি তীর চলে থাকে। তারপরে তাকে ডাক দেবে এবং সে তখন জীবিত হয়ে হাসতে হাসতে তার নিকট চলে। আসবে। তখন আল্লাহ তাআলা হযরত ঈসা (আঃ)-কে পাঠিয়ে দেবেন। তিনি। দু’টি চাদর পরিহিত হয়ে দু’জন ফেরেশতার ডানার উপর হাত রেখে দামেস্কের পূর্বদিকের সাদা স্তম্ভের নিকট অবতরণ করবেন। যখন তিনি মস্তক কুঁকাবেন তখন তার মস্তক হতে ফোঁটা ফোঁটা হয়ে পানি ঝরে পড়বে এবং যখন তিনি মস্তক উত্তোলন করবেন তখন ঐ ফোটাগুলো মুক্তার মত গড়িয়ে পড়বে। যে কাফির পর্যন্ত তার শ্বাস পৌছবে, সে মরে যাবে এবং তার শ্বাস ঐ পর্যন্ত পৌছবে যে পর্যন্ত দৃষ্টি পৌছে থাকে।
তিনি দাজ্জালের পশ্চাদ্ধাবন করবেন এবং ‘লুদ’ নামক স্থানে তাকে ধরেফেলে সেখানেই হত্যা করবেন। তারপরে তিনি ঐ লোকদের নিকট আসবেন যারা এ হাঙ্গামায় রক্ষা পেয়ে যাবে। তিনি তাদের চেহারায় হাত ফিরিয়ে দেবেন। এবং জান্নাতের সুসংবাদ প্রদান করবেন। অতঃপর আল্লাহ তাআলার পক্ষ হতে হযরত ঈসা (আঃ)-এর নিকট অহী আসবে। আল্লাহ তা’আলা তাঁকে বলবেন-‘আমি আমার এমন বান্দাহদেরকে প্রেরণ করেছি যাদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা কেউই করতে পারবে না। তুমি আমার এ বিশিষ্ট বান্দাহদেরকে তূর পর্বতের নিকট নিয়ে যাও।’ তারপর ইয়াজুজ ও মাজুজ বের হবে এবং তারা চতুর্দিক হতে লাফাতে লাফাতে চলে আসবে। তাদের প্রথম দলটি ‘বাহীরা-ই-তাবারিয়ায় আসবে এবং ওর সমস্ত পানি পান করে নেবে। তাদের পর পরই যখন অন্য দলটি আসবে তখন তারা ওটাকে এমন শুষ্ক অবস্থায় পাবে যে, তারা বলবে, সম্ভবতঃ এখানে কোন সময় পানি ছিল। হযরত ঈসা (আঃ) ও তার সঙ্গী মুমিনগণ তথায় এমনভাবে অবরুদ্ধ থাকবেন যে, একটি বলদের মাথাও তাদের নিকট এমন পছন্দনীয় মনে হবে যেমন আজ তোমাদের নিকট একশটি স্বর্ণমুদ্রা পছন্দনীয়। তখন আল্লাহ তা’আলা স্বীয় শত্রুদেরকে গলগণ্ড রোগে আক্রান্ত করবেন। ফলে তারা সবাই একই সঙ্গে ধ্বংস হয়ে যাবে।
অতঃপর হযরত ঈসা (আঃ) স্বীয় সঙ্গীগণসহ যমীনে অবতরণ করবেন। কিন্তু যমীনে অর্ধহাত পরিমাণ জায়গাও এমন পাবেন না যা তাদের মৃতদেহ ও দুর্গন্ধ হতে শূন্য থাকবে। পুনরায় তারা আল্লাহ তা’আলার নিকট প্রার্থনা জানাবেন। ফলে আল্লাহ তা’আলা উটের ঘাড়ের মত এক প্রকার পাখি পাঠিয়ে দেবেন। ঐ পাখিগুলো তাদের সমস্ত মৃতদেহ উঠিয়ে নিয়ে আল্লাহ তা’আলার ইচ্ছেমত জায়গায় নিক্ষেপ করবে। অতঃপর বৃষ্টি বর্ষিত হবে। ফলে সমস্ত যমীন হাতের তালুর মত পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হয়ে যাবে। তারপর যমীনকে শস্য এবং ফল উৎপাদনের ও বরকত ফিরিয়ে আনার নির্দেশ দেয়া হবে। সেদিন একটি ডালিম ফল এক দল লোকের পক্ষে যথেষ্ট হবে। তারা সবাই ওর ছালের নীচে বিশ্রাম গ্রহণ করতে পারবে। একটি উন্ত্রীর দুগ্ধ একটি গোটা সম্প্রদায়ের লোকও পান করে শেষ করতে পারবে না।
অতঃপর আল্লাহ তা’আলা এক মৃদু ও নির্মল বায়ু প্রবাহিত করবেন যা সমস্ত ঈমানদার নর ও নারীর বগলের নিম্নদেশ দিয়ে বেরিয়ে যাবে আর সঙ্গে সঙ্গে তাদের প্রাণ বায়ুও নির্গত হয়ে যাবে। দুষ্ট ও বেঈমান লোকেরা বেঁচে থাকবে। তারা গাধার মত পরস্পর ঝগড়া বিবাদে লিপ্ত থাকবে। তাদের উপর কিয়ামত সংঘটিত হবে। মুসনাদ-ই-আহমাদের মধ্যেও এরূপ একটি হাদীস বর্ণিত আছে। ওটা আমরা ইনশাআল্লাহ (সূরা-ই-আম্বিয়ার) (আরবী) (২১:৯৬) -এ আয়াতের তাফসীরে বর্ণনা করবো।
সহীহ মুসলিমের মধ্যে রয়েছে যে, এক ব্যক্তি হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমার (রাঃ)-এর নিকট বললেনঃ “আমার নিকট সংবাদ পৌছেছে যে, আপনি নাকি বলে থাকেন-কিয়ামত অমুক অমুক জায়গা পর্যন্ত পৌছে যাবে, এটা কি ব্যাপার? তিনি তখন ‘সুবহানাল্লাহ’ এবং ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলার পর বললেনঃ “আমার ইচ্ছে হচ্ছে যে, এখন তোমাকে কোন হাদীস শুনাবো না। আমি তো একথা বলেছিলাম যে, কিছুকাল পরে তোমরা বড় বড় ব্যাপার সংঘটিত হতে দেখবে, যেমন বায়তুল্লাহকে জ্বালিয়ে দেয়া হবে এবং এই হবে, এই হবে ইত্যাদি।” অতঃপর তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “দাজ্জাল বের হবে এবং আমার উম্মতের মধ্যে চল্লিশ বছর পর্যন্ত অবস্থান করবে। আমার জানা নেই যে, সেটা চল্লিশ মাস হবে অথবা চল্লিশ বছর হবে।”
অতঃপর আল্লাহ তাআলা হযরত ঈসা (আঃ)-কে প্রেরণ করবেন। তাঁর আকৃতি হযরত উরওয়া ইবনে মাসউদ (রাঃ)-এর মত। তিনি দাজ্জালকে অনুসন্ধান করবেন। তারপর সাত বছর পর্যন্ত মানুষ এমন মিলে মিশে থাকবে যে, দু’জনের মধ্যে মোটেই কোন শত্রুতা থাকবে না। অতঃপর সিরিয়ার দিক হতে একটা ঠাণ্ডা বাতাস প্রবাহিত হবে, যা সমস্ত ঈমানদারের মৃত্যু ঘটিয়ে দেবে। যার অন্তরে অণুপরিমাণও সততা বা ঈমান থাকবে, সে পর্বতের গুহায় অবস্থান করলেও মৃত্যুমুখে পতিত হবে। দুষ্ট ও বেঈমান লোকেরাই বেচে থাকবে, যারা পাখীর ন্যায় হালকা হবে এবং চতুষ্পদ জন্তুর ন্যায় মস্তক বিশিষ্ট হবে। ভাল ও মন্দের মধ্যে প্রভেদ করার শক্তি তাদের থাকবে না। শয়তান মানুষের রূপ ধরে তাদের নিকট আগমন করতঃ তাদেরকে মূর্তি পূজার দিকে আকষ্ট করবে। কিন্তু তাদের এ অবস্থা সত্ত্বেও তাদের জন্যে আহার্যের দরজা খোলা থাকবে এবং জীবন খুবই শান্তিতে অতিবাহিত হবে। তারপর শিঙ্গায় ফুক দেয়া হবে। এর ফলে মানুষ পতিত হতে থাকবে। একটি লোক যে তার উষ্ট্রগুলোকে পানি পান করাবার জন্যে তাদের চৌবাচ্চা ঠিক করতে থাকবে সেই সর্বপ্রথম শিঙ্গার শব্দ শুনতে পাবে। এর ফলে সে এবং অন্য সমস্ত লোক অচৈতন্য হয়ে পড়বে।
মোটকথা সকলেই ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পর আল্লাহ তা’আলা বৃষ্টি বর্ষণ করবেন যা হবে শিশিরের বা ছায়ার মত। তার ফলে দ্বিতীয়বার দেহ সৃষ্টি হবে। তারপর পুনরায় শিঙ্গায় ফুক দেয়া হবে। তখন সবাই আবার জীবিত হয়ে উঠবে। তারপর তাদেরকে বলা হবে-“হে লোক সকল! তোমরা তোমাদের প্রভুর দিকে চল।” আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ” (আরবী) অর্থাৎ “(হে ফেরেশতাগণ) তাদেরকে থামিয়ে দাও, নিশ্চয়ই তারা (প্রশ্ন জিজ্ঞাসিত হবে। (৩৭:২৪) এরপর বলা হবে-জাহান্নামের অংশ বের করে নাও।’ জিজ্ঞেস করা হবে-কতার মধ্য হতে কতো জনকে?’ উত্তরে বলা হবে-প্রতি হাজারে ন’শ নিরানব্বই জনকে। (আল্লাহ) বলবেন-এটা এমন দিন যা ছেলেদেরকে বুড়ো করে দেবে এবং এটা এমন দিন যাতে পায়ের গোছা খুলে যাবে।’ মুসনাদ-ই-আহমাদে হযরত হারেস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, আি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে বলতে শুনেছিঃ ইবনে মারইয়াম (আঃ) বাব-ই-লুদের’ নিকট কিংবা ‘লুদের’ পার্শ্বে মাসীহ দাজ্জালকে হত্যা করবেন। জামেউত তিরমিযীর মধ্যে বাব-ই-লুদ রয়েছে এবং এ হাদীসটি বিশুদ্ধ। এর পরে ইমাম তিরিমিযী (রঃ) আরও কয়েকজন সাহাবী (রাঃ)-এর নাম নিয়েছেন যে, তাঁদের হতেও এ অধ্যায়ের হাদীসগুলো বর্ণিত আছে, যেগুলোর মধ্যে দাজ্জালের হযরত ঈসা (আঃ)-এর হাতে নিহত হওয়ার কথা বর্ণিত রয়েছে। শুধুমাত্র দাজ্জালের বর্ণনার হাদীসগুলোই তো অসংখ্য রয়েছে, যেগুলো একত্রিত করা খুবই কঠিন।
