(Book# 114/٢٦٤)-৪৬৬ www.motaher21.net সুরা: আল-আনয়াম ১২২ নং আয়াত:- أَوَ مَن كَانَ مَيْتًا فَأَحْيَيْنَاه এমন ব্যক্তি-যে ছিল প্রাণহীন, অতঃপর তাকে আমি জীবন দান করি… The Parable of the Disbeliever and the Believer ….

  • أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ

(Book# 114/٢٦٤)-৪৬৬
www.motaher21.net
সুরা: আল-আনয়াম
১২২ নং আয়াত:-
أَوَ مَن كَانَ مَيْتًا فَأَحْيَيْنَاه
এমন ব্যক্তি-যে ছিল প্রাণহীন, অতঃপর তাকে আমি জীবন দান করি…

The Parable of the Disbeliever and the Believer ….

সুরা: আল-আনয়াম
আয়াত নং :-১২২

اَوَ مَنْ كَانَ مَیْتًا فَاَحْیَیْنٰهُ وَ جَعَلْنَا لَهٗ نُوْرًا یَّمْشِیْ بِهٖ فِی النَّاسِ كَمَنْ مَّثَلُهٗ فِی الظُّلُمٰتِ لَیْسَ بِخَارِجٍ مِّنْهَاؕ كَذٰلِكَ زُیِّنَ لِلْكٰفِرِیْنَ مَا كَانُوْا یَعْمَلُوْنَ

যে ব্যক্তি প্রথমে মৃত ছিল, পরে আমি তাকে জীবন দিয়েছি এবং তাকে এমন আলো দিয়েছি যার উজ্জ্বল আভায় সে মানুষের মধ্যে জীবন পথে চলতে পারে, সে কি এমন ব্যক্তির মতো হতে পারে, যে অন্ধকারের বুকে পড়ে আছে এবং কোনক্রমেই সেখানে বের হয় না? কাফেরদের জন্য তো এভাবেই তাদের কর্মকাণ্ডকে সুদৃশ্য বানিয়ে দেয়া হয়েছে।

তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-

টিকা:৮৮) এখানে মৃত্যু বলা হয়েছে অজ্ঞতা, মূর্খতা ও চেতনাবিহীন অবস্থাকে। আর জীবন বলতে জ্ঞান, উপলব্ধি ও প্রকৃত সত্যকে চিনতে পারার অবস্থাকে বুঝানো হয়েছে। যে ব্যক্তির মধ্যে ভুল ও নির্ভুলের পার্থক্যবোধ নেই এবং যার সত্য-সরল পথের স্বরূপ জানা নেই, জীব বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে সে জীবন সম্পন্ন হলেও প্রকৃত সত্যের বিচারে সে মনুষ্য পদবাচ্য নয়। সে অবশ্যি জীবন্ত প্রাণী কিন্তু জীবন্ত মানুষ নয়। জীবন্ত মানুষ একমাত্র তাকেই বলা যাবে যে সত্য-মিথ্যা, ভাল-মন্দ, ন্যায়-অন্যায় ও ভুল-নির্ভুলের চেতনা রাখে।

টিকা:৮৯) অর্থাৎ যে মানুষটি মানবিক চেতনা লাভ করেছে এবং জ্ঞানের উজ্জ্বল আলোয় বাঁকা পথগুলোর মাঝখানে পড়ে থাকা সত্যের সোজা রাজপথটি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে, তার ব্যাপারে কেমন করে আশা করা যেতে পারে যে, সে এমনসব চেতনাবিহীন লোকদের মতো দুনিয়ায় জীবন যাপন করবে, যারা অজ্ঞতা ও মূর্খতার অন্ধকারে পথ হারা হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে?

