(Book# 114/٢٤٧)-৪৪৯ www.motaher21.net সুরা: আল-আনয়াম ৮৪-৯০ নং আয়াত:- وَ اِسۡمٰعِیۡلَ وَ الۡیَسَعَ وَ یُوۡنُسَ وَ لُوۡطًا ؕ আর ইসমাঈল, ঈসা, ইউনুস ও লূত – Ismail and Al-Yasa`, and Yunus and Lut,

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ

(Book# 114/٢٤٧)-৪৪৯
www.motaher21.net
সুরা: আল-আনয়াম
৮৪-৯০ নং আয়াত:-
وَ اِسۡمٰعِیۡلَ وَ الۡیَسَعَ وَ یُوۡنُسَ وَ لُوۡطًا ؕ
আর ইসমাঈল, ঈসা, ইউনুস ও লূত –

Ismail and Al-Yasa`, and Yunus and Lut,

وَ وَہَبۡنَا لَہٗۤ اِسۡحٰقَ وَ یَعۡقُوۡبَ ؕ کُلًّا ہَدَیۡنَا ۚ وَ نُوۡحًا ہَدَیۡنَا مِنۡ قَبۡلُ وَ مِنۡ ذُرِّیَّتِہٖ دَاوٗدَ وَ سُلَیۡمٰنَ وَ اَیُّوۡبَ وَ یُوۡسُفَ وَ مُوۡسٰی وَ ہٰرُوۡنَ ؕ وَ کَذٰلِکَ نَجۡزِی الۡمُحۡسِنِیۡنَ ﴿ۙ۸۴﴾
আমি তাকে ইসহাক ও ইয়াকূবকে দান করেছি এবং উভয়কেই সঠিক পথের সন্ধান দিয়েছি, আর তার পূর্বে নূহকেও সঠিক পথের হিদায়াত দিয়েছি; আর তার (ইবরাহীমের) বংশের মধ্যে দাঊদ, সুলাইমান, আইউব, ইউসুফ, মূসা ও হারূনকে এমনিভাবেই সঠিক পথের সন্ধান দিয়েছি। এমনিভাবেই আমি সৎ ও পুণ্যশীল লোকদেরকে প্রতিদান দিয়ে থাকি।

وَ زَکَرِیَّا وَ یَحۡیٰی وَ عِیۡسٰی وَ اِلۡیَاسَ ؕ کُلٌّ مِّنَ الصّٰلِحِیۡنَ ﴿ۙ۸۵﴾
আর যাকারিয়া, ইয়াহইয়া, ঈসা ও ইলিয়াস – তারা প্রত্যেকেই সৎ লোকদের অন্তর্ভুক্ত ছিল।

وَ اِسۡمٰعِیۡلَ وَ الۡیَسَعَ وَ یُوۡنُسَ وَ لُوۡطًا ؕ وَ کُلًّا فَضَّلۡنَا عَلَی الۡعٰلَمِیۡنَ ﴿ۙ۸۶﴾
আর ইসমাঈল, ঈসা, ইউনুস ও লূত – এদের প্রত্যেককেই আমি নবুওয়াত দান করে সমগ্র বিশ্বের উপর মহত্ত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি।

وَ مِنۡ اٰبَآئِہِمۡ وَ ذُرِّیّٰتِہِمۡ وَ اِخۡوَانِہِمۡ ۚ وَ اجۡتَبَیۡنٰہُمۡ وَ ہَدَیۡنٰہُمۡ اِلٰی صِرَاطٍ مُّسۡتَقِیۡمٍ ﴿۸۷﴾
আর এদের বাপ-দাদা, সন্তান, সন্ততি ও ভাইদের মধ্যে অনেককে আমি মনোনীত করে সঠিক ও সোজা পথে পরিচালিত করেছি।
ذٰلِکَ ہُدَی اللّٰہِ یَہۡدِیۡ بِہٖ مَنۡ یَّشَآءُ مِنۡ عِبَادِہٖ ؕ وَ لَوۡ اَشۡرَکُوۡا لَحَبِطَ عَنۡہُمۡ مَّا کَانُوۡا یَعۡمَلُوۡنَ ﴿۸۸﴾

এটাই আল্লাহর হিদায়াত; তিনি তাঁর বান্দার মধ্যে যাকে চান এই পথে পরিচালিত করেন। কিন্তু তারা যদি শির্‌ক করত তাহলে তারা যা কিছুই করত, সবই ব্যর্থ হয়ে যেত।

اُولٰٓئِکَ الَّذِیۡنَ اٰتَیۡنٰہُمُ الۡکِتٰبَ وَ الۡحُکۡمَ وَ النُّبُوَّۃَ ۚ فَاِنۡ یَّکۡفُرۡ بِہَا ہٰۤؤُلَآءِ فَقَدۡ وَکَّلۡنَا بِہَا قَوۡمًا لَّیۡسُوۡا بِہَا بِکٰفِرِیۡنَ ﴿۸۹﴾
এরা ছিল সেই লোক, যাদেরকে আমি কিতাব, শাসনভার ও নবুওয়াত দান করেছি। সুতরাং যদি এরা তোমার নবুওয়াতকে অস্বীকার করে তাহলে তাদের স্থলে আমি এমন এক জাতিকে নিয়োগ করব, যারা ওটা অস্বীকার করেনা।
اُولٰٓئِکَ الَّذِیۡنَ ہَدَی اللّٰہُ فَبِہُدٰىہُمُ اقۡتَدِہۡ ؕ قُلۡ لَّاۤ اَسۡـَٔلُکُمۡ عَلَیۡہِ اَجۡرًا ؕ اِنۡ ہُوَ اِلَّا ذِکۡرٰی لِلۡعٰلَمِیۡنَ ﴿٪۹۰﴾
এরা হচ্ছে ওরাই, যাদেরকে আল্লাহ সুপথ প্রদর্শন করেছিলেন। সুতরাং তুমি তাদের পথ অনুসরণ করে চল। তুমি বলে দাওঃ আমি কুরআন ও দীনের তাবলীগের বিনিময়ে তোমাদের কাছে কোন প্রতিদান চাইনা। এই কুরআন সমগ্র জগতবাসীর জন্য উপদেশের ভান্ডার ছাড়া কিছুই নয়।

৮৪-৯০ নং আয়াতের তাফসীর:
তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ বলেছেন:-
পূর্বের আয়াতগুলোতে আল্লাহ তা‘আলার বান্দা ও বন্ধু এবং মুসলিম জাতির পিতা ইবরাহীম (আঃ) সম্পর্কে উল্লেখ করা হয়েছে। অত্র আয়াতগুলোতে আল্লাহ তা‘আলা ইবরাহীম (আঃ)-কে ইলম, দাওয়াত, ধৈর্য ও সৎ বংশধর ও পবিত্র সন্তান দিয়ে যে অনুগ্রহ করেছেন তার বিবরণ তুলে ধরেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বৃদ্ধ বয়সে ইসহাক (আঃ)-কে পুত্র হিসেবে দান করেন এবং ইসহাক (আঃ)-এর পুত্র ইয়াকূব (আঃ)-কে দান করলেন। যখন ফেরেশতাগণ লূত (আঃ)-এর সম্প্রদায়কে ধ্বংস করার জন্য আগমন করে তখন ইবরাহীম ও সারাকে ইসহাক (আঃ)-এর সুসংবাদ দেয়। এমন সময় ইবরাহীম (আঃ)-এর বয়স ছিল ১০০ বছর এবং তাঁর স্ত্রী সারাহ-এর বয়স ছিল ৯০ বছর, তিনি ছিলেন বন্ধ্যা।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(قَالَتْ يٰوَيْلَتٰٓي أَأَلِدُ وَأَنَا عَجُوْزٌ وَّهٰذَا بَعْلِيْ شَيْخًا إِنَّ هٰذَا لَشَيْءٌ عَجِيْبٌ قَالُوْآ أَتَعْجَبِيْنَ مِنْ أَمْرِ اللّٰهِ رَحْمَتُ اللّٰهِ وَبَرَكَاتُه۫ عَلَيْكُمْ أَهْلَ الْبَيْتِ إِنَّه۫ حَمِيْدٌ مَّجِيْدٌ)

