أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book# 114/٢١٠)-৪১২
www.motaher21.net
تَرَى أَعْيُنَهُمْ تَفِيضُ مِنَ الدَّمْعِ مِمَّا عَرَفُواْ مِنَ الْحَقِّ
তুমি দেখবে তাদের চক্ষু অশ্রুতে ভেসে যাচ্ছে, কারণ তারা সত্য হতে জেনেছে।
You see their eyes overflowing with tears because of the truth they have recognized.
সুরা: আল্ মায়িদাহ
আয়াত নং :-৮৩-৮৬
وَإِذَا سَمِعُوا مَآ أُنزِلَ إِلَى الرَّسُولِ تَرٰىٓ أَعْيُنَهُمْ تَفِيضُ مِنَ الدَّمْعِ مِمَّا عَرَفُوا مِنَ الْحَقِّ ۖ يَقُولُونَ رَبَّنَآ ءَامَنَّا فَاكْتُبْنَا مَعَ الشّٰهِدِينَ
‘আর রাসূলের প্রতি যা নাযিল করা হয়েছে যখন তারা তা শুনে, তুমি দেখবে তাদের চক্ষু অশ্রুতে ভেসে যাচ্ছে, কারণ তারা সত্য হতে জেনেছে। তারা বলে, ‘হে আমাদের রব, আমরা ঈমান এনেছি। সুতরাং আপনি আমাদেরকে সাক্ষ্য দানকারীদের সঙ্গে লিপিবদ্ধ করুন’।
আয়াত:-৮৪
وَمَا لَنَا لَا نُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَمَا جَآءَنَا مِنَ الْحَقِّ وَنَطْمَعُ أَن يُدْخِلَنَا رَبُّنَا مَعَ الْقَوْمِ الصّٰلِحِينَ
আর আমাদের কী হয়েছে যে, আমরা আল্লাহর প্রতি এবং যে সত্য আমাদের কাছে এসেছে তার প্রতি ঈমান আনব না? আর আমরা আশা করব না যে, আমাদের রব আমাদেরকে প্রবেশ করাবেন নেককার সম্প্রদায়ের সাথে’।
আয়াত:-৮৫
فَأَثٰبَهُمُ اللَّهُ بِمَا قَالُوا جَنّٰتٍ تَجْرِى مِن تَحْتِهَا الْأَنْهٰرُ خٰلِدِينَ فِيهَا ۚ وَذٰلِكَ جَزَآءُ الْمُحْسِنِينَ
সুতরাং তারা যা বলেছে এর কারণে আল্লাহ তাদেরকে পুরস্কার দেবেন জান্নাতসমূহ, যার নীচে নদীসমূহ প্রবাহিত হয়, তারা সেখানে স্থায়ী হবে। আর এটা হল সৎকর্মপরায়ণদের প্রতিদান।
আয়াত:-৮৬
وَالَّذِينَ كَفَرُوا وَكَذَّبُوا بِـَٔايٰتِنَآ أُولٰٓئِكَ أَصْحٰبُ الْجَحِيمِ
আর যারা কুফরী করেছে এবং আমার আয়াতসমূহকে অস্বীকার করেছে, তারাই প্রজ্বলিত আগুনের অধিবাসী।
৮৩-৮৬ নং আয়াতের তাফসীর:
তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ বলেছেন:-
(وَإِذَا سَمِعُوْا مَآ أُنْزِلَ إِلَي الرَّسُوْلِ)
‘রাসূলের প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে তা যখন তারা শ্রবণ করে’মুসলিমদের প্রতি খ্রিস্টানদের সৌহার্দ্য, ঘনিষ্ঠতা ও বন্ধুত্বের এটি আরেকটি কারণ। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ওপর যে সত্য অবতীর্ণ হয়েছে তা সত্য জেনে তাদের চোখ দিয়ে অশ্র“ ঝরে এবং ঈমান আনে। তারা বলে:
