(Book# 114/٢٤٢)-৪৪৪ www.motaher21.net সুরা: আল-আনয়াম ৬৬-৬৯ নং আয়াত:- وَإِذَا رَأَيْتَ الَّذِينَ يَخُوضُونَ فِي ايَاتِنَا যখন তুমি দেখবে যে, লোকেরা আমার আয়াতসমূহে দোষ-ক্রটি অনুসন্ধান করছে তখন তুমি তাদের নিকট হতে দূরে সরে যাবে, The Prohibition of Sitting with Those Who Deny and Mock Allah’s Ayat .

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ

(Book# 114/٢٤٢)-৪৪৪
www.motaher21.net
সুরা: আল-আনয়াম
৬৬-৬৯ নং আয়াত:-
وَإِذَا رَأَيْتَ الَّذِينَ يَخُوضُونَ فِي ايَاتِنَا

যখন তুমি দেখবে যে, লোকেরা আমার আয়াতসমূহে দোষ-ক্রটি অনুসন্ধান করছে তখন তুমি তাদের নিকট হতে দূরে সরে যাবে,

The Prohibition of Sitting with Those Who Deny and Mock Allah’s Ayat .

وَ کَذَّبَ بِہٖ قَوۡمُکَ وَ ہُوَ الۡحَقُّ ؕ قُلۡ لَّسۡتُ عَلَیۡکُمۡ بِوَکِیۡلٍ ﴿ؕ۶۶﴾
তোমার সম্প্রদায়ের লোকেরা ওকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করছে, অথচ ওটা প্রমানিত সত্য। তুমি বলে দাওঃ আমি তোমাদের উকিল হয়ে আসিনি।

لِکُلِّ نَبَاٍ مُّسۡتَقَرٌّ ۫ وَّ سَوۡفَ تَعۡلَمُوۡنَ ﴿۶۷﴾
প্রত্যেকটি সংবাদ প্রকাশের একটি নির্দিষ্ট সময় রয়েছে এবং অচিরেই তোমরা তা জানতে পারবে।

وَ اِذَا رَاَیۡتَ الَّذِیۡنَ یَخُوۡضُوۡنَ فِیۡۤ اٰیٰتِنَا فَاَعۡرِضۡ عَنۡہُمۡ حَتّٰی یَخُوۡضُوۡا فِیۡ حَدِیۡثٍ غَیۡرِہٖ ؕ وَ اِمَّا یُنۡسِیَنَّکَ الشَّیۡطٰنُ فَلَا تَقۡعُدۡ بَعۡدَ الذِّکۡرٰی مَعَ الۡقَوۡمِ الظّٰلِمِیۡنَ ﴿۶۸﴾
যখন তুমি দেখবে যে, লোকেরা আমার আয়াতসমূহে দোষ-ক্রটি অনুসন্ধান করছে তখন তুমি তাদের নিকট হতে দূরে সরে যাবে, যতক্ষণ না তারা অন্য কোন প্রসঙ্গে নিমগ্ন হয়। শাইতান যদি তোমাকে এটা বিস্মৃত করে তাহলে স্মরণ হওয়ার পর আর ঐ যালিম লোকদের সাথে তুমি বসবেনা।

وَ مَا عَلَی الَّذِیۡنَ یَتَّقُوۡنَ مِنۡ حِسَابِہِمۡ مِّنۡ شَیۡءٍ وَّ لٰکِنۡ ذِکۡرٰی لَعَلَّہُمۡ یَتَّقُوۡنَ ﴿۶۹﴾
ওদের যখন বিচার হবে তখন মুত্তাকীদের উপর এর কোন প্রভাব পরবেনা, কিন্তু ওদেরকে উপদেশ প্রদানের জন্য তাদের উপর দায়িত্ব রয়েছে, হয়তো বা উপদেশের ফলে ওরা পাপাচার হতে বেঁচে থাকতে পারবে।

৬৬-৬৯ নং আয়াতের তাফসীর:
তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ বলেছেন:-

(وَكَذَّبَ بِه)

(কুরআনকে) মিথ্যা বলেছে’অর্থাৎ কুরআনকে মিথ্যা বলছে।

(لَّسْتُ عَلَيْكُمْ بِوَكِيْلٍ)

