أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book# 114/٢٢٧)-৪২৯
www.motaher21.net
সুরা: আল-আনয়াম
৪-৬ নং আয়াত:-
وَمَا تَأْتِيهِم مِّنْ ءَايَة….
And never an Ayah comes to them from the Ayat…..
এমন কোন নিদর্শন তাদের নিকট উপস্থিত হয় না…
আয়াত:-৪
وَمَا تَأْتِيهِم مِّنْ ءَايَةٍ مِّنْ ءَايٰتِ رَبِّهِمْ إِلَّا كَانُوا عَنْهَا مُعْرِضِينَ
তাদের প্রতিপালকের নিদর্শনাবলীর মধ্যে এমন কোন নিদর্শন তাদের নিকট উপস্থিত হয় না, যা থেকে তারা মুখ ফেরায় না।
আয়াত:-৫
فَقَدْ كَذَّبُوا بِالْحَقِّ لَمَّا جَآءَهُمْ ۖ فَسَوْفَ يَأْتِيهِمْ أَنۢبٰٓؤُا مَا كَانُوا بِهِۦ يَسْتَهْزِءُونَ
অতঃপর অবশ্যই তারা সত্যকে অস্বীকার করেছে, যখন তা তাদের কাছে এসেছে। সুতরাং অচিরেই তাদের কাছে সে বিষয়ের সংবাদ আসবে যা নিয়ে তারা উপহাস করত।
আয়াত:-৬
أَلَمْ يَرَوْا كَمْ أَهْلَكْنَا مِن قَبْلِهِم مِّن قَرْنٍ مَّكَّنّٰهُمْ فِى الْأَرْضِ مَا لَمْ نُمَكِّن لَّكُمْ وَأَرْسَلْنَا السَّمَآءَ عَلَيْهِم مِّدْرَارًا وَجَعَلْنَا الْأَنْهٰرَ تَجْرِى مِن تَحْتِهِمْ فَأَهْلَكْنٰهُم بِذُنُوبِهِمْ وَأَنشَأْنَا مِنۢ بَعْدِهِمْ قَرْنًا ءَاخَرِينَ
তারা কি দেখে না, আমি তাদের পূর্বে বহু প্রজন্মকে ধ্বংস করেছি? যাদেরকে যমীনে এমনভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছিলাম যেভাবে তোমাদেরকে প্রতিষ্ঠিত করিনি। আর তাদের উপর বৃষ্টি পাঠিয়েছিলাম মুষলধারে এবং সৃষ্টি করেছিলাম নদীসমূহ যা তাদের নীচে প্রবাহিত হত। অতঃপর তাদের পাপের কারণে তাদেরকে ধ্বংস করেছি এবং তাদের পরে অন্য প্রজন্মকে সৃষ্টি করেছি।
৪-৬ নং আয়াতের তাফসীর:
তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ বলেছেন:-
اٰيَةٌ আয়াত দ্বারা উদ্দেশ্য এমন নিদর্শন ও দলীল যা আল্লাহ তা‘আলার তাওহীদ, রাসূলের প্রতি ঈমান ও পুনরুত্থানের প্রতি প্রমাণ বহন করে। একশত বছরকে قَرْنٍ ‘র্কন’ বা এক শতাব্দি বলা হয়। অর্থাৎ পূর্ববর্তী শতাব্দীর মানুষ। مِّدْرَارً মুষলধারে বৃষ্টি হওয়াকে মিদরার বলা হয়।
এ আয়াতগুলোতে একশ্রেণির মানুষের বর্ণনা তুলে ধরা হয়েছে, যাদের কাছে সত্যের নিদর্শন ও প্রমাণ আসার পরে তারা তা প্রত্যাখ্যান করেছে, সেই সাথে তাদের পূর্ববর্তী সত্য বর্জনকারী জাতির ধ্বংসের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে সতর্ক করা হয়েছে।
তারা হল কাফির-মুশরিক, যুগে যুগে নাবী-রাসূলগণ যে সত্যের দাওয়াত নিয়ে এসেছেন তারা সে দাওয়াত বর্জন করে ঔদ্ধত্য প্রকাশ করেছে। আল্লাহ তা‘আলা তাদের সতর্ক করে দিচ্ছেন যে, তোমাদের পূর্বে অনেক জাতিকে দুনিয়াতে প্রেরণ করেছিলাম এবং নেয়ামতরাজি দ্বারা প্রতিষ্ঠিত করেছিলাম। কিন্তু তাদের অপরাধের কারণে তাদেরকে ধ্বংস করে দিয়েছি। অতএব তাদের থেকে তোমাদের শিক্ষা নেয়া উচিত।
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. পূর্ববর্তী অপরাধীদের শাস্তি থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত।
২. আল্লাহ তা‘আলা যাদেরকে শাস্তি দিয়েছেন তারা সবাই চরমভাবে সীমালংঘন করেছিল।
English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Verses :- 4-6
وَمَا تَأْتِيهِم مِّنْ ءَايَة…..