মুসনাদ-ই-আহমাদে রয়েছে যে, আরাফা হতে আসার সময় রাসূলুল্লাহ (সঃ) সাহাবীদের এক মজলিসের পার্শ্ব দিয়ে গমন করেন। সে সময় তথায় কিয়ামত সম্বন্ধে আলোচনা চলছিল। তিনি তখন বলেনঃ “যে পর্যন্ত দশটি ব্যাপার সংঘটিত না হবে সে পর্যন্ত কিয়ামত হবে না। (১) পশ্চিম দিক হতে সূর্য উদিত হওয়া। (২) ধূয়া নির্গত হওয়া। (৩) ‘দাব্বাতুল আরযের বের হওয়া। (৪) ইয়াজুজ-মাজুজের আগমন ঘটা। (৫) ঈসা ইবনে মারইয়াম (আঃ) আকাশ থেকে অবতীর্ণ হওয়া। (৬) দাজ্জালের আবির্ভাব।.(৭) যমীনের তিন জায়গা ধ্বসে যাওয়া। (৭ক) পূর্বে (৮খ) পশ্চিমে (৯গ) আরব উপদ্বীপে এবং (১০) আদন হতে একটা আগুন বের হওয়া যা লোকদেরকে তাড়িয়ে নিয়ে গিয়ে এক জায়গায় একত্রিত করবে। ওটা (আগুন) রাত্রিও তাদের সাথে অতিবাহিত করবে। যখন দুপুরের সময় তারা বিশ্রাম গ্রহণ করবে তখনও এ আগুন তাদের সঙ্গেই থাকবে।”
উক্ত হাদীসটি সহীহ মুসলিম ও সুনানের মধ্যে রয়েছে। হযরত হুযাইফা ইবনে উসায়েদ গিফারী (রাঃ) হতেও মাওকুফ রূপে বর্ণিত আছে। অতএব রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর এ মুতাওয়াতির হাদীসগুলো যা হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ), হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ), হযরত উসমান ইবনে আবুল আস (রাঃ), হযরত আবু উমামা (রাঃ), হযরত লাওয়াস ইবনে সামআন (রাঃ), হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমার (রাঃ), হযরত মাজমা ইবনে জারিয়া (রাঃ), হযরত আবূ শুরাইহা (রাঃ) এবং হযরত হুযাইফা ইবনে উসায়েদ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, এটা স্পষ্টভাবে প্রমাণ করছে যে, হযরত ঈসা (আঃ) (আকাশ হতে) অবতরণ করবেন। সাথে সাথে কিভাবে, কোথায় এবং কোন্ সময় তাঁর অবতরণ ঘটবে তাতে এটাও বর্ণিত আছে। অর্থাৎ ফজরের নামাযের ইকামতের সময় সিরিয়ার দামেস্ক শহরের পূর্বদিকের স্তম্ভের উপর তিনি অবতরণ করবেন।
সেই যুগে অর্থাৎ ৭৪১ হিঃ সালে জামে’ উমভী’র স্তম্ভটি সাদা পাথরে মজবুত করে বানানো হয়েছে। কেননা, ওটা আগুনে দগ্ধীভূত হয়েছিল, যে আগুন সম্ভবতঃ অভিশপ্ত খ্রীষ্টানেরাই লাগিয়েছিল। এতে বিস্ময়ের কি আছে যে, এটাই হয়তো সেই স্তম্ভ যার উপর হযরত ঈসা (আঃ) অবতরণ করবেন এবং শূকরকে হত্যা করবেন, ক্রুশকে ভেঙ্গে ফেলবেন, জিযিয়া কর উঠিয়ে দেবেন ও ইসলাম ধর্ম ছাড়া অন্য কোন ধর্ম গ্রহণ করবেন না। যেমন সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমের হাদীসগুলো বর্ণিত হয়েছে, যেগুলোর মধ্যে রাসূলুল্লাহ (সঃ) এ সংবাদ দিয়েছেন ও তাকে সাব্যস্ত করেছেন। এটা ঐ সময় হবে যখন সমস্ত সন্দেহ দূরীভূত হবে এবং মানুষ যখন হযরত ঈসা (আঃ)-এর অনুসরণে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করবে। যেমন কুরআন কারীমে উক্ত (আরবী) হয়েছে। (৪৩:৬১) এবং একটি পঠনে (আরবী) লাআলামুন রয়েছে। অর্থাৎ হযরত ঈসা (আঃ)-এর অবতরণ কিয়ামতের (কিয়ামত নিকটবর্তী হওয়ার) একটি বড় নিদর্শন। কেননা, তিনি দাজ্জালের আগমনের পর আগমন করবেন এবং তাকে হত্যা করবেন।
যেমন সহীহ হাদীসে রয়েছে যে, আল্লাহ তাআলা এমন কোন রোগ সৃষ্টি করেননি যার প্রতিষেধকের তিনি ব্যবস্থা রাখেননি। তার সময়েই ইয়াজুজ মাজুজের আবির্ভাব ঘটবে, যাদেরকে আল্লাহ তা’আলা তাঁর দু’আর বরকতে ধ্বংস করবেন। ইয়াজুজ ও মাজুজের বের হওয়ার সংবাদ কালাম পাকের মধ্যেও রয়েছে। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ যে পর্যন্ত না ইয়াজুজ ও মাজুজকে বন্ধন মুক্ত করে দেয়া হবে এবং তারা প্রত্যেক উচ্চভুমি থেকে দ্রুত ছুটে আসবে। সত্য প্রতিশ্রুতি নিকটবর্তী হলে কাফেরদের চক্ষু উচ্চে স্থির হয়ে যাবে; ।'(২১৪ ৯৬-৯৭) অর্থাৎ তাদের বের হওয়াও কিয়ামত নিকটবর্তী হওয়ার একটি প্রমাণ।
হযরত ঈসা (আঃ)-এর বিশেষণঃ পূর্ব বর্ণিত দু’টি হাদীসেও তাঁর বিশেষণের বর্ণনা দেয়া হয়েছে। সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ মিরাজের রাত্রে আমি হযরত মূসা (আঃ)-এর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছি। তিনি মধ্যম দেহ ও পরিষ্কার চুল বিশিষ্ট, যেমন শানূআহ্ গোত্রের লোক হয়ে থাকে। হযরত ঈসা (আঃ)-এর সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেছি। তিনি লাল বর্ণের এবং মধ্যম দেহ বিশিষ্ট। মনে হচ্ছিল যে, যেন তিনি সবেমাত্র গোসল খানা হতে বের হয়ে এলেন। হযরত ইবরাহীম (আঃ)-কেও আমি দেখেছি। তিনি একেবারে আমার মতই ছিলেন।
সহীহ বুখারীর অন্য বর্ণনায় রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “হযরত ঈসা (আঃ) রক্তিম বর্ণ, কোঁকড়ানো চুল এবং চওড়া বক্ষ বিশিষ্ট ছিলেন। হযরত মূসা (আঃ) গোধূম বর্ণ, মোটা দেহ এবং সোজা চুল বিশিষ্ট ছিলেন-যেমন যিতের লোক হয়ে থাকে। অনুরূপভাবে তিনি দাজ্জালের শরীরিক গঠনও বর্ণনা করেছেন যে, তার ডান চক্ষু কানা হবে যেন ওটা ফুলা আঙ্গুর। তিনি বলেনঃ কাবা শরীফের নিকটে আমাকে স্বপ্নে দেখান হয়েছে যে, একজন খুবই গোধূম বর্ণের লোক, যার মাথার চুল তাঁর দু’কাঁধ পর্যন্ত লটকে ছিল এবং চুল ছিল পরিপাটি। তাঁর মস্তক হতে পানির ফোঁটা ঝরে ঝরে পড়ছিল। তিনি দু’ব্যক্তির কাঁধে হাত রেখে তাওয়াফ করছিলেন। আমি জিজ্ঞেস করি- ইনি কে? তখনই আমাকে বলা হয়-“ইনি হচ্ছেন হযরত মাসীহ ইবনে মারইয়াম (আঃ)। তার পিছনে আমি আর একটি লোককে দেখতে পাই যার ডান চক্ষুটি কানা ছিল। ইবনে কাতানের সঙ্গে সে অনেকটা সাদৃশ্যযুক্ত ছিল। তার মাথার চুল ছিল এলোমেলো। সেও দু’ব্যক্তির কাঁধে হাত রেখে তাওয়াফ করছিল। আমি জিজ্ঞেস করি-এটা কে? বলা হয়- মাসীহ দাজ্জাল।
সহীহ বুখারী শরীফের আর একটি বর্ণনায় রয়েছে, হযরত উবাইদুল্লাহ (রাঃ)। বলেন, আল্লাহর শপথ! রাসূলুল্লাহ (সঃ) হযরত ঈসা (আঃ)-কে লাল বর্ণের বলেননি, বরং গোধূম বর্ণের বলেছেন। পরে উপরে বর্ণিত পূর্ণ হাদীসটি রয়েছে। হযরত যুহরী (রঃ) বলেন যে, ইবনে কাতান খুযাআহ্ গোত্রের একটি লোক ছিল। সে অজ্ঞতার যুগে মারা গিয়েছিল। পূর্বে ঐ হাদীসটিও বর্ণিত হয়েছে যাতে রয়েছে যে, হযরত মাসীহ (আঃ) দুনিয়ায় অবতীর্ণ হওয়ার পর এখানে চল্লিশ বছর অবস্থান করবেন। অতঃপর তিনি মারা যাবেন এবং মুসলমানেরা তার জানাযার নামায পড়বে।
