أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book# 114/٢٣٨)-৪৪০
www.motaher21.net
সুরা: আল-আনয়াম
৫০-৫৪ নং আয়াত:-
قُلْ هَلْ يَسْتَوِي الَاعْمَى وَالْبَصِيرُ
জিজ্ঞেস করঃ অন্ধ ও চক্ষুস্মান কি সমান হতে পারে?
Say:”Are the blind and the one who sees equal!”
قُلۡ لَّاۤ اَقُوۡلُ لَکُمۡ عِنۡدِیۡ خَزَآئِنُ اللّٰہِ وَ لَاۤ اَعۡلَمُ الۡغَیۡبَ وَ لَاۤ اَقُوۡلُ لَکُمۡ اِنِّیۡ مَلَکٌ ۚ اِنۡ اَتَّبِعُ اِلَّا مَا یُوۡحٰۤی اِلَیَّ ؕ قُلۡ ہَلۡ یَسۡتَوِی الۡاَعۡمٰی وَ الۡبَصِیۡرُ ؕ اَفَلَا تَتَفَکَّرُوۡنَ ﴿٪۵۰﴾
তুমি বলঃ আমি তোমাদেরকে এ কথা বলিনা যে, আমার কাছে আল্লাহর ধন ভান্ডার রয়েছে, আর আমি অদৃশ্য জগতেরও কোন জ্ঞান রাখিনা, এবং আমি তোমাদেরকে এ কথাও বলিনা যে, আমি একজন মালাক/ফেরেশতা। আমার কাছে যা কিছু অহী রূপে পাঠানো হয়, আমি শুধুমাত্র তারই অনুসরণ করে থাকি। তুমি (তাদেরকে) জিজ্ঞেস করঃ অন্ধ ও চক্ষুস্মান কি সমান হতে পারে? সুতরাং তোমরা কেন চিন্তা ভাবনা করনা?
وَ اَنۡذِرۡ بِہِ الَّذِیۡنَ یَخَافُوۡنَ اَنۡ یُّحۡشَرُوۡۤا اِلٰی رَبِّہِمۡ لَیۡسَ لَہُمۡ مِّنۡ دُوۡنِہٖ وَلِیٌّ وَّ لَا شَفِیۡعٌ لَّعَلَّہُمۡ یَتَّقُوۡنَ ﴿۵۱﴾
তুমি এর (কুরআন) সাহায্যে ঐ সব লোককে ভীতি প্রদর্শন কর যারা ভয় করে যে, তাদেরকে তাদের রবের কাছে এমন অবস্থায় সমবেত করা হবে যেখানে তিনি ছাড়া তাদের না কোন সাহায্যকারী থাকবে, আর না থাকবে কোন সুপারিশকারী, হয়ত তারা সাবধান হবে।
وَ لَا تَطۡرُدِ الَّذِیۡنَ یَدۡعُوۡنَ رَبَّہُمۡ بِالۡغَدٰوۃِ وَ الۡعَشِیِّ یُرِیۡدُوۡنَ وَجۡہَہٗ ؕ مَا عَلَیۡکَ مِنۡ حِسَابِہِمۡ مِّنۡ شَیۡءٍ وَّ مَا مِنۡ حِسَابِکَ عَلَیۡہِمۡ مِّنۡ شَیۡءٍ فَتَطۡرُدَہُمۡ فَتَکُوۡنَ مِنَ الظّٰلِمِیۡنَ ﴿۵۲﴾
আর যে সব লোক সকাল সন্ধ্যায় তাদের রবের ইবাদাত করে এবং এর মাধ্যমে তাঁর সন্তুষ্টিই কামনা করে, তাদেরকে তুমি দূরে সরিয়ে দিবেনা, তাদের হিসাব-নিকাশের কোন কিছুর দায়িত্ব তোমার উপর নয় এবং তোমার হিসাব-নিকাশের কোন কিছুর দায়িত্বও তাদের উপর নয়। এর পরও যদি তুমি তাদেরকে দূরে সরিয়ে দাও তাহলে তুমি যালিমদের মধ্যে শামিল হয়ে যাবে।
وَ کَذٰلِکَ فَتَنَّا بَعۡضَہُمۡ بِبَعۡضٍ لِّیَقُوۡلُوۡۤا اَہٰۤؤُلَآءِ مَنَّ اللّٰہُ عَلَیۡہِمۡ مِّنۡۢ بَیۡنِنَا ؕ اَلَیۡسَ اللّٰہُ بِاَعۡلَمَ بِالشّٰکِرِیۡنَ ﴿۵۳﴾
এভাবেই আমি কিছু লোককে কিছু লোক দ্বারা পরীক্ষায় নিপতিত করি। তারা বলতে থাকেঃ এরাই কি ঐ সব লোক, আমাদের মধ্য থেকে যাদের প্রতি আল্লাহ অনুগ্রহ ও মেহেরবাণী করেছেন? আল্লাহ কি কৃতজ্ঞদের সম্পর্কে অবগত নন?
وَ اِذَا جَآءَکَ الَّذِیۡنَ یُؤۡمِنُوۡنَ بِاٰیٰتِنَا فَقُلۡ سَلٰمٌ عَلَیۡکُمۡ کَتَبَ رَبُّکُمۡ عَلٰی نَفۡسِہِ الرَّحۡمَۃَ ۙ اَنَّہٗ مَنۡ عَمِلَ مِنۡکُمۡ سُوۡٓءًۢ ابِجَہَالَۃٍ ثُمَّ تَابَ مِنۡۢ بَعۡدِہٖ وَ اَصۡلَحَ فَاَنَّہٗ غَفُوۡرٌ رَّحِیۡمٌ ﴿۵۴﴾
আমার আয়াতসমূহের উপর বিশ্বাস স্থাপনকারীরা যখন তোমার নিকট আসে তখন তাদেরকে বলঃ তোমাদের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক, তোমাদের রাব্ব নিজের উপর দয়া ও অনুগ্রহ করার নীতি বাধ্যতামূলক করে নিয়েছেন। তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি অজ্ঞতা ও মূর্খতাবশতঃ কোন খারাপ কাজ করে, অতঃপর সে যদি তাওবাহ করে এবং নিজেকে সংশোধন করে তাহলে জানবে যে, তিনি হচ্ছেন ক্ষমাপরায়ণ, করুণাময়।
৫০-৫৪ নং আয়াতের তাফসীর:
তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ বলেছেন:-
আল্লাহ তা‘আলা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলে দিচ্ছেন, তুমি বলে দাও যে, আমি দাবী করি না যে, আমার কাছে আকাশমণ্ডলী ও জমিনের ধন-ভাণ্ডার রয়েছে। ফলে আমি যেভাবে ইচ্ছা তা ব্যয় করব। আমি এও দাবী করিনা যে, আমি অদৃশ্যের খবর জানি এবং আমি একজন ফেরেশতা। বরং আল্লাহ তা‘আলার কাছেই রয়েছে গায়েবের সকল জ্ঞান।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَعِنْدَه۫ مَفَاتِحُ الْغَيْبِ لَا يَعْلَمُهَآ إِلَّا هُوَ)
“ গায়েবের সকল চাবিকাঠি তাঁরই নিকট রয়েছে, তিনি ব্যতীত অন্য কেউ তা জানে না।” (সূরা আনআম ৬:৫৯)
আর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের মত একজন মানুষ, তিনি নূরের তৈরি ফেরেশতা নন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(قُلْ إِنَّمَآ أَنَا بَشَرٌ مِّثْلُكُمْ يُوْحٰٓي إِلَيَّ أَنَّمَآ إلٰهُكُمْ إِلٰهٌ وَّاحِدٌ)
“বল: ‘আমি তো তোমাদের মতই একজন মানুষ, আমার প্রতি প্রত্যাদেশ হয় যে, তোমাদের মা‘বূদ এক ও অদ্বিতীয়।”(সূরা কাহ্ফ ১৮:১১০)
মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একজন রাসূল তার কাছে যা ওয়াহী করা হয় তিনি তারই অনুসরণ করেন।
(الْاَعْمٰی وَالْبَصِیْرُ)
‘অন্ধ ও চক্ষুষ্মান’অর্থাৎ কাফির আর মু’মিন কি সমান। (আইসারুত তাফাসীর ১/৬১০)
ইবনু কাসীর (রহঃ) বলেন: যে ব্যক্তি সত্যের অনুসারী ও তার দিকে হিদায়াত প্রাপ্ত এবং যে ব্যক্তি সত্য থেকে পথভ্রষ্ট তারা কি সমান? কখনো সমান নয়। (ইবনে কাসীর, ৩য় খণ্ড, পৃঃ ২৯৩)
তারপর আল্লাহ তা‘আলা মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সতর্ক করতে বললেন তাদেরকে যারা তাদের রবের সামনে উপস্থিত হওয়াকে ভয় করে এবং তাদেরকে জানিয়ে দিতে যে, তাদের জন্য আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া কোন অভিভাবক ও সুপারিশকারী নেই।
(وَلَا تَطْرُدِ الَّذِيْنَ يَدْعُوْنَ…)
