أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book# 114/٢٧٤)-৪৭৬
www.motaher21.net
সুরা: আল-আনয়াম
১৩৭ নং আয়াত:-
وَكَذَلِكَ زَيَّنَ لِكَثِيرٍ مِّنَ الْمُشْرِكِينَ قَتْلَ أَوْلَادِهِمْ شُرَكَأوُهُمْ
মুশরিকের দৃষ্টিতে তাদের উপাস্যরা তাদের সন্তান হত্যা করাকে শোভণীয় করে দিয়েছে,
(And so to many of the idolators, their “partners” have made fair seeming the killing of their children…).
সুরা: আল-আনয়াম
আয়াত নং :-১৩৭
وَ كَذٰلِكَ زَیَّنَ لِكَثِیْرٍ مِّنَ الْمُشْرِكِیْنَ قَتْلَ اَوْلَادِهِمْ شُرَكَآؤُهُمْ لِیُرْدُوْهُمْ وَ لِیَلْبِسُوْا عَلَیْهِمْ دِیْنَهُمْؕ وَ لَوْ شَآءَ اللّٰهُ مَا فَعَلُوْهُ فَذَرْهُمْ وَ مَا یَفْتَرُوْنَ
আর এভাবেই বহু মুশরিকের জন্য তাদের শরীকরা নিজেদের সন্তান হত্যা করাকে সুশোভন করে দিয়েছে, যাতে তাদেরকে ধ্বংসের আবর্তে নিক্ষেপ করতে এবং তাদের দ্বীনকে তাদের কাছে সংশয়িত করে তুলতে পারে। আল্লাহ চাইলে তারা এমনটি করতো না। কাজেই তাদেরকে দাও, তারা নিজেদের মিথ্যা রচনায় ডুবে থাক।
তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
টিকা:১০৭) এখানে শরীকরা শব্দটি আগের অর্থ থেকে পৃথক অন্য একটি অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। ওপরের আয়াতে “শরীক” শব্দটি থেকে তাদের এমনসব মাবুদদেরকে বুঝানো হয়েছিল যাদের বরকত, সুপারিশ বা মাধ্যমকে তারা নিয়ামত ও অনুগ্রহ লাভের কাজে সাহায্যকারী মনে করতো এবং তাদের নিয়ামতের প্রতি কৃতজ্ঞতা লাভের অধিকারের ক্ষেত্রে তাদেরকে আল্লাহর সাথে শরীক করতো। অন্যদিকে এ আয়াতে শরীক বলতে মানুষ ও শয়তানদেরকে বুঝানো হয়েছে, যারা সন্তান হত্যাকে তাদের দৃষ্টিতে একটি বৈধ ও পছন্দনীয় কাজে পরিণত করেছিল। তাদেরকে শরীক বলার কারণ হচ্ছে এই যে, ইসলামের দৃষ্টিতে যেভাবে পূজা ও উপাসনা লাভের একমাত্র মালিক হচ্ছেন আল্লাহ অনুরূপভাবে বান্দাদের জন্য আইন প্রণয়ন এবং বৈধ ও অবৈধের সীমা নির্ধারণ করার অধিকারও একমাত্র আল্লাহর। কাজেই আল্লাহ ছাড়া অন্য কারোর সামনে পূজা ও উপাসনার কোন অনুষ্ঠান করা যেমন তাকে আল্লাহর সাথে শরীক করার সমার্থক ঠিক তেমনি কারোর মনগড়া আইনকে সত্য মনে করে তার আনুগত্য করা এবং তার নির্ধারিত সীমারেখার মধ্যে অবস্থান করাকে অপরিহার্য মনে করাও তাকে আল্লাহর কর্তৃত্ব ও সার্বভৌমত্বে শরীক গণ্য করারই শামিল। এ দু’টি কাজ অবশ্যি শিরক। যে ব্যক্তি এ কাজটি করে, সে যাদের সামনে মানত ও নযরানা পেশ করে অথবা যাদের নির্ধারিত আইনকে অপরিহার্যভাবে মেনে চলে, তাদেরকে মুখে ইলাহ বা রব বলে ঘোষণা করুক বা না করুক তাতে এর শিরক হওয়ার মধ্যে কোন পার্থক্য সূচিত হয় না।
