أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book# 114/٢٠٦)-৪০৮
www.motaher21.net
وَقَالَ الْمَسِيحُ يٰبَنِىٓ إِسْرٰٓءِيلَ اعْبُدُوا اللَّهَ رَبِّى وَرَبَّكُمْ ۖ
মাসীহ বলেছে, ‘হে বনী ইসরাঈল, তোমরা আমার রব ও তোমাদের রব আল্লাহর ইবাদাত কর’।
“And verily Allah is my Lord and your Lord. So worship Him (Alone).
সুরা: আল্ মায়িদাহ
আয়াত নং :-৭২-৭৫
لَقَدْ كَفَرَ الَّذِينَ قَالُوٓا إِنَّ اللَّهَ هُوَ الْمَسِيحُ ابْنُ مَرْيَمَ ۖ وَقَالَ الْمَسِيحُ يٰبَنِىٓ إِسْرٰٓءِيلَ اعْبُدُوا اللَّهَ رَبِّى وَرَبَّكُمْ ۖ إِنَّهُۥ مَن يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَقَدْ حَرَّمَ اللَّهُ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ وَمَأْوٰىهُ النَّارُ ۖ وَمَا لِلظّٰلِمِينَ مِنْ أَنصَارٍ
অবশ্যই তারা কুফরী করেছে, যারা বলেছে, ‘নিশ্চয় আল্লাহ হচ্ছেন মারইয়াম পুত্র মাসীহ’। আর মাসীহ বলেছে, ‘হে বনী ইসরাঈল, তোমরা আমার রব ও তোমাদের রব আল্লাহর ইবাদাত কর’। নিশ্চয় যে আল্লাহর সাথে শরীক করে, তার উপর অবশ্যই আল্লাহ জান্নাত হারাম করে দিয়েছেন এবং তার ঠিকানা আগুন। আর যালিমদের কোন সাহায্যকারী নেই।
আয়াত:-৭৩
لَّقَدْ كَفَرَ الَّذِينَ قَالُوٓا إِنَّ اللَّهَ ثَالِثُ ثَلٰثَةٍ ۘ وَمَا مِنْ إِلٰهٍ إِلَّآ إِلٰهٌ وٰحِدٌ ۚ وَإِن لَّمْ يَنتَهُوا عَمَّا يَقُولُونَ لَيَمَسَّنَّ الَّذِينَ كَفَرُوا مِنْهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ
অবশ্যই তারা কুফরী করেছে, যারা বলে, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তিন জনের তৃতীয়জন’। যদিও এক ইলাহ ছাড়া কোন (সত্য) ইলাহ নেই। আর যদি তারা যা বলছে, তা থেকে বিরত না হয়, তবে অবশ্যই তাদের মধ্য থেকে কাফিরদেরকে যন্ত্রণাদায়ক আযাব স্পর্শ করবে।
আয়াত:-৭৪
أَفَلَا يَتُوبُونَ إِلَى اللَّهِ وَيَسْتَغْفِرُونَهُۥ ۚ وَاللَّهُ غَفُورٌ رَّحِيمٌ
সুতরাং তারা কি আল্লাহর নিকট তাওবা করবে না এবং তাঁর নিকট ক্ষমা চাইবে না? আর আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
আয়াত:-৭৫
مَّا الْمَسِيحُ ابْنُ مَرْيَمَ إِلَّا رَسُولٌ قَدْ خَلَتْ مِن قَبْلِهِ الرُّسُلُ وَأُمُّهُۥ صِدِّيقَةٌ ۖ كَانَا يَأْكُلَانِ الطَّعَامَ ۗ انظُرْ كَيْفَ نُبَيِّنُ لَهُمُ الْءَايٰتِ ثُمَّ انظُرْ أَنّٰى يُؤْفَكُونَ
মাসীহ ইবনে মারইয়াম একজন রাসূল ছাড়া আর কিছুই নয়; তার পূর্বে আরও বহু রাসূল গত হয়েছে, আর তার মা একজন পরম সত্যবাদিনী, তারা উভয়ে খাদ্য আহার করত। লক্ষ্য কর! আমি কিরূপে তাদের নিকট প্রমাণসমূহ বর্ণনা করছি। আবার লক্ষ্য কর! তারা উল্টা কোন দিকে যাচ্ছে?
৭২-৭৫ নং আয়াতের তাফসীর:
তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ বলেছেন:-
যারা বলে, “ঈসা হলেন আল্লাহ”এবং যারা বলে, “আল্লাহ তিনজনের একজন” (আল্লাহ, ঈসা ও মারইয়াম) তারা কাফির। এ সম্পর্কে এ সূরার শুরুতে আলোচনা করা হয়েছে। এখানে খ্রিস্টানদের ভ্রষ্টতার বিবরণ পুনরায় উল্লেখ করা হয়েছে। ঈসা (আঃ) আল্লাহ তা‘আলার দাস বলে পরিচয় দিতে লজ্জাবোধ করেননি। তিনি যখন দুগ্ধপোষ্য শিশু তখন তিনি আল্লাহ তা‘আলার নির্দেশে সর্বপ্রথম নিজের মুখে আল্লাহ তা‘আলার দাসত্বের কথা প্রকাশ করেছিলেন, যখন সাধারণত শিশুরা কথা বলতে পারে না।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন: ঈসা (আঃ) বলেছিল,
(قَالَ إِنِّيْ عَبْدُ اللّٰهِ اٰتٰنِيَ الْكِتٰبَ وَجَعَلَنِيْ نَبِيًّا)
“সে বলল: ‘আমি আল্লাহর বান্দা। তিনি আমাকে কিতাব দিয়েছেন, আমাকে নাবী করেছেন, (সূরা মারইয়াম ১৯:৩০)
ঈসা (আঃ) এ কথা বলেননি যে, “আমিই আল্লাহ অথবা আল্লাহর পুত্র।”বরং তিনি বলেছেন “আমি আল্লাহর দাস” এবং তিনি পরিণত বয়সে উপনীত হয়ে এ দাওয়াতই দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন:
(إِنَّ اللّٰهَ رَبِّيْ وَرَبُّكُمْ فَاعْبُدُوْهُ ط هٰذَا صِرَاطٌ مُّسْتَقِيْمٌ)
“নিশ্চয়ই আল্লাহ আমার এবং তোমাদের রব। অতএব তোমরা তাঁরই ইবাদত কর। এটাই সঠিক পথ।”(সূরা আলি-ইমরান ৩:৫১)
