(Book# 114/٢٤١ )-৪৪৩ www.motaher21.net সুরা: আল-আনয়াম ৬৩-৬৫ নং আয়াত:- قُلۡ مَنۡ یُّنَجِّیۡکُمۡ مِّنۡ ظُلُمٰتِ الۡبَرِّ وَ الۡبَحۡر তুমি তাদেরকে জিজ্ঞেস করঃ স্থলভাগ ও পানিস্থিত…. Say:”Who rescues you from the dark recesses of the land and the sea…

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ

(Book# 114/٢٤١ )-৪৪৩
www.motaher21.net
সুরা: আল-আনয়াম
৬৩-৬৫ নং আয়াত:-
قُلۡ مَنۡ یُّنَجِّیۡکُمۡ مِّنۡ ظُلُمٰتِ الۡبَرِّ وَ الۡبَحۡر

তুমি তাদেরকে জিজ্ঞেস করঃ স্থলভাগ ও পানিস্থিত….

Say:”Who rescues you from the dark recesses of the land and the sea…

قُلۡ مَنۡ یُّنَجِّیۡکُمۡ مِّنۡ ظُلُمٰتِ الۡبَرِّ وَ الۡبَحۡرِ تَدۡعُوۡنَہٗ تَضَرُّعًا وَّ خُفۡیَۃً ۚ لَئِنۡ اَنۡجٰىنَا مِنۡ ہٰذِہٖ لَنَکُوۡنَنَّ مِنَ الشّٰکِرِیۡنَ ﴿۶۳﴾
তুমি তাদেরকে জিজ্ঞেস করঃ স্থলভাগ ও পানিস্থিত অন্ধকার (বিপদ) থেকে তোমাদেরকে কে পরিত্রাণ দিয়ে থাকেন, যখন কাতর কন্ঠে বিনীতভাবে এবং চুপে চুপে তাঁর কাছে প্রার্থনা করে থাক, আর বলতে থাকঃ তিনি যদি আমাদেরকে এই বিপদ থেকে মুক্তি দেন তাহলে আমরা অবশ্যই কৃতজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত হব।

قُلِ اللّٰہُ یُنَجِّیۡکُمۡ مِّنۡہَا وَ مِنۡ کُلِّ کَرۡبٍ ثُمَّ اَنۡتُمۡ تُشۡرِکُوۡنَ ﴿۶۴﴾
তুমি বলে দাওঃ আল্লাহই তোমাদেরকে ঐ বিপদ এবং অন্যান্য প্রতিটি বিপদ আপদ থেকে রক্ষা করেন, কিন্তু এরপরও তোমরা শিরক কর।

قُلۡ ہُوَ الۡقَادِرُ عَلٰۤی اَنۡ یَّبۡعَثَ عَلَیۡکُمۡ عَذَابًا مِّنۡ فَوۡقِکُمۡ اَوۡ مِنۡ تَحۡتِ اَرۡجُلِکُمۡ اَوۡ یَلۡبِسَکُمۡ شِیَعًا وَّ یُذِیۡقَ بَعۡضَکُمۡ بَاۡسَ بَعۡضٍ ؕ اُنۡظُرۡ کَیۡفَ نُصَرِّفُ الۡاٰیٰتِ لَعَلَّہُمۡ یَفۡقَہُوۡنَ ﴿۶۵﴾
তুমি বলে দাওঃ আল্লাহ তোমাদের ঊর্ধ্বলোক হতে এবং তোমাদের পায়ের তলদেশ হতে শাস্তি প্রেরণ করতে যথেষ্ট ক্ষমতাবান, অথবা তোমাদেরকে দলে দলে বিচ্ছিন্ন করে এক দলের দ্বারা অপর দলের শক্তির স্বাদ গ্রহণ করাবেন; লক্ষ্য কর! আমি বার বার বিভিন্ন উপায়ে আমার নিদর্শন ও যুক্তি প্রমাণ বর্ণনা করছি – উদ্দেশ্য হল, যেন বিষয়টিকে তারা পূর্ণ রূপে জ্ঞানায়ত্ব ও হৃদয়ঙ্গম করে নিতে পারে।
৬৩-৬৫ নং আয়াতের তাফসীর:

আল্লাহ তা‘আলা নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলেন, মুশরিকদেরকে বলে দাও- স্থলে ও জলে বিপদে পতিত হলে খুব বিনয়ের সাথে ও গোপনে কাকে আহ্বান কর? তোমরা তো কেবল আল্লাহ তা‘আলাকেই আহ্বান করে বল: যদি এ বিপদ থেকে মুক্তি পাই তাহলে শুকরিয়া আদায় করব। কিন্তু পরক্ষণে তার সাথে তোমরা অংশী স্থাপন কর।

অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(ھُوَ الَّذِیْ یُسَیِّرُکُمْ فِی الْبَرِّ وَالْبَحْرِﺚ حثج اِذَا کُنْتُمْ فِی الْفُلْکِﺆ وَجَرَیْنَ بِھِمْ بِرِیْحٍ طَیِّبَةٍ وَّفَرِحُوْا بِھَا جَا۬ءَتْھَا رِیْحٌ عَاصِفٌ وَّجَا۬ءَھُمُ الْمَوْجُ مِنْ کُلِّ مَکَانٍ وَّظَنُّوْٓا اَنَّھُمْ اُحِیْطَ بِھِمْﺫ دَعَوُا اللہَ مُخْلِصِیْنَ لَھُ الدِّیْنَﹰ لَئِنْ اَنْجَیْتَنَا مِنْ ھٰذِھ۪ لَنَکُوْنَنَّ مِنَ الشّٰکِرِیْنَ)

“তিনিই তোমাদেরকে জলে-স্থলে ভ্রমণ করান, যখন তোমরা নৌকারোহী হও এবং এগুলো আরোহী নিয়ে অনুকূল বাতাসে বয়ে যায় তখন তারা তাতে আনন্দিত হয়, এমতাবস্থায় নৌকাগুলোর ওপর এক প্রচণ্ড বাতাস এসে পড়ে এবং সর্বদিক হতে তারা তরঙ্গাহত হয় এবং তারা তা দ্বারা পরিবেষ্টিত হয়ে পড়েছে মনে করে, তখন তারা আনুগত্যে বিশুদ্ধচিত্ত হয়ে আল্লাহকে ডেকে বলেঃ ‘তুমি আমাদেরকে এ হতে পরিত্রাণ দিলে আমরা অবশ্যই কৃতজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত হব।’(সূরা ইউনুস ১০:২২)

(مِّنْ فَوْقِكُمْ)

‘তোমাদের উর্ধ্বদেশ’অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের ওপর থেকে বিপদ-আপদ দিতে সক্ষম। যেমন অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, ঝড়-ঝঞ্ঝা, শিলাবৃষ্টি বজ্রাঘাত এবং শাসকদের পক্ষ থেকে জুলুম অত্যাচার।

(مِنْ تَحْتِ أَرْجُلِكُمْ)

‘অথবা পাদদেশ হতে’অর্থাৎ নিচ থেকে বিপদাপদ দিতেও সক্ষম, যেমন ভূমিধস, বান-বন্যা, ভুমিকম্পসহ সকল শাস্তি।

(يَلْبِسَكُمْ شِیَعًا)

‘অথবা তোমাদেরকে বিভিন্ন দলে বিভক্ত করতে’অর্থাৎ তোমাদের যাবতীয় কার্যকলাপকে এমন এলোমেলো ও সন্দিহান করে দেবেন যার কারণে তোমরা দলে দলে বিভক্ত হয়ে যাবে।

يقتل بعضكم بعضا فتذيق كل طائفة الأخري ألم الحرب

তোমাদের একে অপরকে হত্যা করবে। এভাবে প্রত্যেক দল অপর দলকে যুদ্ধের স্বাদ আস্বাদন করাবে। (আয়সারুত তাফাসীর ১ম খণ্ড, পৃঃ ৬১৭)

নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: আমি আল্লাহ তা‘আলার কাছে তিনটি দু‘আ করেছি। ১. আমার উম্মাতকে ডুবিয়ে যেন ধ্বংস না করা হয়। ২. ব্যাপক দুর্ভিক্ষ দ্বারা যেন তাদের বিনাশ সাধন না হয়। ৩. তাদের মাঝে পরস্পরে যেন গৃহযুদ্ধ না হয়। আল্লাহ তা‘আলা প্রথম দু’টি কবূল করলেন পরেরটি কবূল করলেন না। (সহীহ মুসলিম হা: ২৮৯০, সহীহ ইবনু খুযাইমাহ হা: ১২১৭)

