أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book# 114/٢٧٦)-৪৭৮
www.motaher21.net
সুরা: আল-আনয়াম
সুরা:৬
১৪১ – ১৪২ নং আয়াত:-
وَ لَا تُسۡرِفُوۡا ؕ اِنَّہٗ لَا یُحِبُّ الۡمُسۡرِفِیۡنَ ﴿۱۴۱﴾ۙ
অপব্যয় করে সীমা লংঘন করনা। নিশ্চয়ই তিনি (আল্লাহ) অপব্যয়কারী ও সীমালংঘনকারীকে ভালবাসেন না।
(And waste not by extravagance. Verily, He likes not the wasteful).”
وَ ہُوَ الَّذِیۡۤ اَنۡشَاَ جَنّٰتٍ مَّعۡرُوۡشٰتٍ وَّ غَیۡرَ مَعۡرُوۡشٰتٍ وَّ النَّخۡلَ وَ الزَّرۡعَ مُخۡتَلِفًا اُکُلُہٗ وَ الزَّیۡتُوۡنَ وَ الرُّمَّانَ مُتَشَابِہًا وَّ غَیۡرَ مُتَشَابِہٍ ؕ کُلُوۡا مِنۡ ثَمَرِہٖۤ اِذَاۤ اَثۡمَرَ وَ اٰتُوۡا حَقَّہٗ یَوۡمَ حَصَادِہٖ ۫ۖ وَ لَا تُسۡرِفُوۡا ؕ اِنَّہٗ لَا یُحِبُّ الۡمُسۡرِفِیۡنَ ﴿۱۴۱﴾ۙ
আর সেই আল্লাহই নানা প্রকার বাগান ও গুল্মলতা সৃষ্টি করেছেন যার কতক স্বীয় কান্ডের উপর সন্নিবিষ্ট হয়, আর কতক কান্ডের উপর সন্নিবিষ্ট হয়না; আর খেজুর বৃক্ষ ও শস্যক্ষেত্র যাতে বিভিন্ন প্রকারের খাদ্য উৎপন্ন হয়ে থাকে, আর তিনি যাইতূন (জলপাই) ও আনারের (ডালিমের) বৃক্ষও সৃষ্টি করেছেন যা দৃশ্যতঃ অভিন্ন হলেও স্বাদে বিভিন্ন, এই সব ফল তোমরা আহার কর যখন ওতে ফল ধরে, আর তা হতে শারীয়াতের নির্ধারিত যে অংশ রয়েছে তা ফসল কাটার দিন আদায় করে নাও, অপব্যয় করে সীমা লংঘন করনা। নিশ্চয়ই তিনি (আল্লাহ) অপব্যয়কারী ও সীমালংঘনকারীকে ভালবাসেন না।
وَ مِنَ الۡاَنۡعَامِ حَمُوۡلَۃً وَّ فَرۡشًا ؕ کُلُوۡا مِمَّا رَزَقَکُمُ اللّٰہُ وَ لَا تَتَّبِعُوۡا خُطُوٰتِ الشَّیۡطٰنِ ؕ اِنَّہٗ لَکُمۡ عَدُوٌّ مُّبِیۡنٌ ﴿۱۴۲﴾ۙ
আর চতুস্পদ জন্তুগুলির মধ্যে কতকগুলি (উঁচু আকৃতির) ভারবাহী রয়েছে; আর কতকগুলি রয়েছে ছোট আকৃতির, গোশত খাওয়ার ও চামড়া দ্বারা বিছানা বানানোর যোগ্য। আল্লাহ যা কিছু দান করেছেন তোমরা তা আহার কর, আর শাইতানের পদাঙ্ক অনুসরণ করনা, নিঃসন্দেহে সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।
তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ বলেছেন:-
১৪১-১৪২ নং আয়াতের তাফসীর:
সবকিছুর সৃষ্টিকর্তা একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা- এ আয়াত তার প্রমাণ বহন করছে।
প্রাণী, শস্য ও ফলমূলসহ পৃথিবীতে যা কিছু দেখতে পাই সবই আল্লাহ তা‘আলার সৃষ্টি। তিনি এসব সৃষ্টি করেছেন মানুষের কল্যাণের জন্য। আর মানুষকে সৃষ্টি করেছেন তার ইবাদত করার জন্য।
مَّعْرُوْشٰتٍ এর মূল ধাতু হল عرش অর্থ উঁচু করা ও উঠানো। আর معروشات থেকে বুঝানো হয়েছে কোন কোন গাছের লতাপাতাগুলো যা মাচার উপরে চড়ানো হয়। যেমন আঙ্গুর ও শাক-সবজির মাচা ইত্যাদি।
(وَّغَيْرَ مَعْرُوْشٰتٍ)
‘মাচা অবলম্বী নয়’বলতে যা মাচার ওপর চড়ানো হয় না। বরং জমির উপরেই বাড়তে থাকে যেমন তরমুজ, শস্য ইত্যাদি।
(وَاٰتُوْا حَقَّه يَوْمَ حَصَادِه)
‘আর ফসল তোলার দিনে তার হক প্রদান করবে’এ আয়াত বলবত আছে, না কি রহিত হয়ে গেছে? হক বলতে ফরয যাকাত, না নফল যাকাত? এ নিয়ে অনেক মতামত পাওয়া যায়।
আল্লামা শানক্বিতী (রহঃ) এ ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। (আযওয়াউল বায়ান, ২/১৪১)
তবে সঠিক কথা হল, আয়াত রহিত নয়। আর حق (হ্ক) বলতে ফরয যাকাত যা ফসল মাড়ানোর দিনে দিতে বলা হয়েছে। অর্থাৎ উশর বা দশভাগের একভাগ যদি সেচ দিয়ে উৎপন্ন করতে না হয়। আর সেচ দিয়ে উৎপন্ন করা হলে বিশভাগের একভাগ দিতে হবে। (তাফসীর মুয়াসসার, পৃঃ ১৪৫)
(وَلَا تُسْرِفُوْا ط إِنَّه لَا يُحِبُّ الْمُسْرِفِيْنَ)
‘এবং অপচয় করবে না; নিশ্চয়ই তিনি অপচয়কারীদেরকে পছন্দ করেন না।’অর্থাৎ প্রয়োজন মত খাও, ব্যয় কর, কিন্তু অপচয় করো না। কারণ অপচয়কারীকে আল্লাহ তা‘আলা ভালবাসেন না। অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(إِنَّ الْمُبَذِّرِيْنَ كَانُوْآ إِخْوَانَ الشَّيَاطِيْنِ)
