(Book# 114/٢١١)-৪১৩ www.motaher21.net يَا أَيُّهَا الَّذِينَ امَنُواْ لَا تُحَرِّمُواْ طَيِّبَاتِ مَا أَحَلَّ اللّهُ لَكُمْ হে মুমিনগণ, আল্লাহ যে সব পবিত্র বস্তু তোমাদের জন্য হালাল করেছেন, তোমরা তা হারাম করো না, O you who believe! Make not unlawful the good things which Allah has made lawful to you, সুরা: আল্ মায়িদাহ আয়াত নং :-৮৭-৮৮

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ

(Book# 114/٢١١)-৪১৩
www.motaher21.net

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ امَنُواْ لَا تُحَرِّمُواْ طَيِّبَاتِ مَا أَحَلَّ اللّهُ لَكُمْ

হে মুমিনগণ, আল্লাহ যে সব পবিত্র বস্তু তোমাদের জন্য হালাল করেছেন, তোমরা তা হারাম করো না,

O you who believe! Make not unlawful the good things which Allah has made lawful to you,

সুরা: আল্ মায়িদাহ
আয়াত নং :-৮৭-৮৮

يٰٓأَيُّهَا الَّذِينَ ءَامَنُوا لَا تُحَرِّمُوا طَيِّبٰتِ مَآ أَحَلَّ اللَّهُ لَكُمْ وَلَا تَعْتَدُوٓا ۚ إِنَّ اللَّهَ لَا يُحِبُّ الْمُعْتَدِينَ
হে মুমিনগণ, আল্লাহ যে সব পবিত্র বস্তু তোমাদের জন্য হালাল করেছেন, তোমরা তা হারাম করো না এবং তোমরা সীমালঙ্ঘন করো না। নিশ্চয় আল্লাহ সীমালঙ্ঘনকারীদের পছন্দ করেন না।
আয়াত:-৮৮

وَكُلُوا مِمَّا رَزَقَكُمُ اللَّهُ حَلٰلًا طَيِّبًا ۚ وَاتَّقُوا اللَّهَ الَّذِىٓ أَنتُم بِهِۦ مُؤْمِنُونَ

আর আহার কর আল্লাহ যা তোমাদের রিয্ক দিয়েছেন তা থেকে হালাল, পবিত্র বস্তু। আর তাকওয়া অবলম্বন কর আল্লাহর যার প্রতি তোমরা মুমিন।

৮৭-৮৮ নং আয়াতের তাফসীর:

তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ বলেছেন:-

শানে নুযূল:

ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, জনৈক ব্যক্তি নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট আগমন করল। অতঃপর বলল: হে আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমি যখনই গোশত জাতীয় খাবার গ্রহণ করি তখনই আমি কামোত্তেজনা অনুভব করি। তাই গোশত খাওয়া নিজের জন্য হারাম করে নিয়েছি। তখন

(أَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَا تُحَرِّمُوْ طَيِّبٰتِ…)

আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। (সহীহ তিরযিমী হা: ৩০৫৪)

কোন ব্যক্তি কোন সমস্যার কারণে হালাল বস্তু খেতে না পারলে তা বর্জন করে চলবে বটে তবে নিজের ওপর হারাম মনে করবে না। কারণ বর্জন করা আর হারাম করা এক নয়। যেমন নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যব নামক প্রাণী খেতে পারতেন না। ফলে তিনি নিজের জন্য হারাম করে নেননি বরং কেউ খেলে নিষেধও করতেন না। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যে দস্তরখানা সামনে নিয়ে বসেছিলেন সে দস্তরখানা থেকে খালিদ বিন ওয়ালিদ যব প্রাণী খাচ্ছিলেন।

আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেছেন যে, আমরা নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে যুদ্ধে বের হতাম, তখন আমাদের সঙ্গে স্ত্রীগণ থাকত না, তাই আমরা বলতাম, আমরা কি খাসি হয়ে যাব না? তিনি আমাদেরকে এ থেকে নিষেধ করলেন এবং কাপড়ের বিনিময়ে হলেও মহিলাদেরকে সাময়িক সময়ের জন্য বিয়ে করার অর্থাৎ নিকাহে মুতার অনুমতি দিলেন এবং আয়াতটি পাঠ করলেন।