‘সে বলল: ‘কী আশ্চর্য! সন্ত‎ানের জননী হব আমি, এখন আমি বন্ধ্যা এবং আমার স্বামীও বৃদ্ধ! এটা অবশ্যই এক অদ্ভূত ব্যাপার!’ তারা বলল: ‘আল্লাহর কাজে তুমি আশ্চর্য ‎বোধ করছ? হে পরিবারবর্গ! তোমাদের প্রতি রয়েছে আল্লাহর অনুগ্রহ ও কল্যাণ। তিনি প্রশংসিত ও সম্মানিত।’(সূরা হূদ ১১:৭২-৭৩)

তাছাড়া ইসহাক (আঃ) যে নাবী হবেন তারও সুসংবাদ দিলেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(وَبَشَّرْنٰهُ بِإِسْحَاقَ نَبِيًّا مِّنَ الصّٰلِحِيْنَ)‏

“আর আমি তাকে সুসংবাদ দিয়েছিলাম ইসহাকের, সে সৎ লোকেদের মধ্য থেকে অন্যতম নাবী।”(সূরা সফফাত ৩৭:১১২)

আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(فَبَشَّرْنٰهَا بِإِسْحَاقَ لا وَمِنْ وَّرَا۬ءِ إِسْحٰقَ يَعْقُوْبَ)

অতঃপর আমি তাকে ইস্হাকের ও ইস্হাকের পরবর্তী ইয়া‘কূবের সুসংবাদ দিলাম।”(সূরা হূদ ১১:৭১)

(وَنُوْحًا هَدَيْنَا مِنْ قَبْلُ)

‘পূর্বে নূহকেও সৎ পথে পরিচালিত করেছিলাম’অর্থাৎ নূহ (আঃ) হলেন ইসহাক ও ইয়াকুব (আঃ)-ও এদের পিতা ইবরাহীম (আঃ)-এর পূর্বের নাবী। আল্লাহ তা‘আলা এদেরকে যেমন হিদায়াত দান করেছিলেন নূহ (আঃ)-কে সেরূপ হিদায়াত দান করেছিলেন এবং উত্তম বংশধর দিয়েছেন।

নূহ (আঃ) ও তার সঙ্গে যারা ঈমান এনেছিল তাদের ব্যতীত সকলকে ডুবিয়ে মারার পর দুনিয়াতে কেবল তাদের বংশধররাই অবশিষ্ট থাকে। তাই এর পরবর্তীকালে সকলেই নূহ (আঃ)-এর বংশধর। অনুরূপভাবে ইবরাহীম (আঃ)-ও ছিলেন নূহ (আঃ)-এর বংশধর। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(وَجَعَلْنَا فِيْ ذُرِّيَّتِهِ النُّبُوَّةَ وَالْكِتٰبَ وَاٰتَيْنٰهُ أَجْرَه۫ فِي الدُّنْيَا ج وَإِنَّه۫ فِي الْاٰخِرَةِ لَمِنَ الصّٰلِحِيْنَ)

“এবং তার বংশধরদের জন্য স্থির করলাম নবুওয়াত ও কিতাব এবং আমি তাকে দুনিয়ায় পুরস্কৃত করেছিলাম; এবং আখিরাতেও সে নিশ্চয়ই সৎ লোকেদের অন্যতম হবে।”(সূরা আনকাবুত ২৯:২৭)

(وَمِنْ ذُرِّيَّتِه)

‘এবং তার বংশধর থেকে’ এখানে ‘তার’বংশধর দ্বারা কাদেরকে বুঝানো হয়েছে- এ ব্যাপারে কোন কোন মুফাসসির বলেন, নূহ (আঃ)-এর বংশধর থেকে যেসকল নাবী এসেছেন তাদেরকে বুঝানো হয়েছে। আবার কেউ বলেছেন, ইবরাহীম (আঃ)-এর বংশধরকে বুঝানো হয়েছে। কেননা সমস্ত আলোচনা তাঁকে নিয়েই। যদিও লূত (আঃ) তাঁর বংশধর থেকে আসেননি। অধিকাংশের ওপর ভিত্তি করে লূত (আঃ)-এর আলোচনা তাতে চলে এসেছে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(أَمْ كُنْتُمْ شُهَدَا۬ءَ إِذْ حَضَرَ يَعْقُوْبَ الْمَوْتُ لا إِذْ قَالَ لِبَنِيْهِ مَا تَعْبُدُوْنَ مِنْۭ بَعْدِيْ ط قَالُوْا نَعْبُدُ إِلٰهَكَ وَإِلٰهَ اٰبَآئِكَ إِبْرَاهِيْمَ وَإِسْمَاعِيْلَ وَإِسْحَاقَ إِلٰـهًا وَّاحِدًا وَّنَحْنُ لَه۫ مُسْلِمُوْنَ)

“তোমরা কি উপস্থিত ছিলে? যখন ইয়া‘কূবের মৃত্যু উপস্থিত হয়! তখন তিনি নিজ পুত্রদেরকে বলেছিলেন, আমার পরে তোমরা কোন্ জিনিসের ইবাদত করবে? সন্তানরা বলেছিলেন, আমরা আপনার ও আপনার পিতৃপুরুষ ইবরাহীম, ইসমাঈল ও ইসহাকের মা‘বূদের ইবাদত করব, তিনি একক উপাস্য এবং আমরা তাঁরই অনুগত থাকব।” (সূরা বাকারাহ ২:১৩৩)

ইসমাঈল (আঃ) হলেন ইসহাক (আঃ)-এর সন্তানদের চাচা। তারপরেও এখানে বাবাদের অন্তভুর্ক্ত করেছেন অধিকাংশের ওপর লক্ষ রেখে। (ইবনে কাসীর, ৩/৩৩৫)

এভাবে আল্লাহ তা‘আলা এখানে সতের জন নাবীর নাম উল্লেখ করেছেন। সকলকে সৎ বান্দা বলে আখ্যায়িত করেছেন এবং সারা পৃথিবীর ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন। এ সকল শ্রেষ্ঠ ও সৎ বান্দারাও যদি আল্লাহ তা‘আলার সাথে অংশী স্থাপন করত আল্লাহ তা‘আলা তাদের সকল আমল বরবাদ করে দিতেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(وَلَقَدْ اُوْحِیَ اِلَیْکَ وَاِلَی الَّذِیْنَ مِنْ قَبْلِکَﺆ لَئِنْ اَشْرَکْتَ لَیَحْبَطَنَّ عَمَلُکَ وَلَتَکُوْنَنَّ مِنَ الْخٰسِرِیْنَ)

“নিশ্চয়ই তোমার প্রতি ও তোমার পূর্ববর্তীদের প্রতি ওয়াহী করা হয়েছে, যদি তুমি আল্লাহর সাথে শরীক স্থির কর তবে নিঃসন্দেহে তোমার কর্ম তো নিষ্ফল হবেই এবং অবশ্যই তুমি ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে।”(সূরা যুমার ৩৯:৬৫) তাহলে আমাদের অবস্থা কী হতে পারে?

