أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book# 114/٢٥٩)-৪৬১
www.motaher21.net
সুরা: আল-আনয়াম
১১৪-১১৫ নং আয়াত:-
أَفَغَيْرَ اللّهِ أَبْتَغِي حَكَمًا
‘তবে কি আমি আল্লাহ্ ছাড়া আর কাউকে ফয়সালাকারী হিসেবে তালাশ করব?
Shall I seek a judge other than Allah?
اَفَغَیۡرَ اللّٰہِ اَبۡتَغِیۡ حَکَمًا وَّ ہُوَ الَّذِیۡۤ اَنۡزَلَ اِلَیۡکُمُ الۡکِتٰبَ مُفَصَّلًا ؕ وَ الَّذِیۡنَ اٰتَیۡنٰہُمُ الۡکِتٰبَ یَعۡلَمُوۡنَ اَنَّہٗ مُنَزَّلٌ مِّنۡ رَّبِّکَ بِالۡحَقِّ فَلَا تَکُوۡنَنَّ مِنَ الۡمُمۡتَرِیۡنَ ﴿۱۱۴﴾
তাহলে কি আমি আল্লাহকে বর্জন করে অন্য কেহকে মীমাংসাকারী ও বিচারক রূপে অনুসন্ধান করব? অথচ তিনিই তোমাদের কাছে এই কিতাবকে বিস্তারিতভাবে অবতীর্ণ করেছেন! আমি যাদেরকে কিতাব দান করেছি তারা জানে যে, এই কিতাব তোমার রবের পক্ষ হতেই যথার্থ ও সঠিকভাবে অবতীর্ণ করা হয়েছে, সুতরাং তুমি সন্দেহ পোষণকারীদের মধ্যে শামিল হয়োনা।
وَ تَمَّتۡ کَلِمَتُ رَبِّکَ صِدۡقًا وَّ عَدۡلًا ؕ لَا مُبَدِّلَ لِکَلِمٰتِہٖ ۚ وَ ہُوَ السَّمِیۡعُ الۡعَلِیۡمُ ﴿۱۱۵﴾
তোমার রবের বাণী সত্যতা ও ইনসাফের দিক দিয়ে পরিপূর্ণ, তাঁর বাণী পরিবর্তনকারী কেহই নেই, তিনি সবকিছু শোনেন ও সবকিছু জানেন।
১১৪-১১৫ নং আয়াতের তাফসীর:
তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ বলেছেন:-
নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন: বল, আমি তোমাদের ও আমাদের মাঝে ফায়সালার ক্ষেত্রে আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া অন্য কাউকে বিচারক মানি না। তিনি যে কিতাব দান করেছেন, তা দ্বারা সকল বিবাদের ফায়সালা করব।
আল্লাহ তা‘আলা মূলত নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সম্বোধন করে তার উম্মাতকে শিক্ষা দিচ্ছেন। যাদেরকে পূর্বে কিতাব দেয়া হয়েছে তথা ইয়াহূদ ও খ্রিস্টান তারাও জানে এ কুরআন সত্য। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(فَإِنْ كُنْتَ فِيْ شَكٍّ مِّمَّآ أَنْزَلْنَآ إِلَيْكَ فَسْأَلِ الَّذِيْنَ يَقْرَأُوْنَ الْكِتٰبَ مِنْ قَبْلِكَ ج لَقَدْ جَا۬ءَكَ الْحَقُّ مِنْ رَّبِّكَ فَلَا تَكُوْنَنَّ مِنَ الْمُمْتَرِيْنَ)
“আমি তোমার প্রতি যা অবতীর্ণ করেছি তাতে যদি তুমি সন্দেহ করে থাক তবে তোমার পূর্বের কিতাব যারা পাঠ করে তাদেরকে জিজ্ঞেস কর; তোমার প্রতিপালকের নিকট হতে তোমার নিকট সত্য অবশ্যই এসেছে। তুমি কখনও সন্দেহ পোষণকারীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না।”(সূরা ইউনুস ১০:৯৪)
(وَتَمَّتْ كَلِمَتُ رَبِّكَ)
‘সত্য ও ন্যায়ের দিক দিয়ে তোমার প্রতিপালকের বাণী পরিপূর্ণ।’অর্থাৎ খবর ও ঘটনাবলীর দিক দিয়ে আল্লাহ তা‘আলার কথা সত্য এবং আহকাম ও মাসায়েলের দিক দিয়ে তা ন্যায্য। তাঁর প্রতিটি আদেশ ও নিষেধ ন্যায় ও সুবিচারের ওপর প্রতিষ্ঠিত। কারণ তিনি এমন সব কথার নির্দেশ দিয়েছেন যা মানুষের জন্য কল্যাণকর আর এমন সব কাজ থেকে নিষেধ করেছেন যা তাদের জন্য ক্ষতিকর।
সুতরাং সকল সমস্যার সমাধান নিতে হবে কুরআন ও সহীহ সুুন্নাহ থেকে। মুসলিমের পক্ষে কুরআন ও সহীহ সুন্নাহর বাইরে যাওয়ার কোনই সুযোগ নেই।