জাবের (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন আয়াতটি অবতীর্ণ হল রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তখন বললেন- আপনার কাছে আশ্রয় চাচ্ছি, আবার যখন বলা হল:

(مِنْ تَحْتِ أَرْجُلِكُمْ)

তখনও বললেন- আপনার কাছে আশ্রয় চাচ্ছি। পরে যখন বলা হল:

(أَوْ يَلْبِسَكُمْ شِيَعًا وَّيُذِيْقَ بَعْضَكُمْ بَأْسَ بَعْضٍ)

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: এটা অধিক হালকা অথবা অধিক সহজ। (সহীহ বুখারী হা: ৪৬২৮)

আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:

১. সকল বিপদ-আপদ থেকে মুক্তি দেয়ার একমাত্র মালিক আল্লাহ তা‘আলা।
২. আল্লাহ তা‘আলা যে কোন উপায়ে মানুষকে শাস্তি দিতে সক্ষম।
৩. মানুষ বিপদ থেকে মুক্তি পেলে অকৃতজ্ঞ হয়।

English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Sura Anam
Verses :- 63-65
قُلۡ مَنۡ یُّنَجِّیۡکُمۡ مِّنۡ ظُلُمٰتِ الۡبَرِّ وَ الۡبَحۡر
Say:”Who rescues you from the dark recesses of the land and the sea…
Allah’s Compassion and Generosity, and His Power and Torment

Allah mentions how He favors His servants, saving them during times of need, in the darkness of land and at sea, such as when storms strike. In such cases, they call on Allah alone, without partners, in supplication. In other Ayat, Allah said,

وَإِذَا مَسَّكُمُ الْضُّرُّ فِى الْبَحْرِ ضَلَّ مَن تَدْعُونَ إِلَا إِيَّاهُ

And when harm strikes you at sea, those that you call upon besides Him vanish from you except Him. (17:67)

هُوَ الَّذِى يُسَيِّرُكُمْ فِى الْبَرِّ وَالْبَحْرِ حَتَّى إِذَا كُنتُمْ فِى الْفُلْكِ وَجَرَيْنَ بِهِم بِرِيحٍ طَيِّبَةٍ وَفَرِحُواْ بِهَا جَأءَتْهَا رِيحٌ عَاصِفٌ وَجَأءَهُمُ الْمَوْجُ مِن كُلِّ مَكَانٍ وَظَنُّواْ أَنَّهُمْ أُحِيطَ بِهِمْ دَعَوُاْ اللَّهَ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ لَيِنْ أَنْجَيْتَنَا مِنْ هَـذِهِ لَنَكُونَنَّ مِنَ الشَّـكِرِينَ

He it is Who enables you to travel through the land and the sea, till when you are in the ships and they sail with them with a favorable wind, and they rejoice, then comes a stormy wind and the waves come to them from all sides, and they think that they are encircled therein, they invoke Allah, making their faith pure for Him alone, saying:”If You deliver us from this, we shall truly be of the grateful”. (10:22)

and,

أَمَّن يَهْدِيكُمْ فِى ظُلُمَـتِ الْبَرِّ وَالْبَحْرِ وَمَن يُرْسِلُ الرِّيَاحَ بُشْرًاَ بَيْنَ يَدَىْ رَحْمَتِهِ أَءِلَـهٌ مَّعَ اللَّهِ تَعَالَى اللَّهُ عَمَّا يُشْرِكُونَ

Is not He (better than your gods) Who guides you in the darkness of the land and the sea, and Who sends the winds as heralds of glad tidings, going before His mercy Is there any god with Allah High Exalted be Allah above all that they associate as partners (with Him)! (27:63)

Allah said in this honorable Ayah,

قُلْ مَن يُنَجِّيكُم مِّن ظُلُمَاتِ الْبَرِّ وَالْبَحْرِ تَدْعُونَهُ تَضَرُّعاً وَخُفْيَةً

Say:”Who rescues you from the dark recesses of the land and the sea, when you call upon Him begging and in secret.”

i.e., in public and secret,

لَّيِنْ أَنجَانَا

(Saying):`If He (Allah) only saves us…

مِنْ هَـذِهِ

from these (dangers),

from this distress,

لَنَكُونَنَّ مِنَ الشَّاكِرِينَ

we shall truly be grateful.

thereafter
Allah said,

قُلِ اللّهُ يُنَجِّيكُم مِّنْهَا وَمِن كُلِّ كَرْبٍ ثُمَّ أَنتُمْ تُشْرِكُونَ

Say:”Allah rescues you from these (dangers) and from all distress, and yet you commit Shirk.”

meaning, yet you call other gods besides Him in times of comfort.

Allah said
قُلْ هُوَ الْقَادِرُ عَلَى أَن يَبْعَثَ عَلَيْكُمْ عَذَابًا مِّن فَوْقِكُمْ أَوْ مِن تَحْتِ أَرْجُلِكُمْ

Say:”He has the power to send torment on you from above or from under your feet,”

He said this after His statement,
ثُمَّ أَنتُمْ تُشْرِكُونَ
(And yet you commit Shirk). Allah said next,
قُلْ هُوَ الْقَادِرُ عَلَى أَن يَبْعَثَ عَلَيْكُمْ عَذَابًا
(Say:”He has the power to send torment on you..”), after He saves you.

Allah said in Surah Isra’,

رَّبُّكُمُ الَّذِى يُزْجِى لَكُمُ الْفُلْكَ فِى الْبَحْرِ لِتَبْتَغُواْ مِن فَضْلِهِ إِنَّهُ كَانَ بِكُمْ رَحِيمًا

وَإِذَا مَسَّكُمُ الْضُّرُّ فِى الْبَحْرِ ضَلَّ مَن تَدْعُونَ إِلَا إِيَّاهُ فَلَمَّا نَجَّـكُمْ إِلَى الْبَرِّ أَعْرَضْتُمْ وَكَانَ الاِنْسَـنُ كَفُورًا

أَفَأَمِنتُمْ أَن يَخْسِفَ بِكُمْ جَانِبَ الْبَرِّ أَوْ يُرْسِلَ عَلَيْكُمْ حَاصِبًا ثُمَّ لَا تَجِدُواْ لَكُمْ وَكِيلً

أَمْ أَمِنتُمْ أَن يُعِيدَكُمْ فِيهِ تَارَةً أُخْرَى فَيُرْسِلَ عَلَيْكُمْ قَاصِفًا مِّنَ الرِّيحِ فَيُغْرِقَكُم بِمَا كَفَرْتُمْ ثُمَّ لَا تَجِدُواْ لَكُمْ عَلَيْنَا بِهِ تَبِيعًا

Your Lord is He Who drives the ship for you through the sea, in order that you may seek of His bounty. Truly! He is Ever Merciful towards you. And when harm strikes you upon the sea, those that you call upon besides Him vanish from you except Him. But when He brings you safely to land, you turn away (from Him). And man is ever ungrateful. Do you then feel secure that He will not cause a side of the land to swallow you up, or that He will not send against you a storm of stones! Then, you shall find no guardian. Or do you feel secure that He will not send you back a second time to sea, and send against you a hurricane of wind and drown you because of your disbelief, then you will not find any avenger therein against Us. (17:66-69)

Al-Bukhari, may Allah grant him His mercy, commented on Allah’s statement,

قُلْ هُوَ الْقَادِرُ
أَوْ يَلْبِسَكُمْ شِيَعاً وَيُذِيقَ بَعْضَكُم بَأْسَ بَعْضٍ

Say:”He has the power to send torment on you from above or from under your feet, or to Yalbisakum in party strife, and make you taste the violence of one another.”

“Yalbisakum means, `cover you with confusion’, So it means to, `divide into parties and sects’.

