أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book# 114/٢٥٥)-৪৫৭
www.motaher21.net
সুরা: আল-আনয়াম
১০৮ নং আয়াত:-
وَلَا تَسُبُّواْ الَّذِينَ يَدْعُونَ مِن دُونِ اللّهِ فَيَسُبُّواْ اللّهَ عَدْوًا بِغَيْرِ عِلْمٍ
And insult not those whom they worship besides Allah, lest they insult Allah wrongfully without knowledge.
এরা আল্লাহকে বাদ দিয়ে যাদের ইবাদাত (পূজা-অর্চনা) করে তোমরা তাদেরকে গালাগালি করনা, তাহলে তারা অজ্ঞতা বশতঃ বৈরীভাবে আল্লাহকেই গালাগালি দিতে শুরু করবে।
وَ لَا تَسُبُّوا الَّذِیۡنَ یَدۡعُوۡنَ مِنۡ دُوۡنِ اللّٰہِ فَیَسُبُّوا اللّٰہَ عَدۡوًۢا بِغَیۡرِ عِلۡمٍ ؕ کَذٰلِکَ زَیَّنَّا لِکُلِّ اُمَّۃٍ عَمَلَہُمۡ ۪ ثُمَّ اِلٰی رَبِّہِمۡ مَّرۡجِعُہُمۡ فَیُنَبِّئُہُمۡ بِمَا کَانُوۡا یَعۡمَلُوۡنَ ﴿۱۰۸﴾
এরা আল্লাহকে বাদ দিয়ে যাদের ইবাদাত (পূজা-অর্চনা) করে তোমরা তাদেরকে গালাগালি করনা, তাহলে তারা অজ্ঞতা বশতঃ বৈরীভাবে আল্লাহকেই গালাগালি দিতে শুরু করবে। আমিতো এ রূপেই প্রতিটি জনগোষ্ঠীর জন্য তাদের ‘আমলকে চাকচিক্যময় করে দিয়েছি। শেষ পর্যন্ত তাদেরকে তাদের রবের কাছে ফিরে যেতে হবে, তখন তারা কি কি কাজ করেছিল তা তিনি তাদেরকে জানিয়ে দিবেন।
১০৮ নং আয়াতের তাফসীর:
তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ বলেছেন:-
শানে নুযূল:
কাতাদাহ (রহঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন: মুসলিমগণ কাফিরদের মূর্তিগুলোকে গালিগালাজ করত ফলে কাফিররাও আল্লাহ তা‘আলাকে অজ্ঞতাবশত গালিগালাজ করত। তখন “আল্লাহকে ছেড়ে যাদেরকে তারা ডাকে তাদেরকে তোমরা গালি দিও না।”আয়াত নাযিল হয়। (মুসান্নাফ আবদুর রাযযাক ১/২০৮, হা: ৮৪০)
মূলত মুশরিকদের প্রতিমাগুলোকে গালি দেয়া বৈধ নয়, যেহেতু মুশরিকদের কাছে তাদের মা‘বূদ সম্মানের পাত্র তাই তাদের মা‘বূদদেরকে গালি দিলে তারাও প্রতিবাদমূলক আল্লাহ তা‘আলাকে গালি দেবে। সে জন্য তাদের মা‘বূদেরকে গালি দেয়া যাবে না।
English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Sura Anam
Verses :- 108
وَلَا تَسُبُّواْ الَّذِينَ يَدْعُونَ مِن دُونِ اللّهِ فَيَسُبُّواْ اللّهَ عَدْوًا بِغَيْرِ عِلْمٍ
And insult not those whom they worship besides Allah, lest they insult Allah wrongfully without knowledge.
The Prohibition of Insulting the False gods of the Disbelievers, So that they Do not Insult Allah
Allah says;
وَلَا تَسُبُّواْ الَّذِينَ يَدْعُونَ مِن دُونِ اللّهِ فَيَسُبُّواْ اللّهَ عَدْوًا بِغَيْرِ عِلْمٍ
And insult not those whom they worship besides Allah, lest they insult Allah wrongfully without knowledge.
Allah prohibits His Messenger and the believers from insulting the false deities of the idolators, although there is a clear benefit in doing so. Insulting their deities will lead to a bigger evil than its benefit, for the idolators might retaliate by insulting the God of the believers, Allah, none has the right to be worshipped but He.