دَاو۫دَ ‘দাঊদ’ হলেন বিপুল শক্তি ও রাষ্ট্রক্ষমতার অধিকারী। আল্লাহ তা‘আলা তাঁকে নবুওয়াত ও মানুষের মাঝে বিচার-ফায়সালা করার প্রজ্ঞা দান করেছিলেন। বর্তমান ফিলিস্তীনসহ সমগ্র ইরাক ও শাম (সিরিয়া) এলাকায় তাঁর রাজত্ব ছিল। পৃথিবীর অতুলনীয় ক্ষমতার অধিকারী হয়েও তিনি ছিলেন সর্বদা আল্লাহ তা‘আলার প্রতি অনুগত ও সদা কৃতজ্ঞ। দাঊদ (আঃ) হলেন আল্লাহ তা‘আলার ঐ বান্দা যাকে খুশী হয়ে পিতা আদম (আঃ) স্বীয় বয়স থেকে ৪০ বছর কেটে তাকে দান করার জন্য আল্লাহ তা‘আলার নিকট সুপারিশ করেছিলেন এবং তাই দাঊদ (আঃ)-এর ৬০ হতে ১০০ বছরে উন্নীত হয়। (তিরমিযী, মিশকাত হা: ১১৮, হাসান সহীহ) দাঊদ (আঃ) সম্পর্কে সূরা সাবার ১০-১১ ও সূরা সোয়াদের ১৭-২৯ নং আয়াতে আলোচনা করা হয়েছে।

سُلَیْمٰنَ ‘সুলাইমান’ দাঊদ (আঃ)-এর মৃত্যুর পর সুযোগ্য পুত্র সুলাইমান (আঃ) তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন। আল্লাহ তা‘আলা তাকে জ্ঞানে, প্রজ্ঞায় ও নবুওয়াতের সম্পদে সমৃদ্ধ করেন। এছাড়াও তাঁকে এমন কিছু নেয়ামত দান করেন যা অন্য কোন নাবীকে দান করেননি। ইমাম বাগাভী ইতিহাসবিদগণের বরাতে বলেন, সুলাইমান (আঃ) মোট ৫৩ বছর বয়স পেয়েছিলেন। তের বছর বয়সে রাজকার্য হাতে নেন এবং শাসনের চতুর্থ বছরে বায়তুল মুক্বাদ্দাসের নির্মাণ কাজ শুরু করেন। তিনি ৪০ বছর রাজত্ব করেন (কুরতুবী)। তাঁর সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা সূরা আম্বিয়ার ৭৮-৮২, নামলের ১৫-৪৪ এবং সূরা সোয়াদের ৩০-৪০ নং আয়াতের উল্লেখ করা হয়েছে।

الْیَسَعَ -‘আল ইয়াসা‘পবিত্র কুরআনে এ নাবী সম্পর্কে অত্র সূরা ও সূরা সোয়াদের ৪৮ নং আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি ইফরাঈম বিন ইউসুফ বিন ইয়াকূব (আঃ)-এর বংশধর ছিলেন। তিনি ইলিয়াস (আঃ)-এর চাচাতো ভাই ও তাঁর প্রতিনিধি। ইলিয়াস ও সুলাইমান (আঃ)-এর পরে তাঁকে নবুওয়াত দেয়া হয়, ফলে তিনি ইলিয়াস (আঃ)-এর শরীয়ত অনুযায়ী ফিলিস্তিন এলাকায় দাওয়াত ও তাবলীগের কাজ করেন। (আল বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ ২/৪ পৃঃ) ইউনুস (আঃ) সম্পর্কে সূরা সফফাতের ১৩৯-১৪৮ নং আয়াতে আলোচনা রয়েছে।

অবশেষে আল্লাহ তা‘আলা এসব হিদায়াতপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের হিদায়াতের অনুসরণের নির্দেশ দিচ্ছেন।

(قُلْ لَّآ أَسْئَلُكُمْ عَلَيْهِ أَجْرًا)

বল:‎ ‘এ জন্য আমি তোমাদের নিকট পারিশ্রমিক চাই না, অর্থাৎ দীনের তাবলীগ ও দাওয়াতের কাজের জন্য কোন প্রতিদান চাই না। এর প্রতিদান আখিরাতে আল্লাহ তা‘আলার কাছে পাব।

প্রশ্ন আসতে পারে- কুরআন শিক্ষা দিয়ে, দীনের তাবলীগ করে ও ওয়াজ-নসিহত করে অর্থ নেয়া যাবে কি? উত্তর: কেউ না নিলে তা অধিক উত্তম। আর নিলে জায়েয হবে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:

إِنَّ أَحَقَّ مَا أَخَذْتُمْ عَلَيْهِ أَجْرًا كِتَابُ اللّٰهِ

তোমরা যেসকল কাজ করে পারিশ্রমিক নাও তার অধিক হকদার হল আল্লাহ তা‘আলার কিতাব শিক্ষা দিয়ে নেয়া। (সহীহ বুখারী হা: ৫৭৩৭.)

সুতরাং ধর্মীয় শিক্ষা দিয়ে পারিশ্রমিক নেয়ার অধিকার রয়েছে, বিশেষ করে যদি সরকারী ব্যবস্থা না থাকে। তবে ইসলামী সরকার থাকলে সরকারই এ গুরু দায়িত্ব বহন করবে। এ সম্পর্কে সূরা বাক্বারার ৪০-৪৩ নং আয়াতে আলোচনা করা হয়েছে।

আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:

১. মানুষের জীবনে পৃথিবীর বুকে সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি হল সঠিক পথের হিদায়াত।
২. পৃথিবীর বুকে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ মানুষ নাবী ও রাসূলগণ।
৩. দুনিয়ার অনাসক্তি ও আখিরাতের প্রতি আসক্তির ফযীলত জানতে পারলাম।
৪. নাবী-রাসূলগণ শির্কী অপরাধ করা হতে সম্পূর্ণ মুক্ত, কিন্তু যদি করেন তাহলে তারও পরিণতি খুব ভয়াবহ।
৫. নাবীদের নির্দেশিত পথ অনুসরণ করা উম্মাতের জন্য ফরয।

English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Sura Anam
Verses :- 84-90
وَ اِسۡمٰعِیۡلَ وَ الۡیَسَعَ وَ یُوۡنُسَ وَ لُوۡطًا ؕ

Ismail and Al-Yasa`, and Yunus and Lut,

Ibrahim Receives the News of Ishaq and Ya`qub During His Old Age

Allah states that after Ibrahim became old and he, and his wife, Sarah, lost hope of having children, He gave them Ishaq. The angels came to Ibrahim on their way to the people of Prophet Lut (to destroy them) and they delivered the good news of a child to Ibrahim and his wife. Ibrahim’s wife was amazed at the news,

قَالَتْ يوَيْلَتَا ءَأَلِدُ وَأَنَاْ عَجُوزٌ وَهَـذَا بَعْلِى شَيْخًا إِنَّ هَـذَا لَشَىْءٌ عَجِيبٌ

قَالُواْ أَتَعْجَبِينَ مِنْ أَمْرِ اللَّهِ رَحْمَتُ اللَّهِ وَبَرَكَـتُهُ عَلَيْكُمْ أَهْلَ الْبَيْتِ إِنَّهُ حَمِيدٌ مَّجِيدٌ

She said (in astonishment):”Woe unto me! Shall I bear a child while I am an old woman, and here is my husband, an old man! Verily! This is a strange thing!”

They said:”Do you wonder at the decree of Allah The mercy of Allah and His blessings be on you, O the family (of Ibrahim). Surely, He (Allah) is All-Praiseworthy, All-Glorious.” (11:72-73)

The angels also gave them the good news that Ishaq will be a Prophet and that he will have offspring of his own.

In another Ayah, Allah said;

وَبَشَّرْنَـهُ بِإِسْحَـقَ نَبِيّاً مِّنَ الصَّـلِحِينَ

And We gave him the good news of Ishaq a Prophet from the righteous.(37:112), which perfects this good news and completes the favor.

Allah said,

بِإِسْحَـقَ وَمِن وَرَاءِ إِسْحَـقَ يَعْقُوبَ

(of Ishaq, and after him, of Ya`qub… (11:71),

meaning, this child will have another child in your lifetime, so that your eyes are comforted by him, just as your eyes will be comforted by his father.

Certainly, one becomes jubilant and joyous when he becomes a grandfather, because this means that his offspring will continue to exist.

It was also expected that if an elderly couple had children, due to the child’s weakness, he would have no offspring. This is why Allah delivered the good news of Ishaq and of his son Yaqub, whose name literally means `multiplying and having offspring’.

This was a reward for Ibrahim who left his people and migrated from their land so that he could worship Allah alone. Allah compensated Ibrahim with better than his people and tribe when He gave him righteous children of his own, who would follow his religion, so that his eyes would be comforted by them.