Jabir bin Abdullah said,

`When this Ayah was revealed,
قُلْ هُوَ الْقَادِرُ عَلَى أَن يَبْعَثَ عَلَيْكُمْ عَذَابًا مِّن فَوْقِكُمْ
(Say:”He has power to send torment on you from above”), Allah’s Messenger said,
أَعُوذُ بِوَجْهِك
(I seek refuge with Your Face),
أَوْ مِن تَحْتِ أَرْجُلِكُمْ
(or from under your feet),

he again said,
أَعُوذُ بِوَجْهِك
(I seek refuge with Your Face),
أَوْ يَلْبِسَكُمْ شِيَعاً وَيُذِيقَ بَعْضَكُم بَأْسَ بَعْضٍ
(or to cover you with confusion in party strife, and make you to taste the violence of one another).

he said,

هَذهِ أَهْوَنُ أَوْ أَيْسَر

This is less burdensome or easier.”‘

Al-Bukhari recorded this Hadith again in the book of Tawhid (in his Sahih), and An-Nasa’i also recorded it in the book of Tafsir.
Another Hadith

Imam Ahmad recorded that;

Sa`d bin Abi Waqqas said, We accompanied the Messenger of Allah and passed by the Masjid of Bani Mu`awiyah. The Prophet went in and offered a two Rak`ah prayer, and we prayed behind him. He supplicated to his Lord for a long time and then said,

سَأَلْتُ رَبِّي ثَلَأثًا

سَأَلْتُهُ أَنْ لَاأ يُهْلِكَ أُمَّتِي بِالْغَرَقِ فَأَعْطَانِيهَا

وَسَأَلْتُهُ أَنْ لَا يُهْلِكَ أُمَّتِي بِالسَّنَةِ فَأَعْطَانِيهَا

وَسَأَلْتُهُ أَنْ لَا يَجْعَلَ بَأْسَهُمْ بَيْنَهُمْ فَمَنَعَنِيهَا

I asked my Lord for three:

I asked Him not to destroy my Ummah (Muslims) by drowning and He gave that to me.

I asked Him not to destroy my Ummah by famine and He gave that to me.

And I asked Him not to make them taste the violence of one another, but He did not give that to me.

Muslim, but not Al-Bukhari, recorded this Hadith in the book on Fitan (trials) (of his Sahih).
Another Hadith

Imam Ahmad recorded that;

Khabbab bin Al-Aratt, who attended the battle of Badr with the Messenger of Allah, said, “I met Allah’s Messenger during a night in which he prayed throughout it, until dawn. When the Messenger of Allah ended his prayer, I said, `O Allah’s Messenger! This night, you have performed a prayer that I never saw you perform before.’

Allah’s Messenger said,

أَجَلْ إِنَّهَا صَلَةُ رَغَبٍ وَرَهَبٍ سَأَلْتُ رَبِّي عَزَّ وَجَلَّ فِيهَا ثَلَثَ خِصَالٍ فَأَعْطَانِي اثْنَتَيْنِ وَمَنَعَنِي وَاحِدَةً

Yes, it was a prayer of eagerness and fear. During this prayer, I asked my Lord for three things and He gave me two and refused to give me the third.

سَأَلْتُ رَبِّي عَزَّ وَجَلَّ أَنْ لَاأ يُهْلِكْنَا بِمَا أَهْلَكَ بِهِ الاْأُمَمَ قَبْلَنَا فَأَعْطَانِيهَا

وَسَأَلْتُ رَبِّي عَزَّ وَجَلَّ أَنْ لَا يُظْهِرَ عَلَيْنَا عَدُوًّا مِنْ غَيْرِنَا فَأَعْطَانِيهَا

وَسَأَلْتُ رَبِّي عَزَّ وَجَلَّ أَنْ لَا يُلْبِسَنَا شِيَعًا فَمَنَعَنِيهَا

I asked my Lord not to destroy us with what He destroyed the nations before us and He gave me that.

I asked my Lord not to make our enemies prevail above us and He gave me that.

I asked my Lord not to cover us with confusion in party strife, but He refused.

An-Nasa’i, Ibn Hibban in his Sahih, and At-Tirmidhi also recorded it. In the book on Fitan, in Al-Jami`, At-Tirmidhi said, “Hasan Sahih”.

Allah’s statement,

أَوْ يَلْبِسَكُمْ شِيَعاً

or to cover you with confusion in party strife,

means, He causes you to be in disarray and separate into opposing parties and groups.

Al-Walibi (Ali bin Abi Talhah) reported that Ibn Abbas said that;

this Ayah refers to desires.

Mujahid and several others said similarly.

A Hadith from the Prophet, collected from various chains of narration, states,

وَسَتَفْتَرِقُ هَذِهِ الاُمَّةُ عَلَى ثَلَثٍ وَسَبْعِينَ فِرْقَةً كُلُّهَا فِي النَّارِ إِلاَّ وَاحِدَة

And this Ummah (Muslims) will divide into seventy – three groups, all of them in the Fire except one.

Allah said;

وَيُذِيقَ بَعْضَكُم بَأْسَ بَعْضٍ

and make you taste the violence of one another.

According to Ibn Abbas and others,

meaning, some of you will experience torture and murder from one another.

Allah said next,

انظُرْ كَيْفَ نُصَرِّفُ الايَاتِ

See how variously We explain the Ayat,

by making them clear, plain and duly explained,

لَعَلَّهُمْ يَفْقَهُونَ

So that they may understand.

and comprehend Allah’s Ayat, proofs and evidences.

তাফসীরে ইবনে ‌কাসীর বলেছেন:-
৬৩-৬৫ নং আয়াতের তাফসীর:

মহান আল্লাহ স্বীয় বান্দাদের প্রতি তাঁর অনুগ্রহের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেছেনযখন বান্দা স্থলভাগ ও জলভাগের অন্ধকারের মধ্যে অর্থাৎ কঠিন বিপদ-আপদের মধ্যে পতিত হয় তখন আমি তাদেরকে কি প্রকারে মুক্তি দিয়ে থাকি। যখন বান্দা সমুদ্রের ঘূর্ণির মধ্যে পড়ে গিয়েছিল এবং সেখানে বিচ্ছিন্ন বায়ু প্রবাহিত হচ্ছিল তখন তারা প্রার্থনার জন্যে এক আল্লাহকেই নির্দিষ্ট করে নিয়েছিল। যেমন এক জায়গায় বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “যখন সমুদ্রে তোমাদের উপর কোন বিপদ পৌঁছে তখন সমস্ত অংশীদারকে ভুলে গিয়ে একমাত্র আল্লাহকেই ডেকে থাক।” (১৭:৬৭) আল্লাহ পাক এক স্থানে বলেনঃ “তিনি সেই আল্লাহ যিনি জলে ও স্থলে তোমাদেরকে ভ্রমণ করিয়ে থাকেন। যখন জাহাজ উত্তম ও অনুকূল বাতাসে চলতে থাকে তখন তোমরা খুবই খুশী হও। আর যখন বিচ্ছিন্ন ও প্রতিকূল বাতাস প্রবাহিত হয় এবং সব দিক থেকে ঢেউ এসে পড়ে আর তোমাদের মনে এই বিশ্বাস জন্মে যে, মৃত্যু তোমাদেরকে ঘিরে ফেলেছে, তখন তোমরা অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে আল্লাহকেই ডাকতে থাক এবং বল-হে আল্লাহ! যদি আপনি আমাদেরকে এই বিপদ থেকে মুক্তি দান করেন তবে অবশ্যই আমরা কৃতজ্ঞ বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবো।”

ইরশাদ হচ্ছে- চিন্তা কর তো, জল ও স্থলের অন্ধকারের মধ্যে তোমাদেরকে সোজা পথে কে পরিচালিত করে? আর স্বীয় অনুগ্রহে নির্মল বাতাস কে প্রবাহিত করে? আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ আছে কি যাদেরকে তোমরা শরীক বানিয়ে নিয়েছো?