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. বিচারক হিসাবে মান্য করব একমাত্র আল্লাহ তা‘আলাকে অর্থাৎ আল্লাহ প্রদত্ত বিধান।
২. কুরআনের সত্যতা ইয়াহূদ ও খ্রিস্টানগণও ভালভাবে জানে।
৩. আল্লাহ তা‘আলা কথা বলেন এবং সে কথার ধ্বনিও রয়েছে।
English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Sura Anam
Verses :- 114-115
أَفَغَيْرَ اللّهِ أَبْتَغِي حَكَمًا
Shall I seek a judge other than Allah?
Allah tells His Prophet to say to these polytheists who worship others besides Allah,
أَفَغَيْرَ اللّهِ أَبْتَغِي حَكَمًا
Shall I seek a judge other than Allah…
between you and I,
وَهُوَ الَّذِي أَنَزَلَ إِلَيْكُمُ الْكِتَابَ مُفَصَّلً
while it is He Who has sent down unto you the Book, explained… (in detail),
وَالَّذِينَ اتَيْنَاهُمُ الْكِتَابَ
and those unto whom We gave the Scripture,
the Jews and the Christians,
يَعْلَمُونَ أَنَّهُ مُنَزَّلٌ مِّن رَّبِّكَ بِالْحَقِّ
know that it is revealed from your Lord in truth.
because the previous Prophets have conveyed the good news of you coming to them.
Allah’s statement,
فَلَ تَكُونَنَّ مِنَ الْمُمْتَرِينَ
So be not you of those who doubt.
is similar to His other statement,
فَإِن كُنتَ فِي شَكٍّ مِّمَّأ أَنزَلْنَأ إِلَيْكَ فَاسْأَلِ الَّذِينَ يَقْرَءُونَ الْكِتَـبَ مِن قَبْلِكَ لَقَدْ جَأءَكَ الْحَقُّ مِن رَّبِّكَ فَلَ تَكُونَنَّ مِنَ الْمُمْتَرِينَ
So if you are in doubt concerning that which We have revealed unto you, then ask those who are reading the Book before you. Verily, the truth has come to you from your Lord. So be not of those who doubt (it). (10:94)
The conditional `if’ in this Ayah does not mean that `doubt’ will ever occur to the Prophet.
Allah said
وَتَمَّتْ كَلِمَتُ رَبِّكَ صِدْقًا وَعَدْلاً
And the Word of your Lord has been fulfilled in truth and in justice.
Qatadah commented,
“In truth concerning what He stated and in justice concerning what He decided.”
Surely, whatever Allah says is the truth and He is Most Just in what He commands. All of Allah’s statements are true, there is no doubt or cause for speculation about this fact, and all His commandments are pure justice, besides which there is no justice. All that He forbade is evil, for He only forbids what brings about evil consequences.
Allah said in another Ayah,
يَأْمُرُهُم بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَـهُمْ عَنِ الْمُنْكَرِ
He commands them with good; and forbids them from evil… (7:157) until the end of the Ayah.
لااَّ مُبَدِّلِ لِكَلِمَاتِهِ
None can change His Words.
meaning, none can avert Allah’s judgment whether in this life or the Hereafter.
وَهُوَ السَّمِيعُ
And He is the All-Hearer,
Hearing, His servants’ statements,
الْعَلِيمُ
The All-Knower.
of their activities and lack of activity, Who awards each according to their deeds.
তাফসীরে ইবনে কাসীর বলেছেন:-
১১৪-১১৫ নং আয়াতের তাফসীর:
মহান আল্লাহ্ স্বীয় নবীকে সম্বোধন করে বলেছেন, হে নবী (সঃ)! তুমি এই মুশরিকদেরকে বলে দাও- আমি কি আমার ও তোমাদের মধ্যে আল্লাহকে ছাড়া আর কাউকেও বিচারক ও মীমাংসাকারী রূপে অনুসন্ধান করবো? অথচ তিনি তোমাদের কাছে একটি বিস্তারিতভাবে লিখিত কিতাব অবতীর্ণ করেছেন। শুধু তোমাদের জন্যে নয়, বরং এই কিতাব তিনি আহলে কিতাবদের জন্যেও অবতীর্ণ করেছেন। ইয়াহুদী ও নাসারা সবাই এটা জানে যে, এই কিতাব সত্য সত্যই আল্লাহ তা’আলার নিকট থেকেই অবতীর্ণ হয়েছে। কেননা, তোমাদের ব্যাপারে তাদের কিতাবে পূর্ববর্তী নবীদের শুভ সংবাদ বিদ্যমান রয়েছে। সুতরাং তোমরা সন্দেহের মধ্যে পতিত হয়ো না। যেমন আল্লাহ পাক বলেনঃ “আমি তোমার উপর যা অবতীর্ণ করেছি তাতে যদি তোমার কোন সন্দেহ হয় তবে তোমার পূর্ববর্তী কিতাবের যারা পাঠক তাদেরকে জিজ্ঞেস কর, তোমার কাছে আমার পক্ষ থেকে সত্য জিনিসই এসেছে, সুতরাং তুমি সন্দেহ পোষণকারীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না।” এই আয়াতটি শর্তরূপে এসেছে, আর শর্ত প্রকাশিত হওয়া জরুরী নয়। এ জন্যেই নবী (সঃ) বলেনঃ “আমি সন্দেহও করি না এবং জিজ্ঞেস করারও আমার প্রয়োজন নেই।”
(আরবী) অর্থাৎ হে নবী (সঃ)! তোমার প্রভুর বাণী সত্যতা ও ইনসাফের দিক দিয়ে পরিপূর্ণতা লাভ করেছে। যা কিছু তিনি বলেন তার সবই সত্য। তা যে সত্য এতে কোন সন্দেহই থাকতে পারে না। আর যা কিছু তিনি হুকুম করেন তা ইনসাফ ছাড়া আর কিছু হতে পারে না। তিনি যা থেকে বিরত থাকতে বলেন তা বাতিল ও ভিত্তিহীনই হয়ে থাকে। তিনি খারাপ ও অন্যায় থেকেই বিরত থাকতে বলেন। যেমন তিনি বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “তিনি তাদেরকে ভাল কাজের আদেশ করেন এবং মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করেন।” (৭:১৫৭)। (আরবী) অর্থাৎ দুনিয়া ও আখিরাতে তার হুকুম পরিবর্তনকারী কেউই নেই। তিনি স্বীয় বান্দাদের কথা শুনে থাকেন এবং তাদের সমুদয় কাজ সম্পর্কে তিনি পূর্ণ ওয়াকিফহাল। প্রত্যেক আমলকারীর আমলের বিনিময় তিনি আমল অনুযায়ীই দিয়ে থাকেন।
তাফসীরে আবুবকর যাকারিয়া বলেছেন:-
[১] অর্থাৎ তোমরা কি চাও যে, আল্লাহ তা’আলার এ ফয়সালার পর আমি অন্য কোন ফয়সালাকারী অনুসন্ধান করি? না, তা হতে পারে না। এরপর কুরআনুল কারমের এমন কতিপয় বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা হয়েছে, যেগুলো স্বয়ং কুরআনের সত্যতা এবং আল্লাহর কালাম হওয়ারই প্রমাণ। বলা হয়েছে যে, (এক) কুরআন আল্লাহর পক্ষ থেকে নাযিলকৃত। এটি একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ ও অলৌকিক গ্রন্থ- এর মোকাবেলা করতে