أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
(Book# 114/٢٨٥)-৪৮৭
www.motaher21.net
সুরা: আল-আনয়াম
সুরা:৬
১৬০ নং আয়াত:-
مَن جَاء بِالْحَسَنَةِ فَلَهُ عَشْرُ أَمْثَالِهَا
কেহ কোন ভাল কাজ করলে সে তার দশ গুণ প্রতিদান পাবে,
Whoever brings a good deed shall have ten times the like
thereof to his credit,
مَنۡ جَآءَ بِالۡحَسَنَۃِ فَلَہٗ عَشۡرُ اَمۡثَالِہَا ۚ وَ مَنۡ جَآءَ بِالسَّیِّئَۃِ فَلَا یُجۡزٰۤی اِلَّا مِثۡلَہَا وَ ہُمۡ لَا یُظۡلَمُوۡنَ ﴿۱۶۰﴾
কেহ কোন ভাল কাজ করলে সে তার দশ গুণ প্রতিদান পাবে, আর কেহ পাপ ও অসৎ কাজ করলে তাকে শুধু ততটুকুই প্রতিফল দেয়া হবে যতটুকু সে করেছে, আর তারা অত্যাচারিত হবেনা।
১৬০ নং আয়াতের তাফসীর:
তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ বলেছেন:-
(مَنْ جَا۬ءَ بِالْحَسَنَةِ فَلَه۫ عَشْرُ اَمْثَالِھَا)
‘কেউ কোন সৎ কাজ করলে সে তার দশ গুণ পাবে’এ আয়াতে সৎ আমলকারীদের ওপর আল্লাহ তা‘আলার দয়া ও অনুগ্রহের বর্ণনা দেয়া হয়েছে। যে ব্যক্তি একটি ভাল আমল করবে তার বিনিময়ে আল্লাহ তা‘আলা দশ গুণ প্রতিদান দেবেন। আবার যে খারাপ আমল করবে তার বিনিময়ে আল্লাহ তা‘আলা দশ গুণ গুনাহ দেবেন না। বরং ঐ একটি খারাপ আমলের যে গুনাহ হয় তাই দেবেন। আল্লাহ তা‘আলা পারতেন ভাল কাজের বিনিময়ে একটি মাত্র নেকী দিতে কিন্তু এটাই হল আল্লাহ তা‘আলার দয়া যা ছাড়া কোন মানুষ জান্নাতে যেতে পারবে না।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: আল্লাহ তা‘আলা বলেন, নিশ্চয়ই তোমাদের প্রতিপালক দয়ালু। যে ব্যক্তি একটি সৎ কাজের মনস্থ করেছে, কিন্তু আমল করেনি তার জন্য একটি নেকী লিখা হয়। আর যদি কমিটি করে তাহলে দশ থেকে সাতশত পর্যন্ত নেকী লেখা হয়। এমনকি এর চেয়েও বেশি। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি কোন খারাপ কাজের মনস্থ করে, কিন্তু বাস্তবে তা করল না তার জন্য একটি নেকী লেখা হয়। আর যদি করেই ফেলে তাহলে একটি গুনাহ লেখা হয়। অথবা তা মিটিয়ে দেন। আল্লাহ তা‘আলা তাকেই ধ্বংস করেন যে নিজেকে ধ্বংস করে। (সহীহ বুখারী হা: ৬৪৯১)
এরূপ অসংখ্য সহীহ হাদীস রয়েছে যেখানে বলা হয়েছে সৎ কাজের বেশি প্রতিদান দেয়ার কথা আর খারাপ কাজের অনুরূপ প্রতিদান দেয়ার কথা। ( ইবনে কাসীর, ৩য় খণ্ড, পৃঃ ৪২১-৪২৩)
তাই দীনের ভিতর দলাদলি সৃষ্টি করা যা মুসলিম ঐক্যের প্রতিবন্ধক এমন কাজ অবশ্যই বর্জনীয়। আমাদের এ ব্যাপারে সতর্ক থাকা উচিত। আসুন, আমরা সকল মুসলিম! সকল তরীকা, মাযহাব ও মতাদর্শ বর্জন করে কুরআন ও সহীহ সুন্নাহর দিকে ফিরে আসি। তবেই আমরা আবার ইসলামের স্বর্ণ যুগ ফিরে পারবো ইনশা-আল্লাহ। আর যদি আপন আপন মত ও তরীকার দিকে আহ্বান জানাই, শুধু মুখে ঐক্যের বুলি আওড়াই তাহলে কখনও ঐক্য সম্ভব নয়। সুতরাং আকীদাহ-আমল সকল ক্ষেত্রে ঐক্যের মানদন্ড হবে কুরআন ও সহীহ হাদীস, তাহলেই ঐক্য সম্ভব। আল্লাহ তা‘আলা আমাদের সেই তাওফীক দান করুন, আমীন।