তবে সহীহ মুসলিমের একটি হাদীসে রয়েছে যে, তিনি এখানে সাত বছর অবস্থান করবেন। তাহলে খুব সম্ভব, যে হাদীসে চল্লিশ বছর অবস্থানের কথা রয়েছে তা ঐ সময় সহই হবে যা তিনি তার আকাশে উঠে যাওয়ার পূর্বে পৃথিবীতে অতিবাহিত করেছিলেন। যে সময় তাঁকে উঠিয়ে নেয়া হয়েছিল সে সময় তাঁর বয়স ছিল তেত্রিশ বছর। পরে এসে তিনি পৃথিবীতে সাত বছর অবস্থান করবেন। তাহলে পূর্ণ চল্লিশ বছর হয়ে যাবে। আল্লাহ তাআলাই সব চেয়ে ভাল জানেন। (ইবনে আসাকের)
কেউ কেউ বলেন যে, যখন তাঁকে আকাশে উঠিয়ে নেয়া হয় তখন তাঁর বয়স ছিল দেড় বছর। কিন্তু এটা একেবারেই বাজে কথা। তবে হাফিয আবুল কাসিম (রঃ) স্বীয় ইতিহাসে পূর্ব যুগীয় কোন কোন মনীষী হতে এটাও এনেছেন যে, হযরত ঈসা (আঃ) রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর কক্ষে তাঁর সাথেই সমাধিস্থ হবেন। সুতরাং এ সম্পর্কে পূর্ণজ্ঞান একমাত্র আল্লাহ তা’আলারই রয়েছে।
অতঃপর আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ ‘উত্থান দিবসে সে তাদের উপর সাক্ষ্য দান করবে। অর্থাৎ এ কথার তিনি সাক্ষ্য দান করবেন যে, তিনি আল্লাহর রিসালাত তাঁদের নিকট পৌছিয়ে দিয়েছিলেন এবং তিনি নিজেও আল্লাহ তাআলার দাসত্ব স্বীকার করেছিলেন। যেমন আল্লাহ তাআলা সূরা মায়েদার শেষ দিকে বলেনঃ (আরবী) (৫:১১৬-১১৮) পর্যন্ত।
أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book# 114/١٦٦)-৩৬৮
www.motaher21.net
فَبِمَا نَقْضِهِم مِّيثَاقَهُمْ وَكُفْرِهِم بَأيَاتِ اللّهِ
কারণ, তারা তাদের অঙ্গীকার ভঙ্গ করেছিল, আল্লাহর আয়াতসমূহকে অবিশ্বাস করেছিল,
Because of their breaking the covenant, and their rejecting the Ayat of Allah,
সুরা: আন-নিসা
আয়াত নং :-১৫৫-১৫৯
সুরা: আন-নিসা
আয়াত নং :-১৫৫
فَبِمَا نَقْضِهِمْ مِّیْثَاقَهُمْ وَ كُفْرِهِمْ بِاٰیٰتِ اللّٰهِ وَ قَتْلِهِمُ الْاَنْۢبِیَآءَ بِغَیْرِ حَقٍّ وَّ قَوْلِهِمْ قُلُوْبُنَا غُلْفٌؕ بَلْ طَبَعَ اللّٰهُ عَلَیْهَا بِكُفْرِهِمْ فَلَا یُؤْمِنُوْنَ اِلَّا قَلِیْلًا۪
শেষ পর্যন্ত তাদের অঙ্গীকার ভঙ্গের জন্য, আল্লাহর আয়াতের ওপর মিথ্যা আরোপ করার জন্য, নবীদেরকে অন্যায়ভাবে হত্যা করার জন্য এবং “আমাদের দিল আবরণের মধ্যে সুরক্ষিত” তাদের এই উক্তির জন্য(তারা অভিশপ্ত হয়েছিল) । অথচ মূলত তাদের বাতিল পরস্তির জন্য আল্লাহ তাদের দিলের ওপর মোহর মেরে দিয়েছেন এবং এ জন্য তারা খুব কমই ঈমান এনে থাকে।
সুরা: আন-নিসা
আয়াত নং :-১৫৬
وَّ بِكُفْرِهِمْ وَ قَوْلِهِمْ عَلٰى مَرْیَمَ بُهْتَانًا عَظِیْمًاۙ
তারপর তাদের নিজেদের কুফরীর মধ্যে অনেক দূর অগ্রসর হয়ে মারয়ামের ওপর গুরুতর অপবাদ লাগাবার জন্য।
সুরা: আন-নিসা
আয়াত নং :-১৫৭
وَّ قَوْلِهِمْ اِنَّا قَتَلْنَا الْمَسِیْحَ عِیْسَى ابْنَ مَرْیَمَ رَسُوْلَ اللّٰهِۚ وَ مَا قَتَلُوْهُ وَ مَا صَلَبُوْهُ وَ لٰكِنْ شُبِّهَ لَهُمْؕ وَ اِنَّ الَّذِیْنَ اخْتَلَفُوْا فِیْهِ لَفِیْ شَكٍّ مِّنْهُؕ مَا لَهُمْ بِهٖ مِنْ عِلْمٍ اِلَّا اتِّبَاعَ الظَّنِّۚ وَ مَا قَتَلُوْهُ یَقِیْنًۢاۙ
এবং তাদের ‘আমরা আল্লাহর রসূল মারয়াম পুত্র ঈসা মসীহ্কে হত্যা করেছি’, এই উক্তির জন্য (তারা অভিশপ্ত হয়েছিল) । অথচ প্রকৃতপক্ষে তারা তাকে হত্যাও করেনি এবং শূলেও চড়ায়নি বরং ব্যাপারটিকে তাদের জন্য সন্দিগ্ধ করে দেয়া হয়েছে।আর যারা এ ব্যাপারে মতবিরোধ করেছে তারাও আসলে সন্দেহের মধ্যে অবস্থান করছে। তাদের কাছে এ সম্পর্কিত কোন জ্ঞান নেই, আছে নিছক আন্দাজ-অনুমানের অন্ধ অনুসৃতি। নিঃসন্দেহে তারা ঈসা মসীহকে হত্যা করেনি।
সুরা: আন-নিসা
আয়াত নং :-১৫৮
بَلْ رَّفَعَهُ اللّٰهُ اِلَیْهِؕ وَ كَانَ اللّٰهُ عَزِیْزًا حَكِیْمًا
বরং আল্লাহ তাঁকে নিজের দিকে উঠিয়ে নিয়েছেন। আল্লাহ জবরদস্ত শক্তিশালী ও প্রজ্ঞাময়।
সুরা: আন-নিসা
আয়াত নং :-১৫৯
وَ اِنْ مِّنْ اَهْلِ الْكِتٰبِ اِلَّا لَیُؤْمِنَنَّ بِهٖ قَبْلَ مَوْتِهٖۚ وَ یَوْمَ الْقِیٰمَةِ یَكُوْنُ عَلَیْهِمْ شَهِیْدًاۚ
আর আহলি কিতাবদের মধ্য থেকে এমন একজনও হবে না। যে তার মৃত্যুর পূর্বে তার ঈমান আনবে না, এবং কিয়ামতের দিন সে তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেবে।
English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
An Nisah:-
Verses :-155-159
The Crimes of the Jews
Allah said,
فَبِمَا نَقْضِهِم مِّيثَاقَهُمْ وَكُفْرِهِم بَأيَاتِ اللّهِ
Because of their breaking the covenant, and their rejecting the Ayat of Allah,
The sins mentioned here are among the many sins that the Jews committed, which caused them to be cursed and removed far away from right guidance. The Jews broke the promises and vows that Allah took from them, and also rejected Allah’s Ayat, meaning His signs and proofs, and the miracles that they witnessed at the hands of their Prophets.
Allah said,
وَقَتْلِهِمُ الَانْبِيَاء بِغَيْرِ حَقًّ
and their killing the Prophets unjustly,
because their many crimes and offenses against the Prophets of Allah, for they killed many Prophets, may Allah’s peace be upon them
وَقَوْلِهِمْ قُلُوبُنَا غُلْفٌ
and their saying:”Our hearts are Ghulf,”
According to Ibn Abbas, Mujahid, Sa`id bin Jubayr, Ikrimah, As-Suddi and Qatadah.
meaning, wrapped with covering.
This is similar to the what the idolators said,
وَقَالُواْ قُلُوبُنَا فِى أَكِنَّةٍ مِمَّا تَدْعُونَا إِلَيْهِ
And they say:”Our hearts are under coverings (screened) from that to which you invite us.” (41:5)
Allah said,
بَلْ طَبَعَ اللّهُ عَلَيْهَا بِكُفْرِهِمْ
nay, Allah has set a seal upon their hearts because of their disbelief,
It is as if they had given an excuse that their hearts do not understand what the Prophet says since their hearts are wrapped with coverings, so they claim.
Allah said that their hearts are sealed because of their disbelief, as we mentioned before in the explanation of Surah Al-Baqarah.
Allah then said,
فَلَ يُوْمِنُونَ إِلاَّ قَلِيلً
so they believe not but a little.
for their hearts became accustomed to Kufr, transgression and weak faith.