In another Ayah, Allah said;

فَلَمَّا اعْتَزَلَهُمْ وَمَا يَعْبُدُونَ مِن دُونِ اللَّهِ وَهَبْنَا لَهُ إِسْحَـقَ وَيَعْقُوبَ وَكُلًّ جَعَلْنَا نَبِيّاً

So when he turned away from them and from those whom they worshipped besides Allah, We gave him Ishaq and Yaqub, and each one of them We made a Prophet. (19:49)

Allah said here,

وَوَهَبْنَا لَهُ إِسْحَقَ وَيَعْقُوبَ كُلًّ هَدَيْنَا

And We bestowed upon him Ishaq and Yaqub, each of them We guided,

Allah said;

وَنُوحًا هَدَيْنَا مِن قَبْلُ

and before him, We guided Nuh…,

meaning, We guided Nuh before and gave him righteous offspring, just as We guided Ibrahim and gave him righteous children.
Qualities of Nuh and Ibrahim

Each of these two Prophets had special qualities. When Allah caused the people of the earth to drown, except those who believed in Nuh and accompanied him in the ark, Allah made the offspring of Nuh the dwellers of the earth thereafter. Ever since that occurred, the people of the earth were and still are the descendants of Nuh.

As for Ibrahim, Allah did not send a Prophet after him but from his descendants. Allah said in other Ayat,

وَجَعَلْنَا فِى ذُرِّيَّتِهِمَا النُّبُوَّةَ وَالْكِتَـبَ

And We ordained among his (Ibrahim’s) offspring Prophethood and the Book. (29:27)

وَلَقَدْ أَرْسَلْنَا نُوحاً وَإِبْرَهِيمَ وَجَعَلْنَا فِى ذُرِّيَّتِهِمَا النُّبُوَّةَ وَالْكِتَـبَ

And indeed, We sent Nuh and Ibrahim, and placed in their offspring Prophethood and the Book. (57:26)

and,

أُولَـيِكَ الَّذِينَ أَنْعَمَ اللَّهُ عَلَيْهِم مِّنَ النَّبِيِّيْنَ مِن ذُرِّيَّةِ ءادَمَ وَمِمَّنْ حَمَلْنَا مَعَ نُوحٍ وَمِن ذُرِّيَّةِ إِبْرَهِيمَ وَإِسْرَءِيلَ وَمِمَّنْ هَدَيْنَا وَاجْتَبَيْنَأ إِذَا تُتْلَى عَلَيْهِمْ ءايَـتُ الرَّحْمَـنِ خَرُّواْ سُجَّداً وَبُكِيّاً

Those were they unto whom Allah bestowed His grace from among the Prophets, of the offspring of Adam, and of those whom We carried (in the ship) with Nuh, and of the offspring of Ibrahim and Israil and from among those whom We guided and chose. When the verses of the Most Beneficent (Allah) were recited unto them, they fell down prostrating and weeping. (19:58)

Allah said in this honorable Ayah here,

وَمِن ذُرِّيَّتِهِ

and among his progeny…

meaning, We guided from among his offspring,

دَاوُودَ وَسُلَيْمَانَ

Dawud, Suleiman…,

from the offspring of Nuh, according to Ibn Jarir.

It is also possible that the Ayah refers to Ibrahim since it is about him that the blessings were originally mentioned here, although Lut is not from his offspring, for he was Ibrahim’s nephew, the son of his brother Maran, the son of Azar. It is possible to say that Lut was mentioned in Ibrahim’s offspring as a generalization. As Allah said,

أَمْ كُنتُمْ شُهَدَاءَ إِذْ حَضَرَ يَعْقُوبَ الْمَوْتُ إِذْ قَالَ لِبَنِيهِ مَا تَعْبُدُونَ مِن بَعْدِى قَالُواْ نَعْبُدُ إِلَـهَكَ وَإِلَـهَ ابَأيِكَ إِبْرَهِيمَ وَإِسْمَـعِيلَ وَإِسْحَـقَ إِلَـهًا وَاحِدًا وَنَحْنُ لَهُ مُسْلِمُونَ

Or were you witnesses when death approached Yaqub When he said unto his sons, “What will you worship after me!”

They said, “We shall worship your God, and the God of your fathers, Ibrahim, Ismail, Ishaq, One God, and to Him we submit.” (2:133)

Here, Ismail was mentioned among the ascendants of Yaqub, although he was Yaqub’s uncle.

Similarly Allah said,

فَسَجَدَ الْمَلَـيِكَةُ كُلُّهُمْ أَجْمَعُونَ

إِلاَّ إِبْلِيسَ أَبَى أَن يَكُونَ مَعَ السَّـجِدِينَ

So the angels prostrated themselves, all of them together. Except Iblis — he refused to be among those to prostrate. (15:30-31)

Allah included Iblis in His order to the angels to prostrate, and chastised him for his opposition, all because he was similar to them in that (order), so he was considered among them in general, although he was a Jinn. Iblis was created from fire while the angels were created from light.

Allah says;

وَأَيُّوبَ وَيُوسُفَ وَمُوسَى وَهَارُونَ وَكَذَلِكَ نَجْزِي الْمُحْسِنِينَ

وَزَكَرِيَّا وَيَحْيَى وَعِيسَى وَإِلْيَاسَ كُلٌّ مِّنَ الصَّالِحِينَ

وَإِسْمَاعِيلَ وَالْيَسَعَ وَيُونُسَ وَلُوطًا

وَكُلًّ فضَّلْنَا عَلَى الْعَالَمِينَ

Ayub, Yusuf, Musa, and Harun. Thus do We reward the good-doers. And Zakariyya, and Yahya and Isa and Ilyas, each one of them was of the righteous. And Ismail and Al-Yasa`, and Yunus and Lut, and each one of them We preferred above the Alamin (mankind and Jinns, of their times).

Mentioning `Isa in the offspring of Ibrahim, or Nuh as we stated above, is proof that the grandchildren from a man’s daughter’s side are included among his offspring. `Isa is included among Ibrahim’s progeny through his mother, although `Isa did not have a father.

Ibn Abi Hatim recorded that;

Abu Harb bin Abi Al-Aswad said,

“Al-Hajjaj sent to Yahya bin Ya`mar, saying, `I was told that you claim that Al-Hasan and Al-Hussein are from the offspring of the Prophet, did you find it in the Book of Allah I read the Qur’an from beginning to end and did not find it.’

Yahya said, `Do you not read in Surah Al-An`am,
وَمِن ذُرِّيَّتِهِ دَاوُودَ وَسُلَيْمَانَ
(and among his progeny Dawud, Sulayman…) until,
وَيَحْيَى وَعِيسَى
(and Yahya and `Isa…).

Al-Hajjaj said, `Yes.’

Yahya said, `Is not `Isa from the offspring of Ibrahim, although he did not have a father!’

Al-Hajjaj said, `You have said the truth.”‘

For example, when a man leaves behind a legacy, a trust, or gift to his “offspring” then the children of his daughters are included. But if a man gives something to his “sons”, or he leaves a trust behind for them, then that would be particular to his male children and their male children.

Allah’s statement
وَمِنْ ابَايِهِمْ وَذُرِّيَّاتِهِمْ وَإِخْوَانِهِمْ

And also some of their fathers and their progeny and their brethren,

mentions that some of these Prophets’ ascendants and descendants were also guided and chosen.

So Allah said,

وَاجْتَبَيْنَاهُمْ وَهَدَيْنَاهُمْ إِلَى صِرَاطٍ مُّسْتَقِيمٍ

We chose them, and We guided them to a straight path.
Shirk Eradicates the Deeds, Even the Deeds of the Messengers

Allah said next

ذَلِكَ هُدَى اللّهِ يَهْدِي بِهِ مَن يَشَاء مِنْ عِبَادِهِ

This is the guidance of Allah with which He guides whomsoever He wills of His servants.

meaning, this occurred to them by Allah’s leave and because He directed them to guidance.

Allah said;

وَلَوْ أَشْرَكُواْ لَحَبِطَ عَنْهُم مَّا كَانُواْ يَعْمَلُونَ

But if they had joined in worship others with Allah, all that they used to do would have been of no benefit to them.