এ সেই শব্দাবলী যা তিনি মায়ের কোলেও বলেছিলেন। (সূরা মারইয়াম ১৯:৩৬) অনুরূপ কিয়ামতের নিকটবর্তী সময়ে তিনি আসমান হতে অবতরণ করবেন, তিনি মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর অনুসারী হয়ে আসবেন, আল্লাহ তা‘আলার এককত্ব ও তাঁর আনুগত্যের দিকে আহ্বান করবেন। নিজের ইবাদতের দিকে নয়।
(فَقَدْ حَرَّمَ اللّٰهُ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ)
“আল্লাহ তার জন্য জান্নাত অবশ্যই হারাম করবেন”যারা শির্কে আকবার তথা বড় শির্কে লিপ্ত হয়। তাদের পরিণতি হল:
(১) তাদের সকল আমল বাতিল হয়ে যাবে। (২) তারা ইসলাম থেকে বের হয়ে যাবে।
(৩) তাদের জন্য জান্নাত হারাম। (৪) জাহান্নাম তাদের ঠিকানা।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَنَادٰٓي أَصْحٰبُ النَّارِ أَصْحٰبَ الْجَنَّةِ أَنْ أَفِيْضُوْا عَلَيْنَا مِنَ الْمَا۬ءِ أَوْ مِمَّا رَزَقَكُمُ اللّٰهُ ط قَالُوْآ إِنَّ اللّٰهَ حَرَّمَهُمَا عَلَي الْكٰفِرِيْنَ)
“জাহান্নামীরা জান্নাতবাসীদেরকে সম্বোধন করে বলবে, ‘আমাদের ওপর কিছু পানি ঢেলে দাও, অথবা ‘আল্লাহ জীবিকাস্বরূপ তোমাদেরকে যা দিয়েছেন তা হতে কিছু দাও।’তারা বলবে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ কাফিরদের জন্য এ দু’টি হারাম করেছেন।”(সূরা আ‘রাফ ৭:৫০)
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:
لَا يَدْخُلُ الْجَنَّةَ إِلَّا نَفْسٌ مُّسْلِمَةٌ
মু’মিন আত্মা ছাড়া কেউ জান্নাতে যেতে পারবে না। (সহীহ বুখারী হা: ২৮৯৭)
(وَأُمُّه۫ صِدِّيْقَةٌ)
‘তার মা পরম সত্যনিষ্ঠা ছিলেন।’অর্থাৎ ঈসা (আঃ)-এর মা ছিলেন সত্যবাদী যাদের মযার্দা নাবীদের পরে। তিনি ঈসা (আঃ)-এর ওপর ঈমান এনেছিলেন। অর্থাৎ তিনি নাবী ছিলেন না। যেমন অনেকে ধারণা করে থাকে মারইয়াম (আলাইহাস সালাম)-এর সাথে ফেরেশতা কথা বলেছিলেন, তাঁর ওপর ওয়াহী হয়েছিল তাই তিনিও নাবী।
আল্লাহ তা‘আলা নারীদের থেকে কাউকে নাবী হিসেবে প্রেরণ করেননি। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَمَآ أَرْسَلْنَا مِنْ قَبْلِكَ إِلَّا رِجَالًا نُّوْحِيْٓ إِلَيْهِمْ مِّنْ أَهْلِ الْقُرٰي)
“তোমার পূর্বেও জনপদবাসীদের মধ্য হতে পুরুষগণকেই প্রেরণ করেছিলাম, যাদের নিকট ওয়াহী পাঠাতাম।”(সূরা ইউসূফ ১২:১০৯)
(كَانَا يَأْكُلٰنِ الطَّعَامَ)
‘তারা উভয়ে খাবার খেত।’মারইয়াম (আলাইহাস সালাম) ও ঈসা (আঃ) উভয়ে খাবার খেতেন। এ আয়াতের এ অংশ প্রমাণ করছে যে, তারা কেউ মা‘বূদ ছিলেন না। যদি মা‘বূদই হতেন তাহলে খাবারের প্রয়োজন হত না এবং তারা ফেরেশতাও ছিলেন না। কেননা ফেরেশতাগণ খাবার ও অন্যান্য জিনিসের প্রতি মুখাপেক্ষী নয় যা মানুষের প্রয়োজন। এসব আল্লাহ তা‘আলা বিস্তারিত বর্ণনা করে দিয়েছেন, এরপরেও যে সকল মানুষ সত্য বিমুখ তারাই জাহান্নামে প্রবেশ করবে।
সুতরাং যারা ত্রিত্ববাদে বিশ্বাসী তারা কাফির, ঈসা (আঃ)-এর ব্যাপারে যারা বাড়াবাড়ি করেছে তাদের থেকে তিনি মুক্ত, তিনি এক আল্লাহ তা‘আলার ইবাদতের দিকে আহ্বান করেছেন।
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. ঈসা (আঃ) আল্লাহ তা‘আলার একজন বান্দা ও রাসূল ছিলেন। তিনি নিজে আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত করতেন এবং মানুষকে সেদিকে আহ্বান করতেন।
২. শির্কে আকবারে লিপ্ত ব্যক্তি তাওবাহ করে ফিরে না আসলে তার ঠিকানা জাহান্নাম।
৩. ত্রিত্ববাদের বিশ্বাস ভ্রান্ত বিশ্বাস।
৪. বানী ইসরাঈলের জন্যও তাওবার দরজা খোলা ছিল।
৫. পৃথিবীর সকল নাবীই ছিলেন পুরুষ, নারীদের মধ্য হতে কোন নাবী আগমন করেননি।
৬. ঈসা (আঃ) ও তাঁর মা ছিলেন সাধারণ মানুষের মত যারা পানাহার করতেন।
English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Al Mayadah
Verse:- 72-75
وَقَالَ الْمَسِيحُ يٰبَنِىٓ إِسْرٰٓءِيلَ اعْبُدُوا اللَّهَ رَبِّى وَرَبَّكُمْ ۖ
“And verily Allah is my Lord and your Lord. So worship Him (Alone).
The Disbelief of the Christians; `Isa Only called to Tawhid
Allah says;
لَقَدْ كَفَرَ الَّذِينَ قَالُواْ إِنَّ اللّهَ هُوَ الْمَسِيحُ ابْنُ مَرْيَمَ
Surely, they have disbelieved who say:”Allah is the Messiah (`Isa), son of Maryam.”