(প্রকাশ থাকে যে, মুতা বিবাহ হচ্ছে সাময়িক বা কন্ট্রাক্ট বিবাহ। অর্থাৎ নির্দিষ্ট অর্থ-সম্পদের বিনিময়ে নির্ধারিত মেয়াদে বিয়ে। মেয়াদ শেষ হলে বিবাহ ভেঙ্গে যাবে। এ জাতীয় বিয়ে ইসলামের প্রথম দিকে জায়েয ছিল। পরবর্তীতে খায়বারের যুদ্ধের সময় তা চিরতরে হারাম ঘোষণা করা হয়)। (সহীহ বুখারী হা: ৪৬১৫, সহীহ মুসলিম হা: ১৪০৪)

কোন ব্যক্তি নিজের জন্য হালাল বস্তু কসম ছাড়া (অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলার কসম এমনটি না বলে) হারাম করে নিলে হারাম বলে গণ্য হবে না। কেবল স্ত্রী ব্যতীত। এ ব্যাপারে ওলামাদের এটাই অভিমত। আর কসম করলে (অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলার কসম এটা আমার ওপর হারাম এমন বললে) ইমাম ইবনু কাসীর (রহঃ) বলেন, তাকে কসমের কাফফারা দিতে হবে।

আল্লামা শাওকানী (রহঃ) বলেন, সহীহ হাদীস এটাই প্রমাণ করে যে, তাকে কাফফারা দিতে হবে না। এটাই অধিকাংশ আলেমের অভিমত।

এ আয়াত দ্বারা অধিকাংশ আলেম বলেন: এ আয়াত প্রতিবাদ করছে ঐ সকল ব্যক্তিদের যারা বৈরাগ্যবাদে অতিরঞ্জিত করে। সুতরাং কোন মুসলিম ব্যক্তির জন্য উচিত হবে না, আল্লাহ তা‘আলা যেসকল খাবার, পোশাক ও বিবাহ বৈধ করে দিয়েছেন তা হারাম করে নেয়া। তিনজন ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বাড়িতে এসে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ইবাদত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করার পর একজন বলল: আমি যতদিন জীবিত থাকব ততদিন সওম রাখব কখনো সওম ছাড়ব না। আরেক জন বলল: আমি রাতে ঘুমাব না, সারা রাত ইবাদত করব, আরেকজন বলল: আমি জীবনে বিবাহ করব না। তাদের কথা জানার পর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: জেন রেখ! আমি তোমাদের চেয়ে আল্লাহ তা‘আলাকে বেশি ভয় করি, আমি দিনের বেলা সওম রাখি আবার সওম ছাড়ি, রাতে সালাত পড়ি আবার ঘুমাই, আমি বিবাহও করেছি। সুতরাং যে ব্যক্তি আমার সুন্নাত বর্জন করবে সে আমাদের অন্তুর্ভুক্ত নয়। (সহীহ বুখারী হা: ৫০৬৩) তাই ইসলামে নিজের চিন্তামত কিছু করার সুযোগ নেই।

আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:

১. আল্লাহ তা‘আলা যা হালাল করেছেন তা হারাম করে নেয়া হারাম।
২. হালাল রুজি খাওয়া ওয়াজিব এবং হারাম বর্জন করাও ওয়াজিব।

English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Al Mayadah
Verse:- 87 -88

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ امَنُواْ لَا تُحَرِّمُواْ طَيِّبَاتِ مَا أَحَلَّ اللّهُ لَكُمْ

O you who believe! Make not unlawful the good things which Allah has made lawful to you,

There is No Monasticism in Islam

Allah says;

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ امَنُواْ لَا تُحَرِّمُواْ طَيِّبَاتِ مَا أَحَلَّ اللّهُ لَكُمْ

O you who believe! Make not unlawful the good things which Allah has made lawful to you,

Ali bin Abi Talhah said that Ibn Abbas said,

“This Ayah was revealed about some of the Companions of the Prophet who said, `We should cut off our male organs, abandon the desires of this life and travel in the land, just as the Ruhban (monks) do.’ When the Prophet heard of this statement, he summoned them and asked them if they made this statement and they answered `Yes.’

