(Book# 114/٢٥٠)-৪৫২ www.motaher21.net সুরা: আল-আনয়াম ৯৫-৯৭ নং আয়াত:- إِنَّ اللّهَ فَالِقُ الْحَبِّ وَالنَّوَى নিশ্চয়ই দানা ও বীজ দানকারী হচ্ছেন আল্লাহ। Verily! It is Allah Who causes the seed grain and the fruit stone to split and sprout.

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ

(Book# 114/٢٥٠)-৪৫২
www.motaher21.net
সুরা: আল-আনয়াম
৯৫-৯৭ নং আয়াত:-

إِنَّ اللّهَ فَالِقُ الْحَبِّ وَالنَّوَى

নিশ্চয়ই দানা ও বীজ দানকারী হচ্ছেন আল্লাহ।
Verily! It is Allah Who causes the seed grain and the fruit stone to split and sprout.

اِنَّ اللّٰہَ فَالِقُ الۡحَبِّ وَ النَّوٰی ؕ یُخۡرِجُ الۡحَیَّ مِنَ الۡمَیِّتِ وَ مُخۡرِجُ الۡمَیِّتِ مِنَ الۡحَیِّ ؕ ذٰلِکُمُ اللّٰہُ فَاَنّٰی تُؤۡفَکُوۡنَ ﴿۹۵﴾

নিশ্চয়ই দানা ও বীজ দানকারী হচ্ছেন আল্লাহ। তিনিই জীবন্তকে প্রাণহীন থেকে বের করেন এবং তিনিই প্রাণহীনকে জীবন্ত হতে নিগর্তকারী; তিনিইতো আল্লাহ, তাহলে তোমরা কোথায় যাচ্ছো?
فَالِقُ الۡاِصۡبَاحِ ۚ وَ جَعَلَ الَّیۡلَ سَکَنًا وَّ الشَّمۡسَ وَ الۡقَمَرَ حُسۡبَانًا ؕ ذٰلِکَ تَقۡدِیۡرُ الۡعَزِیۡزِ الۡعَلِیۡمِ ﴿۹۶﴾
তিনিই রাতের আবরণ বিদীর্ণ করে রঙ্গিন প্রভাতের উন্মেষকারী, তিনিই রাতকে বিশ্রামকাল এবং সূর্য ও চাঁদকে সময়ের নিরূপক করে দিয়েছেন; এটা হচ্ছে সেই পরম পরাক্রান্ত ও সর্ব পরিজ্ঞাতার (আল্লাহর) নির্ধারণ।

وَ ہُوَ الَّذِیۡ جَعَلَ لَکُمُ النُّجُوۡمَ لِتَہۡتَدُوۡا بِہَا فِیۡ ظُلُمٰتِ الۡبَرِّ وَ الۡبَحۡرِ ؕ قَدۡ فَصَّلۡنَا الۡاٰیٰتِ لِقَوۡمٍ یَّعۡلَمُوۡنَ ﴿۹۷﴾

আর তিনিই তোমাদের জন্য নক্ষত্ররাজিকে সৃষ্টি করেছেন, যেন তোমরা ওগুলির সাহায্যে অন্ধকারে পথের সন্ধান পেতে পার স্থল ভাগে এবং সমুদ্রে। নিশ্চয়ই আমি প্রমাণসমূহ বিশদভাবে বর্ণনা করে দিয়েছি ঐ সমস্ত লোকের জন্য যারা জ্ঞান রাখে।

৯৫-৯৭ নং আয়াতের তাফসীর:
তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ বলেছেন:-
এ আয়াতগুলোতে আল্লাহ তা‘আলার রুবুবিয়্যাহ (স্রষ্টা ও প্রতিপালক) সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে।

الْحَبُّ হল বীজ, وَالنَّوٰي হল খেজুরের আঁটি। এসব প্রাণহীন বীজ ও আঁটি বিদীর্ণ করে আল্লাহ তা‘আলা জীবিত শস্য উৎপন্ন করেন। মৃত্যু থেকে জীবিত করা, জীবিত বস্তুকে মৃত্যুদান করার ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহ তা‘আলারই। অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(وَاٰيَةٌ لَّهُمُ الْأَرْضُ الْمَيْتَةُ أَحْيَيْنٰهَا وَأَخْرَجْنَا مِنْهَا حَبًّا فَمِنْهُ يَأْكُلُوْنَ) ‏