আরববাসীদের মধ্যে সন্তান হত্যা করার তিনটি পদ্ধতির প্রচলন ছিল। কুরআনে এ তিনটির দিকেই ইঙ্গিত করা হয়েছে।
একঃ মেয়ের কারণে কোন ব্যক্তিকে জামাই হিসেবে গ্রহণ করতে হবে অথবা গোত্রীয় যুদ্ধে শত্রুরা তাকে ছিনিয়ে নিয়ে যাবে বা অন্য কোন কারণে তার জন্য পিতা-মাতাকে লজ্জার সম্মুখীন হতে হবে-এসব চিন্তায় মেয়েদের হত্যা করা হতো।
দুইঃ সন্তানদের লালন পালনের বোঝা বহন করা যাবে না এবং অর্থনৈতিক উপাদান ও সুযোগ-সুবিধার অভাবের দরুণ তারা দুর্বিসহ বোঝায় পরিণত হবে-এ ভয়ে সন্তানদের হত্যা করা হতো।
তিনঃ নিজেদের উপাস্যদের সন্তুষ্টির জন্য সন্তানদের বলি দেয়া হতো।
টিকা:১০৮) এ “ধ্বংস” শব্দটি এখানে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। এর অর্থঃ নৈতিক ধ্বংসও হয়। যে ব্যক্তি নির্মমতা ও হৃদয়হীনতার এমন এক পর্যাযে পৌঁছে যায়, যার ফলে নিজের সন্তানকে নিজের হাতে হত্যা করতে থাকে, তার মধ্যে মানবিক গুণ তো দূরের কথা পাশবিক গুণেরও অস্তিত্ব থাকে না। আবার এর অর্থঃ সম্প্রদায়গত ও জাতীয় ধ্বংসও হয়। সন্তান হত্যার অনিবার্য পরিণতি হিসেবে বংশ হ্রাস ও জনসংখ্যা কমে যেতে থাকে। এর ফলে মানব সম্প্রদায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং সংশ্লিষ্ট জাতিও ধ্বংসের আবর্তে নেমে যেতে থাকে। কারণ এ জাতি নিজেদের সাহায্য, সহায়তা ও সমর্থন দানকারী, নিজেদের তামাদ্দুনিক ও সাংস্কৃতিক কর্মী এবং নিজেদের উত্তরাধিকারীদের জন্মের পথ রুদ্ধ করে অথবা জন্মের পরপরই নিজেরাই নিজেদের হাতে তাদেরকে খতম করে দেয়। এছাড়া এর অর্থ পরিণামগত ধ্বংসও হয়। যে ব্যক্তি নিরপরাধ-নিষ্পাপ শিশুদের ওপর এ ধরনের জুলুম করে, নিজের মনুষ্যত্বকে এমনকি প্রাণী-সুলভ প্রকৃতিকেও এভাবে জবাই করে এবং মানব সম্প্রদায়ের সাথে ও নিজের জাতির সাথেও এ ধরনের শত্রুতা করে, সে নিজেকে আল্লাহর কঠিনতম আযাবের উপযোগী করে তোলে।
টিকা:১০৯) জাহেলী যুগের আরবরা নিজেদেরকে হযরত ইবরাহীম ও হযরত ইসমাঈল আলাইহিমাস সালামের অনুসারী মনে করতো এবং এ হিসেবে নিজেদের পরিচয়ও দিতো। এ জন্য তাদের ধারণা ছিল, তারা যে ধর্মের অনুসরণ করছে সেটি আল্লাহর পছন্দনীয় ধর্ম। কিন্তু হযরত ইবরাহীম ও ইসমাঈলের কাছ থেকে যে জীবন বিধানের শিক্ষা তারা নিয়েছিল তার মধ্যে পরবর্তী বিভিন্ন শতকে বিভিন্ন ধর্মীয় নেতা, গোত্রীয় সরদার, পরিবারের বয়োবৃদ্ধ এবং অন্যান্য লোকেরা নানান ধরনের বিশ্বাস ও কর্মের সংযোজন ঘটিয়েছে। পরবর্তী বংশধরেরা সেগুলোকেই আসল দ্বীন ও জীবন বিধানের অংশ মনে করেছে এবং