And never an Ayah comes to them from the Ayat….
Threatening the Idolators for their Stubbornness
Allah says;
وَمَا تَأْتِيهِم مِّنْ ايَةٍ مِّنْ ايَاتِ رَبِّهِمْ إِلاَّ كَانُواْ عَنْهَا مُعْرِضِينَ
And never an Ayah comes to them from the Ayat of their Lord, but that they have been turning away from it.
Allah states that the rebellious, stubborn polytheists will turn away from every Ayah, meaning, sign, miracle and proof that is evidence of Allah’s Uniqueness and the truth of His honorable Messengers. They will not contemplate about these Ayat or care about them.
Allah said,
فَقَدْ كَذَّبُواْ بِالْحَقِّ لَمَّا جَاءهُمْ فَسَوْفَ يَأْتِيهِمْ أَنبَاء مَا كَانُواْ بِهِ يَسْتَهْزِوُونَ
Indeed, they rejected the truth when it came to them, but there will come to them the news of that which they used to mock at.
This Ayah contains a warning and a stern threat for the disbelievers’ rejection of the truth, stating that the disbelievers will surely know the truth of what they used to deny and taste the evil end of their behavior.
Allah advises and warns the disbelievers, that they should avoid the torments and afflictions of this life, similar to what befell their likes from previous nations, who were stronger, wealthier, had more offspring, and were more exploitive on the earth.
Allah said
أَلَمْ يَرَوْاْ كَمْ أَهْلَكْنَا مِن قَبْلِهِم مِّن قَرْنٍ مَّكَّنَّاهُمْ فِي الَارْضِ مَا لَمْ نُمَكِّن لَّكُمْ
Have they not seen how many a generation before them We have destroyed whom We had established on the earth such as We have not established you!
meaning, they had more wealth, children, buildings, abundant provision, riches and soldiers.
Allah said next,
وَأَرْسَلْنَا السَّمَاء عَلَيْهِم مِّدْرَارًا
and We poured out on them rain from the sky in abundance,
in reference to rain that comes often,
وَجَعَلْنَا الَانْهَارَ تَجْرِي مِن تَحْتِهِمْ
And made the rivers flow under them.
as rain was abundant and the springs were plentiful, so that We deceived them.
فَأَهْلَكْنَاهُم بِذُنُوبِهِمْ
Yet We destroyed them for their sins,
meaning the mistakes and errors that they committed,
وَأَنْشَأْنَا مِن بَعْدِهِمْ قَرْنًا اخَرِينَ
and created after them other generations,
for, these generations of old perished and became as legends and stories,
وَأَنْشَأْنَا مِن بَعْدِهِمْ قَرْنًا اخَرِينَ
(And created after them other generations), so that We test the new generations, as well. Yet, they committed similar errors and were destroyed, as their ancestors were destroyed. Therefore, beware of the same end that might befall you, for you are not dearer to Allah than these previous nations, but the Messenger whom you defied is dearer to Allah than the Messengers they defied. Thus, you are more liable than them to receive torment, if it was not for Allah’s mercy and kindness.