The Evil Accusation the Jews Uttered Against Maryam and Their Claim that They Killed `Isa
Allah said,
وَبِكُفْرِهِمْ وَقَوْلِهِمْ عَلَى مَرْيَمَ بُهْتَانًا عَظِيمًا
And because of their (Jews) disbelief and uttering against Maryam a grave false charge.
Ali bin Abi Talhah said that Ibn Abbas stated that;
the Jews accused Maryam of fornication.
This is also the saying of As-Suddi, Juwaybir, Muhammad bin Ishaq and several others.
This meaning is also apparent in the Ayah, as the Jews accused Maryam and her son of grave accusations:They accused her of fornication and claimed that `Isa was an illegitimate son. Some of them even claimed that she was menstruating while fornicating. May Allah’s continued curse be upon them until the Day of Resurrection.
The Jews also said
وَقَوْلِهِمْ إِنَّا قَتَلْنَا الْمَسِيحَ عِيسَى ابْنَ مَرْيَمَ رَسُولَ اللّهِ
And because of their saying, “We killed Al-Masih, `Isa, son of Maryam, the Messenger of Allah,”
meaning, we killed the person who claimed to be the Messenger of Allah. The Jews only uttered these words in jest and mockery, just as the polytheists said,
يَا أَيُّهَا الَّذِي نُزِّلَ عَلَيْهِ الذِّكْرُ
إِنَّكَ لَمَجْنُونٌ
(O you to whom the Dhikr (the Qur’an) has been sent down! Verily, you are a mad man!). (15:6)
When Allah sent `Isa with proofs and guidance, the Jews, may Allah’s curses, anger, torment and punishment be upon them, envied him because of his Prophethood and obvious miracles; curing the blind and leprous and bringing the dead back to life, by Allah’s leave. He also used to make the shape of a bird from clay and blow in it, and it became a bird by Allah’s leave and flew.
`Isa performed other miracles that Allah honored him with, yet the Jews defied and bellied him and tried their best to harm him. Allah’s Prophet `Isa could not live in any one city for long and he had to travel often with his mother, peace be upon them. Even so, the Jews were not satisfied, and they went to the king of Damascus at that time, a Greek polytheist who worshipped the stars. They told him that there was a man in Bayt Al-Maqdis misguiding and dividing the people in Jerusalem and stirring unrest among the king’s subjects.
The king became angry and wrote to his deputy in Jerusalem to arrest the rebel leader, stop him from causing unrest, crucify him and make him wear a crown of thorns.
When the king’s deputy in Jerusalem received these orders, he went with some Jews to the house that `Isa was residing in, and he was then with twelve, thirteen or seventeen of his companions. That day was a Friday, in the evening.
They surrounded `Isa in the house, and when he felt that they would soon enter the house or that he would sooner or later have to leave it, he said to his companions, “Who volunteers to be made to look like me, for which he will be my companion in Paradise?”
A young man volunteered, but `Isa thought that he was too young. He asked the question a second and third time, each time the young man volunteering, prompting `Isa to say, “Well then, you will be that man.”
Allah made the young man look exactly like `Isa, while a hole opened in the roof of the house, and `Isa was made to sleep and ascended to heaven while asleep. Allah said,
إِذْ قَالَ اللّهُ يَا عِيسَى إِنِّي مُتَوَفِّيكَ وَرَافِعُكَ إِلَيَّ
(And (remember) when Allah said:”O `Isa! I will take you and raise you to Myself).” (3:55)
When `Isa ascended, those who were in the house came out. When those surrounding the house saw the man who looked like `Isa, they thought that he was `Isa. So they took him at night, crucified him and placed a crown of thorns on his head. The Jews then boasted that they killed `Isa and some Christians accepted their false claim, due to their ignorance and lack of reason.
As for those who were in the house with `Isa, they witnessed his ascension to heaven, while the rest thought that the Jews killed `Isa by crucifixion. They even said that Maryam sat under the corpse of the crucified man and cried, and they say that the dead man spoke to her.
All this was a test from Allah for His servants out of His wisdom. Allah explained this matter in the Glorious Qur’an which He sent to His honorable Messenger, whom He supported with miracles and clear, unequivocal evidence. Allah is the Most Truthful, and He is the Lord of the worlds Who knows the secrets, what the hearts conceal, the hidden matters in heaven and earth, what has occurred, what will occur, and what would occur if it was decreed.
He said,
وَمَا قَتَلُوهُ وَمَا صَلَبُوهُ وَلَـكِن شُبِّهَ لَهُمْ
but they killed him not, nor crucified him, but it appeared as that to them,
referring to the person whom the Jews thought was `Isa.
This is why Allah said afterwards,
وَإِنَّ الَّذِينَ اخْتَلَفُواْ فِيهِ لَفِي شَكٍّ مِّنْهُ مَا لَهُم بِهِ مِنْ عِلْمٍ إِلاَّ اتِّبَاعَ الظَّنِّ
and those who differ therein are full of doubts. They have no (certain) knowledge, they follow nothing but conjecture.
referring to the Jews who claimed to kill `Isa and the ignorant Christians who believed them. Indeed they are all in confusion, misguidance and bewilderment.
This is why Allah said,
وَمَا قَتَلُوهُ يَقِينًا
For surely; they killed him not.
meaning they are not sure that `Isa was the one whom they killed. Rather, they are in doubt and confusion over this matter.
بَل رَّفَعَهُ اللّهُ إِلَيْهِ وَكَانَ اللّهُ عَزِيزًا
But Allah raised him up unto Himself. And Allah is Ever All-Powerful,
meaning, He is the Almighty, and He is never weak, nor will those who seek refuge in Him ever be subjected to disgrace.
حَكِيمًا
All-Wise.
in all that He decides and ordains for His creatures. Indeed, Allah’s is the clearest wisdom, unequivocal proof and the most glorious authority.
Ibn Abi Hatim recorded that Ibn Abbas said,
“Just before Allah raised `Isa to the heavens, `Isa went to his companions, who were twelve inside the house. When he arrived, his hair was dripping water and he said, `There are those among you who will disbelieve in me twelve times after he had believed in me.’
He then asked, `Who volunteers that his image appear as mine, and be killed in my place. He will be with me (in Paradise).’
One of the youngest ones among them volunteered and `Isa asked him to sit down.
`Isa again asked for a volunteer, and the young man kept volunteering and `Isa asking him to sit down. Then the young man volunteered again and `Isa said, `You will be that man,’ and the resemblance of `Isa was cast over that man while `Isa ascended to heaven from a hole in the house.
When the Jews came looking for `Isa, they found that young man and crucified him.
Some of `Isa’s followers disbelieved in him twelve times after they had believed in him. They then divided into three groups.
One group, Al-Ya`qubiyyah (Jacobites), said, `Allah remained with us as long as He willed and then ascended to heaven.’
Another group, An-Nasturiyyah (Nestorians), said, `The son of Allah was with us as long as he willed and Allah took him to heaven.’
Another group, Muslims, said, `The servant and Messenger of Allah remained with us as long as Allah willed, and Allah then took him to Him.’
The two disbelieving groups cooperated against the Muslim group and they killed them. Ever since that happened, Islam was then veiled until Allah sent Muhammad.”
This statement has an authentic chain of narration leading to Ibn Abbas, and An-Nasa’i narrated it through Abu Kurayb who reported it from Abu Mu`awiyah.
Many among the Salaf stated that;
`Isa asked if someone would volunteer for his appearance to be cast over him, and that he will be killed instead of `Isa, for which he would be his companion in Paradise.
All Christians Will Believe in `Isa Before He Dies
Allah said,
وَإِن مِّنْ أَهْلِ الْكِتَابِ إِلاَّ لَيُوْمِنَنَّ بِهِ قَبْلَ مَوْتِهِ
وَيَوْمَ الْقِيَامَةِ يَكُونُ عَلَيْهِمْ شَهِيدًا
And there is none of the People of the Scripture, but must believe in him, before his death. And on the Day of Resurrection, he will be a witness against them.
Ibn Jarir recorded that Ibn Abbas commented,
وَإِن مِّنْ أَهْلِ الْكِتَابِ إِلاَّ لَيُوْمِنَنَّ بِهِ قَبْلَ مَوْتِهِ
(And there is none of the People of the Scripture, but must believe in him, before his death),
before the death of `Isa, son of Maryam, peace be upon him.
Al-Awfi reported similar from Ibn Abbas.
Abu Malik commented;
إِلاإَّ لَيُوْمِنَنَّ بِهِ قَبْلَ مَوْتِهِ
(but must believe in him, before his death),
“This occurs after `Isa returns and before he dies, as then, all of the People of the Scriptures will believe in him.”
The Hadiths Regarding the Descent of `Isa Just Before the Day of Judgment, and his Mission
In the chapter about the Prophets in his Sahih, under, “The Descent of `Isa, Son of Maryam,” Al-Bukhari recorded that Abu Hurayrah said that the Messenger of Allah said,
وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَيُوشِكَنَّ أَنْ يَنْزِلَ فِيكُمُ ابْنُ مَرْيَمَ حَكَمًا عَدْلاًا فَيَكْسِرَ الصَّلِيبَ وَيَقْتُلَ الْخِنْزِيرَ وَيَضَعَ الْجِزْيَةَ وَيَفِيضَ المَالُ حَتَّى لَاا يَقْبَلَهُ أَحَدٌ حَتَّى تَكُونَ السَّجْدَةُ خَيْرًا لَهُمْ مِنَ الدُّنْيَا وَمَا فِيهَا
By Him in Whose Hands my soul is, the son of Maryam (`Isa) will shortly descend among you as a just ruler, and will break the cross, kill the pig and abolish the Jizyah. Then there will be an abundance of wealth and nobody will accept charitable gifts any more. At that time, one prostration will be better for them than this life and all that is in it.