সারা বিশ্ব অক্ষম। (দুই) যাবতীয় গুরুত্বপূর্ণ ও মৌলিক বিষয়বস্তু এতে বিস্তারিতভাবে বর্ণিত হয়েছে। বিস্তারিত কিতাব নাযিল করার দুটি অর্থ হতে পারে। এক. এখানে হারাম ও হালালের বিধান সম্পূর্ণভাবে বিবৃত করা হয়েছে। কোন প্রকার সন্দেহে ফেলে রাখা হয়নি। দুই. এ কুরআন একসাথে নাযিল করা হয়নি, বরং পর্যায়ক্রমে কুরআনের আয়াতসমূহ নাযিল করা হয়েছে। যাতে করে আপনার অন্তর সুদৃঢ় হয়। আর যাতে করে তা থেকে প্রয়োজনীয় বিধান সংগ্রহ করা সম্ভব হয়। [কুরতুবী, বাগভী] (তিন) পূর্ববতী আহলে কিতাব ইয়াহুদী ও নাসারারাও নিশ্চিতভাবে জানে যে, কুরআন আল্লাহর পক্ষ থেকে নাযিলকৃত সত্য কালাম। এরপর তাদের মধ্যে যারা সত্যভাষী ছিল, তারা এ কথা প্রকাশও করেছে। পক্ষান্তরে যারা হঠকারী, তারা বিশ্বাস সত্ত্বেও তা প্রকাশ করেনি। [ফাতহুল কাদীর]
[২] কুরআনুল কারীমের এ কয়েকটি বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করার পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে সম্বোধন করা হয়েছে যে, এসব সুস্পষ্ট প্রমাণের পর “আপনি সংশয়কারীদের অন্তর্ভুক্ত হবেন না”। এটা জানা কথা যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোন সময়ই সংশয়কারী ছিলেন না, থাকতে পারেন না। তাই এখানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে সম্বোধন করা হলেও প্রকৃতপক্ষে উম্মতের অন্যান্য লোকদেরকে শোনানই এর উদ্দেশ্য। এছাড়া বিষয়টিকে জোরদার করার উদ্দেশ্যে সরাসরি তাকে সম্বোধন করা হয়েছে। অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কেই যখন এরূপ বলা হয়েছে, তখন অন্য আর কে এরূপ সন্দেহ করতে পারে? [ফাতহুল কাদীর] অথবা এখানে ধরে নেয়ার পর্যায়ে বলা হয়েছে যে, আপনি সন্দেহকারীদের অন্তর্ভুক্ত হবেন না। আর ধরে নেয়ার পর্যায়ে থাকলে সেটা হতেই হবে এমন কোন কথা নেই। সুতরাং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কখনো সন্দেহকারীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না। ইবন কাসীর আয়াতের আরেক অনুবাদ হচ্ছে যে, আপনি এ ব্যাপারে সন্দেহে থাকবেন না যে, যাদের ওপর কিতাব নাযিল হয়েছে তারা এর সত্যতা সম্পর্কে জানে। [বাগভী, কুরতুবী]
[৩] এ আয়াতে কুরআনুল কারমের আরো দুটি বৈশিষ্ট্যমূলক অবস্থা বর্ণিত হয়েছে। এগুলোও কুরআনুল কারীম যে আল্লাহর কালাম, এর প্রকৃষ্ট প্রমাণ। বলা হয়েছে, আপনার রব-এর কালাম সত্যতা, ইনসাফ ও সমতার দিক দিয়ে সম্পূর্ণ। তার কালামের কোন পরিবর্তনকারী নেই। এখানে (وَتَمَّتْ) শব্দে পরিপূর্ণ হওয়া বর্ণিত হয়েছে এবং (كَلِمَتُ رَبِّكَ) বলে কুরআনকে বুঝানো হয়েছে। [তাবারী] কুরআনের গোটা বিষয়বস্তু দু’প্রকার- (এক) যাতে