(Book# 114/٢٩٠)-৪৯২ www.motaher21.net সুরা: আল্‌ আরাফ সুরা:৭ ৪-৭ নং আয়াত:- قَالُوۡۤا اِنَّا کُنَّا ظٰلِمِیۡنَ ‘‘বাস্তবিকই আমরা অত্যাচারী ছিলাম’’ “Verily, we were wrongdoers.”

أعوذ باللّٰه من الشيطان الرجيم

بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ

(Book# 114/٢٩٠)-৪৯২
www.motaher21.net
সুরা: আল্‌ আরাফ
সুরা:৭
৪-৭ নং আয়াত:-

قَالُوۡۤا اِنَّا کُنَّا ظٰلِمِیۡنَ
‘‘বাস্তবিকই আমরা অত্যাচারী ছিলাম’’
“Verily, we were wrongdoers.”

وَ کَمۡ مِّنۡ قَرۡیَۃٍ اَہۡلَکۡنٰہَا فَجَآءَہَا بَاۡسُنَا بَیَاتًا اَوۡ ہُمۡ قَآئِلُوۡنَ ﴿۴﴾
কত জনপদকেই না আমি ধ্বংস করেছি! আমার শাস্তি তাদের উপর রাতে ঘুমন্ত অবস্থায় অথবা দ্বিপ্রহরে যখন তারা বিশ্রামরত ছিল তখনই আপতিত হয়েছে।
فَمَا کَانَ دَعۡوٰىہُمۡ اِذۡ جَآءَہُمۡ بَاۡسُنَاۤ اِلَّاۤ اَنۡ قَالُوۡۤا اِنَّا کُنَّا ظٰلِمِیۡنَ ﴿۵﴾
আমার শাস্তি যখন তাদের কাছে এসে পড়েছিল তখন তাদের মুখে ‘‘বাস্তবিকই আমরা অত্যাচারী ছিলাম’’ এ কথা ছাড়া আর কিছুই ছিলনা।

فَلَنَسۡـَٔلَنَّ الَّذِیۡنَ اُرۡسِلَ اِلَیۡہِمۡ وَ لَنَسۡـَٔلَنَّ الۡمُرۡسَلِیۡنَ ۙ﴿۶﴾
অতঃপর আমি (কিয়ামাত দিবসে) যাদের কাছে রাসূল প্রেরণ করা হয়েছিল তাদেরকে এবং রাসূলদেরকেও অবশ্যই জিজ্ঞাসাবাদ করব।
فَلَنَقُصَّنَّ عَلَیۡہِمۡ بِعِلۡمٍ وَّ مَا کُنَّا غَآئِبِیۡنَ ﴿۷﴾
তখন আমি তাদের সমস্ত বিবরণ অকপটে প্রকাশ করে দিব, যেহেতু আমি পূর্ণরূপে জ্ঞাত আছি, আর আমিতো কোন কালে বেখবর ছিলামনা।

৪-৭ নং আয়াতের তাফসীরঃ

তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ বলেছেন:-

আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(اَفَاَمِنَ اَھْلُ الْقُرٰٓی اَنْ یَّاْتِیَھُمْ بَاْسُنَا بَیَاتًا وَّھُمْ نَا۬ئِمُوْنَ اَوَ اَمِنَ اَھْلُ الْقُرٰٓی اَنْ یَّاْتِیَھُمْ بَاْسُنَا ضُحًی وَّھُمْ یَلْعَبُوْنَ)‏

“জনপদবাসী কি নিরাপদ হয়ে গেছে যে, তাদের ওপর আমার শাস্তি আসবে রাতের বেলায় যখন তারা ঘুমিয়ে থাকবে? অথবা জনপদের অধিবাসীবৃন্দ কি ভয় রাখে না যে, আমার শাস্তি তাদের ওপর আসবে পূর্বাহ্নে যখন তারা থাকবে খেল তামাশায়?” (সূরা আ‘রাফ ৭: ৯৭-৯৮)

(فَمَا كَانَ دَعْوٰهُمْ)

‘তাদের কথা শুধু এটাই ছিল…’ অর্থাৎ যখনই তাদের ওপর আল্লাহ তা‘আলার শাস্তি এসেছিল তখন তাদের একটাই কথা ছিল, হে আল্লাহ! আমরা জালিম। কিন্তু আযাব এসে যাওয়ার পর স্বীকারোক্তি কোন উপকারে আসেনি। সূরা আম্বিয়ার ১১-১৫ নং আয়াতে এ সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা উল্লেখ করেছেন।

অতএব নাবী-রাসূলদের অবাধ্য পূর্ববর্তী জাতির ওপর আপতিত শাস্তি থেকে আমাদের শিক্ষা নিয়ে সতর্ক হওয়া উচিত। আমরাও যেন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর অবাধ্য না হই, তাঁর অনুসরণ বর্জন করে অন্য পথ না খুঁজি এবং তাঁকে মিথ্যা প্রতিপন্ন না করি। অন্যথায় আমাদের ওপরও তাদের মত শাস্তি আসতে পারে।

