أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book# 114/١٧٠)-৩৭২
www.motaher21.net
يَا أَهْلَ الْكِتَابِ لَا تَغْلُواْ فِي دِينِكُمْ
হে কিতাবীগণ, তোমরা তোমাদের দীনের মধ্যে বাড়াবাড়ি করো না ।
O People of the Scripture! Do not exceed the limits in your religion,
সুরা: আন-নিসা
আয়াত নং :-১৭১
يٰٓأَهْلَ الْكِتٰبِ لَا تَغْلُوا فِى دِينِكُمْ وَلَا تَقُولُوا عَلَى اللَّهِ إِلَّا الْحَقَّ ۚ إِنَّمَا الْمَسِيحُ عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ رَسُولُ اللَّهِ وَكَلِمَتُهُۥٓ أَلْقٰىهَآ إِلٰى مَرْيَمَ وَرُوحٌ مِّنْهُ ۖ فَـَٔامِنُوا بِاللَّهِ وَرُسُلِهِۦ ۖ وَلَا تَقُولُوا ثَلٰثَةٌ ۚ انتَهُوا خَيْرًا لَّكُمْ ۚ إِنَّمَا اللَّهُ إِلٰهٌ وٰحِدٌ ۖ سُبْحٰنَهُۥٓ أَن يَكُونَ لَهُۥ وَلَدٌ ۘ لَّهُۥ مَا فِى السَّمٰوٰتِ وَمَا فِى الْأَرْضِ ۗ وَكَفٰى بِاللَّهِ وَكِيلًا
হে কিতাবীগণ, তোমরা তোমাদের দীনের মধ্যে বাড়াবাড়ি করো না এবং আল্লাহর উপর সত্য ছাড়া অন্য কিছু বলো না। মারইয়ামের পুত্র মাসীহ ঈসা কেবলমাত্র আল্লাহর রাসূল ও তাঁর কালিমা, যা তিনি প্রেরণ করেছিলেন মারইয়ামের প্রতি এবং তাঁর পক্ষ থেকে রূহ। সুতরাং তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলগণের প্রতি ঈমান আন এবং বলো না, ‘তিন’। তোমরা বিরত হও, তা তোমাদের জন্য উত্তম। আল্লাহই কেবল এক ইলাহ, তিনি পবিত্র মহান এ থেকে যে, তাঁর কোন সন্তান হবে। আসমানসূহে যা রয়েছে এবং যা রয়েছে যমীনে, তা আল্লাহরই। আর কর্মবিধায়ক হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট।
১৭১ নং আয়াতের তাফসীর:
তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ বলেছেন:-
غلو (অতিরঞ্জন বা বাড়াবাড়ি করা) শব্দের তাৎপর্য হল, কোন বস্তুকে তার নির্ধারিত সীমা থেকে বাড়িয়ে দেয়া।
আল্লাহ তা‘আলা আহলে কিতাবদেরকে ধর্মের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি ও সীমালঙ্ঘন করতে নিষেধ করেছেন। এ অপরাধ খ্রিস্টানদের মধ্যে বেশি বিদ্যমান। যেমন তারা ঈসা (আঃ)-এর সত্যতার ব্যাপারে সীমালঙ্ঘন করেছে। এমনকি আল্লাহ তা‘আলা তাঁকে যে মর্যাদা দান করেছেন তারা তার ঊর্ধ্বে তুলে দিয়েছিল।
তারা ঈসা (আঃ)-কে নাবীর মর্যাদা থেকে ইলাহের মর্যাদায় তুলে দিয়েছে। তারা ধর্ম যাজকদেরকে মা‘বূদ বানিয়ে নিয়েছিল। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(اِتَّخَذُوْآ أَحْبَارَهُمْ وَرُهْبَانَهُمْ أَرْبَابًا مِّنْ دُوْنِ اللّٰهِ)
“তারা আল্লাহ ব্যতীত তাদের পণ্ডিতগণকে ও সংসার-বিরাগিগণকে তাদের প্রভুরূপে গ্রহণ করেছে।”(সূরা তাওবাহ ৯:৩১)
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খ্রিস্টানদের বাড়াবাড়ি দেখে উম্মতকে সতর্ক করে বলেছেন: তোমরা আমার ব্যাপারে তেমন বাড়াবাড়ি করো না যেমন খ্রিস্টানরা ঈসা (আঃ)-এর ব্যাপারে করেছে। আমি কেবল একজন আল্লাহ তা‘আলার বান্দা ও রাসূল, সুতরাং তোমরা আমাকে আল্লাহ তা‘আলার বান্দা ও রাসূল বলে সম্বোধন কর। (সহীহ বুখারী হা: ৩৪৪৫)
অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা মানুষদেরকে সর্তক করে বলেন: তোমরা আল্লাহ তা‘আলার ব্যাপারে সত্য ছাড়া আর কিছু বলবে না। আয়াতের এ অংশ তিনটি জিনিস শামিল করে:
(১) আল্লাহ তা‘আলার ব্যাপারে মিথ্যারোপ করা যাবে না।
(২) বিনা জ্ঞানে আল্লাহ তা‘আলার গুণাবলী, নাম কাজ ও শরীয়াতের ব্যাপারে মুখ খোলা যাবে না।
(৩) আল্লাহ তা‘আলার ব্যাপারে যা বলবে সত্য বলবে।
তাই আল্লাহ তা‘আলা খ্রিস্টানদেরকে বলছেন, তোমরা যে বলে থাক আল্লাহ তা‘আলা তিনজনের একজন, ঈসা আল্লাহ তা‘আলার সন্তান, মারইয়াম আল্লাহ তা‘আলার স্ত্রী ইত্যাদি সব মিথ্যা এবং এসব আল্লাহ তা‘আলার ব্যাপারে অপবাদ মাত্র।
(إِنَّمَا الْمَسِيْحُ عِيْسٰي)
‘মারইয়ামের ছেলে ‘ঈসা মসীহ’ঈসা (আঃ) আল্লাহ তা‘আলার একজন বান্দা, তিনি আল্লাহ তা‘আলার সন্তান নন। একটি মাত্র কথা ‘কুন’(হয়ে যাও) দ্বারা আল্লাহ তা‘আলা মারইয়ামের গর্ভে পিতা ছাড়া সৃষ্টি করেছেন। এবং যেসকল রূহ দ্বারা তিনি মানুষ সৃষ্টি করেন তার মধ্যে ঈসা (আঃ) অন্যতম একটি। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَالَّتِيْٓ أَحْصَنَتْ فَرْجَهَا فَنَفَخْنَا فِيْهَا مِنْ رُّوْحِنَا وَجَعَلْنٰهَا وَابْنَهَآ اٰيَةً لِّلْعٰلَمِيْنَ)
“এবং স্মরণ কর সে নারী (মারইয়াম)-কে, যে নিজ সতীত্বকে রক্ষা করেছিল, অতঃপর তার মধ্যে আমি আমার রূহ ফুঁকে দিয়েছিলাম এবং তাকে ও তার পুত্রকে করেছিলাম বিশ্ববাসীর জন্য এক নিদর্শন। (সূরা আম্বিয়া ২১:৯১)
এরূপ ঘটনা সূরা মায়িদার ৭৫ নং, সূরা আল ইমরানের ৫৯ নং, সূরা তাহরীমের ১২ নং আয়াতে উল্লেখ করেছেন।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যে ব্যক্তি সাক্ষ্য দিল আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া সত্য কোন মা‘বূদ নেই, তার কোন শরীক নেই, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহ তা‘আলার বান্দা ও রাসূল, ঈসা (আঃ) আল্লাহ তা‘আলার বান্দা ও রাসূল, তিনি আল্লাহ তা‘আলার একটি কথা যা মারইয়ামের প্রতি ফুঁকে দিয়েছেলেন, তিনি আল্লাহ তা‘আলার রূহসমূহের অন্যতম একটি রূহ, জান্নাত সত্য, জাহান্নাম সত্য, তার যে আমলই থাকুক না কেন আল্লাহ তা‘আলা তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। (সহীহ বুখারী হা: ৩৪৩৫)
অতএব আল্লাহ তা‘আলা ও রাসূলগণের প্রতি যেভাবে ঈমান আনা দরকার সেভাবে ঈমান আন। আর “তিন বল না”। অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলা তিনজন- এ কথা বল না। যারা এ কথা বলে তারা কাফির। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(لَقَدْ كَفَرَ الَّذِيْنَ قَالُوْآ إِنَّ اللّٰهَ ثَالِثُ ثَلٰثَةٍ م وَمَا مِنْ إلٰهٍ إِلَّآ إِلٰهٌ وَّاحِدٌ)
“যারা বলে, ‘আল্লাহ তো তিনের মধ্যে একজন, তারা কুফরী করেছে- এক ইলাহ ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ সত্যিকার নেই।”(সূরা মায়িদাহ ৫:৭৩)
তাই আমরাও যেন আমাদের নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-সহ কোন নাবী, ওলী-আওলিয়ার ব্যাপারে বাড়াবাড়ি না করি। আমরা প্রত্যেক নাবীকে তার উপযুক্ত মর্যাদা প্রদান করবো, মর্যাদার নামে সীমালংঘন করবো না।
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. দীনের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করা হারাম।
২. বিনা জ্ঞানে আল্লাহ তা‘আলার ব্যাপারে কথা বলা হারাম।
৩. ঈসা (আঃ) আল্লাহ তা‘আলার একজন বান্দা ও রাসূল।
৪. তিনজন আল্লাহ- এ কথা যারা বলে তারা কাফির।
৫. নাবী ও ওলী আওলিয়াদের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করা নিষেধ।
English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
An Nisa:-
Verse:- 171
Prohibiting the People of the Book From Going to Extremes in Religion
Allah says;
يَا أَهْلَ الْكِتَابِ لَا تَغْلُواْ فِي دِينِكُمْ
O People of the Scripture! Do not exceed the limits in your religion,
Allah forbids the People of the Scriptures from going to extremes in religion, which is a common trait of theirs, especially among the Christians.
