أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book# 114/٢١٥)-৪১৭
www.motaher21.net
أُحِلَّ لَكُمْ صَيْدُ الْبَحْرِ وَطَعَامُهُ
তোমাদের জন্য হালাল করা হয়েছে সমুদ্রের শিকার ও তার খাদ্য;
Lawful to you is (the pursuit of) water game and its use for food,
সুরা: আল্ মায়িদাহ
আয়াত নং :-৯৬-৯৯
أُحِلَّ لَكُمْ صَيْدُ الْبَحْرِ وَطَعَامُهُۥ مَتٰعًا لَّكُمْ وَلِلسَّيَّارَةِ ۖ وَحُرِّمَ عَلَيْكُمْ صَيْدُ الْبَرِّ مَا دُمْتُمْ حُرُمًا ۗ وَاتَّقُوا اللَّهَ الَّذِىٓ إِلَيْهِ تُحْشَرُونَ
তোমাদের জন্য হালাল করা হয়েছে সমুদ্রের শিকার ও তার খাদ্য; তোমাদের ও মুসাফিরদের ভোগের জন্য। আর স্থলের শিকার তোমাদের উপর হারাম করা হয়েছে যতক্ষণ তোমরা ইহরাম অবস্থায় থাক। আর তোমরা আল্লাহর তাকওয়া অবলম্বন কর, যার দিকে তোমাদেরকে একত্র করা হবে।
আয়াত:-৯৭
جَعَلَ اللَّهُ الْكَعْبَةَ الْبَيْتَ الْحَرَامَ قِيٰمًا لِّلنَّاسِ وَالشَّهْرَ الْحَرَامَ وَالْهَدْىَ وَالْقَلٰٓئِدَ ۚ ذٰلِكَ لِتَعْلَمُوٓا أَنَّ اللَّهَ يَعْلَمُ مَا فِى السَّمٰوٰتِ وَمَا فِى الْأَرْضِ وَأَنَّ اللَّهَ بِكُلِّ شَىْءٍ عَلِيمٌ
আল্লাহ সম্মানিত গৃহ কা‘বাকে, সম্মানিত মাসকে, হাদয়ি ও কালায়িদ কেও মানুষের কল্যাণের জন্য প্রতিষ্ঠা করেছেন। এটা এ জন্য যে, তোমরা যেন জানতে পার, আল্লাহ আসমানসমূহে যা আছে এবং যমীনে যা আছে তা জানেন। আর আল্লাহ সব কিছু সম্পর্কে সম্যক জ্ঞাত।
আয়াত:- ৯৮
اعْلَمُوٓا أَنَّ اللَّهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ وَأَنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَّحِيمٌ
জেনে রাখ, নিশ্চয়ই আল্লাহ শাস্তি দানে কঠোর আর নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
আয়াত:-৯৯
مَّا عَلَى الرَّسُولِ إِلَّا الْبَلٰغُ ۗ وَاللَّهُ يَعْلَمُ مَا تُبْدُونَ وَمَا تَكْتُمُونَ
প্রচার ব্যতীত রাসূলের কোন দায়িত্ব নেই। আর তোমরা যা প্রকাশ কর এবং যা গোপন কর আল্লাহ তা জানেন।
৯৬-৯৯ নং আয়াতের তাফসীর:
তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ বলেছেন:-
ইহরাম অবস্থায় স্থলচর ও জলচর উভয় শ্রেণির প্রাণীই শিকার করা নিষিদ্ধের আওতাভুক্ত। কিন্তু
(أُحِلَّ لَكُمْ صَيْدُ الْبَحْرِ وَطَعَامُه)
‘তোমাদের জন্য সমুদ্রের শিকার ও তা খাওয়া হালাল করা হয়েছে’এ আয়াত দ্বারা জলচর প্রাণী ইহরাম অবস্থায় শিকার করা বৈধ করে দেয়া হয়েছে। (আযওয়াউল বায়ান: ২/৮৮)
পানির জীবিত ও মৃত উভয় শ্রেণিই হালাল। আবূ হুরাইরা (রাঃ) বলেন: জনৈক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে জিজ্ঞাসা করল, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা সমুদ্রে ভ্রমণ করি, সাথে অল্প কিছু পানি বহন করি। যদি তা দিয়ে ওযূ করি তাহলে পানি শেষ হয়ে যাবে আর আমরা পিপাসার্ত হয়ে যাব। আমরা কি সমুদ্রের পানি দ্বারা ওযূ করতে পারি? রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন:
هُوَ الطَّهُورُ مَاؤُهُ الْحِلُّ مَيْتَتُهُ
(সাগরের) পানি পবিত্র ও মৃত প্রাণী সবই হালাল। (আবূ দাঊদ হা: ৮৩, তিরযিমী হা: ৬৯, সহীহাহ: ৪৮০)
(مَا دُمْتُمْ حُرُمًا)
“যতক্ষণ ইহরামে থাকবে” অর্থাৎ যতক্ষণ ইহরাম অবস্থায় থাকবে ততক্ষণ শিকার করা, শিকারের কাজে সহযোগিতা করা, শিকার দেখিয়ে দেয়া সব কিছু নিষেধ। তবে মুহরিম ব্যক্তি ছাড়া অন্য কেউ শিকার করে হাদিয়া দিলে খাওয়া হারাম হবে না। (তাফসীর তাবারী ১১/৭৯, হা: ১২৭৫)
ইমাম শাফিঈ (রহঃ) ও আহমাদ (রহঃ)-সহ অধিকাংশ আলেম বলেন: শিকারী ব্যক্তি যদি মুহরিম ব্যক্তির উদ্দেশ্যে শিকার করে তাহলে মুহরিম ব্যক্তির জন্য তা খাওয়া হালাল হবে না। সা’ব বিন জুসামাহ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জংলী গাধা হাদিয়া দিলেন, কিন্তু আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তা ফিরিয়ে দিলেন। যখন ঐ ব্যক্তির মুখে অসন্তোষ ভাব দেখতে পেলেন তখন বললেন, আমি মুহরিম না হলে তোমার হাদিয়া ফেরত দিতাম না। (সহীহ বুখারী হা: ১৮২৫)
(جَعَلَ اللّٰهُ الْكَعْبَةَ)
‘‘কা‘বাকে আল্লাহ নির্ধারণ করেছেন’অর্থাৎ কা‘বাকে দীনের উপযোগী ও জীবনের নিরাপত্তা করে দিয়ে আল্লাহ তা‘আলা বান্দাদের ওপর অনুগ্রহ করেছেন। এর মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনয়নে এবং তাঁর ফরয বিধান যথাযথভাবে পালনে সুযোগ করে দিয়েছেন।