“যারা তাদের প্রতিপালককে সকালে ও সন্ধ্যায় তাঁর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে ডাকে তাদেরকে তুমি তাড়িয়ে দিবে না।”এখানে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দুর্বল ও গরীব মুসলিমদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে নিষেধ করছেন, যারা সকাল-বিকাল আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টায় ব্যস্ত। বরং তাদের সাথে ধৈর্য ধারণ করতে বলেছেন।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَاصْبِرْ نَفْسَكَ مَعَ الَّذِيْنَ يَدْعُوْنَ رَبَّهُمْ بِالْغَدٰوةِ وَالْعَشِيِّ يُرِيْدُوْنَ وَجْهَه۫ وَلَا تَعْدُ عَيْنٰكَ عَنْهُمْ ج تُرِيْدُ زِيْنَةَ الْحَيٰوةِ الدُّنْيَا ج وَلَا تُطِعْ مَنْ أَغْفَلْنَا قَلْبَه۫ عَنْ ذِكْرِنَا وَاتَّبَعَ هَوَاهُ وَكَانَ أَمْرُه۫ فُرُطًا)
“তুমি নিজকে ধৈর্য সহকারে রাখবে তাদেরই সাথে যারা সকাল ও সন্ধ্যায় আহ্বান করে তাদের প্রতিপালককে তাঁর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে এবং তুমি পার্থিব জীবনের শোভা সৌন্দর্য কামনা করে তাদের হতে তোমার দৃষ্টি ফিরিয়ে নিও না। তুমি তার আনুগত্য কর না-যার অন্তরকে আমি আমার স্মরণে অমনোযোগী করে দিয়েছি, যে তার খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করে ও যার কার্যকলাপ সীমা অতিক্রম করে।”(সূরা কাহ্ফ ১৮:২৮) অনুরূপভাবে তাদের প্রতি সালাম, রহমতের সুসংবাদ দিতে বলেছেন।
পূর্ববর্তী নাবীদের প্রতিও এ বিধান ছিল যে, তারা মুসলিমদের যারা তাদের প্রতি ঈমান এনেছে তাদেরকে তাড়িয়ে দিবে না, অবজ্ঞা করবে না।
যেমন নূহ (আঃ) সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَمَآ أَنَا بِطَارِدِ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا)
“মু’মিনদেরকে তাড়িয়ে দেয়া আমার কাজ নয়।”(সূরা হূদ ১১:২৯)
একই সূরার ৩০ নং আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَيٰقَوْمِ مَنْ يَّنْصُرُنِيْ مِنَ اللّٰهِ إِنْ طَرَدْتُّهُمْ ط أَفَلَا تَذَكَّرُوْنَ)
‘হে আমার সম্প্রদায়! আমি যদি তাদেরকে তাড়িয়ে দেই, তবে আল্লাহর পাকড়াও হতে আমাকে কে রক্ষা করবে? তবুও কি তোমরা উপদেশ গ্রহণ করবে না?’
(وَكَذٰلِكَ فَتَنَّا بَعْضَهُمْ بِبَعْضٍ)
‘আমি এভাবে তাদের একদলকে অন্যদল দ্বারা পরীক্ষা করেছি’অর্থাৎ রাসূলগণের অধিকাংশ অনুসারী হল গরীব ও দুর্বল শ্রেণির মানুষ। যখন হিরাকল (রোমের বাদশা) আবূ সুফিয়ানকে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছিল সমাজের বিত্তশালী ও মর্যাদাশীল লোকেরা তাঁর অনুসারী, না দুর্বল ও দরিদ্র শ্রেণি? তিনি বলেছেন, দুর্বল ও দরিদ্র শ্রেণি।
হিরাকল বলল: এরাই রাসূলগণের অনুসারী হয়। (সহীহ বুখারী হা: ৭)
এখানে আল্লাহ তা‘আলার হিকমত হল: আল্লাহ তা‘আলা কতক মানুষ দ্বারা কতক মানুষকে পরীক্ষা করবেন। যারা বিত্তশালী ও মর্যাদার অধিকারী তারা বলে: যদি ইসলামে কল্যাণ থাকত তাহলে আমাদের আগে এ দুর্বলেরা ইসলাম গ্রহণ করতে পারত না। আমরাই অধিক হকদার কল্যাণ গ্রহণ করার। তাদের এ মিথ্যা দাবীর প্রতিবাদ করে আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(أَلَيْسَ اللّٰهُ بِأَعْلَمَ بِالشّٰكِرِيْنَ)
“আল্লাহ কি কৃতজ্ঞ লোকেদের সম্বন্ধে সবিশেষ অবহিত নন?” (সূরা আন্‘আম ৬:৫৩)
তাদের কথা আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র তুলে ধরে বলেন:
(وَقَالَ الَّذِيْنَ كَفَرُوْا لِلَّذِيْنَ اٰمَنُوْا لَوْ كَانَ خَيْرًا مَّا سَبَقُوْنَآ إِلَيْهِ)
“কাফিররা ঈমানদারদের সম্পর্কে বলে যে, যদি এটা (কিতাবকে মেনে নেওয়া সত্যিই) কোনো ভাল কাজ হতো তাহলে তারা এ বিষয়ে আমাদেরকে ছাড়িয়ে যেতে পারত না।”(সূরা আহকাফ ৪৬:১১)
جهالة অজ্ঞতাবশত যদি কেউ খারাপ কাজ করে অতঃপর তাওবাহ করে। এ সম্পর্কে সূরা নিসার ১৭ নং আয়াতে আলোচনা করা হয়েছে।
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নূরের তৈরি ও ফেরেশতা নন এবং গায়েবও জানতেন না, শুধু আল্লাহ তা‘আলা ওয়াহীর মাধ্যমে যতটুকু তথ্য দিতেন ততটুকুই জানতেন।
২. দরিদ্র মু’মিনদের অবজ্ঞা করা নিষেধ সম্পদের কারণে নয় বরং ঈমানের কারণে তাদেরকে মূল্যায়ন করা উচিত।
৪. আল্লাহ তা‘আলা কতক মানুষ দ্বারা কতক মানুষকে বিভিন্নভাবে পরীক্ষা করেন।
৫. গরীব লোকেরাই অধিকাংশ ক্ষেত্রে নাবী-রাসূলগণের অনুসারী হয়।
English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Verses :- 50-54
قُلْ هَلْ يَسْتَوِي الَاعْمَى وَالْبَصِيرُ
Say:”Are the blind and the one who sees equal!”
The Messenger Neither has the Key to Allah’s Treasures, Nor Knows the Unseen
Allah said to His Messenger,
قُل لاَّ أَقُولُ لَكُمْ عِندِي خَزَايِنُ اللّهِ
Say:”I don’t tell you that with me are the treasures of Allah.”
meaning, I do not own Allah’s treasures or have any power over them,
وَلا أَعْلَمُ الْغَيْبَ
nor (that) I know the Unseen,
and I do not say that I know the Unseen, because its knowledge is with Allah and I only know what He conveys of it to me.
وَلا أَقُولُ لَكُمْ إِنِّي مَلَكٌ
nor I tell you that I am an angel.
meaning, I do not claim that I am an angel. I am only a human to whom Allah sends revelation, and He honored me with this duty and favored me with it.
إِنْ أَتَّبِعُ إِلاَّ مَا يُوحَى إِلَيَّ
I but follow what is revealed to me.
and I never disobey the revelation in the least.
قُلْ هَلْ يَسْتَوِي الَاعْمَى وَالْبَصِيرُ
Say:”Are the blind and the one who sees equal!”
meaning, `Is the one who is guided, following the truth, equal to the one misled!’
أَفَلَ تَتَفَكَّرُونَ
Will you not then consider!