Allah states that the Christians such sects as Monarchite, Jacobite and Nestorite are disbelievers, those among them who say that `Isa is Allah. Allah is far holier than what they attribute to Him. They made this claim in spite of the fact that `Isa made it known that he was the servant of Allah and His Messenger.
The first words that `Isa uttered when he was still a baby in the cradle were, “I am Abdullah (the servant of Allah).” He did not say, “I am Allah,” or, “I am the son of Allah.” Rather, he said,
إِنِّى عَبْدُ اللَّهِ ءَاتَانِىَ الْكِتَـبَ وَجَعَلَنِى نَبِيّاً
Verily, I am a servant of Allah, He has given me the Scripture and made me a Prophet. (19:30) until he said,
وَإِنَّ اللَّهَ رَبِّى وَرَبُّكُمْ فَاعْبُدُوهُ هَـذَا صِرَطٌ مُّسْتَقِيمٌ
“And verily Allah is my Lord and your Lord. So worship Him (Alone). That is the straight path.” (19:36)
He also proclaimed to them when he was a man, after he was sent as a Prophet, commanding them to worship his Lord and their Lord, alone without partners,
وَقَالَ الْمَسِيحُ يَا بَنِي إِسْرَايِيلَ اعْبُدُواْ اللّهَ رَبِّي وَرَبَّكُمْ إِنَّهُ مَن يُشْرِكْ بِاللّهِ
But the Messiah said, “O Children of Israel! worship Allah, my Lord and your Lord.” Verily, whosoever sets up partners with Allah…,
in worship;
فَقَدْ حَرَّمَ اللّهُ عَلَيهِ الْجَنَّةَ وَمَأْوَاهُ النَّارُ
then Allah has forbidden Paradise for him, and the Fire will be his abode.
as He will send him to the Fire and forbid Paradise for him.
Allah also said;
إِنَّ اللَّهَ لَا يَغْفِرُ أَن يُشْرَكَ بِهِ وَيَغْفِرُ مَا دُونَ ذَلِكَ لِمَن يَشَأءُ
Verily, Allah forgives not that partners should be set up with Him (in worship), but He forgives except that (anything else) to whom He wills. (4:48)
and,
وَنَادَى أَصْحَـبُ النَّارِ أَصْحَـبَ الْجَنَّةِ أَنْ أَفِيضُواْ عَلَيْنَا مِنَ الْمَأءِ أَوْ مِمَّا رَزَقَكُمُ اللَّهُ قَالُواْ إِنَّ اللَّهَ حَرَّمَهُمَا عَلَى الْكَـفِرِينَ
And the dwellers of the Fire will call to the dwellers of Paradise; “Pour on us some water or anything that Allah has provide you with.” They will say:”Allah has forbidden both to the disbelievers.” (7:50)
It is recorded in the Sahih that the Prophet had someone proclaim to the people,
إِنَّ الْجَنَّةَ لَا يَدْخُلُهَا إِلاَّ نَفْسٌ مُسْلِمَة
Only a Muslim soul shall enter Paradise.
In another narration,
مُوْمِنَة
Only a believing soul…
This is why Allah said that `Isa said to the Children of Israel,
إِنَّهُ مَن يُشْرِكْ بِاللّهِ
فَقَدْ حَرَّمَ اللّهُ عَلَيهِ الْجَنَّةَ وَمَأْوَاهُ النَّارُ وَمَا لِلظَّالِمِينَ مِنْ أَنصَارٍ
Verily, whosoever sets up partners with Allah, then Allah has forbidden Paradise for him, and the Fire will be his abode. And there are no helpers for the wrongdoers.
There is no help from Allah, nor anyone who will support or protect them from the state they will be in.
Allah’s statement
لَّقَدْ كَفَرَ الَّذِينَ قَالُواْ إِنَّ اللّهَ ثَالِثُ ثَلَثَةٍ
Surely, they have disbelieved who say:”Allah is the third of three.”
Mujahid and several others said that;
this Ayah was revealed about the Christians in particular.
As-Suddi and others said that;
this Ayah was revealed about taking `Isa and his mother as gods besides Allah, thus making Allah the third in a trinity.
As-Suddi said, “This is similar to Allah’s statement towards the end of the Surah,
وَإِذْ قَالَ اللّهُ يَا عِيسَى ابْنَ مَرْيَمَ أَأَنتَ قُلتَ لِلنَّاسِ اتَّخِذُونِي وَأُمِّيَ إِلَـهَيْنِ مِن دُونِ اللّهِ قَالَ سُبْحَانَكَ
And (remember) when Allah will say:”O `Isa, son of Maryam! Did you say unto men:`Worship me and my mother as two gods besides Allah’ He will say, “Glory be to You!” (5:116)
Allah replied,
وَمَا مِنْ إِلَـهٍ إِلاَّ إِلَـهٌ وَاحِدٌ
But there is no god but One God.
meaning there are not many worthy of worship but there is only One God without partners, and He is the Lord of all creation and all that exists.
Allah said next, while threatening and admonishing them,
وَإِن لَّمْ يَنتَهُواْ عَمَّا يَقُولُونَ
And if they cease not from what they say,
their lies and false claims,
لَيَمَسَّنَّ الَّذِينَ كَفَرُواْ مِنْهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ
verily, a painful torment will befall the disbelievers among them.
in the Hereafter, shackled and tormented.
Allah said next,
أَفَلَ يَتُوبُونَ إِلَى اللّهِ وَيَسْتَغْفِرُونَهُ وَاللّهُ غَفُورٌ رَّحِيمٌ
Will they not repent to Allah and ask His Forgiveness For Allah is Oft-Forgiving, Most Merciful.
This demonstrates Allah’s generosity, kindness and mercy for His creatures, even though they committed this grave sin and invented such a lie and false allegation. Despite all of this, Allah calls them to repent so that He will forgive them, for Allah forgives those who sincerely repent to Him.
`Isa is Allah’s Servant and His Mother is a Truthful Believer
Allah said
مَّا الْمَسِيحُ ابْنُ مَرْيَمَ إِلاَّ رَسُولٌ قَدْ خَلَتْ مِن قَبْلِهِ الرُّسُلُ
The Messiah, son of Maryam, was no more than a Messenger; many were the Messengers that passed away before him.
