أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book# 114/٢٦٥)-৪৬৭
www.motaher21.net
সুরা: আল-আনয়াম
১২৩-১২৪ নং আয়াত:-
مُجَرِمِيهَا لِيَمْكُرُواْ فِيهَا
অপরাধীদের জন্য তারা সেখানে চক্রান্ত করে….
Wicked people to plot therein..
وَ کَذٰلِکَ جَعَلۡنَا فِیۡ کُلِّ قَرۡیَۃٍ اَکٰبِرَ مُجۡرِمِیۡہَا لِیَمۡکُرُوۡا فِیۡہَا ؕ وَ مَا یَمۡکُرُوۡنَ اِلَّا بِاَنۡفُسِہِمۡ وَ مَا یَشۡعُرُوۡنَ ﴿۱۲۳﴾
আর এমনিভাবেই আমি প্রত্যেক জনপদে অপরাধীদের জন্য কিছু সর্দার নিয়োগ করেছি যেন তারা সেখানে চক্রান্ত করে। তাদের সে চক্রান্ত নিজেদের বিরুদ্ধেই। কিন্তু তারা তা উপলব্ধি করতে পারেনা।
وَ اِذَا جَآءَتۡہُمۡ اٰیَۃٌ قَالُوۡا لَنۡ نُّؤۡمِنَ حَتّٰی نُؤۡتٰی مِثۡلَ مَاۤ اُوۡتِیَ رُسُلُ اللّٰہِ ؕۘؔ اَللّٰہُ اَعۡلَمُ حَیۡثُ یَجۡعَلُ رِسَالَتَہٗ ؕ سَیُصِیۡبُ الَّذِیۡنَ اَجۡرَمُوۡا صَغَارٌ عِنۡدَ اللّٰہِ وَ عَذَابٌ شَدِیۡدٌۢ بِمَا کَانُوۡا یَمۡکُرُوۡنَ ﴿۱۲۴﴾
তাদের সামনে যখন কোন নিদর্শন আসে তখন তারা বলেঃ আল্লাহর রাসূলদেরকে যা কিছু দেয়া হয়েছিল, আমাদের অনুরূপ জিনিস না দেয়া পর্যন্ত আমরা ঈমান আনবনা। রিসালাতের দায়িত্ব কার উপর অর্পণ করতে হবে তা আল্লাহ ভালভাবেই জানেন। এই অপরাধী লোকেরা অতি সত্ত্বরই তাদের ষড়যন্ত্র ও প্রতারণার জন্য আল্লাহর নিকট লাঞ্ছনা ও কঠিন শাস্তি প্রাপ্ত হবে।
১২৩-১২৪ নং আয়াতের তাফসীর:
তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ বলেছেন:-
আল্লাহ তা‘আলা নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলেন: হে মুহাম্মাদ! তোমার এলাকায় যেমন বড় বড় নেতারা পাপাচারে লিপ্ত, মানুষদেরকে কুফরীর দিকে আহ্বান করে, আল্লাহ তা‘আলার পথে বাধা দেয়, তোমার বিরোধিতা করে, তেমনি প্রত্যেক নাবীর সমাজে এরূপ বড় বড় নেতারা তাদের বিরোধিতা করত, নাবীদের কষ্ট দিত। অবশেষে তাদের পরিণতি খুবই খারাপ হয়েছিল। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَمَآ أَرْسَلْنَا فِيْ قَرْيَةٍ مِّنْ نَّذِيْرٍ إِلَّا قَالَ مُتْرَفُوْهَآ إِنَّا بِمَآ أُرْسِلْتُمْ بِه۪ كٰفِرُوْنَ)
“যখনই আমি কোন জনপদে সতর্ককারী প্রেরণ করেছি তখনই তার বিত্তশালী অধিবাসীরা বলেছে- তোমরা যে বিষয়সহ প্রেরিত হয়েছ আমরা তা প্রত্যাখ্যান করছি। (সূরা সাবা ৩৪:৩৪)
يَمْكُرُوْنَ ‘তারা ষড়যন্ত্র করে’ এর দ্বারা উদ্দেশ্য হল: চাকচিক্যময় কথা, প্রভাব ও ক্ষমতা দ্বারা মানুষকে ভ্রষ্টতার পথে আহ্বান করা। কারণ সমাজের প্রভাব-প্রতিপত্তি ও ক্ষমতাশীনরা সঠিক পথের বিরোধিতা করলে এবং মানুষকে সঠিক পথে বাধা দিলে সাধারণ জনগণের কোন উপায় থাকে না। যেমন আল্লাহ তা‘আলা নূহ (আঃ)-এর সম্প্রদায় সম্পর্কে বলেন:
(وَمَكَرُوْا مَكْرًا كُبَّارًا )
“আর তারা ভয়ানক ষড়যন্ত্র করেছে।”(সূরা নূহ ৭১:২২)
এরূপ প্রত্যেক যুগেই সমাজের নেতৃস্থানীয়রা সাধারণ মানুষের ওপর জুলুম-অত্যাচার করেছে। এ ছাড়াও সূরা সাবার ৩১-৩৩ নং আয়াতে এ সম্পর্কে আলোচনা রয়েছে।
(وَمَا يَمْكُرُوْنَ إِلَّا بِأَنْفُسِهِمْ)
‘তারা শুধু তাদের নিজেদের বিরুদ্ধেই ষড়যন্ত্র করে, অর্থাৎ তাদের নিজেদের অপরাধ ও চক্রান্তের অশুভ পরিণাম এবং তাদের অনুসারীদের অনুসরণের মন্দ পরিণামও তাদের ওপরই বর্তাবে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَلَيَحْمِلُنَّ أَثْقَالَهُمْ وَأَثْقَالًا مَّعَ أَثْقَالِهِمْ ز وَلَيُسْأَلُنَّ يَوْمَ الْقِيٰمَةِ عَمَّا كَانُوْا يَفْتَرُوْنَ)