“আর তাদের জন্য একটি নিদর্শন মৃত জমিন। আমি তাকে সজীব করি এবং তা থেকে উৎপন্ন করি শস্য, ফলে তা থেকে তারা খেয়ে থাকে।”(সূরা ইয়াসীন ৩৬:৩৩)

এ ছাড়াও আল্লাহ তা‘আলা দিন-রাত, চন্দ্র-সূর্য সব কিছু সৃষ্টি করেছেন মানুষের কল্যাণে। আর তারকা সৃষ্টি করেছেন তিনটি উদ্দেশ্যে:

১. পৃথিবীর আকাশ সৌন্দর্য্য মণ্ডিত করার জন্য। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(وَلَقَدْ زَيَّنَّا السَّمَا۬ءَ الدُّنْيَا بِمَصَابِيْحَ)

“আমি নিকটবর্তী আকাশকে সুশোভিত করেছি প্রদীপমালা (তারকারাজী) দ্বারা”(সূরা মুলক ৬৭:৩)

২. শয়তানের জন্য ক্ষেপণাস্ত্রস্বরূপ। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(وَجَعَلْنٰهَا رُجُوْمًا لِّلشَّيٰطِيْنِ)

“আর ওগুলোকে শয়তানদের প্রহার করার উপকরণ করেছি”(সূরা মুলক ৬৭:৩)
৩. অন্ধকার রাতে পথ প্রদর্শনের জন্য। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(وَهُوَ الَّذِيْ جَعَلَ لَكُمُ النُّجُوْمَ لِتَهْتَدُوْا بِهَا فِيْ ظُلُمٰتِ الْبَرِّ وَالْبَحْرِ ط قَدْ فَصَّلْنَا الْاٰيٰتِ لِقَوْمٍ يَّعْلَمُوْنَ)‏

“তিনিই তোমাদের জন্য নক্ষত্র সৃষ্টি করেছেন যেন তার দ্বারা স্থলের ও সমুদ্রের অন্ধকারে তোমরা পথ পাও। জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্য আমি তো নিদর্শন বিশদভাবে বর্ণনা করেছি।”(সূরা আন্‘আম ৬:৯৭)

এ তিনটি কাজ ছাড়া যদি মনে করা হয় বৃষ্টি বর্ষণ বা পার্থিব কর্মকাণ্ডে এ তারকারাজির প্রভাব রয়েছে তাহলে তা শির্ক বলে গণ্য হবে।

আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:

১. তাওহীদে রুবুবিয়্যার প্রমাণ পেলাম।
২. আল্লাহ তা‘আলা সব কিছু সৃষ্টি করেছেন মানুষের উপকারের জন্য।
৩. তারকা সৃষ্টির উদ্দেশ্য জানতে পারলাম।
৪. তারকা দ্বারা বৃষ্টি প্রার্থনা করা, বৃষ্টি প্রদানকারী মনে করা বা পার্থিব কর্মকাণ্ডে এ তারকারাজির প্রভাব রয়েছে- এ জাতীয় বিশ্বাস করা শির্ক।

English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Sura Anam
Verses :- 95-97

إِنَّ اللّهَ فَالِقُ الْحَبِّ وَالنَّوَى

Verily! It is Allah Who causes the seed grain and the fruit stone to split and sprout.
Recognizing Allah Through Some of His Ayat

Allah

إِنَّ اللّهَ فَالِقُ الْحَبِّ وَالنَّوَى

Verily! It is Allah Who causes the seed grain and the fruit stone to split and sprout.

Allah states that He causes the seed grain and the fruit stone to split and sprout in the ground, producing various types, colors, shapes, and tastes of grains and produce.

The Ayah,
فَالِقُ الْحَبِّ وَالنَّوَى
(Who causes the seed grain and the fruit stone to split and sprout) is explained by the next statement,

يُخْرِجُ الْحَيَّ مِنَ الْمَيِّتِ وَمُخْرِجُ الْمَيِّتِ مِنَ الْحَيِّ

He brings forth the living from the dead, and it is He Who brings forth the deed from the living.

meaning, He brings the living plant from the seed grain and the fruit stone, which is a lifeless and inanimate object.