`Isa is just like the previous Prophets, and he is one of the servants of Allah and one of His honorable Messengers. Allah said in another Ayah,
إِنْ هُوَ إِلاَّ عَبْدٌ أَنْعَمْنَا عَلَيْهِ وَجَعَلْنَـهُ مَثَلً لِّبَنِى إِسْرَءِيلَ
He (`Isa) was not more than a servant. We granted Our favor to him, and We made him an example for the Children of Israel. (43:59)
Allah said next,
وَأُمُّهُ صِدِّيقَةٌ
His mother was a Siddiqah,
for she believed in Allah with complete trust in Him.
This is the highest rank she was given, which proves that she was not a Prophet.
Allah said next,
كَانَا يَأْكُلَنِ الطَّعَامَ
They both used to eat food,
needing nourishment and to relieve the call of nature. Therefore, they are just servants like other servants, not gods as ignorant Christian sects claim, may Allah’s continued curses cover them until the Day of Resurrection.
Allah said next,
انظُرْ كَيْفَ نُبَيِّنُ لَهُمُ الايَاتِ
Look how We make the Ayat clear to them.
making them unequivocal and plain,
ثُمَّ انظُرْ أَنَّى يُوْفَكُونَ
yet look how they are deluded away (from the truth).
look at the opinions, misguided ideas, and claims they cling to, even after Our clarification and plain, unequivocal explanation.
৭২-৭৫ নং আয়াতের তাফসীর:
তাফসীরে ইবনে কাসীর বলেছেন:-
এখানে খ্রীষ্টানদের দলগুলোর অর্থাৎ মালেকিয়্যাহ, ইয়াকুবিয়্যাহ এবং নাসতুরিয়্যাহদের কুফরের অবস্থা বর্ণনা করা হচ্ছে যে, তারা মাসীহকেই (আঃ) প্রভু বলে মেনে থাকে। আল্লাহ তাদের এ উক্তি থেকে সম্পূর্ণরূপে পাক ও পবিত্র। মাসীহ (আঃ) তো আল্লাহর গোলাম ছিলেন। পার্থিব জগতে পা রেখে দোলনাতেই তাঁর মুখের প্রথম কথা ছিলঃ (আরবী) অর্থাৎ নিশ্চয়ই আমি আল্লাহর গোলাম বা দাস। (১৯:৩০) “আমি আল্লাহ বা আল্লাহর পুত্র”-এ কথা তো তিনি বলেননি! বরং তিনি স্বীয় দাসত্বের কথা অকপটে স্বীকার করেছিলেন। সাথে সাথে তিনি বলেছিলেনঃ “আমার এবং তোমাদের সকলের প্রভু একমাত্র আল্লাহ। তাঁরই ইবাদত কর। সরল ও সঠিক পথ এটাই।’ যৌবনের পরবর্তী বয়সেও বলেছিলেনঃ “তোমরা আল্লাহরই ইবাদত কর। যারা তাঁর সাথে অন্য কারও ইবাদত করে তাদের জন্যে জান্নাত হারাম এবং জাহান্নাম ওয়াজিব।” যেমন কুরআন পাকের অন্য আয়াতে রয়েছে- “আল্লাহ শিরকের গুনাহ কখনও মাফ করেন না।” জাহান্নামবাসীরা যখন জান্নাতবাসীদের কাছে খাদ্য ও পানি চাইবে তখন তারা এ উত্তরই দেবে যে, এ দুটি জিনিস আল্লাহ কাফিরদের উপর হারাম করে দিয়েছেন। রাসূলুল্লাহ (সঃ) ঘোষকদের দ্বারা মুসলমানদের মধ্যে ঘোষণা করে দিয়েছিলেন যে, শুধু মুমিন ও মুসলমানরাই জান্নাতে যাবে। সূরায়ে নিসার (আরবী) (৪:১১৬)-এ আয়াতের তাফসীরে এ হাদীসটিও বর্ণনা করা হয়েছে যাতে রয়েছে যে, পাপের তিনটি শ্রেণী রয়েছে। এ তিন শ্রেণীর মধ্যে এক শ্রেণী হচ্ছে ওটা যা আল্লাহ তা’আলা কখনও ক্ষমা করবেন না। সেই পাপটি হচ্ছে আল্লাহর সাথে শিরক করা! হযরত মাসীহ্ (আঃ) স্বীয় কওমের মধ্যে এ ওয়ায করেছিলেন যে, এরূপ অন্যায়কারী মুশরিকদের কোন সাহায্যাকারী হবে না।