In another Ayah, Allah said;
أَفَمَن يَعْلَمُ أَنَّمَأ أُنزِلَ إِلَيْكَ مِن رَبِّكَ الْحَقُّ كَمَنْ هُوَ أَعْمَى إِنَّمَا يَتَذَكَّرُ أُوْلُواْ الَالْبَـبِ
Shall he then who knows that what has been revealed to you from your Lord is the truth, be like him who is blind But it is only the men of understanding that pay heed. (13:19)
Allah’s statement
وَأَنذِرْ بِهِ الَّذِينَ يَخَافُونَ أَن يُحْشَرُواْ إِلَى رَبِّهِمْ لَيْسَ لَهُم مِّن دُونِهِ وَلِيٌّ وَلَا شَفِيعٌ
And warn therewith those who fear that they will be gathered before their Lord, when there will be neither a protector nor an intercessor for them besides Him,
means, warn with this Qur’an, O Muhammad,
الَّذِينَ هُم مِّنْ خَشْيةِ رَبِّهِمْ مُّشْفِقُونَ
Those who live in awe for fear of their Lord, (23:57)
who,
يَخْشَوْنَ رَبَّهُموَيَخَافُونَ سُوءَ الحِسَابِ
Fear their Lord, and dread the terrible reckoning. (13:21)
وَأَنذِرْ بِهِ الَّذِينَ يَخَافُونَ أَن يُحْشَرُواْ إِلَى رَبِّهِمْ
(those who fear that they will be gathered before their Lord), on the Day of Resurrection,
لَيْسَ لَهُم مِّن دُونِهِ وَلِيٌّ وَلَا شَفِيعٌ
(when there will be neither a protector nor an intercessor for them besides Him), for on that Day, they will have no relative or intercessor who can prevent His torment if He decides to punish them with it,
لَّعَلَّهُمْ يَتَّقُونَ
(so that they may have Taqwa).
Therefore, warn of the Day when there will be no judge except Allah,
لَّعَلَّهُمْ يَتَّقُونَ
so that they may have Taqwa.
and thus work good deeds in this life, so that their good deeds may save them on the Day of Resurrection from Allah’s torment, and so that He will grant them multiple rewards.
Prohibiting the Messenger from Turning the Weak Away and the Order to Honor Them
Allah said
وَلَا تَطْرُدِ الَّذِينَ يَدْعُونَ رَبَّهُم بِالْغَدَاةِ وَالْعَشِيِّ يُرِيدُونَ وَجْهَهُ
And turn not away those who invoke their Lord, morning and evening seeking His Face.
meaning, do not turn away those who have these qualities, instead make them your companions and associates.
In another Ayah, Allah said;
وَاصْبِرْ نَفْسَكَ مَعَ الَّذِينَ يَدْعُونَ رَبَّهُم بِالْغَدَاةِ وَالْعَشِىِّ يُرِيدُونَ وَجْهَهُ وَلَا تَعْدُ عَيْنَاكَ عَنْهُمْ تُرِيدُ زِينَةَ الْحَيَوةِ الدُّنْيَا وَلَا تُطِعْ مَنْ أَغْفَلْنَا قَلْبَهُ عَن ذِكْرِنَا وَاتَّبَعَ هَوَاهُ وَكَانَ أَمْرُهُ فُرُطًا
And keep yourself patiently with those who call on their Lord morning and evening, seeking His Face, and let not your eyes overlook them, desiring the pomp and glitter of the life of the world; and obey not him whose heart We have made heedless of Our remembrance, one who follows his own lusts and whose affair (deeds) has been lost.(18:28)
Allah’s statement,
يَدْعُونَ رَبَّهُم
(invoke their Lord…),
refers to those who worship Him and supplicate to Him,
بِالْغَدَاةِ وَالْعَشِيِّ
(morning and evening),
referring to the obligatory prayers, according to Sa`id bin Al-Musayyib, Mujahid, Al-Hasan and Qatadah.
In another Ayah, Allah said;
وَقَالَ رَبُّكُـمْ ادْعُونِى أَسْتَجِبْ لَكُمْ
And your Lord said, “Invoke Me, I will respond (to your invocation).” (40:60)
I will accept your supplication.
Allah said next,
يُرِيدُونَ وَجْهَهُ
(seeking His Face),
meaning, they seek Allah’s Most Generous Face, by sincerity for Him in the acts of worship and obedience they perform.
Allah said;
مَا عَلَيْكَ مِنْ حِسَابِهِم مِّن شَيْءٍ وَمَا مِنْ حِسَابِكَ عَلَيْهِم مِّن شَيْءٍ
You are accountable for them in nothing, and they are accountable for you in nothing,
This is similar to the answer Nuh gave to his people when they said,
أَنُوْمِنُ لَكَ وَاتَّبَعَكَ الاَْرْذَلُونَ
(Shall we believe in you, when the meekest (of the people) follow you!” (26:111) Nuh answered them,
قَالَ وَمَا عِلْمِي بِمَا كَانُوا يَعْمَلُونَ
إِنْ حِسَابُهُمْ إِلاَّ عَلَى رَبِّي لَوْ تَشْعُرُونَ
And what knowledge have I of what they used to do! Their account is only with my Lord, if you could (but) know. (26:112-113)
meaning, their reckoning is for Allah not me, just as my reckoning is not up to them.
Allah said here,
فَتَطْرُدَهُمْ فَتَكُونَ مِنَ الظَّالِمِينَ
that you may turn them away, and thus become of the wrongdoers.
meaning, you will be unjust if you turn them away.
Allah’s statement
وَكَذَلِكَ فَتَنَّا بَعْضَهُم بِبَعْضٍ
Thus We have tried some of them with others!
means, We tested, tried and checked them with each other,
لِّيَقُولواْ أَهَـوُلاء مَنَّ اللّهُ عَلَيْهِم مِّن بَيْنِنَا
That they might say:”Is it these (poor believers) that Allah has favored from amongst us!”
This is because at first, most of those who followed the Messenger of Allah were the weak among the people, men, women, slaves, and only a few chiefs or noted men followed him.
Nuh, was also addressed by his people
مَا نَرَاكَ إِلاَّ بَشَرًا مِّثْلَنَا وَمَا نَرَاكَ اتَّبَعَكَ إِلاَّ الَّذِينَ هُمْ أَرَاذِلُنَا بَادِيَ الرَّأْيِ
(Nor do we see any follow you but the meekest among us and they (too) followed you without thinking). (11:27)
Heraclius, emperor of Rome, asked Abu Sufyan, “Do the noblemen or the weak among people follow him (Muhammad)?”
Abu Sufyan replied, “Rather the weak among them.”
Heraclius commented, “Such is the case with followers of the Messengers.”
The idolators of Quraysh used to mock the weak among them who believed in the Prophet and they even tortured some of them. They used to say, “Are these the ones whom Allah favored above us,” meaning, Allah would not guide these people, instead of us, to all that is good, if indeed what they embraced is good.
Allah mentioned similar statements in the Qur’an from the disbelievers,
لَوْ كَانَ خَيْراً مَّا سَبَقُونَأ إِلَيْهِ
Had it been a good thing, they (weak and poor) would not have preceded us to it! (46:11)
and,
وَإِذَا تُتْلَى عَلَيْهِمْ ءَايَـتُنَا بِيِّنَـتٍ قَالَ الَّذِينَ كَفَرُواْ لِلَّذِينَ ءَامَنُواْ أَىُّ الْفَرِيقَيْنِ خَيْرٌ مَّقَاماً وَأَحْسَنُ نَدِيّاً
And when Our clear verses are recited to them, those who disbelieve say to those who believe:”Which of the two groups is best in position and station.” (19:73)
Allah said in reply,
وَكَمْ أَهْلَكْنَا قَبْلَهُمْ مِّن قَرْنٍ هُمْ أَحْسَنُ أَثَاثاً وَرِءْياً
And how many a generation (past nations) have We destroyed before them, who were better in wealth, goods and outward appearance. (19:74)
Here, Allah answered the disbelievers when they said,
أَهَـوُلاء مَنَّ اللّهُ عَلَيْهِم مِّن بَيْنِنَا
أَلَيْسَ اللّهُ بِأَعْلَمَ بِالشَّاكِرِينَ
“Is it these (poor believers) that Allah has favored from amongst us!” Does not Allah know best those who are grateful!
Meaning is not Allah more knowledgeable of those who thank and appreciate Him in statement, action and heart!
Thus Allah directs these believers to the ways of peace, transfers them from darkness to light by His leave, and guides them to the straight path.
In another Ayah, Allah said;
وَالَّذِينَ جَـهَدُواْ فِينَا لَنَهْدِيَنَّهُمْ سُبُلَنَا وَإِنَّ اللَّهَ لَمَعَ الْمُحْسِنِينَ
As for those who strive hard for Us (Our cause), We will surely guide them to Our paths (i.e. Allah’s religion). And verily, Allah is with the doers of good.” (29:69)
An authentic Hadith states,
إِنَّ اللهَ لَا يَنْظُرُ إِلَى صُوَرِكُمْ وَلَا إِلَى أَلْوَانِكُمْ وَلَكِنْ يَنْظُرُ إِلَى قُلُوبِكُمْ وَأَعْمَالِكُم
Allah does not look at your shapes or colors, but He looks at your heart and actions.
