(Book# 114/١٩٣)-৩৯৪ www.motaher21.net وَالسَّارِقُ وَالسَّارِقَةُ فَاقْطَعُوٓا أَيْدِيَهُمَا আর পুরুষ চোর ও নারী চোর তাদের উভয়ের হাত কেটে দাও The Necessity of Cutting off the Hand of the Thief সুরা: আল্ মায়িদাহ আয়াত নং :-৩৮-৪০

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ

(Book# 114/١٩٣)-৩৯৪
www.motaher21.net
وَالسَّارِقُ وَالسَّارِقَةُ فَاقْطَعُوٓا أَيْدِيَهُمَا

আর পুরুষ চোর ও নারী চোর তাদের উভয়ের হাত কেটে দাও

The Necessity of Cutting off the Hand of the Thief

সুরা: আল্ মায়িদাহ
আয়াত নং :-৩৮-৪০

وَالسَّارِقُ وَالسَّارِقَةُ فَاقْطَعُوٓا أَيْدِيَهُمَا جَزَآءًۢ بِمَا كَسَبَا نَكٰلًا مِّنَ اللَّهِ ۗ وَاللَّهُ عَزِيزٌ حَكِيمٌ

আর পুরুষ চোর ও নারী চোর তাদের উভয়ের হাত কেটে দাও তাদের অর্জনের প্রতিদান ও আল্লাহর পক্ষ থেকে শিক্ষণীয় আযাবস্বরূপ এবং আল্লাহ মহা পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।

আয়াত:- ৩৯
فَمَن تَابَ مِنۢ بَعْدِ ظُلْمِهِۦ وَأَصْلَحَ فَإِنَّ اللَّهَ يَتُوبُ عَلَيْهِ ۗ إِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَّحِيمٌ

অতঃপর যে তার যুলমের পর তাওবা করবে এবং নিজকে সংশোধন করবে, তবে নিশ্চয় আল্লাহ তাকে ক্ষমা করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
আয়াত:-৪০
أَلَمْ تَعْلَمْ أَنَّ اللَّهَ لَهُۥ مُلْكُ السَّمٰوٰتِ وَالْأَرْضِ يُعَذِّبُ مَن يَشَآءُ وَيَغْفِرُ لِمَن يَشَآءُ ۗ وَاللَّهُ عَلٰى كُلِّ شَىْءٍ قَدِيرٌ
তুমি কি জান না যে, নিশ্চয় আল্লাহ, তাঁর জন্যই আসমানসমূহ ও যমীনের রাজত্ব, তিনি যাকে ইচ্ছা আযাব দেন এবং যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন, আর আল্লাহ সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান।

৩৮-৪০ নং আয়াতের তাফসীর:

তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ বলেছেন:-

অত্র আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা চোর ও চোরনীর হাত কাটার নির্দেশ প্রদান করেছেন। এতে সামাজিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকবে। সম্পদের হিফাযত হবে এবং মানুষ চুরির মত কবীরা গুনাহ ও অসভ্য আচরণ থেকে বেঁচে থাকবে।

যে ব্যক্তি অন্যের সংরক্ষিত সম্পদ অনুমতি ছাড়া গোপনীয়ভাবে নিয়ে আসে তাকে চোর বলে। অতএব অসংরক্ষিত সম্পদ, নির্দিষ্ট পরিমাণ ও গোপনীয়ভাবে না হলে চুরির শাস্তি প্রয়োগ করা যাবে না।

তবে কতটুকু পরিমাণ চুরি করলে হাত কাটা হবে এ নিয়ে মতানৈক্য রয়েছে। এ বিষয়ে সঠিক কথা হল: যদি চুরিকৃত জিনিসের পরিমাণ এক চতুর্থাংশ স্বর্ণমুদ্রা (দীনার) অথবা তিনটি রৌপ্যমুদ্রা (দিরহাম) অথবা ঐ পরিমাণ মূল্যের কোন জিনিস হলে হাত কাটা হবে। (তাফসীর সা‘দী, পৃঃ ২১৯, আযউয়াউল বায়ান ৩/২৮৫, ইবনে কাসীর, ৩/১৩১, সহীহ ফিকহুস সুন্নাহ ৪/১১৪)

হাত কাটা হবে কব্জি পর্যন্ত। প্রথমবার চুরি করলে ডান হাত কাটা হবে, দ্বিতীয়বার চুরি করলে বাম পা কাটা হবে; তার পরে চুরি করলে বাম হাত কাটা হবে। তারপরে চুরি করলে ডান পা কাটা হবে। অধিকাংশ উলামাগণ এটাই বলেছেন। (আযউয়াউল বায়ান, ৩/২৮৫)

চোরের কৃত কর্মের ফলাফল হিসেবে তার ওপর আল্লাহ তা‘আলার এ ফায়সালা বাস্তবায়ন করবে ইসলামী সরকার।

কিসের দ্বারা চোরের দণ্ড সাব্যস্ত হবে:

১. প্রমাণ: অবশ্যই দু’জন ন্যায়পরায়ণ স্বাধীন মুসলিম ব্যক্তি বিচারপতির সামনে সাক্ষ্য দেবে যে, সে চুরি করেছে।
২. অথবা নিজে স্বীকার করবে যে, আমি চুরি করেছি। (সহীহ ফিকহুস সুন্নাহ: ৪/৯৫)

যে ব্যক্তি চুরি করার পর তাওবাহ করবে এবং আমল সংশোধন করে নেবে আল্লাহ তা‘আলা তাকে ক্ষমা করবেন। অবশ্যই চুরিকৃত সম্পদ ফিরত দিতে হবে।