The Christians exaggerated over `Isa until they elevated him above the grade that Allah gave him. They elevated him from the rank of Prophethood to being a god, whom they worshipped just as they worshipped Allah.
They exaggerated even more in the case of those who they claim were his followers, claiming that they were inspired, thus following every word they uttered whether true or false, be it guidance or misguidance, truth or lies.
This is why Allah said,
اتَّخَذُواْ أَحْبَـرَهُمْ وَرُهْبَـنَهُمْ أَرْبَاباً مِّن دُونِ اللَّهِ
They took their rabbis and their monks to be their lords besides Allah. (9:31)
Imam Ahmad recorded that Ibn Abbas said that Umar said that the Messenger of Allah said,
لَاا تُطْرُونِي كَمَا أَطْرَتِ النَّصَارَىِ عِيسَى ابْنَ مَرْيَمَ فَإِنَّمَا أَنَا عَبْدٌ
فَقُولُوا
Do not unduly praise me like the Christians exaggerated over `Isa, son of Maryam. Verily, I am only a servant, so say,
عَبْدُاللهِ وَرَسُولُه
`Allah’s servant and His Messenger.’
This is the wording of Al-Bukhari.
Imam Ahmad recorded that Anas bin Malik said that;
a man once said, “O Muhammad! You are our master and the son of our master, our most righteous person and the son of our most righteous person…” The Messenger of Allah said,
يَا أَيُّهَا النَّاسُ عَلَيْكُمْ بِقَوْلِكُمْ وَلَاا يَسْتَهْوِيَنَّكُمُ الشَّيْطَانُ
O people! Say what you have to say, but do not allow Shaytan to trick you.
أَنَا مُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِاللهِ عَبْدُاللهِ وَرَسُولُهُ وَاللهِ مَا أُحِبُّ أَنْ تَرْفَعُونِي فَوْقَ مَنْزِلَتِي الَّتِي أَنْزَلَنِي اللهُ عَزَّ وَجَل
I am Muhammad bin Abdullah, Allah’s servant and Messenger. By Allah! I do not like that you elevate me above the rank that Allah has granted me.
Allah’s statement,
وَلَا تَقُولُواْ عَلَى اللّهِ إِلاَّ الْحَقِّ
(nor say of Allah except the truth.) means, do not lie and claim that Allah has a wife or a son, Allah is far holier than what they attribute to Him. Allah is glorified, praised, and honored in His might, grandure and greatness, and there is no deity worthy of worship nor Lord but Him.
Allah said;
إِنَّمَا الْمَسِيحُ عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ رَسُولُ اللّهِ وَكَلِمَتُهُ أَلْقَاهَا إِلَى مَرْيَمَ وَرُوحٌ مِّنْهُ
Al-Masih `Isa, son of Maryam, was (no more than) a Messenger of Allah and His Word, which He bestowed on Maryam and a spirit from (created by) Him;
`Isa is only one of Allah’s servants and one of His creatures. Allah said to him, `Be’, and he was, and He sent him as a Messenger.
`Isa was a word from Allah that He bestowed on Maryam,
meaning He created him with the word `Be’ that He sent with Jibril to Maryam. Jibril blew the life of `Isa into Maryam by Allah’s leave, and `Isa came to existence as a result.
This incident was in place of the normal conception between man and woman that results in children. This is why `Isa was a word and a Ruh (spirit) created by Allah, as he had no father to conceive him. Rather, he came to existence through the word that Allah uttered, `Be,’ and he was, through the life that Allah sent with Jibril.
Allah said,
مَّا الْمَسِيحُ ابْنُ مَرْيَمَ إِلاَّ رَسُولٌ قَدْ خَلَتْ مِن قَبْلِهِ الرُّسُلُ وَأُمُّهُ صِدِّيقَةٌ كَانَا يَأْكُلَنِ الطَّعَامَ
Al-Masih (`Isa), son of Maryam, was no more than a Messenger; many were the Messengers that passed away before him. His mother (Maryam) was a Siddiqah. They both ate food. (5:75)
And Allah said,
إِنَّ مَثَلَ عِيسَى عِندَ اللَّهِ كَمَثَلِ ءَادَمَ خَلَقَهُ مِن تُرَابٍ ثُمَّ قَالَ لَهُ كُن فَيَكُونُ
Verily, the likeness of `Isa before Allah is the likeness of Adam. He created him from dust, then (He) said to him:”Be! ـ and he was. (3:59)
وَالَّتِى أَحْصَنَتْ فَرْجَهَا فَنَفَخْنَا فِيهَا مِن رُّوحِنَا وَجَعَلْنَـهَا وَابْنَهَأ ءَايَةً لِّلْعَـلَمِينَ
And she who guarded her chastity, We breathed into her (garment) and We made her and her son (`Isa) a sign for all that exits. (21:91)
وَمَرْيَمَ ابْنَةَ عِمْرَانَ الَّتِى أَحْصَنَتْ فَرْجَهَا
And Maryam, the daughter of `Imran who guarded her chastity. (66:12)
and Allah said concerning the Messiah,
إِنْ هُوَ إِلاَّ عَبْدٌ أَنْعَمْنَا عَلَيْهِ
He (`Isa) was not more than a servant. We granted Our favor to him. (43:59)
The Meaning of “His Word and a spirit from Him
Abdur-Razzaq narrated that Ma`mar said that Qatadah said that the Ayah,
وَكَلِمَتُهُ أَلْقَاهَا إِلَى مَرْيَمَ وَرُوحٌ مِّنْهُ
(And His Word, which He bestowed on Maryam and a spirit from (created by) Him) means,
He said,
كُنَّ
(Be) and he was.
Ibn Abi Hatim recorded that Ahmad bin Sinan Al-Wasiti said that he heard Shadh bin Yahya saying about Allah’s statement,
وَكَلِمَتُهُ أَلْقَاهَا إِلَى مَرْيَمَ وَرُوحٌ مِّنْهُ
(and His Word, which He bestowed on Maryam and a spirit from (created by) Him),
“Isa was not the word. Rather, Isa came to existence because of the word.”
Al-Bukhari recorded that Ubadah bin As-Samit said that the Prophet said,
مَنْ شَهِدَ أَنْ لَا إِلهَ إِلاَّ اللهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ وَأَنَّ عِيسَى عَبْدُاللهِ وَرَسُولُهُ وَكَلِمَتُهُ أَلْقَاهَا إِلى مَرْيَمَ وَرُوحٌ مِنْهُ وَأَنَّ الْجَنَّةَ حَقٌّ وَالنَّارَ حَقٌّ أَدْخَلَهُ اللهُ الْجَنَّةَ عَلَى مَا كَانَ مِنَ الْعَمَل
If anyone testifies that none has the right to be worshipped but Allah Alone Who has no partners, and that Muhammad is His servant and Messenger, and that `Isa is Allah’s servant and Messenger and His Word which He bestowed on Maryam and a spirit created by Him, and that Paradise is true and Hell is true, then Allah will admit him into Paradise with the deeds which he performed.
In another narration, the Prophet said,
مِنْ أَبْوَابِ الْجَنَّةِ الثَّمَانِيَّةِ يَدْخُلُ مِنْ أَيِّهَا شَاء
through any of the eight doors of Paradise he wishes.
Muslim also recorded it.
Therefore, `Ruh from Allah’, in the Ayah and the Hadith is similar to Allah’s statement,
وَسَخَّرَ لَكُمْ مَّا فِى السَّمَـوَتِ وَمَا فِى الاٌّرْضِ جَمِيعاً مِّنْهُ
And has subjected to you all that is in the heavens and all that is in the earth; it is all from Him. (45:13)
meaning, from His creation.
`from Him’ does not mean that it is a part of Him, as the Christians claim, may Allah’s continued curses be upon them.
Saying that something is from Allah, such as the spirit of Allah, the she-camel of Allah or the House of Allah, is meant to honor such items.
Allah said,
هَـذِهِ نَاقَةُ اللَّهِ
This is the she-camel of Allah… (11:64)
and,
وَطَهِّرْ بَيْتِىَ لِلطَّأيِفِينَ
and sanctify My House for those who circumambulate it. (22:26)
An authentic Hadith states,
فَأَدْخُلُ عَلَى رَبِّي فِي دَارِه
I will enter on my Lord in His Home.
All these examples are meant to honor such items when they are attributed to Allah in this manner.
Allah said,
فَأمِنُواْ بِاللّهِ وَرُسُلِهِ
so believe in Allah and His Messengers.
believe that Allah is One and Alone and that He does not have a son or wife. Know and be certain that `Isa is the servant and Messenger of Allah.