“তারা অবশ্যই নিজেদের পাপের ভার বহন করবে এবং নিজেদের বোঝার সাথে আরও কিছু বোঝা; আর তারা যে মিথ্যা উদ্ভাবন করত সে সম্পর্কে কিয়ামত দিবসে অবশ্যই তাদেরকে প্রশ্ন করা হবে”(সূরা আনকাবুত ২৯:১৩)
(مِثْلَ مَآ أُوْتِيَ رُسُلُ اللّٰهِ)
‘আল্লাহর রাসূলদেরকে যা দেয়া হয়েছিল আমাদেরকেও তা না দেয়া পর্যন্ত’অর্থাৎ যখন তাদের কাছে নাবী-রাসূলগণ সুস্পষ্ট প্রমাণ নিয়ে আগমন করতেন তখন তারা বলত: নাবীদের কাছে ফেরেশতারা যেমন রিসালাত নিয়ে আসে আমাদের কাছেও তেমন রিসালাত না নিয়ে আসা পর্যন্ত তোমাদের কথা বিশ্বাস করব না।
যেমন তারা বলে:
(وَ قَالَ الَّذِيْنَ لَا يَرْجُوْنَ لِقَآءَنَا لَوْلَآ أُنْزِلَ عَلَيْنَا الْمَلٰٓئِكَةُ أَوْ نَرٰي رَبَّنَا)
“যারা আমার সাক্ষাৎ কামনা করে না তারা বলে: ‘আমাদের নিকট ফেরেশ্তা অবতীর্ণ করা হয় না কেন? অথবা আমরা আমাদের প্রতিপালককে প্রত্যক্ষ করি না কেন?’’
(اَللّٰهُ أَعْلَمُ حَيْثُ يَجْعَلُ رِسَالَتَه۫)
‘আল্লাহ তাঁর রিসালাতের ভার কার ওপর অর্পণ করবেন তা তিনিই ভাল জানেন।’অর্থাৎ কাকে নাবী বানানো যাবে, কে নবুওয়াতের উপযুক্ত তা একমাত্র আল্লাহ তা‘আলাই ভাল জানেন। এ সিদ্ধান্ত মানুষের হাতে নেই। যেমন কাফিরদের বক্তব্য সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَقَالُوْا لَوْلَا نُزِّلَ هٰذَا الْقُرْاٰنُ عَلٰي رَجُلٍ مِّنَ الْقَرْيَتَيْنِ عَظِيْمٍ )
“এবং তারা বলে: এই কুরআন কেন অবতীর্ণ করা হল না দু’জনপদের কোন প্রতিপত্তিশালী ব্যক্তির ওপর?”(সূরা যুখরুফ ৪৩:৩১) অর্থাৎ তারা বলতে চাচ্ছে- এ কুরআন অত্র এলাকার একজন স্বনামধন্য ও প্রভাবশালী ব্যক্তির উপর নাযিল হল না কেন, তা হলে তার অনুসরণ করতাম।
অতএব যারা আল্লাহ তা‘আলার বিধান মেনে নিতে অবাধ্য হয় তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(إِنَّ الَّذِيْنَ يَسْتَكْبِرُوْنَ عَنْ عِبَادَتِيْ سَيَدْخُلُوْنَ جَهَنَّمَ دٰخِرِيْنَ)
“নিশ্চয়ই যারা আমার ইবাদত করতে অহংকার করে, তারা অবশ্যই জাহান্নামে প্রবেশ করবে লাঞ্ছিত হয়ে।” (সূরা মু’মিনূন ৪০:৬০)
প্রত্যেক যুগের সমসাময়িক রাঘব বোয়ালরাই ইসলাম গ্রহণ করা থেকে বিরত ছিল এবং ইসলামের সাথে শত্র“তা করেছিল। আজও তারাই ইসলামের বিরোধিতা করছে, কিয়ামত পর্যন্ত এরূপ এক শ্রেণি থাকবে যারা নিজেরা সত্য গ্রহণ করবে না এবং অন্যদেরকেও সত্য গ্রহণে বাধা দেবে।
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. প্রত্যেক যুগেই কিছু নেতা ও উঁচু শ্রেণির লোকেরা নাবীদের বিরোধিতা করেছিল।
২. খারাপ চক্রান্তের অশুভ পরিণতি নিজের ওপর বর্তায়।
৩. কুরআন অবতীর্ণকালে মক্কার মুশরিকদের অবাধ্যতামূলক আচরণ সম্পর্কে জানতে পারলাম।
৪. রিসালাত আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে দেয়া হয়; কেউ তা অর্জন করতে পারে না।
English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Sura Anam
Verses :- 123-124
مُجَرِمِيهَا لِيَمْكُرُواْ فِيهَا
Wicked people to plot therein..
Evil Plots of the Leaders of the Criminals and their Subsequent Demise
Allah says:
وَكَذَلِكَ جَعَلْنَا فِي كُلِّ قَرْيَةٍ أَكَابِرَ مُجَرِمِيهَا لِيَمْكُرُواْ فِيهَا
And thus We have set up in every town great ones of its wicked people to plot therein.