৪-৬ নং আয়াতের তাফসীর:
তাফসীরে ইবনে কাসীর বলেছেন:-
মুশরিক ও কাফিরদের সম্পর্কে আল্লাহ তা’আলা সংবাদ দিচ্ছেন যে, যখনই তাদের কাছে আল্লাহর কোন আয়াত আসে অর্থাৎ কোন মু’জিযা বা আল্লাহ তাআলার একত্ত্বের উপর কোন স্পষ্ট দলীল অথবা রাসূল (সঃ)-এর সত্যতার কোন নিদর্শন এসে পড়ে তখন তারা তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং ওটাকে মোটেই গ্রাহ্য করে না। আর যখন তাদের কাছে সত্য কথা এসে যায় তখন। তারা তা অস্বীকার করতে শুরু করে। এর পরিণাম তারা সতুরই জানতে পারবে। এটা তাদের জন্যে কঠিন হুমকি স্বরূপ। কেননা, তারা সত্যকে মিথ্যা জেনেছে। সুতরাং এখন এই মিথ্যা প্রতিপন্ন করার পরিণাম তাদেরকে অবশ্যই দেখতে হবে। আল্লাহ তা’আলা তাদেরকে ভয় প্রদর্শন করছেন যে, তাদের পূর্ববর্তী লোকেরা, যারা তাদের চেয়ে বেশী শক্তিশালী ছিল এবং শাসন ক্ষমতাও লাভ করেছিল, আর সংখ্যার দিক দিয়েও তারা অধিক ছিল, তাদেরকেও তিনি শাস্তি থেকে রেহাই দেননি। এটা থেকে তাদের শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত যে, ঐরূপ শাস্তি তাদের উপরও এসে যেতে পারে। তাই আল্লাহ পাক বলেনঃ তারা কি দেখেনি যে, আমি তাদের পূর্বে বহু কওমকে ধ্বংস করে দিয়েছি? অথচ তারা দুনিয়ায় বিরাট শক্তির অধিকারী ছিল! তাদের মত ধন-দৌলত, সন্তান-সন্ততি এবং শান-শওকত তোমরা লাভ করতে পারনি। আমি তাদের উপর আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করতাম। তারা দুর্ভিক্ষের সম্মুখীন হয়নি। তাদেরকে আমি বাগ-বাগিচা, ঝরণা এবং নদ-নদী প্রদান করেছিলাম। এর দ্বারা আমার উদ্দেশ্য ছিল তাদেরকে ঢিল দিয়ে রাখা। অতঃপর তাদের পাপের কারণে আমি তাদেরকে ধ্বংস করে দিয়েছি এবং তাদের স্থলে অন্য কওমকে এনে বসিয়েছি। পূর্ববর্তী লোকেরা তো তাদের কর্মফল হিসেবে ধ্বংস হয়ে যায়! তাদের পরবর্তী লোকেরাও কিন্তু তাদের মতই আমল করে, ফলে তাদের মত তারাও হালোক হয়ে যায়। অতএব, হে লোক সকল! তোমরাও ভয় কর, নতুবা তোমাদের পরিণতিও তাদের মতই হবে। তোমাদেরকে ধ্বংস করা তাদের তুলনায় আল্লাহর কাছে মোটেই বড় কাজ নয়। তোমরা যে রাসূলকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করছো তিনি। তো তাদের রাসূল অপেক্ষা বেশী মর্যাদার অধিকারী। সুতরাং তোমরা যদি তাঁর আনুগত্য স্বীকার না কর তবে তোমরা তাদের চেয়ে বেশী শাস্তির যোগ্য হয়ে যাবে।
তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
টিকা:৪) এখানে হিজরত এবং হিজরতের পরে ইসলাম একের পর এক যেসব সাফল্য অর্জন করবে সেদিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। যখন এ ইঙ্গিত করা হয়েছিল সে সময় কোন্ ধরনের খবর পৌঁছবে সে সম্পর্কে কাফেররা কোন কল্পনাই করতে পারেনি এবং মুসলমানদেরও এ সম্পর্কে কোন ধারণা ছিল না। এমনকি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও ভবিষ্যতের সম্ভাবনা সম্পর্কে অনবহিত ছিলেন।