Allah said,

وَايَةٌ لَّهُمُ الاْاَرْضُ الْمَيْتَةُ أَحْيَيْنَاهَا وَأَخْرَجْنَا مِنْهَا حَبًّا فَمِنْهُ يَأْكُلُونَ

And a sign for them is the dead land. We gave it life, and We brought forth from it grains, so that they eat thereof. (36:33) until,
وَمِنْ أَنفُسِهِمْ وَمِمَّا لَا يَعْلَمُونَ
(as well as of their own (human) kind (male and female), and of that which they know not. (36:36)

Allah’s statement,
وَمُخْرِجُ الْمَيِّتِ مِنَ الْحَيِّ
(and it is He Who brings forth the dead from the living).

There are similar expressions in meaning such as, He brings the egg from the chicken, and the opposite.

Others said that it means, He brings the wicked offspring from the righteous parent and the opposite, and there are other possible meanings for the Ayah.

Allah said,

ذَلِكُمُ اللّهُ

Such is Allah,

meaning, He Who does all this, is Allah, the One and Only without partners,

فَأَنَّى تُوْفَكُونَ

then how are you deluded away from the truth.

meaning, look how you are deluded from Truth to the falsehood of worshipping others besides Allah.

Allah’s statement

فَالِقُ الاِصْبَاحِ وَجَعَلَ اللَّيْلَ سَكَنًا

(He is the) Cleaver of the daybreak. He has appointed the night for resting,

means, He is the Creator of light and darkness.

Allah said in the beginning of the Surah,
وَجَعَلَ الظُّلُمَاتِ وَالنُّورَ
(And originated the darkness and the light).

Indeed, Allah causes the darkness of the night to disappear and brings forth the day, thus bringing brightness to the world and light to the horizon, while dissipating darkness and ending the night with its depth of darkness and starting the day with its brightness and light.

Allah said,

يُغْشِى الَّيْلَ النَّهَارَ يَطْلُبُهُ حَثِيثًا

He brings the night as a cover over the day, seeking it rapidly. (7:54)

In this Ayah, Allah reminds of His ability to create diversified things in opposites, testifying to His perfect greatness and supreme power. Allah states that He is the Cleaver of the daybreak and mentioned its opposite, when He said,
وَجَعَلَ اللَّيْلَ سَكَنًا
(He has appointed the night for resting), meaning, created darkness, in order for the creation to become halt and rest during it.

Allah said in other Ayat,

وَالضُّحَى

وَالَّيْلِ إِذَا سَجَى

By the forenoon. And by the night when it is still. (93:1-2)

وَالَّيْلِ إِذَا يَغْشَى

وَالنَّهَارِ إِذَا تَجَلَّى

By the night as it envelops. And by the day as it appears in brightness. (92:1,2)

and,

وَالنَّهَارِ إِذَا جَلَّـهَا

وَالَّيْلِ إِذَا يَغْشَـهَا

And by the day as it shows up (the sun’s) brightness. And by the night as it conceals it. (91:3-4)

Allah’s statement,

وَالشَّمْسَ وَالْقَمَرَ حُسْبَانًا
And the sun and the moon for reckoning.

means, the sun and the moon have specific orbits, according to a term appointed with magnificent precision that never changes or alters. Both the sun and the moon have distinct positions that they assume in summer and winter, effecting changes in the length of night and day.

Allah said in other Ayat,

هُوَ الَّذِى جَعَلَ الشَّمْسَ ضِيَأءً وَالْقَمَرَ نُوراً وَقَدَّرَهُ مَنَازِلَ

It is He Who made the sun a shining thing and the Moon as a light and measured out stages for it. (10:5)

لَا الشَّمْسُ يَنبَغِى لَهَأ أَن تدْرِكَ القَمَرَ وَلَا الَّيْلُ سَابِقُ النَّهَارِ وَكُلٌّ فِى فَلَكٍ يَسْبَحُونَ

It is not for the sun to overtake the moon, nor does the night outstrip the day. They all float, each in an orbit. (36:40)

And,

وَالشَّمْسَ وَالْقَمَرَ وَالنُّجُومَ مُسَخَّرَتٍ بِأَمْرِهِ

The sun and the moon; and the stars are subjected by His command. (16:12)

Allah’s statement,

ذَلِكَ تَقْدِيرُ الْعَزِيزِ الْعَلِيمِ

Such is the measuring of the Almighty, the All-Knowing.

means, all of this occurs according to the decree and due measurement of the Almighty Who is never resisted or contradicted. He is the Knower of all things and nothing ever escapes His knowledge, not even the weight of an atom on earth or in heavens.