Abu Hurayrah then said, “Read if you will,
وَإِن مِّنْ أَهْلِ الْكِتَابِ إِلاَّ لَيُوْمِنَنَّ بِهِ قَبْلَ مَوْتِهِ
وَيَوْمَ الْقِيَامَةِ يَكُونُ عَلَيْهِمْ شَهِيدًا
And there is none of the People of the Scripture, but must believe in him, before his death. And on the Day of Resurrection, he will be a witness against them.”
Muslim recorded this Hadith.
So, Allah’s statement,
قَبْلَ مَوْتِهِ
(before his death),
refers to the death of `Isa, son of Maryam.
Another Hadith by Abu Hurayrah
Imam Ahmad recorded that Abu Hurayrah said that the Messenger of Allah said,
لَيُهِلَّنَّ عِيسَى بِفَجِّ الرَّوْحَاءِ بِالْحَجِّ أَوِ الْعُمْرَةِ أَوْ لَيَثْنِيَنَّهُمَا جَمِيعًا
`Isa will say Ihlal from the mountain highway of Ar-Rawha’ for Hajj, Umrah or both.
Muslim also recorded it.
Ahmad recorded that Abu Hurayrah said that the Prophet said,
يَنْزِلُ عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ فَيَقْتُلُ الْخِنْزِيرَ وَيَمْحُو الصَّلِيبَ وَتُجْمَعُ لَهُ الصَّلَةُ وَيُعْطَى الْمَالُ حَتَّى لَا يُقْبَلَ وَيَضَعُ الْخَرَاجَ وَيَنْزِلُ الرَّوْحَاءَ فَيَحُجُّ مِنْهَا أَوْ يَعْتَمِرُ أَوْ يَجْمَعُهُمَا
`Isa, son of Maryam, will descend and will kill the pig, break the cross, lead the prayer in congregation and give away wealth until it is no longer accepted by anyone. He will also abolish the Jizyah and go to Ar-Rawha’ from where he will go to perform Hajj, Umrah or both.
Abu Hurayrah then recited,
وَإِن مِّنْ أَهْلِ الْكِتَابِ إِلاَّ لَيُوْمِنَنَّ بِهِ قَبْلَ مَوْتِهِ
(And there is none of the People of the Scripture, but must believe in him, before his death).
Hanzalah said,
“Abu Hurayrah added, `Will believe in `Isa before `Isa dies,’ but I do not know if this was a part of the Prophet’s Hadith or if it was something that Abu Hurayrah said on his own.”
Ibn Abi Hatim also recorded this Hadith.
Another Hadith
Al-Bukhari recorded that Abu Hurayrah said that the Messenger of Allah said,
كَيْفَ بِكُمْ إِذَا نَزَلَ فِيكُمُ الْمَسِيحُ ابْنُ مَرْيَمَ وَإِمَامُكُمْ مِنْكُم
How will you be when Al-Masih, son of Maryam (`Isa) descends among you while your Imam is from among yourselves!
Imam Ahmad and Muslim also recorded this Hadith.
Another Hadith
Imam Ahmad recorded that Abu Hurayrah said that the Prophet said,
الاَْنْبِيَاءُ إِخْوَةٌ لِعَلَّأتٍ أُمَّهَاتُهُمْ شَتَّى وَدِينُهُمْ وَاحِدٌ وَإِنِّي أَوْلَى النَّاسِ بِعِيسَى ابْنِ مَرْيَمَ لاَِنَّهُ لَمْ يَكُنْ نَبِيٌّ بَيْنِي وَبَيْنَهُ
The Prophets are paternal brothers; their mothers are different, but their religion is one. I, more than any of mankind, have more right to `Isa, son of Maryam, for there was no Prophet between him and I.
وَإِنَّهُ نَازِلٌ فَإِذَا رَأَيْتُمُوهُ فَاعْرِفُوهُ رَجُلٌ مَرْبُوعٌ إِلَى الْحُمْرَةِ وَالْبَيَاضِ عَلَيْهِ ثَوْبَانِ مُمَصَّرَانِ كَأَنَّ رَأْسَهُ يَقْطُرُ وَإِنْ لَمْ يُصِبْهُ بَلَلٌ فَيَدُقُّ الصَّلِيبَ وَيَقْتُلُ الْخِنْزِيرَ وَيَضَعُ الْجِزْيَةَ وَيَدْعُو النَّاسَ إِلَى الاْإِسْلَإمِ
He will descend, and if you see him, know him. He is a well-built man, (the color of his skin) between red and white. He will descend while wearing two long, light yellow garments. His head appears to be dripping water, even though no moisture touched it. He will break the cross, kill the pig, and banish the Jizyah and will call the people to Islam.
وَيُهْلِكُ اللهُ فِي زَمَانِهِ الْمِلَلَ كُلَّهَا إِلاَّ الاِْسْلَمَ وَيُهْلِكُ اللهُ فِي زَمَانِهِ الْمَسِيحَ الدَّجَّالَ
During his time, Allah will destroy all religions except Islam and Allah will destroy Al-Masih Ad-Dajjal (the False Messiah).
ثُمَّ تَقَعُ الاَْمَنَةُ عَلَى الاَْرْضِ حَتَّى تَرْتَعَ الاُْسُودُ مَعَ الاِْبِلِ وَالنِّمَارُ مَعَ الْبَقَرِ وَالذِّيَابُ مَعَ الْغَنَمِ وَيَلْعَبُ الصِّبْيَانُ بِالحَيَّاتِ لَا تَضُرُّهُمْ
Safety will then fill the earth, so much so that the lions will mingle with camels, tigers with cattle and wolves with sheep. Children will play with snakes, and they will not harm them.
فَيَمْكُثُ أَرْبَعِينَ سَنَةً ثُمَّ يُتَوَفَّى وَيُصَلِّي عَلَيْهِ الْمُسْلِمُون
`Isa will remain for forty years and then will die, and Muslims will offer the funeral prayer for him.
Abu Dawud also recorded it.
Another Hadith
In his Sahih, Muslim recorded that Abu Hurayrah related to the Messenger of Allah that he said,
لَاا تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى يَنْزِلَ الرُّومُ بِالاْاَعْمَاقِ أَوَ بِدَابِقَ
The (Last) Hour will not start until the Romans occupy Al-A`maq or Dabiq.
فَيَخْرُجُ إِلَيْهِمُ جَيْشٌ مِنَ الْمَدِينَةِ مِنْ خِيَارِ أَهْلِ الاَْرْضِ يَوْمَيِذٍ
An army, comprised of the best of the people of the earth then, will come from Al-Madinah and challenge them.
فَإِذَا تَصَافُّوا قَالَتِ الرُّومُ خَلُّوا بَيْنَنَا وَبَيْنَ الَّذِينَ سَبَوْا مِنَّا نُقَاتِلْهُمْ
When they camp face to face, the Romans will say, `Let us fight those who captured some of us.’
فَيَقُولُ الْمُسْلِمُونَ لَا وَاللهِ لَا نُخَلِّي بَيْنَكُمْ وَبَيْنَ إِخْوَانِنَا
The Muslims will say, `Nay! By Allah, we will never let you get to our brothers.’
فَيُقَاتِلُونَهُمْ فَيَنْهَزِمُ ثُلُثٌ لَا يَتُوبُ اللهُ عَلَيْهِمْ أَبَدًا وَيُقْتَلُ ثُلُثُهُ أَفْضَلُ الشُّهَدَاءِ عِنْدَ اللهِ وَيَفْتَتحُ الثَّلُثُ لَا يُفْتَنُونَ أَبَدًا فَيَفْتَتِحُونَ قُسْطُنْطِينِيَّةَ
They will fight them. A third of the (Muslim) army will flee in defeat, and those are the ones whom Allah will never forgive. Another third will be killed, and those are the best martyrs before Allah. The last third will be victorious, and this third will never be stricken with Fitnah, and they will capture Constantinople (Istanbul).
فَبَيْنَمَا هُمْ يَقْسِمُونَ الْغَنَايِمَ قَدْ عَلَّقُوا سُيُوفَهُمْ بِالزَّيْتُونِ إِذْ صَاحَ فِيهِمُ الشَّيْطَانُ إِنَّ الْمَسِيحَ قَدْ خَلَفَكُمْ فِي أَهْلِيكُمْ
While they are dividing war booty, after hanging their swords on olive trees, Shaytan will shout among them, saying, `Al-Masih(Ad-Dajjal) has cornered your people’.
فَيَخْرُجُونَ وَذَلِكَ بَاطِلٌ
They will leave to meet Ad-Dajjal in Ash-Sham.
فَإِذَا جَاءُوا الشَّامَ خَرَجَ فَبَيْنَمَا هُمْ يُعِدُّونَ لِلْقِتَالِ يُسَوُّونَ الصُّفُوفَ إِذْ أُقِيَمتِ الصَّلَإةُ فَيَنْزِلُ عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ فَأَمَّهُمْ
This will be a false warning, and when they reach Ash-Sham, Ad-Dajjal will then appear. When the Muslims are arranging their lines for battle and the prayer is called for, `Isa, son of Maryam, will descend and lead them in prayer.
فَإِذَا رَاهُ عَدُوُّ اللهِ ذَابَ كَمَا يَذُوبُ الْمِلْحُ فِي الْمَاءِ فَلَوْ تَرَكَهُ لَاإنْذَابَ حَتَّى يَهْلِكَ وَلكِنْ يَقْتُلُهُ اللهُ بِيَدِهِ فَيُرِيهِمْ دَمَهُ فِي حَرْبَتِه
When the enemy of Allah (the False Messiah) sees him, he will dissolve just as salt dissolves in water, and if any of him were left, he would continue dissolving until he died. Allah will kill him with the hand of `Isa and will show the Muslims his blood on his spear.