বিশ্ব ইতিহাসের শিক্ষণীয় ঘটনাবলী, অবস্থা, সৎকাজের জন্য পুরস্কারের ওয়াদা এবং অসৎ কাজের জন্য শাস্তির ভীতি-প্রদর্শন বর্ণিত হয়েছে এবং (দুই) যাতে মানব জাতির কল্যাণ ও সাফল্যের বিধান বর্ণিত হয়েছে। কুরআনুল কারীমের এ দু’প্রকার সাফল্য সম্পর্কে (صِدْقًا وَّعَدْلًا) দুই অবস্থা বর্ণনা করা হয়েছে। (صدق) এর সম্পর্ক প্রথম প্রকারের সাথে; অর্থাৎ কুরআনে যেসব ঘটনা, অবস্থা, ওয়াদা ও ভীতি বর্ণিত হয়েছে, সেগুলো সবই সত্য ও নির্ভুল। এগুলোতে কোনরূপ ভ্রান্তির সম্ভাবনা নেই। (عدل) এর সম্পর্ক দ্বিতীয় প্রকার অর্থাৎ বিধানের সাথে। উদ্দেশ্য এই যে, আল্লাহ তা’আলার সব বিধান (عدل) তথা ন্যায়বিচার ভিত্তিক। [ইবন কাসীর] অতএব, আয়াতের উদ্দেশ্য এই যে, আল্লাহর বিধান সুবিচার ও সমতার উপর ভিত্তিশীল। এতে কারো প্রতি অবিচার নেই এবং এমন কোন কঠোরতাও নেই যা মানুষ সহ্য করতে পারে না। অন্য এক আয়াতে বলা হয়েছেঃ
(لَا يُكَلِّفُ اللّٰهُ نَفْسًا اِلَّا وُسْعَهَا)
অর্থাৎ “আল্লাহ ক্ষমতা ও সামর্থ্যের বাইরে কারো প্রতি কোন বাধ্যবাধকতা আরোপ করেননি”। [সূরা আল-বাকারাহঃ ২৮৬]
কুরআনুল কারীমের এ অবস্থাটি অর্থাৎ কুরআনে বর্ণিত অতীত ও ভবিষ্যতের ঘটনাবলী, পুরস্কারের ওয়াদা ও শাস্তির ভীতি-প্রদর্শন সবই সত্য; এসব ব্যাপারে বিন্দুমাত্র সন্দেহের অবকাশ নেই। কুরআন বর্ণিত যাবতীয় বিধান সমগ্র বিশ্ব ও কেয়ামত পর্যন্ত আগমনকারী বংশধরদের জন্য সুবিচার ও সমতাভিত্তিক, এগুলোতে কারো প্রতি কোনরূপ অবিচার নেই এবং সমতা ও মধ্যবর্তিতার চুল পরিমাণও লঙ্ঘন নেই। কুরআনের এ বৈশিষ্ট্য আরো প্রকৃষ্টভাবে প্রমাণ করে যে, কুরআন আল্লাহর কালাম।
[৪] কুরআনের আরো একটি বৈশিষ্ট্য এই যে, (لَامُبَدِّلَ لِكَلِمٰتِهٖ) অর্থাৎ আল্লাহর কালামের কোন পরিবর্তনকারী নেই।’ তিনি যেটা যে সময়ে হবে বলেছেন সেটা সে সময়ে অবশ্যই অনুষ্ঠিত হবে। সেটাকে রদ বা পরিবর্তন করার কোন ক্ষমতা কারো নেই। [তাবারী] ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা এর অর্থ বলেন, আল্লাহর ফয়সালাকে কেউ রদ করতে পারবে না। তাঁর বিধানকে পরিবর্তন করার অধিকার কারও নেই। অনুরূপভাবে তাঁর ওয়াদার বিপরীতও হবার নয়। [বাগভী] পরিবর্তনের এক প্রকার হচ্ছে যে, এতে কোন ভুল প্রমাণিত করার কারণে পরিবর্তন করা। পূর্ব আয়াতে আল্লাহর কালামকে পূর্ণ বলার কারণে কারো মনে আসতে পারে যে, কোন কিছু পূর্ণ হওয়ার পর তাতে কি আবার অপূর্ণাঙ্গতা আসবে? এ রকম প্রশ্নের উত্তর এখানে দেয়া হয়েছে। আর পরিবর্তনের দ্বিতীয় প্রকার হচ্ছে জবরদস্তিমূলকভাবে পরিবর্তন করা। যেমন এর পূর্বে তাওরাত ও ইঞ্জীলকে পরিবর্তন করা হয়েছে। আল্লাহর কালাম এ সকল প্রকার পরিবর্তনেরই উর্ধ্বে। আল্লাহ তা’আলা স্বয়ং ওয়াদা করেছেনঃ