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
মু’মিনদের ওপর আল্লাহ তা‘আলার কিরূপ দয়া ও অনুগ্রহ তা জানতে পারলাম।
English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Sura Anam
Sura:6
Verses :- 160
مَن جَاء بِالْحَسَنَةِ فَلَهُ عَشْرُ أَمْثَالِهَا
Whoever brings a good deed shall have ten times the like
thereof to his credit,
The Good Deed is Multiplied Tenfold, While the Sin is Recompensed with the Same
Allah mentioned His kindness in His decisions and His justice on the Day of Resurrection, when He said,
مَن جَاء بِالْحَسَنَةِ فَلَهُ عَشْرُ أَمْثَالِهَا
وَمَن جَاء بِالسَّيِّيَةِ فَلَ يُجْزَى إِلاَّ مِثْلَهَا وَهُمْ لَا يُظْلَمُونَ
Whoever brings a good deed shall have ten times the like thereof to his credit, and whoever brings an evil deed shall have only the recompense of the like thereof, and they will not be wronged.
This Ayah explains the general Ayah;
مَن جَأءَ بِالْحَسَنَةِ فَلَهُ خَيْرٌ مِّنْهَا
Whoever comes with good, then he will receive better than that. (28:84)
There are several Hadiths that are in agreement with the apparent wording of this honorable Ayah.
Imam Ahmad bin Hanbal recorded that Ibn Abbas said that the Messenger of Allah said about his Lord,
إِنَّ رَبَّكُمْ عَزَّ وَجَلَّ رَحِيمٌ مَنْ هَمَّ بِحَسَنَةٍ فَلَمْ يَعْمَلْهَا كُتِبَتْ لَهُ حَسَنَةً فَإِنْ عَمِلَهَا كُتِبَتْ لَهُ عَشْرًا إِلَى سَبْعِمِايَةٍ إِلَى أَضْعَافٍ كَثِيرَةٍ وَمَنْ هَمَّ بِسَيِّيَةٍ فَلَمْ يَعْمَلْهَا كُتِبَتْ لَهُ حَسَنَةً فَإِنْ عَمِلَهَا كُتِبَتْ لَهُ وَاحِدَةً أَوْ يَمْحُوهَا اللهُ عَزَّ وَجَلَّ وَلَا يَهْلِكُ عَلَى اللهِ إِلاَّ هَالِك
Your Lord is Most Merciful. Whoever intends to perform a good deed and does not do it, it will be written for him as a good deed. If he performs it, it will be written for him as ten deeds, to seven hundred, to multifold. Whoever intends to commit an evil deed, but does not do it, it will be written for him as a good deed. If he commits it, it will be written for him as a sin, unless Allah erases it. Only those who deserve destruction will be destroyed by Allah.
Al-Bukhari, Muslim and An-Nasa’i also recorded this Hadith.