The Prophet said,

لكِنِّي أَصُومُ وَأُفْطِرُ وَأُصَلِّي وَأَنَامُ وَأَنْكِحُ النِّسَاءَ فَمَنْ أَخَذَ بِسُنَّتِي فَهُوَ مِنِّي وَمَنْ لَمْ يَأْخُذْ بِسُنَّتِي فَلَيْسَ مِنِّي

I fast and break my fast, pray and sleep, and marry women. Whoever follows my Sunnah is of me, and whoever abandons my Sunnah is not of me.”

Ibn Abi Hatim also collected this Hadith.

Ibn Marduwyah recorded that Al-Awfi said that Ibn Abbas narrated a similar Hadith.

It is recorded in the Two Sahihs that Aishah said that;

some of the Companions asked the wives of the Prophet about the acts of worship that he performed in private.

One of them said, “I will not eat meat,” another said, “I will not marry women,” while the third said, “I will not sleep on the bed.”

When the Prophet heard this statement, he said,

مَا بَالُ أَقْوَامٍ يَقُولُ أَحَدُهُمْ كَذَا وَكَذَا لكِنِّي أَصُومُ وَأُفْطِرُ وَأَنَامُ وَأَقُومُ وَاكُلُ اللَّحْمَ وَأَتَزَوَّجُ النِّسَاءَ فَمَنْ رَغِبَ عَنْ سُنَّتِي فَلَيْسَ مِنِّي

What is the matter with some people who said such and such I fast and break the fast, sleep and wake to stand to pray, eat meat, and marry women. He who is not pleased with my Sunnah is not of me.

Allah’s statement,

وَلَا تَعْتَدُواْ

and transgress not,

means, do not exaggerate and make it hard for yourselves by prohibiting the permissible things. Do not transgress the limits by excessively indulging in the permissible matters; only use of it what satisfies your need; and do not fall into extravagance.

Allah said in other Ayat,

وكُلُواْ وَاشْرَبُواْ وَلَا تُسْرِفُواْ

And eat and drink but waste not by extravagance. (7:31)

and,

وَالَّذِينَ إِذَا أَنفَقُواْ لَمْ يُسْرِفُواْ وَلَمْ يَقْتُرُواْ وَكَانَ بَيْنَ ذَلِكَ قَوَاماً

And those, who, when they spend, are neither extravagant nor miserly, but hold a medium (way) between those (extremes). (25:67)

So Allah legislated a medium way between those who are extreme and those who fall into shortcomings, and it does not allow excessive application, nor lack of application.

This is why Allah said here,

لَا تُحَرِّمُواْ طَيِّبَاتِ مَا أَحَلَّ اللّهُ لَكُمْ

وَلَا تَعْتَدُواْ

إِنَّ اللّهَ لَا يُحِبُّ الْمُعْتَدِينَ

Make not unlawful the good things which Allah has made lawful to you, and transgress not. Verily, Allah does not like the transgressors.

then He said

وَكُلُواْ مِمَّا رَزَقَكُمُ اللّهُ حَلَلاً طَيِّبًا

And eat of the things which Allah has provided for you, lawful and good,

eat of those items that are pure and lawful for you,

وَاتَّقُواْ اللّهَ

and have Taqwa of Allah,

in all your affairs, obey Him and seek His pleasure, all the while staying away from defiance and disobedience of Allah,

وَاتَّقُواْ اللّهَ الَّذِيَ أَنتُم بِهِ مُوْمِنُونَ

and have Taqwa of Allah in Whom you believe.

