أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book# 114/٢٣٦)-৪৩৮
www.motaher21.net
সুরা: আল-আনয়াম
৪০-৪৫ নং আয়াত:-
إِن كُنتُمْ صَادِقِين
তোমরা যদি সত্যবাদী হও!
(Reply) if you are truthful!”
قُلۡ اَرَءَیۡتَکُمۡ اِنۡ اَتٰىکُمۡ عَذَابُ اللّٰہِ اَوۡ اَتَتۡکُمُ السَّاعَۃُ اَغَیۡرَ اللّٰہِ تَدۡعُوۡنَ ۚ اِنۡ کُنۡتُمۡ صٰدِقِیۡنَ ﴿۴۰﴾
তুমি তাদেরকে বলঃ তোমরা যদি নিজেদের আদর্শে সত্যবাদী হও তাহলে চিন্তা করে দেখ, যদি তোমাদের প্রতি আল্লাহর শাস্তি এসে পড়ে অথবা তোমাদের নিকট কিয়ামাত দিবস এসে উপস্থিত হয় তখনও কি তোমরা আল্লাহ ব্যতীত অন্য কেহকে ডাকবে?
بَلۡ اِیَّاہُ تَدۡعُوۡنَ فَیَکۡشِفُ مَا تَدۡعُوۡنَ اِلَیۡہِ اِنۡ شَآءَ وَ تَنۡسَوۡنَ مَا تُشۡرِکُوۡنَ ﴿٪۴۱﴾
বরং তাঁকেই তোমরা ডাকতে থাকবে। অতএব যে বিপদের জন্য তোমরা তাঁকে ডাকছো, ইচ্ছা করলে তিনি তা তোমাদের থেকে দূর করে দিবেন, আর যাদেরকে তোমরা অংশী করেছিলে তাদের কথা ভুলে যাবে।
وَ لَقَدۡ اَرۡسَلۡنَاۤ اِلٰۤی اُمَمٍ مِّنۡ قَبۡلِکَ فَاَخَذۡنٰہُمۡ بِالۡبَاۡسَآءِ وَ الضَّرَّآءِ لَعَلَّہُمۡ یَتَضَرَّعُوۡنَ ﴿۴۲﴾
আর অবশ্যই আমি তোমার পূর্বে বিভিন্ন কওমের কাছে রাসূল প্রেরণ করেছি। অতঃপর আমি তাদেরকে দারিদ্র্য ও দুঃখ দ্বারা পাকড়াও করেছি, যাতে তারা অনুনয় বিনয় করে।
فَلَوۡلَاۤ اِذۡ جَآءَہُمۡ بَاۡسُنَا تَضَرَّعُوۡا وَ لٰکِنۡ قَسَتۡ قُلُوۡبُہُمۡ وَ زَیَّنَ لَہُمُ الشَّیۡطٰنُ مَا کَانُوۡا یَعۡمَلُوۡنَ ﴿۴۳﴾
সুতরাং তাদের প্রতি যখন আমার শাস্তি এসে পৌঁছল তখন তারা কেন নম্রতা ও বিনয় প্রকাশ করলনা? বরং তাদের অন্তর আরও কঠিন হয়ে পড়ল, আর শাইতান তাদের কাজকে তাদের চোখের সামনে সুশোভিত করে দেখাল।
فَلَمَّا نَسُوۡا مَا ذُکِّرُوۡا بِہٖ فَتَحۡنَا عَلَیۡہِمۡ اَبۡوَابَ کُلِّ شَیۡءٍ ؕ حَتّٰۤی اِذَا فَرِحُوۡا بِمَاۤ اُوۡتُوۡۤا اَخَذۡنٰہُمۡ بَغۡتَۃً فَاِذَا ہُمۡ مُّبۡلِسُوۡنَ ﴿۴۴﴾
অতঃপর তাদেরকে যা কিছু উপদেশ ও নাসীহাত করা হয়েছিল তা যখন তারা ভুলে গেল তখন আমি সুখ শান্তির জন্য প্রতিটি বস্তুর দরজা উন্মুক্ত করে দিলাম। যখন তারা তাদেরকে দানকৃত বস্তু লাভ করে খুব আনন্দিত ও উল্লসিত হল তখন হঠাৎ একদিন আমি তাদেরকে পাকড়াও করলাম, আর তারা সেই অবস্থায় নিরাশ হয়ে পড়ল।
فَقُطِعَ دَابِرُ الۡقَوۡمِ الَّذِیۡنَ ظَلَمُوۡا ؕ وَ الۡحَمۡدُ لِلّٰہِ رَبِّ الۡعٰلَمِیۡنَ ﴿۴۵﴾
অতঃপর অত্যাচারী সম্প্রদায়ের মূল শিকড় কেটে ফেলা হল, আর সমস্ত প্রশংসা বিশ্বের রাব্ব আল্লাহরই জন্য।
৪০-৪৫ নং আয়াতের তাফসীর:
তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ বলেছেন:-