Allah says:Just as We appointed chiefs and leaders for the criminals who call to disbelief, hinder from the path of Allah, and oppose and defy you in your town, O Muhammad. Such was also the case with the Messengers before you, who were tested with the same. But the good end was always theirs.’ Allah said in other Ayat,
وَكَذَلِكَ جَعَلْنَا لِكُلِّ نَبِىٍّ عَدُوّاً مِّنَ الْمُجْرِمِينَ
Thus have We made for every Prophet an enemy among the criminals. (25:31)
Allah said,
وَإِذَا أَرَدْنَأ أَن نُّهْلِكَ قَرْيَةً أَمَرْنَا مُتْرَفِيهَا فَفَسَقُواْ فِيهَا
And when We decide to destroy a town, We send a definite order to those among them who lead a life of luxury, and they transgress therein. (17:16)
meaning, We command them to obey Us, but they defy the command and as a consequence, We destroy them.
It was also said that, “We send a definite order”,
in the last Ayah means, “We decree for them,” as Allah stated here
لِيَمْكُرُواْ فِيهَا
(to plot therein).
Ibn Abi Talhah reported that Ibn Abbas explained the Ayah
أَكَابِرَ مُجَرِمِيهَا لِيَمْكُرُواْ فِيهَا
(…great ones of its wicked people to plot therein),
“We give the leadership to these wicked ones and they commit evil in it. When they do this, We destroy them with Our torment.”
Mujahid and Qatadah said that;
in the Ayah,
أَكَابِرَ مُجَرِمِيهَا
(great ones) refers to leaders.
I say that this is also the meaning of Allah’s statements,
وَمَأ أَرْسَلْنَا فِى قَرْيَةٍ مِّن نَّذِيرٍ إِلاَّ قَالَ مُتْرَفُوهَأ إِنَّا بِمَأ أُرْسِلْتُمْ بِهِ كَـفِرُونَ
وَقَالُواْ نَحْنُ أَكْثَـرُ أَمْوَلاً وَأَوْلَـداً وَمَا نَحْنُ بِمُعَذَّبِينَ
And We did not send a warner to a township, but those who were given the worldly wealth and luxuries among them, said:”We believe not in what you have been sent with.” And they say:”We have too much wealth and too many children and we are not going to suffer punishment.” (34:34-35)
And,
وَكَذَلِكَ مَأ أَرْسَلْنَا مِن قَبْلِكَ فِى قَرْيَةٍ مِّن نَّذِيرٍ إِلاَّ قَالَ مُتْرَفُوهَأ إِنَّا وَجَدْنَأ ءَابَأءَنَا عَلَى أُمَّةٍ وَإِنَّا عَلَى ءَاثَـرِهِم مُّقْتَدُونَ
And similarly, We sent not a warner before you to any town but the luxurious ones among them said:”We found our fathers following a certain way and religion, and we will indeed follow their footsteps.” (43:23)
`Plot’ in the Ayah (6:123) refers to beautified speech and various actions with which the evil ones call to misguidance.
Allah said about the people of Prophet Nuh, peace be upon him,
وَمَكَرُواْ مَكْراً كُبَّاراً
And they have plotted a mighty plot. (71:22)
Allah said,
وَقَالَ الَّذِينَ كَفَرُواْ لَن نُّوْمِنَ بِهَـذَا الْقُرْءَانِ وَلَا بِالَّذِى بَيْنَ يَدَيْهِ وَلَوْ تَرَى إِذِ الظَّـلِمُونَ مَوْقُوفُونَ عِندَ رَبِّهِمْ يَرْجِعُ بَعْضُهُمْ إِلَى بَعْضٍ الْقَوْلَ يَقُولُ الَّذِينَ اسْتُضْعِفُواْ لِلَّذِينَ اسْتَكْبَرُواْ لَوْلَا أَنتُمْ لَكُنَّا مُوْمِنِينَ
قَالَ الَّذِينَ اسْتَكْبَرُواْ لِلَّذِينَ اسْتُضْعِفُواْ أَنَحْنُ صَدَدنَـكُمْ عَنِ الْهُدَى بَعْدَ إِذْ جَأءَكُمْ بَلْ كُنتُمْ مُّجْرِمِينَ
وَقَالَ الَّذِينَ اسْتُضْعِفُواْ لِلَّذِينَ اسْتَكْبَرُواْ بَلْ مَكْرُ الَّيْلِ وَالنَّهَارِ إِذْ تَأْمُرُونَنَأ أَن نَّكْفُرَ بِاللَّهِ وَنَجْعَلَ لَهُ أَندَاداً
But if you could see when the wrongdoers will be made to stand before their Lord, how they will cast the (blaming) word one to another! Those who were deemed weak will say to those who were arrogant:”Had it not been for you, we should certainly have been believers.”
And those who were arrogant will say to those who were deemed weak:”Did we keep you back from guidance after it had come to you! Nay, but you were criminals.”
Those who were deemed weak will say to those who were arrogant:”Nay, but it was your plotting by night and day, when you ordered us to disbelieve in Allah and set up rivals for Him!” (34:31-33)
Ibn Abi Hatim reported that Ibn Abi Umar said that Sufyan said,
“Every `plot’ mentioned in the Qur’an refers to actions.”
Allah’s statement,
وَمَا يَمْكُرُونَ إِلاَّ بِأَنفُسِهِمْ وَمَا يَشْعُرُونَ
But they plot not except against themselves, and they perceive (it) not.
means, the harm of their wicked plots, as well as misguiding those whom they lead astray, will only strike them.