‘আমি তোমাদের কার্যনির্বাহক নই।’অর্থাৎ আমাকে এ দায়িত্ব দেয়া হয়নি যে, আমি তোমাদেরকে হিদায়াতের পথে আনবই। আমার দায়িত্ব দাওয়াত ও তাবলীগ করা।

(فَمَنْ شَا۬ءَ فَلْيُؤْمِنْ وَّمَنْ شَا۬ءَ فَلْيَكْفُرْ)

“সুতরাং যার ইচ্ছা ঈমান আনুক ও যার ইচ্ছা কুফরী করুক।’(সূরা কাহ্ফ ১৮:২৯)

(لِكُلِّ نَبَإٍ مُّسْتَقَرٌّ)

‘প্রত্যেক বার্তার জন্য নির্ধারিত কাল রয়েছে’ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন, প্রত্যেক সংবাদের বাস্তবতা রয়েছে। অর্থাৎ প্রত্যেক সংবাদ বাস্তবায়ন হবে যদিও পরে হয়। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন:

(وَلَتَعْلَمُنَّ نَبَأَه۫ بَعْدَ حِيْنٍ)

“এর সংবাদ তোমরা অবশ্যই জানবে, কিছুদিন পরে।”(সূরা সোয়াদ ৩৮:৮৮)

(يَخُوْضُوْنَ فِيْٓ اٰيٰتِنَا)

‘তারা আমার আয়াতসমূহকে নিয়ে উপহাসমূলক আলোচনায় মগ্ন’এ আয়াতে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সম্বোধন করা হলেও এ বিধানে সকল মুসলিম ব্যক্তি শামিল। এটা আল্লাহ তা‘আলার একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশ। সূরা নিসার ১৪০ নং আয়াতেও বর্ণনা করা হয়েছে।

خوض বা উপহাসমূলক আলোচনা দ্বারা উদ্দেশ্য হল, ইসলামী শরীয়তের কোন বিধি-বিধান, আল্লাহ তা‘আলার কোন নিদর্শনাবলী নিয়ে ঠাট্টা নিদ্রƒপ করা, ব্যঙ্গ করা, অপব্যাখ্যা করে আল্লাহ তা‘আলার উদ্দেশ্য বাতিল করা এবং হেয় ও তুচ্ছ প্রতিপন্ন করা।

এ রকম মজলিসে বসা নিষেধ। এরূপ কাজ কুফরী যা ইসলাম থেকে বের করে দেয়। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(أَبِاللّٰهِ وَاٰيٰتِه۪ وَرَسُوْلِه۪ كُنْتُمْ تَسْتَهْزِئُوْنَ لَا تَعْتَذِرُوْا قَدْ کَفَرْتُمْ بَعْدَ اِیْمَانِکُمْﺚ)

‘‘তোমরা কি আল্লাহ, তাঁর নিদর্শন ও তাঁর রাসূলকে নিয়ে বিদ্রƒপ করছিলে? ‘তোমরা ওযর পেশ করার চেষ্টা কর না। তোমরা ঈমান আনার পর কুফরী করেছ।”(সূরা তাওবাহ ৯:৬৫)

যদি এরূপ মজলিসে বসা হয় তাহলে আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(إِنَّكُمْ إِذًا مِّثْلُهُمْ)

তোমরাও তাদের মত হয়ে যাবে। (সূরা নিসা ৪:১৪০)

অতএব আমাদের এমন কোন মজলিস, আলোচনা সভা, মিটিং-মিছিলে যোগদান করা উচিত হবে না, যাতে আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর নিদর্শনাবলী এবং রাসূলকে নিয়ে ঠাট্টা করা হয়। কারণ এগুলো কুফরী কাজ।

আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:

১. আল্লাহ তা‘আলার আয়াতকে নিয়ে ঠাট্টা ও তামাশা করা কুফরী কাজ।
২. কুরআন দ্বারা উপদেশ দেয়া ওয়াজিব বিশেষ করে মু’মিনদেরকে যারা পরকালে মুক্তির আশা করে।

English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Sura Anam
Verses :- 66-69
وَإِذَا رَأَيْتَ الَّذِينَ يَخُوضُونَ فِي ايَاتِنَا
The Prohibition of Sitting with Those Who Deny and Mock Allah’s Ayat .

