أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book# 114/١٩٠)-৩৯১
www.motaher21.net
وَمَنْ أَحْيَاهَا فَكَأَنَّمَا أَحْيَا النَّاسَ جَمِيعًا
যে তাকে বাঁচাল, সে যেন সব মানুষকে বাঁচাল।
Human Beings Should Respect the Sanctity of Other Human Beings
সুরা: আল্ মায়িদাহ
আয়াত নং :-৩২
مِنْ أَجْلِ ذٰلِكَ كَتَبْنَا عَلٰى بَنِىٓ إِسْرٰٓءِيلَ أَنَّهُۥ مَن قَتَلَ نَفْسًۢا بِغَيْرِ نَفْسٍ أَوْ فَسَادٍ فِى الْأَرْضِ فَكَأَنَّمَا قَتَلَ النَّاسَ جَمِيعًا وَمَنْ أَحْيَاهَا فَكَأَنَّمَآ أَحْيَا النَّاسَ جَمِيعًا ۚ وَلَقَدْ جَآءَتْهُمْ رُسُلُنَا بِالْبَيِّنٰتِ ثُمَّ إِنَّ كَثِيرًا مِّنْهُم بَعْدَ ذٰلِكَ فِى الْأَرْضِ لَمُسْرِفُونَ
এ কারণেই, আমি বনী ইসরাঈলের উপর এই হুকুম দিলাম যে, যে ব্যক্তি কাউকে হত্যা করা কিংবা যমীনে ফাসাদ সৃষ্টি করা ছাড়া যে কাউকে হত্যা করল, সে যেন সব মানুষকে হত্যা করল। আর যে তাকে বাঁচাল, সে যেন সব মানুষকে বাঁচাল। আর অবশ্যই তাদের নিকট আমার রাসূলগণ সুস্পষ্ট নিদর্শনসমূহ নিয়ে এসেছে। তা সত্ত্বেও এরপর যমীনে তাদের অনেকে অবশ্যই সীমালঙ্ঘনকারী।
৩২ নং আয়াতের তাফসীর:
তাফসীরে ইবনে কাসীর বলেছেন:-
আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ আদমের এ ছেলের অন্যায়ভাবে তার ভাইকে হত্যার কারণে আমি বানী ইসরাঈলকে পরিষ্কারভাবে বলে দিয়েছি, তাদের কিতাবে লিখে দিয়েছি এবং তাদের শরঈ হুকুম করে দিয়েছি যে, যে ব্যক্তি কাউকে বিনা কারণে হত্যা করে ফেললো, না সে নিহত ব্যক্তি কাউকে হত্যা করেছিল, না সে ভূ-পৃষ্ঠে অশান্তি ছড়িয়ে দিয়েছিল, তাহলে সে যেন দুনিয়ার সমস্ত লোককেই হত্যা করে ফেললো। কেননা, আল্লাহর কাছে সমস্ত সৃষ্টজীব সমান। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি কোন নির্দোষ লোককে হত্যা করা থেকে বিরত থাকলো, ওটাকে হারাম জানলো, তবে সে যেন সমস্ত মানুষের প্রাণ বাঁচালো। কেননা, সমস্ত মানুষ এভাবে শান্তি ও নিরাপত্তার সাথে থাকবে। আমীরুল মুমিনীন হযরত উসমান (রাঃ)-কে যখন বিদ্রোহীরা ঘিরে ফেলে, তখন হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) তাঁর কাছে গিয়ে বলেনঃ “হে আমীরুল মুমিনীন। আমি আপনার পক্ষ হয়ে আপনার বিরুদ্ধাচরণকারীদের বিরুদ্ধে লড়তে এসেছি। আপনি লক্ষ্য করুন যে, পানি এখন মাথার উপরে উঠে গেছে। সুতরাং এখন তাদের সাথে যুদ্ধ করা ছাড়া আর কোন উপায় নেই।” এ কথা শুনে হযরত উসমান (রাঃ) বলেনঃ “তুমি কি সমস্ত লোককে হত্যা করার প্রতি উত্তেজিত হয়েছে যাদের মধ্যে আমিও একজন?” হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) উত্তরে বললেনঃ “না, না।” তখন তিনি বললেনঃ “জেনে রেখো যে, তুমি যদি একজন লোককেই হত্যা কর তবে যেন তুমি সমস্ত লোককেই হত্যা করলে। যাও, ফিরে যাও আমি চাই যে, আল্লাহ তোমাকে পুরস্কৃত করুন, পাপকার্যে লিপ্ত না করুন।” এ কথা শুনে হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) ফিরে গেলেন, যুদ্ধ করলেন না। ভাবার্থ এই যে, হত্যা হচ্ছে পৃথিবীর ধ্বংসের কারণ। হযরত সাঈদ ইবনে জুবাইর (রাঃ) বলেন যে, যে ব্যক্তি কোন মুসলমানকে হত্যা করা বৈধ মনে করে সে সমস্ত লোকের ঘাতক। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি কোন মুসলমানকে হত্যা করা থেকে বিরত থাকে সে যেন সমস্ত লোকেরই প্রাণ রক্ষা করে। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, নবীকে এবং ন্যায়পরায়ণ মুসলমান বাদশাহকে হত্যাকারীর উপর সারা বিশ্বের মানুষের হত্যার পাপ বর্তিত হয়। আর নবী এবং ন্যায়পরায়ণ ইমামের বাহুকে মজবুত করা বিশ্ববাসীর জীবন রক্ষা করার শামিল। (তাফসীরে ইবনে জারীর)