Ali bin Abi Talhah said that Ibn Abbas commented on this Ayah,
“They (disbelievers) said, `O Muhammad! You will stop insulting our gods, or we will insult your Lord.’ Thereafter, Allah prohibited the believers from insulting the disbelievers’ idols,
فَيَسُبُّواْ اللّهَ عَدْوًا بِغَيْرِ عِلْمٍ
(lest they insult Allah wrongfully without knowledge).”
Abdur-Razzaq narrated that Ma`mar said that Qatadah said,
“Muslims used to insult the idols of the disbelievers and the disbelievers would retaliate by insulting Allah wrongfully without knowledge. Allah revealed,
وَلَا تَسُبُّواْ الَّذِينَ يَدْعُونَ مِن دُونِ اللّهِ
(And insult not those whom they worship besides Allah).”
On this same subject — abandoning what carries benefit to avert a greater evil – it is recorded in the Sahih that the Messenger of Allah said,
مَلْعُونٌ مَنْ سَبَّ وَالِدَيْه
Cursed is he who insults his own parents!
They said, “O Allah’s Messenger! And how would a man insult his own parents!”
He said,
يَسُبُّ أَبَا الرَّجُلِ فَيَسُبُّ أَبَاهُ وَيَسُبُّ أُمَّهُ فَيَسُبُّ أُمَّه
He insults a man’s father, and that man insults his father, and insults his mother and that man insults his mother.
Allah’s statement,
كَذَلِكَ زَيَّنَّا لِكُلِّ أُمَّةٍ عَمَلَهُمْ
Thus We have made fair seeming to each people its own doings;
means, as We made fair seeming to the idolators loving their idols and defending them, likewise We made fair seeming to every previous nation the misguidance they indulged in. Allah’s is the most perfect proof, and the most complete wisdom in all that He wills and chooses.
ثُمَّ إِلَى رَبِّهِم مَّرْجِعُهُمْ
then to their Lord is their return,
gathering and final destination,
فَيُنَبِّيُهُم بِمَا كَانُواْ يَعْمَلُونَ
and He shall then inform them of all that they used to do.
He will compensate them for their deeds, good for good and evil for evil.
তাফসীরে ইবনে কাসীর বলেছেন:-
আল্লাহ পাক স্বীয় রাসূল (সঃ) এবং মুমিনদেরকে সম্বোধন করে বলছেন যে, তারা যেন মুশরিকদের দেবতাগুলোকে গালাগালি না করে এবং ভালমন্দ না বলে। এতে কিছুটা যৌক্তিকতা থাকলেও এর ফলে ঝগড়া ফাসাদ ও বিবাদ বিসম্বাদ বৃদ্ধি পায়। অর্থাৎ তাদের দেবতাদেরকে গালি দিলে তারাও মুসলমানদের প্রভু আল্লাহকে গালি দেবে। মুশরিকরা বলতোঃ “হে মুহাম্মাদ (সঃ)! আপনারা আমাদের দেবতাদের গালি দেয়া হতে বিরত থাকুন, নতুবা আমরাও আপনাদের প্রভুর নিন্দে করবো।” তাই আল্লাহ তাআলা মুশরিকদের দেবতাদেরকে গালি দিতে মুসলমানদেরকে