জাহিলী যুগে ধনী সম্ভ্রান্ত ও উচ্চ মর্যাদাশীল ব্যক্তি চুরি করলে ছেড়ে দিত। আর গরীব নীচু বংশের লোক চুরি করলে দণ্ড কায়েম করত।

আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন: মক্কা বিজয়ের দিন কুরাইশদের কোন এক মহিলা চুরি করেছিল। কুরাইশ বংশের লোকেরা বলল: রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে এ মহিলার ব্যাপারে কে সুপারিশ করবে? তারা বলল: উসামা বিন যায়েদ ছাড়া এ কাজে কেউ সাহস পাবে না। মহিলাকে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে নিয়ে আসা হল। উসামা তার ব্যাপারে সুপারিশ করলেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর চেহারা লাল হয়ে গেল। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: আল্লাহ তা‘আলার দণ্ডের ব্যাপারে সুপারিশ করছ? উসামা (রাঃ) বললেন: হে আল্লাহর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন। বিকাল বেলা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দাঁড়িয়ে খুতবা দিলেন: আল্লাহ তা‘আলার যথার্থ প্রসংশা করলেন, অতঃপর বললেন: তোমাদের পূর্ববর্তীরা ধ্বংস হয়েছে এজন্য যে, তাদের মধ্যে সম্ভ্রান্ত বংশের কেউ চুরি করলে ছেড়ে দিত আর দুর্বল ও নীচু বংশের কেউ চুরি করলে তার ওপর হদ কায়েম করত। আল্লাহ তা‘আলার শপথ যার হাতে আমার প্রাণ! যদি মুহাম্মাদের মেয়ে ফাতেমাও চুরি করত তাহলে আমি তার হাত কেটে দিতাম। (সহীহ বুখারী হা: ৬৮৮৭)

আমাদের অবস্থা যেন এমন না হয় যে, বিত্তশালী ও মর্যাদাশালীদের ওপর দণ্ড কায়েম না করে শুধু গরীব নীচু শ্রেণি লোকদের ওপর বাস্তবায়ন করি। বিচারপতির কাছে বিচার চলে গেলে কোন প্রকার সুপারিশ করা নিষেধ। আমাদের সমাজে যদি ইসলামের এ বিধান প্রয়োগ হত তাহলে দূর্নীতি ও অরাজকতামুক্ত শান্তির সমাজ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হত। হে আল্লাহ! তা‘আলা আমাদের তাওফীক দান করুন এবং প্রশাসকদের হিদায়াত দান করুন।

আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:

১. চুরি করা কবীরা গুনাহ।
২. চোরের জন্য শরীয়ত নির্ধারিত শাস্তির বিধান রয়েছে।
৩. তাওবাহ করার পরেও চুরিকৃত সম্পদ মালিকের নিকট ফিরিয়ে দিতে হবে।
৪. আল্লাহ তা‘আলার এ বিধান চালু করলে সমাজে কোন প্রকার চুরির শঙ্কা থাকবে না।
৫. চোরের পক্ষে আদালতের কাছে সুপারিশ অবৈধ।

English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Al Mayadah
Verse:- 38-40

وَالسَّارِقُ وَالسَّارِقَةُ فَاقْطَعُواْ أَيْدِيَهُمَا

The male thief and the female thief, cut off their hands,

The Necessity of Cutting off the Hand of the Thief

Allah says;

وَالسَّارِقُ وَالسَّارِقَةُ فَاقْطَعُواْ أَيْدِيَهُمَا

And (as for) the male thief and the female thief, cut off their hands,

Allah commands and decrees that the hand of the thief, male or female be cut off.

During the time of Jahiliyyah, this was also the punishment for the thief, and Islam upheld this punishment.

In Islam, there are several conditions that must be met before this punishment is carried out, as we will come to know, Allah willing.

There are other rulings that Islam upheld after modifying these rulings, such as that of blood money for example.

When Does Cutting the Hand of the Thief Become Necessary

In is recorded in the Two Sahihs that Abu Hurayrah said that the Messenger of Allah said,

لَعَنَ اللهُ السَّارِقَ يَسْرِقُ الْبَيْضَةَ فَتُقْطَعُ يَدُهُ وَيَسْرِقُ الْحَبْلَ فَتُقْطَعُ يَدُه

May Allah curse the thief who steals an egg and as a result his hand is cut off, and who steals rope and as a result his hand is cut off.

Al-Bukhari and Muslim recorded that Aishah said that the Messenger of Allah said,

تُقْطَعُ يَدُ السَّارِقِ فِي رُبْعِ دِينَارٍ فَصَاعِدًا

The hand of the thief shall be cut off if he steals a quarter of a Dinar or more.

Muslim recorded that Aishah, may Allah be pleased with her, said that the Messenger of Allah said,

لَاا تُقْطَعُ يَدُ السَّارقِ إِلاَّ فِي رُبْعِ دِينارٍ فَصَاعِدًا

The hand of the thief shall only be cut off if he steals a quarter of a Dinar or more.

This Hadith is the basis of the matter since it specifies (that the least amount of theft that deserves cutting the hand) is a quarter of a Dinar. So this Hadith fixes the value. And saying that it is three Dirhams is not a contradiction. This is because the Dinar in question was equal to twelve Dirhams, so three Dirhams equaled a fourth of a Dinar. So in this way it is possible to harmonize these two views.