তাফসীরে আবুবকর যাকারিয়া বলেছেন:-
[১] এ আয়াতে অমনোযোগী মানুষের হঠকারিতা ও সত্যবিরোধী জেদের কথা উল্লেখ করে বলা হয়েছে যে, তাদের কাছে আল্লাহর নিদর্শনাবলী থাকার পাশাপাশি নবীরাসূলগণ তাদের কাছে আল্লাহ্ তা’আলার একত্ববাদের সুস্পষ্ট যুক্তি-প্রমাণ ও নিদর্শন নিয়ে এসেছেন এবং তা তাদের কাছে স্পষ্টও হয়েছে। তা সত্ত্বেও অবিশ্বাসীরা এ কর্মপন্থা অবলম্বন করে রেখেছে যে, আল্লাহর পক্ষ থেকে তাদের হেদায়াতের জন্য যে কোন নিদর্শন প্রেরণ করা হলে, তারা তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়- এ সম্পর্কে মোটেই চিন্তা-ভাবনা করে না। [মুয়াসসার]
[২] এ আয়াতে বলা হচ্ছে যে, সত্য যখন তাদের সামনে প্রতিভাত হল, তখন তারা সত্যকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করল। এখানে সত্য’র অর্থ কুরআন হতে পারে এবং নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-ও হতে পারে। [তাবারী, কুরতুবী, ইবন কাসীর, ফাতহুল কাদীর]কেননা, মহানবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম আজীবন আরব গোত্রসমূহের মধ্যেই অবস্থান করেন। তার শৈশব থেকে যৌবন এবং যৌবন থেকে বার্ধক্য তাদের সামনে সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে। তারা এ কথা পুরোপুরিই জানত যে, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোন মানুষের কাছে এক অক্ষরও শিক্ষা লাভ করেননি। এমনকি তিনি নিজ হাতে নিজের নামও লিখতে পারতেন না। সারা আরবে তিনি উম্মি বা নিরক্ষর উপাধিতে খ্যাত ছিলেন। চল্লিশ বছর পূর্ণ হয়ে যেতেই অকস্মাৎ তার মুখ দিয়ে নিগূঢ় তত্ত্ব সম্পন্ন বাণীসমূহের এমন স্রোতধারা প্রবাহিত হতে লাগল, যা জগতের যাবতীয় জ্ঞানী-গুণীদেরকেও বিস্ময়াভিভূত করে দেয়। তিনি আল্লাহর কালাম কুরআনের মোকাবেলা করার জন্য আরবের স্বনামখ্যাত, প্রাঞ্জলভাষী কবি-সাহিত্যিক ও অলঙ্কারবিদদেরকে চ্যালেঞ্জ করেন। তারা মহানবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য স্বীয় জান-মাল, মান-সন্ত্রম, সন্তান-সন্ততি ও পরিবার-পরিজন বিসর্জন দিতে সর্বদা প্রস্তুত থাকত। কিন্তু এ চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে কুরআনের একটি আয়াতের অনুরূপ বাক্য রচনা করার সামর্থ্য তাদের কারো হল না। এভাবে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং কুরআনের অস্তিত্ব ছিল সত্যের এক বিরাট নিদর্শন। এছাড়া মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মাধ্যমে হাজারো মু’জিযা ও খোলাখুলি নিদর্শন প্রকাশ পায়, যে কোন সুস্থ বিবেকসম্পন্ন মানুষ যা অস্বীকার করতে পারত না। কিন্তু কাফেররা এসব নিদর্শনকে সুস্পষ্ট মিথ্যা বলে উড়িয়ে দিল।