(فَلَنَسْئَلَنَّ الَّذِيْنَ أُرْسِلَ)

‘অতঃপর যাদের নিকট রাসূল প্রেরণ করা হয়েছিল তাদেরকে আমি অবশ্যই জিজ্ঞাসা করব’ অর্থাৎ কিয়ামতের দিন প্রত্যেক উম্মাত ও রাসূলকেই জিজ্ঞাসা করা হবে। রাসূলরা কি যথাযথ দায়িত্ব পালন করেছেন, তাঁদের ডাকে উম্মত থেকে কি সাড়া পেয়েছেন? আর উম্মতেরা কি নাবীদের দাওয়াত গ্রহণ করেছে এবং তাঁদের ডাকে কি সাড়া দিয়েছে?

রাসূলদের জিজ্ঞাসাবাদ সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(يَوْمَ يَجْمَعُ اللّٰهُ الرُّسُلَ فَيَقُوْلُ مَاذَآ أُجِبْتُمْ)

“স্মরণ কর, যেদিন আল্লাহ রাসূলগণকে একত্র করবেন এবং জিজ্ঞাসা করবেন, ‘তোমরা কী উত্তর পেয়েছিলে।”

(وَيَوْمَ يُنَادِيْهِمْ فَيَقُوْلُ مَاذَآ أَجَبْتُمُ الْمُرْسَلِيْنَ)‏

“আর সেদিন আল্লাহ এদেরকে ডেকে বলবেন, ‘তোমরা রাসূলগণকে কী জবাব দিয়েছিলে?” (সূরা কাসাস ২৮:৬৫)

কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলা মানুষের সকল আমলের বর্ণনা জানিয়ে দেবেন, কারণ মানুষ যখন কোন আমল করে আল্লাহ তা‘আলা তা প্রত্যক্ষ করেন, তিনি দেখেন না এমন নয়।

সুতরাং দীনের পথে চলতে এবং তার দিকে দাওয়াত দিতে কোন সংকোচ বোধ করা যাবে না। পূর্ববর্তী অবাধ্য জাতি থেকে আমাদের শিক্ষা নেয়া উচিত। অতএব আমরা সর্বদা কুরআন ও সহীহ সুন্নাহ মেনে চলব, তাহলে সঠিক পথের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকতে পারব।

আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয় :

১. মৃত্যু প্রত্যক্ষ করা অথবা আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ হতে আযাব আসার পর তাওবাহ কবূল হবে না।
২. প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল, প্রত্যেক ব্যক্তিকে তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে।

English Tafsir:-
Tafsir Ibn Kathir:-
Sura Al-Araf
Sura:7
Verses :- 4-7
قَالُوۡۤا اِنَّا کُنَّا ظٰلِمِیۡنَ

“Verily, we were wrongdoers.”

Nations that were destroyed

Allah said,

وَكَم مِّن قَرْيَةٍ أَهْلَكْنَاهَا

And a great number of towns We destroyed.

for defying Our Messengers and rejecting them. This behavior led them to earn disgrace in this life, which led them to disgrace in the Hereafter.

Allah said in other Ayat,

وَلَقَدِ اسْتُهْزِىءَ بِرُسُلٍ مِّن قَبْلِكَ فَحَاقَ بِالَّذِينَ سَخِرُواْ مِنْهُمْ مَّا كَانُواْ بِهِ يَسْتَهْزِءُونَ

And indeed (many) Messengers before you were mocked at, but their scoffers were surrounded by the very thing that they used to mock at. (6:10)

and,

فَكَأَيِّن مِّن قَرْيَةٍ أَهْلَكْنَـهَا وَهِىَ ظَالِمَةٌ فَهِىَ خَاوِيَةٌ عَلَى عُرُوشِهَا وَبِيْرٍ مُّعَطَّلَةٍ وَقَصْرٍ مَّشِيدٍ

And many a township did We destroy while they were given to wrongdoing, so that it lie in ruins (up to this day), and (many) a deserted well and lofty castle! (22:45)

and,

وَكَمْ أَهْلَكْنَا مِن قَرْيَةٍ بَطِرَتْ مَعِيشَتَهَا فَتِلْكَ مَسَـكِنُهُمْ لَمْ تُسْكَن مِّن بَعْدِهِمْ إِلاَّ قَلِيلً وَكُنَّا نَحْنُ الْوَرِثِينَ

And how many a town have We destroyed, which was thankless for its means of livelihood! And those are their dwellings, which have not been inhabited after them except a little. And verily, We have been the heirs. (28:58)

Allah’s saying,

فَجَاءهَا بَأْسُنَا بَيَاتًا أَوْ هُمْ قَأيِلُونَ

Our torment came upon them by night or while they were taking their midday nap.

means, Allah’s command, torment and vengeance came over them at night or while taking a nap in the middle of the day. Both of these times are periods of rest and leisure or heedlessness and amusement.