(وَمَا لَنَا لَا نُؤْمِنُ بِاللّٰهِ وَمَا جَا۬ءَنَا مِنَ الْحَقِّ لا وَنَطْمَعُ أَنْ يُّدْخِلَنَا رَبُّنَا مَعَ الْقَوْمِ الصّٰلِحِيْنَ)
“আমাদের কী হল যে, আমরা ‘আল্লাহ এবং আমাদের নিকট যে সত্য এসেছে তার ওপর ঈমান আনব না অথচ আমরা প্রত্যাশা করি, আল্লাহ আমাদেরকে সৎকর্মপরায়ণদের অন্তর্ভুক্ত করবেন।’এগুলো হল অধিকাংশ খ্রিস্টানদের গুণ, কারণ তারা সত্য গ্রহণে হিংসা করে না যেমন হিংসা ও অহংকার করে থাকে ইয়াহূদীরা। অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَإِنَّ مِنْ أَهْلِ الْكِتٰبِ لَمَنْ يُّؤْمِنُ بِاللّٰهِ وَمَآ أُنْزِلَ إِلَيْكُمْ وَمَآ أُنْزِلَ إِلَيْهِمْ خَاشِعِيْنَ لِلّٰهِ)
“আর নিশ্চয়ই আহলে কিতাবের মধ্যে এরূপ লোকও রয়েছে যারা আল্লাহর প্রতি এবং তোমাদের প্রতি ও তাদের প্রতি যা নাযিল করা হয়েছে, সে বিষয়ে আল্লাহর ভয়ে বিশ্বাস স্থাপন করে।”(সূরা আলি-ইমরান ৩:১৯৯)
এদের ব্যাপারে আরো বলেন:
(اَلَّذِيْنَ اٰتَيْنٰهُمُ الْكِتٰبَ مِنْ قَبْلِه۪ هُمْ بِه۪ يُؤْمِنُوْنَ)
“তার পূর্বে আমি যাদেরকে কিতাব দিয়েছিলাম, তারা তাতে বিশ্বাস করে।”(সূরা কাসাস ২৮:৫২) মহান আল্লাহ তা‘আলা এসব সৎ ব্যক্তিদের জন্য প্রতিদানস্বরূপ তৈরি করে রেখেছেন জান্নাত। আর কাফিরদের জন্য রয়েছে জাহান্নাম।
সুতরাং ইসলাম ও মুসলিমদের প্রধান শত্র“ ইয়াহূদী ও মুশরিকদের ব্যাপারে সদা সতর্ক থাকা উচিত। কেননা ইয়াহূদীরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে হত্যা করার চক্রান্ত করেছে, মুসলিমদের ওপর নির্যাতন করেছে। বারংবার বিশ্বাস ঘাতকতা ও ষড়যন্ত্র করার অপরাধে ইসলামের দ্বিতীয় খলীফা উমার (রাঃ) তাদেরকে মদীনাহ থেকে বহিষ্কার করলেন। এরপর থেকে তারা ভবঘুরের মত বিশ্বের দ্বারে দ্বারে উদ্ভান্তের ন্যায় একটু নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য জনে জনে ঘুরে বেড়ায়। ইতিহাস খ্যাত বিশ্বাসঘাতক জাতি হওয়ায় কোথাও তাদের ঠাঁই হলনা। হিটলারের ধ্বংসযজ্ঞে পড়ে নিজেদের অস্তিত্ব যখন বিলীনের দ্বার প্রান্তে তখন দয়ার পরশ হয়ে ফিলিস্তীনের মুসলিমগণ তাদের নিরাপদ আশ্রয়ের ব্যবস্থা করেন। কিন্তু আজ সেই আশ্রয়দানকারীরাই ভিটে-মাটি হারিয়ে আপন দেশেই মুসাফির। রক্তের বন্যা বইছে পবিত্র নগরীতে। হায়, বিশ্বাসঘাতক জাতি!!! মুসলিমদের বোধদয় হবে কি?