“যারা অপব্যয় করে তারা শয়তানের ভাই।”(সূরা বানী ইসরাঈল ১৭:২৭)
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:
كُلُوا وَاشْرَبُوا وَالبَسُوا وَتَصَدَّقُوا، فِي غَيْرِ إِسْرَافٍ وَلَا مَخِيلَةٍ
তোমরা পান কর, পরিধান কর, সদাকা দাও; অপচয় ও কৃপণতা কর না। (সহীহ বুখারী, কিতাবুল লিবাস এর শুরু)
(حَمُوْلَةً وَّفَرْشًا)
‘কতক ভারবাহী ও কতক ক্ষুদ্রাকার পশু’অর্থাৎ চতুষ্পদ জন্তুর মধ্যে এমন কিছু প্রাণী সৃষ্টি করেছেন যার ওপর বোঝা বহন করা হয়। যেমন উট, ঘোড়া আর কতকগুলো আছে ছোট যেমন ছাগল, ভেড়া ইত্যাদি। তবে আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন: حَمُوْلَةً (যার ওপর বোঝা বহন করানো হয় যেমন উট আর وَّفَرْشًا হল ছোট উট। (হাকিম ২/৩১৭, সহীহ)
এ সম্পর্কে কুরআনে অসংখ্য আয়াত বিদ্যমান। যেমন সূরা ইয়াসীনের ১৭-৭২ নং, নাহালের ৬৬-৮০ নং, ফাতিরের ৭৯-৮১ নং আয়াত।
সবশেষে আল্লাহ তা‘আলা শয়তানের অনুসরণ থেকে নিষেধ করেছেন। কেননা সে আমাদের প্রকাশ্য শত্র“। অতএব তাকে শত্র“ হিসেবেই গ্রহণ করা দরকার। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(إِنَّ الشَّيْطَانَ لَكُمْ عَدُوٌّ فَاتَّخِذُوْهُ عَدُوًّا ط إِنَّمَا يَدْعُوْا حِزْبَه۫ لِيَكُوْنُوْا مِنْ أَصْحٰبِ السَّعِيْرِ )
“নিশ্চয়ই শয়তান তোমাদের শত্র“, সুতরাং তাকে তোমরা শত্র“রূপেই গ্রহণ কর। সে তার দলবলকে শুধু এজন্যই আহ্বান করে, যেন তারা (পথভ্রষ্ট হয়ে) জাহান্নামীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়।”(সূরা মু’মিনূন ৪০:৬)
সুতরাং আল্লাহ তা‘আলা আমাদের এত নেয়ামত দান করেছেন, কিভাবে আমরা তাঁর অবাধ্য হব এবং তাঁর নাফরমানী করব? বরং আমাদের উচিত তাঁর নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করা ও একমাত্র তাঁরই ইবাদত করা এবং সকল শয়তানী কর্মের অনুসরণ বর্জন করা।
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. সবকিছুর সৃষ্টিকর্তা একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা এবং এসব সৃষ্টি করার লক্ষ উদ্দেশ্য একমাত্র তাঁরই আনুগত্য ও দাসত্ব করা।
২. ফসলের হক হল ওশর বা যাকাত আদায় করা।
৩. আল্লাহ তা‘আলা অপচয়কারীকে ভালবাসেন না।
৪. আল্লাহ তা‘আলা দুনিয়ার সবকিছু মানুষের কল্যাণের জন্য সৃষ্টি করেছেন।
৫. শয়তান মানুষের প্রকাশ্য শত্র“। অতএব তাকে শত্র“ হিসেবে গ্রহণ করা উচিত।
English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Sura Anam
Sura:6
Verses :- 141 – 142
وَ لَا تُسۡرِفُوۡا ؕ اِنَّہٗ لَا یُحِبُّ الۡمُسۡرِفِیۡنَ ﴿۱۴۱﴾ۙ
(And waste not by extravagance. Verily, He likes not the wasteful).”
Allah Created the Produce, Seed Grains and Cattle
Allah states that He created everything, including the produce, fruits and cattle that the idolators mishandled by their misguided ideas, dividing them into various designated parts, allowing some and prohibiting some.
Allah said,
وَهُوَ الَّذِي أَنشَأَ جَنَّاتٍ مَّعْرُوشَاتٍ وَغَيْرَ مَعْرُوشَاتٍ
And it is He Who produces gardens Ma`rushat and not Ma`rushat,
Ali bin Abi Talhah reported that Ibn Abbas commented,
“Ma`rushat refers to what the people trellises, while `not Ma`rushat’ refers to fruits (and produce) that grow wild inland and on mountains.”
Ata Al-Khurasani said that Ibn Abbas said,
“Ma`rushat are the grapevines that are trellised, while `not Ma`rushat’ refers to grapevines that are not trellised.”
As-Suddi said similarly.