Allah also said

أَفَأَمِنَ أَهْلُ الْقُرَى أَن يَأْتِيَهُم بَأْسُنَا بَيَـتاً وَهُمْ نَأيِمُونَ

أَوَ أَمِنَ أَهْلُ الْقُرَى أَن يَأْتِيَهُمْ بَأْسُنَا ضُحًى وَهُمْ يَلْعَبُونَ

Did the people of the towns then feel secure against the coming of Our punishment by night while they were asleep! Or, did the people of the towns then feel secure against the coming of Our punishment in the forenoon while they were playing! (7:97-98)

and,

أَفَأَمِنَ الَّذِينَ مَكَرُواْ السَّيِّيَاتِ أَن يَخْسِفَ اللَّهُ بِهِمُ الاٌّرْضَ أَوْ يَأْتِيَهُمُ الْعَذَابُ مِنْ حَيْثُ لَا يَشْعُرُونَ

أَوْ يَأْخُذَهُمْ فِى تَقَلُّبِهِمْ فَمَا هُم بِمُعْجِزِينَ

أَوْ يَأْخُذَهُمْ عَلَى تَخَوُّفٍ فَإِنَّ رَبَّكُمْ لَرَوُوفٌ رَّحِيمٌ

Do then those who devise evil plots feel secure that Allah will not sink them into the earth, or that the torment will not seize them from directions they perceive not! Or that He may catch them in the midst of their going to and from, so that there be no escape for them! Or that He may catch them with gradual wastage.

Truly, Your Lord is indeed full of kindness, Most Merciful. (16:45-47)

Allah’s saying;

فَمَا كَانَ دَعْوَاهُمْ إِذْ جَاءهُمْ بَأْسُنَا إِلاَّ أَن قَالُواْ إِنَّا كُنَّا ظَالِمِينَ
No cry did they utter when Our torment came upon them but this:”Verily, we were wrongdoers.”

This means, when the torment came to them, their cry was that they admitted their sins and that they deserved to be punished.

Allah said in a similar Ayah,

وَكَمْ قَصَمْنَا مِن قَرْيَةٍ كَانَتْ ظَـلِمَة

How many a town given to wrongdoing, have We destroyed, (21:11), until,
خَـمِدِينَ
(Extinct). (21:15)

Allah’s saying

فَلَنَسْأَلَنَّ الَّذِينَ أُرْسِلَ إِلَيْهِمْ

Then surely, We shall question those (people) to whom it (the Book) was sent,

is similar to the Ayat,

وَيَوْمَ يُنَـدِيهِمْ فَيَقُولُ مَاذَا أَجَبْتُمُ الْمُرْسَلِينَ

And (remember) the Day (Allah) will call them, and say:”What answer gave you to the Messengers!” (28:65)

and,

يَوْمَ يَجْمَعُ اللَّهُ الرُّسُلَ فَيَقُولُ مَاذَا أُجِبْتُمْ قَالُواْ لَا عِلْمَ لَنَأ إِنَّكَ أَنتَ عَلَّـمُ الْغُيُوبِ

On the Day when Allah will gather the Messengers together and say to them:”What was the response you received!”

They will say:”We have no knowledge, verily, only You are the Knower of all that is unseen.” (5:109)

Allah will question the nations, on the Day of Resurrection, how they responded to His Messengers and the Messages He sent them with. He will also question the Messengers if they conveyed His Messages.

So, Ali bin Abi Talhah reported from Ibn Abbas, who said commenting on the Ayah:
فَلَنَسْأَلَنَّ الَّذِينَ أُرْسِلَ إِلَيْهِمْ وَلَنَسْأَلَنَّ الْمُرْسَلِينَ
(Then surely, We shall question those (people) to whom it (the Book) was sent and verily, We shall question the Messengers). He said;

“About what they conveyed.”

فَلَنَقُصَّنَّ عَلَيْهِم بِعِلْمٍ وَمَا كُنَّا غَأيِبِينَ

Then surely, We shall narrate unto them (their whole story) with knowledge, and indeed We have not been absent.

Ibn Abbas commented on Allah’s statement,

“The Book will be brought forth on the Day of Resurrection and it will speak, disclosing what they used to do.”

وَمَا كُنَّا غَأيِبِينَ

and indeed We have not been absent.

meaning, On the Day of Resurrection, Allah will inform His servants about what they said and did, whether substantial or minor. Certainly, He witnesses to everything, nothing escapes His observation, and He is never unaware of anything. Rather, He has perfect knowledge of what the eyes are deluded by and what the hearts conceal,

وَمَا تَسْقُطُ مِن وَرَقَةٍ إِلاَّ يَعْلَمُهَا وَلَا حَبَّةٍ فِى ظُلُمَـتِ الاٌّرْضِ وَلَا رَطْبٍ وَلَا يَابِسٍ إِلاَّ فِى كِتَـبٍ مُّبِينٍ

Not a leaf falls, but He knows it. There is not a grain in the darkness of the earth nor anything fresh or dry, but is written in a Clear Record. (6:59).