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. মুসলিমদের এক নম্বর শত্র“ ইয়াহূদী ও অন্যান্য ধর্মালম্বী মুশরিক।
২. মুসলিমদের প্রতি সৌহার্দ্য ও ঈমান আনয়নের দিক দিয়ে ইসলামের নিকটবর্তী খ্রিস্টানগণ।
৩. ঈমানদার খ্রিস্টানদের একাধিক গুণাবলীর অন্যতম হচ্ছে মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর প্রতি ঈমান আনা।
৪. সৎ ও অসৎ ব্যক্তির পরকালীন ফলাফল জান্নাত ও জাহান্নাম।
৫. আল্লাহ তা‘আলার লা‘নতপ্রাপ্ত ও পৃথিবীর সবচেয়ে ঘৃণিত ইয়াহূদী জাতি থেকে সাবধান হতে হবে।
English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Al Mayadah
Verse:- 83-86
تَرَى أَعْيُنَهُمْ تَفِيضُ مِنَ الدَّمْعِ مِمَّا عَرَفُواْ مِنَ الْحَقِّ
You see their eyes overflowing with tears because of the truth they have recognized.
وَإِذَا سَمِعُواْ مَا أُنزِلَ إِلَى الرَّسُولِ تَرَى أَعْيُنَهُمْ تَفِيضُ مِنَ الدَّمْعِ مِمَّا عَرَفُواْ مِنَ الْحَقِّ
And when they listen to what has been sent down to the Messenger, you see their eyes overflowing with tears because of the truth they have recognized.
This refers to the good news that they have about the advent of Muhammad.
يَقُولُونَ رَبَّنَا امَنَّا فَاكْتُبْنَا مَعَ الشَّاهِدِينَ
They say:”Our Lord! We believe; so write us down among the witnesses.”
who testify to the truth and believe in it.
وَمَا لَنَا لَا نُوْمِنُ بِاللّهِ وَمَا جَاءنَا مِنَ الْحَقِّ وَنَطْمَعُ أَن يُدْخِلَنَا رَبَّنَا مَعَ الْقَوْمِ الصَّالِحِينَ
“And why should we not believe in Allah and in that which has come to us of the truth And We wish that our Lord will admit us (in Paradise) along with the righteous people.”
Such sect of Christians are those mentioned in Allah’s statement,
وَإِنَّ مِنْ أَهْلِ الْكِتَـبِ لَمَن يُوْمِنُ بِاللَّهِ وَمَأ أُنزِلَ إِلَيْكُمْ وَمَأ أُنزِلَ إِلَيْهِمْ خَـشِعِينَ للَّهِ
And there are, certainly, among the People of the Scripture, those who believe in Allah and in that which has been revealed to you, and in that which has been revealed to them, humbling themselves before Allah. (3:199)
and,
الَّذِينَ اتَيْنَاهُمُ الْكِتَابَ مِن قَبْلِهِ هُم بِهِ يُوْمِنُونَ
وَإِذَا يُتْلَى عَلَيْهِمْ قَالُوا امَنَّا بِهِ إِنَّهُ الْحَقُّ مِن رَّبِّنَا إِنَّا كُنَّا مِن قَبْلِهِ مُسْلِمِينَ
Those to whom We gave the Scripture before it, they believe in it (the Qur’an). And when it is recited to them, they say, “We believe in it. Verily, it is the truth from our Lord. Indeed even before it we were Muslims.” (28:52-53) until,
لَاا نَبْتَغِي الْجَاهِلِينَ
“We seek not the ignorant.” (28:55)
This is why Allah said here
فَأَثَابَهُمُ اللّهُ بِمَا قَالُواْ
So because of what they said, Allah awarded them…
rewarding them for embracing the faith and recognizing and believing in the truth.
جَنَّاتٍ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الَانْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا
Gardens under which rivers flow (in Paradise), they will abide therein forever.
and they will never be removed from it, for they will dwell and remain in it forever and ever,
وَذَلِكَ جَزَاء الْمُحْسِنِينَ
Such is the reward of good-doers.
who follow the truth and obey it wherever, whenever and with whomever they find it.
Allah then describes the condition of the miserable.
وَالَّذِينَ كَفَرُواْ وَكَذَّبُواْ بِأيَاتِنَا
But those who disbelieved and belied Our Ayat,
defied and opposed them,
أُوْلَـيِكَ أَصْحَابُ الْجَحِيمِ
they shall be the dwellers of the (Hell) Fire.
For they are the people of the Fire who will enter and reside in it (eternally).