وَالنَّخْلَ وَالزَّرْعَ مُخْتَلِفًا أُكُلُهُ وَالزَّيْتُونَ وَالرُّمَّانَ مُتَشَابِهًا وَغَيْرَ مُتَشَابِهٍ
and date palms, and crops of different shape and taste, and olives, and pomegranates, similar, and different.
As for these fruits being similar, yet different, Ibn Jurayj said,
“They are similar in shape, but different in taste.”
كُلُواْ مِن ثَمَرِهِ إِذَا أَثْمَرَ
Eat of their fruit when they ripen,
Muhammad bin Ka`b said that the Ayah means,
“(Eat) from the dates and grapes they produce.”
Allah said next,
وَاتُواْ حَقَّهُ يَوْمَ حَصَادِهِ
but pay the due thereof on the day of their harvest,
Mujahid commented,
“When the poor people are present (on the day of harvest), give them some of the produce.”
Abdur-Razzaq recorded that Mujahid commented on the Ayah,
“When planting, one gives away handfuls (of seed grains) and on harvest, he gives away handfuls and allows them to pick whatever is left on the ground of the harvest.”
Ath-Thawri said that Hammad narrated that Ibrahim An-Nakhai said,
“One gives away some of the hay.”
Ibn Al-Mubarak said that Shurayk said that Salim said that Sa`id bin Jubayr commented;
وَاتُواْ حَقَّهُ يَوْمَ حَصَادِهِ
(but pay the due thereof on the day of their harvest),
“This ruling, giving the poor the handfuls (of seed grains) and some of the hay as food for their animals, was before Zakah became obligatory.”
Allah has chastised those who harvest, without giving away a part of it as charity. Allah mentioned the story of the owners of the garden in Surah Nun, (68:18-33)
إِنَّا بَلَوْنَـهُمْ كَمَا بَلَوْنَأ أَصْحَـبَ الْجَنَّةِ…
لَوْ كَانُواْ يَعْلَمُونَ
When they swore to pluck the fruits of the (garden) in the morning. Without saying:”If Allah wills.” Then there passed by on the (garden) a visitation (fire) from your Lord at night, burning it while they were asleep. So the (garden) became black by the morning, like a pitch dark night (in complete ruins). Then they called out one to another as soon as the morning broke. Saying:”Go to your tilth in the morning, if you would pluck the fruits.”
So they departed, conversing in secret low tones (saying). “No poor person shall enter upon you into it today.” And they went in the morning with strong intention, thinking that they have power (to prevent the poor taking anything of the fruits therefrom). But when they saw the (garden), they said:”Verily, we have gone astray.” (Then they said):”Nay! Indeed we are deprived of (the fruits)!”
The best among them said:”Did I not tell you, why say you not:`If Allah wills’.” They said:”Glory to Our Lord! Verily, we have been wrongdoers.”
Then they turned one against another, blaming. They said:”Woe to us! We have transgressed. We hope that our Lord will give us in exchange a better (garden) than this. Truly, we turn to our Lord.”
Such is the punishment (in this life), but truly, the punishment of the Hereafter is greater if they but knew. (68:18-33)
Prohibiting Extravagance
Allah said,
وَلَا تُسْرِفُواْ إِنَّهُ لَا يُحِبُّ الْمُسْرِفِينَ
And waste not by extravagance. Verily, He likes not the wasteful.
It was said that;
the extravagance prohibited here refers to excessive charity beyond normal amounts.
Ibn Jurayj said,
“This Ayah was revealed concerning Thabit bin Qays bin Shammas, who plucked the fruits of his date palms. Then he said to himself, `This day, every person who comes to me, I will feed him from it.’
So he kept feeding (them) until the evening came and he ended up with no dates. Allah sent down,
وَلَا تُسْرِفُواْ إِنَّهُ لَا يُحِبُّ الْمُسْرِفِينَ
(And waste not by extravagance. Verily, He likes not the wasteful).”
Ibn Jarir recorded this statement from Ibn Jurayj.
However, the apparent meaning of this Ayah, and Allah knows best, is that;
كُلُواْ مِن ثَمَرِهِ إِذَا أَثْمَرَ وَاتُواْ حَقَّهُ يَوْمَ حَصَادِهِ
وَلَا تُسْرِفُواْ
(Eat of their fruit when they ripen, but pay the due thereof on the day of their harvest, and waste not…) refers to eating,
meaning, do not waste in eating because this spoils the mind and the body.
Allah said in another Ayah,
وكُلُواْ وَاشْرَبُواْ وَلَا تُسْرِفُواْ
And eat and drink but waste not by extravagance. (7:31)
In his Sahih, Al-Bukhari recorded a Hadith without a chain of narration;
كُلُوا وَاشْرَبُوا وَالْبَسُوا مِنْ غَيْرِ إِسْرَافٍ وَلَا مَخِيلَة
Eat, drink and clothe yourselves without extravagance or arrogance.
Therefore, these Ayat have the same meaning as this Hadith, and Allah knows best.
Benefits of Cattle
Allah’s statement
وَمِنَ الَانْعَامِ حَمُولَةً وَفَرْشًا
And of the cattle (are some) for burden and (some smaller) for Farsh.
means, He created cattle for you, some of which are suitable for burden, such as camels, and some are Farsh.
Ath-Thawri narrated that Abu Ishaq said that Abu Al-Ahwas said that Abdullah said that;
`animals for burden’ are the camels that are used for carrying things, while, `Farsh’, refers to small camels.
Al-Hakim recorded it and said, “Its chain is Sahih and they did not record it.”
Abdur-Rahman bin Zayd bin Aslam said that;
`animals for burden’ refers to the animals that people ride, while, `Farsh’ is that they eat (its meat) and milk it. The sheep is not able to carry things, so you eat its meat and use its wool for covers and mats (or clothes).