তাফসীরে ইবনে ‌কাসীর বলেছেন:-

৪-৭ নং আয়াতের তাফসীর:

আল্লাহ পাক বলেনঃ রাসূলের বিরুদ্ধাচরণের কারণে আমি কত লোকালয়কেই ধ্বংস করেছি! আর দুনিয়া ও আখিরাতের লাঞ্ছনা ও অপমান তাদের উপর চাপিয়ে দিয়েছি। যেমন তিনি বলেনঃ “(হে নবী সঃ!) তোমার পূর্বে রাসূলদেরকে উপহাস করা হয়েছিল, ফলে ঐ উপহাসের শাস্তি হিসেবে সেই উপহাসকারীদেরকে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছিল। যেমন তিনি আর এক জায়গায় বলেনঃ “যখন আমি পাপের কারণে বহু জনপদকে ধ্বংস করে দিলাম তখন তাদের বড় বড় অট্টালিকা ও মজবুত ঘরবাড়ী ভেঙ্গে চুরমার হয়ে পড়লো এবং তাদের প্রস্রবণ ও নদী-নালা তছনছ হয়ে গেল।” অন্য জায়গায় বলেনঃ “জীবিকার প্রাচুর্যের কারণে যখন তারা অহংকারে ফেটে পড়লো তখন আমি তাদেরকে ধ্বংস করে দিলাম, তাদের বাড়ীঘর এমন হয়ে গেল যে, যেন তারা তাতে কোন দিন বসবাসই করেনি, কিন্তু অল্প কয়েকজন বেঁচে গেল, এখন তাদের উত্তরাধিকারী একমাত্র আমিই।”

আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ আমার শাস্তি তাদের উপর রাত্রিকালে ঘুমন্ত অবস্থায় অথবা ভরা দ্বিপ্রহরে যখন তারা বিশ্রামরত ছিল তখনই আপতিত হয়েছে। আর এ দু’টোই হচ্ছে উদাসীন থাকার সময়। যেমন তিনি অন্যত্র বলেনঃ “ঐ লোকদের কি এই ভয় নেই যে, আমার শাস্তি রাত্রিকালে ঘুমন্ত অবস্থায় অকস্মাৎ তাদেরকে ঘিরে ফেলে অথবা অতি প্রত্যুষে তাদের উপর এসে পড়ে যখন তারা অশ্লীল ও বাজে কাজে লিপ্ত থাকে? আর নিজেদের পাপরাশির মাধ্যমে চালবাজীকারীরা এটাকে কি ভয় করে না যে, আল্লাহ সম্পূর্ণরূপে তাদেরকে ভূ-গর্ভে ধ্বসিয়ে দিতে সক্ষম অথবা এমনভাবে তাদেরকে ভীষণ শাস্তি দ্বারা গ্রেফতার করতে পারেন যা তারা কল্পনা বা ধারণাও করতে পারবে না? কিংবা তাদের সফরে তাদেরকে পাকড়াও করবেন যা তারা প্রতিরোধ করতে পারবে না?” যেমন তিনি আরও বলেনঃ “যখন তাদের উপর শাস্তি এসেই পড়ে তখন ‘বাস্তবিকই আমরা অপরাধী ছিলাম’ একথা বলা ছাড়া তাদের আর কিছুই বলার থাকে না। যেমন তিনি আর এক জায়গায় বলেনঃ “যারা সীমালংঘন করেছিল এরূপ বহু গ্রামবাসীকে আমি সমূলে ধ্বংস করে দিয়েছি।” উপরোক্ত আয়াতগুলো নবী (সঃ)-এর নিম্নের হাদীসের স্পষ্ট দলীলঃ “ কোন কওমকে ধ্বংস করে দেয়া হয়নি যে পর্যন্ত না তাদের সমস্ত শাস্তি শেষ করে দেয়া হয়েছে।” আবদুল মালিককে জিজ্ঞেস করা হয়েছিলঃ “এটা কিরূপ হবে?” তখন তিনি “আমার শাস্তি যখন তাদের কাছে এসেই পড়েছিল তখন তাদের মুখে-বাস্তবিকই আমরা অত্যাচারী ছিলাম এই কথা ছাড়া আর কিছুই ছিল না” এই আয়াতটিই পাঠ করেছিলেন।