তাফসীরে ইবনে কাসীর বলেছেন:-
৮৩-৮৬ নং আয়াতের তাফসীর:
আল্লাহ পাক বলছেন-যখন তারা রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর উপর অবতারিত অহী শ্রবণ করে তখন হে মুহাম্মাদ (সঃ)! তুমি তাদেরকে দেখতে পাও যে, তাদের চক্ষু অশ্রুসিক্ত হয়েছে। কেননা, তারা সেই ভবিষ্যত সুসংবাদ সম্পর্কে অবহিত হয়ে গেছে যা (তারা মুহাম্মাদ সঃ -এর প্রেরিতত্ব সম্পর্কীয় সংবাদ) তাদের কিতাব তাওরাত ও ইঞ্জীলে দেখেছিল। তাই তারা বলতে শুরু করে- হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা মুহাম্মাদ (সঃ)-এর উপর ঈমান এনেছি। সুতরাং আপনি আমাদের ঐ দলের অন্তর্ভুক্ত করুন, যারা সাক্ষ্য দান করেছে ও ঈমান এনেছে। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, (আরবী) দ্বারা হযরত মুহাম্মাদ (সঃ) ও তাঁর উম্মতকে বুঝানো হয়েছে, যারা তাদের নবী (সঃ)-এর জন্যে সাক্ষ্য দান করেছিলেন যে, নবী (সঃ) প্রচারের দায়িত্ব পালন করেছেন এবং অন্যান্য রাসূলদের জন্যেও সাক্ষ্য দিয়েছেন যে, তাঁরাও তাবলীগের দায়িত্ব পালন করেছেন। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) আরও বলেন যে, লোকদের সম্পর্কে বলা হয়েছে, যারা কৃষক শ্রেণীর লোক ছিলেন এবং হযরত জাফর ইবনে আবি তালিব (রাঃ)-এর সাথে আবিসিনিয়া হতে এসেছিলেন। রাসূলুল্লাহ (সঃ) যখন তাদেরকে কুরআন মাজীদ পাঠ করে শুনান তখন তারা ঈমান আনেন। ঐ সময় তাঁদের চোখে অশ্রু দেখা দেয়। রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাদেরকে বলেনঃ “যখন তোমরা স্বদেশে ফিরে যাবে তখন তোমাদের পূর্ব মাযহাবে ফিরে যাবে না তো?” তাঁরা উত্তরে বলেনঃ ‘আমরা আমাদের এ দ্বীন হতে কখনও ফিরে যাবো না। মহান আল্লাহ তাঁদের উক্তিকে এভাবে নকল করেছেন- (আরবী) অর্থাৎ “আমাদের এমন কি ওযর আছে যে, আমরা ঈমান আনবো না আল্লাহর প্রতি এবং সেই সত্যের প্রতি যা আমাদের কাছে এসেছে? অথচ আমরা এ আশা রাখবো যে, আমাদের প্রভু সৎ লোকদের সাথে আমাদেরকে শামিল করবেন।” ঐ লোকগুলো ছিলেন নাসারা যাদের সম্পর্কে আল্লাহ পাক বলেনঃ “আহলে কিতাবের মধ্যে এমন লোকও আছে যারা আল্লাহর উপর বিশ্বাস রাখে এবং বিশ্বাস রাখে ঐ কিতাবের উপর যা তোমাদের উপর অবতীর্ণ হয়েছে এবং যা তাদের উপর অবতীর্ণ করা হয়েছিল, আর আল্লাহর সামনে তারা বিনয় প্রকাশ করে।” অন্য জায়গায় তাদের সম্পর্কে আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ “যখন তাদের সামনে (কুরআন) পাঠ করা হয় তখন তারা বলে-আমরা এর উপর ঈমান এনেছি, এটা আমাদের প্রভুর পক্ষ থেকে সত্য, আমরা তো ইতিপূর্বেই মুসলমান ছিলাম।” এ জন্যেই আল্লাহ তাআলা এখানে বলেনঃ “এ স্বীকারোক্তির কারণে আল্লাহ তাদেরকে এমন জান্নাতসমূহ প্রদান করবেন যেগুলোর