তাফসীরে ইবনে ‌কাসীর বলেছেন:-
৮৭-৮৮ নং আয়াতের তাফসীর:

হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, এই আয়াতটি নবী (সঃ)-এর সাহাবীদের একটি দলের ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়। তারা বলেছিলেন‘আমরা আমাদের পুংলিঙ্গ কর্তন করবো এবং দুনিয়ার কাম, লোভ-লালসা পরিত্যাগ করবো।’ নবী (সঃ)-এর কাছে এ সংবাদ পৌছলে তিনি তাদেরকে ডেকে পাঠান এবং তাদেরকে এই সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। তারা বলেনঃ হ্যা, আমরা এরূপই সংকল্প করেছি।’ তখন নবী (সঃ) বলেনঃ “কিন্তু জেনে রেখো যে, আমি তো রোযাও রাখি এবং (কোন কোন সময়) নাও রাখি, রাত্রে নামাযও পড়ি এবং নিদ্রাও যাই। আমি স্ত্রীদের সাথে বিবাহসূত্রে আবদ্ধও হই। সুতরাং যে ব্যক্তি আমার নীতি গ্রহণ করে সে আমারই অন্তর্ভুক্ত এবং যে ব্যক্তি আমার নীতি গ্রহণ করে না সে আমার অন্তর্ভুক্ত নয়।” (এ হাদীসটি ইবনে আবি হাতিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন এবং ইবনে মিরদুওয়াইও বর্ণনা করেছেন)

সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে হযরত আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর কয়েকজন সাহাবী তার পত্নীদেরকে তার গোপনীয় আমল সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন! তখন (সম্ভবতঃ তার রাত দিনের আমল সম্পর্কে অবহিত হয়ে) তাঁদের মধ্যে কোন একজন বলেনঃ “আমি এখন থেকে আর কখনও গোশত খাবো না। আর একজন বলেনঃ “আমি কখনও স্ত্রীলোকদের সাথে বিবাহিত হবো না।’ অন্য একজন বললেনঃ আমি কখনও বিছানায় শয়ন করবো। না (বরং মাটিতে শয়ন করববা)।” এসব কথা নবী (সঃ)-এর কানে পৌঁছলে তিনি বলেনঃ “ঐ লোকদের কি হয়েছে যে, তাদের কেউ একথা বলে এবং ও কথা বলে? কিন্তু আমি তো রোযাও রাখি এবং কোন কোন সময় নাও রাখি, আমি নিদ্রাও যাই এবং নামাযও পড়ি, আমি গোশতও খাই এবং নারীদেরকে বিয়েও করি। সুতরাং যে ব্যক্তি আমার নীতি থেকে সরে পড়ে সে আমার অন্তর্ভুক্ত নয়।”

হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, একটি লোক নবী (সঃ)-এর নিকট এসে বলেঃ হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আমি যখন গোশত ভক্ষণ করি তখন স্ত্রীলোকদের প্রতি আমার কামভাব খুবই বৃদ্ধি পায়। এ জন্যে আমি নিজের উপর গোশত হারাম করে ফেলেছি। তখন ‘হে মুমিনগণ! আল্লাহ তোমাদের জন্যে যে পবিত্র জিনিসগুলো হালাল করেছেন সেগুলো তোমরা নিজেদের জন্যে হারাম করো না’ -এ আয়াত অবতীর্ণ হয়। হযরত সুফইয়ান সাওরী (রঃ) হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেনঃ আমরা এক যুদ্ধে দীর্ঘদিন পর্যন্ত নবী (সঃ)-এর সাথে অবস্থান করি এবং সে সময় আমাদের সাথে স্ত্রীলোক ছিল না। তখন আমরা তাকে জিজ্ঞেস করিঃ আমরা কি খাসী হবো না (অর্থাৎ আমাদের অণ্ডকোষ কর্তন করবো না)? তিনি তখন আমাদেরকে এটা করতে নিষেধ করেন এবং আম নির্দিষ্ট সময়ের জন্যে কাপড়ের বিনিময়ে কোন স্ত্রীলোককে বিয়ে করার অনুমতি প্রদান করেন। অতঃপর হযরত আবদুল্লাহ (রাঃ) (আরবী) -এ আয়াতটি পাঠ করেন। কিন্তু এটা নিকাহে মুআ হারাম হওয়ার পূর্বের ঘটনা। আল্লাহ তা’আলাই সবচেয়ে ভাল জানেন।

