(Book# 114/٢٠٨)-৪১০ www.motaher21.net كَانُوا لَا يَتَنَاهَوْنَ عَن مُّنكَرٍ فَعَلُوهُ ۚ لَبِئْسَ مَا كَانُوا يَفْعَلُونَ তারা পরস্পরকে মন্দ থেকে নিষেধ করত না, যা তারা করত। তারা যা করত, তা কতইনা মন্দ! They used not to forbid one another from the evil they committed. সুরা: আল্ মায়িদাহ আয়াত নং :-৭৮-৮১

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ

(Book# 114/٢٠٨)-৪১০
www.motaher21.net
كَانُوا لَا يَتَنَاهَوْنَ عَن مُّنكَرٍ فَعَلُوهُ ۚ لَبِئْسَ مَا كَانُوا يَفْعَلُونَ

তারা পরস্পরকে মন্দ থেকে নিষেধ করত না, যা তারা করত। তারা যা করত, তা কতইনা মন্দ!

They used not to forbid one another from the evil they committed.

সুরা: আল্ মায়িদাহ
আয়াত নং :-৭৮-৮১

لُعِنَ الَّذِينَ كَفَرُوا مِنۢ بَنِىٓ إِسْرٰٓءِيلَ عَلٰى لِسَانِ دَاوُۥدَ وَعِيسَى ابْنِ مَرْيَمَ ۚ ذٰلِكَ بِمَا عَصَوا وَّكَانُوا يَعْتَدُونَ

বনী ইসরাঈলের মধ্যে যারা কুফরী করেছে তাদেরকে দাঊদ ও মারইয়াম পুত্র ঈসার মুখে লা‘নত করা হয়েছে। তা এ কারণে যে, তারা অবাধ্য হয়েছে এবং তারা সীমালঙ্ঘন করত।
আয়াত:-৭৯

كَانُوا لَا يَتَنَاهَوْنَ عَن مُّنكَرٍ فَعَلُوهُ ۚ لَبِئْسَ مَا كَانُوا يَفْعَلُونَ
তারা পরস্পরকে মন্দ থেকে নিষেধ করত না, যা তারা করত। তারা যা করত, তা কতইনা মন্দ!

আয়াত:- ৮০
تَرٰى كَثِيرًا مِّنْهُمْ يَتَوَلَّوْنَ الَّذِينَ كَفَرُوا ۚ لَبِئْسَ مَا قَدَّمَتْ لَهُمْ أَنفُسُهُمْ أَن سَخِطَ اللَّهُ عَلَيْهِمْ وَفِى الْعَذَابِ هُمْ خٰلِدُونَ
তাদের মধ্যে অনেককে তুমি দেখতে পাবে, যারা কাফিরদের সাথে বন্ধুত্ব করে। তারা যা নিজদের জন্য পেশ করেছে, তা কত মন্দ যে, আল্লাহ তাদের উপর ক্রোধান্বিত হয়েছেন এবং তারা আযাবেই স্থায়ী হবে।
আয়াত:-৮১

وَلَوْ كَانُوا يُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالنَّبِىِّ وَمَآ أُنزِلَ إِلَيْهِ مَا اتَّخَذُوهُمْ أَوْلِيَآءَ وَلٰكِنَّ كَثِيرًا مِّنْهُمْ فٰسِقُونَ
আর যদি তারা আল্লাহ ও নবীর প্রতি এবং যা তার নিকট নাযিল করা হয়েছে তার প্রতি ঈমান রাখত, তবে তাদেরকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করত না। কিন্তু তাদের মধ্যে অনেকে ফাসিক।

৭৮-৮১ নং আয়াতের তাফসীর:

তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ বলেছেন:-

দাঊদ (আঃ)-এর ওপর অবতীর্ণ যাবূর ও ঈসা (আঃ)-এর ওপর অবতীর্ণ ইঞ্জিল বানী ইসরাঈলের মধ্যে যারা কুফরী করেছে তাদের ওপর তা অভিশম্পাত করেছে। তার কারণ তারা অবাধ্য ও সীমালঙ্ঘনকারী ছিল এবং তারা মানুষদেরকে অন্যায় কাজে বাধা দিত না বরং নিজেরা অন্যায় কাজ করত। অন্যায় কাজ করা যেমন অপরাধ তেমনি অন্যায় কাজ দেখে নীরব থাকাও অপরাধ।

ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন: শনিবারের ব্যাপারে যারা সীমালঙ্ঘন করেছে তারা দাঊদ (আঃ)-এর ভাষায় লা‘নতপ্রাপ্ত হয়েছে, আসমান থেকে খাবার আসার পরেও যারা কুফরী করেছে তারা ঈসা (আঃ)-এর ভাষায় লা‘নতপ্রাপ্ত হয়েছে। এরূপ বর্ণনা নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে রয়েছে। বলা হয়: পূর্ববর্তী ও পরবর্তী যারা মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর প্রতি কুফরী করেছে তারা সবাই দাঊদ ও ঈসা (আঃ)-এর ভাষায় লা’নত প্রাপ্ত হয়েছে। কারণ তাঁরা মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নবুওয়াতের কথা জানিয়ে দিয়েছিলেন। (তাফসীর কুরতুবী ৫/১৯০)

আমাদেরও সতর্ক হওয়া উচিত এবং যতদূর সম্ভব মন্দকাজে বাধা দেয়া কর্তব্য। অন্যথায় পূর্ববর্তীদের মত আমাদেরকেও শাস্তি গ্রাস করবে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: যার হাতে আমার প্রাণ তাঁর শপথ! তোমরা অবশ্যই ভাল কাজের আদেশ ও অন্যায় কাজ থেকে নিষেধ করবে। অন্যথায় আমার আশঙ্কা আমাদের ওপর আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে শাস্তি আসবে। অতঃপর তোমরা আল্লাহ তা‘আলার কাছে দু‘আ করবে কিন্তু তা কবূল হবে না। (তিরযিমী হা: ২১৬৯, মুসনাদ আহমাদ: ৫/৩৮৮, হাসান)

অন্যত্র রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: তোমাদের যে ব্যক্তি কোন অন্যায় কাজ করতে দেখবে সে যেন তার হাত দ্বারা বাধা দেয়, তাতে সক্ষম না হলে কথা দ্বারা বাধা দেয়, তাতেও সক্ষম না হলে অন্তর দ্বারা পরিবর্তনের চেষ্টা করবে; এটা সর্বনিম্ন ঈমানের পরিচয়। (সহীহ মুসলিম হা: ৪৯ তিরযিমী হা: ২১৭২, নাসাঈ হা: ৫০২৩)

যায়নাব বিনতু জাহশ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞাসা করলেন: হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের মাঝে সৎ ব্যক্তিরা থাকা সত্ত্বেও কি আমাদের ধ্বংস করে দেয়া হবে? রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: হ্যাঁ, যখন খারাপ কাজ অধিক হারে বেড়ে যাবে। (সহীহ বুখারী হা: ৩৩৪৬)

আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:

১. সীমালঙ্ঘন ও অবাধ্যতা অভিশপ্ত হবার অন্যতম কারণ।
২. অন্যায় কাজে জড়িত ব্যক্তিকে সাধ্যমত বাধা দেয়া ক্ষমতাবান ব্যক্তিদের ওপর ওয়াজিব ও চুপ থাকা হারাম।
৩. যারা ঈমানদার তারা কখনো কাফিরদের সাথে বন্ধুত্ব রাখে না।

English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Al Mayadah
Verse:- 78-81

كَانُواْ لَا يَتَنَاهَوْنَ عَن مُّنكَرٍ فَعَلُوهُ

They used not to forbid one another from the evil they committed.

Allah Cursed the Disbelievers Among the Children of Israel

Allah says;

لُعِنَ الَّذِينَ كَفَرُواْ مِن بَنِي إِسْرَايِيلَ عَلَى لِسَانِ دَاوُودَ وَعِيسَى ابْنِ مَرْيَمَ ذَلِكَ بِمَا عَصَوا وَّكَانُواْ يَعْتَدُونَ

Those among the Children of Israel who disbelieved were cursed by the tongue of Dawud and `Isa, son of Maryam. That was because they disobeyed (Allah and the Messengers) and were ever transgressing (beyond the bounds).

Allah states that He has cursed the disbelievers among the Children of Israel long ago, and revealed this fact to His Prophets Dawud and `Isa, son of Maryam. He cursed them because they disobeyed Allah and transgressed against His creatures.

Al-Awfi reported that Ibn Abbas said,

“They were cursed in the Tawrah, the Injil, the Zabur (Psalms) and the Furqan (Qur’an).”

Allah then states that during their time, their habit was that

كَانُواْ لَا يَتَنَاهَوْنَ عَن مُّنكَرٍ فَعَلُوهُ

They used not to forbid one another from the evil they committed.

They did not forbid each other from committing sins and the prohibitions. Allah chastised them for this behavior, so that their behavior would not be imitated.

Allah said,

لَبِيْسَ مَا كَانُواْ يَفْعَلُونَ

Vile indeed was what they used to do.
Hadiths that Order Enjoining Righteousness and Forbidding Evil

There are many Hadiths that order enjoining righteousness and forbidding evil.