Ahmad also recorded that Abu Dharr said that the Messenger of Allah said,
يَقُولُ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ
مَنْ عَمِلَ حَسَنَةً فَلَهُ عَشْرُ أَمْثَالِهَا وَأَزِيدُ
وَمَنْ عَمِلَ سَيِّيَةً فَجَزَاوُهَا مِثْلُهَا أَوْ أَغْفِرُ
وَمَنْ عَمِلَ قُرَابَ الاَْرْضِ خَطِييَةً ثُمَّ لَقِيَنِي لَا يُشْرِكُ بِي شَيْيًا جَعَلْتُ لَهُ مِثْلَهَا مَغْفِرَةً
وَمَنِ اقْتَرَبَ إِليَّ شِبْرًا اقْتَرَبْتُ إِلَيْهِ ذِرَاعًا وَمَنِ اقْتَرَبَ إِلَيَّ ذِرَاعًا اقْتَرَبْتُ إِلَيْهِ بَاعًا وَمَنْ أَتَانِي يَمْشِي أَتَيْتُهُ هَرْوَلَة
Allah says,
`Whoever performs a good deed, will have tenfold for it and more.
Whoever commits a sin, then his recompense will be the same, unless I forgive.
Whoever commits the earth’s fill of sins and then meets Me while associating none with Me, I will give him its fill of forgiveness.
Whoever draws closer to Me by a hand’s span, I will draw closer to him by a forearm’s length. Whoever draws closer to Me by a forearm’s length, I will draw closer to him by an arm’s length. And whoever comes to Me walking, I will come to him running.’
Muslim also collected this Hadith.
Know that there are three types of people who refrain from committing a sin that they intended.
There are those who refrain from committing the sin because they fear Allah, and thus will have written for them a good deed as a reward. This type contains both a good intention and a good deed. In some narrations of the Sahih, Allah says about this type, “He has left the sin for My sake.”
Another type does not commit the sin because of forgetfulness or being busy attending to other affairs. This type of person will neither earn a sin, nor a reward. The reason being that, this person did not intend to do good, nor commit evil.
Some people abandon the sin because they were unable to commit it or due to laziness, after trying to commit it and seeking the means that help commit it. This person is just like the person who commits the sin.
There is an authentic Hadith that states,
إِذَا الْتَقَى الْمُسْلِمَانِ بِسَيْفَيْهِمَا فَالْقَاتِلُ وَالْمَقْتُولُ فِي النَّار
When two Muslims meet with their swords, then the killer and the killed will be in the Fire.
They said, “O Allah’s Messenger! We know about the killer, so what about the killed?”
He said,
إِنَّهُ كَانَ حَرِيصًا عَلَى قَتْلِ صَاحِبِه
He was eager to kill his companion.
Al-Hafiz Abu Al-Qasim At-Tabarani said that Abu Malik Al-Ash`ari said that the Messenger of Allah said,
الْجُمُعَةُ كَفَّارَةٌ لِمَا بَيْنَهَا وَبَيْنَ الْجُمُعَةِ الَّتِي تَلِيهَا وَزِيَادَةُ ثَلَثَةِ أَيَّامٍ وَذَلِكَ لَانَّ اللهَ تَعَالَى قَالَ
Friday (prayer) to the next Friday (prayer), plus three more days, erase whatever was committed (of sins) between them. This is because Allah says:
مَن جَاء بِالْحَسَنَةِ فَلَهُ عَشْرُ أَمْثَالِهَا
Whoever brings a good deed shall have ten times the like thereof to his credit.
Abu Dharr narrated that the Messenger of Allah said,
مَنْ صَامَ ثَلَثَةَ أَيَّامٍ مِنْ كُلِّ شَهْرٍ فَقَدْ صَامَ الدَّهْرَ كُلَّه
Whoever fasts three days every month, will have fasted all the time.
Ahmad, An-Nasa’i, and Ibn Majah recorded this Hadith, and this is Ahmad’s wording.
At-Tirmidhi also recorded it with this addition;
فأنزل الله تصديق ذلك في كتابه
So Allah sent down affirmation of this statement in His Book,
مَن جَاء بِالْحَسَنَةِ فَلَهُ عَشْرُ أَمْثَالِهَا
(Whoever brings a good deed shall have ten times the like thereof to his credit),
اليوم بعشرة أيام
Therefore, a day earns ten days.
At-Tirmidhi said; “This Hadith is Hasan.”
There are many other Hadiths and statements on this subject, but what we mentioned should be sufficient, Allah willing, and our trust is in Him.