This statement of Abdur-Rahman is sound, and the following Ayat testify to it,
أَوَلَمْ يَرَوْاْ أَنَّا خَلَقْنَا لَهُم مِمَّا عَمِلَتْ أَيْدِينَأ أَنْعـماً فَهُمْ لَهَا مَـلِكُونَ
وَذَلَّلْنَـهَا لَهُمْ فَمِنْهَا رَكُوبُهُمْ وَمِنْهَا يَأْكُلُونَ
Do they not see that We have created for them of what Our Hands have created, the cattle, so that they are their owners. And We have subdued them unto them so that some of them they have for riding and some they eat. (36:71-72)
and,
وَإِنَّ لَكُمْ فِى الاٌّنْعَـمِ لَعِبْرَةً نُّسْقِيكُمْ مِّمَّا فِى بُطُونِهِ مِن بَيْنِ فَرْثٍ وَدَمٍ لَّبَنًا خَالِصًا سَأيِغًا لِلشَّارِبِينَ
And verily, in the cattle, there is a lesson for you. We give you to drink of that which is in their bellies, from between excretions and blood, pure milk; palatable to the drinkers. (16:66) until,
وَمِنْ أَصْوَافِهَا وَأَوْبَارِهَا وَأَشْعَارِهَأ أَثَـثاً وَمَتَـعاً إِلَى حِينٍ
And of their wool, fur and hair, furnishings and articles of convenience, comfort for a while. (16:80)
Eat the Meat of These Cattle, But Do Not Follow Shaytan’s Law Concerning Them
Allah said,
كُلُواْ مِمَّا رَزَقَكُمُ اللّهُ
Eat of what Allah has provided for you,
of fruits, produce and cattle. Allah created all these and provided you with them as provision.
وَلَا تَتَّبِعُواْ خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ
and follow not the footsteps of Shaytan.
meaning, his way and orders, just as the idolators followed him and prohibited fruits and produce that Allah provided for them, claiming that this falsehood came from Allah.
إِنَّهُ لَكُمْ
Surely, he is to you,
meaning; Shaytan, O people, is to you,
عَدُوٌّ مُّبِينٌ
an open enemy.
and his enmity to you is clear and apparent. Allah said in other Ayat,
إِنَّ الشَّيْطَـنَ لَكُمْ عَدُوٌّ فَاتَّخِذُوهُ عَدُوّاً إِنَّمَا يَدْعُو حِزْبَهُ لِيَكُونُواْ مِنْ أَصْحَـبِ السَّعِيرِ
Surely, Shaytan is an enemy to you, so take (treat) him as an enemy. He only invites his Hizb (followers) that they may become the dwellers of the blazing Fire. (35:6)
and,
يَـبَنِى ادَمَ لَا يَفْتِنَنَّكُمُ الشَّيْطَـنُ كَمَأ أَخْرَجَ أَبَوَيْكُم مِّنَ الْجَنَّةِ يَنزِعُ عَنْهُمَا لِبَاسَهُمَا لِيُرِيَهُمَا سَوْءَتِهِمَأ
O Children of Adam! Let not Shaytan deceive you, as he got your parents out of Paradise, stripping them of their raiment, to show them their private parts. (7:27)
and,
أَفَتَتَّخِذُونَهُ وَذُرِّيَّتَهُ أَوْلِيَأءَ مِن دُونِى وَهُمْ لَكُمْ عَدُوٌّ بِيْسَ لِلظَّـلِمِينَ بَدَلاً
Will you then take him (Iblis) and his offspring as protectors and helpers rather than Me while they are enemies to you What an evil is the exchange for the wrongdoers. (18:50)
There are many other Ayat on this subject.
তাফসীরে ইবনে কাসীর বলেছেন:-
১৪১-১৪২ নং আয়াতের তাফসীর:
আল্লাহ তা’আলা সমস্ত জিনিসেরই সৃষ্টিকর্তা। শস্য, ফল-ফলাদি এবং চতুষ্পদ জন্ত, যেগুলো মুশরিকরা ব্যবহার করতো এবং বিকৃতভাবে ওগুলো বন্টন করতঃ কোনটাকে হালাল, আর কোনটাকে হারাম বানিয়ে নিতো। এ সবই আল্লাহ তাআলাই সৃষ্টি করেছেন। এসব ফলের কতগুলো স্বীয় কাণ্ডের উপর সন্নিবিষ্ট হয় এবং কতগুলো কাণ্ডের উপর সন্নিবিষ্ট হয় না, এ সবগুলোরই তিনি সৃষ্টিকর্তা। (আরবী) হচ্ছে ঐসব গুল্মলতা যেগুলো পর্দার উপর চড়ানো অবস্থায় থাকে, যেমন আঙ্গুর ইত্যাদি। আর (আরবী) ঐ সব ফলদার বৃক্ষ যেগুলো জংগলে ও পাহাড়ে জন্মে। ওগুলো এক রকমও এবং বিভিন্ন রকমও হয়। অর্থাৎ দেখতে একরূপ কিন্তু স্বাদে পৃথক। আল্লাহ পাক বলেনঃ যখন গাছগুলোতে ফল ধরে তখন তোমরা সেই ফলগুলো ভক্ষণ কর । আর ফসল কাটার সময় গরীব মিসকীনদেরকে দেয়ার যে হক আছে তা আদায় কর। কেউ কেউ এর দ্বারা ফরয। যাকাত অর্থ নিয়েছেন। যখন সেই উৎপাদিত শস্য বা ফল ওযন বা পরিমাপ করা হবে সেই দিনই এই হক আদায় করতে হবে। পূর্বে লোকেরা এটা প্রদান করতো না। অতঃপর শরীয়ত এক দশমাংশ নির্ধারণ করে। আর যেটা শীষ বা গুচ্ছ থেকে খসে পড়বে সেটাও মিসকীনদের হক।
হযরত জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, নবী (সঃ) বলেছেন-যার (উৎপাদিত) খেজুরের পরিমাণ দশ ওয়াসাকের (ষাট সা’-এ এক ওয়াসাক। আর এক সা’-এ হয় পাকি দু’সের এগারো ছটাক বা মতান্তরে তিন সের ছ ছটাক) বেশী হবে সে যেন একটা গুচ্ছ মিসকীনদের জন্যে মসজিদে লটকিয়ে দেয়। (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ) ও ইমাম আবু দাউদ (রঃ) বর্ণনা করেছেন। এর ইসনাদ উত্তম ও মজবুত)
হযরত হাসান বসরী (রঃ) বলেন যে, এটা হচ্ছে শস্য বা ফলের সদকাহ অথবা যাকাত। আর যাকাত ছাড়াও গরীবদের জন্যে অতিরিক্ত হক রয়েছে। শস্য কাটার সময় যাকাত ছাড়াও এই অতিরিক্ত হক প্রদান করা হতো। সেই দিন যদি মিসকীন এসে যায় তবে অবশ্য অবশ্যই তাকে কিছু না কিছু দিতে হবে। তিনি বলেন যে, কমপক্ষে এক মুষ্টি করে দেয়া উচিত। আর যা শীষ থেকে বা গুচ্ছ থেকে পড়ে যাবে সেটাও মিসকীনেরই হক। সাঈদ ইবনে জুবাইর (রঃ) বলেন যে, এটা হচ্ছে যাকাত ফরয হওয়ার পূর্বের হুকুম যে, মিসকীনদের জন্যে ছিল এক মুষ্টি পরিমাণ এবং জীব-জন্তুর জন্যে ছিল চারা-ভুষি, আর পতিতগুলোও ছিল মিসকীনদের হক। ইবনে মিরদুওয়াই (রঃ) বলেন যে, এগুলো ওয়াজিব ছিল। অতঃপর আল্লাহ তাআলা এটা মানসূখ করে দেন এবং ওশর বা অর্ধ এশরকে ওর স্থানে নির্ধারণ করেন। ইবনে জারীর (রঃ)-ও এটাকেই পছন্দ করেছেন। আমি বলি যে, এটাকে মানসূখ বলা চিন্তা ভাবনার বিষয়ই বটে। কেননা, এটা এমনই একটা জিনিস যা মূলেই ওয়াজিব ছিল। তারপর বিস্তারিতভাবে ওর বর্ণনা দেয়া হয়েছে। আর কত দিতে হবে সেই পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছে। বলা হয়েছে যে, এই যাকাত হিজরী দ্বিতীয় সনে ফরয হয়েছিল। আল্লাহ তাআলা ঐ লোকদের নিন্দে করেছেন যারা ফসল কাটতে কিন্তু তা থেকে গরীব মিসকীনদেরকে কিছুই দান করতো না। যেমন ‘সূরায়ে নূন’ -এ এক বাগানের মালিকের বর্ণনা দেয়া হয়েছে। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ “যখন তারা শপথ করলো যে, নিশ্চয়ই প্রত্যষেই ওর ফল পেড়ে নেবে। কিন্তু ইনশাআল্লাহ (আল্লাহ যদি চান) বললো না। অতএব, তোমার প্রভুর পক্ষ হতে এক পরিভ্রমণকারী (আপদ) ওতে বয়ে গেল, আর তারা ঘুমন্ত ছিল। অতঃপর প্রভাতে বাগানটি এমন হয়ে রইলো, যেমন শস্য কাটা ক্ষেত। অনন্তর প্রাতে একে অন্যকে ডাকতে লাগলো । নিজ নিজ ক্ষেতের দিকে প্রত্যুষেই চল, যদি ফল পাড়তে হয়। অনন্তর চুপি চুপি বলতে বলতে চলল, আজ কোন দরিদ্র তোমাদের কাছে আসতে পারবে না এবং নিজেদেরকে ওটা না দিতে সক্ষম মনে করে চললো। অতঃপর যখন বাগান দেখলো তখন তারা বলতে লাগলো-নিশ্চয়ই আমরা পথ ভুলে গেছি। বরং আমাদের ভাগ্যই বিরূপ হয়ে গেছে। তাদের মধ্যকার ভাল লোকটি বললো, আমি কি তোমাদেরকে বলিনি? এখন কেন। (তাওবা ও) তাসবীহ্ (পাঠ) করছো না? সবাই বললো, আমাদের প্রভু পবিত্র, নিশ্চয়ই আমরা অপরাধী। অতঃপর একে অপরকে সম্বোধন করে পরস্পর দোষারোপ করতে লাগলো। বলতে লাগলো, নিশ্চয়ই আমরা সীমালংঘনকারী ছিলাম। সম্ভবতঃ আমাদের প্রতিপালক আমাদেরকে প্রতিদানে এতদপেক্ষা উত্তম বাগান দান করতে পারেন, আমরা আমাদের প্রতিপালকের দিকে ফিরে যাচ্ছি এভাবেই শাস্তি হয়ে থাকে, আর পরকালের শাস্তি এটা অপেক্ষা গুরুতর, কি ভালো হতো, যদি তারা জানতো!”