Allah said after that,
وَلَا تَقُولُواْ ثَلَثَةٌ
Say not:”Three!”
do not elevate `Isa and his mother to be gods with Allah. Allah is far holier than what they attribute to Him.
In Surah Al-Ma’idah, Allah said,
لَّقَدْ كَفَرَ الَّذِينَ قَالُواْ إِنَّ اللَّهَ ثَـلِثُ ثَلَـثَةٍ وَمَا مِنْ إِلَـهٍ إِلاَّ إِلَـهٌ وَحِدٌ
Surely, disbelievers are those who said:”Allah is the third of the three.” But there is none who has the right to be worshipped but One God. (5:73)
Allah said by the end of the same Surah,
وَإِذْ قَالَ اللَّهُ يعِيسَى ابْنَ مَرْيَمَ أَءَنتَ قُلتَ لِلنَّاسِ اتَّخِذُونِى
And (remember) when Allah will say (on the Day of Resurrection):”O `Isa, son of Maryam! Did you say unto men:`Worship me!”‘ (5:116)
and in its beginning,
لَّقَدْ كَفَرَ الَّذِينَ قَألُواْ إِنَّ اللَّهَ هُوَ الْمَسِيحُ ابْنُ مَرْيَمَ
Surely, in disbelief are they who say that Allah is the Messiah, son of Maryam. (5:17)
The Christians, may Allah curse them, have no limit to their disbelief because of their ignorance, so their deviant statements and their misguidance grows. Some of them believe that `Isa is Allah, some believe that he is one in a trinity and some believe that he is the son of Allah. Their beliefs and creeds are numerous and contradict each other, prompting some people to say that if ten Christians meet, they would end up with eleven sects!
The Christian Sects
Sa`id bin Batriq, the Patriarch of Alexandria and a famous Christian scholar, mentioned in the year four hundred after the Hijrah, that;
a Christian Council convened during the reign of Constantine, who built the city that bears his name. In this Council, the Christians came up with what they called the Great Trust, which in reality is the Great Treachery. There were more than two thousand patriarchs in this Council, and they were in such disarray that they divided into many sects, where some sects had twenty, fifty or a hundred members, etc.!
When the king saw that there were more than three hundred Patriarchs who had the same idea, he agreed with them and adopted their creed.
Constantine who was a deviant philosopher — gave his support to this sect for which, as an honor, churches were built and doctrines were taught to young children, who were baptized on this creed, and books were written about it. Meanwhile, the king oppressed all other sects.
Another Council produced the sect known as the Jacobites, while the Nestorians were formed in a third Council.
These three sects agreed that `Isa was divine, but disputed regarding the manner in which `Isa’s divinity was related to his humanity; were they in unity or did Allah incarnate in `Isa!
All three of these sects accuse each other of heresy and, we believe that all three of them are disbelievers.
Allah said,
انتَهُواْ خَيْرًا لَّكُمْ
Cease! (it is) better for you.
meaning, it will be better for you.
.
إِنَّمَا اللّهُ إِلَـهٌ وَاحِدٌ سُبْحَانَهُ أَن يَكُونَ لَهُ وَلَدٌ
For Allah is (the only) One God, hallowed be He above having a son.
and He is holier than such claim.
لَّهُ مَا فِي السَّمَاوَات وَمَا فِي الَارْضِ وَكَفَى بِاللّهِ وَكِيلً
To Him belongs all that is in the heavens and all that is in the earth. And Allah is All-Sufficient as a Disposer of affairs,
for all are creatures, property and servants under His control and disposal, and He is the Disposer of the affairs. Therefore, how can He have a wife or a son among them.
بَدِيعُ السَّمَـوَتِ وَالاٌّرْضِ أَنَّى يَكُونُ لَهُ وَلَدٌ
He is the originator of the heavens and the earth. How can He have children. (6:101)
and,
وَقَالُوا اتَّخَذَ الرَّحْمَنُ وَلَدًا
لَقَدْ جِيْتُمْ شَيْيًا إِدًّا
And they say:”The Most Gracious (Allah) has begotten a son. Indeed you have brought forth (said) a terrible evil thing.” Up to His saying,
فَرْدًا
(Alone). (19:88-95)
সুরা: আন-নিসা
আয়াত নং :-১৭১
یٰۤاَهْلَ الْكِتٰبِ لَا تَغْلُوْا فِیْ دِیْنِكُمْ وَ لَا تَقُوْلُوْا عَلَى اللّٰهِ اِلَّا الْحَقَّؕ اِنَّمَا الْمَسِیْحُ عِیْسَى ابْنُ مَرْیَمَ رَسُوْلُ اللّٰهِ وَ كَلِمَتُهٗۚ اَلْقٰىهَاۤ اِلٰى مَرْیَمَ وَ رُوْحٌ مِّنْهُ٘ فَاٰمِنُوْا بِاللّٰهِ وَ رُسُلِهٖ ۚ۫ وَ لَا تَقُوْلُوْا ثَلٰثَةٌؕ اِنْتَهُوْا خَیْرًا لَّكُمْؕ اِنَّمَا اللّٰهُ اِلٰهٌ وَّاحِدٌؕ سُبْحٰنَهٗۤ اَنْ یَّكُوْنَ لَهٗ وَلَدٌۘ لَهٗ مَا فِی السَّمٰوٰتِ وَ مَا فِی الْاَرْضِؕ وَ كَفٰى بِاللّٰهِ وَكِیْلًا۠
হে আহলী কিতাব! নিজেদের দ্বীনের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করো না আর সত্য ছাড়া কোন কথা আল্লাহর সাথে সম্পৃক্ত করো না। মারয়াম পুত্র ঈসা মসীহ আল্লাহর একজন রসূল ও একটি ফরমান ছাড়া আর কিছুই ছিল না, যা আল্লাহ মারয়ামের দিকে পাঠিয়েছিলেন। আর সে একটি রূহ ছিল আল্লাহর পক্ষ থেকে (যে মারয়ামের গর্ভে শিশুর রূপ ধারণ করেছিল) । কাজেই তোমরা আল্লাহ ও তার রসূলদের প্রতি ঈমান আনো এবং “তিন” বলো না। নিবৃত্ত হও, এটা তোমাদের জন্যই ভালো। আল্লাহই তো একমাত্র ইলাহ। কেউ তার পুত্র হবে, তিনি এর অনেক উর্ধ্বে। পৃথিবী ও আকাশের সবকিছুই তার মালিকানাধীন এবং সে সবের প্রতিপালক ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য তিনি নিজেই যথেষ্ট।
তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