The Invitation to the Truth is Guidance Without Coercion

Allah said,

وَكَذَّبَ بِهِ

But have denied it,

denied the Qur’an, guidance and clear explanation that you (O Muhammad) have brought them,

قَوْمُكَ

your people,

meaning, Quraysh,

وَهُوَ الْحَقُّ

though it is the truth.

beyond which there is no other truth.

قُل لَّسْتُ عَلَيْكُم بِوَكِيلٍ

Say:”I am not responsible for your affairs.”

meaning, I have not been appointed a guardian or watcher over you.

Allah also said;

وَقُلِ الْحَقُّ مِن رَّبِّكُمْ فَمَن شَأءَ فَلْيُوْمِن وَمَن شَأءَ فَلْيَكْفُرْ

And say:”The truth is from your Lord.” Then whosoever wills, let him believe, and whosoever wills, let him disbelieve. (18:29)

This means, my duty is to convey the Message and your duty is to hear and obey. Those who follow me, will acquire happiness in this life and the Hereafter. Those who defy me will become miserable in this life and the Hereafter.

So Allah said

لِّكُلِّ نَبَإٍ مُّسْتَقَرٌّ

For every news there is a reality…,

According to Ibn Abbas and others,

meaning, for every news, there is a reality, in that, this news will occur, perhaps after a while.

Allah said in other Ayat,

وَلَتَعْلَمُنَّ نَبَأَهُ بَعْدَ حِينِ

And you shall certainly know the truth of it after a while. (38:88)

and,

لِكُلِّ أَجَلٍ كِتَابٌ

(For) each and every matter there is a decree (from Allah). (13:38)

This, indeed, is a warning and a promise that will surely occur,

وَسَوْفَ تَعْلَمُونَ

and you will come to know.

Allah’s statement

وَإِذَا رَأَيْتَ الَّذِينَ يَخُوضُونَ فِي ايَاتِنَا

And when you see those who engage in false conversation about Our verses (of the Qur’an),

by denying and mocking them.
The Prohibition of Sitting with Those Who Deny and Mock Allah’s Ayat

Allah said,

فَأَعْرِضْ عَنْهُمْ حَتَّى يَخُوضُواْ فِي حَدِيثٍ غَيْرِهِ

stay away from them till they turn to another topic.

until they talk about a subject other than the denial they were engaged in.

وَإِمَّا يُنسِيَنَّكَ الشَّيْطَانُ

And if Shaytan causes you to forget…,

This command includes every member of this Ummah. No one is to sit with those who deny and distort Allah’s Ayat and explain them incorrectly.

If one forgets and sits with such people,

فَلَ تَقْعُدْ بَعْدَ الذِّكْرَى

then after the remembrance sit not you,

after you remember,

مَعَ الْقَوْمِ الظَّالِمِينَ

in the company of those people who are the wrongdoers.

A Hadith states,

رُفِعَ عَنْ أُمَّتِي الْخَطَأُ وَالنِّسْيَانُ وَمَا اسْتُكْرِهُوا عَلَيْه

My Ummah was forgiven unintentional errors, forgetfulness and what they are coerced to do.

The Ayah above (6:68) is the Ayah mentioned in Allah’s statement,

وَقَدْ نَزَّلَ عَلَيْكُمْ فِى الْكِتَـبِ أَنْ إِذَا سَمِعْتُمْ ءَايَـتِ اللَّهِ يُكَفَرُ بِهَا وَيُسْتَهْزَأُ بِهَا فَلَ تَقْعُدُواْ مَعَهُمْ حَتَّى يَخُوضُواْ فِى حَدِيثٍ غَيْرِهِ إِنَّكُمْ إِذاً مِّثْلُهُمْ

And it has already been revealed to you in the Book that when you hear the Verses of Allah being denied and mocked at, then sit not with them, until they engage in a talk other than that; (but if you stayed with them) certainly in that case you would be like them. (4:140),

for, if you still sit with them, agreeing to what they say, you will be just like them.