Muslim recorded that;
Abdullah bin `Amr said that the Messenger of Allah said,
لَتُقَاتِلُنَّ الْيَهُودَ فَلَتَقْتُلُنَّهُمْ حَتَى يَقُولَ الْحَجَرُ يَامُسْلِمُ هَذَا يَهُودِيٌّ فَتَعَال فَاقْتُلْه
You will fight the Jews and will kill them, until the stone will say, `O Muslim! There is a Jew here, so come and kill him.’
Muslim recorded that Abu Hurayrah said that the Messenger of Allah said,
لَاا تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى يُقَاتِلَ الْمُسْلِمُونَ الْيَهُودَ فَيَقْتُلُهُمُ الْمُسْلِمُونَ حَتَّى يَخْتَبِىءَ الْيَهُودِيُّ مِنْ وَرَاءِ الْحَجَرِ وَالشَّجَرِ فَيَقُولُ الْحَجَرُ وَالشَّجَرُ يَامُسْلِمُ يَاعَبْدَاللهِ هَذَا يَهُودِيٌّ خَلْفِي فَتَعَالَ فَاقْتُلْهُ إِلاَّ الْغَرْقَدَ فَإِنَّهُ مِنْ شَجَرِ الْيَهُود
The Hour will not start, until after the Muslims fight the Jews and the Muslims kill them. The Jew will hide behind a stone or tree, and the tree will say, `O Muslim! O servant of Allah! This is a Jew behind me, come and kill him.’ Except Al-Gharqad, for it is a tree of the Jews.
Muslim bin Al-Hajjaj recorded in his Sahih that An-Nawwas bin Sam`an said,
“The Messenger of Allah, mentioned Ad-Dajjal one day and kept belittling him (because being blind, yet claiming to be Allah) and speaking in grave terms about him until we thought that he was hiding in gardens of date-trees (in Al-Madinah). When we went by the Messenger, he sensed this anxiety in us and said,
مَا شَأْنُكُمْ
What is the matter with you?
We said, `O Messenger of Allah! Earlier, you mentioned Ad-Dajjal and while belittling him you spoke gravely about him until we thought that he was hiding in gardens of date-trees (of Al-Madinah).’
He said,
غَيْرُ الدَّجَّالِ أَخْوَفُنِي عَلَيكُمْ إِنْ يخْرُجْ وَأَنَا فِيكُمْ فَأَنَا حَجِيجُهُ دُونَكُمْ وَإِنْ يَخْرُجْ وَلَسْتُ فِيكُمْ فَامْرُوٌ حَجِيجُ نَفْسِهِ واللهُ خَلِيفَتِي عَلى كُلِّ مُسْلمٍ
I fear other than Ad-Dajjal for you! If he appears while I am still among you, I will be his adversary on your behalf. If he appears while I am not among you, each one will depend on himself and Allah will be the Helper of every Muslim after me.
إِنَّهُ شَابٌّ قَطَطٌ عَينُهُ طافِيةٌ كَأَنِّي أُشَبِّهُهُ بِعَبْدِالعُزَّى بْنِ قَطَنٍ
He is young, with very curly hair and his eye is smashed. I thought that he looked like Abdul-Uzza bin Qatan.
مَنْ أَدْرَكَهُ مِنْكُمْ فَلْيَقْرَأ عَلَيْهِ فَوَاتِحَ سُورَةِ الْكَهْفِ إِنَّه خَارِجٌ مِنْ خَلَّةٍ بَيْنَ الشَّامِ والعِرَاقِ فَعَاثَ يَمِينًا وَعَاثَ شِمَالاً يَاعِبَادَ اللهِ فَاثْبُتوا
Whoever lives long and meets Ad-Dajjal, then let him recite the beginnings of Surah Al-Kahf. He will appear on a pass between Ash-Sham (Syria) and Al-Iraq. He will wreak havoc to the right and left. O Servants of Allah! Hold fast.
We said, `O Messenger of Allah! How long will he stay on earth?’
He said,
أَرْبَعُونَ يَوْمًا يَومٌ كَسَنَةٍ وَيَوْمٌ كَشَهْرٍ وَيَوْمٌ كَجُمُعَةٍ وَسَايِرُ أَيَّامِهِ كَأَيَّامِكُم
Forty days:One day as long as a year, one day as long as a month and one day as long as a week. The rest of his days will be as long as one of your ordinary days.
We said, `O Messenger of Allah! As for the day that is like a year, will the prayers of one day suffice for it!’
He said,
لَاا اقْدُرُوا لَهُ قَدْرَه
No. Count for its due measure.
We said, `O Messenger of Allah, how will his speed be on earth?’
He said,
كَالْغَيْثِ اسْتَدْبَرَتْهُ الرِّيحُ فَيَأْتِي عَلى قَوْمٍ فَيَدْعُوهُمْ فَيُوْمِنُون بِهِ وَيَسْتَجِيبُونَ لَهُ
(Like the storm when driven by the wind. He will come to a people and will call them (to his worship), and they will believe in him and accept his call.
فَيَأْمُرُ السَّمَاءَ فَتُمْطِرُ وَالَارْضَ فَتُنْبِتُ فَتَرُوحُ عَلَيْهِمْ سَارِحَتُهُمْ أَطْوَلَ مَا كَانَتْ ذُرًى وَأَسْبَغَهُ ضُرُوعًا وَأَمَدَّهُ خَوَاصِرَ
He will order the sky and it will rain, the land and it will grow (vegetation). Their cattle will return to them with their hair the longest, their udders the fullest (with milk) and their stomachs the fattest.
ثُمَّ يَأْتِي الْقَوْمَ فَيَدْعُوهُمْ فَيَرُدُّونَ عَلَيْهِ قَوْلَهُ فَيَنْصَرِفُ عَنْهُمْ فَيُصْبِحُونَ مُمْحِلِينَ لَيْسَ بِأَيْدِيهِمْ شَيْءٌ مِنْ أَمْوَالِهِمْ وَيَمُرُّ بِالْخَرِبَةِ فَيَقُولُ لَهَا أَخْرِجِي كُنُوزَكِ فَتَتْبَعُهُ كُنُوزُهَا كَيعَاسِيبِ النَّحْلِ
He will come to a different people and will call them (to his worship), and they will reject his call. He will then leave them. They will wake up in the morning destitute, missing all of their possessions. He will pass by a deserted land and will say to it, `Bring out your treasures’, and its treasures will follow him just like swarms of bees.
ثُمَّ يَدْعُو رَجُلً مُمْتَلِيًا شَبَابًا فَيَضْرِبُهُ بِالسَّيْفِ فَيَقْطَعُهُ جِزْلَتَيْنِ رَمْيَةَ الْغَرَضِ ثُمَّ يَدْعُوهُ فَيُقْبِلُ وَيَتَهَلَّلُ وَجْهُهُ وَيَضْحَكُ
He will summon a man full of youth and will strike him with the sword once and will cut him into two pieces (and will separate between them like) the distance (between the hunter and) the game. He will call the dead man and he will come, and his face will radiant with pleasure and laughter.
فَبَيْنَما هُوَ كَذَلِكَ إِذْ بَعَثَ اللهُ الْمَسِيَح ابْنَ مَرْيَمَ عَلَيْهِ السَّلَمُ فَيَنْزِلُ عِنْدَ المَنَارَةِ البَيْضَاءِ شَرْقِيَّ دِمَشْقَ بَيْنَ مَهْرُودَتَيْنِ وَاضِعًا كَفَّيْهِ عَلَى أَجْنِحَةِ مَلَكَيْنِ إِذَا طَأْطَأَ رَأْسَهُ قَطَرَ وَإذَا رَفَعَهُ تَحَدَّرَ مِنْهُ جُمَانٌ كَاللُّوْلُوِ وَلَا يَحِلُّ لِكَافِرٍ يَجِدُ رِيحَ نَفَسِهِ إِلاَّ مَاتَ وَنَفَسُهُ يَنْتَهِي حَيْثُ يَنْتَهِي طَرَفُهُ
Afterwards (while all this is happening with Ad-Dajjal), Allah will send Al-Masih (`Isa), son of Maryam down. He will descend close to the white minaret to the east of Damascus. He will be wearing garments lightly colored with saffron and his hands will be placed on the wings of two angels. Whenever he lowers his head droplets fall. Whenever he raises his head, precious stones that look like pearls fall. No disbeliever can survive `Isa’s breath, which reaches the distance of his sight.
فَيَطْلُبُهُ حَتَّى يُدْرِكَهُ بِبَابِ لُدَ فَيَقْتُلُهُ
He will pursue Ad-Dajjal and will follow him to the doors of (the Palestinian city of) Ludd where he will kill him.
ثُمَّ يَأْتِي عِيسَى عَلَيْهِ السَّلَمُ قَوْمًا قَدْ عَصَمَهُمُ اللهُ مِنْهُ فَيَمْسَحُ عَنْ وُجُوهِهِمْ وَيُحَدِّثُهُمْ بدَرَجَاتِهِمْ فِي الْجَنَّةِ فَبَيْنَمَا هُوَ كَذَلِكَ إِذْ أَوْحَى اللهُ عَزَّ وَجَلَّ إِلَى عِيسَى إِنِّي قَدْ أَخْرَجْتُ عِبَادًا لِي لَا يَدَانِ لاَِحَدٍ بِقِتَالِهِمْ فَحَرِّزْ عِبَادِي إِلَى الطُّورِ
A group of people who, by Allah’s help, resisted and survived Ad-Dajjal, will pass by `Isa and he will anoint their faces and inform them about their grades in Paradise. Shortly afterwards, while this is happening with `Isa, Allah will reveal to him, `I raised a people of My creation that no one can fight. Therefore, gather My servants to At-Tur (the mountain of Musa in Sinai).’
ويَبْعَثُ اللهُ يَأْجُوجَ وَمَأْجُوجَ وَهُمْ مِنْ كُلِّ حَدَبٍ يَنْسِلُونَ فَيَمُرُّ أَوَّلُهُمْ عَلَى بُحَيْرَةِ طَبَرِيَّةَ فَيَشْرَبُونَ مَا فِيهَا وَيَمُرُّ اخِرُهُمْ فَيقُولُونَ لَقَدْ كَانَ بِهذِهِ مَرَّةً مَاءٌ
Then, Allah will raise Gog and Magog and they will swiftly swarm from every mound. Their front forces will reach Lake Tabariah (Sea of Galilee) and will drink all its water. The last of their forces will say as they pass by the lake, `This lake once had water!’