টিকা:২১১) এখানে আহলে কিতাব খৃস্টানদের বুঝানো হয়েছে এবং ‘বাড়াবাড়ি’ করা অর্থ হচ্ছে, কোন বিষয়ের সমর্থনে ও সহযোগিতায় সীমা অতিক্রম করে যাওয়া ইহুদীদের অপরাধ ছিল, তারা ঈসা আলাইহিস সালামকে অস্বীকার ও তাঁর বিরোধিতা করার ক্ষেত্রে সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছিল। আর খৃস্টানদের অপরাধ ছিল, তারা ঈসা আলাইহিস সালামের প্রতি ভক্তি, প্রীতি ও শ্রদ্ধা প্রদর্শনের ক্ষেত্রে সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছিল।
টিকা:২১২) মূলে ‘কালেমা’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। মারয়ামের প্রতি কালেমা (ফরমান) পাঠাবার অর্থ হচ্ছে এই যে, আল্লাহ তা’আলা মারয়াম আলাইহাস সালামের গর্ভাধারকে কোন পুরুষের শুক্রকীটের সহায়তা ছাড়াই গর্ভধারণ করার হুকুম দিলেন। ঈসা আলাইহিস সালামের বিনা বাপে জন্মগ্রহণ করার রহস্য সম্পর্কে খৃস্টানদের প্রথমে একথাই বলা হয়েছিল। কিন্তু তারা গ্রীক দর্শনের প্রভাবে ভুল পথ অবলম্বন করে। ফলে প্রথমে তারা কালেমা শব্দটিকে ‘কালাম’ বা ‘কথা’ (Logos)-এর সমার্থক মনে করে। তারপর এ কালাম ও কথা থেকে আল্লাহ তা’আলার নিজ সত্তার সাথে সংশ্লিষ্ট কালাম-গুণ অর্থাৎ আল্লাহর কথা বলা বুঝানো হয়েছে। অতঃপর ধারণা করা হয়েছে যে, আল্লাহর সত্তার সাথে সংশ্লিষ্ট এ গুণটি মারয়াম আলাইহাস সালামের উদরে প্রবেশ করে একটি দেহাবয়ব ধারণ করে এবং তাই ঈসা মসীহের রূপে আত্মপ্রকাশ করে। এভাবে খৃস্টানদের মধ্যে ঈসা আলাইহিস সালামকে আল্লাহ মনে করার ভ্রান্ত আকীদার উদ্ভব হয়েছে। তাদের মধ্যে ভ্রান্ত বিশ্বাস শিকড় গেড়ে বসেছে যে সব, আল্লাহ নিজেই নিজেকে অথবা নিজের চিরন্তন গুনাবলী থেকে ‘কালাম’ ও ‘বাক’ গুণকে ঈসার রূপে প্রকাশ করেছেন।
টিকা:২১৩) এখানে ঈসা আলাইহিস সালামকে روح منه(আল্লাহর কাছ থেকে আসা রূহ) বলা হয়েছে। সূরা আল বাকারায় একথাটিকে নিম্নোক্তভাবে বলা হয়েছেঃايدنه بروح القدس(আমি পাক রূহের সাহায্যে ঈসাকে সাহায্য করেছি)। এই উভয় বাক্যের অর্থ হচ্ছেঃ আল্লাহ ঈসা আলাইহিস সালামকে পাক রূহ দান করেছিলেন। অন্যায় ও পাপাচারের সাথে এই পাক রূহের কোনদিন কোন পরিচয়ই হয়নি। আপাদমস্তক সত্য ও সততা এবং উন্নত নৈতিক চরিত্র ছিল এর বৈশিষ্ট। খৃস্টানদের কাছেও হযরত ঈসা আলাইহিস সালামের এই একই পরিচিতি দান করা হয়েছিল। কিন্তু তারা এর মধ্যেও বাড়াবাড়ি করেছে।روح من اللهঅর্থাৎ আল্লাহর কাছ থেকে একটি রূহকে তারা বিকৃত করে সরাসরি আল্লাহ বানিয়ে নিয়েছে। আর “রূহুল কুদুস” (Holy Ghost) –কে ধরে নিয়েছে “আল্লাহর মুকাদ্দাস বা মহাপবিত্র রূহ”, যা ঈসার মধ্যে অনুপ্রবেশ করেছিল। এভাবে আল্লাহ ও ঈসার সাথে রূহুল কুদুসকে তৃতীয় একজন মাবুদ বানিয়ে নেয়া হয়েছিল। এটা ছিল খৃস্টানদের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাড়াবাড়ি এবং এর ফলে তারা গোমরাহীতে লিপ্ত হয়ে গিয়েছিল। মজার ব্যাপার এই যে, মথি লিখিত ইঞ্জীলে আজও এ বাক্যটি লেখা রয়েছেঃ ফেরেশতারা তাকে (অর্থাৎ ইউসুফ নাজ্জারকে) স্বপ্নে দেখা দিয়ে বললো, “‘হে ইউসুফ ইবনে দাউদ! তোমার স্ত্রী মারয়ামকে তোমার কাছে নিয়ে আসতে ভয় পেয়ো না। কারণ তার পেটে যে রয়েছে সে রূহুল কুদুসের কুদরাতের সৃষ্টি হয়েছে।” (অধ্যায় ১: শ্লোক ২০)
টিকা:২১৪) অর্থাৎ আল্লাহকে একমাত্র ইলাহ বলে মেনে নাও এবং সমস্ত রসূলদের রিসালাতের স্বীকৃতি দাও। ঈসা মসীও (আ) তাঁদেরই মধ্যকার একজন রসূল। এটিই ছিল হযরত ঈসা আলাইহিস সালামের আসল শিক্ষা। ঈসায়ী সম্প্রদায়ের প্রত্যেক ব্যক্তিকে এই যথার্থ সত্য শিক্ষাটি মেনে নেয়া উচিত।
টিকা:২১৫) অর্থাৎ তিন ইলাহের আকীদা তোমাদের মধ্যে তেমন যে কোন আকৃতিতে বিদ্যমান থাক না কেন তা পরিহার করো। আসলে খৃস্টানরা একই সঙ্গে একত্ববাদ ও ত্রিত্ববাদ উভয়টিই মানে। ইঞ্জীলগুলোতে মসহী আলাইহিস সালামের যে সমস্ত সুস্পষ্ট বাণী পাওয়া যায় তার ভিত্তিতে কোন একজন খৃস্টানও একথা অস্বীকার করতে পারবে না যে, আল্লাহ এক এবং তিনি ছাড়া আর দ্বিতীয় কোন ইলাহ নেই। তাওহীদ যে দ্বীনের মূলকথা এটা স্বীকার না করে তাদের উপায় নেই। কিন্তু শুরুতেই তাদের মনে এই ভুল ধারণার জন্ম হয়েছিল যে, আল্লাহর কালাম ঈসার রূপে আত্মপ্রকাশ করেছে এবং আল্লাহর রূহ তাঁর মধ্যে অনুপ্রবেশ করেছে। এই ভুল ধারণার কারণে তারা সমগ্র বিশ্ব-জাহানের মালিক আল্লাহর সাথে ঈসা মসীহ ও রূহুল কুদুসের (জিব্রীল) খোদায়ীকেও মেনে নেয়াকে অযথা নিজেদের জন্য অপরিহার্য গণ্য করেছেন। এভাবে জোরপূর্বক একটি আকীদা নিজেদের ঘাড়ে চাপিয়ে নেবার কারণে একত্ববাদে বিশ্বাস আবার ত্রিত্ববাদে বিশ্বাসের সাথে সাথে ত্রিত্ববাদে বিশ্বাসের সাথে সাথে একত্ববাদে বিশ্বাসকে কিভাবে একই সঙ্গে মেনে চলা যায়, এটা যথার্থই তাদের জন্য রহস্যময় ও জটিল হয়ে উঠেছে। প্রায় আঠার শো বছর থেকে খৃস্টান পণ্ডিতগণ নিজেদের সৃষ্টি এই জটিলতার গ্রন্থী উন্মোচন করার জন্য মাথা ঘামিয়ে চলেছেন। এরই বিভিন্ন ব্যাখ্যার ভিত্তিতে বহু দল উপদল গঠিত হয়েছে। এরই ভিত্তিতে অন্য দলকে কাফের বলে প্রচার করেছে। এই বিবাদের ফলে গীর্জার সংহতি বিনষ্ট হয়েছে এবং বিভিন্ন গীর্জা নিজেদের স্বতন্ত্র অস্তিত্ব ঘোষণা করেছে। তাদের আকায়েদ ও যুক্তি শাস্ত্রের সমস্ত শক্তি এরই পেছনে ব্যয়িত হয়েছে। অথচ এ জটিল সমস্যাটি আল্লাহ সৃষ্টি করেননি। তাঁর প্রেরিত ঈসা মসীহও এ সমস্যাটি সৃষ্টি করেননি। আবার আল্লাহকে তিন মেনে নিয়ে তাঁর একত্ববাদের গায়ে কোন আচঁড় না লাগানো কোনক্রমে সম্ভব নয়। শুধুমাত্র তাদের বাড়াবাড়ির কারণেই এই জটিল সমস্যাটির উদ্ভব হয়েছে। কাজেই বাড়াবাড়ি থেকে বিরত থাকাই এর একমাত্র সমাধান। এ জন্য তাদের পরিহার করতে হবে ঈসা মসীহ ও রূহুল কুদুসের ইলাহ ও মাবুদ হবার ধারণা। একমাত্র আল্লাহকেই একক ইলাহ হিসেবে মেনে নিতে হবে এবং মসীহকে কেবলমাত্র তার পয়গাম্বর গণ্য করতে হবে, তার খোদায়ীতে তাকে কোনো প্রকার শরীক করা যাবে না।