মহান আল্লাহ বলেনঃ স্থলভাগের ও জলভাগের অন্ধকার থেকে কে তোমাদেরকে মুক্তি দিয়ে থাকেন? যাঁকে তোমরা প্রকাশ্যে ও গোপনে ডেকে ডেকে বল- যদি আপনি আমাদেরকে বিপদ থেকে মুক্তি দান করেন তবে আমরা আপনার কৃতজ্ঞ বান্দা হয়ে যাবো। হে রাসূল (সাঃ)! তুমি তাদেরকে বলে দাওআল্লাহই তোমাদেরকে এই সমুদয় বিপদ-আপদ থেকে মুক্তি দান করে থাকেন। অথচ তোমরা খুশী মনে প্রতিমাগুলোকে তাঁর শরীক বানিয়ে নিচ্ছ! আল্লাহ তোমাদের উপর শাস্তি অবতীর্ণ করতে পূর্ণ ক্ষমতাবান। যেমন সূরায়ে সুবহানে রয়েছে, তোমাদের প্রতিপালকই জাহাজসমূহ সমুদ্রে চালিয়ে থাকেন যেন তোমরা সম্পদ উপার্জন করতে পার। তিনি তোমাদের প্রতি দাতা ও দয়ালু। যখন তোমাদের উপর কোন বিপদ এসে পড়ে তখন তোমরা তোমাদের সমুদয় মূর্তিকে ভুলে গিয়ে আল্লাহকেই স্মরণ করে থাকো। আর যখন তিনি তোমাদেরকে সমুদ্রের বিপদ থেকে বাঁচিয়ে স্থলভাগে আনয়ন করেন তখন তোমরা আল্লাহকে এড়িয়ে চল, মানুষ খুবই অকৃতজ্ঞ। তোমরা কি মনে করেছে যে, স্থলভাগে এসেই রক্ষা পেয়ে গেছো? তিনি ইচ্ছে করলে তোমাদেরকে পানিতে ডুবিয়ে দেয়ার মত যমীনেও ঢুকিয়ে দিতে পারেন কিংবা আকাশ থেকে তোমাদের উপর পাথর বর্ষণ করতে পারেন, অতঃপর তোমাদের কোন সাহায্যকারী থাকবে না। পুনরায় তিনি তোমাদেরকে সমুদ্রে ভ্রমণ করিয়ে প্রতিকূল বায়ু প্রবাহিত করতঃ পানিতে ডুবিয়ে দিতে সক্ষম বা তোমাদের পায়ের নীচে থেকেই তোমাদের প্রতি শাস্তি প্রেরণে পূর্ণ ক্ষমতাবান। হাসান বলেন যে, এর দ্বারা মুশরিকদেরকে সম্বোধন করা হয়েছে। আল্লাহ পাক ক্ষমা করুন। আমরা তারই উপর ভরসা করি। এখানে আমরা উপরোক্ত আয়াতের সাথে সম্পর্কযুক্ত কতগুলো হাদীস বর্ণনা করবোঃ

ইমাম বুখারী (রাঃ) বলেন যে, (আরবী) এর অর্থ হচ্ছে- তোমরা বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে গিয়ে পরস্পর ঝগড়া বিবাদে লিপ্ত হয়ে পড়। অর্থাৎ আল্লাহ তা’আলা ইচ্ছে করলে তোমাদেরকে এই ধরনের শাস্তিতে জড়িত করতে পারেন। হযরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, যখন (আরবী) -এই আয়াতটি অবতীর্ণ হয় তখন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ অর্থাৎ আমি আপনার সন্তুষ্টির মাধ্যমে আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি।’ আর -এর সময়ও বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ আমি আপনারই কাছে আশ্রয় চাচ্ছি। আবার যখন তিনি। শুনেন তখন বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ তুলনামূলকভাবে এটা অনেকটা সহজ।’ হযরত জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, যখন (আরবী) -এই আয়াত অবতীর্ণ হয় তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ এর থেকে আমি আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাচ্ছি।’ অতঃপর (আরবী) -এটুকু শুনে বলেনঃ অর্থাৎ আমি আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাচ্ছি। তারপর (আরবী) -এটুকু শুনে বলেনঃ “এটা সহজতর বটে।’ তিনি ওটা থেকে আশ্রয় চাইলেও চাইতে পারতেন। হযরত সা’দ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, এই আয়াত শুনে রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ ‘এটা অবশ্যই হবে, এখন পর্যন্ত হয়নি।’

হযরত সা’দ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন ? ‘আমরা রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর সাথে চলছিলাম। শেষ পর্যন্ত আমরা বানী মুআবিয়া (রাঃ)-এর মসজিদে আগমন করি। তিনি মসজিদে প্রবেশ করে দু’রাকআত নামায পড়েন। অতঃপর দীর্ঘক্ষণ ধরে তিনি মহা মহিমান্বিত আল্লাহর দরবারে মুনাজাত করতে থাকেন। তারপর তিনি বলেনঃ “আমি আমার প্রতিপালকের কাছে তিনটি জিনিসের আবেদন জানিয়েছিলাম- (১) আমার উম্মত যেন পানিতে ডুবে যাওয়ার মাধ্যমে ধ্বংস হয়ে না যায়। তিনি তা কবুল করেছেন। (২) আমার উম্মত যেন (আরবী) বা দুর্ভিক্ষে ধ্বংস হয়ে না যায়। তিনি ওটাও ককূল করেছেন। (৩) তাদের পরস্পরের মধ্যে যেন যুদ্ধ-বিগ্রহের সৃষ্টি না হয়। তিনি ওটা না মঞ্জুর করেন।” (এই হাদীসটি ইমাম মুসলিম (মঃ) কিতাবুল ফিতানের মধ্যে তাখরীজ করেছেন। (আরবী) শব্দের অর্থ হচ্ছে দুর্ভিক্ষ)

ইমাম আহমাদ (রঃ) হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্দিল্লাহ ইবনে জাবির ইবনে উতাইক (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেনঃ বানু মু’আবিয়া পল্লীতে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমার (রাঃ) আমাদের নিকট আগমন করেন, ওটা হচ্ছে আনসারদের একটা গ্রাম। এসে তিনি বলেন- “তোমাদের এই মসজিদে রাসূলুল্লাহ (সঃ) কোথায় নামায পড়েছিলেন তা তুমি জান কি?’ আমি বললাম, হ্যা, এবং একটি কোণের দিকে ইশারা করলাম। তিনি পুনরায় জিজ্ঞেস করলেনঃ “তিনি তিনটি কি কি জিনিসের জন্যে প্রার্থনা করেছিলেন তা কি তুমি জান? আমি উত্তরে বললাম, হ্যা। তিনি বললেনঃ ‘ঐগুলোর সংবাদ আমাকে দাও। আমি তখন বললাম, তিনি প্রার্থনা করেছিলেন যে, তাঁর উম্মতের উপর যেন কোন শত্রু জয়যুক্ত না হয় এবং তারা যেন দুর্ভিক্ষের কবলে পড়ে ধ্বংস হয়ে না যায়। ঐ দুটি মঞ্জুর করে নেয়া হয়। আর তিনি এই প্রার্থনাও করেন যে, তারা যেন। পরস্পরে যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে না পড়ে। এটা গৃহীত হয়নি। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমার (রাঃ) তখন বলেনঃ তুমি ঠিকই বলেছো। কিয়ামত পর্যন্ত মুসলমানদের স্পরের মধ্যে যুদ্ধ হতেই থাকবে। (ইবনে কাসীর (রঃ) বলেন যে, এই হাদীসটির ইসনাদ খুবই উত্তম ও মযবুত বটে, কিন্তু ছ’টি বিশুদ্ধ হাদীস গ্রন্থের মধ্যে এটি বর্ণিত হয়নি)

ইমাম আহমাদ (রঃ) হযরত আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেনঃ ‘সফরে একদা আমি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে দেখেছি যে, তিনি চাশতের আট রাকআত নামায পড়লেন। অতঃপর নামায শেষ করে তিনি বললেনঃ আমি রগবত’ ও ‘রহবতের’ (আগ্রহ ও ভীতির) নামায পড়লাম। আমার প্রভুর কাছে আমি তিনটি জিনিসের জন্যে প্রার্থনা করলাম। তিনি দু’টি ককূল করলেন কিন্তু একটি ককূল করলেন না। আমি প্রার্থনা করলাম যে, আমার উম্মত যেন দুর্ভিক্ষের কবলে না পড়ে। এটা তিনি মঞ্জুর করলেন। আমি আবেদন জানালাম যে, আমার উম্মতের উপর যেন তাদের শত্রুরা জয়যুক্ত হতে না পারে। এটাও তিনি ককূল করলেন। আমি দরখাস্ত করলাম যে, আমার উম্মত যেন দলে দলে বিভক্ত হয়ে না পড়ে। এটা তিনি মঞ্জুর করলেন না।

হযরত মুআহ্ ইবনে জাবাল (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর সাথে সাক্ষাতের উদ্দেশ্যে গেলাম। বলা হলো যে, তিনি এখনই বেরিয়ে গেলেন। যেখানেই যাই সেখানেই বলা হয় যে, তিনি এখনই চলে গেলেন। অবশেষে আমি তাঁকে এক জায়গায় নামাযের অবস্থায় দেখতে পেলাম। আমি তাঁর সাথে নামাযে দাঁড়িয়ে গেলাম। তিনি দীর্ঘক্ষণ ধরে নামায পড়লেন। নামাযের পরে আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আপনি এতো দীর্ঘক্ষণ ধরে নামায পড়লেন কেন? তিনি উত্তরে বললেন ঃ “আমি ভয় ও আগ্রহের নামায পড়ছিলাম। অতঃপর তিনি উপরোক্ত তিনটি প্রার্থনার বর্ণনা দেন।