ويُحْصَرُ نَبِيُّ اللهِ عِيسَى وَأَصْحَابُهُ حَتَّى يَكُونَ رَأْسُ الثَّورِ لاَِحَدِهِمْ خَيْرٌ مِنْ مِايَةِ دِينَارٍ لاَِحَدِكُمُ الْيَوْمَ فَيَرْغَبُ نَبِيُّ اللهِ عِيسَى وَأَصْحَابُهُ فَيُرسِلُ اللهُ عَلَيْهِمُ النَّغَفَ فِي رِقَابِهِمْ فَيُصْبِحُونَ فَرْسَى كَمَوْتِ نَفْسٍ وَاحِدَةٍ
Meanwhile, `Isa, Allah’s Prophet, will be cornered along with his companions until the head of a bull will be more precious to them than a hundred Dinars to you today. `Isa, Allah’s Prophet, and his companions will invoke Allah for help and Allah will send An-Naghaf (a worm) into the necks of Gog and Magog! The morning will come, and they will all be dead as if it was the death of one soul.
ثُمَّ يَهْبِطُ نَبِيُّ اللهِ عِيسَى وَأَصْحَابُهُ إِلَى الاَْرْضِ فَلَ يَجِدُونَ فِي الاَْرْضِ مَوْضِعَ شِبْرٍ إِلاَّ مَلََهُ زَهَمُهُمْ ونَتْنُهُمْ
Afterwards, `Isa, the Prophet of Allah, will come down with his companions to the low grounds (from Mount At-Tur). They will find that no space of a hand-span on the earth was free of their fat and rot (rotten corpses).
فَيَرْغَبُ نَبِيُّ اللهِ عِيسَى وَأَصْحَابُهُ إِلَى اللهِ فَيُرْسِلُ اللهُ طَيْرًا كَأَعْنَاقِ الْبُخْتِ فَتَحْمِلُهُمْ فَتَطْرَحُهُمْ حَيْثَ شَاءَ اللهُ
`Isa, the Prophet of Allah, and his companions will seek Allah in supplication. Allah will send birds as large as the necks of camels. They will carry them (the corpses of Gog and Magog) and will throw them wherever Allah wills.
ثُمَّ يُرْسِلُ اللهُ مَطَرًا لَا يَكُنُّ مِنْهُ بَيْتُ مَدَرٍ وَلَا وَبَرٍ فَيَغْسِلُ الاَْرْضَ حَتَّى يَتْرُكَهَا كَالزَّلَفَةِ
Afterwards, Allah will send rain that no house made of mud or animal hair will be saved from, and it will cleanse the earth until it is as clean as a mirror.
ثُمَّ يُقَالُ لِلَْرْضِ أَخْرِجِي ثَمَرَكِ وَرُدِّي بَرَكَتَكِ
The earth will be commanded (by Allah), `Produce your fruits and regain your blessing.’
فَيَوْمَيِذٍ تَأْكُلُ الْعِصَابَةُ مِنَ الرُّمَّانَةِ وَيَسْتَظِلُّونَ بِقِحْفِهَا وَيُبَارِكُ اللهُ فِي الرِّسْلِ حَتَّى إِنَّ اللِّقْحَةَ مِنَ الاِْبِلِ لَتَكْفِي الفِيَامَ مِنَ النَّاسِ وَاللُّقْمَةَ مِنَ الْفَمِ لَتَكْفِي الْفَخِذَ مِنَ النَّاسِ فَبَيْنَما هُمْ كَذَلِكَ إِذْ بَعَثَ اللهُ رِيحًا طَيِّبَةً فَتَأْخُذُهُمْ تَحْتَ ابَاطِهِمْ فَتَقْبِضُ رُوحَ كُلِّ مُوْمِنٍ وَكُلِّ مُسْلِمٍ
Then, the group will eat from a pomegranate and will take shelter under the shade of its skin. Milk will be blessed, so much so that the milk-producing camel will yield large amounts that suffice for a large group of people. Meanwhile, Allah will send a pure wind that will overcome Muslims from under their arms and will take the soul of every believer and Muslim.
وَيَبْقَى شِرَارُ النَّاسِ يَتَهَارَجُونَ فِيهَا تَهَارُجَ الْحُمُرِ فَعَلَيْهِمْ تَقُومُ السَّاعَة
Only the evildoers among people will remain. They will indulge in shameless public sex like that of donkeys. On them, the Hour will begin.
Imam Ahmad and the collectors of the Sunan also recorded this Hadith.
We will mention this Hadith again using the chain of narration collected by Ahmad explaining Allah’s statement in Surah Al-Anbiya
حَتَّى إِذَا فُتِحَتْ يَأْجُوجُ وَمَأْجُوجُ
(Until, when Ya`juj and Ma`juj (Gog and Magog people) are let loose (from their barrier)). (21;96)
In our time, in the year seven hundred and forty-one, a white minaret was built in the Umayyad Masjid (in Damascus) made of stone, in place of the minaret that was destroyed by a fire which the Christians were suspected to have started. May Allah’s continued curses descend on the Christians until the Day of Resurrection. There is a strong feeling that this minaret is the one that `Isa will descend on, according to this Hadith.
Another Hadith
Muslim recorded in his Sahih that Yaqub bin Asim bin Urwah bin Mas`ud Ath-Thaqafi said,
“I heard Abdullah bin `Amr saying to a man who asked him, `What is this Hadith that you are narrating You claim that the Hour will start on such and such date.’
He said, `Subhan Allah (glory be to Allah),’ or he said, `There is no deity worthy of worship except Allah.’ I almost decided to never narrate anything to anyone. I only said, “Soon, you will witness tremendous incidents, the House (the Ka`bah) will be destroyed by fire, and such and such things will occur.”
He then said, `The Messenger of Allah said,
يَخْرُجُ الدَّجَّالُ فِي أُمَّتِي فَيَمْكُثُ أَرْبَعِينَ لَا أَدْرِي أَرْبَعِينَ يَوْمًا أَوْ أَرْبَعِينَ شَهْرًا أَوْ أَرْبَعِينَ عَامًا
Ad-Dajjal will appear in my nation and will remain for forty. (The narrator doubts whether it is forty days, months, or years).
فَيَبْعَثُ اللهُ تَعَالى عِيسَى ابْنَ مَرْيَمَ كَأَنَّهُ عُرْوَةُ بْنُ مَسْعُودٍ فَيَطْلُبُهُ فَيُهْلِكُهُ ثُمَّ يَمْكُثُ النَّاسُ سَبْعَ سِنِينَ لَيْسَ بَيْنَ اثْنَيْنِ عَدَاوَةٌ
Then, Allah will send down `Isa, son of Maryam, looking just like Urwah bin Mas`ud and he will seek Ad-Dajjal and will kill him. People will remain for seven years with no enmity between any two.
ثُمَّ يُرْسِلُ اللهُ ريحًا بَارِدَةً مِنْ قِبَلِ الشَّامِ فَلَ يَبْقَى عَلَى وَجْهِ الاَْرْضِ أَحَدٌ فِي قَلْبِهِ مِثْقَالُ ذَرَّةٍ مِنْ خَيْرٍ أَوْ إِيمَانٍ إِلاَّ قَبَضَتْهُ حَتَّى لَوْ أَنَّ أَحَدَكُمْ دَخَلَ فِي كَبِدِ جَبَلٍ لَدَخَلَتْه عَلَيْهِ حَتَّى تَقْبِضَه
Allah will send a cool wind from As-Sham that will leave no man on the face of the earth who has even the weight of an atom of good or faith, but will capture (his soul). Even if one of you takes refuge in the middle of a mountain, it will find him and capture (his soul).
فَيَبْقَى شِرَارُ النَّاسِ فِي خِفَّةِ الطَّيْرِ وَأَحْلَمِ السِّبَاعِ لَا يَعْرِفُونَ مَعْرُوفًا وَلَا يُنْكِرُون مُنْكرًا فَيَتمَثَّلُ لَهُمُ الشَّيْطَانُ فَيَقُولُ أَلَا تَسْتَجِيبُونَ
Afterwards, only the most evil people will remain. They will be as light as birds, with the comprehension of beasts. They will not know or enjoin righteousness or forbid or know evil. Shaytan will appear to them and will say to them, `Would you follow me.’
فَيَقُولُونَ فَمَا تَأْمُرُنَا
They will say, `What do you command us?’
فَيَأْمُرُهُمْ بِعِبَادَةِ الاَْوْثَانِ وَهُمْ فِي ذلِكَ دَارٌّ رِزْقُهُمْ حَسَنٌ عَيْشُهُمْ ثُمَّ يُنْفَخُ فِي الصُّورِ فَلَ يَسْمَعُهُ أَحَدٌ إِلاَّ أَصْغَى لِيتًا وَرَفَعَ لِيتًا
He will command them to worship the idols. Meanwhile, their provision will come to them in abundance and their life will be good. Then the Trumpet will be blown and every person who hears it, will lower one side of his head and raise the other side (trying to hear that distant sound).
قَالَ وَأَوَّلُ مَنْ يَسْمَعُهُ رَجُلٌ يَلُوطُ حَوْضَ إِبِلِهِ قَالَ فَيَصْعَقُ وَيَصْعَقُ النَّاسُ ثُمَّ يُرْسِلُ اللهُ أَوْ قَالَ يُنْزِلُ اللهُ مَطَرًا كَأَنَّهُ الطَّلُّ أَوْ قَالَ الظِّلُّ نُعْمَانُ الشَّاكُّ فَتَنْبُتُ مِنْهُ أَجْسَادُ النَّاسِ
The first man who will hear the Trumpet is someone who is preparing the water pool for his camels, and he and the people will swoon away. Allah will send down heavy rain and the bodies of people will grow with it.
