أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book# 114/٢٣٢)-৪৩৪
www.motaher21.net
সুরা: আল-আনয়াম
২৭-৩০ নং আয়াত:-
وَنَكُونَ مِنَ الْمُوْمِنِينَ
আমরা মুমিনদের অন্তর্ভুক্ত হতাম!’
We would be of the believers!”
وَ لَوۡ تَرٰۤی اِذۡ وُقِفُوۡا عَلَی النَّارِ فَقَالُوۡا یٰلَیۡتَنَا نُرَدُّ وَ لَا نُکَذِّبَ بِاٰیٰتِ رَبِّنَا وَ نَکُوۡنَ مِنَ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ ﴿۲۷﴾
তুমি যদি তাদের সেই সময়ের অবস্থাটি অবলোকন করতে যখন তাদেরকে জাহান্নামের কিনারায় দাঁড় করানো হবে। তখন তারা বলবেঃ হায়! কতই না ভাল হত আমরা যদি আবার দুনিয়ায় ফিরে যেতে পারতাম, আমরা সেখানে আমাদের রবের নিদর্শনসমূহকে অবিশ্বাস করতামনা এবং আমরা ঈমানদার হয়ে যেতাম!
আয়াত:-২৮
بَلۡ بَدَا لَہُمۡ مَّا کَانُوۡا یُخۡفُوۡنَ مِنۡ قَبۡلُ ؕ وَ لَوۡ رُدُّوۡا لَعَادُوۡا لِمَا نُہُوۡا عَنۡہُ وَ اِنَّہُمۡ لَکٰذِبُوۡنَ ﴿۲۸﴾
যে সত্য তারা পূর্বে গোপন করেছিল তা তখন তাদের নিকট সুস্পষ্ট রূপে প্রতিভাত হয়ে পড়বে, আর যদি তাদেরকে সাবেক পার্থিব জীবনে ফিরে যেতেও দেয়া হয়, তবুও যা করতে তাদেরকে নিষেধ করা হয়েছিল তারা তা’ই করবে, নিঃসন্দেহে তারা মিথ্যাবাদী।
আয়াত:-২৯
وَ قَالُوۡۤا اِنۡ ہِیَ اِلَّا حَیَاتُنَا الدُّنۡیَا وَ مَا نَحۡنُ بِمَبۡعُوۡثِیۡنَ ﴿۲۹﴾
তারা বলেঃ এই পার্থিব জীবনই প্রকৃত জীবন, এরপর আর কোন জীবন নেই, আর আমাদেরকে পুনরুত্থিত করা হবেনা।
আয়াত:-৩০
وَ لَوۡ تَرٰۤی اِذۡ وُقِفُوۡا عَلٰی رَبِّہِمۡ ؕ قَالَ اَلَیۡسَ ہٰذَا بِالۡحَقِّ ؕ قَالُوۡا بَلٰی وَ رَبِّنَا ؕ قَالَ فَذُوۡقُوا الۡعَذَابَ بِمَا کُنۡتُمۡ تَکۡفُرُوۡنَ ﴿٪۳۰﴾
হায়! তুমি যদি সেই দৃশ্যটি দেখতে, যখন তাদেরকে তাদের রবের সম্মুখে দন্ডায়মান করা হবে, তখন আল্লাহ তা‘আলা জিজ্ঞেস করবেনঃ এটা (কিয়ামাত) কি সত্য নয়? তখন তারা উত্তরে বলবেঃ হ্যাঁ, আমরা আমাদের রবের (আল্লাহর) শপথ করে বলছি! এটা বাস্তব ও সত্য বিষয়। তখন আল্লাহ বলবেনঃ তাহলে তোমরা এটাকে অস্বীকার ও অমান্য করার ফল স্বরূপ শাস্তির স্বাদ গ্রহণ কর।
২৭-৩০ নং আয়াতের তাফসীর:
তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ বলেছেন:-
মুশরিক ও কাফিররা যখন জাহান্নামের আগুনের সামনে অবস্থান করবে তখন তাদের অবস্থা কেমন হবে সে দৃশ্যপট আল্লাহ তা‘আলা এখানে তুলে ধরেছেন।
সেদিন তারা আফসোস করে বলবে, যদি পুনরায় দুনিয়াতে ফিরে আসার সুযোগ দেয়া হত। তাদের এ আফসোসের কথা অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(رَبَّنَآ أَبْصَرْنَا وَسَمِعْنَا فَارْجِعْنَا نَعْمَلْ صَالِحًا إِنَّا مُوْقِنُوْنَ)
“হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা দেখলাম ও শ্রবণ করলাম, (এখন) তুমি আমাদেরকে পুনরায় (পৃথিবীতে) প্রেরণ কর; আমরা নেক কাজ করব। আমরা তো দৃঢ় বিশ্বাসী হয়েছি।”(সূরা সিজদাহ ৩২:১২)