আল্লাহ পাকের উক্তি (আরবী) অর্থাৎ “যাদের কাছে রাসূল পাঠানো হয়েছিল আমি তাদেরকে অবশ্যই জিজ্ঞাসবাদ করবো।” যেমন তিনি আর এক জায়গায় বলেনঃ “রাসূলগণ যখন প্রচারের দায়িত্ব পালন করতে গিয়েছিল তখন তোমরা তাদেরকে কি উত্তর দিয়েছিলে?” আরও এক জায়গায় তিনি বলেনঃ “সেইদিন আল্লাহ রাসূলদেরকে একত্রিত করে জিজ্ঞেস করবেনতোমাদের কওম তোমাদেরকে কি জবাব দিয়েছিল? তারা উত্তরে বলবে-আমাদের জানা নেই, আপনিই গায়েবের সংবাদ রাখেন। তখন আল্লাহ কিয়ামতের দিন ঐ লোকদেরকে জিজ্ঞেস করবেন-তোমরা রাসূলদেরকে কি জবাব দিয়েছিলে?” তাই আল্লাহ তা’আলা এখানে বলেনঃ “আমি রাসূলদেরকেও জিজ্ঞাসাবাদ করবো। রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলেছেনঃ “তোমাদের প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল নেতা। তোমাদের সকলকেই নিজ নিজ অধীনস্থ সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। বাদশাহ্ তার প্রজাদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে, পুরুষ লোককে তার স্ত্রী ও ছেলে মেয়েদের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে, স্ত্রীলোক জিজ্ঞাসিত হবে তার স্বামী সম্পর্কে এবং খাদেমকে জিজ্ঞেস করা হবে তার মনিবের মাল সম্পর্কে।”

মহান আল্লাহ বলেনঃ “আমি তাদের সমস্ত বিবরণ অকপটে প্রকাশ করে দেবো, যেহেতু আমি পূর্ণরূপে জ্ঞাত আছি, আর আমি তো বে-খবর ছিলাম না।” কিয়ামতের দিন তাদের আমলনামা খুলে দেয়া হবে এবং তাদের আমল পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখা হবে। আল্লাহ তা’আলা সবকিছুই দেখতে রয়েছেন। তিনি তো গোপন দৃষ্টিপাত সম্পর্কেও পূর্ণ অবগত। তিনি অন্তরের গোপন কথাও জানেন। যদি গাছের কোন পাতা পড়ে যায় বা অন্ধকারে কোন বীজ পড়ে থাকে তবে সেটাও তার দৃষ্টির অন্তরালে থাকে না। স্পষ্ট কিতাবের মধ্যে কী নেই? আর্দ্রতা ও শুষ্কতা সবকিছুই তো লিপিবদ্ধ রয়েছে এতে।

তাফসীরে আবুবকর ‌যাকারিয়া‌ বলেছেন:-

পূর্ববর্তী লোকদের উপর রাতে বা দুপুরে যে শাস্তি এসেছিল তার বর্ণনা দিয়ে আল্লাহ তা’আলা মানুষদেরকে সতর্ক করছেন। অন্য আয়াতেও বলা হয়েছে, “তবে কি জনপদের অধিবাসীরা নিরাপদ হয়ে গেছে যে, আমাদের শাস্তি তাদের উপর রাতে আসবে, যখন তারা থাকবে গভীর ঘুমে? নাকি জনপদের অধিবাসীরা নিরাপদ হয়ে গেছে যে, আমাদের শাস্তি তাদের উপর আসবে দিনের বেলা, যখন তারা খেলাধুলায় মেতে থাকবে?” [সূরা আল-আরাফ: ৯৭-৯৮] আরও বলেন, “বলুন, তোমরা আমাকে জানাও, যদি তার শাস্তি তোমাদের উপর রাতে অথবা দিনে এসে পড়ে, তবে অপরাধীরা তার কোনটিকে তাড়াতাড়ি পেতে চায়।” [সূরা ইউনুস: ৫০] বিশেষ করে যারাই খারাপ কুটকৌশল ও ষড়যন্ত্র করেছে তাদের পরিণতি যে কি ভয়াবহ হতে পারে সে ব্যাপারেও অন্যত্র আল্লাহ সাবধান করেছেন, “যারা কুকর্মের ষড়যন্ত্র করে তারা কি এ বিষয়ে নির্ভয় হয়েছে যে, আল্লাহ তাদেরকে ভূগর্ভে বিলীন করবেন না অথবা তাদের উপর আসবে না শাস্তি এমনভাবে যে, তারা উপলব্ধিও করবে না? অথবা চলাফেরা করতে থাকাকালে তিনি তাদেরকে পাকড়াও করবেন না? অতঃপর তারা তা ব্যর্থ করতে পারবে না। অথবা তাদেরকে তিনি ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্থায় পাকড়াও করবেন না? নিশ্চয় তোমাদের রব অতি দয়ার্দ্র, পরম দয়ালু”। [আন-নাহল: ৪৫-৪৬]

অন্য আয়াতেও আল্লাহ তা’আলা তাদের এ অবস্থার কথা বর্ণনা করেছেন। আল্লাহ বলেন, “আর আমরা ধ্বংস করেছি বহু জনপদ, যার অধিবাসীরা ছিল যালেম এবং তাদের পরে সৃষ্টি করেছি অন্য জাতি। তারপর যখন তারা আমাদের শাস্তি টের পেল তখনই তারা সেখান থেকে পালাতে লাগল। ‘পালিয়ে যেও না এবং ফিরে এসো যেখানে তোমরা বিলাসিতায় মত্ত ছিলে ও তোমাদের আবাসগৃহে, যাতে এ বিষয়ে তোমাদেরকে জিজ্ঞেস করা হয় ” [সূরা আল-আম্বিয়া ১১-১৩]