টিকা:২১৬) এটি হচ্ছে খৃস্টানদের চতুর্থ বাড়াবাড়ির প্রতিবাদ। বাইবেলের নিউ টেস্টামেন্টের বর্ণনা যদি সঠিক হয়েও থাকে তাহলে তা থেকে (বিশেষ করে প্রথম তিনটি ইঞ্জীল থেকে) বড়জোড় এতটুকুই প্রমাণিত হয় যে, মসীহ আলাইহিস সালাম আল্লাহ ও বান্দার সম্পর্ককে বাপ ও বেটার সম্পর্কের সাথে তুলনা করেছিলেন। আর ‘বাপ’ শব্দটি তিনি আল্লাহর জন্য নিছক উপমা ও রূপক হিসেবে ব্যবহার করেছেন, যাতে এই সম্পর্ক বুঝা যায়। আসল অর্থে এটিকে ব্যবহার করেননি। এটা কেবলমাত্র ঈসা আলাইহিস সালামের একার বৈশিষ্ট্য নয়। প্রাচীন যুগ থেকে বনী ইসরাঈলরা আল্লাহর জন্য বাপ প্রতিশব্দটি ব্যবহার করে আসছে। বাইবেলের ওল্ড টেস্টামেন্টে এর অসংখ্য দৃষ্টান্ত পাওয়া যাবে। ঈসা আলাইহিস সালাম নিজের কওমের মধ্যে প্রচলিত বাকধারা অনুযায়ী এ শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন। তিনি আল্লাহকে কেবলমাত্র নিজের নয় বরং সমস্ত মানুষের বাপ বলতেন। কিন্তু খৃস্টানরা এখানে এসে আবার বাড়াবাড়ি করেছেন। তারা মসীহকে আল্লাহর একমাত্র পুত্র গণ্য করেছে। এক্ষেত্রে তারা যে অদ্ভূত মতবাদ পোষণ করে তার সারনির্যাস হচ্ছেঃ যেহেতু মসীহ আল্লাহর বহিঃপ্রকাশ এবং তার কালেমা ও তাঁর রূহের শারীরিক উদ্দেশ্য দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন যে, তিনি মানুষের গোনাহ নিজের মাথায় নিয়ে শূলে চড়ে প্রাণ দেবেন এবং নিজের রক্তের বিনিময়ে মানুষের গোনাহের কাফ্ফারা আদায় করবেন। অথচ মসীহ আলাইহিস সালামের কোন বাণী থেকে তারা এর কোন প্রমাণ পেশ করতে পারবে না। এ আকীদাটি তাদের নিজেদের তৈরী করা। তারা নিজেদের পয়গাম্বরের মহান ব্যক্তিত্বে প্রভাবিত হয়ে যে বাড়াবাড়ি করেছে এটি তারই ফলশ্রুতি। আল্লাহ এখানে কাফ্ফারা সম্পকির্ত বিশ্বাসের প্রতিবাদ করেননি। কারণ এটা খৃস্টানদের কোন স্বতন্ত্র ও স্থায়ী বিশ্বাস নয়। বরং এটা হচ্ছে মসীহকে (আ) আল্লাহর পুত্র গণ্য করার পরিণতি এবং ‘যদি মসীহ আল্লাহর একমাত্র পুত্রই হন তাহলে তিনি শূলবিদ্ধ হয়ে লাঞ্ছিতের মৃত্যুবরণ করলেন কেন’ এ প্রশ্নের একটি দার্শনিক ও মরমীয় ব্যাখ্যা। কাজেই যদি মসীহ আলাইহিস সালামের আল্লাহর পুত্র হবার ধারণার প্রতিবাদ করা হয় এবং তাঁর শূলবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করা সম্পকির্ত ভুল ধারণা দূর করা যায় তাহলে আপনা আপনিই এ বিশ্বাসের প্রতিবাদ হয়ে যায়।
টিকা:২১৭) অর্থাৎ পৃথিবী ও আকাশের অস্তিত্ব সম্পন্ন কোন জিনিসের সাথেও আল্লাহর পিতা-পুত্রের সম্পর্ক নেই। বরং এ সম্পর্ক হচ্ছে মালিক ও তার মালিকানাধীন বস্তুর।
টিকা:২১৮) অর্থাৎ নিজের খোদায়ীর ব্যবস্থাপনা করার জন্য আল্লাহ নিজেই যথেষ্ট। তার কারো কাছ থেকে সাহায্য গ্রহণ করার কোন প্রয়োজন নেই। কাজেই এ জন্য কাউকে পুত্র বানাবারও তার কোন দরকার নেই।
তাফসীরে আবুবকর যাকারিয়া বলেছেন:-
[১] (غُلُوّ) শব্দের অর্থ সীমা ছাড়িয়ে যাওয়া। অর্থাৎ দ্বীনের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করার অর্থ তার ন্যায়সঙ্গত সীমারেখা অতিক্রম করা । আহলে কিতাব অর্থাৎ ইয়াহুদী-নাসারা উভয় জাতিকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে যে, দ্বীনের ব্যাপারে কোনরূপ বাড়াবাড়ি করো না। কারণ এ বাড়াবাড়ি রোগে উভয় জাতিই আক্রান্ত হয়েছে। নাসারারা ঈসা ‘আলাইহিস সালাম-কে ভক্তি-শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শনের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করেছে। তাকে স্বয়ং আল্লাহ, আল্লাহর পুত্র অথবা তিনের এক আল্লাহ বানিয়ে দিয়েছে। অপরদিকে ইয়াহুদীরা তাকে অমান্য ও প্রত্যাখ্যান করার দিক দিয়ে বাড়াবাড়ি পথ অবলম্বন করেছে। তারা ঈসা ‘আলাইহিস সালাম-কে আল্লাহর নবী হিসেবে স্বীকার করেনি। বরং তাঁর মাতা মারইয়াম ‘আলাইহিস সালাম-এর উপর মারাত্মক অপবাদ আরোপ করেছে এবং তার নিন্দাবাদ করেছে। দ্বীনের ব্যাপারে বাড়াবড়ি ও সীমালংঘনের কারণে ইয়াহুদী ও নাসারাদের গোমরাহী ও ধ্বংস হওয়ার শোচনীয় পরিণতি বার বার প্রত্যক্ষ হয়েছে। তাই রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর প্রিয় উম্মতকে এ ব্যাপারে সংযত থাকার জন্য সতর্ক করেছেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন ‘তোমরা আমার প্রশংসা করতে গিয়ে এমন অতিরঞ্জিত করো না, যেমন নাসারারা ঈসা ইবন মারইয়াম ‘আলাইহিমুস্ সালাম-এর ব্যাপারে করেছে। স্মরণ রাখবে যে, আমি আল্লাহর বান্দা। অতএব, আমাকে আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল বলবে’। [বুখারীঃ ৩৪৪৫]
অর্থাৎ আল্লাহর বান্দা ও মানুষ হিসেবে আমিও অন্য লোকদের সমপর্যায়ের। তবে আমার সবচেয়ে বড় মর্যাদা এই যে, আমি আল্লাহর রাসূল। এর চেয়ে অগ্রসর করে আমাকে আল্লাহ্ তা’আলার কোন বিশেষণে বিশেষিত করা বাড়াবাড়ি বৈ নয়। তোমরা ইয়াহুদী-নাসারাদের মতো বাড়াবাড়ি করো না। হাদীসে এসেছে যে, হজের সময় ‘রমীয়ে জামারাহ’ অর্থাৎ কংকর নিক্ষেপের জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা-কে কংকর আনতে আদেশ করলেন। তিনি মাঝারি আকারের পাথরকুচি নিয়ে এলে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম অত্যন্ত পছন্দ করলেন এবং বললেন, ‘এ ধরণের মাঝারী আকারের কংকর নিক্ষেপ করাই পছন্দনীয়’। বাক্যটি তিনি দু’বার বললেন। তারপর বললেন, ‘তোমরা দ্বীনের মধ্যে বাড়াবাড়ি থেকে দূরে থেকো। কেননা, তোমাদের পূর্ববতী উম্মতসমূহ তাদের দ্বীনের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করার কারণেই ধ্বংস হয়েছে’। [ইবন মাজাহ: ৩০২৯]
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এমন একটি কাজ করলেন যাতে ‘রুখসত’ বা ছাড় ছিল। কিন্তু কিছু লোক সেটা করতে অপছন্দ করল। সেটা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে পৌঁছলে তিনি আল্লাহর হামদ ও প্রশংসার পর বললেন, কিছু লোকের এ কি অবস্থা হয়েছে যে, তারা আমি যা করছি তা করা থেকে নিজেদেরকে বাঁচিয়ে রাখতে চায়? আল্লাহর শপথ, আল্লাহর ব্যাপারে আমি তাদের থেকে সবচেয়ে বেশী জানি এবং তাদের থেকেও বেশী আল্লাহর ভয় করি। [বুখারী: ৭৩০১]
[২] এখানে ‘কালেমাতুহু’ শব্দে বাতলে দেয়া হয়েছে যে, ঈসা ‘আলাইহিস সালাম আল্লাহর কালেমা। মুফাসসিরগণ এর বিভিন্ন অর্থ বর্ণনা করেছেন-
(এক) ‘কালেমাতুল্লাহ’ অর্থ আল্লাহর সুসংবাদ। এর দ্বারা ঈসা ‘আলাইহিস সালাম-এর ব্যক্তি-সত্তাকে বোঝানো হয়েছে। ইতোপূর্বে আল্লাহ তা’আলা ফিরিশতার মাধ্যমে মারইয়াম ‘আলাইহিস সালামকে ঈসা ‘আলাইহিস সালাম সম্পর্কে যে সুসংবাদ দান করেছিলেন সেখানে ‘কালেমা’ শব্দ প্রয়োগ করা হয়েছে। বলা হয়েছে,