This magnifies the serious danger of Shirk and the gravity of committing it.

In another Ayah, Allah said;

وَلَقَدْ أُوْحِىَ إِلَيْكَ وَإِلَى الَّذِينَ مِن قَبْلِكَ لَيِنْ أَشْرَكْتَ لَيَحْبَطَنَّ عَمَلُكَ

And indeed it has been revealed to you, as it was to those (Allah’s Messengers) before you:”If you join others in worship with Allah, surely your deeds will be in vain.” (39:65)

`If’ here does not mean that this would ever occur, as is similar in Allah’s statement;

قُلْ إِن كَانَ لِلرَّحْمَـنِ وَلَدٌ فَأَنَاْ أَوَّلُ الْعَـبِدِينَ

Say:”If the Most Beneficent had a son, then I am the first of Allah’s worshippers.” (43:81)

and,

لَوْ أَرَدْنَأ أَن نَّتَّخِذَ لَهْواً لاَّتَّخَذْنَـهُ مِن لَّدُنَّأ إِن كُنَّا فَـعِلِينَ

If We intended to take a pastime (a wife or a son, etc.) We could surely have taken it from Us, if We were going to do (that). (21:17)

and,

لَّوْ أَرَادَ اللَّهُ أَن يَتَّخِذَ وَلَداً لاَّصْطَفَى مِمَّا يَخْلُقُ مَا يَشَأءُ سُبْحَـنَهُ هُوَ اللَّهُ الْوَحِدُ الْقَهَّارُ

If Allah willed to take a son, He could have chosen whom He pleased out of those whom He created. But glory be to Him! He is Allah, the One, the Compelling. (39:4)

Allah said
أُوْلَـيِكَ الَّذِينَ اتَيْنَاهُمُ الْكِتَابَ وَالْحُكْمَ وَالنُّبُوَّةَ

They are those whom We gave the Book, Al-Hukm, and Prophethood.

We bestowed these bounties on them, as a mercy for the servants, and out of our kindness for creation.

فَإِن يَكْفُرْ بِهَا

But if they disbelieve therein…,

in the Prophethood, or the three things; the Book, the Hukm and the Prophethood,

هَـوُلاء

They…,

According to Ibn Abbas, Sa`id bin Al-Musayyib, Ad-Dahhak, Qatadah, As-Suddi, and others,

refers to the people of Makkah.

فَقَدْ وَكَّلْنَا بِهَا قَوْمًا لَّيْسُواْ بِهَا بِكَافِرِينَ

then, indeed We have entrusted it to a people who are not disbelievers therein.

This Ayah means, if the Quraysh and the rest of the people of the earth – Arabs and non-Arabs, illiterate and the People of the Scripture – disbelieve in these bounties, then We have entrusted them to another people, the Muhajirun and Ansar, and those who follow their lead until the Day of Resurrection,
لَّيْسُواْ بِهَا بِكَافِرِينَ
(who are not disbelievers therein).

They will not deny any of these favors, not even one letter. Rather, they will believe in them totally, even the parts that are not so clear to some of them.

We ask Allah to make us among them by Hi যত যতs favor, generosity and kindness.

Addressing His servant and Messenger, Muhammad, Allah said

أُوْلَـيِكَ

They are…,

the Prophets mentioned here, along with their righteous fathers, offspring and brethren,

الَّذِينَ هَدَى اللّهُ

those whom Allah had guided.

meaning, they alone are the people of guidance,

فَبِهُدَاهُمُ اقْتَدِهْ

So follow their guidance.

Imitate them.

This command to the Messenger certainly applies to his Ummah, according to what he legislates and commands them.

While mentioning this Ayah, Al-Bukhari recorded that;

Mujahid asked Ibn Abbas, “Is there an instance where prostration is warranted in (Surah) Sad?”

Ibn Abbas said, “Yes.”

He then recited,
وَوَهَبْنَا لَهُ إِسْحَقَ وَيَعْقُوبَ
And We bestowed upon him Ishaq and Ya`qub… until,
فَبِهُدَاهُمُ اقْتَدِهْ
(…So follow their guidance).

He commented,

“He (our Prophet, Muhammad) was among them.”

In another narration, Mujahid added that Ibn Abbas said,

“Your Prophet was among those whose guidance we were commanded to follow.”

Allah’s statement,

قُل لاَّ أَسْأَلُكُمْ عَلَيْهِ أَجْرًا

Say:”No reward I ask of you for this.”

means, I do not ask you for any reward for delivering the Qur’an to you, nor anything else,

إِنْ هُوَ إِلاَّ ذِكْرَى لِلْعَالَمِينَ

“It is only a reminder for the Alamin (mankind and Jinns).”

so they are reminded by it and guided from blindness to clarity, from misguidance to guidance, and from disbelief to faith.
তাফসীরে ইবনে ‌কাসীর বলেছেন:-
৮৪-৯০ নং আয়াতের তাফসীর:

আল্লাহ পাক বলেন-ইবরাহীম (আঃ)-কে আমি ইসহাকের ন্যায় সুসন্তান দান করেছি, অথচ বার্ধক্যের কারণে সে এবং তার স্ত্রী সন্তান থেকে নিরাশ হয়ে গিয়েছিল। ফেরেশতা তাদের কাছে আসেন এবং তারা হযরত লূত (আঃ)-এর কাছেও যাচ্ছিলেন। ফেরেশতাগণ স্বামী-স্ত্রী দু’জনকেই হযরত ইসহাক (আঃ)-এর জন্মের সুসংবাদ দেন। তখন স্ত্রী হতবুদ্ধি হয়ে বলেনঃ “হায়! হায়! কি করে আমাদের সন্তান হবে! আমি তো বন্ধ্যা ও বৃদ্ধা এবং আমার স্বামী (ইবরাহীম আঃ) অতি বৃদ্ধ! সুতরাং এটা কতই বিস্ময়কর কথা!” তখন ফেরেশতাগণ বলেনঃ “আপনি কি আল্লাহর কাজে বিস্ময় বোধ করছেন? হে বাড়ীর মালিকগণ! আপনাদের উপর আল্লাহর রহমত ও বরকত বর্ষিত হাক।” ফেরেশতাগণ তাদেরকে এ সুসংবাদও দেন যে, ইসহাক (আঃ) নবীও হবেন এবং তার বংশ বৃদ্ধিও হবে। যেমন আল্লাহ পাক বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “আমি তাকে ইসহাক (আঃ) -এর সুসংবাদ দিলাম, যে নবী হবে ও সৎ লোকদের অন্তর্ভুক্ত হবে।” (৩৭:১১২) এটা বড় সুসংবাদ এবং বড় নিয়ামতও বটে। আর এক জায়গায় মহান আল্লাহ বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “আমি তাকে ইসহাক (আঃ) -এর শুভ সংবাদ দিলাম এবং এ সুসংবাদও দিলাম যে, ইসহাক (আঃ) -এর ঔরষে ইয়াকূব (আঃ) জন্মগ্রহণ করবে।” (১১:৭১) মহান আল্লাহ হযরত ইবরাহীম (আঃ) ও তাঁর স্ত্রীকে এ সংবাদ দেন যে, তাঁদের জীবদ্দশাতেই ইসহাকের আঃ ঔরষে হযরত ইয়াকূব (আঃ) জন্মগ্রহণ করবেন। সুতরাং পুত্র ইসহাকের জন্মগ্রহণের ফলে যেমন তাঁদের চক্ষু ঠাণ্ডা হবে, অনুরূপভাবে পৌত্র ইয়াকূব (আঃ) -এর জন্মগ্রহণের ফলেও তাদের চক্ষু ঠাণ্ডা হবে। কেননা, বংশ বৃদ্ধির কারণ হিসেবে পৌত্রের জন্মলাভ খুবই খুশীর ব্যাপার। বদ্ধ ও বদ্ধা যখন সন্তান থেকে নিরাশ হয়ে যাচ্ছেন যে, তাদের সন্তান লাভ সম্ভব নয়, এমতাবস্থায় পুত্র ইসহাক (আঃ) -এর জন্মলাভ এবং ইসহাক (আঃ) -এর পুত্র ইয়াকূব (আঃ) -এর জন্মলাভ এটা কি কম খুশীর কথা! এতে কে না খুশী হয়? এটা ছিল হযরত ইবরাহীমের নেক আমলেরই প্রতিদান, যিনি একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে নিজের দেশ ও জাতিকে ছেড়ে দিয়ে দূর দূরান্তের পথে পাড়ি জমালেন। এর প্রতিদানই ছিল তার ঔরষজাত নেককার সন্তানগণ, যাদের কারণে তাঁর চক্ষু ঠাণ্ডা হয়েছিল । যেমন আল্লাহ পাক বলেনঃ “যখন ইবরাহীম স্বীয় কওম ও তাদের মা’বৃদদেরকে পরিত্যাগ করলো তখন আমি তাকে প্রতিদান হিসাবে ইসহাক ও ইয়বকে দান
লাম।” আর এখানে বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “আমি তাকে ইসহাক ও ইয়াকূবকে দান করেছি এবং উভয়কেই সঠিক পথের সন্ধান দিয়েছি।” এরপর বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “আর তার পূর্বে এমনিভাবে নূহ (আঃ)-কেও সঠিক পথ প্রদর্শন করেছি।” মহান আল্লাহ আরও বলেনঃ আমি ইবরাহীম (আঃ)-কে ভাল বংশ দান করেছি। ইসহাক (আঃ) ও ইয়াকূব (আঃ) বিরাট বৈশিষ্ট্য লাভ করেছিলেন। আল্লাহ তা’আলা যখন হযরত নূহ (আঃ)-এর সময় সমস্ত দুনিয়াবাসীকে ধ্বংস করেছিলেন। সেই সময় শুধুমাত্র ঐ লোকগুলো রক্ষা পেয়েছিল যারা হযরত নূহ (আঃ) -এর উপর ঈমান এনে তাঁর নৌকায় আরোহণ করেছিল! এই পরিত্রাণ প্রাপ্ত লোকগুলোই ছিল হযরত নূহের সন্তান এবং সারা দুনিয়ার লোক হচ্ছে এদের সন্তান। আর ইবরাহীম (আঃ) -এর পরে তার সন্তানদের মধ্য থেকেই আল্লাহ নবী প্রেরণ করেন। যেমন তিনি বলেনঃ অর্থাৎ “আমি তার সন্তানদের মধ্যে নবুওয়াত ও কিতাব রেখেছি।” (২৯৪২৭) তিনি আর এক জায়গায় বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “অবশ্যই আমি নূহ (আঃ) ও ইবরাহীম (আঃ)-কে প্রেরণ করেছি এবং তাদের সন্তানদের মধ্যে নবুওয়াত ও কিতাব রেখেছি।” (৫৭:২৬) আল্লাহ তা’আলা আরও বলেছেনঃ “নবীদের মধ্যে এমন লোকও রয়েছে যাদেরকে আল্লাহ পুরস্কৃত করেছেন, তারা আদম (আঃ)-এর সন্তানদের অন্তর্ভুক্ত, আর ঐ লোকদের অন্তর্ভুক্ত যাদেরকে আমি নূহ (আঃ)-এর সাথে নৌকায় উঠিয়েছিলাম এবং তারা ইবরাহীম (আঃ) ও ইসমাঈল (আঃ)-এর সন্তানদের অন্তর্ভুক্ত, যাদেরকে আমি সুপথ প্রদর্শন করেছিলাম ও মনোনীত করেছিলাম, যখন তাদের সামনে আল্লাহর আয়াতসমূহ পাঠ করা হয় তখন তারা ক্রন্দনরত অবস্থায় সিজদায় পড়ে যায়।”

এই আয়াতে কারীমায় (আরবী) শব্দ রয়েছে। এর অর্থ হবেঃ আমি তার সন্তানদেরকেও সুপথ দেখিয়েছি । অর্থাৎ দাউদ (আঃ) ও সুলাইমান (আঃ)-কেও হিদায়াত দান করেছি। কিন্তু যদি (আরবী) -এর সর্বনামটিকে(আরবী) -এর দিকে ফিরানো হয়, কেননা ওটা (আরবী) শব্দের নিকটতর, তবে এটা তো একেবারে পরিষ্কার কথা, এতে কোন জটিলতা নেই। ইবনে জারীরও (রঃ) এটাই গ্রহণ করেছেন। কিন্তু যদি সর্বনামটিকে (আরবী) শব্দের দিকে ফিরানো হয়, কেননা বাকরীতি এরূপই বটে, তবে তো খুবই ভাল কথা। কিন্তু এতে একটু জটিলতা এই রয়েছে যে, হযরত ইবরাহীম (আঃ)-এর সন্তানদের ক্রমপরম্পরায় ‘নূত’ শব্দটিও এসে গেছে। অথচ হযরত লূত (আঃ) হযরত ইবরাহীম (আঃ)-এর সন্তানদের অন্তর্ভুক্ত নন। বরং তিনি হচ্ছেন তার ভাই হারূন ইবনে আযরের ছেলে। তবে এতে বিস্ময়ের কিছুই নেই যে, হযরত ইবরাহীম (আঃ)-এর সন্তানদের সংখ্যাধিক্যের কারণেই হয়তো হযরত লূত (আঃ)-কেও তার সন্তানদের অন্তর্ভুক্ত করে নেয়া হয়েছে। যেমন আল্লাহর নিম্নের উক্তিতেও রয়েছেঃ (আরবী) (২৪ ১৩৩) এখানে ইয়াকূব (আঃ)-এর পূর্বপুরুষদের ক্রমপরম্পরায় হযরত ইসমাঈল (আঃ)-এর নামও চলে এসেছে, অথচ হযরত ইসমাঈল (আঃ) তো তাঁর চাচা ছিলেন। এটাও আধিক্য হিসাবেই হয়েছে। অনুরূপভাবে নিম্নের আয়াতেও রয়েছেঃ (আরবী) (৩৮:৭৩-৭৪) এখানে ইবলীসকে ফেরেশতাদের মধ্যে শামিল করা হয়েছে। কেননা, ফেরেশতাদের সাথে তার সাদৃশ্য ছিল। প্রকৃতপক্ষে সে ফেরেশতা ছিল না। বরং সে ছিল জ্বিন, তার প্রকৃতি হচ্ছে আগুন এবং ফেরেশতাদের প্রকৃতি হচ্ছে আলো। তা ছাড়া এই কারণেও যে, হযরত ঈসা (আঃ)-কে হযরত ইবরাহীম (আঃ) বা হযরত নূহ (আঃ)-এর সন্তানদের ক্রমপরম্পরায় আনা হয়েছে। তাকেও যেন ইবরাহীম (আঃ)-এরই বংশধর বলা হয়েছে। এরূপ করা হয়েছে এই দলীলের উপর ভিত্তি করেই যে, কন্যার সন্তানদেরকেও তার পিতার বংশধর মনে করা হয়। এখন যদি হযরত ইবরাহীম (আঃ)-এর সঙ্গে হযরত ঈসা (আঃ)-এর কোন সম্পর্ক থাকে তা শুধু এর উপর ভিত্তি করেই যে, তাঁর মা মারইয়াম (আঃ) হযরত ইবরাহীম (আঃ)-এর বংশধর ছিলেন। নতুবা হযরত ঈসা (আঃ)-এর তো পিতাই ছিল না।