Imam Ahmad recorded that Hudhayfah bin Al-Yaman said that the Prophet said,

وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَتَأْمُرُنَّ بِالْمَعْرُوفِ وَلَتَنْهَوُنَّ عَنِ الْمُنْكَرِ أَوْ لَيُوشِكَنَّ اللهُ أَنْ يَبْعَثَ عَلَيْكُمْ عِقَابًا مِنْ عِنْدِهِ ثُمَّ لَتَدْعُنَّهُ فَلَا يَسْتَجِيبَ لَكُم

By He in Whose Hand is my soul! You will enjoin righteousness and forbid evil, or Allah will send a punishment on you from Him. Then, you will supplicate to Him, but He will not accept your supplication.

At-Tirmidhi also recorded it and said, “This Hadith is Hasan.”

Muslim recorded that Abu Sa`id Al-Khudri said that the Messenger of Allah said,

مَنْ رَأَى مِنْكُمْ مُنْكَرًا فَلْيُغَيِّرْهُ بِيَدِهِ فَإِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِلِسَانِهِ فَإِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِقَلْبِهِ وَذلِكَ أَضْعَفُ الاِْيمَان

He among you who witnesses an evil, let him change it with his hand, if he cannot do that, then by his tongue, if he cannot do even that, then with his heart, and this is the weakest faith.

Abu Dawud said that Al-Urs, (meaning Ibn Amirah), said that the Prophet said,

إِذَا عُمِلَتِ الْخَطِييَةُ فِي الاَْرْضِ كَانَ مَنْ شَهِدَهَا فَكَرِهَهَا وَقَالَ مَرَّةً فَأَنْكَرَهَا كَانَ كَمَنْ غَابَ عَنْهَا وَمَنْ غَابَ عَنْهَا فَرَضِيَهَا كَانَ كَمَنْ شَهِدَهَا

When sin is committed on the earth, then whoever witnesses it and hates – (once he said):forbids it, will be like those who did not witness it. Whoever was absent from it, but agreed with it, will be like those who witness it.

Only Abu Dawud recorded this Hadith.

Abu Dawud recorded that one of the Companions said that the Prophet said,

لَنْ يَهْلِكَ النَّاسُ حَتَّى يَعْذِرُوا أَوْ يُعْذِرُوا مِنْ أَنْفُسِهِم

The people will not perish until they do not leave -or- have any excuse for themselves.

Ibn Majah recorded that Abu Sa`id Al-Khudri said that the Messenger of Allah gave a speech once and said,

أَلَا لَا يَمْنَعَنَّ رَجُلً هَيْبَةُ النَّاسِ أَنْ يَقُولَ الْحَقَّ إِذَا عَلِمَه

Behold! Fear from people should not prevent one from saying the truth if he knows it.

Abu Sa`id then cried and said, “By Allah! We have seen some errors, but we feared (the people).”

Another Hadith that Abu Sa`id narrated states that the Messenger of Allah said,

أَفْضَلُ الْجِهَادِ كَلِمَةُ حَقَ عِنْدَ سُلْطَانٍ جَايِر

The best Jihad is a word of truth proclaimed before an unjust ruler.

Recorded by Abu Dawud, At-Tirmidhi, and Ibn Majah.

At-Tirmidhi said, “Hasan Gharib from this route of narration.”

Imam Ahmad recorded that Hudhayfah said that the Prophet said,

لَاا يَنْبَغِي لِمُسْلِمٍ أَنْ يُذِلَّ نَفْسَه

It is not required of the Muslim that he humiliate himself.

They said, `How does one humiliate himself?”

he said;

يَتَعَرَّضُ مِنَ الْبَلَءِ لِمَا لَا يُطِيق

He takes on trials that he is not capable of enduring.

This was recorded by At-Tirmidhi and Ibn Majah, and At-Tirmidhi said, “This Hadith is Hasan Sahih Gharib.”
Censuring the Hypocrites

تَرَى كَثِيرًا مِّنْهُمْ يَتَوَلَّوْنَ الَّذِينَ كَفَرُواْ

You see many of them taking the disbelievers as their friends.

Mujahid said that this Ayah refers to the hypocrites.

Allah’s statement,

لَبِيْسَ مَا قَدَّمَتْ لَهُمْ أَنفُسُهُمْ

Evil indeed is that which they have sent forward before themselves;

by giving their loyalty and support to the disbelievers, instead of the believers. This evil act caused them to have hypocrisy in their hearts and brought them the anger of Allah, that will remain with them until the Day of Return.

Allah said;

أَن سَخِطَ اللّهُ عَلَيْهِمْ

for that (reason) Allah is wrath with them.

because of what they did.