অন্য বর্ণনায় রয়েছে যে, কেউ কাউকে অন্যায়ভাবে হত্যা করলেই সে জাহান্নামী হয়ে যায়। সে যেন সমস্ত মানুষকেই হত্যা করলো। হযরত মুজাহিদ (রঃ) বলেন যে, কোন মুমিনকে কোন শরঈ কারণ ছাড়াই হত্যাকারী জাহান্নামী, আল্লাহর দুশমন, অভিশপ্ত এবং শাস্তির যোগ্য হয়ে যায়। সুতরাং সে যদি সমস্ত লোককেও হত্যা করতো তবে এর চেয়ে বড় শাস্তি আর কি হতো? যে ব্যক্তি হত্যা করা থেকে বিরত থাকলো, তার পক্ষ থেকে যেন সবারই জীবন রক্ষা পেলো। আব্দুর রহমান বলেন যে, এক হত্যার বদলেই তার খুন হালাল হয়ে গেলো। এটা নয় যে, কয়েকটি হত্যার পর সে কিসাসের যোগ্য হবে। আর যে তাকে জীবিত রাখবে অর্থাৎ নিহত ব্যক্তির অভিভাবক হত্যাকারীকে ক্ষমা করে দেবে, সে যেন লোকদেরকে জীবিত রাখলো। আবার এই ভাবার্থও বর্ণনা করা হয়েছে যে, যে ব্যক্তি মানুষের জীবন বাঁচাবে, যেমন ডুবন্ত মানুষকে উঠিয়ে নেবে, আগুনে পড়ে যাচ্ছে এমন লোককে আগুন থেকে রক্ষা করবে এবং কাউকে ধ্বংসের মুখ থেকে বাঁচিয়ে নেবে ইত্যাদি। উদ্দেশ্য হচ্ছে-মানুষকে অন্যায় খুন থেকে বিরত রাখা, তাদেরকে মানুষের কল্যাণ কামনা, শান্তি ও নিরাপত্তার প্রতি উদ্বুদ্ধ করা। হযরত হাসান বসরী (রঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হলোঃ “বানী ইসরাঈল যেমন এ হুকুমের আওতাভুক্ত ছিল তদ্রুপ আমরাও কি এ হুকুমেরই আওতাভুক্ত?” তিনি উত্তরে বললেনঃ “হ্যা, আল্লাহর শপথ! বানী ইসরাঈলের রক্ত আল্লাহর নিকট আমাদের রক্ত অপেক্ষা কোনক্রমেই মর্যাদাপূর্ণ নয়।” সুতরাং একটি লোককে বিনা কারণে হত্যা করা সকলকে হত্যা করার শামিল এবং একটি লোকের জীবন রক্ষা করার পুণ্য সমস্ত লোকের জীবন রক্ষা করার পুণ্যের সমান। ইমাম আহমাদ (রঃ) বলেন যে, একদা হযরত হামযা ইবনে আবদুল মুত্তালিব (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নিকট এসে বলেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আমাকে এমন কাজ বাতলিয়ে দিন যা আমার জীবনকে সুখময় করে।” তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) বললেনঃ “হে হামযা (রাঃ)! কারও জীবন রক্ষা করা আপনার নিকট পছন্দনীয় কাজ, না কাউকে মেরে ফেলা পছন্দনীয় কাজ?” উত্তরে তিনি বললেনঃ “কারও জীবন রক্ষা করাই আমার নিকট পছন্দনীয় কাজ।” তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) বললেনঃ “তাহলে আপনি এ কাজেই লেগে থাকুন।”
English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Al Mayadah
Verse:- 32
وَمَنْ أَحْيَاهَا فَكَأَنَّمَا أَحْيَا النَّاسَ جَمِيعًا
Human Beings Should Respect the Sanctity of Other Human Beings
Allah says,
مِنْ أَجْلِ ذَلِكَ
Because of that,
Allah says, because the son of Adam killed his brother in transgression and aggression,
كَتَبْنَا عَلَى بَنِي إِسْرَايِيلَ
We ordained for the Children of Israel…,
meaning, We legislated for them and informed them,
أَنَّهُ مَن قَتَلَ نَفْسًا بِغَيْرِ نَفْسٍ أَوْ فَسَادٍ فِي الَارْضِ فَكَأَنَّمَا قَتَلَ النَّاسَ جَمِيعًا وَمَنْ أَحْيَاهَا فَكَأَنَّمَا أَحْيَا النَّاسَ جَمِيعًا
that if anyone killed a person not in retaliation of murder, or (and) to spread mischief in the land – it would be as if he killed all mankind, and if anyone saved a life, it would be as if he saved the life of all mankind.