বর্ণিত আছে যে, হাজ্জাজ ইয়াহইয়া ইবনে ইয়াসারকে বলেনঃ “আমার নিকট সংবাদ পৌছেছে যে, আপনি নাকি হযরত হাসান (রাঃ) ও হযরত হুসাইন (রাঃ)-কে নবী (সঃ)-এর সন্তানদের অন্তর্ভুক্ত বলে থাকেন? অথচ তারা তো হযরত আলী (রাঃ) ও আবূ তালীবের বংশধর, আবার এও নাকি দাবী করেন যে, কুরআন কারীম দ্বারাই এটা প্রমাণিত? আমি তো কুরআন কারীম প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পাঠ করেছি, কিন্তু কোন জায়গাতেই এটা পাইনি তো!” তখন ইবনে ইয়াসার তাঁকে বলেনঃ “আপনি কি সূরায়ে আনআমের ((আরবী) এবং (আরবী) পর্যন্ত পড়েন) -এই আয়াতগুলো পাঠ করেননি?” হাজ্জাজ উত্তরে বলেনঃ “হ্যা, পড়েছি তো।” তিনি তখন বলেনঃ “এখানে হযরত ঈসা (আঃ)-কে হযরত ইবরাহীম (আঃ)-এর সন্তানদের অন্তর্ভুক্ত বলা হয়েছে, অথচ তাঁর তো পিতাই ছিল না। শুধুমাত্র কন্যার সম্পর্কের কারণেই তাঁকে সন্তান ধরা হয়েছে। তাহলে কন্যার সম্পর্কের কারণে হযরত হাসান (রাঃ) ও হযরত হুসাইন (রাঃ)-কে নবীর সন্তান বলা হবে না কেন?” হাজ্জাজ তখন বলেনঃ “আপনি ঠিক কথাই বলেছেন।”

এ কারণেই যখন কোন লোক স্বীয় মীরাস নিজের সন্তানের নামে অসিয়ত করে কিংবা ওয়াকফ বা হিবা করে, তখন ঐ সন্তানদের মধ্যে কন্যার সন্তানদেরও ধরে নেয়া হয়। কিন্তু যখন সে পুত্রদের নামে অসিয়ত বা ওয়াফ করে তখন নির্দিষ্টভাবে ঔরষজাত পুত্র বা পুত্রের পুত্ররাই হকদার হয়ে থাকে। অন্যান্যরা বলে থাকেন যে, এতে কন্যার সন্তানেরাও শামিল থাকবে। কেননা, সহীহ বুখারীতে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) হযরত হাসান (রাঃ) সম্পর্কে বলেছিলেনঃ “নিশ্চয়ই আমার এই পুত্র সাইয়েদ বা নেতা এবং আল্লাহ এর মাধ্যমে মুসলমানদের দু’টি বড় দলের মধ্যে সন্ধি করিয়ে দিবেন এবং যুদ্ধের ফিত্না প্রশমিত করবেন।” এখানে রাসূলুল্লাহ (সঃ) হযরত হাসান (রাঃ)-কে পুত্র বলেছেন, যা এটাই প্রমাণ। করে যে, তাকে তার পুত্ররূপে গণ্য করা যেতে পারে। (আরবী) আল্লাহ তাআলার এই উক্তির মধ্যে নসল’ ও ‘নসব’ এই দুটিরই উল্লেখ রয়েছে এবং হিদায়াত ও মনোনয়ন সবারই উপর প্রযোজ্য হয়েছে। এ জন্যেই মহান আল্লাহ বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “আমি তাদেরকে মনোনীত করেছি এবং সরল সোজা পথে পরিচালিত করেছি।”

(আরবী) অর্থাৎ এটাই আল্লাহর হিদায়াত; তিনি স্বীয় বান্দাদের মধ্যে যাকে চান এই পথে পরিচালিত করেন। (আরবী) অর্থাৎ যদি তারা শিরক করতো তবে তারা যা কিছুই করতো, সবই পণ্ড হয়ে যেতো। এখানে এটা বলাই উদ্দেশ্য যে, শিরকটা কতই কঠিন ব্যাপার এবং এর পরিণাম কতই না জঘন্য। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “হে নবী (সঃ)! আমি তোমার কাছে ও তোমার পূর্ববর্তী নবীদের কাছে এই অহী করেছি যে, যদি তুমি শিরক কর তবে অবশ্যই তোমার আমল পণ্ড হয়ে যাবে।” (৩৯৪ ৬৫) এই বাক্যটি শর্তের স্থানে রয়েছে, আর শর্তের জন্যে এটা জরুরী নয় যে, ওটা সংঘটিত হবেই। যেমন মহান আল্লাহ বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “হে নবী (সঃ)! তুমি বলে দাও- যদি রহমানের অর্থাৎ আল্লাহর সন্তান হয় তবে আমি প্রথম উপাসনাকারী হয়ে যাবো। (৪৩:৮১) আল্লাহ তা’আলা আরও বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “যদি আমি খেল-তামাসা বানাতে চাইতাম তবে নিজের নিকট থেকেই বানিয়ে নিতাম।” (২১:১৭) আর এক জায়গায় আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “যদি আল্লাহ সন্তান বানিয়ে নেয়ার ইচ্ছা করতেন তবে স্বীয় মাখলুকের মধ্য হতে যাকে ইচ্ছা মনোনীত করে নিতেন, কিন্তু এর থেকে তিনি সম্পূর্ণরূপে পবিত্র এবং তিনি এক ও মহাপরাক্রমশালী।” (৩৯:৪)।

(আরবী) এরা সেই লোক যাদেরকে আমি কিতাব, শাসনভার ও নবুওয়াত দান করেছি। আর এদের কারণেই আমি আমার বান্দাদেরকে নিয়ামত ও দ্বীনের অধিকারী করেছি। সুতরাং যদি এই লোকেরা অর্থাৎ মক্কাবাসী (এটা ইবনে আব্বাস (রাঃ), যহহাক (রঃ), কাতাদা (রঃ) প্রমুখ মনীষীদের উক্তি) নবুওয়াতকে অস্বীকার করে তবে আমি তাদের স্থলে এমন লোকদেরকে নিয়োগ করবো যারা ওটা অস্বীকার করবে না, বরং তারা আমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে। এখন ঐ অস্বীকারকারীরা কুরায়েশই হাক বা অন্যেরাই হাক, আরবী হাক বা আজমীই হাক অথবা আহলে কিতাবই হাক, ওদের স্থলে অন্য জাতিকে অর্থাৎ মুহাজির ও আনসারদেরকে নিয়োগ করবো। তারা আমার কোন কথাকেই অস্বীকার করে না এবং প্রত্যাখ্যানও করে না। বরং তারা কুরআন কারীমের সমস্ত আয়াতের উপরই বিশ্বাস রাখে । আয়াতগুলো স্পষ্ট মর্ম বিশিষ্টই হাক অথবা অস্পষ্ট মর্ম বিশিষ্ট হোক।

এখন আল্লাহ পাক স্বীয় রাসূল (সঃ)-কে সম্বোধন করে বলছেনঃ “উল্লিখিত নবীরা এবং তাদের বাপ-দাদা, সন্তান-সন্ততি ও ভাই বেরাদর এমনই লোক, যাদেরকে আল্লাহ সুপথ প্রদর্শন করেছিলেন, সুতরাং তুমি তাদের অনুসরণ কর।”

রাসূল (সঃ)-এর জন্যে যখন এই আদেশ, তখন তাঁর উম্মত তো তাঁরই অনুসারী, সুতরাং তাদের উপরও যে এই আদেশই প্রযোজ্য এটা বলাই বাহুল্য।

হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ)-কে প্রশ্ন করা হয়েছিল- সূরায়ে এ কি সিজদা রয়েছে? তিনি উত্তরে বললেনঃ “হ্যা।” অতঃপর তিনি (আরবী) হতে (আরবী) পর্যন্ত আয়াতগুলা পাঠ করে বলেনঃ তিনি তাদেরই অন্তর্ভুক্ত। ইয়াযিদ ইবনে হারূন, মুহাম্মাদ ইবনে উবাইদ ও সুহাইল ইবনে ইউসুফ আওয়াম হতে, তিনি মুজাহিদ হতে নিম্নের কথাটুকু বেশী বর্ণনা করেনঃ

মুজাহিদ বলেনঃ আমি ইবনে আব্বাস (রাঃ)-কে এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন- “তোমাদের নবী (সঃ) তাঁদেরই অন্তর্ভুক্ত যাদেরকে তাদের অনুসরণ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।” (আরবী) হে নবী (সঃ)! তুমি লোকদেরকে বলে দাও-আমি তোমাদের কাছে এই কুরআন প্রচারের বিনিময়ে কোন কিছুই যাজ্ঞা করি না।