নিম্নদেশ দিয়ে স্রোতস্বিনীসমূহ প্রবাহিত হতে থাকবে, তারা তথায় চিরকাল অবস্থান করবে। এক মুহূর্তের জন্যেও তাদেরকে সেখান থেকে সরানো হবে না, সৎকর্মশীলদের প্রতিদান এটাই।” অতঃপর তিনি দুষ্ট লোকদের অবস্থা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেনঃ যারা কুফরী করলো এবং আমার আয়াতসমূহকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করলো, তারা জাহান্নামের অধিবাসী।
তাফসীরে আবুবকর যাকারিয়া বলেছেন:-
[১] আলোচ্য আয়াতসমূহে মুসলিমদের সাথে শক্রতা ও বন্ধুত্বের মাপকাঠিতে ঐসব আহলে কিতাবের কথা আলোচনা করা হয়েছে, যারা সত্যানুরাগ ও আল্লাহভীতির কারণে মুসলিমদের প্রতি হিংসা ও শক্রতা পোষণ করত না। কিন্তু ইয়াহুদীদের মধ্যে এ জাতীয় লোকের সংখ্যা ছিল একান্তই নগণ্য। উদাহরণতঃ আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম প্রমূখ। নাসারাদের মধ্যে তুলনামূলকভাবে এরূপ লোকের সংখ্যা ছিল বেশী। বিশেষতঃ মহানবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের আমলে আবিসিনিয়ার সম্রাট নাজ্জাসী এবং উচ্চ পদস্থ কর্মচারী ও জনগণের মধ্যে এরূপ লোকের সংখ্যা ছিল প্রচুর। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন জানতে পারলেন যে, আবিসিনিয়ার বাদশাহ নাজ্জাসী একজন ন্যায়পরায়ণ ব্যক্তি, তখন তিনি জাফর ইবন আবু তালেব, ইবন মাসউদ, উসমান ইবন মাযউনসহ একদল সাহাবাকে আবিসিনিয়ায় হিজরত করার অনুমতি দেন। তারা সেখানে সুখে-শাস্তিতেই বসবাস করছিল। মক্কার মুশরিকরা এ খবর পেয়ে আমর ইবন আসকে একটি প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিয়ে নাজ্জাসীর কাছে পাঠায়। তারা নাজ্জাসীকে অনুরোধ জানায় যে, এরা আহম্মক ধরণের কিছু লোক। এরা বাপ-দাদার দ্বীন ছেড়ে আমাদেরই একজন লোক যে নিজেকে নবী বলে দাবী করেছে, তার অনুসরণ করছে। আমরা তাদেরকে ফেরৎ নিতে এসেছি। নাজ্জাসী জাফর ইবন আবু তালেবকে জিজ্ঞাসা করলেনঃ ঈসা এবং তার মা সম্পর্কে তোমাদের অভিমত কি? জবাবে তিনি বললেনঃ ঈসা আল্লাহর বান্দা এবং তাঁর এমন কালেমা যা তিনি তাঁর পক্ষ থেকে মারইয়ামের কাছে অর্পণ করেছেন এবং তাঁর পক্ষ থেকে একটি রূহ। একথা শুনে নাজ্জাসী একটি কাঠি উঠিয়ে বললেনঃ তোমরা যা বলেছ, তার থেকে ঈসা এ কাঠি পরিমাণও বেশী নন। তারপর নাজ্জাসী তাদেরকে বললেনঃ তোমাদের উপর যা নাযিল করা হয়েছে, তা থেকে কি আমাকে কিছু শুনাতে পার? তারা বললঃ হ্যাঁ। নাজ্জাসী বললেনঃ পড়। তখন জাফর ইবন আবু তালেব কুরআনের আয়াত পড়ে শুনালে নাজ্জাসীসহ তার দরবারে সে সমস্ত নাসারা আলেমগণ ছিলেন তারা সবাই কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। [সহীহ সনদসহ তাবারী, বাগভী]
তাফসীরে আহসানুল বায়ান বলেছেন:-