পূর্ববর্তী উম্মাতদেরকে আল্লাহ তা‘আলা বিভিন্ন বিপদ-আপদ, অভাব-অনটন দ্বারা পাকড়াও করেছিলেন যাতে তারা আল্লাহ তা‘আলার কাছে বিনীত হয়। তারা বিনীত না হয়ে অধিকন্তু তাদের হৃদয় কঠিন হয়ে গেল। কারণ শয়তান তাদের কাছে তাদের কাজ সুসজ্জিত করে দিয়েছে। অনুরূপভাবে এ উম্মাতের মুশরিকদেরকে পূর্ববর্তী মুশরিকদের শাস্তির কথা স্মরণ করে দিচ্ছেন। নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সম্বোধন করে বলছেন বলে দাও, যদি তাদের মত তোমাদের ওপর আল্লাহ তা‘আলার আযাব দেন অথবা কিয়ামত আসে তখন কি আল্লাহ তা‘আলাকে বাদ দিয়ে অন্যান্য মা‘বূদদেরকে ডাকবে? না বরং মুশরিকরা বিপদে পড়লে আল্লাহ তা‘আলাকে ডাকে আর বিপদ থেকে মুক্ত হলে আবার শির্কে লিপ্ত হয়।
যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(فَإِذَا رَكِبُوْا فِي الْفُلْكِ دَعَوُا اللّٰهَ مُخْلِصِيْنَ لَهُ الدِّيْنَ ﹰ فَلَمَّا نَجَّاهُمْ إِلَي الْبَرِّ إِذَا هُمْ يُشْرِكُوْنَ)
“তারা যখন নৌযানে আরোহন করে তখন তারা বিশুদ্ধচিত্ত হয়ে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহকে ডাকে। অতঃপর তিনি যখন স্থলে ভিড়িয়ে তাদেরকে রক্ষা করেন, তখন তারা শির্কে লিপ্ত হয়।”(সূরা আনকাবূত ২৯:৬৫)
আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন:
(وَإِذَا مَسَّكُمُ الضُّرُّ فِي الْبَحْرِ ضَلَّ مَنْ تَدْعُوْنَ إِلَّآ إِيَّاهُ ج فَلَمَّا نَجَّاكُمْ إِلَي الْبَرِّ أَعْرَضْتُمْ ط وَكَانَ الْإٍنْسَانُ كَفُوْرًا)
“সমুদ্রে যখন তোমাদেরকে বিপদ স্পর্শ করে তখন কেবল তিনি ব্যতীত অপর যাদেরকে তোমরা আহ্বান করে থাক, তারা অন্তর্হিত হয়ে যায়; অতঃপর তিনি যখন তোমাদেরকে উদ্ধার করে স্থলে আনেন তখন তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও। মানুষ অতিশয় অকৃতজ্ঞ।”(সূরা ইসরা ১৭:৬৭)
এ ছাড়াও সূরা ইউনুসের ২২-২৩ নং আয়াতে এ ব্যাপারে উল্লেখ রয়েছে।
কিন্তু আমাদের দেশের কিছু মানুষের অবস্থা তৎকালীন মক্কার মুশরিকদের চেয়ে জঘন্য। মক্কার মুশরিকরা বিপদ-আপদে সকল মা‘বূদ ছেড়ে দিয়ে একমাত্র আল্লাহ তা‘আলাকে ডাকত। আর আমাদের দেশের একশ্রেণির নামধারী মুসলিম বিপদ-আপদে আল্লাহ তা‘আলাকে বাদ দিয়ে বিভিন্ন মাযারে, খানকায়, অলী-আওলিয়া, পীর ও গাউস কুতুব নামে পরিচিতদের কাছে দৌড়ায় যা প্রকাশ্য শির্ক। আল্লাহ তা‘আলা আমাদের সঠিক বুঝ দান করুন। আমীন॥
(فَلَمَّا نَسُوْا مَا ذُكِّرُوْا بِه)
‘তাদেরকে যে উপদেশ দেয়া হয়েছিল তারা যখন তা বিস্মৃত হল’ অর্থাৎ যখন তারা আল্লাহ তা‘আলার নির্দেশিত আমল বর্জন করতঃ মুখ ফিরিয়ে নিল তখন আল্লাহ তা‘আলা তাদের পরীক্ষার জন্য পার্থিব সুখ-সমৃদ্ধির যাবতীয় দরজা খুলে দিলেন। তারপর যখন তারা তাতে একেবারে নিমগ্ন হয়ে পড়ল এবং নিজেদের আর্থিক উন্নতির জন্য চরম অহংকার প্রদর্শন করতে আরম্ভ করল। তখন হঠাৎ আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে পাকড়াও করলেন। নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যখন তোমরা দেখবে যে, আল্লাহ তা‘আলার অবাধ্যতা সত্ত্বেও কাউকে তার ইচ্ছা অনুযায়ী পার্থিব সুখ দিচ্ছেন, তখন জানবে এটা তার জন্য পরীক্ষার স্বরূপ অবকাশ, অতঃপর তিনি এ আয়াত তেলাওয়াত করেন। (সিলসিলা সহীহাহ হা: ৪১৪)