Allah’s statement,
وَإِذَا ءكَ الَّذِينَ يُوْمِنُونَ بِأيَاتِنَا فَقُلْ سَلَمٌ عَلَيْكُمْ
When those who believe in Our Ayat come to you, say:”Salamun `Alaykum” (peace be on you);
means, honor them by returning the Salam and give them the good news of Allah’s exclusive, encompassing mercy for them.
So Allah said;
…
كَتَبَ رَبُّكُمْ عَلَى نَفْسِهِ الرَّحْمَةَ
your Lord has written Mercy for Himself,
meaning, He has obliged His Most Honored Self to grant mercy, as a favor, out of His compassion and beneficence,
…
أَنَّهُ مَن عَمِلَ مِنكُمْ سُوءًا بِجَهَالَةٍ
So that, if any of you does evil in ignorance…
as every person who disobeys Allah does it in ignorance,
…
ثُمَّ تَابَ مِن بَعْدِهِ وَأَصْلَحَ
and thereafter repents and does righteous good deeds,
by repenting from the sins that he committed, intending not to repeat the sin in the future, but to perform righteous deeds,
…
فَأَنَّهُ غَفُورٌ رَّحِيمٌ
then surely, He is Oft-Forgiving Most Merciful.
Imam Ahmad recorded that Abu Hurayrah said that the Messenger of Allah said,
لَمَّا قَضَى اللهُ الْخَلْقَ كَتَبَ فِي كِتَابٍ فَهُوَ عِنْدَهُ فَوْقَ الْعَرْشِ إِنَّ رَحْمَتِي غَلَبَتْ غَضَبِي
When Allah finished with the creation, He wrote in a Book that He has with Him above the Throne, `My mercy prevails over My anger’.
This Hadith was also recorded in the Two Sahihs.
তাফসীরে ইবনে কাসীর বলেছেন:-
৫০-৫৪ নং আয়াতের তাফসীর:
আল্লাহ পাক হযরত মুহাম্মাদ (সঃ)-কে বলছেনঃ হে রাসূল (সঃ)! তুমি তাদেরকে বলে দাও-আমি এই দাবী কখন করি যে, আমার কাছে আল্লাহর ধন ভাণ্ডার রয়েছে? আর আমি এই দাবীও করি না যে, আমি ভবিষ্যতের বিষয় অবগত রয়েছি। ভবিষ্যতের জ্ঞানতো একমাত্র আল্লাহ তা’আলারই রয়েছে। তিনি আমাকে যেটুকু জানিয়েছেন আমি শুধু ঐটুকুই জানি। আমি এ কথাও বলি না যে, আমি একজন ফেরেশতা। আমি একজন মানুষ ছাড়া কিছুই নই। আমার বৈশিষ্ট্য শুধু এটুকুই যে, আমার কাছে আল্লাহর অহী বা প্রত্যাদেশ এসে থাকে। আল্লাহ তা’আলা আমাকে এরই মর্যাদা দান করেছেন এবং আমার প্রতি অনুগ্রহ করেছেন। এ জন্যেই আমি অহী ছাড়া অন্য কিছুর অনুসরণ করি না এবং অহীর সীমা হতে অর্ধ হাতও আগে বাড়ি না।
ইরশাদ হচ্ছে- হে মুহাম্মাদ (সঃ)! তুমি তাদেরকে বল, অন্ধ ও চক্ষুষ্মন কি সমান হতে পারে? অর্থাৎ সত্যের অনুসরণকারী এবং পথভ্রষ্ট ব্যক্তি কি কখনও মান হয়? তোমরা কি এটা চিন্তা করে দেখো না? যেমন তিনি অন্য জায়গায় লেছেনঃ “হে মুহাম্মাদ (সঃ)! তোমার উপর তোমার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে যা কিছু অবতীর্ণ হয়েছে তা যে সত্য এটা যে ব্যক্তি জানে সে কি অন্ধ ব্যক্তির মত হতে পারে?
এরপর ঘোষিত হচ্ছে-হে মুহাম্মাদ (সঃ)! এই কুরআনের মাধ্যমে তুমি ঐ লোকদেরকে ভয় প্রদর্শন কর যাদের এই ভয় রয়েছে যে, তাদেরকে আল্লাহর সামনে হাজির হতে হবে এবং এই বিশ্বাস আছে যে, আল্লাহ ছাড়া তাদের কোন অভিভাবক নেই, আর কোন সুপারিশকারী দ্বারাও কিছুই উপকার হবে না। যারা আল্লাহর ভয়ে ভীত-সন্ত্রস্ত থাকে এবং হিসাবের দিনের ভয় রাখে, আর এই ভয় রাখে যে, তাদেরকে আল্লাহর সামনে উপস্থিত হতে হবে। সেই দিন তাদের জন্যে না কোন বন্ধু থাকবে এবং না কোন সুপারিশকারী থাকবে, যে সুপারিশ করে তাদেরকে আল্লাহর শাস্তি থেকে মুক্তির ব্যবস্থা করবে। তাদেরকে সেই দিনের ভয় প্রদর্শন কর যেই দিন আল্লাহ ছাড়া আর কারও হুকুমত চলবে না। এর ফলে হয়তো তারা আল্লাহকে ভয় করবে এবং দুনিয়ায় এমন আমল করবে যা তাদেরকে কিয়ামতের দিনের শাস্তি হতে মুক্তি দেবে এবং প্রতিদান পেলে দ্বিগুণ প্রতিদান পাবে।
মহান আল্লাহ বলেনঃ (হে মুহাম্মাদ সঃ!) যারা সকাল-সন্ধ্যায় আল্লাহকে স্মরণ করে এবং সেই সময় তাদের চিত্ত সম্পূর্ণরূপে নির্মল থাকে, তুমি তাদেরকে তোমার নিকট থেকে দূর করে দিয়ো না, বরং তাদেরকে তোমার সাহচর্য লাভের সুযোগ দান কর। যেমন তিনি অন্য জায়গায় বলেনঃ (আরবী) (১৮:২৮)। আল্লাহ পাকের উক্তিঃ -এর ভাবার্থ হচ্ছে- তারা তাঁর ইবাদত করে এবং তাঁর নিকট যাজ্ঞা করে। (আরবী) -এই উক্তি সম্পর্কে সাঈদ ইবনুল মুসাইয়াব (রঃ) বলেন যে, এর দ্বারা ফরয নামায’ বুঝানো হয়েছে। (এটা মুজাহিদ (রঃ), হাসান (রঃ) এবং কাতাদারও (রঃ) উক্তি) এটা আল্লাহ তা’আলার (আরবী) -এই উক্তির মতই। অর্থাৎ ‘তোমরা আমার নিকট প্রার্থনা কর, আমি তোমাদের সেই প্রার্থনা ককূল করবো।’ (৪০:৬০)
(আরবী) (১৮:২৮) অর্থাৎ এই আমলের মাধ্যমে তারা মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করে। আর এই আমল তারা আন্তরিকতার সাথে করে।
ইরশাদ হচ্ছে-হে মুহাম্মাদ (সঃ)! না তাদের হিসাব তোমার কাছে নেয়া হবে, না তোমার হিসাব তাদের কাছে নেয়া হবে। যেমন যারা হযরত নূহ (আঃ)-কে বলেছিলঃ “আমরা কি তোমার উপর ঈমান আনবো? অথচ আমাদের যারা নিম্ন শ্রেণীর লোক তারাই তোমার অনুসরণ করছে!’ অদের এ কথার উত্তরে হযরত নূহ (আঃ) তাদেরকে বলেছিলেনঃ “তারা কি আমল করছে তা তো আমার জানা। নেই। তোমাদের যদি তা জানা থাকে তবে তোমরা তা জেনেই থাক, তাদের সম্পর্কে আল্লাহ তাআলাই সব কিছু জানেন এবং তিনিই তাদের হিসাব গ্রহণকারী।”