তাফসীরে ইবনে কাসীর বলেছেন:-
এ আয়াতে কারীমায় বিস্তারিতভাবে আলোকপাত করা হয়েছে এবং এর পরবর্তী আয়াত সংক্ষিপ্ত। এ আয়াতের সাথে সাদৃশ্যযুক্ত বহু হাদীস রয়েছে। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) মহাকল্যাণময় আল্লাহ থেকে বর্ণনা করেছেনঃ “তোমাদের মহামহিমান্বিত আল্লাহ বড় করুণাময়। কেউ যদি কোন ভাল কাজের ইচ্ছা করে, কিন্তু ঐ কাজ সাধন করতে না পারে তবুও তার জন্যে একটা পুণ্য লিখে নেয়া হয়। আর যদি সে ঐ কাজটি সাধন করে তবে তার জন্যে দশটা পুণ্য লিখা হয় এবং তার ভাল নিয়তের কারণে এটা বৃদ্ধি হতে হতে সাতশ’ পর্যন্ত পৌঁছে যায়। পক্ষান্তরে কেউ যদি কোন খারাপ কাজের ইচ্ছা করে, কিন্তু তা করে না বসে তবে ওর জন্যেও একটা পুণ্য লিখা হয়। আর যদি তা করে ফেলে তবে একটা মাত্র পাপ লিখা হয় এবং সেটাও ইচ্ছা করলে মহামহিমান্বিত আল্লাহ ক্ষমা করে দেন।” (এ হাদীসটি ইমাম বুখারী (রঃ), ইমাম মুসলিম (রঃ) এবং ইমাম নাসাঈ (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
আবু যার (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেন, “মহামহিমান্বিত আল্লাহ বলেন-যে ব্যক্তি একটি ভাল কাজ করবে তার জন্যে অনুরূপ দশটি পুণ্য রয়েছে এবং আমি তার চেয়েও বেশী প্রদান করবো। আর যে ব্যক্তি একটি খারাপ কাজ করবে, তার অনুরূপ একটি মাত্র পাপ তার জন্যে লিখা হবে অথবা আমি ওটাও ক্ষমা করে দেবো। যে ব্যক্তি ভূ-পৃষ্ঠ বরাবর পাপ করে আমার সাথে সাক্ষাৎ করবে, কিন্তু আমার সাথে কাউকে শরীক করবে না, আমি সেই পরিমাণই ক্ষমা তার উপর নাযিল করবো। যে ব্যক্তি আমার দিকে অর্ধহাত অগ্রসর হবে, আমি তার দিকে এক হাত অগ্রসর হবো। যে ব্যক্তি আমার দিকে একহাত অগ্রসর হবে, আমি তার দিকে দু’হাত অগ্রসর হবো। যে ব্যক্তি আমার দিকে হেঁটে আসবে, আমি তার দিকে দৌড়িয়ে যাবো।” (এ হাদীসটি ইমাম মুসলিম (রঃ) ও ইবনে মাজাহ (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি কোন ভাল কাজের ইচ্ছা করলো কিন্তু কাজটা করলো না তবে তার জন্যে একটা পুণ্য লিখা হবে। আর যদি কাজটি করে নেয় তবে তার জন্যে দশটি পুণ্য লিপিবদ্ধ করা হবে। পক্ষান্তরে কেউ যদি কোন খারাপ কাজের ইচ্ছা করে, কিন্তু করে না বসে তবে তার জন্যে কিছুই লিখা হবে না। আর যদি কাজটি করে ফেলে তবে তার জন্যে একটা পাপ লিখা হবে।” (হাদীসটি হাফিয আবু ইয়ালা আল মুসিলী বর্ণনা করেছেন)