Allah said in other Ayat,
وَلَيَحْمِلُنَّ أَثْقَالَهُمْ وَأَثْقَالاً مَّعَ أَثْقَالِهِمْ
And verily, they shall bear their own loads, and other loads besides their own. (29:13)
and,
وَمِنْ أَوْزَارِ الَّذِينَ يُضِلُّونَهُمْ بِغَيْرِ عِلْمٍ أَلَا سَأءَ مَا يَزِرُونَ
And also of the burdens of those whom they misled without knowledge. Evil indeed is that which they shall bear! (16:25)
Allah said
وَإِذَا جَاءتْهُمْ ايَةٌ قَالُواْ لَن نُّوْمِنَ حَتَّى نُوْتَى مِثْلَ مَا أُوتِيَ رُسُلُ اللّهِ
And when there comes to them a sign they say:”We shall not believe until we receive the like of that which the Messengers of Allah received.”
When there comes to them a sign they say,
لَن نُّوْمِنَ حَتَّى نُوْتَى مِثْلَ مَا أُوتِيَ رُسُلُ اللّهِ
(We shall not believe until we receive the like of that which the Messengers of Allah received.) until the angels bring us the Message from Allah, just as they brought it to the Messengers.
In another Ayah, Allah said,
وَقَالَ الَّذِينَ لَا يَرْجُونَ لِقَأءَنَا لَوْلَا أُنزِلَ عَلَيْنَا الْمَلَـيِكَةُ أَوْ نَرَى رَبَّنَا
And those who expect not a meeting with Us said:”Why are not the angels sent down to us, or why do we not see our Lord!” (25:21)
Allah’s statement,
اللّهُ أَعْلَمُ حَيْثُ يَجْعَلُ رِسَالَتَهُ
Allah knows best with whom to entrust His Message.
means, He knows best with whom His Message should be given and which of His creatures are suitable for it.
Allah said in other Ayat,
وَقَالُوا
لَوْلَا نُزِّلَ هَذَا الْقُرْانُ عَلَى رَجُلٍ مِّنَ الْقَرْيَتَيْنِ عَظِيمٍ
أَهُمْ يَقْسِمُونَ رَحْمَةَ رَبِّكَ
And they say:”Why is not this Qur’an sent down to some great man of the two towns!” Is it they who would portion out the mercy of your Lord! (43:31-32)
They said, why was not this Qur’an revealed to a mighty, respectable leader, honored by us,
مِّنَ الْقَرْيَتَيْنِ
(…from one of the two towns) Of Makkah and At-Ta’if. This is because they, may Allah curse them, belittled the Messenger out of envy, transgression, rebellion and defiance. Allah described them,
وَإِذَا رَأَوْكَ إِن يَتَّخِذُونَكَ إِلاَّ هُزُواً أَهَـذَا الَّذِى بَعَثَ اللَّهُ رَسُولاً
And when they see you, they only mock:”Is this the one whom Allah has sent as a Messenger!” (25:41)
and,
وَإِذَا رَاكَ الَّذِينَ كَفَرُواْ إِن يَتَّخِذُونَكَ إِلاَّ هُزُواً أَهَـذَا الَّذِى يَذْكُرُ الِهَتَكُمْ وَهُمْ بِذِكْرِ الرَّحْمَـنِ هُمْ كَـفِرُونَ
And when those who disbelieved see you, they only mock at you:”Is this the one who talks about your gods!” While they disbelieve at the mention of the Most Gracious (Allah). (21:36)
and,
وَلَقَدِ اسْتُهْزِىءَ بِرُسُلٍ مِّن قَبْلِكَ فَحَاقَ بِالَّذِينَ سَخِرُواْ مِنْهُمْ مَّا كَانُواْ بِهِ يَسْتَهْزِءُونَ
Indeed Messengers were mocked before, but the scoffers were surrounded by that, whereat they used to mock. (21:41)
The Disbelievers Admit to the Prophet’s Nobility of Lineage
The disbelievers did all of this although they admitted to the Prophet’s virtue, honorable lineage, respectable ancestry and purity of household and upbringing, may Allah, His angels, and the believers send blessings upon him.
The disbelievers used to call the Prophet, before he received revelation, Al-Amin — the Truthful. The leader of the Quraysh disbelievers, Abu Sufyan, had to admit to this fact when Heraclius, emperor of Rome, asked him, “How honorable is his (the Prophet’s) ancestral lineage among you!”
Abu Sufyan answered, “His ancestry is highly regarded among us.”
Heraclius asked, “Do you find that he lied, before he started his mission!”
Abu Sufyan replied, “No.”
The emperor of Rome relied on the honor and purity of the Prophet to recognize the truth of his Prophethood and what he came with.
Imam Ahmad recorded that Wathilah bin Al-Asqa said that the Messenger of Allah said,
إِنَّ اللهَ اصْطَفَى مِنْ وَلَدِ إِبْرَاهِيمَ إِسْمَاعِيلَ وَاصْطَفَى مِنْ بَنِي إِسْمَاعِيلَ بَنِي كِنَانَةَ وَاصْطَفَى مِنْ بَنِي كِنَانَةَ قُرَيْشًا وَاصْطَفَى مِنْنُقرَيْشٍ بَنِي هَاشِمٍ وَاصْطَفَانِي مِنْ بَنِي هَاشِم
Verily, Allah has chosen Ismail from the offspring of Ibrahim, Bani Kinanah from the offspring of Ismail, Quraysh from Bani Kinanah, Bani Hashim from Quraysh and, He has chosen me from Bani Hashim.