ঘোষিত হচ্ছে-হে মুহাম্মাদ (সঃ)! যদি তুমি তাদেরকে তোমার নিকট থেকে সরিয়ে দাও তবে তুমি অত্যাচারীদের অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য হবে। হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন যে, কুরাইশদের একটি দল নবী (সঃ)-এর নিকট আগমন করে। ঐ সময় তার কাছে হযরত খাব্বাব (রাঃ), হযরত সুহাইব (রাঃ), হযরত বিলাল (রাঃ) এবং হযরত আম্মার (রাঃ) উপবিষ্ট ছিলেন। তখন তাদের সম্মানিত লোকেরা বললোঃ “হে মুহাম্মাদ (সঃ)! কওমের এই লোকেরাই কি তোমার নিকট পছন্দনীয়? এরাই কি এমন লোক যে, আল্লাহ তা’আলা আমাদেরকে ছেড়ে তাদের উপর অনুগ্রহ করেছেন? এখন আমরা তাদের দলে মিলিত থেকে কিভাবে তোমার অনুসরণ করতে পারি? তুমি তাদেরকে তোমার নিকট থেকে সরিয়ে দাও। তাহলে আমরা তোমার অনুসরণ করবো।” তখন এই আয়াত অবতীর্ণ হয়। এই স্থলে মহান আল্লাহ পাক বলেনঃ এভাবেই আমি এককে অপরের দ্বারা পরীক্ষায় ফেলে থাকি।
নবী (সঃ)-এর পাশে ঐ দুর্বল মুমিন লোকগুলোকে দেখে তারা তাঁদের ঘৃণার চোখে দেখেছিল। তাই তারা নবী (সঃ)-কে গোপনীয়ভাবে বলেছিলঃ “আমরা আপনার মজলিসে শরীক থাকতে চাই। তবে গ্রাম্য লোকেরা আমাদের মর্যাদা সম্পর্কে অবহিত রয়েছে। আরব প্রতিনিধিরা আপনার কাছে যাতায়াত করতে আছে। তারা আমাদেরকে এই নিম্ন শ্রেণীর লোকদের সাথে দেখবে, এতে আমরা লজ্জা বোধ করছি। সুতরাং আমরা যখন আপনার নিকট অবস্থান করবো তখন আপনি এই লোকদেরকে আপনার নিকট থেকে সরিয়ে দিবেন। অতঃপর যখন আমরা আপনার নিকট থেকে চলে যাবো তখন ইচ্ছে করলে আপনি তাদেরকে ‘আপনার নিকট বসাতে পারেন।” একথা শুনে নবী (সঃ) তাদেরকে বলেনঃ “আচ্ছা, ঠিক আছে।” তখন তারা বলেঃ “এই চুক্তির উপর আমাদেরকে একটা সনদ লিখে দিন।” তাদের এই কথামত রাসূলুল্লাহ (সঃ) কাগজ আনতে বলেন এবং সনদ লিখবার জন্যে হযরত আলী (রাঃ)-কে ডেকে পাঠান। সেই সময় ঐ দুর্বল মুমিন লোকগুলো এক কোণে বসেছিলেন। ঐ অবস্থায় এই আয়াত অবতীর্ণ হয়, তাতে বলা হয়- হে মুহাম্মাদ(সঃ)! এই লোকদেরকে তোমার নিকট থেকে সরিয়ে দেবে না। তারা আল্লাহকে স্মরণ করে থাকে। তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) হযরত আলীর হাত থেকে কাগজ নিয়ে তা ছুঁড়ে ফেলে দেন। এরপর তিনি ঐ দুর্বল মুমিন লোকদেরকে নিজের কাছে ডেকে নেন। (এটা ইবনে আবি হাতিম (রঃ) তাখরীজ করেছেন এবং ইমাম ইবনে জারীরও (রঃ)
আসবাত ইবনে নাসরের হাদীস থেকে এটা বর্ণনা করেছেন!)
এই হাদীসটি গারীব। কেননা এই আয়াতটি মক্কী। আর আকরা ইবনে হাবিস আত্তামীমী এবং উয়াইনা ইবনে হাসন আল ফাযারী হিজরতের পরে ইসলাম গ্রহণ করেন। হযরত সা’দ বলেন যে, এই আয়াতটি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর ছয়জন সাহাবীর ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়, যাদের মধ্যে হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ) রয়েছেন। তিনি বলেনঃ “আমরা রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নিকট পৌছার ব্যাপারে একে অপরকে ছাড়িয়ে যেতাম। তিনি আমাদেরকে তার কাছে বসিয়ে নিতেন। তখন কুরাইশরা বলতোঃ “আপনি আমাদেরকে ছেড়ে এদেরকে আপনার কাছে বসিয়ে নিচ্ছেন।” (এটা ইমাম হাকিম স্বীয় ‘মুসতাদরাক’ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন এবং ইমাম বুখারী (রঃ) ও ইমাম মুসলিম (রঃ)-এর শর্তের উপর বলেছেন এবং ইবনে হিব্বান তাঁর সহীহ গ্রন্থে এট তাখরীজ করেছেন)
ইরশাদ হচ্ছে-তাদের মধ্যে কে কেমন তা আমি পরীক্ষা করে নিয়েছি। এই পরীক্ষার ফলাফল এই ছিল যে, কাফির কুরাইশরা বলতোঃ এরাই কি ঐ সব লোক যে, আমাদেরকে বাদ দিয়ে আল্লাহ তাদের উপর অনুগ্রহ করেছেন? ব্যাপারটা ছিল এই যে, প্রথম যুগে বেশীর ভাগ ঐসব লোকই ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন যারা ছিলেন দুর্বল ও নিম্ন শ্রেণীর লোক। আমীর ও নেতৃস্থানীয়দের খুব কম লোকই ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হয়েছিলেন। যেমন হযরত নূহ (আঃ)-এর কওমের নেতৃস্থানীয় লোকেরা তাঁকে বলেছিলঃ “আমরা তো দেখছি যে, নিম্ন শ্রেণীর লোকেরাই আপনার অনুসরণ করছে, কোন সম্ভ্রান্ত ও প্রভাবশালী লোক। তো আপনার অনুসরণ করছে না। অনুরূপভাবে রোম-সম্রাট হিরাক্লিয়াস আবূ সুফিয়ান (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করেছিলঃ কওমের ধনী ও সম্ভ্রান্ত লোকেরা তাঁর (মুহাম্মাদ সঃ -এর) অনুসরণ করছে, না দরিদ্র লোকেরা? আবু সুফিয়ান (রাঃ) উত্তরে বলেছিলেনঃ “বেশীর ভাগ দুর্বল ও গরীব লোকেরাই তার অনুসরণ করছে।
তখন হিরাক্লিয়াস মন্তব্য করেছিলঃ এরূপ লোকেরাই রাসূলদের অনুসরণ করে থাকে। ভাৰাৰ্থ এই যে, কাফির কুরাইশরা ঐ দুর্বল মুমিনদেরকে বিদ্রুপ করতো এবং তাদের উপর কর্তৃত্ব লাভ করলে তাদেরকে কষ্ট দিতো। তাদের কথা এই যে, শেষ পর্যন্ত আল্লাহ তাদেরকেই কেন সুপথ প্রদর্শন করলেন? যে পথে তারা পা রেখেছে সেটা যদি ভালই হয় তবে আল্লাহ তাদেরকেই বা ছাড়লেন কেন? তারা আরো বলতোঃ ‘যদি এটা মেনে নেয়া ভাল কাজ হতো তবে এরা আমাদের থেকে কখনও বেড়ে যেতে পারতো না ।যেমন মহান আল্লাহ বলেনঃ যখন তাদের সামনে আমার স্পষ্ট আয়াতসমূহ পাঠ করা হয় তখন ঐ কাফিররা মুমিনদেরকে বলে- আচ্ছা বল তো তোমাদের দু’দলের মধ্যে ভাল কোন্ দল? অথবা সম্মানিত সম্পদশালী কারা? এর জবাবে আল্লাহ বলেনঃ “তাদের পূর্বে আমি এমন বহু কওমকে ধ্বংস করে দিয়েছি যারা এদের চেয়ে বেশী সম্মানিত, জায়গা জমির মালিক ও আঁকজমকপূর্ণ ছিল।” আর যারা বলেছিলঃ “আমাদের উপর এদেরকে আল্লাহ কেন প্রাধান্য দিয়েছেন? তাদের উত্তরে আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ “আল্লাহ তা’আলা কি কৃতজ্ঞ, ভাল অন্তরের অধিকারী ও সঙ্কৰ্মশীল লোকদেরকে জানেন না? মহান আল্লাহ এ ধরনের লোকদেরকেই ভাল কাজের তাওফীক দিয়ে থাকেন। কেননা, তিনি সকর্মশীল লোকদের সাথেই রয়েছেন।” সহীহ হাদীসে রয়েছে- ‘আল্লাহ তোমাদের আকৃতি ও রং এর দিকে দেখেন না, বরং তিনি তোমাদের অন্তর ও আমলের দিকেই দেখে থাকেন।” (ইমাম মুসলিম (রঃ) হাদীসটিকে নিম্নরূপ শব্দের সাথে তাখরীজ করেছেনঃ (আরবী) অর্থাৎ ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের দেহ ও তোমাদের আকৃতির প্রতি নয়র করেন না)