Allah’s statement

وَمَا عَلَى الَّذِينَ يَتَّقُونَ مِنْ حِسَابِهِم مِّن شَيْءٍ

There is no responsibility for them upon those who have Taqwa,

means, when the believers avoid sitting with wrongdoers in this case, they will be innocent of them and they will have saved themselves from their sin.

Allah’s statement,

وَلَـكِن ذِكْرَى لَعَلَّهُمْ يَتَّقُونَ

but (their duty) is to remind them, that they may avoid that.

means, We commanded you to ignore and avoid them, so that they become aware of the error they are indulging in, that they may avoid this behavior and never repeat it again.

তাফসীরে ইবনে ‌কাসীর বলেছেন:-
৬৬-৬৯ নং আয়াতের তাফসীর:

আল্লাহ তা’আলা স্বীয় রাসূল (সঃ)-কে সম্বোধন করে বলছেন, তোমার কওম অর্থাৎ কুরায়েশরা তোমাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করছে, অথচ এটা ছাড়া সত্য আর কিছুই নেই।

তুমি তাদেরকে বল-আমি তোমাদের রক্ষক ও জিম্মাদার নই। যেমন মহান আল্লাহ অন্য জায়গায় বলেনঃ “(হে মুহাম্মাদ সঃ)! তুমি বল-এটা তোমাদের প্রভুর পক্ষ থেকে সত্য, সুতরাং যার ইচ্ছা হবে সে ঈমান আনবে এবং যে ইচ্ছা করবে সে অমান্য করবে।” অর্থাৎ আমার দায়িত্ব তো হচ্ছে শুধু প্রচার করে দেয়া, আর তোমাদের কাজ হচ্ছে শ্রবণ করা ও মেনে নেয়া । যে আমার কথা মান্য করবে সে দুনিয়া ও আখিরাতে উজ্জ্বল চেহারা বিশিষ্ট হবে এবং যে বিরুদ্ধাচরণ করবে সে উভয় জায়গাতেই হতভাগ্য হবে। এ জন্যেই ইরশাদ হচ্ছে – প্রত্যেক সংবাদের জন্যেই একটি নির্দিষ্ট সময় রয়েছে, যদিও সেটা বিলম্বে হয়। যেমন অন্যত্র আল্লাহ পাক বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “অবশ্যই তোমরা ওর সংবাদ কিছুদিন পরে জানতে পারবে।” (৩৮:৮৮) তিনি আরও বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “প্রত্যেক মৃত্যুর জন্যেই একটা নির্ধারিত সময় রয়েছে।” (১৩:৩৮) এটা হচ্ছে ধমক ও ভীতি প্রদর্শন। এ জন্যেই মহান আল্লাহ বলেনঃ “সত্বরই তোমরা জানতে পারবে।”