This opinion was reported from Umar bin Al-Khattab, Uthman bin Affan, Ali bin Abi Talib – may Allah be pleased with them – and it is the view of Umar bin Abdul-Aziz, Al-Layth bin Sa`d, Al-Awza`i, and Ash-Shafii and his companions.

This is also the view of Imam Ahmad bin Hanbal and Ishaq bin Rahwayh in one of the narrations from him, as well as Abu Thawr, and Dawud bin Ali Az-Zahari, may Allah have mercy upon them.

As for Imam Abu Hanifah and his students Abu Yusuf, Muhammad and Zufar, along with Sufyan Ath-Thawri, they said that;

the least amount of theft that deserves cutting off the hand is ten Dirhams, whereas a Dinar was twelve Dirhams at that time.

The first ruling is the correct one, that the least amount of theft is one forth of a Dinar or more.

This meager amount was set as the limit for cutting the hand, so that the people would refrain from theft, and this is a wise decision to those who have sound comprehension.

Hence Allah’s statement,

جَزَاء بِمَا كَسَبَا نَكَالاً مِّنَ اللّهِ

as a recompense for that which both committed, a punishment by way of example from Allah.

This is the prescribed punishment for the evil action they committed, by stealing the property of other people with their hands. Therefore, it is fitting that the tool they used to steal the people’s wealth be cut off as punishment from Allah for their error.

وَاللّهُ عَزِيزٌ

And Allah is All-Powerful, (in His torment),

حَكِيمٌ

All-Wise.

in His commands, what he forbids, what He legislates and what He decrees.
Repentance of the Thief is Acceptable

Allah said next,

فَمَن تَابَ مِن بَعْدِ ظُلْمِهِ وَأَصْلَحَ فَإِنَّ اللّهَ يَتُوبُ عَلَيْهِ إِنَّ اللّهَ غَفُورٌ رَّحِيمٌ

But whosoever repents after his crime and does righteous good deeds, then verily, Allah will pardon him. Verily, Allah is Oft-Forgiving, Most Merciful.

Therefore, whoever repents and goes back to Allah after he commits theft, then Allah will forgive him.

Imam Ahmad recorded that Abdullah bin `Amr said that;

a woman committed theft during the time of the Messenger of Allah and those from whom she stole brought her and said, “O Allah’s Messenger! This woman stole from us.”

Her people said, “We ransom her.”

The Messenger of Allah said,

اقْطَعُوا يَدَهَا

Cut off her hand.

They said, “We ransom her with five hundred Dinars.”

The Prophet said,

اقْطَعُوا يَدَهَا

Cut off her hand.

Her right hand was cut off and the woman asked, “O Messenger of Allah! Is there a chance for me to repent?”

He said,

نَعَمْ أَنْتِ الْيَوْمَ مِنْ خَطِييَتِكِ كَيَوْمَ وَلَدَتْكِ أُمُّك

Yes. This day, you are free from your sin just as the day your mother gave birth to you.

Allah sent down the verse in Surah Al-Ma’idah,

فَمَن تَابَ مِن بَعْدِ ظُلْمِهِ وَأَصْلَحَ فَإِنَّ اللّهَ يَتُوبُ عَلَيْهِ إِنَّ اللّهَ غَفُورٌ رَّحِيمٌ

But whosoever repents after his crime and does righteous good deeds (by obeying Allah), then verily, Allah will pardon him. Verily, Allah is Oft-Forgiving, Most Merciful.

This woman was from the tribe of Makhzum. Her story was narrated in the Two Sahihs from Az-Zuhri from Urwah from Aishah.

The incident caused concern for the Quraysh after she committed the theft during the time of the battle of the Conquest (of Makkah). They said, “Who can talk to Allah’s Messenger about her matter.”

They then said, “Who dares speak to him about such matters other than Usamah bin Zayd, his loved one.”

When the woman was brought to the Messenger of Allah, Usamah bin Zayd talked to him about her and the face of the Messenger changed color (because of anger) and he said,

أَتَشْفَعُ فِي حَدَ مِنْ حُدُودِ اللهِ عَزَّ وَجَلَّ

Do you intercede in a punishment prescribed by Allah?

Usamah said to him, “Ask Allah to forgive me, O Allah’s Messenger!”

During that night, the Messenger of Allah stood up and gave a speech and praised Allah as He deserves to be praised. He then said,

أَمَّا بَعْدُ فَإِنَّمَا أَهْلَكَ الَّذِينَ مِنْ قَبْلِكُمْ أَنَّهُمْ كَانُوا إِذَا سَرَقَ فِيهِمُ الشَّرِيفُ تَرَكُوهُ وَإِذَا سَرَقَ فِيهِمُ الضَّعِيفُ أَقَامُوا عَلَيْهِ الْحَدَّ

Those who were before you were destroyed because when an honorable person among them would steal, they would leave him. But, when a weak man among them stole, they implemented the prescribed punishment against him.

وَإِنِّي وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَوْ أَنَّ فَاطِمَةَ بِنْتَ مُحَمَّدٍ سَرَقَتْ لَقَطَعْتُ يَدَهَا

By Him in Whose Hand is my soul! If Fatimah the daughter of Muhammad stole, I will have her hand cut off.

The Prophet commanded that the hand of the woman who stole be cut off, and it was cut off.

Aishah said, `Her repentance was sincere afterwards, and she got married and she used to come to me so that I convey her needs to the Messenger of Allah.”

This is the wording that Muslim collected, and in another narration by Muslim, Aishah said,

“She was a woman from Makhzum who used to borrow things and deny that she took them. So the Prophet ordered that her hand be cut off.”