আল্লাহ তা‘আলা বলেন, যদি দুনিয়াতে তাদেরকে ফেরত পাঠানো হয় তাহলে তাদেরকে যা নিষেধ করা হয়েছিল তা-ই করবে। তারা মিথ্যুক। কারণ তারা বিশ্বাস করে দুনিয়ার জীবনই হল আসল জীবন। এখন জীবিত আছি আবার মরে যাব। মৃত্যুর পর কিছুই হবে না। অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(إِنْ هِيَ إِلَّا حَيَاتُنَا الدُّنْيَا نَمُوْتُ وَنَحْيَا وَمَا نَحْنُ بِمَبْعُوْثِيْنَ)
“একমাত্র পার্থিব জীবনই আমাদের জীবন, আমরা মরি বাঁচি এখানেই এবং আমরা উত্থিত হব না।”(সূরা মু’মিনূন ২৩:৩৭)
তারা যেসব মিথ্যাচার করেছে কিয়ামতের দিন তাদের সব গোপন বিষয় ফাঁস হয়ে যাবে। নাবী রাসূলগণ যে সত্য নিয়ে এসেছিলেন তারা তা জেনেশুনে গোপন ও প্রত্যাখ্যান করেছে এবং আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত যার ইবাদত করতে নিষেধ করা হয়েছে তারা তার ইবাদত করেছে।
(أَلَيْسَ هٰذَا بِالْحَقِّ)
‘এটা কি প্রকৃত সত্য নয়?’ অর্থাৎ স্বচক্ষে দর্শন করার পর তো তারা স্বীকার করবে যে, আখেরাতের জীবন বাস্তব ও সত্য। তবে সেখানে এ স্বীকারোক্তিতে কোন লাভ হবে না বরং আল্লাহ তা‘আলা বলবেন: “এখন তোমরা তোমাদের কুফরীর কারণে আযাবের স্বাদ গ্রহণ কর।”
সুতরাং সময় থাকতে সতর্ক হওয়া উচিত। জাহান্নামের আগুন দেখার পর দুনিয়াতে আসার আফসোস করে লাভ হবে না। কারণ সেদিন প্রতিদানের দিন, আমলের দিন নয়।
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. কিয়ামতের ভয়াবহতা দেখে কাফির মুশরিকরা দুনিয়াতে ফিরে আসার কামনা করবে, কিন্তু তা অসম্ভব।
২. পুনরুত্থানের প্রতি ঈমান আনা ঈমানের অন্যতম রুকন। এর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন না করলে ঈমানদার হওয়া যাবে না।
৩. সময়ের সদ্ব্যবহার না করলে অসময়ের আফসোস কোন কাজে আসবে না।
English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Verses :- 27-30
وَنَكُونَ مِنَ الْمُوْمِنِينَ
We would be of the believers!”
Wishes and Hopes Do Not Help One When He Sees the Torment
Allah tells;
وَلَوْ تَرَىَ إِذْ وُقِفُواْ عَلَى النَّارِ
If you could but see when they will be held over the (Hell) Fire!
Allah mentions the condition of the disbelievers when they are made to stand before the Fire on the Day of Resurrection and witness its chains and restraints, along with seeing the horrible, momentous conditions in the Fire with their own eyes. This is when,
فَقَالُواْ يَا لَيْتَنَا نُرَدُّ وَلَا نُكَذِّبَ بِأيَاتِ رَبِّنَا وَنَكُونَ مِنَ الْمُوْمِنِينَ
They will say:”Would that we were but sent back (to the world)! Then we would not deny the Ayat of our Lord, and we would be of the believers!”