[৩] আয়াতের শেষে কাফেরদের অস্বীকৃতি ও মিথ্যারোপের অশুভ পরিণতির দিকে ইঙ্গিত
করে বলা হয়েছে যে, আজ তো এসব অপরিণামদর্শী লোকেরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মু’জিযা, তার আনীত হেদায়াত, কেয়ামত ও আখেরাত সবকিছু নিয়েই হাস্যোপহাস করছে, কিন্তু সে সময় দূরে নয়, যখন এগুলোর স্বরূপ তাদের দৃষ্টিতে প্রতিভাত হবে আর যদি তা না করা হয় তবে যা নিয়ে তারা ঠাট্টাবিদ্রুপ করছে তা দলীল-প্রমাণসহ তাদের সামনে উপস্থিত হবে। এত সাবধানবাণীর পরও কাফেররা তাদের অবস্থান থেকে সরে আসে নি। তাদের পথভ্রষ্টতা থেকে ফিরে আসেনি। শেষপর্যন্ত আল্লাহ তা’আলা তার এ ওয়াদা সত্য করে দেখিয়েছেন। বদরের দিন তিনি তাদের উপর তরবারীর মাধ্যমে সে ফয়সালা করে দেন। [তাবারী]
তাছাড়া তাদের বিচারের আরেক ব্যবস্থা রয়েছেই। তা কেয়ামতদিবসে প্রতিষ্ঠিত হবে। সেখানে প্রত্যেককে তার ঈমান ও আমলের হিসাব দিতে হবে এবং প্রত্যেক ব্যক্তি নিজ নিজ কর্মের পুরস্কার ও শাস্তি পাবে। তখন এগুলোকে বিশ্বাস ও অস্বীকার করলেও কোন উপকার বা ক্ষতি হবে না। কেননা, সেটা কর্মজগত নয় প্রতিদান দিবস। আল্লাহ তা’আলা এখনো চিন্তা-ভাবনা করার সুযোগ দিয়েছেন। এ সুযোগের সদ্ব্যবহার করে আল্লাহর নিদর্শনাবলীতে বিশ্বাস স্থাপন করলেই দুনিয়া ও আখেরাতে কল্যাণ সাধিত হবে। যদি তা না করে, তবে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা’আলা মিথ্যারোপকারীদের বলবেন, “এটাই সে আগুন যাকে তোমরা মিথ্যা মনে করতে ” সূরা আত-তুর:১৪] কিয়ামতের দিন কাফেরদের সামনে কিভাবে এ সত্যকে উপস্থাপন করা হবে তার বর্ণনায় আল্লাহ আরও বলেন, “আর তারা দৃঢ়তার সাথে আল্লাহর শপথ করে বলে, যার মৃত্যু হয় আল্লাহ তাকে পুনজীবিত করবেন না। কেন নয়? তিনি তার প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করবেনই। কিন্তু বেশীর ভাগ মানুষই এটা জানে না– তিনি পুনরুথিত করবেন যে বিষয়ে তাদের মতানৈক্য ছিল তা তাদেরকে স্পষ্টভাবে দেখানোর জন্য এবং যাতে কাফিররা জানতে পারে যে, তারাই ছিল মিথ্যাবাদী” [সূরা আন-নাহল:৩৮, ৩৯] [সা’দী]
[৪] আলোচ্য প্রথম আয়াতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রত্যক্ষ সম্বোধিত মক্কাবাসীদের অবস্থা সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, তারা কি পূর্ববর্তী জাতিসমূহের অবস্থা দেখেনি? দেখলে তা থেকে তারা শিক্ষা ও উপদেশ অর্জন করতে পারত। এখানে ‘দেখা’র অর্থ তাদের অবস্থা সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করা। কেননা, সে জাতিগুলো তখন তাদের সামনে ছিল না। [আল-মানার]