Allah next said that,

وَفِي الْعَذَابِ هُمْ خَالِدُونَ

in torment they will abide.

on the Day of Resurrection.

Allah’s statement

وَلَوْ كَانُوا يُوْمِنُونَ بِالله والنَّبِيِّ وَمَا أُنزِلَ إِلَيْهِ مَا اتَّخَذُوهُمْ أَوْلِيَاء

And had they believed in Allah, and in the Prophet and in what has been revealed to him, never would they have taken them as friends.

meaning, had they sincerely believed in Allah, His Messenger and the Qur’an, they would not have committed the evil act of supporting the disbelievers in secret and being enemies with those who believe in Allah, the Prophet and what was revealed to him,

وَلَـكِنَّ كَثِيرًا مِّنْهُمْ فَاسِقُونَ

but many of them are rebellious.

disobedient to Allah and His Messenger and defiant of the Ayat of His revelation that He sent down.

তাফসীরে ইবনে ‌কাসীর বলেছেন:-
৭৮-৮১ নং আয়াতের তাফসীর:

ইরশাদ হচ্ছে যে, বানী ইসরাঈলের কাফিররা প্রাচীন অভিশপ্ত। হযরত দাউদ (আঃ) ও ঈসা (আঃ)-এর যুগে তারা অভিশপ্তরূপে সাব্যস্ত হয়েছিল। কেননা, তারা ছিল আল্লাহর অবাধ্য এবং তারা আল্লাহর সৃষ্টজীবের প্রতি অত্যাচারী ছিল। তাওরাত, ইঞ্জীল, যাবুর, কুরআন প্রভৃতি সমস্ত কিতাবই তাদের উপর লা’নত বর্ষণ করে আসছে। তারা নিজেদের যুগেও একে অপরকে খারাপ কাজ করতে দেখেছে, কিন্তু নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে। হারাম কাজগুলো তাদের মধ্যে খোলাখুলিভাবে চলতো এবং কেউ কাউকেও নিষেধ করতো না। এ ছিল তাদের জঘন্য কাজ।

মুসনাদে আহমাদে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন- “বানী ইসরাঈলের মধ্যে প্রথম যখন পাপ কাজ শুরু হয় তখন তাদের আলেমরা তাদেরকে বাধা দেয়। কিন্তু যখন দেখে যে, তারা মানলো না তখন তারা তাদেরকে পৃথক না। করে তাদের সাথেই উঠাবসা করতে থাকে। আল্লাহ তখন একে অপরের প্রতি হিংসা-বিদ্বেষ সৃষ্টি করে দেন এবং হযরত দাউদ (আঃ) ও হযরত ঈসা (আঃ)-এর বদ দু’আর মাধ্যমে তাদের উপর লা’নত বর্ষণ করেন। কেননা, তারা অবাধ্য ও অত্যাচারী ছিল।” এটা বর্ণনা করার সময় নবী (সঃ) বালিশে হেলান দিয়ে বসেছিলেন। কিন্তু এ কথা বলার পর সোজা হয়ে বসে গিয়ে বলেনঃ “না, না। আল্লাহর কসম! তোমাদের অবশ্যই কর্তব্য হচ্ছে এই যে, তোমরা জনগণকে শরীয়ত বিরোধী কার্যকলাপ থেকে বাধা প্রদান করবে এবং তাদেরকে শরীয়তের পাবন্দ বানিয়ে নেবে।”