এখানে এটা জেনে নেয়া জরুরী যে, যে ব্যক্তি কোন পাপকার্যের ইচ্ছা করে তা করে বসলো না ওটা তিন প্রকার। (১) কখনও এরূপ হয় যে, সে আল্লাহর ভয়ে পাপের ইচ্ছা পরিত্যাগ করলো। এ প্রকারের লোককেও পাপকার্য থেকে বিরত থাকার কারণে একটি পুণ্য দেয়া হবে এবং এটা আমল ও নিয়তের উপর নির্ভরশীল। একারণেই তার জন্যে একটা পুণ্য লিখা হয়। যেমন সহীহ হাদীসে রয়েছে, সে আমারই কারণে পাপকার্য পরিত্যাগ করেছে। (২) কখনও এমন হয়। যে, ঐ ব্যক্তি পাপকার্যের ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও ভুলে গিয়ে তা ছেড়ে দেয়। এ অবস্থায় তার জন্যে শাস্তিও নেই, প্রতিদানও নেই। কেননা, সে ভাল কাজেরও নিয়ত করেনি এবং খারাপ কাজও করে বসেনি। (৩) আবার কখনও এমনও হয় যে, কোন ব্যক্তি পাপকার্য করে ফেলার চেষ্টা করে থাকে, ওর উপকরণ সংগ্রহ করে, কিন্তু ওকে কার্যে পরিণত করতে সে অপারগ হয়ে যায় এবং বাধ্য হয়ে তাকে ওটা ছেড়ে দিতে হয়। এরূপ ব্যক্তি যদিও পাপকার্য করে বসলো না তবুও তাকে কার্যে পরিণত কারীরূপেই গণ্য করা হবে এবং শাস্তি দেয়া হবে। যেমন সহীহ হাদীসে বর্ণিত আছে যে, নবী (সঃ) বলেছেনঃ “যখন দু’জন মুসলমান তরবারী নিয়ে যুদ্ধ করতে শুরু করে তখন হত্যাকারী ও নিহত ব্যক্তি উভয়ই জাহান্নামী।” সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেনঃ “হে আল্লাহর রাসূল (সঃ)! এটা হত্যাকারীর ব্যাপারে প্রযোজ্য, কিন্তু নিহত ব্যক্তি জাহান্নামী হবে কেন? তিনি উত্তরে বললেনঃ “নিশ্চয়ই সে তার সাথীকে হত্যা করতে উদ্যত ছিল (কিন্তু পারেনি)।” (এ হাদীসটি ইমাম বুখারী (রঃ) ও ইমাম মুসলিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন) রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি কোন সকার্যের ইচ্ছা করে, সেই কাজ সাধনের পূর্বেই তার জন্যে একটি পুণ্য লিখে নেয়া হয়। আর যদি সেই কার্য সাধন করে ফেলে তবে আল্লাহর পক্ষ থেকে তার আমলনামায় দশটি পুণ্য লিপিবদ্ধ করা হয়। কিন্তু কেউ যদি কোন খারাপ কাজের ইচ্ছা করে তবে শুধু তার ইচ্ছার উপর ভিত্তি করে তার নামে কোন পাপ লিখা হয় না যে পর্যন্ত না। সে তা কার্যে পরিণত করে। আর যদি সে ঐ কাজটি করে বসে তবে দশটি পাপের পরিবর্তে একটি মাত্র পাপ লিখা হয়। যদি সে ইচ্ছা সত্ত্বেও সেই পাপ কার্য থেকে বিরত থাকে তবে কোন আমল ছাড়াই তার জন্যে একটা পুণ্য লিখা হয়। কেননা, আল্লাহ পাক বলেনঃ “আমাকে ভয় করার করণেই সে পাপকার্য থেকে বিরত রয়েছে।”
খুরায়েম ইবনে ফাতিক আসাদী (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, নবী (সঃ) বলেছেনঃ “মানুষ চার প্রকার এবং আমল ছয় প্রকার। (চার প্রকার মানুষ হচ্ছে) (১) কোন কোন লোক দুনিয়া ও আখিরাত উভয় স্থলেই সৌভাগ্যবান হয়ে থাকে। (২) কেউ কেউ দুনিয়ায় ভাগ্যবান কিন্তু পরকালে হতভাগ্য হয়। (৩) কোন ব্যক্তি দুনিয়ায় হতভাগ্য কিন্তু পরকালে ভাগ্যবান হয়। (৪) আবার কেউ কেউ দুনিয়া ও আখিরাত উভয় স্থলেই হতভাগ্য হয়ে থাকে। (ছয় প্রকারের। আমল