টিকা:৯০) অর্থাৎ যাদেরকে আলো দেখানো হয় এবং তারা তা গ্রহণ করতে অস্বীকার করে আর যাদেরকে সত্য-সরল পথের দিকে আহবান জানানো হয় এবং তারা সে আহবানে কর্ণপাত না করে নিজেদের বাঁকা পথেই চলতে থাকে, তাদের জন্য এটি আল্লাহর বিধান যে, এরপর অন্ধকারই তাদের কাছে ভাল মনে হতে থাকবে। তারা অন্ধের মতো পথ হাতড়ে চলা এবং এখানে সেখানে ধাক্কা খেয়ে পড়ে যাওয়া পছন্দ করবে। ঝোপ-ঝাড় তাদের চোখে বাগান এবং কাঁটা তাদের দৃষ্টিতে ফুল হয়ে দেখা দেবে। সব রকমের অন্যায়, অসৎকাজ ও ব্যভিচারে তারা আনন্দ পায়। প্রত্যেকটি নির্বুদ্ধিতাকে তারা গবেষণা ও অনুসন্ধানলব্ধ কীর্তি মনে করে। প্রত্যেকটি বিপর্যয় সৃষ্টিকারী পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তারা এ আশায় আরো বড় বিপর্যয় সৃষ্টিকারী পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য তৈরী হয়ে যায় যে, প্রথমবারে তো ঘটনাক্রমে জ্বলন্ত অংগারে হাত লেগেছিল কিন্তু এবারে আর কোন অনিশ্চয়তা নেই, এবারে একেবারে নির্ঘাৎ মনি-মুক্তো হাতে ঠেকবে।

English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Sura Anam
Verses :- 122

أَوَ مَن كَانَ مَيْتًا فَأَحْيَيْنَاه
The Parable of the Disbeliever and the Believer ……

The Parable of the Disbeliever and the Believer

Allah says;

أَوَ مَن كَانَ مَيْتًا فَأَحْيَيْنَاهُ وَجَعَلْنَا لَهُ نُورًا يَمْشِي بِهِ فِي النَّاسِ كَمَن

Is he who was dead, and We gave him life, and set for him a light, whereby he can walk among men —

This is an example that Allah has given of the believer who was dead, meaning, wandering in confusion and misguidance. Then, Allah brought life to him, by bringing life to his heart with faith, guiding him to it and guiding him to obeying His Messengers,
لَهُ نُورًا يَمْشِي بِهِ فِي النَّاسِ كَمَن
(And set for him a light whereby he can walk amongst men) for he became guided to where he should go and how to remain on the correct path.

The light mentioned here is the Qur’an, according to Ibn Abbas, as Al-Awfi and Ibn Abi Talhah reported from him.

As-Suddi said that the light mentioned here is Islam.

Both meanings are correct.

مَّثَلُهُ فِي الظُّلُمَاتِ لَيْسَ

Like him who is in the darkness,

of ignorance, desires and various types of deviation,

بِخَارِجٍ مِّنْهَا

From which he can never come out,

for he is unable to find a way out from what he is in.

In Musnad Ahmad, it is recorded that the Prophet said;

إِنَّ اللهَ خَلَقَ خَلْقَهُ فِي ظُلْمَةٍ ثُمَّ رَشَّ عَلَيْهِمْ مِنْ نُورِهِ فَمَنْ أَصَابَهُ ذَلِكَ النُّورُ اهْتَدَى وَمَنَ أَخْطَأَهُ ضَل

Allah created creation in darkness, then He showered His Light upon them. Whoever was struck by that light is guided, whoever it missed is astray.

Allah said in other Ayat,

اللَّهُ وَلِيُّ الَّذِينَ ءامَنُواْ يُخْرِجُهُم مِّنَ الظُّلُمَـتِ إِلَى النُّورِ وَالَّذِينَ كَفَرُواْ أَوْلِيَأوُهُمُ الطَّـغُوتُ يُخْرِجُونَهُم مِّنَ النُّورِ إِلَى الظُّلُمَـتِ أُوْلَـيِكَ أَصْحَـبُ النَّارِ هُمْ فِيهَا خَـلِدُونَ

Allah is the Guardian of those who believe. He brings them out from darkness into light. But as for those who disbelieve, their friends are Taghut, they bring them out from light into darkness. Those are the dwellers of the Fire, and they will abide therein forever. (2:257)

and,

أَفَمَن يَمْشِى مُكِبّاً عَلَى وَجْهِهِ أَهْدَى أَمَّن يَمْشِى سَوِيّاً عَلَى صِرَطٍ مُّسْتَقِيمٍ

Is he who walks prone on his face, more rightly guided, or he who walks upright on the straight way! (67:22)

and,

مَثَلُ الْفَرِيقَيْنِ كَالاٌّعْمَى وَالاٌّصَمِّ وَالْبَصِيرِ وَالسَّمِيعِ هَلْ يَسْتَوِيَانِ مَثَلً أَفَلَ تَذَكَّرُونَ