অর্থাৎ কেয়ামতের দিন সর্বসাধারণকে জিজ্ঞেস করা হবে, আমি তোমাদের কাছে রাসূল ও গ্রন্থসমূহ প্রেরণ করেছিলাম, তোমরা তাদের সাথে কিরূপ ব্যবহার করেছিলে? নবীগণকে জিজ্ঞেস করা হবেঃ যেসব বার্তা ও বিধান দিয়ে আমি আপনাদেরকে প্রেরণ করেছিলাম, সেগুলো আপনারা নিজ নিজ উম্মতের কাছে পৌছিয়েছেন কি না? এ আয়াতে রাসূলদেরকে কোন বিষয়ে প্রশ্ন করা হবে এবং প্রেরিত লোকদেরকে কোন বিষয়ে প্রশ্ন করা হবে তা বর্ণনা করা হয়নি। তবে কুরআনের অন্যত্র সেটা বর্ণিত হয়েছে। যেমন প্রথমটি সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, “স্মরণ করুন, যেদিন আল্লাহ রাসূলগণকে একত্র করবেন এবং জিজ্ঞেস করবেন, আপনারা কি উত্তর পেয়েছিলেন?” [সূরা আল-মায়িদাহ: ১০৯] আর দ্বিতীয়টি সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, “আর সেদিন আল্লাহ এদেরকে ডেকে বলবেন, তোমরা রাসূলগণকে কী জবাব দিয়েছিলে?” [সূরা আল-কাসাস: ৬৫] অন্যত্র আল্লাহ বলেন যে, তিনি মানুষদেরকে তাদের আমল সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবেন, “কাজেই শপথ আপনার রবের! অবশ্যই আমরা তাদের সবাইকে প্রশ্ন করবই, সে বিষয়ে, যা তারা আমল করত।” [সূরা আল-হিজর:৯২-৯৩]

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিদায় হজের ভাষণে উপস্থিত জনতাকে প্রশ্ন করেছিলেনঃ কিয়ামতের দিন আমার সম্পর্কে তোমাদেরকে জিজ্ঞেস করা হবে যে, আমি আল্লাহর বাণী পৌছিয়েছি কি না? তখন তোমরা উত্তরে কি বলবে? সাহাবায়ে কেরাম বললেনঃ আমরা বলব, আপনি আল্লাহর বাণী আমাদের কাছে পৌঁছিয়ে দিয়েছেন এবং আল্লাহ-প্রদত্ত দায়িত্ব যথাযথ পালন করেছেন। একথা শুনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ ‘হে আল্লাহ, আপনি সাক্ষী থাকুন’। [মুসলিমঃ ১২১৮]

অপর বর্ণনায় এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কেয়ামতের দিন আল্লাহ তা’আলা আমাকে জিজ্ঞেস করবেনঃ আমি তাঁর বাণী তার বান্দাদের কাছে পৌঁছিয়েছি কি না। আমি উত্তরে বলবঃ পোঁছিয়েছি। কাজেই এখানে তোমরা এ বিষয়ে সচেষ্ট হও যে, যারা এখন উপস্থিত রয়েছ, তারা যেন অনুপস্থিতদের কাছে আমার বাণী পৌঁছে দেয়। [মুসনাদে আহমাদঃ ৫/৪]