Allah often mentions the creation of the night, the day, the sun and the moon and then ends His Speech by mentioning His attributes of power and knowledge, as in this Ayah above (6:96), and in His statement,

وَءَايَةٌ لَّهُمُ الَّيْلُ نَسْلَخُ مِنْهُ النَّهَارَ فَإِذَا هُم مُّظْلِمُونَ

وَالشَّمْسُ تَجْرِى لِمُسْتَقَرٍّ لَّهَـا ذَلِكَ تَقْدِيرُ الْعَزِيزِ الْعَلِيمِ

And a sign for them is the night, We withdraw there from the day, and behold, they are in darkness. And the sun runs on its fixed course for a term. That is the decree of the Almighty, the All-Knowing. (36:37-38)

In the beginning of Surah Ha-Mim As-Sajdah, after mentioning the creation of the heavens and earth and all that is in them, Allah said:

وَزَيَّنَّا السَّمَأءَ الدُّنْيَا بِمَصَـبِيحَ وَحِفْظاً ذَلِكَ تَقْدِيرُ الْعَزِيزِ الْعَلِيمِ

And We adorned the nearest (lowest) heaven with lamps (stars) to be an adornment as well as to guard. Such is the decree of Him, the Almighty, the All-Knower. (41:12)

Allah said next

وَهُوَ الَّذِي جَعَلَ لَكُمُ النُّجُومَ لِتَهْتَدُواْ بِهَا فِي ظُلُمَاتِ الْبَرِّ وَالْبَحْرِ

It is He Who has set the stars for you, so that you may guide your course with their help through the darkness of the land and the sea.

Some of the Salaf said;

Whoever believes in other than three things about these stars, then he has made a mistake, and lied against Allah. Indeed Allah made them as decorations for the heavens, and to shoot at the Shayatin, and for directions in the dark recesses of the land and sea.

Then, Allah said,

قَدْ فَصَّلْنَا الايَاتِ

We have explained in detail Our Ayat,

meaning, We made them clear and plain,

لِقَوْمٍ يَعْلَمُونَ

for people who know.

who have sound minds and are able to recognize the truth and avoid falsehood.

তাফসীরে ইবনে ‌কাসীর বলেছেন:-

৯৫-৯৭ নং আয়াতের তাফসীর:

আল্লাহ পাক সংবাদ দিচ্ছেন যে, তিনি যমীনের বপনকৃত দানাকে উপরে এনে চৌচির করে দেন এবং তার থেকে বিভিন্ন প্রকারের সজি ও বর্ধনশীল উদ্ভিদ পয়দা করেন। ওগুলোর রং পৃথক, আকৃতি এবং ডাটা পৃথক। (আরবী)-এর তাফসীরে বলা হয়েছে যে, তিনি একটা প্রাণহীন জিনিসের মধ্য থেকে একটা প্রাণযুক্ত জিনিস অর্থাৎ উদ্ভিদ সৃষ্টি করে থাকেন এবং জীবন্ত জিনিস থেকে নির্জীব জিনিস পয়দা করেন। যেমন বীজ ও দানা যা হচ্ছে নির্জীব জিনিস, এটা তিনি জীবন্ত উদ্ভিদ থেকে পয়দা করে থাকেন। যেমন তিনি বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “তাদের জন্যে একটি নিদর্শন হচ্ছে নির্জীব যমীন, আমি ওকে সঞ্জীবিত করেছি এবং তা থেকে শস্য উৎপন্ন করেছি, ফলে তারা তা থেকে আহার করে থাকে।” (৩৬৪ ৩৩)।

(আরবী) -এটা -এর উপর সংযুক্ত। তারপর এর তাফসীর করা হয়েছে। অতঃপর (আরবী)-কে এর উপর সংযোগ স্থাপন করা হয়েছে। এই সবগুলোরই অর্থ প্রায় একই। কেউ কেউ বলেন যে, এর দ্বারা প্রাণহীন ডিম হতে জীবন্ত মুরগী পয়দা করা বুঝানো হয়েছে। কিংবা এর বিপরীত। আবার কেউ কেউ বলেন যে, এর অর্থ হচ্ছে পাপাচারের ঔরষে সৎ সন্তানের জন্মলাভ এবং সৎ ব্যক্তির ঔরষে পাপাচার ছেলের জন্মলাভ। কেননা, সৎ ব্যক্তি জীবিতের সাথে তুলনীয় এবং পাপী লোক মৃতের সাথে তুলনীয়। এ ছাড়া আরও বহু অর্থ হতে পারে।

