(Book# 114/٢٥٣)-৪৫৫ www.motaher21.net সুরা: আল-আনয়াম ১০৪-১০৫ নং আয়াত:- قَدۡ جَآءَکُمۡ بَصَآئِرُ مِنۡ رَّبِّکُمۡ ۚ এখন নিশ্চয়ই তোমাদের কাছে তোমাদের রবের পক্ষ হতে সত্য দর্শনের উপায়সমূহ পৌঁছেছে, Verily, Basa’ir (proofs) have come to you from your Lord,

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ

(Book# 114/٢٥٣)-৪৫৫
www.motaher21.net
সুরা: আল-আনয়াম
১০৪-১০৫ নং আয়াত:-

قَدۡ جَآءَکُمۡ بَصَآئِرُ مِنۡ رَّبِّکُمۡ ۚ

এখন নিশ্চয়ই তোমাদের কাছে তোমাদের রবের পক্ষ হতে সত্য দর্শনের উপায়সমূহ পৌঁছেছে,
Verily, Basa’ir (proofs) have come to you from your Lord,

قَدۡ جَآءَکُمۡ بَصَآئِرُ مِنۡ رَّبِّکُمۡ ۚ فَمَنۡ اَبۡصَرَ فَلِنَفۡسِہٖ ۚ وَ مَنۡ عَمِیَ فَعَلَیۡہَا ؕ وَ مَاۤ اَنَا عَلَیۡکُمۡ بِحَفِیۡظٍ ﴿۱۰۴﴾
এখন নিশ্চয়ই তোমাদের কাছে তোমাদের রবের পক্ষ হতে সত্য দর্শনের উপায়সমূহ পৌঁছেছে, অতএব যে ব্যক্তি নিজের গভীর দৃষ্টিতে অবলোকন করবে সে নিজেরই কল্যাণ সাধন করবে, আর যে অন্ধ থাকবে সে নিজেই ক্ষতিগ্রস্ত হবে, আর আমিতো তোমাদের প্রহরী নই।

وَ کَذٰلِکَ نُصَرِّفُ الۡاٰیٰتِ وَ لِیَقُوۡلُوۡا دَرَسۡتَ وَ لِنُبَیِّنَہٗ لِقَوۡمٍ یَّعۡلَمُوۡنَ ﴿۱۰۵﴾

এ রূপেই আমি নিদর্শনসমূহ প্রকাশ করি, যেন লোকেরা না বলে – তুমি কারও নিকট থেকে পাঠ করে নিয়েছ, আর যেন আমি একে বুদ্ধিমান লোকদের জন্য প্রকাশ করে দিই।

১০৪-১০৫ নং আয়াতের তাফসীর:
তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ বলেছেন:-

بَصَآئِرُ শব্দের অর্থ হল প্রমাণাদি ও নিদর্শনাবলী যা কুরআন মাজীদের মধ্যে রয়েছে এবং যা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিয়ে এসেছেন। সুতরাং যে ব্যক্তি এসব প্রমাণাদির (কুরআন ও সহীহ সুন্নাহর) অনুসরণ করল সে নিজেকে আলোর পথে নিয়ে আসল। যেমন আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন:

(مَنِ اهْتَدٰي فَإِنَّمَا يَهْتَدِيْ لِنَفْسِه)

“যে সৎ পথ অবলম্বন করবে সে তার নিজের মঙ্গলের জন্যই সৎ পথ অবলম্বন করবে।”(সূরা ইসরা ১৭:১৫)

আর যারা এসব প্রমাণাদি ও নিদর্শনাবলী গ্রহণে অন্ধ হবে তাদের কর্মের ফলাফল নিজেদের উপরেই বর্তাবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(وَمَنْ ضَلَّ فَإِنَّمَا يَضِلُّ عَلَيْهَا)

“এবং যে পথভ্রষ্ট হবে তার পথভ্রষ্টতা হবে নিজেরই ধ্বংসের জন্য।”(সূরা ইসরা ১৭:১৫)

(وَكَذٰلِكَ نُصَرِّفُ الْاٰيٰتِ)

আমি এভাবে নিদর্শনাবলী বিভিন্ন প্রকারে বর্ণনা করি।’অর্থাৎ যেমন আমি নিজের তাওহীদ তথা এককত্বের বর্ণনা দিয়েছি, তেমনি সকল নিদর্শনাবলী প্রত্যেক স্থানে কাফির মুশরিকদের জন্য বর্ণনা করে দিয়েছি তাদের অজ্ঞতার ও এ কথার প্রতিবাদস্বরূপ যে, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এসব কথা পূর্ববর্তী কিতাব থেকে শিখেছে। যেমন তাদের ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(وَقَالَ الَّذِیْنَ کَفَرُوْٓا اِنْ ھٰذَآ اِلَّآ اِفْکُ اۨفْتَرٰٿھُ وَاَعَانَھ۫ عَلَیْھِ قَوْمٌ اٰخَرُوْنَﹱ فَقَدْ جَا۬ءُوْ ظُلْمًا وَّزُوْرًاﭓﹱ وَقَالُوْٓا اَسَاطِیْرُ الْاَوَّلِیْنَ اکْتَتَبَھَا فَھِیَ تُمْلٰی عَلَیْھِ بُکْرَةً وَّاَصِیْلًاﭔ)‏