এখন ঐ লোকদের কুফরীর বর্ণনা দেয়া হচ্ছে যারা আল্লাহকে তিন মা’বুদের মধ্যে এক মা’রূদ মনে করতো। ইয়াহুদীরা হযরত উযায়ের (আঃ)-কে এবং খ্রীষ্টানরা হযরত ঈসা (আঃ)-কে আল্লাহর পুত্র বলতো। (নাউযুবিল্লাহি মিন যালিক) এবং আল্লাহকে তিন মা’ৰূদে মধ্যে এক মা’বুদ মনে করতো। কিন্তু এ আয়াতটি শুধু খ্রীষ্টানদের ব্যাপারেই অবতীর্ণ হয়। তারা পিতা, পুত্র এবং তাঁর। সেই কালিমাকে মা’বুদ মানতো যা পিতার পক্ষ থেকে পুত্রের দিকে ছিল। অতঃপর এ তিনকে নির্ধারিত করার ব্যাপারেও খুব বড় রকমের মতানৈক্য ছিল এবং প্রত্যেক দল একে অপরকে কাফির বলতো। সত্য কথা এই যে, তারা সবাই কাফির ছিল। তারা হযরত মাসীহ (আঃ)-কে, তার মাকে এবং আল্লাহকে মিলিয়ে দিয়ে আল্লাহ মানতো। এ সূরার শেষে এরই ব কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা’আলা হযরত ঈসা (আঃ)-কে সম্বোধন করে বলবেনতুমি কি লোকদেরকে বলেছিলে-তোমরা আল্লাহকে ছাড়াও আমাকে ও আমার মাকে আল্লাহ বলে স্বীকার কর?’ তিনি তা স্পষ্টভাবে অস্বীকার করবেন এবং নিজের না জানার কথা ও নিরপরাধ হওয়ার কথা প্রকাশ করবেন। সবচেয়ে বেশী প্রকাশ্য উক্তি হচ্ছে এটাই। আল্লাহ তাআলাই সবচেয়ে ভাল জানেন।
প্রকৃতপক্ষে ইবাদতের যোগ্য মহান আল্লাহ ছাড়া আর কেউই নয়। সমস্ত সৃষ্টিজগতের প্রকৃত মা’বূদ তিনিই। যদি এরা কুফরীপূর্ণ উক্তি থেকে বিরত না থাকে তবে নিশ্চিতরূপে এরা ধ্বংসাত্মক শাস্তির শিকারে পরিণত হবে।
অতঃপর আল্লাহ স্বীয় দয়া, অনুকম্পা, স্নেহ ও ভালবাসার বর্ণনা দিচ্ছেন এবং তাদের এতো কঠিন অপরাধ ও এতো ভীষণ নির্লজ্জতা ও মিথ্যারোপ সত্ত্বেও তাদেরকে স্বীয় রহমতের দাওয়াত দিচ্ছেন এবং বলছেনঃ এখনও যদি তোমরা আমার দিকে প্রত্যাবর্তিত হও তবে তোমাদের সমস্ত অপরাধ ক্ষমা করে দেবো। এবং তোমাদেরকে আমার রহমতের ছায়ায় আশ্রয় দেবো।
হযরত মাসীহ (আঃ) আল্লাহর বান্দা ও রাসূলই ছিলেন। তাঁর মত রাসূল তাঁর পূর্বেও অতীত হয়েছেন। যেমন তিনি বলেন, (আরবী) অর্থাৎ সে একজন, গোলামই ছিল। (৪৩:৫৯) তবে তিনি তাঁর উপর স্বীয় রহমত নাযিল করেছিলেন এবং বানী ইসরাঈলের জন্যে তাঁর একটি নির্দেশ বানিয়েছিলেন। তাঁর মা মুমিন ও সত্যবাদিনী ছিলেন। এর দ্বারা জানা যাচ্ছে যে, তিনি নবী ছিলেন না। কেননা, এটা হচ্ছে বিশেষণ বা গুণ বর্ণনার স্থান। সুতরাং তিনি যে গুণের অধিকারিণী ছিলেন তারই বর্ণনা দেয়া হয়েছে। যদি তিনি নবুওয়াতের অধিকারিণী হতেন তবে এ স্থলে ওটার বর্ণনা দেয়া খুবই জরুরী ছিল। ইবনে হাম (রঃ) প্রমুখ মনীষীর ধারণা এই যে, হযরত ইসহাক (আঃ)-এর মা হযরত মূসা (আঃ)-এর মা এবং হযরত ঈসা (আঃ)-এর মা নবী ছিলেন এবং তারা এর দলীল দিতে গিয়ে বলেন, ফেরেশতাগণ হযরত সারা (আঃ) এবং হযরত মারইয়াম (আঃ)-কে সম্বোধন করেন এবং তাদের সাথে কথা বলেছেন। আর হযরত মূসা (আঃ)-এর মাতী সম্পর্কে আল্লাহ তা’আলা বলেন- (আরবী) অর্থাৎ “আমি মূসার মায়ের কাছে অহী পাঠিয়েছিলাম-তুমি তাকে দুধ পান করাও। (২৮:৭) কিন্তু জমহুরের মাযহাব এর উল্টো। তারা বলেন যে, নবুওয়াত পুরুষ লোকদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। যেমন কুরআন পাকে আছে- (আরবী) অর্থাৎ ‘তোমার পূর্বে আমি গ্রামবাসীদের মধ্য হতে পুরুষ লোকদেরকেই রিসালাত দান করেছিলাম।'(২১:৭) আবুল হাসান আশআরী (রঃ) তো এর উপর ইজমা হওয়ার কথা নকল করেছেন।
এরপর ইরশাদ হচ্ছে-মাতা ও পুত্র উভয়ে পানাহারের মুখাপেক্ষী ছিল। আর এটা প্রকাশ্য কথা যে, যা ভেতরে যাবে তা বেরিয়ে আসবে। অর্থাৎ তাদের প্রস্রাব পায়খানাও হতো। সুতরাং সাব্যস্ত হচ্ছে যে, তাঁরা অন্যদের মত বান্দাই ছিলেন। খোদায়ী গুণ তাদের মধ্যে ছিল না। দেখো তো! আমি কিভাবে খোলাখুলি তাদের সামনে আমার দলীল প্রমাণাদি পেশ করছি! আবার লক্ষ্য কর যে, এতো দলীল প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও কিভাবে তারা বিভ্রান্ত হয়ে এদিক ওদিক ফিরছে! কেমন ভ্রষ্ট মাযহাবের উপর তারা রয়েছে! কেমন জঘন্য ও দলীল প্রমাণহীন উক্তি তারা করছে!
তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
টিকা:১০০) এখানে মাত্র কয়েকটি শব্দের মাধ্যমে ঈসার ‘আল্লাহ’ হওয়া সম্পর্কিত খৃস্টীয় আকীদার এমন সুস্পষ্ট প্রতিবাদ করা হয়েছে যে, এর চাইতে ভাল ও দ্ব্যর্থহীনভাবে আর কোন প্রতিবাদ করা সম্ভবপর নয়। হযরত ঈসা মসীহ্ সম্পর্কে যদি কেউ জানতে চায় যে, তিনি আসলে কি ছিলেন তাহলে এ আলামতগুলো থেকে সম্পূর্ণ সন্দেহাতীভাবে সে জানতে পারবে যে, তিনি নিছক একজন মানুষ ছিলেন। মোট কথা, যার জন্ম এক মহিলার গর্ভে, যার একটি বংশ তালিকা আছে, যিনি মানবিক দেহের অধিকারী ছিলেন, যিনি এমন সব সীমারেখা ও নিয়ম-কানুনের চার দেয়ালে আবদ্ধ এবং এমন সব গুণাবলী সমন্বিত, যা একমাত্র মানুষের সাথে সংশ্লিষ্ট। যিনি ঘুমাতেন, খেতেন, ঠাণ্ডা-গরম অনুভব করতেন, এমনকি যাঁকে শয়তানের মাধ্যমে পরীক্ষার মধ্যে নিক্ষেপ করা হয়েছিল, তাঁর সম্পর্কে কোন বিবেকবান ব্যক্তি একথা কল্পনাই করতে পারেন না যে, তিনি নিজে আল্লাহ বা আল্লাহর কাজে তাঁর সাথে শরীক ও তাঁর সমকক্ষ। তাছাড়া খৃস্টানরা নিজেদের ধর্মীয় গ্রন্থগুলোতে হযরত মসীহ আলাইহিস সালামের জীবনকে সুস্পষ্টভাবে একটি মানুষের জীবন হিসেবে পেয়েছে। এরপরও তারা তাঁকে আল্লাহর গুণাবলী সমন্বিত পূজনীয় সত্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য জোর দিয়ে যাচ্ছে। এটাকে মানব মনের বিভ্রান্তি ও গোমরাহী প্রীতির এক অদ্ভুত প্রবণতা ছাড়া আর কি বলা যেতে পারে? আসলে যে ঈসা মসীহ আলাইহিস সালামের আবির্ভাব বাস্তবে ঘটেছিল সে ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব ঈসা মসীহকে তারা মানে না। বরং তারা নিজেদের মনোজগতে ঈসার এক উদ্ভট কাল্পনিক ভাবমূর্তি নির্মাণ করে তাকেই আল্লাহর স্থানে বসিয়ে দিয়েছে।
তাফসীরে আবুবকর যাকারিয়া বলেছেন:-
[১] পূর্ববর্তী আয়াতসমূহে বনী-ইসরাঈলের ঔদ্ধত্য ও তাদের অত্যাচার-উৎপীড়ন বর্ণনা করা হয়েছিল যে, আল্লাহ প্রেরিত রাসূল- যারা তাদের অক্ষয় জীবনের বার্তা এবং তাদের দুনিয়া ও আখেরাত সংশোধনের কার্যবিধি নিয়ে আগমন করেছিলেন, তাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের পরিবর্তে তারা তাদের সাথে দুর্ব্যবহার করে। কতক নবীকে তারা মিথ্যারোপ করে এবং কতককে হত্যা করে ফেলে। আলোচ্য আয়াতে বনী-ইসরাঈলের কুটিলতার আরেকটি দিক উল্লেখ করা হয়েছে যে, মূৰ্খরা যেমন ঔদ্ধত্য ও অবাধ্যতার এক প্রান্তে থেকে আল্লাহর নবীদের প্রতি মিথ্যারোপ করেছে এবং কতককে হত্যা করেছে, তেমনি এরাই বক্রতার অপর প্রান্তে পৌঁছে নবীদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনে বাড়াবাড়ি করে তাদেরকে আল্লাহ্তে পরিণত করে দিয়েছে। তারা বলে, ‘নিশ্চয় আল্লাহ্ তিনি তো মারইয়াম তনয় মসীহ’ এ কথা বলে তারা কুফরী করল এবং কাফের হয়ে গেল। ইতিহাস বলে যে, যারা এ ধরণের উক্তি করত তারা হচ্ছে, নাসারাদের মালেকিয়্যা, ইয়া’কুবিয়্যা এবং নাসতুরিয়্যাহ সম্প্রদায়। [ইবন কাসীর] আলোচ্য আয়াতে যদিও এ উক্তিটি শুধু নাসারাদের বলে বর্ণিত হয়েছে। অন্যত্র এ ধরণের বাড়াবাড়ি ও পথভ্রষ্টতা ইয়াহুদী এবং নাসারা উভয়ের ব্যাপারেও বর্ণনা করা হয়েছে,
(وَقَالَتِ الْيَهُوْدُ عُزَيْرُۨ ابْنُ اللّٰهِ وَقَالَتِ النَّصٰرَى الْمَسِيْحُ ابْنُ اللّٰهِ ۭ ذٰلِكَ قَوْلُهُمْ بِاَفْوَاهِهِمْ ۚ يُضَاهِــــُٔـوْنَ قَوْلَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا مِنْ قَبْلُ ۭ قٰتَلَهُمُ اللّٰهُ اَنّٰى يُؤْفَكُوْنَ )
অর্থাৎ “আর ইয়াহুদীরা বলে, ‘উযায়র আল্লাহর পুত্র’, এবং খৃস্টানরা বলে, ‘মসীহ আল্লাহর পুত্র’। ওটা তাদের মুখের কথা। আগে যারা কুফরী করেছিল ওরা তাদের মত কথা বলে। আল্লাহ ওদেরকে ধ্বংস করুন। কোন্ দিকে তাদেরকে ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে?” [সূরা আত-তাওবাহঃ ৩০]
[২] অর্থাৎ নাসারারা যতই বাড়াবাড়ি করুক এবং ঈসাকে তাদের ইলাহ ঘোষণা করুক, ঈসা এতে কখনও সন্তুষ্ট নন। তিনি নিজেই এর বিপরীত ঘোষণা করেছিলেন। দুনিয়ায় আসার পর দোলনাতেই তার মুখের প্রথম কথা ছিল, (اِنِّىْ عَبْدُ اللّٰهِ) অর্থাৎ আমি তো আল্লাহর বান্দা বা দাস। [সূরা মারইয়াম: ৩০]
তিনি আরও বলেছিলেন, আমার ও তোমাদের রব একমাত্র আল্লাহ। তাঁরই ইবাদাত কর। সরল সঠিক পথ এটিই। [সূরা আলে ইমরান: ৫১; মারইয়াম: ৩৬; আযযুখরুফ: ৬৪]