They wish that they would be sent back to the life of the world so that they could perform righteous deeds, refrain from disbelieving in the Ayat of their Lord and be among the believers.
Allah said
بَلْ بَدَا لَهُم مَّا كَانُواْ يُخْفُونَ مِن قَبْلُ
Nay, what they had been concealing before has become manifest to them.
meaning, the disbelief, denial and rebellion that they used to hide in their hearts will then be uncovered, even though they will try to hide this fact in this life and the Hereafter.
Earlier, Allah said,
ثُمَّ لَمْ تَكُن فِتْنَتُهُمْ
إِلاَّ أَن قَالُواْ وَاللّهِ رَبِّنَا مَا كُنَّا مُشْرِكِينَ
انظُرْ كَيْفَ كَذَبُواْ عَلَى أَنفُسِهِمْ وَضَلَّ عَنْهُم مَّا كَانُواْ يَفْتَرُونَ
There will then be (left) no trial for them but to say:”By Allah, our Lord, we were not those who joined others in worship with Allah.” Look! How they lie against themselves! But the (lie) which they invented will disappear from them. (6:23-24)
It is also possible that the meaning here is that the disbelievers will realize the truth that they knew all along in their hearts, that is, that what the Messengers brought them in this life is true, although they used to deny his Message before their followers.
Allah said that Musa said to Fir`awn,
لَقَدْ عَلِمْتَ مَأ أَنزَلَ هَـوُلاءِ إِلاَّ رَبُّ السَّمَـوَتِ وَالاٌّرْضِ بَصَأيِرَ
“Verily, you know that these signs have clearly been sent down by none but the Lord of the heavens and the earth as eye-opening evidence.” (17:102)
Allah said about Fir`awn and his people,
وَجَحَدُواْ بِهَا وَاسْتَيْقَنَتْهَأ أَنفُسُهُمْ ظُلْماً وَعُلُوّاً
And they belied them (those Ayat) wrongfully and arrogantly, though they were themselves convinced thereof. (27:14)
بَلْ بَدَا لَهُم مَّا كَانُواْ يُخْفُونَ مِن قَبْلُ
Nay, it has become manifest to them what they had been concealing before.
When this occurs, and the disbelievers ask to be returned to this life, they will not do so because they truly wish to embrace the faith. Rather, they ask to be returned to this life for fear of the torment that they are witnessing before them, as punishment for the disbelief they committed, and to try and avoid the Fire that they see before their eyes.
وَلَوْ رُدُّواْ لَعَادُواْ لِمَا نُهُواْ عَنْهُ وَإِنَّهُمْ لَكَاذِبُونَ
But if they were returned, they would certainly revert to that which they were forbidden. And indeed they are liars.
meaning, they lie when they say they wish to go back to this life so that they can embrace the faith.
Allah states that even if they were sent back to the life of this world, they will again commit the disbelief and defiance that they were prohibited.
وَإِنَّهُمْ لَكَاذِبُونَ
(And indeed they are liars), in their statement that,
فَقَالُواْ يَا لَيْتَنَا نُرَدُّ وَلَا نُكَذِّبَ بِأيَاتِ رَبِّنَا وَنَكُونَ مِنَ الْمُوْمِنِينَ
بَلْ بَدَا لَهُم مَّا كَانُواْ يُخْفُونَ مِن قَبْلُ
وَلَوْ رُدُّواْ لَعَادُواْ لِمَا نُهُواْ عَنْهُ وَإِنَّهُمْ لَكَاذِبُونَ
“Would that we were but sent back! Then we would not deny the Ayat of our Lord, and we would be of the believers!”
Nay, what they had been concealing before has become manifest to them. But if they were returned, they would certainly revert to that which they were forbidden. And indeed they are liars.
Therefore, they will revert to their old behavior
وَقَالُواْ إِنْ هِيَ إِلاَّ حَيَاتُنَا الدُّنْيَا
And they said:There is no life but our life of this world,
and there is no Hereafter,
وَمَا نَحْنُ بِمَبْعُوثِينَ
and never shall we be resurrected.