আর হারাম মাসে (যুলকাদা, যুলহাজ্জ, মুহাররাম ও রজব) সীমালঙ্ঘন ও হত্যা করা হারাম করে দিয়েছেন। ফলে এ মাসগুলোতে কেউ কারো ওপর সীমালঙ্ঘন করতে পারবে না এবং হারামের জন্য যে পশু উৎসর্গ করা হয়েছে তার ওপর সীমালঙ্ঘন করা, অনুরূপভাবে গলায় মালা পরিহিত পশু যা কুরবানীর জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে তার ওপর সীমালঙ্ঘন করা হারাম করেছেন।
রাসূলের ওপর দায়িত্ব শুধু পৌঁছে দেয়া, তিনি পৌঁছে দিয়েছেন। মানুষ যা প্রকাশ করে আর যা গোপন করে তা সবই আল্লাহ তা‘আলা জানেন। সেই অনুযায়ী মানুষকে প্রতিদান দেবেন।
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. ইহরাম অবস্থায় জলচর প্রাণী শিকার করা বৈধ, স্থলচর প্রাণী শিকার করা হারাম।
২. কা‘বা ও হারাম মাসের বিশেষ মর্যাদা রয়েছে।
English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Al Mayadah
Verse:- 96-99
أُحِلَّ لَكُمْ صَيْدُ الْبَحْرِ وَطَعَامُهُ
Lawful to you is (the pursuit of) water game and its use for food,
Water Game is Allowed for the Muhrim
Allah says;
أُحِلَّ لَكُمْ صَيْدُ الْبَحْرِ وَطَعَامُهُ
Lawful to you is (the pursuit of) water game and its use for food,
Sa`id bin Al-Musayyib, Sa`id bin Jubayr and others commented on Allah’s statement;
أُحِلَّ لَكُمْ صَيْدُ الْبَحْرِ
(Lawful to you is (the pursuit of) water game…), that it means,
what one eats fresh from it,
while,
وَطَعَامُهُ
(And its use for food) what is eaten dry and salted.
Ibn Abbas said that;
`water game’ refers to what is taken from water while still alive,
while,
وَطَعَامُهُ
(and its use for food) refers to what the water throws ashore dead.
Similar statements were reported from Abu Bakr As-Siddiq, Zayd bin Thabit, Abdullah bin `Amr, Abu Ayub Al-Ansari, Ikrimah, Abu Salamah bin Abdur-Rahman, Ibrahim An-Nakhai and Al-Hasan Al-Basri.
Allah’s statement,
مَتَاعًا لَّكُمْ وَلِلسَّيَّارَةِ
for the benefit of yourselves and those who travel,
as food and provision for you,
وَلِلسَّيَّارَةِ
(and those who travel),
According to Ikrimah,
those who are in the sea and traveling along the sea.
Other scholars said that;
water game is allowed for those who fish it from the sea, as well as, when it is salted and used as food for travelers inland.
A similar statement was reported from Ibn Abbas, Mujahid and As-Suddi and others.
Imam Malik bin Anas recorded that Jabir bin Abdullah said,
“Allah’s Messenger sent an army towards the east coast and appointed Abu Ubaydah bin Al-Jarrah as their commander, and the army consisted of three hundred men, including myself.
We marched on until we reached a place where our food was about to finish. Abu Ubaydah ordered us to collect all the food for our journey, and it was collected in two bags of dates.
Abu Ubaydah kept on giving us our daily ration in small amounts from it, until it was exhausted. The share of each of us used to be one date only.”
I (one of the narrators from Jabir) said,
“How could one date suffice for you?”
Jabir replied, “We came to know its value when even that finished.”
Jabir added, “When we reached the seashore, we saw a huge fish which was like a small mountain. The army ate from it for eighteen days. Then Abu Ubaydah ordered that two of its ribs be affixed in the ground. Then he ordered that a she-camel be ridden, and it passed under the two ribs (forming an arch) without touching them.”
This Hadith was also collected in the Two Sahihs.
Malik recorded that Abu Hurayrah said,
“A man asked Allah’s Messenger, `O Allah’s Messenger! We go to sea and carry little water with us. If we use it for Wudu, we get thirsty, so should we use seawater for Wudu?”
The Messenger of Allah said,
هُوَ الطَّهُورُ مَاوُهُ الْحِلُّ مَيْتَتُه
Its water is pure and its dead are lawful.”
The two Imams, Ash-Shafii and Ahmad bin Hanbal, recorded this Hadith, along with the Four Sunan compilers.