(হে মুহাম্মাদ সঃ!) তুমি ভীতি প্রদর্শন কর ঐ লোকদেরকে যাদের আল্লাহর সামনে হাযির হওয়ার ভয় রয়েছে- এই আয়াত সম্পর্কে এই বর্ণনা রয়েছে যে, বানী আবদে মানাফ গোত্রের কয়েকজন সম্ভ্রান্ত লোক আবু তালিবের নিকট এসে বলেঃ “হে আবু তালিব! যদি আপনার ভ্রাতুস্পুত্র মুহাম্মাদ (সঃ) আমাদের গোলাম ও নিম্ন শ্রেণীর লোকদেরকে তাঁর নিকট থেকে সরিয়ে দিতেন তবে কতই না ভাল হতো! কেননা তারা আমাদের গোলাম ও সেবক। আর তাদের সাথে উঠা বসা করা আমাদের কাছে খুবই কঠিন ঠেকছে। সুতরাং যদি তিনি তাদেরকে তাঁর নিকট থেকে সরিয়ে দেন তবে আমরা তার অনুসরণ করবো এবং তাঁর সত্যতা স্বীকার করবো।” তখন আবু তালিব রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর কাছে এসে তা বর্ণনা করেন। হযরত উমার (রাঃ) তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে বলেনঃ “ঠিক আছে, এরূপই করে দেখুন! এর দ্বারা তাদের উদ্দেশ্য জানা যাবে এবং এর পরে তারা কি করে তা দেখা যাবে। সেই সময় এই আয়াত অবতীর্ণ হয়। শেষ পর্যন্ত আল্লাহ পাক বলেনঃ “আল্লাহ কৃতজ্ঞ বান্দাদেরকে কি জানেন না? কৃতজ্ঞ বান্দাদের দ্বারা নিম্ন লিখিত লোকদেরকে বুঝানো হয়েছেঃ হযরত বিলাল (রাঃ), হযরত আম্মার ইবনে ইয়াসির (রাঃ), হযরত হুযাইফার (রাঃ) গোলাম হযরত সালিম (রাঃ), হযরত উসাইদের (রাঃ) আযাদকৃত গোলাম ও হযরত ইবনে মাসউদের (রাঃ) মিত্র হযরত সুবাইহা (রাঃ), হযরত মিকদাদ ইবনে আমর (রাঃ), হযরত মাসউদ (রাঃ), হযরত ইবনুল কারী (রাঃ), হযরত ওয়াকিদ ইবনে আবদুল্লাহ হান্যালী (রাঃ), আমর ইবনে আবদি আমর (রাঃ), যুশ শিমালাইন (রাঃ), মুরছিদ ইবনে আবি মুরছিদ (রাঃ) এবং হযরত হামযা ইবনে আবদিল। মুত্তালিব (রাঃ)-এর মিত্র হযরত আবু মুরছিদ আল গানাভী (রাঃ)। আর এই আয়াত কাফির কুরাইশদের নেতৃস্থানীয় লোক ও তাদের মিত্রদের ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়। যখন এই আয়াত অবতীর্ণ হয় তখন হযরত উমার (রাঃ) তড়িৎ গতিতে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নিকট গমন করেন এবং নিজের ভুল পরামর্শ দানের জন্যে ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
তাই ইরশাদ হচ্ছে- যখন আমার আয়াতসমূহের উপর বিশ্বাস স্থাপনকারী লোকেরা তোমার নিকট আগমন করে তখন তাদেরকে বল, তোমাদের উপর শান্তি বর্ষিত হাক। অর্থাৎ হে মুহাম্মাদ (সঃ)! তাদের প্রতি সালাম জানিয়ে তাদের সম্মান বাড়িয়ে দাও এবং তাদেরকে মহান আল্লাহর ব্যাপক রহমতের সুসংবাদ প্রদান কর। এজন্যেই মহান আল্লাহ বলেন, আল্লাহ নিজের উপর। রহমতকে ওয়াজিব করে দিয়েছেন। এরপর তিনি বলেন, তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি অজ্ঞানতা ও মূর্খতা বশতঃ কোন খারাপ কাজ করে বসে, অতঃপর সে যদি তাওবা করে নিজেকে সংশোধন করে নেয়, তবে জানবে যে, তিনি হচ্ছেন ক্ষমাশীল, কৃপানিধান।
হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ যখন আল্লাহ তাআলা মাখলুকের উপর তাকদীর স্থাপন করেন তখন তিনি স্বীয় কিতাব লাওহে মাহফুয়ে লিপিবদ্ধ করেন, যা আরশের উপর রয়েছেঃ “আমার ক্রোধে উপর আমার রহমত জয়যুক্ত থাকবে। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ বন আল্লাহ তা’আলা স্বীয় মাখলুকের উপর নির্দেশ জারী করে ফেলবেন তখন তিনি আরশের উপর থেকে কিতাব গ্রহণ করবেন যাতে লিখিত থাকবেঃ আমি আরহামুর রাহিমীন। তারপর তিনি এক বা দুই মুষ্ঠিপূর্ণ মাখলুককে জাহান্নাম থেকে বের করবেন যারা একটিও ভাল কাজ করেনি। আর তাদের চক্ষুদ্বয়ের মধ্যস্থলে মাথার উপর লিখিত থাকবেঃ অর্থাৎ এরা হচ্ছে আল্লাহর আযাদকৃত। (আরবী) আল্লাহ তা’আলার এই উক্তি সম্পর্কে হযরত সালমান ফারসী (রাঃ) লিখেছেন, “তাওরাত গ্রন্থে আমরা লিখিত পাই যে, আল্লাহ তা’আলা যমীন ও আসমান সৃষ্টি করেন এবং স্বীয় একশ’টি রহমতও সৃষ্টি করেন, আর এটা তিনি মাখলুককে সৃষ্টি করার পূর্বেই সৃষ্টি করেন। তারপর তিনি মাখলুককে সৃষ্টি করেন এবং একশটি রহমতের মধ্যে মাত্র একটি রহমত তিনি মাখলুকের মধ্যে বন্টন করে দেন। আর নিজের মধ্যে তিনি নিরানব্বইটি রহমত রেখে দেন। এই একটি মাত্র রহমতের বরকতেই মানুষ পরস্পরের মধ্যে দয়া ও ভালবাসা দেখিয়ে থাকে, পরস্পর মিলেমিশে বাস করে, উষ্ট্ৰী, গাভী ও ছাগী এই একটি রহমত থেকেই অংশ নিয়ে স্বীয় বাচ্চাদের প্রতি স্নেহ ও মমতা দেখিয়ে থাকে এবং সমুদে দু’টি সাপ পরস্পর মিলে জলে অবস্থান করে। কিয়ামতের দিন মহান আল্লাহ এইসব রহমত এবং নিজের রহমত সমস্তই স্বীয় পাপী বান্দাদের জন্যে ব্যবহার করবেন। এই বিষয়ে বহু হাদীস বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) সাহাবীদেরকে জিজ্ঞেস করেনঃ বান্দাদের উপর আল্লাহর কি হক রয়েছে তা কি তোমরা জান? অতঃপর তিনি বলেনঃ “বান্দাদের উপর আল্লাহর হক এই যে, তারা তাঁরই ইবাদত করবে এবং তার সাথে কাউকে শরীক করবে না।” তারপর তিনি জিজ্ঞেস করেনঃ “আল্লাহর উপর তার বান্দাদের কি হক রয়েছে তা কি তোমরা অবগত আছ? তা এই যে, তিনি তাদেরকে ক্ষমা করে দেবেন এবং তাদেরকে শাস্তি দেবেন না।”
তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
টিকা:৩১) অজ্ঞ লোকেরা চিরকাল এ ধরনের নির্বুদ্ধিতা প্রসূত চিন্তা পোষন করে এসেছে যে, আল্লাহর নৈকট্য লাভকারী ও তাঁর গভীর সান্নিধ্যে অবস্থানকারী ব্যক্তিকে অবশ্যি মানবিক গুণাবলীর ঊর্ধ্বে অবস্থান করতে হবে। তিনি অভিনব, বিস্ময়কর ও অলৌকিক কার্যাবলী সম্পাদন করবেন। তাঁর হাতের একটি মাত্র ইশারায় পাহাড় সোনায় পরিণত হবে। তাঁর আদেশ দেবার সাথে সাথেই পৃথিবী ধন উদগীরণ করতে থাকবে। লোকদের ভূত-ভবিষ্যত তার সামনে দিনের আলোর মতো সুস্পষ্ট থাকবে। হারানো জিনিস কোথায় আছে তিনি এক নিমেষে বলে দেবেন। রোগী মরে যাবে, না বেঁচে উঠবে এবং প্রসূতির পেটে ছেলে না মেয়ে আছে তা বলে দিতে তার একটুও বেগ পেতে হবে না। এছাড়া তাকে মানবিক দুর্বলতা ও সীমাবদ্ধতা মুক্ত হতে হবে। সে ব্যক্তি আবার কেমন করে আল্লাহর সান্নিধ্য লাভ করলো যে ক্ষুধা ও পিপাসা অনুভব করে এবং নিদ্রার শিকার হয়, যার স্ত্রী-পুত্র পরিবার আছে, নিজের প্রয়োজন পূর্ণ করার জন্য যাকে কেনাবেচা করতে হয়, কখনো ঋণ নিতে হয় এবং কখনো অভাবে-অনটনে চরম দুরাবস্থার শিকার হতে হয়? নবী সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লামের সমকালীন লোকদের মনেও এ ধরনের চিন্তা বিরাজ করতো। তারা তাঁর নবুওয়াতের দাবী শুনে তার সত্যতা যাচাই করার জন্য তাঁর কাছে গায়েবের খবর জিজ্ঞেস করতো। তাঁর কাছে অলৌকিক কার্যাবলী সম্পাদন করার দাবী জানাতো। তাঁকে একজন সাধারণ পর্যায়ের মানুষ দেখে তারা আপত্তি করতো যে, এ আবার কেমন পয়গম্বর যিনি খাওয়া দাওয়া করছেন, স্ত্রী-পুত্র-কণ্যা নিয়ে থাকছেন এবং হাট-বাজারেও চলাফেরা করছেন? এসব কথার জবাব এ আয়াতে দেয়া হয়েছে।
টিকা:৩২) এর অর্থ হচ্ছে, আমি যে সত্যগুলো তোমাদের সামনে পেশ করছি, আমি নিজে সেগুলো প্রত্যক্ষ করেছি। সরাসরি আমার অভিজ্ঞতায় সেগুলো ধরা পড়েছে। অহীর মাধ্যমে সেগুলোর সঠিক জ্ঞান আমাকে দান করা হয়েছে। তাদের ব্যাপারে আমার সাক্ষ্য চাক্ষুস সাক্ষ্য ছাড়া আর কিছুই নয়। অথচ তোমরা এ সত্যগুলোর ব্যাপারে একেবারেই অন্ধ। তোমরা এ সত্যগুলো সম্পর্কে যেসব চিন্তা পোষণ করে থাকো তা নিছক আন্দাজ-অনুমান ও ধারণা-কল্পনা ভিত্তিক অথবা সেগুলোর ভিত গড়ে উঠেছে নিছক অন্ধ অনুসরণের ওপর। কাজেই আমার ও তোমাদের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে চক্ষুষ্মান ও অন্ধের পার্থক্য। তোমাদের ওপর আমার শ্রেষ্ঠত্ব কেবল এ কারণেই। আমার কাছে আল্লাহর কোন গোপন ধনভাণ্ডার আছে অথবা আমি গায়েবের খবর জানি বা মানবিক দুর্বলতা থেকে আমি মুক্ত-এ জাতীয় কোন বৈশিষ্ট্যের কারণে তোমাদের ওপর আমার শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়নি।
টিকা:৩৩) এর অর্থ হচ্ছে, যারা দুনিয়ার জীবনে এমন ভাবে নিমগ্ন হয়েছে যে, তাদের মৃত্যুর চিন্তাই নেই এবং কখনো আল্লাহর সামনে হাযির হতে হবে এমন কথা ভাবেও না, তাদের জন্য এ নসীহত কখনো ফলপ্রসূ হবে না। অনুরূপভাবে যারা এই ভিত্তিহীন ভরসায় জীবন যাপন করছে যে, দুনিয়ায় তারা যাই কিছু করুক না কেন আখেরাতে তাদের সামান্যতম ক্ষতিও হবে না, কারণ তারা অমুকের সাথে সম্পর্ক পাতিয়ে রেখেছে। অমুক তাদের জন্য সুপারিশ করবে অথবা অমুক তাদের সমস্ত পাপের প্রায়শ্চিত্ত করেছে, তাদের ওপরও এর কোন প্রভাব পড়বে না। কাজেই এ ধরনের লোকদেরকে বাদ দিয়ে তুমি এমন লোকদেরকে সম্বোধন করো যাদের মনে আল্লাহর সামনে উপস্থিত হবার ভীতি বিরাজমান এবং তাঁর ব্যাপারে কোন মিথ্যা আশ্বাসবাণীতে বিশ্বাস করে না। কেবলমাত্র এ ধরনের লোকদের ওপরই এ নসীহতের প্রভাব পড়তে পারে এবং তাদের সংশোধনের আশা করা যেতে পারে।
টিকা:৩৪) কুরাইশদের বড় বড় সরদার এবং তাদের বিত্তবান ও স্বচ্ছল লোকেরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিরুদ্ধে যেসব আপত্তি উত্থাপন করেছিল তার একটি ছিল এই যে, আপনার চারদিকে আমাদের জাতির ক্রীতদাস, মুক্তি প্রাপ্ত ক্রীতদাস এবং নিম্ন শ্রেণীর লোকেরা সমবেত হয়েছে। তারা এ বলে নিন্দা ও বিদ্রূপ করতোঃ দেখো, এ ব্যক্তির সাথীও জুটেছে কত বড় সব সম্ভ্রান্ত লোকেরা! বেলাল, আম্মার, সোহাইব, খাব্বাব এরাই তার সাথী। আল্লাহ আমাদের মধ্য থেকে যারা ইতিপূর্বে কোন নৈতিক দুর্বলতার শিকার হয়েছিল তারও সমালোচনা করতো এবং বলতো, যারা গতকাল পর্যন্ত এমন ছিল এবং অমুক ব্যক্তি যে অমুক কাজটি করেছিল, এসব লোকই এই ‘সম্মানিত’ দলের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এখানে এসব কথার জবাব দেয়া হয়েছে।
টিকা:৩৫) অর্থাৎ নিজের দোষ-গুণ ও ভাল-মন্দের জন্য প্রত্যেক ব্যক্তি নিজেই দায়ী। এ ইসলাম গ্রহণকারীদের মধ্যে থেকে কোন ব্যক্তির কাজের জবাবদিহি করার জন্য তুমি দাঁড়াবে না এবং তোমার কাজের জবাবদিহি করার জন্যও তাদের কেউ দাঁড়াবে না। তোমার অংশের কোন নেকী তারা ছিনিয়ে নিতে পারবে না এবং তাদের অংশের কোন গোনাহও তোমার ঘাড়ে চাপিয়ে দিতে পারবে না। এরপরও যখন তারা নিছক সত্যান্বেষী হিসেবে তোমার কাছে আসে তখন তুমি তাদেরকে দূরে ঠেলে দেবে কেন?