ভক্তি সহকারে সেগুলো মেনে চলেছে। যেহেতু জাতীয় ঐতিহ্যে, ইতিহাসে বা কোন গ্রন্থে এমন কোন রেকর্ড সংরক্ষিত ছিল না, যা থেকে আসল ধর্ম কি ছিল এবং পরবর্তীকালে কোন সময় কে কোন বিষয়টি তাতে বৃদ্ধি করেছিল তা জানা যেতে পারে, তাই আরববাসীদের জন্য তাদের সমগ্র দ্বীনটিই সন্দেহযুক্ত হয়ে পড়েছিল। কোন বিষয় সম্পর্কে তারা নিশ্চয়তার সাথে একথা বলতে পারতো না যে, আল্লাহর পক্ষ থেকে যে আসল দ্বীনটি এসেছিল এটি তার অংশ এবং এ বিদআত ও ভুল রসম-রেওয়াজ অনুষ্ঠানগুলো পরবর্তীকালে এর সাথে সংযুক্ত ও বৃদ্ধি করা হয়েছে। এ বাক্যটির মধ্যে এ অবস্থারই প্রতিনিধিত্ব করা হয়েছে।
টিকা:১১০) অর্থাৎ যদি আল্লাহ চাইতেন তারা এমনটি না করুক তাহলে তারা কখনই এমনটি করতে পারতো না। কিন্তু যেহেতু যে ব্যক্তি যে পথে চলতে চায় তাকে সে পথে চলতে দেয়াটাই ছিল আল্লাহর ইচ্ছা তাই এসব কিছু হয়েছে। কাজেই যদি তোমাদের বুঝাবার পর এরা না মানে এবং নিজেদের মিথ্যাচার ও মিথ্যা রচনার ওপর তারা জোর দিয়ে যেতে থাকে, তাহলে তারা যা করতে চায় করতে দাও। তাদের পেছনে লেগে থাকার কোন প্রয়োজন নেই।
English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Sura Anam
Verses :- 137
وَكَذَلِكَ زَيَّنَ لِكَثِيرٍ مِّنَ الْمُشْرِكِينَ قَتْلَ أَوْلَادِهِمْ شُرَكَأوُهُمْ
(And so to many of the idolators, their “partners” have made fair seeming the killing of their children…).
Shaytan Lured the Idolators to Kill Their Children
Allah says,
وَكَذَلِكَ زَيَّنَ لِكَثِيرٍ مِّنَ الْمُشْرِكِينَ قَتْلَ أَوْلَادِهِمْ شُرَكَأوُهُمْ لِيُرْدُوهُمْ وَلِيَلْبِسُواْ عَلَيْهِمْ دِينَهُمْ
And so to many of the idolators, their “partners” have made fair seeming the killing of their children, in order to lead them to their own destruction and cause confusion in their religion.
Allah says, just as the Shayatin lured the idolators to assign a share for Allah from what He created of agriculture and cattle – and a share for the idols, they also made it seem fair for them to kill their children, for fear of poverty, and burying their daughters alive, for fear of dishonor.
Ali bin Abi Talhah reported from Ibn Abbas that he commented;
وَكَذَلِكَ زَيَّنَ لِكَثِيرٍ مِّنَ الْمُشْرِكِينَ قَتْلَ أَوْلَادِهِمْ شُرَكَأوُهُمْ
(And so to many of the idolators, their “partners” have made fair seeming the killing of their children…).