আল্লাহ পাকের উক্তি (আরবী) অর্থাৎ তোমরা অপব্যয় করে সীমালংঘন করো না, নিশ্চয়ই তিনি অধ্যয়কারী ও সীমালংঘনকারীকে ভালবাসেন না। অর্থাৎ দেয়ার ব্যাপারে প্রয়োজনের অতিরিক্ত দিতে শুরু করো না। কোন কোন লোক ফসল কাটার সময় এতো বেশী দান করতো যে, সেটা অপব্যয়ের মধ্যে পড়ে যেতো। তাই মহান আল্লাহ বলেনঃ (আরবী) অর্থাৎ অপব্যয় করো না।
সাবিত ইবনে কায়েস স্বীয় খুরমা গাছের ফল পেড়ে ঘোষণা করে দেনঃ “আজ যে কেউই আমার কাছে আসবে আমি তাকেই প্রদান করবো। শেষ পর্যন্ত এতো বেশী লোক এসে নিয়ে গেল যে, একটা ফলও তাঁর কাছে অবশিষ্ট রইলো না। সেই সময় এই আয়াত অবতীর্ণ হয় যে, আল্লাহ তা’আলা অপব্যয়কারী ও সীমালংঘনকারীকে ভালবাসেন না। ইবনে জুরাইজ বলেন, এর ভাবার্থ এই যে, প্রত্যেক কাজেই অপব্যয় ও সীমালংঘন নিষিদ্ধ। আয়াস ইবনে মুয়াবিয়া (রঃ) বলেন যে, আল্লাহ তা’আলার আদেশ পালনের ব্যাপারে সীমা ছাড়িয়ে গেলেই সেটা ইসরাফ’ হয়ে যাবে। সুদ্দী (রঃ) বলেন, এর ভাবার্থ হচ্ছে-এতো বেশী দান করো না যে, নিজে সবকিছু থেকে বঞ্চিত হয়ে যাও এবং দরিদ্র হয়ে পড়। মুহাম্মাদ ইবনে কা’ব (রঃ) বলেন, যাকাত দেয়া বন্ধ করো না, নতুবা আল্লাহর অবাধ্যতা অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়বে। সঠিক কথা এটাই যে, প্রত্যেক ব্যাপারেই বাড়াবাড়ি ও সীমালংঘন দূষণীয়। তবে এখানে যে বাড়াবাড়ি না করার কথা বলা হয়েছে তা খাওয়ার দিকে প্রত্যাবর্তিত, যা আয়াতের ধরনে অনুমিত হয়। যেমন আল্লাহ পাক বলেনঃ যখন ফল পেকে যাবে তখন সেই ফল ভক্ষণ কর এবং ফসল কাটার সময় গরীবদেরকে তাদের হক প্রদান কর, আর সীমালংঘন করো না অর্থাৎ তোমরা খাওয়ার ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করো না। কেননা, খুব বেশী খাওয়া বুদ্ধি-বিবেক ও দেহের পক্ষে ক্ষতিকর। যেমন মহান আল্লাহ আর এক জায়গায় বলেনঃ “তোমরা খাও,পান কর, কিন্তু বাড়াবাড়ি করো না।” সহীহ বুখারীতে রয়েছে- “তোমরা বাড়াবাড়ি ও অহংকার প্রদর্শন বাদ দিয়ে খাও, পান কর এবং পরিধান কর।”
মহামহিমান্বিত আল্লাহর উক্তি (আরবী) অর্থাৎ আল্লাহ তোমাদের জন্যে চতুষ্পদ জন্তু সৃষ্টি করেছেন, যা তোমাদের বোঝা বহন ও সওয়ারীর কাজে লাগে, যেমন উট। (আরবী) দ্বারা ছোট ছোট গৃহপালিত জন্তু অথবা ছোট শ্রেণীর উট বুঝানো হয়েছে। হযরত ইবনে আব্বাস (রঃ) বলেন যে, (আরবী) শব্দ দ্বারা উট, ঘোড়া, খচ্চর, গাধা এবং সর্ব প্রকারের ভারবাহী পশু বুঝানোনা হয়েছে এবং (আরবী) দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে ছাগল। মুজাহিদও (রঃ) এরূপই বলেছেন। ইবনে জারীর (রঃ) বলেন: “আমার মনে হয় (আরবী) বলার কারণ এই যে, ওটা নিম্ন দেহ বিশিষ্ট হওয়ার ফলে যেন যমীনের ‘ফারশ’ বা বিছানা হয়ে গেছে। যহহাক (রঃ) এবং কাতাদা (রঃ) বলেন যে, (আরবী) হচ্ছে উট এবং গরু, আর
(আরবী) হচ্ছে ছাগল। আব্দুর রহমান ইবনে যায়েদ (রঃ)-এর ধারণা এই যে, (আরবী) হচ্ছে সওয়ারীর জন্তু এবং (আরবী) হচ্ছে ঐ পশু যাকে যবাই করে গোশত ভক্ষণ করা হয় বা ওর দুধ পান করা হয়। ছাগল বোঝা বহন করে না, বরং ওর গোশত খাওয়া হয় এবং ওর পশম দিয়ে কম্বল ও বিছানা বানানো হয়। আব্দুর রহমান এই আয়াতের যে তাফসীর করেছেন সেটাই সঠিক বটে, আল্লাহ পাকের উক্তিও এর সাক্ষ্য বহন করে । তিনি বলেন- (আরবী) অর্থাৎ “তারা কি লক্ষ্য করেনি যে, আমি তাদের জন্যে আমার (কুদরতের) হাতে বস্তুসমূহের মধ্যে চতুষ্পদ জন্তু সৃষ্টি করেছি, অতঃপর তারাই এসবের মালিক হয়ে যাচ্ছে। আর আমি এই চতুষ্পদ জন্তুগুলোকে তাদের বশীভূত করে দিয়েছি, অনন্তর ওর কতক তো তাদের বাহন এবং কতিপয়কে তারা ভক্ষণ করে থাকে।” (৩৬:৭১-৭২) আল্লাহ তা’আলা অন্য জায়গায় বলেনঃ “এই পশুগুলোর মধ্যে তোমাদের জন্যে বড়ই শিক্ষণীয় বিষয় ও উপদেশ রয়েছে। ওদের রক্ত দ্বারা তৈরীকৃত দুধ আমি তোমাদেরকে পান করিয়ে থাকি। এটা খাঁটি দুধ, পানকারীদের জন্যে এটা কতই না সুস্বাদু। ওদের লোম ও পশম তোমাদের জন্যে পোষাকের কাজ দেয় এবং তোমাদের অন্যান্য প্রয়োজনে তোমরা তা ব্যবহার করে থাক।” মহান আল্লাহ অন্য জায়গায় বলেনঃ “তিনিই আল্লাহ যিনি তোমাদের জন্যে চতুষ্পদ জন্তুগুলো সৃষ্টি করেছেন যে তোমরা কতগুলোর উপর আরোহণ কর, কতগুলোর গোশত ভক্ষণ কর।” তোমাদের জন্যে অন্যান্য আরও উপকার রয়েছে। তোমরা ওদের দ্বারা তোমাদের মনোবাঞ্ছা পূর্ণ করে থাক। তোমরা ওগুলোর উপর আরোহণ কর। আর তোমরা জাহাজে ও নৌকায় তোমাদের বোঝা চাপিয়ে থাক এবং সওয়ার হয়ে থাক। আল্লাহ তোমাদের কাছে নিজের কতই না নিদর্শন পেশ করছেন! তোমরা তাঁর কোন্ নিদর্শনকে অস্বীকার করবে?