The parable of the two parties is as the blind and the deaf and the seer and the hearer. Are they equal when compared! Will you not then take heed! (11:24)

and,

وَمَا يَسْتَوِى الاٌّعْمَى وَالْبَصِيرُ

وَلَا الظُّلُمَاتُ وَلَا النُّورُ

وَلَا الظِّلُّ وَلَا الْحَرُورُ

وَمَا يَسْتَوِى الاٌّحْيَأءُ وَلَا الاٌّمْوَاتُ إِنَّ اللَّهَ يُسْمِعُ مَن يَشَأءُ وَمَأ أَنتَ بِمُسْمِعٍ مَّن فِى الْقُبُورِ

إِنْ أَنتَ إِلاَّ نَذِيرٌ

Not alike are the blind and the seeing. Nor are darkness and light. Nor are the shade and the sun’s heat. Nor are the living and the dead. Verily, Allah makes whom He wills to hear, but you cannot make hear those who are in the graves. You are only a warner. (35:19-23)

There are many other Ayat on this subject.

We explained before why Allah mentioned the light in the singular sense and the darkness in the plural sense when we explained the Ayah at the beginning of the Surah,
وَجَعَلَ الظُّلُمَاتِ وَالنُّورَ
(And originated the darknesses and the light). (6:1)

Allah’s statement,

كَذَلِكَ زُيِّنَ لِلْكَافِرِينَ مَا كَانُواْ يَعْمَلُونَ

Thus it is made fair seeming to the disbelievers that which they used to do.

means, We made their ignorance and misguidance appear fair to them, as Allah decreed out of His wisdom, there is no deity worthy of worship except Him alone without partners.

তাফসীরে ইবনে ‌কাসীর বলেছেন:-
এটা আল্লাহ তাআলা দৃষ্টান্ত হিসাবে বর্ণনা করেছেন যে, মুমিন ব্যক্তি, যে প্রথমে মৃত ছিল অর্থাৎ পথভ্রষ্টতায় ধ্বংসপ্রাপ্ত ও হয়রান-পেরেশান ছিল, তাকে তিনি জীবিত করলেন, অর্থাৎ তার অন্তরে ঈমানরূপ সম্পদ দান করলেন এবং রাসূল (সঃ)-এর অনুসরণ করার তাওফীক প্রদান করলেন। তার জন্যে তিনি একটা নূর বা আলোকের ব্যবস্থা করলেন, যার সাহায্যে সে পথ চলতে পারছে। এই কুরআন নূর বা আলোকই বটে। এই মুমিন কি ঐ ব্যক্তির মত হতে পারে যে স্বীয় অজ্ঞতা ও বিভ্রান্তির অন্ধকারে নিমজ্জিত রয়েছে? সে সেই অন্ধকার। থেকে কোনক্রমেই বের হতে পারছে না বা সেখান থেকে বের হওয়া তার জন্যে কখনও সম্ভবই নয়? যেমন নবী (সঃ) বলেছেন- “আল্লাহ তাআলা স্বীয় মাখলুককে অন্ধকারের মধ্যে সৃষ্টি করেছেন। তারপর তিনি ওর উপর আলো বর্ষণ করেছেন। যে ব্যক্তি ঐ নূর বা আলো পেয়ে গেলো সে হিদায়াত লাভ করলো। আর যে ওটা পেলো না সে দুনিয়াতে পথভ্রষ্টই থেকে গেলো। (এটা তিবরানী (রঃ) হাকাম ইবনে আবান (রঃ)-এর হাদীস হতে বর্ণনা করেছেন) যেমন আল্লাহ পাক বলেনঃ “আল্লাহ ঐ লোকদের ওলী বা অভিভাবক, যারা ঈমান এনেছে, তিনি তাদেরকে অন্ধকার থেকে বের করে আলোকের দিকে নিয়ে আনেন, আর যারা কাফির হয়েছে, তাদের ওলী হচ্ছে শয়তানের দল, তারা তাদেরকে আলো হতে বের করে অন্ধকারের দিকে নিয়ে যায়, এই প্রকারের লোকই জাহান্নামবাসী, তারা ওর মধ্যে অনন্তকাল অবস্থান করবে।”