আল্লাহ পাক বলেনঃ এ সবকিছু আল্লাহই করে থাকেন যিনি হচ্ছেন এক, যার কোন অংশীদার নেই। তাহলে তোমরা বিভ্রান্ত হয়ে কোন দিকে যাচ্ছ? সত্য থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছ কেন? আল্লাহ ছাড়া তোমাদের অন্য কারও ইবাদত করার কারণ কি? আলো ও অন্ধকারের সৃষ্টিকর্তা তো তিনিই। যেমন তিনি অত্র সূরার শুরুতেই বলেছেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “তিনিই অন্ধকার ও আললা বানিয়েছেন।” (৬:১) অর্থাৎ তিনি দিনের আলোকের মধ্য থেকে রাতের অন্ধকারকেও বের করেছেন, আবার তিনি রাতের মধ্য থেকে দিনের আলোকে বের করেছেন যা সারা প্রান্তকে উজ্জ্বলময় করে দিয়েছে। রাত্রি শেষে অন্ধকার দূরীভূত হয় এবং উজ্জ্বল দিন প্রকাশিত হয়। যেমন মহান আল্লাহ বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “রাত্রি দিনকে ঢেকে ফেলে।” (৭:৫৪) এইভাবে মহান আল্লাহ পরস্পর বিপরীতমুখী জিনিসগুলো সৃষ্টি করে স্বীয় ব্যাপক ক্ষমতার পরিচয় দিয়েছেন। এজন্যেই তিনি বলেন যে, তিনি রাতের মধ্য থেকে দিনকে ফেড়ে বের করে থাকেন। রাতকে তিনি বিশ্রামকাল করেছেন যেন সমুদয় জিনিস অতে শান্তি ও আরাম লাভ করতে পারে। যেমন তিনি বলেছেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “কসম দিনের আলোকের এবং রাত্রির, বন তা প্রশান্ত হয়।” (৯৩:১-২) তিনি আরও বলেছেনঃ (আরবী)
অর্থাৎ “শপথ রাত্রির যখন ওটা (সূর্যকে) আচ্ছন্ন করে ফেলে, আর দিবসের যখন ওটা আলোকিত হয়ে পড়ে।” (৯২:১-২) মহান আল্লাহ আর এক জায়গায় বলেছেনঃ (আরবী) অর্থাৎ ‘কসম দিবসের যখন ওটা ওকে ভালরূপে আলোকিত করে এবং কসম রাত্রির যখন ওটা ওকে সমাচ্ছন্ন করে।” (৯১:৩-৪)।

হযরত সুহাইব রূমী (রাঃ)-এর স্ত্রী তাঁর অধিক রাত্রি জাগরণের অভিযোগ করে বলেনঃ “আল্লাহ তা’আলা সবারই জন্যে রাত্রিকে বিশ্রামকাল ও আরামের সময় বানিয়েছেন বটে, কিন্তু সুহাইব (রাঃ)-এর জন্যে নয়। কেননা, যখন তার জান্নাতের কথা স্মরণ হয় তখন তিনি ওর আগ্রহাতিশয্যে সারা রাত শয়নই করেন না। বরং সারা রাত্রি ধরে ইবাদতে মগ্ন থাকেন। আবার যখন তার জাহান্নামের কথা স্মরণ হয় তখন তার দ্রিাই উড়ে যায়।” (এই হাদীসটি ইবনে আবি হাতিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন) মহান আল্লাহ বলেনঃ “সূর্য ও চন্দ্র নিজ নিজ রীতিনীতি ও নিয়ম শৃংখলার উপর চলতে রয়েছে। ওদের গতির নিয়মের মধ্যে অণু পরিমাণও পরিবর্তন ঘটে না, ওগুলো এদিক ওদিক চলে যায় না, বরং প্রত্যেকটির কক্ষপথ নির্ধারিত রয়েছে। গ্রীষ্মকালে ও শীতকালে ওরা নিজ নিজ কক্ষপথে চলতে রয়েছে। এই শৃংখলিত নিয়মের ফলেই দিন রাত্রি কমতে ও বাড়তে রয়েছে। যেমন আল্লাহ পাক বলেনঃ “তিনিই সেই আল্লাহ যিনি সূর্যকে দীপ্তিময় বানিয়েছেন এবং চন্দ্রকে কোমল আলো দান করেছেন এবং হ্রাস বৃদ্ধির মনযিল নির্ধারণ করেছেন। যেমন তিনি বলেনঃ “সূর্যের সাধ্য নেই যে চন্দ্রকে ধরে নিবে, আর না রাত্রি দিবসের পূর্বে আসতে পারবে এবং প্রত্যেকেই এক একটি চক্রের মধ্যে সন্তরণ করতে রয়েছে। তিনি আরও বলেনঃ “সূর্য, চন্দ্র ও তারকারাজি তাঁর আদেশ পালনে সদা নিয়োজিত রয়েছে। আল্লাহ পাক আরও বলেছেনঃ “এটা তারই নির্ধারিত পরিমাণ, যিনি মহা পরাক্রান্ত, জ্ঞানময়। কেউ তার বিরুদ্ধাচরণ করতে পারে না। কেউই তাঁর অগোচরে থাকতে সক্ষম নয়, সেটা যমীন আসমানের অণু পরিমাণই জিনিস হোক না কেন।