“কাফিরগণ বলে: ‘এটা মিথ্যা ব্যতীত কিছুই নয়, সে এটা উদ্ভাবন করেছে এবং ভিন্ন সম্প্রদায়ের লোক তাকে এ ব্যাপারে সাহায্য করেছে।’এরূপে তারা অবশ্যই জুলুম ও মিথ্যায় উপনীত হয়েছে। তারা বলে: ‘এগুলো তো সেকালের উপকথা, যা সে লিখিয়ে নিয়েছে; এগুলো সকাল-সন্ধ্যা তার নিকট পাঠ করা হয়।’ (সূরা ফুরকান ২৫:৪-৫)

(وَلِنُبَيِّنَه۫ لِقَوْمٍ يَّعْلَمُوْنَ)

‘কিন্তু আমি তো সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করি জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্য।’অর্থাৎ এসব নিদর্শনাবলী ও প্রমাণাদি সুস্পষ্টভাবে জাতির জন্য বর্ণনা করে দেই যাতে তারা সত্য জেনে তা অনুসরণ করে আর বাতিল জেনে বর্জন করে।

আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:

১. সত্য সুস্পষ্ট। তাই সত্য বিমুখ তারাই হয় যারা দুর্ভাগা।
২. সত্য-মিথ্যা পার্থক্যের জন্য আল্লাহ তা‘আলা সবকিছুকে সবিস্তারিত বর্ণনা করে দিয়েছেন।

English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Sura Anam
Verses :- 104-105
قَدۡ جَآءَکُمۡ بَصَآئِرُ مِنۡ رَّبِّکُمۡ ۚ
Verily, Basa’ir (proofs) have come to you from your Lord,

The Meaning of Basa’ir

Allah says;

قَدْ جَاءكُم بَصَأيِرُ مِن رَّبِّكُمْ فَمَنْ أَبْصَرَ فَلِنَفْسِهِ وَمَنْ عَمِيَ فَعَلَيْهَا

Verily, Basa’ir (proofs) have come to you from your Lord, so whosoever sees, will do so for (the good of) himself, and whosoever blinds himself, will do so against himself,
Basa’ir are the proofs and evidences in the Qur’an and the Message of Allah’s Messenger.

The Ayah,
فَمَنْ أَبْصَرَ فَلِنَفْسِهِ
(so whosoever sees, will do so for (the good of) himself) is similar to,

فَمَنُ اهْتَدَى فَإِنَّمَا يَهْتَدِى لِنَفْسِهِ وَمَن ضَلَّ فَإِنَّمَا يَضِلُّ عَلَيْهَا

So whosoever receives guidance, he does so for the good of himself, and whosoever goes astray, he does so at his own loss. (10:108)

After Allah mentioned the Basa’ir, He said,
وَمَنْ عَمِيَ فَعَلَيْهَا
(And whosoever blinds himself, will do so against himself),

meaning, he will only harm himself.

Allah said,

فَإِنَّهَا لَا تَعْمَى الاٌّبْصَـرُ وَلَـكِن تَعْمَى الْقُلُوبُ الَّتِى فِى الصُّدُورِ

Verily, it is not the eyes that grow blind, but it is the hearts which are in the breasts that grow blind. (22:46)

وَمَا أَنَاْ عَلَيْكُم بِحَفِيظٍ

And I (Muhammad) am not a Hafiz over you.

neither responsible, nor a watcher over you. Rather, I only convey, Allah guides whom He wills and misguides whom He wills.

Allah said

وَكَذَلِكَ نُصَرِّفُ الايَاتِ

Thus We explain variously the verses…,

meaning, just as We explained the Ayat in this Surah, such as explaining Tawhid and that there is no deity worthy of worship except Allah. This is how We explain the Ayat and make them plain and clear in all circumstances, to suffice the ignorance of the ignorant; and so that the idolators and disbelievers who deny you say, `O Muhammad! You have Darasta with those who were before you from among the People of the Book and learned with them’.

وَلِيَقُولُواْ دَرَسْتَ
so that they (the disbelievers) may say:”You have Darasta (studied),”

Ibn Abbas, Mujahid, Sa`id bin Jubayr and Ad-Dahhak said similarly.

At-Tabarani narrated that `Amr bin Kaysan said that he heard Ibn Abbas saying,

“Darasta, means, `recited, argued and debated.”‘

This is similar to Allah’s statement about the denial and rebellion of the disbelievers,

وَقَالَ الَّذِينَ كَفَرُواْ إِنْ هَـذَا إِلاَّ إِفْكٌ افْتَرَاهُ وَأَعَانَهُ عَلَيْهِ قَوْمٌ ءَاخَرُونَ فَقَدْ جَأءُوا ظُلْماً وَزُوراً

وَقَالُواْ أَسَـطِيرُ الاٌّوَّلِينَ اكْتَتَبَهَا فَهِىَ تُمْلَى عَلَيْهِ بُكْرَةً وَأَصِيلً

Those who disbelieve say, “This (the Qur’an) is nothing but a lie that he has invented, and others have helped him at it, so that they have produced an unjust wrong (thing) and a lie.”