The Ayah states, whoever kills a soul without justification — such as in retaliation for murder or for causing mischief on earth — will be as if he has killed all mankind, because there is no difference between one life and another.
وَمَنْ أَحْيَاهَا
(and if anyone saved a life…),
by preventing its blood from being shed and believing in its sanctity, then all people will have been saved from him, so,
أَحْيَا النَّاسَ جَمِيعًا
(it would be as if he saved the life of all mankind).
Al-Amash and others said that Abu Salih said that Abu Hurayrah said,
“I entered on Uthman when he was under siege in his house and said, `I came to give you my support. Now, it is good to fight (defending you) O Leader of the Faithful!’
He said, `O Abu Hurayrah! Does it please you that you kill all people, including me?’
I said, `No.’
He said, `If you kill one man, it is as if you killed all people. Therefore, go back with my permission for you to leave. May you receive your reward and be saved from burden.’
So I went back and did not fight.”‘
Ali bin Abi Talhah reported that Ibn Abbas said,
“It is as Allah has stated,
مَن قَتَلَ نَفْسًا بِغَيْرِ نَفْسٍ أَوْ فَسَادٍ فِي الَارْضِ فَكَأَنَّمَا قَتَلَ النَّاسَ جَمِيعًا وَمَنْ أَحْيَاهَا فَكَأَنَّمَا أَحْيَا النَّاسَ جَمِيعًا
if anyone killed a person not in retaliation of murder, or (and) to spread mischief in the land – it would be as if he killed all mankind, and if anyone saved a life, it would be as if he saved the life of all mankind.
Saving life in this case occurs by not killing a soul that Allah has forbidden.
So this is the meaning of saving the life of all mankind, for whoever forbids killing a soul without justification, the lives of all people will be saved from him.”
Similar was said by Mujahid;
وَمَنْ أَحْيَاهَا
(And if anyone saved a life…),
means, he refrains from killing a soul.
Al-`Awfi reported that Ibn Abbas said that Allah’s statement,
فَكَأَنَّمَا أَحْيَا النَّاسَ جَمِيعًا
(it would be as if he killed all mankind…) means,
“Whoever kills one soul that Allah has forbidden killing, is just like he who kills all mankind.”
Sa`id bin Jubayr said,
“He who allows himself to shed the blood of a Muslim, is like he who allows shedding the blood of all people. He who forbids shedding the blood of one Muslim, is like he who forbids shedding the blood of all people.”
In addition, Ibn Jurayj said that Al-A`raj said that Mujahid commented on the Ayah,
فَكَأَنَّمَا قَتَلَ النَّاسَ جَمِيعًا
(it would be as if he killed all mankind),
“He who kills a believing soul intentionally, Allah makes the Fire of Hell his abode, He will become angry with him, and curse him, and has prepared a tremendous punishment for him, equal to if he had killed all people, his punishment will still be the same.”