হযরত মাসরূক (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমরা (একদা) হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ)-এর নিকট হাযির ছিলাম, এমন সময় (রান্নাকৃত) পশুর স্তনের গোশত নিয়ে আসা হলো। তখন (আমরা সবাই তা খেতে শুরু করলাম, কিন্তু একটি লোক মজলিস থেকে সরে পড়লো। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) তাকে বললেনঃ কাছে এসো (এবং খাওয়াতে অংশগ্রহণ কর)। সে তখন বললোঃ “আমি তো এটা না খাওয়ার শপথ গ্রহণ করেছি। তখন তিনি বললেনঃ তুমি এসে এটা খেয়ে নাও এবং শপথ ভেঙ্গে দেয়ার কাফফারা আদায় কর। অতঃপর তিনি এ আয়াতটি পাঠ করলেন।

ইমাম শাফিঈ (রঃ) প্রমুখ আলেমদের মাযহাব এই যে, যে ব্যক্তি নিজের উপর কোন খাদ্য অথবা স্ত্রীদের ছাড়া অন্য কোন জিনিস হারাম করে নেয় তা তার উপর হারাম হয়ে যায় না এবং তার উপর কোন কাফফারাও নেই। কেননা, আল্লাহ পাক বলেছেন- হে ঈমানদারগণ! তোমরা তোমাদের উপর পবিত্র জিনিসগুলো হারাম করো না, যেগুলো তিনি তোমাদের জন্যে হালাল করেছেন। এ কারণেই যে ব্যক্তি নিজের উপর গোশত ভক্ষণ হারাম করে নিয়েছিল তাকে রাসূলুল্লাহ (সঃ) কাফফারা আদায় করার নির্দেশ দেননি। কিন্তু আহমাদ ইবনে হাম্বল (রঃ) প্রমুখ ইমামগণ বলেন যে, যে ব্যক্তি নিজের উপর কোন খাদ্য বা পোশাক অথবা অন্য কোন জিনিস হারাম করে নেয়, তার উপর সেই কসম ভঙ্গের কাফফারা ওয়াজিব। কেননা, যখন কোন লোক নিজের উপর কোন জিনিস পরিত্যাগ করা অপরিহার্য করে নেয়, তখন কসমের কাফফারার মতই নিজের উপর শুধু হারাম করে নেয়ার ফলে ও অপরিহার্য না হওয়া জিনিসকে অপরিহার্য করে নেয়ার প্রতিশোধ হিসেবে তাকে জবাবদিহি করা উচিত এবং এটা কাফফারার মাধ্যমেই সম্ভব। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) এরূপ ফতওয়া দিয়েছেন। তিনি বলেন যে, আল্লাহ পাকের কালাম দ্বারাও এটা সাব্যস্ত হচ্ছে। ইরশাদ হচ্ছে (আরবী) অর্থাৎ “হে নবী! আল্লাহ আপনার জন্য যা হালাল করেছেস, আপনি আপনার স্ত্রীদেরকে খুশী করার জন্যে তা নিজের জন্যে হারাম করছেন কেন? আল্লাহ ক্ষমাশীল করুণাময়। (৬৬:১) এখানে আল্লাহ তা’আলা উল্লিখিত আয়াত বর্ণনা করার পর কসমের কাফফারার বর্ণনা দিলেন। এর দ্বারা এটা সাব্যস্ত হচ্ছে যে, কসমের উল্লেখ না থাকলেও যদি কেউ নিজের উপর কোন জিনিস হারাম করে নেয় তবে কসমের কাফফারার মতই তার উপর কাফফারা ওয়াজিব হবে। আল্লাহ তাআলাই সবচেয়ে ভাল জানেন।