Allah said
وَلَوْ تَرَى إِذْ وُقِفُواْ عَلَى رَبِّهِمْ
If you could but see when they will stand before their Lord!
in front of Him,
قَالَ أَلَيْسَ هَذَا بِالْحَقِّ
He will say:”Is not this the truth”
meaning, is not Resurrection true, contrary to what you thought,
قَالُواْ بَلَى وَرَبِّنَا
They will say:”Yes, by our Lord!”
قَالَ فَذُوقُواْ العَذَابَ بِمَا كُنتُمْ تَكْفُرُونَ
He will then say:”So taste you the torment because you used not to believe.”
and because you today denied Resurrection. Therefore, taste the torment,
أَفَسِحْرٌ هَـذَا أَمْ أَنتُمْ لَا تُبْصِرُونَ
“Is this magic, or do you not see!” (52:15)
তাফসীরে ইবনে কাসীর বলেছেন:-
২৭-৩০ নং আয়াতের তাফসীর:
আল্লাহ পাক এখানে কাফিরদের অবস্থা বর্ণনা করছেন যে, কিয়ামতের দিন যখন তাদেরকে আগুনের সামনে দাঁড় করানো হবে, তারা ওর কড়া ও শৃংখল দেখতে পাবে, তখন অফিসোস করে বলবেঃ হায়! পুনরায় যদি আমাদেরকে দুনিয়ায় ফিরিয়ে দেয়া হতো তবে আমরা ভাল কাজ করতাম এবং আমাদের প্রতিপালকের আয়াতসমূহ অবিশ্বাস করতাম না। বরং ঐগুলোর উপর ঈমান আনয়ন করতাম। আল্লাহ পাক বলেনঃ না, না, বরং কথা এই যে, কুফর, অবিশ্বাস ও বিরোধিতার যে ব্যাপারগুলো তারা অন্তরে গোপন রেখেছিল সেগুলো আজ প্রকাশ হয়ে গেল। যদিও দুনিয়া বা আখিরাতে তারা তা অস্বীকার করেছে। যেমন মহান আল্লাহ বলেনঃ “তাদের যুক্তি শুধুমাত্র এটাই যে, তারা বলে-আমরা মুশরিক ছিলাম না। লক্ষ্য কর, তারা কিরূপ মিথ্যা কথা বানিয়ে নিয়েছে। এর অর্থ এও হতে পারে দুনিয়ায় তারা যে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর সত্যতা জানা সত্ত্বেও তাঁর উপর ঈমান আনেনি সেটা কিয়ামতের দিন তাদের কাছে প্রকাশ পেয়ে যাবে এবং তখন তারা আফসোস করতে থাকবে। দুনিয়ায় কিন্তু সেটা প্রকাশ পায়নি। যেমন হযরত মূসা (আঃ) ফিরাউনকে বলেছিলেনঃ “হে ফিরাউন! তুমি তো ভালরূপেই জান যে, এটা আল্লাহই অবতীর্ণ করেছেন!” আর আল্লাহ পাকও ফিরাউন ও তার কওম সম্পর্কে বলেছেনঃ “তারা অস্বীকার করেছে বটে, কিন্তু তাদের অন্তরে এই বিশ্বাস রয়েছে যে, ওটা তাদের পক্ষ থেকে অত্যাচার ও বাড়াবাড়ি।” এর ভাবার্থ এটা হওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে যে, এর দ্বারা ঐ মুনাফিকদেরকে বুঝানো হয়েছে, যারা লোকদের সামনে মুমিন বলে পরিচিত ছিল বটে, কিন্তু ভিতরে ছিল কাফির। এর মাধ্যমে এই কাফিরদের ঐ কথার সংবাদ দেয়া হচ্ছে যেই কথা তারা কিয়ামতের দিন বলবে। যদিও এই সূরাটি মক্কী এবং নিফাক তো ছিল মদীনাবাসী বা ওর আশে পাশের লোকদের মধ্যে, তবুও এতে কোন ক্ষতি নেই। কেননা, আল্লাহ তাআলা তো মক্কী সূরার মধ্যেও নিফাকের বর্ণনা দিয়েছেন এবং সেটা হচ্ছে সূরায়ে আনকাবূত। এই সূরায় আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ যারা মুমিন তাদেরকেও আল্লাহ জানেন এবং যারা মুনাফিক তাদেরকেও জানেন।’ (২৯:১১) এর উপর ভিত্তি করেই বলা হয়েছে যে, পরকালে মুনাফিকরা যখন শাস্তি অবলোকন করবে তখন কুফর ও নিফাক গোপন করার পর তাদের কাছে এটা সুস্পষ্ট হয়ে উঠবে যে, তাদের ঈমান ছিল বাহ্যিক ঈমান। সুতরাং এখানে আল্লাহ পাক যে বলেছেন, তারা যা গোপন করতো এখন তা প্রকাশ পেয়েছে’ এর ভাবার্থ এই যে, তারা পুনরায় দুনিয়ায় ফিরে যেতে চাচ্ছে তা যে ঈমানের প্রতি ভালবাসা ও আগ্রহের কারণে তা নয়। বরং কিয়ামতের দিনের শাস্তি দেখে ভীত-সন্ত্রস্ত হয়েই তারা এ কথা বলছে। উদ্দেশ্য হচ্ছে এ কথা বলে সাময়িকভাবে জাহান্নামের শাস্তি হতে মুক্তি লাভ। আর যদি তাদেরকে। পুনরায় দুনিয়ায় পাঠানোও হয় তবে আবারও তারা কুফরী করতেই থাকবে। তারা যে বলছে, “আমরা আর অবিশ্বাস করবো না, বরং ঈমানদার হয়ে যাবো এ সব মিথ্যা কথা। তারা তো বলে-এই পার্থিব জীবনই প্রকৃত জীবন, এরপর আর কোন জীবন নেই, আর আমাদেরকে পুনরুথিতও করা হবে না। আল্লাহ পাক মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (সঃ)-কে সম্বোধন করে বলেনঃ হায়! তুমি যদি সেই দৃশ্যটি দেখতে, যখন তাদেরকে তাদের প্রতিপালকের সামনে দণ্ডায়মান করা হবে, তখন আল্লাহ তা’আলা তাদেরকে জিজ্ঞেস করবেন- এটা (অর্থাৎ কিয়ামত) কি সত্য নয়? তারা উত্তরে বলবেঃ হ্যা, আপনার কসম! এটা সত্য। তখন তাদেরকে নির্দেশ দেয়া হবে। তাহলে তোমরা শাস্তির স্বাদ গ্রহণ কর, এটা কি যাদু? তোমাদেরকে কি অন্তদৃষ্টি দেয়া হয়নি?
তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
টিকা:১৯) অর্থাৎ তাদের একথা আসলে বুদ্ধি-বিবেক ও চিন্তা-ভাবনার কোন সঠিক সিদ্ধান্ত এবং তার ভিত্তিতে কোন যথার্থ মত পরিবর্তনের ফল হবে না। বরং তা হবে নিছক সত্যের সাথে সরাসরি সাক্ষাতের ফল, যার পরে কোন কট্টর কাফেরও আর অস্বীকার করার ধৃষ্টতা দেখাতে পারে না।
তাফসীরে আবুবকর যাকারিয়া বলেছেন:-
[১] ইসলামের তিনটি মৌলনীতি রয়েছে- (এক) একত্ববাদ (দুই) রেসালাত ও (তিন) আখেরাতে বিশ্বাস। [তাফসীর মানার: ৯/৩৯] অবশিষ্ট সমস্ত বিশ্বাস এ তিনটিরই অধীন। এ তিন মূলনীতি মানুষকে স্বীয় স্বরূপ ও জীবনের লক্ষ্যের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। এগুলোর মধ্যে আখেরাত ও আখেরাতের প্রতিদান ও শাস্তির বিশ্বাস কার্যতঃ এমন একটি বিশ্বাস, যা মানুষের প্রত্যেক কাজের গতি একটি বিশেষ দিকে ঘুরিয়ে দেয়। এ কারণেই কুরআনুল কারীমের সব বিষয়বস্তু এ তিনটির মধ্যেই চক্রাকারে আবর্তিত হয়। আলোচ্য আয়াতসমূহে বিশেষভাবে আখেরাতের প্রশ্ন ও উত্তর, কঠোর শাস্তি, অশেষ সওয়াব এবং ক্ষণস্থায়ী দুনিয়ার স্বরূপ বর্ণিত হয়েছে।