সুনানে আবি দাউদে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “বানী ইসরাঈলের মধ্যে সর্বপ্রথম বদভ্যাস। এই ঢুকেছিল যে, কোন লোক অপর কোন লোককে শরীয়ত বিরোধী কোন কাজ করতে দেখলে তাকে বাধা প্রদান করতো। তাকে সে বলতেঃ আল্লাহকে ভয় কর এবং এ খারাপ কাজ পরিত্যাগ কর, এটা হারাম। কিন্তু পরদিন যখন সে তা ছাড়তো না তখন সে তার থেকে পৃথক হয়ে যেতো না। বরং একই সাথে পানাহার করতো এবং একই সাথে উঠাবাস করতো। এ কারণে সবারই অন্তরে সংকীর্ণতা এসে যায়। তারপর তিনি পূর্ণ আয়াতটি পাঠ করেন। অতঃপর তিনি বলেনঃ “আল্লাহর শপথ! তোমাদের উপর ফরয হচ্ছে এই যে, তোমরা একে অপরকে ভাল কাজের আদেশ করবে এবং মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখবে। অত্যাচারীকে তার অত্যাচার থেকে বিরত রাখবে এবং তাকে হকের উপর আসতে বাধ্য করবে।” জামেউত তিরমিযী এবং সুনানে ইবনে মাজার মধ্যে এ হাদীসটি রয়েছে। সুনানে আবি দাউদ ইত্যাদির মধ্যে এ হাদীসের শেষাংশে এ কথাও আছে-তোমরা যদি এটা না কর তবে আল্লাহ তোমাদের অন্তরও একে অপরের সাথে মেরে দেবেন এবং তোমাদের উপরও তার শাস্তি অবতীর্ণ করবেন, যেমন এদের উপর অবতীর্ণ করেছেন। এ সম্পর্কীয় আরও হাদীস রয়েছে। হযরত জাবির (রাঃ) বর্ণিত হাদীসটি তো (আরবী) (৫:৬৩)-এ আয়াতের তাফসীরে বর্ণনা করা হয়েছে। (আরবী) (৫:১০৫)-এ আয়াতের তাফসীরে হযরত আবূ বকর (রাঃ) ও হযরত আবু সা’লাবা (রাঃ)-এর হাদীসগুলো আসবে ইনশাআল্লাহ। মুসনাদে আহমাদ ও জামেউত তিরমিযীতে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “হয় তোমরা ভাল কাজের আদেশ ও মন্দ কাজ হতে নিষেধ করতে থাকবে, না হয় আল্লাহ তোমাদের উপর স্বীয় পক্ষ থেকে শাস্তি পাঠিয়ে দেবেন। অতঃপর তোমরা তাঁর নিকট প্রার্থনা করতে থাকবে, কিন্তু তোমাদের প্রার্থনা তিনি ককূল করবেন না।” সুনানে ইবনে মাজায় রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন- “তোমরা ভাল কাজের আদেশ ও মন্দ কাজ হতে নিষেধ করতে থাক এমন সময় আসার পূর্বে যে, তোমরা দুআ করবে, কিন্তু তা কবূল করা হবে না।” সহীহ হাদীসে হযরত আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন- “তোমাদের কেউ কাউকে শরীয়ত গর্হিত কাজ করতে দেখলে তাকে হাত দ্বারা বাধা প্রদান করা তার উপর ফরয। যদি এটার ক্ষমতা তার না থাকে তবে তার উচিত যে, সে যেন তাকে কথা দ্বারা বাধা দেয়। যদি ওটারও ক্ষমতা তার না থাকে তবে তার উচিত তাকে অন্তরে ঘৃণা করা, এবং এটা হচ্ছে সবচেয়ে দুর্বল ঈমানের পরিচয়। (এ হাদীসটি ইমাম মুসলিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন)

রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন- “বিশিষ্ট লোকদের পাপের কারণে আল্লাহ সাধারণ লোকদেরকে শান্তি দেন না, কিন্তু ঐ সময় দিয়ে থাকেন যখন তাদের মধ্যে কু-কাজ ছড়িয়ে পড়ে এবং ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও তারা তাদেরকে বাধা প্রদান করে না। ঐ সময় আল্লাহ বিশিষ্ট ও সাধারণ সমস্ত লোককেই স্বীয় শাস্তি দ্বারা ঘিরে নেন।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ) বর্ণনা করেছেন)