(اِذْ قَالَتِ الْمَلٰۗىِٕكَةُ يٰمَرْيَمُ اِنَّ اللّٰهَ يُبَشِّرُكِ بِكَلِمَةٍ)
“যখন ফিরিশতারা বললো, হে মারইয়াম! নিশ্চয় আল্লাহ তোমাকে সুসংবাদ দিচ্ছেন এক ‘কালেমা’র”। [সূরা আলে-ইমরানঃ ৪৫] (দুই) কারো মতে এখানে ‘কালেমা’ অর্থ নিদর্শন। যেমন অন্য এক আয়াতে শব্দটি নিদর্শন অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। যথা: (وَصَدَّقَتْ بِكَلِمٰتِ رَبِّهَا) [সূরা আত-তাহরীম: ১২] তাই আল্লাহ্ তা’আলা কর্তৃক মারইয়ামের প্রতি কালেমা পাঠাবার অর্থ হচ্ছে এই যে, আল্লাহ তা’আলা মারইয়াম আলাইহাস সালামের গর্ভাধারকে কোন পুরুষের শুক্ৰকীটের সহায়তা ছাড়াই গর্ভধারণের হুকুম দিলেন। সে হিসেবে ঈসা ‘আলাইহিস সালাম শুধু আল্লাহর কালেমা বা নির্দেশে চিরাচরিত প্রথার বিপরীতে পিতার মাধ্যম ছাড়াই জন্মগ্রহণ করেছিলেন। (তিন) কাতাদা বলেন, কালেমা দ্বারা (كُنْ) বা ‘হও’ শব্দ বোঝানো হয়েছে। [তাবারী] ঈসা ‘আলাইহিস সালামকে ‘কালেমাতুল্লাহ’ বলার কারণ হচ্ছে এই যে, ঈসা ‘আলাইহিস সালামের জন্মের ব্যাপারটি জাগতিক কোন মাধ্যম বাদেই আল্লাহর কালেমা দ্বারা সংঘটিত হয়েছে। এখানে তাকে ‘আল্লাহর কালাম’ বলে বিশেষভাবে উল্লেখ করে সম্মানিত করাই উদ্দেশ্য। নতুবা সবকিছুই আল্লাহর কালেমার মাধ্যমেই হয়। তাঁর কালেমা ব্যতীত কিছুই হয় না। আল্লাহ ঈসা ‘আলাইহিস সালামকে তাঁর নিদর্শন ও আশ্চৰ্যতম সৃষ্টি হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। তিনি জিবরাইল ‘আলাইহিস সালামকে মারইয়ামের নিকট পাঠালেন। জিবরাইল ‘আলাইহিস সালাম তার জামার ফাঁকে ফু দিলেন। এ পবিত্র ফেরেশতার পবিত্র ফুঁ মারইয়ামের গর্ভে প্রবেশ করলে আল্লাহ তা’আলা সে ফুঁকটিকে পবিত্র রুহ হিসেবে পরিণত করলেন। আর এ জন্যই তাঁকে সম্মানিত করে ‘রুহুল্লাহ’ বলা হয়ে থাকে। [তাফসীরে সা’দী]
[৩] কুরআন নাযিলের সমসাময়িক কালে খৃষ্টানরা যেসব উপদলে বিভক্ত ছিল, তন্মধ্যে ত্রিত্ববাদ সম্পর্কে তাদের ধর্মবিশ্বাস তিনটি ভিন্ন ভিন্ন মূলনীতির উপর প্রতিষ্ঠিত ছিল। এক দল মনে করতো- মসীহই আল্লাহ। স্বয়ং আল্লাহই মসীহরূপে পৃথিবীতে আবির্ভূত হয়েছেন। দ্বিতীয় দল বলতো -মসীহ পুত্র। তৃতীয় দলের বিশ্বাস ছিল -তিন সদস্যের সমন্বয়ে আল্লাহর একক পরিবার। এ দলটি আবার দু’টি উপদলে বিভক্ত ছিল। এক দলের মতে পিতা, পুত্র ও মারইয়াম এ তিনের সমন্বয়ে এক আল্লাহ। অন্য একদলের মতে মারইয়াম ‘আলাইহিস সালাম-এর পরিবর্তে ‘রূহুল কুদুস’ বা পবিত্র আত্মা জিবরাঈল ‘আলাইহিস সালাম ছিলেন তিন আল্লাহর একজন। মোটকথা, খৃষ্টানরা ঈসা ‘আলাইহিস সালাম-কে তিনের এক আল্লাহ মনে করতো। তাদের ভ্রান্তি অপনোদনের জন্য কুরআনুল কারীমে প্রত্যেকটি উপদলকে ভিন্ন ভিন্নভাবে সম্বোধন করা হয়েছে এবং সম্মিলিতভাবেও সম্বোধন করা হয়েছে। তাদের সামনে স্পষ্ট ও জোরালোভাবে তুলে ধরা হয়েছে যে, সত্য একটিই। আর তা হলো ঈসা মসীহ ‘আলাইহিস সালাম তার মাতা মারইয়াম ‘আলাইহিস সালাম -এর গর্ভে জন্মগ্রহণকারী একজন মানুষ ও আল্লাহ্ তা’আলার সত্য রাসূল। এর অতিরিক্ত তাঁর সম্পর্কে যা কিছু বলা বা ধারণা করা হয়, তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও বাতিল। তাঁর প্রতি ইয়াহুদীদের মত অবজ্ঞা বা ঈর্ষা পোষণ করা অথবা খৃষ্টানদের মত অতিভক্তি প্রদর্শন করা সমভাবে নিন্দনীয় ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। কুরআনুল কারীমের অসংখ্য আয়াতে একদিকে ইয়াহুদী-খৃষ্টানদের পথভ্রষ্টতা দৃঢ়ভাবে প্রকাশ করা হয়েছে, অপরদিকে আল্লাহ্ তা’আলার দরবারে ঈসা ‘আলাইহিস সালাম-এর উচ্চ মর্যাদা ও বিশেষ সম্মানের অধিকারী হওয়ার কথাও জোরালোভাবে ব্যক্ত করা হয়েছে। ফলে অবজ্ঞা ও অতিভক্তি দু’টি পরস্পর বিরোধী ভ্রান্ত মতবাদের মধ্যবর্তী সত্য ও ন্যায়ের সঠিক পথ উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে।
[৪] অর্থাৎ আকাশ ও যমীনের উপর হতে নীচে পর্যন্ত যাকিছু আছে সবই আল্লাহ তা’আলার সৃষ্টি ও তাঁর বান্দা। অতএব, তাঁর কোন অংশীদার বা পুত্র-পরিজন হতে পারে না। আল্লাহ তা’আলা একাই সর্বকার্য সম্পাদনকারী এবং সকলের কার্য সম্পাদনের জন্য তিনি একাই যথেষ্ট; অন্য কারো সাহায্য-সহযোগীতার প্রয়োজন নেই। তিনি একক, তাঁর কোন অংশীদার বা পুত্র-পরিজন থাকতে পারে না। সারকথা, কোন সৃষ্ট ব্যক্তিরই স্রষ্টার অংশীদার হওয়ার যোগ্যতা নেই। আল্লাহ তা’আলার পবিত্র সত্তার জন্য এর অবকাশও নেই, প্রয়োজনও নেই। অতএব, একমাত্র বিবেকবর্জিত, ঈমান হতে বঞ্চিত ব্যক্তি ছাড়া আল্লাহ্ তা’আলার সৃষ্ট কোন জীবকে তাঁর অংশীদার বা পুত্র বলা অন্য কারো পক্ষে সম্ভব নয়।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান বলেছেন:-
[১] غُلُوْ (অতিরঞ্জন বা বাড়াবাড়ি) শব্দের তাৎপর্য হল, কোন বস্তুকে তার নির্ধারিত সীমা থেকে বাড়িয়ে দেওয়া। যেমন খ্রিষ্টানরা ঈসা (আঃ) ও তাঁর মা মারয়্যাম (‘আলাইহাস্ সালাম)-কে ভক্তি-শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদর্শনের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করতে করতে তাঁদেরকে রিসালাত ও বান্দার স্থান থেকে উপরে তুলে আল্লাহর আসনে বসিয়ে দিয়েছে এবং যথারীতি তাঁদের ইবাদত করছে। ঠিক এমনিভাবেই ঈসা (আঃ)-এর শিষ্য ও সহচরদের ব্যাপারেও তারা অতিরঞ্জিত করেছে, তাঁদেরকে নিষ্পাপ বলেছে এবং কোন জিনিসকে হারাম ও হালাল করার ব্যাপারে পূর্ণ এখতিয়ার প্রদান করেছে। যেমন মহান আল্লাহ বলেছেন, {اتَّخَذُواْ أَحْبَارَهُمْ وَرُهْبَانَهُمْ أَرْبَابًا مِّن دُونِ اللّه} অর্থাৎ, তারা আল্লাহকে ছেড়ে দিয়ে তাদের পন্ডিত-পুরোহিতগণকে প্রভু বানিয়ে নিয়েছে। (সূরা তাওবাহ ৯:৩১) আল্লাহর আসনে বসানোর সারকথা হচ্ছে, তাদের (পুরোহিতগণ কর্তৃক) হালালকৃত জিনিসকে হালাল এবং হারামকৃত জিনিসকে হারাম বলে মেনে নেওয়া। অথচ এ বিষয়ে পরিপূর্ণ অধিকার একমাত্র আল্লাহর। কিন্তু আহলে কিতাবরা এই অধিকারও তাদের পন্ডিত-পুরোহিতগণকে প্রদান করেছে। আলোচ্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা আহলে কিতাবদেরকে ধর্মীয় ব্যাপারে বাড়াবাড়ি ও অতিরঞ্জন করতে নিষেধ করেছেন। অনুরূপ মহানবী (সাঃ)ও