(دَابِرُ الْقَوْمِ) ‘সম্প্রদায়ের মূলোচ্ছেদ করা হল’অর্থাৎ জাতির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সকলকে ধ্বংস করে দেন।
সুতরাং পূর্ববর্তী অবাধ্য জাতিদের পরিণতি থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে আমাদের সতর্ক হওয়া উচিত। বিপদ-আপদ ও সুখ-সাচ্ছন্দ্যে সর্বদা একমাত্র আল্লাহ তা‘আলাকে আহ্বান করাই আমাদের কর্তব্য।
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. পূর্ববর্তী জাতিকে বিভিন্ন বিপদ-আপদ দ্বারা পরীক্ষা করা হয়েছিল।
২. তারা বিপদের সম্মুখীন হয়ে আরো খারাপ হয়েছে।
৩. তৎকালীন মক্কার মুশরিকগণ বিপদে পড়লে সকল মা‘বূদ বাদ দিয়ে এক আল্লাহকে ডাকত।
৪. আমাদের দেশের নামধারী মুসলিম মুশরিকরা বিপদে পড়লে আল্লাহ তা‘আলাকে বাদ দিয়ে অন্যান্য জীবিত, মৃত ব্যক্তি ও মা‘বূদকে ডাকে।
৫. আল্লাহ তা‘আলা পার্থিব জীবনে অপরাধী মানুষকে অবকাশ দিলেও পরকালে কোন ছাড় দিবেন না।
English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Verses :- 40-45
إِن كُنتُمْ صَادِقِين
(Reply) if you are truthful!”
The Idolators Call On Allah Alone During Torment and Distress
Allah states that He does what He wills with His creatures and none can resist His decision or avert what He decrees for them. He is the One Who has no partners, Who accepts the supplication from whomever He wills.
Allah said,
قُلْ أَرَأَيْتُكُم إِنْ أَتَاكُمْ عَذَابُ اللّهِ أَوْ أَتَتْكُمُ السَّاعَةُ
أَغَيْرَ اللّهِ تَدْعُونَ إِن كُنتُمْ صَادِقِينَ
Say:”Tell me if Allah’s torment comes upon you, or the Hour comes upon you, would you then call upon any one other than Allah! (Reply) if you are truthful!”
This means, you — disbelievers — will not call other than Allah in this case, because you know that none except He is able to remove the affliction.
إِن
كُنتُمْ صَادِقِينَ
(if you are truthful) by taking gods besides Him.
Allah said,
بَلْ إِيَّاهُ تَدْعُونَ فَيَكْشِفُ مَا تَدْعُونَ إِلَيْهِ إِنْ شَاء
وَتَنسَوْنَ مَا تُشْرِكُونَ
Nay! To Him alone you call, and, if He willed, He would remove that (distress) for which you call upon Him, and you forget at that time whatever partners you joined with Him (in worship)!
for in times of necessity, you only call on Allah and forget your idols and false deities.