নবী (সঃ) বলেছেন- “যে জায়গায় পাপ ছড়িয়ে পড়েছে সেখানে যারা উপস্থিত আছে তারা যদি ঐ শরীয়ত বিরোধী কাজে অসন্তষ্ট হয় (আর একটি বর্ণনায় আছে যে, যদি ঐ কাজে বাধা দেয়) তবে তারা যেন ঐ লোকদের মতই যারা সেখানে উপস্থিত নেই। পক্ষান্তরে যারা সেখানে উপস্থিত নেই, কিন্তু ঐ শরীয়ত বিরোধী কার্যে তারা সন্তুষ্ট হয়, তবে তারা যেন ঐ লোকদের মতই যারা সেখানে উপস্থিত আছে।” (এটা ইমাম আবু দাউদ (রঃ) বর্ণনা করেছেন) সুনানে আবি দাউদে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন- “লোকদের ওযর যে পর্যন্ত লুপ্ত না হবে সে পর্যন্ত তারা ধ্বংস হবে না।” হযরত আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, একদা রাসূলুল্লাহ (সঃ) খুৎবা দিতে গিয়ে বলেনঃ “সাবধান! কাউকে যেন লোকদের ভয় সত্য কথা বলা থেকে বিরত না রাখে।” এ হাদীসটি বর্ণনা করতে গিয়ে হযরত আবূ সাঈদ (রাঃ) কেঁদে ফেলেন এবং বলেনঃ আল্লাহর কসম! আমরা তো এরূপ স্থলে মানুষের ভয়কে স্বীকার করে থাকি। অন্য একটি হাদীসে আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন- ‘অত্যাচারী বাদশাহর সামনে সত্য কথা বলা হচ্ছে উত্তম জিহাদ। (হাদীসগুলো ইমাম আবু দাউদ (রঃ), ইমাম তিরমিযী (রঃ) এবং ইমাম ইবনে মাজা (রঃ) বর্ণনা করেছেন) সুনানে ইবনে মাজায় রয়েছে যে, জামরায়ে সানিয়ার নিকট রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর কাছে একটি লোক এসে জিজ্ঞেস করলো- ‘হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! উত্তম জিহাদ কি? তিনি নীরব থাকলেন, তারপর তিনি জামরায়ে উকবাকে কংকর মারার পর যখন সওয়ারীর উপর আরোহণের উদ্দেশ্যে রেকাবে পা রাখলেন তখন তিনি জিজ্ঞেস করলেন- প্রশ্নকারী কোথায়? লোকটি বললো, হে আল্লাহর রাসূল (সঃ) আমি হাযির আছি। তিনি তখন বললেনঃ “অত্যাচারী বাদশাহর সামনে সত্য কথা বলে দেয়া (হচ্ছে উত্তম জিহাদ)।” সুনানে ইবনে মাজায় রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন- “তোমাদের কারও নিজের অসম্মান কর উচিত নয়।’ সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন- হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! এটা কিরূপে? তিনি উত্তরে বললেনঃ তা এরূপে যে, সে শরীয়ত বিরোধী কাজ দেখবে এবং কিছুই বলবে না। কিয়ামতের দিন তাকে জিজ্ঞেস করা হবেঃ ‘অমুক স্থলে তুমি নীরব ছিলে কেন? সে উত্তর বলবেঃ মানুষের ভয়ে। তখন আল্লাহর তা’আলা বলবেন- ‘আমি এর সবচেয়ে বড় হকদার ছিলাম যে, তুমি আমাকেই ভয় করতে। অন্য বর্ণনায় আছে যে, তালকীনে হুজ্জতের উপর সে বলবেঃ হে আল্লাহ! আমি আপনার উপর আশা ভরসা রেখেছিলাম এবং মানুষকে ভয় করেছিলাম। মুসনাদে আহমাদে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনমুসলমানদের নিজেকে লাঞ্ছিত করা উচিত নয়।’ সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেনহে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! কিরূপে? তিনি উত্তরে বললেনঃ ‘ঐ বিপদ আপদকে মাথা পেতে নেয়া যা বরদাশত করার ক্ষমতা তার নেই।’ সুনানে ইবনে মাজায় হযরত আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, জিজ্ঞেস করা হলোঃ হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! ভাল কাজের আদেশ এবং মন্দ কাজ হতে নিষেধ করা কখন ছেড়ে দেয়া হবে? তিনি উত্তরে বললেনঃ “ঐ সময় ছেড়ে দিতে হবে যখন তোমাদের মধ্যে ঐ জিনিসই প্রকাশ পেয়ে যাবে যা পূর্ববর্তী লোকদের মধ্যে প্রকাশ পেয়েছিল। আবার জিজ্ঞেস করা হলোঃ “ওটা কি জিনিস? তিনি উত্তর দিলেনঃ রাজত্ব ইতর লোকদের মধ্যে চলে যাওয়া, বড় লোকদের মধ্যে ব্যভিচারী এসে পড়া, ছোট লোকদের মধ্যে ইলম এসে যাওয়া।’ হযরত যায়েদ (রাঃ) বলেন যে, ইতর ও ছোট লোকদের মধ্যে এসে যাওয়ার অর্থ হচ্ছে ফাসেক ও পাপাচারদের মধ্যে ইলমের আগমন ঘটা। এ হাদীসের সাক্ষী আবু সা’লাবা (রাঃ)-এর হাদীস দ্বারা (আরবী) (৫:১০৫)-এ আয়াতের তাফসীরে আসবে ইনশাআল্লাহ।