Muslim recorded this Hadith.
Al-Bukhari recorded that Abu Hurayrah said that the Messenger of Allah said,
بُعِثْتُ مِنْ خَيْرِ قُرُونِ بَنِي ادَمَ قَرْنًا فَقَرْنًا حَتَّى بُعِثْتُ مِنَ الْقَرْنِ الَّذِي كُنْتُ فِيه
I was chosen from a succession of the best generations of the Children of Adam, until the generation I was sent in.
Allah’s said,
سَيُصِيبُ الَّذِينَ أَجْرَمُواْ صَغَارٌ عِندَ اللّهِ وَعَذَابٌ شَدِيدٌ
Humiliation and disgrace from Allah and a severe torment will overtake the criminals…,
This is a stern threat and sure promise from Allah for those who arrogantly refrain from obeying His Messengers and adhering to what they came with. On the Day of Resurrection, they will suffer humiliation and eternal disgrace before Allah, because they were arrogant in the worldly life. This is why it is befitting that they earn disgrace on the Day of Resurrection.
Allah said in another Ayah,
إِنَّ الَّذِينَ يَسْتَكْبِرُونَ عَنْ عِبَادَتِى سَيَدْخُلُونَ جَهَنَّمَ دَخِرِينَ
Verily, those who scorn My worship, they will surely enter Hell in humiliation! (40:60),
disgrace and dishonor.
Allah said next,
وَعَذَابٌ شَدِيدٌ بِمَا كَانُواْ يَمْكُرُونَ
and a severe torment for that which they used to plot.
Since plotting usually takes place in secret and involves treachery and deceit, the disbelievers were recompensed with severe torment from Allah on the Day of Resurrection, as a just reckoning,
وَلَا يَظْلِمُ رَبُّكَ أَحَدًا
And your Lord treats no one with injustice. (18:49)
Allah said in another Ayah,
يَوْمَ تُبْلَى السَّرَايِرُ
The Day when all the secrets will be examined. (86:9)
Meaning, the secrets, hidden thoughts and intentions will be exposed.
In the Two Sahihs, it is recorded that the Messenger of Allah said,
يُنْصَبُ لِكُلِّ غَادِرٍ لِوَاءٌ عِنْدَ اسْتِهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَيُقَالُ هَذِهِ غَدْرَةُ فُلَنِ بْنِ فُلَنِ بْنِ فُلَن
A banner will be raised for every deceitful person from his anus on the Day of Resurrection, and it will say; `This is the treacherous plot of so-and-so, son of so-and-so, son of so-and-so.
The wisdom in this is that since a plot occurs in secret, and people are usually unaware of it, then on the Day of Resurrection the plot itself will become public news testifying to the actions of those who committed it.
তাফসীরে ইবনে কাসীর বলেছেন:-
১২৩-১২৪ নং আয়াতের তাফসীর:
আল্লাহপাক বলেন- হে মুহাম্মাদ (সঃ)! যেমন তোমার দেশের বড় বড় লোকেরা পাপী ও কাফির রূপে প্রমাণিত হয়েছে, যারা নিজেরাও আল্লাহর পথ থেকে বিমুখ হয়ে আছে এবং অন্যদেরকেও কুফরীর দিকে আহ্বান করতে রয়েছে, আর তোমার বিরোধিতায় ও শত্রুতায় অগ্রগামী হয়েছে, দ্রুপ তোমার পূর্বের রাসূলদের সাথেও ধনী ও প্রভাবশালী লোকেরা শত্রুতা করে এসেছিল। অতঃপর তারা যে শাস্তি প্রাপ্ত হয়েছিল তা তো অজানা নয়। তাই মহান আল্লাহ বলেনঃ এভাবেই আমি প্রত্যেক জনপদে ওর প্রভাবশালী ও শীর্ষস্থানীয় লোকদেরকে পাপাচারী করেছিলাম এবং নবীদের শত্রু বানিয়ে রেখেছিলাম। অন্য জায়গায় আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ “আমি যখন কোন জনপদকে ধ্বংস করার ইচ্ছা করি তখন তথাকার ধনী ও প্রভাবশালীদের ঐ জনপদে অশান্তি সৃষ্টি করার ও পাপকার্যে লিপ্ত হওয়ার সুযোগ ঘটে যায়।” ভাবার্থ এই যে, আল্লাহ তাআলা তাদেরকে তার আনুগত্য করার নির্দেশ দেন, কিন্তু