হচ্ছে) দু’প্রকারের আমল ওয়াজিবকারী অর্থাৎ আমলের সমান পুণ্য দান। করা হবে বা দশগুণ বেশী অথবা সাতশ’গুণ বেশী পুণ্য দেয়া হবে। যে দু’টি কাজ ওয়াজিবকারী তা হচ্ছে এই যে, যদি কোন মুমিন লোক মারা যায় এবং সে আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক না করে থাকে, তবে এর ফলে তার জন্যে জান্নাত রয়েছে। পক্ষান্তরে যদি কোন কাফির মারা যায় তবে এর ফল স্বরূপ তার জন্যে জাহানাম রয়েছে। আর যে ব্যক্তি ভাল কাজের ইচ্ছা করে, কিন্তু কার্য সাধনে সক্ষম না হয় তবে আল্লাহ তো জানেন যে তার অন্তরে এটা ছিল এবং কার্য সাধনে সে উদ্যতও ছিল, তাই তার জন্যে একটি পুণ্য লিখা হয়। আর কেউ যদি কোন খারাপ কাজের ইচ্ছা করে তবে তার জন্যে কোন পাপ লিখা হয় না । কিন্তু সে যদি ওটা করে বসে তবে একটিমাত্র পাপ লিখা হয়, ওটা বৃদ্ধি করা হয় না। কেউ যদি কোন ভাল কাজ করে তবে তাকে দশগুণ পুণ্য দেয়া হয়। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে কিছু খরচ করে তখন কখনও তো তাকে দশগুণ পুণ্য দান করা হয়, আবার কোন কোন সময় তার সৎ নিয়ত অনুসারে তাকে তার পুণ্য বৃদ্ধি করতে করতে সাতশ’গুণ পর্যন্ত প্রদান করা হয়।” (এ হাদীসটি ইমাম আহমাদ (রঃ), তিরমীযী (রঃ) এবং নাসাঈ (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
আমর ইবনে শু’আয়েব (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি তাঁর পিতা থেকে এবং তিনি তাঁর দাদা হতে বর্ণনা করেছেন যে, নবী (সঃ) বলেছেনঃ “তিন ব্যক্তি জুমআ’র নামাযে হাযির হয়। একজন তো হাযির হয় প্রথা হিসেবে। তার আগমন বৃথা। সুতরাং তার জন্যে কোন অংশও নেই। দ্বিতীয় এমন ব্যক্তি মসজিদে হাযির হয়, যে হাযির হয়ে দু’আ করে থাকে। সুতরাং আল্লাহ ইচ্ছা করলে তার দু’আ ককূল করে থাকেন এবং ইচ্ছা করলে কবুল করেন না। তৃতীয় এমন ব্যক্তি নামাযে হাযির হয়, যে হাযির হয়ে সম্পূর্ণ নীরব থাকে। সে নামাযীদেরকে ভেদ করে সামনে অগ্রসর হয় না, কাউকেও ধাক্কাও দেয় না এবং কাউকেও কষ্টও দেয় না। তাহলে এখন এই ব্যক্তির নামায আগামী জুমআ পর্যন্ত এবং এর পরে আরও তিন দিন পর্যন্তও পাপের কাফফারা হয়ে থাকে। এর কারণ এই যে, আল্লাহ তা’আলা বলেছেনঃ “কেউ কোন ভাল কাজ করলে সে ওর দশগুণ প্রতিদান পাবে।” (এ হাদীসটি ইবনে আবি হাতিম (রঃ) বর্ণনা করেছেন)