আল্লাহ তা’আলা এ আয়াতে বলছেন যে, তিনি তার বান্দারা ছোট, বড়, গুরুত্বপূর্ণ, গুরুত্বহীন যা করত বা বলত সবকিছু সম্পর্কে কিয়ামতের মাঠে বিস্তারিত জানাবেন। কারণ, তিনি সবকিছু দেখছেন, কোন কিছুই তাঁর অগোচরে নেই, কোন কিছু সম্পর্কেই তিনি বেখবর নন। বরং তিনি চোখের খিয়ানত ও অন্তরের গোপন ভেদ সম্পর্কেও অবগত। আল্লাহ বলেন, “তার অজানায় একটি পাতাও পড়ে না। মাটির অন্ধকারে এমন কোন শস্যকণাও অংকুরিত হয় না বা রসযুক্ত কিংবা শুষ্ক এমন কোন বস্তু নেই যা সুস্পষ্ট কিতাবে নেই ” [সূরা আল-আন’আম: ৫৯] [ইবন কাসীর] সুতরাং আল্লাহ হাশরের মাঠে তাদেরকে যা জানাবেন তা জ্ঞানের ভিত্তিতেই জানাবেন। দুনিয়াতে যা কিছুই ঘটেছে সবই তার জ্ঞানের মধ্যে রয়েছে। সবকিছু তিনি জানার পরও তাঁর ফেরেশতাদের দিয়ে লিখিয়ে নিয়েছেন। অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, “আপনি কি লক্ষ্য করেন না যে, আসমানসমূহ ও যমীনে যা কিছু আছে আল্লাহ তা জানেন? তিন ব্যক্তির মধ্যে এমন কোন গোপন পরামর্শ হয় না যাতে চতুর্থ জন হিসেবে তিনি উপস্থিত থাকেন না এবং পাঁচ ব্যক্তির মধ্যেও হয় না যাতে ষষ্ট জন হিসেবে তিনি উপস্থিত থাকেন না। তারা এর চেয়ে কম হোক বা বেশী হোক তিনি তো তাদের সংগেই আছেন তারা যেখানেই থাকুক না কেন। তারপর তারা যা করে, তিনি তাদেরকে কিয়ামতের দিন তা জানিয়ে দেবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ সব কিছু সম্পর্কে সম্যক অবগত।” [সূরা আল-মুজাদালাহ:৭] অন্যত্র বলেন, “তিনি জানেন যা যমীনে প্রবেশ করে এবং যা তা থেকে নির্গত হয় আর যা আসমান থেকে নাযিল হয় এবং যা কিছু তাতে উত্থিত হয়” [সূরা সাবা: ২] আরও বলেন, “তিনি জানেন যা কিছু যমীনে প্রবেশ করে ও যা কিছু তা থেকে বের হয় এবং আসমান হতে যা কিছু নামে ও আসমানে যা কিছু উখিত হয়। তোমরা যেখানেই থাক না কেন—তিনি (জ্ঞানে) তোমাদের সংগে আছেন” [সূরা আল-হাদীদ: ৪] আরও বলেন, “আর আপনি যে অবস্থাতেই থাকুন না কেন এবং আপনি সে সম্পর্কে কুরআন থেকে যা-ই তিলাওয়াত করেন এবং তোমরা যে কাজই কর না কেন, আমরা তোমাদের সাক্ষী থাকি- যখন তোমরা তাতে প্রবৃত্ত হও। আর আসমানসমূহ ও যমীনের অণু পরিমাণও আপনার রবের দৃষ্টির বাইরে নয় এবং তার চেয়ে ক্ষুদ্রতর বা বৃহত্তর কিছুই নেই যা সুস্পষ্ট কিতাবে নেই” [সূরা ইউনুস: ৬১] [আদওয়াউল বায়ান]

তাফসীরে‌ তাফহীমুল কুরআন বলেছেন:-

টিকা:৫) অর্থাৎ তোমাদের শিক্ষার জন্য এমন সব জাতির দৃষ্টান্ত রয়েছে যারা আল্লাহর হেদায়াত থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে মানুষ ও শয়তানের নেতৃত্বে জীবন পথে এগিয়ে চলেছে। অবশেষে তারা এমনভাবে বিপথগামী ও বিকারগ্রস্ত হয়ে গেছে যার ফলে পৃথিবীতে তাদের অস্তিত্ব এক দুঃসহ অভিশাপে পরিণত হয়েছে এবং আল্লাহর আযাব এসে তাদের নাপাক অস্তিত্ব থেকে দুনিয়াকে মুক্ত করেছে।

শেষ বাক্যটির উদ্দেশ্য দু’টি বিষয়ে সতর্ক করে দেয়াঃ

এক, সংশোধনের সময় অতিক্রান্ত হবার পর কারোর সচেতন হওয়া এবং নিজের ভুল স্বীকার করা অর্থহীন। যে ব্যক্তি ও জাতি গাফিলতিতে লিপ্ত ও ভোগের নেশায় মত্ত হয়ে স্বেচ্ছাচারী জীবন যাপনের মধ্য দিয়েআল্লাহর দেয়া অবকাশ ও সুযোগ হারিয়ে বসে, সত্যের আহবায়কদের আওয়াজ যাদের অসচেতন কানের পর্দায় একটুও সাড়া জাগায় না এবং আল্লাহর হাত মজবুতভাবে পাকড়াও করার পরই যারা সচেতন হয় তাদের চাইতে বড় নাদান ও মুর্খ আর কেউ নেই।

দুই, ব্যক্তি ও জাতিদের জীবনের দু-একটি নয়, অসংখ্য দৃষ্টান্ত তোমাদের সামনে এসে গেছে। কারোর অসৎ কর্মের পেয়ালা যখন পরিপূর্ণ হয়ে যায় এবং তার অবকাশের সীমা শেষ হয়ে যায় তখন অকস্মাৎ এক সময় আল্লাহ‌ তাকে পাকড়াও করেন। আর আল্লাহ‌ একবার কাউকে পাকড়াও করার পর আর তার মুক্তি লাভের কোন পথই থাকে না। তাছাড়া মানব জাতির ইতিহাসে এ ধরনের ঘটনা এক দু-বার নয়, শত শত বার, হাজার হাজার বার ঘটে গেছে। এক্ষেত্রে মানুষের জন্য বারবার সেই একই ভুলের পুনরাবৃত্তি করার যৌক্তিকতা কোথায়? সচেতন হবার জন্য সে কেনই বা সেই শেষ মুহূর্তেরই অপেক্ষা করতে থাকবে যখন কেবলমাত্র আক্ষেপ করা ও মর্মজ্বালা ভোগ করা ছাড়া সচেতন হবার আর কোন স্বার্থকতাই থাকে না।