ইমাম আহমাদ (রঃ) বানী যাহরার গোলাম খাব্বাব ইবনে আরত (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন, তিনি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর সাথে বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন, তিনি বলেনঃ একদা আমি সারা রাত ধরে রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর সাথে নামায পড়ছিলাম। তিনি নামাযের সালাম ফিরালে আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! আপনি আজ এতো দীর্ঘ সময় ধরে নামায পড়লেন যে, এর পূর্বে কোন দিন আমি আপনাকে এত লম্বা সময় ধরে নামায পড়তে দেখিনি (এর কারণ কি?)! তিনি বললেনঃ হ্যাঁ, এটা ছিল রগবত ও ভীতির নামায । এই নামাযে আমি আমার মহা মহিমান্বিত প্রভুর নিকট তিনটি জিনিসের জন্যে প্রার্থনা করেছিলাম। দু’টি তিনি মঞ্জুর করেছেন এবং একটি মঞ্জুর করেননি। আমার মহান প্রভুর কাছে প্রার্থনা করলাম যে, আমাদের পূর্ববর্তী উম্মতদেরকে যে জিনিসে ধ্বংস করে দিয়েছিল তা যেন আমাদেরকে ধ্বংস না করে। এটা তিনি কবুল করেছেন। আমার সম্মানিত প্রভুর নিকট আমি আবেদন জানালাম যে, আমাদের উপর আমাদের শত্রুরা যেন জয়যুক্ত হতে না পারে। এটাও গৃহীত হয়েছে। আমার মহা মর্যাদাবান প্রতিপালকের কাছে আমি দরখাস্ত করলাম যে, আমরা যেন বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে না পড়ি। এটা তিনি কবুল করলেন না। (এই হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ), ইমাম নাসাঈ (রঃ), ইবনে হিব্বান (রঃ) এবং ইমাম তিমিযী (রঃ) বর্ণনা করেছেন এবং ইমাম তিরমিযী (রঃ) এটাকে হাসান ও সহীহ বলেছেন) আবু মালিক (রঃ) বলেনঃ “আমি বর্ণনাকারী নাফে ইবনে খালিদকে জিজ্ঞেস করলাম, আপনি কি এই হাদীসটি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর মুখে শুনেছেন? তিনি উত্তরে বললেনঃ হ্যা, আমি ঐ লোকদের মুখে শুনেছি যারা স্বয়ং রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর মুখে শুনেছিলেন।

হযরত শাদ্দাদ ইবনে আউস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ আমার জন্যে যমীনকে নিকটবর্তী করে দিয়েছেন, এমন কি আমি ওর মাশরিক ও মাগরিবকে দেখতে পাই এবং আমার উম্মত এই সবের মালিক হয়ে যাবে। আমাকে দুটি ধন-ভাণ্ডার দেয়া হয়েছে। একটি সাদা ও অপরটি লাল। (সাদা ও লাল ধন-ভাণ্ডার দ্বারা স্বর্ণ ও রৌপ্য বুঝানো হয়েছে) আমি আমার মহা মহিমান্বিত প্রভুর নিকট প্রার্থনা করেছিলাম যে, আমার উম্মত যেন সাধারণ দুর্ভিক্ষের কবলে পতিত না হয়। আরও প্রার্থনা জানিয়েছিলাম যে, তাদের উপর শক্ররা যেন এমনভাবে জয়যুক্ত না হয় যার ফলে তারা সাধারণভাবে ধ্বংস হয়ে যায়। আমার প্রার্থনা এটাও ছিল যে, আমার উম্মত যেন দলে দলে বিভক্ত না হয়। তখন আল্লাহ তাআলা বলেনঃ “হে মুহাম্মাদ (সঃ)! আমি যে ভাগ্য নির্ধারণ করে দিয়েছি তা রদ হবে না। আমি তোমার এই প্রার্থনা মঞ্জুর করলাম যে, তোমার উম্মত সাধারণ দুর্ভিক্ষের কবলে পড়বে না। আর আমি তোমার এই প্রার্থনাও কবুল করলাম যে, তোমার উম্মতের উপর তাদের শত্রুরা এমনভাবে জয়যুক্ত হবে না যে, তাদেরকে ধ্বংস করবে, হত্যা করবে এবং বন্দী করবে।” রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “আমি শুধুমাত্র আমার উম্মতের পথভ্রষ্ট ইমাম ও নেতৃবর্গকে ভয় করি। যদি একবার আমার উম্মতের উপর তরবারী চড়ে যায় তবে তা আর নামবার নয়। বরং কিয়ামত পর্যন্ত তাদের পরস্পরের মধ্যে যুদ্ধ-বিগ্রহ চলতে থাকবে।” (ইবনে কাসীর (রঃ) বলেন যে, এই হাদীসটি ছ’টি বিশুদ্ধ হাদীস গ্রন্থে বর্ণিত হয়নি। তবে এর ইসনাদ খুবই উত্তম ও মযবুত)

তিবরানী (রঃ) হযরত জাবির ইবনে সুমরাতুস সুওয়ারী (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন, আমি আমার প্রতিপালকের নিকট তিনটি জিনিসের জন্যে আবেদন জানিয়েছিলাম। তিনি দুটি মঞ্জুর করেছেন এবং একটি না মঞ্জুর করেছেন। আমি প্রার্থনা করেছিলাম, হে আমার প্রভু! আমার উম্মতকে আপনি ক্ষুধায় ধ্বংস করবেন না। তিনি বললেনঃ “এটা তোমার জন্যে কবুল করা হলো।” আমি বললাম, হে আমার প্রভু! আপনি তাদের উপর তাদের ছাড়া অন্যদেরকে অর্থাৎ মুশরিকদেরকে এমনভাবে জয়যুক্ত করবেন না যে, তারা তাদেরকে ধ্বংস করে দেবে। তিনি বললেনঃ “এটাও তোমার জন্যে মঞ্জুর করলাম।” আমি প্রার্থনায় বললাম, হে আমার প্রতিপালক! আপনি আমার উম্মতের পরস্পরের মধ্যে যুদ্ধ-বিগ্রহ সৃষ্টি করবেন না। রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেন। আমার প্রভু এটা মঞ্জুর করলেন না।

হযরত নাফে’ ইবনে খালিদ খুযায়ী (রঃ) তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেছেন, যিনি ছিলেন রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর সাহাবীদের মধ্যে একজন এবং বৃক্ষের নীচে অনুষ্ঠিত বায়আতুর রিযওয়ানে উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ (সঃ) নামায পড়েন। জনগণ তাকে ঘিরে রয়েছিলেন। তিনি হালকাভাবে নামায আদায় করেন, তবে রুকূ ও সিজদা পূর্ণভাবেই করেন। কিন্তু তাঁর নামাযের বৈঠক খুবই দীর্ঘ হয়। এমন কি আমরা একে অপরকে ইঙ্গিতে বলি যে, সম্ভবতঃ তার উপর অহী অবতীর্ণ হচ্ছে। তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “না, রগবত ও ভীতির নামায পড়ছিলাম।” এই পূর্ণ হাদীসটি শোনার পর নাফে’ ইবনে খালিদ খুযায়ীকে বলি, আপনার পিতা কি রাসুলুল্লাহ (সঃ)-এর মুখ থেকে শুনেছেন? তিনি উত্তরে বলেনঃ “হ্যা, আমার পিতা বলেছেন যে, তিনি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর মুখে তার দশটি অঙ্গুলির মত দশবার শুনেছেন।”

হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন, আমি আমার মহা মহিমান্বিত প্রভুর নিকট প্রার্থনা করেছি যে, তিনি যেন তাদেরকে চারটি জিনিস থেকে দূরে রাখেন। তখন আল্লাহ তাদেরকে দুটি জিনিস থেকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। আমি আল্লাহ তাআলার কাছে প্রার্থনা করেছিলাম যে, তিনি যেন আমার উম্মতের উপর আকাশ থেকে পাথর বর্ষণ না করেন, তারা যেন ফিরাউন ও তার লোকজনদের মত ডুবে না মরে, তারা যেন দলে দলে বিভক্ত হয়ে না পড়ে এবং তারা যেন পরস্পরে যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে না পড়ে। মহান আল্লাহ তখন পাথর বর্ষণ না করা এবং ডুবে না মরার প্রার্থনা কবুল করেছেন বটে, কিন্তু তারা দলে দলে বিভক্ত না হওয়া এবং তাদের পরস্পরের মধ্যে যুদ্ধ-বিগ্রহ সংঘটিত না হওয়া এই প্রার্থনা দু’টি তিনি ককূল করেননি।

হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, যখন এই আয়াত অবতীর্ণ হয়ঃ (আরবী) তখন নবী (সঃ) উঠে অযু করেন এবং দুআ করতে থাকেনঃ “হে আল্লাহ! উপর ও নীচ হতে আমার উম্মতের উপর শাস্তি অবতীর্ণ করবেন না এবং তাদের মধ্যে যেন দলাদলি সৃষ্টি না হয়, তারা যেন পরস্পরে যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে না পড়ে।” তখন হযরত জিবরাঈল (আঃ) এসে বলেন, “হে মুহাম্মাদ (সঃ)! আল্লাহ তা’আলা আপনার উম্মতকে আকাশ থেকে শাস্তি অবতীর্ণ হওয়া থেকে এবং পায়ের নীচ হতে আযাব নাযিল হওয়া থেকে রক্ষা করেছেন। এর পরে এই শ্ৰেণীরও এই বিষয়ের আরও কয়েকটি হাদীস বর্ণিত হয়েছে, যেগুলোর পুনরাবৃত্তি তরজমা ও তাফসীর পাঠকদের জন্যে নিষ্প্রয়োজন।

আসমানী আযাব দ্বারা পাথর বর্ষণ এবং পায়ের নীচের শাস্তি দ্বারা যমীন ধ্বসে যাওয়া বুঝানো হয়েছে। উল্লিখিত চারটি জিনিসের মধ্যে দু’টি নবী (সঃ)-এর ইন্তেকালের পঁচিশ বছর পর থেকেই প্রকাশ পেতে থাকে। অর্থাৎ মুসলমানদের মধ্যে মতভেদ ও দলাদলি সৃষ্টি এবং তাদের দু’দলের মধ্যে যুদ্ধ-বিগ্রহ শুরু। আর আকাশ থেকে পাথর বর্ষণ ও যমীন ধ্বসে যাওয়া থেকে উম্মতে মুহাম্মদিয়াকে মাহফুয ও নিরাপদ রাখা হয়েছে। মুজাহিদ (রঃ), সাঈদ ইবনে জুবাইর (রঃ), সুদ্দী (রঃ), ইবনে যায়েদ (রঃ) এবং ইবনে জারীর (রঃ) ভাবার্থ এটাই গ্রহণ করেছেন।

এই আয়াতের ব্যাপারে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) মসজিদে অথবা মিম্বরের উপরে অবস্থানরত অবস্থায় চীৎকার করে বলেছিলেন, “হে লোক সকল! তোমাদের উপর আল্লাহর আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে। যদি আকাশ থেকে শাস্তি এসে যায় তবে কারও রক্ষা নেই। আর যদি পায়ের নীচ থেকে আযাব এসে পড়ে তবে তোমাদেরকে নিয়ে যমীন ধ্বসে যাবে এবং তোমরা ধ্বংস হয়ে যাবে। যদি তোমরা দলে দলে বিভক্ত হয়ে পড় এবং পরস্পর যুদ্ধ-বিগ্রহে লিপ্ত হয়ে যাও তবে এটা সবচেয়ে জঘন্য ব্যাপার হবে।” হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলতেন যে, উপরোক্ত আয়াতের (আরবী) দ্বারা দুষ্ট নেতাদেরকে বুঝানো হয়েছে এবং (আরবী) দ্বারা বুঝানো হয়েছে দুষ্ট খাদেম এবং খারাপ অনুসারীদেরকে। অথবা এর দ্বারা আমীর ও গরীবদেরকে বুঝানো হয়েছে। ইবনে জারীর (রঃ) বলেন যে, এই উক্তিটি যুক্তিপূর্ণ হলেও প্রথম উক্তিটিই বেশী স্পষ্ট ও মযবুত। তিনি বলেন যে, এর সঠিকতার সাক্ষ্য স্বয়ং মহান আল্লাহর নিম্নের উক্তিটি বহন করছেঃ (আরবী) অর্থাৎ “তোমরা কি এর থেকে নিরাপদ হয়ে গেছ যে, আল্লাহ যমীনকে ধ্বসিয়ে দিয়ে তোমাদেরকে ওর ভিতরে ঢুকিয়ে দিবেন এবং ওটা গরম হয়ে গিয়ে টগবগ করে ফুটতে থাকবে? অথবা তোমরা কি এর থেকে নিরাপত্তা লাভ করেছ যে, তিনি তোমাদের উপর পূর্ববর্তী কওমের মত আকাশ থেকে পাথর বর্ষণ করবেন? সত্বরই তোমরা জানতে পারবে যে, আমার ভীতি প্রদর্শন কিরূপ সঠিক ছিল।” (৬৭:১৬-১৭)

হাদীসে রয়েছে যে, আকাশ থেকে পাথর বর্ষিত হওয়া, যমীন ধ্বসে পড়া, আকৃতি পরিবর্তিত হওয়া, এইগুলো এই উম্মতের মধ্যে সংঘটিত হবে এবং এইগুলো হচ্ছে কিয়ামতের নিদর্শনাবলীর অন্তর্ভুক্ত। কিয়ামতের পূর্বে এই নিদর্শনগুলো প্রকাশিত হবে এবং ইনশাআল্লাহ এইগুলোর বর্ণনা ওর স্থানে দেয়া হবে। (আরবী) দ্বারা বিভিন্ন ফিরকা বুঝানো হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ আমার উম্মত তেহাত্তর ফিরকায় বিভক্ত হয়ে যাবে। এক ফিরকা ছাড়া বাকী সবগুলোই জাহান্নামী হবে। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, শাস্তি ও হত্যার মাধ্যমে এক দলকে অন্য দলের উপর বিজয়ী করে দেয়া হবে।

(আরবী) অর্থাৎ লক্ষ্য কর? আমি বারে বারে বিভিন্ন উপায়ে আমার নিদর্শন ও যুক্তি প্রমাণ বর্ণনা করছি, উদ্দেশ্য এই যে, যেন বিষয়টিকে তারা পূর্ণরূপে জ্ঞানায়ত্ব ও হৃদয়ঙ্গম করে নিতে পারে। হযরত যায়েদ ইবনে আসলাম (রাঃ) বলেন যে, যখন (আরবী) -এই আয়াতটি অবতীর্ণ হয় তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “আমার পরে তোমরা কাফির হয়ে যেয়ো না যে, তরবারী দ্বারা একে অপরের গর্দান উড়িয়ে দেবে।” তখন জনগণ বলেন, আমরা তো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই এবং আপনি আল্লাহর রাসূল (এর পরেও কি আমরা এরূপ কাজ করবো?) রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “হ্যা।” তখন তাদের কেউ একজন বলেন, আমরা যখন মুসলমান তখন এটা হতে পারে না যে, আমাদের একে অপরকে হত্যা করবে। সেই সময় এই আয়াত অবতীর্ণ হয়। ইরশাদ হচ্ছেঃ (আরবী) হে নবী (সঃ)! তোমার সম্প্রদায় একে মিথ্যা প্রতিপন্ন করছে অথচ এটা প্রমাণিত সত্য, তুমি বলে দাওআমি তোমাদের উকিল হয়ে আসিনি। মহান আল্লাহ বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ প্রত্যেকটি সংবাদ প্রকাশের একটি নির্দিষ্ট সময় রয়েছে। অতি শীঘ্রই তোমরা নিজেদের পরিণতি সম্পর্কে অবহিত হতে পারবে। (এটা ইবনে আবি হাতিম (রঃ) ও ইবনে জারীর (রঃ) বর্ণনা করেছেন)

