أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book# 114/٢٢١)-৪২৩
www.motaher21.net
فَيَقُولُ مَاذَآ أُجِبْتُمْ ۖ
অতঃপর বলবেন, ‘তোমাদেরকে কী জবাব দেয়া হয়েছিল’?
The Messengers Will be Asked About Their Nations
সুরা: আল্ মায়িদাহ
আয়াত নং :-১০৯
يَوْمَ يَجْمَعُ اللَّهُ الرُّسُلَ فَيَقُولُ مَاذَآ أُجِبْتُمْ ۖ قَالُوا لَا عِلْمَ لَنَآ ۖ إِنَّكَ أَنتَ عَلّٰمُ الْغُيُوبِ
যেদিন আল্লাহ রাসূলগণকে একত্র করবেন, অতঃপর বলবেন, ‘তোমাদেরকে কী জবাব দেয়া হয়েছিল’? তারা বলবে, ‘আমাদের কোন ইলম নেই, নিশ্চয় আপনি গায়েবী বিষয়সমূহের সর্বজ্ঞানী’।
১০৯ নং আয়াতের তাফসীর:
তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ বলেছেন:-
কিয়ামতের দিন সকল নাবী-রাসূলদেরকে আল্লাহ তা‘আলা একত্রিত করে জিজ্ঞাসা করবেন তাদের উম্মাতের ব্যাপারে তারা তাদের থেকে কিরূপ জবাব বা সাড়া ও আচরণ পেয়েছে? অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(فَلَنَسْئَلَنَّ الَّذِيْنَ أُرْسِلَ إِلَيْهِمْ وَلَنَسْئَلَنَّ الْمُرْسَلِيْنَ)
“অতঃপর যাদের নিকট রাসূল প্রেরণ করা হয়েছিল তাদেরকে আমি অবশ্যই জিজ্ঞাসা করব এবং রাসূলগণকেও জিজ্ঞাসা করব।”(সূরা আ‘রাফ ৭:৬)
জবাবে তারা কিয়ামতের কঠিন পরিস্থিতি দেখে বলবে, এ ব্যাপারে আমাদের কোন জ্ঞান নেই।
হাসান বসরী, সুদ্দী ও মুজাহিদ (রহ.) বলেন: কিয়ামতের ভয়াবহতা দেখে নাবীরা এ কথা বলবে। (ইবনু কাসীর ৩/২৫৬)
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. নাবী-রাসূলদেরকে উম্মাতের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হবে।
২. প্রকৃতপক্ষে গায়েবের সকল চাবিকাঠি আল্লাহ তা‘আলার কাছে, এর একমাত্র মালিক তিনিই।
৩. নাবী-রাসূলগণও গায়েব জানতেন না, শুধু ওয়াহীর মাধ্যমে তাদেরকে যতটুকু তথ্য দেয়া হত ততটুকুই তারা জানতেন।
English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Al Mayadah
Verse:- 109
فَيَقُولُ مَاذَآ أُجِبْتُمْ ۖ
The Messengers Will be Asked About Their Nations
The Messengers Will be Asked About Their Nations
Allah says;
يَوْمَ يَجْمَعُ اللّهُ الرُّسُلَ فَيَقُولُ مَاذَا أُجِبْتُمْ
قَالُواْ لَا عِلْمَ لَنَا إِنَّكَ أَنتَ عَلَّمُ الْغُيُوبِ
On the Day when Allah will gather the Messengers together and say to them:”What was the response you received (from men to your teaching)!” They will say:”We have no knowledge, verily, only You are the Knower of all that is hidden.”
Allah states that on the Day of Resurrection, He will ask the Messengers about how their nations, to whom He sent them, answered and responded to their teachings.
Allah said in other Ayat,
فَلَنَسْـَلَنَّ الَّذِينَ أُرْسِلَ إِلَيْهِمْ وَلَنَسْـَلَنَّ الْمُرْسَلِينَ
Then surely, We shall question those (people) to whom it (the Book) was sent and verily, We shall question the Messengers. (7:6)
and,
فَوَرَبِّكَ لَنَسْـَلَنَّهُمْ أَجْمَعِينََمَّا كَانُواْ يَعْمَلُونَ
So, by your Lord, We shall certainly call all of them to account. For all that they used to do. (15:92-93)
According to Mujahid, Al-Hasan Al-Basri and As-Suddi, The statement of the Messengers here,
لَا عِلْمَ لَنَا
(We have no knowledge),
is the result of the horror of that Day.