আল্লাহ তা’আলা যেখানেই রাত্রি ও দিন এবং সূর্য ও চন্দ্রের সৃষ্টির কথা বর্ণনা করেছেন সেখানেই তিনি বাক্যকে (আরবী) শব্দ দ্বারাই শেষ করেছেন। যেমন এখানেও ঐ নিয়মের ব্যক্তিক্রম ঘটেনি।

মহান আল্লাহ বলেনঃ “তাদের জানবার পক্ষে রাত্রিও একটা নিদর্শন যে, ওর মধ্য থেকে আমি দিনকে অপসারণ করি, তৎক্ষণাৎ তারা অন্ধকারের মধ্যে থেকে যায়। আর সূর্যও স্বীয় গতিপথে চলতে রয়েছে এবং স্বীয় নির্ধারিত কক্ষের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এটা সেই মহা পরাক্রান্ত ও জ্ঞানময়েরই নির্ধারিত পরিমাপ এবং মাপকাঠি।” মহান আল্লাহ (আরবী) সূরার প্রথমভাগে যমীন, আসমান এবং এতদুভয়ের মধ্যবর্তী বস্তুসমূহের সৃষ্টি সম্পর্কে বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “আমি এই নিকটবর্তী আসমানকে নক্ষত্ররাজি দ্বারা সুশোভিত করেছি এবং ওকে সুরক্ষিত করেছি, এটা মহাপরাক্রান্ত, মহাজ্ঞানীর নিয়ন্ত্রণ।” (৪১৪১২)।

আল্লাহ পাকের উক্তিঃ তিনি তোমাদের জন্যে নক্ষত্ররাজি সৃষ্টি করেছেন-যেন তোমরা ওগুলোর সাহায্যে অন্ধকারে পথের সন্ধান পেতে পার, স্থলভাগেও এবং সমুদ্রেও।

আল্লাহ তাআলা বলেন যে, এই তারকাগুলো এক তো হচ্ছে আকাশের সৌন্দর্য, দ্বিতীয়তঃ এগুলো দ্বারা শয়তানদেরকে প্রহার করা হয় এবং তৃতীয়তঃ এগুলোর মাধ্যমে স্থলভাগ ও সমুদ্রের অন্ধকারে পথ চেনা যায়। পূর্ববর্তী গুরুজনদের কেউ কেউ বলেছেন যে, তারকারাজি সৃষ্টির মধ্যে শুধুমাত্র তিনটি উদ্দেশ্যই নিহিত রয়েছে। এছাড়া অন্য কোন উদ্দেশ্য নেই। যদি কেউ মনে করেন যে, এই তিনটি উদ্দেশ্য ছাড়া আরো উদ্দেশ্য রয়েছে তবে তিনি ভুল বুঝেছেন এবং কুরআনের আয়াতের উপর বাড়াবাড়ি করেছেন। এরপর মহান আল্লাহ বলেনঃ আমি প্রমাণসমূহ খুব বিশদভাবে বর্ণনা করে দিয়েছি, যাতে লোকেরা কিছু জ্ঞান লাভ করতে পারে এবং সত্য ও ন্যায়কে চিনে নিয়ে অসত্য ও অন্যায়কে পরিহার করে।