In another Ayah, Allah said;
وَإِذَا مَسَّكُمُ الْضُّرُّ فِى الْبَحْرِ ضَلَّ مَن تَدْعُونَ إِلَا إِيَّاهُ
And when harm touches you upon the sea, those that you call upon besides Him vanish from you except Him (Allah). (17:67)
Allah said
وَلَقَدْ أَرْسَلنَأ إِلَى أُمَمٍ مِّن قَبْلِكَ
فَأَخَذْنَاهُمْ بِالْبَأْسَاء
Verily, We sent (Messengers) to many nations before you. And We seized them with extreme poverty…
That is, loss of wealth and diminished provisions,
وَالضَّرَّاء
and loss of health,
various illnesses, diseases and pain,
لَعَلَّهُمْ يَتَضَرَّعُونَ
so that they might believe with humility.
and call Allah and supplicate to Him with humbleness and humility.
Allah said
فَلَوْلا إِذْ جَاءهُمْ بَأْسُنَا تَضَرَّعُواْ
When Our torment reached them, why then did they not believe with humility,
Meaning:Why do they not believe and humble themselves before Us when We test them with disaster!’
وَلَـكِن قَسَتْ قُلُوبُهُمْ
But their hearts became hardened,
for their hearts are not soft or humble,
وَزَيَّنَ لَهُمُ الشَّيْطَانُ مَا كَانُواْ يَعْمَلُونَ
and Shaytan made fair-seeming to them that which they used to do.
That is, Shirk, defiance and rebellion
فَلَمَّا نَسُواْ مَا ذُكِّرُواْ بِهِ
So, when they forgot (the warning) with which they had been reminded,
by ignoring and turning away from it,
.
فَتَحْنَا عَلَيْهِمْ أَبْوَابَ كُلِّ شَيْءٍ
We opened to them the gates of everything,
Meaning:`We opened the gates of provisions for them from wherever they wished, so that We deceive them.’
We seek refuge with Allah from such an end.
This is why Allah said,
حَتَّى إِذَا فَرِحُواْ بِمَا أُوتُواْ
until in the midst of their enjoyment in that which they were given,
such as wealth, children and provisions,
أَخَذْنَاهُم بَغْتَةً فَإِذَا هُم مُّبْلِسُونَ
all of a sudden, We took them to punishment and lo! They were plunged into destruction with deep regrets and sorrows.
They have no hope for any type of good thing.
Al-Hasan Al-Basri said,
“Whomever Allah gives provision and he thinks that Allah is not testing him, has no wisdom. Whomever has little provision and thinks that Allah will not look at (provide for) him, has no wisdom.”
He then recited the Ayah,
فَلَمَّا نَسُواْ مَا ذُكِّرُواْ بِهِ فَتَحْنَا عَلَيْهِمْ أَبْوَابَ كُلِّ شَيْءٍ حَتَّى إِذَا فَرِحُواْ بِمَا أُوتُواْ أَخَذْنَاهُم بَغْتَةً فَإِذَا هُم مُّبْلِسُونَ
So, when they forgot (the warning) with which they had been reminded, We opened to them the gates of every (pleasant) thing, until in the midst of their enjoyment in that which they were given, all of a sudden, We took them to punishment, and lo! They were plunged into destruction with deep regrets and sorrows.
He added,
“By the Lord of the Ka`bah! Allah deceived these people, when He gave them what they wished, and then they were punished.”
Ibn Abi Hatim recorded this statement.
Allah’s statement,
فَقُطِعَ دَابِرُ الْقَوْمِ الَّذِينَ ظَلَمُواْ
وَالْحَمْدُ لِلّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ
So the roots of the people who did wrong were cut off. And all the praises and thanks be to Allah, the Lord of the all that exists.