(اِنَّا نَحْنُ نَزَّلْنَا الذِّكْرَ وَاِنَّا لَهٗ لَحٰفِظُوْنَ)
অর্থাৎ “আমরাই এ কুরআন নাযিল করেছি এবং আমরাই এর সংরক্ষক”। [সূরা আল-হিজর:৯] এমতাবস্থায় কার সাধ্য আছে যে, এ রক্ষাবূহ্য ভেদ করে এতে পরিবর্তন করে? [রুহুল মা’আনী] কুরআনের উপর দিয়ে চৌদ্দশত বছর অতিবাহিত হয়ে গেছে। প্রতি শতাব্দি ও প্রতি যুগে এর শক্রদের সংখ্যাও এর অনুসারীদের তুলনায় বেশী ছিল; কিন্তু এর একটি যের-যবর পরিবর্তন করার সাধ্যও কারো হয়নি। অবশ্য একটি তৃতীয় প্রকার পরিবর্তন সম্ভবপর ছিল। তা এই যে, স্বয়ং আল্লাহ্ তা’আলা কুরআনকে রহিত করে পরিবর্তন করতে পারতেন। কিন্তু এ আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, কুরআনের পরে আর কোন নবী ও কিতাব আসবে না। এমনকি ঈসা আলাইহিস সালাম যখন আবার আসবেন তিনি এ কুরআন অনুসারেই জীবন অতিবাহিত করবেন। রুহুল মা’আনী] এ আয়াতে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম সর্বশেষ রাসূল এবং কুরআন সর্বশেষ কিতাব। একে রহিতকরণের আর কোন সম্ভাবনা নেই। কুরআনের অন্যান্য আয়াতে এ বিষয়বস্তুটি আরো সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে।
[৫] আয়াতের শেষাংশে বলা হয়েছে (وَهُوَ السَّمِيْعُ الْعَلِيْمُ) অর্থাৎ তারা যেসব কথাবার্তা বলছে, আল্লাহ সব শোনেন এবং সবার অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যত অবস্থা জানেন। তিনি প্রত্যেকের কার্যের প্রতিফল দেবেন। [তাবারী; আল- মানার; আত-তাহরীর ওয়াত তানওয়ীর]
তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
টিকা:৮১) এটি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উক্তি এবং এখানে মুসলমানদেরকে সম্বোধন করা হয়েছে। এখানে এ বক্তব্যের মর্ম হচ্ছে, আল্লাহ নিজের কিতাবে সুস্পষ্টভাবে এ সত্যগুলো ব্যক্ত করে দিয়েছেন এবং এ সিদ্ধান্তও জানিয়ে দিয়েছেন যে, অতি প্রাকৃতিক হস্তক্ষেপ ছাড়াই সত্যপন্থীদেরকে স্বাভাবিক পথেই সত্যের বিজয়ের জন্য প্রচেষ্টা ও সংগ্রাম চালাতে হবে। এক্ষেত্রে আমি কি আল্লাহ ছাড়া এমন কোন সর্বময় ক্ষমতার অধিকারীর সন্ধান করবো, যে আল্লাহর এ সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করবে এবং এমন কোন মু’জিযা পাঠাবে যার বদৌলতে এরা ঈমান আনতে বাধ্য হবে?
টিকা:৮২) অর্থাৎ ঘটনাবলী বিশ্লেষণ করার জন্য এসব কথাবার্তা আজ নতুন করে রচনা করা হয়নি যারা আসমানী কিতাবসমূহের জ্ঞান রাখে এবং নবীদের মিশন সম্পর্কে যারা অবগত তারা একথার সাক্ষ্য প্রদান করবে যে, যা কিছু কুরআনে বর্ণনা করা হচ্ছে তা সবই অকাট্য, আদি, অকৃত্রিম ও চিরন্তন সত্য এবং তার মধ্যে কখনো কোন পরিবর্তন সূচিত হয়নি।