টিকা:৩৬) অর্থাৎ সমাজের নিম্ন পর্যায়ে অবস্থানকারীর দরিদ্র, অভাবী ও কপর্দকহীনদেরকে সর্বপ্রথম ঈমান আনার সুযোগ দান করে আমি ধন ও বিত্তের অহংকারে মত্ত লোকদেরকে পরীক্ষার মধ্যে নিক্ষেপ করেছি।
টিকা:৩৭) যারা সে সময় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি ঈমান এনেছিলেন তাদের মধ্যে বহু লোক এমনও ছিলেন, যারা জাহেলী যুগে বড় বড় গোনাহ করেছিলেন। এখন ইসলাম গ্রহণ করার পর তাদের জীবন সম্পূর্ণরূপে বদলে গেলেও ইসলাম বিরোধীরা তাদের পূর্ববর্তী জীবনের দোষ ও কার্যাবলীর জন্য তাদেরকে বিদ্রূপ করতো ও খোঁটা দিতো। এর জবাবে বলা হচ্ছেঃ ঈমানদারদেরকে সান্ত্বনা দাও। তাদেরকে বলো, যে ব্যক্তি তাওবা করে নিজের সংশোধন করে নেয় তার পেছনের গোনাহের জন্য তাকে পাকড়াও করা আল্লাহর রীতি নয়।
তাফসীরে আবুবকর যাকারিয়া বলেছেন:-
[১] যারা আখেরাতে নিশ্চিত বিশ্বাসী আলোচ্য আয়াতে বিশেষভাবে তাদের দিকে মনোযোগ দানের নির্দেশ দিয়ে বলা হয়েছে, “যারা আল্লাহর কাছে একত্রিত হওয়ার আশংকা করে, তাদেরকে কুরআন দ্বারা ভীতি প্রদর্শন করুন”। কারণ, তারাই এর দ্বারা উপকৃত হবে। [সা’দী]
সা’দ ইবনে আবী ওয়াক্কাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেনঃ আমরা ছয়জন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে বসা ছিলাম। এমনসময় কতিপয় কুরাইশ সর্দার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট দিয়ে যাচ্ছিল, তখন তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে বললেন, তুমি এদের তাড়িয়ে দাও, যাতে তারা আমাদের উপর কথা বলতে সাহস না পায়। সা’দ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, তখন আমি ছিলাম, ইবন মাসউদ ছিলেন, হুযাইলের এক লোক ছিলেন, বিলাল ছিল, আরও দু’জন লোক ছিল যাদের নাম উল্লেখ করব না। তখন রাসূলের মনে এ ব্যাপারে আল্লাহ যা উদয় করার তার কিছু উদয় হয়েছিল, তিনি মনে মনে কিছু বলে থাকবেন, তখনি আল্লাহ্ তা’আলা আলোচ্য আয়াত নাযিল করেন। [মুসলিম: ২৪১৩] এতে উল্লেখিত পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে কঠোর ভাষায় নিষেধ করা হয়েছে। উল্লেখিত আয়াত থেকে কতিপয় নির্দেশ বুঝা যায় যে, কারো ছিন্নবস্ত্র কিংবা বাহ্যিক দূরবস্থা দেখে তাকে নিকৃষ্ট ও হীন মনে করার অধিকার কারো নেই। প্রায়ই এ ধরণের পোষাকে এমন লোকও থাকেন, যারা আল্লাহর কাছে অত্যন্ত সম্মানিত ও প্রিয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ অনেক দুর্দশাগ্রস্ত, ধূলি-ধূসরিত লোক এমনও রয়েছে যারা আল্লাহর প্রিয়, তারা যদি কোন কাজের আব্দার করে বসেন, “এরূপ হবে তবে আল্লাহ তা’আলা তাদের সে আব্দার অবশ্যই পূর্ণ করেন। [তিরমিয়ী: ৩৮৫৪] অনুরূপভাবে, শুধু পার্থিব ধনদৌলতকে শ্রেষ্ঠত্ব কিংবা নীচতার মাপকাঠি মনে করা মানবতার অবমাননা। বরং এর প্রকৃত মাপকাঠি হচ্ছে সচ্চরিত্র ও সৎকর্ম।
[২] এ বাক্যে উপরোল্লেখিত অনুগ্রহের উপর আরো অনুগ্রহ ও নেয়ামত দানের ওয়াদা করে বলা হয়েছে যে, আপনি মুসলিমদেরকে বলে দিনঃ তোমাদের প্রতিপালক দয়া প্রদর্শনকে নিজ দায়িত্বে লিপিবদ্ধ করে নিয়েছেন। কাজেই খুব ভীত ও অস্থির হয়ো না। এ বাক্যে প্রথমতঃ (رب) বা প্রতিপালক শব্দ ব্যবহার করে আয়াতের বিষয়বস্তুকে যুক্তিযুক্ত করে দেয়া হয়েছে যে, আল্লাহ্ তা’আলা তোমাদের প্রতিপালক। এখন জানা কথা যে, কোন প্রতিপালক স্বীয় পালিতদেরকে বিনষ্ট হতে দেন না। অতঃপর (رب) শব্দটি যে দয়ার প্রতি ইঙ্গিত করেছিল, তা পরিস্কারভাবেও উল্লেখ করা হয়েছে। তাও এমন ভঙ্গিতে যে, তোমাদের প্রতিপালক দয়া প্রদর্শনকে নিজ দায়িত্বে লিখে নিয়েছেন। কাজেই কোন ভাল ও সৎ লোকের দ্বারাই যখন ওয়াদা খেলাফী হতে পারে না, তখন রাববুল আলামীন-এর দ্বারা তা কিভাবে হতে পারে? বিশেষ করে যখন ওয়াদাটি চুক্তির আকারে লিপিবদ্ধ করে নেয়া হয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ যখন আল্লাহ্ তা’আলা সবকিছু সৃষ্টি করলেন এবং প্রত্যেকের ভাগ্যের ফয়সালা করলেন, তখন একটি কিতাব লিপিবদ্ধ করে নিজের কাছে আরশে রেখে দিলেন। তাতে লেখা আছে, আমার দয়া আমার ক্রোধের উপর প্রবল হয়ে গেছে। [বুখারীঃ ৭৪০৪, মুসলিমঃ ২১০৭, ২১০৮]
[৩] আয়াতে অজ্ঞতা শব্দ দ্বারা বাহ্যতঃ কেউ ধারণা করতে পারে যে, গোনাহ ক্ষমা করার ওয়াদা একমাত্র তখনই প্রযোজ্য হবে যখন অজ্ঞতাবশতঃ কোন গোনাহ হয়ে যায়, জেনেশুনে গোনাহ করলে হয়ত এ ওয়াদা প্রযোজ্য নয়। কিন্তু বাস্তবে তা নয়। কেননা, এ স্থলে অজ্ঞতা বলে অজ্ঞতার কাজ বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ এমন কাজ করে বসে, যা পরিণাম সম্পর্কে অজ্ঞ বা মূর্খ ব্যক্তিই করে। এর জন্যে বাস্তবে অজ্ঞ হওয়া জরুরী নয়। অর্থাৎ (جهالت) শব্দটি বাকপদ্ধতিতে কার্যগত অজ্ঞতার অর্থেই ব্যবহৃত হয়। তাই কোন কোন আলেম বলেন, যে কেউ আল্লাহর অবাধ্যতা করে সে তা জাহালাত বশতঃই তা করে। [ইবন কাসীর] চিন্তা করলে দেখা যায় যে, যখনই কোন গোনাহ হয়ে যায়, তা কার্যগত অজ্ঞতার কারণেই হয়। এখানে কার্যগত অজ্ঞতাই বুঝানো হয়েছে। এর জন্য অজ্ঞান হওয়া জরুরী নয়। কেননা, কুরআনুল কারম ও অসংখ্য সহীহ হাদীস থেকে জানা যায় যে, তাওবা দ্বারা প্রত্যেক গোনাহ মাফ হয়ে যায়- অমনোযোগিতা ও অজ্ঞতাবশতঃ হোক কিংবা জেনেশুনে মানসিক দূর্মতি ও প্রবৃত্তির তাড়নাবশতঃ হোক।
এখানে বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য যে, আয়াতে দু’টি শর্তাধীনে গোনাহগারদের সম্পর্কে ক্ষমা ও রহমতের ওয়াদা করা হয়েছে- (এক) তাওবা অর্থাৎ গোনাহর জন্য অনুতপ্ত হওয়া। হাদীসে বলা হয়েছে, অনুশোচনার নামই হলো তাওবা। [ইবন মাজাহঃ ৪২৫২: মুসনাদে আহমাদ: ১/৩৭৬] (দুই) ভবিষ্যতের জন্য আমল সংশোধন করা। কয়েকটি বিষয় এ আমল সংশোধনের অন্তর্ভুক্ত। ভবিষ্যতে এ পাপ কাজের নিকটবতী না হওয়ার সংকল্প করা ও সে বিষয়ে যত্নবান হওয়া এবং কৃত গোনাহর কারণে কারো অধিকার নষ্ট হয়ে থাকলে যথাসম্ভব তা পরিশোধ করা, তা আল্লাহর অধিকার হোক কিংবা বান্দার অধিকার। [সা’দী] আল্লাহর অধিকার যেমন, সালাত, সওম, যাকাত, হজ ইত্যাদি ফরয কর্মে ক্রটি করা। আর বান্দার অধিকার- যেমন, কারো অর্থ-সম্পদ অবৈধভাবে করায়ত্ত করা ও ভোগ করা, কারো ইজ্জত-আব্রু নষ্ট করা, কাউকে গালি-গালাজের মাধ্যমে কিংবা অন্য কোন প্রকারে কষ্ট দেয়া ইত্যাদি।
[৪] আর তিনি অত্যন্ত দয়ালু। অর্থাৎ ক্ষমা করেই ক্ষান্ত হবেন না, বরং নেয়ামতও দান করবেন। এ জন্যই ক্ষমা গুণের সাথে রহমত গুণটিও উল্লেখ করা হয়েছে। বান্দা আল্লাহর নির্দেশ পালনে যতটুকু এগিয়ে আসবে তিনি তার ক্ষমা ও রহমত দিয়ে বান্দাকে ততটুকু ঢেকে দিবেন। [সা’দী]