তাফসীরে ইবনে কাসীর বলেছেন:-
৪০-৪৫ নং আয়াতের তাফসীর:
আল্লাহ তা’আলা স্বীয় সৃষ্টির মধ্যে সর্ব প্রকারের ক্ষমতা প্রয়োগে সক্ষম। না কেউ তার কোন হুকুম পরিবর্তন করতে পারে, না তার নির্দেশকে পিছনে ফেলতে পারে। যদি তার কাছে কিছু চাওয়া হয় তবে ইচ্ছা করলে তিনি তা কবূল করে থাকেন। তিনি বলেনঃ তোমরা কি দেখ না যে, যদি হঠাৎ করে কিয়ামত এসে পড়ে কিংবা আকস্মিকভাবে আল্লাহর শাস্তি এসে যায় তবে তোমরা আল্লাহ ছাড়া আর কাউকেও ডাকবে না। কেননা, তোমরা জান যে, আল্লাহ ছাড়া আর কেউ এই শাস্তি সরাতে পারে না। যদি তোমরা আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকেও মাবুদ বলে মেনে নেয়ার ব্যাপারে সত্যবাদী হও তবে চিন্তা করে দেখ তো, তখন তো তোমরা আল্লাহকেই ডাকতে থাকবে। অতঃপর তিনি ইচ্ছা করলে ঐ শাস্তি সরিয়ে দেবেন। ঐ সময় তোমরা ঐসব অংশীদার ও প্রতিমাকে ভুলে যাবে। সমুদ্রে অবস্থানরত অবস্থায় যখন তোমরা কোন বিপদে পতিত হও তখন অন্যান্য অংশীদারদেরকে ভুলে গিয়ে তোমরা একমাত্র আল্লাহকেই ডেকে থাক।
আল্লাহ পাক বলেনঃ তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মতদের নিকটেও আমি নবীদেরকে পাঠিয়েছিলাম। যখন তারা তাদেরকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে তখন আমি তাদেরকে ক্ষুধা ও সংকীর্ণতার শাস্তিতে জড়িয়ে ফেলি এবং ব্যাধি ও রোগ যন্ত্রণায় ভুগতে থাকি। উদ্দেশ্য এই যে, তারা যেন একমাত্র আমাকেই ডাকতে থাকে এবং আমার কাছে বিনয় ও নম্রতা প্রকাশ করে। তাহলে যখন আমি তাদেরকে শাস্তি প্রদান করি তখন তারা আমার নিকট বিনয়ী হয় না কেন? কথা এই যে, তাদের অন্তর পাথরের মত শক্ত হয়ে গেছে। তাই কোন কিছুই তাতে ক্রিয়াশীল হয় না। শয়তান তাদের শিক ও বিদ্রোহমূলক কার্যকলাপকে তাদের চোখে শোভনীয় করে তুলেছে। সুতরাং তারা যখন আমার সতর্কবাণীকে ভুলে গেছে এবং ঈমানের ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করছে, আমি তখন তাদের জীবিকার দরজাকে পূর্ণভাবে খুলে দিয়েছি, যেন তাদের রশি আরও ঢিল পড়ে যায়। তারা যখন আল্লাহর বিধান ভুলে গিয়ে পার্থিব সুখ-শান্তিতে মেতে উঠেছে এবং ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততির মোহে পড়ে আমাকে সম্পূর্ণরূপে ভুলে বসেছে, এমতাবস্থায় হঠাৎ তাদের উপর আমার শাস্তি নেমে এসেছে কিংবা তারা মৃত্যুমুখে পতিত হয়েছে। হযরত হাসান বসরী (রঃ) বলেনঃ “যার জীবিকা প্রশস্ত হয়ে যায় সে এ কথা চিন্তাই করে না যে, এটাও আল্লাহ পাকের একটা পরীক্ষামূলক নীতি, পক্ষান্তরে যার জীবিকা সংকীর্ণ হয়ে যায় সেও এটা চিন্তা করে না যে, তাকে পরীক্ষা করা হচ্ছে এবং অবকাশ দেয়া হচ্ছে। কা’বার প্রভুর শপথ! যখন আল্লাহ তা’আলা পাপীকে পাকড়াও করার ইচ্ছা করেন তখন তাকে তিনি পার্থিব সুখ-শান্তিতে