Allah then said

أَلَمْ تَعْلَمْ أَنَّ اللّهَ لَهُ مُلْكُ السَّمَاوَاتِ وَالَارْضِ
.

Know you not that to Allah (Alone) belongs the dominion of the heavens and the earth!

He owns everything and decides what He wills for it and no one can resist His judgment.

يُعَذِّبُ مَن يَشَاء وَيَغْفِرُ لِمَن يَشَاء وَاللّهُ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ

He punishes whom He wills and He forgives whom He wills. And Allah is able to do all things.

তাফসীরে ইবনে ‌কাসীর বলেছেন:-
৩৮-৪০ নং আয়াতের তাফসীর:

হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ)-এর কিরআতে (আরবী) রয়েছে। এ কিরআতটি খুবই বিরল হলেও আমল কিন্তু এর উপরই। তবে আমল এই কিরআতের কারণে নয়, বরং অন্যান্য দলীল প্রমাণের উপর ভিত্তি করে। চোরের হাত কাটার নিয়ম ইসলামপূর্ব যুগেও ছিল। ইসলাম একে বিস্তারিত এবং শৃংখলিত করেছে। অনুরূপভাবে কাসামাত, দিয়াত, ফারায়েয প্রভৃতি মাসআলাও পূর্ব থেকেই ছিল। কিন্তু সেগুলো ছিল বিশৃংখল ও অসম্পূর্ণভাবে। ইসলাম ঐগুলোকে ঠিকঠাক করে দিয়েছে। একটা উক্তি এটাও আছে যে, কুরাইশরা সর্বপ্রথম চুরির অপরাধে খুযাআ গোত্রের দুওয়াইক নামক একটি লোকের হাত কেটে নিয়েছিল। সে কাবা ঘরের গেলাফ বা আবরণ চুরি করেছিল। আবার এটাও বলা হয়েছে যে, চোরেরা ওটা তার নিকট রেখে দিয়েছিল। কতক ধর্মশাস্ত্রবিদের অভিমত এই যে, চুরির বস্তুর কোন সীমা নেই। তা অল্পই হোক আর বেশীই হোক এবং সুরক্ষিত জায়গা থেকে চুরি করে থাক বা অরক্ষিত জায়গা থেকে চুরি করে থাক, সর্বাবস্থাতেই চোরের হাত কাটা যাবে। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, এ আয়াতটি সাধারণ। তাহলে এ উক্তিটির ভাবার্থ এটাও হতে পারে এবং অন্যটাও হতে পারে। যারা উপরোক্ত মত পোষণ করেন তাঁদের একটি দলীল হচ্ছে এ হাদীসটি যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আল্লাহ চোরের উপর অভিসম্পাত বর্ষণ করুন যে, সে সামান্য ডিম চুরি করে হাত কাটিয়ে নেয়, সে দড়ি বা রঞ্জু চুরি করে, ফলে তার হাত কাটা হয়।” জমহুর উলামার অভিমত এই যে, চোরাই মালের সীমা নির্দিষ্ট আছে, যদিও সেই নির্দিষ্ট সীমার ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে। ইমাম মালিক (রঃ) বলেন যে, তিনটি খাঁটি রৌপ্যমুদ্রা বা এ পরিমাণ মূল্যের কোন জিনিস চুরি করলে হাত কাটা হবে। সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর একটি চোরের হাত একটা ঢাল চুরি করার অপরাধে কেটে নেয়ার কথা বর্ণিত আছে। আর ওর মূল্য এ পরিমাণই ছিল। একটি চোর দরজা বা জানালার উপরিস্থিত কাঠ চুরি করেছিল। এ অপরাধে হযরত উসমান (রাঃ) তার হাত কেটে নিয়েছিলেন। ঐ কাঠটির মূল্য তিন দিরহামই ছিল। হযরত উসমান (রাঃ)-এর এ কাজটি যেন সাহাবায়ে কিরামের নীরব ইজমা’ই ছিল এবং এর দ্বারা এটাও সাব্যস্ত হচ্ছে যে, ফল চোরের হাত কেটে নেয়া হবে। হানাফীগণ এটা স্বীকার করেন না। তাঁদের মতে চোরাই মাল দশ দিরহাম মূল্যের হওয়া জরুরী। ইমাম শাফিঈ (রঃ) এর বিপরীত মত পোষণ করেন। তিনি চোরাই মালের জন্যে কমপক্ষে এক চতুর্থাংশ স্বর্ণমুদ্রা পরিমাণ মূল্য বা তার চেয়ে বেশী নির্দিষ্ট করেছেন। তাঁর দলীল হচ্ছে। সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে বর্ণিত হাদীসটি। তাতে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “এক চতুর্থাংশ স্বর্ণমুদ্রা বা তার চেয়ে বেশীতে চোরের হাত কেটে নেয়া হবে।” সহীহ মুসলিমে একটি হাদীস রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “এক চতুর্থাংশ স্বর্ণমুদ্রা বা তার চেয়ে বেশী না হলে চোরের হাত কাটা যাবে না। সুতরাং এ হাদীস স্পষ্টভাবে এ মাসআলার মীমাংসা করে দেয়। আর যে হাদীসে তিন দিরহামে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর চোরের হাত কেটে নেয়ার নির্দেশ বর্ণিত আছে, ওটা এর বিপরীত নয়। কেননা, ঐ সময় দীনার বা স্বর্ণমুদ্রা বারোটি দিরহাম বা রৌপ্যমুদ্রা পরিমাণ মূল্যের ছিল। অতএব, মূল হচ্ছে এক চতুর্থাংশ দীনার, তিন দিরহাম নয়। হযরত উমার ইবনে খাত্তাব (রাঃ), হযরত উসমান ইবনে আফফান (রাঃ) এবং হযরত আলী ইবনে আবি তালিব (রাঃ) এ কথাই বলেন। হযরত উমার ইবনে আবদুল আযীয (রঃ), লায়েস ইবনে সা’দ আওযায়ী (রঃ), ইমাম শাফিঈ (রঃ), ইসহাক ইবনে রাহওয়াই (রঃ) এবং আবু সাউর দাউদ ইবনে আলী যাহেরীরও (রঃ) এটাই উক্তি।