[১] হাবশা নামক স্থানে, যেখানে মুসলিমগণ মক্কী জীবনে দুইবার হিজরত করেছিলেন, যেখানে আসহামা নাজাশীর শাসন ছিল। এটি খ্রিষ্টান-রাষ্ট্র বলে পরিচিত ছিল। এই আয়াত হাবশায় অবস্থানরত খ্রিষ্টানদের শানেই অবতীর্ণ হয়। যেমন হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে, নবী করীম (সাঃ) আমর বিন উমায়ইয়াহ যামরী (রাঃ)-কে লিখিত পত্র সহ নাজাশীর নিকট প্রেরণ করেন এবং তিনি পত্র বহন করে নিয়ে গিয়ে নাজাশীকে পাঠ করে শুনান। নাজাশী উক্ত পত্র শোনার পর হাবশায় অবস্থানরত মুহাজিরগণ ও জা’ফর ইবনে আবু তালেব (রাঃ)-কে ডেকে পাঠান। আর সাথে সাথে তাঁর স্বধর্মীয় আলেম, আবেদ ও পন্ডিতগণকেও একত্রিত করেন। অতঃপর জা’ফর (রাঃ)-কে কুরআন পাঠ করার নির্দেশ দেন এবং তিনি সূরা মারয়্যাম পাঠ করেন; যাতে ঈসা (আঃ)-এর অলৌকিক জন্ম-বৃত্তান্ত ও আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রসূল হওয়ার কথা উল্লেখ হয়েছে। তারা সকলেই তেলাওয়াত শুনে বড় প্রভাবিত হন। তাঁদের চক্ষু দিয়ে অশ্রুধারা প্রবাহিত হয় এবং তাঁরা সকলেই ঈমান আনয়ন করেন। আবার কেউ বলেন, নাজাশী তাঁর কিছু সংখ্যক উলামাকে রসূল (সাঃ)-এর নিকট প্রেরণ করেন। যখন রসূল (সাঃ) তাঁদের সামনে কুরআন পাঠ করে শুনান, তখন তাঁদের চক্ষু দিয়ে অনায়াসে অশ্রুধারা প্রবাহিত হয় এবং তাঁরা সকলেই ঈমান আনয়ন করেন। (ফাতহুল ক্বাদীর) কুরআন শুনে যেভাবে তাঁরা প্রভাবিত হয়েছিলেন, উল্লিখিত আয়াতে তার চিত্রাঙ্কন করা হয়েছে। এই শ্রেণীর খ্রিষ্টানদের ঈমান আনয়নের কথা কুরআনের বেশ কিছু জায়গায় উল্লিখিত রয়েছে। যেমন আল্লাহ বলেন,{وَإِنَّ مِنْ أَهْلِ الْكِتَابِ لَمَن يُؤْمِنُ بِاللّهِ وَمَا أُنزِلَ إِلَيْكُمْ وَمَآ أُنزِلَ إِلَيْهِمْ خَاشِعِينَ لِلّهِ} অর্থাৎ, নিশ্চয় গ্রন্থধারীদের মধ্যে এমন অনেকে রয়েছে যারা আল্লাহতে, তোমাদের প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে এবং তাদের প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে, তাতে আল্লাহর নিকট বিনয়াবনত হয়ে বিশ্বাস স্থাপন করে—। (সূরা আলে ইমরান ৩:১৯৯) আর হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে যে, যখন নবী করীম (সাঃ) নাজাশী বাদশাহর মৃত্যুর সংবাদ পেলেন, তখন তিনি সাহাবা কেরাম (রাঃ)-কে বললেন, হাবশাতে তোমাদের ভাই নাজাশীর ইন্তেকাল হয়েছে, তাঁর জানাযার নামায আদায় কর। সুতরাং নবী করীম (সাঃ) মুসাল্লায় তাঁর গায়েবী জানাযার নামায আদায় করলেন। (বুখারী, মুসলিম) অন্য এক হাদীসে আহলে কিতাবদের ব্যাপারে বর্ণিত হয়েছে যে, নবী (সাঃ)-এর নবুঅতের প্রতি যে ঈমান আনয়ন করবে, তাকে দ্বিগুণ সওয়াবের অধিকারী করা হবে। (বুখারীঃ ইলম অধ্যায় ও নিকাহ অধ্যায়)