Ibn Jurayj said that Mujahid said that the Ayah,
وَمَنْ أَحْيَاهَا فَكَأَنَّمَا أَحْيَا النَّاسَ جَمِيعًا
(and if anyone saved a life, it would be as if he saved the life of all mankind) means,
“He who does not kill anyone, then the lives of people are safe from him.”
Warning Those who Commit Mischief
Allah said,
وَلَقَدْ جَاء تْهُمْ رُسُلُنَا بِالبَيِّنَاتِ
And indeed, there came to them Our Messengers with Al-Bayyinat,
meaning, clear evidences, signs and proofs.
ثُمَّ إِنَّ كَثِيرًا مِّنْهُم بَعْدَ ذَلِكَ فِي الَارْضِ لَمُسْرِفُونَ
even then after that many of them continued to exceed the limits in the land!
This Ayah chastises and criticizes those who commit the prohibitions, after knowing that they are prohibited from indulging in them.
The Jews of Al-Madinah, such as Banu Qurayzah, An-Nadir and Qaynuqa, used to fight along with either Khazraj or Aws, when war would erupt between them during the time of Jahiliyyah. When these wars would end, the Jews would ransom those who were captured and pay the blood money for those who were killed. Allah criticized them for this practice in Surah Al-Baqarah,
وَإِذْ أَخَذْنَا مِيثَـقَكُمْ لَا تَسْفِكُونَ دِمَأءِكُمْ وَلَا تُخْرِجُونَ أَنفُسَكُمْ مِّن دِيَـرِكُمْ ثُمَّ أَقْرَرْتُمْ وَأَنتُمْ تَشْهَدُونَ
ثُمَّ أَنتُمْ هَـوُلَاءِ تَقْتُلُونَ أَنفُسَكُمْ وَتُخْرِجُونَ فَرِيقًا مِّنكُم مِّن دِيَـرِهِمْ تَظَـهَرُونَ علَيْهِم بِالاِثْمِ وَالْعُدْوَنِ وَإِن يَأْتُوكُمْ أُسَـرَى تُفَـدُوهُمْ وَهُوَ مُحَرَّمٌ عَلَيْكُمْ إِخْرَاجُهُمْ أَفَتُوْمِنُونَ بِبَعْضِ الْكِتَـبِ وَتَكْفُرُونَ بِبَعْضٍ فَمَا جَزَاءُ مَن يَفْعَلُ ذلِكَ مِنكُمْ إِلاَّ خِزْىٌ فِي الْحَيَوةِ الدُّنْيَا وَيَوْمَ الْقِيَـمَةِ يُرَدُّونَ إِلَى أَشَدِّ الّعَذَابِ وَمَا اللَّهُ بِغَـفِلٍ عَمَّا تَعْمَلُونَ
And (remember) when We took your covenant (saying):Shed not your (people’s) blood, nor turn out your own people from their dwellings. Then, (this) you ratified and (to this) you bear witness.
After this, it is you who kill one another and drive out a party of your own from their homes, assist (their enemies) against them, in sin and transgression. And if they come to you as captives, you ransom them, although their expulsion was forbidden to you. Then do you believe in a part of the Scripture and reject the rest Then what is the recompense of those who do so among you, except disgrace in the life of this world, and on the Day of Resurrection they shall be consigned to the most grievous torment. And Allah is not unaware of what you do. (2:84-85)
The Punishment of those Who Cause Mischief in the Land .
তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
টিকা:৫৩) অর্থাৎ যেহেতু আদমের এ জালেম সন্তানটি যেসব অসৎগুণের প্রকাশ ঘটিয়েছিল বনী ইসরাঈলের মধ্যেও সেইসব গুণের নিদর্শন পাওয়া যেতো, তাই মহান আল্লাহ তাদেরকে নরহত্যা থেকে বিরত থাকার ওপর ভীষণভাবে জোর দিয়েছিলেন এবং তাঁর ফরমানে একথা লিখে দিয়েছিলেন। দুঃখের বিষয়, বর্তমান প্রচলিত বাইবেলে আল্লাহর ফরমানের এ মূল্যবান শব্দাবলীর ঠাঁই নেই। তবে তালমূদে এ বিষয়বস্তুটি এভাবে বর্ণিত হয়েছেঃ “যে ব্যক্তি ইসরাঈলের একটি প্রাণকে হত্যা করলো আল্লাহর কিতাবের দৃষ্টিতে সে যেন সারা দুনিয়ার মানুষকে হত্যা করলো। আর যে ব্যক্তি ইসরাঈলের একটি প্রাণ রক্ষা করলো আল্লাহর কিতাবের দৃষ্টিতে সে যেন সারা দুনিয়ার মানুষকে রক্ষা করলো।” এভাবে তালমূদে একথাও বর্ণিত হয়েছে যে, হত্যা মামলায় বনী ইসরাঈলের বিচারপতিরা সাক্ষীদেরকে সম্বোধন করে বলতেনঃ “যে ব্যক্তি একজন মানুষকে হত্যা করে সে এমনভাবে জবাবদিহি করার যোগ্য যেন সে সারা দুনিয়ার সমস্ত মানুষকে হত্যা করেছে।”
টিকা:৫৪) এর অর্থ হচ্ছে, দুনিয়ার প্রত্যেকটি মানুষের অন্তরে অন্য মানুষের প্রাণের প্রতি মর্যাদাবোধ যদি জাগ্রত থাকে এবং তাদের প্রত্যেকে অন্যের জীবনের স্থায়িত্বে ও সংরক্ষণে সাহায্যকারী হবার মনোভাব পোষণ করে তাহলেই কেবল মানব জাতির অস্তিত্ব নিশ্চিত ও নিরাপদ হতে পারে। যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করে সে কেবলমাত্র ঐ এক ব্যক্তির ওপর জুলুম করে না বরং সে একথাও প্রমাণ করে যে, তার অন্তরে মানুষের জীবনের প্রতি মর্যাদাবোধ ও সহানুভূতির কোন স্থান নেই। কাজেই সে সমগ্র মানবতার শত্রু। কারণ তার মধ্যে এমন একটা বৈশিষ্ট্যের অস্তিত্ব বিরাজমান যা প্রতিটি মানুষের মধ্যে পাওয়া গেলে সারা দুনিয়া থেকে মানব জাতির অস্তিত্ব বিলুপ্ত হয়ে যাবে। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি মানুষের জীবন রক্ষায় সাহায্য করে সে আসলে মানবতার সাহায্যকারী ও সমর্থক। কারণ তার মধ্যে এমন গুণ পাওয়া যায়, যার ওপর মানবতার অস্তিত্ব নির্ভরশীল।
তাফসীরে আবুবকর যাকারিয়া বলেছেন:-
[১] আনাস ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “কবীরা গোনাহর মধ্যে সবচেয়ে বড় হচ্ছে আল্লাহর সাথে কাউকে শির্ক করা এবং কোন মানুষকে অন্যায়ভাবে হত্যা করা। পিতামাতার অবাধ্য হওয়া। মিথ্যা কথা বলা, অথবা বলেছেন মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া”। [বুখারীঃ ৬৮৭১]
অন্য এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাস বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ ছাড়া কোন হক মা’বূদ নাই এবং আমি আল্লাহর রাসূল, তার রক্ত তিনটি কারণ ব্যতীত প্রবাহিত করা অবৈধ। জীবনের বদলে জীবন (হত্যার বদলে কেসাস)। একজন বিবাহিত ব্যক্তি যদি অবৈধ যৌন ব্যভিচারে লিপ্ত হয় এবং ঐ ব্যক্তি যে ইসলাম ত্যাগ করে এবং মুসলিম জামা’আত থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। [বুখারীঃ ৬৮৭৮]