(আরবী) -অর্থাৎ হে মুহাম্মাদ (সঃ)! যখন তুমি কাফিরদেরকে দেখবে যে, তারা মিথ্যা প্রতিপন্নতা ও বিদ্রুপের সঙ্গে আমার আয়াতসমূহ সম্পর্কে সমালোচনা করছে, তখন তুমি তাদের নিকট থেকে দূরে সরে যাবে যে পর্যন্ত না তারা অন্য কোন প্রসঙ্গে লিপ্ত হয়। আর যদি শয়তান তোমাকে এটা ভুলিয়ে দেয় তবে স্মরণ হওয়া মাত্রই তুমি এই অত্যাচারীদের সাথে আর বসবে না। ভাবার্থ এই যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর উম্মতের কোন লোকই যেন ঐ সব অবিশ্বাসকারী ও মিথ্যা প্রতিপন্নকারীর সাথে উঠা-বসা না করে যারা আল্লাহর আয়াতসমূহকে পরিবর্তন করে ফেলে এবং ওগুলোকে সঠিক ও প্রকাশমান ভাবার্থের উপর কায়েম রাখে না। এ জন্যেই হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “আমার উম্মত ভুল বশতঃ বা বাধ্য হয়ে কোন কাজ করে বসলে তা ক্ষমা করে দেয়া হয়েছে।” (হাদীসটি ইবনে মাজাহ (রঃ) তাখরীজ করেছেন এবং তাঁর হাদীস গ্রন্থের ভাষা হচ্ছে নিম্নরূপঃ (আরবী) অর্থাৎ “নিশ্চয়ই আল্লাহ আমার উম্মতের ভুলত্রুটি ক্ষমা করে দিয়েছেন) কুরআন কারীমের “যখন তোমরা শুনতে পাও যে, আল্লাহর আয়াতসমূহের সাথে কুফরী করা হচ্ছে এবং ওগুলোকে বিদ্রুপ করা হচ্ছে তখন তোমরা তাদের নিকট থেকে উঠে যাও যে পর্যন্ত না তারা অন্য প্রসঙ্গে নিমগ্ন হয়, নতুবা তোমরা তাদেরই সমতুল্য হয়ে যাবে” -এই আয়াতে ঐ দিকেই ইঙ্গিত করা হয়েছে। মহান আল্লাহ বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ যালিম লোকদের হিসাব নিকাশের দায়-দায়িত্ব মুত্তাকী লোকদের উপর কিছুমাত্র অর্পিত নয়। অর্থাৎ মুত্তাকী লোকেরা যখন ঐ সব কাফির ও যালিমের সাথে উঠাবসা করবে না, বরং তাদের নিকট থেকে উঠে যাবে তখন তারা তাদের দায়িত্ব পালন করলো। ফলে তারা তাদের সাথে পাপে জড়িত হবে না। সাঈদ ইবনে জুবাইর (রাঃ) এর ভাবার্থ বলেনঃ যদি ঐ যালিম ও কাফিররা আল্লাহর আয়াতসমূহকে ত্রুটিযুক্ত করার চেষ্টায় লেগে থাকে তবে এখন মুসলমানদের উপর কোন দায়িত্ব অর্পিত হবে না যদি তারা তাদের থেকে দূরে সরে থাকে। কিন্তু অন্যান্য আলেমগণ এর ভাবার্থ বর্ণনায় বলেছেনঃ মুসলমানরা ঐ যালিমদের সাথে উঠাবসা করলেও তাদের বিদ্রুপ করণের যিম্মাদারী তাদের উপর পড়বে না। তাঁদের ধারণায় এই আয়াতটি (আরবী)-এর আয়াত দ্বারা মানসূখ হয়ে গেছে। আয়াতটি হচ্ছে (আরবী) অর্থাৎ ঐ অবস্থায় তোমরাও তাদের সমতুল্য হয়ে যাবে। (৪:১৪০) আয়াতের এই ব্যাখ্যা (আরবী) -এই আয়াতের সাথে সম্পর্কযুক্ত ছিল। এটা ছিল মুজাহিদ (রঃ), সুদ্দী (রঃ), ইবনে জুরাইজ (রঃ) প্রমুখ মনীষীর উক্তি। তাঁদের এই কথার ভিত্তিতে আল্লাহ পাকের (আরবী)-এই উক্তির ভাবার্থ হবে নিম্নরূপঃ “কিন্তু আমি তোমাদেরকে এরূপ অবস্থায় তাদের থেকে পরানুখ থাকার নির্দেশ দিয়েছি, যাতে ওটা তাদের জন্যে শিক্ষা ও উপদেশ হয়, হয়তো তারা এর ফলে সতর্ক হয়ে যাবে এবং ভবিষ্যতে আর এর পুনরাবৃত্তি করবে না।
তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
টিকা:৪৩) অর্থাৎ তোমরা যা দেখতে পাচ্ছো না তা জোর করে তোমাদের দেখিয়ে দেয়া এবং যা বুঝতে পারছো না তা জোর করে তোমাদের বুঝিয়ে দেয়া আমার কাজ নয়। আর তোমরা না দেখলে ও না বুঝলে তোমাদের ওপর আযাব নাযিল করাও আমার কাজ নয়। আমার কাজ হচ্ছে শুধুমাত্র হক ও বাতিল এবং সত্য ও মিথ্যাকে সুস্পষ্ট করে তোমাদের সামনে তুলে ধরা। এখন যদি তোমরা তা মেনে নিতে প্রস্তুত না হও তাহলে যে খারাপ পরিণতির ভয় তোমাদের দেখিয়ে আসছি তা যথা সময়ে তোমাদের সামনে এসে যাবে।