তারা আনুগত্য স্বীকারের পরিবর্তে তাঁর বিরুদ্ধাচরণ করতে শুরু করে দেয়। ফলে আল্লাহ তা’আলা তাদেরকে ধ্বংস করে দেন। মহান আল্লাহ এক স্থানে বলেনঃ “যখনই আমি কোন জনপদে কোন ভয় প্রদর্শক পাঠাই তখনই সেখানকার সম্পদশালীরা বলেআমরা তো তোমাকে মানি না। তারা বলে-আমরা ধন মালে ও সন্তান সন্ততিতে তোমাদের উপরে রয়েছি, সুতরাং আমাদের শাস্তি দেয়া হবে না। মহান আল্লাহ কাফিরদের উক্তি দিয়ে বলেনঃ “জনপদে সম্পদশালী ও প্রভাবশালী লোকেরা বলে-আমরা আমাদের বাপ-দাদা ও পূর্বপুরুষদেরকে এর উপরই পেয়েছি এবং আমরা তাদেরই পদাংক অনুসরণ করবো।” (আরবী) শব্দের এখানে ভাবার্থ হচ্ছে-তারা নিজেদের বাজে ও অসৎ কথা দ্বারা লোকদেরকে বিভ্রান্তির পথে ডেকে থাকে। যেমন হযরত নূহ (আঃ)-এর কওম সম্পর্কে আল্লাহ পাক বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “তারা খুব বড় রকমের প্রতারণা ও ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করেছিল।” (৭১:২২) আর এক জায়গায় তিনি বলেনঃ “(হে মুহাম্মাদ সঃ)! যদি তুমি ঐ অত্যাচারীদেরকে দেখতে! যখন তারা তাদের প্রভুর সামনে দাঁড়িয়ে পরস্পর কথা বলাবলি করবে এবং শিষ্য গুরুকে ও অনুসারীরা অনুসৃতদেরকে বলবে যদি আমরা তোমাদের পদাংক অনুসরণ না করতাম তবে অবশ্যই আমরা মুমিন হতাম। তখন নেতারা অধীনস্থদেরকে বলবে-আমরা তোমাদেরকে হিদায়াত থেকে বাধা তো কমই দিয়েছিলাম, তোমরা নিজেরাই তো পাপী ও অপরাধী ছিলে, আর আমরা কুফরী অবলম্বন করি এবং আল্লাহর সাথে অংশী স্থাপন করি এটা তোমাদেরই পরামর্শ ছিল, সুতরাং তোমরা নিজেদের সাথে আমাদেরকেও জড়িয়ে ফেলেছো।সুফিয়ান সাওরী (রঃ) বলেন যে, কুরআন কারীমে উল্লিখিত (আরবী) -এর ভাবার্থ হচ্ছে অমিল বা কাজ।
আল্লাহ পাক বলেন- তারা শুধু নিজেদেরকে নিজেরা প্রবঞ্চিত করছে, অথচ তারা এই সত্যটাকে উপলব্ধি করতে পারছে না। অর্থাৎ এই প্রতারণা এবং অন্যদেরকে পথভ্রষ্ট করার শাস্তি তাদের নিজেদেরই উপর পতিত হবে এটা তারা মোটেই বুঝে উঠছে না। যেমন মহান আল্লাহ বলেনঃ “এই নেতারা নিজেদের পাপের বোঝার সাথে অন্যদের পাপের বোঝা বহন করবে।” তিনি আরও বলেনঃ “পথভ্রষ্টকারীরা কতই নিকৃষ্ট বোঝা বহন করছে, অথচ তারা বুঝছে না তারা অন্যদের বোঝাও বহন করতে আছে!” আর এক জায়গায় আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ “ঐ লোকদের কাছে যখন আমার কোন নিদর্শন আসে তখন তারা বলে-আমরা কখনও ঈমান আনবো না যে পর্যন্ত না আমাদের কাছে ঐ সমস্ত নিদর্শন পেশ করা হয় যেগুলো আল্লাহর (পূর্ববর্তী) রাসূলদের প্রদান করা হয়েছিল। তারা বলতো- দলীল হিসেবে রাসূল (সঃ)-এর সাথে ফেরেশতাগণও কেন আগমন করেন না, যেমন তাঁরা রাসূলদের কাছে অহী পৌছিয়ে থাকেন? যেমন আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ “যারা আমার সাথে সাক্ষাৎ করাকে বিশ্বাস করে না তারা বলে-আমাদের কাছে ফেরেশতাদেরকে কেন অবতীর্ণ করা হয় না অথবা কেন আমরা আমাদের প্রভুকে দেখতে পাই না?
(আরবী) অর্থাৎ নবুওয়াতের দায়িত্ব কার উপর অর্পণ করতে হয় এবং প্রকৃতপক্ষে রাসূল হওয়ার যোগ্য কে তা আল্লাহ ভালরূপেই জানেন। যেমন মহান আল্লাহ বলেনঃ “তারা বলে-এই কুরআন দুটি বড় শহরের কোন এক ব্যক্তির উপর কেন অবতীর্ণ করা হয়নি? তারা কি আল্লাহর রহমত নিজেদের হাতেই বণ্টন করে নেবে?” এখানে দু’টি শহর বা গ্রাম বলতে মক্কা ও তায়েফকে বুঝানো হয়েছে। ঐ দুষ্ট লোকেরা রাসূলুল্লাহ (সঃ) -এর প্রতি শত্রুতা ও হিংসার বশবর্তী হয়ে এবং তাকে তুচ্ছ জ্ঞান করেই একথা বলতো। যেমন আল্লাহ পাক বলেনঃ “হে নবী (সঃ)! যখন কাফিররা তোমাকে দেখে তখন তারা তোমাকে বিদ্রুপ ও উপহাসের পাত্র বানিয়ে নেয় (এবং বলে) এই লোকটিই কি তোমাদের মা’বৃদদের সম্পর্কে সমালোচনা করে থাকে? অথচ তারা রহমানের (আল্লাহর) যিকিরকে ভুলে বসেছে। আল্লাহ তাআলা অন্য জায়গায় বলেনঃ “যখন তারা তোমাকে দেখে তখন তোমাকে (মুহাম্মাদ সঃ -কে) উপহাসের পাত্র বানিয়ে নেয় এবং বলে এটাই কি সেই লোক যাকে আল্লাহ রাসূল করে পাঠিয়েছেন?” আর এক জায়গায় আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ “হে নবী (সঃ)! তোমার পূর্বেও রাসূলদের সাথে এরূপ বিদ্রুপ ও উপহাস করা হয়েছিল, কিন্তু তাদের সেই উপহাসের জন্যে তাদেরকে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে।” অথচ ঐ দুর্ভাগারা নবী মুহাম্মাদ (সঃ)-এর ফযীলত, বংশ মর্যাদা, গোত্রীয় সম্মান এবং তাঁর জন্মভূমি মক্কার শ্রেষ্ঠত্ব সম্পর্কে পূর্ণ ওয়াকিফহাল ছিল। আল্লাহ, সমস্ত ফেরেশতা এবং মুমিনদের পক্ষ থেকে তাঁর উপর দরূদ বর্ষিত হাক। এমন কি ঐ লোকগুলো তাঁর নবুওয়াত লাভের পূর্বেও তার মধুর ও নির্মল চরিত্রের এমনভাবে স্বীকারোক্তি করেছিল যে, তাঁকে আল- আমীন (বিশ্বস্ত, সত্যবাদী ও আমানতদার) উপাধিতে ভূষিত করেছিল। কাফিরদের নেতা আবু সুফিয়ান পর্যন্ত তার সত্যবাদিতায় এতো প্রভাবান্বিত ছিলেন যে, যখন রোম সম্রাট হিরাক্লিয়াস তাঁর সম্পর্কে এবং তাঁর বংশ সম্পর্কে তাঁকে (আবু সুফিয়ানকে) জিজ্ঞাসাবাদ করেন তখন তিনি নিঃসংকোচে উত্তর দেন-“আমাদের মধ্যে তিনি অতি সম্ভ্রান্ত বংশীয় লোক।” তারপর হিরাক্লিয়াস জিজ্ঞেস করেনঃ “এর পূর্বে কখনও তিনি মিথ্যাবাদী প্রমাণিত হয়েছিলেন কি?” আবু সুফিয়ান উত্তরে বলেছিলেনঃ “না।” যাহাক, এটা খুবই দীর্ঘ হাদীস। এর দ্বারা রোম সম্রাট প্রমাণ লাভ করেছিলেন যে, মুহাম্মাদ (সঃ) উত্তম চরিত্রের অধিকারী ছিলেন। তিনি মন্তব্য করেছিলেন যে, এসব হচ্ছে তাঁর নবুওয়াত ও সত্যবাদিতার প্রকৃষ্ট প্রমাণ।
রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেনঃ “আল্লাহ তাআলা ইবরাহীম (আঃ)-এর সন্তানদের মধ্য হতে ইসমাঈল (আঃ)-কে মনোনীত করেছেন, বানী ইসমাঈলের মধ্য হতে বানী কিনানাকে মনোনীত করেছেন, বানী কিনানার মধ্য হতে কুরায়েশকে বেছে নিয়েছেন, কুরায়েশের মধ্য হতে বানী হাশিমকে পছন্দ করেছেন এবং বানী হাশিমের মধ্য হতে আমাকে মনোনীত করেছেন। (এ হাদীসটি ইমাম মুসলিম (রঃ) ও ইমাম আহমাদ (রঃ) বর্ণনা করেছেন) সহীহ বুখারীতে হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “বানী আদমের উত্তম যুগ একের পর এক আসতে রয়েছে। শেষ পর্যন্ত ঐ উত্তম যুগও এসে গেছে যার মধ্যে আমি রয়েছি।”
হযরত আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, একদা রাসূলুল্লাহ (সঃ) মিম্বরের উপর আরোহণ করে বলেনঃ “আমি কে?” জনগণ উত্তরে বলেনঃ “আপনি আল্লাহর রাসূল।” তখন তিনি বলেনঃ “হ্যা, আমি হচ্ছি মুহাম্মাদ ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে আবদুল মুত্তালিব (সঃ)! আল্লাহ মাখলুকাত সৃষ্টি করেন এবং স্বীয় মাখলুকাতের মধ্যে আমাকে সবচেয়ে উত্তম করে সৃষ্টি করেন। লোকদেরকে তিনি দু’ দলে ভাগ করেন এবং আমাকে উত্তম দলের অন্তর্ভুক্ত করেন। যখন তিনি গোত্রগুলো সৃষ্টি করেন তখন তিনি আমার গোত্রকেই উত্তম গোত্র বলে ঘোষণা করেন। তিনি বংশ সৃষ্টি করলে আমাকে তিনি সর্বোত্তম বংশের মধ্যেই সৃষ্টি করেন। আমি বংশের দিক দিয়ে তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম এবং ব্যক্তি হিসেবেও আমি তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে ভাল।” রাসূলুল্লাহ (সঃ) সত্য কথাই বলেছেন।
হযরত আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ জিবরাঈল (আঃ) আমাকে বলেছেন- “হে মুহাম্মাদ (সঃ)! আমি ভূ-পৃষ্ঠের পূর্ব ও পশ্চিমে সব দিকেই ঘুরেছি, কিন্তু মুহাম্মাদ (সঃ)-এর চেয়ে উত্তম আর কাউকেও পাইনি। আমি সমস্ত পূর্ব ও পশ্চিমে অনুসন্ধান করেছি কিন্তু বানু হাশিমের বংশ অপেক্ষা মর্যাদা সম্পন্ন বংশ কোথাও পাইনি।” (হাদীসটি হাকিম (রঃ) ও বায়হাকী (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ “আল্লাহ স্বীয় বান্দাদের অন্তরের প্রতি দৃষ্টিপাত করেন, তখন তিনি মুহাম্মাদ (সঃ)-এর অন্তরকে সমস্ত বান্দার