ইরশাদ হচ্ছে-অধিকাংশ মুনাফিককে তুমি দেখবে যে, তারা কাফিরদের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করবে। তাদের এ কার্যের কারণে অর্থাৎ মুসলমানদের বন্ধুত্ব ছেড়ে দিয়ে কাফিরদের সাথে বন্ধুত্ব করার কারণে তারা তাদের জন্যে বড় যখীরা জমা করে রেখেছে। এরই প্রতিশোধ হিসেবে তাদের অন্তরে নেফাক বা। কপটতা সৃষ্টি হয়েছে এবং এরই উপর ভিত্তি করেই তাদের উপর আল্লাহর গযব নাযিল হয়েছে। আর কিয়ামতের দিন তাদের জন্যে চিরস্থায়ী শাস্তি অপেক্ষা করছে। ইবনে আবি হাতিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন“হে মুসলমানগণ! তোমরা ব্যভিচার থেকে বেঁচে থাক। কেননা, এতে ছয়টি অকল্যাণ রয়েছে। তিনটি দুনিয়াতে ও তিনটি আখিরাতে। দুনিয়ার তিনটি অকল্যাণ হচ্ছে- (১) এর ফলে ইযযত, সম্মান ও সৌন্দর্য লোপ পায়, (২) এর ফলে দারিদ্র এসে পড়ে এবং (৩) এর কারণে আয়ু কমে যায়। আর আখিরাতের তিনটি অকল্যাণ হচ্ছে- (১) আল্লাহর গযব, (২) হিসাবে কাঠিন্য এবং (৩) জাহান্নামে চিরস্থায়ী অবস্থান।” তারপর রাসূলুল্লাহ (সঃ) এ আয়াতের শেষ বাক্যটি পাঠ করেন। এ হাদীসটি দুর্বল। আল্লাহ তা’আলাই সবচেয়ে ভাল জানেন।

এরপর মহান আল্লাহ বলেনঃ যদি এ লোকগুলো আল্লাহ ও তাঁর (সঃ)-এর উপর এবং কুরআনের উপর পূর্ণ ঈমান আনতো তবে কখনও কাফিরদের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করতো না ও খাটি মুসলমানের সাথে শত্রুতা করতো না। প্রকৃত ব্যাপারে এই যে, তাদের অধিকাংশ লোকই ফাসেক’। অর্থাৎ তারা আল্লাহ ও তার রাসূল (সঃ)-এর আনুগত্য হতে সরে পড়েছে এবং তার অহী ও পাক কালামের আয়াতগুলোর বিরোধী হয়ে গেছে।

তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-

টিকা:১০২) প্রত্যেক জাতির বিকৃতি শুরু হয় কয়েক ব্যক্তি থেকে। জাতির সামগ্রিক বিবেক জাগ্রত থাকলে সাধারণ জনমত ঐ বিপথগামী লোকদেরকে দমিয়ে রাখে এবং জাতি সামগ্রিকভাবে বিকৃতির হাত থেকে রক্ষা পায়। কিন্তু জাতি যদি ঐ ব্যক্তিগুলোর ব্যাপারে উপেক্ষা-অবহেলা ও উদাসীনতার নীতি অবলম্বন করে এবং দুষ্কৃতকারীদের তিরস্কার ও নিন্দা করার পরিবর্তে তাদেরকে সমাজে খারাপ কাজ করার জন্য স্বাধীনভাবে ছেড়ে দেয়, তাহলে যে বিকৃতি প্রথমে কয়েক ব্যক্তির মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল তা ধীরে ধীরে সমগ্র জাতির মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। বনী ইসরাঈল জাতির বিকৃতি এভাবেই হয়েছে। হযরত দাউদ ও হযরত ঈসা বনী ইসরাঈলের ওপর যে অভিসম্পাত বা লানত করেছেন তা জানার জন্য দেখুন যবূর (গীত সংহিতা ১০ ও ৫০ এবং মথি ২৩।)

টিকা:১০৩) এর অর্থ হচ্ছে, যারা আল্লাহ, নবী ও আসমানী কিতাবকে মেনে নেয় তারা স্বাভাবিকভাবে মুশরিকদের মোকাবিলায় এমন লোকদের প্রতি বেশী সহানুভূতিশীল হয়, যাদের সাথে ধর্মের ব্যাপারে বিরোধ থাকলেও তারা তাদেরই মতো আল্লাহ ও আল্লাহ প্রেরিত অহির ধারাবাহিকতা ও রিসালাতকে মানে। কিন্তু এ ইহুদীরা এক অদ্ভূত ধরনের আহলি কিতাব। তাওহীদ ও শিরকের যুদ্ধে এরা প্রকাশ্যে মুশরিকদের সাথে সহযোগিতা করছে। নবুওয়াতের স্বীকৃতি ও অস্বীকৃতির লড়াইয়ে এদের সহানুভূতি রয়েছে নবুওয়াত অস্বীকারকারীদের প্রতি। এরপরও এরা লজ্জা শরমের মাথা খেয়ে এ দাবী করে বেড়াচ্ছে যে, তারা নবী ও কিতাব মানে।

তাফসীরে আবুবকর ‌যাকারিয়া‌ বলেছেন:-

[১] ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, বনী ইসরাঈলরা ইঞ্জলে ঈসা ‘আলাইহিস সালামের মুখে লা’নত প্রাপ্ত হয়েছিল। আর যাবূরে দাউদ ‘আলাইহিস সালামের মুখে লা’নত প্রাপ্ত হয়েছিল। [তাবারী]