And they say, “Tales of the ancients, which he has written down, and they are dictated to him morning and afternoon.” (25:4-5)

Allah described the chief liar of the disbelievers (Al-Walid bin Al-Mughirah Al-Makhzumi),

إِنَّهُ فَكَّرَ وَقَدَّرَ

فَقُتِلَ كَيْفَ قَدَّرَ

ثُمَّ قُتِلَ كَيْفَ قَدَّرَ

ثُمَّ نَظَرَ

ثُمَّ عَبَسَ وَبَسَرَ

ثُمَّ أَدْبَرَ وَاسْتَكْبَرَ

فَقَالَ إِنْ هَـذَا إِلاَّ سِحْرٌ يُوْثَرُ

إِنْ هَـذَا إِلاَّ قَوْلُ الْبَشَرِ

Verily, he thought and plotted. So let him be cursed! How he plotted! And once more let him be cursed, how he plotted! Then he thought. Then he frowned and he looked in a bad tempered way. Then he turned back and was proud. Then he said, “This is nothing but magic from that of old. This is nothing but the word of a human being!” (74:18-25)

Allah said next,

وَلِنُبَيِّنَهُ لِقَوْمٍ يَعْلَمُونَ

And that We may make the matter clear for the people who have knowledge.

The Ayah means, so that We explain the matter to a people who know truth, and thus follow it, and know falsehood, and thus avoid it. Allah’s wisdom is perfect, He allows the disbelievers to stray, and He guides the people who have knowledge.

Allah said in other Ayat,

يُضِلُّ بِهِ كَثِيرًا وَيَهْدِي بِهِ كَثِيرًا

By it He misleads many, and many He guides thereby. (2:26)

and;

لِّيَجْعَلَ مَا يُلْقِى الشَّيْطَـنُ فِتْنَةً لِّلَّذِينَ فِى قُلُوبِهِم مَّرَضٌ وَالْقَاسِيَةِ قُلُوبُهُمْ

That He (Allah) may make what is thrown in by Shaytan a trial for those in whose hearts is a disease and whose hearts are hardened. (22:53)

and,

وَإِنَّ اللَّهَ لَهَادِ الَّذِينَ ءَامَنُواْ إِلَى صِرَطٍ مُّسْتَقِيمٍ

And verily, Allah is the Guide of those who believe, to the straight path. (22:54)

وَمَا جَعَلْنَأ أَصْحَـبَ النَّارِ إِلاَّ مَلَـيِكَةً وَمَا جَعَلْنَا عِدَّتَهُمْ إِلاَّ فِتْنَةً لِّلَّذِينَ كَفَرُواْ لِيَسْتَيْقِنَ الَّذِينَ أُوتُواْ الْكِتَـبَ وَيَزْدَادَ الَّذِينَ ءَامَنُواْ إِيمَـناً وَلَا يَرْتَابَ الَّذِينَ أُوتُواْ الْكِتَـبَ وَالْمُوْمِنُونَ وَلِيَقُولَ الَّذِينَ فِى قُلُوبِهِم مَّرَضٌ وَالْكَـفِرُونَ مَاذَا أَرَادَ اللَّهُ بِهَـذَا مَثَلً كَذَلِكَ يُضِلُّ اللَّهُ مَن يَشَأءُ وَيَهْدِى مَن يَشَأءُ وَمَا يَعْلَمُ جُنُودَ رَبِّكَ إِلاَّ هُوَ

And We have set none but angels as guardians of the Fire, and We have fixed their number only as a trial for the disbelievers, in order that the People of the Scripture may arrive at a certainty and the believers may increase in faith, and that no doubts may be left for the People of the Scripture and the believers, and that those in whose hearts is a disease (of hypocrisy) and the disbelievers may say, “What does Allah intend by this example!”

Thus Allah leads astray whom He wills and guides whom He wills. And none can know the hosts of your Lord but He. (74:31)

and;

وَنُنَزِّلُ مِنَ الْقُرْءَانِ مَا هُوَ شِفَأءٌ وَرَحْمَةٌ لِّلْمُوْمِنِينَ وَلَا يَزِيدُ الظَّـلِمِينَ إَلاَّ خَسَارًا

And We send down in the Qur’an that which is a healing and a mercy to the believers, and it increases the wrongdoers in nothing but loss. (17:82)

and,

قُلْ هُوَ لِلَّذِينَ ءَامَنُواْ هُدًى وَشِفَأءٌ وَالَّذِينَ لَا يُوْمِنُونَ فِى ءَاذَانِهِمْ وَقْرٌ وَهُوَ عَلَيْهِمْ عَمًى أُوْلَـيِكَ يُنَادَوْنَ مِن مَّكَانٍ بَعِيدٍ

Say, “It is for those who believe, a guide and a healing. And as for those who disbelieve, there is heaviness in their ears, and it is blindness for them. They are those who are called from a place far away.” (41:44)

There are similar Ayat that testify that Allah sent down the Qur’an as guidance to those who fear Him and that He guides or misguides whom He wills by the Qur’an.