“They make killing their children attractive to them.”
Mujahid said,
“Idolators’ partners among the devils ordered them to bury their children for fear of poverty.”
As-Suddi said,
“The devils commanded them to kill their daughters so that they,
لِيُرْدُوهُمْ
(lead them to their own destruction), and to,
وَلِيَلْبِسُواْ عَلَيْهِمْ دِينَهُمْ
(cause confusion in their religion).”
Allah said,
وَلَوْ شَاء اللّهُ مَا فَعَلُوهُ
And if Allah had willed, they would not have done so.
meaning, all this occurred by Allah’s leave, will and decree, but He dislikes these practices, and He has the perfect wisdom in every decree. He is never questioned about what He does, but they all will be questioned.
فَذَرْهُمْ وَمَا يَفْتَرُونَ
So leave them alone with their fabrications.
meaning, avoid and abandon them and what they do, for Allah will judge between you and them.
তাফসীরে ইবনে কাসীর বলেছেন:-
আল্লাহ পাক বলেনঃ শয়তানরা যেমন তাদেরকে বলেছে যে, আল্লাহর জন্যে প্রতিমাদের থেকে পৃথক একটা অংশ নির্ধারণ করা একটা পছন্দনীয় কাজ দ্রুপ দরিদ্র হয়ে যাওয়ার ভয়ে সন্তানদেরকে হত্যা করা এবং লজ্জার ভয়ে কন্যাদেরকে জীবিত প্রোথিত করা তাদের কাছে শোভনীয় করেছে। তাদের শরীক শয়তানরাই তাদেরকে পরামর্শ দিতো যে, তারা যেন দরিদ্র হয়ে যাওয়ার ভয়ে তাদের সন্তানদেরকে জীবিত প্রোথিত করে। হয় তাদের ধ্বংস করার নিয়তই থাকতো অথবা ওটাকে তারা একটা ধর্মীয় কাজ মনে করতো। আর তাদের কাছে দ্বীন সন্দেহপূর্ণ হয়ে গিয়েছিল। যেমন আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ “যখন তাদেরকে কন্যা সন্তানের সুসংবাদ দেয়া হয় তখন অসন্তুষ্টির কারণে তাদের মুখ কালো হয়ে যায়। লজ্জার কারণে লোকদের থেকে আত্মগোপন করে থাকে। যেমন মহান আল্লাহ বলেনঃ “যখন জীবিত প্রোথিতা মেয়েদেরকে জিজ্ঞেস করা হবে-কোন্ পাপের কারণে তোমাদেরকে হত্যা করা হয়েছিল। (তখন তোমরা কি জবাব দেবে)?” তাছাড়া তারা এজন্যেও সন্তানদেরকে হত্যা করতো যে, দরিদ্র হয়ে যাওয়ার ভয় তাদেরকে ধরে বসততা এবং তাদেরকে প্রতিপালন করতে মাল ধ্বংস হয়ে যাওয়ার তারা ভয় করতো। এসব ছিল শয়তানেরই কারসাজী।
এরপর আল্লাহ পাক বলেন ? যদি আল্লাহ চাইতেন তবে তারা এইরূপ করতো না। অর্থাৎ যা কিছু হচ্ছে সবই তাঁর ইচ্ছাতেই হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে পূর্ণ নৈপুণ্য। তার কাজে কেউ প্রতিবাদ করতে পারে না । অতঃপর আল্লাহ তা’আলা স্বীয় নবী (সঃ)-কে বলেনঃ হে নবী (সঃ)! তুমি তাদেরকেও ছেড়ে দাও এবং তাদের মিথ্যা মা’রূদদেরকেও ছেড়ে দাও। আল্লাহ তা’আলা তোমাদের ও তাদের ফায়সালা করবেন।