আল্লাহ তা’আলা অন্য জায়গায় বলেনঃ “যে ব্যক্তি (হোঁচট খেয়ে) উপুড় হয়ে পড়তে পড়তে (পথ) চলছে, সে কি গন্তব্যস্থানে তাড়াতাড়ি পৌঁছতে পারে, না সেই ব্যক্তি, যে সোজা এক সমতল পথে গমন করছে?” মহান আল্লাহ আরও বলেনঃ “দু’ প্রকারের লোকদের দৃষ্টান্ত হচ্ছে এইরূপ যে, একজন অন্ধ ও বধির এবং অন্যজন চক্ষু ও কর্ণ বিশিষ্ট, এ দু’জন কি সমান হতে পারে? তোমরা কি এটা মোটেই বুঝছো না?” তিনি আর এক জায়গায় বলেনঃ “অন্ধ ও দৃষ্টিশক্তি সম্পন্ন ব্যক্তি সমান হতে পারে না এবং সমান হতে পারে না অন্ধকার ও আলো, ছায়া ও (রৌদ্রের) প্রখরতা, আর সমান হতে পারে না জীবিত ও মৃত, আল্লাহ যাকে চান তাকে শুনিয়ে থাকেন এবং যে ব্যক্তি কবরে রয়েছে তাকে তুমি শুনাতে পার না। তুমি তো শুধুমাত্র ভয় প্রদর্শক।” এই বিষয়ের উপর কুরআন কারীমের বহু আয়াত রয়েছে। এই দৃষ্টান্তগুলোতে হচ্ছে আলো ও অন্ধকার, সূরার প্রথমে এই দৃষ্টান্ত দ্বারাই সূচনা করা হয়েছে অর্থাৎ দ্বারা শুরু করা হয়েছে।

কারও কারও ধারণা এই যে, এই দৃষ্টান্ত দ্বারা দু’টি নির্দিষ্ট লোককে বুঝানো হয়েছে। সুতরাং বলা হয়েছে যে, হযরত উমার ইবনে খাত্তাব (রাঃ) যিনি প্রথমে মৃত (পথভ্রষ্ট) ছিলেন, অতঃপর আল্লাহ তাকে জীবিত করেছেন (সুপথ দেখিয়েছেন) এবং তাঁকে নূর বা আলো দান করেছেন। তিনি সেই আলো নিয়ে লোকদের মধ্যে চলাফেরা করেছেন। আবার একথাও বলা হয়েছে যে, হযরত আম্মার ইবনে ইয়াসির (রাঃ)-কে বুঝানো হয়েছে। কিন্তু যে ব্যক্তি অন্ধকারের মধ্যে রয়েছে সে তা থেকে বের হতে পারে না। সে হচ্ছে আবু জেহেল (আমর ইবনে হিশাম)। সঠিক কথা এই যে, এই আয়াতটি আম বা সাধারণ। সমস্ত মুমিন ও কাফিরই এর অন্তর্ভুক্ত রয়েছে (আরবী) অর্থাৎ এরূপেই কাফিরদের জন্যে তাদের কার্যকলাপ চাকচিক্যময় বানিয়ে দেয়া হয়েছে। আর এটা হচ্ছে তাদের অজ্ঞতা ও পথভ্রষ্টতারই কারণ।

তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ বলেছেন:-

১২২ নং আয়াতের তাফসীর:

এ আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা একটি দৃষ্টান্ত পেশ করেছেন। যে মু’মিন ব্যক্তি মৃত তথা পথভ্রষ্ট ছিল অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা তাকে জীবিত তথা ঈমান দিলেন, হিদায়াত দান করলেন এবং কুরআন ও সুন্নাহর অনুসারী হবার তাওফীক দান করলেন, এ ব্যক্তির মত কি ঐ ব্যক্তি যে কুফরীর অন্ধকারে নিমজ্জিত ও সেখান থেকে বের হতে পারে না? না, কখনো তারা দু’জন সমান হতে পারে না। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(وَمَا يَسْتَوِي الْأَعْمٰي وَالْبَصِيْرُ – وَلَا الظُّلُمٰتُ وَلَا النُّوْرُ – وَلَا الظِّلُّ وَلَا الْحَرُوْرُ – وَمَا يَسْتَوِي الْأَحْيَا۬ءُ وَلَا الْأَمْوَاتُ)

“আর সমান নয় অন্ধ ও দৃষ্টিমান ব্যক্তি এবং সমান নয় অন্ধকার ও আলো এবং সমান নয় ছায়া ও রৌদ্র। আর সমান নয় জীবিত ও মৃত।”(সূরা ফাতির ৩৫:১৯-২২)

সুতরাং একজন মু’মিন ও একজন কাফির কখনো সমান হতে পারে না। বরং মু’মিনরাই সফলকাম ও মর্যাদায় শ্রেষ্ঠ।

Leave a Reply