তাফসীরে ইবনে ‌কাসীর বলেছেন:-
১০৪-১০৫ নং আয়াতের তাফসীর:

(আরবী) শব্দের অর্থ হচ্ছে দলীল প্রমাণাদি এবং নিদর্শনাবলী যা কুরআন মাজীদের মধ্যে রয়েছে এবং যা রাসূলুল্লাহ (সঃ) পেশ করেছেন। সুতরাং যে ব্যক্তি এগুলো অনুযায়ী কাজ করলো সে নিজেরই উপকার সাধন করলো। যেমন আল্লাহ পাক বলেনঃ “যে ব্যক্তি হিদায়াত গ্রহণ করবে সে তার নিজের উপকারের জন্যে করবে, আর যে পথভ্রষ্ট হবে তার পথভ্রষ্টতার শাস্তি তার নিজের উপরই বর্তিত হবে।” এজন্যেই এখানে মহান আল্লাহ বলেন, যে অন্ধ থাকবে সে নিজেই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। যেমন তিনি অন্য জায়গায় বলেনঃ “তাদের চক্ষু অন্ধ হয় না, বরং তাদের অন্তরগুলো অন্ধ হয়ে থাকে।” আল্লাহ পাক স্বীয় রাসূল (সঃ)-কে বলেনঃ হে রাসূল (সঃ)! তুমি তাদেরকে বলে দাও-আমি তো তোমাদের প্রহরী নই। আমি শুধুমাত্র একজন প্রচারক। হিদায়াতের মালিক তো আল্লাহ। তিনি যাকে চান হিদায়াত করেন এবং যাকে ইচ্ছা করেন পথভ্রষ্ট করেন।

ইরশাদ হচ্ছে- এরূপেই আমি নিদর্শনসমূহ বিভিন্ন ধারায় বর্ণনা করে থাকি। যেমন তিনি এই সূরায় একত্ববাদের বর্ণনা করেছেন এবং এর উপর ভিত্তি করেও যে, মুশরিক ও কাফিররা বলে-হে মুহাম্মাদ (সঃ)! আপনি এইসব কথা পূর্ববর্তী কিতাবগুলো হতে নকল করেছেন এবং ওগুলো শিখে নিয়েই আমাদেরকে শুনাচ্ছেন। (এটা ইবনে আব্বাস (রাঃ), মুজাহিদ (রঃ), সাঈদ ইবনে জুবাইর (রঃ), যহহাক (রঃ) এবং অন্যান্যদের উক্তি)

হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, (আরবী) শব্দের অর্থ (আরবী) অর্থাৎ ‘আপনি পাঠ করেছেন। তাদের এ কথাগুলো তর্ক বিতর্ক ও ঝগড়ার স্থলে ছিল। যেমন আল্লাহ তা’আলা ঐ কাফিরদের মিথ্যা অপবাদ ও বিরোধিতার সংবাদ দিয়ে বলেনঃ “কাফিররা বলে-এটা তো বানানো মিথ্যা কথা এবং অন্যান্যরাও এই কুরআন তৈরী করতে সাহায্য করেছে। এটাই বড়ই অত্যাচার ও মিথ্যা প্রতিপন্ন। করার কথা। তারা বলে- এটা তো পূর্ববর্তী লোকদের কথিত ও লিখিত কথা যা তিনিও (নবী সঃ) লিখে নিয়েছেন।” কাফিরদের মিথ্যা ধারণা সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেনঃ “সে চিন্তা করলো, তৎপর একটা মন্তব্য স্থির করলো? সুতরাং সে ধ্বংস হাক, কেমন মন্তব্য সে স্থির করল? অতঃপর সে দৃষ্টিপাত করলো। তৎপর মুখ বিকৃত করলো, আরও অধিক বিকৃত করলো। তৎপর সে মুখ ফিরিয়ে নিলো এবং গর্ব করলো। অনন্তর বললো- এটা তো নকল করা যাদু। এটা তো মানুষের উক্তি।”