এক রিওয়ায়াতে ইমাম ইসহাক ইবনে রাওয়াই (রঃ) এবং ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল (রঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, চতুর্থাংশ দীনারই হোক বা তিন দিরহামই হোক, দু’টোই হচ্ছে চোরের হাত কেটে ফেলার নেসাব। মুসনাদে আহমাদে হযরত আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “এক চতুর্থাংশ দীনার মূল্যের বস্তু চুরিতে তোমরা চোরের হাত কেটে নাও, তার কম পরিমাণ মূল্যের জিনিস চুরিতে হাত কেটো না।” ঐ সময় দীনার ছিল বারো দিরহামের। সুতরাং এক চতুর্থাংশ দীনার তিন দিরহামই হয়। সুনানে নাসাঈর শব্দ হচ্ছে নিম্নরূপঃ “চোরের হাত ঢালের মূল্যের কমে কাটা হবে না।” হযরত আয়েশা (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হয়ঃ ঢালের মূল্য কত? তিনি উত্তরে বলেনঃ “এক চতুর্থাংশ দীনার।” সুতরাং এ সমুদয় হাদীস দ্বারা এটা স্পষ্টভাবে সাব্যস্ত হচ্ছে যে, হাত কাটার জন্যে দশ দিরহামের শর্ত করা ভুল। আল্লাহ তা’আলাই সবচেয়ে ভাল জানেন।

ইমাম আবু হানীফা (রঃ) এবং তাঁর সঙ্গী-সাথীগণ বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর যুগে যে ঢাল চুরির অপরাধে চোরের হাত কেটে নেয়া হয়েছিল ওর * মূল্য ছিল দশ দিরহাম। যেমন আবু বকর ইবনে আবি শায়বা (রঃ) হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন যে, নবী (সঃ)-এর যুগে ঢালের মূল্য ছিল দশ দিরহাম। আমর ইবনে শুআইব তাঁর পিতা থেকে এবং তিনি তাঁর দাদা থেকে বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “ঢালের মূল্যের কমে চোরের হাত কাটা হবে না।” আর ঢালের মূল্য ছিল দশ দিরহাম। হানাফীগণ বলেনঃ “ঢালের মূল্যের ব্যাপারে হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) এবং হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) হযরত ইবনে উমার (রাঃ)-এর বিরোধিতা করেছেন। আর হুদূদের ব্যাপারে সাবধানতার উপর আমল করা উচিত এবং বেশীতেই সাবধানতা আছে। এ কারণেই আমরা চোরের হাত কাটার ব্যাপারে নেসাব নির্ধারণ করেছি দশ দিরহাম।” পূর্ববর্তী কোন কোন মনীষী বলেন যে, এর হদ হচ্ছে দশ দিরহাম বা এক দীনার। আলী ইবনে মাসউদ (রঃ), ইবরাহীম নখঈ (রঃ) এবং আবু জাফর (রঃ) হতে এটাই বর্ণিত আছে। সাঈদ ইবনে জুবাইর (রঃ) বলেন যে, পাঁচ দীনার বা পঞ্চাশ দিরহামের সমান মূল্যের দ্রব্য চুরি ছাড়া পঞ্চমাংশ কেটে নেয়া হবে না। যাহেরিয়ার মাযহাব এই যে, চুরির মাল অল্পই হোক আর বেশীই হোক, তাতে হাত কেটে নেয়া হবে। তাদেরকে জমহুর এ উত্তর দিয়েছেন যে, প্রথমতঃ তো এ প্রয়োগই মানসূখ বা রহিত। কিন্তু এ উত্তর ঠিক নয়। কেননা, রহিত করণের ইতিহাসের কোন নিশ্চয়তা নেই। দ্বিতীয় উত্তর এই যে, ডিমের ভাবার্থ হচ্ছে লোহার ডিম এবং রজ্জ্বর ভাবার্থ হচ্ছে নৌকার মূল্যবান রঞ্জু। তৃতীয় উত্তর এই যে, পরিণামের দিকে লক্ষ্য রেখে এ নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ চোর এ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সাধারণ জিনিসগুলো চুরি করতে করতে শেষ পর্যন্ত মূল্যবান জিনিস চুরি করতে শুরু করে এবং এর ফলে তার হাত কেটে নেয়া হয়। আবার এও হতে পারে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর এ নির্দেশ ঘটনার বর্ণনা হিসেবে ছিল। অজ্ঞতার যুগে ছোট ছোট জিনিস চুরি করলেও হাত কেটে নেয়া হতো। সুতরাং তিনি হয়তো আফসোস করে এবং চোরকে লজ্জা দিতে গিয়ে বলেছিলেনঃ সে কতই না লাঞ্ছিত ও বেওকুফ যে, সাধারণ জিনিসের কারণে হাতের মত এমন একটি নিয়ামত থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বর্ণিত আছে যে, আবুল আলা মাআরবী যখন বাগদাদে আসে তখন সে এ ব্যাপারে বড় রকম আপত্তি করে বসে এবং তার মনে এ খেয়াল জাগে যে, তার এ আপত্তির কেউ কোন জবাব দিতে পারবে না। তাই সে এ ব্যাপারে একটি কবিতা রচনা করে। কবিতাটির অনুবাদ নিম্নরূপ-