[৫] এ আয়াতে কাফেরদেরকে পূর্ববতী জাতিসমূহের ধ্বংস ও বিপর্যয় থেকে শিক্ষা নেয়ার কথা উল্লেখ করে বলা হয়েছে, “আমরা তাদের পূর্বে অনেক ‘করণ’ (প্রজন্ম)কে ধ্বংস করে দিয়েছি।” [সা’দী] (قرن) শব্দের অর্থ সমসাময়িক লোকসমাজ এবং সুদীর্ঘ কাল। দশ বছর থেকে একশ’ বছর পর্যন্ত সময়কাল অর্থেও এ শব্দটি ব্যবহৃত হয়। [বাগভী, কুরতুবী] কিন্তু (قرن) শব্দের অর্থ যে এক শতাব্দী, কোন কোন ঘটনা ও হাদীস থেকে এর সমর্থন পাওয়া যায়। এক হাদীসে আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম আব্দুল্লাহ ইবনে বুছরকে বলেছিলেনঃ ‘সে এক ‘করণ’ পর্যন্ত জীবিত থাকবে’। পরে দেখা গেল যে, তিনি পূর্ণ একশ’ পর্যন্ত জীবিত ছিলেন। [মুসনাদে আহমাদ ৪/১৮৯ ]
[৬] পূর্ববতী আয়াতসমূহে যারা আল্লাহর বিধান ও নবীগণের শিক্ষা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিত কিংবা বিরোধিতা করত, তাদের প্রতি কঠোর শাস্তিবাণী উচ্চারিত হয়েছিল। আলোচ্য আয়াতসমূহে এসব অবিশ্বাসীর দৃষ্টি পারিপার্শ্বিক অবস্থা ও প্রাচীনকালের ঐতিহাসিক ঘটনাবলীর প্রতি আকৃষ্ট করে তাদেরকে শিক্ষা ও উপদেশ গ্রহণের সুযোগ দেয়া হয়েছে। [তাবারী, ইবন কাসীর] এ আয়াতে অতীত জাতিসমূহ সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, আল্লাহ তা’আলা পৃথিবীতে তাদেরকে এমন বিস্তৃতি, শক্তি ও জীবন ধারণের সাজ-সরঞ্জাম দান করেছিলেন, যা পরবতী লোকদের ভাগ্যে জুটেনি। কিন্তু তারাই যখন নবীগণের প্রতি মিথ্যারোপ করল এবং আল্লাহর নিদর্শনের বিরুদ্ধাচরণ করল, তখন প্রভূত জাকজমক, প্রতাপ-প্রতিপত্তি ও অর্থসম্পদ তাদেরকে আল্লাহর আযাব থেকে রক্ষা করতে পারল না। তারা পৃথিবীর বুক থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। আজ মক্কাবাসীদেরকে সম্বোধন করা হচ্ছে। আদ ও সামূদ গোত্রের মত শক্তিবল তাদের নেই এবং সিরিয়া ও ইয়েমেনবাসীদের অনুরূপ স্বাচ্ছন্দ্যশীলও তারা নয়। এসব অতীত জাতিসমূহের ঘটনাবলী থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা এবং নিজেদের ক্রিয়াকর্মের পর্যালোচনা করে দেখা তাদের উচিত। বিরুদ্ধাচরণ করলে তাদের পরিণতি কি হবে, তাও ভেবে দেখা দরকার। [ইবন কাসীর, আইসারুত তাফাসীর, মুয়াসসার]
[৭] আয়াতের শেষে বলা হয়েছে, আল্লাহ তা’আলার শক্তি-সামর্থ্য শুধু প্রবল প্রতাপান্বিত, অসাধারণ জাকজমক ও সাম্রাজ্যের অধিপতি এবং জনবহুল ও মহাপরাক্রান্ত জাতিসমূহকে চোখের পলকে ধ্বংস করেই ক্ষান্ত হয়ে যায় নি, বরং তাদেরকে ধ্বংস করার সাথে সাথে তাদের স্থলে অন্য জাতি সৃষ্টি করে সেখানে বসিয়ে দিয়েছে। সুতরাং মক্কাবাসীদের উচিত ভয় করা। [কুরতুবী, ইবন কাসীর]