তাছাড়া যৌবনের পরবর্তী বয়সেও বলেছেন, তোমরা আল্লাহরই ইবাদাত কর, যারা তাঁর সাথে অন্য কারও ইবাদাত করে তাদের জন্যে আল্লাহ জান্নাত হারাম করেছেন এবং তার ঠিকানা হবে জাহান্নামে । যেমন অন্য আয়াতেও আল্লাহ বলেছেন, “আল্লাহ শির্কের গোনাহ কখনও ক্ষমা করবেন না” [সূরা আন-নিসা ৪৮, ১১৬]
অনুরূপভাবে জাহান্নামবাসীরা যখন জান্নাতবাসীদের কাছে খাদ্য ও পানি চাইবে, তখন তারা উত্তরে বলবে, ‘নিশ্চয় আল্লাহ এ দুটি জিনিস কাফেরদের উপর হারাম করে দিয়েছেন’। [সূরা আল-আরাফ: ৫০]
হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘোষণা করতে বলেছেন যে, ‘শুধু মুমিন মুসলিমরাই জান্নাতে যাবে’। [মুসলিম: ১১১]
আরও বলেছেন, ‘যতক্ষণ তোমরা ঈমানদার না হবে ততক্ষণ জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না’। [মুসলিম: ৫৪] সুতরাং ঈসা ‘আলাইহিস সালাম কখনোও ইলাহ হওয়ার দাবী করেন নি এবং এটা তার পক্ষে শোভনীয়ও নয়। [ইবন কাসীর]
[২]অর্থাৎ ঈসা মসীহ ‘আলাইহিস সালাম, রূহুল কুদস ও আল্লাহ, কিংবা মসীহ, মারইয়াম ও আল্লাহ -সবাই আল্লাহ। তাদের মধ্যে একজন অংশীদার হলেন আল্লাহ। এরপর তারা তিনজনই এক এবং একজনই তিন। এ হচ্ছে নাসারাদের সাধারণ বিশ্বাস। নাসারাদের মালেকিয়্যা, ইয়াকুবিয়্যা ও নাসতুরিয়্যা এ তিনটি দলই উপরোক্ত বিশ্বাস পোষণ করে। [ইবন কাসীর]
এ যুক্তিবিরোধী ধর্মবিশ্বাসকে তারা জটিল ও দ্ব্যর্থবোধক ভাষায় ব্যক্ত করে। অতঃপর বিষয়টি যখন কারো বোধগম্য হয় না, তখন একে বুদ্ধি বহির্ভূত সত্য’ বলে আখ্যা দিয়ে ক্ষান্ত হয়। সুদ্দি বলেন, এখানে তিনের এক ইলাহ বলা হয়েছে। তিনজন বলতে, ঈসা, তার মা মারইয়াম এবং আল্লাহকে বোঝানো হয়েছে। কারণ, অন্য আয়াতে কোন কোন নাসারাদের দ্বারা ঈসা ও তার মাকে ইলাহ হিসেবে গণ্য করার কথা উল্লেখ করে তা খণ্ডন করা হয়েছে। [আল-মায়েদাহ: ১১৬]
ইবন কাসীর বলেন, এ মতটি অধিক প্রাধান্যপ্রাপ্ত। [ইবন কাসীর]
[৩]রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ‘বান্দা তাওবাহ করলে আল্লাহ্ ঐ ব্যক্তির চাইতেও বেশী খুশী হন, যে ব্যক্তি তার উটকে মরুভূমির অজানা পথে হারিয়ে ফেলে। চিন্তায় মুমূর্ষ হয়ে পড়েছে; ঠিক এই মুহুর্তে সে তার উটকে পেয়ে গেলে যতটা খুশি হয়’। [বুখারীঃ ৬৩০৯]
এখানেও আল্লাহর অপার রহমত যে, তিনি বান্দার শির্কের পরও যদি তাঁর কাছে তাওবাহ করে তবে তিনি তাকে ক্ষমা করে দিবেন। [ইবন কাসীর]
[৪]অর্থাৎ অন্যান্য নবী যেমন দুনিয়াতে আগমন করার পর কিছুদিন অবস্থান করে চলে গেছেন; কাজেই তিনি উপাস্য হতে পারেন না। তিনি অন্যান্য নবী-রাসূলদের মতই একজন মানুষ। একজন রাসূলের বেশী তো তিনি কিছু নন। তবে আল্লাহ তাকে বনী-ইসরাঈলদের জন্য নিদর্শন বানিয়েছেন। আল্লাহ বলেন, “তিনি তো কেবল আমারই এক বান্দা, যার উপর আমরা অনুগ্রহ করেছিলাম এবং তাকে বানিয়েছিলাম বনী ইসরাঈলের জন্য দৃষ্টান্ত”। [সূরা আয-যুখরুফ ৫৯] [ইবন কাসীর]
[৫] যে ব্যক্তি পানাহারের মুখাপেক্ষী সে পৃথিবীর সবকিছুরই মুখাপেক্ষী। মাটি, বাতাস, পানি, সূর্য এবং জীবজন্তু থেকে সে অমুখাপেক্ষী হতে পারে না। পরমুখাপেক্ষীতার এ দীর্ঘ পরম্পরার প্রতি লক্ষ্য রেখে আমরা মসীহ ও মারইয়ামের উপাস্যতা খণ্ডণকল্পে যুক্তির আকারে এরূপ বলতে পারি, মসীহ ও মারইয়াম পানাহারের প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র থেকে মুক্ত ছিলেন না। এ বিষয়টি চাক্ষুষ অভিজ্ঞতা ও লোক পরম্পরা দ্বারা প্রমাণিত। আর যে পানাহার থেকে মুক্ত নয়, যে সত্তা মানব-মণ্ডলীর মত স্বীয় অস্তিত্ব রক্ষার্থে বস্তুজগতের মুখাপেক্ষী, সে কিভাবে আল্লাহ হতে পারে? এ শক্তিশালী ও সুস্পষ্ট যুক্তিটি জ্ঞানী ও মূখ সবাই সমভাবে বুঝতে পারে। অর্থাৎ পানাহার করা উপাস্য হওয়ার পরিপন্থী- [বাগভী, ইবন কাসীর, সা’দী, আইসারুত তাফাসীর]
তাফসীরে আহসানুল বায়ান বলেছেন:-
[১] একই বিষয় ৫:১৭ নং আয়াতেও আলোচিত হয়েছে। এখানে আহলে কিতাবদের ভ্রষ্টতার কথা উল্লেখ করতে গিয়ে তার পুনরাবৃত্তি হয়েছে। এ আয়াতে তাদের ঐ ফির্কার কুফরীর কথা প্রকাশ পেয়েছে, যারা মাসীহ (ঈসা (আঃ))-কে স্বয়ং আল্লাহ বলে।