টিকা:৪৪) অর্থাৎ যদি কখনো আমার এ নির্দেশ ভুলে যাও এবং ভুলবশত এ ধরনের লোকদের সাহচর্যে গিয়ে বসো।

টিকা:৪৫) এর অর্থ হচ্ছে, যারা নিজেরা আল্লাহর নাফরমানী থেকে দূরে অবস্থান করে কাজ করতে থাকে, নাফরমানদের কোন কাজের দায়-দায়িত্ব তাদের ওপর নেই। সুতরাং নাফরমানদের সাথে তর্ক-বিতর্ক করে যেনতেন প্রকারে তাদের সমর্থন আদায় করতেই হবে এবং তাদের প্রত্যেকটি আজেবাজে প্রশ্নের জবাব দিতেই হবে আর তারা সত্যকে স্বীকার না করলে কোন না কোন ভাবে তাদের স্বীকৃতি আদায় করে নিতেই হবে, এ ধরনের দায়িত্ব কেন তারা খামখা নিজেদের ওপর চাপিয়ে নেবে? তাদের দায়িত্ব শুধু এতটুকু, যাদেরকে ভুল পথে চলতে দেখবে তাদেরকে উপদেশ দেবে এবং সত্যকে তাদের সামনে সুস্পষ্ট করে তুলে ধরবে। তারপর যদি তারা সত্যকে না মানে এবং ঝগড়া-ঝাঁটি ও তর্ক-বিতর্ক করতে প্রবৃত্ত হয় তাহলে তাদের সাথে অযথা বুদ্ধির লড়াই করে নিজের শক্তি ও সময় নষ্ট করা সত্যপন্থীদের কাজ নয়। এ ধরণের গোমরাহীর প্রেমে আকণ্ঠ নিমজ্জিত ব্যক্তিদের পেছনে সময় ও শক্তি নষ্ট না করে যারা নিজেরাই সত্যের সন্ধানে লিপ্ত তাদের শিক্ষা-দীক্ষা সংশোধন এবং উপদেশ দানে সত্যপন্থীদের সময় ব্যয় করা উচিত।

তাফসীরে আবুবকর ‌যাকারিয়া‌ বলেছেন:-

[১] আয়াতে বলা হয়েছে, আপনি যখন তাদেরকে দেখেন, যারা আল্লাহ তা’আলার নিদর্শনাবলীতে শুধু ক্রীড়া-কৌতুক ও ঠাট্টা-বিদ্রুপের জন্য করে এবং ছিদ্রান্বেষণ করে, তখন আপনি তাদের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিন। এ আয়াতে প্রত্যেক সম্বোধনযোগ্য ব্যক্তিকে সম্বোধন করা হয়েছে। এতে মুসলিমদেরকে একটি গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক নির্দেশ দেয়া হয়েছে যে, যে কাজ নিজে করা গোনাহ, সেই কাজ যারা করে, তাদের মজলিসে যোগদান করাও গোনাহ। এ থেকে বেঁচে থাকা উচিত।

[২] আয়াতের শেষে বলা হয়েছে, যদি শয়তান আপনাকে বিস্মৃত করিয়ে দেয় অর্থাৎ ভুলক্রমে তাদের মজলিশে যোগদান করে ফেলেন-নিষেধাজ্ঞা স্মরণ না থাকার কারণে হোক কিংবা তারা যে স্বীয় মজলিশে আল্লাহর আয়াত ও রাসূলের বিপক্ষে আলোচনা করে, তা আপনার স্মরণ ছিল না, তাই যোগদান করেছেন। উভয় অবস্থাতেই যখন স্মরণ হয় তখনই মজলিশ ত্যাগ করা উচিত। স্মরণ হওয়ার পর সেখানে বসে থাকা গোনাহ। অন্য এক আয়াতেও এ বিষয়বস্তু বর্ণিত হয়েছে এবং শেষ ভাগে বলা হয়েছে যে, ‘যদি আপনি সেখানে বসে থাকেন, তবে আপনিও তাদের মধ্যে গণ্য হবেন’। [সূরা আন-নিসা: ১৪০] আয়াতের আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে, গোনাহর মজলিশ ও মজলিশের লোকদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়া। এর উত্তম পন্থা হচ্ছে মজলিশ ত্যাগ করে চলে যাওয়া। কিন্তু মজলিশ ত্যাগ করার মধ্যে যদি জান, মাল কিংবা ইজ্জতের ক্ষতির আশংকা থাকে, তবে সর্বসাধারণের পক্ষে মুখ ফিরিয়ে নেয়ার অন্য পস্থা অবলম্বন করাও জায়েয। উদাহরণতঃ অন্য কাজে ব্যাপৃত হওয়া এবং তাদের প্রতি ভ্রক্ষেপ না করা। কিন্তু বিশিষ্ট লোক, দ্বীনী ক্ষেত্রে যাদের অনুকরণ করা হয়-তাদের পক্ষে সর্বাবস্থায় সেখান থেকে উঠে যাওয়াই সমীচীন।