ইবনে জারীর (রঃ) বলেন যে, কয়েকজন সাহাবী, যেমন হযরত উসমান ইবনে মাউন (রাঃ) এবং আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) দুনিয়া পরিত্যাগ করা, পুংলিঙ্গ কর্তন করা এবং চট পরিধান করার ইচ্ছা পোষণ করেন। তখন এ আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। ইবনে জুরাইহ্ ইকরামা (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন যে, হযরত উসমান ইবনে মাযউন (রাঃ), আলী ইবনে আবি তালিব (রাঃ), ইবনে মাসউদ (রাঃ), মিকদাদ ইবনে আসওয়াদ (রাঃ), আবু হুযাইফা (রাঃ)-এর ক্রীতদাস সালিম (রাঃ) প্রমুখ সাহাবীগণ সংসার ত্যাগের ইচ্ছে করে বাড়ীর মধ্যে বসে পড়লেন, স্ত্রীদের সংসর্গ ত্যাগ করলেন, চট পরিধান করলেন এবং ভাল ভাল খাদ্য ও পোশাক নিজেদের উপর হারাম করে দিলেন। তারা বানী ইসরাঈলের সন্ন্যাসীদের মত জীবন যাপন করতে শুরু করলেন এবং খাসী হয়ে যাওয়ার সংকল্প করলেন। এ ঐক্যমতে তারা পৌঁছলেন যে, পর্যায়ক্রমে সারারাত সালাত আদায় করবেন এবং সারাদিন রোযা রাখবেন। তখন এ আয়াত অবতীর্ণ হল এবং তাদেরকে বলা হল ও আল্লাহর পবিত্র ও হালাল বস্তুগুলোকে নিজেদের উপর হারাম করে নিয়ো না ও সীমা অতিক্রম করনা, আমি এসব লোককে কখনই পছন্দ করি না। এগুলো মুসলিমদের নীতি নয় যে, তোমরা স্ত্রীদের থেকে পৃথক থাকবে, ভাল খাবার, পানীয় ও পোশাক পরিত্যাগ করবে, সদা সারারাত ধরে সালাত আদায় করবে ও সারাদিন রোযা রাখবে এবং খাসী হয়ে যাবে, অর্থাৎ পুংলিঙ্গ কর্তন করবে। এসব নীতি সম্পূর্ণ ভুল। অতঃপর যখন তাদের ব্যাপারে এ আয়াত অবতীর্ণ হল তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাঁদের কাছে লোক পাঠিয়ে তাদেরকে জানিয়ে দিলেন“তোমাদের উপর তোমাদের নফসের হক রয়েছে এবং তোমাদের চক্ষুর হক রয়েছে। তোমরা রোযা রাখবে ও (মাঝে মাঝে) রোযা ছেড়েও দিবে, (রাতে নফল) সালাত আদায় করবে এবং নিদ্রাও যাবে। আর জেনে রাখবে যে, যে ব্যক্তি আমার সুন্নাত পরিত্যাগ করবে সে আমার অন্তর্ভুক্ত নয়।” তখন তারা বললেন :হে আল্লাহ! আপনি আমাদেরকে এ সংকল্প হতে রক্ষা করুন এবং আপনার অবতারিত অহী অনুযায়ী চলার তাওফীক দিন।

(আরবী) -এর অর্থ এটাও হতে পারে-তোমরা হালাল বস্তুকে নিজেদের উপর হারাম করে দিয়ে নফসের উপর সংকীর্ণতা আনয়ন করো না। আবার এও অর্থ হতে পারে-তোমরা হালালকে হারাম বানিয়ে নিয়ে না এবং হালাল দ্বারা উপকার লাভ করতে গিয়ে সীমা অতিক্রম করো না। হালালকেও প্রয়োজন পরিমাণই গ্রহণ কর, প্রয়োজনের অতিরিক্ত গ্রহণ করো না। (আরবী) অর্থাৎ “তোমরা খাও, পান কর, কিন্তু অপব্যয় করো না।”(৭:৩১) অন্য জায়গায় আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ “মুমিন ওরাই যে, যখন তারা খরচ করে তখন তারা অপব্যয় করে না এবং কার্পণ্যও করে না, বরং তাদের খরচ করণ এর মাঝামাঝি পন্থায় হয়ে থাকে।” আল্লাহ তা’আলা না ‘ইফরাত’ বা বাহুল্যের অনুমতি দিয়েছেন, না তাফরীত বা অত্যল্পতার অনুমতি দিয়েছেন। এ জন্যেই তিনি বলেছেন- (আরবী) অর্থাৎ তোমরা সীমা অতিক্রম করো না।