ডুবিয়ে দেন। কাতাদা (রঃ) বলেনঃ আল্লাহ তাআলা কোন কওমকে ততক্ষণ পর্যন্ত পাকড়াও করেননি যতক্ষণ পর্যন্ত তারা সুখ সাগরে নিমগ্ন না হয়েছে। প্রতারিত হয়ো না। ফাসিক ও পাপী লোকেরাই প্রতারিত হয়ে থাকে। (আরবী) দ্বারা পার্থিব সুখ-শান্তি ও স্বচ্ছলতাকেই বুঝানো হয়েছে। ইবনুল আমির (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, নবী (সঃ) বলেছেনঃ “যখন তোমরা কাউকে দেখতে পাও যে, সে আল্লাহর নাফরমানী করছে, অথচ আল্লাহ তাকে পার্থিব সুখ-সম্পদে ডুবিয়ে রেখেছেন তখন তুমি বিশ্বাস করে নাও যে, এটা ছিল আল্লাহ পাকের তাকে ঢিল দেয়ার সময় এবং তা এখন শেষ হতে চলেছে।” অতঃপর তিনি উক্ত আয়াতটি পাঠ করেন। রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ আল্লাহ তা’আলা যখন কোন কওমকে অবশিষ্ট রাখার এবং তাদেরকে উন্নতি প্রদানের ইচ্ছে করেন তখন তাদেরকে পবিত্র থাকার এবং মধ্যমপন্থা অবলম্বী হওয়ার তাওফীক দান করে থাকেন। পক্ষান্তরে যে কওমের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করার তিনি ইচ্ছে করেন। তাদের উপর তিনি খিয়ানতের দরযা খুলে দেন এবং যখন সে গর্বিত হয়ে পড়ে তখন হঠাৎ তাকে পাকড়াও করেন। ফলে সে নিরাশ হয়ে বসে পড়ে। অতঃপর ঐ কওমের মূল শিকড় কেটে ফেলা হয়। আর সমস্ত প্রশংসা বিশ্বপ্রভু আল্লাহরই জন্যে।
তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
টিকা:২৯) আগের আয়াতে বলা হয়েছিল, তোমরা একটি নিদর্শন নিয়ে আসার দাবী জানাচ্ছো অথচ তোমাদের চারদিকে অসংখ্য নিদর্শন ছড়িয়ে আছে। এ প্রসঙ্গে প্রথম দৃষ্টান্ত হিসেবে প্রাণীদের জীবনধারা পর্যবেক্ষন করার আহবান জানানো হয়েছিল। এরপর এখন আর একটি নিদর্শনের দিকে ইঙ্গিত করা হচ্ছে। এ নিদর্শনটি সত্য অস্বীকারকারীদের নিজেদের মধ্যেই রয়েছে। মানুষ কোন বড় রকমের বিপদের সম্মুখীন হলে অথবা মৃত্যু তার ভয়াবহ চেহারা নিয়ে সামনে এসে দাঁড়ালে এক আল্লাহর আশ্রয় ছাড়া আর কোন আশ্রয়স্থল তখন আর মানুষের চোখে পড়ে না। বড় বড় মুশরিকরা এ সময় নিজেদের উপাস্য দেবতাদের কথা ভুলে এক আল্লাহকে ডাকতে থাকে। কট্টর খোদাদ্রোহী নাস্তিকও এ সময় আল্লাহর কাছে দু’হাত তুলে দোয়া করে। এ নিশানীটিকে এখানে সত্যের নিদর্শন হিসেবে পেশ করা হচ্ছে। কারণ আল্লাহ ভক্তি ও তাওহীদের সাক্ষ্য প্রত্যেক মানুষের নিজের মধ্যেই বিদ্যমান। এর ওপর গাফলতি ও অজ্ঞানতার যতই আবরণ পড়ুক না কেন তবুও তা কখনো না কখনো দৃষ্টি সমক্ষে জেগে ওঠে। আবু জাহেলের ছেলে ইকরামা এ ধরণের নিশানী প্রত্যক্ষ করেই ঈমানের সম্পদ লাভে সক্ষম হন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাতে মক্কা বিজিত হবার পর ইকরামা জেদ্দার দিকে পালিয়ে যান। একটি নৌকায় চড়ে তিনি হাবাশার (ইথিয়োপিয়ার) পথে যাত্রা করেন। পথে ভীষণ ঝড়-তুফানে তার নৌকা চরম বিপদের সম্মুখীন হয়। প্রথমে দেবদেবীদের দোহাই দেয়া শুরু হয়। কিন্তু এতে তুফানের ভয়াবহতা কমে না বরং আরো বেড়ে যেতেই থাকে। যাত্রীদের মনে এ বিশ্বাস বদ্ধমূল হয়ে যায় যে, এবার নৌকা ডুবে যাবে। তখন সবাই বলতে থাকে, এখন আল্লাহ ছাড়া আর কাউকে ডাকলে চলবে না। একমাত্র তিনি চাইলে আমাদের বাঁচাতে পারেন। এ সময় ইকরামের চোখ খুলে যায়। তার মন বলে ওঠে, যদি এখানে আল্লাহ ছাড়া আর কেউ সাহায্যকারী না থেকে থাকে, তাহলে অন্য জায়গায়ই বা আর কেউ থাকবে কেন? একথাটাই তো আল্লাহর সেই নেক বান্দাটি আমাদের গত বিশ বছর থেকে বুঝাচ্ছেন আর আমরা খামখা তাঁর সাথে লড়াই করছি। এটি ছিল ইকরামার জীবনের সিদ্ধান্তকরী মুহূর্ত। সে মুহূর্তেই তিনি আল্লাহর কাছে অঙ্গীকার করেন, যদি এ যাত্রায় আমি বেঁচে যাই, তাহলে সোজা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে যাবো এবং তাঁর হাতে আমার হাত দিয়ে দেবো। পরে তিনি নিজের এ অঙ্গীকার পূর্ণ করেন। ফিরে এসে তিনি কেবল মুসলমান হয়েই ক্ষান্ত থাকেননি, বরং অবশিষ্ট জীবন ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য জিহাদ করেই কাটান।
তাফসীরে আবুবকর যাকারিয়া বলেছেন:-
[১] এ আয়াতসমূহে আল্লাহ্ তা’আলা পূর্ববতী উম্মতদের ঘটনাবলী এবং তাদের উপর প্রয়োগকৃত বিধি-বিধান বর্ণনা করেছেন এবং বলেছেন, আমি আপনার পূর্বেও অন্যান্য উম্মতের কাছে স্বীয় রাসূল প্রেরণ করেছি। দু’ভাবে তাদের পরীক্ষা নেয়া হয়েছে। প্রথমে কিছু অভাব-অনটন ও কষ্টে ফেলে দেখা হয়েছে যে, কষ্টে ও বিপদে অস্থির হয়েও তারা আল্লাহর প্রতি মনোনিবেশ করে কি না। তারা যখন এ পরীক্ষায় ফেল করল এবং আল্লাহর দিকে ফিরে আসা ও অবাধ্যতা ত্যাগ করার পরিবর্তে তাতে আরো বেশী লিপ্ত হয়ে পড়ল, তখন তাদের দ্বিতীয় পরীক্ষা নেয়া হল। অর্থাৎ তাদের জন্য পার্থিব ভোগ-বিলাসের সব দ্বার খুলে দেয়া হল এবং পার্থিব জীবন সম্পর্কিত সবকিছুই তাদেরকে দান করা হল। আশা ছিল যে, তারা এসব নেয়ামত দেখে নেয়ামতদাতাকে চিনবে এবং এভাবে তারা আল্লাহকে স্মরণ করবে। কিন্তু এ পরীক্ষায়ও তারা অকৃতকার্য হল। নেয়ামতদাতাকে চেনা ও তার প্রতি কৃতজ্ঞ হওয়ার পরিবর্তে তারা ভোগ-বিলাসের মোহে এমন মত্ত হয়ে পড়ল যে, আল্লাহ ও রাসূলের বাণী এবং শিক্ষা সম্পূর্ণ বিস্মৃত হয়ে গেল। উভয় পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ার পর যখন তাদের ওযর-আপত্তির আর কোন ছিদ্র অবশিষ্ট রইল না, তখন আল্লাহ্ তাআলা অকস্মাৎ তাদেরকে আযাবের মাধ্যমে পাকড়াও করলেন এবং এমনভাবে নাস্তানাবুদ করে দিলেন যে, বংশে বাতি জ্বালাবারও কেউ অবশিষ্ট রইল না। পূর্ববর্তী উম্মতদের উপর এ আযাব জলে-স্থলে-অন্তরীক্ষে বিভিন্ন পন্থায় এসেছে এবং গোটা জাতিকে ধ্বংস করে দিয়েছে। নূহ আলাইহিস