Abdur-Razzaq narrated that Ath-Thawri said that Al-A`mash said that Mujahid said about the Ayah,
يَوْمَ يَجْمَعُ اللّهُ الرُّسُلَ فَيَقُولُ مَاذَا أُجِبْتُمْ
(On the Day when Allah will gather the Messengers together and say to them:”What was the response you received)!”
They will become afraid and reply,
لَا عِلْمَ لَنَا
(We have no knowledge),
Ibn Jarir and Ibn Abi Hatim also recorded this explanation.
Ali bin Abi Talhah said that Ibn Abbas commented on the Ayah,
“They will say to the Lord, Most Honored, `We have no knowledge beyond what we know, and even that, You have more knowledge of them than us.”
This response is out of respect before the Lord, Most Honored, and it means, we have no knowledge compared to Your encompassing knowledge. Therefore, our knowledge only grasped the visible behavior of these people, not the secrets of their hearts. You are the Knower of everything, Who has encompassing knowledge of all things, and our knowledge compared to Your knowledge is similar to not having any knowledge at all, for
أَنتَ عَلَّمُ الْغُيُوبِ
(only You are the Knower of all that is hidden).
তাফসীরে ইবনে কাসীর বলেছেন:-
নবী রাসূলদেরকে যেসব কওমের নিকট পাঠানো হয়েছিল তারা তাঁদের আমন্ত্রণে সাড়া দিয়েছিল কি দেয়নি সে সম্পর্কে আল্লাহ তাদেরকে কিয়ামতের দিন কিভাবে সম্বোধন করবেন তাই এ আয়াতে বলা হয়েছে। যেমন মহান আল্লাহ অন্য জায়গায় বলেছেন (আরবী) অর্থাৎ “যাদের কাছে রাসূলদের পাঠানো হয়েছিলো তাদেরকেও আমি জিজ্ঞেস করবো এবং রাসূলদেরকেও জিজ্ঞেস করবো।” অন্যত্র বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “তোমার প্রভুর শপথ! আমি তাদের সকলকেই তাদের আমল সম্পর্কে অবশ্যই জিজ্ঞেস করবো।”(১৫:৯২) রাসূলগণ উত্তরে বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “আমাদের কিছুই জানা নেই।” সেদিনের ভয়াবহ অবস্থা দেখেই তাঁদের এ উত্তর হবে। তারা সেদিন ভীত-সন্ত্রস্ত হবেন বলেই তাদের মুখ দিয়ে কোন উত্তর বের হবে না। বরং বলে ফেলবেন- “আমাদের কিছুই জানা নেই।” অতঃপর যখন কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলবেন, তখন নিজের কওম সম্পর্কে সঠিক সাক্ষ্য প্রদান করবেন। কিন্তু তাদের প্রথম উক্তি এরূপই হবে- “হে আল্লাহ! আমরা তো এ সম্পর্কে কিছুই বলতে পারবো না। আপনি তো আলেমুল গায়েব। আপনার মোকাবিলায় আমাদের জ্ঞান থাকতে পারে? এতে কোনই সন্দেহ নেই যে, ভদ্রতা হিসেবে এটা অতি উত্তম জবাবই বটে- “আপনার ব্যাপক জ্ঞানের কাছে আমাদের জ্ঞান অতি তুচ্ছ ও নগণ্য। আমাদের জ্ঞানের ভিত্তি হচ্ছে শুধুমাত্র বাহিকের উপর। পক্ষান্তরে আপনার জ্ঞান আভ্যন্তরীণ সংবাদও রাখে। কেননা, আপনি হচ্ছেন ‘আল্লামুল গুয়ূব বা অদৃশ্য সম্পর্কে সম্যক অবগত। সুতরাং আমাদের উম্মতবর্গ কি জবাব দিয়েছিল তা আপনি ভাল জানেন। কে যে কপটতামূলক আমল করেছে এবং কে বিশ্বাসমূলক কাজ করেছে এই জ্ঞান তো আমাদের নেই, বরং আপনারই আছে।”
তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
টিকা:১২২) অর্থাৎ কিয়ামতের দিন।
টিকা:১২৩) অর্থাৎ দুনিয়াবাসীকে তোমরা যে ইসলামের দাওয়াত দিয়েছিলে তারা তার কী জবাব দিয়েছে?