Al-Bukhari, At-Tirmidhi and Ibn Hibban graded it Sahih.
This Hadith was also recorded from the Prophet by several other Companions.
Hunting Land Game is Prohibited During Ihram
Allah said,
وَحُرِّمَ عَلَيْكُمْ صَيْدُ الْبَرِّ مَا دُمْتُمْ حُرُمًا
but forbidden is land game as long as you are in a state of Ihram.
Therefore, hunting land game during Ihram is not allowed, and
if someone who is in the state of Ihram hunts, he will have to pay expiation, along with the sin he earns if he does it intentionally.
If he hunts by mistake, he will have to pay the expiation and is not allowed to eat from it, because this type of game is just like dead animals, be he a Muhrim or a non-Muhrim.
If someone who is not in the state of Ihram hunts and gives the food to a Muhrim, the Muhrim is not allowed to eat from its meat if it was killed for him in particular.
As-Sa`b bin Jaththamah said that;
he gave a zebra as a gift to the Prophet in the area of Waddan or Abwa’, the Prophet gave it back. When the Prophet saw the effect of his returning the gift on As-Sa`b’s face, he said,
إِنَّا لَمْ نَرُدَّهُ عَلَيْكَ إِلاَّ أَنَّا حُرُم
We only gave it back to you because we are in a state of Ihram.
This Hadith was collected in the Two Sahihs.
The Prophet thought that As-Sa`b hunted the zebra for him, and this is why he refused to take it. Otherwise, the Muhrim is allowed to eat from the game if one who is not in Ihram hunts it.
For when Abu Qatadah hunted a zebra when he was not a Muhrim and offered it to those who were in the state of Ihram, they hesitated to eat from it.
They asked the Messenger of Allah and he said,
هَلْ كَانَ مِنْكُمْ أَحَدٌ أَشَارَ إِلَيْهَا أَوْ أَعَانَ فِي قَتْلِهَا
Did any of you point at it or help kill it?
They said, “No.”
He said,
فَكُلُوا
Then eat, (and he also ate from it).
This Hadith is also in the Two Sahihs with various wordings.
<i>(Ibn Kathir only mentioned Ayat 96 to 99 here and explained the better part of Ayah number 96, but he did not mention the explanation of the rest of that Ayah or the other Ayat (97 to 99). This is the case in all of the copies of his Tafsir in existence, and he might have forgotten to do that, for it is less likely that all who copied this book forgot to copy only this part. So we used a summary of the Tafsir of these Ayat from the Imam of Tafsir, Ibn Jarir At-Tabari. We tried to summarize At-Tabari’s eloquent words to the best of our ability, by Allah’s help and leave).</i>
وَاتَّقُواْ اللّهَ الَّذِيَ إِلَيْهِ تُحْشَرُونَ
And have Taqwa of Allah to Whom you shall be gathered back.
Allah says, fear Allah, O people, and beware of His might, by obeying what He commands you and avoiding what He prohibits for you in these Ayat revealed to your Prophet.
These Ayat forbid Khamr, gambling, Al-Ansab and Al-Azlam, along with hunting land game and killing it while in the state of Ihram. To Allah will be your return and destination, and He will punish you for disobeying Him and will reward you for obeying Him.
جَعَلَ اللّهُ الْكَعْبَةَ الْبَيْتَ الْحَرَامَ قِيَامًا لِّلنَّاسِ
Allah has made the Ka`bah, the Sacred House, an asylum of security and benefits for mankind,
Allah says, Allah made the Ka`bah, the Sacred House, an asylum of safety for the people who have no chief to prevent the strong from transgressing against the weak, the evil from the good-doers, and the oppressors from the oppressed.
وَالشَّهْرَ الْحَرَامَ وَالْهَدْيَ وَالْقَلَيِدَ
And also the Sacred Month and the animals of offerings and the garlanded.
Allah says that He made these symbols an asylum of safety for the people, just as He made the Ka`bah an asylum of safety for them, so that He distinguishes them from each other, for this is their asylum and symbol for their livelihood and religion.
Allah made the Ka`bah, the Sacred Month, the Hady, the garlanded animals and people an asylum of safety for the Arabs who used to consider these symbols sacred. Thus, these symbols were just like the chief who is obeyed by his followers, and who upholds harmony and public safety. As for the Ka`bah, it includes the entire sacred boundary.
Allah termed it “Haram” because He prohibited hunting its game and cutting its trees or grass.
Similarly, the Ka`bah, the Sacred Month, the animals of offerings and the garlands were the landmarks of existing Arabs. These symbols were sacred during the time of Jahiliyyah and the people’s affairs were guided and protected by them. With Islam they became the symbols of their Hajj, their rituals, and the direction of the prayer, i.e., the Ka`bah in Makkah.
ذَلِكَ لِتَعْلَمُواْ أَنَّ اللّهَ يَعْلَمُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الَارْضِ وَأَنَّ اللّهَ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمٌ
that you may know that Allah has knowledge of all that is in the heavens and all that is in the earth, and that Allah is the All-Knower of each and everything.
Allah says; O people, I made these symbols an asylum for you, so that you know that He Who made these symbols that benefit your life and provide you with security, also knows everything in the heavens and earth that brings about your immediate or eventual benefit. Know that He has perfect knowledge of everything and that none of your deeds or affairs ever escapes His observation; and He will count them for you so that He rewards those who do good with the same and those who do evil in kind.
اعْلَمُواْ أَنَّ اللّهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ وَأَنَّ اللّهَ غَفُورٌ رَّحِيمٌ
Know that Allah is severe in punishment and that Allah is Oft-Forgiving, Most Merciful.