মোটকথা, আয়াত থেকে জানা গেল যে, কেউ ভুলক্রমে কোন ভ্রান্ত কাজে জড়িত হয়ে পড়লে তা মাফ করা হবে। এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘আমার উম্মতকে ভুলভ্রান্তি ও বিস্মৃতির গোনাহ এবং যে কাজ অন্য কেউ জোর-যবরদস্তির সাথে করায়, সেই কাজের গোনাহ থেকে অব্যাহতি দান করেছেন। [ ইবনে মাজাহঃ ২০৪০, ২০৪৩] এ আয়াত দ্বারা আরও বুঝা যায় যে, যে মজলিশে আল্লাহ, আল্লাহর রাসূল কিংবা শরী’আতের বিপক্ষে কথাবার্তা হয় তা বন্ধ করা, করানো কিংবা কমপক্ষে সত্য কথা প্রকাশ করতে সাধ্য না থাকে, তবে এরূপ প্রত্যেকটি মজলিশ বর্জন করা মুসলিমদের উচিত। হ্যা, সংশোধনের নিয়তে এরূপ মজলিশে যোগদান করলে এবং হক কথা প্রকাশ করলে তাতে কোন দোষ নেই। আয়াতের শেষে বলা হয়েছেঃ স্মরণ হওয়ার পর অত্যাচারী সম্পপ্রদায়ের সাথে উপবেশন করো না। এ থেকে বুঝা যায় যে, এরূপ অত্যাচারী, অধাৰ্মিক ও উদ্ধত লোকদের মজলিশে যোগদান করা সর্বাবস্থায় গোনাহ; তারা তখন কোন অবৈধ আলোচনায় লিপ্ত হোক বা না হোক। কারণ, বাজে আলোচনা শুরু করতে তাদের বেশী দেরী লাগে না। কেননা, আয়াতে সর্বাবস্থায় যালিমদের সাথে বসতে নিষেধ করা হয়েছে। তারা তখনো যুলুমে ব্যাপৃত থাকবে এরূপ কোন শর্ত আয়াতে নেই। কুরআনুল কারীমের অন্য এক আয়াতেও এ বিষয়টি পরিস্কারভাবে বর্ণিত হয়েছে, “অত্যাচারীদের সাথে মেলামেশা ও উঠাবসা করো না। নতুবা তোমাদেরকেও জাহান্নামের আগুন স্পর্শ করবে”। [সূরা হূদ ১১৩]

[৩]অর্থাৎ পূর্বোক্ত আয়াতে বর্ণিত লোকেরা যালিম। কিন্তু তাদের হিসাব-নিকাশ ও তাদের শাস্তি বিধান করা সাধারণ মুমিন মুত্তাকীদের কাজ নয়। তারা তাদেরকে কেবল নসীহত ও হক কথা জানিয়ে দেয়ার কাজই করবে। যাতে তারা বাতিল পথ পরিহার করে এবং তাকওয়ার পথ অবলম্বন করে। [মুয়াসসার] কিন্তু যদি তাদেরকে নসীহত করলে ক্ষতির পরিমাণ বেশী হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তখন তাও পরিত্যাগ করতে হবে। [সা’দী]

Leave a Reply