আল্লাহ পাক বলেনঃ আমি একে জ্ঞানবান লোকদের জন্যে স্পষ্টভাবে বর্ণনা করে থাকি যারা সত্যকে জেনে নেয়ার পর ওর অনুসরণ করে থাকে এবং মিথ্যা ও অন্যায় কাজ থেকে বিরত থাকে। কাফিরদের পথভ্রষ্টতা এবং মুমিনদের সত্যকে স্বীকার করে নেয়ার মধ্যে আল্লাহ তাআলার কৌশল ও যৌক্তিকতা রয়েছে। যেমন আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ “তিনি এর দ্বারা অনেককে বিপথগামী করে থাকেন এবং অনেককে সুপথগামী করে থাকেন।” অন্য জায়গায় মহান আল্লাহ বলেনঃ “যাদের অন্তরে রোগ আছে এবং যাদের অন্তর পাথরের মত) শক্ত, শয়তান তাদের অন্তরে ফিন্যা নিক্ষেপ করে থাকে এবং এই জিনিসগুলো তাদের জন্যে আল্লাহর পক্ষ থেকে পরীক্ষা বনে যায়, আর আল্লাহ মুমিনদেরকে সরল সোজা পথ প্রদর্শন করে থাকেন।” আল্লাহ তা’আলা আর এক জায়গায় বলেনঃ “আমি জাহান্নামে ফেরেশতাদেরকে নিযুক্ত করে রেখেছি এবং তাদের নির্ধারিত সংখ্যা (১৯) কাফিরদের জন্যে একটা ফিত্রার কারণ, কিন্তু এর মাধ্যমেই আহলে কিতাব ও মুমিনদের ঈমান আরও বৃদ্ধি পেয়ে থাকে, আহলে কিতাব ও মুমিনরা এতে সন্দেহ পোষণ করে না (কেননা, আহলে কিতাব নিজেদের কিতাবেও এই নির্ধারিত সংখ্যার উল্লেখ পেয়ে থাকে, কিন্তু কাফির ও রোগাক্রান্ত অন্তর বিশিষ্ট লোকেরা বলে থাকে এসব কথা বলার আল্লাহর কি প্রয়োজন ছিল? এভাবেই বহু লোক পথভ্রষ্ট হয়ে যায় এবং বহু লোক সুপথ প্রাপ্ত হয়, আল্লাহ ছাড়া তার সেনাবাহিনী সম্পর্কে কার জ্ঞান রয়েছে?” আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ “আমি এমন বস্তু অর্থাৎ কুরআন নাযিল করেছি যে, ওটা ঈমানদারদের জন্যে শেফা ও রহমত এবং ওর দ্বারা যালিমদের শুধু অনিষ্টই বর্ধিত হয়।” তিনি আর এক জায়গায় বলেনঃ “ (হে মুহাম্মাদ সঃ!) তুমি বলে দাও-এই কুরআন মুমিনদের জন্যে হিদায়াত ও শেফা আর কাফিরদের কানে কর্ক বা ছিপি লাগা আছে এবং তারা অন্ধ।” কুরআন মুমিনদের জন্যে যে হিদায়াত স্বরূপ এবং হিদায়াত ও পথভ্রষ্টতা যে তারই ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল এ সম্পর্কে বহু আয়াত রয়েছে। এ জন্যেই এখানে তিনি বলেনঃ “এরূপেই আমি নিদর্শনসমূহ বিভিন্ন ধারায় প্রকাশ করে থাকি, কিন্তু কাফিররা একথাই বলছে যে, তুমি কারও নিকট থেকে লিখিয়ে নিয়েছে।”

হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) (আরবী) শব্দের অর্থ (আরবী) এবং (আরবী) বর্ণনা করেছেন। (মুজাহিদ (রহঃ), সুদ্দী (রহঃ) এবং যহহকি (রহঃ) হতেও এটা বর্ণিত আছে) হাসান (রঃ) এটার অর্থ (আরবী) বলেছেন। ইবনে যুবাইর (রঃ) বলেনঃ “ছেলেরা এখানে (আরবী) পড়ে থাকে, অথচ (আরবী) রয়েছে। হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ)-এর কিরআতে দারাসতা রয়েছে এবং এর অর্থ (আরবী)-ই বটে। এর ভাবার্থ হচ্ছে- “হে মুহাম্মাদ (সঃ)! যেসব কথা আপনি আমাদেরকে শুনাচ্ছেন সেগুলো আমরা পূর্ববর্তীদের মাধ্যমে অবগত রয়েছি।” হযরত ইবনে মাসউদের কিরআতে (আরবী) রয়েছে। অর্থাৎ মুহাম্মাদ (সঃ) ওটা শিখে রেখেছেন। এই মতভেদ বিস্ময়করই বটে। হযরত উবাই ইবনে কাব (রাঃ) বলেনঃ “রাসূলুল্লাহ (সঃ) আমাকে ‘ওয়া লিয়াকুলু দারাস্তা’এইরূপ শুনিয়েছেন।

তাফসীরে আবুবকর ‌যাকারিয়া‌ বলেছেন:-
[১] এ আয়াতের (بصائِر) শব্দটি (بصيرة) এর বহুবচন। এর অর্থ বুদ্ধি ও জ্ঞান। অর্থাৎ যে শক্তি দ্বারা মানুষ অতিন্দ্রীয় বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করে। আয়াতে (بصائِر) বলে ঐসব যুক্তি-প্রমাণ ও উপায়াদিকে বোঝানো হয়েছে, যেগুলো দ্বারা মানুষ সত্য ও বাস্তব রূপকে জানতে পারে। আয়াতের অর্থ এই যে, আল্লাহ তা’আলার পক্ষ থেকে তোমাদের কাছে সত্য দর্শনের উপায়-উপকরণ পৌঁছে গেছে। [আল-মানার] অর্থাৎ কুরআন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও বিভিন্ন মু’জিযা আগমন করেছে ইবন কাসীর। তাছাড়া তোমরা রাসূলের চরিত্র, কাজকর্ম ও শিক্ষা প্রত্যক্ষ করছ। এগুলোই হচ্ছে সত্য দর্শনের উপায়। অতএব, যে ব্যক্তি এসব উপায় ব্যবহার করে চক্ষুষ্মান হয়ে যায়, সে নিজেরই উপকার সাধন করে। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি এসব উপায় পরিত্যাগ করে সত্য সম্পর্কে অন্ধ হয়ে থাকে, সে নিজেরই ক্ষতি সাধন করে। [আল-মানার; আইসারুত তাফসীর, মুয়াসসার]

[২] অর্থাৎ মানুষকে জবরদস্তিমূলকভাবে অশোভনীয় কাজ থেকে বিরত রাখা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দায়িত্ব নয়, যেমন সংরক্ষকের দায়িত্ব হয়ে পৌছার পরও। এটাই আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের আকীদা ও বিশ্বাস। এর সপক্ষে দলীল প্রমাণাদি অনেক, নীচে তার কিছু উল্লেখ করা হলোঃ