নিষেধ করলেন। হযরত কাতাদা (রঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, মুসলমানরা কাফিরদের মূর্তিগুলোকে গালি দিতেন। তখন কাফিররাও হকীকত না বুঝে বৈরীভাব নিয়ে আল্লাহ তা’আলাকে ভালমন্দ বলতো। যখন আবূ তালিব মৃত্যু শয্যায় শায়িত হন তখন কুরায়েশরা পরামর্শ করে- “চল, আমরা আবু তালিবের কাছে যাই এবং তাঁকে অনুরোধ করি যে, তিনি যেন স্বীয় ভ্রাতুপুত্রকে আমাদের বিরুদ্ধাচরণ করতে নিষেধ করে দেন। কেননা, এটা আমাদের জন্যে লজ্জাজনক ব্যাপার হবে যে, আবু তালিবের মৃত্যুর পর আমরা মুহাম্মাদ (সঃ)-কে হত্যা করে ফেলবো। কারণ, এরূপ করলে আরববাসী বলবে যে, আবু তালিবের জীবদ্দশায় তো কাপুরুষরা কিছুই করতে পারলো না, আর যেমনই তিনি মারা গেলেন তেমনই তারা তাকে হত্যা করে ফেললো।” সুতরাং আবু জাহেল, আবু সুফিয়ান, আমর ইবনুল আস এবং আরও কয়েকজন লোক প্রতিনিধি হিসেবে আগমন করে। তারা মুত্তালিব নামক একটি লোককে অনুমতি লাভের জন্যে প্রেরণ করে। আবূ তালিব তাদেরকে ডেকে নেন। তারা তখন। তাকে বলেঃ “হে আবু তালিব! আপনি আমাদের বড় এবং আমাদের নেতা। মুহাম্মাদ (সঃ) আমাদেরকে কষ্ট দিচ্ছেন এবং আমাদের দেবতাদেরকে কষ্ট দিচ্ছেন এবং আমাদের দেবতাদেরকে গালি দিচ্ছেন। আমরা চাই যে, আপনি তাকে ডেকে নিয়ে নিষেধ করে দেন। তিনি যেন আমাদের দেবতাদের নাম পর্যন্ত না নেন! নতুবা আমরাও তাকে ও তার আল্লাহকে ছেড়ে দেব না।” এ কথা শুনে আবু তালিব মুহাম্মাদ (সঃ)-কে ডেকে পাঠান এবং তাঁকে বলেনঃ “এরা তোমারই কওম এবং তোমারই চাচার সন্তান। রাসূলুল্লাহ (সঃ) তখন তাকে বলেনঃ চাচা! খবর কি? এবং এরা চায় কি?’ তখন তারা বলেঃ “আমাদের উদ্দেশ্য এই যে, আপনি আমাদের উপর এবং আমাদের দেবতাদের উপর কোন হস্তক্ষেপ করবেন না। তাহলে আমরাও আপনার উপর এবং আপনার আল্লাহর উপর কোন হস্তক্ষেপ করবো না।” রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাদের কথার উত্তরে বলেনঃ “আমি কি তোমাদেরকে এমন একটি কথা বলে দেবে যে, যদি তোমরা ওটা মেনে নাও তবে তোমরা আরব ও আজমের মালিক হয়ে যাবে এবং সমস্ত দেশ থেকে তোমাদের কাছে রাজস্বের সম্পদ আসতে থাকবে?” উত্তরে আবু জাহেল বললোঃ ‘আপনার একটা কথা কেন, দশটা কথা মানতে রাজি আছি। বলুন সেটা কি?’ তিনি বললেনঃ বল – (আরবী) (আল্লাহ ছাড়া আর কেউ মা’বুদ নেই)। তারা সেটা অস্বীকার করল এবং মুখ ফিরিয়ে নিলো। আবু তালিব তখন রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে বললেনঃ “হে ভাতিজা! এটা ছাড়া অন্য কথা বল। তোমার কওম তো একথাতে আরও অগ্নিশর্মা হয়ে উঠছে।” একথা শুনে রাসূলুল্লাহ (সঃ) বললেনঃ “চাচাজান! এটা ছাড়া অন্য কিছু বলার আমার কি অধিকার আছে? এরা যদি আমার হাতে সূর্যও এনে দেয় তথাপি আমি এটা ছাড়া অন্য কিছুই বলতে পারি না।” একথা দ্বারা তাদেরকে নিরাশ করাই তার উদ্দেশ্য ছিল। সুতরাং তারা তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠে তাকে বললোঃ “আমাদের দেবতাদেরকে ভালমন্দ বলা থেকে বিরত থাকুন, নতুবা আমরাও আপনাকে ও আপনার আল্লাহকে গালি দিব।” এ জন্যেই আল্লাহ পাক বলেনঃ তারা অজ্ঞানতা বশতঃ বৈরীভাবে আল্লাহকেই গালি দিতে শুরু করবে। সুতরাং তাদের দেবতাদেরকে গালি দিবার। যৌক্তিকতা থাকলেও এই অবস্থার প্রতি লক্ষ্য রেখে তা থেকে বিরত থাকা উচিত। কেননা, এতে বিবাদ বিসম্বাদ আরও বেড়ে যাবে। রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “ যে তার পিতা-মাতাকে গালি দেয় সে অভিশপ্ত!’ সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! কোন লোক কি তার পিতা-মাতাকে গালি দিতে পারে?” তিনি উত্তরে বলেনঃ “যে কোন লোকের পিতাকে গালি দেয়, তখন লোকটি এর পিতাকে গালি দেয় এবং যে কোন লোকের মাকে গালি দেয়, সে তখন এর মাকে গালি দেয়, সুতরাং প্রথম লোকটি যেন নিজের পিতা-মাতাকেই গালি দিলো।
আল্লাহ পাক বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “এভাবেই আমি প্রতিটি জনগোষ্ঠির জন্যে তাদের আমলকে চাকচিক্যময় করে দিয়েছি।” অর্থাৎ যেমন এই কওম মূর্তির প্রতি আসক্তিকেই পছন্দ করেছে, দ্রুপ পূর্ববর্তী উম্মতও পথভ্রষ্ট ছিল এবং তারাও নিজেদের আমলকেই পছন্দ করতো।
আল্লাহ তাআলা যা ইচ্ছা তাই করে থাকেন এবং তাতেই নিপুণতা নিহিত থাকে। শেষ পর্যন্ত মানুষকে আল্লাহর কাছেই ফিরে যেতে হবে। সেইদিন তারা তাদের দুনিয়ার কৃত কার্যগুলো ভাল কি মন্দ তা জানতে পারবে। যদি সেগুলো ভাল হয় তবে তারা ভাল বিনিময় পাবে এবং যদি মন্দ হয় তবে মন্দ বিনিময়ই প্রাপ্ত হবে।
তাফসীরে আবুবকর যাকারিয়া বলেছেন:-
[১] আলোচ্য আয়াতটি একটি বিশেষ ঘটনা সম্পর্কে নাযিল হয়েছে। এতে একটি গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক মাসআলা নির্দেশিত হয়েছে যে, যে কাজ করা বৈধ নয়, সে কাজের কারণ ও উপায় হওয়াও বৈধ নয়। কুরাইশ সর্দাররা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বললঃ হয় তুমি আমাদের উপাস্য প্রতিমাদেরকে মন্দ বলা থেকে বিরত হও, না হয় আমরা তোমার প্রভুকে গালি দিবো। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আলোচ্য আয়াত নাযিল হয়। তাবারী যাতে বলা হয়েছে, “আপনি ঐ প্রতিমাদেরকে মন্দ বলবেন না, যাদেরকে তারা উপাস্য বনিয়ে রেখেছে। তাহলে তারা আল্লাহকে মন্দ বলা শুরু করবে পথভ্রষ্টতা ও অজ্ঞতার কারণে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বভাবগত চরিত্রের কারণে শৈশবকালেও কোন মানুষকে বরং কোন জন্তুকেও কখনো গালি দেননি। সম্ভবত কোন সাহাবীর মুখ থেকে এমন কঠোর বাক্য বের হয়ে থাকতে পারে, যাকে মুশরিকরা গালি মনে করে নিয়েছে। [তাফসীরে বায়যাভী’; আইসারুত তাফসীর] কুরাইশ সর্দাররা এ ঘটনাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সামনে রেখে ঘোষণা করেছে যে, আপনি আমাদের প্রতিমাদেরকে গালি-গালাজ থেকে বিরত না হলে আমরা আপনার আল্লাহকেও গালি-গালাজ করব। এতে কুরআনের এ নির্দেশ নাযিল হয়েছে। এতে মুশরিকদের মিথ্যা উপাস্যদের সম্পর্কে কোন কঠোর বাক্য বলতে মুসলিমদেরকে নিষেধ করা হয়েছে। এ ঘটনা ও এ সম্পর্কিত কুরআনী নির্দেশ একটি বিরাট জ্ঞানের দ্বার উন্মুক্ত করে দিয়েছে এবং কতিপয় মৌলিক বিধান এ থেকে বের হয়ে এসেছে।