(আরবী) এটা তো হচ্ছে সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্যে উপদেশের ভাণ্ডার, যেন তারা এর মাধ্যমে গুমরাহী থেকে হিদায়াতের দিকে আসতে পারে এবং কুফরী ছেড়ে ঈমান আনয়ন করতে পারে।

তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
টিকা:৫৬) অর্থাৎ যে শিরকের মধ্যে তোমরা লিপ্ত রয়েছো তারাও যদি কোন পর্যায়ে এর মধ্যে লিপ্ত হতো তাহলে এ মর্যাদা তারা কোনক্রমেই লাভ করতে পারতো না। কোন ব্যক্তির পক্ষে দস্যুতা ও রাহাজানির কাজে সফলতা লাভ করে দুনিয়ায় একজন বিজেতা হিসেবে খ্যাত হওয়া সম্ভবপর ছিল। অথবা চরম অর্থলিপ্সার মাধ্যমে কারূনের সমান খ্যাতি অর্জন বা অন্য কোন উপায়ে দুনিয়ার অসৎ ও দুশ্চরিত্র লোকদের মধ্যে নামজাদা দুশ্চরিত্র হয়ে যাওয়াটাও সম্ভব ছিল। কিন্তু শিরক থেকে দূরে অবস্থান না করে এবং নির্ভেজাল আল্লাহ্‌ প্রীতির পথে অবিচল না থেকে কোন ব্যক্তিই এ হেদায়াতের ইমাম ও সৎলোকদের নেতা হবার মর্যাদা এবং সারা দুনিয়ার জন্য কল্যাণ, সততা ও সৎবৃত্তির উৎস হিসেবে পরিগণিত হতে পারতো না।

টিকা:৫৭) এখানে নবীদেরকে তিনটি জিনিস দেবার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

এক, কিতাব অর্থাৎ আল্লাহর হেদায়াতনামা।

দুই, হুকুম অর্থাৎ এ হেদায়াতনামার সঠিক জ্ঞান, তার মুলনীতিগুলোকে জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ও বিভিন্ন ব্যাপারে প্রয়োগ করার যোগ্যতা এবং বিভিন্ন জীবন সমস্যার ক্ষেত্রে সিদ্ধান্তকর মত প্রতিষ্ঠিত করার আল্লাহ্‌ প্রদত্ত ক্ষমতা।

তিন, নবুওয়াত অর্থাৎ তিনি এ হেদায়াতনামা অনুযায়ী আল্লাহর সৃষ্টিকে পথ দেখাতে পারেন এমন একটি দায়িত্বশীল পদ ও মর্যাদা।

টিকা:৫৮) এর অর্থ হচ্ছে, এ কাফের ও মুশরিকরা যদি আল্লাহর হেদায়াত ও পথ-নির্দেশনা গ্রহণ করতে অস্বীকার করে তাহলে করুক। আমি ঈমানদারদের এমন একটি দল সৃষ্টি করে দিয়েছি যারা এ নিয়ামতের যথার্থ কদর করে ও মর্যাদা দেয়।

তাফসীরে আবুবকর ‌যাকারিয়া‌ বলেছেন:-

[১] আলোচ্য আয়াতসমূহে ইবরাহীম আলাইহিস সালাম-এর প্রতি আল্লাহ প্রদত্ত দানসমূহ বর্ণনা করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদীসের একটি নিয়ম ব্যক্ত করা হয়েছে যে, “যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে প্রিয় বস্তু বিসর্জন দেয়, আল্লাহ তা’আলা তাকে দুনিয়াতেও তদপেক্ষা উত্তম বস্তু দান করেন।” [মুসনাদে আহমাদ: ৫/৩৬৩] অপরদিকে মক্কার মুশরিকদেরকে এসব অবস্থা শুনিয়ে বলা হয়েছে যে, দেখ, তোমাদের মান্যবর ইবরাহীম আলাইহিস সালাম ও তার সমগ্র পরিবার এ কথাই বলে এসেছেন যে, আরাধনার যোগ্য একমাত্র সত্তা হচ্ছেন আল্লাহ তা’আলা। তার সাথে অন্যকে আরাধনায় শরীক করা কিংবা তার বিশেষ গুণে তার সমতুল্য মনে করা, তার ইবাদাতে অপর কাউকে শরীক করা শির্ক, কুফর ও পথভ্রষ্টতা। অতএব, তোমরা যদি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আদেশ অমান্য কর, তবে তোমরা আপন স্বীকৃত বিষয় অনুযায়ীও অভিযুক্ত।
[২] অর্থাৎ কিছুসংখ্যক সম্বোধিত ব্যক্তি যদি আপনার কথা অমান্য করে এবং পূর্ববর্তী সমস্ত নবীগণের নির্দেশ বর্ণনা করা সত্বেও অস্বীকারই করতে থাকে, তবে আপনি দুঃখিত হবেন না। কেননা, আপনার নবুওয়াত স্বীকার করার জন্য আমি একটি বিরাট জাতি স্থির করে রেখেছি। তারা অবিশ্বাস করবে না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আমলে বিদ্যমান মুহাজির ও আনসার এবং কেয়ামত পর্যন্ত আগমনকারী সমস্ত মুসলিম এ ‘জাতি’র অন্তর্ভুক্ত। [আইসারুত তাফাসীর] এ আয়াত তাদের সবার জন্য গর্বের সামগ্রী। কেননা, এ আয়াতে আল্লাহ্ তাআলা প্রশংসার স্থলে তাদের উল্লেখ করেছেন।

[৩] আলোচ্য আয়াতসমূহে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে সম্বোধন করে মক্কাবাসীদেরকে শোনানো হয়েছে যে, কোন জাতির পূর্বপুরুষরা শুধু পিতৃপুরুষ হওয়ার কারণেই অনুসরণীয় হতে পারে না যে, তাদের প্রত্যেকটি কথা ও কাজকে অনুসরণযোগ্য মনে করতে হবে। আরবদের সাধারণ ধারণা তাই ছিল। অনুসরণের ক্ষেত্রে প্রথমে দেখতে হবে যে, যার অনুসরণ করা হবে, সে নিজেও বিশুদ্ধ পথে আছে কি না। তাই নবীগণ আলাইহিমুস সালামদের একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা উল্লেখ করে বলা হয়েছে, “এরা এমন লোক, যাদেরকে আল্লাহ সৎপথ প্রদর্শন করেছেন”। এরপর বলেছেন, “আপনিও তাদের হেদায়াত ও কর্মপন্থা অনুসরণ করুন”। এতে দু’টি নির্দেশ রয়েছে- (এক) আরববাসী ও সমগ্র উম্মতকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে যে, পৈত্রিক অনুসরণের কুসংস্কার পরিত্যাগ কর এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে সুপথপ্রাপ্ত নবী-রাসূলদের অনুসরণ কর। (দুই) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে নির্দেশ দেয়া হয়েছে যে, আপনিও পূর্ববতী নবীগণের পস্থা অবলম্বন করুন।

[৪] এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে বিশেষভাবে একটি ঘোষণা করতে বলা হয়েছে, যা পূর্ববর্তী নবীগণও করেছেন। ঘোষণাটি হচ্ছে, আমি তোমাদের জীবনকে পরিশুদ্ধ করার জন্য যেসব নির্দেশ দিয়ে যাচ্ছি, তজ্জন্য তোমাদের কাছে কোন ফি বা পারিশ্রমিক চাই না। তোমরা এসব নির্দেশ মেনে নিলে আমার কোন লাভ নাই এবং না মানলে তাতেও কোন ক্ষতি নেই। এটি হচ্ছে সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্য উপদেশ ও শুভেচ্ছার বার্তা। বস্তুত: শিক্ষা ও প্রচারকার্যের জন্য কোনরূপ পারিশ্রমিক গ্রহণ না করা সব যুগে সব নবীর নিকট অভিন্ন রীতি ছিল। প্রচারকার্য কার্যকরী হওয়ার ব্যাপারে এর প্রভাব অনস্বীকার্য।

Leave a Reply