কুরআন থেকেঃ

আল্লাহর বাণীঃ

(وُجُوْهٌ يَّوْمَىِٕذٍ نَّاضِرَةٌ – اِلٰى رَبِّهَا نَاظِرَةٌ)

“সেদিন কিছু চেহারা হবে সজীব ও প্রফুল্ল। তারা স্বীয় রবকে দেখতে থাকবে। [সূরা আল-কিয়ামাহঃ ২২-২৩]

আল্লাহর বাণীঃ

(لَهُمْ مَّا يَشَاءُوْنَ فِيْهَا وَلَدَيْنَا مَزِيْدٌ)

“তারা তাতে যা চাইবে তাই পাবে, আর আমাদের কাছে আছে আরো কিছু বাড়তি” [সূরা ক্বাফঃ ৩৫]। এ আয়াতের তাফসীরে আলী ও আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেনঃ ‘বাড়তি বিষয় হলোঃ আল্লাহর চেহারার দিকে তাকানোর সৌভাগ্য’।

আল্লাহ তা’আলা কুরআনের অন্যত্র বলেছেনঃ

(كَلَّآ اِنَّهُمْ عَنْ رَّبِّهِمْ يَوْمَىِٕذٍ لَّمَحْجُوْبُوْنَ)

“কাফেররা সেদিন স্বীয় রব-এর সাক্ষাত থেকে বঞ্চিত থাকবে” [সূরা আল-মুতাফফেফীনঃ ১৫]। এর দ্বারা কাফের ও অবিশ্বাসীরা সেদিনও সাজা হিসেবে আল্লাহকে দেখার গৌরব থেকে বঞ্চিত থাকবে বলে ঘোষণা করা হয়েছে। এ আয়াতের দ্বারা এটা স্পষ্ট হলো যে, যারা ঈমানদার তাদের এ শাস্তি হবে না। অর্থাৎ তারা আল্লাহকে দেখতে পাবে।

আল্লাহর বাণীঃ

(لِلَّذِيْنَ اَحْسَـنُوا الْحُسْنٰى وَزِيَادَةٌ)

“যারা সৎ কাজ করেছে তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত,তদুপরি তার উপর রয়েছে কিছু বাড়তি”। [সূরা ইউনুসঃ২৬]। এ আয়াতের তাফসীরে স্বয়ং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে সরাসরি আল্লাহকে দেখা বলে সহীহভাবে বর্ণিত হয়েছে। যার আলোচনা পরবর্তী বর্ণনায় হাদীস থেকে আসছে।

সহীহ হাদীস থেকেঃ

বিভিন্ন সহীহ হাদীসে ঈমানদারদের জন্য আল্লাহ তা’আলাকে দেখার সুসংবাদ দেয়া হয়েছে, সে সমস্ত হাদীস মুতাওয়াতির পর্যায়ে পৌছেছে। ইমাম দারকুতনী এ সংক্রান্ত বিশটির মত হাদীস বর্ণনা করেছেন। অনুরূপভাবে ইমাম আবুল কাসেম লালাকা’য়ী ত্রিশটির মত হাদীস বর্ণনা করেছেন। নীচে এর কয়েকটি উল্লেখ করা হলোঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘জান্নাতীরা জান্নাতে প্রবেশ করার পর আল্লাহ বলবেনঃ তোমরা যেসব নেয়ামত প্রাপ্ত হয়েছ, এগুলোর চাইতে বৃহৎ আরো কোন নেয়ামতের প্রয়োজন হলে বল, আমি তাও দেব। জান্নাতীরা নিবেদন করবেঃ ইয়া আল্লাহ! আপনি আমাদেরকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়েছেন এবং জান্নাতে স্থান দিয়েছেন। এর বেশী আমরা আর কি চাইব। তখন মধ্যবর্তী পর্দা সরিয়ে নেয়া হবে এবং সবার সাথে আল্লাহর সাক্ষাত হবে। এটিই হবে জান্নাতের সর্বশ্রেষ্ঠ নেয়ামত। [সহীহ মুসলিমঃ ১৮১] জান্নাতীদের জন্য আল্লাহর সাক্ষাতই হবে সর্ববৃহৎ নেয়ামত।

অন্য এক হাদীসে আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক চন্দ্রালোকিত রাতে সাহাবীদের সমভিব্যাহারে উপবিষ্ট ছিলেন। তিনি চাঁদের দিকে থাকে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর একমাত্র দায়িত্ব হচ্ছে আল্লাহর নির্দেশাবলী পৌঁছে দেয়া ও বুঝিয়ে দেয়া। এরপর স্বেচ্ছায় সেগুলো অনুসরণ করা না করা মানুষের দায়িত্ব। [সা’দী]
[৩] অর্থাৎ এভাবেই আমরা আমাদের আয়াতসমূহকে বিশদভাবে বর্ণনা করি, যাতে তারা শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে। [জালালাইন]