টিকা:১২৪) অর্থাৎ আমাদের জীবনে আমরা যে সীমাবদ্ধ বাহ্যিক জবাবটুকু পেয়েছি বলে অনুভব করেছি কেবলমাত্র সেটুকুই আমরা জানি। আর আসলে আমাদের দাওয়াতের কোথায় কি প্রতিক্রিয়া হয়েছে এবং কোন আকৃতিতে তার আত্মপ্রকাশ ঘটেছে তার সঠিক ও নির্ভুল জ্ঞান একমাত্র আপনার ছাড়া আর কারোর পক্ষে লাভ করা সম্ভবপর নয়।
তাফসীরে আবুবকর যাকারিয়া বলেছেন:-
পনরতম রুকূ’
[১] অর্থাৎ কেয়ামতে পৃথিবীর শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত জন্মগ্রহণকারী সব মানুষ একটি উন্মুক্ত মাঠে উপস্থিত হবে। সবাই সে সুবিশাল ময়দানে উপস্থিত হবে এবং সবার কাছ থেকে তাদের সারা জীবনের কাজকর্মের হিসাব নেয়া হবে। কিন্তু আয়াতে বিশেষভাবে নবী-রাসূলগণের কথা উল্লেখ করে বলা হয়েছেঃ “ঐ দিনটি বাস্তবিকই স্মরণীয়, যেদিন আল্লাহ্ তা’আলা সব নবী-রাসূলকে হিসাবের জন্য একত্রিত করবেন”। উদ্দেশ্য এই যে, একত্রিত সবাইকে করা হবে, কিন্তু সর্বপ্রথম প্রশ্ন নবী-রাসূলগণকেই করা হবে যাতে সমগ্র সৃষ্টজগত দেখতে পায় যে, আজ হিসাব ও প্রশ্ন থেকে কেউ বাদ পড়বে না। নবী-রাসূলগণকে যে প্রশ্ন করা হবে, তা এই, আপনারা যখন নিজ নিজ উম্মতকে আল্লাহ তা’আলা ও তার সত্য দ্বীনের দিকে আহবান করেছিলেন, তখন তারা আপনাদেরকে কি উত্তর দিয়েছিল? তারা আপনাদের বর্ণিত নির্দেশাবলী পালন করেছিল, না অস্বীকার ও বিরোধিতা করেছিল। এ প্রশ্নের উত্তরে তারা বলবেনঃ “তাদের ঈমান ও কাজকর্ম সম্পর্কে আমাদের জানা নেই। আপনিই স্বয়ং যাবতীয় অদৃশ্য বিষয়ে মহাজ্ঞানী”। ইমাম তাবারী বলেন, তারা আদব রক্ষার্থে বলবেন যে, আপনি ভাল জানেন। অথবা, তারা সেদিনের কঠিন অবস্থা বিবেচনায় জওয়াব দেয়ার চেয়ে আল্লাহর উপরই তার জওয়াবের ভার ছেড়ে দিবেন। অথবা তারা এটা এজন্যে বলবেন যে, বাস্তবিকই আল্লাহ তা’আলা সবচেয়ে ভাল জানেন। নবীদের দাওয়াতে কে কেমন সাড়া দিয়েছিল তা আল্লাহ তা’আলার চেয়ে কেউ ভাল জানে না। [ইবন কাসীর]
সারকথা এই যে, আলোচ্য আয়াতে কেয়ামতের ভয়াবহ দৃশ্যের একটি ঝলক সম্মুখে উপস্থাপিত করা হয়েছে। হিসাব-নিকাষের কাঠগড়ায় আল্লাহ তা’আলার সর্বাধিক ঘনিষ্ঠ ও প্রিয় রাসূলগণ কম্পিত বদনে উপস্থিত হবেন। সুতরাং অন্যদের যে কি অবস্থা হবে, তা সহজেই অনুমেয়। তাই এখন থেকেই সে ভয়াবহ দিনের চিন্তা করা উচিত এবং জীবনকে এ হিসাব-নিকাষের প্রস্তুতিতে নিয়োজিত করা কর্তব্য। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ হাশরের ময়দানে কোন ব্যক্তির পদযুগল ততক্ষণ পর্যন্ত সামনে অগ্রসর হতে পারবে না, যতক্ষণ না তার কাছ থেকে পাঁচটি প্রশ্নের উত্তর নেয়া হয়। প্রথম এই যে, সে জীবনের সুদীর্ঘ ও প্রচুর সংখ্যক দিবারাত্রকে কি কাজে ব্যয় করেছে? দ্বিতীয় এই যে, বিশেষভাবে কর্মক্ষম যৌবনকালকে সে কিভাবে অতিবাহিত করেছে ? তৃতীয় এই যে, সে অর্থকড়ি কোন (হালাল কিংবা হারাম) পথে উপার্জন করেছে? চতুর্থ এই যে, অর্থকড়িতে সে কোন (জায়েয কিংবা নাজায়েয) কাজে ব্যয় করেছে? পঞ্চম এই যে, নিজ ইলম অনুযায়ী সে কি আমল করেছে? [তিরমিয়ীঃ ২৪১৭]
তাফসীরে আহসানুল বায়ান বলেছেন:-
[১] নবী-রসূলগণের সাথে তাঁদের সম্প্রদায় ভালো ও মন্দ যে ব্যবহার প্রদর্শন করেছে তার জ্ঞান তো তাঁদের অবশ্যই থাকবে। কিন্তু কিয়ামতের ভয়াবহতা দেখে এবং আল্লাহর ভয়ে ভীত-সন্ত্রস্ত হওয়ার কারণে ঐ অজ্ঞতা প্রকাশ করবেন। অথবা ঐ অজ্ঞতার সম্পর্ক তাঁদের মৃত্যুর পরবর্তী অবস্থার সাথে হবে। (অর্থাৎ, তাঁদের মৃত্যুর পর তাঁদের উম্মতরা কি করেছেন, সে জ্ঞান তাঁদের নেই।) বলা বাহুল্য, অদৃশ্য বিষয়ের জ্ঞান সম্পূর্ণরূপে একমাত্র আল্লাহর নিকটই আছে। এই জন্য তাঁরা বলবেন, অদৃশ্য সম্পর্কে সম্যক অবগত একমাত্র তুমিই; আমরা নই। এখান থেকে স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে, নবী ও রসূলগণ গায়েব জানতেন না। ‘আলেমুল গায়ব’ একমাত্র মহান আল্লাহর সত্তা। পক্ষান্তরে নবী ও রসূলগণ যা কিছুই জানতেন, প্রথমতঃ তার সম্পর্ক সেই জ্ঞানের সাথে হত, যা রেসালতের দায়িত্ব সম্পাদন করার জন্য জরুরী ছিল। দ্বিতীয়তঃ সে জ্ঞান অহীর মাধ্যমে তাঁরা অবগত হতেন। সুতরাং ‘আলেমুল গায়ব’ তিনিই, যিনি নিজে নিজেই বিনা কোন মাধ্যমে প্রত্যেক জিনিস সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান রাখেন, অন্যের বলে দেওয়ার কারণে অথবা কোন মাধ্যম দিয়ে নয়। যেহেতু যিনি অন্যের জানানোর পর বা কোন মাধ্যম দ্বারা কোন জিনিস সম্পর্কে অবগত হন, তাঁকে ‘আলেমুল গায়ব’ বলা হয় না। অতএব মুসলিমের উচিত, এ সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করা এবং উদাসীনদের দলভুক্ত না হওয়া।