তাফসীরে‌ তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
টিকা:৪১) অর্থাৎ একমাত্র আল্লাহই যে, সার্বভৌম ক্ষমতাসম্পন্ন, সকল শক্তির অধিকারী, সমস্ত ইখতিয়ার ও কর্মক্ষমতা যে, তাঁরই হাতে সীমাবদ্ধ, তোমাদের কল্যাণ ও অকল্যাণ করার যাবতীয় ক্ষমতা যে, তাঁরই আয়ত্তাধীন এবং তাঁরই হাতে যে, রয়েছে তোমাদের ভাগ্যের চাবিকাঠি-এ সত্যগুলোর সাক্ষ্য তো তোমাদের নিজেদের অস্তিত্বের মধ্যেই বিদ্যমান। কোন কঠিন সংকটকাল এলে এবং যাবতীয় উপায় উপকরণ হাতছাড়া হতে দেখা গেলে তোমরা নিতান্ত অসহায়ের মতো তাঁর আশ্রয় চাও। কিন্তু এ সমস্ত দ্ব্যর্থহীন আলামত থাকা সত্ত্বেও তোমরা প্রভুত্বের ক্ষেত্রে কোন প্রকার যুক্তি-প্রমাণ ছাড়াই তাঁর সাথে অন্যদেরকে শরীক করেছো। তাঁরই দেয়া জীবিকায় প্রতিপালিত হয়ে অন্নদাতা বলছো অন্যদেরকে। তাঁর অনুগ্রহ ও করুণা লাভ করে অন্যদেরকে বন্ধু ও সাহায্যকারী আখ্যা দিচ্ছো। তাঁর দাস হওয়া সত্ত্বেও অন্যদের বন্দেগী ও দাসত্ব করছো। সংকট থেকে তিনিই উদ্ধার করেন এবং বিপদ ও দুঃখ-কষ্টের দিনে তাঁরই কাছে কান্নাকাটি করো কিন্তু তাঁর সহায়তায় সে কঠিন বিপদ থেকে উদ্ধার লাভ করার পর অন্যদেরকে ত্রাণকর্তা মনে করতে থাকো এবং অন্যদের নামে নযরানা দিতে থাকো।
টিকা:৪২) আল্লাহর আযাবকে নিজেদের থেকে দূরে অবস্থান করতে দেখার কারণে তারা সত্যের বিরুদ্ধাচরণ করার ব্যাপারে অত্যন্ত দুঃসাহসের পরিচয় দিয়ে চলছিল। তাই তাদের উদ্দেশ্যে এখানে সতর্কবাণী উচ্চারণ করে বলা হচ্ছে, আল্লাহর আযাব আসতে একটুও দেরী হয় না। একটি ঘূর্ণিঝড় অকস্মাৎ তোমাদের সবকিছু বরবাদ করে দিতে পারে। ভূমিকম্পের একটি মাত্র ঝট্‌কা তোমাদের সমগ্র জনপদকে ধূলিস্মাত করে দেবার জন্য যথেষ্ট। গোত্রীয় ও জাতীয় বিবাদ বিসম্বাদ এবং বিভিন্ন দেশের মধ্যে বিরাজমান শত্রুতার বারুদে শুধু ছোট্ট একটু খানি আগুনের স্ফুলিংগ রেখে দিলেই তা এমন ভয়াবহ পরিস্থিতির জন্ম দিতে পারে যার ফলে বছরের পর বছর ধরে রক্তপাত, বিশৃঙ্খলা ও অশান্তি থেকে মুক্তি লাভ করা সম্ভব হবে না। কাজেই আযাব আসছে না বলে তোমরা গাফলতির জোয়ারে বেহুঁশের মতো গা ভাসিয়ে দিয়ো না। তোমরা যেন একবারে নিশ্চিন্ত হয়ে ভুল-নির্ভুল, ভাল-মন্দ, সত্য-মিথ্যার মধ্যে কোন প্রকার পার্থক্য করা ছাড়াই অন্ধের মতো জীবন পথে এগিয়ে চলো না। আল্লাহ্‌ তোমাদের অবকাশ দিয়েছেন এবং তোমাদের সামনে এমন সব নিশানী পেশ করছেন যার সাহায্যে তোমরা সত্যকে চিনে সঠিক ও নির্ভুল পথ অবলম্বন করতে পারবে, এটাকে আল্লাহর পক্ষ থেকে তোমাদের জন্য একটি সূবর্ণ সুযোগ মনে করো।

তাফসীরে‌ আবুবকর ‌যাকারিয়া‌ বলেছেন:-

[১] এখানে ৬৩ ও ৬৪ নং আয়াতদ্বয়ে আল্লাহ তা’আলা মুশরিকদেরকে হুশিয়ার ও তাদের ভ্রান্ত কর্ম সম্পর্কে সতর্ক করার জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নির্দেশ দিয়ে বলছেন যে, আপনি তাদেরকে জিজ্ঞেস করুন, স্থল ও সামুদ্রিক ভ্রমণে যখনই বিপদের সম্মুখীন হও এবং সব আরাধ্য দেব-দেবীকে ভুলে গিয়ে একমাত্র আল্লাহকে আহবান কর, কখনো প্রকাশ্যে বিনীতভাবে এবং কখনো মনে মনে স্বীকার কর যে, এ বিপদ থেকে আল্লাহ ছাড়া কেউ উদ্ধার করতে পারবে না। এর সাথে সাথে তোমরা এরূপ ওয়াদাও কর যে, আল্লাহ তা’আলা যদি আমাদেরকে এ বিপদ থেকে উদ্ধার করেন, তবে আমরা তার কৃতজ্ঞতা অবলম্বন করব, তাকেই কার্যনিবাহী মনে করব, তার সাথে কাউকে অংশীদার করব না। কেননা বিপদেই যখন কাজে আসে না, তখন তাদের পূজাপাট আমরা কেন করবো? তাই আপনি জিজ্ঞেস করুন যে, এমতাবস্থায় কে তোমাদেরকে বিপদ ও ধ্বংসের কবল থেকে রক্ষা করে? উত্তর নির্দিষ্ট ও জানা। কেননা, তারা এ স্বতঃসিদ্ধতা অস্বীকার করতে পারে না যে, আল্লাহ ছাড়া কোন দেব-দেবী, পীর, ফকীর, ওলী প্রভৃতি এ অবস্থায় তাদের কাজে আসেনি। তাই পরবর্তী আয়াতে আল্লাহ্ তা’আলা স্বয়ংরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে আদেশ দিয়েছেন যে, আপনিই বলে দিন, একমাত্র আল্লাহ্ তা’আলাই তোমাদেরকে এ বিপদ থেকে মুক্তি দেবেন, বরং অন্যান্য সব কষ্ট-বিপদ থেকে তিনি উদ্ধার করবেন। কিন্তু এসব সুস্পষ্ট নিদর্শন সত্বেও যখন তোমরা বিপদমুক্ত হয়ে যাও, তখন আবার শির্কে লিপ্ত হয়ে পড়। এটা কেমন বিশ্বাসঘাতকতা ও মূর্খতা!

সারকথা, কুরআন বর্ণিত প্রতিকারের প্রতি মানুষের দৃষ্টিপাত করা দরকার যে, বিপদাপদ থেকে উদ্ধার পাওয়ার একমাত্র পথ হচ্ছে স্রষ্টার দিকে প্রত্যাবর্তন করা এবং বস্তুগত কলা-কৌশলকেও তার প্রদত্ত নেয়ামত হিসেবে ব্যবহার করা। এছাড়া নিরাপত্তার আর কোন বিকল্প পথ নেই। প্রত্যেক মানুষের বিপদাপদ একমাত্র তিনিই দূর করতে পারেন এবং বিপদের মুহুর্তে যে তাকে আহবান করে, সে তার সাহায্য স্বচক্ষে দেখতে পায়। কেননা, সমগ্র সৃষ্টিজগতের উপর তার শক্তি-সামর্থ্য পরিপূর্ণ এবং সৃষ্টির প্রতি তার দয়াও অসাধারণ। তিনি ছাড়া অন্য কারো এরূপ শক্তি-সমর্থ্য নেই এবং সমগ্র সৃষ্টির প্রতিও এরূপ দয়া-মমতা নেই।

এখানে বলা হচ্ছে যে, আল্লাহ্ তা’আলা যেকোন আযাব ও যেকোন বিপদ দূর করতে যেমন সক্ষম, তেমনিভাবে তিনি যখন কোন ব্যক্তি অথবা সম্প্রদায়কে অবাধ্যতার শাস্তি দিতে চান, তখন যেকোন শাস্তি দেয়াও তার পক্ষে সহজ। কোন অপরাধীকে হয় না এবং কোন সাহায্যকারীরও প্রয়োজন হয় না। বলা হচ্ছে, আল্লাহ্ তাআলা এ বিষয়েও শক্তিমান যে, তোমাদের প্রতি উপরদিক থেকে কিংবা পদতল থেকে কোন শাস্তি পাঠিয়ে দেবেন কিংবা তোমাদেরকে বিভিন্ন দলে-উপদলে বিভক্ত করে পরস্পরের মুখোমুখি করে দেবেন এবং এক কে অপরের হাতে শাস্তি দিয়ে ধ্বংস করে দেবেন। মূলত: আল্লাহর শাস্তি তিন প্রকারঃ (এক) যা উপর দিক থেকে আসে, (দুই) যা নিচের দিক থেকে আসে এবং (তিন) যা নিজেদের মধ্যে মতানৈক্যের আকারে সৃষ্টি হয়। এ সব প্রকার আযাব দিতে আল্লাহ্ তা’আলা সক্ষম।