[২] আল্লামা শানকীতী বলেন, এ আয়াতে বলা হয়েছে যে, যারা অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করবে, অর্থাৎ হত্যার বিনিময়ে হত্যা কিংবা যমীনে ফেতনা- ফাসাদসূষ্টিকারী হবে না, যারা তাদের হত্যা করবে, তারা যেন সমস্ত মানুষকে হত্যা করল। এ আয়াতে যারা হত্যার বিনিময়ে হত্যা, অথবা ফেতনা-ফাসাদসূষ্টিকারী হবে, তাদের কি অবস্থা হবে সেটা বর্ণনা করা হয় নি। তবে অন্য আয়াতে আল্লাহ তা’আলা তাও বর্ণনা করেছেন। যেমন তিনি বলে দিয়েছেন, “আর আমরা তাদের উপর তাতে অত্যাবশ্যক করে দিয়েছিলাম যে, প্রাণের বদলে প্রাণ, চোখের বদলে চোখ, নাকের বদলে নাক, কানের বদলে কান, দাঁতের বদলে দাঁত এবং যখমের বদলে অনুরূপ যখম” [সূরা আল-মায়েদাহ ৪৫] আরও বলেন, “হে ঈমানদারগণ! নিহতদের ব্যাপারে তোমাদের উপর কিসাসের বিধান লিখে দেয়া হয়েছে। স্বাধীন ব্যক্তির বদলে স্বাধীন ব্যক্তি, ক্রীতদাসের বদলে ক্রীতদাস, নারীর বদলে নারী”। [সূরা আল-বাকারাহ: ১৭৮]
আরও বলেন, “কেউ অন্যায়ভাবে নিহত হলে তার উত্তরাধিকারীকে তো আমি তার প্রতিকারের অধিকার দিয়েছি; কিন্তু হত্যা ব্যাপারে সে যেন বাড়াবাড়ি না করে” [সূরা আল-ইসরা ৩৩] [আদওয়াউল বায়ান]
[৩] ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, কাউকে জীবিত করার অর্থ, আল্লাহ যাকে হত্যা করা হারাম ঘোষণা করেছেন সে ধরনের কোন মানুষকে হত্যা না করা। এতে করে সে যেন সবাইকে জীবিত রাখল। অর্থাৎ যে অন্যায়ভাবে কোনো ব্যক্তিকে হত্যা করা হারাম মনে করে, তার থেকে সমস্ত মানুষ জীবিত থাকতে সমর্থ হলো। [তাবারী]
তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ বলেছেন:-
৩২ নং আয়াতের তাফসীর:
আদম (আঃ)-এর পুত্র কাবীল-হাবীলকে হত্যা করার কারণে আল্লাহ তা‘আলা বানী ইসরাঈলের ওপর বিধান দিলেন যে, অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করা অথবা জমিনে ফাসাদ সৃষ্টি করা সকল মানুষকে হত্যা করার শামিল। আর কাউকে মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করা সকল মানুষকে বাঁচানোর শামিল।
এ বিধান শুধু বানী ইসরাঈলের জন্য সীমাবদ্ধ নয় বরং আমাদের জন্যও প্রযোজ্য। সুলাইমান বিন আলী আররিবয়ী (রহঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি হাসান বাসরীকে জিজ্ঞাসা করলাম: হে আবূ সাঈদ! এ আয়াতের বিধান বানী ইসরাঈলের মত আমাদের জন্যও কি প্রযোজ্য? তিনি বললেন: হ্যাঁ। সে সত্তার শপথ যিনি ছাড়া কোন মা‘বূদ নেই। এ বিধান যেমন বানী ইসরাঈলের জন্য ছিল তেমনি আমাদের জন্যও প্রাযোজ্য। বানী ইসরাঈলের রক্তের চেয়ে আমাদের রক্তের মর্যাদা কোনক্রমেই কম নয়। (ইবনে কাসীর, অত্র আয়াতের তাফসীর, তাবারী, ৬/১৩১)
ইসলাম মানবতার ধর্ম। এরূপ মানবতাপূর্ণ বিধান ইসলাম ছাড়া অন্য কোন ধর্ম নেই। তাই যারা ইসলামকে সেকেলে ধর্ম বলে বা ইসলামের ব্যাপারে আঙ্গুল তুলে কথা বলে তাদের ইসলাম সম্পর্কে জ্ঞানের অভাব রয়েছে। অজ্ঞতা ও মূর্খতাবশত তারা এরূপ কথা বলে।
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. অন্যায়ভাবে হত্যা করা বা ফাসাদ সৃষ্টির পরিণতি খুবই ভয়াবহ।
২. অধিকাংশরাই অপরাধে জড়িত হয়েছে তাদের নিকট প্রমাণাদি আসার পর।
৩. ইসলাম পরিপূর্ণভাবে মাবনাধিকার সংরক্ষণ করেছে।