খ্রিষ্টানদের ধর্মীয় ব্যাপারে অতিরঞ্জন করা দেখে স্বীয় উম্মতকে এহেন ভয়াবহ মহামারীর কবল হতে রক্ষা করার জন্য পূর্ণ সতর্ক করেছেন। তিনি বলেছেন, “তোমরা আমার প্রশংসা করতে গিয়ে এমন অতিরঞ্জন করবে না, যেমন খ্রিষ্টানরা ঈসা বিন মারয়্যামের ব্যাপারে করেছে। যেহেতু আমি আল্লাহর বান্দাই, সেহেতু তোমরা আমাকে আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রসূল বল। (বুখারীঃ আম্বিয়া অধ্যায়, আহমাদ ১/২৩, ১/১৫৩) কিন্তু বড় পরিতাপ ও দুঃখের বিষয় এই যে, (সতর্কবাণী থাকতেও) উম্মতে মুহাম্মাদীর দাবীদারগণও এই মহামারীর কবল থেকে রেহাই পেল না; যাতে খ্রিষ্টানরা আক্রান্ত হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে এ উম্মত তার নবীর ব্যাপারেই বাড়াবাড়ি ও অতিরঞ্জন করে ক্ষান্ত হয়নি; বরং নেক বান্দাদেরকেও আল্লাহর গুণে গুণান্বিত করেছে; যা আসলে খ্রিষ্টানদেরই আচরণ ছিল। অনুরূপভাবে উলামা ও ফুক্বাহাগণ, যাঁরা দ্বীনের ব্যাখ্যাতা ও ভাষ্যকার ছিলেন, তাঁদেরকে শরীয়ত রচনার অধিকার প্রদান করেছে। (فإنا لله وإنا إليه راجعون) মহানবী (সাঃ) সত্যই বলেছেন, “যেমন একটি জুতার অপর জুতার সাথে অবিকল মিল থাকে, অনুরূপ তোমরাও পূর্ববর্তী উম্মতের অবিকল অনুকরণ ও অনুসরণ করবে।” অর্থাৎ প্রত্যেক কাজে তাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করবে।
[২] كلمة الله (আল্লাহর বাণী বা শব্দ)এর ব্যাখ্যা হচ্ছে, كن (হও) শব্দ। যার দ্বারা আল্লাহর নির্দেশে বিনা পিতায় ঈসা (আঃ) জন্মলাভ করেন। মহান আল্লাহ এ শব্দটি জিবরীল (আঃ)-এর মাধ্যমে মারয়্যাম (‘আলাইহাস্ সালাম)এর কাছে পৌঁঁছে দিয়েছিলেন। روح الله এর অর্থ হচ্ছে, সেই ‘ফুঁক’ যা আল্লাহর নির্দেশে জিবরীল (আঃ)মারয়্যাম (‘আলাইহাস্ সালাম)এর কামীসের গলার নিকট খোলা অংশে ফুঁকেছিলেন, যেটাকে মহান আল্লাহ তাঁর অসীম শক্তিতে পিতার বীর্যের বিকল্প উপাদানে পরিণত করেন। সুতরাং ঈসা (আঃ) হচ্ছেন আল্লাহর কালেমা (বাণী); যা ফিরিশতা দ্বারা মারয়্যাম (‘আলাইহাস্ সালাম)এর নিকট পৌঁছে দেন এবং তিনি তাঁর ‘রূহ’ বা ফুঁকও; যা জিবরীল (আঃ) মারফৎ মারয়্যাম (‘আলাইহাস্ সালাম)এর নিকট পৌঁছে দেন। (তাফসীরে ইবনে কাসীর)
[৩] খ্রিষ্টানরা বিভিন্ন ফির্কায় বিভক্ত ছিল। কোন ফির্কা ঈসা (আঃ)-কে স্বয়ং আল্লাহ বলে বিশ্বাস করে, কোন ফির্কা তাঁকে আল্লাহর অংশীদার মনে করে, আবার কোন ফির্কা তাঁকে আল্লাহর পুত্র মনে করে। তারপর যারা আল্লাহতে বিশ্বাসী, তারা ত্রিত্ববাদে বিশ্বাসী। তাদের মতে পিতা, পুত্র ও মারয়্যাম তিনজনই ঈশ্বর। তারা ঈসা (আঃ)-কে তিনের এক ঈশ্বর মনে করে থাকে। সুতরাং মহান আল্লাহ বলেন, “তোমরা ‘আল্লাহ তিনজন’ বলা হতে বিরত হও। কারণ আল্লাহ হচ্ছেন একক, অদ্বিতীয়, (যাঁর কোন শরীক নেই)।”
তাফসীরে ইবনে কাসীর বলেছেন:-
আল্লাহ তা’আলা আহলে কিতাবকে বাড়াবাড়ি ও সীমা অতিক্রম করতে নিষেধ করছেন। খ্রীষ্টানেরা হযরত ঈসা (আঃ)-এর ব্যাপারে সীমা অতিক্রম করেছিল এবং তাকে নবুওয়াত হতে বাড়িয়ে দিয়ে আল্লাহ পর্যন্ত পৌছিয়ে দিয়েছিল। তারা তার আনুগত্য ছেড়ে তাঁর ইবাদতে লেগে পড়েছিল, এমনকি অন্যান্য মনীষীর ব্যাপারেও তাদের ধারণা খারাপ হয়ে গিয়েছিল। খ্রীষ্টান ধর্মের আলেমদেরকেও তারা নিস্পাপ মনে করতে থাকে এবং এ ধারণা করে নেয় যে, ধর্মের আলেমগণ যা কিছু বলেন তা মেনে নেয়াই অপরিহার্য কর্তব্য। সত্য-মিথ্যা, হক-বাতিল এবং সুপথ-ভ্রান্তির পথ পরীক্ষা করার কোন অধিকার তাদের নেই। যার বর্ণনা কুরআন কারীমের নিম্নের এ আয়াতে রয়েছে (আরবী) অর্থাৎ “তারা তাদের আলেমদেরকে ও ধর্মাজকদেরকে তাদের প্রভু বানিয়ে নিয়েছিল।”(৯:৩১)।
মুসনাদ-ই-আহমাদে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “তোমরা আমাকে এমনভাবে বাড়িয়ে দিও না যেমনভাবে খ্রীষ্টানেরা হযরত ঈসা ইবনে মারইয়াম (আঃ)-কে বাড়িয়ে দিয়েছে। আমি তো একজন দাস মাত্র। সুতরাং তোমরা আমাকে আল্লাহর দাস ও আল্লাহর রাসূল বলবে। এ হাদীসটি সহীহ বুখারী প্রভৃতি হাদীস গ্রন্থেও রয়েছে।
মুসনাদ-ই-আহমাদের অপর একটি হাদীসে রয়েছে যে, একটি লোক রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে বলেঃ “হে মুহাম্মাদ (সঃ)! হে আমাদের নেতা ও নেতার। ছেলে! হে আমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তির ছেলে।” তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “হে লোক সকল! তোমরা নিজেদের কথার প্রতি খেয়াল রেখো। দেখ, শয়তান যেন তোমাদেরকে এদিক-ওদিক করে না দেয়। আমি মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ (সঃ)। আমি আল্লাহর দাস ও তাঁর রাসূল। আল্লাহর শপথ! আমি চাইনে যে, তোমরা আমাকে আমার মর্যাদা অপেক্ষা বেশী বাড়িয়ে দেবে।”
এরপর আল্লাহ তাআলা বলেনঃ তোমরা আল্লাহ তা’আলার প্রতি মিথ্যা অপবাদ দিও না। তোমরা তাঁর স্ত্রী ও সন্তান সাব্যস্ত করো না। তিনি ওটা হতে সম্পূর্ণরূপে পবিত্র। ওটা হতে তিনি বহু দূরে ও বহু উচ্চে রয়েছেন। তার শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদায় তার কোন অংশীদার নেই। তিনি ছাড়া কেউ মা’বুদ ও প্রভু নেই। হযরত মাসীহ ঈসা ইবনে মারইয়াম (আঃ) আল্লাহ তা’আলার রাসূল। তিনি তার দাসদের মধ্যে একজন দাস এবং তার একজন সৃষ্ট ব্যক্তি। তিনি শুধু। শব্দের মাধ্যমে সৃষ্ট হয়েছেন। যে শব্দটি নিয়ে হযরত জিবরাইল (আঃ) হযরত মারইয়াম (আঃ)-এর নিকট এসেছিনে এবং আল্লাহ তা’আলার নির্দেশক্রমে ঐ কালেমা তাঁর মধ্যে ফুঁকে দেন। এর ফলেই হযরত ঈসা (আঃ)-এর জন্ম হয়। পিতা ছাড়াই একমাত্র এ কালেমার মাধ্যমেই তিনি সৃষ্টি হন বলেই তাকে বিশেষভাবে কালেমাতুল্লাহ’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়। কুরআন মাজীদের অন্য আয়াতে রয়েছে (আরবী) অথাৎ হযরত মাসীহ ইবনে মারইয়াম শুধুমাত্র আল্লাহর রাসূল, তার পূর্বে বহু রাসূল অতীত হয়েছেন, তার মাতা সত্যবাদিনী, তারা দু’জন আহার্য ভোজন করতো।’ (৫:৭৫) অন্য আয়াতে আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