তাফসীরে আহসানুল বায়ান বলেছেন:-
[১] অর্থাৎ, যবুরের মধ্যে যা দাউদ (আঃ)-এর উপর অবতীর্ণ হয়েছিল এবং ইঞ্জীলের মধ্যে যা ঈসা (আঃ)-এর উপর অবতীর্ণ হয়েছিল। আর এই অভিশাপ কুরআনের মাধ্যমেও তাদেরকে করা হচ্ছে, যা মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর উপর অবতীর্ণ হয়েছে। ‘লানত বা অভিশাপ’ এর অর্থ হচ্ছে; আল্লাহর রহমত ও তার করুণা থেকে বঞ্চনা।

[২] এ হল অভিশাপের হেতু। (ক) অবাধ্যতা; অর্থাৎ, ওয়াজেব কর্ম ত্যাগ করে এবং হারাম কর্ম সম্পাদন করে তারা আল্লাহর অবাধ্যতা করেছিল। (খ) সীমালঙ্ঘন; অর্থাৎ, অতিরঞ্জন ও বিদআত রচনা করে তারা সীমালংঘন করেছিল।

[৩] এর উপর (অভিশাপের) অতিরিক্ত কারণ হল, তারা একে অপরকে মন্দ কর্ম হতে বাধা প্রদান করত না, যা স্বস্থানে একটা বড় অপরাধ। কোন কোন ভাষ্যকার (মন্দ কর্মে) বাধা প্রদান না করাকেই অবাধ্যতা ও সীমালঙ্ঘন হিসাবে গণ্য করেছেন, যা তাদের অভিশপ্ত হওয়ার কারণ। যাই হোক, উভয় অবস্থাতেই মন্দ কাজ দেখে সেই মন্দ থেকে বাধা প্রদান না করা মহা অপরাধ এবং আল্লাহর গযব বা ক্রোধ ও অভিশাপের কারণ। (‘অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে, তব ঘৃণা তারে যেন তৃণসম দহে।’) আর হাদীসেও এ ধরনের অপরাধের বড় কঠিন শাস্তির কথা বর্ণনা করা হয়েছে। এক হাদীসে মহানবী (সাঃ) বলেন, “সর্বপ্রথম বানী ইস্রাঈলের মধ্যে যে ত্রুটি প্রবেশ করেছিল তা হচ্ছে, একজন মানুষ যখন অপরকে কোন অন্যায় অপকর্মে লিপ্ত দেখত, তখন বলত, আল্লাহকে ভয় কর। আর এই পাপ বর্জন কর। এ তোমার জন্য বৈধ নয়। কিন্তু তারপর দিনই তার সাথে পানাহার ও উঠা-বসা করতে কোন প্রকার ঘৃণা বা লজ্জা বোধ করত না। (অর্থাৎ তারা একই মজলিসে এক সঙ্গে বসে পানাহার করত।) অথচ ঈমানের দাবী ছিল, তাদের প্রতি ঘৃণা ও সম্পর্ক ছেদন করা। যার ফলে আল্লাহ তাদের পরস্পরের মধ্যে শত্রুতা প্রক্ষিপ্ত করেন এবং তারা আল্লাহর শাস্তির উপযুক্ত হয়ে যায়।” নবী (সাঃ) তারপর বললেন, আল্লাহর কসম! তোমরা অবশ্যই লোকদেরকে নেকী বা সৎকর্মের নির্দেশ প্রদান করবে এবং মন্দ কর্ম থেকে বাধা দান করবে। আর অত্যাচারীর হাত ধরে নেবে। (তা-না হলে তোমাদের অবস্থাও অনুরূপ হবে।)—।” (আবু দাউদ ৪৩৩৬নং) অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, এই অপরিহার্য কর্তব্য ত্যাগ করার শাস্তি এই বর্ণনা করা হয়েছে যে, তোমরা আল্লাহর আযাবের উপযুক্ত হয়ে যাবে। অতঃপর তোমরা আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করলে তা গ্রহণ করা হবে না। (আহমাদ ৫/৩৮৮)

[৪] কাফেরদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রাখার ফল এই যে, আল্লাহ তাদের উপর অসন্তুষ্ট ও ক্রোধান্বিত হয়েছেন। আর এই অসন্তুষ্টির পরিণাম হচ্ছে, জাহান্নামের চিরস্থায়ী শাস্তি।
[৫] এর ভাবার্থ এই যে, যার মধ্যে প্রকৃতার্থে ঈমান আছে, সে কষ্মিনকালেও কাফেরদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন করবে না।

Leave a Reply