কোন পাপের কারণ হওয়া পাপঃ
উদাহরণতঃ একটি মূলনীতি এই বের হয়েছে যে, যে কাজ নিজ সত্তার দিক দিয়ে বৈধ; বরং কোন না কোন স্তরে প্রশংসনীয়ও, সে কাজ করলে যদি কোন ফ্যাসাদ অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়ে কিংবা তার ফলশ্রুতিতে মানুষ গোনাহে লিপ্ত হয়ে পড়ে, তবে সে কাজও নিষিদ্ধ হয়ে যায়। কেননা, মিথ্যা উপাস্য অর্থাৎ প্রতিমাদেরকে মন্দ বলা অবশ্যই বৈধ এবং ঈমানী মর্যাদাবোধের দিক দিয়ে দেখলে সম্ভবতঃ সওয়াব ও প্রশংসনীয়ও বটে, কিন্তু এর ফলশ্রুতিতে আশংকা দেখা দেয় যে, প্রতিমাপূজারীরা আল্লাহ্ তা’আলাকে মন্দ বলবে। অতএব, যে ব্যক্তি প্রতিমাদেরকে মন্দ বলবে, সে এ মন্দের কারণ হয়ে যাবে। তাই এ বৈধ কাজটিও নিষিদ্ধ করা হয়েছে। [কুরতুবী; রায়ী]
হাদীসে এর আরও একটি দৃষ্টান্ত রয়েছে। একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহাকে বললেনঃ জাহেলিয়াত যুগে এক দুর্ঘটনায় কাবাগৃহ বিধ্বস্ত হয়ে গেলে কুরাইশরা তা পুননির্মাণ করে। এ পুননির্মাণে কয়েকটি বিষয় প্রাচীন ইবরাহিমী ভিত্তির খেলাফ হয়ে গেছে। প্রথমতঃ কা’বার যে অংশকে হাতীম’ বলা হয়, তাও কাবাগৃহের অংশবিশেষ ছিল। কিন্তু পুননির্মাণে অর্থাভাবের কারণে সে অংশ বাদ দেয়া হয়েছে। দ্বিতীয়তঃ কাবাগৃহের পূর্ব ও পশ্চিম দিকে দু’টি দরজা ছিল। একটি প্রবেশের এবং অপরটি প্রস্থানের জন্য নির্দিষ্ট ছিল। জাহেলিয়াত যুগের নির্মাতারা পশ্চিমের দরজা বন্ধ করে একটি মাত্র দরজা রেখেছে। এটিও ভূপৃষ্ঠ থেকে উচ্চে স্থাপন করেছে, যাতে কেউ তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কা’বা গৃহে প্রবেশ করতে না পারে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে বলেনঃ আমার আন্তরিক বাসনা এই যে, কা’বা গৃহের বর্তমান নিমাণ ভেঙ্গে দিয়ে সম্পূর্ণ ইবরাহীম আলাইহিস সালাম-এর নির্মাণের অনুরূপ করে দেই। কিন্তু আশংকা এই যে, তোমার সম্প্রদায় অর্থাৎ আরব জাতি নতুন মুসলিম হয়েছে। কা’বা গৃহ বিধ্বস্ত করলে তাদের মনে বিরূপ সন্দেহ দেখা দিতে পারে। তাই আমি আমার বাসনা মুলতবী রেখেছি। এ ব্যাপারে দেখুন [ মুসলিমঃ ১৩৩৩] এটা জানা কথা যে, কা’বা গৃহকে ইবরাহীমী ভিত্তির অনুরূপ নির্মাণ করা একটি ইবাদাত ও সওয়াবের কাজ ছিল। কিন্তু জনগণের অজ্ঞতার কারণে এতে আশংকা আঁচ করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ পরিকল্পনা ত্যাগ করেন। এ ঘটনা থেকেও এ মূলনীতিই জানা গেল যে, কোন বৈধ এমনকি সওয়াবের কাজেও যদি কোন অনিষ্ট অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়ে, তবে সে বৈধ কাজও নিষিদ্ধ হয়ে যায়।
কোন কোন মুফাসসির এখানে একটি আপত্তির বিষয় উল্লেখ করেছেন। তা এই যে, আল্লাহ তা’আলা মুসলিমদের উপর জিহাদ ফরয করেছেন। যার অবশ্যম্ভাবী পরিণতি হল এই যে, কোন মুসলিম কোন কাফেরকে হত্যা করলে কাফেররাও মুসলিমদেরকে হত্যা করবে। অথচ মুসলিমকে হত্যা করা হারাম। এখানে জিহাদ মুসলিম হত্যার কারণ হয়েছে। অতএব, উপরোক্ত মূলনীতি অনুযায়ী জিহাদও নিষিদ্ধ হওয়া উচিত। এমনিভাবে আমাদের প্রচারকার্য, কুরআন তিলাওয়াত, আযান ও সালাতের প্রতি অনেক কাফের ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করে। অতএব, আমরা কি তাদের ভ্রান্ত কর্মের দরুন নিজ ইবাদাত থেকেও হাত গুটিয়ে নেব? এর জবাব এই যে, একটি জরুরী শর্তের প্রতি উপেক্ষা প্রদর্শনের ফলে এ প্রশ্নের জন্ম হয়েছে। শর্তটি এই যে, ফ্যাসাদ অবশ্যম্ভাবী হওয়ার কারণে যে বৈধ কাজটি নিষিদ্ধ করা হয়, তা ইসলামের উদ্দিষ্ট ও জরুরী কর্মসমূহের অন্তর্ভুক্ত না হওয়া চাই। যেমন মিথ্যা উপাসকদের মন্দ বলা। এর সাথে ইসলামের কোন উদ্দেশ্য সম্পর্কযুক্ত নয়। এমনিভাবে কা’বা গৃহের নির্মাণকে ইবরাহীমী ভিত্তির অনুরূপ করার উপরও ইসলামের কোন উদ্দেশ্য নির্ভরশীল নয়। তাই এগুলোর কারণে যখন কোন ধর্মীয় অনিষ্টের আশংকা দেখা দিয়েছে, তখন এগুলো পরিত্যক্ত হয়েছে। পক্ষান্তরে যে কাজ স্বয়ং ইসলামের উদ্দেশ্য কিংবা কোন ইসলামী উদ্দেশ্য যার উপর নির্ভরশীল, যদি বিধর্মীদের ভ্রান্ত আচরণের কারণে তাতে কোন অনিষ্টও দেখা দেয়, তবু এ জাতীয় উদ্দেশ্যকে কোন অবস্থাতেই পরিত্যাগ করা হবে না। বরং এরূপ কাজ স্বস্থানে অব্যাহত রেখে যতদূর সম্ভব অনিষ্টের কাজ বন্ধ করার চেষ্টা করা হবে।
তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
টিকা:৭২) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুসারীদেরকে এ উপদেশ দেয়া হয়েছিল। তাদেরকে বলা হয়েছিল, নিজেদের ইসলাম প্রচারের আবেগে তারা যেন এমনই লাগামহীন ও বেসামাল হয়ে না পড়ে যার ফলে তর্ক-বিতর্ক ও বিরোধের ব্যাপারে এগিয়ে যেতে যেতে তারা অমুসলিমদের আকীদা-বিশ্বাসের কঠোর সমালোচনা করতে গিয়ে তাদের নেতৃবৃন্দ ও উপাস্যদেরকে গালিগালাজ করে না বসে। কারণ, এগুলো তাদেরকে সত্যের নিকটবর্তী করার পরিবর্তে তা থেকে আরো দূরে সরিয়ে নিয়ে যাবে।
টিকা:৭৩) এখানে আবার সে সত্যটিকে সামনে রাখতে হবে যেদিকে ইতিপূর্বে ব্যাখ্যার মধ্যে আমি ইশারা করেছি। অর্থাৎ যেসব ঘটনা প্রাকৃতিক আইনের আওতাধীনে সংঘটিত হয় আল্লাহ সেগুলোকে নিজের কর্মকাণ্ড হিসেবে গণ্য করে থাকেন। কারণ এ আইনগুলো তিনিই প্রবর্তন করেছেন এবং এগুলোর সাহায্যে যা কিছু ঘটে তাঁর হুকুমেই ঘটে। এগুলো বর্ণনা করার সময় তিনি বলে থাকেনঃ আমি এমন করেছি আর অন্যদিকে আমরা মানুষেরা এগুলো বর্ণনা করার সময় বলিঃ প্রকৃতিগতভাবে এমনটিই হয়ে থাকে।