[২] ঈসা (আঃ) দুগ্ধপোষ্য শিশু অবস্থায় আল্লাহর নির্দেশে (যে বয়সে সাধারণতঃ শিশুরা কথা বলতে পারে না) সর্বপ্রথম নিজের মুখ থেকে নিজের দাসত্বের কথা প্রকাশ করে বলেছিলেন, {إِنِّي عَبْدُ اللهِ آتَانِيَ الْكِتَابَ وَجَعَلَنِي نَبِيًّا} অর্থাৎ ‘আমি আল্লাহর বান্দা বা দাস, তিনি আমাকে কিতাব দান করেছেন।’ (সূরা মারয়্যাম ১৯:৩০) মাসীহ (আঃ) এটা বলেননি যে, আমিই আল্লাহ অথবা আল্লাহর পুত্র। বরং শুধুমাত্র তিনি বলেছিলেন, ‘আমি আল্লাহর বান্দা বা দাস’ এবং তিনি পরিণত বয়সে উপনীত হয়ে (মানুষকে) এই দাওয়াতই দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, {إِنَّ اللهَ رَبِّي وَرَبُّكُمْ فَاعْبُدُوهُ هَذَا صِرَاطٌ مُّسْتَقِيمٌ} অর্থাৎ, নিশ্চয়ই আল্লাহ আমার প্রভু এবং তোমাদের প্রভু, সুতরাং তোমরা তাঁরই ইবাদত কর –এটাই সরল পথ। (সূরা আলে ইমরান ৩:৫১) এই সেই শব্দাবলী যা তিনি মায়ের কোলেও বলেছিলেন। (দ্রষ্টব্য; সূরা মারয়্যাম ১৯:৩৬) অনুরূপ কিয়ামতের নিকটবর্তী সময়ে তিনি আসমান হতে অবতরণ করবেন, যার সংবাদ সহীহ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে এবং তাঁর (অবতরণের) ব্যাপারে আহলে সুন্নাহ ঐকমত্য পোষণ করেছেন। তিনি মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর আদর্শের অনুগামী হয়ে মানুষকে আল্লাহর একত্ব ও তাঁর আনুগত্যের প্রতি আহবান জানাবেন; নিজের ইবাদতের প্রতি নয়।
[৩] মাসীহ (আঃ) আল্লাহর নির্দেশ ও ইচ্ছায় নিজ মুখে দাসত্বের ও রিসালতের কথা প্রকাশ ঐ সময় করেছিলেন যখন তিনি মায়ের কোলে দুগ্ধপোষ্য শিশু ছিলেন। অনুরূপ যখন তিনি পরিণত বয়সে উপনীত হলেন তখনও এই কথাই ঘোষণা করে (বলেছিলেন যে, আমি আল্লাহর বান্দা বা দাস ও তাঁর রসূল।) সেই সঙ্গে তিনি শিরকের ভয়াবহতা ও পরিণাম সম্পর্কে অবহিত করে বলেছিলেন যে, মুশরিকদের জন্য জান্নাত চিরতরে হারাম, আর তার কেউ সাহায্যকারীও হবে না যে, তাকে সে জাহান্নাম থেকে বের করে আনবে; যেরূপ মুশরিকরা মনে করে।
[৪] এ হল খ্রিষ্টানদের দ্বিতীয় ফির্কা, যারা তিন ঈশ্বরের দাবীদার ছিল। যেটাকে তারা (One God in Three Person) বলে। আর এর ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণে যদিও খোদ তাদের মধ্যেই মতবিরোধ বিদ্যমান, তবুও সঠিক কথা এই যে, তারা ঈসা (আঃ) ও তাঁর মা মারয়্যাম (‘আলাইহাস্ সালাম)-কেও আল্লাহর সাথে (সমকক্ষ ভেবে) মাবূদ বা উপাস্যরূপে গণ্য করতো; যেরূপ কুরআন সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছে। আল্লাহ কিয়ামতের দিন ঈসা (আঃ)-কে জিজ্ঞাসা করবেন, {أأنتَ قُلتَ لِلنَّاسِ اتَّخِذُونِي وَأُمِّيَ إِلَهَيْنِ مِن دُونِ اللّه} অর্থাৎ, তুমি কি লোকদেরকে বলেছিলে যে, তোমরা আল্লাহ ছাড়া আমাকে ও আমার আম্মাকে মা’বূদ (উপাস্য) বানিয়ে নাও? (সূরা মাইদাহ ৫:১১৬) এখান থেকে এ কথা স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে, খ্রিষ্টানরা ঈসা (আঃ) ও তাঁর মাতা মারয়্যাম (‘আলাইহাস্ সালাম)-কে উপাস্য হিসাবে গণ্য করে। আর আল্লাহ তৃতীয় উপাস্য বা মা’বুদ। যাকে তারা ‘তিনের তৃতীয়’ বলে আখ্যায়ন করে। তাদের প্রথম বিশ্বাসের মতই আল্লাহ এ বিশ্বাসকেও কুফরী বলে মন্তব্য করেছেন।
[৫] صديقة শব্দের অর্থ; মু’মিন ও অলী। অর্থাৎ, তিনিও ঈসা (আঃ)-এর উপর ঈমান আনয়নকারী এবং তাঁকে সত্যজ্ঞানকারীদের একজন ছিলেন। আর তার অর্থ এই যে, তিনি নবী ছিলেন না। যেমনটি কিছু লোকের ধারণা, যাঁরা মারয়্যাম (‘আলাইহাস্ সালাম) সহ (ইসহাক (আঃ)-এর জননী) সারাহ এবং মূসা (আঃ)-এর জননীকে নবী ছিলেন বলে মনে করেন। আর এর প্রমাণে তাঁরা বলেন যে, প্রথমোক্ত দুই জনের সাথে ফিরিশতাগণের কথোপকথন হয়। আর মূসা (আঃ)-এর জননীর সাথে স্বয়ং আল্লাহ অহী করেন। আর এই কথোপকথন ও অহী উভয়ই নবী হওয়ারই প্রমাণ। কিন্তু অধিকাংশ উলামাগণের নিকট এ প্রমাণ বা দলীল এমন নয়, যা কুরআনের স্পষ্ট উক্তির মোকাবেলা করতে পারে। মহান আল্লাহ স্পষ্টভাবে বলে দিয়েছেন যে, “আমি যত রসূল পাঠিয়েছি সকলেই পুরুষ ছিল। (সূরা ইউসুফ ১২:১০৯)
[৬] ঈসা (আঃ) এবং মারয়্যাম (‘আলাইহাস্ সালাম) আল্লাহ বা উপাস্য ছিলেন না; বরং তাঁরা উভয়ে মানুষ ছিলেন তার প্রমাণ পেশ করা হচ্ছে। যেহেতু পানাহার করা মানুষের দৈহিক চাহিদা ও প্রয়োজনীয় জিনিসের মধ্যে গণ্য। যিনি মা’বুদ বা উপাস্য তিনি এ সবের ঊর্ধ্বে; বরং ঊর্ধ্ব থেকেও ঊর্ধ্বে।