Allah says, know that your Lord, Who has perfect knowledge of whatever is in the heavens and earth, and Who is never unaware of your deeds – public or secret – is severe in punishment for those who disobey and defy Him. He also pardons the sins of those who obey and repent to Him, more Merciful than to punish them for the sins that they repented from.
مَّا عَلَى الرَّسُولِ إِلاَّ الْبَلَغُ وَاللّهُ يَعْلَمُ مَا تُبْدُونَ وَمَا تَكْتُمُونَ
The Messenger’s duty is but to convey. And Allah knows all that you reveal and all that you conceal.
This is a warning from Allah for His servants in which He says:
Our Messenger, whom We sent to you, has only to convey Our Message and then the reward for the obedience, and punishment for the disobedience is on Us. The obedience of those who accept Our Message never escapes Our knowledge, just as in the case of those who disobey and defy Our Message. We know what one of you does, demonstrates physically, announces, and utters with his tongue, and what you hide in your hearts, be it of faith, disbelief, certainty, doubt or hypocrisy. He Who is so capable, then nothing that the hearts conceal, nor any of the apparent acts of the souls in the heavens and earth could escape His knowledge.
In His Hand, alone, is the reward and punishment, and He is worthy to be feared, obeyed and never disobeyed.
তাফসীরে ইবনে কাসীর বলেছেন:-
৯৬-৯৯ নং আয়াতের তাফসীর:
(আরবী) আল্লাহ তা’আলার এ উক্তির ব্যাখ্যায় হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) এবং হযরত সাঈদ ইবনে জুবাইর (রাঃ) বলেন, এর ভাবার্থ হচ্ছে তোমাদের জন্যে সমুদ্রের তাজা বা সজীব শিকার হালাল। আর (আরবী) -এর ভাবার্থ হচ্ছে- যে মাছ শুকিয়ে পাথেয় তৈরী করা হয় সেটাও তোমাদের জন্যে হালাল। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে আর একটি প্রসিদ্ধ বর্ণনা এই যে, (আরবী) দ্বারা ঐ শিকারকে বুঝানো হয়েছে যা সমুদ্র হতে জীবিত অবস্থায় পাওয়া গেছে। আর (আরবী) দ্বারা সমুদ্রের ঐ মৃত শিকারকে বুঝানো হয়েছে যা মৃত অবস্থায় সমুদ্রের তীরে নিক্ষিপ্ত হয়েছে। (এরূপই হযরত আবু বকর (রাঃ), হযরত যায়েদ ইবনে সাবিত (রাঃ), ইবরাহীম নাখঈ (রঃ) এবং হাসান বসরী (রঃ) হতে বর্ণিত আছে) হযরত আবু বকর (রাঃ) জনগণের সামনে খুতবা দান অবস্থায় বলেনঃ “শুধু সমুদ্রের শিকারই যে তোমাদের জন্যে হালাল তা নয়, বরং সমুদ্র হতে যা নিক্ষিপ্ত হয়, সেটাও তোমাদের উপকার লাভ ও পাথেয় হিসেবে হালাল।” ইবনে জারীর (রঃ) বলেন যে, আবদুর রহমান ইবনে আবূ হুরাইরা (রাঃ) হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করেনঃ সমুদ্র বহু মাছকে তীরে নিক্ষেপ করে থাকে, আমরা ওগুলো খেতে পারি কি? তিনি উত্তরে বলেনঃ “তোমারা ওগুলো খেয়ো না।” অতঃপর আবদুল্লাহ ইবনে উমার (রাঃ) বাড়ী ফিরে এসে কুরআন মাজীদ হাতে নেন এবং সূরা মায়িদাহ্ পাঠ করতে থাকেন (আরবী) -এ আয়াতে এসে তিনি বলেনঃ যাও, বলে দাও তোমরা ওটা খাও, কেননা সমুদ্রের জিনিসকে আল্লাহ পাক (আরবী) বলেছেন। ইবনে জারীরও (রঃ) একথাই বলেছেন যে, (আরবী) দ্বারা সমুদ্রের মৃত মৎস্যকেই বুঝানো হয়েছে।