টিকা:৬) এখানে জিজ্ঞাসাবাদ বলতে কিয়ামতের হিসেব-নিকেশ বুঝানো হয়েছে। অসৎ ব্যক্তি ও জাতিদের ওপর দুনিয়ায় যেসব আযাব আসে সেগুলো আসলে তাদের অসৎকর্মের চূড়ান্ত ফল নয় এবং সেগুলো তাদের অপরাধের পূর্ণ শাস্তিও নয়।বরং এটাকে এ অবস্থার পর্যায়ে ফেলা যেতে পারে যে, একজন অপরাধী স্বাধীনভাবে অপরাধ করে বেড়াচ্ছিল, তাকে অকস্মাৎ গ্রেফতার করে তার আরো বেশী জুলুম, অন্যায় ও ফিতনা-ফ্যাসাদ সৃষ্টি করার সুযোগ ছিনিয়ে নেয়া হলো।মানব জাতির ইতিহাসে এ ধরনের গ্রেফতারীর অসংখ্য নজীর পাওয়া যায়।এ নজীরগুলো এ কথারই এক একটি সুস্পষ্ট আলামত যে, মানুষকে এ দুনিয়ায় যেখানে সেখানে চরে বেড়াবার এবং যাচ্ছে তাই করে বেড়াবার জন্য লাগামহীন উটের মতো স্বাধীনভাবে ছেড়ে দেয়া হয়নি। বরং সবার ওপরে কোন এক শক্তি আছে যে একটি বিশেষ সীমারেখা পর্যন্ত তার রশি আলগা করে রাখে। অসৎ প্রবণতা থেকে ফিরে আসার জন্য একের পর এক সতর্ক সিগন্যাল দিয়ে যেতে থাকে। আর যখন দেখা যায়, সে কোনক্রমেই সৎ পথে ফিরে আসছে না তখন হঠাৎ এক সময় তাকে পাকড়াও করে ফেলে। তারপর এ ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতার ওপর চিন্তা-ভাবনা করলে কোন ব্যক্তি সহজেই এ সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারে যে, এ বিশ্বজাহানের ওপর যে শাসনকর্তার শাসন চলছে তিনি নিশ্চয়ই এমন একটি সময় নির্ধারিত করে রেখে থাকবেন যখন এসব অপরাধীদের বিচার করা হবে এবং নিজেদের কর্মকাণ্ডের জন্য তাদের জবাবাদিহি করতে হবে। এ কারণে ওপরের যে আয়াতটিতে পার্থিব আযাবের কথা বলা হয়েছে, তাকে “কাজেই” শব্দটি দ্বারা পরবর্তী আয়াতের সাথে সংযুক্ত করা হয়েছে। অর্থাৎ পার্থিব আযাব বার বার আসা যেন আখেরাতে জবাবদিহির নিশ্চয়তার একটি প্রমাণ।

টিকা:৭) এ থেকে জানা গেলো, আখেরাতে জিজ্ঞাসাবাদ সরাসরি রিসালাতের ভিত্তিতেই অনুষ্ঠিত হবে। একদিকে নবীদেরকে জিজ্ঞাসা করা হবে, মানব সম্প্রদায়ের কাছে আল্লাহর পয়গাম পৌঁছিয়ে দেবার জন্য তোমরা কি কি কাজ করেছো? অন্যদিকে যাদের কাছে, রসূলের দাওয়াত পৌঁছে গেছে তাদেরকে জিজ্ঞেস করা হবে, এ দাওয়াতের সাথে তোমরা কি ব্যবহার করছো? যেসব ব্যক্তি বা সম্প্রদায়ের কাছে নবীদের বাণী পৌঁছেনি তাদের মামলার নিষ্পত্তি কিভাবে হবে, সে সম্পর্কে কুরআন মজীদ আমাদের কিছুই বলেনি। এ ব্যাপারে আল্লাহ‌ তাঁর ফয়সালা সংরক্ষিত করে রেখেছেন। কিন্তু যেসব ব্যক্তি ও সম্প্রদায়ের কাছে নবীদের শিক্ষা পৌঁছে গেছে তাদের সম্পর্কে কুরআন পরিষ্কার ঘোষণা করেছে যে, তারা নিজেদের কুফরী, অবাধ্যতা, অস্বীকৃতি, ফাসিকী ও নাফরমানীর স্বপক্ষে কোন যুক্তি-প্রমাণ পেশ করতে পারবে না। আর লজ্জায়, আক্ষেপে ও অনুতাপে কপাল চাপড়াতে চাপড়াতে জাহান্নামের পথে এগিয়ে চলা ছাড়া কিয়ামতের দিন তাদের জন্য দ্বিতীয় কোন পথ থাকবে না।

Leave a Reply