তাফসীরে আবুবকর ‌যাকারিয়া‌ বলেছেন:-

[১] অর্থাৎ আল্লাহ্ তা’আলাই মৃত বস্তু থেকে জীবিত বস্তু সৃষ্টি করেন। মৃত বস্তু যেমন, বীর্য ও ডিম- এগুলো থেকে মানুষ ও জন্তু-জানোয়ার সৃষ্টি হয়, এমনিভাবে তিনি জীবিত বস্তু থেকে মৃত বস্তু বের করে দেন- যেমন, বীর্য ও ডিম জীবিত বস্তু থেকে বের হয়। [জালালাইন; মুয়াসসার]

[২] এগুলো সব এক আল্লাহর কাজ। অতঃপর এ কথা জেনে-শুনে তোমরা কোন দিকে বিভ্রান্ত হয়ে ঘোরাফেরা করছ? তোমরা স্বহস্তে নির্মিত প্রতিমাকে বিপদ-বিদূরণকারী ও অভাব পূরণকারী উপাস্য বলতে শুরু করেছ। [মুয়াসসার]
[৩] (فالق) শব্দের অর্থ ফাঁককারী এবং (اصباح) শব্দের অর্থ এখানে প্রভাতকাল। (فَالِقُ الْاِصْبَاحِ) -এর অর্থ প্রভাতের ফাককারী; অর্থাৎ গভীর অন্ধকারের চাদর ফাক করে প্রভাতের উন্মেষকারী। [জালালাইন] এটিও এমন একটি কাজ, যাতে জ্বিন, মানব ও সমগ্র সৃষ্ট জীবের শক্তিই ব্যর্থ। প্রতিটি চক্ষুষ্মান ব্যক্তি এ কথা বুঝতে বাধ্য যে, রাত্রির অন্ধকারের পর প্রভাতরশ্মির উদ্ভাবক জ্বিন, মানব, ফিরিশ্‌তা অথবা অন্য কোন সৃষ্টজীব হতে পারে না, বরং এটি বিশ্বস্রষ্টা আল্লাহ্ তা’আলারই কাজ। তিনি ধীরে ধীরে অন্ধকার চিরে আলোর উন্মেষ ঘটান। সে আলোতে মানুষ তাদের জীবিকার জন্যে বের হতে পারে। [সা’দী]

[৪] অর্থাৎ আল্লাহ্ তা’আলা সূর্য ও চন্দ্রের উদয়-অস্ত এবং এদের গতিকে একটি বিশেষ হিসাবের অধীনে রেখেছেন। এর ফলে মানুষ বৎসর, মাস, দিন, ঘন্টা এমনকি মিনিট ও সেকেণ্ডের হিসাবও অতি সহজে করতে পারে। আল্লাহ্ তা’আলার অপার শক্তিই এসব উজ্জ্বল বিশাল গোলক ও এদের গতি-বিধিকে অটল ও অনড় নিয়মের অধীন করে দিয়েছে। হাজার হাজার বছরেও এদের গতি-বিধিতে এক মিনিট বা এক সেকেণ্ডের পার্থক্য হয় না। এ উজ্জ্বল গোলকদ্বয় নিজ নিজ কক্ষপথে নির্দিষ্ট গতিতে বিচরণ করছে। অন্যত্র আল্লাহ বলেন, “সূর্যের পক্ষে সম্ভব নয় চাদের নাগাল পাওয়া এবং রাতের পক্ষে সম্ভব নয় দিনকে অতিক্রমকারী হওয়া। আর প্রত্যেকে নিজ নিজ কক্ষপথে সাঁতার কাটে ” [সূরা ইয়াসীন: ৪০] পরিতাপের বিষয়, প্রকৃতির এ অটল ও অপরিবর্তনীয় ব্যবস্থা থেকেই মানুষ প্রতারিত হয়েছে। তারা এগুলোকেই স্বয়ংসম্পূর্ণ বরং উপাস্য ও উদ্দিষ্ট মনে করে বসেছে। যদি এ ব্যবস্থা মাঝে মাঝে অচল হয়ে যেত এবং কলকব্জা মেরামতের জন্য কয়েকদিন বা কয়েক ঘন্টার বিরতি দেখা দিত, তবে মানুষ বুঝতে পারত যে, এসব মেশিন আপনা আপনিই চলে না, বরং এগুলোর পরিচালক ও নির্মাতা আছে। আসমানী কিতাব, নবী ও রাসূলগণ এ সত্য উদঘাটন করার জন্যই প্রেরিত হন। কুরআনুল কারীমের এ বাক্য আরো ইঙ্গিত করেছে যে, বছর ও মাসের সৌর ও চান্দ্র উভয় প্রকার হিসাবই হতে পারে এবং উভয়টিই আল্লাহ্ তা’আলার নেয়ামত। এর মাধ্যমেই সময় ও কাল নির্ধারণ করা সম্ভব হয়েছে। এতে এক দিকে যেমন ইবাদতের সময় নির্ধারণ করা যায়, অপরদিকে এর মাধ্যমে লেন-দেনের সময়ও ঠিক রাখা যায়।
তাছাড়া কতটুকু সময় পার হয়েছে আর কতটুকু বাকী রয়েছে সেটা জানাও এ দুটোর কারণেই হয়ে থাকে। যদি এগুলো না থাকত, তবে এ সময় নির্ধারণের ব্যাপারটি সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে থাকত না। এর জন্য বিশেষ শ্রেণীর প্রয়োজন পড়ত। যাতে দ্বীন ও দুনিয়ার অনেক স্বার্থ হানি ঘটত। [সা’দী]