(আরবী) এখানে (আরবী) শব্দটি (আরবী) শব্দের বহু বচন। ইকরামা (রাঃ) বলেন যে, সমুদ্রের তীরবর্তী লোকেরা তো সামুদ্রিক টাকা প্রাণী শিকার করে থাকে। আর যা মরে যায় তা শুকিয়ে জমা করে রাখে। কিংবা তার শিকার করে রেখে দেয় এবং ওটা মুসাফির ও সমুদ্রের দূরবর্তী লোকদের জন্যে পাথেয়র কাজ দেয়। জমহুর মত মাছ হালাল হওয়ার দলীল হিসেবে এ আয়াতটিকে গ্রহণ করেছেন। ইমাম মালিক (রঃ) হযরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সঃ) সমুদ্র তীরবর্তী এলাকায় একদল সেনাবাহিনী প্রেরণ করেন এবং হযরত উবাইদাহ্ ইবনে জাররাহ (রাঃ)-কে ঐ দলের আমীর নিযুক্ত করা হয়। তাঁদের সংখ্যা ছিল তিনশ’। আমিও তাঁদের একজন ছিলাম। আমরা পথে থাকতেই আমাদের পাথেয় নিঃশেষ হয়ে আসে। তখন হযরত আবু উবাইদাহ (রাঃ) সকলের পাথেয় একত্রিত করার নির্দেশ দেন। তাঁর নির্দেশক্রমে সমস্ত পাথেয় জমা করা হয়। আমাদের পাথেয় ছিল খেজুর। আমরা প্রতিদিন তা থেকে অল্প অল্প করে খেয়ে থাকি। অবশেষে ওগুলোও শেষ হয়ে আসে এবং রসদ হিসেবে আমরা শুধুমাত্র একটি করে খেজুর পেয়ে থাকি। অবশেষে আমরা মৃত প্রায় অবস্থায় সমুদ্র তীরে উপনীত হই এবং দেখি যে, টিলার মত একটি বিরাট মাছ পড়ে রয়েছে।
সেনাবাহিনীর সমস্ত লোক আঠার দিন পর্যন্ত ওটা ভক্ষণ করে। হযরত আবু উবাইদাহ (রাঃ) ওর পাজরের হাড় দু’টিকে কামানের মত দাঁড় করে রাখার নির্দেশ দেন। অতঃপর ওর নীচ দিয়ে একজন উষ্ট্রারোহী গমন করে, তথাপি ওর উপরিভাগ স্পর্শ করতে পারেনি। এ হাদীসটি সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে তাখরীজ করা হয়েছে।
সহীহ মুসলিমে হযরত জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেনঃ সমুদ্র তীরে উঁচু টিলার মত কি একটা দেখা গেল। আমরা তখন সেখানে গিয়ে দেখি যে, একটি সামুদ্রিক জন্তু মৃত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। ওকে আমবার বলা হয়। হযরত আবু উবাইদাহ (রাঃ) বললেনঃ “এটা তো মৃত।” তারপর তিনি বললেনঃ “মৃত হোক! আমরা রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর দূত! আমরা ক্ষুধায় কাতর হয়ে পড়েছি। সুতরাং তোমরা এর গোশত ভক্ষণ কর।” আমরা তথায় একমাস কাল অবস্থান করি। আমরা ছিলাম তিনশ’জন লোক। আমরা খেয়ে মোটা হয়ে গিয়েছিলাম। ওর চোখের মণি হতে রাওগান’ তেল বের করে আমরা আমাদের কলসগুলো ভর্তি করেছিলাম। এতো বড় বড় টুকরা আমরা কেটেছিলাম যে, ঐগুলোকে গরু বলে মনে হচ্ছিল। ওর পাজরের একটি হাড় নিয়ে কামানের আকারে মাটিতে গেড়ে রেখেছিলাম। বড় বড় উট ওর মধ্য দিয়ে বের হয়ে গিয়েছিল। আমরা ওর অবশিষ্ট গোশত শুকিয়ে পাথেয় বানিয়েছিলাম। আমরা মদীনা পৌছে যখন ঘটনাটি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নিকট বর্ণনা করি তখন তিনি বলেনঃ “এটা ছিল ঐ আহার্য যা আল্লাহ তোমাদের জন্যেই বের করেছিলেন। তোমাদের কাছে ওর কিছু গোশত আছে কি, যা আমাকে খাওয়াতে পার?” আমরা তখন তার কাছে তুহফা পাঠালাম এবং তিনি তা ভক্ষণ করলেন।
ইমাম মালিক (রঃ) বর্ণনা করেছেন যে, একটি লোক রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে জিজ্ঞেস করেনঃ হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আমরা সমুদ্রে সফর করে থাকি এবং অল্প পানি সঙ্গে রাখতে পারি। যদি আমরা ঐ পানিতে অযু করি তবে পিপাসার্ত থেকে যাই। সুতরাং আমরা সমুদ্রের পানিতে অযু করতে পারি কি? রাসূলুল্লাহ (সঃ) উত্তরে বলেনঃ “সমুদ্রের পানি পবিত্র এবং মৃত (মাছও) হালাল।” (এ হাদীসটি ইমাম মালিক (রঃ) ও আসহাবুস সুনান বর্ণনা করেছেন এবং ইমাম বুখারী (রঃ) ও ইমাম তিরমিযী (রঃ) এটাকে বিশুদ্ধ বলেছেন।)
কোন কোন ফিকাহ্ শাস্ত্রবিদ এ আয়াত হতে দলীল গ্রহণ করেছেন যে, সমস্ত সামুদ্রিক জীব খাওয়া যেতে পারে। কোন জীবই এর বহির্ভূত নয়। তবে কেউ কেউ ব্যাঙকে এর ব্যতিক্রম বলেছেন এবং এটা ছাড়া সবগুলোকেই হালাল বলেছেন। কেননা, ইমাম আহমাদ (রঃ), ইমাম আবু দাউদ (রঃ) এবং ইমাম নাসাঈ (রঃ) আবু আবদির রহমান ইবনে উসমান তাইমী (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) ব্যাঙকে মেরে ফেলতে নিষেধ করেছেন এবং বলেছেনঃ “তার ডাক বা শব্দ হচ্ছে আল্লাহর তাসবীহ।” অন্যান্যগণ বলেন যে, মাছ খাওয়া যাবে, কিন্তু