এরপর আল্লাহ পাক বলেনঃ “তোমরা সর্বাবস্থায় হালাল ও পবিত্র জিনিস ভক্ষণ কর এবং সর্বকাজে আল্লাহকেই ভয় কর। তাঁর মর্জির অনুসরণ কর এবং বিরোধিতা ও অবাধ্যতা থেকে বিরত থাক।

তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-

টিকা:১০৫) সীমালংঘন করার অর্থ অত্যন্ত ব্যাপক। হালালকে হারাম করা এবং আল্লাহর নির্ধারিত পাক-পবিত্র জিনিসগুলো থেকে এমনভাবে দূরে সরে থাকা যেন সেগুলো নাপাক, এটাও এক ধরনের বাড়াবাড়ি। তারপর পাক পবিত্র জিনিসগুলো অযথা ও অপ্রয়োজনে ব্যয় করা, অপচয় ও অপব্যয় করা এবং প্রয়োজনের তুলনায় বেশী ও প্রচুর পরিমাণে ব্যয় করাও এক ধরনের বাড়াবাড়ি। আবার হালালের সীমা পেরিয়ে হারামের সীমানায় প্রবেশ করাও বাড়াবাড়ি। এ তিনটি কাজই আল্লাহর কাছে অপছন্দনীয়।

তাফসীরে আবুবকর ‌যাকারিয়া‌ বলেছেন:-

[১] আনাস ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেনঃ তিনজন লোক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রীদের ঘরে এসে তার ইবাদাত সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করল। তাদেরকে তা জানানো হলে তারা সেসবকে অল্প মনে করল এবং বলল, আমরা কোথায় আর রাসূল কোথায়? তার পূর্বাপর সমস্ত গোনাহ ক্ষমা করে দেয়া হয়েছে। তাদের মধ্য থেকে একজন বলল, আমি সারা রাত সালাত আদায় করব। অন্যজন বলল, আমি সারা বছর সিয়াম পালন করব । অপরজন বলল, আমি মহিলাদের সংস্পর্শ থেকে দূরে থাকব এবং বিয়েই করব না। এমন সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এসে বললেন, ‘তোমরা এসব কথা বলেছ? জেনে রাখ, আল্লাহর শপথ! আমি তোমাদের সবার চাইতে আল্লাহকে বেশী ভয় করি এবং বেশী তাকওয়ারও অধিকারী। কিন্তু আমি সিয়াম পালন করি, সিয়াম থেকে বিরতও থাকি। সালাত আদায় করি আবার নিদ্ৰাও যাই এবং মেয়েদের বিয়েও করি। যে ব্যক্তি আমার সুন্নাত থেকে বিমুখ হবে সে আমার দলভুক্ত নয়। [বুখারীঃ ৫০৬৩]

অপর বর্ণনায় এসেছে, আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমরা যুদ্ধে যেতাম, আমাদের সাথে আমাদের স্ত্রীরা থাকত না। তখন আমরা পরস্পর বলাবলি করতে লাগলাম যে, আমরা ‘খাসি’ হয়ে যাই না কেন? তখন আমাদেরকে এ থেকে নিষেধ করা হয়েছিল। তারপর আবদুল্লাহ এ আয়াত পাঠ করলেন। [বুখারী ৪৬১৫]

[২] ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তার কাছে একবার খাবার নিয়ে আসা হলো। একলোক খাবার দেখে একদিকে আলাদা হয়ে গেল এবং বলল, আমি এটা খাওয়া হারাম করছি। তখন আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ বললেন, কাছে আস এবং খাও। আর তোমার শপথের কাফফারা দাও। তারপর তিনি এ আয়াত তেলাওয়াত করলেন। [মুস্তাদরাকে হাকিম: ২/৩১৩,৩১৪; ফাতহুল বারী: ১১/৫৭৫]