“যদি হাত কেটে নেয়ার সিদ্ধান্ত হয় তবে এর দিয়্যাত হিসাবে পাঁচশ’ দেয়া হবে, আবার এই হাতকে মাত্র এক চতুর্থাংশ দীনার চুরির কারণে কেটে নেয়া হবে। এটা এমন একটি পরস্পর বিরোধী কথা যা আমার বোধগম্য হয় না, কাজেই আমাকে নীবর থাকতে হয়, আর আমি আমার মাওলার নিকট জাহান্নামের আগুন থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।” যখন তার এ উক্তির প্রসিদ্ধি লাভ ঘটলো তখন উলামায়ে কিরাম তার জবাব দিতে চাইলেন। এ দেখে সে পালিয়ে গেলো। কাযী আবদুল অহ্হাব তার এ উক্তির জবাবে বলেছিলেনঃ “যতক্ষণ পর্যন্ত হাত বিশ্বস্ত ছিল ততক্ষণ পর্যন্ত তা মূল্যবান ছিল এবং যখন সে বিশ্বাসঘাতকতা করলো অর্থাৎ চুরি করলো তখন তার মূল্য কমে গেল।” কোন কোন মনীষী কিছু বিস্তারিতভাবে এর উত্তর দিয়েছেন। তারা বলেছেনঃ এর দ্বারা শরীয়তের পূর্ণ হিকমত প্রকাশ পাচ্ছে এবং দুনিয়ার শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। তবে কেউ যদি কারও হাত বিনা কারণে কেটে দেয় তাহলে সে জন্যে বড় রকমের ব্যবস্থা রয়েছে, যাতে তোক এ জঘন্য কাজ থেকে বিরত থাকে। সেখানে এ হুকুমই উপযুক্ত ছিল। সামান্য জিনিস চুরি করার কারণে হাত কেটে নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে যাতে এ ভয়ে চুরির দরজা বন্ধ হয়ে যায়। সুতরাং এটাই তো হচ্ছে প্রকৃত হিকমতের পরিচয়। যদি চুরিতেও একটা নির্দিষ্ট পরিমাণের শর্ত লাগানো হতো তবে চুরির পথ বন্ধ হতো না। এটা কৃতকর্মেরই প্রতিফল। উচিত পন্থা এটাই যে, যে অঙ্গ দ্বারা সে অপরের ক্ষতিসাধন করেছে ঐ অঙ্গের উপরই শাস্তি হবে, যাতে তার যথেষ্ট শিক্ষা লাভ হয় এবং অন্যেরাও সতর্ক হয়। আল্লাহ প্রতিশোধ গ্রহণের ব্যাপারে প্রবল পরাক্রান্ত এবং স্বীয় আদেশ ও নিষেধের ব্যাপারে পূর্ণ বিজ্ঞানময়।

(আরবী) যে ব্যক্তি সীমালংঘন করার পর অর্থাৎ চুরি করার পর তাওবা করে নেয় এবং আমলকে সংশোধন করে নেয়, তার প্রতি আল্লাহ (রহমতের) দৃষ্টি করবেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ পরম ক্ষমাশীল, অতি দয়ালু। তবে হ্যাঁ, কেউ যদি কারও মাল চুরি করার পর তা নিজের কাছেই রেখে দেয় তাহলে শুধুমাত্র তাওবা করলেই গুনাহ মাফ হবে না। যে পর্যন্ত না সেই মাল মালিককে ফিরিয়ে না দেবে অথবা ওর পূর্ণ মূল্য প্রদান করবে। জমহুর ইমামদের এটাই অভিমত। শুধুমাত্র ইমাম আবু হানীফা (রঃ) বলেন যে, যদি চুরির অপরাধে হাত কেটে নেয়া হয় এবং চোরাই মাল নষ্ট হয়ে গিয়ে থাকে তবে দুনিয়ায় ওর বদলা প্রদান করা তার উপর জরুরী নয়। ইমাম দারেকুনীর হাদীস গ্রন্থের একটি মুরসাল হাদীসে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর সামনে একটি চোরকে হাযির করা হয়। লোকটি একটি চাদর চুরি করেছিল। রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাকে বলেনঃ “আমার মনে হয় তুমি চুরি করনি।”

সে বলে, হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আমি চুরি করেছি। তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) লোকদেরকে বলেনঃ “তোমরা একে নিয়ে গিয়ে হাত কেটে দাও।” তার হাত কেটে নেয়া হলে সে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নিকট আগমন করে। তিনি তাকে বলেনঃ তাওবা কর। সে তখন তওবা করে। তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাকে বলেনঃ “আল্লাহ তোমার তাওবা কবূল করেছেন।