[৫] অর্থাৎ এ বিস্ময়কর অটল ব্যবস্থা- যাতে কখনো এক মিনিট ও এক সেকেণ্ড এদিকওদিক হয় না- এটি একমাত্র আল্লাহ তা’আলারই দুটি মহান গুণ অপরিসীম শক্তি ও অপার জ্ঞানের বহিঃপ্রকাশ। [মানার] এজন্যেই বাক্যের শেষে আল্লাহর দুটি গুণ বাচক নাম ‘পরাক্রমশালী, মহাজ্ঞানী’ উল্লেখ করা হয়েছে। তার অপার শক্তির কারণে সমস্ত কিছু তার অনুগত বাধ্য হয়েছে। আর তার পরিপূর্ণ জ্ঞানের কারণে কোন গোপন বা প্রকাশ্য সবকিছু তার আয়ত্বাধীন রয়েছে। সা’দী]

[৬] অর্থাৎ সূর্য ও চন্দ্র ছাড়া অন্যান্য নক্ষত্রও আল্লাহ্ তা’আলার অপরিসীম শক্তির বহিঃপ্রকাশ। এগুলো সৃষ্টি করার পিছনে যে হাজারো রহস্য রয়েছে, তন্মধ্যে একটি এই যে, স্থল ও জলপথে ভ্রমণ করার সময় রাত্রির অন্ধকারে যখন দিক নির্ণয় করা কঠিন হয়ে পড়ে, তখন মানুষ এসব নক্ষত্রের সাহায্যে পথ ঠিক করে নিতে পারে। [মুয়াসসার] অভিজ্ঞতা সাক্ষ্য দেয় যে, আজ বৈজ্ঞানিক কলকজার যুগেও মানুষ নক্ষত্রপুঞ্জের পথ প্রদর্শনের প্রতি অমুখাপেক্ষী নয়। এ আয়াতেও মানুষকে হুশিয়ার করা হয়েছে যে, এসব নক্ষত্রও কোন একজন নির্মাতা ও নিয়ন্ত্রকের নিয়ন্ত্রণাধীন বিচরণ করছে। এরা স্বীয় অস্তিত্ব, স্থায়িত্ব ও কর্মে স্বয়ং-সম্পূর্ণ নয়। যারা শুধু এদের প্রতিই দৃষ্টি নিবদ্ধ করে বসে আছে এবং নির্মাতার প্রতি দৃষ্টিপাত করে না, তারা অত্যন্ত সংকীর্ণমনা এবং আত্মপ্রবঞ্চিত।

[৭] অর্থাৎ আমি শক্তির প্রমাণাদি বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করে দিয়েছি বিজ্ঞজনদের জন্য। এতে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, যারা এসব সুস্পষ্ট নিদর্শন দেখেও আল্লাহকে চিনে না, তারা বেখবর ও অচেতন। কোন নিদর্শনই তাদের কাজে লাগে না। নবীদের বর্ণনাও তাদের কোন সন্দেহ দূর করতে পারে না। তাদের কাছে এসব বর্ণনা যত স্পষ্ট ও বিস্তারিতভাবেই আসুক না কেন, তারা এর দ্বারা উপকৃত হতে পারে না। [সাদী]

Leave a Reply