আল্লাহ তা’আলার উক্তি (আরবী) অর্থাৎ আল্লাহ তোমাদেরকে যে ফল ফলাদি, ফসল, চতুষ্পদ জন্তু ইত্যাদি প্রদান করেছেন সেগুলো তোমরা খাও, এগুলো আল্লাহই সৃষ্টি করেছেন এবং তোমাদের জীবিকা বানিয়েছেন। তোমরা শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না যেমন এই মুশরিকরা তার পদাঙ্ক অনুসরণ করেছে। তারা কোন কোন আহার্যকে নিজেদের উপর হারাম করে নিয়েছে। হে লোক সকল! শয়তান তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। অর্থাৎ তোমরা একটু চিন্তা করলেই তার শত্রুতা তোমাদের কাছে স্পষ্ট হয়ে উঠবে। সুতরাং তোমরাও শয়তানকে নিজেদের শত্রু বানিয়ে নাও। সে নিজের শয়তানী সেনাবাহিনী নিয়ে তোমাদের উপর আক্রমণ চালাচ্ছে, যেন তোমরা জাহান্নামের অধিবাসী হয়ে যাও। হে বানী আদম! শয়তান যেন তোমাদেরকে ফিত্রায় না ফেলে, যেমন সে তোমাদের পিতা-মাতাকে (আদম ও হাওয়াকে) জান্নাত থেকে বের করে দিয়েছিল এবং তাদের দেহ থেকে পোশাক সরিয়ে দিয়েছিল। ফলে তারা উলঙ্গ হয়ে পড়েছিল। আল্লাহ পাক বলেনঃ “তোমরা কি আমাকে ছেড়ে শয়তানকে ও তার সন্তানদেরকে বন্ধু বানিয়ে নেবে? অথচ তারাতো তোমাদের শত্রু। অত্যাচারীদের জন্যে বড়ই জঘন্য বিনিময় রয়েছে।” কুরআন পাকে এই বিষয়ের বহু আয়াত রয়েছে।
তাফসীরে আবুবকর যাকারিয়া বলেছেন:-
সতেরতম রুকূ’
[১] বিভিন্ন বৃক্ষ ও ফল সম্পর্কে উল্লেখ করার পর মানুষের প্রতি দু’টি নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
প্রথম নির্দেশ মানুষের বাসনা ও প্রবৃত্তির দাবীর পরিপূরক। বলা হয়েছেঃ এসব বৃক্ষের ও শস্যক্ষেত্রের ফল ভক্ষন কর, যখন এগুলো ফলন্ত হয়। এতে ইঙ্গিত আছে যে, এসব বিভিন্ন প্রকার বৃক্ষ সৃষ্টি করে সৃষ্টিকর্তা নিজের কোন প্রয়োজন মেটাতে চান না; বরং তোমাদেরই উপকারের জন্য এগুলো সৃষ্টি করেছেন। অতএব, তোমরা খাও এবং উপকৃত হও। ‘ফলন্ত হয়’ একথা বলে এদিকে ইঙ্গিত করেছেন যে, বৃক্ষের ডাল থেকে ফল বের করা তোমাদের সাধ্যাতীত কাজ। কাজেই আল্লাহর নির্দেশে যখন ফল বের হয়ে আসে, তখনই তোমরা তা খেতে পার- পরিপক্ক হোক বা না হোক।
দ্বিতীয় নির্দেশ হলোঃ এ সমস্ত জমীনের ফসল কাটার সময় তার হক্ব আদায় কর। ফসল কাটা কিংবা ফল নামানোর সময়কে (حصاد) বলা হয়। (حصاد) শব্দের পরে ব্যবহৃত (هِ) সর্বনাম পূর্বোল্লেখিত প্রত্যেকটি খাদ্যবস্তুর দিকে যেতে পারে। বাক্যের অর্থ এই যে, এমন বস্তু খাও, পান কর এবং ব্যবহার কর; কিন্তু মনে রাখবে যে, ফসল কাটা কিংবা ফল নামানোর সময় এদের হকও আদায় করতে হবে। ‘হক’ বলে ফকীর-মিসকীনকে দান করা বুঝানো হয়েছেঃ
(وَفِيْٓ اَمْوَالِهِمْ حَقٌّ لِّلسَّاىِٕلِ وَالْمَحْرُوْمِ)
অর্থাৎ সৎ লোকদের ধন-সম্পদে নির্দিষ্ট হক রয়েছে ফকীর-মিসকীনদের।