অন্তর অপেক্ষা উত্তম পান। সুতরাং তিনি তাঁকে নিজের জন্যে মনোনীত করেন। অতঃপর তিনি মুহাম্মাদ (সঃ)-এর অন্তর দেখার পর অন্যান্য বান্দাদের অন্তরের প্রতি পুনরায় লক্ষ্য করেন। তখন তিনি মুহাম্মাদ (সঃ)-এর সাহাবীদের অন্তরকে সর্বাপেক্ষা উত্তম পান। সুতরাং তিনি তাদেরকে তাঁর রাসূলের উযীর মনোনীত করেন। তারা তাঁর দ্বীনের উপর সংগ্রাম চালিয়ে যান। অতএব, মুসলমানরা যাকে ভাল মনে করে সে আল্লাহর কাছেও ভাল এবং মুসলমানরা যাকে মন্দ মনে করে সে আল্লাহর কাছেও মন্দ। (হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ) ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে মাওকুফ রূপে তাখরীজ করেছেন)
হযরত সালমান (রাঃ) বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ (সঃ) আমাকে বলেনঃ “হে সালমান (রাঃ)! তুমি আমার প্রতি হিংসা ও শত্রুতা পোষণ করো না এবং আমার প্রতি অসন্তুষ্ট থেকো না। নতুবা তুমি স্বীয় দ্বীন থেকে সরে পড়বে।” তখন আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! কিরূপে আমি আপনার প্রতি হিংসা ও শত্রুতা পোষণ করতে পারি? আপনার মাধ্যমেই তো আল্লাহ আমাদেরকে হিদায়াত দান করেছেন! তখন তিনি বলেনঃ “তুমি যদি আরব সম্প্রদায়ের প্রতি শত্রুতা পোষণ কর তবে আমার প্রতিই শত্রুতা পোষণ করা হবে।”
বর্ণিত আছে যে, একটি লোক হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ)-কে মসজিদে প্রবেশ করতে দেখে। যখন তাঁর প্রতি তার দৃষ্টি পড়ে তখন সে ভয় পেয়ে যায় এবং লোকদেরকে জিজ্ঞেস করেঃ ইনি কে?’ উত্তরে বলা হয়ঃ ইনি হচ্ছেন রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর চাচাতো ভাই হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ)। লোকটি তখন বলেঃ “নবুওয়াতের দায়িত্ব কার উপর অর্পণ করা উচিত এবং এর যোগ্য ব্যক্তি কে তা আল্লাহ ভালরূপেই অবগত আছেন।” (এটা ইবনে আবি হাতিম (রঃ) তাখরীজ করেছেন)
(আরবী) -এটা রিসালাতের অনুসরণ করা থেকে অহংকারকারী এবং রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর আনুগত্য স্বীকার করা হতে গর্বকারীর জন্যে কঠিন ধমক। আল্লাহর কাছে তাকে চিরকালের জন্যে ঘৃণিত, অপমানিত ও লাঞ্ছিত হতে হবে। অনুরূপভাবে যেসব লোক অহংকার করবে, কিয়ামতের দিন তাদের ভাগ্যে লাঞ্ছনাই রয়েছে। যেমন আল্লাহ পাক বলেনঃ “যারা আমার ইবাদত করার ব্যাপারে অহংকার করে এবং মুখ ফিরিয়ে নেয়, তাদেরকে উলুটো মুখে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ “তাদের মন্দ কার্যের কারণে তাদেরকে কঠিন শাস্তি দেয়া হবে। কেননা, প্রতারণা সাধারণতঃ গোপনীয়ই হয়ে থাকে। অত্যন্ত সূক্ষ্মভাবে ঠকবাজী ও প্রতারণা করাকে বলা হয়। এর প্রতিশোধ হিসেবেই মকরকারীকে কিয়ামতের দিন পূর্ণ শাস্তি প্রদান করা হবে। তাই আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ তাদের এই ষড়যন্ত্র ও প্রতারণার কারণেই আল্লাহর নিকট হতে তাদেরকে কঠিন শাস্তি দেয়া হবে। কিন্তু তাই বলে শাস্তি দেয়ার ব্যাপারে আল্লাহ কারও উপর মোটেই অত্যাচার করেন না। যেমন তিনি বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ “সেই দিন সমস্ত গোপনীয় কথা প্রকাশিত হয়ে পড়বে।” (৮৬:৯) সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে রয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “প্রত্যেক বিদ্রোহী ও বিশ্বাসঘাতকের জন্যে কিয়ামতের দিন একটা পতাকা থাকবে এবং ওটা তার নিতম্বের সাথে লেগে থাকবে। বলা হবে- এটা হচ্ছে অমুকের পুত্র অমুক গাদ্দার বা বিশ্বাসঘাতক। এতে হিকমত এই রয়েছে যে, প্রতারণা ও বিশ্বাসঘাতকতা যেহেতু গোপনীয়ভাবে থাকে সেহেতু জনগণ তার থেকে সতর্ক থাকার সুযোগ পায় না এবং সে যে প্রতারক এটা তারা জানতেই পারে না। এই কারণেই কিয়ামতের দিন ওটা একটা পতাকা হয়ে যাবে এবং সেটা প্রতারকের প্রতারণার কথা ঘোষণা করতে থাকবে।