অর্থাৎ “ঈসার দৃষ্টান্ত আল্লাহ তা’আলার নিকট আদমের মতই, তাকে তিনি মাটি দ্বারা সৃষ্টি করেছেন অতঃপর বলেছেন- হও, আর তেমনই হয়ে গেছে।”(৩:৫৯) কুরআন কারীমের অন্য আয়াতে রয়েছে (আরবী) অর্থাৎ “যে তার লজ্জাস্থান সংরক্ষণ করেছে এবং আমি স্বীয় রূহ তার মধ্যে ফুকে দিয়েছি এবং তাকে ও তার পুত্রকে বিশ্ববাসীর জন্যে নিদর্শন বানিয়েছি।” (২১৪ ৯১) আর এক আয়াতে রয়েছে (আরবী) অর্থাৎ “এবং ইমরানের কন্যা মারইয়াম যে তার লজ্জাস্থান সংরক্ষণ করেছে।” (৬৬:১২) হযরত ঈসা (আঃ) সম্পর্কে এ আয়াতে বলা হয়েছে (আরবী) অর্থাৎ “সে (ঈসা আঃ) একজন দাস ছাড়া কিছুই নয়, আমি তাকে পুরস্কৃত করেছিলাম।” (৪৩:৫৯) সুতরাং ভাবার্থ এই নয় যে, স্বয়ং আল্লাহর কালেমাই ঈসা (আঃ) হয়ে গেছেন। বরং ভাবার্থ হচ্ছে এই যে, আল্লাহ তাআলার কালেমার মাধ্যমে হযরত ঈসা (আঃ)-এর জন্ম হয়েছে।
সহীহ বুখারী শরীফে হযরত উবাদা ইবনে সামিত (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি সাক্ষ্য দিয়েছে যে আল্লাহ এক, তার কোন অংশীদার নেই, মুহাম্মাদ (সঃ) তাঁর বান্দাহ্ ও রাসূল, ঈসা (আঃ) আল্লাহর বান্দাহ ও তাঁর রাসূল এবং তাঁর কালেমা যা তিনি মারইয়ামের মধ্যে ফুকে দিয়েছিলেন ও তিনি তাঁর রূহ এবং আরও সাক্ষ্য দেয় যে, জান্নাত ও জাহান্নাম সত্য, তার আমল যাই হোক না কেন আল্লাহ তাআলা তাকে জান্নাতে প্রবিষ্ট করবেন।” অন্য বর্ণনায় এতটুকু বেশী রয়েছে যে, সে জান্নাতের আটটি দরজার মধ্যে যেটি দিয়ে ইচ্ছে প্রবেশ করবে। হযরত ঈসা (আঃ)-কে যেমন হাদীসে ও কুরআনে বলা (আরবী) হয়েছে ঐ রকমই কুরআন কারীমের একটি আয়াতে রয়েছে (আরবী) অর্থাৎ “তিনি যা কিছু আকাশে ও যা কিছু যমীনে রয়েছে সমস্তই নিজের পক্ষ হতে তোমাদের অনুগত করে দিয়েছেন।” (৪৫:১৩) অর্থাৎ স্বীয় মাখলুক হতে ও নিজের রূহ হতে (আরবী)-এর ভাবার্থ এটাই। সুতরাং এখানে শব্দটি (আরবী) – এর জন্যে অর্থাৎ কতককে বুঝাবার জন্যে নয়, যেমন অভিশপ্ত খ্রীষ্টানদের ধারণা রয়েছে যে হযরত ঈসা (আঃ) আল্লাহর একটা অংশ ছিলেন। বরং (আরবী) এখানে (আরবী) অর্থাৎ প্রারম্ভের জন্যে এসেছে। হযরত মুজাহিদ বলেন যে, (আরবী) -এর ভাবার্থ হচ্ছে (আরবী) অর্থাৎ তার পক্ষ হতে রাসূল।
আবার কেউ কেউ বলেন যে, এর ভাবার্থ হচ্ছে (আরবী) কিন্তু বেশী স্পষ্ট হচ্ছে প্রথম উক্তিটি। অর্থাৎ তাকে রূহ দ্বারা সৃষ্টি করা হয়েছে যা স্বয়ং আল্লাহ তা’আলার মাখলুক। সুতরাং তাকে ‘রূহুল্লাহ’ বলা ঐরূপই যেরূপ বলা হয় নাকাতুল্লাহ’ (আল্লাহর উষ্ট্রী) এবং বায়তুল্লাহ’। অর্থাৎ শুধুমাত্র সৌজন্য প্রকাশ করার উদ্দেশ্যেই নিজের দিকে সম্বন্ধ লাগিয়েছেন। হাদীস শরীফে এও রয়েছে যে রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আমি আমার প্রভুর নিকট তাঁর ঘরে যাবো।”
তারপরে আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ তোমরা এ বিশ্বাস করে নাও যে, আল্লাহ এক, তিনি স্ত্রী ও সন্তানাদি হতে সম্পূর্ণরূপে পবিত্র এবং এটাও বিশ্বাস করে নাও যে, ঈসা (আঃ) আল্লাহর দাস, তাঁর সৃষ্ট এবং তার সম্মানিত রাসূল। তোমরা তিন’ বলল না। অর্থাৎ ঈসা (আঃ) ও মারইয়াম (আঃ)-কে আল্লাহর সাথে অংশীদার করো না। কেউ যে তাঁর অংশীদার হবে এ হতে তিনি সম্পূর্ণরূপে পবিত্র। সূরা-ই-মায়েদায় আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ যারা বলে যে, আল্লাহ তিনজনের মধ্যে একজন তারা অবশ্যই কাফির হয়ে গেছে, আল্লাহ এক, তিনি ছাড়া কেউ ইবাদতের যোগ্য নেই। (৫৪৭৩) যেমন আল্লাহ তা’আলা সূরা-ই-মায়েদার শেষে বলেছেন- (আরবী) অর্থাৎ যখন আল্লাহ বললেন- হে মারইয়াম নন্দন ঈসা, তুমি কি লোকদেরকে বলেছিলে যে, আল্লাহকে পরিত্যাগ করে তোমরা আমাকে ও আমার মাতাকে দুই মাদরূপে গ্রহণ কর?’ (৫:১১৬) হযরত ঈসা (আঃ) ওটা সম্পূর্ণরূপে অস্বীকার করবেন। খ্রীষ্টানদের নিকট এ ব্যাপারে দলীল প্রমাণ কিছুই নেই। অযথা তারা ভ্রান্তির পথে চালিত হয়ে নিজেদেরকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ তো হযরত ঈসা (আঃ)-কে আল্লাহ বলে বিশ্বাস করে নিয়েছে। আর কেউ কেউ তাঁকে আল্লাহ তা’আলার শরীক মনে করছে। আবার কেউ কেউ তাঁকে আল্লাহ তা’আলার পুত্র বলছে।
সত্য কথা এই যে, যদি দশজন খ্রীষ্টান একত্রিত হয় তবে তাদের খেয়াল হবে এগার রকম। সাঈদ ইবনে বাতরীক ইসকানদারী নামক খ্রীষ্টানদের একজন বড় পণ্ডিত প্রায় চারশ হিজরীতে বর্ণনা করেছে যে, কনসটান্টিনোপলের প্রতিষ্ঠাতা কুসতুনতীনের আমলে সে যুগীয় বাদশাহর নির্দেশক্রমে খ্রীষ্টানদের এক সম্মেলন হয়। তথায় তাদের দু’হাজারেরও বেশী বড় বড় পাদরী ছিল। অতঃপর তাদের মধ্যে এত বেশী মতবিরোধ সৃষ্টি হয় যে, কোন বিষয়ের উপর সত্তর আশি জনের বেশী লোক একমত হতে পারেনি। দশজনের এক রকম বিশ্বাস, বিশজনের আর এক খেয়াল, চল্লিশজন অন্য কিছু বলে এবং ষাট জন অন্য দিকে যায়।
মোটকথা, হাজার হাজার লোকের মধ্যে অতিকষ্টে মাত্র তিনশ আঠারোজন লোক এক সিদ্ধান্তে একমত হয়। বাদশাহ ঐ আকীদাকেই গ্রহণ করে এবং বাকীগুলো পরিত্যাগ করে। তাদেরই সে পৃষ্ঠপোষকতা করে এবং তাদের জন্যে গীর্জা বানিয়ে দেয়, গ্রন্থরাজি লিখিয়ে দেয় ও আইন কানুন লিপিবদ্ধ করে। ওরাই আমানত-ই-কুবরার মাসআলা বের করে যা প্রকৃতপক্ষে জঘন্যতম। খেয়ানতই ছিল। ঐ লোকগুলোকে মালেকানিয়্যাহ’ বলা হয়। দ্বিতীয় বার সম্মেলনে যে দলটি গঠিত হয়, তার নাম হচ্ছে ইয়াকুবিয়্যাহ। অতঃপর তৃতীয় সম্মেলনে যে দলটি গঠিত হয় তার নাম নাসতুরিয়্যাহ।’ এ তিনটি দল হযরত ঈসা (আঃ)-এর ব্যাপারে তিনটি উক্তি করে থাকে। (অর্থাৎ একদল তাঁকেই আল্লাহ বলে, একদল তাঁকে আল্লাহর অংশীদার বলে এবং একদল তাকে আল্লাহর পুত্র বলে)। তারা আবার একে অপরকে কাফির বলে থাকে। আর আমাদের নিকট তো তারা সবাই কাফির।
আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ তোমরা এটা হতে বিরত হও এবং এ বিরত থাকাই তোমাদের জন্যে মঙ্গলজনক। আল্লাহ তো এক, সন্তান হওয়া হতে তাঁর সত্তা সম্পূর্ণ পবিত্র। সমস্তই তার সৃষ্ট এবং সমস্ত কিছুই তার অধিকারে রয়েছে। সকলেই তাঁর দাসত্বের শৃঙ্খলে আবদ্ধ। সবকিছুই তার উপর নির্ভরশীল। তাহলে তাঁরই মাখলুকের মধ্যে কেউ তার স্ত্রী এবং কেউ তার সন্তান কিরূপে হতে পারে? অন্য একটি আয়াতে রয়েছে (আরবী) অর্থাৎ তিনি তো হচ্ছেন প্রথম আকাশ ও যমীনের সৃষ্টিকারী, সুতরাং কিরূপে তাঁর সন্তান হতে পারে? (৬:১০১) সূরা-ই-মারইয়ামের (আরবী) হতে (আরবী) (১৯:৮৮-৯৫) পর্যন্ত আয়াতেও বিস্তারিতভাবে এর অস্বীকৃতি রয়েছে।