এখানে সাধারণ দান-সদকা বোঝানো হয়েছে, না ক্ষেতের যাকাত ও ওশর বোঝানো হয়েছে, এ সম্পর্কে মুফাসসিরীন সাহাবা ও তাবেয়ীগণের দু’রকম উক্তি রয়েছে। কেউ কেউ প্রথমোক্ত মত প্রকাশ করে প্রমাণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন যে, আয়াতটি মক্কায় নাযিল হয়েছে আর যাকাত মদীনায় হিজরত করার দুই বছর পর ফরজ করা হয়েছে।তাই এখানে ‘হক’-এর অর্থ ক্ষেতের যাকাত হতে পারে না। পক্ষান্তরে কেউ কেউ আয়াতটিকে মদীনায় নাযিল বলেছেন এবং (حق) -এর অর্থ যাকাত ও ওশর নিয়েছেন। তাদের মতে যেসব ক্ষেতে পানি সেচনের ব্যবস্থা নেই, শুধু বৃষ্টির পানির উপর নির্ভর করতে হয়, সেসব ক্ষেতের উৎপন্ন ফসলের দশ ভাগের এক ভাগ যাকাত হিসেবে দান করা ওয়াজিব এবং যেসব ক্ষেত কৃপ, নদী-নালা, পুকুর ইত্যাদির পানি দ্বারা সেচ করা হয়, সেগুলোর উৎপন্ন ফসলের বিশ ভাগের এক ভাগ ওয়াজিব। এটাও বিভিন্ন সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে।
তাফসীরে তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-
টিকা:১১৬) আয়াতের মূল শব্দ হচ্ছে جَنَّاتٍ مَعْرُوشَاتٍ وَغَيْرَ مَعْرُوشَاتٍ । এর অর্থ হচ্ছে দু’ ধরনের বাগান। এক ধরনের বাগান হচ্ছে লতানো গাছের, যেগুলো মাচানের ওপর বা কোন কিছুকে আশ্রয় করে বিস্তার লাভ করে। আর দ্বিতীয় ধরনের বাগান হচ্ছে এমন সব গাছের যেগুলো অন্যের সাহায্য ছাড়াই নিজের কাণ্ডের ওপর দাঁড়িয়ে থাকে। আমাদের ভাষায় বাগান শব্দটি কেবলমাত্র এ দ্বিতীয় ধরনের বাগানের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। তাই এখানে কেবল جَنَّاتٍ وَغَيْرَ مَعْرُوشَاتٍ এর অনুবাদ করা হয়েছে বাগান। আর جَنَّاتٍ مَعْرُوشَاتٍ এর অর্থ করা হয়েছে লতাগুল্ম।
টিকা:১১৭) মূল আয়াতে فَرْشً শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। এক ধরনের পশুকে ফর্শ বলা হয়েছে। এ অর্থে যে, তারা আকারে ছোট এবং যমীনের সাথে মিশে চলাফেরা করে। অথবা তাদেরকে এজন্য ফরশ বলা হয়েছে যে, যবেহ করার সময় তাদেরকে যমীনের ওপর শোয়ানো হয়। অথবা তাদের চামড়া ও লোম থেকে ফরশ্ বা বিছানা বানানো হয় তাই তাদেরকে ফরশ বলা হয়েছে।
টিকা:১১৮) বক্তব্য বিষয়টির ধারাবাহিক বর্ণনার প্রতি দৃষ্টিপাত করলে জানা যায়, এখানে মহান আল্লাহ তিনটি কথা হৃদয়ঙ্গম করাতে চান।
এক, তোমরা এই যে, বাগান, ক্ষেত-খামার ও গবাদি পশু লাভ করেছো, এগুলো সবই আল্লাহর দান। এ দানে অন্য কারোর কোন অংশ নেই। তাই এ দানের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশের ব্যাপারেও কারোর কোন অংশ থাকতে পারে না।
দুই, এগুলো যেহেতু আল্লাহর দান তাই এগুলোর ব্যবহারের ক্ষেত্রেও আল্লাহর বিধানের আনুগত্য করতে হবে। এগুলো ব্যবহারের ক্ষেত্রে নিজের পক্ষ থেকে কোন সীমা নির্ধারণ করে দেবার অধিকার কারোর নেই। আল্লাহ ছাড়া অন্য কারোর নির্ধারিত রীতি ও নিয়মের অনুসরণ করা এবং আল্লাহ ছাড়া অন্য কারোর সামনে অনুগ্রহের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের উদ্দেশ্যে নযরানা পেশ করাই সীমা অতিক্রম করার নামান্তর এবং এটিই শয়তানের অনুসৃতি।
তিন, এসব জিনিস আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন মানুষের পানাহার ও ব্যবহার করার জন্য। এগুলোকে অযথা নিজের জন্য হারাম করে নেবার উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করা হয়নি। নিজেদের আন্দাজ-অনুমান ও কুসংস্কারেরর ভিত্তিতে লোকেরা আল্লাহর দেয়া রিযিক এবং তাঁর প্রদত্ত বিভিন্ন জিনিসের ব্যবহারের ওপর যেসব বিধি-নিষেধ আরোপ করেছে সেগুলো সবই আল্লাহর উদ্দেশ্য বিরোধী।