সালাম-এর গোটা জাতিকে এমন প্লাবন ঘিরে ধরে, যা থেকে তারা পর্বতের শৃঙ্গেও নিরাপদ থাকতে পারেনি। আদ জাতির উপর দিয়ে উপর্যপুরি আট দিন প্রবল ঝড়-ঝঞা বয়ে যায়। ফলে তাদের একটি প্রাণীও বেঁচে থাকতে পারেনি। সামূদ জাতিকে একটি হৃদয়বিদারী আওয়াজের মাধ্যমে ধ্বংস করে দেয়া হয়। লুত ‘আলাইহিস সালাম-এর কওমের সম্পূর্ণ বস্তি উল্টে দেয়া হয়, যা আজ পর্যন্ত জর্দান এলাকায় একটি অভূতপূর্ব জলাশয়ের আকারে বিদ্যমান। এ জলাশয়ে ব্যাঙ, মাছ ইত্যাদি জীব-জন্তুও জীবিত থাকতে পারে না। এ কারণেই একে বাহর মাইয়্যেত” বা মৃত সাগর’ নামে অভিহিত করা হয়। মোটকথা, পূর্ববর্তী উম্মতদের অবাধ্যতার শাস্তি প্রায়ই বিভিন্ন প্রকার আযাবের আকারে নাযিল হয়েছে, যাতে সমগ্র জাতি বরবাদ হয়ে গেছে। কোন সময় তারা বাহ্যতঃ স্বাভাবিকভাবে মারা গেছে এবং পরবর্তীতে তাদের নাম উচ্চারণকারীও কেউ অবশিষ্ট থাকেনি।
[২] অর্থাৎ আমি তাদেরকে দুনিয়াতে যে কষ্ট ও বিপদে জড়িত করেছি, এর উদ্দেশ্য প্রকৃতপক্ষে শাস্তি দান নয়, বরং এ পরীক্ষায় ফেলে আমার দিকে আকৃষ্ট করাই ছিল উদ্দেশ্য। কারণ, স্বাভাবিকভাবেই বিপদে আল্লাহর কথা স্মরণ হয়। সুতরাং কষ্ট ও বিপদাপদের মাধ্যমে তাদেরকে একমাত্র আল্লাহর ইবাদতের দিকে ধাবিত করাই উদ্দেশ্য। [মুয়াসসার]
[৩] এ আয়াতে বলা হয়েছে যে, তাদের অবাধ্যতা যখন সীমাতিক্রম করতে থাকে, তখন তাদেরকে একটি বিপজ্জনক পরীক্ষার সম্মুখীন করা হয়। অর্থাৎ তাদের জন্য দুনিয়ার নেয়ামত, সুখ ও সাফল্যের দ্বার খুলে দেয়া হয়। এতে সাধারণ মানুষকে হুশিয়ার করা হয়েছে যে, দুনিয়াতে কোন ব্যক্তি অথবা সম্প্রদায়ের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য ও সম্পদের প্রাচুর্য দেখে ধোঁকা খেয়ো না যে, তারাই বুঝি বিশুদ্ধ পথে আছে এবং সফল জীবন যাপন করছে। অনেক সময় আযাবে পতিত অবাধ্য জাতিসমূহেরও এরূপ অবস্থা হয়ে থাকে। তাদের ব্যাপারে আল্লাহর সিদ্ধান্ত এই যে, তাদেরকে অকস্মাৎ কঠোর আযাবের মাধ্যমে পাকড়াও করা হবে। তাই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ ‘যখন তোমরা দেখ যে, কোন ব্যক্তিকে আল্লাহ্ তা’আলা দুনিয়ার ধন-দৌলত প্রদান করছেন, অথচ সে গোনাহ ও অবাধ্যতায় অটল, তখন বুঝে নেবে, তাকে ঢিল দেয়া হচ্ছে। অর্থাৎ তার এ ভোগ-বিলাস কঠোর আযাবে গ্রেফতার হওয়ারই পূর্বাভাস। [মুসনাদে আহমাদঃ ৪/১৪৫]
[৪] এতে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, অপরাধী ও অত্যাচারীদের উপর আযাব নাযিল হওয়াও সারা বিশ্বের জন্য একটি নেয়ামত। এজন্য আল্লাহ্ তা’আলার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা উচিত। কারণ তিনি তার বন্ধুদের সাহায্য করেছেন এবং তাঁর শক্রদের নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছেন। [মুয়াসসার]