আবু যার (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি প্রতি মাসে তিনদিন রোযা রাখলো সে যেন সারা বছর রোযা রাখলো।” এই প্রতিদানও দেয়া হবে এই মূলনীতির উপর ভিত্তি করেই। কেননা, আল্লাহ তা’আলা এর সত্যতা স্বীয় কিতাবে বলে দিয়েছেন। তাই এক দিনের রোযা হবে দশ দিনের রোযার সমান। তাহলে এক বছরে ছত্রিশ দিনের রোযার প্রতিদান তিনশ ষাট দিনের রোযার প্রতিদানের সমান হয়ে যায়। হযরত ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে এবং পূর্ববর্তী গুরুজনের একটি দল থেকে নকল করা হয়েছে যে, (আরবী)-এই আয়াতে (আরবী) শব্দ দ্বারা কালেমায়ে তাওহীদ অর্থাৎ লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু বুঝানো হয়েছে এবং (আরবী) দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে শিক। এই আয়াতের তাফসীরে আরও বহু হাদীস এসেছে। কিন্তু আমি যে কয়টি বর্ণনা করলাম এটাই যথেষ্ট।
তাফসীরে আবুবকর যাকারিয়া বলেছেন:-
[১] এ আয়াতে আখেরাতের প্রতিদান ও শাস্তির একটি সহৃদয় বিধি বর্ণিত হয়েছে যে, যে ব্যক্তি একটি সৎকাজ করবে, তাকে দশগুণ প্রতিদান দেয়া হবে। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি একটি গোনাহ করবে, তাকে শুধু একটি গোনাহর সমান বদলা দেয়া হবে। হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, তোমাদের প্রতিপালক অত্যন্ত দয়ালু। যে ব্যক্তি কোন সৎকাজের শুধু ইচ্ছা করে, তার জন্য একটি নেকী লেখা হয়- ইচ্ছাকে কার্যে পরিণত করুক বা না করুক। অতঃপর যখন সে সৎকাজটি সম্পাদন করে, তখন তার আমলনামায় দশটি নেকী লেখা হয়। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি কোন পাপ কাজের ইচ্ছা করে, অতঃপর তা কার্যে পরিণত না করে, তার আমলনামায়ও একটি নেকী লেখা হয়। অতঃপর যদি সে ইচ্ছাকে কার্যে পরিণত করে, তবে একটি গোনাহ লেখা হয়। কিংবা একেও মিটিয়ে দেয়া হয়। এহেন দয়া ও অনুকম্পা সত্বেও আল্লাহর দরবারে ঐ ব্যক্তিই ধ্বংস হতে পারে, যে ধ্বংস হতেই দৃঢসংকল্প। [ বুখারী: ৬৪৯১; মুসলিম: ১৩১]
অপর হাদীসে এসেছে, যে ব্যক্তি একটি সৎকাজ করে, সে দশটি সৎকাজের সওয়াব পায় বরং আরো বেশী পায়। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি একটি গোনাহ করে সে তার শাস্তি এক গোনাহর সমপরিমাণ পায় কিংবা তাও আমি মাফ করে দেব। যে ব্যক্তি পৃথিবী ভর্তি গোনাহ করার পর আমার কাছে এসে ক্ষমা প্রার্থনা করে, আমি তার সাথে ততটুকুই ক্ষমার ব্যবহার করব। যে ব্যক্তি আমার দিকে অর্ধহাত অগ্রসর হয়, আমি তার দিকে এক হাত অগ্রসর হই এবং যে ব্যক্তি আমার দিকে একহাত অগ্রসর হয়, আমি তার দিকে বা (অর্থাৎ দুই বাহু প্রসারিত) পরিমাণ অগ্রসর হই। যে ব্যক্তি আমার দিকে লাফিয়ে আসে, আমি তার দিকে দৌড়ে যাই। [মুসনাদে আহমাদ: ৫/১৫৩] এসব হাদীস থেকে জানা যায়, আয়াতে যে সৎকাজের প্রতিদান দশগুণ দেয়ার কথা বলা হয়েছে, তা সর্বনিম পরিমাণ। আল্লাহ্ তাআলা স্বীয় কৃপায় তা আরো বেশী দিতে পারেন এবং দিবেন। অন্যান্য হাদীস দ্বারা ‘সত্তর গুণ বা সাতশ গুণ’ পর্যন্ত প্রমাণিত রয়েছে।