[২] মুফাসসিরগণ বলেন, উপর দিক থেকে আযাব আসার দৃষ্টান্ত বিগত উম্মতসমূহের মধ্যে অনেক রয়েছে। যেমন, নূহ আলাইহিস সালাম-এর সম্প্রদায়ের উপর প্লাবণাকারে বৃষ্টি বর্ষিত হয়েছিল, আদ জাতির উপর ঝড়-ঝঞা চড়াও হয়েছিল, লুত আলাইহিস সালাম-এর সম্প্রদায়ের উপর প্রস্তর বর্ষিত হয়েছিল এবং ইসরাঈল যখন মক্কার উপর চড়াও হয়, তখন পক্ষীকুল দ্বারা তাদের উপর কঙ্কর বর্ষণ করা হয়। ফলে সবাই চর্বিত ভূষির ন্যায় হয়ে যায়। [বাগভী]

[৩] এমনিভাবে বিগত উম্মতসমূহের মধ্যে নীচের দিক থেকে আযাব আসারও বিভিন্ন প্রকার অতিবাহিত হয়েছে। নূহ আলাইহিস সালাম-এর সম্প্রদায়ের প্রতি উপরের আযাব বৃষ্টির আকারে এবং নীচের আযাব ভূতল থেকে পানি স্ফীত হয়ে প্রকাশ পেয়েছিল। তারা একই সময়ে উভয় প্রকার আযাবে পতিত হয়েছিল। ফিরআউনের সম্প্রদায়কে পদতলের আযাবে গ্রেফতার করা হয়েছিল। কারুণ স্বীয় ধন-ভাণ্ডারসহ এ আযাবে পতিত হয়ে মৃত্তিকার অভ্যন্তরে প্রোথিত হয়েছিল। [বাগভী] আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা, মুজাহিদ রাহিমাহুল্লাহ প্রমূখ মুফাসসিরগণ বলেন, উপরের আযাবের অর্থ অত্যাচারী বাদশাহ ও নির্দয় শাসকবর্গ এবং নীচের আযাবের অর্থ নিজ চাকর, নোকর ও অধীনস্ত কর্মচারীদের বিশ্বাসঘাতক, কর্তব্যে অবহেলাকারী ও আত্মসাৎকারী হওয়া। [ফাতহুল কাদীর]

আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বর্ণিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “যখন আল্লাহ তা’আলা কোন প্রশাসক বা শাসনকর্তার মঙ্গল চান, তখন তাকে উত্তম সহকারী দান করেন, যাতে প্রশাসক আল্লাহর কোন বিধান ভুলে গেলে সে তা স্মরণ করিয়ে দেয়, আর যদি প্রশাসক আল্লাহর বিধান স্মরণ করে তখন সে তা বাস্তবায়নে সহায়তা করে। পক্ষান্তরে যখন কোন প্রশাসক বা শাসনকর্তার অমঙ্গলের ইচ্ছা করেন, তখন মন্দ লোকদেরকে তার পরামর্শদাতা নিযুক্ত করা হয়; ফলে সে যখন আল্লাহর কোন বিধান ভুলে যায় তখন তারা তাকে তা স্মরণ করিয়ে দেয় না। আর যদি সে প্রশাসক নিজেই স্মরণ করে তখন তারা তাকে তা বাস্তবায়ন করতে সহায়তা করে না। [আবু দাউদ: ২৯৩২; নাসায়ী: ৪২০৪] এসব হাদীস ও আলোচ্য আয়াতের উল্লেখিত তাফসীরের সারমর্ম এই যে, জনগণ শাসকবর্গের হাতে যেসব কষ্ট ও বিপদাপদ ভোগ করে, তা উপর দিককার আযাব এবং যেসব কষ্ট অধীন কর্মচারীদের দ্বারা ভোগ করতে হয়, সেগুলো নীচের দিককার আযাব! এগুলো কোন আকস্মিক দুর্ঘটনা নয়, বরং আল্লাহর আইন অনুসারে মানুষের কৃতকর্মের শাস্তি। সুফিয়ান সওরী রাহিমাহুল্লাহ বলেন, যখন আমি কোন গোনাহ করে ফেলি, তখন এর ক্রিয়া স্বীয় চাকর, আরোহণের ঘোড়া ও বোঝা বহনের গাধার মেজাজেও অনুভব করি। এরা সবাই আমার অবাধ্যতা করতে থাকে।

[৪] আয়াতে বর্ণিত তৃতীয় প্রকার আযাব হচ্ছে, বিভিন্ন দলে-উপদলে বিভক্ত হয়ে পরস্পরের মুখোমুখি হয়ে যাওয়া এবং একদল অন্য দলের জন্য আযাব হওয়া। তাই আয়াতের অনুবাদ এরূপ হবে, এক প্রকার আযাব এই যে, জাতি বিভিন্ন দলে-উপদলে বিভক্ত হয়ে পরস্পর মুখোমুখি হয়ে যাবে। এ কারণেই আলোচ্য আয়াত নাযিল হওয়ার পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুসলিমদেরকে সম্বোধন করে বললেন, ‘সাবধান! তোমরা আমার পরে পুনরায় কাফের হয়ে যেয়ো না যে, একে অন্যের গর্দান মারতে শুরু করবে। [বুখারীঃ ১২১] সা’আদ ইবনে আবী ওয়াক্কাস বলেন, ‘একবার আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাথে চলতে চলতে বনী মুয়াবিয়ার মসজিদে প্রবেশ করে দুরাকাআত সালাত আদায় করলাম। তিনি তার রবের কাছে অনেকক্ষণ দুআ করার পর বললেনঃ আমি রব-এর নিকট তিনটি বিষয় প্রার্থনা করেছি- তিনি আমাকে দুটি বিষয় দিয়েছেন, আর একটি থেকে নিষেধ করেছেন। আমি প্রার্থনা করেছি যে, (এক) আমার উম্মতকে যেন দুর্ভিক্ষ ও ক্ষুধা দ্বারা ধ্বংস করা না হয়, আল্লাহ্ তা’আলা এ দু’আ কবুল করেছেন। (দুই) আমার উম্মতকে যেন নিমজ্জিত করে ধ্বংস করা না হয়। আল্লাহ্ তা’আলা এ দু’আও কবুল করেছেন। (তিন) আমার উম্মত যেন পারস্পরিক দ্বন্দ্ব দ্বারা ধ্বংস না হয়। আমাকে তা প্রদান করতে নিষেধ করেছেন। [মুসলিমঃ ২৮৯০]

এসব হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, উম্মতে মুহাম্মাদীর উপর বিগত উম্মতদের ন্যায় আকাশ কিংবা ভূতল থেকে কোন ব্যাপক আযাব আগমন করবে না; কিন্তু একটি আযাব দুনিয়াতে তাদের উপরও আসতে থাকবে। এ আযাব হচ্ছে পারস্পরিক যুদ্ধ-বিগ্রহ এবং দলীয় সংঘর্ষ। এজন্যই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অত্যন্ত জোর সহকারে উম্মতকে বিভিন্ন দল-উপদলে বিভক্ত হয়ে পারস্পরিক দ্বন্দ্ব-কলহ ও যুদ্ধ-বিগ্রহে লিপ্ত হতে নিষেধ করেছেন। তিনি প্রতি ক্ষেত্রেই হুশিয়ার করেছেন যে, দুনিয়াতে যদি তোমাদের উপর আল্লাহর শাস্তি নেমে আসে, তবে তা পারস্পরিক যুদ্ধ-বিগ্রহের মাধ্যমেই আসবে।

অন্য আয়াতে এ বিষয়টি পূর্ববর্তী জাতিদের ক্ষেত্রে আরও স্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে, “তারা সর্বদা পরষ্পরে মতবিরোধই করতে থাকবে, তবে যাদের প্রতি আল্লাহ্‌র রহমত রয়েছে, তারা এর ব্যতিক্রম।” [সূরা হুদ ১১৮-১১৯] এতে বুঝা গেল যে, যারা পরস্পর (শরীআতসম্মত কারণ ছাড়া) মতবিরোধ করে, তারা আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত কিংবা দূরবতী। তাই আয়াতে বলা হয়েছে, যারা বিভক্ত হয়ে পড়েছে এবং মতবিরোধ করেছে, তোমরা তাদের মত হয়ো না। কেননা যারা মতবিরোধে লিপ্ত হয়েছে তারা আল্লাহর রহমত হতে দূরে সরে এসেছে।

Leave a Reply