ব্যাঙ খাওয়া যাবে না। এই দু’টো ছাড়া অন্যান্যগুলোর মধ্যে মতভেদ রয়েছে। স্থলভাগের যেসব জন্তুর গোশত হালাল ঐগুলোর সাথে সাদৃশ্য যুক্ত সামুদ্রিক জন্তুও হালাল। পক্ষান্তরে স্থলভাগের যেসব জন্তুর গোশত হালাল নয় ঐগুলোর সাথে সাদৃশ্য যুক্ত সামুদ্রিক জন্তুও হালাল নয়। এসব মতভেদ হচ্ছে ইমাম শাফিই (রঃ)-এর মাযহাবের উপর ভিত্তি করে। আর ইমাম আবু হানীফা (রঃ) বলেন যে, সমুদ্রের যে মাছ মরে যাবে সেটা খাওয়া হালাল নয়। কেননা, আল্লাহ তা’আলা (আরবী) বলেছেন। ইবনে মিরদুওয়াই (রঃ) হযরত জাবির (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন“তোমরা সমুদ্রে যা শিকার কর এবং তা জীবিত থাকার পর মারা যায় ওটা খাও। আর যে মৃত মাছকে ঢেউ বয়ে এনে তীরে ফেলে দেয় তা খেয়ো না।” আসহাবে মালিক (রঃ), শাফিঈ (রঃ) এবং আহমাদ ইবনে হাম্বল (রঃ) হতে হাদীসে আমবারের মাধ্যমে এবং “সমুদ্রের পানি পবিত্র ও তার মৃতও হালাল” -এ হাদীসের মাধ্যমে জমহুর দলীল গ্রহণ করেছেন। এ জন্যে তারা এরূপ মাছকেও খাওয়া জায়েয বলে থাকেন। ইমাম শাফিঈ (রঃ) হযরত ইবনে উমার (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আমাদের জন্যে দুটি মৃত জন্তু ও দু’টি রক্ত হালাল। মৃত জন্তু দু’টি হচ্ছে মাছ ও ফড়িং এবং দুটি রক্ত হচ্ছে কলিজা ও প্লীহা।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ), দারেকুতনী (রঃ) এবং বায়হাকী (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
(আরবী) অর্থাৎ ইহরামের অবস্থায় তোমাদের জন্যে স্থলচর শিকার ধরা হারাম। যদি তোমরা ইচ্ছাপূর্বক এ কাজ কর তবে তোমরা গুনাহগারও হবে এবং তোমাদেরকে ক্ষতিপূরণও দিতে হবে। আর যদি ভুলবশতঃ কর তবে ক্ষতিপূরণ দেয়ার পর তোমরা গুনাহ থেকে মুক্তি পাবে বটে, কিন্তু ঐ শিকার খাওয়া তোমাদের জন্যে হারাম হবে। কেননা, ওটা মৃতেরই অনুরূপ। ইমাম শাফিঈ (রঃ) ও ইমাম মালিক (রঃ)-এর একটা উক্তিও এটাই যে, মুহরিম ও গায়ের মুহরিম সবারই জন্যে ওটা খাওয়া হারাম। সুতরাং যদি শিকারী ওর থেকে কিছু অংশ খেয়ে নেয় তবে কি তার উপর দ্বিগুণ ক্ষতিপূরণ ওয়াজিব হবে? এ ব্যাপারে আলেমদের দু’টি উক্তি রয়েছে। একটি উক্তি এই যে, হ্যা, তার উপর দ্বিগুণ ক্ষতিপূরণ ওয়াজিব হবে। আলেমদের একটি দলের মাযহাব এটাই। দ্বিতীয় উক্তি এই যে, তার উপর দ্বিগুণ ক্ষতিপূরণ ওয়াজিব হবে না। মালিক ইবনে আনাস (রঃ)-এর এটাই মাযহাব। আবূ উমার ইবনে আবদুল বার (রঃ) বলেন যে, ব্যভিচারীর উপর হদ লাগাবার পূর্বে সে বারবার ব্যভিচার করে থাকলেও তো তার উপর একটি হদই ওয়াজিব হয়ে থাকে। জমহুরের মাযহাবও এটাই। ইমাম আবু হানীফা (রঃ) বলেন যে, স্বীয় শিকারের গোশত খেয়ে নিয়ে তাকে মূল্য প্রদান করতে হবে, এর চেয়ে বেশী কিছু দিতে হবে না। যদি গায়ের মুহরিম শিকার করার পর মুহরিমের নিকট হাদীয়া পাঠায় তবে কারও কারও মতে ওটা মুহরিমের জন্যে সাধারণভাবেই জায়েয। সে তারই জন্যে শিকার করে থাক আর না থাক এ দুয়ের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। ইবনে জারীর (রঃ) বলেন যে, হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হয় যে, গায়ের মুহরিম ব্যক্তি যে শিকার করে থাকে, মুহরিম ব্যক্তি ওর গোশত খেতে পারে কি? তখন তিনি ফতওয়া দেন যে, হঁ্যা, খেতে পারে। তারপর তিনি হযরত উমার (রাঃ)-এর সাথে সাক্ষাৎ করেন এবং তাঁকে ওটা অবহিত করেন। তখন হযরত উমার (রাঃ) বলেনঃ “যদি তুমি এর বিপরীত ফতওয়া দিতে তবে আমি তোমাকে শাস্তি দিতাম।” কিন্তু অন্যান্য আলেমগণ এ গোশত ভক্ষণ করা মুহরিমের জন্যে সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ বলেন। কেননা (আরবী) -এ আয়াতটি (আরবী) বা সাধারণ। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি মুহরিমের জন্যে শিকারের গোশত ভক্ষণ পছন্দ করতেন এবং বলতেন যে, ওটা (আরবী) বা সন্দেহযুক্ত। কেননা, আল্লাহ তা’আলা (আরবী) -এ কথা বলেছেন। হযরত ইবনে উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি সর্বাবস্থায় মুহরিমের জন্যে শিকারের গোশত ভক্ষণ মাকরূহ বা অপছন্দনীয় মনে করতেন। (তাউস (রঃ) ও জাবির ইবনে যায়েদও (রঃ) এরূপই মনে করতেন এবং সাওরীও ঐদিকেই গিয়েছেন) হযরত আলী (রাঃ) সর্বাবস্থায় মুহরিমের জন্যে শিকারের গোশত ভক্ষণ মাকরূহ জানতেন। ইমাম মালিক (রঃ), ইমাম শাফিঈ (রঃ), ইমাম আহমাদ (রঃ) এবং জমহুর বলেন যে, গায়ের মুহরিম যদি মুহরিমের উদ্দেশ্যে শিকার করে তবে মুহরিমের জন্যে তা খাওয়া জায়েয নয়। কেননা, সা’ব ইবনে জাসামাহ (রাঃ) হতে একটি হাদীস বর্ণিত আছে যে, তিনি নবী (সঃ)-কে একটি বন্য গাধা হাদিয়া দেন, কিন্তু তিনি তা ফিরিয়ে দেন। অতঃপর তিনি তার চেহারায় অসন্তুষ্টির ভাব লক্ষ্য করে বলেন : “আমি ওটা ফিরিয়ে দিয়েছি একমাত্র এই কারণে যে, আমি ইহরামের অবস্থায় রয়েছি। (এ হাদীসটি বহু শব্দে সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে বর্ণিত আছে) এর কারণ ছিল এই যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর ধারণায় ঐ শিকার তার উদ্দেশ্যে ছিল। সেই জন্যেই তিনি তা ফেরত দিয়েছিলেন। সুতরাং যদি কোন শিকার মুহরিমের উদ্দেশ্যে করা না হয় তবে মুহরিমের জন্যে ওটা খাওয়া জায়েয হবে। কেননা, আবু কাতাদা (রাঃ)-এর হাদীসে রয়েছে যে, তিনি একটি বন্য গাধা শিকার করেছিলেন। সেই সময় তিনি মুহরিম ছিলেন না। কিন্তু তাঁর সঙ্গীরা মুহরিম ছিলেন। তাই তাঁরা ওটা ভক্ষণ করা থেকে বিরত থাকলেন। ঐ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেনঃ “তোমাদের কেউ কি শিকারীকে শিকার দেখিয়ে দিয়েছিল বা শিকারকে হত্যা করার ব্যাপারে তাকে সাহায্য করেছিল?” সাহাবীগণ উত্তরে বললেনঃ “না।” তখন তিনি বললেনঃ “তাহলে তোমরা খাও।” আর স্বয়ং তিনিও খেলেন। এই ঘটনাটি সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমেও বহু শব্দে বর্ণিত আছে।
তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
টিকা:১১২) যেহেতু সামূদ্রিক সফরে অনেক সময় পাথেয় শেষ হয়ে যায় এবং আহার সংগ্রহের জন্য জলজ প্রাণী শিকার করা ছাড়া আর কোন পথ থাকে না, তাই সামূদ্রিক শিকার হালাল করা হয়েছে।
টিকা:১১৩) আরবে কাবা ঘরের মর্যাদা কেবলমাত্র একটি ইবাদতগৃহ হিসেবেই প্রতিষ্ঠিত ছিল না বরং নিজের কেন্দ্রীয় অবস্থান ও পবিত্রতম ভাবমূর্তির কারণে এরই ওপর সারাদেশের অর্থনৈতিক ও তামাদ্দুনিক জীবনধারায় নির্ভরশীল ছিল। হজ্জ ও উমরাহর জন্য সারাদেশ কাবা ঘরের দিকে ধাবিত হতো। হজ্জ উপলক্ষ্যে এ সম্মিলনের কারণে বিশৃংখল ও বিক্ষিপ্ত আরবদের মধ্যে একটি ঐক্য সূত্র সৃষ্টি হতো। বিভিন্ন অঞ্চল ও গোত্রের লোকেরা নিজেদের মধ্যে তামাদ্দুনিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত করতো। কাব্য সম্মেলন ও কবিতা প্রতিযোগিতার ফলে তাদের ভাষা ও সাহিত্যের উন্নতি সাধিত হতো। বাণিজ্যিক লেনদেনের ফলে সারাদেশের অর্থনৈতিক প্রয়োজন পূর্ণ হতো। হারাম মাসগুলোর কারণে আরবরা বছরের এক-তৃতীয়াংশ সময় লাভ করতো শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য। এ সময় তাদের কাফেলা দেশের এক প্রান্ত থেকে আর এক প্রান্ত পর্যন্ত অবাধে চলাফেরা করতো। কুরবানীর পশু ও বিচিত্র বর্ণের ঝলমলে মালা জড়ানো পশু দলের উপস্থিতিও তাদের এ চলাফেরায় বিরাট সাহায্য যোগাতো। কারণ মানত ও নযরানার আলামত হিসেবে যেসব পশুর গলায় ঝলমলে মালা শোভা পেতো তাদের দেখে ভক্তিতে আরবদের মাথা নত হয়ে আসতো। এ সময় কোন লুটেরা আরব গোত্র তাদের ওপর আক্রমণ চালাবার দুঃসাহস করতো না।