[২] এ আয়াতে অবিশ্বাসী, অপরাধীদের অবস্থা বর্ণনা করে বলা হয়েছে, আখেরাতে যখন তাদেরকে জাহান্নামের কিনারায় দাঁড় করানো হবে এবং তারা কল্পনাতীত ভয়াবহ শাস্তি প্রত্যক্ষ করবে, তখন তারা আকাঙ্খা প্রকাশ করে বলবে, আফসোস, আমাদেরকে পুনরায় দুনিয়াতে প্রেরণ করা হলে আমরা রব-এর প্রেরিত নিদর্শনাবলী ও নির্দেশাবলীকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করতাম না, বরং এগুলো বিশ্বাস করে ঈমানদারদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যেতাম। [মুয়াসসার]
[৩] তাদের এ উক্তিকে মিথ্যা বলা পরিণতির দিক দিয়েও হতে পারে। অর্থাৎ তারা ওয়াদা করেছে যে, আমরা দুনিয়াতে পুনঃ প্রেরিত হলে মিথ্যারোপ করবো না, এর পরিণতি কিন্তু এরূপ হবে না; তারা দুনিয়াতে পৌঁছে আবারো মিথ্যারোপ করবে। [ইবন কাসীর] আবার এ মিথ্যা বলার এ অর্থও হতে পারে যে, তারা এখনো যা কিছু বলছে, তা সদিচ্ছায় বলছে না, বরং সাময়িক বিপদ টলানোর উদ্দেশ্যে, শাস্তির কবল থেকে বাঁচার জন্যে বলছে- অন্তরে এখনো তাদের সদিচ্ছা নেই। [ইবন কাসীর]
[৪] অর্থাৎ যদি তারা দুনিয়াতে পুনঃ প্রেরিত হয়, তবে সেখানে পৌঁছে এ কথাই বলবে যে, আমরা এ পার্থিব জীবন ছাড়া অন্য কোন জীবন মানি না; এ জীবনই একমাত্র জীবন। আমাদেরকে পুনরায় জীবিত করা হবে না। [ইবন কাসীর] মোট কথাঃ কাফের ও পাপীরা হাশরের ময়দানে প্রাণ রক্ষার্থে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে নানা ধরণের কথাবার্তা বলবে। কখনো মিথ্যা কসম খাবে, কখনো দুনিয়ায় পুনঃ প্রেরিত হওয়ার আকাঙ্খা করবে। এতে ফুটে উঠল যে, পার্থিব জীবন অনেক বড় নেয়ামত এবং অত্যন্ত মূল্যবান বিষয়। যদি তা সঠিকভাবে কাজে লাগানো যায়। তাই ইসলামে আত্মহত্যা হারাম এবং মৃত্যুর জন্য দো’আ ও মৃত্যু কামনা করা নিষিদ্ধ। কারণ এতে আল্লাহ তা’আলার একটি বিরাট নেয়ামতের প্রতি অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়। সারকথা এই যে, দুনিয়াতে যে বস্তুটি প্রত্যেকেই প্রাপ্ত হয়েছে এবং যা সর্বাধিক মূল্যবান ও প্রিয়, তা হচ্ছে মানুষের জীবন। এ কথাও সবার জানা যে, মানুষের জীবনের একটা সীমাবদ্ধ গণ্ডি রয়েছে কিন্তু তার সঠিক সীমা কারো জানা নেই যে, তা সত্তর বছর হবে, না সত্তর ঘন্টা হবে, না একটি শ্বাস ছাড়ারও সময় পাওয়া যাবে না। সুতরাং দুনিয়ার জীবনকে আখেরাতের জন্য সঠিকভাবে কাজে লাগানো উচিত।