তাফসীরে আহসানুল বায়ান বলেছেন:-
[১] হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে যে, এক ব্যক্তি রসূল (সাঃ)-এর নিকট উপস্থিত হয়ে বলল, ‘হে আল্লাহর রসূল! আমি যখনই গোশত ভক্ষণ করি, তখনই আমার মধ্যে কামোত্তেজনা অনুভব করি। তাই নিজের জন্য গোশতকে হারাম করে নিয়েছি।’ যার ফলে এই আয়াত অবতীর্ণ হয়। (সহীহ তিরমিযী, আলবানী ৩/৪৬) অনুরূপভাবে অবতীর্ণের এই কারণ ব্যতীত বিভিন্ন বর্ণনা থেকে প্রতীয়মান হয় যে, কিছু সংখ্যক সাহাবা সংসার ত্যাগ এবং ইবাদতের উদ্দেশ্যে কিছু বৈধ জিনিস হতে (যেমন বিবাহ করা হতে, ঘুমিয়ে রাত্রিযাপন করা হতে, দিনে পানাহার করা হতে) নিজেদেরকে দূরে রাখার চেষ্টা করেন। যখন নবী করীম (সাঃ) এ ব্যাপারে অবগত হলেন, তখন তাঁদেরকে এ কাজ থেকে বিরত থাকার নির্দেশ প্রদান করলেন। এমন কি উসমান বিন মাযঊন (রাঃ) তিনিও নিজের স্ত্রী থেকে দূরে থাকতেন। অতঃপর তাঁর স্ত্রীর অভিযোগের ভিত্তিতে তাঁকেও তিনি তা করতে নিষেধ করলেন। (হাদীসগ্রন্থসমূহ দ্রষ্টব্য) সুতরাং এই আয়াত ও হাদীস দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, আল্লাহ কর্তৃক হালাল যে কোন বস্তুকে নিজের উপর হারাম করে নেওয়া অথবা তা এমনিই বর্জন করা বৈধ নয়। চাহে তা খাদ্যদ্রব্য হোক অথবা পানীয় দ্রব্য, পোষাক-পরিচ্ছদ হোক অথবা আনন্দদায়ক কোন বস্তু, বৈধ কামনা-বাসনা হোক বা অন্য কিছু।

মাসআলাঃ কোন ব্যক্তি যদি নিজের জন্য কোন হালাল জিনিসকে (কসম ছাড়া) হারাম করে নেয়, তবে তা হারাম বলে গণ্য হবে না; একমাত্র স্ত্রী ব্যতীত। অবশ্য এ ব্যাপারে উলামাদের অভিমত হচ্ছে, তাকে কসমের কাফফারা দিতে হবে। আবার কেউ কেউ বলেন, কোন কিছুই লাগবে না। ইমাম শাওকানী বলেন, সহীহ হাদীস দ্বারা এই কথারই প্রমাণ হয় যে, নবী করীম (সাঃ) কোন ব্যক্তিকে এ ধরনের হারাম করাতে কসমের কাফফারা আদায়ের নির্দেশ প্রদান করেননি। ইমাম ইবনে কাসীর বলেন, ‘এই আয়াতের পরে আল্লাহ কসমের কাফফারার কথা উল্লেখ করেছেন, যাতে বুঝা যায় যে, কোন হালাল জিনিসকে নিজের উপর হারাম করে নেওয়া কসমেরই অন্তর্ভুক্ত, যা কাফফারা আদায় করার দাবী রাখে।’ কিন্তু এই দলীল সহীহ হাদীসের উপস্থিতিতে গ্রহণীয় নয়। সুতরাং সঠিক হল,যা ইমাম শাওকানী বলেছেন। (সউদী আরবের মুফতীগণের মতে কাফফারা দিতে হবে।)

Leave a Reply