সুনানে ইবনে মাজায় রয়েছে যে, হযরত উমার ইবনে সুমরা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নিকট এসে বলেঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আমি চুরি করে ফেলেছি। সুতরাং আপনি আমাকে পবিত্র করে নিন। আমি অমুক কাবীলার উট চুরি করেছি।” রাসূলুল্লাহ (সঃ) তখন সেই কাবীলার লোকদের নিকট সংবাদ পাঠিয়ে জানতে চান যে, ওটা সত্য কি-না। তারা বলেঃ “আমাদের একটি উট অবশ্যই চুরি হয়েছে। তখন তাঁর নির্দেশক্রমে হযরত উমার ইবনে সুমরা (রাঃ)-এর হাত কেটে নেয়া হয়। তিনি তখন হাতকে সম্বোধন করে বলেনঃ “আমি সেই আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি যিনি আমার দেহ হতে তোমাকে পৃথক করে দিয়েছেন। তুমি আমার সমস্ত দেহকে জাহান্নামে নিয়ে যেতে চেয়েছিলে।”

ইমাম আহমাদ (রঃ) হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন যে, আল্লাহর রাসূল (সঃ)-এর যুগে একটি স্ত্রীলোক চুরি করেছিল। তখন যে লোকদের সে চুরি করেছিল তারা তাকে নিয়ে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নিকট আগমন করে। অতঃপর তারা বলেঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! এ স্ত্রীলোকটি আমাদের চুরি করেছে।” রাসূলুল্লাহ (সঃ) তখন বলেনঃ “তোমরা তার হাত কেটে নাও।” তার গোত্রীয় লোকেরা পুনরায় বলেঃ “আমরা তার মুক্তিপণ হিসেবে পাঁচশ’ স্বর্ণমুদ্রা প্রদান করছি।” রাসূলুল্লাহ (সঃ) তখনও বললেনঃ “তোমরা তার হাত কেটে নাও।” ফলে তার ডান হাত কেটে নেয়া হলো। স্ত্রীলোকটি তখন বললোঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! এতে আমার তাওবাও কি হয়ে গেল?” তিনি বললেনঃ “হ্যা, তুমি পাপ থেকে এমন পাকসাফ হয়ে গেলে যে, যেন তুমি আজকেই জন্মগ্রহণ করলে।”তখন এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। ঐ স্ত্রীলোকটি ছিল মাখযুম গোত্রের। এ ঘটনাটি সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমেও আছে। স্ত্রীলোকটি ভ্রান্ত বংশের ছিল বলে তার ব্যাপারে লোকদের মধ্যে খুবই দুশ্চিন্তা দেখা দেয় এবং তারা ইচ্ছা করে যে, রাসূলুল্লাহ

(সঃ)-কে তার সম্পর্কে কিছু সুপারিশ করা হোক। এ ঘটনাটি মক্কা বিজয়ের সময় ঘটেছিল। অবশেষে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় যে, হযরত উসামা ইবনে যায়েদ (রাঃ)-এর মাধ্যমে সুপারিশ করা হোক। কারণ, তিনি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর অত্যন্ত প্রিয়পাত্র। সুতরাং হযরত উসামা ইবনে যায়েদ (রাঃ) যখন রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর কাছে তার জন্যে সুপারিশ করেন তখন তিনি অত্যন্ত অসন্তুষ্ট হন এবং রাগতঃস্বরে বলেনঃ “উসামা (রাঃ)! তুমি আল্লাহর হদসমূহের মধ্যে একটি হদের ব্যাপারে সুপারিশ করছো?” একথা শুনে হযরত উসামা (রাঃ) অত্যন্ত ঘাবড়িয়ে যান এবং বলেনঃ “আমি বড়ই অপরাধ করে ফেলেছি, দয়া করে আমার জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করুন।” সন্ধ্যার সময় রাসূলুল্লাহ (সঃ) একটি ভাষণ প্রদান করেন। তাতে তিনি আল্লাহর পূর্ণ প্রশংসা ও স্তুতিবাদের পর বলেনঃ “তোমাদের পূর্ববর্তী লোকেরা এ স্বভাবের কারণে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। তাদের মধ্যে যখন কোন সম্ভান্ত লোক চুরি করতো তখন তারা তাকে ছেড়ে দিত। পক্ষান্তরে কোন সাধারণ লোক চুরি করলে তার উপর হদ জারি করতো। যে আল্লাহর হাতে আমার প্রাণ রয়েছে তার শপথ! যদি ফাতিমা বিনতে মুহাম্মাদ (সঃ) চুরি করে তবে তারও হাত কেটে নেবো।” অতঃপর তাঁর নির্দেশক্রমে মহিলাটির হাত কেটে নেয়া হয়। হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেনঃ “এরপর ঐ মহিলাটি বিশুদ্ধ অন্তরে তাওবা করে এবং বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। তারপর থেকে সে কোন কাজে কামে আমার কাছে আসতো এবং তার প্রয়োজনের কথা রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর কাছে তুলে ধরতাম।”

সহীহ মুসলিমে রয়েছে যে, একটি মহিলা লোকদের কাছ থেকে আসবাবপত্র ধার করতো, তারপর তা অস্বীকার করে বসতো। তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) তার হাত কেটে নেয়ার নির্দেশ দেন। অন্য একটি বর্ণনায় আছে যে, মহিলাটি এভাবে অলংকার গ্রহণ করতে এবং হযরত বিলাল (রাঃ)-কে তার হাত কেটে নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। আহকামের কিতাবগুলোর মধ্যে এ ধরনের বহু হাদীস রয়েছে যেগুলো চুরির সাথে সম্পর্কযুক্ত। আল্লাহ পাকের জন্যই সমুদয় প্রশংসা। সমস্ত বাদশাহর বাদশাহ, সারা বিশ্বের প্রকৃত বাদশাহ এবং সঠিক শাসনকর্তা একমাত্র আল্লাহ, যার কোন নির্দেশকে কেউ বাধা দিতে পারে না এবং যার কোন ইচ্ছাকে কেউ বদলিয়ে দিতে সক্ষম নয়। তিনি যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন এবং যাকে ইচ্ছা শাস্তি দেন। তিনি সব কিছুর উপরই পূর্ণ ক্ষমতাবান।

তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-

একটি হাদীস বর্ণনা করেছেন। তাতে বলা হয়েছেঃ

لَم يَكُن قَطْعِ السَّارِقِ عَلى عَهدِ رَسُولُ الله صَلَّى الله عَلَيه وسَلَّم فِى الشَّىْءِ التَّافِهِ

“তুচ্ছ ও নগণ্য বস্তু চুরির অপরাধে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আমলে হাত কাটা হতো না।”

হযরত আলী ও হযরত উসমানের ফয়সালা ছিল لاَ قَطْعَ فِى الطَّير (অর্থাৎ পাখি চুরি করলে হাত কাটা যাবে না) এবং সাহাবীগণের মধ্য থেকে কেউ এ ব্যাপারে মতবিরোধ প্রকাশ করেননি। তাছাড়া হযরত উমর ও আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা বাইতুলমাল থেকে কেউ কোন বস্তু চুরি করলে তার হাত কাটেননি। এ বাপারেও কোথাও সাহাবায়ে কেরামের কোন মতবিরোধের উল্লেখ নেই। এসব মৌল উৎসের ভিত্তিতে ফিকাহর বিভিন্ন ইমাম কিছু নির্দিষ্ট বস্তু চুরি করার অপরাধে হাত কাটার দণ্ড না দেবার কথা ঘোষণা করেছেন। ইমাম আবু হানীফার মতে শাক-শবজি, ফল, গোশত রান্না করা খাবার, যে শস্য এখনো স্তুপীকৃত করা হয়নি এবং খেলার সরঞ্জাম ও বাদ্যযন্ত্র চুরি করলে হাত কাটার শাস্তি দেয়া হবে না। এছাড়াও তিনি বনে বিচরণকারী পশু ও বাইতুল-মালের জিনিস চুরি করলে তাতে হাত কাটার শাস্তি নেই বলে ঘোষণা করেছেন। অনুরূপভাবে অন্যান্য ইমামগণও কোন কোন জিনিস চুরির ক্ষেত্রে এ শাস্তি কার্যকর নয় বলে ঘোষণা দিয়েছেন। কিন্তু এর অর্থ এ নয় যে, এ চুরিগুলোর অপরাধে আদতে কোন শাস্তিই দেয়া হবে না। বরং এর অর্থ হচ্ছে, এ অপরাধগুলোর কারণে হাত কাটা হবে না।

টিকা:৬১) এর অর্থ এ নয় যে, তার হাত কাটা হবে না। বরং এর অর্থ হচ্ছে, হাত কাটার পর যে ব্যক্তি তাওবা করবে এবং নিজেকে চুরি থেকে সম্পূর্ণরূপে বিরত রেখে আল্লাহর সৎ বান্দায় পরিণত হয়ে যাবে সে আল্লাহর গযব থেকে রক্ষা পাবে। এ অবস্থায় তার গায়ে যে গুনাহের কলঙ্ক লেগেছিল তা ধুয়ে দেবেন। কিন্তু কোন ব্যক্তি হাত কেটে যাবার পরও যদি নিজেকে অসৎ সংকল্প মুক্ত না করে এবং আগের দুষ্কৃতির মনোভাব লালন করতে থাকে, যার ভিত্তিতে সে চুরি করেছিল এবং তাকে হাত কাটার শাস্তি দেয়া হয়েছিল, তাহলে এর অর্থ এ দাঁড়ায় যে হাত তার দেহ থেকে আলাদা হয়ে গেছে ঠিকই কিন্তু তার অন্তরে চুরির মনোভাব এখনো অপরিবর্তিত রয়ে গেছে। তাই হাত কাটার আগে সে যেমন আল্লাহর গযবের অধিকারী ছিল হাত কাটার পরেও ঠিক তেমনিই থেকে যাবে। তাই কোরআন মজীদ চোরকে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়ার এবং নিজের সংশোধন করার নির্দেশ দেয়। কারণ হাত কাটা হয়েছে সামাজিক ও তামাদ্দুনিক ব্যবস্থাপনাকে বিশৃংখলামুক্ত করার জন্য। এ শাস্তির কারণে আত্মা ও মন পবিত্র ও কলুষতা মুক্ত হতে পারে না। আত্মা ও মন পবিত্র হতে পারে একমাত্র তাওবা ও আল্লাহর প্রতি সমর্পিত প্রাণ হবার মাধ্যমে। হাদীসে নবী ﷺ সম্পর্কে উল্লেখিত হয়েছেঃ তাঁর হুকুম মোতাবিক এক চোরের হাত কাটার পর তিনি তাকে নিজের কাছে ডেকে আনেন। তাকে বলেন, বলো-(قُلْ أَسْتَغْفِرُ اللهَ وَأَتُوبُ إِلَيْهِ ) (আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাচ্ছি এবং তাঁর কাছে তাওবা করছি।) সে তাঁর নির্দেশ অনুসারে ঐ বাক্যটি বলার পর তিনি তার জন্য দোয়া করেনঃ (اللهُمَّ تُبْ عَلَيْهِ ) (হে আল্লাহ! তাকে মাফ করো)।

Leave a Reply