ثُمَّ يُنَفَخُ فِيهِ أُخْرَى فَإِذَا هُمْ قِيَامٌ يَنْظُرُونَ ثُمَّ يُقَالُ أَيُّهَا النَّاسُ هَلُمُّوا إِلى رَبِّكُم
The Trumpet will be blown in again and the people will be resurrected and looking all about, staring. It will be said to them, `O people! Come to your Lord,’
وَقِفُوهُمْ إِنَّهُم مَّسْيُولُونَ
But stop them, verily, they are to be questioned. (37:24)
ثم يقال أخرجوا بعث النار فيقال من كم
It will then be said, `Bring forth the share of the Fire.’ It will be asked, `How many?’
فيقال من كل ألف تسعماية وتسعة وتسعين
It will be said, `From every one thousand, nine hundred and ninety-nine.’
قال فذلك يوم
That Day is when,
يَوْمًا يَجْعَلُ الْوِلْدَانَ شِيبًا
the children will turn grey-headed, (73:17)
and,
يَوْمَ يُكْشَفُ عَن سَاقٍ
The Day when the Shin shall be laid bare). (68:42)”
The Description of `Isa, upon him be Peace
As mentioned earlier, Abdur-Rahman bin Adam narrated that Abu Hurayrah said that the Prophet said,
فَإِذَا رَأَيْتُمُوهُ فَاعْرِفُوهُ رَجُلٌ مَرْبُوعٌ إِلَى الْحُمْرَةٍ وَالْبَيَاضِ عَلَيْهِ ثَوْبَانِ مُمَصَّرَانِ كَأَنَّ رَأْسَهُ يَقْطُرُ وَإِنْ لَمْ يُصِبْهُ بَلَل
If you see `Isa, know him. He is a well-built man, (the color of his skin) between red and white. He will descend while wearing light yellow garments. His head looks like it is dripping water, even though no moisture touched it.
In the Hadith that An-Nawwas bin Sam`an narrated,
فَيَنْزِلُ عِنْدَ الْمَنَارَةِ الْبَيْضَاءِ شَرْقِيَّ دِمَشْقَ بَيْنَ مَهْرُودَتَيْنِ وَاضِعًا كَفَّيْهِ عَلَى أَجْنِحَةِ مَلَكَيْنِ إِذَا طَأْطَأَ رَأْسَهُ قَطَرَ وَإِذَا رَفَعهُ تَحَدَّرَ مِنْهُ مِثْلُ جُمَانِ اللُّوْلُو لَا يَحِلُّ لِكَافِرٍ يَجِدُ رِيحَ نَفَسِهِ إِلاَّ مَاتَ وَنَفَسُهُ يَنْتَهِي حَيْثُ يَنْتَهِي طَرَفُه
He will descend close to the white minaret to the east of Damascus. He will be wearing two garments lightly colored with saffron, having his hands on the wings of two angels. Whenever he lowers his head, drops will fall off of it. Whenever he raises his head, precious jewels like pearls will fall off of it. No disbeliever can survive `Isa’s breath, and his breath reaches the distance of his sight.
Al-Bukhari and Muslim recorded that Abu Hurayrah said that the Messenger of Allah said,
لَيْلَةَ أُسْرِيَ بِي لَقِيتُ مُوسَى
I met Musa on the night of my Ascension to heaven.
The Prophet then described him saying, as I think,
مُضْطَرِبٌ رَجِلُ الرَّأْسِ كَأَنَّهُ مِنْ رِجَالِ شَنُوءَة
He was a tall person with hair as if he was one of the men from the tribe of Shanu’ah.
The Prophet further said,
وَلقِيتُ عِيسَى
`I met `Isa.’
The Prophet described him saying,
رَبْعَةٌ أَحْمَرُ كَأَنَّهُ خَرَجَ مِنْ دِيمَاس
`He was of moderate height and was red-faced as if he had just come out of a bathroom.
وَرَأَيْتُ إبْرَاهِيمَ وَأَنا أَشْبَهُ وَلَدِهِ بِه
I saw Ibrahim whom I resembled more than any of his children did.’
Al-Bukhari recorded that Mujahid said that Ibn Umar said that the Messenger of Allah said,
رَأَيْتُ مُوسَى وَعِيسَى وَإِبْرَاهِيمَ
I saw Musa, `Isa and Ibrahim.
فَأَمَّا عِيسَى فَأَحْمَرُ جَعْدٌ عَرِيضُ الصَّدْرِ وَأَمَّا مُوسَى فَأدَمُ جَسِيمٌ سَبْطٌ كَأَنَّهُ مِنْ رِجَالِ الزُّط
`Isa was of red complexion and had curly hair and a broad chest. Musa was of brown complexion and had straight hair and a tall stature, as if he was from the people of Az-Zutt.
Al-Bukhari and Muslim recorded that Ibrahim said that Abdullah bin Umar said,
“The Prophet once mentioned the False Messiah (Al-Masih Ad-Dajjal) to people, saying,
إنَّ اللهَ لَيْسَ بِأَعْوَرَ أَلَا إِنَّ الْمَسِيحَ الدَّجَّالَ أَعْوَرُ الْعَيْنِ الْيُمْنَى كَأَنَّ عَيْنَهُ عِنَبَةٌ طَافِيَة
Allah is not blind in His Eye. Al-Masih Ad-Dajjal is blind in his right eye. His eye is like a protruding grape.”
Muslim recorded that the Messenger of Allah said,
وَأرَانِي اللهُ عِنْدَ الْكَعْبَةِ فِي الْمَنَامِ فَإِذَا رَجُلٌ ادَمُ كَأَحْسَنِ مَا تَرَى مِنْ أُدْمِ الرِّجَالِ تَضْرِبُ لِمَّتُهُ بَيْن مَنْكِبَيْهِ رَجِلُ الشَّعْرِ يَقْطُرُ رَأْسُهُ مَاءً وَاضِعًا يَدَيْهِ عَلى مَنْكِبَيْ رَجُلَيْنِ وَهُوَ يَطُوفُ بِالْبَيْتِ
In a dream, I was at the Ka`bah and Allah made me see a light – colored man, a color that is as beautiful as a light – colored man could be, with combed hair that reached his shoulders. His hair was dripping water, and he was leaning on the shoulders of two men while circling the Ka`bah.
فَقُلْتُ مَنْ هَذَا
I asked, `Who is this man?’
فَقَالُوا هُوَ الْمَسِيحُ ابْنُ مَرْيَمَ
I was told, `This is the Al-Masih, son of Maryam.’
ثُمَّ رَأَيْتُ وَرَاءَهُ رَجُلً جَعْدًا قَطِطًا أَعْوَرَ الْعَيْنِ الْيُمْنَى كَأَشْبَهِ مَنْ رَأَيْتُ بِابْنِ قَطَنٍ وَاضِعًا يَدَيْهِ عَلى مَنْكِبَي رَجُلٍ يَطُوفُ بِالْبَيْتِ
Behind him, I saw a man with very curly hair who was blind in his right eye. He looked exactly as Ibn Qatan, and he was leaning on the shoulder of a man while circling the House.
فَقُلْتُ مَنْ هَذَا
I asked, `Who is this man?’
قَالُوا الْمَسِيحُ الدَّجَّال
I was told, `He is Al-Masih Ad-Dajjal.’
Al-Bukhari recorded that Salim said that his father said,
“No, By Allah! The Prophet did not say that `Isa was of red complexion but said,
بَيْنَمَا أَنَا نَايِمٌ أَطُوفُ بِالْكَعْبَةِ فَإِذَا رَجُلٌ ادَمُ سَبْطُ الشَّعْرِ يَتَهَادَى بَيْنَ رَجُلَيْنِ يَنْطُفُ رَأْسُهُ مَاءً أَوْ يُهَرَاقُ رَأْسُهُ مَاءً
While I was asleep circumambulating the Ka`bah (in my dream), I suddenly saw a man of brown complexion and ample hair walking between two men with water dripping from his head.
فَقُلْتُ مَنْ هَذَا
I asked, `Who is this?’
فَقَالُوا ابْنُ مَرْيَمَ
The people said, `He is the son of Maryam.’
فَذَهَبْتُ أَلْتَفِتُ فَإِذَا رَجُلٌ أَحْمَرُ جَسِيمٌ جَعْدُ الرَّاْسِ أَعْوَرُ عَيْنِهِ الْيُمْنَى كَأَنَّ عَيْنَهُ عِنَبَةٌ طَافِيَةٌ
Then I looked behind and I saw a red-complexioned, fat, curly-haired man, blind in the right eye, which looked like a bulging out grape.
قُلْتُ مَنْ هَذَا
I asked, `Who is this?’
قَالُو الدَّجَّالُ
They replied, `He is Ad-Dajjal.’
وَأَقْرَبُ النَّاسِ بِهِ شَبَهًا ابْنُ قَطَن
The person he most resembled is Ibn Qatan.”
Az-Zuhri commented that Ibn Qatan was a man from the tribe of Khuza`ah who died during the time of Jahiliyyah.
This is the wording of Al-Bukhari.
Allah’s statement,
وَيَوْمَ الْقِيَامَةِ يَكُونُ عَلَيْهِمْ شَهِيدًا
And on the Day of Resurrection, he (`Isa) will be a witness against them.
Qatadah said,
“He will bear witness before them that he has delivered the Message from Allah and that he is but a servant of His.”
In a similar statement in the end of Surah Al-Ma’idah,
وَإِذْ قَالَ اللّهُ يَا عِيسَى ابْنَ مَرْيَمَ أَأَنتَ قُلتَ لِلنَّاسِ
And (remember) when Allah will say (on the Day of Resurrection):”O `Isa, son of Maryam! Did you say unto men…” (5:116) until,
أَنتَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ
(Almighty, the All-Wise). (5;118)