টিকা:১১৪) অর্থাৎ এ ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে চিন্তা করলে তোমরা নিজেরাই তোমাদের দেশের অর্থনৈতিক ও তামাদ্দুনিক জীবনে এর একটি সুস্পষ্ট প্রমাণ পেয়ে যাবে যে, আল্লাহ তাঁর নিজের সৃষ্টির কল্যাণ ও প্রয়োজন সম্পর্কে কত গভীর জ্ঞানের অধিকারী এবং নিজের এক একটি বিধানের সাহায্যে তিনি মানব জীবনের বিভিন্ন বিভাগকে কত ব্যাপকভাবে উপকৃত করছেন। মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আবির্ভাবের পূর্বে অশান্তি ও অরাজকতার মধ্য দিয়ে যে শত শত বছর অতিবাহিত হয়েছে, সে সময় তোমরা নিজেরাই নিজেদের স্বার্থ ও প্রয়োজন সম্পর্কে অবগত ছিলে না। তখন তোমরা নিজেদের ধ্বংস সাধনের নেশায় উন্মাদ হয়ে গিয়েছিলে। কিন্তু আল্লাহ তোমাদের প্রয়োজন জানতেন। তিনি শুধুমাত্র কাবাঘরকে তোমাদের কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে দিয়ে তোমাদের জন্য এমন ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন যার ফলে তোমাদের জাতীয় জীবন সুরক্ষিত হয়ে গিয়েছিল। অন্যান্য অসংখ্য বিষয় বাদ দিয়ে যদি শুধুমাত্র এ একটি বিষয়ের প্রতি দৃষ্টিপাত করো তাহলে তোমাদের নিশ্চিত বিশ্বাস জন্মাবে যে, আল্লাহ তোমাদের যে বিধান দিয়েছেন তার আনুগত্য করার মধ্যেই তোমাদের কল্যাণ নিহিত রয়েছে। এর মধ্যে তোমাদের জন্য এমন সব কল্যাণ রয়েছে যেগুলো উপলব্ধি করার ক্ষমতা তোমাদের নেই এবং নিজেদের হাজারো চেষ্টা সাধনা দ্বারাও সেগুলোকে বাস্তবে রূপায়িত করা তোমাদের পক্ষে সম্ভব নয়।
তাফসীরে আবুবকর যাকারিয়া বলেছেন:-
[১] এ আয়াতে আল্লাহ তা’আলা চারটি বস্তুকে মানুষের প্রতিষ্ঠা, স্থায়িত্ব ও শান্তির কারণ বলে উল্লেখ করছেন। প্রথমতঃ কা’বা। আরবী ভাষায় কাবা চতুষ্কোণবিশিষ্ট গৃহকে বলা হয়। জাহেলিয়াত যুগেও আল্লাহ তা’আলা আরবদের মনে হারাম শরীফের সম্মান প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। ফলে শান্তি ও নিরাপত্তা অব্যাহত ছিল। দ্বিতীয় বস্তুটি হচ্ছে, সম্মানিত মাস। সম্মানিত মাস বলে এখানে কারও কারও মতে, জিলহজ্জ মাস বোঝানো হয়েছে। অপর কারও কারও মতে, এর দ্বারা হারাম মাসসমূহ বোঝানো হয়েছে। আর তা হচ্ছে, রজব, জিলকদ ও জিলহজ ও মুহাররাম। তৃতীয় বস্তু হচ্ছে, ‘হাদঈ’। হারাম শরীফে যে জন্তুকে তামাত্তু ও কেরান হজের কারণে যবাই করতে হয়, তাকে হাদঈ বলা হয়। যে ব্যক্তির সাথে এরূপ জন্তু থাকত, সে নির্বিবাদে পথ চলতে পারত; তাকে কেউ কিছু বলত না। এভাবে কুরবানীর জন্তুও ছিল শান্তি ও নিরাপত্তার অন্যতম উপায়। চতুর্থ বস্তুটি হচ্ছে, (قلائد) এ শব্দটি (قلادة) শব্দের বহুবচন। এর অর্থ, গলার হার। আরবে প্রথা প্রচলিত ছিল যে, কেউ হজের উদ্দেশ্যে বের হলে চিহ্নস্বরূপ তার হাদঈর গলায় একটি হার পরিয়ে দিত। ফলে কেউ তাকে কোন কষ্ট দিত না। এ কারণে (قلادة) শান্তি প্রতিষ্ঠার অন্যতম উপায় হয়ে যায়। [ফাতহুল কাদীর]
[২] (قيام) ও (قوام) এর অর্থ ঐসব বস্তু, যার উপর কোন বস্তুর স্থায়িত্ব নির্ভরশীল। তাই (قِــيٰمًا لِّلنَّاسِ) এর অর্থ হবে এই যে, কাবা ও তৎসম্পর্কিত বস্তুসমূহ মানুষের প্রতিষ্ঠা ও স্থায়িত্বের কারণ এবং উপায়। এর উপরই তাদের জীবিকা ও দ্বীন নির্ভরশীল। এর মাধ্যমেই তাদের দ্বীন ও দুনিয়ার কর্মকাণ্ড সুপ্রতিষ্ঠিত হয়। তাদের মধ্যে যারা ভীত তারা সেখানে নিরাপত্তা পায়। যারা ব্যবসায়ী তারা ব্যবসায় লাভবান হয়। যারা ইবাদাত করতে চায়, তারা নির্বিয় ইবাদাত করতে পারে। [ফাততহুল কাদীর]
[৩] আলোচ্য আয়াতে বলা হয়েছে, ‘আমার রাসূলের দায়িত্ব এতটুকই যে, তিনি আমার নির্দেশাবলী মানুষের কাছে পৌঁছে দিবেন’। এরপর তা মানা না মানার লাভ ক্ষতি তারাই ভোগ করবে; তারা না মানলে আমার রাসূলের কোন ক্ষতি নেই। এ কথাও জেনো যে, আল্লাহতা’আলাকে ধোঁকা দেয়া যাবে না। তিনি তোমাদের প্রকাশ্য ও গোপন কাজ সম্পর্কে ওয়াকিফহাল। তিনি তোমাদের আমলের প্রকৃত অবস্থা জেনে সেটা অনুসারে তোমাদেরকে এর প্রতিফল দিবেন। [সা’দী]