[৪] এর মর্ম এই যে, হেদায়াতের সব সাজ-সরঞ্জাম, মু’জিযা, অনুপম প্রমাণাদি- যেমন, কুরআন- একজন নিরক্ষরের মুখ দিয়ে এমন জ্ঞান-বিজ্ঞান ও সত্য প্রকাশ করা, যা ব্যক্ত করতে জগতের সব দার্শনিক পর্যন্ত অক্ষম এবং এমন অলঙ্কারপূর্ণ কালাম উচ্চারিত হওয়া, যার সমতুল্য কালাম রচনা করার জন্য কেয়ামত পর্যন্ত আগমনকারী সমস্ত জ্বিন ও মানুষকে চ্যালেঞ্জ করার পরও সারা বিশ্ব অক্ষমতা প্রকাশ করেছে- সত্য দর্শনের এসব সরঞ্জাম দেখে যে কোন হটকারী অবিশ্বাসীরও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আনুগত্য নিদ্বিধায় মেনে নেয়া উচিত ছিল, কিন্তু যাদের অন্তরে বক্রতা বিদ্যমান ছিল, তারা বলতে থাকে, এসব জ্ঞান-বিজ্ঞান তুমি কারো কাছ থেকে অধ্যয়ন করে নিয়েছ। এটা ছিল কাফেরদের নিত্য-মন্তব্যের একটি। তারা এ ধরনের মন্তব্য করেই যাচ্ছিল। অন্য আয়াতেও এটা বর্ণিত হয়েছে, আল্লাহ বলেন, “আমরা অবশ্যই জানি যে, তারা বলে, তাকে তো শুধু একজন মানুষ শিক্ষা দেয়। তারা যার প্রতি এটাকে সম্পর্কযুক্ত করার জন্য ঝুঁকছে তার ভাষা তো আরবী নয়; কিন্তু কুরআনের ভাষা স্পষ্ট আরবী ভাষা ” [সূরা আন-নাহল: ১০৩] আল্লাহ আরও বলেন, “অতঃপর সে বলল, “এটা তো লোক পরম্পরায় প্রাপ্ত জাদু ভিন্ন আর কিছু নয়, “এ তো মানুষেরই কথা। অচিরেই আমি তাকে দগ্ধ করব ‘সাকার’ এ” [আল-মুদ্দাসসির ২৪-২৬] তিনি আরও বলেন, কাফেররা বলে, “এটা মিথ্যা ছাড়া কিছুই নয়, সে এটা রটনা করেছে এবং ভিন্ন সম্প্রদায়ের লোক তাকে এ ব্যাপারে সাহায্য করেছে। সুতরাং অবশ্যই কাফেররা যুলুম ও মিথ্যা নিয়ে এসেছে ” তারা আরও বলে, ‘এগুলো তো সে কালের উপকথা, যা সে লিখিয়ে নিয়েছে; তারপর এগুলো সকাল-সন্ধ্যা তার কাছে পাঠ করা হয়। “বলুন, ‘এটা তিনিই নাযিল করেছেন যিনি আসমানসমূহ ও যমীনের সমুদয় রহস্য জানেন; নিশ্চয়ই তিনি পরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। [আল-ফুরকান: ৪-৬] [আদওয়াউল বায়ান]

[৫] এখানে এটা বলে কুরআন উদ্দেশ্য হতে পারে। [ফাতহুল কাদীর] অনুরূপভাবে পূর্বোক্ত আয়াতসমূহে যে হক প্রতিষ্ঠা করার কথা বলা হয়েছে তাও হতে পারে। উদ্দেশ্য এই যে, আমাদের নানাভাবে বর্ণনা পদ্ধতি দ্বারা যারা জানে তারা হককে জানতে পারবে, সেটা গ্রহণ করতে পারবে, সে হকের অনুসরণ করতে পারবে। আর তারা হচ্ছে, মুমিনরা যারা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তার উপর যা নাযিল হয়েছে সে সবের উপর ঈমান আনয়ন করেছিল। [মুয়াসসার]

[৬] অর্থাৎ সঠিক বুদ্ধিমান ও সুস্থ জ্ঞানীদের জন্য এ বর্ণনা উপকারী প্রমাণিত হয়েছে। মোটকথা এই যে, হেদায়াতের সরঞ্জাম সবার সামনেই রাখা হয়েছে। কিন্তু কুটিল ব্যক্তিরা এর দ্বারা উপকৃত হয়নি। পক্ষান্তরে সুস্থ জ্ঞানী মনীষীরা এর মাধ্যমে সত্যের পথ প্রদর্শক হয়ে গেছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে বলা হয়েছে, কে মানে আর কে মানে না- তা আপনার দেখার বিষয় নয়। আপনি স্বয়ং ঐ পথ অনুসরণ করুন, যা অনুসরণ করার জন্য আপনার রব-এর পক্ষ থেকে আপনার প্রতি ওহী আগমন করেছে। এর প্রধান বিষয় হচ্ছে এ বিশ্বাস যে, আল্লাহ ছাড়া উপাসনার যোগ্য আর কেউ নেই। এ ওহী প্রচারের নির্দেশও রয়েছে। এর উপর প্রতিষ্ঠিত থেকে মুশরিকদের জন্য পরিতাপ করবেন না যে, তারা কেন গ্রহণ করল না। এর কারণ এটাই ব্যক্ত করা হয়েছে যে, আল্লাহ্ যদি সৃষ্টিগতভাবে ইচ্ছা করতেন যে, সবাই মুসলিম হয়ে যাক, তবে কেউ শির্ক করতে পারতো না। কিন্তু তাদের দুষ্কৃতির কারণে তিনি ইচ্ছা করেননি, বরং তাদেরকে শাস্তি দিতেই চেয়েছেন। তাই শাস্তির সরঞ্জামও সরবরাহ করে দিয়েছেন। এমতাবস্থায় আপনি তাদেরকে কিরূপে মুসলিম করতে পারেন? আপনি এ ব্যাপারে মাথা ঘামাবেন কেন, আমি আপনাকে তাদের সংরক্ষক নিযুক্ত করিনি এবং আপনি এসব কাজকর্মের কারণে তাদেরকে শাস্তি দেয়ার জন্য আমার পক্ষ থেকে ক্ষমতাপ্রাপ্তও নন। কাজেই তাদের কাজকর্মের ব্যাপারে আপনার উদ্বিগ্ন না হওয়াই বাঞ্ছনীয়। [দেখুন, আল-মানার]

তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
টিকা:৬৯) এ বাক্যটি আল্লাহর কালাম হলেও নবীর পক্ষ থেকে উচ্চারিত হয়েছে। কুরআন মজীদে বক্তার লক্ষ্য ও সম্বোধন বারবার পরিবর্তিত হয়। কখনো নবীকে সম্বোধন করা হয়, কখনো মু’মিনদেরকে, কখনো আহলি কিতাবদেরকে, কখনো কাফের ও মুশরিকদেরকে, কখনো কুরাইশদেরকে, কখনো আরববাসীদেরকে আবার কখনো সাধারণ মানুষকে সম্বোধন করা হয়। অথচ আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে সমগ্র মানব জাতির হেদায়াত। অনুরূপভাবে সম্বোধনকারী ও বক্তাও বারবার পরিবর্তিত হয়। কোথাও বক্তা হন আল্লাহ্‌ নিজেই, কোথাও অহী বহনকারী ফেরেশতা, কোথাও ফেরেশতাদের দল, কোথাও নবী আবার ঈমানদাররা। অথচ এসব অবস্থায় সমস্ত কালামই একমাত্র আল্লাহরই কালাম হয়ে থাকে। “আমি তো তোমাদের পাহারাদার নই”-এ বাক্যের মানে হচ্ছে, তোমাদের কাছে আলো পৌঁছে দেয়াই শুধু আমার কাজ। তারপর চোখ খুলে দেখা বা না দেখা তোমাদের কাজ। যারা চোখ বন্ধ করে রেখেছে জোরপূর্বক তাদের চোখ খুলে দেবো এবং যা কিছু তারা দেখছে না তা তাদেরকে দেখিয়ে ছাড়বো, এটা আমার দায়িত্ব নয়।

টিকা:৭০) সূরা বাকারার তৃতীয় রুকূ’তে যে কথা বলা হয়েছে সে একই কথা এখানেও বলা হয়েছে। অর্থাৎ মশা, মাকড়শা ইত্যাদি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কীট পতংগের উপমা শুনে এগুলোর মাধ্যমে যে মহাসত্য উদঘাটন করা হয়েছে সত্য সন্ধানীরা তার নাগাল পেয়ে যায়। কিন্তু অস্বীকৃতি ও অবাধ্যতার রোগে যারা আক্রান্ত হয়ে পড়েছে তারা বিদ্রূপের সূরে বলতে থাকে, আল্লাহর কালামে এ তুচ্ছাতিতুচ্ছ জিনিসগুলোর উল্লেখের কী প্রয়োজন হতে পারে! এ বিষয়বস্তুটিকে এখানে অন্য একভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। এখানে একথা বলার উদ্দেশ্য হচ্ছে, আল্লাহর এ কালামটি লোকদের জন্য একটি পরীক্ষার বিষয়ে পরিণত হয়েছে। ফলে এর মাধ্যমে খাঁটি ও অখাঁটি মানুষের মধ্যে পার্থক্য সূচিত হয়ে যাচ্ছে। একদল লোক এ কালাম শুনে বা পড়ে এর উদ্দেশ্য ও মূল বিষয়বস্তু সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করে এবং এর মধ্যে যেসব জ্ঞান ও উপদেশের কথা বলা হয়েছে তা থেকে লাভবান হয়। অন্যদিকে এগুলো শুনার পর আর একদল লোকের চিন্তা কালামের মূল বক্তব্যের দিকে না গিয়ে আর এক ভিন্নধর্মী অনুসন্ধানের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। তারা অনুসন্ধান করতে থাকে, এ নিরক্ষর ব্যক্তি এ ধরনের রচনা আনলো কোথা থেকে? আর যেহেতু বিরোধিতাসুলভ বিদ্বেষে তাদের অন্তর আগে থেকে আচ্ছন্ন থাকে, তাই একমাত্র আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ হবার সম্ভাবনা বাদ দিয়ে বাকি সকল প্রকার সম্ভাবনাই তাদের মনে উঁকি দিতে থাকে। এগুলোকে তারা এমনভাবে বর্ণনা করতে থাকে যেন মনে হয় তারা এ কিতাবের উৎস সন্ধানে সফলকাম হয়ে গেছে।

Leave a Reply